Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • English Books
      • Jules Verne
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    ছোটগল্প – বুদ্ধদেব গুহ

    বুদ্ধদেব গুহ এক পাতা গল্প831 Mins Read0
    ⤶ ⤷

    নাশা

    সারা দিন কাজে একেবারেই মন বসছিল না নিমেষের।

    বড়োবাবু বললেন, পার্সোনাল লেজারের পোস্টিংটা ভলো করে রি-চেক করতে। পনেরো হাজার ছ-শো চুয়ান্ন টাকার ডিফারেন্স বেরিয়েছে ট্রায়াল ব্যালান্সে। অডিটর-এর অফিসের যে সিনিয়র অ্যাসিস্ট্যান্ট বসেছিলেন, তাঁর বোলচালই আলাদা। এমন ভাব, যেন সৃষ্টির প্রথম থেকে ট্রায়াল ব্যালান্স চিরদিনই অমিল এসেছে। ভাব দেখলে, হাসি পায়।

    নিমেষের বয়স পঁয়ত্রিশ হল। সেও এক সময় অডিট অফিসে-এ কাজ করেছে। নেহাত ফাইনাল সি এ-টা শেষ করতে পারেনি বলে। ডিগ্রিটাই নেইঞ্জ, নইলে, নিজে সে কিছু কাঁচা নয়। অনেক

    তাবড় তাবড় সি এ-ও তার দেখা আছে। এমন সময় সমস্যায় সে পড়েছে যে তেমন সমস্যাতে পড়লে একটাও জার্নাল-এন্ট্রি বেরোত না বড়োবাবুদের মাথা দিয়ে। কাও? সি এ ও সকলেরই দরকার পড়ে নিমেষকে কাজের বেলায়। বিপদে পড়লেই তখন নিমেষ এটা উদ্ধার করো। বিপদ কেটে গেলে চিনতেই পারেন না যেন। এই-ই সব নানা কারণে ট্রায়াল ব্যালান্স-এ

    আজকাল ডিফারেন্স থাকলে নিমেষ ওইভাবেই লিখে রাখে। বলে, ক্যরি ফরোয়ার্ড করে নিয়ে। যাও। ক্রেডিট অ্যাডজাস্ট করে বছর তিন-চার পর পর রাইট-অফ করে দিলেই হবে প্রফিট অ্যান্ড লস অ্যাকাউন্টে। অত চিন্তার কী আছে? এক কোটি টাকার টার্নওভারে কোম্পানিতে অমন সামান্য ডিফারেন্স, ট্রায়াল ব্যালান্স-এ থাকতেই পারে। সবই যদি ঠিকঠাক থাকবে তবে আর ফাভর্নমেন্ট কোম্পানি কেন? সিট অফ কনএফিসিয়েন্সি যেখানে সেখানে ওরকম একটু-আধটু গরমিল থাকবেই।

     

     

    নিট কথা, স্বভাবতই ও বড়োবাবুকে বলেনি। মুখে খোলেনি। মনে মনে বলেছিল।

    আসলে, তার মনটাই আজ মনে নেই।

    গতকাল অফিস-ফেরতা মাদ্রাস-টিফিন-এর পাশের সেই ছোট্ট দোকানটাতে একটা

    ব্লাঁ কলম দেখেছিল। সেকেন্ড হ্যান্ড, চোরাইও হতে পরে। কিন্তু তাতে যায় আসে না, সারা রাত ঘুমোতে পারেনি নিমেষ। আহাঃ! কলম, না যেন পরি!

    বানান করে পড়লে মন্ট-ব্লাঙ্ক (MONT BLANC) হয়। কিন্তু চৌধুরি সাহেব, চিফ ইঞ্জিনিয়ার, যাঁর নিমেষের মতোই কলমের শখ, একদিন বলেছিলেন, উচ্চারণটা ব্লাঁ। আল্পস-এর সবচেয়ে উঁচু চূড়ার নামেই নাম এই জার্মান কলমের।

    তা হবে। কিন্তু কী কলম! দাম বলেছিল আড়াই-শো। কাল রিমাকে আদর করার দিন ছিল

    নিমেষের। বৃহস্পতিবার ওর স্কুল বন্ধ থাকে। স্কুলে পড়ায় রিমা। তাই-ই দুজনের ইচ্ছানুযায়ী বুধবার এবং শনিবার আদরণীয় হয় রিমা। কিন্তু কাল নিমেষ এক নিমেষের জন্যও মনোযোগ দিতে পারেনি কোনো ব্যাপারেই। কী করবে। ইস! কী কলম!

     

     

    গত শনিবার পিন্টুর জন্যে জামা-প্যান্টের অর্ডার দিতে গেছিল রিমা গড়িয়াহাটের কাছের দোকানে। পুজোর আগে আগে বড্ডই ভিড় হয় বলে অগাস্টের শেষেই মাপ দিয়ে, কাপড় পছন্দ করে গেছিল ও। চেনা-দোকান বলে কাপড় আগে কিনে দিতে হয়নি। আজ সেই সব জামা কাপড়ের ডেলিভারি দেবে। দু-শো পঁয়ত্রিশ টাকা। রিমা টাকা দিয়ে বলেছিল অফিস ফেরতা একবার গড়িয়াহাটে নেমে ওগুলো নিয়ে আসতে।

    চাটুজ্জে একবার এল এ ঘরে। বলল কী রে? আকাশে চেয়ে কী ভাবছিস? নমিতার সঙ্গে ডেট আছে নাকি? রিমাকে একদিন বলে দেব। বেশ চালিয়ে যাচ্ছিস বাবা তুই। বিয়ে হয়ে গেল ছ বছর এখনও থিতু হলি না!

    নিমেষ চমকে উঠে বলল, মঁ ব্লাঁ!

    কী রে? পাগল হলি নাকি? ফ্রেঞ্চ বলছিস কেন? ফ্রেঞ্চ কী জার্মান তা জানি না। এঁ ব্লাঁ! এর কাছে নমিতার মতো ভিটামিন-ডেফিসিয়েন্ট ন্যাবা-ধরা কোনো বাঙালি মেয়ে কিছুমাত্র নয়। ধারের কাছেই আসে না।

    বাবাঃ। চাটুজ্জে বলল। একে মায় রাঁধে না তায় তপ্ত আর পান্তা! আমাদের দিকে নমিতা একবার তাকালে ধন্য হয়ে যাই আমরা আর তুই এখন ফ্রেঞ্চ জার্মান মেয়ের কথা বলছিস! সত্যি নিমেষ! এ লাইনে এলেম আছে তোর! সি এ ফাইনাল পাশ করতে পারলিনি বটে কিন্তু…

     

     

    নিমেষ কোনো কিছুই বলল না চাটুজ্জেকে। ও কী জানে? ব্লাঁর সৌন্দর্যর ও কীই-ই-বা জানে! কালো কুচকুচে শরীর, সিপু বউদির চুলের মতো মসৃণ উজ্জ্বল। একবার হাতে ধরলে মনে হয় স্বর্গ পেল হাতে। মঁ ব্লাঁর সঙ্গে নমিতার তুলনা! পৃথিবীর সব মহিলা একদিকে, আর মঁ ব্লাঁ অন্য দিকে!

    নিমেষের একমাত্র শালি টিনা ফোন করল। নিমেষদা, আমাদের অফিস থেকে আমরা চিরকুমার সভা করছি। দিদিকে বলে রেখেছিলাম, বলেনি? না ত! কোথায়? আপনাকে আসতেই হবে। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় এবং শক্তি চট্টোপাধ্যায় কবিতা পাঠ করবেন তার আগে। আপনি তো কবিতার খুবই ভক্ত। এলে, আলাপ করিয়েও দিতে পারব। আমার বন্ধু শীলার সঙ্গে আলাপ আছে শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের।

    কাজ আছে। হবে না টিনা। সরি। আজই যাওয়া সম্ভব নয়। আগে বলবে তো!

    বাঃ। আমি কি কলকাতায় ছিলাম। অফিসের কাজে বর্ধমান যেতে হয়েছিল না। তাই তো দিদিকে বলে গেছিলাম!

    দিদিটা না! এত্ত ভুলো মন যে, কী বলব।

     

     

    ওঃ। যাই-ই হোক। সরি টিনা! আজ অসম্ভব।

    কী হয়েছে আপনার, নিমেষদা?

    কিছু হয়নি। কিন্তু, হতে পারে।

    কী?

    নাঃ। কিছু না।

    টিনা বিরক্ত হয়ে ফোন ছেড়ে দিল। একমাত্র শালির সঙ্গে একমাত্র জামাইবাবুর সম্পর্কটি খুবই মিষ্টি। এমন ব্যবহারে বলা বাহুল্য, টিনা আহত হল। আসলে, কাল যে সময়ে কলমের। দোকানটাতে গেছিল নিমেষ, ঠিক সেই সময়টাতেই একজন স্যুটেড-বুটেড মোটা-সোটা মাড়োয়ারি ভদ্রলোক এসেছিলেন। দোকানের ছেলেটি তাকে সিংহানিয়া সাব সিংহানিয়া সাব বলে ডাকছিল। ব্লাঁ কলমটার উপর তাঁরও কী নজর আছে? ভাবছিল নিমেষ। নেহাত দোকানের বুড়ো মালিক ছিল না তাই-ই, বোধহয় অল্পবয়সি ছেলেটি দাম এবং খরিদ্দার সম্বন্ধে একা মনস্থির করতে পারল না তক্ষুনি। বলল, ইয়ে সব কিমতি চিজোকি ফ্যান্সি দাম হোতি হ্যায়! চাচা নেহি হেনেসে ম্যায় নক্কি নেহি করনে সাঁকো।

     

     

    লোকটার পয়সা আছে অনেক। কিন্তু এই কলম দিয়ে সে করবে কী? লিখবে তো আটা ময়দার হিসেব। নয়তো শেয়ারবাজারের গ্রাফ। ছেঃ! এমন লোকের হাতে এমন কলম পড়লে কলমের বেইজ্জতির চরম হবে। মাড়োয়ারিরা না লেখে প্রেমপত্র, না লেখে কবিতা! তাদের একমাত্র কবিতা লাল খাতা। রোকড় আর খতিয়ান। অডিট ফার্মে থাকাকালীন নিমেষ খুব কাছ থেকে এঁদের দেখেছে। ওই সিংহানিয়া না সাঙ্গেনারিয়াবাবু কী বুঝবে মঁ ব্লাঁর? শুধুমাত্র লক্ষ্মীর উপাসকের সরস্বতীর যন্ত্রে প্রয়োজনই বা কী?

    বড়োবাবু একবার এলেন ঘরে। বলল, কতদূর তোমার? নিমেষ?

    কীসের কতদূর?

    অন্যমনস্ক গলায় বলল নিমেষ।

    মিলল ট্রায়াল ব্যালান্স?

    এত সহজে কি মেলে বড়োবাবু?

     

     

    সে কী? অত্যন্ত উত্তেজিত হয়ে বড়ো এক টিপ নস্যি নিলেন তিনি। বললেন, ফ্যাকাও আমাকে খেয়ে ফেলবেন।

    ফ্যাকাও। ফিনান্সিয়াল অ্যাডভাইসার অ্যান্ড চিফ অ্যাকাউন্ট্যান্ট। চেঁচায় ম্যাকাও-এর মতো! ভাবল নিমেষ।

    মুখে বলল, হাজারিবাগে শিশুদের খাচ্ছে নেকড়ে, সুন্দরবনে মানুষ খাচ্ছে কেঁদো বাঘ, প্রতি মুহূর্তে, ডালহৌসিতে বাঙালিকে খাচ্ছে মাড়োয়ারি! প্রতি মুহূর্তে কেউ কাউকে খাচ্ছেই। এতে আর আশ্চর্য হবার কী আছে! তা আপনাকে ফ্যাকাও খাবেন এটা আর বড়ো কথা কী?

    আজকাল তুমি বেশি কথা বলছ হে নিমেষ। ইউ আর নট সাপোজড টুটক লাইক দিস টু ইওর ইমিডিয়েট বসস। আন্ডারস্ট্যান্ড?

    ইয়েস! আন্ডারস্ট্যান্ড। কিন্তু বড়োবাবু, আজ আমাকে ঠিক চারটেতেই বেরুতে হবে। আমার মনটা একেবারেই ভালো নেই। আজ আমাকে প্রেসার করবেন না।

    সে কী? কেন? কেন? চলে যাবে? চলে যাবে? ট্রায়াল ব্যালান্স না মিলিয়েই? কী হয়েছে কী?

     

     

    আমার জীবনের ট্রায়াল ব্যালান্সেই গণ্ডগোল দেখা দিয়েছে বড়োবাবু। আই কান্ট কেয়ার লেস।

    সে আবার কী? ব্যাপারটা কী বলবে তো!

    মঁ ব্লাঁ।

    কী! কোনো ভাইরাস ইনফেকশন নাকি হে নিমেষ? আন্ত্রিকের বিলিতি নাম কী? বৌমার কোনো মেয়েলি অসুখ?

    নো স্যার। মঁ ব্লাঁ।

    তোমার মাথার গোলমাল হয়েছে। বড়োবাবু বললেন। বলেই, আরও নস্যি নিলেন।

    বললেন, তোমার চাকরি যেতেই পারে।

    ননশালান্টলী বলল নিমেষ, গেলে যাবে। অন্যদিকে মুখ করে।

     

     

    চাকরি থাক কী নাই-ই থাক তা নিয়ে ভাবে না ও। সৌভাগ্যের কথা এই-ই যে এই মহান সমাজতান্ত্রিক গণতন্ত্রে সরকারি বা আধা-সরকারি কোনো চাকরি একবার পেয়ে গেলে কখনোই তা যায় না। কাজ করার সঙ্গে এখানে চাকরির কোনো সম্বন্ধ নেই। মহান ভারত সরকারের রাষ্ট্রয়ত্ত কোম্পানির চাকরি! ঝুগ ঝুগ জিও! ঝুগ ঝুগ জিও!

    চাকরি যাওয়ার ভয় নিমেষের সত্যিই নেই। অ্যাকাউন্টস ডিপার্টমেন্ট মায় ফ্যাকাও একারই হাতের মুঠোতে। বড়োবাবু মায় ফ্যাকাও অ্যাকাউন্টস এর কিছুই জানেন না। শুধুই ছড়ি ঘোরানো কাজ ওঁদের। নিমেষ চাকরি ছেড়ে দিলেও পায়ে ধরে তাকে ফিরিয়ে আনবেন তাঁরা।

    কাঁটায় কাঁটায় চারটের সময়ই বেরিয়ে পড়ল ও। চারটের ডালহাউসি, অচেনা লাগল চোখে। রোজ বেরোয় সাড়ে ছটা সাতটাতে। সি এ ফেলঞ্জ, তাই-ই ওদের মতো ফেলুড়েদের কাঁধে ভর করেই পুরো দেশটা চলছে আজকে হাঁটি হাঁটি পা পা করে। টপ-হেভি ব্যাপার সর্বত্র। উপরওয়ালারা শুধু কনফারেন্স করেন আজকাল। কনফারেন্স! গুলি মার।

    মেট্রোর কাছে যেতে হবে। মাড্রাস টিফিনের কাছে। মঁ ব্লাঁ। হেঁটেই এগোলো।

     

     

    পনেরো মিনিট লাগল পৌঁছোতে। রিমার দেওয়া পিন্টুর জামাকাপড়ের টাকাটা হিপ পকেটের মানি ব্যাগে হাত ছুঁইয়ে একবার ফিল করল। না, আছে। রিমার বেসরকারি চাকরি। ইচ্ছে। করলেই আগাম-টাগাম পায়। তাই পুজোর অনেক আগে রিমাই এসব ব্যাপারে অ্যাডভান্স খরচ করে।

    থাকগে পিন্টুর জামা। কী এমন নবাবের বাচ্চা এসেছেন আমার! ভাবল, নিমেষ। পুজো।

    অক্টোবরের প্রথমে আর অগাস্টেইনবাবজাদার পুজোর পোশাক তৈরি হচ্ছে যে-দেশে লোকে দু বেলা খেতে পায় না, পথে মানুষ মরে পড়ে থাকে, সেই দেশের পাতি-বুর্জোয়ার ছেলের পোশাকের জন্যে রিমার অতি উৎসাহ থাকতে পারেঞ্জ, নিমেষের নেই।

    বাঃ। দেখা যাচ্ছে দোকানটা। আজ বুড়োও আছে। কী যেন নাম? সামসুদ্দিন না কী যেন!

    নিমেষকে দেখে বুড়ো হাসল। মাঝে মাঝে সস্তা বল পয়েন্ট, বা চাইনিজ কলম নিতে আসে ও। বুড়ো চেনে তাকে।

    নিমেষও হাসল।

     

     

    পাছে তার অতি উৎসাহবুড়ো ধরে ফেলে দাম বাড়িয়ে দেয়, তাই মুখের ভাবে কোনোরকম উৎসাহই না দেখিয়ে বলল, কালকে একটা কলম দেখে গেছিলাম, আছে কি? আপনার ভাতিজা কোথায়? সামসুদ্দিন মিঞা?

    কে জানে। কোথায় গেল। চা খেতে গেল তো গেল! আর বলবেন না আজকালকার ছেলেদের কথা।

    আছে তো? কলমটা?

    কী কলম?

    মঁ ব্লাঁ!

    ও! মন্টব্লাঁঙ্ক? হ্যাঁ আছে। এসব কলমের কদর এদেশে কে বোঝে বাবু? হিয়া তো সব দোনম্বরিকা ধান্দা। দো নম্বরি আদমী, দোনম্বরি শামান।

    নিমেষ মনে মনে বলল, জ্ঞান দিও না। স্মাগলিং-এর নবাব তো তোমরাই। আমরা কলম কিনি, লাইটার কিনি তোমাদের কাছ থেকে টাকা দিয়ে, আর পরে তাই-ই বুলেট হয়ে ফিরে আসবে। আমাদেরই বুকে। তবু বোঝে কে সে কথা?

     

     

    পরক্ষণেই নিমেষ ভাবে যে, টাকা বুলেট হয়ে বুকে ফিরলে ফিরুক, কিন্তু ব্লাঁ আমার চাই-ই চাই। মঁ ব্লাঁ-র কোনো বিকল্প নেই।

    মুখে বলল, সাহী বাত। দাম কিতনা?

    সামসুদ্দিন কলমটা বের করে বলল, ঢাই-শো।

    নিমেষ দেখল, কালকের হোঁতকা সিংহানিয়া, গাড়ি থেকে নেমে দ্রুত এগিয়ে আসছে। ওর টাকার অভাব কী? আটাতে তেঁতুল বিচি, গমে পাথর, সরষের তেলে শেয়ালকাঁটা। টাকাই সবচেয়ে দামি এসব লোকের কাছে। এবং সস্তাও।

    নিমেষ আর দেরি না করে তাড়াতাড়ি ওর টাকা বের করল। যার টাকার জোর কম তার পক্ষে দেরি করাটা মূর্খামি! সামসুদ্দিন টাকা নিয়ে কলমটা বের করে দিল। মাড়োয়ারিবাবু প্রায় দৌড়ে এসে পড়ল।

    বলল, হ্যায়?

    ক্যা?

    মঁ ব্লাঁ?

    আররে…নহীনহী! বুজুনে পইসা বরবাদ করতা হ্যায়। হামারা তিন রূপীয়াওয়ালা বল-পয়েন্টই কাফি হ্যায়। ইয়ে লাইটার হামারা। মেরামত কি লিয়ে।

    দিজিয়ে।

    বলে, সামসুদ্দিন লাইটার রেখে দিল।

    বলল, কাল পিয়োন ভেজ দিজিয়ে হুজৌর।

    ঠিক হ্যায়। মগর দো রূপেয়াসে জাদা নেহী দুঙ্গা।

    হাসল, সামসুদ্দিন।

    সিংহানিয়া চলে গেল। বলল কামিনা। শালেকো সিরিফ পইসেসেই মতলব। পইসেই জান ইনকো। বদবু জানোয়ারভি ইনসে আচ্ছা হ্যায়। স্রিফ পয়সা ছোড়কে ঔর কুছভি নেহি জানতা ইনলোগোনে।

    কলমটা দু-হাতের পাতায় নিয়ে চোখের সামনে ধরল নিমেষ। সামসুদ্দিনের জ্ঞান শোনার

    মতো ধৈর্য ছিল না ওর।

    সামসুদ্দিন বলল, আপ ক্যা পোয়েট-উয়েট হ্যায় বাবুজি?

    চমকে উঠল নিমেষ। সি এ ফেল অ্যাকাউন্টেন্ট। বলল, নেহী! মগর…

    কোঈ বাত নেহী বাবুজি। শ্যায়ের লিখনেওয়ালে আদমী বহত কমই মিলতে হ্যায়। মগর। শুনলেওয়াঁলোঁকে কর্মী নেহী। ক্যা কিজিয়ে গা আপ ইয়ে কিমতি কলমসে? খ্যয়ের! নাশাঞ্জ, নাশাহি হ্যায়!

    ওহি তো শোচ রহা হ্যায়। করেঙ্গে কেয়া ইসসে।

    বলল, নিমেষ।

    তারপর চৌরঙ্গির মধ্যে মিশে গেল। ভিড়ের মধ্যে ঢুকে পড়ে বাড়িয়ে দিল ভিড়।

    নিমেষ জানে যে, বাড়ি ফিরে আজ রাতে অনেক কৈফিয়ত দিতে হবে তাকে। রিমার কাছে তো। বটেই, পিন্টুর কাছেও। স্ত্রী ও ছেলের কাছে অপদস্থ হবে। ঠিক করল, ও বলবে, পকেট মার হয়ে গেছে টাকাটা। ঘন ঘন পকেটমারিও হয় না আজকাল। এত লোক বেড়ে গেছে যে, পকেট মেরে পালাবার জায়গা নেই পকেটমারদের। আজ লোকগুলো গেল কোথায়? তারা থাকলে এই মুহূর্তে তাদের উপর দোষ চাপিয়ে নিশ্চিন্তে ফেরা যায়। যাকগে, আজ নিমেষের পকেট কাটা যাবে না নিরুপায় ও।

    কাঁদবে রিমা। কাঁদবে পিন্টু। সেটা কোনো ব্যাপার নয়। প্যাঁজ কাটতে বসেও কাঁদে রিমা, পিন্টু কাঁদে ক্লাসে অঙ্ক না পারলে। সেটা কোনো বড়ো ব্যাপার নয়। মাসের প্রথমে মাইনে পেলেই ও পিন্টুর জামাকাপড় ছাড়াবে। আগামী মাসে একদিন টিফিন করবে না, সিগারেট খাবে এর ওর থেকে, কিনবে না একটাও।

    নিমেষ ঠিক করল আজ বাড়ি ফিরেই পকেটমারির জন্য পিন্টুর জামাকাপড় না আনা নিয়ে রিমার সঙ্গে ঝগড়া করবে। ঝগড়া করে, পিন্টুর সঙ্গেই রিমাকে শুতে বাধ্য করাবে নিমেষ।

    তারপর?

    তারপর আঃ!

    তারপর? তারপর তাদের খাটের বাজুর উপর রাখা টেবিল লাইটটি জ্বেলে সারারাত সাদা প্যাডের উপর উজ্জ্বল মসৃণ কালো কলমটি দিয়ে লিখবে চিঠি। আহা। নতুন বউ-এর মতো, বাসরের রাতের মতো দরজা বন্ধ ঘরে নিভৃতে চিকন কালো কলমটির সঙ্গে সহবাস করবে ও। চিঠি লিখবে ও লিজ টেইলর, স্মিতা পাতিল, রেখাকে। মেরি লু রেটন অথবা সাদা নরম নগ্ন পায়ে দৌড়ে যাওয়া জোলা বাডকে। ব্লাঁ কলমটিকে চুমু খাবে কোনো সুন্দরী কৃষ্ণাঙ্গ নারীর নরম শরীরের কেন্দ্রবিন্দুর মতো…

    চুমু খাবে, আর ভাববে…

    নন না। চৌরঙ্গীর ভিড়ের মধ্যে হাঁটতে হাঁটতে নিমেষ ভাবছিল। না। কোনো নারী নয়, কোনো

    পাখি নয়ঞ্জ, অন্য কোনো কিছুই নয়।

    ⤶ ⤷
    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27 28 29 30 31 32 33 34 35 36 37 38 39 40 41 42 43 44 45 46 47 48 49 50 51 52 53 54 55 56 57 58 59 60 61 62 63
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleচম্পাঝরন – বুদ্ধদেব গুহ
    Next Article মহাভারত – বিষ্ণুপদ চক্রবর্তী

    Related Articles

    বুদ্ধদেব গুহ

    বাবলি – বুদ্ধদেব গুহ

    May 28, 2025
    বুদ্ধদেব গুহ

    ঋজুদা সমগ্ৰ ১ – বুদ্ধদেব গুহ

    May 28, 2025
    বুদ্ধদেব গুহ

    ঋজুদা সমগ্র ২ – বুদ্ধদেব গুহ

    May 28, 2025
    বুদ্ধদেব গুহ

    ঋজুদা সমগ্র ৩ – বুদ্ধদেব গুহ

    May 28, 2025
    বুদ্ধদেব গুহ

    ঋজুদা সমগ্র ৪ – বুদ্ধদেব গুহ

    May 28, 2025
    বুদ্ধদেব গুহ

    অবেলায় – বুদ্ধদেব গুহ

    May 28, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Generic selectors
    Exact matches only
    Search in title
    Search in content
    Post Type Selectors
    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Our Picks

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }