Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    আসমানীরা তিন বোন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025

    ইস্টিশন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025

    উড়ালপঙ্খী – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • English Books
      • Jules Verne
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    জলপদ্ম – হুমায়ূন আহমেদ

    হুমায়ূন আহমেদ এক পাতা গল্প114 Mins Read0
    ⤶ ⤷

    ০৫. জামানের ফিরতে আজও দেরি হবে

    জামানের ফিরতে আজও দেরি হবে। গেট খোলা রাখতে হবে বলে গেছে। কি করছে সে জয়দেবপুরে? বাড়ি বানানো কি শুরু করে দিয়েছে? কোত্থেকে পাচ্ছে এত টাকা? হারানো মানিব্যাগের কথা এর মধ্যে একবারও তুলে নি। সে হয়ত ভুলেই গেছে। ইলা ভুলতে পারে নি। ভুলবে কিভাবে? মানিব্যাগটা তো তার কাছেই। সে লুকিয়ে রেখেছে তার স্যুটকেসে। যদি জামান কোন কারণে তার স্যুটকেস খুলে তখন কি হবে? ভয়ংকর কোন কাণ্ড যে হবে তা সে জানে। সেই ভয়ংকর মানে কি রকম ভয়ংকর? মাঝে মাঝে ইলার ইচ্ছা করে ভয়ংকর কাণ্ডটা ঘটে যাক। দেখা যাক সে কি করে।

    জামানের রাগ ভয়ংকর। রাগের সময় সে এমনভাবে তাকায়, এমন ভঙ্গি করে যে ইলাকে হতভম্ব হয়ে দেখতে হয়। ইলা রাগ করে না, দুঃখিত হয় না, সে শুধু অবাক হয়ে দেখে। বিস্ময় বোধটাই তার প্রধান হয়ে দাড়ায়। একদিন জামান রেগে গিয়ে এমন ভঙ্গি করল মে ইলার মনে হল সে তাকে চড় মারতে আসিছে। যদি সত্যি সত্যি চড় মেরে বসত তাহলে কি বিশ্রী ব্যাপার হত। অথচ ঘটনা কিছুই না। জামান বাথরুমে ঢুকে দেখে বেসিনের উপর একটা আঙটি। ইলার আঙটি। সে আঙটি খুলে হাত ধুয়েছিল। তারপর আর পরতে মনে নেই। এমন কোন ভয়ংকর ঘটনা না। কিন্তু জামান কি বিশ্রী কাণ্ড করল। হাত উঁচিয়ে ছুটে এল–কাণ্ডজ্ঞান নেই? তোমার কাণ্ডজ্ঞান নেই? ইলার বয়স চব্বিশ। এই চব্বিশ বছরের জীবনে সে প্রথম একজনকে দেখল যে হাত উঁচিয়ে তাকে মারতে আসছে।

    আঙটি ফেলে আসায় যে মানুষ এমন করেছে সে যদি শুনে ইলার স্যুটকেসে তার মানিব্যাগ। মাঝে মাঝে সেখান থেকে টাকা বের করে সে খরচ করে। তাহলে কি করবে? তার চেয়েও ভয়ংকর কিছু ইলা শুনতে পারে। এমন ভয়ংকর কিছু যে শোনার পর ঐ মানুষটা হাত উঁচিয়ে তাকে মারতে আসবে না কারণ তার সেই ক্ষমতা থাকবে না। সে অবাক বিস্ময়ে চোখ বড় বড় করে ইলাকে দেখবে। কিংবা মাথা ঘুরে নিচে পড়ে যাবে। মুখ দিয়ে ফেনা বের হবে।

    টিভিতে ম্যাকগাইভার শুরু হবার পর ইলা নিচে নামল। ম্যাকগাইভারের কাণ্ডকারখানা দেখবে না। ভয়ে বুক ধড়ফড় করাটা তাহলে আবার শুরু হতে পারে। গেট খোলা রাখার কথা হাসানকে বলে আসতে হবে। পেছনের বাড়ির ঐ ঘটনার পর দশটা বাজার আগেই গেট বন্ধ করে দিচ্ছে।

    হাসানকে পাওয়া গেল না। সে বেশির ভাগ সময়ই বারান্দায় ক্যাম্পখাট পেতে ঘুমায়। ঝড় বৃষ্টির সময়ও একই জায়গা। তখন পর্দার মত কি যেন দেয়। এই ছেলেটির জন্যে বাড়ির ভেতরে কোন জায়গা হয় নি।

    আজ ঝড় না হোক, বৃষ্টি হবে। অসহ্য গরম পড়েছে। আকাশ মেঘলা। ঘন ঘন বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে। ইলা বাড়িওয়ালার স্ত্রীকে বলে আসতে গেল। বৃষ্টির মধ্যে জামান এসে যদি দাঁড়িয়ে থাকে, আর যদি গেট খোলা না হয় তার পরবর্তী অবস্থা কি হবে চিন্তা করা যায় না।

    বাড়িওয়ালার স্ত্রী সুলতানী খেতে বসেছেন। আজ তাঁকে অন্যদিনের চেয়েও মোটা লাগছে। গলার চামড়া থলথল করছে। ব্লাউজের বোতাম লাগান নি। তাঁর দিকে তাকানো যাচ্ছে না। ইলাকে দেখে বললেন–বসে যাও তো মা। চারটা ভাত খাও আমার সাথে। রূপচান্দা শুটকির দোপেঁয়াজা। ঝাল ঝাল করে রাঁধা। খেয়ে দেখ।

    ইলা বলল, আরেক দিন খাব। আজ রাতে গেটটা একটু খোলা রাখতে হবে। হাসানকে যদি একটু বলে দেন।

    দিব, বলে দিব।

    আরেকটা কাজ আছে। অন্তুকে ডাক্তার দেখাতে হবে।

    চিন্তা করো না তে। হাসান নিয়ে যাবে। সারাদিন তো ঘরে বসেই ঝিমায়। ঐ দিন মগবাজার যাবে–আমার কাছে রিকশা ভাড়া চায়। চিন্তা করে দেখ কত বড় সাহস। মগবাজার এমন কি দূর। গাখী, তুই হেঁটে চলে যা। এত বাবুয়ানা কিসের?

    দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে এইসব কথা শুনতে ভাল লাগছে না, আবার চলে যাওয়া যাচ্ছে না। খাওয়া বন্ধ রেখে একজন এত আগ্রহ নিয়ে গল্প করছে তার সামনে থেকে উঠে চলে যাওয়া যায় না।

    বস না মা, দাঁড়িয়ে আছ কেন?

    অন্তু একা আছে।

    থাকুক না একা। একটা জিনিস তোমার মধ্যে দেখি যেটা আমার পছন্দ না। কাজের লোক তুমি মাথায় তুলে রাখ। কাজের লোক থাকবে কাজের লোকের মত। কয়েকদিন আগে দেখলাম রিকশা করে যাচ্ছ, চাকর ছোঁড়া বসে আছে তোমার পাশে। সে বসবে নিচে। পায়ের কাছে। পাশে বসালে এরা কোলে বসতে চাইবে।

    খালা এখন যাই।

    আহা বস না। পেপসি আছে–পেপসি খাবে। খাও একটা পেপসি। ও রত্না, পেপসি দে।

    ইলাকে বসতে হল। পেপসির গ্লাস হাতে নিতে হল। সুলতানা গলা নিচু করে বললেন, পেছনের বাড়ির ঘটনা পত্রিকায় উঠেছে, দেখেছ? ব্যাপার সব ফাস করে দিয়েছে। রেইপ কেইস। হেডিং ছিল–গৃহবধূ ধর্ষিতা। আমি মেয়েটাকে দেখতে গিয়েছিলাম। হাসবেন্ড্রটা খুব চালাক। চোখে মুখে কথা বলে। আমাকে বলে কি–খালাম্মা দেখেন না– পত্রিকায় বানিয়ে বানিয়ে কি সব লিখেছে। এখন কাউকে মুখ দেখাতে পারি না। আমি মানহানির মামলা করব। হাতকড়া পরাব। দুজন এডভোকেটের সাথে আলাপও করেছি। বুঝলে ইলা, ইতং বিতং কথা বলেই যাচ্ছে। শাক দিয়ে কি আর মহি ঢাকা যায়?

    পত্রিকায় কি উঠেছে সেই ঘটনার সবটা ইলাকে শুনতে হল। সুলতানা ফিস ফিস করে বললেন, ঘটনা আরো আছে। এত বড় ঘটনা ঘটল আর মেয়ে সাড়াশব্দ করল না। চুপ করে রইল। এর কারণ কি? চিৎকার দিলেও তো দশজনে শুনত? কিছু মেয়ে আছে এইসব পছন্দ করে … তারা চায় রেইপড হতে। একজনে মন ভরে না।

    ইলা বলল, খালা আমি উঠি?

    অহি মা বোস না, তোমার সঙ্গে কথা বলতে ভাল লাগে। তোমার ছোট বোনটাকে ঐদিন দেখলাম। মুখের কাটিং ভাল। রঙ ময়লা, রঙ ভাল হলে আমার ছেলেটার জন্য বলতাম–কালো মেয়ে বিয়ে করিয়ে কি হবে…

    ইলা উঠে পড়ল। আর বসে থাকা যায় না।

     

    টুকটুক করে কে যেন দরজায় টোকা দিচ্ছে। ইলার বুক ধক করে উঠল। তার কি বিশ্রী কোন অসুখ হয়ে যাচ্ছে? দরজার সামান্য টোকায় পৃখিবীর কেউ এমন চমকে উঠে না। সে চমকাচ্ছে কেন?

    কে?

    ভাবী আমি। আমি হাসান। আপনি কি আমাকে খুঁজছিলেন?

    হ্যাঁ খুঁজছিলাম।

    ইলা দরজা খুলতে খুলতে বলল, তোমাকে না একবার বলেছি আপা ডাকতে। আজ আবার ভাবী ডাকছ। দাঁড়িয়ে আছ কেন, ভেতরে আস।

    হাসান খুব অস্বস্তি নিয়ে ভেতরে ঢুকল। ইলা বলল, ভাই, আমাকে আরেকটা কাজ করে দিতে হবে। অন্তুর মুখের অবস্থা দেখ। ফুলেটুলে কি হয়েছে। ডাক্তারের কাছে একটু নিয়ে যাবে।

    জ্বি আচ্ছা।

    ঐ দিনের কিছু টাকা পাওনা ছিল, ঐ টাকাও তো নাও নি।

    এখন দিয়ে দিন।

    আরেকটা কাজ করে দিতে হবে। অন্তু মিয়ার জন্যে একটা মশারি কিনে দিতে হবে। সিঙ্গেল মশারি। কত লাগে সিঙ্গেল মশারির তুমি জান?

    জ্বি না।

    তোমাকে একটা পাঁচশ টাকার নোট দিচ্ছি–তোমার টাকটি। এখান থেকে রেখে দেবে, অন্তুকে ডাক্তার দেখাবে আর একটা সিঙ্গেল মশারি কিনবে।

    মশারি কি এখনই কিনব? দোকান বোধহয় বন্ধ হয়ে গেছে।

    কাল সকালে কিনে দিলেও হবে।

    জ্বি আচ্ছা।

    বস না। একটু চা খেয়ে যাও।

    আমি চা খাই না ভাবী।

    আচ্ছা তোমার জন্যে একদিন ভাল কিছু বানিয়ে রাখব। আজ দেরি না করাই ভাল। দেরি করলে হয়ত ডাক্তার পাবে না।

    হাসান অন্তুকে নিয়ে নেমে গেল। রাত দশটার মত বাজে। পুরো ফ্ল্যাটে ইলা একা। তার বুক আবার ধকধক করা শুরু হয়েছে। মনে হচ্ছে ভয়ংকর কিছু ঘটবে। খুব ভয়ংকর কিছু। পেছনের ফ্ল্যাটে যেমন ঘটেছিল তেমনি কিছু। প্রথমে দরজায় টকটক শব্দ হবে। ইলা বলবে, কে? বাইরে থেকে খুব মিষ্টি গলায় একটি ছেলে বলবে–আপা, আমি টিএন্ডটির পিওন। টেলিগ্রাম নিয়ে এসেছি।

    ইলা বলবে, দরজা তো খোলা যাবে না। আপনি দরজার নিচে দিয়ে দিন।

    আপী, আর্জেন্ট টেলিগ্রাম–সই করে রাখতে হবে।

    ইলা দরজা খুলবে, তারপর? তারপর কি? ইলা ঘামতে লাগল। বুক শুকিয়ে কাঠ। কখন আসিবে হাসান? বেশি দেরি নিশ্চয়ই করবে না। ইলা বারান্দায় দাঁড়িয়ে রইল। বারান্দা থেকে রাস্তার এক অংশ দেখা যায়। বারান্দায় দাঁড়িয়ে থাকতেও তার খারাপ লাগছে। বারান্দার রেলিংটা নিছু। এখানে দাঁড়ালেই তার কেন জানি লাফিয়ে নিচে পড়ে যেতে ইচ্ছা করে।

    জামান ফিরল রাত বারটায়। হাতে কফির একটা কৌটা। বিরস গলায় বলল, কফি বানাতে পার?

    ইলা হ্যাঁ-সূচক মাথা নাড়ল।

    জামান বলল, হ্যাঁ বা না বল। মাথা নাড়ানাড়ি কেন? ভাল করে কফি বানাও। আমি রাতে ভাত খাব না। খেয়ে এসেছি।

    ইলা কফি বানাতে চলে গেল। সে নিজে না খেয়ে অপেক্ষা করছিল। খিদে মরে গেছে। একা একা এত রাতে খেতে বসার অর্থ হয় না।

    জামান অনেক সময় নিয়ে গোসল সেরে বের হল। বারান্দায় অন্তু মিয়ার বিছানা। নতুন মশারি খাটানো হয়েছে। জামান বলল, মশারি পেলে কোথায়?

    কিনেছি। হাসানকে বলেছি, হাসান কিনে দিয়েছে।

    টাকা?

    ভাইয়া আমাকে কিছু টাকা দিয়েছে।

    কিছু মানে কত?

    অল্প।

    অ্যামাউন্টটা বলতে অসুবিধা আছে?

    পাঁচশ।

    তুমি টাকা চেয়েছিলে?

    না।

    না চাইতেই পাঁচশ টাকা দিয়ে দিল?

    ভাইয়ার যখন হাতে টাকা-পয়সা হয় তখন সবাইকেই কিছু কিছু দেয়।

    উনার হাতে এখন টাকা-পয়সা হয়েছে?

    ইলা জবাব দিল না। কফির কৌটা নিয়ে রান্নাঘরে ঢুকল। আবার তার বুক ধড়ফড় করছে। মিথ্যা কথাটা কি ধরা পড়ে যাবে। সেই সম্ভাবনা কতটুক? খুব অল্প। জামান যাত্রাবাড়িতে কখনো যায় না। ভাইয়ার সঙ্গে তার দেখা হবার সম্ভাবনা নেই বললেই হয়। আর দেখা হলেও জামান নিশ্চয়ই টাকার প্রসঙ্গ তুলবে না। এতটা নিচে কি সে নামবে?

    ইলা দু কাপ কফি বানিয়েছে। জামান নিজের কাপে চুমুক দিচ্ছে। ইলা কাপ সামনে নিয়ে চুপচাপ বসে আছে। তার খেতে ইচ্ছা করছে না। বরং কেমন বমি বমি লাগছে। জামান বলল, পাঁচশ টাকা পেয়েই অন্তুর জন্যে নেটের মশারি, লে তোষক এইসব কিনে ফেলেছ? কোলবালিশ কিনেছ? না-কি এই আইটেম বাদ পড়েছে?

    শুধু মশারি কিনেছি।

    বাড়াবাড়ি করা তোমাদের সব ভাইবোনদের একটা স্বভাব। নিজে খেতে পায় না শংকরকে ডেকে আনে। বাড়াবাড়ি না করলে হয় না?

    ইলা বসে আছে চুপচাপ। এই মানুষটার কথা এখন আর আর শুনতে ইচ্ছা করছে না। সে তাকিয়ে আছে শূন্য দৃষ্টিতে। চেষ্টা করছে যেন কিছুই তার কানে না আসে। কাজটা কঠিন। সব সময় পারা যায় না। মাঝে মাঝে পারা যায়। নিয়মটা খুব সহজ। যার কথা শুনতে ইচ্ছা করে না তার দিকে তাকাতে হয় কিন্তু কখনো তার চোখের দিকে নয়। ভুলেও না। তাকাতে হয় মানুষটার ভুরুর দিকে, ভাবতে হয় অন্য কিছু। এমন কিছু যা ভাবতে ভাল লাগে। এই মুহূর্তে ইলা ভাবছে বি. করিম সাহেবের কথা।

    ঠিকানা খুঁজে খুঁজে ইলা এক বিকেলে কলতা বাজারে উপস্থিত হল। ভদ্রলোক দরজা খুলে রুক্ষ গলায় বললেন, কে, কি চাই?

    বি. করিম সাহেবকে খুঁজছিলাম।

    আমিই বি. করিম। ব্যাপার কি?

    আপনি কি আমাকে চিনতে পারছেন?

    আমার কি চেনার কথা?

    জ্বি। আপনার সঙ্গে আমার দেখা হয়েছিল।

    দেখা হলেও–তুমি যখন আমাকে চিনতে পারি নি, আমি তোমাকে চিনব এটা ভাবছ কেন? বাদ দাও এই প্রসঙ্গ। এসেছ কেন?

    আমি টাকাটা দিতে এসেছি।

    কিসের টাকা?

    একবার আপনি আমার রিকশা ভাড়া দিয়েছিলেন।

    আমি তোমার রিকশা ভাড়া দিতে যাব কেন?

    কি কর্কশ কথাবার্তা! খালি গায়ে দরজা খুলেছে, কিন্তু কোন বিকার নেই। খালি গায়েই দাঁড়িয়ে আছে। কেউ কি পারে একজন তরুণীর সামনে এভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে? কোন সংকোচ নেই। কোন দ্বিধা নেই। আর তুমি তুমি করেই বা ভদ্রলোক বলছেন কেন?

    ইলা তার হ্যান্ডব্যাগ খুলে টাকা বের করতে করতে বলল–আপনি সত্যি সত্যি চিনতে পারছেন না? আমরা দুই বোন ছিলাম। আমার ছোট বোনটা কাঁদছিল।

    ও আচ্ছা। ইয়েস। মনে পড়েছে। বায়তুল মুকাররমে।

    জ্বি।

    কত টাকা দিয়েছিলাম?

    কুড়ি।

    গুড। দাও, টাকাটা দাও, কাজে লাগবে। হতি খালি। পারলে আরো কিছু বেশিও দিতে পার। আছে?

    ইলা ভাবল লোকটা ঠাট্টা করছে। কিন্তু না ঠাট্রা না। তিনি সত্যি সত্যি চাইছেন। ইলা একটা পঞ্চাশ টাকার নোট বাড়িয়ে দিল। তিনি বিন্দুমাত্র সংকোচ না করে নিলেন।

    এস, খানিকক্ষণ বসে যাও। চা খেয়ে যাও।

    জ্বি-না।

    না কেন? খেয়ে যাও যাও যাও, ভেতরে ঢুকে পড়। আমি চায়ের কথা বলে আসি।

    ভদ্রলোক লুঙ্গি পরা অবস্থাতেই টাকা নিয়ে চলে গেলেন। হয়ত চায়ের কথাই বলতে গেলেন। ইলা ভেতরে ঢুকল না, আবার চলেও গেল না। দাঁড়িয়ে রইল। ভদ্রলোক দ্রুত ফিরে এসে বিরক্ত গলায় বললেন–দাঁড়িয়ে আছ কেন? দরজা তো খোলাই ছিল। এস।

    ঘর বেশ গোছানো, তবে মেঝেতে একটা বিশাল পার্টি পাতা। বড় একটা খাতা পড়ে আছে। খাতার পাশে দুতিনটা কলম।

    আপনি লিখছিলেন?

    হুঁ।

    কি লিখছিলেন?

    সিনেমার স্ক্রিপ্ট। ঐ আমার পেশী। লেখক হবার ইচ্ছা ছিল, তা হওয়া গেল না, হয়ে গেলাম স্ক্রিপ্ট রাইটার। ছবি দেখ তুমি?

    খুব বেশি না।

    জিন্দেগী দেখেছ?

    জ্বি-না।

    আমার লেখা। না দেখে ভাল করেছ। দেখলে হলের মধ্যে বমি করে ফেলতে। আমি নিজে লিখে শেষ করার পর সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে ফেলেছি।

    ইলা খিলখিল করে হেসে ফেলল। ভদ্রলোক অবাক হয়ে বললেন–তোমার হাসি তো খুব সুন্দর। দাঁতও সুন্দর। অভিনয় করবে?

    ইলা হকচকিয়ে গেল। বলে কি এই লোক।

    ভদ্রলোক হড়বড় করে বললেন–অভিনয় করবার ইচ্ছা হলে আমাকে বলবে। আমার কথা মজিদ আলি ফেলে না। দুজন নায়িকা আমি মজিদকে দিয়েছি। দুটাই হিট। একজনের সাইনিং মানিই এখন এক লাখ। শুনেছি খুব দেমাগ হয়েছে। তবে আমাকে এখানে খাতির করে। দেখা হলে পা ছুঁয়ে সালাম করে।

    চা চলে এল। ভদ্রলোক পিরিচে ঢেলে চা খেতে লাগলেন। খানিকক্ষণ সিষ দেবার ভঙ্গি করলেন। ঠোঁট সুঁচাল করে ফুঁ দিচ্ছেন। লাভ হচ্ছে না। শব্দ হচ্ছে না। ভদ্রলোক খানিকটা বিরক্ত হলেন। বিরক্তি ঝেড়ে ফেলে বললেন, মজিদ আলি সেদিন বলছিল, অনেকদিন তো হল আরেকটা নায়িকা দিন। দেখি হিট করে কি না। আমি বলেছি, দেব। তোমার যদি অভিনয় করার শখ থাকে বলবে। লজ্জার কিছু নেই।

    আমার কোন শখ নেই।‘

    শখ না থাকলে ভিন্ন কথা।

    ইলা বলল, আমি এখন উঠি?

    আচ্ছা ঠিক আছে। এসো আরেক দিন। বাড়তি টাকা ফেরত নিয়ে যাবে। আমি ঋণ রেখে মরতে চাই না।

    জ্বি আচ্ছা, আমি আরেক দিন আসব।

    সপ্তাহখানিক পরে এসো। এর মধ্যে লেখা শেষ হয়ে যাবে। গল্পটা পড়ে শুনাব। নাম কি তোমার? ইলা খানিকক্ষণ ইতস্তত করে বলল, পরী।

    পরী।

    জ্বি পরী।

    সত্যি?

    হ্যাঁ সত্যি। নাম নিয়ে মিথ্যা বলব কেন?

    তাও তো ঠিক। নাম নিয়ে মিথ্যা কেন বলবে? আমি খুবই অবাক হয়েছি, বুঝলে–আমি যে স্ক্রিপ্টটা লিখছি তার নায়িকার নামও পরী। তোমার কি বিশ্বাস হচ্ছে, না-কি ভাবছ আমি বানিয়ে বলছি?

    বিশ্বাস হচ্ছে।

    উঁহু, বিশ্বাস হচ্ছে না। তোমার মুখ দেখেই বুঝতে পারছি। নাও, এই পৃষ্ঠাটা পড়। এক পৃষ্ঠা পড়লেই বুঝতে পারবে। গোটাটা পড়তে হবে না।

    ইলা পৃষ্ঠাটা হাতে নিল। চোখের সামনে ধরল। পড়ল না। পড়তে ইচ্ছা করছে না।

    কি, আমার কথা বিশ্বাস হল?

    আমার কাহিনীর পরী নাচ জানে, গান জানে, রাইফেল চালাতে জানে। আবার বিশ্ববিদ্যালয়ের সব পরীক্ষায় ফার্স্ট ক্লাস ফাস্ট হয়। যে সেকেণ্ড হয় তারচে একশ নম্বর এগিয়ে থাকে।

    পরী কি নায়িকা?

    না। পরী নায়িকা নয়, নায়িকার ছোট বোন। নায়িকার ছোট বোনেরই এই অবস্থা। এখন নায়িকার অবস্থা চিন্তা কর। হা হা হা…।

    ভদ্রলোক হেসেই যাচ্ছেন। ইলা হাসছে না। তার কেন জানি হাসি আসছে না বরং ভয় ভয় লাগছে–মনে হচ্ছে মানুষটা ঠিক সুস্থ নয়। একজন সুস্থ মানুষ এত দীর্ঘ সময় ধরে এমন ভাবে হাসে না। ইলা বলল, আমি যাই?

    আচ্ছা যাও।

    সে ঠিক করে রেখেছিল সে আর কোনদিন যাবে না। কিন্তু দশ দিনের মাথায় সে আবার গেল। তিনি বাসাতেই ছিলেন। সেদিন আর খালি গায়ে না। নতুন মটকার পাঞ্জাবী। পাঞ্জাবীর বোতামগুলি বোধহয় সোনার। ঝিকঝিক করছে। তাঁর গা দিয়ে ভুরভুর করে আতরের গন্ধ বেরুচ্ছে। ইলা বলল, আমাকে চিনতে পারছেন?

    ভদ্রলোক শুকনো গলায় বললেন, চিনতে পারছি। এখন যাও, বিরক্ত করো না। অন্য একদিন এসো।

    লজ্জায় অপমানে ইলার চোখে প্রায় পানি এসে যাচ্ছিল। সে অনেক কষ্টে নিজেকে সামলাল। ভদ্রলোক বিরসমুখে বললেন, মজিদ আলিকে তোমার কথা বলেছি। তবে ব্যাটা ইন্টারেস্টেড না। শুধু করে। অবশ্য একেবারে আশা ছেড়ে দেয়ার কিছু নেই। আমি আবার বলব। পরে এসে খোঁজ নিয়ে যেও

    ইলা বলল, আপনার কথা আমি কিছুই বুঝতে পারছি না। কি খোঁজ নিয়ে যাব?

    নায়িকা হিসেবে তোমার কোন সুযোগ হয় কি না।

    এই সুযোগের জন্যে তো আমি আপনার কাছে আসি নি।

    কি জন্যে এসেছ? আচ্ছা, ঠিক আছে কি জন্যে এসেছ পরে শুনব। আজ যাও। আমি বেরুব।

    ইলা চলে এল।

     

    বাইরে বৃষ্টি হচ্ছে। ভাল বৃষ্টি নেমেছে। বৃষ্টির শব্দ ছাপিয়ে অদ্ভুর কান্নার শব্দ কানে আসছে। ছেলেটার এ কী অবস্থা হল! ইলা তার কাছে গেল। ফিসফিস করে বলল, এত শব্দ করে কাঁদিস না রে অন্তু। উনার ঘুম ভেঙে যাবে। অন্তু সঙ্গে সঙ্গে কান্না থামাল। ইলা অন্তুর গায়ে হাত দিয়ে দেখে– অনেক জ্বর।

    ইলা পেছনের বারান্দায় এসে দাঁড়াল। 6/B ফ্ল্যাটে আলো জ্বলছে। শুধু একটা ঘরে না, সব কটা ঘরে। এত রাত পর্যন্তু এরা জেগে আছে কেন? কালও দেখেছে অনেক রাত পর্যন্ত ঐ বাড়ির ফ্ল্যাটে আলো জ্বলছে। মেয়েটা এখন বোধহয় বাতি নিভিয়ে ঘুমুতে পারে না। তাদের উচিত এই পড়া ছেড়ে চলে যাওয়া। বোকা মেয়েটা কেন এখনো পড়ে আছে? কি আছে এখানে?

    ⤶ ⤷
    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleসেরা কিশোর গল্প – হুমায়ূন আহমেদ (অসম্পূর্ণ)
    Next Article কে কথা কয় – হুমায়ূন আহমেদ

    Related Articles

    হুমায়ূন আহমেদ

    আসমানীরা তিন বোন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    হুমায়ূন আহমেদ

    ইস্টিশন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    হুমায়ূন আহমেদ

    উড়ালপঙ্খী – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    হুমায়ূন আহমেদ

    এই বসন্তে – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    হুমায়ূন আহমেদ

    এই মেঘ, রৌদ্রছায়া – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    হুমায়ূন আহমেদ

    এইসব দিনরাত্রি – হুমায়ূন আহমেদ

    December 23, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Generic selectors
    Exact matches only
    Search in title
    Search in content
    Post Type Selectors
    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    আসমানীরা তিন বোন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    আসমানীরা তিন বোন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    Our Picks

    আসমানীরা তিন বোন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025

    ইস্টিশন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025

    উড়ালপঙ্খী – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }