Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    রাজমালা বা ত্রিপুরার ইতিহাস – শ্রী কৈলাসচন্দ্ৰ সিংহ প্রণীত

    August 20, 2025

    আলো হাতে সেই মেয়েটি – তপন বন্দ্যোপাধ্যায়

    August 20, 2025

    গোয়েন্দা গার্গী সমগ্র – তপন বন্দ্যোপাধ্যায়

    August 20, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • 🔖
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    Subscribe
    সাইন ইন
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    জুল ভের্ন অমনিবাস ৫ (পঞ্চম খণ্ড) – অনুবাদ : মানবেন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়

    জুল ভার্ন এক পাতা গল্প982 Mins Read0

    ২.১২ হ্যারি কিলার

    ১২. হ্যারি কিলার

    ‘হ্যারি কিলার!’ আর্তস্বরে চেঁচিয়ে উঠলো জেন।

    ‘হ্যারি কিলার?’ কী-রকম অদ্ভুত সন্দেহের সুরে বললে লুইস রবার্ট, তার ছোটোবোনটির দিকে সে ভারি অদ্ভুতভাবে তাকিয়েছিলো।

    ‘সশরীরে,’ গাঁক-গাঁক ক’রে বললে হ্যারি কিলার।

    এক-পা এগিয়ে এলো সে সামনে। খোলা দরজাটার চৌকাঠের সামনে এসে সে থমকে দাঁড়ালে, তার ব্যায়ামপুষ্ট শরীরটা পুরো দরজাটাকেই ঢেকে দিয়েছে। রাত্তিরের বেশামাল হুল্লোড়ে এখনও সে টালমাটাল একটু, কবাটের গায়ে সে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে রইলো।

    ‘তো এটাই খুকিকে এখানে টেনে এনেছে?’ জড়ানোস্বরে ক্রুদ্ধভাবে সে বললে। ‘বেশ, বেশ, মাদমোয়াজেল তবে ভাবী স্বামীর অগোচরেই অন্য লোকের সঙ্গে ভাব পাতিয়েছেন!’

    ভাবী স্বামী!’ রবার্ট লুইস আগের চাইতেও অনেক-বেশি হতভম্ব।

    ‘কী ভেবেছিলে? অত সহজে আমার চোখে ধোঁকা দেয়া যায়?’ হ্যারি কিলার ঘরের মধ্যে ঢুকে প’ড়ে তার বিশাল রোমশ হাতটা জেনের দিকে বাড়িয়ে দিলে।

    কিন্তু এতক্ষণে জেন তার পোশাকের মধ্য থেকে খঞ্জরটা বের ক’রে এনেছে। সেটা তলে ধ’রে সে বললে, ‘ব্বাস! দূরে থাকো!’

    ‘বেশ!… বেশ!…’ হ্যারি কিলার ব্যঙ্গে ফেটে পড়লো। ‘ভ্রমরীর তবে হুলও আছে!’

    কিন্তু মুখে যতই টিটকিরি দিক, তার মাথায় তখনও এতটা বুদ্ধি ছিলো যে সে আর না-এগিয়ে থমকে দাঁড়ালে। নিশ্চল দাঁড়িয়ে রইলো সে ঘরের মধ্যে, অপলক চোখে সে খঞ্জরটার দিকে তাকিয়ে আছে।

    তার দ্বিধার সুযোগ নিয়ে, জেন তার দাদাকে সঙ্গে নিয়ে দরজার দিকে এগিয়ে গেছে ততক্ষণে, আর যে-শত্রুকে সে এত ভয় পায় তার পিছোবার পথ আটকে দিয়েছে। কাঁপাগলায় সে বললে, ‘হ্যাঁ, আমার কাছে এক অস্ত্র আছে! আর এ কী যা-তা অস্ত্র, একে আমি একটা কবরে পেয়েছি… কুবোয়!’

    ‘কুবোয়?’ লুইস রবার্ট আরো হতভম্ব। ‘ওখানেই তো জর্জ…’

    ‘হ্যাঁ,’ জেন এবার দাঁতে দাঁত চেপে বললে, ‘ঐ কুবোতেই জর্জ খুন হয়েছিলো –না, কারু গুলিতে নয়, এই অস্ত্রটায়-আর এর গায়ে নাম লেখা আছে একটা— খুনীর নাম, কিলার!’

    কুবোর সেই শোচনীয় ঘটনাটার কথা বলবামাত্র হ্যারি কিলার এক-পা পেছিয়ে গেছে। বিবর্ণ, ভূতে-পাওয়া, সেই হাজতঘরের দেয়ালে হেলান দিয়ে বিস্ফারিত চোখে জেনের দিকে তাকিয়ে আছে, তার চোখে আতঙ্ক।

    ‘কিলার, বললি তুই, না?’ লুইস রবার্ট ব’লে উঠলো। ‘কিন্তু তুই ভুল করেছিস জেন। এ-লোকটার নাম কিলার নয়। তার আরো-একটা নাম আছে, কিলার নামটার চেয়েও অধম-একটা নাম, আর সে-নামটা তোর অচেনাও নয়!’

    ‘আরেকটা নাম?’

    হ্যাঁ…যখন সে আমাদের কাছ থেকে চ’লে যায় তখন তুই এইটুকুনি ছিলি, ছোটো তাই তাকে তুই চিনতে পারিসনি। কিন্তু অনেকবারই আমাদের মুখে তুই তার নাম শুনেছিস। তোর মা যখন তোর বাবাকে বিয়ে করেছিলেন, তখন তাঁর এক ছেলে ছিলো। সেই ছেলেকেই এখন তুই চোখের সামনে দেখছিস—তোর সৎভাই—উইলিয়াম ফেরনে!’

    এই উদ্ঘাটন দুজনের ওপর ঠিক দু-রকম প্রভাব ফেললো।

    জেন, প্রায় অর্ধমূর্ছিত, তার অবশ হাত প’ড়ে যেতে দিলে, যেন শক্তিহীন। আর উইলিয়াম ফেরনে-এবার তার আসল নামেই তাকে ডাকা উচিত—বুঝি আবার তার তেরিয়া-আত্মবিশ্বাস ফিরে পেলে। আর সেইসঙ্গে তার নেশাও তখন ছুটে গিয়েছে। সোজা হ’য়ে দাঁড়ালে সে, সটান, আর জেন আর লুইস রবার্টের একেবারে মুখোমুখি দাঁড়ালে—আর তার চোখে ক্রূর, নিষ্ঠুর, একটা ঘৃণার ভাব ফুটে উঠলো।

    ‘ও-হো, তাহ’লে তুমিই সেই জেন ব্লেজন,’ কী-রকম এক ভয়ালসুরে সে বললে। তারপর দাঁতকড়মড় ক’রে আবার বললে, ‘তুমিই তবে সেই জন ব্লেজন!’ তারপর হঠাৎ, আচমকা, তার মধ্যে যত অশুভ তাড়না লুকিয়েছিলো, সব যেন একসঙ্গে জেগে উঠলো। সে বললো, এত-দ্রুত বললো কথাগুলোকে যেন সেগুলোকে ঠিকমতো সাজাবারও তার আর তর সইছে না, ছোটো ছোটো কাটা- কাটা উদ্দাম সব কথা, বুকটা হাঁপরের মতো উঠছে আর নামছে, গলার স্বর ভারি, জড়ানো, চোখদুটো জ্বলন্ত :

    ‘বেশ, ভালোই হ’লো।…হ্যাঁ, হ্যাঁ, দারুণ আহ্লাদ হচ্ছে আমার!… তাহ’লে তুমি শেষ-অব্দি কুবো গিয়েছিলে… হ্যাঁ, হ্যাঁ, মানি, আমিই ওকে খুন করেছিলাম…. তোমার দাদা জর্জ… সেই চমৎকার যুবক জর্জ… যার জন্যে গোটা ব্লেজনবংশই যেন ধন্য হ’য়ে গিয়েছিলে-এত-ভালো–আর এত তার জন্যে গর্ব!… আমি এমনকী দু-দু-বার তাকে খুন করেছি…প্রথমে খুন করেছি তার আত্মটাকে… তারপর তার শরীরটা!… আর এখন আমি তোমাদের দুজনকে আমার কবলে পেয়েছি… দুজনকে একসঙ্গে… আমার খপ্পরে পেয়েছি, আমার পায়ের তলায়!… তোমরা আমারই সম্পত্তি… তোমাদের নিয়ে যা-খুশি তা-ই করতে পারি আমি…’ তার গলা থেকে এমনভাবে ছটফট ক’রে হুড়মুড় ক’রে কথাগুলো বেরুচ্ছে যে ভালো ক’রে বোঝাই দায়! গলা জড়ানো, উল্লাসে নেশাতুর, বিজয়গর্বে দাম্ভিক, বেপরোয়া। যখন কি না ভেবেছি একটাকেই শুধু বাগে পেয়েছি… তখন অন্যজন কি না স্বেচ্ছায় এসে আমার কাছে ধরা দিয়েছে… এ-তো দারুণ মজা, হো-হো মজা, বীভৎস মজা!..’

    এক-পা এগিয়ে এলো সে সামনে। জেন আর লুইস রবার্ট তখন পরস্পরকে আঁকড়ে ধ’রে আছে, নিশ্চল, কেউই নড়ছে না, যেন পাষাণে তৈরি দুই মূর্তি। তাদের দিকে ঝুঁকে প’ড়ে সে কিন্তু ব’লেই চললো : ‘ভেবেছো, তোমরা অনেক জানো? ঢের জানো! সব জেনে ব’সে আছো যেন! কিন্তু তোমরা কিছুই জানো না…আমি….আমিই তোমাদের এখন সব কথা খুলে বলবো!… আর বলতে কী যে আনন্দ হবে… উল্লাস! হ্যাঁ-হ্যাঁ, সে আমাকে তাড়িয়ে দিয়েছিলো—ঐ লোকটা…যে তোমাদের বাবা! এখন…এখন তার সব আনন্দ সে রাখবে কোথায়?… শুধু একটা কথা ভেবেই আমার আনন্দটা একটু কম হচ্ছে… আমি চাই সে জানুক সব… চিরতরে ম’রে যাবার আগে জেনে যাক…জেনে যাক কার হাত একটার পর একটা অমন অমোঘ আঘাত হেনেছে… এই সেই হাত… দ্যাখো তাকিয়ে… এই আমার হাত… ‘

    সে আরো-এক পা এগিয়ে এলো। যেন ভাইবোনকে সে ছুঁতে পারে এখন ইচ্ছে করলে, আর তারা কুঁকড়ে গিয়েছে এখন, উন্মাদের এই প্রলেপের কাছে যারা এখন আতঙ্কে যেন একটা ঘোরের মধ্যে, একটা বিভ্রমের মধ্যে, হুমড়ি খেয়ে পড়েছে।

    ‘হ্যাঁ-হ্যাঁ, তারা আমায় তাড়িয়ে দিয়েছিলো। কুকুর-বেড়ালের মতো দূর-দূর ক’রে তাড়িয়ে দিয়েছিলো!… কী আমি করতে পারতুম, আমাকে তো শুধু ভিখিরির মতো দু-চারটে পয়সাই ছুঁড়ে দিয়েছিলো… আমি চেয়েছিলাম সোনা, অনেক সোনা, সোনার পাহাড়!… আর আজ আমি সেই সোনা পেয়েছি… সোনা… স্তূপাকার… পাহাড়প্রমাণ…. তোমাদের কোনো করুণা বা সাহায্য ছাড়াই!… সব নিজের চেষ্টায়!… আর সেটা পাবার জন্যে কী-ই-বা-না করেছি আমি!.. তোমাদের মতো ম্যাদামারাবা যাকে বলে দুষ্ক্রিয়া, অপকর্ম, অপরাধ… হা! এমন কোনো অপরাধ নেই যা আমি করিনি …. লুঠপাট করেছি…. খুন করেছি….চুরি, জোচ্চুরি, রাহাজানি, খুনজখম … কিছু বাদ দিইনি! সব দুষ্ক্রিয়া… সব অপরাধ… সব অপকর্ম! হাঃ!

    ‘কিন্তু সোনা, শেষকালে আর যথেষ্ট মনে হ’লো না একদিন… আমাকে সারাজীবন যা তাড়িয়ে ফিরেছে, হন্যে ক’রে ফিরেছে, সে তোমাদের প্রতি ঘৃণা … তোমাদের সবাইকার প্রতি ঘৃণা—গ্লেনরের ঐ দুর্গটার জন্যে ঘৃণা… ঘৃণার স্তূপাকার বারুদ।… আর সেইজন্যেই আমি এসেছি আফ্রিকায়… ফেউয়ের মতো ঘুরেছি জর্জ ব্লেজনের বাহিনীর পেছন-পেছন… আমাকে তার কাছে নিয়ে গেছে ধ’রে, তার চরেরা… আর চমৎকার একটা প্রহসনে অভিনয় করেছি… খেদ… মনস্তাপ… দুঃখ… অনুতাপ… প্রায়শ্চিত্ত… কত-কী ছিলো সেই প্রহসনে… আমি ছিলাম মিথ্যাবাদী, ঠগ, জোচ্চোর, ভণ্ড, প্রবঞ্চক, প্রতারক… কী নই! এটা তো যুদ্ধ ছিলো একটা না কী? আর যুদ্ধে ও প্রেমে সব চলে!… আর সেই গাড়ল, সেই আকাট-বোকা একেবারে গ’লে গেলো… বিগলিত…. দরদ উথলে উঠলো তার..দুই হাত বাড়িয়ে সে আমায় আমন্ত্রণ করলো…একই তাঁবুতে আমরা থেকেছি…একই খাবারটেবিলের শরিক হয়েছি দুজনে… হা! তার ঐ হারামির পুরো সুযোগটাই নিয়েছি আমি… রোজ তার খাবারে আরো-একটু ক’রে গুঁড়ো… কীসের গুঁড়ো?… কী এসে যায় তাতে? আফিম… গাঁজা… কিংবা আরো কী-সব… ঐ সবই তো আমার কাজ ছিলো তখন… যাও, গিয়ে জর্জ ব্লেজনকে খুঁজে বার করো… বাচ্চা ছেলে একটা, যেন অসহায় শিশু… ন্যাকা চৈতন…

    ‘নেতা কে?… আমি… আর তারপর, সে-কী জয়… হ্যাঁ, জয়, জয় চেয়েছিলাম…. আর আমি জয়ী হলাম… কাগজগুলো ফুর্তিতে ফেটে পড়লো… ঢি-ঢি প’ড়ে গেলো…. ছী-ছিক্কার… জর্জ ব্লেজন পাগল হ’য়ে গেছে… জর্জ ব্লেজন লুঠতরাজ চালাচ্ছে…. জর্জ ব্লেজন নরাধম…. জর্জ ব্লেজন দেশদ্রোহী!… শুধু এই কথা কথা… জর্জ ব্লেজন এই… জর্জ ব্লেজন সেই… কে তখন হেসেছিলো, পরে যখন কাগজগুলো পড়েছিলো হাতে… হ্যাঁ, আমি, আমিই এই আফ্রিকার বুকে দাঁড়িয়ে হা-হা ক’রে হেসে উঠেছিলাম… কিন্তু চলুক খেলা, যতদিন-না সব খতম হয়… একদিন ফৌজ এলো তাড়া ক’রে!… জর্জ রেজন মরলো, সে-তো চমৎকার…ধিকৃত, সে-তো আরো- ভালো—আর তাই তার মুখটা চিরতরে বন্ধ ক’রে দেবার জন্যে আমিই তাকে খুন করলাম।…

    ‘আর তারপর এলাম এখানে। এখানে মরুভূমির বুকে নগর বসালাম আমি… খুব কি খারাপ তেমন, যাকে একদিন লাথি মেরে বার ক’রে দেয়া হয়েছিলো, সে-ই কি না নগর বসালে… এখানে, আমিই প্রভু, আমি রাজা, আমি সর্বেসর্বা … আমি হুকুম দিই, তটস্থ হ’য়ে অন্যরা তা তামিল করে!… কিন্তু তবু… তবু শান্তি কোথায়… আমার অতৃপ্তি মেটেনি… তোমাদের বাবার তখনও তো আছে এক ছেলে ‘এক মেয়ে….সে কী ক’রে সইবো? প্রথমে ছেলেটাকে…একদিন আমার টাকার দরকার… আমি তার টাকা ছিনিয়ে নিয়েছি… আর ফাউ পেয়েছি তাকেও… হা- হা, এক ঘা মারতেই অজ্ঞান… ফুলের ঘায়ে মুচ্ছো যান…মুরগির ছানার মতো, সেই ছেলে…সিন্দুকে বন্ধ কে? সেই ছেলে…তারপর চলো, চলো রেলগাড়িতে, জাহাজে, হেলিবিমানে… চলো… আর তারপর এই এখানে… আমার কুক্ষিগত … আমার রাজ্যে!… আর তাকেও আমি খুন করবো, অন্যটার মতো… তবে অত- তাড়াতাড়ি নয়,… ধীরে-ধীরে… আস্তে-আস্তে… দিনের পর দিনে!… আর এদিকে, ইংলন্ডে, ওখানে… ঐ বাবা… আহারে, কী গৌরবের শিরোমনি… আর কত ধনী…. বাপ জানে ছেলে ভেগেছে, সঙ্গে নিয়ে গেছে ব্যাক্সের সব টাকা… চমৎকার ভেবেছি সব, গল্পের মতো, কী এসে যায় যদি ঈশ্বর আমায় জাহান্নামে পাঠায়!

    ‘কিন্তু মেয়েটা… মেয়েটা তো আছে এখনও… আমার বোন… হা হা হা, আমারই বোন! তবে, এবার তার পালা… কী করবো আমি এই মেয়েটাকে নিয়ে?… অনেক ভেবেছি আমি… অবিশ্রাম মাথা খুঁড়েছি… কিন্তু, আবার কী চমৎকার প্রহসন… সে নিজেই কি না এসে হাজির এখানে!… এই আমার সুযোগ!… আগে ভেবেছিলাম তাকে ঐ আমার বৌ করবো।… শুধু তাকে নির্যাতন করার জন্যে… আমার বৌ!… উঁহু, মোটেই তা নয়…. বৌ করবো আমার অধমতম দাসটার… সবচেয়ে-কুৎসিত দেখতে যে-দাস…

    ‘আর তারপর? কী বাকি থাকবে তারপর?… বুড়ো লর্ড মাতব্বর… অত খেতাব, এত জাঁকজমক, অত টাকা… দুই ছেলের একটা দেশদ্রোহী… অন্যটা ব্যাঙ্কডাকাত… আর তার মেয়ে? অদৃশ্য, উধাও, কেউ জানে না কোথায়… আর সে, নিজে?…একা, নিজের সেকেলে ধ্যানধারণার মধ্যে বন্দী… গ্লেনর বংশের চমৎকার-একটা পরিণাম হবে সেটা!’

    খাবি খেতে-খেতে বলা, এই অভিশাপ শেষটায় যেন একটা ক্রুদ্ধ, বন্য, জান্তব গরগর হয়ে গেলো!

    উইলিয়াম ফেনে থামলে, হাঁফাচ্ছে, রাগে তার বুঝি দম আটকে যাচ্ছে! কোটর থেকে ঠিকরে বেরিয়েছে চোখ দুটো! তার অন্ধ থাবা বাড়িয়ে সে ধরতে চাইলে তার শিকারদের, তাদের ঘৃণিত মাংস সে নিজের হাতেই ছিঁড়ে ফেলবে এখন। আর সে মানুষ নেই আর। মানুষ নয়। উন্মত্ততার কবলে-পড়া করাল কোনো খুনে, হিংস্র জন্তু, সবকিছু ছিড়েখুঁড়ে দিলেই যার শান্তি হয়!

    হা ক’রে তার দিকে তাকিয়ে রইলো জেন, আর লুইস রবার্ট। মানুষের বুকে কখনও এত ঘৃণা আঁটে?

    ‘আজকের রাতটার জন্যে,’ একটু দম ফিরে পেয়ে আবার সে বললে, ‘শুধু আজকের রাতটার জন্যে তোমাদের একসঙ্গে থাকতে দিচ্ছি, তা-ই দেখছি তোমাদের মনে ধরেছে। কিন্তু কাল…’

    বিস্ফোরণটা নিশ্চয়ই প্রচণ্ড আর মারাত্মক ছিলো, নইলে মাটির এত নিচে এই পাতালে এসে তার আওয়াজটা পৌঁছুলো কী ক’রে? আর বিস্ফোরণ গিলে খেলো তার বাকি কথাগুলো! আচমকা সে থেমে পড়লো, বিস্মিত, উদ্বিগ্ন, উৎকর্ণ…

    বিস্ফোরণটাকে অনুসরণ ক’রে এলো কয়েক মিনিটের স্তব্ধতা, তারপরেই ফেটে পড়লো কোলাহল…. চীৎকার, সুদূর গর্জন, খ্যাপা জনতার চ্যাঁচামেচি, আর তারই মাঝে-মাঝে, বাক্যের মধ্যে যতির মতো, আসছে গুলির শব্দ… রাইফেলের আর রিভলবারে…

    উইলিয়াম ফেরনে তখন আর জেন বা লুইস রবার্টের কথা ভাবছে না। কান পেতে শুনে বোঝবার চেষ্টা করছে এই হুলুস্থুলুর মানে কী।

    দরজার কাছে যে-ব্ল্যাকগার্ড পাহারায় ছিলো সে হঠাৎ ছুটে এলো হাজতঘরে। ‘প্রভু!’ তার গলায় আতঙ্ক, শহরে আগুন লেগেছে!’

    ফেরনে ক্রুদ্ধ স্বরে কাকে যেন অভিসম্পাত দিলে। তারপর, অপরিসীম তাচ্ছিল্যভরে এক ধাক্কায় দুই ভাইবোনকে সরিয়ে দিয়ে দরজা পেরিয়ে ছুটে মিলিয়ে গেলো করিডরের অন্ধকারে।

    এই বাধাটা এসেছে এমনই অতর্কিত, এমনই আচম্বিত, যে ভাইবোনের কেউই তার কোনো মানে বুঝতে পারেনি। এতই হতভম্ব হ’য়ে গেছে তারা যে এটাও তাদের মাথায় ঢোকেনি যে এই বিস্ফোরণ আর কোলাহলই তাদের জল্লাদের কাছ থেকে তাদের আপাতত মুক্তি দিয়েছে। একমুহূর্ত যেন এটাও তাদের মাথায় ঢোকেনি যে এই ছোট্ট ঘরটায় শুধু তারা দুজনেই আছে। এখনও দুজনে দুজনকে আঁটো ক’রে আঁকড়ে আছে, যে-বীভৎস দৃশ্যটা এক্ষুনি শেষ হ’লো এখনও যেন তারই ঘোরের মধ্যে আছে তারা। আর তারই মধ্যে তাদের মনে হানা দিয়েছে এক জবুথবু বৃদ্ধ, কুঁকড়ে গুটিয়ে গিয়েছেন লজ্জায় ধিক্কারে, অথর্ব, নিঃসাড়, উদাস শূন্য দৃষ্টি চোখে—আর অমনি দুজনে আকুল হ’য়ে কান্নায় ভেঙে পড়লো।

    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27 28 29 30 31 32 33 34 35 36 37 38 39 40 41 42 43
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleপ্রায়শ্চিত্ত প্রকল্প – জুবায়ের আলম
    Next Article জুল ভের্ন অমনিবাস ২ (অনুবাদ : মানবেন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়)

    Related Articles

    জুল ভার্ন

    জুল ভের্ন অমনিবাস ১ (প্রথম খণ্ড) – অনুবাদ : মানবেন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়

    August 16, 2025
    জুল ভার্ন

    জুল ভের্ন অমনিবাস ৪ (চতুর্থ খণ্ড) – অনুবাদ : মানবেন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়

    August 16, 2025
    জুল ভার্ন

    জুল ভের্ন অমনিবাস ৩ (তৃতীয় খণ্ড) – অনুবাদ : মানবেন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়

    August 14, 2025
    জুল ভার্ন

    জুল ভের্ন অমনিবাস ২ (অনুবাদ : মানবেন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়)

    August 14, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Demo
    Most Popular

    রাজমালা বা ত্রিপুরার ইতিহাস – শ্রী কৈলাসচন্দ্ৰ সিংহ প্রণীত

    August 20, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    রাজমালা বা ত্রিপুরার ইতিহাস – শ্রী কৈলাসচন্দ্ৰ সিংহ প্রণীত

    August 20, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Our Picks

    রাজমালা বা ত্রিপুরার ইতিহাস – শ্রী কৈলাসচন্দ্ৰ সিংহ প্রণীত

    August 20, 2025

    আলো হাতে সেই মেয়েটি – তপন বন্দ্যোপাধ্যায়

    August 20, 2025

    গোয়েন্দা গার্গী সমগ্র – তপন বন্দ্যোপাধ্যায়

    August 20, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    Sign In or Register

    Welcome Back!

    Login below or Register Now.

    Lost password?

    Register Now!

    Already registered? Login.

    A password will be e-mailed to you.