Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • English Books
      • Jules Verne
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    ছোটগল্প – বুদ্ধদেব গুহ

    বুদ্ধদেব গুহ এক পাতা গল্প831 Mins Read0
    ⤶ ⤷

    ধোঁকার ডালনা

    ড্রাইভার শিউশরণ গাড়ি আন্ডারগ্রাউন্ড গ্যারাজে পার্ক করে এসে বলল, কাল কিতনা বাজি আয়েগা মেমসাব?

    স্মিতা একটু ঝাঁঝালো গলাতে বলল, পুছনেকা ক্যা হ্যায়? রোজ সুবেব যিতনা বাজি আতা হ্যায় ওহি টাইমমে আও।

    জি হাঁ।

    বিরক্তির সঙ্গে বলে, ফ্ল্যাটের দরজার ল্যাচটা খোলা রেখে দিয়ে কী ভেবে একটু হেসে সেটাকে লাগিয়েই দিল। তারপর ইন্টারকমের রিসিভারটা তুলে একতলার রিসেপশনে ফোন করে জিজ্ঞেস করল, সেন সাহেব কি বাইরে গেছেন? নাইনথ ফ্লোর থেকে বলছি।

    নীচ থেকে বলল, ম্যাডাম আমার ডিউটি তো বেলা চারটেতে শুরু হয়েছে। আমি আসার পরে যাননি। তবে যদি গ্যারাজের পেছনের দরজা দিয়ে সোজা গেট দিয়ে বেরিয়ে গিয়ে থাকেন তা হলে পেছনের গেটের সিকিউরিটি গার্ড বলতে পারবে।

    বলেই বলল, গাড়ি নিয়ে গিয়ে থাকলেও আমি আসার আগেই গেছেন। লাল মারুতি নিয়েই তো যাবেন গেলে। ও গাড়ি আমি যেতে দেখিনি। গ্যারাজ থেকে উঠে গাড়ি তো আমার সামনে দিয়েই যেত, গেলে। তবে চারটের আগে গিয়ে থাকলে জানি না।

    পেছনের গেটের সিকিউরিটিকে একবার জিজ্ঞেস করুন। বড়ো বেশি কথা বলেন আপনি।

     

     

    ঠিক আছে। জিজ্ঞেস করে আমি জানাচ্ছি।

    সারাদিন এয়ারকন্ডিশন্ড ঘরে কাজ করার পর এয়ারকন্ডিশন্ড গাড়ি চড়ে বাড়ি ফিরেই গরমে গা একেবারে প্যাঁচপ্যাঁচ করে। তবু বিমলেন্দুকে ফ্ল্যাটের সেন্ট্রাল এয়ারকন্ডিশনার চালাতে মানা করেছে ও। দুপুরটা বেডরুমের উইন্ডো-টাইপটা চালিয়ে বিমলেন্দু ঘুমোয় বা টিভি দেখে। সন্ধ্যেবেলা বাড়ি ফিরে দুজনে মিলে চা খাওয়ার পর দু-জনই এক সঙ্গে চানে যায়। বিমলেন্দু গেস্টরুমের বাথরুমে আর স্মিতা বেডরুমের বাথরুমে। বাথটাব-এ শুয়ে থাকে মিনিট পনেরো অনেকখানি বাথসল্ট ছড়িয়ে, সারাশরীর এলিয়ে দিয়ে। শরীরের অণু-পরমাণু থেকে ক্লান্তি অপনোদিত হলে তারপরই ভালো করে তোয়ালে দিয়ে গা-মাথা মুছে সর্বাঙ্গে ইউডিকোলন এবং পাউডার লাগিয়ে বারমুডাস আর কটন-এর ঢোলা টপ পরে বসার ঘরে আসে। না বলে তো কেউই আসে না কোনো ব্যস্ত মানুষের কাছে। আজ কারো আসার কথা নেই। অফিসের পরে। কেউ এলে ক্লান্তও লাগে। শনি-রবির কথা আলাদা। বিমলেন্দুই তার হাউসকিপার হাজব্যান্ড, নিজের কিছুই প্রায় করতে হয় না, তবু উইকডেইজ-এ কারো আসার টেনশন হয়।

    রোজ খায় না, তবে সপ্তাহে দু-তিনদিন খায় একটা কি দুটো। ব্লাডিমেরি। খুব যত্ন করে বানিয়ে দেয় বিমলেন্দু। বিমলেন্দুহুইস্কি খায় সোড়া দিয়ে। স্মিতা বলে স্কচ খেতে কিন্তু বিমলেন্দু খায় না। রয়াল চ্যালেঞ্জই খায়। বলে, পরের পয়সাতে অত ফুটুনি ভালো নয়।

     

     

    আমি কি তোমার পর? স্মিতা বলে।

    পরই তো। স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক হলেই কি আপন হয়? তা ছাড়া যে স্বামী, স্ত্রীর আশ্রিত জীব, যে রোজগারের জন্যে কাজ করে না, যার আলাদা রোজগারও নেই, এ কাগজে সে কাগজে দুটো একটা ফিচার লিখে কখনো-সখনো সামান্য টাকা যে পায়, তার সমঝে চলাই উচিত।

    স্মিতা উত্তরে বলে, তোমার নানারকম হ্যাঙ্গ-আপস হয়ে গেছে ইদানীং। তুমি তো এরকম ছিলে না বিমু। তুমি কি ভুলে গেছ যে, একটা সময়ে তোমার টিউশনির টাকাটাই আমাদের একমাত্র রোজগার ছিল। তোমার সেই বহু-কষ্টার্জিত রোজগারে আমরা কত কষ্ট করে থেকেছি–আমার পড়াশোনা তোমার জন্যেই চালিয়ে যেতে পেরেছি। আমি ভুলিনি সেসব দিনের কথা। তখন আমাদের আরাম বলতে কিছুই ছিল না কিন্তু কত আনন্দ ছিল বল তো?

    বিমলেন্দু উত্তর দেয় না। চুপ থাকে।

    স্মিতা বলে, আজ কী মেনু?

     

     

    টোম্যাটো স্যুপ, ব্রাউন ব্রেড, চিকেন রোস্ট উইথ মেশড পটাটো। আর রসগোল্লার পায়েস।

    বাঃ। দারুণ। স্যুপটাকি ফ্রেশ টোম্যাটোর নানর-এর?

    ফ্রেশ টোম্যাটোর। আমি যতদিন আছি, তোমার বিনি মাইনের কুক, ততদিন প্যাকেটের স্যুপ খাবে কেন তুমি?

    যাই বল আর তাই বল, তোমার রান্নার হাতটা কিন্তু ক্রমশই ভালো হচ্ছে।

    না হলে যে চাকরি যাবে। খাব কী?

    স্মিতা রেগে উঠে বলে, দ্যাখো সব সময়ে এক ইয়ার্কি ভালো লাগে না।

    ইয়ার্কি?

    ইয়ার্কি নয়?

     

     

    এবারে জামাকাপড় ছেড়ে চানে যেতে হয়। বিমলেন্দু কোথায় গেল তাকে না বলে? কোনো নোটও রেখে যায়নি। ধীরে ধীরে অনেকই বদলে যাচ্ছে ও। স্মিতা নিজেও কি বদলাছে না? বদলেছে? হয়তো। কিন্তু নিজের বদলটা নিজের চোখে পড়ে না তেমন করে। আয়নার সামনে দাঁড়ালে নিজের মুখটা একই রকম দেখায় নিজের চোখে।

    স্মিতা বসার ঘরের সোফা ছেড়ে উঠে, দরজার ল্যাচটা খুলে দিল। বিমলেন্দু ফিরে এলে ওর ডুপ্লিকেট চাবি দিয়ে খুলে ঢুকবে। ল্যাচটা লাগানো থাকলে ঢুকতে পারবে না। তারপর সেন্ট্রাল এয়ারকন্ডিশনারটার সুইচ অন করে জামাকাপড় খুলতে বেডরুমে গেল। এয়ারকন্ডিশন একটা নয়, চারটে। Split Airconditioner. মেশিনগুলো সব বাইরে। যাতে শব্দ না হয় ভেতরে। তবে সুইচ একটাই। এ ছাড়াও প্রত্যেক বেডরুমে উইন্ডো-টাইপ মেশিনও আছে।

    বাথরুমে ঢুকেই দেখল গিজারের সুইচটা অফ করা। রোজ বিমলেন্দু ওদের বেডরুমের গিজারের সুইচটা পাঁচটা নাগাদ অন করে দেয়। সুইচটা অন করাই থাকে। অটো কাট-আউট আছে। লাল আলোটা জল গরম হলেই নিভে যায়। বাথটাব-এর কল খুললে তবেই আবার আলো জ্বলে ওঠে। গিজারের সুইচটা অন করায় কল খুললে তবেই আবার আলো জ্বলে ওঠে। গিজারের সুইচটা অফ করা আছে মানেই বিমলেন্দু অনেকক্ষণ হল বেরিয়েছে।

     

     

    বেডরুমে যাওয়ার আগে একবার ড্রইংরুমে গিয়ে কম্পিউটারটার ঢাকনি খুলে মাউসটা হাতে নিয়ে সামান্য সাফ করে দেখল তার বাড়ির ই-মেইল-এ কোনো মেসেজ আছে কি না। হুস্টন থেকে মুন্নির ই-মেইল পাঠানোর কথা। একটি চাইনিজ ছেলের সঙ্গে তার এনগেজড হবার কথা গতকাল। ছেলেটির নাম চাং ওয়ান।

    কম্পিউটারের কাছে গিয়েও কী ভেবে আবার বাথরুমেই ফিরে গেল। গিজারটা অন করে দিয়ে তারপর ফিরে এল। গরমের দিনে গরম জল না হলেও চান করা যায় কিন্তু অভ্যেস হয়ে গেছে। ড. চোপরা বলেছিলেন, ওর বাতের ধাত। সারা বছর গরম জলে চান করাই ভালো। তাই…

    কম্পিউটারের সামনে এসে সেটাকে খুলল। নাঃ কোনো মেইল নেই। একবার কিচেনে গিয়ে ফ্রিজটা খুলল। তরি-তরকারি, ডিম, কিচেন, ল্যাম্বস লেগ, হ্যাম, বেকন, সসেজ-এ ফ্রিজ ঠাসা। রেড মিট খেতে ডাক্তার চোপরা একেবারে মানা করেছেন দুজনকেই অথচ বিমলেন্দু রেড মিটই খাবে জেদ করে। ড. চোপরার কথা ও শশানে না, হাজরার মোড়ের এক হোমিওপ্যাথকে দেখায়। বলে, গরিবের হোমিওপ্যাথিই ভালো। এক পাশেবিয়ারের বোতল। তার পাশে কাসুন্দির দুটি বড়ো বোতল। স্মিতা বলে যে, ইটালিয়ান মাস্টার্ড খাও। তা না, গড়িয়াহাট বাজার থেকে কাসুন্দিই কিনে নিয়ে আসবে। ব্রেকফাস্টে লিচু আর কালোজাম খাবে কাসুন্দি দিয়ে। সঙ্গে। ডাবল ডিমের পোচ, সসেজ ও বেকনের সঙ্গে। দেদার কাসুন্দি ঢেলে। কিছুদিন হল লক্ষ করছে স্মিতা যে, ও যাই করতে বারণ করে বিমু ঠিক তাই করে। স্মিতাকে ডিফাই করার একটা চেষ্টা তো আছেই, চেষ্টাটা এগজিবিটও করে। সেটাই খারাপ লাগে স্মিতার।

     

     

    দরজা খোলা ফ্রিজটার সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে স্মিতার মনে পড়ল বহুদিন ও নিজে হাতে ফ্রিজের দরজা খোলেনি। ভালো করেই দেখল ভিতরে, না, ধোঁকার ডালনা তো নেই।

    কথাটা ছিল, শনি রবিবার ও ছুটির দিনে ও নিজেও দু-একপদ রান্না করবে কিন্তু সেকথা রাখা যায়নি। অভ্যেস একবার ছেড়ে গেলে তাকে ফিরিয়ে আনা বড়োই কঠিন। রান্না করার অবশ্য দরকার হয় না ছুটির দিনে। পার্টি তো লেগেই থাকে। তা ছাড়া, এখন কলকাতাতে খাওয়ার। জায়গার অভাব? শুধু পকেটে টাকা অথবা ক্রেডিট কার্ড থাকলেই হল। ওবেরয় গ্রান্ডের থাই রেস্তোরাঁ, তাজ-এর চাইনিজ, নয়তো মেইনল্যান্ড চায়না, গুরুসদয় রোডে নতুন চাইনিজ রেস্তোরাঁ হয়েছে দ্যা বেস্ট ইন টাউন। এতদিন তাদের বার-লাইসেন্স ছিল না। এখন সেটাও পেয়েছে। তা ছাড়া ওটার মালিক নাকি এক বাঙালি–উজালা। চার বুদওয়ালার যিনি মালিক, তিনিই। ফ্যান্টাস্টিক। কে বলে বাঙালি ব্যবসা করে না? মেইনল্যান্ড চায়না-তে যখন খায় তখন কনজিউমার্স সারপ্লাসটা যেন বাঙালি মালিকানার কারণে অনেকখানি বেড়ে যায়।

    ডাইনিং রুমের ঘড়িটাতে দেখল, সাড়ে সাতটা। ও প্রায় পঁয়তাল্লিশ মিনিট হল বাড়ি ফিরেছে। কী করে সময় যায়। এবারে সত্যিই একটু উদবিগ্ন হল স্মিতা বিমলেন্দুর জন্যে। সে কোথায় গেল সে জন্যে তো বটেই, ফ্রিজে রান্না করা কোনো খাবারই নেই যে, সে জন্যেও। ড্রাইভারকেও ছেড়ে দিয়েছে। নইলে, শরৎ বোস রোডের টুটু বসুর ট্যাংরা কাইজেন থেকে কিছু চাইনিজ খাবার আনিয়ে নিতে পারত।

     

     

    কিন্তু বিমু গেলটা কোথায়? চিরদিনের ইরেসপনসিবল লোক একটা। আক্কেল বলে কোনোদিনই কিছু ছিল না। এখন করে কী স্মিতা? এমন কখনো করেনি আগে বিমলেন্দু। চিন্তিত মুখে। টেলিফোনের পাশের সোফাটাতে বসে প্রদ্যুম্নকে ডায়াল করল। ধরিত্রী ধরল। বলল, হাই স্মিতা। লং টাইম নো সি। গজদারের বাড়ির পার্টিতে যাচ্ছ তো আগামী শুক্রবারে। হোপ টু সি ইউ দেয়ার।

    এখনও ঠিক নেই ধরিত্রী। একটা ব্যাপারে ফোন করছি এখন। বাই এনি চান্স বিমলেন্দু কি প্রদ্যুম্নর কাছে গেছে?

    না তো! বিমলেন্দু তো গত ছ-মাসে একদিনও আসেনি, এমনকী একটা ফোনও করেনি। প্রদ্যুম্ন বলছিল, বিমলেন্দুনাকি ইংরেজিতে উপন্যাস লিখছে।

    বুলশিট।

    স্মিতা বলল। আকাশ-কুসুম অনেক কল্পনাই তো করল জীবনে, সত্যি সত্যি কোনটা আর করল। তারপর বলল, যে কোর্টশিপের সময়ও আমাকে একটা চিঠি লেখেনি সে লিখবে উপন্যাস! জিনিয়াস ইজ নাইনটি পার্সেন্ট পারস্পিরেশন অ্যান্ড ওয়ান পার্সেন্ট ইন্সপিরেশন ধরিত্রী। মেহনত যে করতে না পারে, বা করতে না চায়, তার কিছুই হয় না।

     

     

    ইংরেজিতেই লিখুক কী বাংলাতে, লেখা কি অত সহজ কর্ম নাকি?

    আই ডোন্নো।

    তা হলে তোমাদের ওখানে যায়নি। প্রদ্যুম্নকে একবার জিজ্ঞেস করবে?

    এই নাও কথা বলো।

    হাই।

    হাই।

    বিমলেন্দুইজ মিসিং।

    লালবাজারে খবর দেব কী?

     

     

    না, এখনও নয়, তবে ব্যাপারটা চিন্তার। এমন কোনোদিনও করে না। ফোন না করে একটা নোট না লিখে এমন নিরুদ্দেশ হওয়া, আনথিংকেবল।

    যাই হোক, আমি বাড়িতেই আছি স্মিতা। দরকার হলে তো জানাবেই, বিমু বাড়ি ফিরলেও একটা ফোন করে আশ্বস্ত কোরো।

    থ্যাঙ্ক ইউ প্রদ্যুম্ন।

    আমি কি তোমার ওখানে চলে যাব?

    প্রদ্যুম্ন বলল।

    না না তার দরকার নেই। হলে, জানাব।

    এই প্রদ্যুম্ন একজন ওভার-সেক্সড পুরুষ, বিমু যেমন আন্ডার-সেক্সড পুরুষ। আসলে সেক্সের ব্যাপারে মনটাই যে আসল এই সরল সত্যটা দু-জনের একজনও বোঝে না। প্রদ্যুম্ন স্মিতাকে ফ্রেডরিক ফরসাইথ-এর দ্যা কাপলস বইটি পড়তে দিয়েছিল। মানে, প্রেজেন্ট করেছিল ওর এক জন্মদিনে অনেক কিছু লিখে-টিখে। বইটি ধীরেসুস্থে পড়ার পর স্মিতা বুঝেছিল কেন ওই বইটিই দিয়েছিল প্রদ্যুম্ন। পুরুষমাত্রই ছুকছুকে, পরের রান্নাঘরে ঢুকে হুলো বেড়ালের মতো। ঢেকে-রাখা মাছ খেয়ে যেতে চায় চুরি করে। সেসব অর্ডিনারি বেড়ালকে তাড়া দিলেই তারা জানলা গলে লাফিয়ে পালায় কিন্তু প্রদ্যুম্নর স্বভাবটা ছুকছুকে নয়। ওর স্বভাব হেঁকা দেয়। গরম লোহার মতো ওর স্বভাব। ওকে শায়েস্তা করতে তাড়া দেওয়াই যথেষ্ট নয়, হাতুড়ির দরকার। হাতুড়ি খেয়েওছে সে একবার স্মিতার কাছে। পুরুষ জাতটার ওপরেই স্মিতার ঘেন্না ধরে গেছে। সেই প্রেক্ষিতে তার সঙ্গী বিমলেন্দু একবারেই অন্যরকম। ভেরি রেসপেক্টেবল। ইন অল। রেসপেক্টস। লিভ-টুগেদার করলে এমন পুরুষের সঙ্গেই করতে হয় যে মায়ের মতো তার নারীকে আগলে রাখে, কমলালেবুর পায়েস করে খাওয়ায়, আম-আইসক্রিম, চকোলেট সুফলে, যখনই আদর করতে বলে চেটেপুটে বিমলেন্দু আদর করে স্মিতাকে। স্মিতার সবরকম শারীরিক ও মানসিক সুখকে নির্বিঘ্ন করে। সে যে স্মিতার রোজগারে খায় সেজন্যে তার কিছুমাত্র কমপ্লেক্স নেই। ছিল না অন্তত এত বছর, কিছুদিন হল কী যে হচ্ছে।

     

     

    এমন সময়ে ইন্টারকমটা বাজল।

    বিমু এল কি?

    পরক্ষণেই নিজেকে বলল, বিমু এলে নীচের সিকিউরিটি কাউন্টার থেকে ইন্টারকমে খবর দেবে কেন? সে তো নিজেই উঠে আসত।

    রিসিভার তুলে বলল স্মিতা, গলার স্মরকে প্রয়োজনেরও বেশি গম্ভীর করে, ইয়েস।

    মেমসাহেব, একজন এসেছেন একটা টিফিন ক্যারিয়ার নিয়ে। সঙ্গে সাহেবের চিঠি।

    কোন সাহেবের? সেন সাহেবের?

    হ্যাঁ মেমসাহেব। আমাদের সাহেবের। পাঠিয়ে দেব ওঁকে?

    এক মুহূর্ত ভাবল স্মিতা, তারপর বলল, দিন, পাঠিয়ে দিন ওপরে। একটু পরে দরজার বেল বাজল। দরজা খুলতেই দেখল মলিন পোশাকের দীন চেহারার বছর ষোলো-সতেরোর একটি ছেলে টিফিন ক্যারিয়ার এবং একটি চিঠি নিয়ে দরজাতে দাঁড়িয়ে। ছেলেটি যে আলিপুরের এই ঝকঝক-তকতক মাল্টিস্টোরিড বাড়ির বৈভবে অত্যন্ত ক্লিষ্ট ও ভীত তা তার মুখ দেখেই বোঝা গেল। ওগুলি স্মিতার হাতে দিয়ে সে বলল, আমি যাই?

     

     

    তুমি কে?

    অত্যন্ত রূঢ়স্বরেই জিজ্ঞেস করল স্মিতা।

    ছেলেটি বলল, চামেলি আমার দিদি হয়।

    কে চামেলি? কেন চামেলি?

    চেতলার চামেলি।

    যে আমার ফ্ল্যাট ঝাঁঢ়পোঁছ করত, রান্না করত?

    হ্যাঁ।

    তার সঙ্গে সেন সাহেবের কী সম্পর্ক?

    তা তো আমি জানি না। বিমুদা আপনাকে এই চিঠি আর টিফিন ক্যারিয়ারে করে ধোঁকার ডালনা পাঠিয়েছেন। দিদি সারাদিন ধরে বানিয়েছে।

    বলেই বলল, আমি যাই এবারে?

    টিফিন ক্যারিয়ারটা নিয়ে যাবে না? পরের জিনিস রাখি না আমি।

    না, না, সে পরেই হবে খন। আমি এখন যাই।

    স্মিতাকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই ছেলেটি দুড়দাড় করে সিঁড়ি বেয়েই চলে গেল দৌড়ে লিফট-এর অপেক্ষাতে না থেকে। আলিপুরের এই বারোতলা বাড়ি দেখে তার বোধহয় মাথা ঘুরে গেছিল। বাইরে থেকে দেখা এক, আর বাড়ির ভেতরে ঢুকে দেখা আর এক।

    অপমানে, রাগে, ঘেন্নায় স্তম্ভিত হয়ে বসে পড়ল স্মিতা সোফার উপর টিফিন ক্যারিয়ারটাকে কিচেনে রেখে এসে।

    টেলিফোনের পাশে খামে বন্ধ চিঠিটি বিমুর। তাতে কী আছে তা জানার এক তীব্র কৌতূহল হওয়া সত্ত্বেও চিঠিটা খোলার সাহস তার হল না তখুনি। চামেলির মুখটা মনে পড়ল। কালোর মধ্যে মিষ্টি মুখটি। লম্বা ছিপছিপে গড়ন। মাথা ভরা চুল। তাতে আবার গন্ধ তেল মাখত। স্মিতা একদিন বলেছিল বিমুকে, ছুছুন্দরকি শরপর চামেলিকি তেল। বিমু হেসেছিল। মেয়েটির চোখ দু-টিও ভারি সুন্দর। বিমু চামেলি বহাল হওয়ার দিনই আড়ালে বলেছিল, এ যে বনলতা সেন। একে কোত্থেকে জোগাড় করলে?

    সবসুষ্ঠু বছর দেড়েক কাজ করেছিল চামেলি। নাস্তা, দুপুরের খাওয়া আর বিকেলের চা খেত। রাতের রান্না করে দিয়ে চলে যেত। ক্লাস এইট-নাইন অবধি পড়েছিল চামেলি তারপর বাবা মারা যাওয়াতে আর পড়াশুনো করতে পারেনি। ভারি সভ্য-ভব্য ছিল। পরিষ্কার পরিচ্ছন্নও। মেয়ে। ভদ্রঘরেরই, অবস্থা বিপর্যয়ে এমন কাজ নিতে বাধ্য হয়েছিল। মাইনেও নিত পনেরো-শো টাকা। তবে ইট ওজ ওয়ার্থ। ওর ছোটো ভাইয়ের টাইফয়েড হওয়াতে ঘন ঘন কামাই করতে লেগেছিল বলেই হঠাৎই মেজাজ করে ছাড়িয়ে দিয়েছিল স্মিতা তাকে। বিমু কিছু বলেনি। তারপরে ভালো কাজের লোক আর পাওয়া যায়নি বলেই লোক আর রাখা হয়নি। বিমুই সব চালিয়ে নিত। চামেলি ফোনে এমনভাবে কথা বলত সকলের সঙ্গে যে সকলেই অবাক হয়ে যেত। ওরা বাড়িতে থাকলে সুন্দর হস্তাক্ষরে ফোনের মেসেজ লিখে রাখত। সবই ভালো। কিন্তু বিমু! ছি! ছি! কী রুচি। পুরুষমাত্রই কী এরকম?

    ফোনটা বাজল।

    বিমু ফিরেছে? আমি কি যাব?

    প্রদ্যুম্নর গলা।

    একটু চুপ করে স্মিতা বলল, থ্যাঙ্ক ইউ। হ্যাঁ ফিরেছে।

    দাও তো রাসকেলটাকে। আই উইল গিভ হিম আ থ্রাশিং।

    স্মিতা বলল, চানে গেছে। কাল কোরো। আজ টায়ার্ডও আছে। যা হিউমিডিটি।

    গেছিল কোথায়?

    ওর এক বন্ধু মারা গেছে।

    আই সি! তা বলে যেতে কী ছিল?

    সেই তো…। অস্ফুটে বলল, স্মিতা। ওকে তো জানই, ওইরকমই। তারপর আরও একটু চুপ করে বসে থেকে বিমলেন্দুর চিঠিটা খুলল ও।

    স্মিতা মেমসাহেব,

    কল্যাণীয়াসু,

    ব্যাপারটা ঘটতই। আজ আর কাল। রাগ কোরো না। তুমি আমাকে যা খুশি তাই ভাবতে পার কিন্তু আমি জানি যে অন্যায় করিনি। বরং তোমাকে মুক্ত করে দিয়েছি। তোমার সঙ্গী থেকে নামতে নামতে ক্রমশ আমি তোমার চাকরে পর্যবসিত হচ্ছিলাম। একজন চাকরের সঙ্গে থাকাটা তোমার মতো অ্যাকমপ্লিশড, অ্যাঙ্গুয়েন্ট যুবতীর পক্ষে আদৌ সম্মানের হত না। তুমি যখন গতকাল দুপুরে অফিস থেকে ফোন করে রীতিমতো অর্ডার করার ভঙ্গিতে আজ ধোঁকার ডালনা রাঁধতে বললে আমাকে তখনই আমি মনস্থির করেছিলাম যে আমাদের লিভ-টুগেদারের পালা এবারে শেষ করতে হবে। আশ্চর্য! কত সিদ্ধান্তর বীজই যে আমরা নিরন্তর বয়ে বেড়াই কিন্তু কোনো মুহূর্তে যে সেই বীজ অঙ্কুরিত হবে তা আমরা নিজেরাই জানি না।

    আগেকার দিনের মেয়েরা, যাদের অর্থনৈতিক স্বাধীনতা ছিল না, যেভাবে রোজগেরে স্বামীর আজ্ঞাবহন করে এসেছেন হাজার হাজার বছর ধরে, তাদের মর্মসহচরী এবং নমসহচরী হয়েছেন, তাঁদের সন্তান গর্ভে ধরেছেন, লালনপালন করেছেন হাসিমুখে কখনো একটুও হীনম্মন্যতা বোধ না করে, তেমন করে কোনো পুরুষ কোনো রোজগেরে নারীর সেবাদাস এখনও হতে পারে না। পারে না, কারণ, আমাদের রক্তে যে হাজার হাজার বছরের প্রভুত্ব রয়ে গেছে। It runs in the blood even today. এদেশীয় নারী স্বাধীনতার এই প্রথম অধ্যায়ে পুরুষের সেই বোধ পুরোপুরি মুছে ফেলতে পারাটা হয়তো কোনো পুরুষের পক্ষেই সম্ভব নয়। অন্তত আপাতত নয়। ভবিষ্যতে হয়তো অভ্যেস হয়ে যাবে। তোমার ভাষায়, অব্যেস।

    তা ছাড়া, তোমরা তোমাদের মধ্যে অনেকেই, তোমারই মতো, আর্থিক স্বাধীনতা নিয়ে ঠিক কী করবে, কেমন করে তা পুরোপুরি উপভোগ করবে তাও এখনও পুরোপুরি ঠিক করে উঠতে। পারোনি। নারী প্রগতি মানেই যে জিনস পরা নয়, ক্রেডিট কার্ডে সই করে যখন তখন যা তা কিনতে পারার স্বাধীনতা নয়, আফিসে কুড়ি-তিরিশ হাজারি পুরুষ অধস্তন কর্মীকে প্রচ্ছন্নভাবে হেয় করা নয়, চুল ছোটো করে ফেলা নয়, তেলকে বিসর্জন দিয়ে শ্যাম্পুকে মাথায় চড়াননা নয়, তোমাদের এই স্বাধীনতা এবং প্রগতির মূল যে অনেকই গভীরে প্রোথিত তা বুঝতে পারার মতো

    সুবুদ্ধি এই হঠাৎ স্বাধীন হওয়া নব্যযুগের তোমরা হারিয়ে ফেলেছ।

    চামেলিও কিন্তু অত্যন্ত স্বল্প শিক্ষিত হলেও প্রগতিশীল নারী। এবং অর্থনৈতিকভাবে স্বাধীনও। তার অত্যন্ত কষ্টার্জিত অর্থ, (যদিও তার পুরো মাসের রোজগার তোমার দু-ঘন্টার রোজগারের সমান) তার বৃদ্ধা মায়ের রক্ষণাবেক্ষণ এবং তার মেধাবী ভাইয়ের পড়াশুনোর জন্যে খরচ করে সে। নিজের জন্যে প্রায় বিন্দুমাত্রইনা রেখে। এই করাটাও এক ধরনের স্বাধীনতাবোধ থেকেই সে করে। কে কী করে, কেমনকরে করে, তার চেয়েও বড়ো কথা সেই করার পেছনে স্বাধীনতা থাকে কি না!

    ওর রোজগারটা আসে কোথা থেকে জান? তোমার বাবা, শিরীষকাকুর কাছ থেকে। কাকিমা মারা যাওয়ার পর থেকেই তো উনি একা। তুমি তো কলকাতাতে বাস করেও তাঁর জন্যে কিছুই করো না ও করোনি। বলেছ, দ্যাট ম্যান হ্যাড নট ডান এনিথিং ফর মি হোয়াই শুড আই কেয়ার ফর হিম।

    স্মিতা, কিছু মনে কোরো না, যদি আমি বলি যে, তোমরা অর্থনৈতিক স্বাধীনতা পেয়েই ব্যবসাদার হয়ে গেছ। অনেক এন আর আই-এরই মতো। আমি সর্বস্ব। গিভ অ্যান্ড টেক ছাড়া তোমাদের মধ্যে অনেকেই আর কিছুই বোঝে না।

    তুমি শিরীষকাকুকে কতবার গাড়ি পাঠিয়েছ তোমার সঙ্গে এসে ডে-স্পেন্ড করার জন্যে, কিন্তু উনি একবারও আসেননি। তোমার মতো স্ট্যাটাস সচেতন মানুষের পক্ষে চেতলার ওই গলির মধ্যে বস্তির পাশের একতলা বাড়িতে গিয়ে বাবার সঙ্গে সারাদিন কাটানোও সম্ভব হয়নি। তোমার একমাত্র দাদা শোভন, অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে তার অস্ট্রেলিয়ান স্ত্রী ও ছেলে-মেয়ে নিয়ে সেটলড। সেও তো লেখে আমাকে, তার দেশ বলে কিছু নেই। কোনো পিছুটান নেই। আর কলকাতাতে থেকেও তোমারও নেই। তোমরা সবাই Rootless হয়ে গেছ। তোমরা সবাই Floatsome i চামেলিকে তুমি ছাড়িয়ে দেবার পর ওর সঙ্গে কোনো সম্পর্ক আমার ছিল না। ওর ঠিকানাও আমার কাছে ছিল না। ওকে ভালো লাগত আমার কিন্তু তোমার সঙ্গে লিভ-টুগেদার করি যে-আমি তার চামেলির প্রতি অন্য কোনো ইন্টারেস্ট ডেভেলপ করেনি। সত্যি বলছি। আদৌ করেনি। ফুল ভালো লাগলেই কি তা ছিঁড়ে এনে ফুলদানিতে তোলা যায়? না তুললেও তা বাঁচে। কিন্তু শিরীষকাকুর খোঁজখবর আমি নিয়মিত নিতাম। তোমার বাবা বলে তো বটেই তা ছাড়া ওঁকে আমি বাবার বন্ধু হিসেবেও পছন্দ করতাম বলেও। মাস তিনেক আগে একদিন দুপুর বেলা ওঁকে দেখতে গিয়ে চামেলিকে সেখানে হঠাৎই দেখি। শিরীষকাকু বলেন, আমার আর কোনো দুঃখ। নেই বিমু, চামেলি আমার ছেলে ও মেয়ের অভাব পূরণ করেছে। কীই-বা দিতে পারি আমি ওকে। পেনশনে কটা টাকাই-বা পাই। কিন্তু ও যা করে আমার জন্যে তা বলার নয়। ফুল কিনে এনে ঘর সাজায়, তোমার কাকিমার ফটোতে ফুলের মালা পরায় রোজ সকালে। যা আমার ছেলে-মেয়েরা। কখনো করেনি। হাতের রান্নার তো কোনো তুলনাই নেই। ব্যবহার তো অত্যন্তই রেসপেকটেবল। পাশের দুটো ঘর খালি হবে চাটুজ্যে মশাই তাঁর মেয়ে-জামাই-এর কাছে চলে যাবেন। এলাহাবাদে। বাকি জীবন সেখানেই কাটাবেন মেয়ে-জামাই-এর আন্তরিক আমন্ত্রণে। ওই দুটো ঘর পেয়ে গেলে, আমি বলেছি, চামেলি ওর মা ও ভাইকে নিয়ে এখানেই চলে আসবে বস্তির ঘর ছেড়ে দিয়ে। ওর মতো সম্রান্ত মেয়ের পক্ষে ওই বস্তির পরিবেশে থাকা মুশকিল অথচ বস্তির সববয়সি মানুষই চামেলিদি বলতে অজ্ঞান। বুঝলে বিমু, কিছু কিছু ফুল থাকে, যা সবরকম জমিতেই সমান সৌন্দর্যে ফোটে। তা মরুভূমিই হোক কি তুষারাঞ্চল।

    শোনো স্মিতা, চামেলির প্রশস্তি করার জন্যে এই চিঠি লেখা নয়। চামেলি আজ ধোঁকার ডালনা করেছিল শিরীষকাকুর জন্যে। ডাল আরও বাটা ছিল, আমিই বললাম। তোমার জন্যে আবার করতে। তুমি গতকাল খেতে চেয়েছিলে।

    তোমার কুশল জিজ্ঞেস করেছে চামেলি সব সময়ই গত তিনমাসে। তুমি যে ওকে ওর বিপদের কথা না বুঝেই নিষ্ঠুরভাবে ছাড়িয়ে দিয়েছিলে সে জন্যে ওর মনে কোনো অভিযোগও আছে বলে লক্ষ করিনি। ভাবটা এমন, আবার ডাকিলেই যাইব। কিন্তু ও চাইলেও শিরীষকাকু, তোমার। পিতৃদেব, তাকে কচ্ছপের কামড়ে ধরেছেন। তোমার কাছে অপমানে অসম্মানে কাজ করার জন্যে চামেলিকে তিনি ছাড়বেন না। চামেলির জন্যে তিনি একটা সৎপাত্রও খুঁজছেন। গত তিনমাস ধরেই শুনছি। যদিও ও বয়সে আমার চেয়ে প্রায় এগারো বারো বছরের ছোটো তবু তোমার পিতৃদেব শিরীষকাকুর মতে সেটাই নাকি বিয়ের পক্ষে আইডিয়াল ডিফারেন্স। কাকিমা মানে, তোমার মা আর শিরীষকাকুর মধ্যে নাকি ওইরকম ডিফারেন্সই ছিল। অ্যান্ড দে মেড আ ভেরি হ্যাপি কাপল।

    বিবাহযোগ্যা চামেলির পাত্র হিসেবে অ্যাপ্লাই করে কী খারাপ করলাম স্মিতা? লিভ-টুগেদার আর বিয়ে তো এক নয়। লাভ তো আমারই। আমিই তো শিশুবধ করলাম। তা ছাড়া, চামেলির সঙ্গে অন্যভাবে মিশে বুঝতে পারছি যে আমার মধ্যে একজন প্যাট্রিয়ার্ক-এর রক্ত বইছে। ম্যাট্রিয়ার্কাল সোসাইটিতে সামিল হতে আমার আরও দু-চার মানব জন্ম লাগবে।

    সরি! আজ রাতে তোমাকে পেটে কিল দিয়ে শুয়ে পড়তে হবে কিন্তু তোমার চিঠি লেখার টেবলের ওপর বান্টি আন্টিজ কিচেনের ফোন নাম্বার আছে। আগামীকাল থেকে ওদের বললে তুমি যেমন চাইবে তেমন ডিনার এবং ছুটির দিনেও লাঞ্চ ওঁরা হটকেস-এ করে পাঠিয়ে দেবেন, থাই, চাইনিজ, কন্টিনেন্টাল, ইন্ডিয়ান সব। আজ চান করে উঠে, ব্রাউন ব্রেড আছে, ব্রাউন ব্লেড দিয়ে ধোঁকা খেয়ে গোটা চারেক ব্লাডিমেরি, ওঃ তাও তো বানিয়ে দিতাম ছাই আমিই। তোমার বারম্যান না থাকলে তো বানাবেই বা কে? তার চেয়ে অ্যাঙ্গুদ্রা বিটার্স দিয়ে পিঙ্ক জিন বানিয়ে খেয়ে নিয়ে শুয়ে পড়ো। জানতেও পারবে না কখন রাত পোয়ালো। মাঝরাতে ঘুম ভাঙলে একটু কান্না কান্না ভাব জাগতে পারে। জাগলে, আর একটা বড়ো জিন মেরে দেবে।

    কোনোদিনও বলিনি, আজ বলি যে, আমিও অনেকদিন অনেক রাত কেঁদেছি যখন আমার আত্মসম্মান আমাকে চিমটি কেটেছে, কিন্তু তোমাকে কখনো জানতে দিইনি। ড্রইংরুমে গিয়ে বারান্দার দরজা খুলে তারাভরা আকাশের দিকে চেয়ে কেঁদেছি, এক হতভাগা পুরুষ।

    নামি-দামি জিনিসের মুখ আর দেখা হবে না। খাওয়া হবে না গ্রান্ড-এ বা জারাঙ্গা-এও, তবে শিরীষকাকুর বন্ধু, তোমার কর্নেল গোপালকাকু আর্মি থেকে রিটায়ার করলেও আর্মির রাম পান সস্তায়। দু-বন্ধুতে রোজ সন্ধ্যেতে বসে খান আর টিভিতে ডিসকভারি চ্যানেল দেখেন। তাঁদের প্রসাদ পেলেই চলে যাবে। তবে এখন তো আমার নতুন দয়িত্ব-কর্তব্য হল, শিরীষকাকুর দেখাশোনা। তা ছাড়া চামেলিকেও সুখে রাখতে হবে তো! তাই লেখালেখিতে মন দিতে হবে।

    তোমার কীসের অভাব? তোমার কত পুরুষ আছে। মাসে দু-লাখ মাইনে পাওয়া অনূঢ়া সুন্দরীর কোনো অভাব কী থাকতে পারে? ইচ্ছে করলেই ফুল ফুটবে। শুধু ইচ্ছে হওয়ার অপেক্ষা। আমার মতো অপদার্থ তোমার জীবন থেকে বিদেয় হয়েছে তো আপদ গেছে।

    তুমি তো সন্তান চাওনি কখনোই। বলতে, মাদার টিরেজার হোমের কাছ থেকে বাচ্চা অ্যাডাপ্ট করবে। মা হওয়ার কষ্টের মধ্যে দিয়ে যাবে না তুমি। আমি কিন্তু চাই। ছেলেবেলা থেকেই চেয়েছি। চামেলিও চায়। আমাদের বেশ দুটো গাবলু-গুবলু বাচ্চা হবে। তাকে তো মন্ট গ্রেস বা ইন্টারন্যাশনাল স্কুল বালামার্টর্স বা সেইন্ট জেভিয়ার্স বা লরেটোতে ভরতি করাবার ঝামেলা করব না আমরা! পড়াব বাংলা মিডিয়াম স্কুলে। তারা বাংলা সাহিত্য পড়বে। সুকুমার রায়, লীলা মজুমদার, ব্যোমকেশ, শীর্ষেন্দু। বাংলা গান শুনবে, কীর্তন, পুরাতনী, রবীন্দ্রসংগীত। একেবারে সাদামাটা বাঙালি করে মানুষ করব তাকে, যাতে সে তোমার বা তোমার দাদার মতো কৃতী না হয়ে ওঠে।

    আমরা যখন বুড়ো হব, মানে, আমি আর চামেলি, তখন সে আর তার বউ আমাদের দেখবে। আমাদের জীবনে আরাম বেশি থাকবে না অর্থের অভাবে, মানে, অর্থ খুবই কম থাকবে, তবু অর্থের লোভ না থাকাতে আনন্দ থাকবে প্রচুর। আমার বা আমার স্ত্রীর বা আমার ছেলে-মেয়ের জীবনকে জীবিকা পুরোপুরি গিলে ফেলবে না, তোমাদের জীবনকে যেমন গিলে খেয়েছে। আমরা উপরে তাকাব না, নীচে তাকিয়ে আনন্দে থাকব। সকলেরই যে সব কিছু থাকতে হবেই তার কী। মানে আছে।

    প্রার্থনা কোরো স্মিতা। আমরা দুজনে যেন সুখী হই।

    আজ বড়ো হিউমিডিটি। লিখতে লিখতে হাতের ঘামে চিঠি ভিজে যাচ্ছে। তবু, আমার এই সিদ্ধান্তের কথা তোমাকে জানানো তো আমার কর্তব্য।

    ভালো থেকো। ধোঁকার ডালনাটা খেয়ো।

    –ইতি তোমার বিম

    ⤶ ⤷
    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27 28 29 30 31 32 33 34 35 36 37 38 39 40 41 42 43 44 45 46 47 48 49 50 51 52 53 54 55 56 57 58 59 60 61 62 63
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleচম্পাঝরন – বুদ্ধদেব গুহ
    Next Article মহাভারত – বিষ্ণুপদ চক্রবর্তী

    Related Articles

    বুদ্ধদেব গুহ

    বাবলি – বুদ্ধদেব গুহ

    May 28, 2025
    বুদ্ধদেব গুহ

    ঋজুদা সমগ্ৰ ১ – বুদ্ধদেব গুহ

    May 28, 2025
    বুদ্ধদেব গুহ

    ঋজুদা সমগ্র ২ – বুদ্ধদেব গুহ

    May 28, 2025
    বুদ্ধদেব গুহ

    ঋজুদা সমগ্র ৩ – বুদ্ধদেব গুহ

    May 28, 2025
    বুদ্ধদেব গুহ

    ঋজুদা সমগ্র ৪ – বুদ্ধদেব গুহ

    May 28, 2025
    বুদ্ধদেব গুহ

    অবেলায় – বুদ্ধদেব গুহ

    May 28, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Generic selectors
    Exact matches only
    Search in title
    Search in content
    Post Type Selectors
    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Our Picks

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }