Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • English Books
      • Jules Verne
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    জারুল চৌধুরীর মানিক জোড় – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    মুহম্মদ জাফর ইকবাল এক পাতা গল্প110 Mins Read0
    ⤶ ⤷

    ০৫. গাছঘর

    ৫. গাছঘর

    অংক ক্লাসে সলীল ফিসফিস করে বলল, একটা ঝামেলা হয়ে গেছে।

    আমিও ফিসফিস করে জিজ্ঞেস করলাম, কি ঝামেলা?

    মনে আছ সেই বইটা?

    কোন্ বইটা?

    নীল নয়নার অভিসার। তোকে দেখিয়েছিলাম?

    আমার মনে পড়ল, বাবা বাসায় ছিলেন বলে বইটা পড়তে নিতে পারিনি। জিজ্ঞেস করলাম, কি হয়েছে সেই বইটার?

    খুঁজে পাচ্ছি না।

    খুঁজে পাচ্ছিস না?

    না।

    সর্বনাশ।

    হ্যাঁ। কাল ফেরৎ দিতে হবে। সলীল শুকনো মুখে বলল, না হয় সঞ্জয়দা আমাকে ধরে একেবারে কঁচা খেয়ে ফেলবে। লাইব্রেরি থেকে এনেছিল।

    কোথায় হারিয়েছিস?

    জানি না। সব জায়গায় খুঁজে ফেলেছি। কোথাও নাই। আমার কি মনে হয় জানিস?

    কি?

    জারুল চৌধুরীর বাসায় ফেলে এসেছি।

    আমি চোখ বড় বড় করে তাকালাম, জারুল চৌধুরী?

    হ্যাঁ। সলীল মুখ কাচুমাচু করে আমার দিকে তাকাল, কিছু বলল না।

    আমি জিজ্ঞেস করলাম, এখন তোর জারুল চৌধুরীর বাসায় যেতে হবে?

    সলীল মাথা নাড়ল। তাপর মুখ আরো কাচুমাচু করে আমার দিকে তাকিয়ে রইল। আমি কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বললাম, তুই চাস আমি তোর সাথে যাই?

    সলীল জোরে জোরে মাথা নাড়ল।

    কখন যেতে চাস?

    সময় নাই। টিফিন ছুটির সময় যেতে হবে।

    ক্লাস ফাঁকি দিয়ে?

    সলীল আবার এমনভাবে মুখ কাচুমাচু করে তাকাল যে আমি আর না করতে পারলাম না।

    .

    টিফিন ছুটির সময় আমি আর সলীল আলাদা আলাদাভাবে ক্লাস থেকে সাবধানে বের হয়ে এলাম। ক্লাসে এত ছেলে, আমাদের কেউ যদি খোঁজ না করে, ধরা পড়ার কোন ভয় নেই। সাবাইকে জানিয়ে শুনিয়ে হৈ চৈ করে কখনো ক্লাস থেকে পালানো যায় না, কিন্তু গোপনে, কাউকে না জানিয়ে সটকে পড়া এমন কিছু কঠিন ব্যাপার না। তাছাড়া আমি তো আর স্কুল ফাঁকি দেওয়ার জন্যে যাচ্ছি না, যাচ্ছি বন্ধুকে বিপদে সাহায্য করার জন্যে। একজন পাগল মানুষের বাসায় তো আর সলীলকে একা যেতে দিতে পারি না। হঠাৎ যদি রাম দা হাতে নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে জারুল চৌধুরী? কেটে যদি পুঁতে ফেলে? দুইজন থাকলে তবু কিছু একটা করা যাবে, একা থাকলে কোন উপায়ই নেই।

    হেঁটে হেঁটে যাবার সময় যখন সুতরাপুরের ভিতর দিয়ে যাচ্ছি তখন রাস্তার পাশে একটা ফাঁকা জায়গায় দোতলা সাদা একটা দালান চোখে পড়ল। গেটের উপর একটা বড় বোর্ডে লেখা, “গ্রীন মেডিকেল ক্লিনিক”। এটাই নিশ্চয়ই জয়নালের সেই ক্লিনিক, যেখানে গরিব বাচ্চাদের নানারকম পরীক্ষা করে টাকাপয়সা দেয়। আমি যেতে যেতে ক্লিনিকটাকে ভাল করে দেখলাম। পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন চকচকে দোতলা একটা দালান। জায়গাটা অবিশ্যি একটু বেশি নিরিবিলি। দেয়াল দিয়ে ঘেরা বড় একটা জায়গা, ভিতরে নানা রকম গাছপালা। ক্লিনিকটা দেখে মনে হয় নির্জন, ভিতরে কোন রোগী আছে বলে মনে হয় না। কোন রকম রোগী না পেলে এই ক্লিনিক কেমন করে চলবে কে জানে!

    সলীল আমাকে জিজ্ঞেস করল, কি দেখছিস?

    না কিছু না –বলেও আমি ঘাড় ঘুরিয়ে গ্রীন মেডিকেল ক্লিনিকটাকে দেখতে থাকি। দোতলায় মনে হল একটা বাচ্চা ছেলে হেঁটে যাচ্ছে, সাথে পরিষ্কার কাপড় পরা একজন মানুষ। কে জানে, এই মানুষটাই হয়তো ডাক্তার নাওয়াজ খান। জয়নালের ভাষায় ফিরিশতার কিসিমের মানুষ।

    সলীল আবার জিজ্ঞেস করল, কি দেখছিস?

    নাহ কিছু না। বলেও আমি সেদিকে তাকিয়ে রইলাম।

    কিছু না মানে? সলীল একটু রেগে বলল, সেই তখন থেকে ঘাড় বাঁকা করে দেখছিস, আর বলছিস কিছু না।

    না, মানে, বলা নিষেধ।

    কি বলা নিষেধ?

    একটা জিনিস যদি বলা নিষেধ হয় সেটা কেমন করে বলি? যদি বলা হয় সেটা কি নিষেধ মানা হল?

    সলীল কি রকম জানি কৌতূহলী হয়ে আমার দিকে তাকাল, তারপর বলল, আমাকে বললে ক্ষতি কি? আমি কি কাউকে বলে দেব? কখনো দিই?

    আমার নিজেরও জয়নালের কথাটা বলার জন্যে মুখটা সুড়সুড় করছিল, তাই শেষ পর্যন্ত সলীলকে বলে দেয়াই ঠিক করলাম। বললাম, ঠিক আছে, তোকে বলতে পারি। তুই কাউকে বলবি না তো?

    না।

    খোদার কসম?

    খোদার কসম। ভগবানের কীরা।

    আমি তখন সলীলকে জয়নালের কথাটা খুলে বললাম। কেমন করে সে গ্রীন মেডিকেল ক্লিনিকে যায় এবং কেমন করে ডাক্তার নাওয়াজ খান তাকে টিপে টুপে। পরীক্ষা করে টাকাপয়সা দিয়ে সাহায্য করেন। সব শুনে সলীল একেবারে মুগ্ধ হয়ে গেল। চোখ বড় বড় করে বলল, সত্যি? সত্যি?

    সত্যি। আমি নিজে জয়নালের মানি অর্ডার ফরম ফিলআপ করে দিয়েছি। আমি জানি। তোর কি মনে হয় সলীল, নাওয়াজ খান মানুষটার কি কোন বদ মতলব আছে?

    বদ মতলব? সলীল চোখ কপালে তুলে বলল, বদ মতলব কেন থাকবে? একজন দেবতার মত মানুষ, গরীব বাচ্চাদের সাহায্য করছে, আর তুই বলছিস বদ মতলব?

    খামাখা কি আর কেউ কাউকে সাহায্য করে? খোঁজ নিয়ে দেখ, নিশ্চয়ই কোন না কোন বদ মতলব —

    সলীল রেগে গিয়ে বলল, তোর মনটাই প্যাচালো। কোন ভাল জিনিস দেখিস না। পৃথিবীতে যত জন খারাপ মানুষ তার থেকে অনেক বেশি ভাল মানুষ, সেটা জানিস?

    আমি মাথা নাড়লাম, জানি না।

    তাহলে জেনে রাখ। গাধা কোথাকার।

    আমি আর তর্ক করে কথা বাড়ালাম না। সত্যিই যদি পৃথিবীতে ভাল মানুষ বেশি থাকে, ব্যাপারটা খারাপ হয় না। কিন্তু আমার সেটা নিয়ে সন্দেহ আছে।

    সলীল হেঁটে যেতে যেতে বলল, আমার মাথায় একটা আইডিয়া এসেছে।

    কি আইডিয়া?

    মনে আছে পারভেজ স্যার যে একাট রচনা লিখতে দিয়েছেন?

    আমি মাথা নাড়লাম, মনে আছে। পারভেজ স্যার একজন কমবয়সী স্যার, নতুন এসেছেন, সব ব্যাপারে খুব উৎসাহ। আমাদের নানারকম বিচিত্র জিনিস দিয়ে রচনা লিখতে দেন। গত সপ্তাহে রচনার বিষয়বস্তু ছিল ”আমি যদি পোকা হতাম”, এর আগের সপ্তাহে ছিল ”নিউটনের যদি একটা কম্পিউটার থাকত”! খুব মজার বিষয়বস্তু, লিখতে গিয়ে আমাদের এমন সব ব্যাপার চিন্তা করতে হয় যেটা আগে কোনদিন চিন্তা করিনি। সেই তুলনায় এই সপ্তাহের বিষয়টি অনেক সোজা –”আমার দেখা একজন খাঁটি মানুষ।” আমি কাকে নিয়ে লিখব সেটা এখনো ঠিক করিনি। সলীল মনে হয় ঠিক করে ফেলেছে। জিজ্ঞেস করলাম, কাকে নিয়ে লিখবি।

    নাওয়াজ খান।

    কিন্তু তুই তো তাকে এখনো চিনিস না। তোকে লিখতে হবে এমন একজন মানুষকে নিয়ে যাকে তুই চিনিস।

    সেটাই তো আইডিয়া। কাল পরশু কোন একদিন গিয়ে নাওয়াজ খানের সাথে পরিচয় করে আসব–

    না–আমি জোরে মাথা নেড়ে বললাম, তুই কথা দিয়েছিস জয়নালের কথা কাউকে বলবি না, তুই কিছুতেই যেতে পারবি না। কিছুতেই না।

    আমি জয়নালের কথা বলব না, একটা কথাও বলব না। এই বুক ছুঁয়ে বলছি।

    তাহলে কি বলবি?

    কিছু বলব না। শুধু জিজ্ঞেস করব দেশের উপকার করার জন্যে কি করা যায় সেটা নিয়ে কি ভাবেন? তখন নিজে থেকেই হয়তো বলবেন।

    আর যদি না বলেন?

    না বললে নাই, তাহলে অন্য কাউকে নিয়ে লিখতে হবে।

    ব্যাপারটা আমার ঠিক পছন্দ হল না, কিন্তু সেটা নিয়ে ঠিক কি করা যায় বুঝতে পারলাম না।

    .

    জারুল চৌধুরীর বাসায় গিয়ে তাকে খুঁজে পেলাম না। নিচে নেই, উপরে নেই, ভয়ে ভয়ে ঘরের দরজা ধাক্কা দিয়ে দেখি, দরজা খোলা, ঘরের ভিতরে কেউ নেই। যখন চলে আসছিলাম তখন শুনি, কোথা থেকে জানি ঠকঠক করে শব্দ হচ্ছে। শব্দ যেদিক থেকে আসছে সেদিকে গিয়েও কিছু খুঁজে পেলাম না। যখন চলে আসছিলাম, হঠাৎ শুনি জারুল চৌধুরীর গলা, চিৎকার করে ডাকছেন, এই যে সলীল! মুনীর!

    আমরা এদিক সেদিক তাকিয়ে তাঁকে খুঁজে পেলাম না। কোথা থেকে বলছেন?

    এই যে আমি এখানে। উপরে!

    আমি আর সলীল অবাক হয়ে উপরের দিকে তাকালাম, দেখি, দূরে বিশাল একটা গাছের ডাল পাতার ফাঁক থেকে জারুল চৌধুরী আমাদের দিকে তাকিয়ে হাত নাড়ছেন। আমি আর সলীল এগিয়ে গেলাম, কাছে গিয়ে দেখি, গাছের মোটামোটা তিনটা ডালের মাঝখানে একটা ছোট ঘর তৈরি করা হচ্ছে। ঘরটি এখনো শেষ হয়নি, দু পাশের দেয়াল আর উপরের ছাদ এখনো বাকি। কিন্তু এটা যে একটা ঘর তাতে কোন সন্দেহ নেই। জারুল চৌধুরীর মাথায় লাল গামছাটি বাধা, হাতে একটা হাতুড়ি, সেটা দিয়ে নিশ্চয়ই কোথাও পেরেক ঠুকছিলেন। আমরা বিস্ময়ে একেবারে হতবাক হয়ে গেলাম। বইপত্রে কোথাও কোথাও দেখেছি মানুষ গাছের উপর ঘর তৈরি করে, তাই বলে সত্যি সত্যি?

    সলীল ফিসফিস করে বলল, হুবহু সুইস ফেমিলি রকিন্সন! মনে আছে?

    আমি মাথা নাড়লাম, জারুল চৌধুরী গাছের উপর থেকে বললেন, তারপর মানিকজোড়, কি মনে করে?

    সলীল তখনো কথা বলতে পারছিল না, কোন মতে একটা বড় নিঃশ্বাস নিয়ে চাপা গলায় বলল, কি সুন্দর! আহা কি সুন্দর!

    জারুল চৌধুরী হো হো করে হেসে বললেন, উপরে আসবে?

    আমরা দুজন জোরে জোরে মাথা নাড়লাম। আগে ধারণা ছিল মানুষটি পাগল, কিন্তু যে গাছের উপর এত সুন্দর ঘর তৈরি করতে পারে সে আর যাই হোক পাগল না। আর যদি পাগল হয়েই থাকে তাহলে পৃথিবীতে এরকম পাগলেরই দরকার।

    আমরা ডাল বেয়ে উঠতে যাচ্ছিলাম, জারুল চৌধুরী মাথা নেড়ে বললেন, দাঁড়াও, দড়ির মইটা নামিয়ে দিই।

    জারুল চৌধুরী উপর থেকে একটা দড়ির মই নামিয়ে দিলেন। দুটি মোটা দড়ির মাঝখানে বাঁশের শক্ত কঞ্চি বেঁধে মই তৈরি করা হয়েছে। এত চমৎকার যে আমরা একেবারে মুগ্ধ হয়ে গেলাম। মই দিয়ে প্রথমে আমি, আমার পিছনে সলীল উঠে এল। উপরে খোলামেলা একটা ঘর তৈরি হচ্ছে, শক্ত কাঠের মেঝে, চারপাশে দেয়াল। একদিকে একটা জানালা, ছাদ তৈরি করার জন্যে কাঠ পাতা হয়েছে, ঢেকে দেয়া বাকি।

    জারুল চৌধুরী চশমার ওপর দিয়ে আমাদের দিকে তাকিয়ে হাসি হাসি মুখে বললেন, কি মনে হয় তোমাদের? আমার নতুন বাসা–

    আপনার বাসা? আপনি এখানে থাকবেন?

    হুম! জারুল চৌধুরী এক ধরনের রহস্যের মত ভঙ্গি করে মাথা নেড়ে বললেন, যখন ছোট ছিলাম তখন খুব শখ ছিল গাছের উপর একটা ঘর তৈরি করব। ছেলেবেলায় আর তৈরি করতে পারিনি। এখন এত সময়, ভাবলাম গাছের উপর ঘর একটা তৈরি করে ফেলি। পরে আফসোস রয়ে যাবে, তাহলে মরে আবার ভূত হয়ে ফিরে আসতে হবে! কি, ভাল হচ্ছে না?

    আমরা এত মুগ্ধ হয়ে দেখছিলাম যে, একেবারে কোন কথাই বলতে পারছিলাম না।

    জারুল চৌধুরী হাত দিয়ে দেখালেন, এই যে এখানে হবে আরেকটা জানালা। আর এই যে ছাদ। দড়ির একটা বিছানা থাকবে, শুয়ে শুয়ে বই পড়ব। রাত্রে ঘুমাতে চাইলে স্লিপিং ব্যাগ।

    স্লিপিং ব্যাগ?

    হ্যাঁ, স্লিপিং ব্যাগ জান তো কি?

    সলীল মাথা নাড়ল, হ্যাঁ, জানি। বইয়ে পড়েছি। ব্যাগের মত থাকে, ভিতরে ঘুমায়। ঠাণ্ডা লাগে না।

    হ্যাঁ, আর এখানে একটা ছোট শেলফের মত হবে, সেখানে বইপত্র, শুকনো খাবার।

    আমরা হঠাৎ লক্ষ্য করলাম, জারুল চৌধুরীর ডান হাতের তালুতে একটা ব্যাণ্ডেজ, মনে হয় কোনভাবে কেটে গিয়েছে। আমি জিজ্ঞেস করলাম, আপনার হাতে কি হয়েছে?

    জারুল চোধুরী কেমন যেন লজ্জা পেয়ে গেলেন, মাথা নেড়ে বললেন, আর বল না, গত সপ্তাহে একটা ঢাউস ঘুড়ি তৈরি করে উড়াচ্ছি। সূতায় মাঞ্জা দিয়েছি আচ্ছা মত, সূতা তো নয়, একেবারে ধারালো চাকু! বেশ ভালই উড়ছিল, চারটা ঘুড়ি কেটে দিলাম, হঠাৎ কথা নেই বার্তা নেই গোত্তা খেল নিচের দিকে, প্রথমে সূতাটা একটু ঢিল দিয়ে যেই ছেড়েছি হঠাৎ সঁই সাঁই করে উঠতে লাগল, হাত দিয়ে ধরতে গেলাম, মাঞ্জা দেয়া। সূতায় হাত কেটে একেবারে রক্তারক্তি!

    সলীল বলল, ইশ!

    বুড়ো মানুষদের বাচ্চা হওয়া খুব সহজ ব্যাপার নয়। যখন বাচ্চা ছিলাম তখন কাজগুলি কি সহজ ছিল, এখন যতই দিন যাচ্ছে ততই কঠিন হয়ে যাচ্ছে!

    জারুল চৗধুরী খানিকক্ষণ নিজের ব্যাণ্ডেজ করা হাতটি দেখে বললেন, তারপর তোমরা মানিকজোড়, কি মনে করে? স্কুল পালিয়ে?

    সলীল তার বইয়ের কথা বলতে যাচ্ছিল, জারুল চৌধুরী হাত তুলে থামিয়ে দিলেন। বললেন, বুঝেছি। নীল নয়নার অভিসার! তাই না?

    আমরা মাথা নাড়লাম, মনে হল এখন বুঝি আমাদের ধমকে দেবেন এরকম একটা বই পড়ার জন্যে, কিন্তু ধমকে দিলেন না বরং হাসি হাসি মুখে বললেন, অনেকদিন এরকম একটা বই পড়িনি, তাই সেদিন বসে বসে পড়ে ফেললাম।

    সলীল কোন কথা বলল না, জারুল চৌধুরী মাথা ঝাঁকিয়ে বললেন, কাহিনীটা জানি কি রকম! নীল নয়না চাকু দিয়ে তার ভালবাসার মানুষের বুক কেটে ফেলল, তারপর রক্তে হাত ভিজিয়ে বলল, যেও না যেও না ওগো–সেটা কি কখনো হয়?

    সলীল দুর্বলভাবে মাথা নাড়ল, কয়েকদিন আগেই সে আমাকে বোঝানোর চেষ্টা করছিল কি দারুণ এই বইটা, কি চমৎকার তার ভাষা, কি সাংঘাতিক তার কাহিনী! কিন্তু এখন জারুল চৌধুরীর সামনে সে একেবারে চুপ মেরে রইল, একবারও প্রতিবাদ করল না।

    জারুল চৌধুরী মনে হল বইয়ের কাহিনীটার কথা চিন্তা করে একবার একটু শিউরে উঠলেন, তারপর বললেন, যাবার সময় নিয়ে যেও বহঁটা।

    ঠিক আছে।

    আমরা সেই গাছঘরে পা ঝুলিয়ে বসে রইলাম। জারুল চৌধুরী তার লাল গামছায় চশমা পরিষ্কার করে একটা নিঃশ্বাস ফেলে বললেন, কয়দিনেই জায়গাটার উপর মায়া পড়ে গেছে।

    হ্যাঁ, এত সুন্দর গাছপালা! নিরিবিলি।

    ছেড়ে যেতে কষ্ট হবে।

    আমি একটু অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম, আপনি ছেড়ে যাবেন?

    হ্যাঁ। যেতে তো হবেই এক সময়ে।

    তাহলে এত সুন্দর করে এই যে ঘর তৈরি করলেন?

    শখ হয়েছে, তাই তৈরি করছি। এক সময়ে ছেড়ে যেতে হবে। সংসারে কিছু কি রাখা যায়? সব ছেড়ে যেতে হয়।

    শুনে আমাদের একটু মন খারাপ হয়ে গেল। আমি জিজ্ঞেস করলাম, কোথায় যাবেন আপনি?

    ঢাকা। এ জায়গাটা আসলে বিক্রি করে দিচ্ছি। কেউ থাকে না, কোন কাজে আসে না।

    সলীল আস্তে আস্তে বলল, সব কিছু কি কাজে আসতে হয়?

    জারুল চৌধুরী কেমন যেন অবাক হয়ে সলীলের দিকে তাকালেন, তারপর আবার। চশমা খুলে মনোযোগ দিয়ে তার লাল গামছা দিয়ে চশমার কাঁচ পরিষ্কার করতে লাগলেন।

    সলীল জিজ্ঞেস করল, যে জায়গাটা কিনছে সে কি করবে এখানে?

    ইটের ভাটা তৈরি করবে।

    ইটের ভাটা? আমি আর সলীল প্রায় চিৎকার করে বললাম, ইটের ভাটা?

    হ্যাঁ। কাছেই নদী, নৌকায় ইট আনা নেয়া করা খুব সহজ হবে। জঙ্গলে গাছপালা আছে, কেটে লাকড়ি তৈরি করা হবে।

    লাকড়ি?

    জারুল চৌধুরী কেমন যেন অপরাধীর মত মুখ করে আমাদের দিকে তাকালেন। আমি মাথা নেড়ে বললাম, এটা যদি আমার জায়গা হত তাহলে কখনো এই জায়গা আমি বিক্রি করতাম না। কখনো না।

    সলীলও আস্তে আস্তে বলল, আমিও করতাম না।

    জারুল চৌধুরী কেমন যেন কাচুমাচু করে বসে রইলেন, দেখে মনে হল, তার কেমন জানি মন খারাপ হয়ে গেছে। মনে হল কিছু একটা চিন্তা করছেন। সলীল আবার বলল, আপনি চিন্তা করতে পারেন, এই সুন্দর জায়গাটা একটা ইটের ভাটা হয়ে যাবে? সব গাছ কেটে ফেলবে, শুকনো ধু ধু চারিদিকে, মাঝখানে ইটের ভাটা। সেখান থেকে ধোয়া বের হচ্ছে। কাল কুচকুচে ধোঁয়া–

    জারুল চৌধুরী মনে হল আরো দমে গেলেন। খানিকক্ষণ পা ঝুলিয়ে বসে থেকে বললেন, তোমরা মনে হয় ঠিকই বলেছ। কিন্তু মুশকিলটা কি জান?

    কি?

    বড় হয়ে গেছি। যেটা করতে চাই সেটা আর করতে পারি না। কি করি জান? যেটা করা দরকার সেটা।

    আমরা তিনজনই মন খারাপ করে একটা বড় গাছের উপর থেকে পা ঝুলিয়ে বসে রইলাম।

    ⤶ ⤷
    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleবকুলাপ্পু – মুহম্মদ জাফর ইকবাল
    Next Article গ্রামের নাম কাঁকনডুবি –- মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    Related Articles

    মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    ছোটগল্প – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    November 19, 2025
    মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    সাদাসিধে কথা – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    November 19, 2025
    মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    মেকু কাহিনী – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    November 19, 2025
    মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    আমার বন্ধু রাশেদ – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    November 19, 2025
    মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    সায়েন্স ফিকশান সমগ্র ১ – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    November 19, 2025
    মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    টুনটুনি ও ছোটাচ্চু – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    November 19, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Generic selectors
    Exact matches only
    Search in title
    Search in content
    Post Type Selectors
    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Our Picks

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }