Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    রাজমালা বা ত্রিপুরার ইতিহাস – শ্রী কৈলাসচন্দ্ৰ সিংহ প্রণীত

    August 20, 2025

    আলো হাতে সেই মেয়েটি – তপন বন্দ্যোপাধ্যায়

    August 20, 2025

    গোয়েন্দা গার্গী সমগ্র – তপন বন্দ্যোপাধ্যায়

    August 20, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • 🔖
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    Subscribe
    সাইন ইন
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    জুল ভের্ন অমনিবাস ৫ (পঞ্চম খণ্ড) – অনুবাদ : মানবেন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়

    জুল ভার্ন এক পাতা গল্প982 Mins Read0

    ০৯. ইয়োকোহামার জাপানি সার্কাস

    সাতুই নভেম্বর হংকং ছেড়েছিলো কর্নাটিক। ফিলিয়াস ফগ যে-তিনটে ক্যাবিন ভাড়া নিয়েছিলেন, তার দুটো খালিই গেলো। আট তারিখের ভোরবেলা কনাটিকের নাবিকেরা দেখেছিলো, অসংযত-বেশ একজন আরোহী ডেকের উপর হতবুদ্ধি হয়ে কেমন জবুথবু বসে আছে। লোকটি আর-কেউ নয়, আমাদের জাঁ পাসপার্তু!

    কর্নাটিক যেদিন হংকং ছাড়লো, সেদিন তো পাসপার্তু হংকং-এর এক চখানায় অজ্ঞান হয়ে পড়ে ছিলো, তবে জাহাজে এলো কী করে? এই প্রশ্নের উত্তর জানতে হলে আবার আমাদের সেদিনকার রাত্তিরবেলার সেই চখানায় ফিরে যেতে হবে।

    ফিক্স তো পাসপার্তুকে অচেতন করে রেখে প্রস্থান করলেন। তারপরই চণ্ডুখানায় দুজন ওয়েটার এসে তাকে মেঝে থেকে তুলে ঐ ক্যাম্পখাটে শুইয়ে দিলে; তিন ঘণ্টা পরে সামান্য একটু জ্ঞান ফিরলো তার। তখন তার আর কিছুই মনে পড়লো না, শুধু মনে পড়লো কর্নাটিক। তখন প্রায় সন্ধে হয়েছে। পাসপার্তু টলতে-টলতে দেয়াল ধরে রাস্তায় এসে দাঁড়ালে, তারপর যেন স্বপ্নের ঘোরে কর্নাটিক, কর্নাটিক বলে চীৎকার করতে-করতে চললো জেটির দিকে। জেটি বেশি দূরে ছিলো না। পাসপার্তু টলতে-টলতে কর্নাটিকের ডেকে গিয়ে উঠলো, আর কর্নাটিক, কনাটিকবলে বার-বার চেঁচিয়ে উঠেই আবার অচেতন হয়ে পড়ে গেলো। হংকংএর যাত্রীদের মধ্যে এ-রকম ঘটনা প্রায়ই ঘটতো বলে নাবিকেরা খুব অবাক হলো না, অচেতন পাসপার্তুকে ডেক থেকে তুলে একটা ক্যাবিনের মধ্যে রেখে এলো।

    ভোরবেলা সমুদ্রের ঠাণ্ডা হাওয়ার ধীরে-ধীরে প্রকৃতিস্থ হলো পাসপার্তু। মনে পড়লো সব-কিছু। ভাবলে, আমি এমন মাতাল হয়েছিলুম শুনলে আমার প্রভু ফিলিয়াস ফগ কী বলবেন! যা-হোক, জাহাজে যে উঠতে পেরেছি এই ঢের! ডিটেকটিভ ফিক্স নিশ্চয়ই এখানে আসতে সাহস করেনি। কী আশ্চর্য! ফগের মতো লোককেও দস্যু বলে সন্দেহ করে পেছনে টিকটিকি লেগেছে! এ-কথা কি এখুনি ফগকে খুলে বলবো?, এখন থাক, ডিকেকটিভ ফি আগে আমাদের সঙ্গে-সঙ্গে সারা দুনিয়া চরকি ঘুরুক, তারপর লণ্ডনে গিয়ে তাকে নিয়ে বেশ-একটা মজা করা যাবে। এখন আর ফগকে বলা হবে না যে তার পেছনে ফেউ লেগেছে।

    মন ঠিক করে পাসপার্তু ফগের কাছে মাপ চাইবার জন্যে তার কামরার সন্ধানে চললো। সারা জাহাজ আঁতিপাঁতি করে খুঁজেও যখন ফগের দেখা পাওয়া গেলো না, তখন সে ভাবলে নেশার ঝোকে সে নিশ্চয়ই অন্যকোনো জাহাজে এসে উঠেছে, এ নিশ্চয়ই কনাটিক নয়। সে একটি নাবিককে শুধোলে : এটাই তো কর্নাটিক? ইয়োকোহামা যাচ্ছে?

    নাবিকটি বললে : হ্যাঁ।

    তখন হঠাৎ তার মনে পড়ে গেলো, জাহাজ ছাড়বার সময় যে আচমকা বদলে গিয়েছিলো, সে-খবর তো ফগকে জানানো হয়নি! অনুশোচনায় ভরে উঠলো তার মন। তার জন্যেই আজ সর্বনাশ হলো ফগের! তার জন্যেই ফগ আজ সর্বস্বান্ত, পুলিশের হাতে আটক হয়ে হয়তো-বা জেলেই পচে মরবেন! পরক্ষণেই ফিক্সের উপর ভয়ানক চটে উঠলো সে। কাছে পেলে তখন হয়তো ফিক্সকে ছিড়েই ফেলতো পাসপার্তু।

    মদের নেশার মতো রাগও ক্রমশ একসময় অন্তর্হিত হলো তার। এবার নিজের অবস্থার কথা ভাবতে লাগলো সে। আগেই টিকিট করা হয়ে গিয়েছিলো বলে ইয়োকোহামা পর্যন্ত তার আর জাহাজ-ভাড়া লাগবে না, খাওয়া-দাওয়ারও ত্রুটি ঘটবে না। কিন্তু তারপর? তার কাছে যে একটা পয়সাও নেই! পাসপার্তু আর বেশি ভাবতে পারলে না।

    ঠিক সময়েই ইয়োকোহামা পৌঁছুলো কর্নাটিক। পাসপার্তুকে আজ জাহাজ থেকে তো নামতেই হবে, তারপর সারাদিন খাওয়া জুটবে কি না কে জানে? জাহাজেই তাই ঠেশে খেয়ে নিয়ে তীরে নামলে সে। নেমেই দেখতে পেলে, সামনে সুদূরবিস্তৃত রাজপথ, লোকের ভিড়ে গমগম করছে। লক্ষ্যহীন পাসপার্তু রাজপথ ধরে এগুলো সামনে।

    সে ঠিক করলে, নেহাৎ যদি অন্যকোনো উপায় না-হয়, তাহলে ইংরেজ কিংবা ফরাশি কন্সলের কাছে নিজের অবস্থা জানাবে। তারা হয়তো কোনো-একটা উপায় করে দেবেন। কিন্তু তার আগে একটিবার শেষ চেষ্টা করে দেখা উচিত।

    ইয়োকোহামার সাহেব-পাড়া, জাপানিপাড়া পেরিয়ে বাজারে এসে হাজির হলো পাসপার্তু। হিরে-মুক্তোর দোকান, রোস্তোরাঁ, কাফে, দোকান-পশার কিছুরই অভাব নেই। চারদিক দেখতে-দেখতে সারাদিন ইতস্তত ঘুরে বেড়ালে সে। ক্রমশ সন্ধে হয়ে এলো। খিদেয় পেট জ্বলতে থাকলেও পয়সার অভাবে খাওয়া জুটলো না তার। পাসপার্তু এবার বুঝতে পারলে যে ঘর থেকে পা বাড়াতে হলে কিছু টাকা সঙ্গে না-রাখলে কিছুতেই চলে না।

    অর্থহীন লক্ষ্যহীন পাসপার্তু জেটির দিকে এগুলো।

    রাতটা তা কী করে কাটলো, পাসপার্তু নিজেই যে ভালো করে বুঝতে পারলে। ভোরবেলা সে দেখতে পেলে খিদে তাকে এতই দুর্বল ও ক্লান্ত করে ফেলেছে যে পেটে দানাপানি না-পড়লে আর চলে না। একটা পয়সাও নেই, এই অচেনা বিদেশ বিভুয়ে খাওয়াবে কে? তখনও ঘড়িটা ছিলো সঙ্গে, কিন্তু ঘড়িটা পার্সেপার্তুর এত প্রিয় ছিলো যে সে ঠিক করলে, বরং না-খেয়ে মরবে, কিন্তু তবু ঘড়িটা সে বিক্রি করবে না। ভেবে দেখলে, এই অবস্থায় পোশাক বদলালে বিশেষ-কোনো ক্ষতি হবে না, বরং পকেটে কিছু আসতে পারে।

    পাসপার্তু পুরোনো পোশাকের দোকান খুঁজে বের করে নিজের পোশাকের বদলে একটি পুরোনো জাপানি পোশাক ও কিছু পয়সা পকেটে নিয়ে রাস্তায় বেরিয়ে এলো। কাছের একটা হোটেলে কিছু খেয়ে নিয়ে পাসপার্তু জাহাজ-ঘাটার দিকে এগুলো। ইচ্ছে, যদি আমেরিকা-গামী কোনো জাহাজে কাজ নিয়ে জাপান ছাড়তে পারে।

    কিন্তু সুপারিশ ছাড়া এমনতর কোনো চাকরির সৌভাগ্য হয় না কারুই। সুপারিশ নেই বলে পাসপার্তুও কোথাও চাকরি পেলো না! হাল ছেড়ে দিয়ে যখন শহরে ফিরছে, তখন একটা প্রকাণ্ড বিজ্ঞাপন তার নজরে পড়লো।

    সুবিখ্যাত উইলিয়ম বাটুলকারের জাপানি সার্কাসপার্টি!
    আমেরিকা যাওয়ার আগে শেষ রজনী।
    আশ্চর্য নাকের কসরৎ!
    দেখবার শেষ সুযোগ কেউ ছাড়বেন না!

    বিজ্ঞাপন দেখে পাসপার্তু ভাবলে, এরা যখন আমেরিকা যাচ্ছে, তখন কোনোরকমে এদের দলে ভিড়তে পারলে সুবিধেই হবে। একবার চেষ্টা করে দেখা যাক। পাসপার্তু তক্ষুনি সার্কাসপার্টির ঠিকানা জোগাড় করে উইলিয়াম বাটুলকারের কাছে গিয়ে হাজির হলো।

    বাটুলকার যখন শুনলো যে পাসপার্তু তার সার্কাসের দলে চাকরি করতে চায়, তখন সোজাসুজি জানিয়ে দিলে যে তার যথেষ্ট লোক আছে, আর কোনো নতুন লোকের দরকার নেই। বেগতিক দেখে পাসপার্তু বললে : যদি আমি আপনাদের সঙ্গে আমেরিকা যেতে পারতুম, তবে বড় উপকার হতো।

    বটুলকার শুধোলে : তুমি তো জাপানি নও বলেই মনে হচ্ছে, তবে এমন পোশাক পরেছো যে?

    যার যেমন সাধ্যি, সে তেমনি পোশাক পরে।

    বেড়ে বলেছে তো! তোমাকে দেখে তো ফরাশি বলেই মনে হচ্ছে।

    আপনি ঠিকই আন্দাজ করেছেন।

    কেমন করে বিকট বিটকেল মুখভঙ্গি করতে হয় তা তাহলে তোমার ভালোই জানা আছে?

    পাসপার্তু এ-কথা শুনে চটে উঠলো। কিন্তু নিরুপায় হয়ে বললে : ফরাশিরা যে মুখভঙ্গি করতে পারে এ-কথা কে না জানে? কিন্তু ইয়াংকিদের মতো অমন তাজ্জব মুখভঙ্গি করতে পারে না।

    ঠিক বলেছো। তা দ্যাখো, তোমাকে আমার সার্কাসের দলে ক্লাউন করে রাখতে পারি। রাজি? আহা-হা, রাগ কোরো না। ফ্রানসের সার্কাসে তারা অন্য দেশের লোককে ভাঁড় সাজায়, ক্লাউন সাজায়। কিন্তু বিদেশে বেরুলে ফরাশিকেও ক্লাউন সাজতে হয়।

    এখন তো তা-ই দেখতে পাচ্ছি।

    গায়ে জোর আছে তো?

    খেতে পেলেই আমার গায়ে জোর হয়।

    গান গাইতে জানো?—জানো, বলছো? এ-গান কিন্তু যেমন-তেমন গান নয়—মাটিতে মাথা রেখে পা-দুটো উপরের দিকে তুলতে হবে; বাঁ-পায়ের তলায় ঘুরবে একটা লাটিম আর ডান পায়ে থাকবে একটা তলোয়ার-সেই অবস্থায় গান গাইতে হবে। পারবে?

    ও-সব কায়দা-টায়দা কিছু-কিছু জানা আছে বৈকি!

    ঠিক হ্যায়। এসব করতে রাজি থাকলে ঢুকে পড়ো আমার দলে।

    তখুনি সার্কাসের দলে চাকরি নিলে পাসপার্তু। আশ্চর্য নাকের কসরৎ দেখবার জন্যে হুড়হুড় করে টিকিট বিক্রি হয়েছে, চারদিক লোকে-লোকারণ্য, মাঝে-মাঝে অর্কেস্ট্রা বাজছে-শিগগিরই সার্কাস শুরু হয়ে গেলো।

    পৃথিবীর মধ্যে ভালো ম্যাজিশিয়ান ও সার্কাসওয়ালা বলে জাপানিদের বেশ সুনাম আছে। কিন্তু সেই জাপানিরাও রকম-বেরকম অদ্ভুত খেলা দেখে যখন বিস্ময়ে হতবাক, তখুনি আশ্চর্য নাকের কসরৎ শুরু হয়ে গেলো।

    মধ্যযুগোচিত পোশাকে সেজে-গুজে ডানাওয়ালা জনাকয়েক সার্কাসের লোেক স্টেজে এসে দাঁড়ালে। তাদের বড়ো-বড়ো নাক স্টেজে এক অভিনব দৃশ্যের সৃষ্টি করলো : কারু আটহাত লম্বা নাক, কারু-বা চারহাত, কারু-বা পাঁচহাত। সেই নাকগুলোর মধ্যে আবার নানান রঙচঙ মাখানো। নাকগুলো বাঁশের তৈরি। কয়েকজন অদ্ভুত পেশাক-পরা। লোক এসে নাকওলাদের নাকের উপর লাফ-ঝাঁপ দিয়ে নানান রকম খেলা দেখাতে লাগলো।

    আরো পঞ্চাশজন দীর্ঘনাসা লোক এসে হাজির হলো নাকের পিরামিড তৈরি করবার জন্যে। পাসপার্তু ছিলো এই দলে। এভাবে বেদম-দীর্ঘ কোনো নাক লাগাতে ইচ্ছে ছিলো

    তার, কিন্তু গত্যন্তর না-দেখে রাজি হতে হয়েছিলো। সেই বিরাট নাক নিয়ে ক-জন স্টেজের উপর শুয়ে পড়লো—তাদের নাকের উপর শুলো আবার আরো কয়েকজন–এদের নাকের উপরও আবার আর-একদল শুলো। এভাবে সেই নাকের পিরামিড উঠতে লাগলো উঁচুতে। এ-ভাবে উঠতে-উঠতে পিরামিডের চুড়ো স্টেজের শামিয়ানা ছুঁলো। দর্শকরা তো আনন্দে উৎফুল্ল হয়ে ঘন-ঘন হাততালি দিতে লাগলো, আর সঙ্গেসঙ্গে তীব্র চনমনে শব্দে বেজে উঠলো অর্কেস্ট্রা।

    হঠাৎ সবাই সচমকে তাকিয়ে দেখলে, সেই নাকের পিরামিড কেঁপে উঠছে। দেখা গেলো সব-নিচের দলের একজনের নাক গেলো খুলে। অমনি সেই পিরামিড ভেঙে চুরমার হয়ে গেলো-সার্কাসের লোকরা কে কোথায় ছিটকে পড়লো কে জানে।

    বিভ্রাটটা ঘটলো কিন্তু পাসপার্তুর দোষেই। হুড়মুড় করে সেই গণ্ডগোলের মধ্যে থেকে কোনোরকমে বেরিয়ে এসে পাসপার্তু একলাফে ফুট-লাইট পেরিয়ে দৌড়ে গিয়ে দর্শকদের মধ্যে একজনের পায়ের কাছে বসে পড়লো। রুদ্ধস্বরে বললে : মাপ করুন, মাপ করুন আমায়!

    এ কী, পাসপার্তু যে!

    হ্যাঁ, আমি।

    যাও, এখুনি জাহাজে গিয়ে ওঠো।

    পাসপার্তু তখনই ফিলিয়াস ফগ ও আউদার সঙ্গে থিয়েটার ছেড়ে বেরিয়ে এলো।

    ফটকের কাছেই দাঁড়িয়েছিলো সার্কাসের মালিক বাটুলকার। রাগে, আক্রোশে ফুশছিলো সে! এভাবে পিরামিড ভেঙে দেবার জন্যে পাসপার্তুকে আটকে তার কাছে ক্ষতিপূরণ চাইলে সে। ফিলিয়াস ফগ দ্বিরুক্তি না-করে বাটুলকারের সামনে একতাড়া নোট ফেলে তখুনি সেখান থেকে বেরিয়ে আমেরিকাগামী ডাক-জাহাজ এস. এস. জেনারেল গ্রান্টে গিয়ে উঠলেন।

    …শাংহাই বন্দরে কী ঘটেছিলো পাঠক নিঃসন্দেহে তা সহজেই অনুমান করতে পেরেছেন। তংকাদিরির কামানের শব্দ শুনে ডাকজাহাজ তার কাছে এসেছিলো, অমনি ফিলিয়াস ফগ আউদা ও ফিকে নিয়ে ডাক-জাহাজে ওঠেন, আর চোদ্দই নভেম্বর পৌঁছোন ইয়োকোহামা।

    ইয়োকোহামায় পৌঁছেই কর্নাটিক জাহাজে খবর নিয়ে শোনা গেলো, জাঁ পাসপার্তু বলে এক ফরাশি সেই জাহাজেই ইয়োকোহামা এসেছে। সেদিন রাত্রেই ফগের সানফ্রান্সিসকো রওনা হওয়ার কথা। ফগ ইয়োকোহামার কন্সাল আপিশে গিয়ে পাসপার্তুর খোঁজ নিলেন। হঠাৎ-যদি দেখা হয়ে যায়, সে-জন্যে অনেক ঘুরলেন শহরের রাস্তায়রাস্তায়। অনেক খোঁজ করেও যখন তার কোনো খোঁজ পাওয়া গেলো না, এখন জাহাজে ফেরবার পথে সার্কাসের তাঁবুর সামনে গিশগিশে ভিড় দেখে সার্কাস দেখতে ভিতরে ঢুকলেন। পাসপার্তু যে সার্কাসের দলে ভিড়ে বসতে পারে ফগ স্বপ্নেও তা ভাবেননি।

    তারপর খেলা দেখতে-দেখতে অদূরে দর্শকদের মধ্যে ফগ ও আউদাকে দেখে পাসপার্টু চঞ্চল হয়ে উঠে কী-কাণ্ডই যে করে বসলো, তা পাঠক আগেই জেনেছেন।…

    …আউদার কাছ থেকে ফগের সমুদ্র পাড়ির কাহিনী শুনলো পাসপার্তু। আরো শুনলো যে, ফিক নামে এক ইংরেজ ভদ্রলোকও ফগের সঙ্গে তংকাদিরিতে চেপে ইয়োকোহামা এসেছেন। ফিল্মের নাম শুনে বিন্দুমাত্র চঞ্চল হলো না পাসপার্তু। ভাবলে, যথাসময়ে একবার বাগে পেলে ফিক্সকে সে উচিতশিক্ষা দেবে, আর তখনই তার ভিতরের কথা ফাস করে দেবে। নিজের কথা বলবার সময় সে সব গোপন করে গিয়ে বললে যে, চণ্ডু খেয়ে অচৈতন্য হয়ে পড়েছিলো বলেই তার এত দুর্দশা ঘটেছে। ফগ সব দেখেশুনে তাকে জামা-কাপড় কেনবার জন্যে কিছু টাকা দিয়ে দিলেন।

    বলা বাহুল্য, ফিক্সও জেনারেল গ্রান্ট জাহাজে ছিলেন। ইয়োকোহামা পৌঁছেই তিনি দেখতে পেলেন তার সেই প্রত্যাশিত ওয়ারেন্ট বিলেত থেকে এসেছে। কিন্তু তার জোরে ফগকে ধরবার কোনো উপায়ই ছিলো না। ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের এক্তিয়ারের বাইরে আসামীকে ধরতে হলে স্পেশ্যাল ওয়ারেন্টের দরকার—কিন্তু বিশেষ ব্যবস্থা করবার সময়ও তখন আর ছিলো না। কি ভাবলেন, যা-হোক, ওয়ারেন্ট তো পাওয়া গেলো—এখানে আর ওকে পাকড়ানো গেলো না বটে, কিন্তু ইংল্যাণ্ডে যাওয়ামাত্রই ধরবো। তখন তাকে কে বাঁচাতে পারে দেখবো। এখন ফগ যাতে শিগগির বিলেত পৌঁছুতে পারে তারই ব্যবস্থা করতে হবে। এমনি সময় পাসপার্তুকে দেখতে পেয়ে বিষম ভয় পেয়ে নিজের ক্যাবিনে প্রস্থান করলেন তিনি। কিন্তু দুর্ভাগ্য সেই রাত্রিতেই তাঁকে পাসপার্তুর কাছে এনে হাজির করলে।

    তাকে দেখেই পাসপার্তুর মাথায় খুন চেপে গেলো। কোনো কথা না-বলে পাসপার্তু স্টান তাকে অনেকগুলো ঘুসি কষিয়ে দিলে। ফিক্স জাহাজের ডেকের উপর ছিটকে পড়লেন। নাবিক ও যাত্রীদের মধ্যে অনেক চারদিকে দাঁড়িয়ে হো-হো করে হাসতে লাগলো। ফিক্স তখন কাতর কণ্ঠে বললেন : আর কেন, পাসপার্তু, ঢের হয়েছে।

    তখন পাসপার্তু তাকে ছেড়ে দিয়ে বললে : হ্যাঁ, আপাতত যৎকিঞ্চিৎ উত্তম-মধ্যম হয়েছে বটে!

    এসো তবে, তোমার সঙ্গে আমার কথা আছে। ফিক্স বললেন, আমি এখন যা বলবো তা ফিসিয়াস রে ভালোর জন্যেই।

    জাহাজের এককোণে পাসপার্তুকে ডেকে নিয়ে ফিক্স বলতে লাগলেন : তুমি আমার উপর একহাত নিয়ে নিয়েছে, বেশ করেছে। এমনধারা যে হবে, তা আমার জানাই ছিলো। গোয়েন্দাদের কাজই এমন যে সময়-অসময়ে বেধড়ক মার খেতে হয়। কিন্তু আমার কথাগুলো একবার মন দিয়ে শোনো। এতদিন পর্যন্ত আমি ওঁর বিপক্ষে ছিলুম কিন্তু এখন থেকে ওঁর প্রাণের বন্ধু—যদিও আমার এখনও দৃঢ়বিশ্বাস যে উনিই দস্যু। আরে, অত উত্তেজিত হয়ে উঠো না। যা বলি, শোনো। যতদিন ফগ ব্রিটিশ এলাকায় ছিলেন, ততদিন আমি ওঁকে অ্যারেস্ট করতে অনেক চেষ্টা করেছি। কিন্তু এখানে ওঁকে কোনোরকমেই গ্রেপ্তার করতে পারবো না। মনে হচ্ছে, ফগ এখন বিলেতে ফিরবেন। আমিও ফেউয়ের মতো তার অনুসরণ করবে। তিনি যাতে নির্বিঘ্নে বিলেতে যেতে পারেন, আমাকে এখন সে-চেষ্টাই করতে হবে। বিলেতেই জানা যাবে ফগ দোষী কি নির্দোষ। ততদিন তোমার মতো আমিও তার শুভাকাঙ্ক্ষী।

    ফিক্স এমনভাবে কথাগুলো বললেন যে পাসপার্তুর কতকটা বিশ্বাস হলো।

    ফিক্স শুধোলেন : কেমন? তবে আমরা আজ থেকে বন্ধু।

    বন্ধু? ককখনো না। চেঁচিয়ে উঠলো পাসপার্তু। তবে আমরা দুজনেই আজ থেকে ফগের শুভাকাঙ্ক্ষী। কিন্তু এ-কথা মনে রাখবেন, যে-মুহূর্তে দেখবো আপনি তার অনিষ্ট করবার চেষ্টা করছেন, সেই মুহূর্তেই আপনাকে আমি ছিঁড়ে ফেলবো! এ-কথা যেন মনে থাকে।

    তা-ই হবে-বলে ফিক্স বিদায় নিয়ে নিজের ক্যাবিনে ফিরে গেলেন।

    এস, এস, জেনারেল গ্রান্ট খুবই দ্রুতগামী জাহাজ ছিলো। ফগ হিশেব করে দেখলেন যে, তিনি দোসরা ডিসেম্বর সান-ফ্রান্সিসকো, এগারোই নিউইয়র্ক, আর বিশ তারিখে লণ্ডন পৌঁছুতে পারবেন।

    অবহাওয়া চমৎকার ছিলো বলে জেনারেল গ্রান্ট দ্রুতবেগে সান-ফ্রান্সিসকোর দিকে এগিয়ে চললো। বলবার মতো বিশেষ কিছুই জাহাজে ঘটলো না। যা-কিছু ঘটছিলো, তা সবই ঘটছিলো আউদার মনে।

    ক্রমশই ফগের দিকে আউদার হৃদয় আকৃষ্ট হচ্ছিলো। সে আকর্ষণের কারণ শুধু কৃতজ্ঞতা বলে নির্দেশ করলে অবশ্য মস্ত ভুল করা হবে।

    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27 28 29 30 31 32 33 34 35 36 37 38 39 40 41 42 43
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleপ্রায়শ্চিত্ত প্রকল্প – জুবায়ের আলম
    Next Article জুল ভের্ন অমনিবাস ২ (অনুবাদ : মানবেন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়)

    Related Articles

    জুল ভার্ন

    জুল ভের্ন অমনিবাস ১ (প্রথম খণ্ড) – অনুবাদ : মানবেন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়

    August 16, 2025
    জুল ভার্ন

    জুল ভের্ন অমনিবাস ৪ (চতুর্থ খণ্ড) – অনুবাদ : মানবেন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়

    August 16, 2025
    জুল ভার্ন

    জুল ভের্ন অমনিবাস ৩ (তৃতীয় খণ্ড) – অনুবাদ : মানবেন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়

    August 14, 2025
    জুল ভার্ন

    জুল ভের্ন অমনিবাস ২ (অনুবাদ : মানবেন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়)

    August 14, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Demo
    Most Popular

    রাজমালা বা ত্রিপুরার ইতিহাস – শ্রী কৈলাসচন্দ্ৰ সিংহ প্রণীত

    August 20, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    রাজমালা বা ত্রিপুরার ইতিহাস – শ্রী কৈলাসচন্দ্ৰ সিংহ প্রণীত

    August 20, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Our Picks

    রাজমালা বা ত্রিপুরার ইতিহাস – শ্রী কৈলাসচন্দ্ৰ সিংহ প্রণীত

    August 20, 2025

    আলো হাতে সেই মেয়েটি – তপন বন্দ্যোপাধ্যায়

    August 20, 2025

    গোয়েন্দা গার্গী সমগ্র – তপন বন্দ্যোপাধ্যায়

    August 20, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    Sign In or Register

    Welcome Back!

    Login below or Register Now.

    Lost password?

    Register Now!

    Already registered? Login.

    A password will be e-mailed to you.