Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    দারোগার দপ্তর ৩ – প্রিয়নাথ মুখোপাধ্যায়

    September 22, 2025

    আরব জাতির ইতিহাস – ফিলিপ কে. হিট্টি (অনুবাদ : প্রিন্সিপাল ইবরাহীম খাঁ)

    September 22, 2025

    নিউ মুন – স্টেফিন মেয়ার

    September 22, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • 🔖
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    Subscribe
    সাইন ইন
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    ছোটগল্প – প্রফুল্ল রায়

    প্রফুল্ল রায় এক পাতা গল্প164 Mins Read0

    গল্প নয় ১

    গল্প নয় ১

    প্রায় ষাট বছর হয়ে গেল, আমি তখন বম্বেতে। বম্বে সেই সময় মুম্বই হয়নি। থাকতাম জুহুতে। জুহু বিচের ভুবন জোড়া নাম।

    আমার আস্তানা ছিল আদ্যিকালের একটা পার্শি কলোনিতে। টানা ব্যারাকের মতো লম্বা লম্বা কটা বিল্ডিং। সেগুলোর মাথায় সিমেন্ট দিয়ে সাঁটা টালির ছাদ। এই কলোনিরই দুটো কামরা ভাড়া নিয়ে থাকতাম।

    জুহু তখন আজকের মতো এমন জমকালো ছিল না। এখন চারিদিকে সারি সারি হাই-রাইজের ছড়াছড়ি, কত যে পাঁচ-তারা সাত-তারা হোটেল। সেই সময় এলাকাটা ফাঁকা ফাঁকা। যেদিকেই তাকানো যাক অজস্র নারকেল গাছ। তবে গ্ল্যামার একটা ছিলই। হিন্দি ফিল্মি দুনিয়ার নায়ক-নায়িকাদের চোখ ধাঁধানো বাংলো ছিল বেশ কয়েকটা। একটা মাত্র পাঁচতারা হোটেল ছিল–সান অ্যান্ড স্যান্ড।

    আমাদের পার্শি কলোনির পাশ দিয়েই চলে গেছে ঝা চকচকে জুহু-তারা রোড, রাস্তাটার গা ঘেঁষে নারকেল গাছের সারি। তারপরেই বিচ–সোনালি বালির সৈকত। দক্ষিণ দিক থেকে এসে উত্তরে বহুদূর চলে গেছে। বিচের পরেই আদিগন্ত আরব সাগর। আরব সাগর বে আব বেঙ্গলের মতো খামখেয়ালি, বদমেজাজি, খ্যাপাটে ধরনের নয়। বর্ষাকালটা বাদ দিলে সারাক্ষণ শান্ত।

    বম্বে দেশের পশ্চিমপ্রান্তে। তাই কলকাতায় সূর্যোদয় যখন হয় পৌনে ছটা কি ছটায়, বম্বেতে সূর্য দর্শন দেন তার এক ঘন্টা পরে, ঘড়িতে সাতটা বাজিয়ে।

    ভোর হতে না হতেই আমি বিচে চলে যাই। তখনও রোদের দেখা নেই, চারিদিক ঝাপসা ঝাপসা। আমি শুধু একাই নই, সমুদ্রের টাটকা বাতাস ফুসফুসে টানার জন্য কম করে শপাঁচেক নানা বয়সের মানুষ ততক্ষণে হাজির হয়ে গেছে। বেলা যত বাড়ে, তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ে ভিড়। প্রাতভ্রমণকারীর দঙ্গল কখনও উত্তর থেকে দক্ষিণে, কখনও দক্ষিণ থেকে উত্তরে লম্বা লম্বা কদমে হাঁটতে শুরু করেছে। আমিও তো একই ঝুঁকের কই। একটা দলের সঙ্গে ভিড়ে যাই। তারপর হাত-পা ছুঁড়ে মার্চ করতে করতে জুহুর সোনালি সৈকত দাপিয়ে বেড়াই।

    হাঁটাহাঁটি কিন্তু সবাই করে না। অনেকেই যোগাসনে বসে যায়। কেউ কেউ আবার মাথা নীচে রেখে পা দুটো সোজা ওপরে তুলে জ্যামিতির পিরপেন্ডিকুলারের মতো নট নড়নচনড়; ঘন্টাখানেক একদম স্থির হয়ে থাকে।

    বিচের একধারে ঘোড়া আর উটওয়ালাদের ঘাঁটি। তাদের কাছ থেকে ঘোড়া কি উট ভাড়া দিয়ে অনেকে হই হই করে হর্স রাইড কি ক্যালে রাইডে বেরিয়ে পড়ে।

    প্রাতভ্রমণকারীরা ছাড়া জুহু সৈকতে যাদের চোখে পড়ে তারা হল বারো- চোদ্দো বছরের কত যে বিচ-বয়। শীত-গ্রীষ্ম বারো মাস, দিন রাত তারা এখানেই থাকে। কারা তাদের বাপ-মা কেউ জানে না। প্রাতভ্রমণকারীদের ফরমাশ মতো এটা সেটা করে দিয়ে বকশিশটা ভালোই পায়। এটাই তাদের একমাত্র রোজগার।

    বিচের আরেক দিকে সারি সারি স্টল। কোনওটা নিম্বুচায়ের (লেবু চা), কোনওটা আইসক্রিমের, কোনওটা ভেলপুরি, বাটাটা পুরির, কোনওটা ইডলি দোসার, কোনওটা নারিয়েল পানির।

    দেখতে দেখতে রোদ উঠে যায়, বেলা চড়তে থাকে।

    ঘণ্টা দেড়েক ঘাম ঝরিয়ে হাত-পা ছোঁড়া, ফুসফুসে তরতাজা সামুদ্রিক বাতাস টানা, তারপর স্বাস্থ্যান্বেষীরা বেশিরভাগই চলে যায় স্টলগুলোর দিকে। অন্য অনেকের সঙ্গে আমি যাই নিষু চায় অর্থাৎ লেবু-চায়ের স্টলে। বাকি সবাই অন্য স্টলগুলোতে। চার কুইন্ট্যাল ওজনের কয়েক জন সিন্ধি আর গুজরাতি মহিলাকে রোজই দেখি দৌড় ঝাপের পর আইসক্রিমের স্টলে ভিড় জমান। বিচে এক দেড় ঘণ্টা যে পরিমাণ মেদ ঝরান আইসক্রিম পার্লার থেকে তার পাঁচ-সাত গুণ ক্যালোরি সংগ্রহ করে বাড়ি ফেরেন।

    প্রাতভ্রমণে এসে অনেকের সঙ্গেই আলাপ পরিচয় হয়েছে। বন্ধুত্বও আমাদের সেই দলটা চায়ের স্টলে এসে লেবু-চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে কিছুক্ষণ আড্ডা-টাজ্ঞা দিয়ে যে যার আস্তানায় ফিরে যাই।

    এইভাবেই চলছিল।

    একদিন সমুদ্রসৈকতে হেঁটে এসে চায়ের স্টলে সবে আমরা জড়ো হয়েছি, পঁয়ত্রিশ-ছত্রিশ বছরের একটি লোক হই হই করতে করতে এসে হাজির, আ গিয়া রে, ম্যায় আ গিয়া

    আমি না চিনলেও আমার সঙ্গীরা তাকে ভালোই চেনে। তারা শোরগোল বাধিয়ে দিল।–কোথায় ছিলে এতদিন?

    লোকটা বলল, ইন্ডিয়াটা তো ভালো করে দেখা হয়নি। তাই একটু ঘুরে-টুরে এলাম– বলেই চায়ের স্টলওয়ালার দিকে তাকাল, সবাইকে চায় আউর বিস্কুট, কেক-টেক দাও! কারও কাছ থেকে পাইসা নেবে না। বিল আমি মেটাব।

    স্টলের অল্পবয়সি কাজের ছেলেরা পুরু কাগজের কাপ প্লেটে চা, কেক বিস্কুট সাজিয়ে সবার হাতে হাতে দিতে লাগল।

    একটা অচেনা লোক যাকে আগে কখনও দেখিনি, সে আমাকে চা-টা খাওয়াতে চাইছে, ভীষণ অস্বস্তি হচ্ছিল। অন্যদের সঙ্গে কথা বলতে বলতে হঠাৎ তার নজর এসে পড়ল আমার দিকে, তোমার সঙ্গে আগে তো মোলাকাত হয়নি। মনে হচ্ছে নয়া আমদানি। কোত্থেকে এসেছ, কী নাম?

    নাম ধাম জানিয়ে দিলাম।

    লোকটা বলল, বংগালি। বহুৎ আচ্ছা। আমার নাম যোহন–যোহন ডিসুজা। পি হো-পি

    নাম শুনেই বুঝলাম লোকটা গোয়ান ক্রিশ্চান। বম্বেতে এদের বলে পিদ্রু।

    যোহন তাড়া দিতে লাগল, চায় লে লো; মুঝে আপকা দোস্ত সমঝো

    আমার ভ্রমণসঙ্গীরাও তার সঙ্গে গলা মেলায়, নিয়ে নাও, নিয়ে নাও। না নিলে যোহন ছাড়বে না।

    অগত্যা নিতেই হল।

    ওদিকে বিচ-বয়রা অর্থাৎ যে ছেলেগুলো জুহুর সমুদ্র সৈকতে বারো মাস, দিন রাত পড়ে থাকে, যোহনকে দেখে চারিদিক থেকে উধ্বশ্বাসে দৌড়তে দৌড়তে এসে তাকে ছেকে ধরল, তারপর চেঁচামেচি জুড়ে দিল, চাচা, কতদিন তোমাকে দেখিনি, ভাবলাম আমাদের ছেড়ে তুমি চলেই গেছ। আর কখনও ফিরে আসবে না।

    এর ওর মাথায় হাত বুলাতে বুলোতে যোহন বলল, আরে উল্লুরা, তোদের ছেড়ে বরাবরের জন্যে চলে যাব, ভাবলি কী করে? এই তো চলে এসেছি। পকেট থেকে এক তাড়া নোট বের করে ছেলেগুলোকে দিল, এই নে, ভেলপুরি, বাটাটা পুরি, যা দিল চায়, খেয়ে নে। কিছুক্ষণ পর তোদর নিয়ে সেই জায়গাটায় যাব–

    এতগুলো কড়কড়ে নোট পেয়ে ছেলেগুলো আহ্লাদে আটখানার জায়গায় আঠারো খানা। তারা লাফাতে লাফাতে খাবারের স্টলগুলোর দিকে চলে গেল।

    যোহন আবার আমাদের সঙ্গে আড্ডায় জমে গেল। একজন বলল, তুমি ছিলে না। হাসি নেই, মাজাক নেই। মনে হত জুহু বিচের জানটাই চলে গেছে।

    ভুরু নাচাতে নাচাতে যোহন বলল, এই তো জান ফিরে এসেছে।

    আরও কিছুক্ষণ গল্প-টল্প করে বিচ-বয়গুলোকে ডেকে নিয়ে উত্তর দিকে চলে গেল যোহন।

    .

    এরপর রোজই সকালে বিচে আসতে লাগল যোহন। মজার মজার কথায় সবাইকে মাতিয়ে দিয়ে ঘণ্টাখানেক পর বিচ-বয়গুলোকে সঙ্গে করে উত্তর দিকে চলে যায়। সেখানে ওরা কী করে, প্রথম প্রথম বুঝতে পারিনি।

    একদিন যোহন মস্ত এক ঝুড়ি আপেল নিয়ে এল। কম করে শদেড়েক তো হবেই। সবাইকে একটা একটা করে দিতে দিতে বলল, সাচ্চা কাশ্মীরি আপেল। বহুৎ বড়িয়া খাও খাও

    আমিও একটা পেয়ে গেলাম। না নিয়ে উপায়ও নেই, যোহন কিছুতেই ছাড়বে না। কিন্তু মনে একটা ধন্দ থেকে গেল। এত আপেল সে কোথায় পেল? কিনে এনেছে কি? এক ঝুড়ি আপেলের দাম তো কম নয়। গাঁটের পয়সা খরচ করে লোককে খাওয়ানোর কারণ কী হতে পারে? মাথামুন্ডু কিছু বুঝতে পারছি না।

    আরেকদিন সে নিয়ে এল এক পেটি নতুন টি-শার্ট। তাও কমসে কম শখানেক হবে। সেই একই কায়দায় একটা একটা করে সবাইকে বিলিয়ে দিল। আমাকে অবশ্য গছাতে পারেনি।

    এইভাবেই মাঝে মাঝে দামি দামি নানা জিনিস এনে হাজির করে বিলিয়ে দিতে লাগল সে। জুহু বিচের নতুন বন্ধুদের জিগ্যেস করে জানা গেল, এমনটাই নাকি যোহন অনেকদিন ধরে করে আসছে।

    অন্য একদিন সে একেবারে তাক লাগিয়ে দিল। একটা অ্যাটাচি কেস বোঝাই কড়কড়ে একশো টাকার অগুনতি বান্ডিল এনো অকাতরে সবাইকে দুটো চারটে করে দিল।

    টি-শার্টের মতোই আমাকে টাকা নেওয়াতে পারেনি যোহন। যত তাকে দেখছি ততই অবাক হচ্ছি। লোকটার বাড়িতে কি টাকার গাছ গজিয়েছে? যখন ইচ্ছা হল পেড়ে এনে দেদার বিলিয়ে চলেছে।

    অবাক যত হচ্ছিলাম, তার চেয়ে ঢের বেশি হচ্ছিল কৌতূহল। একদিন যোহনকে একা পেয়ে বললাম, তোমার সঙ্গে একটু কথা আছে।

    হাঁ হাঁ, জরুর। বোল বোল

    তুমি যে এত টাকা ওড়াচ্ছ, কোথায় এসব পাও? কী কর?

    চোখ সরু করে নিজের বুকে আঙুল ঠেকিয়ে মিটিমিটি হাসতে হাসতে যোহন বলল, আমি ফুল-টাইম ফোর টোয়েন্টি

    বলে কী লোকটা! আমি চমকে উঠি। বললাম, মানে

    মানে আবার কী। এর টুপি ওর মাথায়, ওর টুপি এর মাথায় চাপিয়ে কাম হাসিল করে নিই।

    সবকিছু গুলিয়ে যায়। আমি আকাশ পাতাল হাঁ করে তাকিয়ে থাকি।

    মিটি মিটি মিচকে হাসিটি তার মুখে লেগেই আছে। বলল, বম্বেতে কত লোক আছে? এখানকার পপুলেশন কত?

    আমার ভেতর তালগোল পাকিয়ে যায়। এই পিটা আমাকে সেনসাস ডিপার্টমেন্টের বড় কর্তা ভেবেছে নাকি? সেইসময় বম্বেতে এখনকার মতো জনবিস্ফোরণ ঘটেনি। আন্দাজে বললাম, ষাট লাখের মতো হবে।

    বহুৎ আচ্ছা। এই ষাট লাখের ভেতর চাল্লিশ লাখ গাধা নেই?

    মানে?

    মানে আমার চেয়ে তাদের মগজের ধার কম। এই গাধূধেগুলোকে পথে বসিয়ে টাকা পয়সা আর মাল খালাস করি। সমঝা?

    ব্যাপারটা এতক্ষণে বোধগম্য হল। বললাম, তুমি এত এত জিনিস আর টাকা নিয়ে এসে সবাইকে বিলিয়ে দাও। নিজের জন্যে কিছু রাখো না কেন?

    দুহাতের আঙুলগুলো নাড়াতে নাড়াতে যোহন বলল, নো সেভিংস বিজনেস স্যার। আজ এক গাধধেকে টুপি পরিয়ে যা আমদানি হবে, আজই তা খতম করব। কাল নয়া গাধূধে পাকড়াব। এইভাবে চালিয়ে যাচ্ছি।

    যোহনের সঙ্গে দেখা হওয়ার পর একটা ব্যাপার লক্ষ করেছি মর্নিং ওয়াকের পর টি স্টলে এসে বেশ কিছুক্ষণ চুটিয়ে মজাদার কাণ্ড-টান্ড করে ভিড় হালকা হলে বিচের ছেলেদের নিয়ে উত্তর দিকে চলে যায়। আপেল, শার্ট বা অন্য কোনও জিনিস আনলেও তার কাঁধে থাকে একটা কাপড়ের ভারী ব্যাগ। সেটা কখনও সে সবার সামনে খোলে না। ব্যাগটা কোন জাদুগা ঝাপ্পি, কে জানে।

    একদিন মর্নিং ওয়াকের পর আমার সঙ্গীরা প্রায় সবাই চলে গেছে। কারণ সমুদ্রসৈকতে পড়ে থাকলেই তো চলবে না। সবারই চাকরি-বাকরি বা ব্যাবসা- ট্যাবসা আছে। বিচ থেকে ফিরে কাজের জায়গায় তত তাদের দৌড়তে হবে।

    আমিও জুহু থেকে কুড়ি-বাইশ মাইল দূরে ফোর্ট এরিয়ায় নামকরা একটা অ্যাড কোম্পানিতে ছোটখাটো কাজ করি। ফোর্ট এরিয়া হল কলকাতার ডালহৌসি স্কোয়ার বা বিবাদিবাগের মতো বিশাল অফিসপাড়া। সেদিন ঠিক করলাম অফিসে যাব না। বিচের ছেলেদের নিয়ে অনেকটা দূরে চলে গেছে। আমি তাদের পিছু নিলাম।

    চায়ের স্টল, ভেলপুরি-টুরির স্টলুগলো থেকে প্রায় আধ মাইল দূরে সান অ্যান্ড স্যান্ড হোটেলের পেছন দিকটায় অজস্র নারকেল গাছের জটলা। চোখে পড়ল ছেলেগুলোকে নিয়ে যোহন তার ভেতর ঢুকে বসে পড়ল, নারকেল গাছগুলোর গা ঘেঁষে একটা পুরোনো জং ধরা টিনের চালের ঘর।

    ছেলেরা ঘর থেকে বই-টই নিয়ে যোহনের সামনে বসল। যোহনের কাঁধে যে ভারী ব্যাগটা ছিল যেটা নামিয়ে রেখেছিল। ব্যাগ থেকে প্রচুর খাতা পেন্সিল বের করে ছেলেগুলোকে দিতে দিতে বলল, নে, এবার শুরু কর–

    আমি খানিক দূরে একটা ডালপালাওয়ালা গাছের আড়ালে দাঁড়িয়ে ওদের লক্ষ করছি।

    খুব মগ্ন হয়ে পড়াচ্ছে যোহন। পড়ানোর ফাঁকে ফাঁকে মাঝে মাঝে বলছে, বিচে যারা বেড়াতে আসে তাদের খিদমত করে দুচারটে টাকা বকশিস পেয়ে তামাম জিন্দেগি কি কেটে যাবে। বোম্বাইতে হাজারো নয়া কল-কারখানা বসছে। পেটের ভেতর থোড়েসে এডুকেশন ঘুষিয়ে নে। কোথাও না কোথাও নৌকরি জুটে যাবে। বুঝলি কিছু?

    আমি অবাক। এই যোহন আমার পুরোপুরি অচেনা। সে কি ফেরেববাজ, প্রতারক, নাকি সর্বত্যাগী সন্ন্যাসী, সমাজসেবী না দার্শনিক?

    একসময় প্রায় সারা ভারতবর্ষ আমি ঘুরে বেড়িয়েছি কিন্তু যোহনের মতো পরমাশ্চর্য মানুষ আর একটিও দেখিনি।

    1 2 3 4 5 6 7 8 9
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleসমাপ্তি – প্রফুল্ল রায়
    Next Article নিজেই নায়ক – প্রফুল্ল রায়ভ

    Related Articles

    প্রফুল্ল রায়

    আলোর ময়ুর – উপন্যাস – প্রফুল্ল রায়

    September 20, 2025
    প্রফুল্ল রায়

    কেয়াপাতার নৌকো – প্রফুল্ল রায়

    September 20, 2025
    প্রফুল্ল রায়

    শতধারায় বয়ে যায় – প্রফুল্ল রায়

    September 20, 2025
    প্রফুল্ল রায়

    উত্তাল সময়ের ইতিকথা – প্রফুল্ল রায়

    September 20, 2025
    প্রফুল্ল রায়

    গহনগোপন – প্রফুল্ল রায়

    September 20, 2025
    প্রফুল্ল রায়

    নিজেই নায়ক – প্রফুল্ল রায়ভ

    September 20, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    দারোগার দপ্তর ৩ – প্রিয়নাথ মুখোপাধ্যায়

    September 22, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    দারোগার দপ্তর ৩ – প্রিয়নাথ মুখোপাধ্যায়

    September 22, 2025
    Our Picks

    দারোগার দপ্তর ৩ – প্রিয়নাথ মুখোপাধ্যায়

    September 22, 2025

    আরব জাতির ইতিহাস – ফিলিপ কে. হিট্টি (অনুবাদ : প্রিন্সিপাল ইবরাহীম খাঁ)

    September 22, 2025

    নিউ মুন – স্টেফিন মেয়ার

    September 22, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    • Sign Up
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }

    Sign In or Register

    Welcome Back!

    Login below or Register Now.

    Lost password?

    Register Now!

    Already registered? Login.

    A password will be e-mailed to you.