Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • English Books
      • Jules Verne
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    জেরুসালেম : ওয়ান সিটি থ্রি ফেইস – ক্যারেন আর্মস্ট্রং

    মোহাম্মদ হাসান শরীফ এক পাতা গল্প727 Mins Read0
    ⤶ ⤷

    ৮. আলিয়া ক্যাপিটোলিনা

    এখন টেম্পল মাউন্ট এখন আবর্জনার স্তুপ। ধ্বংস থেকে দেভিরের পশ্চিম প্রাচীর ছাড়া কেবল টেম্পল প্লাটফর্মকে ঠেকা দেওয়া বিশাল প্রাচীরগুলোই রক্ষা পেয়েছিল। টেম্পল ভাঙ্গার কাছ শেষ হলে টাইটাসের সৈন্যরা আপার সিটির রাজসিক বাড়িগুলো গুঁড়িয়ে দেওয়া শুরু করল, হেরডের সুন্দর প্রাসাদটি ভূপাতিত করা হলো। প্রত্নতত্ত্ববিদেরা আবিষ্কার করেছেন, রোমান সৈন্যরা তাদের কাজ সম্পন্ন করতে খুবই নিষ্ঠাবান আর নির্মম ছিল। বাড়িগুলো ধসিয়ে দেওয়া ও আবর্জনার নিচে চাপা পড়ার পর সেগুলো আর কখনো পরিষ্কার করা হয়নি। টাইরোপোয়েন ভ্যালি পুরোপুরি গুঁড়িয়ে যাওয়া ঘরবাড়ির টুকরা এবং শীতের বৃষ্টির সময় পাহাড় থেকে ঢলে নেমে আসা পাথরে বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। আপার সিটির পশ্চিমের দেয়াল ছাড়া নগর -প্রাচীর পুরোটা মিশিয়ে দেওয়া হয়। পশ্চিম অংশটি টেনথ লিজিয়ন ফ্রেটেনসিসের ক্যাম্প সুরক্ষার জন্য ব্যবহৃত হতো। এই বাহিনী এখন হেরডের প্রাসাদের স্থানটি দখল করে ছিল। জেরুসালেমে আর কখনো লোক বসতি হবে, এমনটা বিশ্বাস করতে মুসাফিরদের কষ্ট হতো। আর কোনো বিদ্রোহচেষ্টার ব্যাপারে ইহুদিদের সতর্ক দিয়ে দিচ্ছিলেন সম্রাটেরা। ৭০ বছর পর তারা জুদা ডেভিকটা বা জুদা ক্যাপতা কিংবদন্তি নিয়ে একটি মুদ্রা প্রকাশ করে। তাতে একটি খেজুর গাছের নিচে হাত বাঁধা নিঃসঙ্গ এক ইহুদি নারীকে বসে থাকার ছবি দেখা যায়। সম্রাট ভেসপ্যাসিয়ান (৭০-৭৯), টাইটাস (৭৯-৮১), ডোমিটিয়ান (৮১-৯৬) ও ট্রাজান (৯৮-১১৭)- সবাই রাজা দাউদের বংশধর দাবিকারী প্রতিটি ইহুদিকে আটক ও ফাঁসি দিতে টেনথ লিজিয়নকে নির্দেশ দিয়েছিলেন। তবে রোমানরা এই নির্দেশ বাস্তবায়ন করে করে ক্লান্ত হয়ে পড়েছিল। ফিলিস্তিন এখন সাম্রাজ্যের পূর্ণ একটি প্রদেশ। অবশ্য শান্তি বজায় রাখতে চেষ্টাকারী রাজা দ্বিতীয় অ্যাগ্রিপাকে তার পদবি বহাল রাখতে ও গ্যালিলি শাসন করার অনুমতি দেওয়া হয়। তবে বোঝা যাচ্ছিল, তার মৃত্যুর পর তা রোমের নিয়ন্ত্রণে ফিরে ল্যাবে। সব ইহুদি জমি বাজেয়াপ্ত করা হয়েছিল। তাত্ত্বিকভাবে তা সম্রাটের সম্পত্তিতে পরিণত হয়েছিল। তবে বাস্তবে রোমানরা বেশির ভাগ জমিই সাবেক মালিকদের কর্তৃত্বেই রেখেছিল। কারণ তারা বুঝতে পেরেছিল, ফিলিস্তিনের বেঁচে যাওয়া প্রায় সব ভূস্বামী বিদ্রোহের বিরোধিতা করেছিল।

    এসব ভারসাম্যমূলক পদক্ষেপ সত্ত্বেও রোমান জয় অব্যাহতভাবেই ইহুদিদের জন্য বেদনা ও বিপর্যয়ের উৎসে পরিণত হয়েছিল। অনেক যন্ত্রণাদায়ক পন্থায় তাদেরকে তা মনে করিয়ে দেওয়া হতো। আগে প্রতিটি প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ ইহুদি অর্ধ-শেকেল টেম্পল কর দিত। এখন তা রোমের ক্যাপিটোলিন হিলের উপর স্থাপিত টেম্পল অব জুপিটারকে দান করতে হচ্ছে। ৮১ সালে টাইটাসের জয় উদযাপনের জন্য রোমে একটি চমকপ্রদ বিজয় তোরণ নির্মাণ করা হয়। এতে নিয়ে আসা ঐশী নৌযানগুলোর ছবি আঁকা হয়। এক শ বছর পরও এসব সামগ্রী সাম্রাজ্যের রাজধানীতে গর্বের সাথে প্রদর্শিত হচ্ছিল। রাব্বি ইলেজার বলেন, তিনি টেম্পল ভেইল দেখেছেন। সেটিতে তখনো বলি দেওয়া পশুর রক্ত লেগে ছিল। এছাড়া ছিল ‘ওয়াইএইচডব্লিউএইচের ঐশী সত্তা’ লেখা উচ্চ পুরোহিতের মাথার ফিতা। জেরুসালেমে টেনথ লিজনের সৈন্যরা এখন অবাধে রাজকীয় ঈগল প্রদর্শন পারত, বিধ্বস্ত রাজপথগুলোতে তাদের ঈশ্বরের প্রতি বলি দিতে পারত। পুল অব বেথ-হেসদার কাছে আরোগ্যদেবী সেরাপিস-অ্যাসলেপিয়াসের মন্দিরও হয়তো তারা নির্মাণ করেছিল।২`

    ইহুদি বিশ্বের কেন্দ্র জেরুসালেম এখন রোমান সেনাবাহিনীর একটি ঘাঁটির চেয়ে সামান্য বেশি কিছু মর্যাদাসম্পন্ন। টেনথ লিজিয়ন দীর্ঘ দিন সেখানে তাদের অবস্থানের চিহ্ন সামান্যই রেখে গেছে। কারণ সম্ভবত সৈন্যরা টাইটাসের অনুমতিতে টিকে থাকা হেরডের তিনটি টাওয়ার- হিপিকাস, ফাসায়েল ও মারিয়ামের পাশে কাঠের কুঁড়েঘর ও তাঁবুতে বাস করত। জনমানবহীন নগরীতে বসবাস করার জন্য রোমান সৈন্য ও সিরিয়ান ও গ্রিক বেসামরিক নাগরিকদের নিয়ে আসা হয়েছিল। তবে কিছু ইহুদি রয়ে গিয়েছিল। রোমান ক্যাম্পের, জোসেফাস ভুল করে যেটাকে মাউন্ট জায়ন বলেছিলেন, দক্ষিণ দিকের পাহাড়ের ওপর কিছু বাড়ি রেখে দেওয়া হয়েছিল। তার লেখালেখির সময় লোকজন ভুলে গিয়েছিল যে মূল ইর ডেভিড ছিল ওফেল পাহাড়ের ওপর। তারা মনে করেছিল, দাউদ বাস করতেন নগরীর অপেক্ষাকৃত উন্নত অংশ আপার সিটিতে। এখানেই তাদের নিজস্ব রাজা ও অভিজাত ব্যক্তিদের বাসভবন ছিল। এখন এই পশ্চিম পাহাড় মাউন্ট জায়ন নামেই পরিচিত ছিল। মূল পাহাড় থেকে একে আলাদা করতে আমি সাধারণভাবে ব্যবহৃত বিকল্প উচ্চারণ ‘মাউন্ট সায়ন’ গ্রহণ করার প্রস্তাব করছি। ওই এলাকায় শান্ত অবস্থা ফেরা আসা মাত্র অল্প কিছু ইহুদি মাউন্ট সায়নে বসতি স্থাপন করে। তারা টেম্পল মাউন্টে উপাসনা করতে পারছিল না। কারণ এটি পুরোপুরি অপবিত্র হয়ে পড়েছিল। তবে এই দক্ষিণের পাহাড়ে তারা সাতটি সিনাগগ নির্মাণ করেছিল। আমাদের সূত্র হলেন খ্রিস্টান ইতিহাসবিদ ইউসেবিয়াস অব ক্যাসারিয়া (২৬৪- ৩০) ও ইপিফানিয়াস অব সাইপ্রাস (আনুমানিক ৩১৫-৪০৩)। স্থানীয় ঐতিহ্যগুলোর সহায়তায় তিনি আমাদের জানাচ্ছেন, জেরুসালেম ধ্বংসের পর সিমিয়নের নেতৃত্বে ইহুদি খ্রিস্টানেরা পেলা থেকে ফিরে এসে মাউন্ট সায়নের উপর ইহুদিদের পাশাপাশি বসবাস করতে থাকে। তারা ধ্বংস থেকে রক্ষা পাওয়া একটি বাড়িতে মিলিত হতো। বাড়িটি পরে আপার রুম’ নামে পরিচিত হয়। এখানে শিষ্যরা খ্রিস্টকে বেঁচে ওঠতে দেখেছিল, ‘পবিত্র স্পিরিট’ গ্রহণ করেছিল। ইপিফানিয়াস আমাদের বলছেন যে পেলা থেকে ফিরে এসে ইহুদি খ্রিস্টানেরা আপার রুমের আশপাশে বসতি স্থাপন করে। এটি ছিল ‘সায়ন নামে পরিচিত নগরীর অংশ। এই অংশকে ধ্বংস থেকে রেহাই দেওয়া হয়েছিল। এছাড়া সায়ন ও সাতটি সিনাগগ… সন্ন্যাসীদের কক্ষের মতো স্থানের আশপাশেও অনেকে বাস করে।’ ইউসেবিয়াস স্পষ্ট করেছেন যে জেরুসালেম চার্চ পুরোপুরি ইহুদিদের বলেই বিবেচিত হচ্ছিল। এটি পরিচালনা করতেন ইহুদি ‘বিশপেরা। তারা সায়নে তাদের ইহুদি প্রতিবেশীদের অনেক আদর্শ মেনে চলতেন। পলের ধর্মান্তরিতদের বিপরীতে তারা বিশ্বাস করত না যে যিশু ছিলেন ঐশী সত্তা : সর্বোপরি তাদের অনেকে তাকে চিনত। কারণ তিনি ছিলেন শিশু। তারা তাকে ঈশ্বর হিসেবে দেখেনি। তারা তাকে স্রেফ মানুষ হিসেবে গণ্য করত। তাদের মতে, তিনি মেসাইয়া হতে পারেন। তারা জেরুসালেমে যিশুর সাথে সম্পৃক্ত স্থানগুলোর, বিশেষ করে মাউন্ট অব গলগোথা ও যে স্থানে যিশু মৃত থেকে জীবিত হয়েছিলেন সেই কবরের স্থান, প্রতি সম্মান প্রদর্শন করত। অনেক ইহুদি তাদের শ্রদ্ধেয় প্রভুদের কবর জিয়ারত করতে পছন্দ করত। যিশুর স্মারক সমাধি তাদের কাছে স্বাভাবিকভাবেই গ্রহণযোগ্য স্থান ছিল। তাদের অনেকে গলগোথা, প্লেস অব দি স্কাল সম্পর্কে রহস্যময় গুঞ্জনে নিয়োজিত হতে শুরু করেছিল। ইহুদিদের মধ্যে একটি কিংবদন্তি প্রচলিত ছিল যে আদমকে সোলায়মানের টেম্পলের স্থান মাউন্ট মরিয়ায় কবর দেওয়া হয়েছিল। দ্বিতীয় শতক নাগাদ ইহুদি খ্রিস্টানেরা বলত যে তিনি গলগোথায় সমাহিত। এটিই আদমের খুলির স্থান। তারা জেরুসালেম সম্পর্কে তাদের নিজস্ব পুরানকাহিনীর বিকাশ ঘটাচ্ছিল। এই ধারণা তাদের এই বিশ্বাসের মাধ্যমে প্রকাশ করা হতো যে যিশু ছিলেন নতুন আদম। তার মাধ্যমেই মানুষের নতুন যাত্রা শুরু হয়েছে। এই মর্মান্তিক আমলেই অনেক ইহুদি তাদের চার্চে প্রবেশ করত। সম্ভবত আবার জীবিত হওয়ার ক্রুশবিদ্ধ মেসাইয়া ধারণাটি তাদের পুরনো বিশ্বাস পুনর্জীবনের আশাবাদী হতে তাদেরকে সহায়তা করেছিল।

    অন্যরা সন্ন্যাসের পথ অবলম্বন করে। রাব্বিদের লেখালেখি থেকে আমরা দুই ইহুদির কথা শুনি। তারা মাংস ও মদ নিষিদ্ধ করতে চেয়েছিলেন। কারণ এ দুটি সামগ্রী আর টেম্পলে ঈশ্বরকে নিবেদন করা যাচ্ছিল না। জীবন আর আগের মতো চলছিল না : ইহুদিদেরকে অবশ্যই শোক পালন ও মিতাচার অবলম্বন করার শাস্ত্রাচারের মাধ্যমে তাদের পরিবর্তিত মর্যাদা প্রকাশ করতে হতো। টেম্পল হারানো ছিল ভয়াবহ কষ্টের। ধ্বংসে ৩০ বছর পর ‘বুক অব ব্যারুচের’ লেখক বলেছেন যে সমগ্র প্রকৃতির উচিত শোক করা : এখন টেম্পল হারিয়ে গেছে, ফলে এখন আর জমিনের ফসল ফলানোর প্রয়োজন নেই, আঙুর ক্ষেত্র আর আঙুর জন্মানোর দরকার নেই, আকাশের উচিত শিশির আটকে রাখা, সূর্যের উচিত রশ্মি ছড়ানো বন্ধ করা :

    আবার কেন আলো দেখা যাবে
    যখন জায়নের আলো হয়ে গেছে অন্ধকার?

    টেম্পলটি দুনিয়ার মূল কেন্দ্র, বশ্বাসের নির্যাসের প্রতিনিধিত্ব করত। এখন জীবনের নেই কোনো তাৎপর্য, নেই মূল্য। মনে হতে পারে, এই অন্ধকার সময়ে অনেক ইহুদি তাদের বিশ্বাস হারিয়ে ফেলেছিল। এ কথাটি প্রায়ই জোর দিয়ে বলা হলেও আসলে তা সত্য নয়, ইহুদিদের বিশ্বাস আর তাদের টেম্পলে আবদ্ধ রাখার মতো ছিল না। এমনকি যেসব ইহুদি অন্যান্য উপায়ে ঐশী সত্তাকে উপলব্ধি করতে শুরু করেছিল, তারাও বিশ্বাস করছিল যে জেরুসালেম ও এর পবিত্রতাই তাদের ধর্মের কেন্দ্রবিন্দু। এই বিপর্যয়কর ক্ষতিতে টিকে থাকার জন্য ইহুদিদের তাদের সব সৃষ্টিশীলতার প্রয়োগ করা প্রয়োজন হয়ে পড়ে

    জেরুসালেম অবরোধের সময় প্রখ্যাত ফারিসি রাব্বি ইয়োহানান বেন জাক্কাই একটি কফিনে করে গোপনে নগরী থেকে পালিয়েছিলেন। আরো অনেক ফারিসির মতো তিনিও জিলটদের বৈপ্লবিক চরমপন্থার সম্পূর্ণ বিরোধিতা করেছিলেন। ৭৩ সালে মাসাদার জিলটদের গণ-আত্মহত্যা, তারা রোমের কাছে বশ্যতা শিকারের চেয়ে মৃত্যুকেই অগ্রাধিকার দিয়েছিল, তার কাছে খুবই অপছন্দের কাজ বলে মনে হয়েছিল। তার দৃঢ়প্রতিজ্ঞ সংযমের ফলে তিনি ও তার সাথীরাই ছিলেন টেম্পল ধ্বংসের পর বিশ্বাসযোগ্যতা ধরে রাখা একমাত্র ইহুদি নেতা। রাব্বি ইয়োহানান সম্রাট ভেসপ্যাসিয়ানের কাছে গিয়ে একটি স্কুল প্রতিষ্ঠার জন্য তার অনুমতি কামনা করলেন, যাতে ইহুদিরা অধ্যায়ন ও প্রার্থনা করতে পারে : তিনি জোর দিয়ে বলেন, এটি হবে আধ্যাত্মিক কেন্দ্র, বিপ্লবী চেতনার উর্বরক্ষেত্র নয়। তাকে উপকূলে ইয়াবনেহ একাডেমি প্রতিষ্ঠা করার অনুমতি দিয়ে বিদায় করা হলো। সেখানে তিনি ও তার সহকর্মী রাব্বিরা, তাদের অনেকে টেম্পলে পুরোহিত হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন, নতুন ইহুদি ধর্ম নির্মাণ করতে শুরু করেন। ৫৮৬ সালে ইহুদিরা তাদের টেম্পল হারিয়ে ফেললে তারা তাওরাত অধ্যায়ন করে সান্ত্বনা পেয়েছিল। এখন ইয়াভনে ও ফিলিস্তিন ও বেবিলনে প্রতিষ্ঠিত একই ধরনের অন্যান্য একাডেমিতে তানাইম নামে পরিচিত রাব্বিরা মৌখিক আইনগুলো, যা কয়েক শত বছরের পরিক্রমায় বিকশিত হয়েছিল, সঙ্কলিত করতে শুরু করেন। পরে এই নতুন বিধান সঙ্কলনকে বলা হয়েছিল মিসনা। তারা যেখানেই থাকুক না কেন, এটি পরিণত হয়েছিল নতুন জেরুসালেমের প্রতীক। আর তাতেই ঐশী উপস্থিতি অনুভব করেছিল। রাব্বিরা শিখেছিল যে যখনই একদল ইহুদি একসাথে হয়ে তাওরাত অধ্যায়ন করবে, তখন দুনিয়ায় ঈশ্বরের উপস্থিতি শেখিনা তাদের মধ্যে উপবিষ্ট হবেন। অনেক বিধান টেম্পল শাস্ত্রাচারের সাথে সম্পর্ক রেখে প্রণয়ন করা হয়েছিল। এই সময়কালে ইহুদিরা এসব বিধান অধ্যয়ন করার সময় হারানো টেম্পলের কল্পিত পুনঃনির্মাণে নিয়োজিত ছিল। এর মাধ্যমে তারা এর কেন্দ্রে ঐশী অনুভূতি পুনরুদ্ধার করেছিল। তানিমরা তাদের সঙ্কলন সম্পূর্ণ করার পর অ্যামোরাইম নামে পরিচিত পরের প্রজন্মের রাব্বিরা তাদের ব্যাখ্যার ওপর টীকা লিখতে শুরু করে দেন। সবশেষে তালমুদ এসব রাব্বানীয় আলোচনাকে জোরালো করেছিল। এই পরিক্রমায় ইহুদিরা স্থান ও সময়ের প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে যুক্তি দিতে থাকবে, তাদের তাওরাত নিয়ে আবেগপূর্ণ বিতর্কে মশগুল থাকবে। ইহুদিরা তাদের অধ্যয়নের সময় ঐশী উপস্থিতির ওপর আলোকপাত করেছিল। এই উপস্থিতিকে ঘিরে থাকা প্রতীক টেম্পল প্রাচীরে পরিণত হয়েছিল পঞ্জীভূত ভাষ্য ও ব্যাখ্যার স্তরগুলো।

    রাব্বিরা পশু উৎসর্গ করার পুরনো প্রথার বদলে এখন বদান্যতা ও সহানুভূতির ওপর জোর দিয়েছিলেন।

    রাব্বি ইয়োহানান বেন জাক্কাই একবার জেরুসালেম ঘুরে এসেছিলেন। তার সাথে ছিলেন রাব্বি যশুয়া। তারা টেম্পলকে বিধ্বস্ত অবস্থায় দেখেছিলেন।

    রাব্বি যওয়া বলেছিলেন, ‘বলতে কষ্টে বুক ফেটে যায়, এই সেই স্থান যেখানে ইসরাইলের পাপের প্রায়শ্চিত্ত হতো, তা ধ্বংস হয়ে গেছে!’

    রাব্বি ইয়োহানান বলেন, ‘বাছা আমার, দুঃখ পেয়ো না। আমাদের আরেকটি পাপমোচনের ব্যবস্থা আছে, তা এর মতোই কার্যকর। কিন্তু তা কী? তা হলো ভালোবাসা-দয়ার্ততা। বিষয়টি এভাবে বলা যায় : ‘আমি করুণা চাই, উৎসর্গ নয়।’ ৮

    জায়ন মতবাদে বাস্তব সহানুভূতি দীর্ঘ দিন ধরেই অনিবার্য পরিপূরক বিবেচনা করা হতো : এখন কেবল বদান্যতাই ইসরাইলের প্রায়শ্চিত্তের জন্য যথেষ্ট হবে বলে মনে হলো। এটি ছিল প্রাচীন দুনিয়ার একটি বিপ্লবী আইডিয়া। কারণ ওই সময় কোনো না কোনো ধরনের বলি ছাড়া ধর্ম প্রায় অকল্পনীয় ছিল। এখন টেম্পল হারিয়ে যাওয়ায় রাব্বিরা তাদের অনুসারী ইহুদিদের তাদের প্রতিবেশীর মাধ্যমে ঈশ্বরের সান্নিধ্য লাভের শিক্ষা দিলেন। অনেকে শিক্ষা দিলেন মিতজভোথ ‘তোমার প্রতিবেশীকে নিজের মতো ভালোবাসাবে’ ছিল ‘তাওরাতের মহান নীতি।’ কোনো মানুষের বিরুদ্ধে অপরাধকে খোদ ঈশ্বরকে অস্বীকার করার সমতুল্য বিবেচিত হলো। কারণ ঈশ্বরতো নারী-পুরুষকে তার রূপেই তৈরি করেছেন। ফলে ইহুদি আইনে খুন কেবল একটি অপরাধই নয়, এটি ধর্মদ্রোহিতা বিবেচিত হলো। সময়ের শুরুতে ঈশ্বর একটি একক মানুষকে সৃষ্টি করেছিলেন এটি শেখাতে যে একটি একক মানুষের জীবন ধ্বংস করার শাস্তি পুরো বিশ্ব ধ্বংস করার শাস্তির সমতুল্য হবে। একইভাবে একটি মানুষের জীবন রক্ষা মানে পুরো দুনিয়া রক্ষা করার সামিল।১১ কাউকে অপদস্থ করা, এমনকি তা যদি হয় কোনো গোয় বা ক্রীতদাস, ঈশ্বরের প্রতিকৃতি ধ্বংস করার সমতুল্য।১২ ইহুদিরা নিশ্চিতভাবেই উপলব্ধি করতে পেরেছিল যে অন্যদের সাথে তাদের লেনদেন ঐশী সাক্ষাত। এখন যেহেতু পবিত্র স্থানের সংস্পর্শে আসার সুযোগ আর নেই, তাই ইহুদিদের অবশ্যই মানুষের মধ্যেই তা খুঁজে নিতে হবে। ফারিসিরা সবসময়ই দানের ওপর গুরুত্ব দিত। তবে এখন টেম্পল হারানোর ফলে ঐশী সত্তার আরো বেশি মানবীয় ধারণায় আগের অধ্যায়ে বর্ণিত) পরিবর্তনের গুরুত্বে জোর দিতে সহায়ক হলো।

    রাব্বিরা একদিন তাদের টেম্পল আবার পুনঃনির্মিত হওয়ার আশাও ছেড়ে দেননি। শেষবার যখন টেম্পল ধ্বংস করা হয়েছিল, তখন সব প্রতিকূলতার মধ্যেও তা পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। তবে তারা বিশ্বাস করত যে এ ভবনটির পুনঃনির্মাণের কাজ ঈশ্বরের কাছে ছেড়ে দেওয়াই অনেক বিজ্ঞচিত ও নিরাপদ। কিন্তু তবুও জেরুসালেমের কথা ইহুদিদের ভুলে যাওয়া ঠিক হবে না। রাব্বিরা ফিলিস্তিন ত্যাগ নিরুৎসাহিত করে বিধান প্রণয়ন করেছিলেন। তারা বলতেন, সকাল ও সন্ধ্যার উৎসর্গের বদলে দিনে তিনবার ‘এইটিন বেনেডিকশনস’ (১৮ প্রার্থনা) আবৃতি করতে হবে। ইহুদিরা যেখানেই থাকত না কেন, তারা এসব প্রার্থনা আবৃতি করত। তারা সফরে থাকলে তারা বাহন থেকে নেমে জেরুসালেমের দিকে মুখ ফেরাত, কিংবা তাদের হৃদয় বিধ্বস্ত দেভিরের দিকে মুখ করত।১৩ এসব প্রার্থনায় দেখা যায় যে এত কিছু ঘটা সত্ত্বেও জেরুসালেম এখনো ঈশ্বরের আবাস বিবেচিত হচ্ছে :

    হে প্রভু আমাদের ঈশ্বর, আপনার জেরুসালেম, আপনার জাতি ও জেরুসালেমের প্রতি, আপনার নগরী ও জায়নের প্রতি, আপনার মহান গৌরবের, স্থায়ী স্থানের প্রতি, এবং আপনার টেম্পলের প্রতি, এবং আপনার আবাসের প্রতি, দাউদ পরিবারের রাজত্বের প্রতি, সত্যনিষ্ঠ ব্যক্তির প্রতি আপনার বিপুল করুণা বর্ষণের কথা মনে রাখবেন। আপনি মহাপবিত্র, হে প্ৰভু আমাদের ঈশ্বর, জেরুসালেমের নির্মাতা।১৪

    অনেক রাব্বি কল্পনা করতেন, শেখিনা (ব্যক্তিরূপে ঐশী উপস্থিতি) ঈশ্বরের দূরদর্শিতায় এখনো ধ্বংস থেকে টিকে থাকা দেভিরের পশ্চিম প্রাচীরের পাশে অবস্থান করছেন।১৫ অন্যরা মনে করত, শেখিনা অনিচ্ছাভরে জেরুসালেম ত্যাগ করছেন, একেবারে মন্থর গতিতে : তিন বছর পর্যন্ত তিনি ‘মাউন্ট অব অলিভেসে অবস্থান করেছিলেন, দিনে তিনবার কাঁদতেন। ১৬ ইহুদিরা স্মরণ করত যে ইজেকিল স্বপ্নবিভাবে মাউন্ট অব অলিভেসের ঢালু বেয়ে ওয়াইএইচডব্লিউএইচের দ্যুতি ফিরতে দেখেছিলেন। ফলে তারা তাদের পবিত্র নগরীতে ঈশ্বরের চূড়ান্ত প্রত্যাবর্তনের বিশ্বাসের ঘোষণা হিসেবে সেখানে সমবেত হতে ভালোবাসত।

    ইহুদিদের অনেকে সান্ত্বনার জন্য আরো দ্রুত মরমিবাদের দিকে ঝুঁকেছিল। এটি ছিল এমন ধরনের আধ্যাত্মিকতা যা রাব্বিরা অনেক সময় অবিশ্বাস করতেন। তবে মরমি সাধকেরা নিজেরা ঈশ্বরের স্বর্গীয় সিংহাসনে আধ্যাত্মিক সফর ও রাব্বানিক ইহুদি ধর্মের মধ্যে অসামঞ্জস্যতা দেখতে পেত না। বস্তুত, তারা প্রায়ই একাডেমিগুলোর আরো বিশিষ্ট রাব্বিদের কারো কারো সাথে তাদের স্বপ্নবিভাবের কথা বলতেন। টেম্পল হারানোর পর ‘সিংহাসন আধ্যাত্মিকতা’ সম্পূর্ণ নতুন প্রাসঙ্গিকতা লাভ করে। হায়, জাগতিক প্রতিকৃতি ধ্বংস হয়ে গেছে, তবে এর স্বর্গীয় আদিরূপ অধ্বংসযোগ্য। ইহুদিরা তখনো স্বর্গরাজ্যে তাদের কল্পিত আলিয়ায় সেখানে পৌঁছাতে পারে। ফলে ২ বারুচের গ্রন্থকার, তিনি টেম্পল ধ্বংস হওয়ার প্রায় ৩০ বছর পর লিখেছেন, জোর দিয়ে বলেছেন যে স্বর্গীয় জেরুসালেম শ্বাশত। এটি সময়ের আগে থেকেই ঈশ্বরের সাথে’ আছে এবং ‘আমি স্বর্গ নির্মাণের সিদ্ধান্ত গ্রহণের মুহূর্তেই এটি প্রস্তুত হয়েছে।’ এটি ঈশ্বরের হাতের তালুতে চির স্থায়ীভাবে এঁটে রয়েছে, একদিন এই স্বর্গীয় বাস্তবতা আরো একবার পৃথিবীতে নেমে আসবে।১৭ পুরনো পবিত্র স্থানে নশ্বর নগরীতে আবারো এটি বাস্তব অবয়ব গ্রহণ করবে, নশ্বর দুনিয়ায় ঈশ্বর তার জাতির মধ্যে বাস করবেন। প্রায় একই সময়ে ৪ ইউনুসের লেখক স্বর্গীয় জেরুসালেমের অবতারের একই স্বপ্নাবিভাবের কথা জানান। দুনিয়াবি জায়ন দুর্ভোগে পেয়েছে, নারা গেছে; কিন্তু স্বৰ্গীয় জায়ন এখনো ঈশ্বরের সাথে আছে। একদিন ‘এখন অদৃশ্য থাকা নগরীটি দৃশ্যমান হবে।’ এই নতুন জেরুসালেম হবে জাগতিক স্বর্গ : এখানে যারা বাস করবে, তারা ঈশ্বরের পূর্ণাঙ্গ সাহচর্য লাভ করবে; পাপ বিলীন হয়ে যাবে, মৃত্যুকে গ্রাস করবে বিজয়। ১৯ ইহুদি বিশ্বের ওপর ৭০ সালে নেমে আসা বিচ্ছেদের যন্ত্রণা, ক্ষতি, বিচ্যুতি দূর হয়ে যাবে, ইডেনের আদি সম্প্রীতি পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হবে।

    ইহুদি খ্রিস্টানেরাও সিংহাসনের স্বপ্নবিভাব দেখত। ডোমিটিয়ানের শাসনামলে, এ সময় রোমান কর্তৃপক্ষ খ্রিস্টানদের নির্যাতন করত, জন নামের এক ভ্রাম্যমাণ প্রচারকের স্বর্গীয় টেম্পলের স্বপ্নদর্শন করেছিলেন। তাতে তিনি দেখেন যে শহিদরা হয়েছে নতুন পুরোহিত, তারা সাদা পোশাক পরে, সিংহাসনের সামনে অবস্থান করে। তিনি সুকোথের স্বর্গীয় প্রার্থনাবিধির কল্পনা করেছিলেন। তবে তিনি পুরনো মতবাদ থেকে এর গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তনের বিষয়টিও ধরতে পেরেছিলেন। সেকেন্ড টেম্পলের হৃদয়ে সবসময় একটি সম্পূর্ণ শূন্যতাও ছিল : আর্ক হারিয়ে যাওয়ায় দেভির ছিল ফাঁকা। তবে জন দেখলেন, নিজেকে ঈশ্বরের সাথে আধ্যাত্মিকভাবে চিহ্নিত করে খ্রিস্ট স্বর্গীয় সিংহাসনে বসেছেন। এ কারণে তিনি ছিলেন পুরনো জায়ন মতবাদের পূর্ণতা বিধানকারী। যদিও এসব খ্রিস্টান তাদের পাশে থাকা ইহুদিদের আশার সাথে একমত পোষণ করতেন, চূড়ান্ত পুনঃপ্রতিষ্ঠার অপেক্ষায় থাকত। একদিন স্বর্গীয় জেরুসালেম পৃথিবীতে নেমে আসবে। চূড়ান্ত স্বপ্নবিভাবে জন দেখেছিলেন, ‘পবিত্র নগরী স্বর্গ থেকে নেমে আসছে। এতে ঈশ্বরের সব উজ্জ্বল জ্যোতি রয়েছে। এই নতুন জেরুসালেমে কোনো টেম্পল থাকবে না, কারণ ওই স্থানটি গ্রহণ করেছেন খ্রিস্ট। ঐশী ব্যক্তিটি এখন ‘অধিষ্ঠানের’ মূল কেন্দ্র। তবে জেরুসালেম এখনো জনের মতো ইহুদি খ্রিস্টানদের কাছে উদ্দীপ্ত প্রতীক যে তিনি একে ছাড়া ঈশ্বরের চূড়ান্ত মহাপ্রলয় কল্পনা করতে পারেন না। স্বর্গীয় নগরীটি রাজ্য হিসেবে পূর্ণতা প্রাপ্তির জন্য দুনিয়ার ওপর বাস্তব অবয়ব গ্রহণ করবে। সবশেষে জাগতিক স্বর্গ পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হবে, জীবনের নদী পুরো দুনিয়ায় আরোগ্য বিধান করতে ঈশ্বরের সিংহাসনের নিচ থেকে বের হয়ে আসবে।১

    ইহুদি ও খ্রিস্টানেরা অনেক দিক থেকেই একইভাবে ঈশ্বরের সান্নিধ্য অর্জন করছিল। তারা যথাক্রমে জেরুসালেম ও যিশুকে ঐশী সত্তার প্রতীক হিসেবে দেখছিল। সিংহাসন মরমিদের অনেকে জেরুসালেম নিয়ে যেভাবে ভাবছিল, খ্রিস্টানেরাও সেভাবেই যিশু সম্পর্কে চিন্তা করতে শুরু করে দিয়েছিল : তিনি হলেন শুরু থেকে ঈশ্বরের সাথে থাকা ঐশী বাস্তবতার অবতার এবং মানবতার অনুষঙ্গ পাপ, মৃত্যু ও হতাশা থেকে মুক্তিদাতা। কিন্তু এই মিল সত্ত্বেও ইহুদি ও খ্রিস্টানেরা একে অপরের প্রতি চরমভাবে বৈরী ও আত্মরক্ষামূলক অবস্থায় ছিল। আমরা যতটুকু জানি যে কোনো পৌত্তিলিক খ্রিস্টান মাউন্ট সায়ন বা জেরুসালেমের বিধ্বস্ত নগরীতে বসবাস করছিল না। জন দি প্রিচারের বর্ণিত স্বর্গীয় জেরুসালেমের ব্যাপারে আগ্রহী থাকলেও নশ্বর নগরীর প্রতি আগ্রহী ছিল না। জেরুসালেম ও ইহুদি জনসাধারণ সম্পর্কে খ্রিস্ট ধর্মের পল সংস্করণের অনুসারীরা কী ভাবত তা আমরা ৮০ ও ৯০-এর দশকে লেখা ম্যাথু, লুক ও জনের গসপেলগুলোতে দেখতে পাই।

    মজার ব্যাপার হলো, পৌত্তলিক খ্রিস্টান লুকই মূল বিশ্বাসের প্রতি সবচেয়ে বেশি ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করতেন। তার গসপেল শুরু ও শেষ হয় জেরুসালেমে : এটি শুরু হয় হেখালে জন দি ব্যাস্টিস্টের বাবা জাচারিয়াসের স্বপ্নাবিভাব দিয়ে, এবং শেষ হয় মাউন্ট অব অলিভস থেকে যিশুকে স্বর্গে আরোহণ প্রত্যক্ষ করে শিষ্যদের জেরুসালেমে ফিরে আসার বর্ণনা দিয়ে। তারা ‘পূর্ণ আনন্দে জেরুসালেমে ফিরবে; এবং তারা ঈশ্বরের প্রশংসা করতে থাকা টেম্পলের মধ্যে নিরবিচ্ছিন্নভাবে থাকতে থাকবে।২২ নিরবচ্ছন্নতা লুকের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ, ঠিক যেমন প্রাচীন কালের শেষ সময়ে অন্যদের কাছে ছিল। উদ্ভাবন ও অভিনব কিছু ছিল সংশয়মূলক। ধর্মীয় লোকজনের কাছে এটি জানা খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিল যে তাদের বিশ্বাস অতীতের পবিত্রতায় গভীরভাবে প্রোথিত। এ কারণে পলের মতো লুকও জেরুসালেম ও ইহুদি ধর্মের সাথে সব সম্পর্ক ছিন্ন করতে চাননি। যিশু পবিত্র নগরীতে প্রচারকাজ শুরু করতে তার শিষ্যদের নির্দেশ দিয়েছিলেন। তখনো সেটি ছিল বিশ্বের কেন্দ্র ও স্থান, যেখানে প্রতিটি নবী অবশ্যই তার নিয়তি পূরণ করতেন। ‘অ্যাক্টস অব অপসলসে’ লুক তার নায়ক পলকে জেরুসালেমের প্রতি খুবই শ্রদ্ধাশীল এবং জেমস দি জাদিকের চেয়ে ভিন্ন করে দেখিয়েছেন। তিনি এই প্রাথমিক সময়ের সহযোগিতাকে অত্যন্ত আদর্শকৃত ছবিতে উপস্থাপন করেছেন, চেষ্টা করেছেন পল ও জেমসের সম্পর্কে যে তিক্ততা দেখা গিয়েছিল, তা লুকিয়ে রাখতে। লুক দেখিয়েছিলেন, যিশুর অনুকরণ করে পল এমনকি জীবনকে বিপন্ন করে হলেও জেরুসালেমের প্রতি বাধ্যবাধকতা ও অনুপ্রেরণা অনুভব করতেন। তবে লুক একইভাবে স্পষ্ট করে জানিয়েছেন, খ্রিস্টানেরা জেরুসালেমে থাকতে পারে না : তাদেরকে অবশ্যই পবিত্র নগরী থেকে গসপেল নিয়ে ‘পুরো জুদা ও সামারিয়া থেকে চলে যেতে হবে পৃথিবীর শেষ প্রান্তে। ২৩ খ্রিস্টানদের জন্য লুকের প্রিয় নাম ছিল ‘পথ’ : যিশুর অনুসারীরা সবসময় সফরে থাকে, এই দুনিয়ায় তাদের বসবাস করার মতো কোনো নগরী নেই।

    অবশ্য ম্যাথু ও জন জেরুসালেম বা ইহুদি জনসাধারণ সম্পর্কে অনেক কম ইতিবাচক ছিলেন। উভয়ে ইহুদি থেকে পলের চার্চে ধর্মান্তরিত হয়েছিলেন। তাদের লেখালেখিতে খ্রিস্টের প্রকৃতি, জেরুসালেমের মর্যাদার মতো বিষয়ে ইহুদি ও খ্রিস্টানদের মধ্যে ওই সময়ে বিদ্যমান কিছু বিতর্ক প্রতিফলিত হয়ে থাকতে পারে। সন্দেহাতীতভাবে বলা যায়, নশ্বর জায়ন নিয়ে সংশয়ে ছিলেন ম্যাথু। এটি একসময় পবিত্র স্থান হলেও- তিনিই একমাত্র ইভানজেলিস্ট, যিনি একে পবিত্র নগরী হিসেবে অভিহিত করেছেন- এই নগরীর যিশুকে প্রত্যাখ্যান করা, তাকে মৃত্যুর মুখে ফেলার বিষয়টি আগেই অন্তর্দৃষ্টিতে দেখতে পেয়ে তিনি এর ধ্বংসের ভব্যিদ্বাণী করেছিলেন। জেরুসালেম পরিণত হয় অপরাধের নগরী। ম্যাথু যখন ৭০ সালে নগরীর ওপর আপতিত বিপর্যয়কে যিশুর ভবিষ্যদ্বাণী হিসেবে অভিহিত করেন, তখন তিনি একে ইতিহাসের সমাপ্তিতে ঘটা বিপর্যয়বাদের সাথে সম্পর্কিত করেন। তিনি জেরুসালেম ধ্বংসকে যিশুর গৌরবময় প্রত্যাবর্তনের সূচনাকারী বিপর্যয় বিবেচনা করেছিলেন। নগরীর বাইরের গলগোথায় যিশু যখন মারা যান, তখন দেভির থেকে হেখালকে বিভক্তকারী ‘পর্দা’ দুই টুকরা হয়ে গিয়েছিল : পুরনো টেম্পল মতবাদ বাতিল হয়ে গেছে, এখন সবাই- কেবল ইহুদিদের পুরনো পুরোহিত সম্প্রদায়ই নয়- খ্রিস্ট ব্যক্তির ঐশী সত্তায় প্রবেশ করতে পারে। জন এই বিষয়কে আরো জোর দিয়ে তুলে ধরেছেন। এই সময় অন্যদের মতো তিনি জোরালোভাবে বলেন, ঈশ্বরকে আর টেম্পলে পাওয়া যাবে না, তাকে পাওয়া যাবে ঐশী মানবের মধ্যে। জন তার গসপেলের প্রস্তাবনায় দৃঢ়তার সাথে বলেন, যিশু হলেন লোগোস (মূর্ত অবস্থায় উচ্চারিত ঈশ্বরের বাণী) তথা সময়ের সূচনায় ‘ঈশ্বরের সাথে থাকা ‘বাণী’ এবং পৃথিবী সৃষ্টির সময় উচ্চারিত ঈশ্বরের ‘বাণী’। এই স্বর্গীয় বাস্তবতা এখন দুনিয়ায় নেমে এসে মূর্ত রূপ পেয়েছে, মানব জাতির সামনে ঈশ্বরের ‘দ্যুতি’ প্রকাশ করছে।২৫ জন লিখেছিলেন গ্রিকে। হিব্রু ‘শেখিনার’ কোনো গ্রিক প্রতিশব্দ ছিল না। অথচ এ শব্দটি দিয়েই ইহুদিরা খোদ ঈশ্বরের চরম ঐশী বাস্তবতা থেকে আলাদা করার ব্যাপারে সচেতন ছিল। অধিকন্তু যিশুকে ‘প্রেরিত বার্তা’ ও ঈশ্বরের ‘দ্যুতি’ হিসেবে দেখে জন হয়তো তাকে মানব অবয়বে শেখিনা বিবেচনা করেছিলেন। ২৬

    তবে ম্যাথুর মতো জনও ইহুদিদের প্রতি চরমভাবে বৈরী ছিলেন, তাদেরকে খ্রিস্টকে বারবার প্রত্যাখ্যান করতে দেখিয়েছেন। উভয় ইভানজেলিস্ট এর মাধ্যমে ইহুদি লোকজনের প্রতি বিদ্বেষপূর্ণ পরিবেশ সৃষ্টির ভিত্তি প্রস্তুত করেছিলেন যার পরিণতিতে খ্রিস্টান ইতিহাসের সবচেয়ে লজ্জাজনক কিছু ঘটনা ঘটেছিল। আমরা পরে দেখতে পাব, ক্রমবর্ধমান হারে খ্রিস্টানদের কাছে তাদের আধ্যাত্মিক পূর্বসূরিদের সহ্য করা অসম্ভব মনে হয়েছিল, একেবারে প্রাথমিক সময় থেকেই তাদের নিজস্ব বিশ্বাসের শুদ্ধতাকে ইহুদি ধর্মের পরাজয়ের ওপর নির্ভরশীল হিসেবে দেখছিল। এর ফলে জন ইঙ্গিত দেন যে টেম্পল মতবাদ প্রত্যাখ্যান করেই যাত্রা শুরু করেছিলেন যিশু। তিনি যিশুকে তার মিশনের শেষে নয়, একেবারে শুরুতেই জেরুসালেমে পাঠিয়েছিলেন, কোর্ট অব দি জেনটিলসে মুদ্রা বিনিময়কারীদের তাড়িয়ে দিতে দেখিয়েছেন। তিনি ইহুদিদের বলেন, ‘এই টেম্পল ধ্বংস করে ফেলো, তিন দিনের মধ্যে আমি আবার তা নির্মাণ করব।’ জন ব্যাখ্যা করে বলেন, তিনি তার দেহের টেম্পলের কথা বলেছিলেন।২৭ এর পর থেকে লগোসের উত্থিত দেহ এমন স্থান হবে, যেখানে লোকজন ঐশী উপস্থিতি দেখতে পাবে। ফলে একেবারে শুরু থেকেই যিশু ও ইহুদি ধর্মের সবচেয়ে পবিত্র প্রতিষ্ঠানটির মধ্যে সঙ্ঘাত ছিল এবং টেম্পলের দিন ফুরিয়ে আসছিল। যিশু পরিষ্কার করেছেন যে জেরুসালেম, মাউন্ট জেরিজিম, বেথালের মতো পবিত্র স্থানগুলোকে বাদ দেওয়া হয়েছে।২৮ শেখিনা টেম্পল পারিপার্শ্বিকতা থেকে প্রত্যাহৃত হয়েছে। ২৯ এই ঐশী বাণী প্রত্যাখ্যান করার মাধ্যমে ইহুদিরা নিজেদেরকে অন্ধকারের শক্তির সাথে মিত্রতা গড়েছে।

    খ্রিস্টানেরা নিশ্চিতভাবেই জেরুসালেমের পরবর্তী ঘটনায় ঈশ্বরের হাত রয়েছে বলে ধরে নিয়েছিল। ১১৮ সালে রোমান জেনারেল পাবলিয়াস অ্যালিয়াস হ্যাড্রিয়ানাস সম্রাট হন। তিনি ছিলেন ওই পদে অভিষিক্ত অন্যতম যোগ্য লোক। তার উচ্চাভিলাষ কেবল সাম্রাজ্য সম্প্রসারণ নয়, একে সুসংহত করাও ছিল। হ্যাডিয়ান একটি শক্তিশালী ও ঐক্যবদ্ধ রাষ্ট্র, একটি ভ্রাতৃত্ব বন্ধন গড়তে চেয়েছিলেন, যাতে করে বর্ণ ও জাতীয়তা নির্বিশেষে সব নাগরিক স্বাচ্ছন্দ্যে বসবাস করতে পারবে। তার এই ইচ্ছা প্রচার ও পূরণের জন্য তিনি প্রধান যে পন্থা অবলম্বন করেছিলেন তা হলো সাম্রাজ্যে রাষ্ট্রীয় সফর। হ্যাড্রিয়ান তার রাজত্বকালের প্রায় অর্ধেক সময় অতিবাহিত করেছে বিশাল ও জাঁকজমকপূর্ণ সহকর্মীদের নিয়ে পথে। এর মানে হলো, তিনি পুরো রাজধানী নগরীকে নিয়ে পথ চলে পথচারীদের মোহিত করতে চেয়েছেন। প্রতিটি নগরীতে তিনি আবেদন শুনেছেন, স্থানীয় লোকজনকে উপহার দিয়ে এই আশা করেছেন যে তিনি পেছনে একটি সফল ও শক্তিশালী সরকারের ভাবমূর্তি রেখে যাচ্ছেন। তিনি বিশেষভাবে চাইতেন ভবন বা স্মৃতিসৌধ আকারে তার সফরের স্থায়ী স্মারক রেখে যেতে। এসবের মধ্যে ছিল অ্যাথেন্সে জিউসের মন্দির বা অ্যাথেন্স, অ্যান্টিয়ক, করিনথ ও ক্যাসারিয়ায় নহর। এটি রোমের সাথে প্রত্যক্ষ সংযোগ সাধন করত, জনগণের প্রতি সম্রাটের বদান্যতা স্থায়ীভাবে মুদ্রিত থাকত। হ্যাড্রিয়ান ১৩০ সালে জেরুসালেমে এসে সিদ্ধান্ত নিলেন যে জুদার লোকজনের প্রতি তার উপহার হতে পারে একটি নতুন নগর। উদার সম্রাট জেরুসালেমের জঘন্য ধ্বংসাবশেষ ও জনশূন্য সেনা শিবিরের স্থানে একটি আধুনিক মেট্রোপলিশ গড়লেন। নাম দিলেন আলিয়া ক্যাপিটোলিনা। এতে তার নিজের নাম মুদ্রিত থাকল, আবার রোম ক্যাপিটলের পৃষ্ঠপোষক দেবতাদের প্রতিও সম্মান দেখানো হলো।

    হ্যাড্রিয়ানের পরিকল্পনা ইহুদি জনসাধারণের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করল। আসলে যা ঘটতে যাচ্ছে তা হলো ওয়াইএইচডব্লিউএইচের পবিত্র টেম্পলের স্থান মাউন্ট জায়নে জুপিটারের মন্দির নির্মিত হতে যাচ্ছে। এছাড়া অন্য দেবদেবীদের মন্দিরও সারা নগরী ছেয়ে যাবে। গত কয়েক শ’ বছরে ‘জেরুসালেম’ ও ‘জায়ন’ সারা বিশ্বে ইহুদিদের পরিচিতির মূল বিষয়ে পরিণত হয়েছিল। এ দুটি শব্দ ঈশ্বরের নামের সাথে অবিভাজ্য। এখন এসব নামের স্থানে পৌত্তলিক সম্রাটের নাম ও তার মূর্তিগুলো স্থান পাবে। ইহুদি জেরুসালেম ধ্বংসস্তূপ হয়ে পড়েছিল ৬০ বছর ধরে। এখন এটি রাজকীয় শক্তির নির্দেশে চাপা পড়ে যাবে। এটি আর কখনো জেগে ওঠতে পারবে না। জায়ন ও এর সাথে সংশ্লিষ্ট সবকিছুই পৃথিবীর বুক থেকে মুছে যাবে। এখান থেকে জেরুসালেমের লোকজন যুদ্ধ ও ধ্বংসের সাথে পরিচিত হয়েছিল; তারা দুবার বিজয়ী সেনাবাহিনী নগরীকে মাটির সাথে মিশিয়ে দেওয়া দেখেছে, অনেকবার তাদের টেম্পল অপবিত্র হয়েছে, প্রাচীরগুলো ধ্বংস করা হয়েছে। কিন্তু এই প্রথম একটি নির্মাণ প্রকল্প বৈরী কাজ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে যাচ্ছে। জেরুসালেমে ভবন সবসময়ই ধর্মীয় তৎপরতা। এটি বিশৃঙ্খলা ও ধ্বংসকে ঠেকিয়ে রাখে। কিন্তু এখন নির্মাণ ও ভবন বিজয়ী সাম্রাজ্যের হাতে অস্ত্রে পরিণত হলো। আলিয়া ক্যপিটোলিনা মন্দির বাস্তবতা ও এর জনগণের অন্তরাত্মার সামগ্রিকতাকে প্রতীকিভাবে তুলে ধরা ইহুদি জেরুসালেমকে মুছে দেবে। রোমান নগরীর অধীনে এর সবই বিলীন হয়ে যাবে। এই রাজকীয় নির্মাণ কর্মসূচি হবে সৃষ্টি-বিনাসী : বিশৃঙ্খলা ফিরে আসবে। পরাজিত লোকজন তাদের পবিত্র নগরী ও এর প্রিয় মাইলফলকগুলো রাস্তা, সৌধ ও বৈরী শক্তির প্রতীকের নিচে আড়াল হয়ে যাবে এবং তাদের মনে বিস্মৃত হয়ে যাওয়ার অনুভূতির সৃষ্টি হবে, জেরুসালেমের ইতিহাসে এমন ঘটনা এটিই শেষ নয়।

    বার কুচবার আরামাইক ভাষায় লেখা এক চিঠিতে সুকোথের শাস্ত্রীয় অনুষ্ঠান পালনের জন্য খেজুরের ডাল, মেদিগাছ, লেবু ও উইলো চেয়ে অনুরোধ করেন। খুব সম্ভবত বার কুচবা বিধ্বস্ত টেম্পল মাউন্টে মতবাদটি আবার চালু করার চেষ্টা করেছিলেন।

    হ্যাড্রিয়ানের ব্যাপারে স্পষ্টভাবেই বলা যায়, তিনি প্রায় নিশ্চিতভাবেই এই প্রতিক্রিয়া অনুমান করতে পারেননি। তার মনে হয়েছিল, এই ভয়াবহ ধ্বংসস্তুপের মধ্যে একটি আনন্দদায়ক, আধুনিক নগরী কে না পছন্দ করবে? নির্মাণ সৃষ্টি করবে চাকরি, নতুন মেট্রোপলিস সেখানে নিয়ে আসবে সম্পদ। অতীত শত্রুতার অস্বাস্থ্যকর স্মৃতি জাগানিয়া জেরুসালেমের ধ্বংসস্তুপের মধ্যে নতুন নগরীটি মাথা তুলে দাঁড়ালে তা অবশ্যই ভ্রাতৃত্ববোধ ও সম্প্রীতির স্বার্থে আগের সবকিছুকে ছাপিয়ে যাবে। ইহুদি ও রোমানদেরকে অবশ্যই তাদের অতীতকে পেছনে ফেলে এই অঞ্চলের শান্তি ও সমৃদ্ধির জন্য একসাথে কাজ করতে হবে। ইহুদি ধর্মের প্রতি হ্যাড্রিয়ানের কোনো ভালোবাসা ছিল না। এটি তার কাছে খুবই সেকেলে ধর্ম মনে হয়েছিল। বিশেষ করে ইহুদিদের একগুঁয়েমি সাংস্কৃতিকভাবে ঐক্যবদ্ধ সাম্রাজ্যের আদর্শের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ছিল : তাদেরকে অবশ্যই টেনে- প্রয়োজনে শক্তিপ্রয়োগ করে- আধুনিক বিশ্বে নিয়ে যেতে হবে। প্রগতি ও আধুনিকতার নামে কোনো জাতির পরিচিতির অনুভূতির সাথে অবিচ্ছেদ্যভাবে জাড়িয়ে থাকা ঐতিহ্যকে ধ্বংসকারী প্রথম শাসক ছিলেন না হ্যাড্রিয়ান। ১৩১ সালে তিনি বেশ কিছু ফরমান জারি করেন। এসবের উদ্দেশ্য ছিল ইহুদিদের তাদের অদ্ভূত রীতিনীতি পরিত্যাগ করে গ্রিকো-রোমান বিশ্বের অন্য সবার সাথে সামঞ্জাস্যপূর্ণ হওয়া। খতনা করা- তার দৃষ্টিতে ছিল বর্বোচিত কাজ- রাব্বিদের উপদেশ, তাওরাতের শিক্ষা, প্রকাশ্যে ইহুদি সভা সবাই নিষিদ্ধ ঘোষিত হলো। ইহুদিদের অস্তিত্বের প্রতি এটি ছিল আরেকটি আঘাত। এসব আদেশ অনুমোদিত হওয়ার পর এমনকি সবচেয়ে উদার রাব্বিও উপলব্ধি করতে পারলেন যে আরেকটি যুদ্ধ অনিবার্য।

    এবার ইহুদিরা অপ্রত্যাশিতভাবে বিপদে পড়তে চাইছিল না। তাদের নতুন অভিযান অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে প্রণয়ন করা হয়েছিল, একেবারে ক্ষুদ্রতম বিষয়গুলোর দিকেও নজর রাখা হয়েছিল। সব প্রস্তুতি সম্পূর্ণ হওয়ার আগে কোনো লড়াই হয়নি। বিদ্রোহে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন সাইমন বার কোসেবা। এই দৃঢ়চেতা, বাস্তববাদী সেনানি সামনাসামনি যুদ্ধ সতর্কভাবে এড়িয়ে গেরিলা পদ্ধতিতে তার সৈন্যদের পরিচালিত করেন। গ্রামীণ এলাকায় ইহুদিদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য টেনথ লিজিয়ন জেরুসালেম ত্যাগ করা মাত্র বার কোসেবার সৈন্যরা নগরীটি দখল করে। বার কোসেবা তার চাচা ইলিজার (পুরোহিত) সহায়তায় অবশিষ্ট সব পৌত্তলিককে নগরী ত্যাগ করতে বাধ্য করেন। তিনি সম্ভবত টেম্পল মাউন্টে বলির মতবাদও আবার চালু করার চেষ্টা করেছিলেন। মহান রাব্বি আকিভা, সর্বকালের অন্যতম পণ্ডিত ও ওই আমলে তিনিই অন্যতম মরমি সাধক, মেসাইয়া হিসেবে বার কসেবাকে অভিহিত করে তাকে বার কোখবা (তারকার সন্তান) নাম দেন। এই আলোতে বার কোসেবা নিজেকে কী বিবেচনা করতেন, সে ব্যাপারে আমাদের কোনো ধারণা নেই : তিনি সম্ভবত তার অত্যন্ত সফল অভিযান নিয়েই ব্যস্ত ছিলেন, ধর্মতাত্ত্বিক আলোচনা করার সময়ই পেতেন না। তবে জেরুসালেমে মুদ্রিত মুদ্রায় ‘রাজপুত্র সাইমন’ ও ‘পুরোহিত ইলিজার’ খোদাই থাকায় ধারণা করা যেতে পারে, তারা নিজেদেরকে রাজসিক ও পুরোহিতোচিত মেসাইয়া বিবেচনা করতেন। অর্থাৎ জেরুবাবেলের পর জেরুসালেমে তাদেরকে বিবেচনা করা হচ্ছিল যৌথ উদ্ধারকারী। আরেকটি মুদ্রায় খোদিত ছিল ‘জেরুসালেমের মুক্তির জন্য’ শব্দগুলো। তবে তা ছিল ব্যর্থ। বার কোসেবা ও তার লোকজন তিন বছর পর্যন্ত তাদের বিদ্রোহ ধরে রাখতে পেরেছিলেন। শেষ পর্যন্ত হ্যাডিয়ানকে তার সেরা জেনারেলদের অন্যতম সেক্সটাস জুলিয়াসকে জুদায় পাঠাতে বাধ্য হন। শক্তিশালী রোমের বিরুদ্ধে অনির্দিষ্টকালের জন্য লড়াই চালিয়ে যাওয়া ক্ষুদ্র ইহুদি সেনাবাহিনীর পক্ষে সম্ভব ছিল না। তখনো প্রাচীর বা দুর্গবিহীন জেরুসালেম রক্ষা করা ছিল অসম্ভব। রোমানরা পরিকল্পিতভাবে জুদা ও গ্যালিলিতে একটির পর একটি ইহুদি ঘাঁটি নিশ্চিহ্ন করে ফেলছিল। ডিও ক্যাসিয়াস আমাদের বলছেন যে রোমানরা ৫০টি দুর্গ দখল করে, ৯৮৫টি গ্রাম ধ্বংস করে, ৫৮০,০০০ ইহুদি সৈন্যকে হত্যা করে : ‘ক্ষুধায়, মহামারীতে, আগুনে কত লোক যে মারা গেছে, তাদের হিসাব কেউ রাখেনি। সবশেষে ১৩৫ সালে বার কোসেবাকে জেরুসালেম থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হয়, বেথারে তার শেষ দুর্গে তাকে হত্যা করা হয়। তবে ইহুদিরা রোমানদের ওপর এত ভয়াবহ ক্ষয়ক্ষতি সাধন করতে সক্ষম হয়েছিল ইহুদিরা যে হ্যাড্রিয়ান যখন সিনেটে বিজয় সম্পর্কে অভিহিত করতে যান, তখন তিনি প্রচলিত পরিভাষা ‘আমি ভালো আছি, আমার সেনাবাহিনী ভালো আছে’ ব্যবহার করতে পারেননি।৩১ ইহুদিরা আর অবজ্ঞেয়, পরাজিত জাতি বিবেচিত হলো না। এই দ্বিতীয় যুদ্ধে তাদের কর্মকাণ্ড রোমের অনীহ শ্রদ্ধা অর্জন করে।

    অবশ্য এটি ইহুদিদের সামান্যই স্বস্তি দিয়েছিল। যুদ্ধের পর ইহুদিদেরকে জেরুসালেম ও সমগ্র জুদায় নিষিদ্ধ করা হয়। মাউন্ট সায়নে থাকা ক্ষুদ্র সম্প্রদায়কে হটিয়ে দেওয়া হয়। নগরীর আশপাশে কোনো ইহুদি সম্প্রদায়ের কেউ থাকল না। ফিলিস্তিনের ইহুদিরা এখন গ্যালিলিতে সমবেত হলো : তাইবেরিয়াস ও সেফোরিস হলো তাদের প্রধান নগরী। তারা পবিত্র নগরীকে চূড়ান্তভাবে নিশ্চিহ্ন করা ও আলিয়া ক্যাপিটোলিনা সৃষ্টির বেদনাদায়ক খবর শুনল। কাজটির দায়িত্ব অর্পণ করা হয়েছিল পোপের দূত রাফাস তিমেয়াসের ওপর। প্রথমে নগরী ও ধ্বংসাবশেষ গুঁড়িয়ে সমান করা হয়েছিল। তারপর নতুন বসতি স্থাপনের জন্য প্রাচীন রোমান শাস্ত্রাচার অনুসরণ করা হয়েছিল।৩২ ইহুদিদের জন্য এটি দৃশ্যত ছিল মিকার ভবিষ্যদ্বাণী পরিপূর্ণ হওয়া : ‘মাঠের মতো চষা হবে জায়ন। ৩৩ হ্যাড্রিয়ানের পরবর্তী পরিবর্তন ছিল জনমানবহীন স্থানটিকে আধুনিক হেলেনিক নগরীতে পরিণত করা, যেখানে থাকবে মন্দির, গণ-স্নানাগার, নিম্ফকে (যার আরোগ্য করার ক্ষমতা ছিল বলে ধরা হতো) উৎসর্গ করে একটি চৌবাচ্চা, দুটি বাজার। একটি ফোরাম ছিল নগরীর পূর্ব দিকে, বর্তমানের স্টেফেন্স গেটের কাছে), অপরটি ছিল ওয়েস্টার্ন হিলের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ স্থানে, যা এখন মুরিস্তান স্কয়ার নামে পরিচিত। নগরীর সর্বোচ্চ স্থান সাবেক হেরড প্রাসাদেই অবস্থান করে টেনথ লিজিয়নের শিবির। হ্যাড্রিয়ান কোনো নতুন নগর-প্রাচীর নির্মাণ করেননি, তবে ধারাবাহিক কিছু সৌধ তোরণ নির্মাণ করেন। একটি নির্মাণ করা হয়েছিল বার কসেবার বিরুদ্ধে জয়ের স্মারক হিসেবে নগরীর প্রায় ৪৪০ গজ উত্তরে, অপরটি ছিল আলিয়ার প্রধান প্রবেশপথ। এটি নির্মাণ করা হয়েছিল দামাস্কাস গেটের স্থানে। দুটি ফোরামেও ছিল আরো দুটি তোরণ। পূর্ব দিকের ফোরামের তোরণটি বর্তমান ইচে হোমো আর্চ নামে পরিচিত। কারণ খ্রিস্টানেরা মনে করে, এখানেই যিশুকে জনসাধারণের সামনে প্রদর্শন করেছিলেন পিলেত। তিনি চিৎকার করে বলেছিলেন : ‘নিপাত যাও!’৩৪ আলিয়ার উত্তরে প্রধান প্রবেশপথটি একটি স্তম্ভ-সজ্জিত স্কয়ার ছিল। এতে সম্রাটের একটি মূর্তি ছিল। আলিয়ার প্রধান দুটি রাস্তা (কারডিনেস তথা নগরীর কব্জা নামে পরিচিত) স্কয়ার থেকে বের হয়ে উত্তর দিকের প্রধান প্রবেশপথ পর্যন্ত গিয়েছিল : একটি কারডো (প্রাচীন রোমের নগর পরিকল্পনার অপরিহার্যভাবে থাকা নর্থ-সাউথ স্ট্রিট) বর্তমানের ভ্যালি স্ট্রিটের (তারিক আল-ওয়াদ) রুটের পাশাপাশি এগিয়ে গিয়েছিল। আর কারডো ম্যাক্সিমাস ওয়েস্টার্ন হিলের প্রান্ত ঘেঁসে ছিল। হ্যাড্রিয়ান একটি রাজপথের নেটওয়ার্কও নির্মাণ করেছিলেন। এটি এখনো মোটামুটিভাবে রয়েছে। এটিই বর্তমানের নগরীর চলাচল পথের ভিত্তি হিসেবে রয়ে গেছে।

    অবশ্য ইহুদিদের জন্য আরো পীড়াদায়ক বিষয় ছিল ধর্মীয় প্রতীকগুলো। ওয়াইএইচডব্লিউএইচের পবিত্র নগরীতে এগুলো মহাদম্ভে প্রদর্শিত হচ্ছিল। সত্যিকার অর্থে তিন ক্যাপিটোলাইন ঈশ্বর জুটিটার, জুনো ও মিনার্ভার প্রতি উৎসর্গ করা হয়েছিল আলিয়াকে। তবে ইহুদি যুদ্ধের পর সম্ভবত জুপিটার মন্দিরের জন্য আরো ভালো স্থান হিসেবে পুরনো টেম্পল মাউন্টকে বাছাই করেছিলেন হ্যাড্রিয়ান। হেরডের প্লাটফর্মের ওপর কোনো পৌত্তলিক মন্দির থাকার কথা কোনো মুসাফিরই উল্লেখ করেননি। তবে তারা সেখানে দুটি মূর্তি দেখার কথা জানিয়েছেন : একটি হ্যাড্রিয়ানের, অপরটি তার উত্তরসূরি অ্যান্টোনিনাস পিয়াসের। জুপিটার টেম্পলটি হয়তো ওয়েস্টার্ন হিলের ওপর আলিয়ার প্রধান বাণিজ্যিক ফোরামের পাশে নিৰ্মাণ করা হয়েছিল। আফ্রিদিতির একটি মন্দিরও নির্মাণ করা হয়েছিল গলগোথা পাহাড়ের কাছে, ওয়েস্টার্ন ফোরামের পাশে। পরবর্তীকালে খ্রিস্টানেরা অভিযোগ করেছিল, হ্যাড্রিয়ান পরিকল্পিতভাবে এই পবিত্র স্থানটির অবমাননা করেছিলেন। তবে খুব সম্ভবত জেরুসালেমে ইহুদি খ্রিস্টানদের গোপন চার্চের অস্তিত্ব সম্পর্কে অবগতই ছিলেন না সম্রাট। সেন্ট জেরোমে (আনুমানিক ৩৪২-৪২০) বিশ্বাস করতেন, এ মন্দিরটি জুপিটারকে উৎসর্গ করা। তবে গলগোথা পাহাড়ের শীর্ষদেশটি আফ্রোদিতির মূর্তি-সংবলিত পবিত্র স্থানের প্লাটফর্মের ওপরে ছিল। জুপিটারের মন্দির কিভাবে দেবীর বিখ্যাত মূর্তির কাছে গেল সে ব্যাখ্যা তিনি দেননি। কারণ নগরীর এই অংশের ভূমি এত অমসৃণ ছিল যে স্থপতিদেরকে প্লাজার জন্য তুলনামূলক ছোট সহায়ক প্রাচীর, টেম্পল মাউন্টে হেরড যেভাবে করেছিলেন, নির্মাণ করে শূন্যস্থান ভরাট করতে হয়েছিল। আলিয়া এখন পুরোপরি পৌত্তলিক, অ-ইহুদি নগরী। অন্য যেকোনো রোমান উপনিবেশ থেকে এর কোনো পার্থক্য নেই। তৃতীয় শতক নাগাদ শহরটি পূর্ব দিকে বিস্তৃত হয়েছিল। টেম্পল মাউন্টের দক্ষিণ প্রান্তে বিশাল ভবন ছিল। ২৮৯ সালে টেনথ লিজিয়ন আলিয়া ত্যাগ করলে রোমানরা নতুন একটি নগর-প্রাচীর নির্মাণ করে। নগরীতে ইহুদি প্রাধান্যের বিষয়টি অতীতের ব্যাপার বলে মনে হতে থাকে।

    তবে বিস্ময়ের ব্যাপার হলো, এই বছরগুলোতে রোমের সাথে ইহুদিদের সম্পর্কে উন্নতি ঘটে। হ্যাড্রিয়ানের ইহুদিবিরোধী বিধান শিথিল করেন সম্রাট অ্যান্টোনিয়াস পিয়াস (১৩৮-৬১), ইহুদি ধর্মের অনুশীলন আবারো আইনসম্মত হয়। বার কোখবা যুদ্ধ রোমানদের দেখিয়েছিল যে এই অঞ্চল সম্পর্কে প্রত্যক্ষ তথ্য আছে, এমন সক্ষম লোককে জুদাতে পাঠানো গুরুত্বপূর্ণ। রাব্বিরা অবশ্যই একে স্বাগত জানিয়েছিলেন। তারা প্রায়ই রোমান দূতের প্রশংসা করতেন।৩৫ গ্যালিলিতে তাদেরকে নতুন ধরনের নেতৃত্ব বিকশিত করার সুযোগ দেওয়া হয়। ১৪০ সালে হিলেলের বংশধর রাব্বি সাইমন ছিলেন ঘোষিত প্যাট্রিয়ার্ক। ধীরে ধীরে তিনি রাজকীয় ক্ষমতা ধারণ করতে লাগলেন, রোমান সাম্রাজ্যের সব ইহুদির প্রধান হিসেবে মর্যাদা লাভ করলেন। সাইমন রাজা দাউদের বংশধর বলে প্রচলিত থাকায় তিনি রাব্বানিক কর্তৃত্ব নিয়ে প্রাচীনের সাথে আধুনিকতাকে ঐক্যদ্ধ করতে পেরেছিলেন। প্যাট্রিয়ার্ক মর্যাদা ইহুদিদের নতুন রাজনৈতিক মাত্রা এনে দেয়, যা জেরুসালেম হারানোর ক্ষতি কিছুটা হলেও পুষিয়ে দেয়। এটি সাইমনের ছেলে প্রথম জুদার (২০০-২০) আমলে সর্বোচ্চ অবস্থায় পৌঁছে। তিনি ‘দি প্রিন্স’ নামে পরিচিত ছিলেন, রাজকীয় জাঁকজমকের সাথে বাস করতেন। তিনি সম্রাট মার্কাস আওরেলিয়াস অ্যান্টোনিয়াসের (২০৬-১৭) ব্যক্তিগত বন্ধু ছিলেন বলে বলা হয়ে থাকে। আওরেলিয়াস অ্যান্টোনিয়াস রোমান বংশোদ্ভূত না হওয়ায় বিদেশিদের অবজ্ঞা করতেন না, জেরুসালেমের প্রতি তার বিশেষ আগ্রহ ছিল।

    বেশির ভাগ রাব্বির মতো প্যাট্রিয়ার্করাও বিশ্বাস করতেন, রাজনৈতিক পরিস্থিতি মেনে নেওয়া অনিবার্য বিষয়। রাব্বি সাইমিয়ন বেন ইয়োহাইয়ের মতো কিছু চরমপন্থীও ছিলেন। বেন ইয়োহাই ১৬৫ সালে মৃত্যুর আগে পর্যন্ত রোমান কর্তৃত্ব থেকে পালিয়ে ছিলেন। তবে বেশির ভাগ মেনে নিয়েছিলেন যে ইহুদিদের জন্য জেরুসালেম পুনর্দখল করা ও সেখানে আবার টেম্পল নির্মাণ করার স্বপ্ন লালন করা বিপজ্জনক। ইহুদিদের উচিত হবে ঐশী উদ্যোগের জন্য অপেক্ষা করা। রাব্বি সাইমিয়ন বেন ইলিজার হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছিলেন, ‘যদি শিশুরা তোমাকে বলে, ঈশ্বর টেম্পল নির্মাণ করবেন, তবে তাদের কথা শুনবে না।৩৬ এই দায়িত্ব মেসাইয়ার জন্য সংরক্ষিত। এর বদলে রাব্বিরা ইহুদি আধ্যাত্মিক জীবনের জন্য অন্যান্য স্থানের দিকে নজর দিলেন। ফারিসিদের অন্তর্দৃষ্টি বিকশিত করে তারা ভাবলেন যে বাড়িটি কোনো কোনো দিক থেকে টেম্পলের স্থলাভিষিক্ত হয়েছে। তারা পারিবারিক আবাসকে মিকদাশ মাত (‘ছোট ধর্মস্থান’) অভিহিত করলেন : বেদীর স্থানে রাখা হলো পারিবারিক টেবিল, বলির কান্টের জায়গায় স্থান হলো পারিবারিক খাবারের। অনেক দিক থেকে সিনাগগ ছিল টেম্পলের স্মৃতি জাগানিয়া স্থাপনা। ভবনটি নিজে থেকে ছিল পবিত্রতার উপাদান, বিলুপ্ত জেরুসালেম ধর্মস্থানের মতো এরও পবিত্র স্থানের পর্যায়ক্রমিক ব্যবস্থা রয়েছে। এখানে কেবল নির্দিষ্ট লোকজনকেই প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হতো। টেম্পলের মতো এখানে নারীদের নিজস্ব স্থান ছিল। যেখানে বলি দেওয়া হতো সেটি ছিল অপেক্ষাকৃত পবিত্র। তারপর আসত বিমাহ (পাঠ ডেস্ক) ও সবশেষে তাওরাতের স্ক্রলগুলো রাখার আর্ক তথা নতুন হলি অব হলিস। ফলে লোকজন ধাপে ধাপে মূল ধর্মস্থানের দিকে তখনো যেতে পারত। বিমাহ সাধারণ উচ্চতর স্তরে স্থাপন করা হতো, যাতে এটি প্রতীকী পবিত্র পর্বতে পরিণত হয় : যখন জমায়েতের কোনো লোককে তাওরাত পাঠের জন্য ডাকা হতো, তিনি তখনো মঞ্চে আরোহণের সময় আলিয়া (ঊর্ধ্বে ওঠা) করছেন বলে মনে করতেন। রাব্বিদের অধীনে সাবাথও নতুন করে শুরু পায়। সাবাথ দিবসের বিশ্রাম এখন আগামী বিশ্বের পূর্বাস্বাদন (সপ্তাহে এক দিন) অর্জনের জন্য হতো। ফলে ইহুদিরা অস্তিত্বের আরেক মাত্রায় প্রবেশ করতে পারত। সাবাত অস্থায়ী মন্দিরে পরিণত হলো। এখানে ইহুদিরা পবিত্র স্থানের বদলে পবিত্র সময়ে তাদের ঈশ্বরের সাথে মিলিত হতে পারত।

    ৭০ সালে জেরুসালেম ধ্বংসের পর ইহুদি বাড়ি হারানো টেম্পলের স্থলাভিষিক্ত হয়। পাসওভারে ইহুদিরা ঐতিহ্যবাহী পন্থায় ভেড়া বলি দিতে পারত না, তারা পারিবারিক খাবার গ্রহণের মাধ্যমে মিসরে তাদের মুক্তি উদযাপন করত। এসময় সাদা পোশাক পরে পুরোহিত হিসেবে বাবা দায়িত্ব পালন করতেন, টেবিলটি পরিণত হতো নতুন বেদীতে, মোমবাতিদানিকে স্মরণ করা হতো টেম্পল মেনোরাহ হিসেবে।

    এখন জেরুসালেম ইহুদিদের জন্য প্রবেশ নিষিদ্ধ হয়ে পড়েছে। টেম্পল হারিয়ে গেছে। ফলে রাব্বিদেরকে ঐশী উপস্থিতি সম্পর্কে তাদের উপলব্ধি তৈরি করতে হয়েছে। ঈশ্বর মানব-নির্মিত ভবনে বাস করার মানে কী হতে পারে? তিনি কি অন্য কোথাও থাকেন না? রাব্বিরা প্রায়ই দেভিরে ঐশী উপস্থিতিকে সাগরের সাথে তুলনা করতেন। তারা বলতেন, সাগর একটি গুহাকে পুরোপুরি পরিপূর্ণ করে ফেলতে পারে সামগ্রিকভাবে সাগরের পানির পরিমাণ না কমিয়েই। অন্যভাবেও বলা যায়, তারা বারবার দৃঢ়তার সাথে বলতেন যে ঈশ্বর হচ্ছেন বিশ্বের প্রাসাদ, তবে বিশ্ব তার স্থান নয়। তার বিশালত্ব ভৌগোলিক বিশ্বের মাধ্যমে সংযত নয়। বরং ঈশ্বরই পৃথিবীকে ধারণ করেন। রাব্বিদের কেউ কেউ এমন কথাও বলতেন যে টেম্পল হারানোর ফলে শেখিনা জেরুসালেম থেকে মুক্তি পেয়েছেন। বেবিলনে নির্বাসনে এই বিশ্বাস হয়েছিল যে ওয়াইএইচডব্লিউএইচ টেম্পল ত্যাগ করে প্রবাসে তাদের সাথে যোগ দিয়েছেন। ৩৮ এখন রাব্বিরা জোর দিয়ে বললেন যে ইহুদি ইতিহাসজুড়ে শেখিনা কখনো ইসরাইল ত্যাগ করেননি, তবে তারা যেখানেই গেছে, সেখানেই তিনি গেছেন : মিসরে, বেবিলনে। পরে ৫৩৯ সালে তিনি ফিরে এসে ছিলেন।৩৯ এখন শেখিনা আবার নির্বাসনে ইহুদিদের সাথে গেছেন। ইহুদিরা যেখানে একসাথে তাওরাত পাঠ করত, শেখিনা সেখানে গেছেন। এটি এক সিনাগগ থেকে আরেক সিনাগগে যান, ইহুদিরা যেখানেই শেমা আবৃতি করে, সেখানকার দরজাতেই দাঁড়িয়ে থাকেন। বস্তুত, ইসরাইলের সাথে ঈশ্বরের উপস্থিতি ইহুদি জনসাধারণকে বাকি বিশ্বের জন্য একটি মন্দির নির্মাণ করেছিল। প্রাচীন কালে জায়নে ওয়াইএইচডব্লিউএইচের টেম্পলটি ছিল বিশ্বের উর্বরতা ও শৃঙ্খলার একটি উৎস। এখন এই অনুষ্ঠান পালন করত ইহুদিরা। রাব্বিরা যুক্তি দিতেন : ‘[ইসরাইলে ঈশ্বরের উপস্থিতি] কি বৃষ্টি নেমে আসার জন্য ছিল না, কিংবা তা কি সূর্য রশ্মির জন্য ছিল না?’ তবে সবসময় সমাজবদ্ধ হয়ে থাকার ওপর জোর দেওয়া হতো। ঈশ্বরের উপস্থিতি নির্ভর করত জনসাধারণের ঐক্য ও বদান্যতার ওপর। দুই বা তিনজন ইসরাইলি তাওরাত পাঠ করার সময় একত্রিত হওয়ার অনুভূতি লাভ করত; ১০ জন একত্রিত হয়ে কোরাম গঠন না করা পর্যন্ত প্রার্থনা বৈধ হতো না; ইহুদিরা যদি ‘এক কণ্ঠে, এক মনে, এক সুরে’ প্রার্থনা করে তবে শেখিনা তাদের মধ্যে চলে আসবেন; তা না করলে এটি দেবশিশুদের সমবেত প্রার্থনা শোনার জন্য স্বর্গে আরোহণ করে। ৪২

    বেবিলনে নির্বাসনের সময় ইহুদিদের পবিত্র ভূমিতে ফেরার কোনো সম্ভাবনা না থাকার সময়টিতে ঐশী ভূগোল যেভাবে বিবর্তিত হয়েছিল, ঠিক সেভাবে নগরীটি অপবিত্র হওয়ার পর এবং টেম্পলটি ধ্বংস হওয়ার অনেক পরে জেরুসালেমের পবিত্রতার প্রশংসা করতেন রাব্বিরা। তারা তখনো বিশ্বের ইহুদি মানচিত্রের কেন্দ্রে রাখত জায়ন ও দেভিরকে :

    পবিত্রতার ১০টি মাত্রা ছিল : অন্যান্য ভূমির চেয়ে ইসরাইলের ভূমি বেশি পবিত্র… ইসরাইল ভূমির প্রাচীরবদ্ধ নগরীগুলো এখনো অনেক পবিত্র … প্রাচীরের মধ্যে জেরুসালেম এখনো অনেক পবিত্র… নারীদের প্রার্থনা করার স্থানটি এখনো অনেক বেশি পবিত্র… ইসরাইলিদের প্রার্থনার স্থানটি এখনো অনেক বেশি পবিত্র… হেখাল এখনো অনেক বেশি পবিত্র… বেদীর আশপাশের এলাকাটি এখনো অনেক বেশি পবিত্র… দেভির এখনো অনেক বেশি পবিত্র, কারণ সেখানে যম কিপুরে উচ্চ পুরোহিত ছাড়া আর কেউ প্রবেশ করতে পারে না।

    রাব্বিরা তখনো জেরুসালেম সম্পর্কে কথা বলে যেতেন, এমনকি ভবনটির কোনো অস্তিত্ব না থাকা সত্ত্বেও : বাস্তবতা পরিণত হয়েছে প্রতীকীতে- পৃথিবীতে ঈশ্বরের অস্তিত্ব- শ্বাশত, অবশ্য তখনো চিন্তাযোগ্য বিষয়। পবিত্রতার প্রতিটি স্তর ছিল শেষেরটির চেয়ে অনেক বেশি পবিত্র, উপাসনাকারীরা ধীরে ধীরে পবিত্রতার হলি অব হলিসে পৌঁছে যেতেন। লোকজনের ভেতরে প্রবেশের অনুমতি ধীরে ধীরে হ্রাস পায়। সাবেক নির্বাসনের মতো এই আধ্যাত্মিক ভূগোলের কোনো বাস্তব প্রাসঙ্গিকতা না থাকলেও এটি ছিল একটি মণ্ডল, একটি ভাবনার বিষয়। রাব্বিরা এখন জোর দিয়ে বলতে লাগলেন, পরিত্রাণের সব গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ঘটে মাউন্ট জায়নে : সৃষ্টির প্রথম দিনে আদি পানিরাশি সেখানে গিয়েছিল; আদম এর ধূলা থেকে সৃষ্টি হয়েছিলেন; কাবিল ও হাবিল সেখানেই তাদের কোরবানি দিয়েছিলেন, মহাপ্লাবনের পর নূহও তাই করেছিলেন। টেম্পল মাউন্টেই ইব্রাহিমের খতনা হয়েছিল, এখানেই ইসহাককে কোরবানি দিতে চেয়েছিলেন ইব্রাহিম, এখানেই মেলচিজেদেকের সাথে তার সাক্ষাত ঘটেছিল; সবশেষে জায়ন থেকেই মেসাইয়া নতুন যুগের ঘোষণা করবেন, বিশ্বকে মুক্ত করবেন।৪৪ রাব্বিরা ঐতিহাসিক তত্ত্বে আগ্রহী ছিলেন না। মাউন্ট জায়ন নয়, মাউন্ট আরারাতে নূহের কিন্তুি প্ৰথম স্পৰ্শ করেছিল, এমনটা শুনেও তারা অস্বস্তি অনুভব করতেন না বা মেলচিজেদেকের সাথে ইব্রাহিমের সাক্ষাতের স্থানটি ছিল এন রোগেল- তা জেনেও তারা তাদের অবস্থানে অবিচল থাকতেন। জেরুসলেম ছিল পৃথিবীতে পাপমুক্তির জন্য ঈশ্বরের উপস্থিতিময় স্থান। এই বিবেচনায় পৃথিবীকে রক্ষা করার সব ঘটনা অবশ্যই সেখানে ঘটতে হতো। এখন নিষিদ্ধ নগরীতে পরিণত হওয়ায় জেরুসালেম আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে অনেক কার্যকর উৎকৃষ্ট প্রতীকে পরিণত হয়েছিল। আলিয়ার বাস্তব অবস্থা যা-ই হোক না কেন, আধ্যাত্মিক বাস্তবতা ছিল টেম্পল, নগরীর প্রতিকৃতি ছিল শ্বাশত। আমরা দেখতে পাব, কয়েক শ’ বছর ধরে জেরুসালেম ইহুদিদের জন্য নিষিদ্ধ হওয়া সত্ত্বেও কিংবা টেম্পল মাউন্ট ভিন দেশিদের হাতে থাকা সত্ত্বেও তারা পবিত্রতার ১০ স্তরের ধ্যান করা অব্যাহত রেখেছিল। এটি পরিণত হয় একটি মডেলে, যা ঈশ্বর কিভাবে মানুষের সাথে সংযোগ স্থাপন করে তা কল্পনা করতে সহায়ক হয়, এটি তাদের অন্তর-বিশ্বের মানচিত্রে পরিণত হয়।

    তা সত্ত্বেও তৃতীয় শতকের শুরুতে কিছু ইহুদি নশ্বর জেরুসালেমের সাথে যোগাযোগ নতুন করে শুরু করে। আইনের পুস্তকগুলোতে তখনো বিধিনিষেধ থাকলেও সম্রাট মার্কাস অ্যান্টোনিয়াসের সহানুভূতির কারণে রোমানরা আগের মতো কঠোরভাবে নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগ করত না। প্রথমে কিছু ইহুদি সাধারণ মানের রোমানদের এলাকা হয়ে সেখানে যাওয়া শুরু করে। সাইমন অব কামত্রা নামের এক গাধাচালককে তার কাজের অংশ হিসেবে তাকে প্রায়ই টেম্পল মাউন্ট অতিক্রম করতে হতো। তিনি রাব্বিদের কাছে জানতে চাইতেন : ধ্বংসস্তূপ দেখার সময় প্রতিবারই কি তাকে জামা ছিঁড়তে হবে? তারপর রাব্বি মেইর তার পাঁচ বা ছয় ছাত্রকে আলিয়ায় বসবাসের অনুমতি দিলেন। অবশ্য এই ছোট্ট সম্প্রদায়টি মাত্র কয়েক বছর সেখানে ছিল। ৪৬ ২২০ সালে প্যাট্রিয়ার্ক প্রথম জুদার মৃত্যুর পর থেকে জেরুসালেমে কোনো ইহুদি স্থায়ীভাবে বাস করত না। কিন্তু তারপরও তৃতীয় শতকের মাঝামাঝি সময় থেকে ইহুদিদের মাউন্ট অব অলিভেসে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হতো, দূর থেকে টেম্পলের জন্য শোক প্রকাশ করার সুযোগ মিলত। এর কিছু সময় পরে- আমরা জানি না ঠিক কখন- ইহুদি মাস ইভের নবম দিনে তথা টেম্পল ধ্বংসের বার্ষিকীতে তাদেরকে বিধ্বস্ত টেম্পল মাউন্ট পর্যন্ত যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হতো। কায়রো জেনিজায় পাওয়া এক নথি অনুযায়ী, তীর্থযাত্রীরা খালি পায়ে মাউন্ট অব অলিভেসে উঠত, ধ্বংস্তূপের দিকে তাকাত, তাদের পোশাক ছিঁড়ে ফেলত, চিৎকার করে বলত : ‘এই তীর্থস্থান ধ্বংস হয়ে গেছে!’ তারপর তারা আলিয়ায় যেত, টেম্পল প্লাটফর্ম পর্যন্ত উঠত, ‘টেম্পল ও ইসরাইল পরিবারের জন্য’ কাঁদত। এই কষ্টদায়ক শাস্ত্রাচারগুলো পুরনো আনন্দদায়ক তীর্থযাত্রা থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন ছিল। কারণ ইহুদিরা এখন ঐশী উপস্থিতির বদলে নির্জনতা ও শূন্যতার মুখে পড়ত। তবুও টেম্পল মাউন্টের বার্ষিক অনুষ্ঠান তাদেরকে তাদের দুঃখ মোচনের সহায়তা করত, এর মুখোমুখি করত, অন্য দিকে যেতে সহায়তা করত। অনুষ্ঠান শেষ হতো শুকরিয়া জ্ঞাপনমূলক প্রার্থনা করে। তারপর তীর্থযাত্রীরা নগরীর সব দরজা চক্কর দিত, সব কোণে যেত, এর মিনারগুলো গুণত’, ঠিক যেভাবে তাদের পূর্বপুরুষেরা টেম্পল দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায় যেসব কাজ করত। এসব দরজা রোমানরা নির্মাণ করেছে, তা নিয়ে তারা ভীত হতো না। এটি ছিল হতাশা থেকে আশার পথে প্রতীকি যাত্রার আনুষ্ঠানিকতা। নগরীটি নিজেদের থাকার সময়কার মতো করে একে চক্কর দিয়ে তীর্থযাত্রীরা চূড়ান্ত মেসাইনিক মুক্তি পেত : ‘আগামী বছর জেরুসালেমে!’

    বার কোখবা যুদ্ধের পর ইহুদি খ্রিস্টান সম্প্রদায়ও আলিয়া থেকে বহিষ্কৃত হয়েছিল। কারণ তাদের ধর্মীয় ধ্যান-ধারণা যা-ই হোক না কেন, খতনা করা ইহুদিদের মতো নিষেধাজ্ঞা তাদের ওপরও প্রযোজ্য ছিল। তবে হ্যাড্রিয়ানের আমদানি করা গ্রিক ও সিরিয়ান উপনিবেশকারীর মধ্যে কিছু সংখ্যক খ্রিস্টানও ছিল। কারণ এরপর আলিয়ায় আমরা একটি পুরোপুরি পৌত্তলিক চার্চের কথা শুনতে পাই।৪৮ এসব অ-ইহুদি খ্রিস্টান মাউন্ট সায়নের ‘আপার রুমে’ বাস করে। চার্চটি ছিল আলিয়ার কেন্দ্রস্থলের বাইরে। ফলে হ্যাড্রিয়ানের ঠিকাদারেরা তাদেরকে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখত। এটি ছিল সাধারণ সাদামাটা বাড়ি : তখনো রোমান সাম্রাজ্যে খ্রিস্টান ধর্ম অনুমোদিত ছিল না এবং সত্যি সত্যিই কর্তৃপক্ষ তাদেরকে নির্যাতন করত। খ্রিস্টানদেরকে তাদের নিজস্ব উপাসনা-স্থান নির্মাণ করতে দেওয়া হতো না। তবে তারা আপার রুমে তাদের ওই বাড়িটিকে বলত ‘মাদার অব দি চার্চেস’, কারণ এখান থেকেই খ্রিস্টধর্মের সূচনা হয়েছে। অ-ইহুদি খ্রিস্টানেরা একটি সিংহাসনও রাখত। তারা বিশ্বাস করত যে এর মালিক ছিলেন জেরুসালেমের প্রথম ‘বিশপ’ জেমস দি জাদিক। অবশ্য আলিয়ায় খ্রিস্টানদের খুব বেশি সংখ্যক ‘পবিত্র স্থান’ ছিল না। যিশু যে নগরীকে চিনতেন, সেটি এখন হ্যাড্রিয়ানের নতুন শহরের আড়ালে বিস্মৃত হয়ে গেছে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, গলগোথা এখন আফ্রিদিতির টেম্পলে চাপা পড়ে গেছে, খ্রিস্টানা সেখানে উপাসনা করতে যেতে চাইত না। তবে ইউসেবিয়াস আমাদের বলছেন, মুসাফিরদের সেখানে স্থানটি ‘দেখানো হতো।’৪৯ সারদিসের বিশপ মেলিটো ১৬০ সালে ফিলিস্তিন সফরের সময় এমনটা দেখেছেন। তিনি তার লোকজনকে বাড়ি ফিরতে বলে জানিয়েছিলেন, গলগোথা এখন নগরীর মাঝখানে অবস্থিত। নিশ্চিতভাবেই বলা যায়, যিশুর আমলে গলগাথা ছিল প্রাচীরের বাইরে। তবে এখন চাপা পড়া পাহাড়-চূড়াটি আলিয়ার প্রধান ফোরামের পাশেই অবস্থিত।

    তীর্থযাত্রী হিসেবে খুব বেশি সংখ্যক খ্রিস্টান ফিলিস্তিনে আসত না। ইউসেবিয়াস যদিও বলেছেন, ‘সারা দুনিয়া থেকে লোকজন’ জেরুসালেম সফর করতে আসত,৫১ কিন্তু তবুও তিনি মাত্র চার তীর্থযাত্রীর নাম বলতে পেরেছেন। এদের একজন হলেন মেলিটো। আলিয়া নগরীর ব্যাপারে তার বিন্দুমাত্র আগ্রহ ছিল না। এটি ‘এখন মূল্যহীন, এর জেরুসালেমের উপরে থাকায়।৫২ মেলিটো ভক্তিতে নয়, বরং গবেষণার কাজে জেরুসালেম এসেছিলেন। তিনি দেশটির ভৌগোলিক অবস্থা গবেষণা করার মাধ্যমে বাইবেল অধ্যয়ন করার আশায় ছিলেন। বুক অব রেভেলেশনে জনের বর্ণনার আলোকে পৌত্তলিক খ্রিস্টানেরা স্বর্গীয় জেরুসালেমের প্রতিই প্রধানত আগ্রহী ছিল। দ্বিতীয় শতকে এ গ্রন্থটিই অন্য যেকোনো খ্রিস্টান পুস্তকের চেয়ে বেশি পঠিত হতো। তারা নতুন জেরুসালেমের দিকে তাকাত, যা সময়ের শেষে পৃথিবীতে নেমে আসবে, এর নশ্বর প্রতিলিপিকে বদলে দেবে। ৩ তবে কেউই আলিয়া সফরের ব্যাপারে বিশেষভাবে আগ্রহী ছিল না। ইউসেবিয়াস ব্যাখ্যা করার ভঙ্গিতে লিখেছেন : তিনি চেয়েছিলেন খ্রিস্টান ধর্মকে আইনসম্মত করতে। তিনি সম্ভবত তার বিশ্বাসের সার্বজনীন আবেদন প্রদর্শন করার জন্য তীর্থযাত্রীদের সংখ্যা নিয়ে অতিরঞ্জন করেছেন। দ্বিতীয় ও তৃতীয় শতকে জেরুসালেম খ্রিস্টানদের জন্য প্রধান তীর্থক্ষেত্র ছিল, এমন কোনো প্রমাণ নেই। বস্তুত, অ-ইহুদি খ্রিস্টানেরা ম্যাথু ও জনের গসপেলগুলোর সাথে একমত হওয়ার প্রবণতা প্রদর্শন করত। জেরুসালেম এখন ‘অপরাধ নগরী’। কারণ সে খ্রিস্টকে প্রত্যাখ্যান করেছে। যিশু বলেছিলেন, ভবিষ্যতের লোকজন জেরুসালেমের মতো পবিত্র স্থানগুলোতে সমবেত হবে না। তারা বরং আত্মা ও সত্যে তার উপাসনা করবে। উপাসনালয় ও পবিত্র পর্বতগুলোর প্রতি ভক্তি ছিল পৌত্তলিক ও ইহুদি ধর্মের বৈশিষ্ট্য। খ্রিস্টানেরা উভয় ধর্মকে ছাড়িয়ে যেতে সচেতন ছিল।

    খ্রিস্টান মানচিত্রে জেরুসালেমের বিশেষ কোনো মর্যাদা ছিল না। ক্যাসারিয়ার বিশপ ছিলেন ফিলিস্তিনের প্রধান প্রেলেত। তিনি আলিয়ার বিশপ ছিলেন না। প্রখ্যাত খ্রিস্টান পণ্ডিত অরিজেন ২৩৪ সালে ফিলিস্তিনে বসতি স্থাপন করার সময় ক্যাসারিয়ায় তার একাডেমি ও লাইব্রেরি স্থাপন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। দেশটি সফর করার সময় মেলিটোর মতো তারও বাইবেলে বর্ণিত স্থানগুলোর প্রতিই মূলত আগ্রহ প্রদর্শন করেছিলেন। তিনি নিশ্চিতভাবেই কেবল ভৌগোলিক স্থান সফর করে আধ্যাত্মিক সংস্পর্শ লাভ করার প্রত্যাশা করতেন না। অবশ্য তিনি এর সম্পৃক্ততাগুলোর প্রতি শ্রদ্ধাশীল ছিলেন। তিনি বিশ্বাস করতেন, কেবল পৌত্তলিকেরাই কোনো ধর্মস্থানে ঈশ্বরকে কামনা করে, তারা মনে করে, দেবদেবতারা ‘বিশেষ স্থানে বাস’ করে।৫৪ যিশুর জন্মস্থান বেথলেহেমের মতো স্থানগুলো সফর করার সময় গামলা (যা দৃশ্যত সংরক্ষিত ছিল) দেখা ছিল আগ্রহের ব্যাপার। কারণ এতে প্রমাণিত হতো যে গসপেলের কাহিনী সত্য। তবে অরিজেন ছিলেন প্লেটোবাদী। তার দৃষ্টিতে খ্রিস্টানদের উচিত বাস্তব দৃশ্যমান দুনিয়া থেকে নিজেদের মুক্ত করে পুরোপুরি আধ্যাত্মিক ঈশ্বর কামনা করা। জাগতিক স্থানগুলোকে আঁকড়ে না ধরে তাদের উচিত নশ্বর নগরীর স্থানে স্বর্গীয় নগরী কামনা করা। ‘৫৫

    জেরুসালেম নিয়ে ব্যাপকভিত্তিক কোনো মতাদর্শ না থাকলেও আলিয়ার স্থানীয় খ্রিস্টানেরা যিশুর সাথে সম্পর্কিত নগরীর বাইরের স্থানগুলো সফর করতে পছন্দ করত। ইউসেবিয়াস আমাদের বলছেন, তারা প্রায়ই মাউন্ট অব অলিভেসে চূড়ায় উঠতেন (এখান থেকেই যিশু স্বর্গে আরোহণ করেছিলেন, কিদরন উপত্যকার গার্ডেন অব গেথসেমানে (এখান গ্রেফতার হওয়ার আগে যন্ত্রণায় প্রার্থনা করেছিলেন যিশু), জর্ডান নদী (এখানে জন দি ব্যাপ্টিস্ট তাকে ব্যাপ্তাইজ করেছিলেন)।৫৬ গ্রেকো- রোমান বিশ্বে গ্রোত্তো (গুহা) বিশেষ পূণ্যস্থান বিবেচিত হতো। আলিয়ার খ্রিস্টানেরাও দুটি গুহা জিয়ারত করত। প্রথমটি ছিল বেথলেহেমে। এখানেই যিশু জন্মগ্রহণ করেছিলেন। দ্বিতীয়টি ছিল মাউন্ট অব অলিভেস। এখানেই কিশোর খ্রিস্ট দূত জনের সামনে হাজির হয়েছিলেন। মানুষ যিশুকে স্মরণ করার জন্য খ্রিস্টানেরা এসব গুহায় যেত না। অবশ্য তা সত্ত্বেও যিশুর মানব জীবনের প্রতি তাদের সামান্য আগ্রহ ছিল। গুহাগুলোর গুরুত্বপূর্ণ হওয়ার কারণ হলো সেগুলোর অলৌকিক মর্যাদা ছিল : উভয়টিরই মূর্ত লোগোস দুনিয়ায় আত্মপ্রকাশ করেছিল।

    তবে মাউন্ট অলিভেসের গুহাটি অতিরিক্ত তাৎপর্য সৃষ্টি করেছিল। বলা হয়ে থাকে, এখানেই যিশু তার শিষ্যদেরকে আসন্ন জেরুসালেম ধ্বংস ও মহাপ্রলয় দিবসের নির্দেশনা দিয়েছিলেন।৫৮ মাউন্ট অব অলিভেস থেকে হারানো টেম্পলের জন্য ইহুদিদের শোক প্রকাশ করতে দেখে খ্রিস্টানেরা বিদ্রুপ করত। অরিজেন এসব অনুষ্ঠানকে পীড়াদায়ক ও ভ্রান্ত বলে উল্লেখ করেছেন। তবে তিনি উল্লেখ করেছেন, ইহুদিদের দুর্দশা হলো গসপেলগুলোর সত্যতার আরেকটি প্রমাণ। প্রাচীন কালের শেষ দিকে নবীদের ভবিষ্যদ্বাণী ও উদ্দীপ্ত দেব-বাণী ছিল খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ফলে ইহুদি টেম্পলের ধ্বংস সম্পর্কে যিশুর নির্ভুল ভবিষ্যদ্বাণী অরিজেনের পৌত্তলিক বিরূপতাকে অভিভূত করবে- এমনটাই স্বাভাবিক ব্যাপার। তারা যিশুকে প্রত্যাখ্যান করার পর থেকে তিনি উল্লেখ করেছেন, ইহুদিদের গর্ব করার সব প্রতিষ্ঠান, তথা টেম্পলের সাথে সম্পর্কিত প্রতিষ্ঠান, বলির বেদী ও শাস্ত্রাচার, উচ্চ পুরোহিতদের পোশাক, সবই ধ্বংস হয়ে গেছে।৫৯ এটি ছিল ব্যাপক তৃপ্তি। আলিয়ার খ্রিস্টানেরা দৃশ্যত মাউন্ট অলিভেসে তাদের নিজস্ব পাল্টা অনুষ্ঠান প্রবর্তন করেছিল। ইউসেবিয়াস বলেছেন, তারা ওই গুহা পর্যন্ত যেতে পছন্দ করতেন ‘নগরীটি দখল ও বিধ্বস্ত করা সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করতে। নিচে বিধ্বস্ত টেম্পল প্লাটফর্মের (বিজয়ী সম্রাটদের মূর্তিসহ) দিকে তাকিয়ে, তারা ইহুদি ধর্মের পরাজয় ও তাদের নিজের ধর্মের টিকে থাকার কথা ভাবতেন। ওই সময় ফিলিস্তিনের খুব বেশি লোক খ্রিস্টান ধর্ম গ্রহণ না করলেও সাম্রাজ্যের বাকি অংশে বিপুল সাফল্য পেয়েছিল। রোমান আলিয়ায় তারা ধ্যান করার সময় যে তথ্য প্রতিফলিত হতো তা এই যে এটি ‘অপরাধ নগরীর’ ধ্বংসাবশেষের ওপর নির্মিত হয়েছে। তাদের কাছে নিজস্ব ধর্মের সত্যতার প্রমাণ দৃশ্যমান হতো। অবশ্য তা সত্ত্বেও তাদের মধ্যে উদ্বেগ ছিল। রাব্বিদের মতো যিশু ও পলও দান ও ভালোবাসা-বদান্যতাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতেন। বস্তুত যিশু এত দূর পর্যন্ত গিয়েছিলেন যে খ্রিস্টানদের উচিত তাদের শত্রুদেরও ভালোবাসা। কিন্তু তৃতীয় শতকের এসব খ্রিস্টান তাদের আগে নগরীতে বসবাসকারী ইহুদিদের করুণ ভাগ্য নিয়ে চিন্তা করে নিষ্ঠুর আত্মতৃপ্তির আনন্দ উপভোগ করত। একেশ্বরবাদী ধর্মগুলো সবসময়ই এই ধারণায় উপনীত হয় যে জেরুসালেমের পূর্বেকার দখলকারীরা পবিত্র নগরী হিসেবে একে শ্রদ্ধা করত। তাদের নিজেদের আমলটি প্রায়ই এই সত্যের প্রতিক্রিয়ার ওপর নির্ভরশীল ছিল। আলিয়ার খ্রিস্টানেরা শুরুতে সফল হয়নি বলেই মনে হয়েছে। যেখানে খ্রিস্ট মারা গেছেন, আবার জেগে ওঠেছিলেন, সেই নগরীতে বাস করার বিষয়টি তখন তাদের মহৎ আদর্শ হিসেবে উদ্দীপ্ত করত না। ইউসেবিয়াস ৩১৩ সালে ক্যাসারিয়ার বিশপ হয়েছিলেন। রোমান সাম্রাজ্যের খ্রিস্টানদের জন্য এই দিনটি বিরাট তাৎপর্যপূর্ণ। অরিজেনের মতো ইউসেবিয়াসও ছিলেন প্লেটোবাদী। ধর্মস্থান বা পবিত্র জায়গার প্রতি তার কোনো আগ্রহ ছিল না। তার দৃষ্টিতে খ্রিস্টান ধর্ম এসব সেকেলে ধ্যান-ধারণা পেছনে ফেলে এসেছে। খ্রিস্টানদের কাছে ফিলিস্তিন সম্পর্কে বিশেষ কিছু নয় বলে তিনি ঘোষণা করেছিলেন : ‘এটি কোনোভাবেই [বাকি দুনিয়ার] চেয়ে শ্রেষ্ঠ নয়। আলিয়া ছিল স্রেফ ‘অপরাধ নগরী’ : এটি শ্রদ্ধা পাওয়ার অনুপযুক্ত। তবে ইহুদি ধর্মের মৃত্যুকে প্রতীকীভাবে প্রকাশ করতেই কেবল এটি খ্রিস্টানদের কাছে সহায়ক হতে পারে। এই সময়ের দিকে খুব কম লোকই এই নগরীর মূল নাম স্মরণ করতে পারত। এমনকি ইউসেবিয়াস নিজেও সবসময় একে বলতেন আলিয়া। বেশির ভাগ অ-ইহুদি- খ্রিস্টানের মতো তার কাছেও ‘জেরুসালেম’ মানে ছিল ঐশী জায়ন, যা সম্পূর্ণভাবে এই দুনিয়া-বহির্ভূত কোনো বাস্তবতা। ৩১২ সালে কনস্টানটাইন মিলভিয়ান ব্রিজের যুদ্ধে তার রাজকীয় প্রতিদ্বন্দ্বী ম্যাক্সেনটিয়াসকে পরাজিত করেন। তিনি তার এই জয়ের কৃতিত্ব দেন খ্রিস্টানদের ঈশ্বরকে। ৩১৩ সালে ইউসেবিয়াসের রাজ্যাভিষেকের সময় কনস্টানটাইন ঘোষণা কনে, খ্রিস্ট ধর্ম হবে রোম সাম্রাজ্যের অন্যতম রাজধর্ম। নির্যাতিত, প্রান্তিক, নিঃস্ব অবস্থা, রাজনৈতিক ক্ষমতাসীন ও পবিত্র কোনো নগরী না থাকা অবস্থা থেকে খ্রিস্টানেরা এখন একটি নশ্বর মাত্রা লাভ করতে শুরু করল। এই ঘটনা এখন খ্রিস্টানদেরকে ‘আলিয়া’ দেখার দৃষ্টিভঙ্গি চূড়ান্তভাবে বদলে দিয়েছিল।

    ⤶ ⤷
    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleছোটগল্প – মুহম্মদ জাফর ইকবাল
    Next Article বাইবেল কোরআন ও বিজ্ঞান – মরিস বুকাইলি
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Generic selectors
    Exact matches only
    Search in title
    Search in content
    Post Type Selectors
    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Our Picks

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }