Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    রাজমালা বা ত্রিপুরার ইতিহাস – শ্রী কৈলাসচন্দ্ৰ সিংহ প্রণীত

    August 20, 2025

    আলো হাতে সেই মেয়েটি – তপন বন্দ্যোপাধ্যায়

    August 20, 2025

    গোয়েন্দা গার্গী সমগ্র – তপন বন্দ্যোপাধ্যায়

    August 20, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • 🔖
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    Subscribe
    সাইন ইন
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    জিম করবেট অমনিবাস (অখণ্ড) – মহাশ্বেতা দেবী সম্পাদিত

    জিম করবেট এক পাতা গল্প1380 Mins Read0

    ০৯. বুদ্ধু

    ৯. বুদ্ধু

    বুদ্ধু ছিল অনুন্নত সম্প্রদায়ের লোক। যত বছর ধরে আমি তাকে দেখেছি, তার মধ্যে কখনও তাকে হাসতে দেখি নি। বড় কষ্টের জীবন ছিল তার। সেই কষ্টের শেল তার একেবারে মর্মে গিয়ে বিধেছিল। তার বয়স ছিল প্রায় পঁয়ত্রিশ বছর। লম্বা রোগা মানুষটি। তার সঙ্গে ছিল তার স্ত্রী আর দুটি শিশু সন্তান। সে আমার কাছে এসে কাজ চাইল। তারই কথামত আমি তাকে মোকামা ঘাট বড়-লাইনের খোলা মালগাড়ি থেকে ছোট-লাইনের ঢাকা মালগাড়িতে কয়লা তুলে দেবার কাজে নিযুক্ত করলুম। এই কাজটা স্ত্রী-পুরুষ মিলে করতে পারে, আর বুদ্ধ চেয়েছিল যে তার স্ত্রীও তার সঙ্গেই কাজ করুক।

    বড় লাইনের খোলা-মালগাড়ি আর ছোট-লাইনের ঢাকা মালগাড়িগুলি মুখোমুখি দাঁড়িয়ে থাকত, তাদের মাঝখানে থাকত চার ফুট চওড়া একটি চালু প্ল্যাটফর্ম। সেটার উপরটা ঢাকা ছিল না, তাই কাজটা ছিল প্রাণান্তকর।

    শীতকালে মেয়েপুরুষরা তীব্র ঠাণ্ডার মধ্যে কাজ করত, প্রায়ই দিনের পর দিন বৃষ্টিতে ভিজতে হত তাদের। গ্রীষ্মকালে ইটের ফ্ল্যাটফর্মটা আর মালগাড়িগুলির লোহার মেঝে তেতে আগুন হয়ে থাকত, তাতে তাদের খালি পায়ে ফোস্কা পড়ে যেত। আনাড়ী মানুষ যখন নিজের আর সন্তানদের পেটের দায়ে বেচা নিয়ে কাজ করে, তখন সেটা একটা বড় নিষ্ঠুর যন্ত্র হয়ে ওঠে।

    প্রথম দিন কাজ করবার পর হাত দুখানা লাল আর ক্ষতবিক্ষত হয়ে যায়, আর পিঠ এমন টন-টন করতে থাকে যে সেটা বড় যন্ত্রণাদায়ক হয়ে ওঠে। দ্বিতীয় দিনে হাতময় ফোস্কাগুলো ফেটে গিয়ে দূষিত হয়ে ওঠে, খুব কষ্ট করে পিঠটাকে সোজা করতে হয়। তারপর একটি সপ্তাহ বা দশ দিন ধরে শুধু অসীম সহ্য করবার শক্তি থাকলে তবে এই ক্লিষ্ট মানুষগুলো কাজ চালিয়ে যেতে পারে–এটা আমি অভিজ্ঞতা থেকে জানি।

    বুদ্ধ আর তার বউও এইসব অবস্থার ভিতর দিয়েই গেল। আমি তাদের থাকার জায়গা দিয়েছিলুম। ষোল ঘণ্টা কাজ করবার পর যখন তারা দেহটাকে টেনে নিয়ে বাসার দিকে যেত, আমার প্রায়ই মনে হত যে তাদের বলি যে তারা যথেষ্ট কষ্ট পেয়েছে, এবার এর চাইতে কম কষ্টসাধ্য কোনো একটা কাজ দেখে নিক। কিন্তু তাদের রোজগার বেশ ভাল হচ্ছিল। বুদ্ধ বলেছিল যে আগে সে কখনও এত রোজগার করে নি। কাজেই আমি তাদের কাজ চালিয়ে যেতে দিলুম।

    ক্রমে এমন দিন এল যখন তাদের হাতে কড়া পড়ে গেল, পিঠও আর টাটাত না। তখন তারা যেমন চটপটে আর হালকা পায়ে কাজে আসত, ঠিক সেইভাবেই কাজ শেষে ঘরে ফিরে যেত।

    গ্রীষ্মকালে সব সময়ে কয়লার চালান খুব বেশি থাকে বলে কয়লা তোলাইয়ের জন্যে তখন শ-দুয়েক মেয়েপুরুষ নিযুক্ত ছিল। তখন ভারত ছিল কয়লা রপ্তানিকারী দেশ। যে সব মালগাড়ি রপ্তানির জন্যে ফসল, আফিম, নীল, কাঁচা-চামড়া আর হাড় নিয়ে কলকাতায় যেত, তারা বাংলার কয়লাখনিগুলো থেকে কয়লা-বোঝাই হয়ে ফিরে আসত। মোকামা ঘাট দিয়ে পাঁচ লক্ষ টন কয়লা যেত।

    একদিন বুদ্ধ আর তার বউ কাজে এল না। কয়লার মজুর-দলের সর্দার চামারি আমাকে বললে যে আগের দিন একখানা পোস্টকার্ড এসেছিল, তা পেয়ে সেদিন সকালবেলাই সে সপরিবারে চলে গিয়েছে। বলে গিয়েছে যে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ফিরে আসবে।

    দু-মাস বাদে তারা ফিরে এসে বাসা দখল করল। বুদ্বু আর তা বউ আবার বরাবরকার মত মেহনত করে কাজ করতে লাগল। পরের বছর আবার প্রায় সেই সময়ে বুন্ধু আর তার বউ কামাই করল। বুন্ধুর চেহারা তখন ভরে উঠেছে, বউয়ের চেহারাও আর জীর্ণ শীর্ণ নেই। এবার তারা প্রায় তিন মাস এল না। ফিরল যখন, তখন তাদের ক্লান্ত, শীর্ণ চেহারা।

    আমার পরামর্শ না চাইলে, কিংবা নিজে থেকে কেউ কোনো কথা না বললে আমি কখনও আমার লোকদের ব্যক্তিগত ব্যাপার সম্বন্ধে খোঁজ নিতুম না, কারণ ভারতীয়রা সে বিষয়ে বড় খুঁতখুঁতে। কাজেই, বুদ্ধ কেন একখানা পোস্ট কার্ড এলেই থেকে-থেকে কাজ ছেড়ে চলে যায় তা আমি জানতুম না।

    মজুরদের চিঠি’সর্দারদের কাছে আসত। সর্দার যে-যার লোকদের সেগুলো বিলি করে দিত। তাই আমি চামারিকে বলে রাখলুম যে, এর পরের বার যখন বুন্ধুর নামে পোস্টকার্ড আসবে তখন যেন সে তাকে আমার কাছে পাঠিয়ে দেয়। ন-মাস পরে

    একখানা পোস্টকার্ড হাতে নিয়ে বুদ্ধ একদিন আমার আপিসে এসে হাজির হল।– তখন কয়লার চালান অস্বাভাবিকভাবে বেশি, আমার নিযুক্ত স্ত্রী-পুরুষ প্রত্যেকে যতদূর সাধ্য পরিশ্রম করে চলেছে। যে-ভাষায় পোস্টকার্ডখানা লেখা তা আমি পড়তে পারি না বলে তাকেই ওটা পড়ে আমাকে শোনাতে বললুম। সে তা পারল না, কেননা কেউ তাকে লিখতে পড়তে শেখায় নি। কিন্তু সে বলল যে চামারি ওটা তার কাছে পড়েছে। এতে মার মনিব হুকুম করেছে যে, ফসল কাটবার সময় তৈরি হয়েছে, বলেছে সে যেন এখনই চলে আসে। সেদিন বুন্ধু আমার অফিসে আমাকে যে কাহিনী বলেছিল তা আমি নিচে লিখছি। ভারতের কোটি-কোটি মানুষেরই কাহিনী এটা :

    ‘আমার ঠাকুরদা ছিলেন একজন খেত-মজুর। তিনি নিজ গ্রামের বেনিয়ার থেকে দুটি টাকা ধার করেছিলেন। বেনিয়া তা থেকে একটি টাকা বছরের আগাম সুদ বলে নিজে রেখে দিয়ে তার বহিখাতা’-তে একটা লেখার পাশে আমার ঠাকুরদার টিপ-ছাপ নিয়ে নিল। আমার ঠাকুরদা মধ্যে-মধ্যে যখনই পারতেন তখনই সুদ বাবদে বেনিয়াকে কয়েক আনা করে দিতেন। তাঁর মৃত্যু হলে আমার বাবা দেনাটা ঘাড়ে নিলেন। তার পরিমাণ তখন হয়ে দাঁড়িয়েছিল পঞ্চাশ টাকা। আমার বাবা বেঁচে থাকতে-থাকতে দেনাটা বেড়ে বেড়ে একশো পনের টাকায় দাঁড়াল।

    ইতিমধ্যে বুড়ো বেনিয়া মারা গিয়েছে, তার জায়গায় রাজত্ব করছে তার ছেলে। আমার বাবা মারা যাবার পর সে আমাকে ডেকে পাঠিয়ে বলল যে পারিবারিক দেনাটা এখন অনেক টাকায় এসে দাঁড়িয়েছে বলে আমার তাকে একখানা রীতিমতভাবে সই-করা আর স্ট্যাম্প-লাগানো দলিল দিতে হবে। আমি তা-ই করলুম। স্ট্যাম্প কাগজ আর দলিল রেজিস্ট্রির খরচ দেবার সাধ্য আমার ছিল না। তাই বেনিয়া সে টাকা আমাকে ধার বাবদ দিয়ে সেটাও আবার দেনার মধ্যে যোগ করে দিল। সুদ-সুদ্ধ দেনার পরিমাণ এখন হল একশো তিরিশ টাকা।

    বিশেষ অনুগ্রহ দেখিয়ে বেনিয়া সুদের হার কমিয়ে শতকরা পঁচিশ টাকা করতে রাজী হল। এই অনুগ্রহ দেখিয়ে তার বদলে সে এই শর্ত করিয়ে নিল যে প্রত্যেক বছর তার ফসল কাটার কাজে আমি আর আমার স্ত্রী সাহায্য করব, যতদিন না দেনাটা সম্পূর্ণ শোধ হয়ে যায়। আমার স্ত্রী আর আমি বেনিয়ার জন্যে এই যে বেগার খাটব, সেই চুক্তিটা আর একখানা কাগজে লেখা হল, তাতে আমি টিপসই দিলুম।

    দশ বছর আমি আর স্ত্রী বেনিয়ার ফসল কেটে দিয়ে আসছি। প্রতি বছরই বেনিয়া হিসেব তৈরি করে। স্ট্যাম্প-করা দলিলের পিছনে সেটা লিখে, তাতে আমাকে দিয়ে টিপসই করিয়ে নেয়। আমি ঘাড়ে নেবার পর থেকে দেনাটা বেড়ে কত হয়ে দাঁড়িয়েছে, তা আমি জানি না। আমি অনেক বছর এ বাবদ কিছুই দিতে পারি নি। কিন্তু আপনাদের কাছে কাজ আরম্ভ করা অবধি আমি, পাঁচ, সাত আর তের, এই মোট পঁচিশ টাকা দিয়েছি।’

    এই দেনা অস্বীকার করবার কথা বুদু স্বপ্নেও ভাবতে পারত না। সেটা একটা অভাবনীয় কথা। তাতে শুধু যে তারই মুখে কালি পড়বে তা নয়, আরও ঢের বেশি অন্যায় করা হবে–তার বাপ-দাদার সুনামেও কালি পড়বে। কাজেই সে নগদে আর মেহনতে যা দিতে পারে তা দিয়ে আসছিল, আর দেনা শোধের কোনো আশা না রেখেই জীবন কাটাচ্ছিল। সে মারা গেলে দেনা তার বড় ছেলেতে অর্সাবে।

    বুন্ধুর কাছ থেকে এই খবরটা বের করা গেল যে বেনিয়াটি যে গ্রামে থাকে, সেই গ্রামে একজন উকিলও আছেন। তার নাম-ঠিকানা নিয়ে বুন্ধুকে তার নিজের কাজে যেতে বললুম। তাকে বললুম যে বেনিয়ার ব্যাপারে কি করা যায় সেটা আমি দেখব।

    তারপর অনেকদিন ধরে উকিলের সঙ্গে লেখালেখি চলল। ভদ্রলোক ব্রাহ্মণ এবং সৎসাহসী। বেনিয়াটি তাকে তার বাড়ি থেকে বেরিয়ে যেতে বলে অপমান করায় এবং তাকে নিজের চরকায় তেল দিতে বলায় তিনি আমাদের একজন শক্তিশালী মিত্র হয়ে উঠলেন। তার থেকেই জানা গেল যে, যে বহিখাতা’-খানা বেনিয়াটি তার বাপের থেকে উত্তরাধিকার সূত্রে পেয়েছে তা প্রমাণ হিসেবে আদালতে দাখিল করা চলে না, কারণ তাতে এমন সব লোকের টিপ-ছাপ আছে যারা বহুকাল হল মারা গিয়েছে।

    বেনিয়া ফাঁকি দিয়ে বুদ্ধকে দিয়ে এমন একখানা দলিল করিয়ে নিয়েছে যাতে স্পষ্ট করে লেখা আছে যে বুদ্ধ নিজে শতকরা পঁচিশ টাকা সুদে দেড়শো টাকা ধার নিয়েছে। উকিল আমাকে পরামর্শ দিলেন যে এটা নিয়ে লড়াই করা আর চলবে না, কেননা বুন্ধুর দেওয়া দলিলটি অসিদ্ধ নয়। তাছাড়া, আংশিক সুদ হিসেবে তিন কিস্তি টাকা দিয়ে, এবং এই দলিলে এই টাকা দেবার কথার পাশে টিপ-ছাপ দিয়ে সে তার বৈধতা মেনে নিয়েছে।

    শতকরা পঁচিশ টাকা সুদসহ দেনার টাকাটা সম্পূর্ণ মিটিয়ে দেবার জন্যে উকিলকে এক মনি-অর্ডার পাঠালুম। বেনিয়া বৈধ-দলিলটি ফেরত দিল, কিন্তু বুন্ধু আর তার স্ত্রীর ফসল কাটবার জন্যে বেগার খাটবার যে ব্যক্তিগত চুক্তিপত্রটা, তা সে দিতে চাইল না। তারপর উকিলের পরামর্শে আমি তার নামে জুলুমবাজির জন্যে নালিশ করব বলে শাসালুম, তখন সে উকিলের হাতে চুক্তিনামাটা ফেরত দিল।

    এসব ব্যাপার যখন চলছে, তখন বুদ্ধ বড় অস্বস্তি ভোগ করছিল। এ বিষয়ে সে আমাকে কখনও কিছু বলে নি। কিন্তু কাজ করবার সময় যখনই আমি তার কাছ দিয়ে যেতুম তখনই সে যেভাবে আমার দিকে তাকাত, তাতে বোঝা যায় যে সে এই কথা ভাবছে যে, সর্বশক্তিমান বেনিয়া মশায়ের ব্যবস্থা করবার ভার আমার উপর দিয়ে সে বুদ্ধির কাজ করেছে কি না, এবং তিনি যদি হঠাৎ এসে উপস্থিত হয়ে তার আচরণের জন্যে কৈফিয়ত চেয়ে বসেন তাহলে তার অবস্থাটা কী হবে!

    তারপর একদিন আমি রেজিস্ট্রি-ডাকে খুব করে গালা-মোহর-করা একখানা চিঠি পেলুম। তাতে ছিল বহু-টিপসই-দেওয়া একখানা আইন-সঙ্গত দলিল। একখানা চুক্তিনামা–সেটাও-দেওয়া উকিল মশায়ের ফী-এর রসিদ, আর একখানা চিঠি-তাতে আমাকে জানানো হয়েছে যে বুদ্ধ এখন মুক্ত। সমস্ত ব্যাপারটাতে আমার দুশো পঁচিশ টাকা খরচ হয়ে গেল।

    সেইদিন সন্ধেবেলা বুছু কাজের শেষে যখন ফিরছিল তখন আমি তার সঙ্গে দেখা করলুম। খাম থেকে কাগজগুলো বের করে বললুম যে সে ওগুলো ধরুক, আর আমি তাতে দেশলাই জ্বেলে দি। সে বললে, না সাহেব, এ কাগজগুলো পোড়াবেন না। আমি এখন আপনার গোলাম হলুম। ভগবানের ইচ্ছে হলে একদিন আমি আপনার দেনা শোধ করব।

    বুদ্ধু যে কখনও হাসে নি শুধু তা-ই নয়, সে কথাও বলত খুব কম। যখন আমি তাকে বললুম যে সে যদি আমাকে কাগজ ক-খানা পোড়াতে না দেয় তাহলে সেগুলোকে নিজের কাছে রাখুক, তাতে সে শুধু দুই হাত জোড় করে আমার পা চুল। যখন সে মুখ তুলে চলে যাবার উপক্রম করল, দেখলাম তার কয়লার কালি-মাখা মুখে দাগ কেটে-কেটে চোখের জল গড়িয়ে-গড়িয়ে পড়ছে।

    তিন পুরুষ ধরে যে দেনার পীড়ন চলছিল তা থেকে মুক্তি পেল ভারতের লক্ষ-লক্ষ দেনাদারের মধ্যে মোটে একজন। কিন্তু একজন না হয়ে লক্ষ-জন হলেও আমি এর চাইতে বেশি আনন্দ পেতুম না। বেনিয়ার দেনা শোধ হয়েছে আর তারা এখন মুক্ত–এ কথা তার স্ত্রীকে বলবার জন্যে বুদ্ধ চোখের জলে অন্ধ হয়ে হোঁচট খেতে খেতে চলে গেল। সেই চোখের জল, এবং তার নীরব ভঙ্গীটি আমার মনে যত গভীর রেখাপাত করেছিল, মুখের কোনো কথাই তা পারত না।

    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27 28 29 30 31 32 33 34 35 36 37 38 39 40
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleরামায়ণের উৎস কৃষি – জিতেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়
    Next Article জীবনযাপন – জীবনানন্দ দাশ
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Demo
    Most Popular

    রাজমালা বা ত্রিপুরার ইতিহাস – শ্রী কৈলাসচন্দ্ৰ সিংহ প্রণীত

    August 20, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    রাজমালা বা ত্রিপুরার ইতিহাস – শ্রী কৈলাসচন্দ্ৰ সিংহ প্রণীত

    August 20, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Our Picks

    রাজমালা বা ত্রিপুরার ইতিহাস – শ্রী কৈলাসচন্দ্ৰ সিংহ প্রণীত

    August 20, 2025

    আলো হাতে সেই মেয়েটি – তপন বন্দ্যোপাধ্যায়

    August 20, 2025

    গোয়েন্দা গার্গী সমগ্র – তপন বন্দ্যোপাধ্যায়

    August 20, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    Sign In or Register

    Welcome Back!

    Login below or Register Now.

    Lost password?

    Register Now!

    Already registered? Login.

    A password will be e-mailed to you.