Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    দারোগার দপ্তর ৩ – প্রিয়নাথ মুখোপাধ্যায়

    September 22, 2025

    আরব জাতির ইতিহাস – ফিলিপ কে. হিট্টি (অনুবাদ : প্রিন্সিপাল ইবরাহীম খাঁ)

    September 22, 2025

    নিউ মুন – স্টেফিন মেয়ার

    September 22, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • 🔖
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    Subscribe
    সাইন ইন
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    ছোটগল্প – প্রফুল্ল রায়

    প্রফুল্ল রায় এক পাতা গল্প164 Mins Read0

    জননী

    জননী

    দক্ষিণ কলকাতার নিরিবিলি এলাকায় এই দশতলা হাইরাইজ বাড়িটার নাম আকাশ দীপ। এর প্রতিটি ফ্লোরে তিনটি করে হাজার স্কোয়ার ফিটের ফ্ল্যাট, বেসমেন্টে গ্যারাজ। সব মিলিয়ে তিরিশটি ফ্ল্যাটের তিরিশ জন স্বত্বধিকারী কো-অপারেটিভ করে এই বাড়িটা বানিয়েছে।

    জায়গাটা শুধু নিরিবিলিই নয়, বড় রাস্তা থেকে একটু দূরে থাকার কারণে গাড়ি টাড়ির উৎপাত কম। পরিবেশ দূষণ বলতে যা বোঝায় তা থেকে অঞ্চলটা অনেকখানি মুক্ত। চারপাশে আরো কটা হাইরাইজ থাকলেও এখনও এখানে প্রচুর গাছপালা আর পাখি চোখে পড়ে। অগুনতি মানুষের ভিড়ে, তুমুল হইচইতে এয়ার-হর্নের কানফাটানো আওয়াজে, পোড়া গ্যাসোলিনের ধোঁয়ায় যখন এই শহরের দম বন্ধ হয়ে আসছে তখন তারই এক ধারে এমন একটা ঘন সবুজে ঢাকা, শান্ত, নিঝাট পাড়া থাকতে পারে, তা যেন ভাবাই যায় না।

    আকাশ দীপ-এর বাসিন্দাদের সবাই শিক্ষিত, প্রতিষ্ঠিত, কেউ অধ্যাপক, কেউ মাল্টিন্যাশানাল কোম্পানির টপ একজিকিউটিভ, কেউ ডাক্তার, কেউ ব্যাঙ্ক ম্যানেজার, কেউ স্টেট বা সেন্ট্রাল গভর্নমেন্টের অফিসার ইত্যাদি।

    এই বাড়িরই থার্ড ফ্লোরের একটি ফ্ল্যাটের কোণের দিকের একটি ঘরে জানালার ধার ঘেঁষে চুপচাপ বসে ছিল তাপসী। অত্যন্ত সুশ্রী চেহারা। বয়স সাতাশ-আটাশ। পোশাক বা সাজসজ্জার দিকে কোনওরকম নজর নেই তার। পরনের শাড়িটা আধময়লা, চুল উষ্কখুষ্ক, কপালে বাসি সিঁদুরের আবছা দাগ। সারা মুখ জুড়ে গাঢ় বিষণ্ণতা।

    রাস্তার দিকে তাপসীর মুখ ফেরানো। এখন দুপুর। খানিকক্ষণ আগে ইলেকট্রনিক দেওয়াল ঘড়িতে সেতারের ঝঙ্কার তুলে বারোটা বেজেছে। ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই অবিনাশের ফেরার কথা, তার জন্যই অপেক্ষা করছে তাপসী। শুধু আজই না, সাতদিন ধরে এখানে, এই সময়টা, ঠিক এইভাবে বসে থাকছে সে। এ কদিন অবিনাশ যে খবর নিয়ে এসেছে তা খুবই হতাশাজনক। আজ এসে কী বলবে কে জানে।

    তাপসী যেখানে বসে আছে সেখান থেকে পাশের ঘরের ব্যালকনির একটা অংশ চোখে পড়ে। ওখানে একটা বেতের সোফায় বসে আছেন মৃণালিনী। বয়স বাষট্টি-তেষট্টি। তার ফর্সা মুখের একাংশ, সাদা এবং কালোয় মেশানো চুল, খাড়া নাক, মেটালের চশমা ইত্যাদি মিলিয়ে যে প্রোফাইলটা দেখা যায় তাতে মনে হয় মহিলা খুবই ব্যক্তিত্বসম্পন্ন। তপসী জানে তার মতো মৃণালিনীও অবিনাশের জন্য অপেক্ষা করছেন। আসলে অবিনাশকে তিনিই কদিন ধরে একটা খবরের জন্য বরুণের অফিসে পাঠাচ্ছেন, যার সঙ্গে এই পরিবারের ভবিষ্যৎ এবং তাপসীর মরণবাঁচন জড়িয়ে আছে।

    ঘড়িতে যখন একটা বাজল সেই সময় দেখা গেল সামনের রাস্তা দিয়ে অবিনাশ আকাশ দীপ-এর মেন গেট দিয়ে ভেতরে ঢুকে পড়েছে। তিন চার মিনিটের ভেতর সে লিফটে করে ওপরে উঠে আসবে।

    তাপসী টের পেল তার হৃৎপিণ্ডে এলোপাথাড়ি ঢাক পেটানোর মতো আওয়াজ হচ্ছে। তারই মধ্যে লক্ষ করল, ওধারের ব্যালকনিতে মৃণালিনী নেই। নিশ্চয়ই অবিনাশকে দরজা খুলে দেবার জন্য উঠে গেছেন।

    তাপসী একবার ভাবে, উঠে পড়বে কিন্তু পরক্ষণে টের পেল পা দুটো পেরেক ঠুকে কেউ যেন মেঝেতে আটকে দিয়েছে। একটা অজানা চাপা আশঙ্কা তাকে চারদিক থেকে ঘিরে ধরতে থাকে। যদি আজও বরুণের খবর পাওয়া না গিয়ে থাকে?

    আচ্ছন্নের মতো বসে থাকতে থাকতে একসময় দরজা খোলার শব্দ কানে তাপসীর। তারপরই মৃণালিনী ডাকেন, বউমা, এখানে এসো

    কোনও রকমে নিজেকে টেনে তোলে তাপসী। তারপর এলোমেলো পা ফেলে দরজার দিকে এগিয়ে যায়।

    এই ফ্ল্যাটে সবসুদ্ধ তিনটে বেড রুম। এ ছাড়া কিচেন, স্টোর, ডাইনিং-কাম ড্রইং রুম। সবগুলোই চমৎকার সাজানো গোছানো।

    ড্রইং রুমে আসতে চোখ পড়ে মৃণালিনী একটা সোফায় বসে আছেন। অবিনাশ বসেনি, একটু দুরে দাঁড়িয়ে রয়েছে।

    অবিনাশের বয়স চুয়াল্লিশ-পঁয়তাল্লিশ। তামাটে রং চৌকো মুখ, মাথার মাঝখানে সিঁথি। পেটানো স্বাস্থ্য তার। চেহারায় বুদ্ধির ছাপ আছে। পরনে ধুতি এবং ভোরা-কাটা হাফ-হাতা পাঞ্জাবি। সে এ বাড়ির কাজের লোক।

    খুব অল্প বয়সে মৃণালিনীর কাছে এসেছিল অবিনাশ। বাবা-মা, ভাই-বোন তিন কুলে কেউ নেই তার। বিয়ে করেনি। এঁদের কাছে থাকতে থাকতে সংসারের একজন হয়ে গেছে। জড়িয়ে গেছে মৃণালিনীদের সুখ দুঃখ আশা আর নৈরাশ্যের সঙ্গে। রক্তের সম্পর্ক না থাকলে সে মৃণালিনীদের সত্যিকারের হিতাকাঙ্খী।

    মৃণালিনী তাপসীকে সোফা দেখিয়ে বলেন, বসো বউমা–

    তাপসী বসে না, রুদ্ধশ্বাসে অবিনাশের দিকে তাকিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। মৃণালিনী এবার অবিনাশের উদ্দেশে বলেন, কিছু জানা গেল।

    মুখ নামিয়ে অবিনাশ ধীরে ধীরে মাথা নাড়ে, না মা। আজও দাদাবাবু অফিসে আসেননি।

    কবে আসবে, ওরা কিছু বললে?

    না।

    আশ্চর্য!

    অবিনাশ চুপ করে থাকে।

    মৃণালিনীর চোখে মুখে দুশ্চিন্তার ছাপ ফুটে উঠতে থাকে। এমনিতে তিনি ধীর, স্থির, সহজে চঞ্চল বা বিচলিত হন না, কিন্তু সাত দিন আগে বরুণ সেই যে অফিসে গিয়েছিল তার পর থেকে তার কোনো খোঁজ নেই। রোজ অবিনাশকে তার অফিসে পাঠানো হচ্ছে কিন্তু অফিসের কেউ জানে না সে কোথায় গেছে। বরুণও বাড়িতে কিছু জানিয়ে যায়নি। এমনকী দূরে কোথাও গিয়ে থাকলে ফোন করে বা চিঠি লিখে খবরও দেয়নি। এই কদিনে একটু একটু করে উৎকণ্ঠা জমা হচ্ছিল মৃণালিনীর মনে। আজ সত্যিই তিনি ভেতরে ভেতরে অত্যন্ত অস্থির হয়ে উঠেছেন। কোথায় যেতে পারে ছেলেটা? তার কি কোনো বিপদ ঘটেছে?

    মৃণালিনী হঠাৎ মনস্থির করে ফেলেন। অবিনাশকে দিয়ে হবে না। তিনি নিজেই আজ তাপসীকে সঙ্গে করে বরুণের অফিসে যাবেন। তার ধারণা অবিনাশকে হয়তো ওরা সঠিক খবর দিচ্ছে না।

    মৃণালিনী বলেন, বৌমা, তুমি তাড়াতাড়ি স্নানটা সেরে নাও। দুপুরের যাওয়া সেরে আমার সঙ্গে রাজার অফিসে যাবে। বরুণের ডাক নাম রাজা।

    তাপসী চকিত হয়ে ওঠে, আমি–আমি যাব!

    হ্যাঁ।

    কিন্তু অবিনাশদা তো রোজ গিয়ে ঘুরে আসছে। আপনার ছেলের সম্বন্ধে কোনো খবর থাকলে কি ওরা জানাত না?

    কিছুক্ষণ চিন্তা করে মৃণালিনী বলেন, কোথায় যেন একটা মিষ্ট্রি রয়েছে। ঠিক বুঝতে পারছি না। একটু থেমে বলেন, মা আর স্ত্রী গেলে গুরুত্বটা ওদের কাছে অনেক বেড়ে যাবে।

    তাপসী আর কোনো প্রশ্ন করে না, সোজা নিজের বেডরুমে গিয়ে স্নানের ঘরে ঢুকে যায়।

    .

    মৃণালিনীদের ছোট্ট পরিবার। একমাত্র ছেলে বরুণ, পুত্রবধু তাপসী আর তিনি নিজে–সব মিলিয়ে তিনজন। অবশ্য অবিনাশকে ধরলে চার।

    মৃণালিনী পরমাশ্চর্য একটি মানুষ। প্রবল আত্মসম্মান বোধ তার, সেই সঙ্গে রয়েছে। শক্ত মেরুদণ্ড যা কখনও কোনও কারণেই তাকে নুয়ে পড়তে দেয় না। তার বিবাহিত জীবন অত্যন্ত সংক্ষিপ্ত। বিয়ের সাত বছরের মাথায় যখন তার বয়স মোটে বত্রিশ এবং বরুণের তিন সেই সময় স্বামীকে হারান।

    মৃণালিনীর দাদারা ছুটে এসে তাকে নিজেদের কাছে নিয়ে গিয়েছিলেন। তাঁর বাবার বহুদিন আগেই মৃত্যু হয়েছে। ভাইরা মানুষ হিসেবে সহৃদয়, সহানুভূতিশীল। বোনকে তারা পরম মমতায় আগলে রাখতে চেয়েছিলেন। কিন্তু ছেলেকে নিয়ে অন্যের কাঁধে চিরকার বোঝা হয়ে থাকতে তার মন সায় দেয়নি।

    মাত্র বছর তিনেকের মতো দাদাদের কাছে থেকেছেন মৃণালিনী। বিয়ের আগে বি.এ-টা পাশ করেছিলেন। অসাধারণ ছাত্রী তিনি, ইংরেজি অনার্সে ফার্স্ট ক্লাস সেকেন্ড। বিয়ে হয়ে যাবার পর নানা কারণে পড়াশোনায় ছেদ পড়ে গিয়েছিল। স্বামীর মৃত্যুর পর শোকের প্রাথমিক বিহ্বলতা কাটিয়ে উঠে সোজা বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে ভর্তি হয়েছিলেন। এম.এতেও ভালো রেজাল্ট হল। এবারও ফার্স্ট ক্লাস। তিরিশ বছর আগে এখনকার মতো কলেজের চাকরি দুর্লভ ছিল না। ইউনিভার্সিটি থেকে বেরুবার সঙ্গে সঙ্গে নামকরা কলেজে লেকচারশিপ পেয়ে যায় মৃণালিনী। ছমাস পর আলাদা বাড়ি ভাড়া করে ছেলেকে নিয়ে সেখানে চলে গেলেন। দাদারা ভীষণ দুঃখ পেয়েছিলেন। তিনি তাদের বুঝিয়েছেন, আমাকে নিজের পায়ে দাঁড়াতে দাও। তোমরা তো কাছেই রইলে। তেমন বুঝলে আবার তোমাদের কাছে চলে আসব।

    এরপর একদিকে কলেজ, আরেকদিকে ছেলেকে মানুষ করা–এর মধ্যেই জীবন কেটে যেতে লাগল। একজন অবিবাহিত, প্রায় সমবয়সি সহকর্মী, সমরেশ সান্যাল তার প্রতি আকৃষ্ট হয়েছিলেন। মানুষটি ভদ্র সুপুরুষ, সহানুভূতিশীল। কিন্তু মৃত স্বামীর স্মৃতি তাঁর কাছে এমনই মূল্যবান যে দ্বিতীয়বার বিয়ের কথা ভাবতে পারেননি মৃণালিনী। সবিনয়ে সমরেশকে ফিরিয়ে দিয়েছেন। সেজন্য কোনও রকম তিক্ততা হয়নি। পরে সমরেশ বিয়ে করেছেন। এখনও তাদের যোগাযোগ আছে। দুজনের সম্পর্ক পারস্পরিক প্রীতি ও শ্রদ্ধার।

    বরুণ বড় হতে লাগল। ছাত্র হিসেবে সে খুবই মেধাবী। পঁচিশ বছর পূর্ণ হবার আগেই চার্টার্ড অ্যাকাউনটেন্সির সঙ্গে বিজনেস ম্যানেজমেন্টে চোখ ধাঁধানো রেজাল্ট করার পর একটা বিরাট ফার্মে তার চাকরি হয়ে যায় এবং চার-পাঁচ বছরের ভেতর প্রমোশন পেয়ে এখন সে কোম্পানির ফিনান্স ডিপার্টমেন্টের একজন টপ একজিকিউটিভ।

    বরুণের সবাই চমৎকার কিন্তু চরিত্রে সংযম বলতে কিছু নেই। সুন্দরী মেয়েদের সম্পর্কে তার প্রচণ্ড দুর্বলতা। কলেজে ভর্তি হবার পর থেকেই এই নিয়ে বারবার নানা স্ক্যান্ডালে সে জড়িয়ে পড়েছে। ফলে টেনসানের শেষ নেই মৃণালিনীর। সবাই আড়ালে বলাবলি করে, অমন শুদ্ধ চরিত্রের মায়ের এ রকম দুশ্চরিত্র ছেলে হয় কী করে?

    লম্পট ছেলেদের শোধরাবার জন্য সবাই যে মুষ্টিযোগ প্রয়োগ করে মৃণালিনীও তাই করলেন। প্রথমে অনেক বুঝিয়েছেন কিন্তু তাতে কাজ না হওয়ায় শেষ পর্যন্ত তার বিয়ে দিলেন। নিজেই তাপসীকে পছন্দ করেছিলেন। বাপ-মা-মরা মেয়ে। নম্র, ভদ্র, বিনয়ী। ইতিহাসে অনার্স নিয়ে গ্র্যাজুয়েট। দূর সম্পর্কের এক মামার বাড়িতে সে অল্প বয়স থেকে মানুষ হয়েছে। মামা এবং মামি মানুষ ভালো, খুবই সহৃদয়। নিজেদের ছেলেমেয়েদের থেকে কোনওদিন তাপসীকে আলাদা করে দেখেননি।

    ছেলের স্বভাব কেমন, বিয়ের আগেই তাপসীকে জানিয়ে দিয়েছিলেন মৃণালিনী। কিছুই গোপন করেননি। তার দুহাত ধরে বলেছিলেন, আমি পারিনি। আমার বিশ্বাস তুমি পারবে। রাজাকে শোধরাবার দায়িত্ব তোমাকে দিলাম। স্ত্রী হিসেবে এটা তোমার জীবনের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।

    বিয়ের পর কিছু দিন স্বভাবটা পাল্টাতে শুরু করেছিল বরুণের। আগে অফিসের পর প্রায়ই বান্ধবী জুটিয়ে কোথায় কোথায় ঘুরে বেড়াত। সেটা এবার বন্ধ হল। অফিস ছুটি হলে নিয়মিত বাড়ি আসতে লাগল বরুণ। স্ত্রীকে নিয়ে প্রায়ই নাইট শোয়ে সিনেমায়, নইলে কোথাও বেড়াতে যেত। আসলে নতুন একটা তরুণীকে নিবিড় করে পাওয়ার মধ্যে তীব্র মাদকটা থাকে।

    কিন্তু দু-এক বছর কাটতে না কাটতেই নেশা কেটে যায় বরুণের। আবার তার সম্বন্ধে কিছু কিছু স্ক্যান্ডাল কানে আসতে থাকে তাপসী আর মৃণালিনীর। ছুটির পর বাড়িতে ফেরাটা তার অনিয়মিত হয়ে ওঠে। মাঝে মাঝে এক-দুদিন ফেরেও না। অবশ্য রাতের দিকে ফোন করে জানিয়ে দেয়, এক বন্ধু তাদের বাড়ি ধরে নিয়ে এসেছে, ফেরা সম্ভব হবে না।

    মৃণালিনী ছেলের হাড়ের ভেতর পর্যন্ত জানেন। তাঁর মুখ গম্ভীর হয়ে ওঠে। প্রচণ্ড উৎকণ্ঠা তাকে গ্রাস করতে থাকে। অবশ্য বাইরে থেকে তা দেখে বোঝার উপায় নেই।

    তাপসীও এত দিনে স্বামীকে চিনে ফেলেছে। মৃণালিনীর কথামতো বরুণকে শোধরানোর অনেক চেষ্টা করেছে। প্রচুর কান্নাকাটি করেছে সে, প্যাসিভ রেজিস্ট্যান্স হিসেবে দিনের পর দিন উপোস দিয়ে থেকেছে কিন্তু তাকে ফেরানো যায় নি।

    আগে মাঝে মাঝে দু-একদিন রাতে বাড়ি আসেনি বরুণ। এখন তো পুরো সাতদিন কাটতে চলল, তার খোঁজ নেই।

    .

    কোনও রকমে স্নান-খাওয়া চুকিয়ে মৃণালিনীর সঙ্গে বেরিয়ে পড়ে তাপসী। বড় রাস্তা তাদের বাড়ি থেকে তিন মিনিটের পথ। সেখানে আসতেই একটা ফাঁকা ট্যাক্সি পাওয়া গেল।

    বরুণের অফিস ক্যামাক স্ট্রিটে, একটা বোলতলা হাইরাইজের সেভেন্থ এইটথ নাইথ আর টেথ, মোট চারটে ফ্লোর জুড়ে। অফিস বিল্ডিংয়ের সামনে এসে ট্যাক্সি থেকে নেমে সারি সারি লিফট বক্সগুলোর দিকে চলে যায় দুজনে। সবগুলো লিফটের সামনেই লম্বা লাইন। যে লাইনটা অন্যগুলোর তুলনায় ছোট তার পেছনে দাঁড়িয়ে পড়ে তারা।

    মিনিট দশেক বাদে লিফটে ঢোকার সুযোগ পাওয়া যায়। আগে একবারই মাত্র মৃণালিনী বরুণের অফিসে এসেছিলেন। তাপসী কখনও আসেনি। ঝিঁঝির ডাকের মতো একটানা আওয়াজ করে লিফট যত ওপরে উঠতে থাকে ততই বুকের ভেতর হৃৎপিণ্ডের উত্থানপতনের গতি বেড়ে যায়। অজানা এক শঙ্কা তাকে যেন চারদিক থেকে ঘিরে ধরে।

    সেভনথ ফ্লোরে ঢুকলেই বরুণদের অফিস ম্যাগনাম ইন্টারন্যাশনাল-এর রিসেপসান। সেখানে দারুণ স্মার্ট চেহারার একটি তরুণী সারা গা থেকে উগ্র সেন্টের গন্ধ বিতরণ করছিল। তার বাদামি রঙের ফাঁপানো চুল, কঁধ পর্যন্ত ছাঁটা, ভুরু প্লাক-করা, ম্যানিকিওর করা নখে এবং ঠোঁটে চড়া রং।

    মাপা যান্ত্রিক হেসে তরুণী ইংরেজিতে জিগ্যেস করে, আপনাদের জন্যে কী করতে পারি?

    বোকা যাচ্ছিল মেয়েটি বাঙালি। বিশুদ্ধ বাংলায় মৃণালিনী বলেন, আমি ফিনান্স ডিপার্টমেন্টের একজিকিটিভ বরুণ মল্লিক সম্পর্কে কিছু জানতে চাই।

    তিনি অফিসে আসেননি। এবার তরুণী বাংলাতেই উত্তর দেয়।

    জানি। আমি তার মা। আর এ হল বরুণের স্ত্রী– তাপসীকে দেখাতে দেখাতে মৃণালিনী বলেন, সাতদিন ধরে তার খোঁজে লোক পাঠাচ্ছি। রোজ বাড়ি গিয়ে সে জানাচ্ছে বরুণ অফিসে আসেনি।

    হ্যাঁ, হ্যাঁ, রিসেপসনিস্ট বলে, একজন মিডল-এজেড লোক কদিন ধরে মিঃ মল্লিকের খোঁজে আসছে। আজও এসেছিল।

    সাতদিন আগে সে অফিসে এসেছিল। তারপর আর বাড়ি ফেরেনি। কোথায় যেতে পারে বলে আপনাদের ধারণা? অফিস কি কোনও প্রয়োজনে তাকে কলকাতার বাইরে পাঠিয়েছে?

    আমি বলতে পারব না।

    কার পক্ষে বলা সম্ভব?

    আপনি ফিনান্স ডিপার্টমেন্টের ভাইস প্রেসিডেন্ট মিস্টার পাইয়ের সঙ্গে দেখা করে কথা বলুন।

    ঠিক আছে। কীভাবে তার সঙ্গে দেখা করব?

    একটু ওয়েট করুন। আমি ব্যবস্থা করে দিচ্ছি।

    ইন্টারকমে কথা বলে তরুণীটি মৃণালিনীদের জানায় নাইথ ফ্লোরে মিস্টার পাইয়ের চেম্বার। তিনি তার ঘরেই আছেন, মৃণালিনীদের জন্য অপেক্ষা করছেন।

    মিস্টার পাইয়ের বয়স পঞ্চাশের কাছাকাছি। অত্যন্ত ভদ্র এবং ব্যক্তিত্বসম্পন্ন। বরুণের ব্যাপরে তাকে বেশ উৎকণ্ঠিতই দেখা গেল। বললেন, বরুণ আমাদের কোম্পানির অ্যাসেট। কেন যে সাতদিন ধরে আসছে না, বুঝতে পারছি না। আজকের দিনটা দেখে কাল আপনাদের বাড়িতে যোগাযোগ করতাম। একটু থেমে গলা নামিয়ে এবার বলেন, একটা ইনফরমেসন আপনাদের দিতে পারি যেটা বলতে বলতে চুপ করে যান।

    টেবলের ওপর অনেকটা ঝুঁকে মৃণালিনী জিগ্যেস করেন, যেটা কী?

    খুবই এমব্যারাসিং। হয়তো আমাদেরও ভুল হতে পারে। কো-ইন্সিডেন্স হওয়া আশ্চর্য নয়।

    দয়া করে আপনি বলুন। আমরা কিছু মনে করব না।

    দ্বিধান্বিতভাবে পাই বলেন, যেদিন থেকে বরুণ আসছে না, দেখা যাচ্ছে ঠিক সেদিন থেকেই আমাদের পার্সোনেল ডিপার্টমেন্টের একজন অফিসার সুনীতা কুলকার্ণি ছুটি নিয়েছে। তিনদিন আগে তার ছুটি ফুরিয়েছে কিন্তু এখনও জয়েন করেনি। কবে করবে তাও জানায়নি।

    মৃণালিনী জিগ্যেস করেন, সুনীতা কুলকার্ণির বয়স কী রকম?

    মিস্টার পাই একটু ভেবে বলেন, সাতাশ-আটাশ হবে।

    দেখতে কেমন?

    কোয়াইট অ্যাট্রাক্টিভ।

    মুখ শক্ত হয়ে উঠেছিল মৃণালিনীর। যা তার স্বভাববিরুদ্ধ এবার তাই করে বসেন। উত্তেজনায় চিৎকার করে বলেন, আমি সিওর, ওরা দুজন একসঙ্গেই গেছে।

    মিস্টার পাই হতচকিত। বলেন, এ কী বলছেন মিসেস মল্লিক।

    মৃণালিনী আগের স্বরেই বলেন, ঠিকই বলছি পাইসাহেব। নিজের ছেলেকে আমি চিনি। মেয়েদের ব্যাপারে তার সুনাম নেই। আপনার অনেকটা সময় নষ্ট করলাম। আচ্ছা চলি, নমস্কার। চলো তাপসী বলতে বলতে উঠে পড়েন।

    আচ্ছন্নের মতো বসে ছিল তাপসী। সুনীতা আর বরুণ। সাত দিন ধরে অফিসে আসছে না, এটা জানার সঙ্গে সঙ্গে বুকের ভেতর থেকে অসহ্য কান্না উঠে এসে গলার কাছে যেন ডেলা পাকিয়ে যাচ্ছিল। ধীরে ধীরে সে উঠে দাঁড়ায়।

    বাড়ি ফিরে ড্রইং রুমে বেশ কিছুক্ষণ স্তব্ধ হয়ে বসে থাকেন মৃণালিনী। একটু দুরে একটা বেতের মোড়ায় তাপসীও শ্বাসরুদ্ধের মতো বসে ছিল। সে লক্ষ করে মৃণালিনীর মুখ লাল হয়ে উঠেছে। মনে হয় শরীরের সব রক্ত সেখানে গিয়ে জমা হয়েছে। তার ভেতরে যে মারাত্মক প্রাকৃতিক দুর্যোগের মতো কিছু চলছে সেটা বুঝতে অসুবিধা হয় না।

    একসময় উঠে দাঁড়ান মৃণালিনী। অস্থির পা ফেলে ফেলে ঘরময় ঘুরে বেড়ান। যেন কোনও কঠোর সিদ্ধান্ত নিতে পারছেন না। আধঘণ্টা এভাবে কাটার পর হঠাৎ যেন মনস্থির করে ফেলেন। তাপসীর কাছে এগিয়ে এসে বলেন, বউমা, তোমার কাছে আমার অপরাধের শেষ নেই। বিয়ের আগে তোমার দিকটা চিন্তা করিনি, নিজের স্বার্থই শুধু দেখেছি। এমন লম্পটের সঙ্গে তোমার সঙ্গে তোমার বিয়ে দেওয়া ঠিক হয়নি। স্বগতোক্তির মতো বলেন, ফুলের মতো একটা মেয়ের জীবন একেবারে নষ্ট করে দিলাম। পরক্ষণে তার ওপর কী একটা যেন ভর করে। ক্রুদ্ধ, হিংস্র ভঙ্গিতে বলেন, আমি ওকে ছাড়ব না। অনেক সহ্য করেছি, আর নয়। বউমা, তোমার বিরাট ভবিষ্যৎ পড়ে রয়েছে। সেজন্যে আমাকে কিছু করতেই হবে। আমি যা ডিসিসান নেব, সেটা তোমাকে মানতে হবে।

    পাঁচ বছর বিয়ে হয়েছে তাপসীর, কিন্তু মৃণালিনীর এমন ভয়ঙ্কর চেহারা এই প্রথম দেখল। বিহুলের মতো আস্তে মাথা নাড়ে সে।

    মৃণালিনী বলেন, সবার আগে দরকার ওদের খুঁজে বার করা। আরে আমার পিসতুতো ভাই সুরজিৎই তো রয়েছে লালবাজারে। মস্ত অফিসার। ওকে একটা ফোন করে জানাই

    তাপসী ঝাপসা গলায় বলে, মা, ব্যাপারটা জানাজানি হলে

    তাকে থামিয়ে দিয়ে মৃণালিনী বলেন, অনেকদিন চাপা দিয়ে রেখেছি। বহু আগেই স্টেপ নেওয়া উচিত ছিল। মাতৃস্নেহ আমাকে অন্ধ করে রেখেছিল। কিন্তু আর নয়

    ড্রইংরুমের একধারে ঘোট টেবলের ওপর টেলিফোনটা থাকে। সেটা তুলে নিয়ে ডায়াল করে লালবাজারে সুরজিৎকে ধরে ফেলেন মৃণালিনী, বাপি, আমি সোনাদি বলছি। তার ডাকনাম সোনা।

    ওধার থেকে সুরজিৎ কী বললেন, শোনা গেল না।

    মৃণালিনী এবার বরুণ এবং সুনীতা সম্পর্কে সব জানিয়ে বললেন, সাতদিনের ভেতর ওদের খবর চাই। তারপর কথোপকথনটা এইভাবে চলল। কেলেঙ্কারি? তার আর কী বাকি আছে?…হ্যাঁ, হ্যাঁ, আমি কোনও কথা শুনব না!…ওকে একটা শিক্ষা দেওয়া দরকার।…

    সুরজিতের গলা শোনা না গেলেও তিনি কী বলছেন আন্দাজ করতে পারছিল তাপসী।

    মিনিট দশেক কথা বলে ফোন নামিয়ে রাখেন মৃণালিনী। তারপর তাপসীর দিকে তাকান, বলেন, কোথায় লুকিয়ে থাকবে? পুলিশ না পারে এমন কাজ নেই, ঠিক খুঁজে বার করবে। তারপর আমি দেখব ও কত বড় বদমাস হয়ে উঠছে।

    .

    পরদিন বিকেলে মিস্টার পাইয়ের ফোন এল। ব্যাপারটা এত অপ্রত্যাশিত যে খুবই অবাক হয়ে গেলেন মৃণালিনী। জিগ্যেস করলেন, কোনও জরুরি খবর আছে পাইসাহেব?

    মিস্টার পাই বললেন, হ্যাঁ ম্যাডাম। আপনি আপনার ছেলের সম্পর্কে ভীষণ উদ্বিগ্ন হয়ে আছেন। তাই ইনফরমেশনটা দেওয়া দরকার মনে করলাম।

    মৃণালিনী উন্মুখ হয়ে রইলেন, কিছু বললেন না।

    মিস্টার পাই এবার যা বলেন তা এই রকম। বরুণ এবং সুনীতা তাদের অফিসে আর আসবে না, তারা রেজিগনেশান লেটার পাঠিয়ে দিয়েছে।

    মৃণালিনী এতটা ভাবতে পারেননি। একটু চুপ করে থেকে বলেন, ওদের রেজিগনেশান অ্যাকসেপ্টেড হয়েছে?

    হয়ে যাবে।

    আমি যত দূর জানি আমার ছেলে যে পোস্টে কাজ করত তাতে রেজিগনেশান দিলেই অ্যাকসেপ্টেড হয় না। তার আগে মিনিমান তিন মাসের নোটিশ দিতে হয়।

    তা হয়, কিন্তু যে কাজ করবে না ঠিক করেছে তাকে ধরে রাখা তো সম্ভব নয়। আজ হোক কাল হোক ছেড়ে দিতেই হবে। আমরা কোনও রকম তিক্তকা করতে চাই না।

    মৃণালিনী বলেন, অফিসের যা নিয়ম তা তো মেনে চলতে হবে। মিস্টার পাই, ওকে সহজে ছাড়বেন না। যা খুশি তাই করবে সেটা কোনও ভাবেই মেনে নেওয়া ঠিক নয়। এতে আপনাদের অফিসে ইনডিসিপ্লিন বেড়ে যাবে।

    মিস্টার পাই রীতিমতো অবাক হয়ে যান। মা হয়েও ছেলের বিরুদ্ধে বলছেন মৃণালিনী। এটা তাঁর কাছে অভাবনীয়। বললেন, কী করতে বলেন আপনি?

    মৃণালিনী তীক্ষ্ণ স্বরে এবার বলেন, অফিসিয়াল প্রোসিডিওর যা, স্ট্রিক্টলি তা ফলো করা উচিত। বরুণকে অফিসে ডেকে পাঠান, তিন মাস ওকে আটকে রাখবেন। যেদিন অফিসে আসবে আমাকে জানাবেন। বরুণের হদিশ পাওয়া যাচ্ছে না। অফিসে এলে তাকে ধরবেন, মৃণালিনী সেরকম ইচ্ছা।

    মিস্টার পাই বলেন, কিন্তু সেটা বোধহয় সম্ভব হবে না।

    কেন?

    রেজিগনেশান লেটারের সঙ্গে অ্যাড্রেস দেয়নি বরুণ। ওর সঙ্গে যোগাযোগ করব কী করো?

    হঠাৎ খুব হতাশা বোধ করেন মৃণালিনী। বলেন, আচ্ছা, ঠিক আছে। বলে ফোনটা নামিয়ে রাখেন।

    .

    এরপর চারটে দিন দারুণ অনিশ্চয়তার ভেতর কেটে যায়। সুনীতা আর বরুণ যখন একই দিনে রেজিগনেশান লেটার পাঠিয়েছে তখন এটা পুরোপুরি নিশ্চিত ওরা একসঙ্গেই আছে। কিন্তু কোথায়? কলকাতায়, না বাইরে চলে গেছে? কলকাতায় থাকলে তবু একটু আশা আছে, কিন্তু বাইরে গেলে ধরা ছোঁয়া যাবে কিনা কে জানে।

    সারাক্ষণ বুকের ভেতর একটা তীব্র চাপা কষ্ট অনড় হয়ে থাকে তাপসীর। সারা রাত ঘুমোত পারে না। শুধু তাকেই না, বরুণের এই জঘন্য নোংরা আচরণ মৃণালিনীকে আমূল নাড়া দিয়ে গেছে। তাঁর মতো শান্ত গম্ভীর ধৈর্যশীল মানুষ আজকাল সারাক্ষণ ক্ষিপ্ত এবং উত্তেজিত হয়ে থাকেন। দিনে সাত-আটবার লালবাজারে সুরজিৎকে ফোন করেন। কেন এতদিনেও একটা সুশৃঙ্খল পুলিশবাহিনী বরুণ আর তাপসীকে খুঁজে বার করতে পারছে না সেজন্য যথেষ্ট বকাবকিও করেন। সুরজিৎ বোঝান, এক কোটি মানুষের এত বড় মেট্রোপলিসে দুই যুবক যুবতীর হদিশ পাওয়া খুব সহজ ব্যাপারে নয়। পুলিশের চোখে ধুলো দিয়ে কত দিন লুকিয়ে থাকবে? তবে কলকাতায় বাইরে চলে গেলে সমস্যাটা জটিল হয়ে উঠবে। তখন বিশাল দেশের নব্বই কোটি মানুষের ভেতর দুজনকে খুঁজতে হবে। কাজটা অত্যন্ত দুরূহ। তবে আজ হোক কাল হোক ধরা ওরা পড়বেই। ও ব্যাপারে সুরজিৎ শতকরা একশোভাগেরও বেশি নিশ্চিত।

    সুরজিৎ যে পুলিশের কর্মক্ষমতা সম্পর্কে বাড়িয়ে কিছু বলেনি সেটা পাঁচদিনের দিন বোঝা গেল। দুপুরবেলা সবে তাপসীদের খাওয়া শেষ হয়েছে সেই সময় লালবাজার থেকে ফোন এল।

    ফোনটা তাপসীই ধরেছিল। ওধারে সুরজিতের গলা শোনা যায়, কে, বউমা?

    তাপসী বলে, হ্যাঁ, মামা

    সোনাদিকে একটু ডাকো তো

    মৃণালিনী খাওয়ার পর তার ঘরের ব্যালকনিতে চুপচাপ বসে ছিলেন। তাপসী গিয়ে তাকে ডেকে নিয়ে এল।

    মৃণালিনী ফোন তুলে জিগ্যেস করেন, কী ব্যাপার রে বাপি?

    সুরজিৎ বলেন, তোমাকে একটা সুখবর দিচ্ছি সোনাদি। রাজা আর ওই মেয়েটা কোথায় আছে জানতে পেরেছি।

    মৃণালিনী ফোনের ভেতর প্রায় মুখটা ঢুকিয়ে রুদ্ধশ্বাসে বলেন, কোথায়?

    লেকটাউনের একটা হাইরাইজ বিল্ডিংয়ের ফ্ল্যাটে। এখন বলো ক্যালকাটা পুলিশ একেবারেই অপদার্থ নয় বলে শব্দ করে একটু হাসেন সুরজিৎ।

    তার কথায় এবং হাসিতে সূক্ষ্ম খোঁচা ছিল। সেটা লক্ষ করেন না মৃণালিনী। বলেন, ঠিকানাটা দে

    ঠিকানা জানাতে জানাতে সুরজিৎ বলেন, ওদের ওপর একজন প্লেন ড্রেসের পুলিশকে নজর রাখতে বলেছি যাতে অন্য কোথাও পালিয়ে যেতে না পারে। এখন কী করব?

    তোর কিছু করতে হবে না। যা করার আমিও করছি।

    তুমি কি ওখানে যাবে?

    নিশ্চয়ই।

    কিন্তু

    কী?

    বেশ শঙ্কিতভাবেই সুরজিৎ বলেন, তোমার না যাওয়াই ভালো। আমি বরং বুঝিয়ে সুঝিয়ে বাড়িতে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করি। তুমি গেলে হইচই চেঁচামেচি হবে। লোকজন মজা দেখার জন্যে ভিড় করবে। স্ক্যান্ডালের চুড়ান্ত হবে।

    মৃণালিনী বললেন, স্ক্যান্ডালের বাকি কিছু আছে! এখন কিছু লোক জানে, দুদিন পর না হয় সবাই জানবে। সেই কলেজে ঢোকার পর থেকে জ্বালিয়ে আসছে। এবার যা হবার হোক। যে কোনও ইভেনচুয়ালিটির জন্যে আমি তৈরি। সুরজিৎকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে লাইন কেটে দিতে দিতে তাপসীকে বলেন, বউমা, জামাকাপড় পালটে নাও। আমিও শাড়িটা বদলে নিচ্ছি।

    ভয়ে ভয়ে তাপসী জিগ্যেস করে, আপনি কি এখনই লেকটাউনে যাবেন।

    হ্যাঁ। একা আমি না, তোমাকেও যেতে হবে।

    কিন্তু

    মৃণালিনী তীক্ষ্ণ চোখে তাপসীকে লক্ষ করতে করতে বলেন, লড়াইটটা আমার একার না, তোমারও। যাও–

    আধঘণ্টার ভেতর দুজন বেরিয়ে পড়েন।

    .

    সুরজিৎ লেকটাউনের যে হাইরাইজের ঠিকানা দিয়েছেন তার নাম অপ্সরা। সেটা খুঁজে বার করতে অসুবিধা হল না।

    ট্যাক্সি থেকে নেমে লিফটে করে মৃণালিনীর সঙ্গে সিক্সথ ফ্লোরে উঠতে উঠতে তাপসীর বারবার কেন যেন মনে হচ্ছিল যে যুদ্ধে তারা নেমেছে তাতে হার অনিবার্য। অথৈ নৈরাশ্যে ক্রমশ ডুবে যাচ্ছিল সে।

    সিক্সথ ফোরে এসে সাত নম্বর ফ্ল্যাটে কলিং বেল বাজাতেই দরজা খুলে দেয় বরুণ। মৃণালিনীদের দেখে ভয়ে তার মুখ রক্তশূন্য হয়ে যায়। কোনওরকমে সে বলতে পারে, তুমি-তোমরা! এ বাড়ির ঠিকানা কোথায় পেলে!

    মুখ শক্ত হয়ে উঠেছিল মৃণালিনীর। কঠোর গলায় বলেন, তা নিয়ে না ভাবলেও চলবে। এক্ষুনি বাড়ি চলো–

    এর মধ্যে নিজেকে অনেকটা সামলে নিয়েছে বরুণ। বলে, না। এখন আমার পক্ষে যাওয়া সম্ভব না।

    কেন?

    বরুণ উত্তর দেয় না।

    মৃণালিনী কী বলতে যাচ্ছিলেন, এই সময় ভেতর থেকে একটি তরুণী বেরিয়ে আসে। গায়ের রং পাকা গমের মতো। চোখ ধাঁধিয়ে দেবার মতো তার চেহারা। মেয়েটার চিবুকের খাঁজে, ভেজা ভেজা রক্তাভ ঠোঁটে, ঢুলঢুলু চোখে, ডান গালে মটরদানার মতো একটি তিলে, নিটোল মসৃণ গ্রীবায় এমন এক উগ্র মাদকতা মাখানো রয়েছে যে তার দিকে তাকালে যে কোনও পুরুষের মন অশ্লীল হয়ে ওঠে।

    তরুণীটি যে সুনীতা তা না বলে দিলেও চলে। একটু আগে লিফটে করে ওপরে আসতে আসতে তাপসী যা ভেবেছিল সে সম্পর্কে আর সংশয় থাকে না। এ যুদ্ধে জেতা অসম্ভব।

    এদিকে প্রখর চোখে কয়েক পলক তরুণীটির দিকে তাকিয়ে থাকেন মৃণালিনী। তারপর বলেন, তুমি সুনীতা?

    মেয়েটি আস্তে মাথা নাড়ে।

    মৃণালিনী বলেন, তুমি কি জানো, আমার ছেলে বরুণ বিবাহিত?

    সুনীতা বলে জানি।

    তাপসীকে দেখিয়ে মৃণালিনী বলেন, এ হল তার স্ত্রী

    সুনীতা একবার তাপসীকে দেখ মুখটা ফিরিয়ে নেয়।

    মৃণালিনী বলেন, সব জেনেশুনে একটা সংসার নষ্ট করে দিচ্ছ কেন?

    সুনীতা উত্তর দেয় না।

    প্রচণ্ড রাগে শরীরের সব রক্ত হঠাৎ মাথায় উঠে আসে মৃণালিনীর। গলার শিরা ছিঁড়ে তিনি চেঁচিয়ে ওঠেন, শেমলেস ডার্টি বিচ—

    তাঁকে থামিয়ে দিয়ে জ্বলন্ত চোখে তাকায় সুনীতা। ছুরির মতো ধারালো গলায় বলে, স্টপ। এই ফ্ল্যাটটা আমি ভাড়া নিয়েছি। আমাকে আর একবার গালাগাল দিলে আপনাকে বার করে দেব। আপনাদের পারিবারিক ব্যাপারে যা বলার বরুণকে বলবেন। সে নাবালক শিশু নয়, তাকে আমি ফুসলে নিয়ে আসিনি। বলে অত্যন্ত উদ্ধত ভঙ্গিতে যে ঘরটা থেকে বেরিয়ে এসেছিল, আবার সেখানে ঢুকে যায়।

    মৃণালিনীর মুখ লাল হয়ে উঠেছিল। বরুণকে বলেন, এক সেকেন্ডও আমি এই নরকে থাকছি না। প্যাসেজে চলো। সেটা নিশ্চয়ই ওই বজ্জাত মেয়েটা ভাড়া নেয়নি। বাইরে এসে বলেন, তোমার জন্যে একটা নোংরা বেশ্যা আমাকে অপমান করল।

    বরুণ মুখ নামিয়ে শুধু বলে, তুমি এখানে এসেছ কেন?

    স্থির দৃষ্টিতে ছেলেকে দেখতে দেখতে মৃণালিনী বলেন, খুব অন্যায় করে ফেলেছি। শেষ বারের মতো জিগ্যেস করছি, তুমি কি বাড়ি ফিরবে।

    তোমাকে তো তখনই বললাম—

    তার মানে ফিরবে না। কিন্তু বউমার কী হবে।

    আমি কিছু জানি না। বিয়েটা তুমিই জোর করে দিয়েছিলে।

    তোমার একেবারেই মত ছিল না, এই তো? তা হলে এক-দেড় বছর তার সঙ্গে ঘর করলে কী করে?

    বরুণ বলে, সেটা তোমার মুখ চেয়ে।

    মৃণালিনী বলেন, ও, আচ্ছা! তোমার মতো ইতর, লম্পটের সঙ্গে কথা বলতেও ঘেন্না হচ্ছে। এখন থেকে তাপসীর বা আমার সঙ্গে তোমার কোনও সম্পর্ক থাকবে না। চলো তাপসী।

    দুজনে লিফটে করে নীচে নেমে আসনে। ট্যাক্সি ধরে বাড়ির দিকে ফিরতে ফিরতে তাপসীর কাঁধে একটা হাত রেখে নরম গলায় মৃণালিনী বলেন, ভেঙে পড়ো না মা। ওই রকম একটা লম্পটের সঙ্গে সম্পর্ক না থাকলে জীবন নষ্ট হয়ে যায় না। তোমার সামনে বিরাট ভবিষ্যৎ। তোমার জীবন আমি নতুন করে গড়ে দেব।

    তাপসী কাঁদছিল। পরম মমতায় তার চোখ মুছিয়ে দেন মৃণালিনী।

    দিন দশেক পর একজন পরিচিত লইয়ারকে ডেকে এনে তাপসীকে দিয়ে বরুণের বিরুদ্ধে ডিভোর্সের মামলা শুরু করিয়ে দেন মৃণালিনী। কারণ দুশ্চরিত্র স্বামীর লাম্পট্য। তারপর তাকে বি.টি, পড়বার জন্য কলেজে ভর্তি করে দেন।

    আরো দুবছন বাদে পর পর দুটো ঘটনা ঘটে যায়। বি.টি. করার পর একটা নাম করা স্কুলে চাকরি পায় তাপসী। তার মধ্যেই বরুণের সঙ্গে তার বিবাহবিচ্ছেদ হয়ে গিয়েছিল।

    দ্বিতীয় ঘটনাটি মারাত্মক। হঠাৎ একদিন রাত্রে মাঝারি ধরনের হার্ট অ্যাটাক হয়ে যায় মৃণালিনীর। চারদিন ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে এবং আরো পনেরো দিন নাসিং হোমের কেবিনে থাকার পর বাড়ি ফিরে আসেন ঠিকই কিন্তু খাওয়া-দাওয়া, চলা-ফেরা–সবই ধরা বাঁধা। ডাক্তারের নির্দেশে সারাদিনই ফ্ল্যাটে আটকে থাকতে হয়, বাইরে বেরুবার উপায় নেই। স্কুলে ছুটি নিয়ে সারাক্ষণ তাঁকে আগলে আগলে রাখে তাপসী। রোজ একজন ডাক্তার এসে তাকে দেখে যান।

    একদিন মৃণালিনী বললেন, তোমার সঙ্গে আমার একটা দরকারি কথা আছে মা।

    আগে তাপসীকে বউমা বলতেন তিনি, কোর্ট থেকে পাকাপাকি বিবাহবিচ্ছেদের পর শুধু তাপসী বলেন কিংবা মা।

    উৎসুক চোখে তাকায় তাপসী।

    মৃণালিনী বলেন, আমার বয়স পঁয়ষট্টি পেরিয়েছে। কদিন আর বাঁচব! তার ওপর একটা স্ট্রোক হয়ে গেল। ডাক্তাররা বাড়ির ভেতর আটকে দিয়েছে। জীবন অনেকখানি অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।

    তাপসী সন্ত্রন্ত ভঙ্গিতে বলে, এসব বলবেন না মা। আপনি এখনও অনেকদিন বাঁচবেন। আমি ডাক্তারদের সঙ্গে কথা বলেছি। তারা বলেছেন তাদের কথামতো চললে কোনও ভয় নেই।

    মৃণালিনী হাসেন, বলেন, ডাক্তাররা যাই বলুন, মৃত্যুর ওপর মানুষের হাত নেই। বিশেষ করে আমার যা বয়স তাতে সময় ফুরিয়ে আসছে। তার আগে তোমার ব্যাপারে আমার কিছু করণীয় আছে।

    তাপসী বলে, আমার জন্যে যা করেছেন, আমার মা-বাবা বেঁচে থাকলে তা করতে পারত কিনা সন্দেহ। আপনার জন্যে নিজের পায়ে দাঁড়াতে পেরেছি।

    মৃণালিনী বলেন, আমাদের যা সোসাইটি তাতে একটি কম বয়সের মেয়ের পক্ষে তা যথেষ্ট নয়। রাজার সঙ্গে বিয়ে দিয়ে তোমার কয়েকটা বছর আমি নষ্ট করে দিয়েছি। এবার তার ক্ষতিপূরণ করব।

    মৃণালিনী ঠিক কী বলতে চান বুঝতে না পেরে তাকিয়ে থাকে তাপসী।

    মৃণালিনী বলেন, আমি একটি ছেলেকে জানি, সে আমার এক ছাত্রীর দাদা। হি ইজ আ ব্রিলিয়ান্ট বয়। আমেরিকা থেকে ডক্টরেট করে এসেছে। এখানকার একটা ইউনিভার্সিটিতে পড়ায়। ভেরি অনেস্ট, চরিত্রবান। এখনও বিয়ে করেনি। নাম রজত। এই ছেলেটির সঙ্গে তোমার বিয়ে দেব। আমার বিশ্বাস, এবার তুমি সুখী হবে।

    তাপসী হকচকিয়ে যায়। দুহাতে মুখ ঢেকে জোরে জোরে প্রবল বেগে মাথা নাড়তে নাড়তে বলে, না, না, এ হতে পারে না। আমি আপনাকে ছেড়ে কোথাও যাব না।

    কোথাও যেতে হবে না আপাতত। রজতের সঙ্গে আমার কথা হয়ে গেছে। রেজিস্ট্রিটা হয়ে থাক। তারপর দেখা যাবে।

    তাপসী কিছুতেই রাজি হয় না। সমানে কাঁদতে থাকে। তাকে কাছে টেনে নিয়ে মাথায় হাত বুলোতে বুলোতে মৃণালিনী অনেকক্ষণ বোঝন, আমার কিছু হলে কে দেখবে তোমাকে? মেয়েরা যতই স্বাবলম্বী হোক, তাদের একজন রক্ষাকর্তা দরকার।

    একসময় কান্না থামে তাপসীর। মাথা নীচু করে ঝাপসা গলায় জিগ্যেস করে, আপনি তো বিয়ের কথা বলছেন। আমার সব কথা কি ওরা জানে?

    জানে। আমি কিছুই লুকোইনি।

    তাপসী আর কোনও প্রশ্ন করে না।

    .

    আরো মাস তিনেক বাদে ম্যারেজ রেজিস্ট্রারকে বাড়িতে ডাকিয়ে রজতের সঙ্গে তাপসীর বিয়ে দেন মৃণালিনী। এখনকার মতো রেজিস্ট্রি হয়ে রইল। পরে আত্মীয়-স্বজন বন্ধুবান্ধবদের নেমন্তন্ন করে বড় হল-এ অনুষ্ঠান করা হবে।

    বিয়ের মাসখানেক পর সজ্ঞানে, সুস্থ মস্তিষ্কে উইল করে ফেলেন মৃণালিনী। তার মৃত্যু হলে এই ফ্ল্যাট এবং তার জমানো সমস্ত অর্থ পাবে তাপসী।

    অনেক বাধা দিতে চেষ্টা করেছিল তাপসী। মৃণালিনী শোনেননি।

    এই মানুষটিকে বরুণের সঙ্গে বিয়ের পর খানিকটা চিনতে পেরেছিল তাপসী। তারপর বিবাহবিচ্ছেদ, রজতের সঙ্গে দ্বিতীয়বার বিবাহ এবং উইলের মধ্য দিয়ে সেই চেনাটা যেন সম্পূর্ণ হয়। জীবনে মৃণালিনীর মতো মানুষ আছে আর কখনও দেখেনি তাপসী।

    1 2 3 4 5 6 7 8 9
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleসমাপ্তি – প্রফুল্ল রায়
    Next Article নিজেই নায়ক – প্রফুল্ল রায়ভ

    Related Articles

    প্রফুল্ল রায়

    আলোর ময়ুর – উপন্যাস – প্রফুল্ল রায়

    September 20, 2025
    প্রফুল্ল রায়

    কেয়াপাতার নৌকো – প্রফুল্ল রায়

    September 20, 2025
    প্রফুল্ল রায়

    শতধারায় বয়ে যায় – প্রফুল্ল রায়

    September 20, 2025
    প্রফুল্ল রায়

    উত্তাল সময়ের ইতিকথা – প্রফুল্ল রায়

    September 20, 2025
    প্রফুল্ল রায়

    গহনগোপন – প্রফুল্ল রায়

    September 20, 2025
    প্রফুল্ল রায়

    নিজেই নায়ক – প্রফুল্ল রায়ভ

    September 20, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    দারোগার দপ্তর ৩ – প্রিয়নাথ মুখোপাধ্যায়

    September 22, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    দারোগার দপ্তর ৩ – প্রিয়নাথ মুখোপাধ্যায়

    September 22, 2025
    Our Picks

    দারোগার দপ্তর ৩ – প্রিয়নাথ মুখোপাধ্যায়

    September 22, 2025

    আরব জাতির ইতিহাস – ফিলিপ কে. হিট্টি (অনুবাদ : প্রিন্সিপাল ইবরাহীম খাঁ)

    September 22, 2025

    নিউ মুন – স্টেফিন মেয়ার

    September 22, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    • Sign Up
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }

    Sign In or Register

    Welcome Back!

    Login below or Register Now.

    Lost password?

    Register Now!

    Already registered? Login.

    A password will be e-mailed to you.