Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    আসমানীরা তিন বোন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025

    ইস্টিশন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025

    উড়ালপঙ্খী – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • English Books
      • Jules Verne
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    জলপদ্ম – হুমায়ূন আহমেদ

    হুমায়ূন আহমেদ এক পাতা গল্প114 Mins Read0
    ⤶ ⤷

    ০৩. নখ দিয়ে দরজা আঁচড়াচ্ছে

    কে যেন নখ দিয়ে দরজা আঁচড়াচ্ছে।

    কি অদ্ভুত কাণ্ড। কলিং বেল আছে, দরজার কড়া আছে। বেল টিপবে কিংবা কড়া নাড়বে। দরজা নখ দিয়ে আঁচড়াবে কেন? পাগল-টাগল না তো! ইলার বুক ছ্যাঁৎ করে উঠল। ভাগ্যিস সে একা নেই। জামান আছে।

    কে?

    চাঁপা হাসির শব্দ। আবার দরজায় আঁচড়। ইলা সাহস করে দরজা খুলল। যা ভেবেছিল তাই। রুবা হাসিমুখে দাঁড়িয়ে।

    রুবা বলল, পাঁচ টাকা দিতে পারবে আপ? রিকশী ভাড়া।

    দাঁড়া দিচ্ছি।

    রুবা বসার ঘরে ঢুকে একটু হকচকিয়ে গেল। গম্ভীর মুখে জামান বসে আছে। জামানের সামনে সে কেন জানি সহজ হতে পারে না। রুবার ধারণা হল, দরজা আঁচড়ানোর ব্যাপারটায় দুলাভাই বিরক্ত হয়েছেন।

    কেমন আছেন দুলাভাই?

    ভাল। দরজা আঁচড়াচ্ছিলে কেন?

    ঠাট্টা করছিলাম।

    এরকম ঠাট্টা না করাই ভাল। সব বয়সে স ঠাট্টা ভাল না। আর শোন, রিকশা ভাড়া না নিয়ে রিকশায় উঠবে না। ধর, আমরা কেউ যদি বাসায় না থাকতাম তখন কি করতে?

    এত ভোরে আপনারা যাবেন কোথায়? ঘরেই তো থাকবেন, তাই না? আমি আসছি দুলভাই। ভাড়াটা দিয়ে আসি।

    রুবা একটু মন খারাপ করে রিকশা ভাড়া দিতে গেল। জামান ইলার দিকে তাকিয়ে অপ্রসন্ন গলায় বলল, তোমাদের সবারই কাণ্ডজ্ঞান একটু কম। একটু না, অনেকখানি কম। ইলা কিছু বলল না।

    পকেটে টাকা-পয়সা না নিয়েই রিকশা ভাড়া করে চলে এসেছে। এর মানে কি? এইসব ব্যাপার আমার খুব না-পছন্দ।

    আস্তে বল, ও এসে শুনবে।

    শোনার জন্যেই তো বলা। শুনে যদি কিছু শেখে। তা তো শিখবে না। সবাই কাজ করবে তার নিজের মত।

    রুবা বোধহয় কিছু শুনেছে। সে ঘরে ঢুকল মুখ কালো করে। লজ্জিত মুখে জামানের দিকে একবার তাকিয়েই নিচু গলায় বলল, আপা আরো দুটাকা দিতে হবে। পাঁচ টাকা ভাড়া ঠিক করে এসেছি। এখন চাহে সাত টাকা। আমার কাছে একটা পাঁচ টাকার সেটি আছে, ওটা নিতে চাচ্ছে না। একটু ছেঁড়া।

    জামান বিশ্রী ভঙ্গিতে হাসল। লজ্জায় রুবার মরে যেতে ইচ্ছা করছে।

    ইলা আরো টাকা এনে দিল। জামান ঠাণ্ডা গলায় বলল, এরকম কাজ আর করবে না রুবা।

    জ্বি আচ্ছা।

    রুবার চোখে প্রায় পানি এসে যাচ্ছিল। সে নিজেকে সামলে নিল। রিকশাওয়ালাকে বাড়তি দুটাকা দিল। দাঁড়িয়ে রইল খানিকক্ষণ। এই মুহূর্তেই আবার ঘরে ঢোকা ঠিক হবে না। চোখে পানি এসে যাবে। বরং কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে নিজেকে সামলে নেয়া যাক। একবার ভাবল, ঘরে না গিয়ে কলেজের দিকে হাঁটা ধরবে। কিন্তু তাতে আপার মন খুব খারাপ হবে। ক্যাটক্যাট করে দুলাভাই নিশ্চয়ই আপাকে খুব কথা শুনাবে। কবা আবার ঘরে ঢুকল।

    জামান বলল, কোন কাজে এসেছ, না এম্নি?

    আপার কাছে এসেছিলাম।

    তা তো বুঝতেই পারছি। সেটা কাজে না অকাজে?

    অকাজে।

    ইলা রুবার হাত ধরে তাকে রান্নাঘরে নিয়ে গেল। নিচু শালায় বলল, তোর দুলাভাইয়ের অনেকগুলি টাকা হারিয়ে গেছে। এই জন্যে যা খারাপ। যা মনে আসছে, বলছে। তুই কিছু মনে করিস না। লক্ষ্মী ময়না। কিছু মনে করবি না।

    না মনে করব কি? আমার এত মনটন নেই।

    মা ভাল আছে?

    আছে। মোটামুটি ভাল।

    আর ভাইয়া?

    সেও ভাল।

    তার ব্যবসা কেমন চলছে রে?

    ভাল না। লাভ এক পয়সাও হচ্ছে না। মাঝে মাঝে লোকসান। এখন মনে হচ্ছে সমান সমান যাচ্ছে। লাভও নেই, লো
    কসান নেই।

    নাসিম ভাই, নাসিম ভাই কেমন আছে?

    রুবা চট করে এই প্রশ্নের উত্তর দিল না। আপার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে খানিকক্ষণ তাকিয়ে রইল। তারপর বলল, জানি না কেমন। অনেক দিন আমাদের বাসায় আসে না।

    ইলা অস্বস্তির সঙ্গে বলল, তুই এইভাবে আমার দিকে তাকিয়ে আছিস কেন?

    রুবা বলল, তোমাকে দেখছি। তুমি আরো সুন্দর হয়েছ। যত দিন যাচ্ছে তুমি তত সুন্দর হচ্ছ।

    ইলা বলল, তুই দাড়া এখানে। আমি তোর দুলাভাইকে চা-টা দিয়ে আসি। তুই চা খাবি?

    না। আমাকে ফ্রীজের ঠাণ্ডা পানি দাও আপা। ফ্রীজ ধরলে দুলাভাই আবার রাগ করবে না তো?

    ইলা কিছু বলল না। চায়ের কাপ নিয়ে বসার ঘরে ঢুকল। জামান শর্টি গায়ে দিচ্ছে। আজ সে দাড়ি কামায়নি। গালে খোঁচা পেঁচা দাড়ি। বিশ্রী লাগছে দেখতে। থুতনির কাছের কিছু দাড়ি পাকা। একদিন দাড়ি না কামালে তাকে কেমন বুড়োটে দেখায়। জামান চুল আঁচড়াতে আঁচড়াতে বলল, রুবা কি জন্যে এসেছে?

    এম্নি এসেছে। বেড়াতে। আবার কি জন্যে।

    আমার তো মনে হয় টাকা-পয়সা চাইতে এসেছে। হাবভাবে তাই মনে হচ্ছে। পাঁচ দশ চাইল দিয়ে দিও। এর বেশি চাইলে না করবে।

    আচ্ছা।

    আমি যাচ্ছি জয়দেবপুর। ফিরতে রাত দশটার বেশি বাজবে। বাড়িওয়ালাকে বলবে গেটটা যেন খোলা রাখে। ব্যাটা ছোটলোক। সন্ধ্যাবেলা গেট বন্ধ করে দিবে। ইয়ারকি!

    রোজ রোজ জয়দেবপুর যাচ্ছ কেন?

    কাজ আছে, তাই যাচ্ছি। কাজ না থাকলে যেতাম না। তোমার অতিরিক্ত কৌতূহল আমার পছন্দ না। কৌতূহল যত কম খাকে তত ভাল।

    ইলা কাতর গলায় বলল, তুমি যাবার আগে রুবাকে কিছু একটা বলে যাও। বেচার মন খারাপ করেছে।

    কি বলে যাব?

    চলে যাচ্ছ যে এটা বলবে।

    ওকে তা বলার দরকার কি? চলে যাচ্ছি তার জন্য কি অনুমতি নিতে হবে?

    জামান গম্ভীর মুখে বেরিয়ে গেল। ধড়াম করে দরজা বন্ধ করে খানিকটা রাগও দেখাল। সকাল থেকেই সে রেগে আছে।

    ইলা রান্নাঘরে ফিরে এসে দেখে রুবা সত্যি কাঁদছে। ওড়নার এক প্রান্ত চোখে ধরে আছে। নিঃশব্দ কান্না। ইলা তখনি সন্দেহ করেছিল–এই কাণ্ড হবে।

    কি হয়েছে রে?

    রুবা ফিক করে হেসে ফেলে বলল, অভিনয় করছি। তুমি কি ভেবেছিলে সত্যি সত্যি কাঁদছি?

    ইলা কাতর গলায় বলল, তুই যে তোর দুলাভাইয়ের উপর রাগ করে কাঁদছিস তা জানি। শাক দিয়ে মাছ ঢাকতে হবে না। বললাম না ওর মনটা ভাল নেই। শরীরও খরিপ। কাল রাতে ঘুমাতে পারে নি। আয়, ফ্যানের নিচে বসি। ইস, গরমে ঘেমে কি হয়েছিল।

    দুলাভাই চলে গেছেন?

    হুঁ। জয়দেবপুর গেছে। ফিরতে ফিরতে রাত এগারটা হবে।

    জয়দেবপুর কি?

    জমি নাকি কিনেছে। আমাকে কিছু বলে না।

    বলে না কেন?

    সব মানুষ কি এক রকম হয়? একেক জন একেক রকম হয়। ওর স্বভাব হচ্ছে কাউকে কিছু না বলা।

    তোমাকে বোধহয় বিশ্বাস করে না।

    বিশ্বাস করবে না কেন? কি যে তোর পাগলের মত কথা। আয় তোর চুল বেঁধে দেই। কাকের বাসা করে রেখেছিস।

    ইলা চিরুনি নিয়ে বসল। অন্তু মিয়া বারান্দায় চাদর গায়ে বসে আছে। তার চোখ লাল। মুখ ফোলা।

    রুবা বলল, ওর ঠোঁটে কি হয়েছে আপা?

    পড়ে গিয়েছিলো। তেরি আজ কলেজ নেই?

    আছে। কলেজ ফাঁকি দিয়ে এসেছিস?

    ইলা খানিকক্ষণ ইতস্তুত করে বলল, তোর কি কোন টাকা-পয়সার দরকার? দরকার থাকলে বল।

    রুবী অনিন্দিত স্বরে বলল, দেড়শ টাকা দিতে পারবে?

    খুব পারব। এরচে বেশি পরিব। পাড়া চুলটা বেঁধে শেষ করি।

    ইলা একটা পাঁচশ টাকার নোট নিয়ে এলো। সহজ গলায় বলল–সবটাই নিয়ে নে।

     

     

     

     

     

    সে কি! সবটা নিয়ে নেব?

    ফেরত দিতে হবে না। সবটাই তোর।

    বল কি আপা! এত টাকা কোথায় পেয়েছ?

    তোর দুলাভাইয়ের কাছ থেকে পেয়েছি। আর কে আমাকে টাকা দেবে? তুই বসে থাক। আমি রান্না চড়িয়ে আসি। আজ তুই যেতে পারবি না। সারাদিন থাকবি। সন্ধ্যার আগে আগে আমি তোকে যাত্রাবাড়ি রেখে আসব।

    রুবার এখন আর কলেজে যেতে ইচ্ছা করছে না। এখানে বসে থাকতেই ভাল লাগছে। কি হবে পিকনিকে গিয়ে! শুধু হৈচৈ। মেয়েগুলি অবশ্যি খুব মন খারাপ করবে। রুবাকে কলেজে গেলে চেপে ধরবে। কোন অজুহতি কাজে খাটবে না।

    রুবা রান্নাঘরে ইলার পাশে এসে বসল। আপা বিয়ের আগে রান্নাবান্না কিছুই জানতো না। এখন কি সুন্দর এটার সঙ্গে ওটা দিচ্ছে। নুন চাখছে। ইলা বলল,–গরমের মধ্যে বসে আছিস কেন? যা ফ্যানের নিচে গিয়ে বস্। আমি লেবুর শরবত বানিয়ে দেই।

    তোমার বাসায় এলেই শুধু লেবুর শরবত। লেবুর শরবত। তুমি বুঝি দুনিয়ার সব লেবু কিনে রেখে দিয়েছ? শরবত লাগবে না। তুমি কাজ কর, আমি দেখি।

    যা এখান থেকে, যা। রান্নাঘরে বসে থাকবি না। রঙ নষ্ট হয়ে যাবে। বিয়ে অটিকে যাবে।

    রুবা মনে মনে হাসল। আপা অবিকল মার কথাগুলি বলছে। মা তাদের দুবোনের কাউকেই রান্নাঘরে ঢুকতে দিত না। মার কি করে ধারণা হয়ে গিয়েছিল রান্নাঘরে ঢুকলেই মেয়েদের রঙ নষ্ট হয়ে যাবে। মা সেদিনও বলেছে,

    গরীবের ঘরে রঙটাই হচ্ছে আসল। রঙের জন্যেই গরীবের ঘরের মেয়েদের ভাল ভলি বিয়ে হয়। দেখ না ইলার কেমন বিয়ে হয়ে গেল। একটা পয়সা খরচ তুল না। সেটা কি জন্যে হয়েছে? রঙের জন্যে। মুখশ্রী-টুখশ্রী সব বাজে কথা। আসল হচ্ছে রঙ।

    রুবা হেসে বলেছে, আমার তাহলে কি গতি হবে মা? আপার রঙ আর আমার রঙ। আমার তো মনে হচ্ছে এনড্রিন-ফেনড্রিন খেতে হবে। এনড্রিন খেতে কেমন কে জানে। হি হি হি।

    মা বিরক্ত হয়ে বলেছেন–গরীবের মেয়ের মুখে এত হাসি ভাল না। কম হাসবি।

    মার মনের মধ্যে কিভাবে জানি গরীব ব্যাপারটা গেঁথে গেছে। তিনটা বাক্য বললে এর মধ্যে একবার অন্তত গরীব শব্দটা বলবেন। ভাইয়া সেদিন মাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে গেছে। ডাক্তার বললেন, প্রেসার খুব লো। ভাল খাওয়া দাওয়া করবেন। ডিম দুধ এইসব। মা ফট করে বলে বসলেন–গরীব মানুষ ডাক্তার সাহেব। ডিম দুধ এইসব পাব কোথায়? কি দরকার ছিল এটা বলার? অথচ ডিম দুধের ব্যবস্থা তো হয়েছে। ভাইয়ার যত অসুবিধাই হোক সে চালিয়ে যাচ্ছে।

    রুবা তুই রান্নাঘর থেকে যা তো। কথা শুনছিস না এখন কিন্তু আমার রাগ লাগছে।

    রুবা উঠে পড়ল। শোবার ঘরে গিয়ে খানিকক্ষণ বসল। ঘর খুব সুন্দর করে সাজানো। বিছানার চাদর নীল, তার মধ্যে সাদা ফুল। জানালার পর্দাও তাই। কেমন একটা বড়লোকি ভাব এসে গেছে। আপার ভালই বড়লোক।

    দেয়ালে অচেনা সব মানুষদের বাঁধানো ছবি। দুলাভাইয়ের দিকের আত্মীয়স্বজ্জন নিশ্চয়ই। মেয়েদের কি অদ্ভুত জীবন। একদল অচেনা মানুষকে নিয়ে মাঝখানে থেকে জীবন শুরু করতে হয়।

    নে, শরবত নে।

    শরবত আবার কে চাইল?

    খা একটু। শরীর ঠাণ্ডা হবে।

    রুবা বোনের দিকে তাকিয়ে আছে। আগুনের আঁচে ইলার মুখ লালচে হয়ে আছে। মাথার চুল এলোমেলো।

    তোমাকে খুব সুন্দর লাগছে আপা। পরীর মত লাগছে। তোমার নামকরণ সার্থক হয়েছে। বাবা যে তোমাকে আদর করে পরী ডাকতেন তা দুলাভাইকে বলে?

    না।

    কি যে সুন্দর তোমাকে লাগছে আপা।

    সত্যি বলছিস?

    হুঁ সত্যি। তোমার পাশে আমাকে লাগছে ঠিক পেত্নীর মত। দেখ না আয়নার দিকে তাকিয়ে। ছিঃ, কি বাজে! ওমা আমার নাকটা কেমন মোটা দেখলে? তোমার আয়না নষ্ট না তো?

    দুবোন বেশ কিছুক্ষণ আয়নার দিকে তাকিয়ে রইল। রুবা ছোট্ট একটা নিঃশ্বাস ফেলল। আয়নায় তাকে সত্যি সত্যি কেমন জানি বাজে দেখাচ্ছে। যদিও সে দেখতে এত বাজে না। আয়নাটা বোধহয় আসলেই খারাপ।

    আপা।

    কি?

    আমার সঙ্গে একটু নিউ মার্কেটে চল না। এক জোড়া স্যান্ডেল কিনব–টাকা যখন পাওয়া গেল। দুলাভাই নিশ্চয়ই দুপুরে খেতে আসবে না। যাবে? তোমার বিয়ের আগে, মনে নেই, আমরা শুধু দোকানে দোকানে ঘুরতাম?

    মনে আছে। তার জন্যেই ঘুরতাম।

    বায়তুল মুকাররমে একবার রিকশাওয়ালার সঙ্গে কি কাণ্ড হুল তোমার মনে আছে আপা? আমি কেঁদে-টেঁদে … মনে আছে?

    মনে থাকবে না কেন?

    ঐ লোকটাকে পরে আর টাকাগুলি দেয়া হয় নি। কি লজ্জার ব্যাপার! টাকাগুলি দেয়া উচিত ছিল। ভদ্রলোক আমাদের সম্পর্কে নিশ্চয়ই খারাপ কিছু ভাবছেন। মাঝে মাঝে ঐ ভদ্রলোকের কথা আমার মনে হয়। তোমার হয় না?

    হয়।

    উনার ঠিকানাটা তোমার মনে আছে? থাকলে একদিন চল যাই উনাকে টাকাটা দিয়ে আসি। ভদ্রলোক নিশ্চয়ই খুব অবাক হয়ে যাবেন। এত দিন পর হঠাৎ।

    ইলা শান্তু গলায় বলল, টাকা আমি উনাকে দিয়ে এসেছি।

    রুবা বিস্মিত হয়ে বলল, কবে দিলে?

    দিন-তারিখ মনে করে রেখেছি নাকি? দেয়ার কথা–দিয়েছি।

    আমাকে বল নি কেন?

    এটা এমন কি ঘটনা যে তোকে বলতে হবে?

    রুবা অবাক হয়ে বলল–তুমি এমন রেগে যাচ্ছ কেন আপা?

    কি আশ্চর্য, রাগলাম কোথায়?

    আমি জানি তুমি রেগে গেছ। রাগলে তোমার কান লাল হয়ে যায়, নাক ঘামে। ব্যাপারটা কি আপা?

    ব্যাপার কিছু না।

    ইলা উঠে রান্নাঘরে চলে গেল। ভাত ফুটছিল, হাঁড়ি নামিয়ে মাড় গলল। বাথরুমে ঢুকে হাত মুখ ধুয়ে সহজ স্বাভাবিক গলায় বলল, আমার চুলটা বেঁধে দে। এক বেণী করবি।

    রুবা চিরুনি নিয়ে বসল। ইলা বলল, ভাত খেয়ে তারপর চুল নিউ মার্কেটে। বিকেল পর্যন্তু ঘুরব, তারপর তোকে রেখে আসব। রাতে তোদের সঙ্গে খাব। তারপর ভাইয়াকে বলব পৌঁছে দিতে। ভাইয়া কেমন আছে রে?

    প্রথমেই তো একবার বললাম, ভাল।

    ভাইয়ার বিয়ে দেবার কথা কেউ ভাবছে না, তাই না?

    না। মাকে একদিন বললাম। মা মুখ শুকনো করে বলল, ও বউকে খাওয়াবে কি? তাছাড়া কোন ভদ্রলোক এই গরীবের ফ্যামিলীতে মেয়ে দেবে কেন? তাদের কি গরজ?

    এ আবার কেমন কথা?

    আমি মাকে তাই বললাম। আমি বললাম, আমাদের মত গরীব ফ্যামিলীর একটা মেয়েকেই না হয় আন। মা রেগে অস্থির।

    এর মধ্যে রাগের কি আছে?

    রেগেমেগে বলেছে, তোর বাবার সম্মানটা দেখবি না তোরা? কত বড় মানুষ ছিলেন। মার মাথার মধ্যে একটা পোকা ঢুকে গেছে।

    দুটিার দিকে দুজনে খেতে বসল। খেতে বসে রুবা আবার পুরনো প্রসঙ্গ তুলল–নিচু গলায় বলল, ঐ ভদ্রলোকের কথা ওঠায় তুমি রেগে গিয়েছিলে কেন আপা?

    রাগব কেন? রাগি নি। উনি আমার সঙ্গে অভদ্র ব্যবহার করেছিলেন, তাতে আমার খুব মন খারাপ হয়েছিল। ব্যস।

    তুমি মিথ্যা কথা বলছ আপা। অন্য কোন ব্যাপার। উনি শুধু শুধু তোমার সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করবেন কেন?

    ইলা জবাব দিচ্ছে না। নিঃশব্দে ভাত খাচ্ছে। রুবা বলল, তুমি একা একাই গেলে উনার কাছে?

    হুঁ।

    তোমাকে চিনতে পারলেন?

    না। পরে চিনেছেন।

    উনি কি ম্যারেড আপা?

    কি মুশকিল, আমি এসব জানব কেন? গিয়েছি, টাকা দিয়ে চলে এসেছি।

    তুমি কি একবারই গিয়েছ না আরো গেছ?

    তুই কি শুরু করলি বল তো, রুবা। জেরা করছিস কেন?

    জেরা করছি না। জানতে চাচ্ছি।

    ভাত খেতে বসেছিস, ভাত খা।

    রুবা তীক্ষ দৃষ্টিতে বোনের দিকে তাকিয়ে রইল।

    ইলা খাওয়া শেষ না করেই উঠে পড়ল। রুবা আপার দিকে তাকিয়ে আছে। তার এই আপাটি খুব অদ্ভুত। অনেক রহস্য সে নিজের মধ্যে লুকিয়ে রাখে। রুবার ধারণা আপা একবার না কয়েকবারই গিয়েছে ঐ মানুষটার কাছে। রুবা চেঁচিয়ে বলল, আপা তুমি নাসিম ভাইয়ের কথা জিজ্ঞেস করেছিলে। উনি কি কখনো এসেছিলেন তোমার এই ফ্ল্যাটে?

    ইলা কঠিন গলায় বলল, উল্টাপাল্টা কথা কেন বলছিস? নাসিম ভাই এখানে কেন আসবেন?

    আসলে অসুবিধা কি? উনি কি আসতে পারেন না?

    ইলী জবাব দিল না। বাথরুমে ঢুকে গেল। রুবা বাথরুমের দরজার কাছে এসে বলল, বিয়ের পর তোমার মেজাজ অন্য রকম হয়ে গেছে আপা, মা বলছিল, তুমি নাকি ঐদিন বাসায় গিয়ে মার সঙ্গে অকারণে ঝগড়া করেছ।

    অকারণে ঝগড়া করি নি।

    তুমি তো কখনো এরকম কর না। হঠাৎ কে তোমাকে বদলে দিল।

    চুপ কর রুবা। মানুষ এক রকম থাকে না। কিছুদিন পরপর বদলায়।

    ইলা বাথরুম থেকে হাসিমুখে বের হয়ে এল। তার মুখ ভেজা। রুবা মুগ্ধ গলায় বলল, তোমাকে কি যে সুন্দর লাগছে আপা।

    ⤶ ⤷
    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleসেরা কিশোর গল্প – হুমায়ূন আহমেদ (অসম্পূর্ণ)
    Next Article কে কথা কয় – হুমায়ূন আহমেদ

    Related Articles

    হুমায়ূন আহমেদ

    আসমানীরা তিন বোন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    হুমায়ূন আহমেদ

    ইস্টিশন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    হুমায়ূন আহমেদ

    উড়ালপঙ্খী – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    হুমায়ূন আহমেদ

    এই বসন্তে – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    হুমায়ূন আহমেদ

    এই মেঘ, রৌদ্রছায়া – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    হুমায়ূন আহমেদ

    এইসব দিনরাত্রি – হুমায়ূন আহমেদ

    December 23, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Generic selectors
    Exact matches only
    Search in title
    Search in content
    Post Type Selectors
    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    আসমানীরা তিন বোন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    আসমানীরা তিন বোন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    Our Picks

    আসমানীরা তিন বোন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025

    ইস্টিশন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025

    উড়ালপঙ্খী – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }