Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • English Books
      • Jules Verne
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    জননী – মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়

    উপন্যাস মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় এক পাতা গল্প250 Mins Read0
    ⤶ ⤷

    ০৮. আরো চার বছর কাটিয়া গেল

    বনগাঁয়ে শ্যামার একে একে আরো চার বছর কাটিয়া গেল।

    কলিকাতার বাড়িটা তাহাকে বিক্রয় করিয়া দিতে হইয়াছে। ম্যাট্রিকুলেশন পাস করিয়া বিধান যখন কলিকাতায় পড়িতে গেল–শীতলের প্রত্যাবর্তনের এক বছর পর।

    শীতলের অসুখের জন্য অনেক টাকা খরচ করিতে না হইলে রাখাল হয়তো শেষ পর্যন্ত বিধানের পড়ার খরচ দিতে রাজি হইত। বড় খারাপ অসুখ হইয়াছিল শীতলের। বেশি জ্বর, অনাহার, দারুণ শীতে উপযুক্ত আবরণের অভাব, মানসিক পীড়া এই সব মিলিয়া শীতলের স্নায়ুরোগ জন্মাইয়া গিয়াছিল, দেহের সমস্ত স্নায়ু তাহার উঠিয়াছিল ফুলিয়া। চিকিৎসার জন্য তাহাকে কলিকাতা লইয়া যাইতে হইয়াছিল। তিন মাস সে পড়িয়া ছিল হাসপাতালে। তারপর শ্যামার কাদা-কাটায় রাখাল আরো তিন মাস তাহার বৈদ্যুতিক চিকিৎসা চালাইয়াছিল। তার ফলে যতদূর সুস্থ হওয়া সম্ভব শীতল ত হইয়াছে। কিন্তু জীবনে সে যে কাজকর্ম কিছু করিতে পারিবে সে ভরসা আর নাই। যতখানি তাহার অক্ষমতা নয়, ভান করে সে তার চেয়ে বেশি। শুইয়া বসিয়া অলস অকৰ্মণ্য দায়িত্বহীন জীবনযাপনের সুখটা টের পাইয়া হয়তো সে মুগ্ধ হইয়াছে। হয়তো সে সত্যই বিশ্বাস করে দারুণ সে অসুস্থ, কর্মজীবনের তাহার অবসান হইয়াছে। হয়তো সে হিষ্টিরিয়াগ্রস্ত অসুখের অজুহাতে সকলের দয়া ও সহানুভূতি, মমতা ও সেবা লাভ করার চেয়ে বড় আর তার কাছে কিছুই নাই। তবে সবটা শীতলের ফাঁকি নয়, শরীরে তাহার গোলমাল আছে, মাথাটা তোঁতা হইয়া যাওয়াও কাল্পনিক নয়, অসুখের যে বাড়াবাড়ি ভানটুকু সে করে তার ভিত্তিও তো মানসিক রোগ।

    তবু ছেলের পড়া চালানোর জন্য বাড়িটা শ্যামার হয়তো বিক্রয় করিতে হইত না, যদি বাঁচিয়া থাকিত হারান ডাক্তার। বিধানকে হারানের বাড়ি পাঠাইয়া সে লিখিত, বাবা, জীবনপাত করে ওর স্কুলের পড়া সাঙ্গ করেছি, আর তো আমার সাধ্য নেই, এবার দিন বাবা ওর আপনি কলেজে পড়ার একটা ব্যবস্থা করে। হারান তা দিত। শ্যামার সন্দেহ ছিল না। কিন্তু হারানের অনেক বয়স হইয়াছিল, বিধানের স্কুলের পড়া শেষ হওয়া পর্যন্ত সে বাঁচিয়া থাকিতে পারিল কই?

    হারান মরিয়াছে। মরিবে না? কপাল যে শ্যামার মন্দ! হারান বাঁচিয়া থাকিলে শ্যামার ভাবনা কি ছিল? বাড়িতে শ্যামার ভাড়াটে আসিয়াছিল, তারা কুড়ি টাকা পাঠাইত শ্যামাকে, আর হারান পাঠাইত পঁচিশ! হারানের মনিঅৰ্ডারের কুপনে কোনো অজুহাতের কথা লেখা থাকিত না, শুধু অপাঠ্য হাতের লেখার স্বাক্ষর থাকিত–হারানচন্দ্র দে। শ্যামা তো তখন ছিল বড়লোক। কয়েক মাসে শ দেড়েক টাকাও জমাইয়া ফেলিয়াছিল। কেন মরিল হারান? কত মানুষ সত্তর-আশি বছর বাঁচিয়া থাকে, পয়ষট্টি পার হইতে না হইতে হারানের মরিবার কি হইয়াছিল?

    শ্যামা কি করিবে? ভগবান যার প্রতি এমন বিরূপ, বাড়ি বিক্রি করিয়া না দিয়া তার উপায় কি?

    শহরতলির বাড়ি, তাও বড় রাস্তার উপরে নয়, দক্ষিণ খোলা নয়। একতলা পুরোনো। বাড়ি বেচিয়া শ্যামা হাজার পাঁচেক টাকা পাইয়াছিল।

    টাকা থাকিলে খরচ কেন বাড়িয়া যায় কে জানে। আগে ছোট-বড় অনেক খরচ মন্দার উপর দিয়া চালানো যাইত, কিন্তু পুঁজি যার পাঁচ হাজার টাকা সে কেন তা পারিবে? মন্দাই-বা দিবে কেন? দুধের কথা ধরা যাক। দুধ অবশ্য কেনা হয় না, বাড়িতে পাঁচ-ছয়টা গরু আছে। কিন্তু গরুর পিছনে খরচ তো আছে? শ্যামার ছেলেমেয়েরা দুধ তো খায়? শ্যামা পাঁচ হাজার টাকা পাওয়ার মাসখানেক পরে মন্দা বলে, পয়সাকড়ি হাতে নেই বৌ, এ-মাসের খোল-কুড়োর দামটা দিয়ে দাও না, সামনের মাসে আনাবখন আমি।

    কুঁড়ো কেনা হইবে কেন? সেদিন যে দু মন চালু করা হইল তার কুঁড়ো গেল কোথায়? এবার মন্দা ধান ভানার মজুরি নগদ দেয় নাই। ধান যে ভানিয়াছে কুঁড়ো পাইয়াছে সে। মন্দা তাহা হইলে শ্যামার টাকাগুলি খরচ করাইয়া দিবার মতলব করিয়াছে? ঘরের ধানের কুঁড়ো পরকে দিয়া শ্যামাকে দিয়া কুঁড়ো কিনাইবে।

    মাসের শেষে মুদি তাহার সঁইত্রিশ টাকা পাওনা লইতে আসিয়াছে, মন্দা তিনখানা দশটাকার নোট গুনিয়া দেয়, একটু ইতস্তত করিয়া নগদ টাকাও দেয় একটা, তারপর শ্যামাকে বলে, ছটা টাকা কম পড়ল, দাও না বৌ টাকাটা দিয়ে।

    বর্ষাকালে জল পড়িতে আরম্ভ হইয়াছে শ্যামার ঘর দিয়া, দুখানা টিন বদলানো দরকার, কে বদলাইবে টিন? বাড়ি মন্দার, ঘরখানা মন্দার, শ্যামা তো শুধু আশ্রিত অতিথি, মন্দারই তো উচিত ঘরখানা সারাইয়া দেওয়া। বলিলে মন্দা চুপ করিয়া থাকে। একটু পরেই সংসার খরচের দুটি-একটি টাকা বাহির করিয়া দিবার সময় মন্দা এমন করিয়া বলিতে থাকে যে আর সে পারিয়া উঠিল না, এ যেন রাজার বাড়ি ঠাওরাইয়াছে সকলে। খরচ খরচ খরচ, চারিদিকে শুধু খরচ ছাড়া আর কথা নাই মনে হয় সে বুঝি শ্যামার ঘর সারাইয়া দিবার অনুরোধেরই জবাব দিতেছে এতক্ষণ পরে।

    বাড়ি বেচিয়া এমনি কত খরচ যে শ্যামার বাড়িয়াছে বলিবার নয়।

    বিধানের কলিকাতার খরচ, মণি স্কুলে যাইতেছে তার খরচ, শীতলের জন্য খরচ, অসুখ- বিসুখের খরচ– শ্যামার তো মনে হইত মন্দার নয়, খরচ খরচ খরচ, চারিদিকে শুধু খরচ, তার।

    আর বকুল? বকুলের জন্য শ্যামার খরচ হয় নাই?

    গত বৈশাখে তের শ টাকা খরচ করিয়া বকুলের শ্যামা বিবাহ দিয়াছে। কমিতে কমিতে পাঁচ হাজারের যা অবশিষ্ট ছিল, বকুল একাই প্রায় তা শেষ করিয়া দিয়াছে।

    বকুলের বিবাহ হইয়াছে, আমাদের সেই বকুলের? কার সঙ্গে বিবাহ হইয়াছে বকুলের, শঙ্করের সঙ্গে নাকি? পাগল! শঙ্করের সঙ্গে বকুলের বিবাহ হয় না।

    যে বৈশাখে আমাদের বকুলের বিবাহ হইল, তার আগের ফাল্গনে বিবাহ হইয়াছিল সুপ্রভার মেয়েটির, বিবাহের তিন-চারদিন আগে কলিকাতা হইতে বিধানের সঙ্গে শঙ্করও আসিয়াছিল। বয়সের আন্দাজে বকুল মস্ত হইয়া উঠিয়াছিল, শঙ্কর ভাবিতে পারে নাই বকুল এত বড় হইয়াছে, আর এত লজ্জা হইয়াছে বকুলের, আর এত সুন্দর হইয়াছে সে! মেয়ের সম্বন্ধে শ্যামা যে এত সাবধান হইয়াছে তাও কি শঙ্কর জানিত? বিবাহের পরদিন দুপুরবেলা বকুলকে আর শ্যামা দেখিতে পায় না। কোথায় গেল বকুল? বাড়িতে পুরুষ গিজগিজ করিতেছে, যেখানে যেখানে মেয়েরা একত্র হইয়াছে বকুল তো সেখানে নাই? হাতের কাজ ফেলিয়া রাখিয়া শ্যামা এখানে খোজে ওখানে খোজে, একে তাকে জিজ্ঞাসা করে। একজন বলিল, এই তো দেখলাম এখানে খানিক আগে, দেখ না কলাবাগানে গেছে নাকি?

    বাড়ির পিছনে কলাবাগান, কলাবাগানে সেই টেকিঘর। তাই বটে, ঢেঁকিঘরে পেঁকিটার উপর বসিয়া শঙ্কর আর বকুল কথা বলিতেছে বটে। ঘরের কোণে এখানে বকুল আর এখন পুতুল খেলা। করে না, খেলাঘর তার ভাঙিয়া গেছে, শুধু আছে চিহ্ন, কতবার ঘর লেপা হইয়াছে। আজো চারিদিকে উঁচু আলের চিহ্ন, পুকুরের গর্ত মিলাইয়া যায় নাই, বেড়ায় যে শিউলিবোঁটার রঙে ছোপানো ন্যাকড়াটি গোঁজা আছে সে তো বকুলের পুতুলেরই জামা। পুতুল খেলার ঘরে কি। ছেলেখেলা আজ করিতেছে বকুল? একটু বাড়াবাড়ি রকম কাছাকাছি বসিয়া আছে ওরা, আর কিছু নয়। না, বকুলের হাতটিও শঙ্করের হাতে ধরা নাই। শ্যামা বলিয়াছিল, ও বকুল, এখানে বসে আছিস তুই? মেয়ে-জামাই যাবে যে এখন, আয়, চলে আয়।

    বকুল তো আসিল, কিন্তু মেয়ের মুখ রাঙা কেন, চোখ কেন ছলো ছলো?–শঙ্কর আসিয়াছে। চার-পাঁচদিন, সকলের সামনে শঙ্করের সঙ্গে কত কথা বকুল বলিয়াছে, দু-চার মিনিট একা কথা বলিবার সময়ও কতবার শ্যামা হঠাৎ আসিয়াছে ওদের দেখিয়াছে, শ্যামাকে দেখিয়াও কথা শঙ্কর বন্ধ করে নাই, বকুল হাসি থামায় নাই। সেঁকিঘরে আজ ওরা কোন্ নিষিদ্ধ বাণীর আদান-প্রদান করিতেছিল, বকুলের মুখে যা রং আনিয়াছে, চোখে আনিয়াছে জল? কি বলিতেছিল শঙ্কর বকুলকে?

    শ্যামা একবার ভাবিয়াছিল বকুলকে জিজ্ঞাসা করিবে! শেষে কিছু না বলাই ভালো মনে করিয়াছিল। কিছুই হয়তো নয়। হয়তো নির্জন ভেঁকিঘরে শঙ্করের কাছে বসিয়া থাকার জন্যই বকুল লজ্জা পাইয়াছিল, ওখানে ওভাবে বসিয়া থাকা যে তার উচিত হয় নাই, বকুল কি আর তা বোঝে না।

    তারপর যে কদিন শঙ্কর এখানে ছিল, আর তিনটি দিন মাত্ৰ, বকুলকে শ্যামা একদণ্ডের জন্য। চোখের আড়াল করে নাই।

    বকুল রাগ করিয়া বলিয়াছিল, সারাদিন পেছন পেছন ঘুরছ কেন বল তো?

    বকুলের বোধহয় অপমান বোধ হইয়াছিল।

    শ্যামা বলিয়াছিল, পেছন পেছন আবার তোর ঘুরলাম কখন?

    তারপর বকুল কাঁদিয়া ফেলিয়াছিল, গিয়া বসিয়াছিল শীতলের কাছে, সারাটা দিন।

    দু মাস পরে বৈশাখ মাসে বকুলের বিবাহ হইয়াছিল। ছেলের নাম মোহিনী, ছেলের বাপের নাম বিভূতি, নিবাস কৃষ্ণনগর। বিভূতি ছিল পোস্টমাস্টার, এখন অবসর লইয়াছে। মোহিনী পঞ্চাশ টাকায় ঢুকিয়াছে পোস্টাপিসে, আশা আছে বাপের মতো সেও পোস্টমাস্টার হইয়া অবসর লইতে পারিবে। মোহিনী কাজ করে কলিকাতায়, থাকে কাকার বাড়ি, যার নাম শ্ৰীপতি এবং যিনি মাৰ্চেন্ট আপিসের কেরানি।

    ছেলেটি ভালো, আমাদের বকুলের বর মোহিনী। শান্ত নম্র স্বভাব, পঞ্চাশ টাকার চাকরি করে বলিয়া এতটুকু গৰ্ব নাই, প্রায় শঙ্করের মতোই লাজুক। দেখিতে মন্দ নয়, রং একটু ময়লা কিন্তু কি চোখ! বকুলের চোখের মতোই বড় হইবে।

    জামাই দেখিয়া শ্যামা খুশি হইয়াছে, সকলেই হইয়াছে। জামাইয়ের বাপ-খুড়ার ব্যবহারেও কারো অসুখী হওয়ার কারণ ঘটে নাই, শ্বশুরবাড়ি হইতে বকুল ফিরিয়া আসিলে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করিয়া জানা গিয়াছে, শাশুড়ি-ননদেরাও বকুলের মন্দ নয়, বকুলকে তারা পছন্দও করিয়াছে, আদর যত্ন মিষ্টি কথারও কমতি রাখে নাই, কেবল এক পিশাশুড়ি আছে বকুলের সেই যা রূঢ় কথা বলিয়াছে দু-একটা বলিয়াছে, ধেড়ে মাগী, বলিয়াছে তালগাছ! ধোঁয়া পাকা মেঝেতে পা পিছলাইয়া পড়িয়া গিয়া বকুল যখন ডান হাতের শাখাটি ভাঙিয়া ফেলিয়াছিল বিশেষ কিছু কেহ তখন তাহাকে বলে নাই, কেবল ওই পিশাশুড়ি অনেকক্ষণ বকাকি করিয়াছিল, বলিয়াছিল অলক্ষ্মী, বলিয়াছিল বজ্জাত।

    বলুক, পিশাশুড়ি কে? শাশুড়ি-নন্দই আসল, তারা ভালো হইলেই হইল।

    বকুল বলিয়াছিল, না মা, পিশাশুড়ির প্রতাপ ওখানে সবার চেয়ে বেশি, সবাই তার কথায় ওঠে-বসে। ঘরদোর তার কিনা সব, নগদ টাকা আর সম্পত্তি নাকি অনেক আছে শুনলাম, তাইতে সবাই তাকে মেনে চলে। বুড়ির ভয়ে কেউ জোরে কথাটিও কয় নামা।

    তাহা হইলে ভাবনার কথা বটে। শ্যামা অসন্তুষ্ট হইয়া বলিয়াছিল, কদিন ছিলি তার মধ্যে শাঁখা ভেঙে বুড়ির বিষনজরে পড়লি! বৌ-মানুষ তুই, সেখানে একটু সাবধানে চলাফেরা করতে হয়।

    বকুল বলিয়াছিল, পা পিছলে গেল, আমি কি করব? আমি তো ইচ্ছে করে পড়ি নি!

    সুপ্ৰভা বলিয়াছিল, মরুক পিশাশুড়ি, জামাই ভালো হইলেই হইল। সব তো আর মনের মতো হয় না।

    তা বটে। স্বামীই তো স্ত্রীলোকের সব, স্বামী যদি ভালো হয়, স্বামী যদি ভালবাসে, হাজার দজ্জাল পিসশাশুড়ি থাক, কি আসিয়া যায় মেয়েমানুষের?

    মোহিনী ভালবাসে না বকুলকে?

    মোটা মোটা চিঠি তো আসে সপ্তাহে দুখানা! ভালবাসার কথা ছাড়া কি আর লেখে মোহিনী অত সব? আর কি লিখবার আছে তাহার?

    সুপ্রভার মেয়েকে বকুল বরের চিঠি পড়িতে দেয়। শ্যামা, সুপ্রভা, মন্দা সকলে আগ্রহের সঙ্গে একবার তাকে প্রশ্ন করিয়াছিল, সে হাসিয়া বলিয়াছিল, ভেব না মামি ভেব না, যা কবিত্ব করে চিঠিতে, জামাই তোমার ভেড়া বনে গেছে।

    তবু লুকাইয়া মেয়ের একখানা চিঠিতে শ্যামা চোখ বুলাইতে ছাড়ে নাই। টাঙানো লেপের বস্তার কোথায় কোন ফাঁকে চিঠিখানা আপাতত গোপন করিয়া বকুল স্নান করিতে গিয়াছিল, শ্যামার কি না নজর এড়াইয়াছে! চোরের মতো চিঠিখানা পড়িয়া শ্যামা তো অবাক। এসব কি লিখিয়াছে মোহিনী? সব কথার মানেও যে শ্যামা বুঝিতে পারি না?

    কে জানে, হয়তো ভালবাসার চিঠি এমনি হয়। শীতল তো কোনোদিন তাকে প্রেমপত্র লেখে নাই, সে কি জানে প্রেমপত্রের?

    না জানুক, জামাই যে মেয়েকে পছন্দ করিয়াছে, তাই শ্যামার ঢের। একটি শুধু ভাবনা তাহার আছে। বকুল তো পছন্দ করিয়াছে মোহিনীকে? কে জানে কি পোড়া মন তাহার, ঢেঁকিঘরে সেই যে বকুল আর শঙ্করকে সে একসঙ্গে দেখিয়াছিল, বার বার সে কথা তাহার মনে পড়িয়া যায়। বকুলের সে রাঙা মুখ আর ছলছল চোখ সর্বদা চোখের সামনে ভাসিয়া আসে।

     

    পূজার সময় বকুলকে নেওয়ার কথা ছিল। পূজার ছুটির সঙ্গে আরো কয়েকদিনের ছুটি লইয়া মোহিনী ষষ্ঠীর দিন বনগাঁ আসিল। বিধানের কলেজ অনেক আগে বন্ধ হইয়াছিল, কিন্তু সে শঙ্করের সঙ্গে কাশী গিয়াছে। শঙ্করের কে এক আত্মীয় থাকেন কাশীতে, সেখানে পূজা কাটাইয়া বিধান বাড়ি আসিবে।

    মোহিনী থাকিতে চায় না। অষ্টমীর দিনই বকুলকে লইয়া বাড়ি যাইবে বলে। সকলে যত বলে, তা কি হয়? এসেছ, পূজার কদিন থাকবে না? লাজুক মোহিনী ততই সলজ্জভাবে একট হাসিয়া বলে, না, তার যাওয়াই চাই।

    কেন, যাওয়াই চাই কেন!–সকলে জিজ্ঞাসা করে।–পনের দিনের ছুটি তো নিয়েছ, দুদিন এখানে থেকে গেলে ছুটি তো তোমার ফুরিয়ে যাবে না?

    শেষে মোহিনী স্বীকার করে, এটা তার ইচ্ছা-অনিচ্ছার ব্যাপার নয়, পিসিমার হুকুম অষ্টমীর দিন রওনা হওয়া চাই।

    সুপ্ৰভা অসন্তুষ্ট হইয়া বলে, এ কি রকম হুকুম বাছা তোমার পিসির? বেয়াই বর্তমান পিসিইবা হুকুম দেবার কে? বেয়াইকে টেলিগ্রাম করে আমরা অনুমতি আনিয়ে নিচ্ছি, লক্ষীপুজো পর্যন্ত তুমি থাকবে এখানে।

    মোহিনী ভয় পাইয়া বলে, টেলিগ্রাম যদি করতে হয়, পিসিকে করুন। কিন্তু তাতে কিছু লাভ হবে না, অনুমতি পিসি দেবে না, মাঝ থেকে শুধু চটবে।

    কেহ আর কিছু বলে না, মনে মনে সকলে অসন্তুষ্ট হইয়া থাকে। বুঝিতে পারিয়া মোহিনী বড় অস্বস্তি বোধ করে। সুপ্রভার মেয়েকে সে বুঝাইবার চেষ্টা করে যে, এ ব্যাপারে তার কোনো দোষ নাই, পিসি তিনখানা চিঠিতে লিখিয়াছে অষ্টমীর দিন সে যেন অবশ্য অবশ্য রওনা হয়, কোনো কারণে যেন অন্যথা না ঘটে, কথা না শুনিলে পিসি বড় রাগ করে। সুপ্রভার মেয়ে শুনিয়া বলে, বোঝা তো ভাই, আসার মতো আসা এই তো তোমার প্রথম, দুদিন না থাকলে কেমন লাগে আমাদের।

    মোহিনী কয়েক ঘণ্টা ভাবে, তারপর সুপ্রভার মেয়েকে ডাকিয়া বলে, আচ্ছা দশমী পর্যন্ত থাকব।

    শুনিয়া শ্যামা আসিয়া বলে, থাকলে পিসি রাগ করবে বলছিলে?

    গিয়ে বুঝিয়ে বলবখন।–মোহিনী বলে।

    শ্যামা তবু ইতস্তত করে।–জোর করে ধরে রেখেছি বলে পিসি তো শেষে …?

    মনটা শ্যামার খুঁতখুঁত করে। কি যে জবরদস্তি সকলের! যাইতে দিলেই হইত অষ্টমীর দিন। তার মেয়ে-জামাই, পিসির নাম শুনিয়া সে চুপ করিয়া গেল, সকলের এত মাথাব্যথা কেন? ওরা কি যাইবে পিসির রাগের ফল ভোগ করিতে? ভুগিবে তার মেয়ে। সুপ্রভার মেয়ে একসময় তাহাকে একটা খবর দিয়া যায়। বলে, জান মামি, জামাই তোমার তার পাঠালে পিসির কাছে। কি লিখেছে জান, এখানে এক গণৎকার বলেছে পুজোর কদিন ওর যাত্রা নিষেধ।।

    শ্যামা নিশ্বাস ফেলিয়া বলে, কি সব কাণ্ড মা, আমার ভালো লাগছে না খুকি, এমন করে

    কাউকে রাখতে আছে!

    আমরা রেখেছি নাকি? জামাই নিজেই তো বললে থাকবে।

    তখন শ্যামা হাসিয়া সুপ্ৰভার মেয়ের চিবুক ধরিয়া বলে, আরেকটি জামাই তো আমার এল না।

    মা?

    সে লক্ষ্মীপূজার পরেই আসিবে, শ্যামা তাই হাসিয়া এ কথা বলে, ব্যথার সঙ্গে বলিবার প্রয়োজন হয় না।

    পূজা উপলক্ষে মন্দা সাধারণভাবে খাওয়াদাওয়ার ভালো ব্যবস্থা করিয়াছে, শ্যামা খরচপত্র করিয়া আরো বেশি আয়োজন করিল, আসার মতো আসা এই তো জামাইয়ের প্রথম। মোহিনীকে সে একপ্রস্থ ধুতি-চাদর-জামা-জুতা কিনিয়া দিল, দিল দামি জিনিস, জামাই যে পঞ্চাশ টাকার চাকুরে। শ্যামার টাকা ফুরাইয়া আসিয়াছে, কিন্তু কি করিবে, এসব তো না করিলে নয়।

    কাজ করিতে করিতে শ্যামা বকুলের ভাবভঙ্গি লক্ষ্য করে। মোহিনী আসিয়াছে বলিয়া খুশি হয় নাই বকুল? এমন চাপা মেয়েটা তার, মুখ দেখিয়া কিছু কি বুঝিবার যো আছে। খাওয়াদাওয়া শেষ হইতে অনেক রাত্রি হয়, বকুল আসিয়া মার বিছানায় শুইয়া পড়ে, শ্যামা বলে, রাত অনেক হল, আর এখানে কেন মা? ঘরে যাও।

    এখানে শুই না আমি?–বকুল বলে।

    শ্যামা ভয় পাইয়া সুপ্রভার মেয়েকে ডাকিয়া আনে। সে টানাটানি করে, বকুল যাইতে চায় না, শ্যামার বুকের মধ্যে ঢিপঢিপ করিতে থাকে। শেষে ধৈর্য হারাইয়া শ্যামা দাতে দাঁত ঘষিয়া বলে, পোড়ারমুখী কেলেঙ্কারি করে সকলের মুখে তুই চুনকালি দিবি? যা বলছি যা, মেরে ছেঁচে ফেলব তোকে আমি।

    সুপ্রভার মেয়ে বলে, আহা মামি, বোকো না গো, যাচ্ছে।

    তারপর বকুল উঠিয়া যায়। শ্যামা চুপ করিয়া তক্তপোষে বসিয়া ভাবে। নানা কারণে সে বড় বিষাদ বোধ করে। কে জানে কি আছে মেয়েটার মনে। পূজার সময় চারিদিকে আনন্দ উৎসব, বিধানও কাছে নাই যে ছেলের মুখ দেখিয়া মনটা একটু শান্ত হয়। ছেলে বড় হইয়াছে, তাই আর কলেজ ছুটি হইলে ছুটিয়া মার কাছে আসে না, বন্ধুর সঙ্গে বেড়াইতে যায়।

    শীতল বোধহয় বাহিরে তাসের আড়ায় বসিয়া আছে, শ্যামার বারণ না মানিয়া সে আজ সিদ্ধি গিলিয়াছে একরাশি। কে আছে শ্যামারঃ সারাদিনের খাটুনির পর শরীর শ্ৰান্ত অবসন্ন হইয়া আসিয়াছে, মনের মধ্যে একটা দুঃসহ ভার চাপিয়া আছে, কত যে একা আর অসহায় মনে হইতেছে। নিজেকে, সেই শুধু তা জানে, এতটুকু সান্ত্বনা দিবারও কেহ নাই।

    ভালো করিয়া আলো হওয়ার আগে উঠিয়া শ্যামা বকুলের ঘরের দরজায় চোখ পাতিয়া দাওয়ায় বসিয়া রহিল। বকুল বাহির হইলে একবার সে তাহার মুখখানা দেখিবে। খানিক বসিয়া থাকিয়া শ্যামার লজ্জা করিতে লাগিল, এদিক ওদিক সে একটু ঘুরিয়া আসিল, পুকুর ঘাটে গিয়া মুখে-চোখে জল দিল। এও এক শরৎকাল, শ্যামার জীবনে এমন কত শরৎ আসিয়া গিয়াছে। পুকুরের শীতল জল, ঘাসের কোমল শিশির শ্যামার মুখে আর চরণে কত কি নিবেদন জানায়। সে কি একদিন বকুলের মতো ছিল? কবে?

    তারপর ভিতরে গিয়া শ্যামা দেখিল, বকুলের ঘরের দরজা খোলা। কিন্তু বকুল কোথায়? শ্যামা এদিক ওদিক তাকায়, সম্মুখ দিয়া পার হইয়া যাওয়ার সময় ভিতরে চাহিয়া দেখে মশারি তোলা, বিছানা খালি, বকুল বা মোহিনী কেউ ঘরে নাই। এত ভোরে কোথায় গেল ওরা? শ্যামা গালে হাত দিয়া সিঁড়িতে বসিয়া রহিল।

    রান্নাঘরের পাশ দিয়া চোরের মতো বাড়িতে ঢুকিয়া শ্যামাকে বসিয়া থাকিতে দেখিয়া দুজনেই তাহারা লজ্জা পাইল। মোহিনী ঘরে চলিয়া গেল। বকুল শ্লথ পদে মার কাছে আসিল।

    কোথা গিয়েছিলি বকুল?

    বকুল কথা বলে না। পাশে বসাইয়া শ্যামা একটা হাতে তাহাকে বেষ্টন করিয়া থাকে। তাই বটে, তেমনি রাঙা বটে বকুলের মুখ, ভেঁকিঘরে সেদিন শ্যামা যেমন দেখিয়াছিল। শুধু আজ ওর চোখ দুটি ছলছল নয়।

    দশমীর দিন বেলা দশটার সময় অপ্রত্যাশিতভাবে বিধান আসিল। শ্যামা আনন্দে অধীর হইয়া বলিল, তুই যে চলে এলি খোকা? মন টিকিল না বুঝি সেখানে তোর?

    হঠাৎ শ্যামার মন হালকা হইয়া গিয়াছে। সেদিন মোহিনীর সঙ্গে বেড়াইয়া আসিয়া বকুলের মুখ যে রাঙা হইয়াছিল তা দেখিবার পরে শ্যামার মন কি ভার হইয়াছিল? হইয়াছিল বৈকি। শ্যামার ভাবনা কি বকুলের জন্য? এমনি শরৎকালে যাকে শ্যামা কোলে পাইয়াছিল, সোনার টুকরার সঙ্গে লোকে যাকে তুলনা করে, তাকে না দেখিলে শ্যামার ভালো লাগে না। মোহনীর জন্য মাছ মাংস রাঁধিতে রাঁধিতে উন্মনা হইয়া চোখের জল সে ফেলিয়াছিল কার জন্য?

    বিধান আসিয়াছে। আর শ্যামার দুঃখ নাই। পৃথিবীতে শরৎ আসিয়াছে হাসির মতো, এতদিন শ্যামা হাসিতে পারে নাই। এবার শ্যামার মুখের হাসি ফুটিয়াছে।

    পরদিন বকুলকে বিদায় দিয়াও শ্যামার মুখ তাই বেশিক্ষণ স্লান রহিল না। রান্নাঘরে গিয়া তার কাছে পিঁড়ি পাতিয়া বিধান বসিতে না বসিতে কখন যে সে ভুলিয়া গেল মেয়ের বিরহ।

    ⤶ ⤷
    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleদিবারাত্রির কাব্য – মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
    Next Article চিহ্ন – মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়

    Related Articles

    উপন্যাস কল্লোল লাহিড়ী

    ইন্দুবালা ভাতের হোটেল – কল্লোল লাহিড়ী

    May 28, 2025
    উপন্যাস বুদ্ধদেব গুহ

    কোয়েলের কাছে – বুদ্ধদেব গুহ

    May 23, 2025
    উপন্যাস সত্যজিৎ রায়

    রবার্টসনের রুবি – সত্যজিৎ রায়

    April 3, 2025
    উপন্যাস সত্যজিৎ রায়

    বোম্বাইয়ের বোম্বেটে – সত্যজিৎ রায়

    April 3, 2025
    উপন্যাস সত্যজিৎ রায়

    রয়েল বেঙ্গল রহস্য – সত্যজিৎ রায়

    April 3, 2025
    উপন্যাস সত্যজিৎ রায়

    যত কাণ্ড কাঠমাণ্ডুতে – সত্যজিৎ রায়

    April 3, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Generic selectors
    Exact matches only
    Search in title
    Search in content
    Post Type Selectors
    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Our Picks

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }