Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    দ্য দা ভিঞ্চি কোড – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025

    এঞ্জেলস এন্ড ডেমনস – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • 🔖
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    Subscribe
    সাইন ইন
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    টাইম মেশিন – এইচ জি ওয়েলস

    এইচ জি ওয়েলস এক পাতা গল্প97 Mins Read0

    ১৪. আরও ভবিষ্যতে

    ১৪। আরও ভবিষ্যতে

    সময়-পর্যটন যে কী অস্বস্তিকর, তা আপনাদের আগেও বলেছি আমি৷ তার ওপরে এবার আমি ভালো করে আসনে বসতেও পারিনি। পাশের দিকে হেলে পড়ে কোনওরকমে ঠেকেছিলাম আসনে। কতক্ষণ যে এভাবে আঁকড়েছিলাম মেশিনটা, সে খেয়াল ছিল না। দুলুনি আর ঝাঁকুনির মধ্যে কীভাবে এগিয়ে যাচ্ছি, সেসবও দেখার মতো অবস্থা আমার ছিল না। অনেকক্ষণ বাদে একটু সামলে উঠে ডায়ালগুলোর দিকে তাকাতেই চক্ষুস্থির হয়ে গেল। একটা ডায়ালে দেখা যায় শুধু একদিনের হিসেব, আর একটায় হাজার দিনের, তার পাশেরটায় লক্ষ লক্ষ দিনের, আর সব শেষেরটায় কোটি কোটি দিনের। বিপরীত দিকে যাওয়ার লিভারটা না টেনে আমি মেশিনটা শুধু চালিয়ে দিয়েছিলাম, এখন ডায়ালের দিকে তাকাতে দেখি, হাজারের কাঁটাটা ঘড়ির সেকেন্ডের কাঁটার মতো বেগে ঘরে চলেছে–আর আমি এগিয়ে চলেছি আরও ভবিষ্যতের গর্ভে।

    যতই এগতে লাগলাম, চারপাশে দেখলাম এক আশ্চর্য পরিবর্তন। দপদপে ধোঁয়াটে কুয়াশা আরও গাঢ় হয়ে উঠল। তারপরে, প্রচণ্ড বেগে ছুটে চলা সত্ত্বেও মিটমিটে তারার মতো আবার দেখা গেল দিনরাতের দ্রুত পরিবর্তন। ধীরগতিতে গেলে এ পরিবর্তন দেখা যায়। কিন্তু এত নিদারুণ বেগে যাওয়া সত্ত্বেও দিনরাতের আসা-যাওয়া স্পষ্টতর হয়ে উঠল। দারুণ ঘাবড়ে গেলাম। দিবানিশার পরিবর্তন-গতি আরও কমে আসতে লাগল, সেই সঙ্গে কমে এল আকাশে সূর্যের আনাগোনা। শেষকালে মনে হল, পরিবর্তন আসছে কেবল একশো বছর অন্তর অন্তর। প্রথমে পৃথিবীর ওপর দেখা গেল পরিবর্তনহীন স্থির এক গোধূলি, মাঝে মাঝে শুধু কালো আকাশকে চমকে দিয়ে আর গোধূলিকে ঝলসে দিয়ে তিরবেগে উধাও হয়ে গেল কয়েকটা ধূমকেতু।

    আলোর যে চওড়া ফালিটা অবস্থান নির্দেশ করছিল, অনেক আগেই তা অদৃশ্য হয়ে গিয়েছিল। কেননা, আর অস্ত যাচ্ছিল না সূর্য, শুধু পশ্চিমদিক থেকে উঠে আবার নেমে যাচ্ছিল পশ্চিমেই। আর ক্রমশ লাল, আরও জ্বলন্ত হয়ে উঠছিল তার আকৃতি। চাঁদের সব চিহ্ন মিলিয়ে গেল। তারাগুলোর ঘুরপাকও ক্রমশ কমতে কমতে এসে ঠেকল মৃদু সঞ্চরমাণ কয়েকটা আলোর বিন্দুতে। অবশেষে দিক্রেখার ওপর মস্ত বড় গাঢ় লাল সূর্য নিথর হয়ে রইল দাঁড়িয়ে, দীপ্তিহীন উত্তাপে জ্বলতে লাগল আর বিশাল থালার মতো গোল আকৃতি, মাঝে মাঝে ক্ষণেকের জন্যে নিবেও যেতে লাগল। একবার কিছুক্ষণের জন্যে বেশ উজ্জ্বল হয়ে উঠল, কিন্তু দেখতে দেখতে আবার ফিরে এল সেই ম্যাড়মেড়ে লাল আভা। উদয় আর অস্তর ধীরগতি দেখে বুঝলাম, চাঁদ যেমন এ যুগে পৃথিবীর দিকে সমানে একদিক ফিরিয়ে আছে, ঠিক তেমনি পৃথিবীও সূর্যের দিকে একদিক ফিরিয়ে স্থির হয়ে গেল। গতবারের মতো মেশিন সমেত উলটে পড়াটা যাতে আর না হয়, তাই খুব আস্তে আস্তে গতি কমিয়ে আনতে লাগলাম। ঘুরন্ত কাঁটাগুলোর ঘুরপাক ধীরে ধীরে কমে আসতে লাগল, শেষে হাজারের কাঁটাটা নিশ্চল হয়ে গেল দাঁড়িয়ে। স্কেলের ওপর কুয়াশার মতো দিনের কাঁটাটা ঘুরছিল, তাকেও বেশ স্পষ্ট দেখা গেল। আরও আস্তে–জনশূন্য বালুকাবেলার আবছা রেখা আরও স্পষ্ট হয়ে উঠল।

    খুব সাবধানে মেশিন থামিয়ে চারদিকে ভালো করে তাকালাম। আকাশ আর নীল নেই। উত্তর-পূর্বদিক কালির মতো কুচকুচে কালো; আঁধারের মধ্যে থেকে স্থির দ্যুতিতে জ্বলজ্বল করছিল ফ্যাকাশে সাদা তারাগুলো। মাথার ওপর ঘোর রক্তবর্ণ। তারা নেই একটিও। দক্ষিণ-পূর্বদিক টুকটুকে লাল আভায় জ্বলছে, সেদিকেই দিক্রেখায় অর্ধেক ঢাকা পড়ে নিশ্চল হয়ে রয়েছে সূর্যের বিশাল লাল দেহ। চারপাশে পাহাড়গুলো রুক্ষ লালচে রঙের। প্রাণের চিহ্নের মধ্যে দেখলাম, শুধু দক্ষিণ-পূর্বদিক ছেয়ে রয়েছে ঘন সবুজ উদ্ভিদে। একটানা গোধূলির মধ্যে বৃদ্ধি-পাওয়া গাছপালার ওপর যেমন উজ্জ্বল সবুজ রং দেখা যায়, এ রংও যেন সেইরকম। এ যুগে গুহার গাছ-শেওলা আর জঙ্গলের শৈবালের রঙের সঙ্গে সে রঙের মিল আছে অনেকটা।

    ঢালু সমুদ্রতীরের ওপর দাঁড়িয়ে ছিল মেশিনটা। দক্ষিণ-পশ্চিমদিকে পানসে আকাশের পটে দিক্রেখায় গিয়ে মিশেছে সমুদ্র। অদ্ভুত শান্ত তার জল। না আছে ঢেউ, না আছে। আলোড়ন, কেননা বাতাসে চাঞ্চল্য নেই এতটুকুও। খুব মৃদু শ্বাস-প্রশ্বাসের মতো স্পন্দিত হচ্ছিল তার জল, খুব ধীরভাবে একটু উঠে আবার নেমে যাচ্ছিল মসৃণভাবে, তাই দেখেই বোঝা গেল, চিরন্তন সমুদ্র এখনও বেঁচে আছে, এখনও হারায়নি সে তার গতি। তীরের কাছে পুরু নুনের মতো একটা স্তর দেখলাম, পাণ্ডুর আকাশের নিচে লালচে হয়ে উঠেছে তার রং। মাথার মধ্যে একটু যন্ত্রণা বোধ করছিলাম। লক্ষ করলাম, খুব দ্রুত নিঃশ্বাস নিতে হচ্ছে আমায়। পাহাড়ে ওঠার সময়ে যেরকম হয়, সেইরকম। তাইতেই বুঝলাম, এখনকার চাইতে অনেক লঘু হয়ে গেছে তখনকার বাতাস।

    অনেক দূরে জনশূন্য বেলাভূমির ওপর কর্কশ, আর্ত-চিৎকার শুনে দেখি, অতিকায় প্রজাপতির মতো সাদা একটা প্রাণী কাত হয়ে ডানা পতপত করে আকাশে উঠল, তারপর কয়েকটা পাক দিয়ে অদৃশ্য হয়ে গেল ওপাশের পাহাড়ের আড়ালে। সে চিৎকার এমনই রক্ত জমানো যে, আঁতকে উঠে আরও ভালো করে চেপে বসলাম আসনে। চারপাশে আর একবার তাকাতে দেখি, কাছের যে জিনিসটাকে লালচে পাথরের চাঙড় বলে ভেবেছিলাম, আস্তে আস্তে সেটা এগিয়ে আসছে আমার দিকে। তখনই দেখলাম, পাথর নয়, দানব কাঁকড়ার মতো একটা প্রাণী গুঁড়ি মেরে এগচ্ছে আমার পানেই। কল্পনা করুন তো, দূরের ওই টেবিলটার মতো মস্ত বড় একটা কাঁকড়াকে, টলমল করছে তার অনেকগুলো পা, ধীরগতিতে এগিয়ে আসছে আপনার দিকে, বড় বড় দাঁড়া দুটো দুলছে, শংকর মাছের সুদীর্ঘ চাবুকের মতো লম্বা শুড়গুলো এদিকে-ওদিকে নড়ে নড়ে খুঁজছে শিকার, আর ধাতুর মতো কঠিন আর চকচকে আচ্ছাদনের দুপাশ থেকে বোঁটার ডগায় বড় বড় দুটো আগুন চোখ দপদপ জ্বলছে আপনার দিকে। পেছনদিকটা ঢেউতোলা অসমান, পাথরের গায়ে খোদাই করা কারুকাজের মতো হরেকরকম খাঁজকাটা। এখানে-সেখানে জমে রয়েছে সবুজ শেওলার স্তর। কিম্ভুতকিমাকার মুখের গর্তে যেন বিশ্বের খিদে নিয়ে মূর্তিমান বিভীষিকার মতো সে গুঁড়ি মেরে এগিয়ে আসতে লাগল আমার পানে।

    স্থাণুর মতো এই ভয়ংকর দানবটার দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে রয়েছি, এমন সময়ে মাছি বসার মতো একটা সুড়সুড়ি লাগল আমার গালে। হাত দিয়ে ঝেড়ে দিলাম জায়গাটা, কিন্তু পরমুহূর্তেই আবার সুড়সুড় করে উঠল গালটা, আর প্রায় সঙ্গে সঙ্গে কানের ওপরেও পেলাম সেই অনুভূতি। ঠাস করে চাপড় মারতেই সুতোর মতো কীসে হাত ঠেকল। তখুনি কিন্তু হাতের মধ্যে থেকে বেরিয়ে গেল জিনিসটা। দারুণ চমকে পেছন ফিরে দেখি, আর একটা অতিকায় কাঁকড়ার শুড়ের ডগা চেপে ধরেছিলাম আমি। আমার ঠিক পেছনেই দাঁড়িয়ে ছিল দানবটা। বোঁটার প্রান্তে নরকের আগুন জ্বলছিল লাল চোখে, ক্ষুধায় লোলুপ হয়ে উঠেছিল মুখের হাঁ, আর আঠালো কাদা-মাখা বড় বড় দাঁড়া বিরাট সাঁড়াশির মতো আস্তে আন্তে নেমে আসছিল আমার ওপর। চোখের পলক ফেলার আগেই লিভারের ওপর হাত দিয়ে এক মাসের ব্যবধান এনে ফেললাম আমার আর ওই দানোগুলের মধ্যে। মেশিন তখনও সেই একই বেলাভূমিতে দাঁড়িয়ে, কাজেই মূর্তিমান বিভীষিকাগুলোকে দেখতে পেলাম তখনও। প্রায় এক ডজন কাঁকড়া পানসে আলোয় সবুজ শেওলার মধ্যে এদিকে সেদিকে নড়াচড়া করছে।

    সে যে কী ধু ধু শূন্যতা ছড়িয়ে ছিল পৃথিবীর আকাশে-বাতাসে, তা আপনাদের কিছুতেই বোঝাতে পারব না। পুবের লাল আকাশ, পশ্চিমের অন্ধকার, নোনা-ধরা সাগর, পাথরে সাগরতীরে ধীরগতি কুৎসিত দানবগুলো, গাছ-শেওলার একই রকম বিষ-সবুজ রং, ফুসফুস ফাটানো লঘু বাতাস, সবকিছুই নিঃসীম আতঙ্কে আচ্ছন্ন করে দেয় সমস্ত চেতনা। আরও একটা বছর এগিয়ে গেলাম আমি। কিন্তু সেখানেও সেই লাল সূর্য, আরও ম্যাড়মেড়ে। সেই মরা সাগর। সেই ঠান্ডা বাতাস। আর একই রকম কঠিন বর্ম-পরা প্রাণীদের সবুজ শেওলা আর লাল পাহাড়ের মধ্যে নড়াচড়া। আর দেখলাম, পশ্চিম আকাশে মস্ত বড় একাদশীর চাঁদের মতো বাঁকানো একটা পাণ্ডুর রেখা। কিন্তু পরিবর্তন নেই মৃত্যুকঠিন অবসন্ন শ্মশানস্তব্ধতার।

    এইভাবে থেমে থেমে এক-এক লাফে হাজার বছর কি তারও বেশি পেরিয়ে এগিয়ে চললাম আমি। পৃথিবীর অন্তিম অবস্থা দেখতে লাগলাম নিজের চোখে। সভয়ে দেখলাম, পশ্চিম আকাশে ক্রমশ আরও বড়, আরও ফ্যাকাশে হয়ে উঠছে সূর্য। বুঝলাম, পৃথিবীর আয় ফুরিয়ে আসছে। অবশেষে, আজ থেকে তিন কোটি বছর পরে লাল গোলার মতো বিপুল সূর্য প্রায়-অন্ধকার আকাশের দশ ভাগের প্রায় এক ভাগ আবছা করে তুলল। আবার থামলাম আমি। কেননা অগণিত কাঁকড়ার দল দেখলাম অদৃশ্য হয়ে গেছে, গাছ-শেওলা জাতের সবুজ উদ্ভিদ ছাড়া লাল বেলাভূমিতে প্রাণের কোনও চিহ্ন নেই। তারপরেই এল সাদা আস্তরণ। ঠান্ডায় হি-হি করে কেঁপে উঠলাম আমি। সাদা তুষার তার চাদর বিছিয়ে দিতে লাগল হেথায়-সেথায়। কালো আকাশের তারার আলোয় ঝিকমিক করে উঠল তুষারখচিত উত্তর-পূর্বদিক। দেখলাম, ঢেউখেলানো বিস্তর পাহাড়ের লালচে সাদা চুড়ো। সমুদ্রের ধারে জমেছে বরফ, জলে ভেসে যাচ্ছে বরফের চাঁই। তখনও চিরকালের মতো অস্ত-যাওয়া সূর্যের আলোয় রক্তিম লবণ-সমুদ্র জমে যায়নি।

    কোনওরকম জীবিত প্রাণীর আশায় চারপাশে তাকালাম। কিন্তু বৃথা সে চেষ্টা। আকাশে, পৃথিবীতে, সাগরে–কিছুই নড়তে দেখলাম না। প্রাণের চিহ্ন শুধু ছিল পাহাড়ের ওপর সবুজ উদ্ভিদের মধ্যে। সমুদ্রে নিচু একটা বালির চড়া উঠে এসেছে দেখলাম, তীরভূমি থেকেও জল সরে গেছে অনেক দূরে। মনে হল, দূরে বালির চড়ায় কালোমতো একটা জিনিস যেন ঝটপট করে উঠল, কিন্তু সেদিকে তাকাতেই থেমে গেল নড়াচড়া। আমারই চোখের ভুল, পাথর ছাড়া কিছুই দেখিনি। আকাশের তারাগুলো অবশ্য খুব জ্বলজ্বলে মনে হল, অনেকদিনের চেনা পুরানো বন্ধুর মতো মিটমিট করে ওরা তাকিয়ে ছিল আমার দিকে।

    আচমকা লক্ষ করলাম, পশ্চিমে সূর্যের বাইরের গোল রেখা পালটে যাচ্ছে, বাঁকা রেখার একটা জায়গায় যেন বড় রকমের একটা টোল পড়েছে। চোখের সামনে দেখলাম, বড় হয়ে যাচ্ছে টোলটা। পুরো এক মিনিট ক্রমশ এগিয়ে আসা রাশি রাশি অন্ধকারের দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে রইলাম, তারপর বুঝলাম, গ্রহণ শুরু হল। হয় চাঁদ আর না-হয় বুধ গ্রহ আড়াআড়িভাবে যাচ্ছে সূর্যের ওপর দিয়ে। প্রথমে চাঁদ বলেই ভেবেছিলাম, কিন্তু পরে অনেক ভেবে দেখলাম, পৃথিবী আর সূর্যের মধ্যেকার একটি গ্রহকেই সেদিন পৃথিবীর খুব কাছ দিয়ে যেতে দেখেছিলাম।

    অন্ধকার ঘন হয়ে উঠতে লাগল। পূর্বদিক থেকে নতুন তেজে বয়ে এল ঠান্ডা বাতাস। আকাশ থেকে সাদা বরফ-বৃষ্টি আরও বেড়ে উঠল। সমুদ্রের কিনারা থেকে ভেসে এল অদ্ভুত ছলছল শব্দের সঙ্গে কীসের ফিসফিসানি। এইসব প্রাণহীন শব্দ ছাড়া পৃথিবী একেবারে নিস্তব্ধ। নিস্তব্ধ? সে নৈঃশব্দ্য যে কী তা ভাষায় প্রকাশ করা যায় না। পাখির যে কুজন, মানুষের সাড়া, ভেড়ার ডাক, পোকামাকড়ের গুনগুনানি আর স্পন্দন সূচনা করে জীবন, সেসবই থেমে গেছে। অন্ধকার যত ঘন হতে লাগল, ততই বাড়তে লাগল বরফ পড়া, ততই কনকনে হয়ে উঠতে লাগল বাতাস। শেষে, একে একে কিন্তু খুব তাড়াতাড়ি দূরের পাহাড়ের চুড়াগুলো হারিয়ে গেল অন্ধকারের আড়ালে। গোঙিয়ে কেঁদে উঠল বাতাস। দেখলাম, গ্রহণের ঠিক কেন্দ্রের কালো ছায়াটা আমার দিকেই এগিয়ে আসছে। পরের মুহূর্তেই শুধু ফ্যাকাশে তারাগুলো দেখা গেল, আর সবকিছুই গেল অস্পষ্ট হয়ে। আকাশ ঢেকে গেল নিবিড় তিমিরে।

    এই মহাতিমিরের আতঙ্ক চেপে বসল আমার ওপর। দারুণ শীতে হাড়সুদ্ধ কনকনিয়ে উঠছিল, নিঃশ্বাস নিতেও যন্ত্রণা বোধ করছিলাম। থরথরিয়ে কেঁপে উঠলাম, দারুণ গা বমি-বমি ভাব পাক দিয়ে উঠল সর্বাঙ্গে। তারপরেই লাল মুগুর পড়ার মতো সুর্যের কিনারা বেরিয়ে এল আকাশে। নিজেকে সামলাতে মেশিন থেকে নেমে দাঁড়ালাম আমি। মাথা ঘুরতে লাগল আমার, মনে হল ফিরে যাওয়ার মতো ক্ষমতাও আর নেই। অর্ধ-অচেতন হয়ে দাঁড়িয়ে ছিলাম। হঠাৎ দেখলাম, সেই জিনিসটা আবার নড়ে উঠল লাল জলের মাঝে –এবার তার নড়ে ওঠা সম্বন্ধে আর কোনও সন্দেহ রইল না আমার। ফুটবল কি তার চাইতেও বড় গোলাকার একটা বস্তু, গা থেকে কতকগুলো শুড় বেরিয়ে এসেছে। ছলছলে রক্তের মতো লাল জলের বুকে জিনিসটা মনে হল ঘোর কালো রঙের, এদিকে-ওদিকে দিব্যি লাফিয়ে লাফিয়ে ঘুরছিল জিনিসটা। তারপরেই মনে হল, অজ্ঞান হয়ে যাচ্ছি আমি। কিন্তু দূর ভবিষ্যতের ওই ভয়াবহ গোধূলিতে অসহায় অবস্থায় পড়ে থাকার আতঙ্কই আমাকে কোনওরকমে টেনে এনে বসিয়ে দিলে টাইম মেশিনের আসনে।

    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleকল্পগল্প সমগ্র – এইচ জি ওয়েলস
    Next Article ইবনে বতুতার সফরনামা – এইচ. এ. আর. গিব

    Related Articles

    এইচ জি ওয়েলস

    কল্পগল্প সমগ্র – এইচ জি ওয়েলস

    July 15, 2025
    এইচ জি ওয়েলস

    দ্য ওয়ার অব দ্য ওয়ার্ল্ডস – এইচ জি ওয়েলস

    July 15, 2025
    এইচ জি ওয়েলস

    ভাবীকালের একটি গল্প – এইচ জি ওয়েলস

    July 15, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Demo
    Most Popular

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Our Picks

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    দ্য দা ভিঞ্চি কোড – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025

    এঞ্জেলস এন্ড ডেমনস – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    Sign In or Register

    Welcome Back!

    Login below or Register Now.

    Lost password?

    Register Now!

    Already registered? Login.

    A password will be e-mailed to you.