Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    দ্য দা ভিঞ্চি কোড – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025

    এঞ্জেলস এন্ড ডেমনস – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • 🔖
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    Subscribe
    সাইন ইন
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    টাইম মেশিন – এইচ জি ওয়েলস

    এইচ জি ওয়েলস এক পাতা গল্প97 Mins Read0

    ১২. অন্ধকারে

    ১২। অন্ধকারে

    প্রাসাদ থেকে যখন বেরলাম, তখনও দিক্রেখার ওপরে সূর্যের কিনারা দেখা যাচ্ছে। পরের দিন সকালে যেমন করেই হোক সাদা স্ফিংক্স-এর কাছে আমাদের পৌঁছাতে হবে। কাজেই ঠিক করলাম, সামনের বনটাও পেরতে হবে চারদিকে অন্ধকার চেপে বসার আগেই। ইচ্ছে ছিল, রাতে যতটা পারি এগব, তারপর আগুনের কুণ্ড জ্বালিয়ে নিরাপদে ঘুমাব বাকি রাতটা। সেইমতো শুকনো কাঠ আর ঘাস জোগাড় করছিলাম। শেষে দুহাত বোঝাই হয়ে যাওয়ার ফলে তাড়াতাড়ি হাঁটা আর সম্ভব হল না। এর ওপর উইনাও ক্লান্ত হয়ে পড়েছিল। কাজেই বনের সামনে যখন পৌঁছালাম, বেশ আঁধার নেমেছে চারদিকে। বনের ভেতর মিশমিশে অন্ধকার দেখে উইনা আঁকড়ে ধরলে আমায়। কেমন জানি অজানা ভয়ে আমারও গা ছমছম করে উঠল। কিন্তু হঠাৎ কীরকম গোঁ চেপে গেল। ঘুমের অভাবে পরিশ্রমের ফলে ঠিক সুস্থও ছিলাম না আমি। বিপদ আসন্ন জেনেও হটে আসতে মন সায় দিল না।

    যাব কি যাব না ভাবছি, এমন সময়ে ঠিক পেছনে অন্ধকারের মধ্যে অস্পষ্ট তিনটে মূর্তিকে দেখলাম কালো ঝোপের মধ্যে দিয়ে গুঁড়ি মেরে এগিয়ে আসতে। চারপাশে লম্বা ঘাস ছাড়া আত্মরক্ষা করার মতো আর কিছু চোখে পড়ল না, তা ছাড়া মূর্তি তিনটের এগবার ধরনধারণও বিশেষ সুবিধের মনে হল না। প্রায় মাইলখানেক লম্বা বনটা, বনের ওদিকে কোনওরকমে পৌঁছাতে পারলে পাহাড়ের পাশে নিরাপদে রাত কাটানোর মতো অনেক আস্তানা পাওয়া যাবে। ভেবে দেখলাম, কর্পূর আর দেশলাই যখন সঙ্গে আছে, পথে আলোর অভাব হবে না। তবে কাঠকুটোগুলো ফেলে দেওয়া ছাড়া উপায় নেই। কাজে কাজেই ফেলে দিতে হল বোঝাটা। তখনই একটা মতলব এল মাথায়। নিশাচর মর্লকদের ভড়কে দেওয়ার জন্যে কুটোগুলোর ওপর দেশলাইয়ের একটা জ্বলন্ত কাঠি ফেলে দিলাম।

    নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলে দাবানল বড় একটা দেখা যায় না। নিরক্ষীয় অঞ্চলে মাঝে মাঝে শিশিরকণার মধ্যে দিয়ে সূর্যকিরণ ফোকাস বিন্দুতে কেন্দ্রীভূত হয়ে শুকনো ঘাসপাতা জ্বালিয়ে দাবাগ্নি সৃষ্টি করে। কিন্তু এ অঞ্চলে সূর্যের সে তেজ নেই। বাজ পড়লেও বিশেষ জায়গাটি পুড়ে কাঠকয়লা হয়ে যায়, দাবানল জ্বলে না। তা ছাড়া সে যুগে আগুন জ্বালানোর কায়দাকানুনও ভুলে গিয়েছিল সবাই। কাঠকুটোর ওপরে লকলকে লাল আগুনের শিখার নাচ দেখে উইনা তো মহাখুশি। চারপাশে নেচে নেচে ঘুরতে শুরু করে দিলে, ধরে না রাখলে হয়তো আগুনের মধ্যে ঝাঁপিয়ে পড়তেও ছাড়ত না।

    আগুনের আভায় সামনের পথ পরিষ্কার দেখা যাচ্ছিল, উইনাকে কোলে তুলে নিয়ে এগিয়ে চললাম সেদিকে। উইনা কিন্তু কিছুতেই যাবে না অন্ধকারের মধ্যে, কিন্তু না গিয়েও তো উপায় নেই। কিছু দূর গিয়ে দেখলাম, আগুন আশপাশের ঝোপেও ছড়িয়ে পড়েছে, বাঁকা একটা আগুনের রেখা শুকনো ঘাস বয়ে এগিয়ে চলেছে পাহাড়ের দিকে। মাথার ওপর ঘন অন্ধকারের মধ্যে শুধু দু-একটা তারা ঝিকিমিকি দেখতে পাচ্ছিলাম। আশপাশ অন্ধকার হয়ে এসেছিল। দেশলাই জ্বালানোও আর সম্ভব ছিল না, কেননা এক হাতে উইনা আর এক হাতে লোহার ডান্ডা নিয়ে পথ চলতে হচ্ছিল আমাকে।

    কিছু দূর পর্যন্ত পায়ের তলায় শুকনো কুটো ভাঙার মটমট শব্দ, গাছের পাতার সরসরানি আর নিজের শ্বাস-প্রশ্বাসের শব্দ ছাড়া আর কিছুই শুনলাম না। তারপরেই মনে হল, তরু-পল্লবের মর্মরধ্বনি ছাড়াও চারপাশে আবার জেগেছে সেই অদ্ভুত খসখস শব্দ, কারা যেন বাতাসের সরে ফিসফিস করে কথা বলছে নিজেদের মধ্যে। আরও জোরে এগিয়ে চললাম। ফিসফিস আর খসখস শব্দ ক্রমশ স্পষ্ট হয়ে উঠল, তারপরেই শুনলাম পাতালপুরীতে শোনা মর্লকদের অদ্ভুত গলার স্বর। আশপাশেও নিশ্চয় এসে পড়েছিল কয়েকটা মর্লক। সত্যি সত্যিই হঠাৎ কোটের পেছনে একটা টান পড়ল, সঙ্গে সঙ্গে আমার হাত টেনে ধরল একজন। দারুণভাবে থরথর করে কেপে উঠল উইনা, তারপরেই একেবারে নিস্পন্দ হয়ে গেল।

    দেশলাই না জ্বালিয়ে আর উপায় নেই। উইনাকে তাহলে মাটিতে শোয়ানো দরকার। তা ই করলাম। পকেট হাতড়ে দেশলাই বার করছি–কয়েকজন আমার হাঁটু ধরে টানাটানি শুরু করে দিল। তীক্ষ্ণ শিস দেওয়ার মতো বিদঘুটে শব্দও ভেসে এল মর্লকদের দিক থেকে। কতকগুলো নরম হাত আমার কোট আর পিঠ চেপে ধরেছিল, কয়েকটা হাত আমার ঘাড়েও এসে পড়ল। তারপরেই জ্বলে উঠল আমার কাঠিটা। মর্লকদের শুধু সাদা পিঠগুলোই দেখতে পেলাম। তিরবেগে পালাচ্ছে গাছের আড়ালে। এরপর তাকালাম উইনার পানে। আমার পা আঁকড়ে ধরে উপুড় হয়ে মাটির ওপর নিথর দেহে পড়েছিল বেচারা। ভয় হয়ে গেল খুব, নিঃশ্বাস পড়ছিল কি না তা-ও ভালো বোঝা যাচ্ছিল না। তাড়াতাড়ি একটা কর্পূরের ডেলা পকেট থেকে বার করে জ্বালিয়ে নিয়ে একপাশে ছড়ে দিয়ে উইনাকে কোলে তুলে নিলাম। কর্পূরের জোরালো আলোয় মর্লকগুলো আরও দূরে সরে গেলেও মনে হল, পেছনের বন থেকে ভেসে এল বহুজনের নড়াচড়ার শব্দ আর গুঞ্জনধনি। যেন বিরাট একটা দলের সমাবেশ ঘটেছে বনের অন্ধকারে।

    উইনা বোধহয় জ্ঞান হারিয়েছিল। কাঁধের ওপর ওকে তুলে নিয়ে এগতে গিয়ে দারুণ ভয়ে আমার হাত-পা ঠান্ডা হয়ে এল। দেশলাই আর উইনাকে সামলাতে গিয়ে কয়েকবার এদিকে-ওদিকে ফিরেছিলাম, ফলে দিক হারিয়েছি আমি। কোনদিকে যে সবুজ পোর্সেলিনের প্রাসাদ আর কোনদিকেই বা পাহাড়, সব গুলিয়ে গেছে। এরকম অবস্থায় এগনো মানে মরণকে ডেকে আনা। কাজেই ঠিক করলাম, আগুন জেলে রাতটা এখানেই কাটিয়ে দেব। কর্পূরটা জ্বলতে জ্বলতে নিবে আসার আগেই তাড়াতাড়ি কাঠকুটো জড়ো করতে লাগলাম। ভয়ে-উত্তেজনায় ভেতরে ভেতরে ঘেমে উঠছিলাম আমি। আর এখানে সেখানে আমার চারদিকে কুচকুচে অন্ধকারের মাঝে কার্বাঙ্কলের মতো দপদপ করে জ্বলতে লাগল মকদের চোখগুলো।

    হঠাৎ নিবে গেল কর্পূরটা। তাড়াতাড়ি জ্বালালাম একটা কাঠি, এর মধ্যেই কিন্তু জন দুই সাদা মূর্তি এগিয়ে এসেছিল উইনার দিকে। আচমকা দেশলাই জ্বলে ওঠায় একজন ঘুরেই ছুট দিলে, আর-একজনের চোখ এমন ধাঁধিয়ে গেল যে, সিধে এগিয়ে এল আমার দিকেই। কোনওরকম দ্বিধা না করে মোক্ষম এক ঘুসি বসিয়ে দিলাম তার থুতনির ওপর–কোঁক করে একটা শব্দ করে একটু টলমল করেই সটান আছড়ে পড়ল সে মাটির ওপর। পকেট থেকে এক টুকরো কর্পূর বার করে জ্বালিয়ে দিয়ে কাঠকুটো জড়ো করে চললাম দুহাতে। লক্ষ করলাম, মাথার ওপর গাছপালাগুলো বেজায় শুকনো। মনে পড়ল, টাইম মেশিন নিয়ে আসার পর প্রায় হপ্তাখানেক আর বৃষ্টি হয়নি এ অঞ্চলে। সুতরাং কুটো কুড়ানো ছেড়ে লাফ মেরে গাছের শাখাগুলোই টেনে টেনে নামিয়ে আনতে লাগলাম। দেখতে দেখতে সবুজ গাছপালা আর শুকনো কাঠকুটোয় লকলক করে উঠল আগুন। যেমন জোরালো, তেমনি প্রচুর ধোঁয়া সে আগুনে।

    কর্পূরের খরচ এইভাবে কমিয়ে উইনার কাছে গেলাম এবার। অনেক চেষ্টা করলাম, কিন্তু মড়ার মতো নিস্পন্দ হয়ে পড়ে রইল বেচারা। সত্যিই ওর নিঃশ্বাস পড়ছে কি না তা ও বুঝতে পারলাম না।

    ধোঁয়ায়, কর্পূরের ভারী গন্ধে, রাত জাগায় আর পথের ক্লান্তিতে হঠাৎ যেন বড় শ্রান্ত মনে হল নিজেকে। ঘাসের ওপর বসে পড়লাম। আগুন বেশ জোরেই জ্বলছিল, ঘণ্টাখানেকের মতো নিশ্চিন্ত। ঘুমে চোখ জুড়ে আসছিল। তার ওপর সারা বন জুড়ে জেগে ছিল আশ্চর্য এক ঘুমপাড়ানি গুঞ্জন। বসে বসেই ঢুলছিলাম–তারপরেই চোখ খুলে দেখি চারদিক অন্ধকার। আর মর্লকদের হাত আবার পেঁচিয়ে ধরেছে আমাকে। সরু সরু আঙুলগুলোয় এক ঝটকান দিয়ে তাড়াতাড়ি পকেটে হাত দিলাম–কিন্তু নেই, উধাও হয়ে গেছে দেশলাইয়ের বাক্স। ওরা আরও জোরে চেপে ধরল আমাকে। বুঝলাম, ঘুমিয়ে পড়েছিলাম আমি, সেই সময়ে আগুন নিবে যাওয়ার ফলেই এই বিপত্তি। আতঙ্কে আমার সর্বাঙ্গ অবশ হয়ে এল। সমস্ত বনটা মনে হল পোড়া কাঠের গন্ধে ভরে উঠেছে। ওরা আমার ঘাড়, চুল, হাত শক্ত করে চেপে ধরে শুইয়ে দিচ্ছিল মাটিতে, বুকের ওপরেও চড়ে বসেছিল কুৎসিত, নরম প্রাণীগুলো। সে যে কী ভয়ংকর অনুভূতি, তা বর্ণনা করা সম্ভব নয়। মনে হল যেন অতিকায় একটা মাকড়সার জালে জড়িয়ে পড়েছি আমি। আমাকে সম্পূর্ণভাবে পেড়ে ফেলেছিল ওরা, নড়াচড়া করার ক্ষমতা ছিল না। ঘাড়ের কাছে হঠাৎ দাঁত বসার জ্বালা অনুভব করলাম, তাইতেই একটু গড়িয়ে যেতে হাতটা গিয়ে পড়ল লোহার ডান্ডাটার ওপর। নতুন শক্তি পেলাম যেন। প্রাণপণ শক্তিতে ঝাঁকুনি দিয়ে দাঁড়িয়ে উঠলাম, মানুষ-হঁদুরগুলো ছিটকে পড়ল মাটির ওপর। সঙ্গে সঙ্গে দুহাতে ডান্ডাটা চেপে ধরে আন্দাজমতো মুখ লক্ষ্য করে সজোরে ঘোরাতে লাগলাম। শুনতে পেলাম, মড়মড় করে গুড়াচ্ছে হাড়। অনুভব করলাম, মাংস থেতলে দলা পাকিয়ে যাচ্ছে এক-এক আঘাতে –মুহূর্তের মধ্যে আবার মুক্ত হলাম আমি।

    নির্মম এক জিঘাংসায় যেন আমার সমস্ত চেতনা আচ্ছন্ন হয়ে গেল। ভাবলাম, উইনা আর আমি দুজনেই যখন পথ হারিয়ে পড়েছি এদের হাতে, তখন এই কুৎসিত পিশাচগুলোর নরমাংস খাওয়ার সাধ আজকে ভালো করেই মিটিয়ে দেব। একটা গাছের গুঁড়িতে হেলান দিয়ে ডাইনে-বামে বেপরোয়া ডান্ডা ঘোরাতে লাগলাম। সমস্ত জঙ্গলটা ওদের ছুটোছুটি আর চিৎকারে ভরে উঠল। কেটে গেল একটা মিনিট। ওদের স্বর যেন দারুণ উত্তেজনায় আরও কয়েক পরদা উঁচুতে উঠে গেল, ছুটোছুটি আগের চাইতে বেড়ে গেল অনেক। তবুও কিন্তু কাউকে আর নাগালের মধ্যে আসতে দেখলাম না। অন্ধকারের মধ্যে এদিকে-ওদিকে তাকালাম, কেউই আর এল না। মর্লকরা সত্যিই ভয় পেয়ে গেল তাহলে? প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই অদ্ভুত একটা জিনিস দেখলাম। মনে হল, অন্ধকার যেন আলোর আভায় স্বচ্ছ হয়ে উঠেছে। আবছাভাবে দেখলাম, আশপাশে ছুটোছুটি করছে সাদা প্রাণীগুলো। পায়ের কাছেই পড়ে রয়েছে তিনটে রক্তাক্ত দেহ। নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারলাম না যখন দেখলাম, পালে পালে পেছনের জঙ্গল থেকে বেরিয়ে তিরবেগে দৌড়াতে দৌড়াতে সামনের জঙ্গলে মিলিয়ে যাচ্ছে ওরা। স্রোতের মতো অগুনতি মর্লক দুপাশ দিয়ে ছুটে সামনের গাছপালার মাঝে গা-ঢাকা দিচ্ছে। সে এক দেখবার মতো দৃশ্য। লক্ষ করলাম ওদের পেছনগুলো কীরকম লালচে, সাদা নয় মোটেই। রুদ্ধশ্বাসে দাঁড়িয়ে এ দৃশ্য দেখছি এমন সময়ে শাখাপ্রশাখার ফাঁকে তারার মালায় ভরা কালো আকাশে ছোট্ট একটা লাল ফুলিঙ্গ লাফিয়ে উঠেই মিলিয়ে গেল। দেখেই পোড়া কাঠের গন্ধটা কীসের তা বুঝলাম, বুঝলাম ঘুমপাড়ানি গানের মতো সে গুঞ্জনধ্বনি কীসের। অবশ্য সে গুনগুনানি এখন সোঁ সোঁ গর্জনে এসে ঠেকেছে। বুঝলাম লাল আভা কীসের আর কেনই বা মর্লকরা প্রাণ হাতে নিয়ে দৌড়াচ্ছে।

    গাছের আড়াল থেকে এসে এক অপূর্ব দৃশ্য দেখলাম। সামনের গাছগুলোর বড় বড় গুঁড়ির পাশ দিয়ে দেখলাম, লকলকে শিখায় দাউদাউ করে জ্বলছে সমস্ত জঙ্গল। প্রথম যে আগুন জ্বেলেছিলাম আমি, এখন আমারই পেছন ছুটে আসছে সে। দেখেই উইনার কথা মনে পড়ল। তাকিয়ে দেখি, সে-ও উধাও হয়ে গেছে কখন। ভাববার আর সময় ছিল না, হিসহিস পটপট শব্দে ক্রমেই এগিয়ে আসে আগুন। বোমা ফাটার শব্দ করে গাছ থেকে গাছে লাফিয়ে পড়ছে লেলিহান আগুনের শিখা। লোহার ডান্ডাটা নিয়ে তিরবেগে মর্লকদের পথেই দৌড়ালাম। আগুনের সঙ্গে আমার সে দৌড় প্রতিযোগিতা ভোলবার নয়। একবার তো আগুন ডানদিক দিক দিয়ে এত তাড়াতাড়ি সামনে এগিয়ে গেল যে, আগুনের বেড়াজালে পড়ে গেলাম আমি। শেষ পর্যন্ত এক টুকরো খোলা জমিতে বেরিয়ে আসতে পারলাম। এসেই দেখি, একটা মর্লক আগুনের আভায় অন্ধ হয়ে এগিয়ে আসছে আমার দিকে, তারপর আমাকে পেরিয়ে সটান ঢুকে গেল আগুনের মধ্যে!

    এরপরেই দেখলাম সে যুগের সবচেয়ে বীভৎস দৃশ্য। আগুনের আভায় খোলা জমিটা দিনের মতো উজ্জ্বল হয়ে উঠেছিল। ঠিক মাঝখানে ছোটখাটো একটা পাহাড়। চারপাশে শুকনো কাঁটাগাছ গজিয়েছে প্রচুর। ওদিক থেকে আগুনের আর-একটা শাখা এগিয়ে আসছে এদিকে, মধ্যে মধ্যে হলুদ জিব লিকলিক করে লাফিয়ে পড়ছে আমার পানে। অর্থাৎ আগুনের বেড়াজালে আটকা পড়েছিল খোলা জমিটুকু। পাহাড়ের গায়ে তিরিশ-চল্লিশ জন মর্লক জোর আলোয় চোখ ধাঁধিয়ে যাওয়ায় হতভম্বের মতো এলোমেলোভাবে দৌড়াদৌড়ি করছিল। প্রথমে ওদের অন্ধ অবস্থা আমি বুঝিনি, তাই যতবারই ছুটে এসেছে আমার দিকে, ততবার বেধড়ক পিটিয়েছি ডান্ডা দিয়ে। একজন তো মারের চোটে মরেই গেল, জনা তিনেক হাত-পা-মাথা ভেঙে রইল পড়ে। কিছুক্ষণ পরে একজনকে হাতড়াতে হাতড়াতে আগুনের দিকে এগিয়ে যেতে দেখে বুঝলাম ওদের অসহায় অবস্থা। তাই রেহাই দিলাম সে যাত্রা।

    তা সত্ত্বেও মাঝে মাঝে দু-একজন সটান এগিয়ে এল আমার দিকে, প্রতিবারই শিউরে উঠে কাটিয়ে যেতে হল আমায়। মাঝখানে আগুনের তেজ একটু কমে আসতে ভাবলাম, আবার বুঝি মর্লকগুলো দেখে ফেলেছে আমায়। আরও কয়েকটাকে যমালয়ে পাঠাবার জন্যে ডান্ডা তুললাম ওপরে, কিন্তু আবার লকলকে হয়ে উঠল লাল শিখা। ডান্ডা নামিয়ে এদিকে-সেদিকে পায়চারি করতে লাগলাম উইনার খোঁজে, কিন্তু ওর কোনও চিহ্নই দেখতে পেলাম না।

    শেষে হতাশ হয়ে পাহাড়ের চূড়ায় বসে বসে আগুনের আভায় অন্ধ পিশাচগুলোর এলোমলো নড়াচড়া দেখতে লাগলাম। আগুনের ছোঁয়া লাগামাত্র অপার্থিব শব্দে ককিয়ে চিৎকার করে উঠছিল ওরা। দু-একজন অবশ্য ওপরেও উঠে এসেছিল হাতড়াতে হাতড়াতে, কঠিন কয়েকটা ঘুসি মেরে তাদের ধরাশায়ী করার লোভ আর সামলাতে পারিনি।

    সমস্ত রাত দারুণ ঘুমে জুড়ে আসতে লাগল আমার চোখের পাতা। চেঁচিয়ে ছুটে ঘুমকে তাড়াতে হয়েছিল চোখ থেকে। উঠেছি, বসেছি, বেড়িয়েছি এদিকে-ওদিকে, আর ভগবানকে ডেকেছি যেন আজকের রাতের মতো ঘুম না আসে চোখে। তিনবার দেখলাম, যন্ত্রণায় কুঁকড়ে উঠে কতকগুলো মর্লক ছুটে গেল আগুনের ভেতরে। অনেকক্ষণ পর একসময়ে আগুনের লাল আভা আর রাশি রাশি কালো ধোঁয়াকে ফিকে করে দিয়ে এল ভোরের শুভ্র সুন্দর আলো।

    আবার খুঁজে দেখলাম উইনাকে, কিন্তু কোথাও কোনও চিহ্ন দেখতে পেলাম না। মর্লকরা। যে বেচারিকে জ্বলন্ত জঙ্গলের মধ্যে ফেলে পালিয়েছে, সে বিষয়ে কোনও সন্দেহ রইল না আমার। দারুণ ইচ্ছে হল, আরও কয়েকটা মর্লকের মাথা গুঁড়িয়ে দিয়ে আসি। কিন্তু তা করে তো আর উইনাকে ফিরিয়ে দেওয়া যাবে না ইলয়দের মধ্যে। পাহাড়ের চূড়ায় উঠে চারদিকে তাকাতেই সবুজ পোর্সেলিনের প্রাসাদ দেখতে পেলাম। সাদা স্ফিংক্স কোনদিকে আছে, ঠিক করে নিয়ে হাঁটা দিলাম সেইদিকে। আগুন তখনও রয়েছে এখানে-সেখানে। পায়ের তলায় রাশি রাশি ছাই থেকে গুমে গুমে উঠছে ধোঁয়া, গাছগুলোও ভেতরে ভেতরে পুড়ে চলেছে–তাই ধোঁয়া ওঠার বিরাম নেই। ধোঁয়ায় চারদিক কুয়াশার মতো আবছা হয়ে উঠেছিল। অস্পষ্টভাবে দেখলাম, কয়েকটা কদাকার মর্লক গোঙাতে গোঙাতে ঘুরছে। এলোমেলোভাবে। এরই মাঝ দিয়ে খোঁড়াতে খোঁড়াতে এগিয়ে চললাম আমি। পায়ে অবশ্য পুরু করে ঘাস বেঁধে নিয়েছিলাম, তবুও অনাহারে, অনিদ্রায়, অবসাদে আমার তখন এক পা-ও যাওয়ার ক্ষমতা ছিল না। চোখ জ্বালা করছিল নিষ্পাপ উইনার শোচনীয় পরিণতির কথা ভেবে। আমিই তাকে এনেছিলাম, কিন্তু ফিরিয়ে দিতে পারলাম না তার পরিজনদের মাঝে।

    হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎ পকেটে হাতড়াতে আনন্দে আমার মন নেচে উঠল। চারটে দেশলাইয়ের কাঠি পেলাম পকেটে। মর্লকরা বাক্সটা বার করে নিলেও কোনওরকমে এ চারটে কাঠি থেকে গেছে পকেটের কোণে।…

    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleকল্পগল্প সমগ্র – এইচ জি ওয়েলস
    Next Article ইবনে বতুতার সফরনামা – এইচ. এ. আর. গিব

    Related Articles

    এইচ জি ওয়েলস

    কল্পগল্প সমগ্র – এইচ জি ওয়েলস

    July 15, 2025
    এইচ জি ওয়েলস

    দ্য ওয়ার অব দ্য ওয়ার্ল্ডস – এইচ জি ওয়েলস

    July 15, 2025
    এইচ জি ওয়েলস

    ভাবীকালের একটি গল্প – এইচ জি ওয়েলস

    July 15, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Demo
    Most Popular

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Our Picks

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    দ্য দা ভিঞ্চি কোড – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025

    এঞ্জেলস এন্ড ডেমনস – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    Sign In or Register

    Welcome Back!

    Login below or Register Now.

    Lost password?

    Register Now!

    Already registered? Login.

    A password will be e-mailed to you.