Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • English Books
      • Jules Verne
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    ছোটগল্প – বুদ্ধদেব গুহ

    বুদ্ধদেব গুহ এক পাতা গল্প831 Mins Read0
    ⤶ ⤷

    দূরবীনের দুদিক

    মেঘের এইমাত্র ঘুম ভাঙল।

    সারা রাত টাপুর-টুপুর করে রানিগঞ্জ টাইলের ছাদের উপর বৃষ্টি নরম সুরে আলতো পায়ে নেচেছিল। মাটির সোঁদা গন্ধ ভাসছিল হাওয়ায়। দূরের বস্তিতে কোনো ওঁরাও মেয়ের বিয়ে ছিল বুঝি কাল রাতে। দ্রিদিম-দ্রিম-দ্রিমিমি-দ্রিমের ঘুমপাড়ানি একঘেয়ে বিষণ্ণ শব্দ ভেসে এসেছিল। শাল-জঙ্গলের বৃষ্টিভেজা ঘন সবুজ চুল পিছলে। কাল মাদলের শব্দটা বড়ো একঘেয়ে বিষণ্ণ লেগেছিল মেঘের।

    তালে কোনো বৈচিত্র্য নেই অথচ এর সমস্ত মাধুর্য ওই একঘেয়েমিতেই।

    যেহেতু প্রাকৃতিক এই পরিবেশে বর্ণাঢ্য বৈচিত্র্য, যেহেতু কোনো পাখি একই সুরে ডাকে না, ডাকে না একই পর্দায়, বিভিন্ন ফুল ফোঁটা ও ফুল ঝরার নিঃশব্দ সুরেলা আরোহণ ও অবরোহণের গা-শিউরানো প্রক্রিয়াতেও যেহেতু কোনো সাম্য নেই–এই পারিপার্শ্বিক বৈচিত্র্যতে ভারসাম্য আনতে দিগন্তরেখার উপরের সন্ধ্যা তারার স্থির সবুজাভ নিত্য এঘেয়েমির মতো, মাদলও এক সুরে এবং একই লয়ে বাজে বুঝি।

    ভোর হয়ে গেছে অনেকক্ষণ। ভোরের দিকে বড়ো ভালো লাগছিল। বিছানাতে চাদর মুড়ি দিয়ে শুয়ে মেঘ বাইরের ঘুম-ভাঙা প্রকৃতির ভৈরবী শোনে। কোমল আর কড়িমা বৃষ্টি-চুমু রাতের পর। রোদেরাঙা সকালবেলায় পাখির স্বরে শিশুর খেলায়, বাছুরের ডাকে বিকীর্ণ হয়ে ওঠে।

    ওর শরীরের মধ্যে এত আনন্দ ও আনন্দর উৎস লুকোনো ছিল তা আগে কখনো জানেনি মেঘ। মেঘের বয়স কত? বয়স কি বয়সে হয়? কারোই? মণি-মাণিক্য সবই ছিল লুকোনো, অনুভুতি, উত্তেজনা সমস্ত ছিলঞ্জ, কিন্তু সুপ্তঞ্জ, কাল রাতে তার শরীরের অন্ধকার ভাণ্ডারে কোনো সাহসী। এবং বড়ো কোমল দস্যু এসেছিল ভালোবাসার নরম মশাল জ্বেলে। ওর সাত রাজার ধন যা ছিল সব কেড়ে নিয়ে গেল সেই দারুণ চোর। সর্বস্ব-হৃত হবার পরই শুধুমাত্র জানতে পেল মেঘ যে, ওর অত কিছু ছিল। এবং এও জানতে পেল যে, ওর শরীরের মধ্যে প্রতিমুহূর্তে সর্বস্ব-হৃত হয়েও আবার সম্পূর্ণ হতে পারার নিরন্তর কোনো জটিল প্রক্রিয়া চলেছে। আনন্দ বিকিরণ, বিতরণের সঙ্গে আনন্দর জোগান যেন কোনো অজানা গোপন উৎস হতে উৎসারিত হচ্ছে।

    শরীরকে ও ঘৃণা করত, অশুচি বলে জানতঞ্জ, কিন্তু প্রকৃতির এই আশ্চর্য অনাবিল সৌন্দর্যের মধ্যেঞ্জ, চারিদিকের এই সমস্ত কিছু অলিখিত অথচ অমোঘ বিধানের মধ্যে যে ওর প্রাকৃত প্রকৃতি এমনভাবে সুপ্ত ও নিহিত ছিল, ফুল ফোঁটা, পাখি ডাকার মধ্যে তার নারী শরীরেরও যে এত মিষ্টি একটি সুনির্ধারিত স্থান ছিল তা ও এই এতগুলো বিবশ বছরে কখনো জানেনি।

    যদিও জেনে মেঘের খুব ভালো লেগেছিলঞ্জ, জীবন, সুখ, আনন্দ এই সব কিছুর এক বিশেষ মানে খুঁজে পেয়েছিল, যদিও প্রথমবার, কাল রাতেঞ্জ, তবুও সেই মুহূর্তে এক গভীর বিষণ্ণতা ওকে দারুণভাবে আচ্ছন্ন করে ফেলেছিল।

    ফেলেছিল, কারণ যে পুরুষ ওর শরীরে কাল আরতি করেছিল এবং মেঘকে সেই আরতির আর্তির ভাগ দিয়েছিল অভণ্ড সাম্যবাদীর মতো, সে মেঘের স্বামী নয়। সে মেঘের কেউ নয়। এই ক্ষণিক, মধুর আনন্দের তীব্র সুখ ও জ্বালা-ভরা সম্পর্কের কোনো পরিণতি নেই।

    এই সত্যটা ওর চেতনায় কাকতাড়ুয়ার মতো ভাস্বর হতেই এই সকালের সব সুগন্ধ, শান্তি, ভালোলাগা ওর সুখ, ভয়ার্ত পাখির মতো চেতনা ছেড়ে উড়ে গেল। দূরে। বাইরে থেকে রোদ উত্তেজিত গলায় চেঁচিয়ে বলল, পাখি, পাখিঞ্জ, মেঘ পাখি। দৌড়ে এসো।

    প্রথমে মেঘ বুঝতে পারেনি। বড়ো ঘোরের মধ্যে ছিল ও। হঠাৎ ওর পাশে চোখ ফেরাল। সাদার মধ্যে নীল ফুলফুল বেডশিটটা কুঁকড়ে-মুকড়ে আছে। রোদের বালিশটা দোমড়ানো-মোচড়ানো। কাল এই বিছানায় কালবৈশাখী ঝড় উঠেছিল। যখন বাইরে বৃষ্টি।

    খুব বড়ো একটা নিঃশ্বাস ফেলল মেঘ।

    বাইরে থেকে রোদ চেঁচিয়ে ডাকল, মেঘ প্লিজ, দৌড়ে এসো। সালিম আলির বইটা নিয়ে এসো টেবিল থেকে। আমি এখান থেকে নড়তে পারছিনা। চোখ সরালেই হারিয়ে যাবে পাখিটা। না, নাঞ্জ, একটা নয় দুটো। দুটো পাখি।

    মেঘ উঠল। শরীরে প্রথম বড়ো ভার মনে হল। তারপরই বড়ো হালকা লাগল। পাখির মতো হালকা। ভাবল, ও উড়ে যাবে।

    তারপর ড্রেসিং টেবিল থেকে সালিম আলির বইটা তুলে নিয়ে বাইরে এল। এসেই চমকে গেল।

    কাল প্রথম সন্ধ্যার অন্ধকারে এসে ফরেস্ট বাংলোয় উঠেছিল। ভালো দেখতে পায়নি চারপাশ। অনুমান করেছিল শুধু। এখন রোদে চারিদিক ঝলমল করছে। পাহাড়ি নদীটা, উপত্যকা, বর্ষার সবুজ ভরন্ত মাথা-উঁচু সবুজ বালাপোশ-মোড়া পাহাড়। লাল মাটির কুঁড়ি পথ। সতেজ ঘাস, পাতাঞ্জ, সব।

    বাঁ-দিকে চেয়ে দেখল, বারান্দার সামনে সাদা বেতের চেয়ারে বসে আছে রোদ। কাল রাতে-পরা সাদা পায়জামা-পাঞ্জাবি পরে। অন্য চেয়ারের উপর পা। বেতের টেবলের উপর টি-কোজীতে মোড়া টি-পট–চায়ের কাপঞ্জ, ট্রেতে সাজানো। আর ওর কোলে কালো দূরবিনটা।

    মেঘ কাছে যেতেই হাত থেকে সালিম আলির বইটা কেড়ে নিয়ে দ্রুত পাতা ওলটাতে লাগল রোদ। পাতা ওলটাতে ওলটাতে বাঁ-হাত দিয়ে ডান হাতে দূরবিনটা এগিয়ে দিল মেঘকে।

    বলল, শীগগিরি দ্যাখো। এখুনি উড়ে যাবে হয়তো।

    এই মুহূর্তে রোদের সামনে এমন ফিঙের মতো উজ্জ্বল কালো সুরেলা একটি পাখি দাঁড়িয়ে থাকা সত্ত্বেও রোদ যে একটা অন্য পাখি নিয়ে এত মাতামাতি করবে ও করছে, এই ভাবনাটাই

    মেঘকে বিরক্ত করে তুলল।

    তবু রোদের কথামতো দূরবিনটা তুলে ধরল দু-হাতে। তারপর ঝাঁকড়া গাছটার মগডালে রোদের নির্দেশমতো খুঁজতে লাগল পাখিটাকে।

    দূর থেকে ও বাসের নম্বর পড়তে পারে, মিছিলের লাল শালুতে কী লেখা আছে পড়তে পারেঞ্জ, কিন্তু পাখি দেখতে পারে না। ও শহরে লেপ্টে থাকা ভেসে বেড়ানো মেঘ। প্রকৃতির মেঘ নয় ও।

    অনেকক্ষণ কিছু দেখতে পেল না মেঘ। দূরবিনের দুটো কাচেই রাশরাশ সবুজ এসে ধাক্কা দিতে লাগল, হুড়োহুড়ি করতে লাগল। মেঘের মনে হল, ওর চোখ দুটোই সবুজ হয়ে যাবে।

    বলল, কই? দেখতে পাচ্ছি না তো।

    রোদের শক্ত পুরুষালি হাতদুটো মেঘের কাঁধের দু-পাশে নেমে এল। ওর নরম হাতের পাতার উপরে তার শক্ত হাত। তারপর দুরবিনের রেগুলেটারটা ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে একটা জায়গায় এনে। রোদ বলল, আবার দ্যাখো, দেখতে পাবে। উত্তেজিত গলায় বলল, তাড়াতাড়ি করো, নইলে উড়ে যাবে।

    মেঘ এবারে গাছটাকে পরিষ্কার দেখতে পাচ্ছে। গাছের পাতাগুলো কত বড়ো বড়ো দেখাচ্ছে। শুকনো সরু ডালগুলোর গায়ে কালো পিঁপড়ে দেখতে পেল ক-টা। এক বড়ো ডাল থেকে দুটি ছোটো ডাল উঠে গেছে ওপরে।

    মেঘ মিথ্যা বিরক্তি দেখিয়ে বলল, পাখি কই?

    রোদ সত্যি বিরক্তিতে বলল, তুমি কি কানা? অমন লাল পাখিটাকে তুমি দেখতে পাচ্ছ না? অমন লাল দেখেছ কখনো?

    তারপর রোদ মনে মনে বলল, প্রথম যৌবনের স্বপ্নের মতো কোমল স্কার্লেট। লাল বললে ঠিক বলা হয় না। এই লালের কোনো বাংলা প্রতিশব্দ নেই।

    দেখেছি, দেখেছি! বলে ওঠে মেঘ।

    তারপর মেঘ একদৃষ্টে তাকিয়ে থাকে। অস্ফুটে বলে ওঠে, আঃ, কী সুন্দর! নিজের অজ্ঞাতে। পাখিটা কি মেঘের চেয়েও সুন্দর? নরম, রেশমি স্কার্লেট-রঙা ছোটো পাখিটা! কী পাখি? হলুদ বসন্ত?

    রোদ হাসল, বলল, না। হলুদ বসন্ত নয়। বই দেখে বলব। দুটোর একটাকেও চিনি না আমি। এত সুন্দর পাখি দেখিনি কখনো আগে। একটা লাল, একটা হলুদ, নিশ্চয়ই এক জাতের নয়। কিন্তু এমন বিহেভ করছে দেখে যেন মনে হয় জোড়া।

    অনলাইনে বেস্টসেলিং বই কিনুন

    মেঘ চোখে দূরবিনটা লাগিয়ে রেখেই বলল, তুমি আর আমি কি একরকমই দেখতে? জুড়ি মাত্রকেই কি একরকমই হতে হবে?

    তারপর নিরুচ্চারে বলল, তুমি পাহাড়ি বাজের মতো সাদা, শক্তিমান, প্রবল, প্রচণ্ড। আর আমি কালো কোকিলের মতো। কালো আমার গায়ের রং, কালো আমার চোখের তারা, মিষ্টি আমার। গলার স্বর। দুর্বলতা তোমার শনিঞ্জ, দুর্বলতা আমার বৃহস্পতি। কিন্তু তুমি আমি কি জোড় বাঁধিনি, ক্ষণকালের জন্যে হলেও?

    রোদ বলল, আমরা তো মানুষ।

    মেঘ বলল, মানুষরা কি পাখি নয়?

    রোদ বলল, হলে ভালো হত। কিন্তু নয়। মানুষরা অনেক নিকৃষ্টতর জীব।

    ডালটা ঝাঁকিয়ে পাখি দুটোহুস করে উড়ে গেল।

    রোদ মাথা নীচু করে বইয়ের পাতা উলটোচ্ছিল। পাখি দুটোও উড়ে গেল, ও-ও মুখ তুললঞ্জ, বলল, পেয়েছি।

    তারপরই বলল, স্ট্রেঞ্জ! আরে! ওরা যে একই পাখি। এক জোড়া। এই দ্যাখো ছবি। দেখেছ–পুরুষ আর নারী। দু-রকম দেখতে।

    মেঘ দূরবিনটা টেবলে নামিয়ে রাখল।

    বলল, তুমি দ্যাখো, আমি চা খাই। তুমি আর খাবে?

    খাব। দু-চামচ চিনি।

    জানি।

    চা ঢালতে ঢালতে মেঘ বলল, নাম কি পাখি দুটোর?

    স্কার্লেট মিনিটে। বড়ো সুন্দর। তাই না?

    মেঘ কথা বলল না। চুপ করে থাকল। চায়ের কাপ এগিয়ে দিল রোদকে।

    রোদ কিছুক্ষণ মেঘের দিকে চেয়ে রইল। কাল রাতের কাজল লেপে গেছে চোখের কোণে।

    রোদ বলল, তুমিও সুন্দর। খুব সুন্দর। স্কার্টে মিনিভেটের মতোই। ওই পাখিরাও হয়তো লাল হলুদ পালকের নীচে তোমারই মতো কালো।

    কাল ঘরের মধ্যে, আধধা অন্ধকারে, বৃষ্টির শব্দের মধ্যে যা লজ্জাকর ছিল সেই রাতের স্মৃতিকে এক আকাশ আলোর নীচে এনে দাঁড় করালে লজ্জা করে। লজ্জায় মুখ নামিয়ে নিল মেঘ।

    রোদ খুব আস্তে আস্তে নীচু গলায় মেঘের পিঠে হাত রেখে বলল, কাল তোমার ভালো লেগেছিল? মেঘের কানের লতি বেগুনি হয়ে উঠল। বুলবুলি ডাকছিল ফিসফিস করে। কাঠবিড়ালি ভেজা মাঠ বেয়ে দ্রুত দৌড়ে যাচ্ছিল অন্যদিকে। উপত্যকার উপরে এক ঝাঁক হলুদ প্রজাপতি উড়ছিল। মেঘের ভীষণ ভালো লাগছিল।

    রোদ এবার মেঘের কানের লতিতে নিজের গাল ছুঁইয়ে বলল, কী? লাগেনি ভালো?

    মেঘ অস্ফুটে হাসল।

    বলল, চা চলকে যাবে। কী করছ?

    রোদ আবার বলল, জীবন চলকে যে কত কিছু পড়ে ধুলোয় ফেলা যায়, তার বেলা? কাপ চলকে চা পড়লেই দোষ?

    আমি অত কথা জানি না তোমার মতো।

    বলল, ভালো লেগেছে কী না?

    মেঘ এবার হাসল। হাসলে ওকে আরও সুন্দর দেখায়। বলল, জানি না।

    রোদ বলল, জান ভালো করেই। বলবে না যে তা বললেই হয়। বেশ! আমি ওইরকমই। সব কথা বলা যায় না, বলতে পারি না আমি।

    রোদ মেঘের গ্রীবাতে ওর ঠোঁট ছোঁওয়াল। বলল, এই জন্যেই তো তোমাকে বড়ো ভালোবাসি। তুমি বড়ো মেয়েলি। আজকাল মেয়েলি মেয়েরা উধাও হয়ে যাচ্ছে।

    মেঘ বলল, তা আমি জানি না।

    ২.

    তিনদিনের একদিন তো ফুরিয়ে গেল। আজকের প্রোগ্রাম কী?

    তুমিই ঠিক করো। রোদ বলল।

    আহা! আমি কি তোমার মতো এই জায়গাটা চিনি, জানি? আমি জঙ্গল পাহাড়ের কী জানি? তুমি যেখানে নিয়ে যাবে, যাব।

    এখন কোথাও যাওয়া-টাওয়া নয়। জাস্ট রিল্যাক্স করব। দুপুরের খাওয়া-দাওয়ার পর তোমাকে ওই পাহাড়ের উপরের ভাঙা দুর্গে নিয়ে যাব। ভালো লাগবে। রোদ বলল।

    কেন? আমার কপালে কি ভাঙা দুর্গ ছাড়া আর কিছু নেই? পোড়োবাড়ি, ভাঙা দুর্গ আমার ভালো লাগে না। গা ছমছম করে। আমাদের সুন্দর কিছু জীবন্ত জিনিস দেখাও। পড়ন্ত জিনিস নয়। মুমূর্মুও নয়।

    মেঘ বলল।

    হঠাৎ জঙ্গলের মধ্যে দূরে একটা গাড়ি আসার আওয়াজ হল।

    মেঘ শঙ্কিত হয়ে উঠল। বলল, কারা যেন আসছে। যদি কেউ আমাদের দেখে ফেলে একসঙ্গে?

    দেখলে, দেখবে। আমরা কি স্কার্লেট মিনিভেট? আমাদের দেখার কী আছে? আমাদের দেখার জন্যে এত দূরে লোকে আসবেই বা কেন?

    গাড়ির শব্দটা কিন্তু জোর হচ্ছে।

    হোক। একটা গাড়ি আসছে, তা তো বোঝাই যাচ্ছে।

    আমি ভিতরে যাই, ভয়ার্ত গলায় মেঘ বলল।

    রোদকেও একটু চিন্তান্বিত দেখাল। কিন্তু স্বাভাবিক গলায় বলল, যেতে চাইলে যাওঞ্জ, চায়ের ট্রেটা নিয়ে যেতে বলো চৌকিদারকে।

    তারপর বলল, ব্রেকফাস্ট কখন খাবে?

    মেঘ বলল, কারা আসছে এখন দ্যাখো। ব্রেকফাস্ট খাবো না মারধোর খাব, কী বলা যায়?

    রোদ স্বগতোক্তির মতো বলল, গাড়িটা এখনও অনেক দূরে আছে। ঘুরে ঘুরে পাহাড়ে উঠছে।

    তারপর বলল, তুমি যদি বড়োই হয়েছ, স্বাবলম্বী হয়েছ, তাহলে এত ভয় পাও কেন?

    আমি ভয় পাই না। বলেই, মেঘ উঠে দাঁড়াল।

    রোদ বলল, কীসের ভয় তোমার?

    মেঘ গম্ভীর হয়ে গেল। বলল, তুমি বুঝবে না, তুমি অনেক বোঝে হয়তোঞ্জ, সব বোঝে না।

    রোদের গলায় বিরক্তির সুর লাগল। বলল, বলবে না তাই-ই বল। কথা ঘোরাও কেন?

    মেঘ মুখ ফিরিয়ে দাঁড়াল রোদের দিকে। বলল, তোমরা স্বার্থপর পুরুষ কী বুঝবে? বললেও কী বুঝবে? আমার ভয়টা তোমারই জন্যে। তোমাকে হারানোর ভয়ও বলতে পার।

    তারপর চলে যেতে যেতে দাঁড়িয়ে পড়ে বলল, তোমার তো অনেক আছে, অনেকঞ্জ, সবই আছে জীবনেঞ্জ, আমার তো তুমি ছাড়া আর কিছু নেই। তুমি কী করে বুঝবে আমার ভয়ের কথা?

    বলেই, মেঘ ভিতরে চলে গেল।

    গাড়ির শব্দটা কাছে এসেছে অনেক। একেবারে কাছে এল। একটা জীপ। কিন্তু বাংলোর হাতায় ঢুকল না, সামনের কাঁচা লাল মাটির রাস্তা বেয়ে পাহাড় গড়িয়ে লো-গিয়ারে গুটুর-গুটুর করে। নামতে লাগল।

    রোদ চেঁচিয়ে ডাকল, এই ভিতু, এবারে এসোঞ্জ, ভয় চলে গেছে।

    ৩.

    মেঘের আপত্তি থাকায় সত্যিই পোড়ো দুর্গে যায়নি ওরা। মেঘকে নিয়ে রোদ হাঁটতে বেরিয়েছিল বনের পথে। বিকেলে চা খাওয়ার পর। দুপুরে ওরা দুজনে চাইনিজ-চেকার খেলেছিল। রোদ বলেছিল, এই রকম কোনো সুন্দর জায়গায় ঘরে বসে কিন্ডারগার্টেনের ছেলে-মেয়ের মতো খেলা ক্রিমিন্যাল ওয়েস্ট অব টাইম।

    মেঘ বলেছিল যে, জীবনের বহু সহস্র দিন তো তোমার বা অন্য কারো ইচ্ছামতো চলেছ এবং ভবিষ্যতের সহস্র দিনও চলবে। তিনটে দিন আমাকে দেবে বলেছিলে।–ভুলে গেলে?

    রোদ হেসেছিল। বলেছিল, ফেয়ার এনাফ। তোমার উকিল হওয়া উচিত ছিল, যা হয়েছ, তা না হয়ে।

    বিকেলের রোদের সোনা গাছগাছালির গায়ে এসে পড়েছে। লাল মাটির পথের উপর কালো ছায়ার ডোরাগুলো পড়ে পথটাকে একটা অতিদীর্ঘ বসে-থাকা বাঘের পিঠ বলে মনে হচ্ছে। ময়ূর ডাকছে থেকে থেকে উপত্যকা থেকে। দুপুরে এক পশলা বৃষ্টি হয়েছিল। বৃষ্টি থামার পর থেকেই তিতিরগুলো পাগলের মতো ডাকাডাকি শুরু করেছে চারপাশে। বাংলোর পিছনের গ্রাম থেকে। গোরু ডাকল হাম্বা-আ-আ-আ করে। গোরুর ডাকের মধ্যে কেমন এক আশ্চর্য বিষণ্ণতা আছে, যা এই বর্ষার বিকেলের বৃষ্টিভেজা সোঁদা-গন্ধ প্রকৃতির মনের সুরের সঙ্গে বাঁধা।

    ৪.

    রোদের সঙ্গে কিছুক্ষণ পায়ে হেঁটে ঘুরেই ভারি ভালো লাগছে মেঘের। জঙ্গলকে গাড়ি থেকে, ট্রেন। থেকে, প্লেন থেকে দেখা একঞ্জ, আর পায়ে হেঁটে দেখা অন্য।

    রোদের হাত ধরে ও যেন এক নতুন আশ্চর্য জগতে এসে পৌঁছেছে এই বিকেল বেলায়, যে জগতের কোনো খোঁজই ও রাখেনি কখনো।

    রোদ হাঁটতে হাঁটতে মেঘকে গাছ চেনাচ্ছে। ওই যে দেখছ জলি ঝোপগুলো এবং বড়ো বড়ো গাছ? এগুলোর নাম কাঠপুতলি। পাতাগুলো দেখেছ? শাল-সেগুনের মাঝামাঝি?

    ওমাঃ কী সুন্দর নাম! মেঘ বলে উঠল।

    ওই যে সোজা ঋজু গাছটা উঠেছে, ড্রিল-করা সোলজারের মতো ডাল দু-পাশে সমান্তরালে ছড়াতে ছড়াতেঞ্জ, ওটার নাম শিমুল!

    গাছটা ভারি পুরুষ-পুরুষ, টানটানঞ্জ, কী লম্বা।

    মেঘ বলল, রোদের বাঁ-হাত নিজের হাতে জড়িয়ে নিয়ে।

    রোদ মেঘের দিকে তাকাল একবার। একটা লেবু হলদে রঙের শিল্কের শাড়ি পরেছে মেঘ লেবু রঙা ব্লাউজের সঙ্গে। ওর শরীরেও যেন গন্ধরাজ লেবুর গন্ধ পেল রোদ। রোদ ভাবল, এত বিদূষী, সুন্দরী, আত্মসচেতন মেঘ এই জঙ্গলে এসে কেমন ছেলেমানুষ হয়ে গেছে।

    তারপর ভাবল, সকলেই হয়। প্রকৃতির মধ্যে এলে এতেই হয়।

    ওইগুলো কী ফল? কী সুন্দর! মেঘ আঙুল দেখিয়ে শুধোল।

    রোদ বলল, ওগুলোকে এখানে বলে কাঁকোড়। ওইগুলো দিয়ে মালা গেঁথে পরে বন-পাহাড়ের মেয়েরা। আর ওই যে ঝোপগুলো দেখছ, ওগুলোর নাম ঢোঁটর। লাল লাল ফল ধরে ওতে শীতকালে। টক টক ফল। খায় এরা।

    মেঘ মন্ত্রমুগ্ধের মতো বলল, চারিদিকে যে এত গাছ, তুমি সবার নাম জান? রোদ হেসে ফেলল। ওর কথার ধরন দেখে।

    বলল, সেটা আর কী বাহাদুরি! যে জংলি, সে জঙ্গলটুকুও ত চিনবে! তবে সকলের নাম কি জানি? কিছু কিছু জানি।

    বলো না, প্লিজ বলো। মেঘ আদুরে গলায় বলল।

    রোদ হাসল।

    বলল, তুমি একটা পাগলি। এখন গড়গড় করে আধ ঘন্টা ধরে গাছের নাম বলি আর কী?

    ঈস, আমার শাড়িতে চোর-কাঁটা লেগে গেল। মেঘ চিৎকার করে উঠল। প্রকৃতি-প্রেমে বাধা পড়ল ওর।

    রোদ নীচু হয়ে শাড়ির ফলস-এর ঠিক উপর থেকে সবুজ ফলের মতো কাঁটা-ভরা একটা ফল বের করে ছুঁড়ে দিল জঙ্গলে।

    বলল, চোরকাঁটা নয় এগুলো, এগুলোকে এরা বলে লিটপিটিয়া।

    কী নাম রে বাবা! বলে, মেঘ হাসল। একটা ছোট্ট হানিসাকার ভ্যারাইটির পাখি ডানদিকের একটা গামহার গাছের ডালে বসে ডাকছিল। ওই একটি ছোট্ট পাখির মিষ্টি স্বর কী করে যে ওই আদিগন্ত নৈঃশব্দকে ভরে দিচ্ছিল বারে বারে, তা দেখে মেঘ অবাক হচ্ছিল।

    মেঘ বলল, এই পাখিগুলোকে এখানের লোকেরা কী বলে?

    রোদ হাসল। বলল, নাম শুনলে তুমি হেসে ফেলবে।

    কী বলোনা।

    ফিচফিচিয়া।

    ইয়ার্কি? না?

    বলে, মেঘও হেসে উঠল।

    তারপর বলল, আমাকে বোকা ভেবে যা-তা বানিয়ে বানিয়ে বললেই হল। আমি গিয়ে চৌকিদারের কাছে সব ভেরিফাই করব।

    স্বচ্ছন্দে।

    হেসে বলল, রোদ।

    তারপর বলল, আমার জানার পরিধি বড়ো সীমিত। কিন্তু যতটুকু জানি, তাতে কোনো ফাঁকি নেই।

    মেঘ বলল, বাবা! কতদূরে চলে এলাম। ফেরার পথে তো অন্ধকার হয়ে যাবে। কোনো বিপদ হবে না তো?

    অন্ধকার হবে না। এখানে রোদ চলে যাওয়ার পরও অনেকক্ষণ আলো থাকে।

    মেঘ, মুখ তুলে চাইল রোদের দিকে। রোদের বাহুতে ঘন হয়ে এল ও।

    ফিসফিস করে বলল, আমার জীবনেও যেন তাই হয়।

    রোদ কথা বলল না। চুপ করে হাঁটতে লাগল। রোদ জানে যে, যখন খুব ভালো লাগে, তখন কথা বলে সে ভালোলাগাটা নষ্ট করতে নেই।

    মেঘ বলল, ওই পাথরটায় বসবে, ওই বড়ো কালো পাথরটাতে? রাস্তার পাশে? ডান দিকে খাদটা কতদূরে নেমে গেছে, না?

    বসবে? চলো!

    ওরা দু-জনে পাথরটার দিকে এগিয়ে গেল। রোদ প্রথম ভালো করে দেখে নিল পিঁপড়ে কী বিছের গর্ত-টর্ত আছে কিনা, তারপর মেঘকে হাত ধরে উপরে তুলল, বলল, বোসো।

    মেঘ বসলে, ওর পাশে এসে রোদ বসল।

    অনেকক্ষণ মেঘ কোনো কথা বলল না।

    নীচের উপত্যকার শঙ্খিনী নদীটির এখন ভরা যৌবন। লাল ঘোলা জল বয়ে চলেছে তাতে ঘন গর্জনে। অসংখ্য শালের আর পলাশের চারা গজিয়ে উঠেছে তার পাশে। ঘন আন্ডারগ্রোথে ভরে গেছে পাশবরাবর অনেকখানি জায়গা। খাদের পাশের পাহাড়টার পিঠটা বলদের কুঁজের মতো উঁচু হয়ে উঠেছে পশ্চিমে। এক ঝাঁক টিয়া ট্যাঁ-ট্যাঁ-ট্যাঁ করতে করতে, নদী-রেখা ধরে সোজা খাদের মধ্যে উড়ে গেল। কোথায় যাবে ওরা কে জানে? মেঘ ও রোদ যেখানে বসে আছে তার পিছন দিকে পিউ-কাঁহা ডাকছে থেকে থেকে। আসন্ন সন্ধ্যার সমস্ত খুশবু, শব্দের ঝুমঝুমি বাজতে লেগেছে, বাজতে লেগেছে চারপাশে। প্রকৃতি মায়ের রাতের ভাঁড়ার খোলার সময়ে ঝুমঝুমির মতো পাহাড়ি ঝিঝিরা ঝুমঝুমিয়ে বেজে উঠছে চারপাশের গাছে পাতায়।

    মেঘ অনেকক্ষণ নির্বাক হয়ে বসে রইল। আকাশের রোদ আস্তে আস্তে সরে যেতে লাগল।

    মেঘের পাশে রোদ তখন স্থির।

    হঠাৎ মেঘ বলল, জান, হনলুলুতে ওরা নৌকো করে প্যাসিফিকে সূর্যাস্ত দেখতে নিয়ে যায়। কত টুরিস্টরা যায়। দেখে, বাঃ বাঃ করে। ওরা আমাদের দেশে আসে না কেন বলো তো? আমিও তো প্লাসবটম-বোটে করে কোরাল-রীফ দেখেছি। ওখানের সূর্যাস্ত। কিন্তু কই? এমন নির্জন সৌন্দর্য, সৌন্দর্যে এমন শান্তি কখনো তো বোধ করিনি? এমন সূর্যাস্ত কোথাওই দেখিনি। মেঘ স্বগতোক্তির মতো বলল, আমাদের দেশের মতো সুন্দর দেশ পৃথিবীতে নেই।

    সেই নীচের নদীর ঝঝর, আসন্ন সন্ধ্যার বনমর্মর, ঘরে-ফেরা পাখির ডাককে সাক্ষী রেখে মেঘ দু হাতে রোদকে আকস্মিকভাবে জড়িয়ে ধরে বলল, আমি তোমার জন্যে সব করতে পারি, আমার সর্বস্ব দিতে পারি তোমাকে, তুমি আমাকে কতখানি ভালোবাসো বলো? বলো যে, তুমি আমাকে চিরদিনই এমনি করেই ভালোবাসবে?

    রোদ হাসল। বলল, তোমার প্রশ্নটা চার বছরের ছেলের মতো হল। উত্তরটাও তেমন করেই দিতে হয়। বলতে হয় যে, আকাতের তমান ভালবাতি।

    সবতাতে ইয়ার্কি ভালো লাগে না।

    মেঘ বলল।

    রোদ বলল, চিরদিন কি একইজনকে একইরকম করে ভালোবাসা যায়? আমি জানি না। পারি না।

    তারপর বলল, তুমি সামনে তাকিয়েও এই মুহূর্তে তোমার নিজের কথা ভাবতে পারছ? এবং আমার কথাও? আমি তো এমন পরিবেশে এমন জায়গায় এলে সব ভুলে যাই।

    তোমার কথা আলাদা।

    শ্লেষের সঙ্গে মেঘ বলল।

    রোদ বোঝাবার গলায় বলল, এইরকম জায়গায় এসে একজনকেই ভালোবাসা যায়,

    একজনকেই ভালোবাসার কথা মনে পড়ে।

    মেঘ বলল, অত জানি না। আমি আমার ভালোবাসার সবটুকু ক্ষমতা দিয়ে তোমাকে ভালোবেসেছি, তোমাকেও আমায় তেমন করে বাসতে হবে। সবসময়ে ভালোবাসতে হবে।

    তারপর বলল, একমাত্র আমাকেই। বলে দিলাম।

    রোদ চাপা হাসি হাসল। কিছু বলল না জবাবে।

    তুমি সবচেয়ে বেশি কাকে ভালোবাসো এ-পৃথিবীতে?

    স্থির দৃষ্টিতে রোদের মুখে চেয়ে মেঘ আবারও শুধোলো।

    আমাকে। আমাকেই।

    রোদ বলল। নদীর দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে। মুখ না ফিরিয়ে।

    তুমি কী স্বার্থপর!

    আমরা সবাই স্বার্থপর? কেউ বুঝতে পারি সেকথা, কেউ পারি না। কেউ স্বীকার করি, কেউ করি না।

    তুমি স্বার্থপর হতে পার। আমি নই।

    বলছিই তো আমি স্বার্থপর। আমার কাছে আমিই সবচেয়ে ইমপর্ট্যান্ট। আমি আছি বলেই তুমি আছ, এই পৃথিবী আছে, অন্য সকলে আছে, পৃথিবীর সমস্ত কিছুই আমাকে ঘিরেই আবর্তিত হচ্ছে। সবকিছুই আমি আমারই চোখ দিয়ে দেখি, আমার সুখ আমার দুঃখ দিয়ে বিচার করি। আমিই যদি না থাকি, তাহলে তুমি থাকলে, কী অন্য কেউ থাকল, কী সমস্ত পৃথিবী থাকলঞ্জ, তাতে আমার কী যায় আসে?

    তোমার সুখটাই সব? আমার সুখটা তোমার কাছে কিছু নয়?

    মেঘ বলল।

    কিছুই নয়। যদি-না তোমার সুখের মাধ্যমে আমি সুখী হই।

    রোদ বলল।

    মেঘ বলল, যাকগে, শোনো রোদ, আমি তোমার জন্যে, শুধু তোমারই জন্যে তোমাকে প্রায় জোর করেই এখানে এনেছি তিনটে দিনের জন্যে। ঝগড়া করতে আসিনি।

    রোদ, পাথর থেকে নামল। শ্লেষের গলায় বলল, তা জানি। ঝগড়া করতে আসনিঞ্জ, শুধুই ভালোবাসতে এসেছ। মেঘ পা দুটো শক্ত করে সামনে ছড়িয়ে দিয়ে বলল, তুমি আমাকে ইনসাল্ট করছ?

    মোটেই না। তুমি যদি তা মনে কর তা হলে আমার পক্ষে চুপ করে থাকাই ভালো।

    তারপর রোদ বলল, নামো, বেলা পড়ে গেছে। বর্ষাকাল। অন্ধকার হয়ে গেলে পথে সাপের ভয়। আছে।

    ওমা! সাপ!

    বলেই মেঘ লাফিয়ে নামল রোদের সাহায্য ছাড়াই। তারপর ওর পাশে পাশে ফেরার পথ ধরল।

    রোদ বলল, সকলেই পথের সাপকেই ভয় করে, বুকের সাপকে নয়। আশ্চর্য!

    অনেকক্ষণ কেউ কোনো কথা বলল না।

    কিছুক্ষণ চলার পর মেঘ বলল, আমার ওপর রাগ করলে?

    নাঃ।

    উদাসীন গলায় রোদ বলল।

    তবে?

    রাগ নয়, বলতে পার অনুকম্পা।

    সুন্দরী, গর্বিতা, বিদুষী মেয়ে রাগে জ্বলে উঠল। বলল, অনুকম্পা? হাউ ডেয়ার ড্যি?

    রোদ হাসল। বলল, ঠিক তাই! তুমি জীবনে না পারবে কাউকে ভালোবাসতে, না পাবে কারো ভালোবাসা।

    মেঘ রাগত স্বরে বলল, ডু ড্যক মীন ম্যারেড লাভ? তুমি কি আমাকে অপমান করছ আমি তোমার বিবাহিতা স্ত্রী নই বলে এবং কখনো হব না বলে?

    তুমি একটি আটারলি সিলি, ইনসিপিড মেয়ে।

    রোদ ঠান্ডা নিরুত্তাপ গলায় বলল।

    মেঘ, ঘাড় বেঁকিয়ে চুল ঝাঁকিয়ে বলল, শাট আপ।

    তারপর জোরে জোরে হাঁটতে হাঁটতে বলল, তোমার সঙ্গে আসা কী ভুলই না হয়েছে! এরকমভাবে থাকার চেয়ে চলে যাওয়া অনেক ভালো। আমি চলে যেতে চাই। হ্যাঁ, এক্ষুনি যেতে চাই।

    তুমি চলে যাও। সঙ্গে দু-জন লোক দিয়ে দিচ্ছি গ্রামের। কলকাতা অবধি তারা সঙ্গে যাবে। তোমারই গাড়ি, তুমিই চালিয়ে এসেছ। যেতে বাধা কোথায়?

    কেন? আমি কি একা যেতে পারি না? সারা পৃথিবী ঘুরলাম, বিদেশে রইলাম এত বছরঞ্জ, আমি কি অবলা নারী?

    তুমি অবলা নও। তবে জঙ্গলের পথ-ঘাট তোমার জানা নেই। এখানের বিপদ-আপদ সম্বন্ধে তুমি অনভিজ্ঞ।

    শান্ত গলায় বলল, রোদ।

    আমি অন্য লোক নিয়ে যাব না। তুমি নিয়ে এসেছ, তুমিই নিয়ে যাবে। ইউ আর ডিউটি-বাউন্ড!

    আমি আমার ছুটি ফুরোলেই ফিরব। পরশুর পরদিন। আমি তোমার খেলার পুতুল নই। কারোরই পুতুল নই আমি। সম্পূর্ণ নিজের ইচ্ছায়ই চলে থাকি। একথা, তোমার এতদিনে জানা উচিত ছিল।

    এখুনি ফিরতে হবে। তোমার সঙ্গে এক মুহূর্তও থাকতে চাই না।

    আমিও নিজের ইচ্ছেতেই চলি। তোমারও মুখ দেখতে চাই না আমি।

    হঠাৎ রোদ মেঘের মুখের দিকে তাকাল।

    রোদ একবার ভীষণ ঝলসে উঠবে মনে হল। ওর অনেক অশান্তি ও শ্রান্তিতে পীড়িত শিরা। উপশিরাগুলোতে রক্ত ওই বর্ষার ঝরনার মতো দাপাদাপি করে উঠল। তারপরই শান্ত হল।

    কী ভেবে রোদ বলল, ঠিক আছে। যা তোমার খুশি তা-ই হবে। বাংলোয় ফিরেই তাহলে গোছগাছ করে নাও। আধ ঘন্টার মধ্যেই বেরিয়ে পড়ব। এই ডিসিশানের নড়চড় হবে না কিন্তু।

    ঠিক আছে।

    দাঁতে দাঁত চেপে বলল, মেঘ।

    বাংলোর পথে আর কোনো কথা হল না। ঝিঝি ডাকতে লাগল একটানা। দুটো পেঁচা শূন্যে ওদেরই মতো ঝগড়া করতে করতে কি-চি, কি-চি-কিচর-কিচর করে ডাকতে ডাকতে ওদের সামনে উড়তে লাগল।

    বাংলোয় পৌঁছে রোদ বলল, আমি বাথরুমে যাচ্ছি। এক্ষুনিই বেরোব। তুমি তৈরি হয়ে নাও। গোছগাছ করে নাও।

    বাথরুম থেকে মিনিট দশেক পরে বেরিয়ে রোদ দেখল মেঘের স্যুটকেস প্যাক করা হয়ে গেছে। ফুরি থেকে প্যাস্ট্রি এনেছিল কিছু আর চিজ স্ট্র। প্যাকেটগুলো খাওয়ার ঘরের টেবিলের উপরই পড়ে রইল।

    নিজের স্যুটকেস গোছাতে গোছাতে চৌকিদারকে ডাকল রোদ।

    বলল, মাল ওঠাও ঔর খানা লাও তুমহারা।

    রাতকা খানা তোবন গ্যয়া সাব। খানা খাকে যাইয়ে।

    বিনীত গলায় চৌকিদার বলল, রোদকে।

    সে আবারও বলল, মেমসাব সাথ মে হ্যায়। বেগর-ঘনা রাতমে জঙ্গলমে নহী যানা চাহিয়ে।

    রোদ উত্তর না দিয়ে নরম কিন্তু দৃঢ় গলায় বলল, খানা বন গ্যয়া হ্যায় তো তুমহারা বাচ্চোঁকো বাঁট দো।

    তারপরে খাওয়ার ঘরের প্যাকেটগুলো দেখিয়ে বলল, উ সমান ভি লে লেনা।

    কেরোসিনের বাতিতে ভালো দেখা যায় না। নিজের জিনিসপত্র গোছাতে গোছাতে আরও মিনিট দশেক গেল। ওর স্যুটকেসটাও নিয়ে গেল চৌকিদার গাড়িতে। তার আগে, অন্ধকার হয়ে যাচ্ছে। দেখে, ওর ছেলেকে দিয়ে খাবারদাবারগুলো চৌকিদার বস্তিতে তার বউয়ের কাছে পাঠিয়ে দিল।

    মেঘকে কোথাও দেখতে পাওয়া গেল না। বসার ঘরেও নয়। অন্ধকারে গেল কোথায়? বাংলোর পিছনের হাতায় বাবুর্চিখানার সামনে মেঘকে একটা চেয়ার পেতে বসে থাকতে দেখল রোদ। বাবুর্চিখানার বারান্দায় চৌকিদারের লন্ঠনটা জ্বলছে। ধোঁয়া উড়ছে খুব। লণ্ঠনের আলোটা অন্ধকারটাকে গভীরতর করে তুলেছে যেন। জোনাকি জ্বলছে জঙ্গলে। হাজার হাজার জোনাকি। দূর থেকে শম্বরের গম্ভীর ধাতব ডাক ভেসে আসছে ঘাক ঘাক। চারিদিকের চাপচাপ। অন্ধকারকেও এক পরিব্যাপ্ত অতিকায় প্রাগৈতিহাসিক শম্বর বলে মনে হচ্ছিল।

    রোদ বাংলোর পেছনের বারান্দায় দাঁড়িয়ে বলল, আমি তৈরি।

    মেঘ কোনো কথা বলল না।

    রোদ আবার বলল, দেরি হয়ে যাচ্ছে কিন্তু। এপথে হাতি থাকে প্রায়ই।

    তারপর আরও একটু চুপ করে থেকে নৈর্ব্যক্তিক গলায় বলল, আর দেরি করলে চলবে না।

    এমন সময় চৌকিদার হন্তদন্ত হয়ে এসে বলল, সাব গাড়িকা চাক্কামে বিলকুল হাওয়া নেহি হ্যায়।

    কেয়া?

    বলেই, রোদ তাড়াতাড়ি গেল। গিয়ে দেখে, সত্যিই হাওয়া নেই। সামনের ও পেছনের একটা করে চাকায় হাওয়া একেবারেই নেই। পাংচার হলে এমনটি হত না। বিকেলেও বেরোবার সময় লক্ষ করেছিল টায়ারের হাওয়া ঠিকই ছিল। কেউ হাওয়া খুলে দিয়েছে? স্টেপনি একটাই আছে। সুতরাং…।

    চৌকিদারকে জিগ্যেস করে জানল পনেরো মাইল দূরে বাস রাস্তায় টায়ার সারানো মিস্ত্রি ও হাওয়া দেওয়ার মেসিন আছে।

    নিশ্চয়ই চৌকিদারের ছোটো ছেলেরা ও তাদের বন্ধুবান্ধবদের কাজ। ওরাই গাড়ির কাছে ঘুরঘুর করছিল। রোদ খুব রাগারাগি করল। চৌকিদারও অপ্রতিভ হল ভীষণ। বলল আভভি যাতা, হারামিলোঁগোকো ঠিকসে শিখলায়েগা।

    কাঁহা যাতা হ্যায়?

    রোদ শুধোলো।

    ঘর। বস্তিমে। চৌকিদার বলল।

    রোদ তাকিয়ে দেখল, মেঘ এসে সামনের বারান্দায় দাঁড়িয়েছে।

    রোদ কিছু বলবার আগেই মেঘ বলল, এখন কী হবে?

    কী আর হবে? কালকের দিন তো পুরো লাগবে টায়ার পাঠিয়ে হাওয়া দিয়ে আনতে বা সারাতে। বাঁকে করে টায়ার ঝুলিয়ে পায়ে হেঁটে পনেরো মাইল যাবে পনেরো মাইল আসবে। কম দূর তো নয়!

    মেঘ প্রচণ্ড বিরক্তির সঙ্গে বলল, ভাল্লো!

    বলেই, বারান্দার চেয়ারে বসে পড়ল।

    রোদ বারান্দায় উঠে এল।

    বারান্দায় লণ্ঠনটা জ্বলছিল। চোখে লাগছিল বলে, সেটাকে ঘরের ভেতরে নিয়ে গিয়ে আড়ালে রেখে দিল।

    বাইরে আকাশ মেঘে ঢাকা পড়েছিল। বর্ষার রাতের দমবন্ধ অন্ধকার চোখে মুখে থাপ্পড় মারছিল।

    জোনাকির ওড়া ও ঝিঝির ডাক ছাড়া আর কোন কিছুর নড়াচড়া বা শব্দ ছিল না। হাতার মধ্যে অন্ধকারে থপথপ আওয়াজ তুলে ব্যাং লাফিয়ে বেড়াচ্ছিল। ব্যাং ধরতে সাপেরাও ঘোরাফেরা করতে পারে।

    রোদ, ইজিচেয়ারটা পেছিয়ে নিয়ে বারান্দার থামে দু-পা তুলে আরাম করে বসল। একটা সিগারেট ধরাল। তারপর চুপচাপ বসে অন্ধকারে তাকিয়ে রইল। ওর মনে হল দু-চোখের মণির মধ্যে দিয়ে চাপ চাপ জমাট বাঁধা অন্ধকার ওর সমস্ত মস্তিষ্কের কোষে কোষে ছড়িয়ে যাবে। মৃত্যুর আগেও কী এমন হবে? ভাবল রোদঞ্জ, যখন সব রোদ মুছে যাবে রোদের জীবন থেকে?

    অনেকক্ষণ কেউ কোনো কথা বলল না।

    মেঘ হঠাৎ বলল, কে এমন করল?

    তা-ই তো ভাবছি। চৌকিদারের ছেলে-টেলে হবে। আর কে? এখানে আমাদের সঙ্গে কারো তো শত্রুতা নেই। চুরি-ডাকাতি হয় বলে শুনিনি আগে।

    যদি চোর-ডাকাতে করে থাকে? যাতে আমরা এখান থেকে চলে যেতে না পারি। তার জন্যই হয়তো করেছে।

    উদ্বেগের গলায় মেঘ বলল।

    দামি জিনিসের মধ্যে এখানে কী আছে? এক তুমি ছাড়া তো দামি কিছুই নেই। তোমার শরীরের যা দাম। তা ডাকাতি করার জন্যে মতলব এঁটে কেউ যদি কিছু করে থাকে তো অন্য কথা।

    ডাকাতরা তো তোমার বিদ্যা-বুদ্ধি চুরি করতে পারবে না।

    মেঘ ভয়ে সোজা হয়ে বসল। বলল, যদি রাতে ডাকাতরা আসে?

    তখন দেখা যাবে। আমার কাছে পিস্তল আছে। তবে পিস্তল দিয়ে আজকালকার ডাকাতদের তো ঠেকানো যাবে না, তারা সেমি-অটোম্যাটিক ওয়েপন নিয়ে আসে।

    মেঘ বলল, আজ ভয়ে আমার ঘুম হবে না। রাতে।

    রোদ বলল, আচ্ছা আমরা যখন বেড়িয়ে ফিরে আসি তখন কি চাকাগুলো লক্ষ করেছিলে? আমরা যখন বেড়াতে গেছিলাম, তখন কেউ হাওয়া খুলে দেয়নি তো?

    তখন তো অন্ধকার। দেখব কী করে?

    বলেই মেঘ দৌড়ে এল রোদের কাছে। বলল, অ্যাই আমার ভয় করছে গো, বাইরে বসে থেকো না, সব এমন করে খোলা রেখে। কেউ গায়ের উপর এসে পড়লেও দেখতে পাবে না অন্ধকারে।

    রোদ বলল, তা ঠিক। কিন্তু এলে, শুনতে পাব।

    অন্ধকারে বুঝতে পারবে কেউ এলে?

    অবাক গলায় মেঘ শুধোলো।

    রোদ বলল, হুঃ। জঙ্গলের রাতে, চোখের চেয়ে কানই তো বেশি কাজের।

    অনেকক্ষণ পর মেঘ বলল, আমি একটা কথা বলব?

    বলো।

    বলল, রোদ। নৈর্ব্যক্তিক।

    মেঘ বলল, আমি কিন্তু এখনও রেগে আছি।

    ফার্স্ট ক্লাস। জেনে খুশি হলাম। রাগ পড়লে, আমাকে জানিও।

    তারপর একটু চুপচাপ।

    হঠাৎ রোদ বলল, চৌকিদার আসছে।

    কী করে বুঝলে? মেঘ শুধোলো।

    দেখতে পাচ্ছি যে।

    বাজে কথা।

    সত্যিই পাচ্ছি। অন্ধকারের মধ্যে কালো জিনিস নড়লে তাও দেখা যায়। অন্ধকারতর দেখায় কালোকে। আর সাদা তো দেখা যায়ই।

    ভাল্লুকও তো হতে পারে। বলেই, মেঘ চেয়ার ছেড়ে দৌড়ে ঘরে গেল।

    পরক্ষণেই আবার একা একা ঘরে থাকতে না-পেরে, রোদের কাছে এল।

    চৌকিদার খুক করে একটু কাশল।

    বলল, হুজৌর, বহুত পীটকে আয়া শুয়ারকা বাচ্চোঁকো।

    রোদ বলল, বহুত বুরা বাত। বাচ্চোঁকো পীটনা নেহী থা।

    চৌকিদার বলল, উলোগ তুরন্ত উ খনা ভি খতম কর দিয়া। মুসীবতকা বাত। আভি ক্যা করেগা? কেয়া পাকায়গা?

    খিচুড়ি।

    ওপাশ থেকে বলে উঠল মেঘ।

    মুংগকা ডালসে। শুখা মীরচা ডালকে। সাথমে মুচমুচ করকে আলু ভাজি আর পেঁয়াজি।

    রোদ হেসে ফেলল। মেঘের হিন্দি শুনে।

    চৌকিদার আরও ঘাবড়ে গেল। এমনিতেই মেঘের মেজাজে ঘাবড়ে ছিল।

    রোদ চৌকিদারকে বুঝিয়ে দিল। তারপর বলল, এখন আমাদের একটু চা খাওয়াও। মালপত্র গাড়ি থেকে নামিয়ে নাও।

    চৌকিদার আসতে, মেঘ আবার ওর চেয়ারে গিয়ে বসেছিল।

    চৌকিদার একে একে মালপত্র সব নামিয়ে চলে যেতেই বলল, একটা কথা বলব? বলো। আমার রাগ কিন্তু আর নেই। আর একটুও ঝগড়া হবে না। যতটুকু থাকব। তুমি দেখো।

    অতি উত্তম কথা। তাহলে আমার কাছে আসা হোক।

    রোদ বলল।

    বলার আগেই মেঘ দৌড়ে এল। এসে ইজিচেয়ারের হাতলে বসল ও। রোদের ডান হাতটা ও দু হাতে তুলে নিজের কোলে উপর রাখল।

    বিকেলের হাঁটাহাঁটিতে একটু ঘেমেছে মেঘ। প্রসাধনের গন্ধ, সিল্কের শাড়ির মিষ্টি গন্ধের সঙ্গে ওর বিকেলের ঘামের গন্ধ মিশে গেছে। মেঘের গায়ের গন্ধটা এখন লেবুপাতার মতো। সমস্ত মস্তিষ্ক ভরে যায় সেই গন্ধে। রোদ বুদ হয়ে রইল।

    মেঘ বলল, তোমার সঙ্গে জঙ্গলে আসা একটা এক্সপিরিয়েন্স। তুমি যে কখনো শহরে যাও, শহরে থাক, তোমাকে এই পরিবেশে দেখলে মনেই হয় না।

    রোদ বলল, থ্যাঙ্ক ট্যগ। তোমার সঙ্গে জঙ্গলে আসাও একটা এক্সপিরিয়েন্স। সকলের ভাগ্যে হবে না, সইবেও না।

    মেঘ সামান্য শব্দ করে হাসল একটু।

    তারপর বলল, তুমি তখন আমাকে অভিশাপ দিলে কেন? বলো এবারে। আমি এত আপসেট হয়ে পড়েছিলাম যে কী বলব!

    রোদ বলল, বুঝতে পেরেছিলাম।

    বলো না প্লিজ। কী বলছিলে ভালো করে বুঝিয়ে বলো। আমি বুঝতে চাই, শুনতে চাই কী বলছিলে।

    রোদ সোজা হয়ে বসল। বলল, বলছি। মনোযোগ দিয়ে আমার জ্ঞানদান শোনো। একবারও ইনটারাপট করবে না কিন্তু।

    বলো, শুনব, সত্যিই মনোযোগ দিয়ে শুনব।

    রোদ হেসে ফেলল। বলল, দূর একরকম বক্তৃতার মতো এসব বলা যায় না। কনসেপ্টটা ইন্টারেস্টিং। তুমি না-মানতেও পার। অনেকেই মানেন না। কিন্তু আমারও একটা পয়েন্ট আছে।

    তারপর একটু কেশে বলল, জান মেঘ, আমার মনে হয়, আমরা কেউই কাউকে আমাদের হৃদয়ের সর্বস্ব দিয়ে ভালোবাসতে পারি না। মানে তুমি যেরকম ভালোবাসার কথা বলছিলে। অর্থাৎ আমাদের ভালোবাসার ক্ষমতাকে নিঃশেষিত করে আমরা কেউই কেবলমাত্র অন্য একজনকেই ভালোবাসতে পারি না। পারি না, কারণ, আমাদের প্রত্যেকের সত্তাই খণ্ডর সমষ্টি। অখণ্ড নয়। আমাদের বুকের মধ্যে অনেকগুলো টুকরো আছে, সেইটুকরোগুলো বাচ্চাদের। কাঠের বাড়ি বানানো খেলার টুকরোর মতো। সব টুকরো সব জায়গায় খাপ খায় না। একটা টুকরো শুধুমাত্র তার পরিপূরক যে শূন্য হতে পারে, সেই শূন্যতাতেই স্থান পায়।

    অন্যভাবে বলতে গেলে, বলতে হয়, আমরা কাউকেই পরিপূর্ণভাবে পাইও না। পেতে পারি না পরিপূর্ণতাও প্রায়শই, দিতেও পারি না। তুমি যদি আমাকে পেয়ে থাক, তাহলে পেয়েছ আমার একটি টুকরোকে। আমিও পেয়েছি তোমার টুকরোকে। সে টুকরো-দু-টি চিরদিনই আমার এবং তোমার। শুধুমাত্র আমাদেরই। তোমাকে টুকরো করে যা পেয়েছি এবং আমাকে টুকরো করে যা দিয়েছি তা আমিও দিতে পারব না আর কাউকেঞ্জ, তুমিও না। যা আমরা পারি, তা এই। খণ্ডটুকুকে অথবা খণ্ডের স্মৃতিটুকুকে ঝেড়েমুছে উজ্জ্বল করে রাখতে, যাতে প্রাত্যহিকতার, সময়ের, বয়সের ছাপ–পড়ে এতে।

    মেঘ অন্ধকারে অনড় হয়ে বসে শুনছিল।

    চৌকিদার চা এনে দিল। মেঘ চা বানিয়ে রোদকে দিল, নিজে নিল।

    মেঘ বলল, বলল, থামলে কেন?

    মেঘের গলাটা ভারী শোনাল।

    রোদ চায়ে চুমুক দিয়ে বলল, জান এতসব কথা সকলকে বলা যায় না। বললে, সকলে বোঝেও না। নিজের বুকের মধ্যেও কথাগুলো ছড়িয়ে ছিটিয়েই থাকে। যখন প্রকাশ করব বলে ভাবি, তখন ঠোঁটের কাছে তাদের নাগাল পাই না।

    তারপর অনেকক্ষণ চুপ করে থেকে রোদ বলল, খুব আস্তে আস্তে, আমরা নিজেরাও কি আমাদের অখণ্ডরূপে কখনো পাই? আমাদের নিজেদের কাছেও আমরা খণ্ড, বিখণ্ডঞ্জ, অধরা। সেইজন্যেই কখনো ভুলেও ভেব না যে, কাউকে সব দিয়েছ বা সব পেয়েছ কারো কাছ থেকে। আমি শরীরের কথা বলছি না। শরীরটা নিতান্ত গৌণ। আমরা মানুষ। প্রধানত মন নিয়েই আমাদের লেনদেন। আমরা এক-শো ভাগের নববই ভাগই মনের মানুষ আর দশ ভাগ শরীরের। মনের সঙ্গে শরীর যেখানে একসুরে গায় না, সে গান, গান নয়ঞ্জ, সে মিলন জান্তব মিলন। মানুষের মিলন নয়।

    মেঘ অস্ফুটে বলল, তাই-ই যদি হয়, তবে লক্ষ লক্ষ কোটি কোটি বিধবস্ত, খুশি, স্বামী-স্ত্রীও কি একে অন্যকে পরিপূর্ণভাবে পায় না বলে তোমার ধারণা?

    রোদ হাসল।

    বলল, আমার ধারণা ঠিক নাও হতে পারে। কিন্তু আমার মনে হয়, যে-পরিপূর্ণতার কথা তুমি বলছ, তা পরিপূর্ণ নয়ঞ্জ, একক তো নয়ই। সেই পরিপূর্ণতা সংসারের মধ্যে থেকে উৎসারিত হয় বিভিন্ন ধারায়! বাবা-মা, ভাই-বোন, স্ত্রী, পুত্র-কন্যা প্রত্যেকের কাছ থেকে। এদের প্রত্যেকের সঙ্গে একজন মানুষের খণ্ড মিলন। কিন্তু তার মানে এই নয় যে, এতগুলি সম্পর্কের সঙ্গে তার লেনদেন বলেই পরিপূর্ণতার মধ্যে তার পরিপুতি ঘটেছে। একাধিক খণ্ডের পরিপূর্ণতা আর সামগ্রিক পরিপূর্ণতা সমার্থক নয়।

    মেঘ বলল, বেশ গোলমেলে হয়ে গেল ব্যাপারটা। তুমি বলতে চাইছ পরিপূর্ণতায় কাউকেই আমরা পেতে পারি না, দিতে পারি না। তাই?

    কাউকেই পারি না যে, একথা বলতে পারি না। পারঞ্জ, পারিঞ্জ, একজনকে। আজ বিকেলে যখন আমরা বসেছিলাম, সামনের দিকে তাকিয়ে তখন সেই আশ্চর্য আদিগন্ত প্রকৃতির দিকে।

    তাকিয়ে তোমার মনে যে অনুভূতি হয়েছিল তা কি কোনো মানুষকে ভালোবাসার চেয়ে অনেক তীব্রতর নয়? তুমি মা হওনি। যখন হবে, তখন জানবে যে, অপত্যস্নেহ প্রেমের চেয়ে অনেক। গভীর বোধ। কিন্তু একথাও বুঝবে কখনো হৃদয়ের অন্তঃস্থলে যে, অপত্যস্নেহের চেয়েও কোনো গভীরতর, ব্যাপ্ততর, তীব্রতর বোধ আছে।

    রোদ হঠাৎ থেমে গেল।

    মেঘ বলল, বলো?

    রোদ বলল, তুমি এই অবধিই বুঝবে মেঘ। পরেরটুকু বুঝবে না, আমি বললেও না। কারণ এর পরেরটুকু বুদ্ধিগ্রাহ্য নয়, হৃদয়গ্রাহ্যঞ্জ, অনুভূতিগ্রাহ্য। তুমি বিজ্ঞানী, তুমি ভগবান মান না। আমি মানি। মূর্তি মানি না, ধর্ম মানি নাঞ্জ, কিন্তু ঈশ্বর মানি। তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ হঠাৎ হঠাৎ হয়ে যায়। যোগাযোগটা আমাদের ইচ্ছাধীন নয়। তাঁর যখন খুশি তিনি আলো হয়ে আসেন, হাওয়া হয়ে আসেন, রোদ হয়ে, মেঘ হয়ে আসেন, ফুলের বাস, পাখির ডাক হয়ে, শোক হয়ে, আনন্দ হয়ে, বারবার তিনি আসেনঞ্জ, এসে পরিপূর্ণতায় আপ্লুত, স্তব্ধ, বিমুগ্ধ করে আবার পরমুহূর্তেই অদৃশ্য হয়ে যান। এ কথা না বোঝাতে পারার জন্যে আমাকে তোমার ক্ষমা করতে হবে।

    মেঘ বলল, তোমার মধ্যে গভীরতা আছে, আমার মধ্যে নেই। আমি তোমার মতো করে ভাবতে চাই না, পরিও না। সব বুঝতেও না।

    হঠাৎ রোদ থেমে গেল।

    বাইরের আকাশে তখন মেঘ সরে গিয়ে এক-এক করে তারা ফুটছিল। সবুজ আলো ঝরছিল অন্ধকারে, বুনো চাঁপার গন্ধ ভাসছিল হাওয়ায়। রাতচরা পাখি ডাকছিল। গা শিরশির করছিল ভেজা হাওয়ায়।

    মেঘ ভাবছিল।

    রোদ ভাবছিল।

    কেউ কথা বলছিল না। রোদ ভাবছিল, ও কি যাত্রাদলের লোক? নইলে কেউ এত বড়ো বড়ো কথা একনাগাড়ে এতক্ষণ বলতে পারে? তারপরেই রোদের মনে হল, ও নিজে বোধ হয় বলেনি। কখনো এত কথা ও ভাবেওনি। এই অন্ধকারের মধ্যে কে যেন তাকে দিয়ে বললো। অনেকদিন। যেসব কথা কাউকে বলতে চেয়েছিল, স্বপ্নে যেসব কথা ছুঁয়ে গেছিল ওকে, কিন্তু যা কখনো বলতে পারেনি। মেঘ উপলক্ষ হল।

    বড়ো হালকা লাগছিল রোদের। বড়ো ভালো লাগছিল। ঝিঝির ডাক, বুনো চাঁপার গন্ধ, সোঁদা মাটিতে শ্যাওলার হালকা বাস। ও চোখের পাতা ফেলছিল আর ওর চোখের মণির সঙ্গে সঙ্গে যোজন দূরের অনামা তারাদের যোগ ঘটছিল এক মসৃণ সরল সবুজ আলোকরেখায়।

    অনেক অনেকক্ষণ পর, যেন বড়ো দূর থেকে মেঘ বলল, চলো, গা ধোবে না? মিছিমিছি সব। প্যাক করা হল। আবার তো সবই খুলতে আর নামাতে হবে।

    হুঁ।

    স্বগতোক্তির মতো বলল রোদ।

    রোদ হঠাৎ বলল, কাল রাতে তুমি কী সাবান মেখেছিলে?

    মেঘ বলল, ওমা! আমি ভাবছিলাম, তোমাকে জিজ্ঞেস করব তোমার সাবানটার কথা। তোমার সাবানটা আমাকে দেবে?

    রোদ হেসে বলল, নিজের শরীরের সুগন্ধ কি নিজের জন্যে? বোকা!

    ঘরে যেতে যেতে মেঘ বলল, একটা কথা বলব? রাগ করবে না।

    আমি তার আগে তোমাকে একটা কথা বলি!

    রোদ মেঘের মুখের কথা কেড়ে বলল।

    বলো।

    গাড়ির চাকার হাওয়া তুমিই খুলেছ? তাই না?

    ইস কী অসভ্য!

    বাচ্চা মেয়ের মতো হেসে উঠল মেঘ।

    বলল, তুমি জানতে? জেনেশুনেও এতক্ষণ চুপ করে ছিলে কেন?

    চুপ করে ছিলাম এই জন্যে যে, চৌকিদারের ছেলের বয়স আর তোমার মনের বয়স একই। ছিঃ ছিঃ! ছেলেটাকে মার খাওয়ালে।

    সরি, আয়্যাম এক্সট্রিমলি সরি। বলল মেঘ।

    ৫.

    ওদের দুজনেরই গা-ধোওয়া হয়ে গেছিল। শোওয়ার ঘরে খাটের ওপরে অগোছালো হয়ে ওরা কাছাকাছি আধশোয়া ছিল। চৌকিদারের খিচুড়ি হয়নি তখনও।

    মেঘ হঠাৎ বলল, তুমি এত সব কথা যে বললে, এ নিয়ে চান করতে করতে ভাবছিলাম। সত্যি এমন করে যে দেখা যায়, ভাবা যায়, আমার জানা ছিল না। তুমি এত ডিট্যাচড হয়ে এসব দ্যাখো কী করে?

    রোদ হাসল।

    বলল, তুমিও পারবে।

    তারপর একটু পরে বলল, কাল সকালে দূরবীনটা উলটোদিকে ধরে বাইরে আমার সামনের চেয়ারে বসে আমাকে দেখো। দেখবে, আমি কতদূরে চলে গেছি। চমৎকার দেখাবে কিন্তু। টেবল-চেয়ার সব। আমার সমস্ত পারিপার্শ্বিক পরিবেশসুদু আমি বহু দূরে চলে গেছি দেখবে। নিখুঁত পরিচ্ছন্ন দেখাবে তখন আমাকে। অনাবিল।

    এমনি করে দূরবিনের উলটোদিক দিয়ে যেদিন নিজেকে নিজে দেখতে শিখবে, সেদিন তুমিও পারবে।

    অবাক হয়ে মেঘ বলল, মানে?

    রোদ বলল, নিজের বাইরে বেরিয়ে এসে নিজের পরিবেশ, পারিপার্শ্বিক সব ছাড়িয়ে এসে, দূর থেকে নিজেকে চুপি চুপি দেখতে পেলেই তুমি নিজেকে নিজের নিজস্বতায়, স্বকীয়তায় আবিষ্কার করবে। সত্যি বলছি, দেখো তুমি।

    মেঘ বলল, আমি অতসব দেখতে চাই না। জানতে চাই না। বলেছি তো। কাল রাতের মতো, তোমার হাতে মাথা দিয়ে শুয়ে, তোমার কাছে, খুউব কাছ থেকে তোমার মধ্যে আমার আমিকে হারিয়ে ফেলতে চাই। তুমি তোমার মস্তিষ্ক দিয়ে ভালোবাসাকে কেটে টুকরো টুকরো কোরো, বুদ্ধিমানের মতো ভালোবাসার প্রকৃতি বিচার কোরো। আমি ততক্ষণ বোকার মতো আমার হৃদয়। ভরে তোমাকে ভালোবাসব। তুমি তোমার মতো হোয়োঞ্জ, থেকোঞ্জ, আমাকে আমার মতোই থাকতে দাও।

    রোদ হাসল।

    খুশি দেখাল ওকেঞ্জ, একটু বিব্রতও।

    ও বলল, তুমি তাহলে বোকাই থাকতে চাও। দূরবিনের উলটোদিক দিয়ে দেখতে চাও না কিছু? দেখোই না একদিন। সোজা দিক দিয়ে তো সকলেই দ্যাখে। তুমি সকলের থেকে আলাদা হতে চাও না?

    মেঘ বলল, চাই নাঞ্জ, একটুও চাই না।

    বলেই, রোদের ডান হাতটা ওর ঠোঁটের কাছে তুলে নিল দু-হাতে। ওর ঠোঁটে ঘষল রোদের হাতের চেটো।

    বলল, আমি সাধারণই হতে চাই, থাকতে চাই।

    রোদ অধৈর্য গলায় বলল, কিন্তু কেন?

    মেঘ বলল, আমি সুখী হব বলে, চিরদিন সুখে থাকব বলে।

    তারপর বলল, হবে তুমি? আমার সুখ?

    ⤶ ⤷
    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27 28 29 30 31 32 33 34 35 36 37 38 39 40 41 42 43 44 45 46 47 48 49 50 51 52 53 54 55 56 57 58 59 60 61 62 63
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleচম্পাঝরন – বুদ্ধদেব গুহ
    Next Article মহাভারত – বিষ্ণুপদ চক্রবর্তী

    Related Articles

    বুদ্ধদেব গুহ

    বাবলি – বুদ্ধদেব গুহ

    May 28, 2025
    বুদ্ধদেব গুহ

    ঋজুদা সমগ্ৰ ১ – বুদ্ধদেব গুহ

    May 28, 2025
    বুদ্ধদেব গুহ

    ঋজুদা সমগ্র ২ – বুদ্ধদেব গুহ

    May 28, 2025
    বুদ্ধদেব গুহ

    ঋজুদা সমগ্র ৩ – বুদ্ধদেব গুহ

    May 28, 2025
    বুদ্ধদেব গুহ

    ঋজুদা সমগ্র ৪ – বুদ্ধদেব গুহ

    May 28, 2025
    বুদ্ধদেব গুহ

    অবেলায় – বুদ্ধদেব গুহ

    May 28, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Generic selectors
    Exact matches only
    Search in title
    Search in content
    Post Type Selectors
    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Our Picks

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }