Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • English Books
      • Jules Verne
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    জীবনযাপন – জীবনানন্দ দাশ

    জীবনানন্দ দাশ এক পাতা গল্প44 Mins Read0
    ⤶

    জীবনযাপন – ৪

    ৪

    অনেক গভীর রাতেও হিজলডাঙার মায়া কাটিয়ে উঠতে পারল না পূর্ণিমা। সেই রূপশালী ধানের দেশে-দেশের কত রকম যে রূপ আর্ রস ছায়া মমতা গন্ধ তাকে নিবিড় ভাবে পেয়ে বসেছে—

    বাইরে ঝর ঝর করে বৃষ্টি পড়ছে—

    জানালার পাশে বসে পূর্ণিমা ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে লাগল।

    কিন্তু তারপর অজিতের কথাগুলো মনে পড়ল তার; মানুষের জীবন ক্রমে ক্রমে তার নিজেরই জিনিস হয়ে দাঁড়ায়… মমতার জন্ম হয়।

    তাই হয় না কি?

    আর অজিতবাবুর এই কথাগুলো : তারপর তুমি বড় হলে…আমিও মনে করে রাখব।

    মূল্যবান জিনিস? নিবেদনের মূর্তি? বাইরে কি গভীর বাদল এখনও! হিজলডাঙার বনে না কি? যেন ঝিঁ ঝিঁ জোনাকী অবসাদ কল্পরা স্বপ্ন ঘুম মিশে যাচ্ছে সব।

    অজিত টাকা পাচ্ছিল—

    একদিন মায়ের নামে দেড় শো টাকা মনিঅর্ডার করে সে পাঠিয়ে দিল-চিঠিতে লিখে দিল—এমনি মাঝে মাঝে পাঠাব।

    কয়েক দিন পরে ডাকপিওন এসে সে টাকা ফেরৎ দিয়ে গেল-এ টাকা যাঁর নামে পাঠান হয়েছে তিনি রাখেন নি, তিনি ফিরিয়ে দিয়েছেন।

    দিন তিনেক পরে চিঠি—

    মা লিখেছেন : তোমার এ টাকা আমি রাখতে পারলাম না। তুমি আর আমাদের টাকা পাঠিও না। এর চেয়ে তুমি যদি মুদীর দোকান খুলে, গাড়োয়ানের কাজ করে, জুতো সেলাই করে আমাদের টাকা পাঠাতে তাও আমরা আদরে গ্রহণ করতাম।

    কিন্তু তোমার অধঃপতন সে সবের চেয়ে ঢের বেশি হয়েছে।

    তোমার জন্য লজ্জায় ঘেন্নায় অনেক সময় মানুষের কাছে মুখ দেখানোও শক্ত হয়ে ওঠে।

    তুমি এ রকম করবে তা আমরা ভাবতেও পারি নি-নিধিবাবুর ছেলে হরিলাল যাকে সমস্ত দেশশুদ্ধ কেউ দেখতে পারত না সেও তাহ’লে তোমার চেয়ে ঢের মানুষ —

    অজিত চিঠিখানা পনেরো ভাঁজ করল—তবু ছিঁড়ল না—

    আবার খুলল-আবার ভাঁজ করল—

    আবার খুলল—

    চায়ের কাপ ঠাণ্ডা হয়ে যাচ্ছিল—

    একটা মাছি মরে পেয়ালার ভিতর পড়ে রয়েছে—

    পূর্ণিমা যে কখন ঘরের ভিতর ঢুকে পড়েছে অজিত তা টেরও পায় নি। চোখ যখন তুলল তখন দেখল পূর্ণিমা বসে রয়েছে-একটা কৌচে

    —কি মনে করে?

    —আপনি কি ভাবছেন অজিতবাবু?

    অজিত কোনো উত্তর দিল না।

    —আজো সেই বইয়ের কথাই ভাবছেন নাকি?

    অজিত ধীরে ধীরে ঘাড় নাড়ল—

    পূর্ণিমা বললে—আপনার হাতে ওটা কি? -একটা চিঠি।

    —কার?

    —মার—

    —ওঃ

    দু’জনেই চুপ করে রইল—

    খানিকক্ষণ পরে অজিত বললে—মা লিখেছেন—

    চায়ের পেয়ালা তুলতে গিয়ে অজিত বললে—একটা মাছি মরে পড়ে রয়েছে।

    চায়ের পেয়ালাটা অজিত সরিয়ে রেখে দিল

    —মা লিখেছেন তোমার টাকা আমি নেব না—

    —মাকে টাকা পাঠিয়ে ছিলেন বুঝি?

    —হ্যাঁ-সে টাকা তিনি ফিরিয়ে দিয়েছেন-লিখেছেন এর চেয়ে তুমি যদি মুদীর দোকান খুলে-গাড়োয়ানের কাজ করে-জুতো সেলাই করে আমাদের টাকা পাঠাতে আমরা তা সাদরে নিতাম—

    —এমনি কথা লিখলেন আপনার মা? থিয়েটারকে তিনি এত দূর ঘেন্নার জায়গা মনে করলেন?

    —লিখেছেন ‘তোমার অধঃপতন সে সবের চেয়ে…হরিলাল তোমার চেয়ে ঢের মানুষ—’ -হরিলাল কে?

    —আমাদের দেশেরই একটা ছেলে।

    —কি করে?

    মদ গাঁজা খেয়ে বেড়ায়-বেশ্যাপাড়ায় পড়ে থাকে—

    পূর্ণিমার সমস্ত শরীর দু’এক মুহূর্তের জন্য কাঁটা দিয়ে উঠল।—অত্যন্ত কষ্টে নিজেকে দমন করে একটা ঢোঁক গিলে পূর্ণিমা বললে—সেই হরিলালের কথাও উঠল আপনার এই টাকার ব্যাপার নিয়ে-তার চেয়েও আপনাকে হীন মনে করেন আপনার মা?

    —হ্যাঁ, তার চেয়েও আমাকে হীন মনে করেন আমার মা, না হ’লে টাকা ফিরিয়ে দেন কখনও? পৃথিবীর সব চেয়ে বড় চামারের কাছ থেকে টাকা নিতে সাধুমানুষরা একটুও চিন্তা করে না কতবার দেখলাম-কিন্তু আমার এ টাকাও মার অস্পৃশ্য—

    —থিয়েটারকে কি তিনি এতই জঘন্য মনে করেন?

    —আমাদের পরিবারকে তো তুমি চেন না—

    —কি রকম?

    —ভদ্রলোকদের বাড়িতে যে গানের মজলিস হয় তাতেও তাঁরা—

    –তাঁরা কি গান গান না?

    —গান বৈ কি-ভজন-সঙ্কীর্তন-খুব প্রাণ ঢেলে গান। খুব শ্রদ্ধা ও বিশ্বাস পরলোকে ভগবানের ওপর—

    —তা তো সকলেরই আছে—

    —হ্যাঁ, তোমার আছে পূর্ণিমা-তা আমি জানি। কিন্তু তাঁদের খুব বেশি আছে,—বলা না ঘটাই বেশি—ঘটা বেশি না বিশ্বাস শ্রদ্ধা বেশি সে সব খোঁজ নিয়ে আমার মনের কোনো রকম চরিতার্থতা পাই না-তবে খুব শ্রদ্ধা বিশ্বাস নিয়েই তাঁরা তৃপ্ত নন-সে জন্য আড়ম্বরও ঢের আছে বটে-এত আয়োজন এত সমারোহ যে তুমি তা কল্পনাও করতে পারবে না-তোমার কাছে সেগুলো খুব অপ্রাসঙ্গিক মনে হবে—

    —আপনার কাছে মনে হয়েছিল?

    —কিন্তু খুব সৎ-কেউ তামাকও খান না-আমিই আমাদের বংশে প্রথম চুরুট খেয়েছি—গানের মজলিসে গিয়েছি-থিয়েটার দেখেছি-কবিতা লিখেছি—

    —কবিতা লেখাও পাপ?

    —আমাদের পরিবারই তো শুধু নয়—এমন অনেক পরিবার রয়েছে যারা এ সমস্ত জিনিসগুলোকেই অত্যন্ত অশ্রদ্ধার চোখে দেখে-কবিতা লিখলেও মনে করে-কবি-গুণী হয়ে গেল—জাত হয়ে গেল আলাদা-হয়তো সারা দিন একটা এস্রাজ নিয়ে পড়ে থাকবে-না হয় মদ খাবে-কিংবা এ সব কিছু না করলেও মেয়েমানুষের রূপ গুণ স্তন চুমো নিয়ে এই সব লিখবে-কবিতা বা কবি যে এ ছাড়া আর কিছু হতে পারে সে ধারণাও নেই তাদের—

    —আপনি হয়তো এস্রাজ নিয়ে পড়ে থাকতেন না সারাদিন!

    —থাকতে পারলে মন্দ হ’ত না—

    —আপনার কবিতা—

    —থাক্

    —আজকাল লেখেন না বুঝি আর? -না

    যেগুলো লিখেছেন তা আছে?

    (-তুমি দেখবে?)

    —দেখতে ইচ্ছা করে।

    —ছাপাই নি তো কোনো দিন-পুঁজি করেও রাখি নি-যদি জানতাম তুমি দেখতে চাইবে—

    —তাহ’লে নেই?

    —এই তো সেদিন সমস্ত পাণ্ডুলিপি পুড়িয়ে ফেললাম—

    —পুড়িয়ে ফেললেন? বলেন কি? কেন? কবে?

    —সেই যে বড় বৃষ্টিটার দিনে।

    —কেন?

    —ভাবলাম ও পাট আমার শেষ হয়ে গেছে—এ সব ঘরের এক কোণে পড়ে থাকলেও আমার নতুন জীবনের একান্ততাকে বাধা দেয়-কেমন একটা সমস্যা নিয়ে আসে কেবলই মনে হয়, আমি নট না কবি?

    পূর্ণিমা বললে—তাই পুড়িয়ে ফেললেন?

    —হ্যাঁ। ভালো করি নি? একটা জিনিসকেই তো ধরতে হয় আমাদের-যে জিনিসটা আমরা সব চেয়ে ভালো পারি?

    —কিন্তু তবুও কবি—হলে এত অশ্রদ্ধা পেতেন না আপনি—

    —তাও পেয়েছিলাম—

    —কিন্তু এখন একেবারে কলঙ্ক কুড়োচ্ছেন।

    —কিন্তু সব পরিবারই তো আমাদের পরিবারের মত নয়—

    —কিন্তু নিজের পরিবারের ঘৃণা উপেক্ষাই সব চেয়ে বেশি আঘাত দেয়—

    –নিজের মাও যখন ছেলের টাকা ফিরিয়ে দেয়!

    অজিত তার মায়ের চিঠিটা পনেরো ভাঁজ করছিল—

    পূর্ণিমা বললে—এ চিঠিটার ওপর আপনি খুব নিষ্ঠুর হয়ে উঠেছেন দেখছি।

    অজিত একটু হাসল—

    হেসে চিঠিটা পকেটের ভিতর রেখে দিল—

    চায়ের কাপটা তুলতে গিয়ে অজিত দেখল একটা মাছি মরে পড়ে রয়েছে—

    পূর্ণিমার সামনে চুরুট সে আর জ্বালাল না—

    পূর্ণিমা বললে—আপনাদের পরিবারে আর কেউ বিগড়ায় নি?

    —না

    —খুব বড় পরিবার?

    —হ্যাঁ, আমার ঠাকুদ্দার চৌদ্দটি ছেলেপিলে! -তাই নাকি!

    —আমার জেঠামশায়েরও আঠারো কুড়ি জন।

    পূর্ণিমা খানিকক্ষণ চুপ থেকে বললে—এরা সকলেই মানুষ হচ্ছে? -হ্যাঁ

    —কেউই চুরুট খায় না?

    —না

    —গানের মজলিসেও যায় না?

    —না

    —কি করে?

    —পড়াশুনো করে।

    —তার পর।

    —বিয়ে করবে, সন্তানের পিতামাতা হবে

    —এমন আঠারো কুড়ি জন করে সন্তান?

    —দেশেরই তো উপকার তাতে—নিজেদেরও ঢের সাধ—

    বলেই পূর্ণিমা লজ্জিত হ’ল—

    অজিত হয়তো শোনে নি-সে বললে—তাদের মানুষ করবে-সন্তান-সন্ততি কেউ কোনো দিন যাতে কুপথে না যায়-চুরুট না খায়, গানের মজলিসে না যায়, এস্রাজ নিয়ে না পড়ে থাকে-পড়াশুনো করে উকীল মোক্তার হেডমাস্টার হয় মানুষ হয়—এইই তারা দেখবে-এরা আছে বলেই দেশ টিকে আছে-স্টেটের কাছ থেকে এরা বৃত্তি দাবী করতে পারে—

    —কেন?

    —এদের কুলবধূরা তো খুবই পারে।

    —কি রকম?

    —সমস্ত জীবন ভরে এক একটি বধূ সতেরো কুড়ি জন সন্তানকে পেটে ধরবার অসহ্য কষ্ট ও সহিষ্ণুতা কেন মিছেমিছি বহন করবে? এর জন্য কি তারা পুরষ্কার পাবে না? হাজার হাজার বাঙালি রোজ মরে যাচ্ছে সেখানে আঠারো কুড়ি জন করে জ্যান্ত বাঙালি প্রতিটি মেয়ের কাছ থেকে চালানি মালের মত জুটে যাচ্ছে-এই অক্লান্ত ক্লেশ ও ধৈর্য একটা জাতকে রক্ষা করবার মত, এই নিরবচ্ছিন্ন প্রয়াসের কি কোনো মূল্য নেই?

    পূর্ণিমা খানিকক্ষণ চুপ থেকে বললে—খুবই মূল্য আছে অজিতবাবু-কিন্তু আমার এই মনে হয় যে এরা গানও যদি ভালোবাসত—

    —উপাসনা ভজনের গান ভালোবাসে বৈ কি—

    —সঙ্কীর্তন ভজনের গানই শুধু নয়-অন্য রকম গানও দিন রাত যে লোকটা বীণা নিয়ে সাধছে তার একটা মূল্য দিতে পারত যদি নিজেদের প্রথামত জীবনের বাইরে অন্য অন্য জীবন।

    —তাহ’লে কি হত?

    —আপনার মা কি এই টাকা ফেরাতে পারতেন?

    অজিত আবার চায়ের পেয়ালাটা মুখে দিতে গিয়ে দেখল একটা মাছি মরে পড়ে রয়েছে— বললে—মূৰ্ণিমা—

    —কি?

    —এই চায়ের পেয়ালাটা দেখ তো—

    —বসুন আমি চা করে আনছি—

    কয়েক দিন কেটে গিয়েছে—

    অভিনয় বেশ জমছে—

    সেই পুরোনো বইটাই-ভালো লাগছিল না অজিতের-কিন্তু আশ্চর্য লোকে তার অ্যাক্টিঙের নিন্দে করে না তবু-অত্যন্ত আগ্রহের সঙ্গে শোনে ভালোবাসে-কে জানে আরো কত কি করে—

    পূর্ণিমাকে খুব সফল মনে হয়; এ দু’জনের অভিনয়ের সফলতা তো বটেই, আরো কত কি সার্থকতা নিয়ে মানুষের চাঁট বসায়।

    অজিত ভাবছিল বইটাকে নিয়ে পূর্ণিমার তো বিশেষ ধোঁকা নেই—কিন্তু অজিত নিজে এ লেখাটির অন্তঃসারশূন্যতা পদে পদে বুঝতে পেরেও কোন হৃদয় নিয়েই বা একটা অনভিজ্ঞ নির্বোধ লেখকের অসাড় চরিত্রের ভূমিকা নিয়ে স্টেজে গিয়ে দাঁড়ায়-কি কথাই বা বলে? কিন্তু শেষ পর্যন্ত সমস্ত নির্বোধ কথাগুলোই বলে তো সে-বলে প্রশংসাও পায়।

    এমন কেন হয়?

    অজিত বিছানায় এ পাশ ও পাশ ফিরতে ফিরতে ভাবছিল স্টেজে দাঁড়ালেই লেখকের মূর্খতার কথা আর মনে থাকে না তার অভিনয়কে সে এমনই ভালোবাসে যে তারই গুণে সমস্তই যেন প্রাণ পায়—

    পূর্ণিমারও তাই।

    কাল কি একটা পর্ব ছিল সারা রাত অভিনয় করে কাটাতে হয়েছে-পূর্ণিমার তার দু’জনেরই।

    অজিতের ঘুম পাচ্ছিল—

    সে ঘুমিয়ে পড়ত, কিন্তু চটকা ভেঙে গেল-স্নান টান করে শোভা সজ্জা রূপের হিল্লোল ভুলে পূর্ণিমা এসে ঢুকেছে—

    —সারা রাত তো জাগলে কাল—

    আপনিও তো জেগেছেন—

    —আমি তো ঘুমুচ্ছিলাম-কিন্তু তোমার কি কোনো ক্লান্তি নেই?

    -আমার ঘুম পায় নি অজিতবাবু।

    অজিত ভালো করে একবার পূর্ণিমার মুখের দিকে তাকিয়ে বললে—তোমাকে দেখে মনে হয়, কাল সারা রাত ফ্রক-পরে খুকির মত ঘুমিয়েছ-। মনে কোনো পাপ নেই তোমার, মুখে কোনো কালি নেই। অথচ সারা রাত জেগে পার্ট খিস্তি। এ সব তুমি কি করে ঘটাও পূর্ণিমা?

    -আরসীতে একটু আগেও আমার মুখ দেখে এসেছি আমি-দেখে আর ফিরে তাকাতেও ইচ্ছে করে না—

    আপনি বড্ড সৌখীন কি না—

    —সে যাক্, ফিরে যে তাকাতে ইচ্ছে করে না তা আমিই জানি, আর আমার উনিই জানেন, ও রকম একটা রাতের পরিশ্রান্তির পর এই রকমই হয়।—কিন্তু তোমার এ দিব্যি চেহারা কি করে হইল?

    অজিত বললে—শুনলাম তুমি না কি মদও ছেড়ে দিয়েছ।

    —দিয়েছি অজিতবাবু।

    —সেই দিন থেকেই

    —হ্যাঁ

    —বাঃ!

    —কিন্তু কত দিন ছেড়ে থাকতে পারব বলতে পারি না—

    অজিত সে কথার কোনো উত্তর দিল না।

    পূর্ণিমা বললে—আপনি ঘুমোবেন?

    —না

    —আমি এসে আপনার ঘুম নষ্ট করে দিলুম—

    –তুমি এসে?

    পূর্ণিমা ঠোঁট ফাঁক করে হাসছিল—

    একটা সাদা বেনারসী শাড়ী পরেছে সে—

    ভোরের আলো জানালার ভিতর দিয়ে এসে পূর্ণিমার মুখ ঘিরে একটা দিব্য রৌদ্রচক্র সৃষ্টি করেছিল; সেই আভার ভিতর পূর্ণিমাকে আকাশযানী দিব্যযোনির মতন মনে হচ্ছিল।

    অজিত মেয়েটির আপাদমস্তকের দিকে তাকিয়ে অত্যন্ত ভরসা পেয়ে বললে—কলেজে পড়তে যখন থিয়েটার দেখতাম তখন একটা জিনিস আমাকে বড় আঘাত দিত—

    পূর্ণিমা ঘাড় হেঁট করে আঁচ করছিল।

    অজিত বললে—দেখতাম অ্যাকট্রেসদের সব হোঁৎকা চেহারা-কালো ঠোঁট চোখ বসে গিয়েছে—

    পূর্ণিমা শিহরিত হয়ে উঠল—

    অজিত বললে—এমন ঘেন্না করত।

    —চেহারার জন্য?

    —অত্যন্ত কদর্য চেহারা তা তুমি ধারণা করতে পার না।

    পূর্ণিমা বললে—পারি না? তা বলবেন না। কালো কুরূপ হলে হয় কি-এক জন যদি ভালো গাইতে পারে কিম্বা পার্ট প্লে করতে পারে—

    অজিত বাধা দিয়ে বললে—তা সে নিজের ঘরে বসে করুক।

    পূর্ণিমা ব্যথিত হয়ে বললে—কেন?

    অজিত বললে—শুধু ভালো অভিনয় বা গান করতেই পারলে হয় না-সে গ্রামোফোনে চলে রেডিওতে বেশ নিজের স্বামী বা স্ত্রী বা প্রেমিকের কাছেও তার মূল্য আছে। কিন্তু থিয়েটারে দেহের মর্যাদা কত যে মূল্যবান তা সেই-গ্রীকরা জানত, আমাদের যাদের বস্তুচেতনা আছে তারা বোঝে।

    পূর্ণিমা কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললে—চেহারার অপরাধ তো মানুষের নিজের নয় অজিত বললে—তা নয়।

    —তবে?

    —যে তাকে আমদানি করে তার অপরাধ—

    পূর্ণিমা একটু হেসে বললে—কোথায় আমদানি করে?

    —থিয়েটারে।

    —তার অপরাধ?

    —হ্যাঁ

    —কেন?

    —থিয়েটারের সর্বাঙ্গীণ সৌন্দর্যের দিকে তার চোখ নেই-ভাবে গাফিলতি করলেও চলে। কিন্তু এতে তাদের বড্ড খারাপ লাগে যারা দেখতে আসে, তারা বড্ড পীড়া বোধ করে। কলেজে পড়বার সময় আমার কিশোর মনও এমনি ঢের বিক্ষুব্ধ হয়ে অনেক দিন ফিরে গেছে। শৈবলিনীর পার্ট নিয়ে যে এল সে যদি এক জন হোঁৎকা বুড়ী হয়-ঠোঁটে তার তখনও তামাকের গন্ধ লেগে-মস্ত বড় ভুঁড়ো পেট-হাতের মাংস মুখের মাংস ঝুলছে কেমন লাগে তা হ’লে বল তো—

    পূর্ণিমা বললে—এ রকম হয় না-এ রকম হয় নি কোনো দিন।

    একটু থেমে পূর্ণিমা বললে—আমার নিজের চেহারাও কি রকম কে জানে?

    অজিত বালিশের থেকে ধীরে ধীরে মাথা তুলে বললে—তোমার চেহারা এ যুগের একটা সৌভাগ্যের জিনিস।

    —এ যুগের?

    —হ্যাঁ

    —যুদ তো একটা বড় কথা।

    —তোমার চেহারাও ছোট নজরের জিনিস নয় তো-বিধাতা খুব মহৎ হয়ে তৈরি করেছিলেন—

    অজিত বললে—আজকাল যারা কলেজে পড়ে-যাদের কিশোর বয়স-তোমার অভিনয় ও শরীরের রূপকুশলতা দেখে কাটল তারা রোজ রাতেই যে সার্থকতা নিয়ে ঘরে ফিরে যায় তাকে আমি ঈর্ষা করি-আমার কৈশোর যৌবনের সময় শত চেষ্টা করেও এ সার্থকতা আমি একটা থিয়েটার দেখেও পাই নি। কি যে নিষ্ফল নিরুপায় দিন গিয়েছে সে সময়ে!

    —উপায়হীন হয়ে পড়েছিলেন?

    —থিয়েটারকে আমি ছোটবেলা থেকেই ভালোবেসেছি-বরাবরই এর অভাব অভিযোগগুলো নিয়ে মম হৃদয়হীন মন্তব্যে ভরে উঠেছে-আজো কত অভাব রয়েছে-কিন্তু শৈবলিনীর পার্ট যদি শৈবলিনীর মত মেয়ে এসেই করে কিম্বা পার্ট মত যুবা তাহলেও একটা মস্ত অভিযোগ কেটে যায়—

    অজিত বললে—যুবাদের পাওয়া যায়-কিন্তু তোমার মত এক অধ জন মেয়েমানুষ যখন স্টেজের থেকে বিদায় নেবে তখন রমা বা ষোড়শীর ভূমিকার জন্য একজন ধুমসো ঝি ছাড়া কিছুই যদি আমরা খুঁজে না পাই?

    পূর্ণিমা শুনে একটু হাসল।

    পরে বললে—না, সে জন্য ভাববেন না অজিতবাবু, সে ব্যর্থতার দিন চলে গেছে—তুমি এসে দূর করে দিয়েছ বটে—কিন্তু তুমি যে দিন চলে যাবে—

    —আমি চলে যাব কেন?

    —তুমিই বা কত দিন থাকবে?

    —আমাকে তাড়াতে চান?

    অজিত হেসে বললে—না আমি স্টেজের অনেক দূর ভবিষ্যতের কথা বলছি-যখন আমিও মরে যাব আমাদের দু’জনের কেউই নেই—

    —তা নিয়ে আক্ষেপ করে কি লাভ? সে আপনার প্রতিনিধিরা বুঝবে। আপনি যা পেয়েছেন তাই নিয়েই তৃপ্ত থাকুন—

    অজিত শুরু করল-বিলেতে—

    —বিলেতে আমার চেয়ে ঢের ভালো ঢের অভিনেত্রী মেলে-তা আমি জানি। কে জানে বাংলাদেশেও এক দিন মিলবে কি না—

    —কিন্তু তার তো কোনো লক্ষণ দেখছি না —

    —কিছুটা পথ আমরা হয়তো কেটে দিয়ে যাচ্ছি—তারপর?

    —তারপর-একজন মানুষই দু’চার বছরের মধ্যে কত মুখোস বদলে ফেলতে পারে-একটা স্টেজ বা দেশের পরিবর্তনের কি আর সীমা আছে অজিতবাবু? আজ আপনার মা টকা নিলেন না-এক দিন হয়তো এ দেশেরই কত বড় ঘরের কত মা তাঁদের মেয়েদের গিয়ে সাধবেন-অভিনেত্রী হবার জন্য। যে জিনিস বস্তুনিষ্ঠ সৌন্দর্যের এবং হয়তো বা সত্যের এক দিন তা তার মূল্য পাবেই।

    পূর্ণিমার কথা শুনতে শুনতে অজিত এর ভেতর প্রতিবাদ করবার কিছু খুঁজে পেল না-এই মেয়েটি যেন নিকষপাথরে রেখা কেটে কথা বলছে।

    নিজে অজিত জিনিসটাকে কোনো দিন এমন করে বুঝে দেখে নি কি?

    দু’এক মুহূর্তের ভেতরেই অজিত অকাতরে ঘুমুতে লাগল।

    পূর্ণিমা ধীরে ধীরে উঠে চলে গেল।

    আরো কয়েক দিন কেটে গিয়েছে।

    অনেক লোক আজকাল অজিতের সঙ্গে দেখা করতে আসে-কেউ বা বইএর পাণ্ডুলিপি নিয়ে, কেউ বা পাশের জন্য, কেউ মন্তব্য করতে, কেউ বা প্রশংসার ভাষা খুঁজে পায় না-কেউ বা চাঁট বসাতে চায় শুধু, কেউ টাকা ধার করে নিয়ে যায়-কেউ মদ মজলিসের জন্য কামনা করে আসে-কেউ বা দু’কথা শুনিয়েও যায়-মেয়েরাও মাঝে মাঝে আসে—

    এক দিন অজিত ভোররাতে ঘুমোতে এসে রাজেনকে ডেকে বললে—দেখ রাজেন-আজ কাউকেই আসতে দিবি না—

    —বহুৎ আচ্ছা হুজুর!

    —বলবি বাবুর শরীর ভালো নেই, বাবু ঘুমুচ্ছে —

    —হুজুর

    —বেলা আটটার সময় গোলমালে অজিতের ঘুম ভেঙে গেল-জানালা দিয়ে তাকিয়ে দেখল রাজেন দাঁড়িয়ে আছে।

    অজিত বললে—ভিতরে আয়।

    রাজেন এসে বললে—অনেক ভিড় জমে গেছে বাবু—

    –কিসের ভিড়?

    —লোকজন আপনার সঙ্গে দেখা করতে চায় —

    অজিত পাশ ফিরে শুয়ে বললে—বলা গিয়ে দেখা হবে না।

    রাজেন বললে—আমি কোলাপসিবল গেটে তালা বন্ধ করে এসেছি বাবু।

    অজিত বিছানায় এ পাশ ও পাশ একটু অস্বস্তির সঙ্গে নড়ে চড়ে উঠে বসল।

    রাজেন দোতলার দরজার কাছে দাঁড়িয়ে ছিল।

    অজিত বললে—শোন —

    রাজেন এসে বললে—বলুন—

    —ক’জন লোক এসেছে?

    —অনেক।

    —কি চায়?

    —যেমনি রোজ আসে-দেখা করতে চায় আর কি—

    অজিত বললে—আচ্ছা বৈঠকখানায় নিয়ে বসাও-স্লিপ কার্ড যা হয় পাঠিয়ে দু’এক জন করে আসুক—

    মিনিট পাঁচেক করে রাজেন এক রাশ স্লিপ এনে অজিতের টেবিলের ওপর রাখল।

    অজিত বললে—মিশিয়ে ফেলেছিস দেখি সব-আচ্ছা যা।

    একটা যে-কে-সে স্লিপ তুলে নিয়ে অজিত রাজেনকে বললে—নিয়ে যাও এটা—আসতে বল—

    মিনিট খানেক পরে এক জন ছোকরা এসে হাজির।

    অজিত বললে—বোস।

    অত্যন্ত সঙ্কোচের সঙ্গে একটা কৌচের ওপর সে বসল।

    —কি চাও তুমি?

    —কিছু চাই না।

    —তবে? —

    —আপনাকে দেখতে এসেছি।

    —আমাকে দেখতে?

    —হ্যাঁ

    –স্টেজে কি দেখ না?

    —দেখি

    —তবে?

    —একজন বড় লোক তাঁর প্রাইভেট লাইফে কেন?

    —সেই তো আমার বাইরের জীবন-আমি তো প্যান্ডাল গিয়ে পোলিটিক্যাল লেকচার দেই না—

    ছেলেটি বললে—স্টেজে আপনাকে তকমাপরা দেখি-আপনি পরের কথা আওড়ান-কিন্তু এখানে আপনার নিজের মুখের কথা শুনব —

    —কতক্ষণ শুনবে?

    —যতক্ষণ আপনি সময় দিতে পারেন—আচ্ছা মানুষের জীবনটা কি?

    অজিত একটু হেসে বললে—তুমি কি বোঝ?

    —আমার বোঝার কোনো মূল্য আছে?

    —তুমি নিজে কি মনে কর?

    —কোনো মূল্য নেই—

    —কেন?

    —আমার কোনো ক্ষমা নেই—

    —তুমি কলেজে পড়

    —হ্যাঁ

    —কোন ক্লাসে?

    —এবার বি-এ পাস করেছি—

    —তার পর?

    —বাবা অ্যাটর্নি তিনি আর্টিকেলড্ হতে বলেন—

    —আর তুমি? তুমি কি বল?

    আমি দেখি টাকার অভাব আমাদের নেই-আমাদের তিন পুরুষ অ্যাটর্নিগিরি করে খেয়ে ছেলেপিলে রেখে মরে গেছেন—কিন্তু মরে যাবার পর কেউ তাদের নামও করে না—কেউ তাদের কথা বড় একটা বলে না ভাবে না-ওদিকে যত দিন বেঁচে থাকেন কি কঠোর পরিশ্রমই না এরা করেন। আমার মনে হয় এদের পথে যদি যাই অবস্থা আমারও তো এদের মতনই হবে-এত খাটাখুটি—এত ঝকমারি-এত নেশা হয়তো টাকার, হয়তো নিছক এটর্নিপনার-যার জন্য জীবনের অন্য সমস্ত সাধ ও সম্পদ বিসর্জন দিতে হয়-শেষ পর্যন্ত এর কোনো মূল্য থাকে না কেন?

    —থাকে বৈ কি?

    —কি মূল্য?

    —তা তাঁরা বুঝেছেন —

    —আপনি যদি দয়া করে একটু বলে দেন—

    —আমি?

    —একটু দয়া করে যদি—

    অজিত বললে—তুমি তো নিজেও বুঝেছ-বলেও ফেলেছ-বলেছ এত নেশা-হয়তো টাকার-হয়তো নিছক এটর্নিপনার এই নেশার তৃপ্তিই তাঁদের প্রত্যেক জীবনকে তাঁদের প্রত্যেকের কাছে একটা মূল্য দিয়েছে—

    —কিন্তু সে মূল্যকে আমি রাবিশ মনে করি।

    —রাবিশ?

    —একেবারে রাবিশ —

    —কেন?

    —লাখ লাখ টাকা তো একটা মুদীও রোজগার করতে পারে-এটর্নিপনায়ও, তা মানুষের অন্তরের কোন কামনা বা সাধনা বা সত্য তৃপ্ত হয়—

    —তোমার হয় না?

    —একেবারেই না অজিতবাবু-এ সব জিনিসকে আমি ঘৃণা করি—

    —কি ভালোবাস তা হ’ল—

    —সেইটেই আজো বুঝছি না—

    —ফুটবল?

    ছেলেটির মুখ অভিমানে ও ব্যথায় রক্তিম হয়ে উঠল—

    অজিত বললে—পড়াশুনো?

    —কলেজের ডিগ্রির জন্য পড়াশুনো নয়-এমনি বইটই নিয়ে অনেক সময় মন্দ কেটে যায় না-কিন্তু সব চেয়ে আশ্রয়ের জিনিস বইও নয়—

    —নারীপ্রেম?

    —হয়তো না-কিম্বা কোনো নারীকে ভালোবাসলেও শেষ পর্যন্ত তার ভিতর কোনো চরিতার্থতা নেই—

    —তাই বল?

    —একে একে অনেক মেয়েকেই তো ভালোবেসে দেখলাম।

    —তারপর?

    —তবে এই নিষ্ফলা বা টাকার চেয়ে সে. ঢের ভাল—

    —তবে এই কর না কেন? টাকার অভাব তো আমার নেই-এক পুরুষ এটর্নি না হলে কিছু এসে যাবে না-তোমার ছেলেকে না হয় এটর্নি করবে আবার—

    ছেলেটি বললে—দেখুন নারীর সঙ্গে প্রেম নিয়ে জীবনটা কাটানো মন্দের ভাল। এর ভেতর ঢের মাধুর্য রয়েছে-তবুও বিচ্ছেদ ব্যথা ঈর্ষা একঘেয়েমিরও কি শেষ আছে? তারপর একটা ভালোবাসা যখন শেষ হয়ে যায় তখন মনে হয় কি কাদামাটি নিয়েই না ছিলাম—

    এ ছাড়া অন্য কোনো কিছুই কি নেই যা নিয়ে বাবা ঠাকুদ্দার মত তৃপ্তও থাকতে পারি বটে—কিন্তু জীবনের একটা মূল্যবান কাজও করা হয়—

    —এটর্নিগিরিকে একটু মূল্যবান মনে হয় না?

    —একটুও না—

    —এত বড় জিনিসই যখন তোমার কাছে অসার হয়ে উঠল তখন আমি ছোট ছোট জিনিসের কথা বলতে পারি শুধু—

    —যে কোনো এটর্নি বা রাউন্ডটেবল কনফারেন্স ম্যানের চেয়ে ঢের বড় মনে করি আপনাকে আমি। একজন ভাইসরায়ের কি দাম অজিতবাবু? একজন ক্যাবিনেট মিনিস্টারেরই বা কি মূল্য? কিন্তু যে কবি—

    অজিত থামিয়ে দিয়ে বললে—তোমার এই ভালোবাসাগুলো নিয়ে একটা উপন্যাস লেখ না—লিখতে আমি পারি না—

    —চেষ্টা কর না—

    —লেখা আমার আসে না।

    —তবু কি করতে চাও তুমি-অ্যাক্ট?

    —তাও আমি পারি না—

    —তবে

    —সেই জন্যই তো বলছি আপনাকে-আমার জীবন বড্ড নিষ্ফল—

    —কিন্তু মেয়েরা তো তোমাকে ভালোবাসে?

    —তা বাসে

    —তবে প্রেম কর না গিয়ে-বাঃ-আমিও তো স্টেজে বাঁধা না পড়লে তাই করতাম—

    –বাবা ঠাকুদ্দার কাজের চেয়ে সে ঢের ভালো জিনিস হয় —

    অজিত হাসতে হাসতে বললে—তবে আর কি?

    —কিন্তু জীবনের কৈফিয়ৎ দেওয়া হয় কি?

    —কার কাছে কৈফিয়ৎ

    —ধরুন নিজের কাছেই-মনে হয় জীবনটাকে নিয়ে এ খেলা করছি শুধু—। এর আরো তো ঢের ব্যবহার ছিল। ভালো আমি আরো ঢের বেসেছি যে রোজ হাঁপিয়ে উঠি। ঠিক যাকে ভালোবাসতে চাই তাকেও কিছুতেই তো পাওয়া যায় না।

    ছেলেটি বললে—এবার কাকে ঠিক ভালোবেসেছি জানেন?

    —কাকে?

    —মিস পূর্ণিমাকে

    অজিত একটা ধাক্কা সামলে বললে—ওঃ

    —এখন কি করি বলুন তো?

    অজিত কোনো উত্তর দিল না।

    ছেলেটি বললে—তাকে কি করে পাওয়া যায়?

    —পেতে চাও? দূরের থেকে ভালোরেসে ভালো লাগে না?

    —না

    —কেন?

    —একটা ভালোবাসা হয় বটে-কিন্তু তাতে কোনো চরিতার্থতা নেই-অজিত-বাবু—

    –অজিত বললে—জীবনটাকে মূল্যবান করতে চেয়েছিলে?

    —হ্যাঁ

    —আমি বললাম, লেখ, কিম্বা স্টেজ-অ্যাক্টিং যদি পার-তাও কর-কিন্তু কিছুই যখন পার না তুমি তখন এই জিনিসটা কর-পূর্ণিমাকে ভালোবেসে অন্য কোনো রকম রস চরিতার্থতার কথা ভাবতে যেও না। সে একজন অভিনেত্রী-স্টেজে দাঁড়িয়ে মানুষের জীবনের অনেক নিহিত সৌন্দর্য ও সম্পদকে অনুভব করতে সে তোমাদের সাহায্য করে। তোমরা যদি অনুভব করতে পার তাহলে সে কৃতার্থ হয়। তেমন ভাবে অনুভব করতে পেরেছ—এবং সে অনুভবের মাধুর্য নিয়ে অনেক দুঃখ ও নিষ্ফলতার রাত একা একা মুগ্ধতায় কেটে যাবে তোমার এমন যদি বোধ কর তাহ’লে তোমার সমস্ত জীবনের এই সাধনাটুকুই পৃথিবীর কোনো অমূল্য জিনিসের চেয়েই কম মূল্যবান হবে না।

    তোমার জীবন মূল্যবান হবে—

    ছেলেটি মাথা পেতে সব শুনল—

    তারপর চলে গেল—

    অজিত বললে—রাজেন, বেলা তো ঢের বেড়ে গেল—তুমি ওদের একে একে সকলকে আসতে বল।

    ⤶
    1 2 3 4
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleজিম করবেট অমনিবাস (অখণ্ড) – মহাশ্বেতা দেবী সম্পাদিত
    Next Article কল্যাণী – জীবনানন্দ দাশ

    Related Articles

    জীবনানন্দ দাশ

    ঝরা পালক – জীবনানন্দ দাশ

    August 14, 2025
    জীবনানন্দ দাশ

    ধূসর পাণ্ডুলিপি – জীবনানন্দ দাশ

    August 14, 2025
    জীবনানন্দ দাশ

    বনলতা সেন – জীবনানন্দ দাশ

    August 14, 2025
    জীবনানন্দ দাশ

    মহাপৃথিবী – জীবনানন্দ দাশ

    August 14, 2025
    জীবনানন্দ দাশ

    সাতটি তারার তিমির – জীবনানন্দ দাশ

    August 14, 2025
    জীবনানন্দ দাশ

    শ্রেষ্ঠ কবিতা – জীবনানন্দ দাশ

    August 13, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Generic selectors
    Exact matches only
    Search in title
    Search in content
    Post Type Selectors
    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Our Picks

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }