Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    রাজমালা বা ত্রিপুরার ইতিহাস – শ্রী কৈলাসচন্দ্ৰ সিংহ প্রণীত

    August 20, 2025

    আলো হাতে সেই মেয়েটি – তপন বন্দ্যোপাধ্যায়

    August 20, 2025

    গোয়েন্দা গার্গী সমগ্র – তপন বন্দ্যোপাধ্যায়

    August 20, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • 🔖
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    Subscribe
    সাইন ইন
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    টারজান রচনা সমগ্র – এডগার রাইস বারুজ

    এডগার রাইস বারুজ এক পাতা গল্প1300 Mins Read0

    টারজান ও জনৈক উন্মাদ (টারজান এ্যাণ্ড দি ম্যাডম্যান)

    টারজান ও জনৈক উন্মাদ (টারজান এ্যাণ্ড দি ম্যাডম্যান)

    সেদিন টারজান বনের মাঝে একা পথ চলতে চলতে হঠাৎ বুঝতে পারল কারা যেন দূরে আসছে।

    সেই শব্দ লক্ষ্য করে সে গাছের উপর উঠে ডালে ডালে এগিয়ে যেতে বাতাসে কিছু নিগ্রো আর অল্প দু-একজন শ্বেতাঙ্গের গন্ধ পেল। টারজান যখন আরো অনেকটা এগিয়ে গেল তখন সে দেখতে পেল অদূরে একজন নিগ্রো আর দু’জন শ্বেতাঙ্গ একটা ফাঁকা জায়গায় একটি নদীর ধারে শিবির স্থাপন করছে। তাদের দেখে এক নির্দোষ শিকারীর দল মনে হলেও টারজান ঠিক করল অন্ধকার হলে সে তাদের কাছ থেকে তাদের কথাবার্তা শুনবে।

    হঠাৎ নদীর উপর থেকে আর একটা শব্দ এল। টারজান গাছের উপর থেকে দেখল নদীর উপর দিয়ে কয়েকটা ডিঙ্গি নৌকা দাঁড় বেয়ে ঘাটের কাছে সেই শিবিরটার দিকে আসছে।

    শিবিরের দু’জন শ্বেতাঙ্গ এগিয়ে গিয়ে আগন্তুকদের অভ্যর্থনা জানাল। পরে নৌকারোহীরা কূলে নেমে আগের শিবিরটার পাশে একটা শিবির স্থাপন করল। প্রথমে যারা নদীর ধারে শিবির স্থাপন করেছিল তাদের নেতা পেলহ্যাম ডাটন আগন্তুকদের চিনত না এবং তাদের দেখে খুব একটা ভাল মনে হলো না। কিন্তু তার শিকারী এবং প্রথম প্রদর্শক বিল গা এগিয়ে গিয়ে আগন্তুক শ্বেতাঙ্গ দু’জনের একজনকে দেখিয়ে ডাটনকে বলল, ইনি হচ্ছেন টম ক্রাম্প। অনেকদিন আফ্রিকার জঙ্গলে আছেন।

    ক্রাম্প তার সঙ্গীকে দেখিয়ে ডাটনকে বলল, ইনি হচ্ছেন মিনস্কি।

    ফাঁকা জায়গাটার ধারে যে একটা গাছ ছিল তার উপর থেকে টারজান ক্রাম্পকে চিনতে পারল। সে জানত ক্রাম্প একজন কুখ্যাত হাতির দাঁতের কারবারি এবং বছর কতক আগে সে ক্রাম্পকে তার দেশ থেকে তাড়িয়ে দিয়েছিল। সে একজন দুষ্ট প্রকৃতির লোক এবং দুটো দেশের কর্তৃপক্ষ তার নানা কুকীর্তির জন্য তাকে খুঁজে বেড়াচ্ছে। বাকি তিনজন শ্বেতাঙ্গকে সে চিনত না। তবে ডাটনকে তার ভাল লোক বলেই মনে হলো।

    ক্রাম্প তার শিবিরে এসে গাকে বলল, তুমি এখানে কি করছ বিল? তোমার সঙ্গের লোকটি কে?

    গান্ট্র বলল, উনি একজন আমেরিকান। উনি এডিনবরা থেকে আগত টিমথি পিকারৈল নামে এক ধনী বৃদ্ধ ভদ্রলোকের সঙ্গে শিকারে বেরিয়েছিলেন। আমি ওদের শিকারে সাহায্য করছিলাম। বৃদ্ধ ভদ্রলোকের সান্দ্রা নামে একটি যুবতী মেয়ে ছিল সঙ্গে। একদিন টারজান অফ দি এপস্ নামে এক নগ্নপ্রায় দৈত্যাকার লোক আসে আমাদের শিবিরে। তুমি লোকটাকে চেন?

    ক্রাম্প তার মুখটা গম্ভীর এবং বিকৃত করে বলল, চিনি না মানে? বছর দুই আগে ও আমাকে এমন একটা অঞ্চল থেকে তাড়িয়ে দেয় যেখানে অনেক ভাল ভাল হাতি ছিল।

    গান্ট্র আবার বলতে লাগল, শিবিরে এলে টারজানকে পিকারেল এমনভাবে খাতির করতে লাগল যেন মনে হবে টারজান ওর নিজের ভাই। একদিন পিকারেল যখন ডাটন আর আমাকে নিয়ে শিকারে বেরিয়েছিল তখন তার মেয়ে সান্দ্রা টারজনের সঙ্গে বেড়াতে চলে যায়। তারপর থেকে আর ফিরে আসেনি সান্দ্রা। আমরা ভাবছিলাম তাদের মৃত্যু ঘটেছে। এক সপ্তাহ হলো আমরা তাদের নানা জায়গায় খোঁজাখুঁজি করছি। খুঁজতে গিয়ে আমরা একজন আদিবাসীর দেখা পাই। সে আমাদের বলল, সে দেখেছে। টারজান মেয়েটাকে বেঁধে তার গলায় দড়ি দিয়ে কোথায় নিয়ে যাচ্ছে। এই কথা শুনে বুড়ো পিকারেল মৃতপ্রায় অবস্থায় আগের শিবিরেই রয়ে গেছে। সে তার মেয়ের জন্য এক হাজার পাউন্ড পুরস্কার ঘোষণা করে। কেউ তার মেয়েকে এনে দিতে পারলে সে এই টাকাটা আর টারজানকে কেউ জীবিত বা মৃত এনে দিতে পারলে তাকে পাঁচশো পাউন্ড দেবে। আমরা তাই ওদের খোঁজে এখানে এসে পড়েছি।

    গোধূলি চয়ে যেতে সন্ধ্যার ছায়া নেমে এল শিবিরে নিগ্রোভৃত্যরা শিবিরের সামনে আগুন জ্বেলে তার চারপাশে বসল।

    জ্বলন্ত আগুনের আলোয় আলোকিত হয়ে উঠেছিল শিবিরের সামনেটা। হঠাৎ আগুনের ধারে বসে থাকতে থাকতে একজন নিগ্রোভৃত্য চীৎকার করে উঠল ভয়ে। তার চীৎকার শুনে শ্বেতাঙ্গরা মুখ তুলে দেখল দৈত্যাকার এক নগ্নপ্রায় শ্বেতাঙ্গ তাদের শিবিরের দিকে আসছে।

    ক্রাম্প লাফ দিয়ে উঠে পড়ল। সে টারজানকে চিনতে পারল। চিনতে পারার সঙ্গে সঙ্গে সে তার পিস্তলটা বার করে টারজানকে লক্ষ্য করে গুলি করল।

    ক্রাম্পের গুলিটা লাগল না। টারজনের গায়ে কিন্তু মুহূর্তের মধ্যে টারজনের একটা তীর ক্রাম্পের ডানদিকের কাঁধটাকে বিদ্ধ করল?

    ডাটন ব্যাপারটা বুঝতে পেরে ক্রাম্পকে বলল, তুমি একটা বোকা। ও শিবিরে আসছিল, তুমি গুলি করতে গেল কেন।

    ডাটন জোর গলায় টারজান ডাকতে লাগল। বলল, ফিরে এসো। টারজান, তোমার কোন ক্ষতি করা হবে না। আমি কথা দিচ্ছি। মিস পিকারেল কোথায়? ফিরে এসে সব কথা বল আমাদের।

    কথাগুলো কানে শুনতে পেলেও সে আর ফিরে এল না।

    সেদিন রাতে একটা গাছের উপর রাত কাটাল টারজান। কিন্তু সে বারবার ভেবেও একটা কথা বুঝতে পারল না মিস পিকারেল নামে মেয়েটি কে এবং কেনই বা তারা তাকে তার অপহরণকারী বলে ভাবছে।

    হঠাৎ একটা বর্শা ঝোপের ভিতর থেকে ছুটে এসে তার পাশ দিয়ে চলে গেল। সে বুঝল এটা তার প্রতি আক্রমণ। বর্শাটা তার গায়ে লাগল কি না আক্রমণকারী তা বোঝার আগেই একটা গাছের উপর উঠে কোথায় অদৃশ্য হয়ে গেল টারজান।

    তার আক্রমণকারী কে এবং কোথায় তারা আছে তা জানার জন্য গাছের উপর থেকে অদৃশ্য অবস্থায় লক্ষ্য করতে লাগল টারজান। সে দেখল কুড়িজন আদিবাসী একজায়গায় জটলা পাকিয়ে বসে আছে। তাদের চোখে মুখে স্পষ্ট ভয়ের চিহ্ন ফুটে রয়েছে। তাদের মধ্যে একজন বলছিল, বর্শাটা তার গায়ে লাগেনি এবং সে ঠিক এর প্রতিশোধ নেবার জন্য আসবে।

    অন্য একজন বলল, সে আমাদের গায়ে এলে প্রথমে তার সঙ্গে বন্ধুভাবে ব্যবহার করব। পরে অসতর্ক মুহূর্তে তাকে ধরে তার হাত-পা বেঁধে ফেলব।

    আর একজন বলল, আমার কিন্তু ভয় করছে। টারজানকে আমি সত্যিই ভয় করি।

    অন্য একজন বলল, কিন্তু ওরা বলেছে তার জন্য মোটা পুরস্কার দেবে। পুরস্কারটা এত বেশি যে তাতে আমরা প্রত্যেকে একশোজন করে মেয়ে কিনতে পারব এবং তার সঙ্গে অনেক গরু, ছাগল আর মুরগিও কিনতে পারব।

    কথাগুলো শুনে হতবুদ্ধি হয়ে গেল টারজান। সে ভাবল এই সমস্যার সমাধান তাকে করতেই হবে অন্য কোথাও যাবার আগে।

    এই সব আদিবাসীদের গাঁটা কোথায় তা সে জানত। তাই সন্ধ্যার পর সে তাদের গাঁয়ের পাশে একটা গাছের উপর উঠে অপেক্ষা করতে লাগল।

    ক্রমে রাত্রি হতে গাঁয়ের সবাই আপন আপন ঘরে শুয়ে পড়লে এবং গাঁটা একেবারে নীরব হয়ে গেলে গাঁয়ের গেট পার হয়ে গাঁয়ের মধ্যে ঢুকে পড়ল টারজান। সে দেখল গেটের কাছে একটা গাছ রয়েছে যার ডালগুলো ঝুঁকে আছে গাঁয়ের ভিতর দিকে। সেই দিক দিয়ে সে সহজে পালাতে পারবে।

    টারজান দেখল সে রাতে খুব ঠাণ্ডা থাকার জন্য প্রহরী তার সামনে আগুন জ্বেলে তার পাশে বসে ঝিমোচ্ছে। আশপাশের কুঁড়েগুলোতে সবাই ঘুমিয়ে পড়েছে।

    টারজান নিঃশব্দে সর্দারের কুঁড়ের কাছে গিয়ে তন্দ্রাহত প্রহরীটার পিছন দিক থেকে তার গলাটা টিপে ধরল। তারপর চাপা গলায় তাকে বলল, চুপ করে থাক, আমি তোমায় মারব না।

    কিন্তু তার গলার উপর হাতটা একটু আলগা করে দিতেই প্রহরীটা ভয়ে চীৎকার করে উঠল। টারজান তখন তাকে কাঁধের উপর তুলে নিয়ে গেটের দিকে ছুটে পালাতে লাগল। কিন্তু তার চীৎকারে গাঁয়ের অনেকেই তখন জেগে উঠেছে। একজন যোদ্ধা গেটের কাছে তার সামনে পথরোধ করে দাঁড়াতে টারজান তাকে ঘুষি মেরে ফেলে দিয়ে তার বুকের উপর পা দিয়ে সেই গাছটায় উঠে পড়ল। অন্য সব যোদ্ধারা তাকে আক্রমণ করার আগেই সে গাছের ডালে ডালে জঙ্গলের মধ্যে অদৃশ্য হয়ে গেল।

    বেশকিছুটা দূরে গিয়ে লোকটার গলাটাকে ছেড়ে দিল টারজান। সে উঠে দাঁড়ালে টারজান তাকে বলল, তুমি আমার সঙ্গে চুপচাপ এস। আমি তোমার কোন ক্ষতি করব না।

    লোকটা অন্ধকারে টারজানকে চিনতে না পেরে বলল, কে তুমি?

    টারজান বলল, আমি টারজান।

    লোকটা তখন ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে বলল, আমাকে মেরো না বাওয়ানা। তুমি যা বলবে আমি তাই করব।

    কোন কথা না বলে তাকে বনের আরো গভীরে নিয়ে গেল টারজান। একটা গাছের উপরে উঠে লোকটাকে তার সামনে বসিয়ে বলল, যদি বাঁচতে চাও ত আমার কথার ঠিক ঠিক উত্তর দেবে। সত্যি কথা বলবে।

    লোকটা বলল, হ্যাঁ বাওয়ানা। আমি সত্যি কথা বলব।

    টারজান বলল, আজ তোমার গায়ের লোকেরা কেন আমাকে আক্রমণ করেছিল?

    কারণ ঢেঁড়া পিটিয়ে আমাদের গায়ে জানিয়ে দেয়া হয় টারজান আমাদের গায়ের মেয়ে ও ছেলেদের ধরতে আসছে।

    কিন্তু তোমাদের গাঁয়ের লোকেরা জানে ত আমাকে। তারা জানে টারজান তাদের মেয়ে ও শিশুদের চুরি করে নিয়ে যায় না।

    কাঁটাবনের ধারে রুহুরি পাহাড়ের তলায় যে গা আছে তার সর্দার ওয়ারুভুরি আমাদের বলল, টারজান এখন খারাপ হয়ে গেছে। সে তাদের গাঁ থেকে মেয়ে চুরি করে নিয়ে গেছে।

    টারজান বলল, তোমরা ওয়াতুরির কথা বিশ্বাস করো? তারা নরখাদক এবং মিথ্যাবাদী।

    হ্যাঁ বাওয়ানা, আমরা তা জানি। কিন্তু আমাদের গাঁয়ের তিনটে লোক দেখেছে তুমি নাকি একটা শ্বেতাঙ্গ মেয়েকে গলায় দড়ি দিয়ে কোথায় নিয়ে যাচ্ছিলে।

    টারজান বলল, এ কথা সত্যি নয়। আমি অনেকদিন তোমাদের গায়ে যাইনি। আমি তোমায় ছেড়ে দিচ্ছি, তুমি তোমার গায়ে চলে যাও। গাঁয়ের লোকদের বল গে, যে লোকটাকে তারা শ্বৈতাঙ্গ মেয়েটাকে ধরে নিয়ে যেতে দেখেছে সে টারজান নয়। বলবে, টারজান তাদের কোন দিন কোন ক্ষতি করবে না। যে লোকটা টারজনের নাম করে চুরি করে বেড়াচ্ছে টারজান তাকে খুঁজে বার করে খুন করবে। সুতরাং ভয়ের কিছু নেই।

    পরদিন সকালে রুহুরি পাহাড়ের দিকে এগিয়ে যেতে লাগল টারজান। এ রহস্যের সন্ধান তাকে করতেই হবে।

    দুপুরের পর সে তার পথের সামনের দিক থেকে একটা আদিবাসীকে আসতে দেখল। তাকে দেখে টারজান লুকোবার কোন চেষ্টা করল না। কিন্তু আদিবাসী নিগ্রোটা টারজানকে দেখে চিনতে পেরেই ভয় পেয়ে তার দিকে তার হাতের বর্শাটা ছুঁড়ে দিল। ব্যাপারটা দেখে আশ্চর্য হয়ে গেল টারজান। সে বুঝতে পারল কোন একটা লোক নিজেকে টারজান বলে চালাবার চেষ্টা করছে এবং লোকে যাকে টারজান ভাবছে তাকে খুঁজে বার করতেই হবে।

    আরো কিছু জানার জন্য পলাতক নিগ্রোটাকে ধরে ফেলল টারজান। গাছে গাছে সে এগিয়ে গিয়ে তার পথের সামনে হঠাৎ নেমে পড়ে তাকে ধরে ফেলল। লোকটা নিজেকে মুক্ত করার জন্য চেষ্টা করতে টারজান তাকে শক্ত করে ধরে রেখে বলল, কেন তুমি আমাকে মারতে গিয়েছিলে? তোমরা ত জান আমি তোমাদের বন্ধু।

    আদিবাসী যোদ্ধাটা বলল, ঢেঁড়া পিটিয়ে আমাদের বলে দেয়া হয়েছে।

    এরপর সে সেই কথারই পুনরাবৃত্তি করল গতকাল সেই প্রহরীটা যে কথা বলেছিল টারজানকে।

    টারজান এবার বুঝতে পারল ঐ হারিয়ে যাওয়া মেয়েটিই মিস পিকারেল এবং এই জন্যই ক্রাম্প তাকে গুলি করেছিল।

    টারজান নিগ্রো লোকটাকে বলল, তোমাদের গায়ে গিয়ে বল গে টারজান কখনো কোন গায়ে গিয়ে কোন মেয়ে চুরি করেনি। কোন এক দুষ্ট প্রকৃতির লোকই এ কাজ করে তার নামে চালাবার চেষ্টা করছে।

    নিগ্রো যোদ্ধাটি বলল, লোকটা একটা শয়তান।

    টারজান বলল, শয়তান হোক বা দানব হোক টারজান তাকে খুঁজে বার করবেই। তোমার যাওয়ার পথে যদি শ্বেতাঙ্গরা আসে তাহলে তাদেরও এই কথা বলবে।

    যেতে যেতে ওরা পথের উপরে বসে পড়তেই বনভূমির অন্ধকার অস্বস্তিকরভাবে ঘন হয়ে উঠল সান্দ্রার মনে।

    যে লোকটা তাকে ধরে নিয়ে যাচ্ছিল সে তাকে নিয়ে বিশ্রামের জন্য বসল। সে কে এবং কোথায় কি জন্য নিয়ে যাচ্ছে তাকে তা সে বলেনি এখনো পর্যন্ত। এর আগে জিজ্ঞাসা করেও কোন উত্তর পায়নি। তবু আজ আবার সেই একই প্রশ্ন করল সান্দ্রা পিকারেল।

    লোকটা বলল, আমি হচ্ছি টারজান। আমি নিজেকে টারজান বলেই জানি। কিন্তু ওরা আমায় দেবতা বলে। কিন্তু আমি দেবতা নই। তবে তুমি যেন একথা বলো না তাদের।

    সান্দ্রা বলল, ওরা কারা?

    লোকটা বলল, আলেমতেজোরো। ওদের রাজা দা গামা আমাকে দেবতা বলে। কিন্তু ওদের প্রধান পুরোহিত বলে আমি দেবতা নই, একজন শয়তান এবং আলেমতেজোদের ধ্বংসের জন্য আমাকে পাঠানো হয়েছে ওদের দেশে। কাছে থাকলে প্রধান পুরোহিতের অসুবিধা হবে, তার ক্ষমতা খর্ব হবে এ জন্য সে আমাকে তাড়াতে চায়। এই নিয়ে রাজার সঙ্গে প্রধান পুরোহিত রুইজের ঝগড়া হয়। অবশেষে রুইজ আমার সম্বন্ধে রাজাকে বলে, ও যদি দেবতা হবে তাহলে ওর দেবী কোথায়? সব দেবতারই দেবী থাকে। আমি তাই তোমাকে ধরে নিয়ে যাচ্ছি। তুমিই হবে আমার দেবী। তা না হলে তারা আমায় খুন করবে। কিন্তু তোমাকে নিয়ে গেলে তারা আর খুন করবে না আমাকে।

    সান্দ্রা বলল, ওখানে যেও না, আমাকে নিয়ে গেলেও কোন না কোন অজুহাতে রুইজ তোমাকে খুন করবে। তার থেকে যেখান থেকে তুমি এসেছ সেখানেই ফিরে যাও।

    লোকটা বলল, আলেমতেজো ছাড়া আর কোথায় যাব আমি? যাবার মত কোন জায়গা নেই আমার। দা গামা বলে আমি স্বর্গ থেকে ভেসে এসেছি। তারা সবাই একথা বলে। কিন্তু আমি জানি না কেমন করে আবার স্বর্গে ভেসে যাব। আমি অবশ্য নিজেকে দেবতা মনে করি না। আমি শুধু জানি আমি টারজান।

    আবার পথ চলা শুরু করল লোকটা। এবার সে নিজেই কথা বলে যেতে লাগল। সে বলল, তুমি খুব সুন্দরী, তোমাকে দেবী বলে ঠিক মানাবে।

    সহসা কোথা থেকে একদল মুখে রং মাখা নিগ্রো যোদ্ধা এসে পড়ায় ওদের কথাবার্তা থেমে গেল। লোকটা সান্দ্রাকে বলল, ওরা ওয়ারুভুরি।

    নিগ্রোদের সর্দার মুতিম্বোয়া বলল, এই হলো টারজান।

    কথাটা বলতেই দু’জন যোদ্ধা লাফ দিয়ে ধরে ফেলল টারজান নামধারী শ্বেতাঙ্গ লোকটাকে। মুতিঘোয়া বলল, ওকে এখন মেরো না। আমরা ওদের গায়ে নিয়ে গিয়ে উৎসবে সাবইকে ডাকব।

    একজন যোদ্ধা বলল, ও আমাদের গায়ের অনেক মেয়ে ও শিশুদের চুরি করে নিয়ে গেছে।

    মুতিম্বোয়া বলল, সেই জন্যই ওকে তিলে তিলে পীড়ন করে মারা হবে।

    সান্দ্রা শ্বেতাঙ্গটাকে বলল, ওরা কি বলেছে বুঝতে পেরেছ?

    লোকটা বলল, হ্যাঁ পেরেছি।

    লোকটা বলল, আমি ঠিক পালিয়ে যাব। পরে এসে তোমাকে মুক্ত করে নিয়ে যাব। কিছু ভেবো না।

    কিছুক্ষণ পর জোর গলায় সে চীৎকার করে উঠলে দূর থেকে অদ্ভুত গলায় কে তার উত্তর দিল সেই রকম শব্দ করে। কিন্তু সে গলার স্বর কোন মানুষের নয়।

    ওয়ারুতুরিরা ভয় পেয়ে গেল। তাদের চলার গতি মন্থর হয়ে উঠল। এইভাবে কিছুটা যেতেই গাঁয়ে বড় বড় লোমওয়ালা একদল বাঁদর-গোরিলা কোথা থেকে ছুটে এসে আক্রমণ করল নিগ্রোদের। নিগ্রো যোদ্ধারা তখন সান্দ্রাকে তুলে নিয়ে ওদের গায়ের দিকে ছুটে পালাতে লাগল। বাঁদর-গোরিল ওদের তাড়া করে কিছুটা ছুটে এসে পরে ফিরে চলে গেল।

    সান্দ্রাকে গাঁয়ের মধ্যে ওয়ারুতুরিরা নিয়ে গেলে সান্দ্রা মুতিম্বোয়াকে বলল, তুমি সর্দার, তুমি আমাকে আমার সঙ্গীদের কাছে পাঠিয়ে দাও। মুক্তিপণ হিসেব যা চাইবে তোমাকে আমার বাবা তাই দেবে।

    মুতিম্বোয়া কোন কথা না বলে রান্নার একটা বড় পাত্রের দিকে আঙ্গুল বাড়িয়ে তার পেটটা ঘষতে লাগল।

    রুতুরি পাহাড়ের এদিকটায় এর আগে কখনো আসেনি টারজান। সে শুধু এখানকার নাম শুনেছে। সে জানে এখানকার ওয়ারুতুরি নামে উপজাতিরা মানুষ খায়। সে তাই সাবধানে পথ চলতে লাগল।

    রাত্রি হতেই একটা গাছের উপর উঠে শুয়ে পড়ল টারজান। এমন সময় ঢাকের বাজনা শুনে চমকে উঠল সে। সে বুঝল আগামীকাল রাতে ওয়ারুবুরি গায়ে কোন বন্দী হত্যাকে কেন্দ্র করে নর-মাংসভোজী এক উৎসব হবে।

    সঙ্গে সঙ্গে উঠে পড়ে ঢাকের শব্দ লক্ষ্য করে এগিয়ে গেল গাঁটার দিকে। তারপর একটা গাছের উপর উঠে শুয়ে পড়ল। আগামীকাল সে গাঁটায় যাবে।

    পরদিন সকালে আশপাশের গাঁ থেকে বহু নারী পুরুষ ওয়ারুতুরি গাঁয়ে এসে ভিড় করতে লাগল। সান্দ্রা বুঝল সেই হচ্ছে এই উৎসবের কেন্দ্র। সন্ধ্যে হতেই গাঁয়ের মাঝখানে এক জায়গায় নিয়ে যাওয়া হল তাকে। জায়গাটা ছিল সর্দারের কুঁড়ের সামনে। সেখানে একটা গাছ ছিল। সেই গাছের তলায় পাঁচটা ছাগল এনে রাখা হলো।

    পাঁচটা ছাগল বলি হবার পর যাদুকর পুরোহিত যেমনি একটা লাফ দিয়ে ছুরি হাতে সান্দ্রার গলা কাটতে গেল মুখ দিয়ে মন্ত্র বলতে বলতে অমনি একটা বিষাক্ত তীর এসে তার বুকটা বিদ্ধ করতেই সে পড়ে গেল।

    এমন সময় ঘরের পাশেই সেই গাছ থেকে দৈত্যের মত একজন শ্বেতাঙ্গ মানুষ লাফিয়ে পড়ল। কিন্তু গাঁয়ের সবাই তখন যাদুকর পুরোহিতের মৃত্যু নিয়ে ব্যস্ত থাকায় সেদিকে খেয়াল করেনি। টারজান এক মুহূর্তে সাম্রাকে তুলে নিয়ে আবার লাফ দিয়ে গাছে উঠে পড়ে অদৃশ্য হয়ে গেল। তীরবেগে রুকুরি পাহাড়ের দিকে ছুটে যেতে লাগল সে। অবশেষে পাহাড়ের ধারে একটা বনের মধ্যে নির্জন জায়গার মধ্যে এসে একটা গাছের উপর উঠে বসল। সান্দ্রা তখন তাকে জিজ্ঞাসা করল, তুমি কে? দা গামা ঠিকই বলেছিল, তুমি দেবতা। তুমি গতকাল যা বলেছিলে তাই ঠিক।

    টারজান গম্ভীর গলায় বলল, তুমি বলছ আমি বুঝতে পারছি না। আমি হচ্ছি বদরদলের রাজা টারজান। আমি গতকাল কেন জীবনে কখনো তোমাকে দেখিনি।

    সান্দ্রা আশ্চর্য হয়ে বলল, তুমি তাহলে আমাকে শিবির থেকে চুরি করনি?

    টারজান বলল, আমার নামে একটা ভণ্ড প্রতারক এই কাজ করেছে। আমি তাকে খুঁজছি। সে কোথায় তা জান?

    সান্দ্রা বলল, ওয়ারুতুরিরা তাকেও ধরেছিল। কিন্তু সে পালিয়ে যায়।

    টারজান বলল, তার সম্বন্ধে যা জান বলত।

    সে বলছিল, আলেমতেজোদের রাজা দা গামা তাকে বলেছিল একজন দেবী চাই। একজন শ্বেতাঙ্গ মেয়েকে দেবী হিসেবে দেখাতে হবে। তবে সে বলেছিল সে-ই টারজান। কিন্তু তুমি টারজান এটা ঠিক ত?

    আমিই হচ্ছি টারজান।

    তুমি জান আমার বাবার সফরি কোথায় আছে?

    টারজান হেসে বলল, চারজন শ্বেতাঙ্গের একটা সফরি আমাকে হত্যা করার জন্য খুঁজছে। এটাই যে তোমার বাবার সফরি সে বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই।

    কিন্তু আমার বাবার দলে মোট তিনজন লোক ছিল-আমার বাবা, পেলহ্যাম ডাটন, আর শিকারী গান্ট্র।

    ক্রাম্প নামে একটা লোক ঐ দলে ছিল। সে আমাকে দেখেই গুলি করে। কিন্তু গুলিটা আমার লাগেনি।

    ক্রাম্প বোধহয় পরে যোগদান করে।

    সে রাতে সান্দ্রার শোবার জন্য একটা গাছের ডালের উপর জায়গা করে দিল টারজান। সকালে উঠে টারজান কিছু ফল নিয়ে এসে তাকে খেতে দিল। বলল, তোমার খাওয়া হয়ে গেলে আমি তোমাকে তোমার দলের লোকদের কাছে নিয়ে যাব।

    সেদিন সকালে ডাটনদের শিবিরে খাবার না থাকায় ক্রাম্প এক শিবির থেকে মাইলখানেক দূরে শিকার করতে গিয়েছিল। জলের ধারে একটা ঝোপের আড়ালে পশু শিকারের জন্য লুকিয়ে ছিল ক্রাম্প। হঠাৎ সে টারজান আর সান্দ্রাকে সেই পথে আসতে দেখে আশ্চর্য হয়ে গেল। ক্রাম্প নীরবে টারজানকে লক্ষ্য করে গুলি করল। গুলিটা টারজনের মাথায় লাগতে সে পড়ে গেল।

    সান্দ্রা ক্রাম্পের কাছে এসে বলল, তুমি কে?

    ক্রাম্প বলল, আমার নাম টম ক্রাম্প। আমি তোমাকেই খুঁজছি।

    সান্দ্রা বলল, কেন তুমি ওকে গুলি করলে?

    সে তোমাকে চুরি করে নিয়ে গিয়েছিল।

    সে আমাকে চুরি করেনি। সে আমাকে নর-খাদকদের হাত থেকে উদ্ধার করে ডাটনের শিবিরে নিয়ে আসছিল।

    যাই হোক, চলে এস। আমি তোমাকে ডাটনের শিবিরে নিয়ে যাব। এখান থেকে মাইল খানেক দূরে শিবিরটা।

    সান্দ্রা বলল, ওর জন্য কিছু করবে না? দেখ একবার লোকটাকে।

    ক্রাম্প হেসে বলল, যা হবার হয়ে গেছে। তুমি এখন এস আমার সঙ্গে।

    সান্দ্রা আর ক্রাম্প যখন শিবিরে গিয়ে পৌঁছল তখন বিকেল হয়ে গেছে। ডাটন সান্দ্রাকে দেখতে পেয়েই সে ছুটে এসে তার হাত ধরল।

    আবেগের চাপে কাঁপা কাঁপা গলায় সে বলল, আমি ত তোমার আশা ছেড়েই দিয়েছিলাম।

    তার চোখে জল এসেছিল। সে বলল, কে তোমায় খুঁজে পায়?

    ক্রাম্প বলল, আমি। আমি টারজানকেও দেখতে পাই। সে আর চুরি করতে আসবে না কখনো।

    সান্দ্রা বলল, সে আমাকে চুরি করেনি। আমি কতবার এই লোকটাকে তা বলেছি। সে-ই বরং আমাকে ওয়ারুভুরিদের গাঁ থেকে উদ্ধার করে গত রাতে। সে আমাকে এখানে নিয়ে আসছিল। অথচ এই লোকটা ঠাণ্ডা মাথায় শুধু শুধু গুলি করে তাকে। ডাটন, তুমি কিছু লোক নিয়ে একবার দেখবে চল। যদি মরে গিয়ে থাকে তাহলে তাকে কবর দেবার অন্তত একটা ব্যবস্থা করবে। জায়গাটা বেশি দূরে নয়।

    ডাটন বলল, আমি এখনি যাব।

    ডাটন ছয়জন নিগ্রোভৃত্য সঙ্গে নিল। শিবিরের সব শ্বেতাঙ্গুরাই সঙ্গে গেল। ক্রাম্প আর সান্দ্রা দু’জনে জায়গাটা দেখিয়ে দিল। কিন্তু টারজনের কোন সন্ধান পাওয়া গেল না।

    ডাটন সান্দ্রাকে বলল, ব্যাপারটা সত্যিই রহস্যময়। একজন টারজান তোমায় চুরি করে নিয়ে গেল, আর একজন টারজান তোমাকে উদ্ধার করে নিয়ে এল।

    সান্দ্রা বলল, চল, শিবিরে ফিরে চল আগামীকালই আমাকে বাবার কাছে নিয়ে যাবে পেলহ্যাম।

    ক্রাম্প বলল, আমি আর মিনস্কিও যাব তোমাদের সঙ্গে।

    ডাটন বলল, তার দরকার হবে না।

    ক্রাম্প বলল, তোমাদের দরকার না থাকলেও আমার দারকার আছে। আমার পুরস্কারের টাকাটা ত নিতে হবে।

    সান্দ্রা বলল, পুরস্কার মানে?

    ডাটন বলল, তোমার বাবা তোমার ও টারজনের খোঁজ পাওয়ার জন্য দেড় হাজার পাউন্ড পুরস্কার ঘোষণা করেছিলেন।

    সান্দ্রা ক্রাম্পকে বলল, তাহলে সে পুরস্কার এখন কেউ পাবে না। যে লোকটি পুরস্কার পাবার যোগ্য তাকে তুমি গুলি করে মেরেছ আর যে আমাকে ধরে নিয়ে গিয়েছিল সে এখনো নিরুদ্দেশ।

    ক্রাম্প বলল, ঠিক আছে, দেখা যাবে।

    যাই হোক, ওরা সবাই শিবিরে ফিরে গেল। তখন সন্ধ্যা হয়ে গেছে।

    এদিকে টারজান নামধারী লোকটা সান্দ্রার উপর নজর রেখে নীরবে অপেক্ষা করে যাচ্ছিল শিবিরের বাইরে থেকে। সে দেখল গান্ট্র ও শুতে চলে গেল ক্রাম্প আর মিনস্কি নিগ্রোভৃত্যদের তাঁবুতে চলে গিয়ে তাদের কি সব বোঝাল আর সঙ্গে সঙ্গে তারা মালপত্র গুছিয়ে পশ্চিম দিকে রওনা হয়ে পড়ল তৎক্ষণাৎ।

    টারজান নামধারী লোকটা ভেবেছিল মালবাহক নিগ্রোদের সঙ্গে শ্বেতাঙ্গরাও শিবির ছেড়ে চলে যাবে আর সেই অবকাশে সে মেয়েটাকে নিয়ে পালাবে। কিন্তু সে যখন দেখল শ্বেতাঙ্গরা গেল না তখন সে অধৈর্য হয়ে পড়ল কিছুটা।

    সান্দ্রার কিন্তু ঘুম এল না চোখে। সে শুধু টারজনের মৃত্যুর কথাটা ভাবতে লাগল বারবার।

    সহসা তার ঘরে তাঁবুর পিছনের দিকটা কে তুলল, চমকে উঠে বসল সান্দ্রা। দেখল ক্রাম্প আর মিনস্কি চোরের মত চুপিসারে ঘরে ঢুকল দু’জনে।

    সান্দ্রা বলে উঠল, কে তুমি? কি চাও?

    ক্রাম্প চাপা গলায় গর্জন করে উঠল, তুমি যদি চীৎকার না করো তাহলে তোমাকে আঘাত করব না। আমরা এখান থেকে চলে যাচ্ছি এবং তুমিও আমাদের সঙ্গে যাবে।

    সান্দ্রা বলল, ডাটন কোথায়?

    ক্রাম্প বলল, তার ভাগ্য যদি ভাল হয় ত সে ঘুমোবে। যদি তুমি তাকে চেঁচামেচি করে ডাক তাহলে তাকে খুন করা হবে।

    সান্দ্রা বলল, তোমরা কি চাও আমার কাছে? কোথায় নিয়ে যাবে আমায়?

    মিনস্কি বলল, শোন মেয়ে, তোমাকে আমরা এমন এক জায়গায় নিয়ে যাচ্ছি যেখানে তোমার বাবা তিন হাজার পাউন্ড নিয়ে না গেলে কেউ খুঁজে পাবে না তোমাকে।

    এদিকে সেই নকল টারজান শিবিরের বাইরে বাদর-গোরিলাদের নিয়ে অপেক্ষা করছিল। ক্রাম্প, মিনস্কি আর সান্দ্রা শিবির হতে বার হবার সঙ্গে সঙ্গে নকল টারজান তার বাঁদর-গোরিলাদের নিয়ে শিবির আক্রমণ করল। গোরিলাগুলো যখন ক্রাম্প আর মিনস্কিকে ধরে কামড় দিচ্ছিল টারজান নামধারী লোকটা সান্দ্রাকে ধরে তুলে নিয়ে গেল। ক্রাম্প বা মিনস্কি গুলি করার কোন অবকাশই পেল না।

    গোলমাল শুনে ঘুম ভেঙ্গে গেল ডাটনের। সে রাইফেল হাতে ছুটে এসে দেখে ক্রাম্প আর মিনস্কি রক্তাক্তদেহে শুয়ে আছে। তাদের দেহের কয়েক জায়গায় ক্ষত ছিল। ডাটনকে দেখে তারা উঠল।

    ডাটন তাদের জিজ্ঞাসা কলল, কি ব্যাপার?

    মিনস্কি বলল, মিস পিকারেলের ঘরে একজনকে ঢুকতে দেখে আমি ক্রাম্পকে ডাকি। এমন সময় দশ-বারোটা বাঁদর-গোরিলা ঝাঁপিয়ে পড়ে আমাদের উপর আর সেই অবসরে সেই টারজান সান্দ্রাকে তুলে নিয়ে যায়।

    এদিকে টারজান নামধারী লোকটা সকালে রওনা হয়ে দুপুরবেলায় রুভুরি পাহাড়ের তলায় সেই কাঁটাবনের ধারে গিয়ে পৌঁছল। কাঁটাগাছগুলোকে এড়াবার জন্য ওরা হাতে পায়ে হেঁটে পাহাড়ের একটা চড়াই পার হয়ে একটা পথ পেল।

    পথটা পেয়ে হাঁপ ছেড়ে বাঁচল টারজান। সান্দ্রাকে বলল, এতক্ষণে আমরা নিরাপদ। এবার আমি রাজা দা গামার কাছে নিয়ে গিয়ে তোমাকে দেবী বানাতে পারব।’

    সান্দ্রা বলল, আমি একজন ইংরেজ মেয়ে, আমি দেবী হতে চাই না।

    লোকটা বলল, আমি তোমার এত উপকার করছি। অথচ তোমার কোন কৃতজ্ঞতাবোধ নেই।

    আবার ওরা এগিয়ে চলতে লাগল। পথের সামনে সান্দ্রা একটা খাড়াই পাহাড় দেখতে পেল।

    খাদটার পাশ দিয়ে পাহাড়ের গা ঘেঁষে ওরা এগোতে লাগল। একটা বাঁদর-গোরিলা সান্দ্রার হাত ধরে নিয়ে যাচ্ছিল।

    কিন্তু সে পাহাড়ের ভয়াবহ উচ্চতার কথা ভেবে আর উঠতে মন চাইছিল না সান্দ্রার। সে ভাবছিল যে সে পড়ে যাবে ইচ্ছে করে। সে উপর থেকে লাফিয়ে পড়বে।

    কিন্তু তার আর দরকার হলো না। এক সময় একটা বাঁদর-গোরিলা সান্দ্রাকে হাত ধরে টেনে তুলতে গিয়ে তার ভার সামলাতে না পেরে পড়ে গেল। সান্দ্রাও পড়ে গেল তার সঙ্গে।

    বনের মাঝখানে একটা ফাঁকা জায়গায় সূর্যের আলো ছড়িয়ে পড়েছিল। তার উপর টারজনের অচেতন দেহটা পড়েছিল। তাকে ঘিরে দশ-বারোটা বাঁদর-গোরিলা বসে কথা বলছিল।

    গয়ান বলল, মারা গেছে।

    উঙ্গো বলল, না মরেনি।

    একটা মেয়ে বাঁদর-গোরিলা মুখে করে কিছুটা জল নিয়ে সে টারজনের কপালে ও চোখে মুখে দিয়ে দিল। টারজান ধীরে ধীরে চোখের পাতা খুলল। সে কোথায় আছে তা একবার দেখে নিয়ে বলল, উঙ্গো কি ঘটেছিল?

    উঙ্গে বলল, একটা শ্বেতাঙ্গ তোমাকে বন্দুক থেকে গুলি করেছিল।

    টারজান এবার ভাবতে লাগল কে তাকে গুলি করেছিল। তার এবার মনে পড়ল ক্রাম্পকে সে দেখতে পেয়েছিল। এবার তার আর বুঝতে বাকি রইল না যে ক্রাম্পই তাকে আবার গুলি করেছে। সে বলল, সেই মেয়েটি কোথায়?

    উঙ্গো বলল, সে টার্মাঙ্গানীর সঙ্গে চলে গেছে।

    টারজান আশ্বস্ত হলো। মেয়েটি তাহলে তার দলের লোকদের কাছে তাদের শিবিরেই ফিরে গেছে। তবে সে একবার সেই ভণ্ড প্রতারক লোকটাকে ধরার সংকল্প করল মনে মনে যে লোকটা এই সবকিছুর জন্য দায়ী।

    দিনকতকের মধ্যেই সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে উঠায় টারজান একদিন উঙ্গোকে বলল, আচ্ছা টারজনের মত নগ্ন হয়ে টারজনের নাম ধারণ করে একটা শ্বেতাঙ্গ ঘুরে বেড়ায়। তুমি তাকে দেখেছ?

    উঙ্গো বলল, দুবার দেখেছি লোকটাকে। সে একদল বাঁদর-গোরিলার সঙ্গে ঘুরে বেড়ায়।

    টারজান বলল, সে কোন্‌দিকে গেছে?

    উঙ্গো দূরে রুহুরি পাহাড়ের ধারে কাঁটাবনের দিকে আঙ্গুল বাড়িয়ে দেখাল।

    পরদিনই টারজান বাঁদর-গোরিলাদের সঙ্গে নিয়ে রুকুরি পাহাড়ের দিকে রওনা হয়ে পড়ল।

    সান্দ্রা দেখল সে পড়তে পড়তে পাহাড়ের গায়েই এক জায়গায় আটকে যায়।

    পাহাড়ের গায়ে একটা জায়গায় টারজনের নামধারী লোকটা একটা বাঁদর-গোরিলার সঙ্গে দাঁড়িয়ে তাকে দেখাচ্ছে। লোকটা তার দড়িটা সান্দ্রার উপর ফেলে দিয়ে বলল, এই দড়িটা তোমার কোমরে বেঁধে দাও। আমি আর সঁচো নামে এই গোরিলাটা দু’জনে মিলে তোমাকে টেনে তুলব।

    সান্দ্রা সঙ্গে সঙ্গে কোমরে দড়িটা বেঁদে নিল। ওরা দু’জনে দড়িটা ধরে সান্দ্রাকে টেনে তাদের কাছে তুলে নিল।

    লোকটা সান্দ্রাকে বলল, তুমি খুব সাহসের পরিচয় দিয়েছ।

    আরো কিছুটা উপরে উঠে ওরা একটা ঘাসে ঢাকা জায়গা পেল। টারজান নামধারী লোকটা সান্দ্রাকে বলল, এইখানে শুয়ে কিছুটা বিশ্রাম করে নাও।

    এরপর ওরা পাহাড় পার হয়ে ওদিকে একটা নদীর ধার দিয়ে সামনের একটা বনকে লক্ষ্য করে এগিয়ে চলল। ক্রমে বনের মধ্যে ঢুকে মাইলখানেক এগিয়ে যাবার পর ফাঁকা জায়গার উপর এক বিরাট প্রাসাদ দেখতে পেল সাল্লা।

    সান্দ্রা বলল, এ প্রাসাদ হয়ত পর্তুগীজদের দ্বারাই নির্মিত। সঙ্গে সঙ্গে তার মনে পড়ল রাজা দা গামার নামটাও পর্তুগীজ মন্দিরের প্রধান পুরোহিত রুইজ আর দেবতার অন্যতম সেবক মৃত ফার্ণান্দো নামটাও পর্তুগজী। একটা রহস্য দানা বেঁধে উঠল তার মনে।

    সকালে উঠে ডাটন সান্দ্রকে খোঁজে যাবার জন্য প্রথম নিগ্রোভৃত্যদের সর্দারকে ডাকল। বলল, তোমাদের সকলকে যাবার জন্য তৈরি হতে বল।

    এরপর সে দু’জন শ্বেতাঙ্গকে ডাকল। ক্রাম্প আগেই উঠেছিল।

    কিন্তু সর্দার নিগ্রোভৃত্যদের পেল না। সে এসে ডাটনকে বলল, ওরা ভয় পেয়ে গত রাতে শিবির ছেড়ে পালিয়ে গেছে।

    ডাটন আশ্চর্য হয়ে বলল, ভয়! কিসের ভয়?

    সর্দার বলল, ওরা টারজান আর বাঁদর-গোরিলাদের ভয় করছে। আমার মনে হয় খোঁজ করতে না যাওয়াই ভাল।

    ক্রাম্প বলল, ভয়ের কিছু নেই। টারজানকে আমি মেরে ফেলেছি। আর ওয়ারুহুরিদের গা দিয়ে আমরা যাব না। তাছাড়া আমি পুরস্কারটা ছাড়তে পারব না।

    মিনস্কি বলল, আমিও ছাড়ব না।

    ডাটন বলল, আমিও সান্দ্রাকে খুঁজে বার না করে ছাড়ব না।

    অবশেষে টারজান শ্বেতাঙ্গ আর কিছু বিক্ষুব্ধ নিগ্রোভৃত্য মিলে সান্দ্রার খোঁজে বার হলো। সর্দার নিগ্রোদের কোন রকমে রাজী করালেও তারা বিক্ষুব্ধ ছিল মনে মনে। সর্দার নিজেও ক্ষুব্ধ ছিল। সে নীরবে পথ চলছিল।

    বিকালের দিকে একজন নিগ্রোযোদ্ধাকে দেখতে পেয়ে ক্রাম্প গুলি করল তার রাইফেল থেকে।

    ক্রাম্প আর গান্ট্র মৃতদেহটা পরীক্ষা করে বলল, ওর দাঁতগুলো দেখ, ওরা নরখাদক। ওর গায়ে কত সোনার গয়না।

    সর্দারও বলল, হ্যাঁ, ওয়ারুতুরি নরখাদক।

    রাতের মত ওরা এক জায়গায় শিবির স্থাপন করল। কিন্তু পরদিন সকালে শিবিরে একটা নিগ্রোভৃত্যকেও পাওয়া গেল না।

    গান্ট্র বলল, তুমি নরখাদক ওয়ারুভুরিকে মারার পরই তারা ভয় পেয়ে যায়। ওদের ভয় পাওয়া স্বাভাবিক।

    ক্রাম্প বলল, তার মানে পুরস্কারটা আমাকে ছেড়ে দিতে হবে?

    ডাটন বলল, তার মানে মিস পিকারেলের খোঁজ না করেই ফিরে যাব?

    তুমি ফিরে যাও। আমি একা যাব।

    ক্রাম্প বলল, আমিও তোমার সঙ্গে যাব।

    গান্ট্র বলল, কতকগুলো পাউন্ডের জন্য তোমরা সবকিছু করতে পার।

    ক্রাম্প বলল, শুধু কতকগুলো পাউন্ডের কথা নয়। ওয়ারুতুরিটার গায়ে কত সোনার গয়না দেখেছ? আমার মনে হয় রুকুরি পাহাড়ের কোন এক জায়গায় তাল তাল সোনা আছে।

    গান্ট্র বলল, সোনা পাওয়া গেলে তার ভাগ দিতে হবে।

    ক্রাম্প বলল, এই সোনা সম্বন্ধে অনেক গল্প শোনা যায়। শোনা যায় হাজার সিংহ সোনার জায়গাটা পাহারা দিয়ে রেখেছে। আর আছে দুটো উপজাতি।

    মিনস্কি বলল, তাহলে ওয়ারুতুরিরা কি করে সে সোনা পায়?

    ক্রাম্প বলল, সেই উপজাতিদের দেশে লবণ আর লোহার বড় অভাব। ওরা তাই ওয়ারুভুরিদের কাছ থেকে সোনার বিনিময়ে লবণ আর লোহা নেয় ওয়ারুতুরিরা আবার হাতির দাঁতের বিনিময়ে লবণ আর লোহা যোগাড় করে।

    গান্ট্র বলল, কিন্তু কি করে সোনা পাবে তুমি?

    ক্রাম্প বলল, আমার মনে হয় রুভুরি পাহাড়ের উপর কোন এক জায়গায় সোনা আছে।

    গান্ট্র এবার ডাটনকে বলল, তোমার মতলব কি? তুমি কি করবে?

    ডাটন বলল, আমি মিস পিকারেলের খোঁজে যাব ওখানে। আমার মতে ওখানেই ওকে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।

    পরদিন সকালে শিকারের খোঁজে শিবির থেকে চারজন চারদিকে বেরিয়ে গেল। ডাটন গেল পশ্চিম দিকে।

    বনের মধ্যে একটা ফাঁকা জায়গায় এসে চারদিকে শিকারের আশায় তাকাচ্ছিল ডাটন। কিন্তু কোথাও কোন শিকারের সন্ধান পেল না। সে বুঝতে পারেনি তার পিছন দিকে একটা ঝোপের আড়ালে একটা ক্ষুধার্ত সিংহ ওৎ পেতে বসে আছে।

    এবার সিংহটা ঝোপ থেকে বেরিয়ে ফাঁকা জায়গায় এসে ডাটনের পিছনে বসে রইল।

    পিছন ফিরে সিংহটাকে দেখতে পেয়েই একটা গাছের কাছে ছুটে চলে গেল ডাটন। কিন্তু সে দেখল গাছের সবচেয়ে নিচু ডালটা দশ ফুট উপরে। সে তাই উঠতে পারল না। সে তার রাইফেল থেকে গুলি করল। গুলিটা সিংহের গায়ে লেগে সে উল্টে পড়ে গেলেও ডাটনকে ধরার জন্য লাফ দিল। ডাটন আবার গুলি করল কিন্তু গুলিটা এবার লাগল। সিংহটা এবার ডাটনের উপর ঝাঁপ দেবার জন্য উদ্যোগ করতেই ডাটন দেখল নগ্নপ্রায় এক শ্বেতাঙ্গ সেই গাছটা থেকে লাফিয়ে পড়ল সিংহটার ঘাড়ের উপর। তার পিঠের উপর উঠে তার পাগুলো সিংহটার পায়ের মধ্যে ঢুকিয়ে দিয়ে তার ছুরিটা বারবার বসিয়ে দিতে লাগল তার গায়ে।

    ডাটনের রাইফেলের গুলিতে আগেই জখম হয়েছিল সিংহটা। এবার টারজনের ছুরির আঘাতে সে লুটিয়ে পড়ল। এবার তার মৃতদেহটার উপর একটা পা রেখে আকাশের দিকে মুখ তুলে বাঁদর গোরিলাদের মত বিজয়-সূচক চীৎকার করল। ডাটন তা দেখে ভয় পেয়ে গেল।

    সঙ্গে সঙ্গে টারজনের মুখ থেকে সেই ভয়ঙ্কর পাশবিক ভাবটা চলে গেল। সে মৃদু হেসে ডাটনকে বলল, তোমার নাম পেলহ্যাম ডাটন?

    ডাটন বলল, হ্যাঁ, কিন্তু তুমি আমার নাম জানলে কি করে? তুমি কে?

    টারজান বলল, আমিই বাঁদর-দলের টারজান। তোমার কথা মেয়েটি আমাকে বলেছিল।

    ডাটন বলল, কোন টারজান।

    টারজান বলল, টারজান একটাই আছে। অন্য একটা লোক আমার নাম নিয়ে কুকর্ম করে বেড়াচ্ছে। আমি তাকে খুঁজে বেড়াচ্ছি।

    ডাটন বলল, তুমিই তাহলে মিস পিকারেলকে উদ্ধার করেছিলে এবং তোমাকেই ক্রাম্প গুলি করেছিল?

    টারজান বলল, হ্যাঁ, ক্রাম্প আমায় গুলি করেছিল। সে অত্যন্ত দুষ্ট প্রকৃতির লোক। সে শুধু পুরস্কার আর প্রতিশোধের কথা ভাবছে। আমি তাকে একদিন হাতে পাবই। কিন্তু তুমি একা বনের মধ্যে কি করছিলে?

    ডাটন বলল, নিগ্রোভৃত্যরা আমাদের সব খাবার নিয়ে পালিয়েছে শিবির ছেড়ে। তাই শিকার করতে বেরিয়েছি।

    টারজান বলল, শিবিরে আর কে কে আছে? ক্রাম্প, মিনস্কি আর গান্ট্র।

    ডাটন বলল, হ্যাঁ, কিন্তু তুমি কি করে ওদের নাম জানলে?

    টারজান বলল, মেয়েটি আমাকে সব বলেছিল। বলেছিল একমাত্র তোমাকেই সে বিশ্বাস করে।

    ডাটন বলল, আমিও ক্রাম্প আর মিনস্কিকে বিশ্বাস করি না। সম্প্রতি গাকেও ভাল মনে হচ্ছে না, কারণ ও প্রায়ই ওদের সঙ্গে চুপি চুপি সলাপরামর্শ করে। ওদের সবার লোভ পুরস্কারটার উপর। এখন আবার ক্রাম্প বলছে রুকুরি পাহাড়ে তাল তাল সোনা আছে।

    টারজান বলল, কিন্তু সে সোনা ওরা কোনদিনও পাবে না। মেয়েটি এখন শিবিরে আছে ত?

    ডাটন বলল, টারজান নামধারী একজন শ্বেতাঙ্গ কয়েকটা বাঁদর-গোরিলা নিয়ে এসে তাকে আবার চুরি করে নিয়ে গেছে শিবরি থেকে।

    টারজান বলল, তোমরা তার খোঁজে বেরিয়েছ?

    ডাটন বলল, হ্যাঁ।

    টারজান বলল, তাহলে আমরা একই পথের পথিক। আমি আমার নামধারী সেই লোকটাকে খুঁজে বার করবই। আমি তাকে শেষ করব।

    ডাটন বলল, তাহলে আমাদের সঙ্গে যাবে।

    টারজান বলল, না, আমি একা যাব। তোমার সঙ্গীদের আমার ভাল লাগে না। ওরা আমায় হত্যা করার চেষ্টা করবে পুরস্কারের লোভে।

    ডাটন বলল, তাহলে আমি তোমার সঙ্গে যাব। তুমি লোকটাকে খুঁজে বার করবে আর তাহলেই আমি মিস পিকারেলকে খুঁজে পাব। আমার সঙ্গীরা শুধু সোনার খোঁজ করবে। তারা আমাকে সাহায্য করবে না।

    টারজান বলল, তুমি ঠিকই বলেছ। তাহলে তুমি আমার সঙ্গে আসতে পারো।

    ডাটন টারজনের সঙ্গে যোগ দিল। তখনই যাত্রা শুরু করল ওরা। সেই ফাঁকা জায়গাটা পার হয়ে বনের মাঝে ঢুকে একটা পথ পেল। কিছুদূর গিয়েই একদল বদর-গোরিলা দেখে গুলি করতে যাচ্ছিল ডাটন। কিন্তু টারজান তাকে থামিয়ে দিয়ে বলল, ওরা তোমার কোন ক্ষতি করবে না। ওরা আমার বন্ধু। ওদের আমি বুঝিয়ে বলল।

    ডাটন বলল, ক’দিন ধরে আমরা মাংস পাইনি। শুধু কিছু ফল খেয়ে আছি।

    টারজান তখনই চলে গলে। কিছুক্ষণ পর সে একটা হরিণ মেরে নিয়ে এসে ডাটনকে বলল, আগুন জ্বালাও।

    ডাটন আগুন জ্বালিয়ে তার খাবার মাংসটা আগুনে ঝলসিয়ে সিদ্ধ করে নিল। টারজান বাঁদর গোরিলাদের সঙ্গে কাঁচা মাংস ছুরি দিয়ে কেটে খেয়ে নিল। তা দেখে আশ্চর্য হয়ে গেল সে।

    খাওয়ার পর রাত্রি হলে টারজান ডাটনকে বলল, তুমি থাক, এইখানেই শুয়ে পড়। বাঁদর গোরিলাগুলো পাহারা দেবে। কোন বিপদ দেখলে তোমাকে জাগিয়ে দেবে। আমি এক জায়গায় যাচ্ছি। এখনি ফিরে আসব।

    এদিকে ক্রাম্প, মিনস্কি আর গান্ট্র শিবিরে ফিরে এসে দেখল ডাটন ফেরেনি। তারা কেউ কোন শিকার পায়নি। সবাই শুধু কিছু করে ফল এনেছিল যোগাড় করে। তাই খেয়ে আগুন জ্বালল শিবির পাহারার জন্য।

    ক্রাম্প বলল, ডাটন না আসুক। বাঁচা গেছে।

    গান্ট্র বলল, লোকটা কিন্তু ভালই ছিল।

    ক্রাম্প গান্ট্রকে বলল, তোমরা শুয়ে পড়। আমি চার ঘণ্টা আগুনের পাশে বসে পাহারা দেব।

    কিন্তু ওরা শুয়ে পড়তেই বনের ভিতর থেকে অদৃশ্য অবস্থায় কে ওদের উদ্দেশ্যে বারবার বলতে লাগল, তোমরা ফিরে যাও। বাঁচতে চাও ত ফিরে যাও। তা না হলে মৃত্যু তোমাদের অনিবার্য।

    সে রাতে গান্ট্র একটুও ঘুমোতে পারেনি। বনের ভিতর থেকে আসা সেই রহস্যময় কণ্ঠের কথাগুলো শুনে ভয় পেয়ে যায় তারা সবাই।

    সকালে উঠে গান্ট্র দেখল ক্রাম্প আর মিনস্কি আগেই উঠে পড়েছে। গান্টু বলল, কাল রাতে শুনেছ? লোকটা কে কিছু বুঝতে পারছ?

    ক্রাম্প বলল, ওসব কথা বাদ দাও। এখন আমাদের খাবার নেই। এখনি বার হতে হবে।

    গান্ট্র বলল, কোন্‌দিকে যাবে?

    ক্রাম্প বলল, আমরা যাব রুকুরি পাহাড়ের দিকে।

    গান্ট্র বলল, তাহলে আমি যাব না।

    ক্রাম্প বলল, না যাও, ভালই হবে। একটা লোকের ভাগ বেঁচে যাবে।

    গান্ট্র বলল, মরা লোকে কখনো কোন পুরস্কার দিতে বা নিতে পারে না।

    ক্রাম্প বলল, এখনি চলে যাও। গান্ট্র তার রাইফেলটা নিয়ে শিবির ছেড়ে দক্ষিণ দিকে রওনা হয়ে পড়ল।

    টারজান বাঁদর-গোরিলাদের কাছে ডাটনকে রেখে সে রাতে চলে গেলে ঘুম এল না ডাটনের। বাঁদর গোরিলাগুলোকে টারজনের দলে দেখার পর থেকেই সন্দেহ জাগে ডাটনের। সুতরাং এই মুহূর্তেই চলে যাওয়া ভাল।

    এই ভেবে তখনি উঠে পড়ল ডাটন। যে বাঁদর-গোরিলাগুলোর উপর ডাটনের নিরাপত্তার ভার দিয়ে গিয়েছিল টারজান তাদের অনেকে ঘুমিয়ে পড়েছিল। আর যারা জেগে ছিল তারা তত গ্রাহ্য করল না।

    টারজান ফিরে এসে ডাটনকে দেখতে না পেয়ে বাঁদর-গোরিলাদের কাছ থেকে সবকিছু জানল। সে তাদের কথা বিশ্বাস করল। কারণ সে জানত পশুরা কখনো মিথ্যা কথা বলে না মানুষদের মত। সে। ডাটনের নাম ধরে বারকতক ডাকল। কিন্তু সাড়া পেল না। সে এগিয়ে বনটার আশেপাশে একবার দেখল। কিন্তু কোথাও কোন সন্ধান পেল না।

    ডাটন তখন একাই অন্ধকার বনপথে রুকুরি পর্বতের দিকে এগিয়ে যেতে লাগল। হঠাৎ এক সময় তার সামনে একদল নিগ্রো যোদ্ধা পথরোধ করে দাঁড়াল। সে তার রাইফেল তুলে গুলি করার আগেই তাদের একজন রাইফেলটা কেড়ে নিল তার হাত থেকে। ডাটন অসহায় হয়ে পড়ল একেবারে।

    নিগ্রো যোদ্ধাগুলোর গায়ে গয়না ছিল। তাদের বড় বড় দাঁতগুলোকে দেখে সে বুঝল তারা নরখাদক। তাদের ভাষা সে জানত না বলে কোন কথাই বলতে পারল না। তারা তাকে তাদের দিকে ধরে নিয়ে। যেতে লাগল। পথে তার রাইফেলটা নিয়ে একটা যোদ্ধা নড়াচড়া করায় তার থেকে গুলি বেরিয়ে সামনের একটা লোকের বুকে লাগতেই সে মারা গেল। তখন একটা লোক ডাটনকে মারতে লাগল রেগে গিয়ে। মৃত লোকটা তার আত্মীয় ছিল।

    কিন্তু তাদের সর্দার তাকে বাধা দিল। তাদের বোঝাল বন্দীকে গায়ে নিয়ে গেলে তার মাংস খেতে পারবে।

    টারজান যখন তার বাঁদর-গোরিলা দল নিয়ে উত্তর দিকে যাচ্ছিল তখন হঠাৎ রাইফেলের একটা গুলির আওয়াজ শুনতে পেল।

    ব্যাপারটা কি তা দেখার জন্য কাছের একটা উঁচু গাছের উপর উঠে পড়ল টারজান। সবচেয়ে উঁচু ডালের উপর থেকে দেখল একদল ওয়ারুভুরি যোদ্ধা একজন শ্বেতাঙ্গকে বর্শা দিয়ে খোঁচাতে খোঁচাতে নিয়ে যাচ্ছে। একটা ডুলিতে করে একটা মৃতদেহ বয়ে নিয়ে যাচ্ছে তারা। টারজান এবার বুঝতে পারল ঐ শ্বেতাঙ্গই হলো ডাটন।

    ডাটন যে তার প্রতি সন্দেহবশত ইচ্ছে করে তার দল ছেড়ে পালিয়ে যায় এটা জানত না টারজান। সে ভাবল ডাটনের কোন দোষ নেই এবং সে বনে ইতস্তত ঘুরতে ঘুরতে পথ হারিয়ে ফেলে এবং পরে। ধরা পড়ে ওয়ারুতুরিদের হাতে।

    সহসা ওয়ারুভুরিদের দলের একটা লোকের কাঁধে একটা তীর এসে লাগায় সে চীৎকার করে পড়ে গেল। দলের সবাই তখন থেমে গেল। চারদিকে কাউকে দেখতে পেল না। তখন সে লোকটার আত্মীয়। মারা যায় সে ডাটনকে দেখিয়ে বলল, এই শ্বেতাঙ্গটার কারসাজি এটা।

    এই বলে সে তার বর্শাটা ডাটনের বুকে বসিয়ে দিতে যেতেই আবার একটা তীর এসে তার বুকে লাগল। সেও পড়ে গেল।

    তখন এক অদৃশ্য কণ্ঠস্বর শুনতে পেল তারা, শ্বেতাঙ্গকে ছেড়ে দাও তোমরা। না হলে মরবে। নিগ্রোরা নিজেদের মধ্যে কিছুক্ষণ আলোচনা করার পর মৃতদের ফেলে বন্দীকে নিয়ে তাড়াতাড়ি পথ চলতে লাগল। আবার সেই কণ্ঠস্বর শোনা গেল, শ্বেতাঙ্গ বন্দীকে ছেড়ে দাও।

    কিন্তু নিগ্রোরা এবার ছুটতে লাগল। তখন আবার একটা তীর এসে বিদ্ধ করল একজনকে এবার বন্দীকে ছেড়ে দিয়ে ছুটে পালাল নিগ্রোরা।

    এতক্ষণে ডাটনের পথের সামনে নেমে পড়ল টারজান। ডাটন বলল, তুমি ঠিক সময়ে এসে পড়েছ, কি দিয়ে তোমার ঋণ পরিশোধ করব তা জানি না।

    টারজান বলল, শিবির ছেড়ে আসা উচিৎ হয়নি তোমার। বাঁদর-গোরিলারা তোমায় রক্ষা করত যে কোন বিপদ থেকে।

    ডাটন বুঝল এই টারজনের কাছে থাকাই সবচেয়ে নিরাপদ তার পক্ষে।

    পরদনি সকালেই টারজান রুহুরি পাহাড়ের কোণে সেই কাটানটায় গিয়ে পৌঁছল। একটা সোজা পথ ধরে সেই খাদের পাশে খাড়াই পাহাড়ের পাদদেশে চলে গেল।

    এই পাহাড়টা পার হতে হবে ওদের। বাঁদিকের খাদটায় বহু ক্ষুধার্ত সিংহ ঘোরাফেরা করছিল।

    ডাটন বলল, মিস পিকারেলও নিশ্চয় এই পাহাড় পার হয়েছে।

    টারজান বলল, খাদে সিংহের মুখে না পড়লে নিশ্চয়ই পাহাড়ে উঠতে হয়েছে অকে।

    ডাটন বলল, ওদের সঙ্গে বাঁদর-গোরিলাগুলো তাহলে কি এখান থেকে ফিরে গেছে?

    টারজান তখন এ কথার উত্তর না দিয়ে উঙ্গোকে কি বলতে সে আবার তার দলের বাঁদর-গোরিলাদের ব্যাপারটা বুঝিয়ে দিল। তখন বাঁদর-গোরিলাগুলো অনায়াসে পাহাড়ের মাথায় উঠে গেল। টারজানও অবলীলাক্রমে ওদের মতই উঠে গেল পাহাড়ের চূড়ায়।

    পাহাড়টার মাথায় উঠে ডাটন কিছুক্ষণ বিশ্রাম করল। টারজান উপর থেকে দেখল, পাহাড়ের ওপারে একটা উপত্যকা। উপত্যকার ওধারে একটা বন। পাহাড় থেকে নেমে উপত্যকার উপর দিয়ে যেতে যেতে টারজান বলল, ঐ সামনের বনটায় দু’দলে যুদ্ধ হচ্ছে। আমি এগিয়ে গিয়ে দেখব কারা যুদ্ধ করছে। আমার মনে হয় সেই লোকটা মেয়েটিকে নিয়ে ওর মধ্যে পড়ে যেতে পারে।

    উপত্যকাটা পার হয়ে বনের কাছে যেতেই ওরা দেখল দুই দলে যুদ্ধ হচ্ছে। দেখল বনটা যেখানে শেষ হয়েছে সেইখানে একটা ফাঁকা জায়গায় আর বিরাট প্রাসাদ দাঁড়িয়ে আছে। তার উপর থেকে বাদামী রঙের সৈনিকরা মাথায় শিরস্ত্রাণ আর গায়ে বর্মা পরে তীর আর বর্শা ছুঁড়ছে আর প্রাসাদের নিচে কুড়িটা মোষে-টানা একটা উঁচু রথে করে অনেক কৃষ্ণকায় সৈনিক ঘুরে ঘুরে যুদ্ধ করছে। তাদের হাতে ছিল তীর ধনুক আর বর্শা।

    ওরা দাঁড়িয়ে আশ্চর্য হয়ে যুদ্ধ দেখছিল বলে কোন কিছু খেয়াল করেনি। কখন একদল কৃষ্ণকায় সৈনিক এসে ওদের ঘিরে ফেলেছে তা জানতে পারেনি। টারজান তাদের সঙ্গে যুদ্ধ করে পালিয়ে গেল। কিন্তু ডাটন ধরা পড়ল- আর দু’জন বাঁদর গোরিলা মারা গেল।

    এদিকে ক্রাম্প আর মিনস্কি রুভুরি পাহাড়ের কাছে এসে ওয়ারুভুরি গাঁয়ের পাশ দিয়ে যাচ্ছিল।

    ওয়ারুতুরি গাঁটা ফেলে রেখে ঠিক পথেই যাচ্ছিল ওরা। কিন্তু ওদের ডান দিকের উপত্যকায় একদল যোদ্ধার একটা সফরি দেখতে পেয়ে মিনস্কি ক্রাম্পকে তা দেখাল।

    ওরা বনের মধ্যে লুকিয়ে দেখল সেই সফরিতে মোট পনের জন লোক ছিল। তাদের চেহারাগুলো লালচে ধরনের বলে তাদের শ্বেতাঙ্গ ভাবল। তাদের সঙ্গে যে মালপত্র ছিল তা পাঁচজন বাহক বয়ে নিয়ে যাচ্ছিল।

    ক্রাম্প বলল, ওরা ওয়ারুতুরি নয়। ওরা শ্বেতাঙ্গ; ওদের সঙ্গে বন্ধুত্ব করতে হবে। ওরা নিশ্চয় রুকুরি পাহাড়ের কোথায় সোনা পাওয়া যায় তা জানে।

    মিনস্কির ইচ্ছা ছিল না। তবু ক্রাম্পের সঙ্গে যেতে হলো। ওরা তাদের কাছে যাবার আগেই তাদের ফসরির একজন শ্বেতাঙ্গ মালবাহককে ইংরেজিতে বলল, তোমরা ইংরেজি ভাষা জান?

    ক্রাম্প বলল, জানি।

    সেই মালবাহককে শ্বেতাঙ্গ বলল, এদের কাছে এস না। ভাল চাও ত পালিয়ে যাও এখান থেকে। নিকটবর্তী কোন বন্দরে কোন ইংরেজ অফিসারকে জানিয়ে দেবে, ফান্সিস বোল্টন শিল্টন রুকুরি পাহাড়ে বন্দী হয়ে আছে।

    ক্রাম্প বলল, ধরতে পারলে ওরা আমাদের কি খুন করবে?

    বোল্টন বলল, না তোমাদের ক্রীতদাস করে রাখবে।

    মিনস্কি বলল, ওদের হাতে বন্দুক নেই। আমরা গুলি করে ওদের সবাইকে খতম করে শ্বেতাঙ্গ বন্দীটাকে মুক্ত করতে পারি।

    মিনস্কি রাইফেল তুলতেই ক্রাম্প বলল, থাম, থাম। আমরা সোনার খনিটা খুঁজছি। আমাদের খনিটা পাওয়া নিয়ে দরকার। ওরা আমায় ক্রীতদাস বানায় ত বানাবে। কিন্তু একবার সোনার খনিটার সন্ধান। পেলেই আমরা পালিয়ে যেতে পারব।

    ক্রাম্প আবার এগোতে বোল্টন তাকে সাবধান করে দিল। কিন্তু ক্রাম্প তাকে থামিয়ে দিল ধমক দিয়ে বলল, তুমি থাম, বাজে বকো না। আমরা জেনেশুনেই যাচ্ছি।

    ক্রাম্প আর মিনস্কি দলটার কাছে যেতেই তারা ওদের ঘিরে ফেলল। বোল্টন বলল, ওরা বলছে তোমরা ওদের বন্দী। বন্দুকগুলো দিয়ে দাও।

    বনের মধ্যে গাছের আড়াল থেকে যুদ্ধটা দেখল টারজান। হঠাৎ অদূরে বনের মধ্যে দু’দল বাঁদর গোরিলার লড়াইয়ের শব্দ শুনতে পেয়ে সেদিকে এগিয়ে গেল সে। গিয়ে দেখল দু’দল বাঁদর-গোরিলা সামনাসামনি দাঁড়িয়ে লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুত হচ্ছে। একদলের সামনে আছে মালগাশ নামে তাদের রাজা। দু’জনেই নিজেদের বাঁদর দলের অপ্রতিদ্বন্দ্বী রাজা বলে বুক চাপড়াচ্ছে।

    দু’দলের মাঝখানে গিয়ে দাঁড়িয়ে টারজান বলল, আমি হচ্ছি টারজান, সব বাঁদর-দলের রাজা।

    টারজানকে দেখে উঙ্গো সরে গেল। মালগাশ হচ্ছে আলেমতেজোর দেবতার সেবক বাঁদর গোরিলাদের নেতা। সে প্রথমে টারজানকে তাদের দেবতা ভেবেছিল। কিন্তু পরে বুঝল তাদের দেবতা পালিয়ে গেছে। প্রথমে তার দলের সবাৱঁ সঙ্গে কি আলোচনা করল। তারপর ফিরে এসে টারজানকে মালগাশ বলল, না, তুমি টারজান নওঁ। মালগাশ তোমাকে মারবে।

    এই বলে সে টারজনের গলাটা ধরার জন্য হাত দুটো বাড়িয়ে দিল। কিন্তু টারজান তার তলা দিয়ে গলে গিয়ে তার মাথায় এমন একটা জোর ঘুষি মারল যার আঘাতে সে ঘুরে পড়ে গেল। টারজান তার হাত দুটো ধরে তাকে তুলে আছাড় মেরে ফেলে দিল মাটিতে। তারপর তার বুকের উপর বসে বলল, কাগোদা? অর্থাৎ হার মেনেছ?

    মালগাশ বলল, ‘কাগোদা’ অর্থাৎ হার মেনেছি।

    টারজান এবার উঠে দাঁড়িয়ে বলল, আমি হচ্ছি সমস্ত বাঁদর-দলের রাজা, আমি যা বলব তাই তোমাদের করতে হবে।

    মালগাশ তার দলের সবাইয়ের সঙ্গে মাথা নিচু করে চলে যাচ্ছিল। টারজান তাদের ডাকল। বলল, মালগাশ তার দলের রাজা থাকবে আর উঙ্গোও তার দলের রাজা থাকবে। তবে যতদিন উঙ্গো তাদের দেশে থাকবে ততদিন তার ও দলের সঙ্গে শান্তিতে মিলেমিলে বাস করতে হবে। আমি যখনই ডাকব তখনই তোমরা সবাই আসবে। দুজনে মিলে তোমাদের সাধারণ শত্রুদের সঙ্গে লড়াই করবে।

    বাকি দিনটা বাঁদর-গোরিলাদের সঙ্গে কাটিয়ে রাত্রি হতেই তাদের কাছ থেকে চলে গেল টারজান। আলেমতেজোর রাজপ্রাসাদের কাছাকাছি একটা গাছের উপর উঠে লক্ষ্য করতে লাগল প্রাসাদটাকে।

    সকাল হতেই প্রাসাদের সামনের দিকের গেটের সামনে গিয়ে দাঁড়াল। প্রহরী তাকে তাদের দেবতা ভেবে সম্ভ্রমের সঙ্গে পথ ছেড়ে দিল। ভিতরের সৈনিকটাও তাকে কিছু বলল না বা তার পথ আটকাল না। এমন সময় একটা জোর গোলমালের শব্দে সকলেই ছোটাছুটি করতে লাগল।

    টারজানও তাদের সঙ্গে গিয়ে দেখল প্রাসাদের পিছন দিকে যে একটা ফাঁকা জায়গা ছিল তার উপর অনেকে জড়ো হয়েছে। গায়ের দিক থেকে একটা পাগলা মোষ ছুটে আসছিল। সবাই বলছিল বুনো মোষটা পাগলা হয়ে গেছে পোষ মানছে না। সামনে যাকে পাবে তাকেই মেরে ফেলবে। আলেমতেজোর। সামন্ত এবং প্রধান সেনাপতি আসোরিও দা সেরার বীর এবং সাহসী হিসেবে খ্যাতি ছিল। সে তাই তার তরবারি হাতে মোষটার পথের সামনে দাঁড়িয়েছিল। কিন্তু যখন দেখল ভয়ঙ্করভাবে গর্জন করতে থাকা মোষটাকে সে আটকাতে বা মারতে পারবে না তখন পিছন ফিরে ছুটে পালাতে লাগল। মোষটা এবার তাকেই তাড়া করল।

    পাশ থেকে দাঁড়িয়ে দেখতে দেখতে টারজান বুঝল মোষটা অল্প সময়ের মধ্যেই ধরে ফেলবে লোকটাকে। মোষটার হাত থেকে তার কোন পরিত্রাণ নেই। তখন সে পাশ থেকে একটা লাফ দিয়ে শোষটার পিঠের উপর উঠে পড়ে তার একটা শিং ধরে মাথাটা ঘুরিয়ে দিল। ঘাড়টা এমনভাবে বাঁকিয়ে দিল যে মোষটা উল্টে পড়ে গেল। টারজান তখন মাটিতে নেমে পড়ল। মোষটা এবার ছাড়া পেয়ে উঠে দাঁড়িয়ে আবার ছুটতে গেলে টারজান এবার সামনে এসে দুটো শিং ধরে আবার ঘাড়টা ঘুরিয়ে দিল। ফলে মোষটা এগোতে বা ছুটতে পারল না। মোষটাকে আবার ঘাড় ধরে উল্টে ফেলে দিল টারজান। তখন কুড়িজন যোদ্ধা মোটা দড়ি নিয়ে এসে তাকে বেঁধে ফেলল।

    দা সেরা টারজনের সাহস আর অতিমানবিক শক্তি দেখে বিস্ময়ে হতবাক হয়ে গিয়েছিল। কোন মানুষের এত শক্তি ও সাহস থাকতে পারে তা সে কল্পনা করতে পারেনি কোনদিন।

    এবার টারজনের কাছে গিয়ে দা সেরা বলল, তুমি আমার জীবন বাঁচিয়েছ। কে তুমি এবং কিভাবে তোমার এ ঋণ আমি পরিশোধ করব?

    টারজান বলল, আমি হচ্ছি বাঁদর- দলের টারজান।

    দা সেরা বলল, সে ত দু’বছর আলেমতেজোর দেবতা হিসেবে ছিল। এখন চলে গেছে। তার নামই ত টারজান।

    টারজান বলল, না, আমিই টারজান। সে হচ্ছে ভণ্ড, প্রতারক, আমার নাম নিয়ে কুকর্ম করে বেড়ায়। তুমি কে?

    দা সেরা বলল, আমি আলেম তেজোর সৈন্যদলের প্রধান সেনাপতি অসোরিও দা সেরা। তুমি আমার অতিথি হয়ে এখানে থাকবে।

    এবার সে তার সৈনিকদের বলল, এই দেখ, এই বিদেশীই হচ্ছে আসল দেবতা। আগের সেই দেবতা ভণ্ড, প্রতারক।

    এ কথায় সবাই নতজানু হয়ে সম্মান দেখাল টারজানকে।

    দা সেরা বলল, তুমি আমার ঘরে চল।

    এই বলে সে তাকে প্রাসাদের দিকে নিয়ে যেতে লাগল।

    এদিকে রাজা দা গামা তার ঘরে বসে একজন ক্রীতদাসকে ডেকে বলল, সে নাকি একটা পাগলা মোষকে ঘায়েল করেছে। দা সেরা তার ঘরে দেবতার সঙ্গে কথা বলছে।

    দা গামা বলল, ওদের দুজনকেই ডাক।

    এদিকে দা সেরা টারজানকে বলেছিল, তুমি এখানে থেকে যাও। আমি তোমাকে মৃত্যু ও দাসত্ব দুটোর হাত থেকেই রক্ষা করব।

    টারজান বলল, তার মানে?

    দা সেরা বলল, এখানে বন্দীদের হয় বলি দেয়া হয় অথবা ক্রীতদাস করে রাখা হয়।

    টারজান বলল, আমি ও সব কিছুরই ভয় করি না।

    দা সেরা বলল, তুমি কি জন্য এখানে এসেছ?

    টারজান বলল, আমি এখানে তোমাদের সেই দেবতা ভণ্ড লোকটাকে মারতে এসেছি।

    দা সেরা বলল, তুমি আমাদের দেবতাকে মারতে এসেছ? সত্যিই তুমি বীর। কিন্তু মনে কর আমরা যদি সত্যি সত্যিই তাকে দেবতা বলে বিশ্বাস করে থাকি?

    টারজান বলল, আমি জানি তুমি, তোমাদের রাজা দা গামা বা প্রধান পুরোহিত রুইজ কেউ তাকে দেবতা বলে বিশ্বাস করে না। লোকটা এখন কোথায়? যে মেয়েটি এসেছি সে-ই বা কোথায়?

    দা সেরা বলল, ওরা এখান থেকে পালিয়ে যাবার সময় নিগ্রো মুসলমানদের হাতে ধরা পড়ে। উপত্যকার শেষ প্রান্তে পাহাড়ের তলায় ওদের গাঁ।

    টারজান বলল, আমি সেখানে যাব।

    দা সেরা বলল, ওরা বড় ভয়ঙ্কর, তোমাকে মেরে ফেলবে।

    তবু আমি যাব।

    এত তাড়াতাড়ি করার কিছু নেই। তাকে যদি তারা হত্যা না করে থাকে তাহলে তাকে ক্রীতদাস করে রেখেছে। সে ক্রীতদাস হয়েই থাকবে সেখানে। তুমি কিছুদিন আলেমতেজোতে থাকার পর সেখানে যাবে। এখান থেকে তুমি আমাকে সাহায্য করতে পারবে।

    টারজান বলল, কিভাবে আমি সাহায্য করব তোমায়?

    দা সেরা বলল, দা গামা আর রুইজ দু’জনেই খুব খারাপ লোক। আমরা তাদের জায়গায় এক নতুন রাজা ও প্রধান পুরোহিতকে বসাতে চাই। রাজ্যের লোকেরা তোমাকে তাদের দেবতা বলে বিশ্বাস করলে রাজা দা গামার বিরুদ্ধে তাদের বিদ্রোহী করে তোলাটা কঠিন হবে না।

    টারজান বলল, তাহলে তুমি রাজা হবে?

    দা সেরা বলল, রাজ্যের সামন্ত আর যোদ্ধারা যাকে রাজা করবে সেই রাজা হবে।

    দা সেরার কথা শেষ হতেই একজন দূত এসে বলল, দেবতা আর আপনাকে দরবার ঘরে রাজা ডাকছেন।

    দূত টারজানকে দেখেই তাকে দেবতা ভেবে নতজানু হলো।

    দা সেরা বলল, রাজাকে বলগে, তিনি যেন দরবার ঘরে রাজ্যের সব সামন্ত আর যোদ্ধাদের ডাকেন যাতে তারা আমাদের আসল দেবতাকে বরণ করে নিতে পারে।

    এদিকে নতুন দেবতার কথাটা শোনার পর থেকে ক্ষেপে গিয়েছিল দা গামা। সে বলছিল, এটা দা সেরার চালাকি।

    প্রধান পুরোহিত রুইজ তখন বলল, তাহলে কেন তাদের বলছ না যে লোকটা দেবতা নয়, একটা ভণ্ড প্রতারক?

    ব্লাজা বলল, সেটা বলবে তুমি। তুমি প্রধান পুরোহিত। তুমি দেখলেই বুঝতে পারবে কে দেবতা বা দেবতা নয়।

    দরবার ঘরে গিয়ে দা গামা সিংহাসনে বসল। রুইজ বেদীর সামনে দাঁড়িয়ে বলল, তোমরা সবাই জান, আমাদের আসল দেবতাকে মুসলমানরা ধরে নিয়ে গেছে। সেই আসল দেবতা যদি ফিরে আসে তাহলে কৃতজ্ঞচিত্তে তাকে বরণ করে নেব আমরা। আর যদি সে ভণ্ড হয় তাহলে তাকে দাসত্বের বন্ধনে আবদ্ধ করা হবে চিরদিনের জন্য অথবা আলেমতেজোর অভিভাবকদের মুখে ফেলে দেয়া হবে।

    দরবার ঘরে সমবেত জনতার মধ্যে গুঞ্জনধ্বনি শোনা গেল।

    এমন সময় ঘরের মাঝখানে এসে দাঁড়িয়ে দা সেরা বলল, আসল দেবতা এসে গেছেন।

    উপস্থিত সকলেই দা সেরা ও টারর্জনের দিকে তাকাতে লাগল।

    টারজানকে দেখে অনেকেই নতজানু হয়ে বলল, আসল দেবতা। কেউ কেউ আবার নতজানু হলো না, বলল, ভণ্ড।

    দা সেরা আবার বলতে লাগল, তোমরা সবাই দেখেছ এই দেবতা কি ভাবে একটা পাগলা মোষকে থামিয়ে দেয় এবং তার সঙ্গে লড়াই করে তাকে ফেলে দিয়ে বশীভূত করে। কোন মানুষ কখনো এক কাজ করতে পারে ন। আর আমরা যাকে আসল দেবতা ভাবতাম সে ভণ্ড লোকটা নিগ্রো মুসলমানদের হাতে ধরা পড়ে।

    এ কথা সামন্ত আর যোদ্ধারা মেনে নিল। তাদের প্রায় সবাই নতজানু হয়ে টারজানকে আসল দেবতা হিসেবে বরণ করে নিল।

    রুইজ বলল, ও দেবতা নয়, ভণ্ড।

    দা গামা বলল, ওদের দুজনকেই ধরে সিংহের মুখে ফেলে দাও। ওদের মধ্যে একজন ভণ্ড আর একজন বিশ্বাসঘাতক।

    এ কথা শুনে রাজার অনুগত একজন যোদ্ধা টারজানকে তার মুক্ত তরবারি দিয়ে আঘাত করতে গেল। কিন্তু টারজান তাকে তুলে মেঝের উপর আছড়ে ফেলে দিল।

    এরপর দরবার ঘরটা স্তব্ধ হয়ে গেল। সবাই ভয় পেয়ে গেল। মোষের সঙ্গে টারজনের লড়াই তারা দেখেছিল, তার উপর আবার তারা তার শক্তির পরিচয় পেয়ে আশ্চর্য হয়ে গেল। এবার দুই-একজন বাদে সবাই একবাক্যে বলে উঠল, দা গামা নিপাত যাক, দা সেরা দীর্ঘজীবী হোক।

    তারা সবাই ধ্বনি দিতে দিতে টারজান আর দা সেরাকে ঘিরে দাঁড়াল। দা গামার অনুগত দুই-চারজন অসহায়ভাবে দাঁড়িয়ে রইল। রুইজ যোদ্ধাদের কাছে রাজা দা গামা আর আসল দেবতার প্রতি অনুগত থাকার জন্য আহ্বান জানাল। কিন্তু রুইজকে সবাই ভয় আর ঘৃণা করত। এই জন্য অনেকে রুইজকে মারার জন্য ধরতে গেল। রুইজ পিছনের দরজা দিয়ে পালিয়ে গেল। তার পিছু পিছু দা গামও পালাল।

    এইভাবে আসারিও দা সেরা আলেমতেজোর রাজ-সিংহাসনে আরোহণ করল। দাসরা সিংহাসনের পাশে বসে তার পাশে টারজনের আসল দেবতা হিসেবে বসাল। এবার তাদের সামনে কে সাদা নামে একজন পুরোহিত এসে টারজনের সামনে নৃতজানু হয়ে বসল। দা সেরা টারজানকে বলল, এই হচ্ছে তোমার প্রধান পুরোহিত। জনতার সামনে ঘোষণা করে দাও।

    সেই রাতেই প্রাসাদের মধ্যে এক ভোজসভার আয়োজন করল দা সেরা।

    এমন সময় একদল দূত এসে নতুন রাজা দা সেরাকে খবর দিল ওয়ারুতুরিদের গাঁ থেকে সোনার বিনিময়ে লোহা আর লবণ আনার সময় আমাদের যোদ্ধারা তিনজন শ্বেতাঙ্গকে বন্দী করে এনেছে।

    টারজনের এ সব ভাল লাগছিল না। তবু ব্যাপারটা দেখার জন্য বসল। দা সেরা বন্দী তিন জনকে সেখানে আনার জন্য হুকুম দিলে তাদের আনা হলো। বন্দী তিনজন হলো ক্রাম্প, মিনস্কি আর বোল্টন। ক্রাম্প টারজানকে দেখেই আশ্চর্য হয়ে মিনস্কিকে বলল, ঐ দেখ, সেই বাঁদরলোকটা।

    মিনস্কি বলল, লোকটা আবার সিংহাসনে বসে আছে। সোনার খনিটা আর খুঁজে পাব না।

    টারজান ক্রাম্প ও মিনস্কিকে কিছু না বলে বোল্টনকে বলল, তুমি একজন ইংরেজ, তুমি এদের সঙ্গে কি করে এলে?

    বোল্টন বলল, যারা আমাকে বন্দী করেছিল তারাই ওদের ধরে। আমি এদের এখনো দেখিনি। দু’বছর আগে নিগ্রো মুসলমানদের হাতে ধরা পড়ি আমি। ওদের সুলতান আমাকে সেখানে ক্রীতদাস করে। রেখেছিল।

    টারজান বলল, তুমি তাহলে ওদের দেশে দু’বছর ছিলে?

    দা সেরা টারজানকে বলল, ঠিক আছে, তুমি এই লোকটাকে তোমার ক্রীতদাস হিসেবে রাখতে পার। বাকি দু’জন বন্দী হয়ে থাকবে।

    দা সেরার হুকুমে ক্রাম্প আর মিনস্কিকে কারাগারে নিয়ে যাওয়া হল।

    ভোজসভা শেষ হয়ে গেলে টারজান বোল্টনকে তার ঘরে নিয়ে গেল। টারজান জানালার কাছে বোল্টনকে নিয়ে গিয়ে বলল, নিগ্রো মুসলমানদের দেশটা কোথায় জান? ওরা কি ভাবে কি রীতিতে যুদ্ধ করে তা দেখেছ?

    বোল্টন বলল, হ্যাঁ জানি।

    টারজান বলল, আমি তোমাকে ওখানে নিয়ে যাব। ওখানে একটা লোক একটা মেয়েকে নিয়ে পালিয়েছে। আমি লোকটাকে খুন করে মেয়েটাকে উদ্ধার করতে চাই।

    টারজান এবার দা সেরাকে বলল, নিগ্রো মুসলমানদের গায়ে যাচ্ছি। সেই ভণ্ড লোকটাকে খুন করে মেয়েটিকে উদ্ধার করতে চাই। ইংরেজ মেয়েটিকে সে জোর করে ধরে এনে এখানে দেবী বানায়।

    দা সেরা বলল, আজ সকালে ওখানকার সুলতান একজন দূত পাঠিয়েছিল। ও বলেছে এখানকার রাজা যদি দুশো মোষ দেয় তাহলে ওরা ওদের দুজনকে ছেড়ে দেবে।

    টারজান বলল, তুমি এখন সম্প্রতি রাজা হয়েছ। এখন যদি তোমাদের শত্রুদেশকে জয় করতে পার এই সুযোগ তাহলে এ দেশের জনগণ ও যোদ্ধারা সব তোমাকে দারুণ খাতির করবে। যুঙ্কু ও দেশ জয়ই রাজাব মান-সম্মান বাড়িয়ে দেয়।

    দা সেরা কথাটা মেনে নিল।

    নিগ্রো মুসলমানদের গায়ে একটা কুঁড়ে ঘরে বন্দী ছিল সান্দ্রা পিকারেল। টারজনের নামধারী লোকটা ক্রীতদাস হিসেবে কাজ করতে গিয়েছিল খনিতে।

    সেদিন দুপুরবেলায় একজন যোদ্ধা এসে সুলতানকে খবর দিল, সে নিজে দেখেছে, আলেমতেজোর এক বিরাট সৈন্যদল উপত্যকার ওধারে পাহাড়ের আড়ালে লুকিয়ে আছে। ওরা ঠিক আমাদের গাঁ আক্রমণ করবে। সুলতান সব ক্রীতদাসদের কাজ বন্ধ করে তাদের যুদ্ধের সাজে সজ্জিত করতে বলল।

    টারজনের পরামর্শে আলেমতেজোর যোদ্ধারা লুকিয়ে ছিল পাহাড়ের পাশে এক হাজার মোষ নিয়ে।

    এদিকে সন্ধ্যা হতেই দা সেরা আক্রমণ করল। সুলতান যুদ্ধের জন্য সবাইকে প্রস্তুত হবার জন্য হুকুম দিতে লাগল। সব ক্রীতদাসদের হাতে অস্ত্র দেয়া হল। মুসলমান যোদ্ধারা বর্শা আর তীর ধনুক নিয়ে রুখে দাঁড়াল। টারজনের বাঁদর-গোরিলারাও নিগ্রোদের ধরে ধরে কামড়াতে লাগল। বহু নিগ্রো মারা গেল। অনেকে যুদ্ধ ছেড়ে পরিবার নিয়ে পালাতে লাগল গা ছেড়ে।

    সান্দ্রা দেখল সুলতানের যোদ্ধারা হেরে যাচ্ছে। আলেমতেজোর যোদ্ধারা জয়ের ধ্বনি দিচ্ছে। তারা তাকে আবার বন্দী করে নিয়ে যাবে। সে তাই যুদ্ধের গোলমালের মধ্যে এক সময় পালাল একদিকে। তাকে দেখতে পেয়ে টারজান নামধারী লোকটা তাকে গিয়ে ধরে ফেলল। ডাটনও তাদের কাছে চলে এল। সন্ধ্যার অন্ধকারে গা পার হয়ে তারা বনের ভিতরে গিয়ে ঢুকে পড়ল।

    যুদ্ধে সুলতানের বাহিনীকে একেবারে হারিয়ে দিয়ে আলেমতেজো জয়লাভ করল। সুতলান লুকিয়ে পড়েছিল। দা সেরা তাকে খুঁজে বার করে রাখল আলেমতেজোতে ধরে নিয়ে যাবার জন্য। টারজান সেই ভণ্ড লোকটা বা সান্দ্রাকে অনেক খুঁজেও কোথাও পেল না। তখন সে বলল, এখন রাত্রিকাল। কাল সকালে আবার খোঁজ করব।

    এদিকে আলেমতেজোর রাজপ্রাসাদের দা সেরা যখন যুদ্ধের প্রস্তুতির ব্যাপারে ব্যস্ত ছিল তখন এক ফাঁকে ক্রাম্প আর মিনস্কি প্রাসাদের বাইরে বনের মধ্যে পালিয়ে যায়।

    ওরা আলেমতেজোর যোদ্ধাদের সঙ্গে যাতে দেখা না হয় তার জন্য ঘুরপথে এগিয়ে যাচ্ছিল। এজন্য সারারাত ধরে পথ চলার পর সকালে ওরা রুকুরি পাহাড়ের পাদদেশে গিয়ে পৌঁছল। সেই পাহাড়ের মধ্যেই এক জায়গায় টারজান নামধারী লোকটা, ডাটন আর সান্দ্রা লুকিয়েছিল।

    এদিকে সান্দ্রা সেই পাহাড়ের কোলে এক জায়গায় সকাল হতেই জেগে উঠল ঘুম থেকে।

    ওরা তিনজনেই আর দেরী না করে উত্তর-পশ্চিম দিকে এগোতে লাগল।

    সান্দ্রা ক্লান্তি আর ক্ষুধাজনিত দুর্বলতায় পথ চলতে পারছিল না। ডাটন খুব ক্লান্ত হয়ে পড়েছিল।

    টারজান নামধারী লোকটা হঠাৎ বলল, মনে হচ্ছে সামনের ঐ বাঁশবনটায় কি একটা বড় জন্তু রয়েছে। দেখি কোন শিকার পাওয়া যায় কি না।

    এই বলে সে একটা তীর ছুঁড়ে দিল বাঁশবনটার ভিতরে।

    কিন্তু বাঁশবনের মধ্যে মালগাশের বাঁদর-গোরিলাদের দলটা আহার খুঁজছিল; ওরা বুঝতে পারেনি।

    একটা বাঁদর-গোরিলার গায়ে তীরটা লাগায় ওরা ক্ষেপে গিয়ে বেরিয়ে এল।

    টারজান নামধারী লোকটা বলল, ওরা দেবতার সেবক।

    সে বাঁদর-গোরিলাগুলোকে থামতে বলল। বলল আমি হচ্ছি তোমাদের দেবতা। তোমরা থাম। আমার কথা শোন। কিন্তু ওরা থামল না। ওরা ওদের তিনজনকেই আক্রমণ করল ভয়ঙ্করভাবে।

    ডাটন বর্শা দিয়ে যাকে আঘাত করল সেই বাঁদর-গোরিলাটা তার বর্শাটা কেড়ে নিয়ে ভেঙ্গে দিল। ডাটন তার বর্শাটা দিয়ে আঘাত করতে সেও সেটা ভেঙে দিল। বাঁদর-গোরিলাগুলো এর পর বর্শার বাট দিয়ে টারজান-নামধারী লোকটার মাথায় জোর আঘাত করায়। সে অচেতন হয়ে পড়ে গেল মাটিতে। তাদের একজন ডাটনকে তুলে নিয়ে ঘাড়ে একটা জোর কামড় দিতে সেও লুটিয়ে পড়ল।

    এবার একজন সান্দ্রাকে তুলে নিয়ে পালাতে লাগল।

    সারাদিন ধরে অনেক খুঁজেও আহারের কোন সন্ধান পেল না ক্রাম্পরা। রাত্রি হতেই শীতে কাঁপতে কাঁপতে শুয়ে পড়ল তারা দুজনে।

    সকাল হলে ক্রাম্প বলল, ঐ দেখ, একটা মানুষ হয়ত ঘুমোচ্ছে।

    মিনস্কি বলল, আরে, এই লোকটাই ত টারজান যে মেয়েটাকে চুরি করে নিয়ে গিয়েছিল।

    এদিকে টারজান নামধারী লোকটা চেতনা ফিরে পেয়ে ততক্ষণে উঠে বসে চারদিকে তাকাচ্ছিল। সে সান্দ্রা আর ডাটনের খোঁজ করছিল। কিন্তু তাদের কাউকে দেখতে পেল না। শুধু দেখল দু’জন শ্বেতাঙ্গ তার দিকেই আসছে।

    ওরা কাছে এলে নকল টারজান বলল, তোমরা কি করে এলে এখানে? মিস পিকারেলকে দেখেছ? কোন খবর জান তার?

    ক্রাম্প বলল, তুমি আমাদের শিবির থেকে তাকে চুরি করে নিয়ে যাবার পর থেকে তাকে আর দেখিনি।

    টারজান নামধারী লোকটা বলল, গতকাল বিকেলে আমরা তিনজনে এইখানে এসে পড়ি। তারপর একদল বাঁদর-গোরিলা আমাদের আক্রমণ করে। আমি জ্ঞান হারিয়ে ফেলি। তারপর কি হয় তা আমি জানি না।

    ক্রাম্প বলল, নিশ্চয় মেয়েটাকে তারা নিয়ে গেছে।

    এরপর তারা বনের দিকে চলে গেল সান্দ্রার খোঁজে।

    সান্দ্রাকে বাঁদর-গোরিলাটা যখন বনের ভিতর দিয়ে কাঁধে করে বয়ে নিয়ে যাচ্ছিল তখন হঠাৎ তাদের পথে উঙ্গো তার দলবল নিয়ে এসে পড়ে। উঙ্গো দেখল সচো নামে আলেমতেজোর এক বাঁদর-গোরিলা একটা শ্বেতাঙ্গ মেয়েকে নিয়ে পালাচ্ছে।

    উঙ্গো সাঁচোর পথরোধ করে দাঁড়াতেই সে তার দলের বাঁদর-গোরিলাদের ডাকতে থাকে। তারা এসে পড়লে দু’দলে আবার লড়াই শুরু হয়ে যায়। সঁচো সান্দ্রাকে নামিয়ে এক জায়গায় দাঁড় করিয়ে রাখে। সান্দ্রা যখন দেখল দু’দলের সব বাদর-গোরিলারা পরস্পরকে কামড়াচ্ছে এবং ভীষণভাবে মারামারি করছে। তখন সে আর দাঁড়াল না সেখানে। সে চলে গেল।

    ক্রাম্প, মিনস্কি আর নকল টারজান একই সঙ্গে আহার আর সান্দ্রার অনেক খোঁজ করেও কিছুই পেল না।

    ওরা ঘুরতে ঘুরতে পাহাড়ের মধ্যে একটা খনির কাছে এসে পড়ল। ওরা দেখল খনির মুখটা বেশ বড়। উপর থেকে সিঁড়ি নেমে গেছে ধাপে ধাপে। খনির ভিতরটা পঁচিশ ফুট গভীর এবং খনিটা আধ একর জায়গা জুড়ে বিস্তৃত।

    নকল টারজনের পাশে ক্রাম্প আর মিনস্কি দাঁড়িয়েছিল। ক্রাম্প আনন্দের আবেগে চীৎকার করে উঠল, খনি সোনার খনি পেয়ে গেছি। দেখ, দেখ।

    ক্রাম্প সিঁড়ি বেয়ে নিচে নেমে গেল সঙ্গে সঙ্গে। মিনস্কি তার পিছু পিছু গেল।

    সোনার তালগুলোর লোভে উন্মত্ত হয়ে ক্রাম্প এক জায়গায় কুড়িয়ে জড়ো করে রাখতে রাখতে বলল, এগুলো সব আমার।

    নকল টারজান আশ্চর্য হয়ে বলল, এগুলো নিয়ে কি করবে?

    ক্রাম্প বলল, তুমি একটা বোকা। কি করব? এগুলো ইংলন্ডে নিয়ে গিয়ে বিরাট ধনী হব। এই বলে সে তার গায়ের কোটটা খুলে তার মধ্যে সোনার তালগুলো তুলে রাখতে লাগল।

    নকল টারজান বলল, এগুলো বয়ে নিয়ে যাবে কি করে।

    ক্রাম্প বলল, কি বলছ তুমি। এগুলো সব খাঁটি সোনা।

    নকল টারজান বলল, এ সবে আমার কোন আগ্রহ নেই, এই বলে খনির মুখ থেকে সে চলে গেল।

    ক্রাম্প তার কোট ও প্যান্টের মধ্যে সোনাগুলো ভরে একটা পুঁটলি করে বলল, আমার মনে হয় এর বেশি আর বইতে পারব না আমি।

    সোনার পুঁটলিটা কাঁধের উপর তোলার চেষ্টা করল ক্রাম্প। কিন্তু মাটি থেকেই সেটা তুলতে পারল না।

    অনেক চেষ্টায়ও ক্রাম্প তার পুঁটলিটা কাঁধে তুলতে না পারায় কতকগুলো সোনার তাল ফেলে দিয়ে সেটা কাঁধে তুলল।

    দু’জনেই খনির মুখটার বাইরে এসে বোঝার ভারে ক্লান্ত হয়ে শুয়ে পড়ল।

    এদিকে আহারের সন্ধানে ঘুরত ঘুরতে নকল টারজান ভাবতে লাগল সান্দ্রা পিকারেলের হাতে মারা গেছে।

    ঘুরতে ঘুরতে হঠাৎ একটা আর্তনাদ শুনতে পেল নকল টারজান। মানবতার খাতিরে সেই আর্তনাদের শব্দ লক্ষ্য করে ছুটতে লাগল। ঘটনাস্থলে গিয়ে থমকে দাঁড়িয়ে পড়ল সে। ভূত দেখে চমকে উঠল। দেখল সান্দ্রা পিকারেল মরার মত পড়ে রয়েছে আর তার উপর একটি নিগ্রো আদিবাসী মরে পড়ে আছে। তার পিঠে একটা তীর গাঁথা ছিল।

    ছুটে গিয়ে সান্দ্রার উপর থেকে মৃতদেহটা সরিয়ে দিল নকল টারজান। তারপর সান্দ্রার দেহটা নিজের কোলের উপর তুলে নিল।

    ক্রমে জ্ঞান ফিরে এলে চোখ মেলে চাইল সান্দ্রা। নকল টারজানকে দেখেই সে আশ্চর্য হয়ে গেল।

    নকল টারজান বলল, ক্রাম্প আর মিনস্কিও বেঁচে আছে। তারা সোনার খনি থেকে এত সোনা তুলেছে। যা তারা বয়ে নিতে পারবে না।

    নকল টারজান বলল, এখন আমাদের সামনে মাত্র দুটো পথ খোলা আছে। এক হলো, আলেমতেজোতে ফিরে গিয়ে আবার দেবদেবী সেজে থাকা আর একটা পথ হলো ঐ পাহাড়টা পার হয়ে তোমার বাবার কাছে ফিরে যাওয়া। আমি মনে করছি তাই যাব। এখন আমাদের কিছু খাওয়া দরকার।

    ক্রাম্প আর মিনস্কি সেই খনির মুখটার বাইরে জ্বলন্ত রোদে শুয়ে রইল। অবশেষে মিনস্কি তার কনুই এর উপর ভর দিয়ে মুখটা তুলে চারদিকে তাকিয়ে দেখল অদূরে একটা গাছ রয়েছে। সে তাই অতি কষ্টে তার বোঝাটা নিয়ে সেই গাছটার ছায়ায় চলে গেল।

    তার দেখাদেখি ক্রাম্পও সেখানে চলে গেল। জ্বলন্ত সূর্যের কড়া রোদে ওদের দেহের অবশিষ্ট শক্তিটুকু শোষণ করে নিল। পিপাসায় বুকটা ওদের ফেটে যাচ্ছিল। আরও এক ঘণ্টা থাকার পরে উঠে। বসল মিনস্কি। বলল, আমি জলের স্রোতের শব্দ শুনতে পাচ্ছি আমাদের ডান দিকে একটা গিরিখাতে জল আছে।

    মিনস্কি বলল, এইখানে সোনার পুঁটলিগুলো রেখে যাব। জল খেয়ে আবার ফিরে আসব।

    এই কথা বলে সে উঠতে গিয়ে আবার পড়ে গেল। ক্রাম্পও উঠতে গিয়ে উঠতে পারল না।

    ক্রাম্প তখন চীৎকার করে বলল, মিনস্কি, আমায় জলের এনে দাও।

    আবার ওঠার চেষ্টা করল মিনস্কি। ক্রাম্প তাকে ধরে সাহায্য করতে লাগল। কিন্তু কোনরকমে উঠে দাঁড়াতেই সে পাশ চেপে আবার পড়ে গিয়ে তার দেহটা একবার জোর কেঁপে স্থির হয়ে গেল। এবার ক্রাম্প গর্জন করতে করতে বলল, তোকে এবার উচিৎ শিক্ষা দেব।

    এই কথা বলে সেই সোনালী ভারী তালটা দিয়ে পাগলের মত মিনস্কির মাথাটা ভাঙ্গতে লাগল। কিছুক্ষণের মধ্যেই মাথার খুলিটা ভেঙ্গে থেঁতো হয়ে গেল।

    ক্রাম্প হাসতে লাগল। হাসতে হাসতে বলল, এবার তোর আর আমার সব সোনা আমি একা ভোগ করব।

    আলেমতেজোর সীমানা থেকে বেরিয়ে যাবার সহজ পথটা খুঁজে পেতে দেরী হলো না টারজনের। কিন্তু পথটা পেলেও সে পথ ধরে বেশিদূর গেল না। সে বুঝল এখনো তাকে এই পাহাড় এলাকাতেই থাকতে হবে। কারণ এই পাহাড়ের কোথাও সেই টারজান নামধারী লোকটা সান্দ্রা পিকারেল নামে মেয়েটিকে নিয়ে আছে।

    টারজান একটা হরিণ মেরে এনে তার খানিকটা মাংস বোল্টনকে দিল।

    হঠাৎ বাতাসে দুটো মরা মানুষের গন্ধ পেল টারজান। বোল্টন কিন্তু চারদিকে তাকিয়ে কিছু দেখতে পেল না। টারজান বলল, অদূরে দু’জন শ্বেতাঙ্গ মরে পড়ে আছে।

    এ কথা শুনে আশ্চর্য হয়ে গেল বোল্টম। সে টারজনের সঙ্গে পাহাড়ের উপর দিকে কিছুটা উঠে দেখল সত্যিই দু’জন শ্বেতাঙ্গের মৃতদেহ পড়ে আছে। সে বলল, কি করে তুমি জানতে পারলে?

    লোক দুটো অদূরে জল থাকা সত্ত্বেও পিপাসায় মারা গেছে। এই পুঁটলি দুটোয় খাঁটি সোনার অনেক তাল আছে।

    বোল্টন বলল, এদের তুমি চিনতে?

    টারজান বলল, হ্যাঁ। এদের একজন আমাকে দু’বার হত্যা করতে গিয়েছিল।

    সে ক্রাম্পের মৃতদেহটাকে পা দিয়ে দেখিয়ে দিল। বলল, তুমি কি এই সোনাগুলো বয়ে নিয়ে যেতে চাও?

    বোল্টন বলল, না, ওদের মত আমিও কি মরব? আমার ওতে দরকার নেই। আমি শুধু এ অঞ্চল থেকে বেরিয়ে যেতে চাই।

    পরদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে বোল্টন দেখল, টারজান নেই। সে ভয় পেয়ে গেল। টারজান কোথায় গেছে তা ভেবে পেল না কিছু।

    কিছুক্ষণের মধ্যেই একটা শুয়োর শিকার করে নিয়ে এল টারজান। সে বলল, খাওয়ার পরই আমরা যে পথে এসেছি সেই পথে কিছুটা গিয়ে লোকটার খোঁজ করব।

    সান্দ্রা আর নকল টারজান তখন হাত ধরাধরি করে পাহাড় থেকে উপত্যকার দিকে সেই পথেই নেমে আসছিল।

    হঠাৎ টারজান তাদের সামনে গিয়ে দাঁড়াতেই সান্দ্রা বলে উঠল, টারজান তুমি? আমি ত ভেবেছিলাম তুমি মারা গেছ মাথায় গুলি লেগে।

    কথাটার কোন উত্তর দিল না টারজান। তার চোখ দুটো তখন সান্দ্রার সঙ্গী লোকটার উপর নিবদ্ধ ছিল। সে তাকে জীবনে দেখেনি কখনো এর আগে। এই লোকটাকেই সে খুঁজে বেড়াচ্ছে দীর্ঘদিন ধরে।

    সে তার সামনে গিয়ে বলল, তুমি তোমার তীর ধনুক ফেলে দাও।

    লোকটা বলল, কেন?

    টারজান বলল, কারণ আমি তোমাকে খুন করব।

    লোকটা তার তীর ধনুক ফেলে দিয়ে বলল, আমি বুঝতে পারছি না কেন তুমি আমাকে হত্যা করতে চাও?

    কিন্তু সে ভয় পেল না। ভয়ের কোন চিহ্ন বা লক্ষণ পাওয়া গেল না তার মুখে।

    টারজান বলল, আমি তোমায় খুন করব, কারণ তুমি আমার নাম ধারণ করে আমার প্রতি বন্ধুভাবাপন্ন গা থেকে অনেক নারী ও শিশু চুরি করে হয় তাদের হত্যা করেছ অথবা শত্রুদের হাতে ক্রীতদাস হিসেবে তুলে দিয়েছ। আমার বন্ধুরা ভাবছে আমিই এ কাজ করেছি।

    সান্দ্রা তাদের দুজনের মাঝখানে এসে দাঁড়িয়ে বলল, আমার কথা শোন টারজান, তুমি একে খুন করো না।

    টারজান বলল, কেন করব না? সে ত তোমাকেও চুরি করেছিল।

    সান্দ্রা বলল, দয়া করে আমার কথাটা শোন। লোকটা আসলে খারাপ নয়। কোন কারণে সে স্মৃতিশক্তি হারিয়ে ফেলে। ও জানত ও-ই টারজান। আমিই ওকে বুঝিয়ে দিয়েছি ও টারজান নয়। আলেমতেজোর রাজা দা গামাই ওকে দিয়ে এই সব কাজ করিয়েছে।

    টারজান বলল, আর কিছু তোমার বলার আছে?

    সান্দ্রা বলল, আমি ওকে ভালবাসি।

    টারজান এবার লোকটার দিকে মুখ ফিরিয়ে বলল, তোমার কিছু বলার আছে?

    লোকটা বলল, মিস পিকারেল যা বলেছে তা সব সত্যি। আমি জানি না আমি কে, কি আমার পরিচয়? আমি জানতাম না আমি যা যা করেছি তা অন্যায়। আমি তার প্রায়শ্চিত্ত করতে চাই। আমি পিকারেলকে তার বাবার কাছে দিয়ে আসতে চাই। আমি যাদের মৃত্যুর জন্য দায়ী তাদের জীবন অবশ্য ফিরিয়ে দিতে পারব না। কিন্তু আমি সত্যিই অনুতপ্ত।

    টারজান লোকটাকে খুঁটিয়ে দেখল। লোক-চরিত্র সে বুঝত। সে বুঝল লোকটা আসলে খাঁটি এবং সে যা বলছে তা সত্যি এবং বিশ্বাসযোগ্য।

    টারজান বলল, ঠিক আছে, আমি তোমাদের ফিরে যেতে সাহায্য করব। তোমাদের দলের অন্য সব লোকরা কোথায়?

    সান্দ্রা বলল, পেলহ্যাম ডাটন মারা গেছে বাঁদর-গোলিরাদের হাতে। অন্য দু’জনকে আমি দেখিনি।

    টারজান বলল, ক্রাম্প আর মিনস্কি তৃষ্ণায় মারা গেছে। গতকাল তাদের মৃতদেহ আমি দেখেছি।

    সেদিন সকালে উঠে টারজানকে দেখতে না পেয়ে চিন্তিত হয়ে পড়ল বোল্টন। অনেকক্ষণ অপেক্ষা করার পরও যখন সে ফিরে এল না তখন সে নিজেই বেরিয়ে পড়ল টারজনের খোঁজে। টারজান কোন্‌দিকে যেতে পারে তা অনুমান করে সেইদিকে এগিয়ে যাচ্ছিল।

    সান্দ্রা বোল্টনকে প্রথম দেখতে পায়। টারজানও তখন তাকে দেখতে পেয়ে বলে, ও আমার বন্ধু।

    বোল্টন টারজনের মত অনেকটা দেখতে আর একটা লোককে দেখে আশ্চর্য হয়ে যায়। সে তাদের কাছে আরো এগিয়ে এসে টারজনের মত লোকটাকে চিনতে পেরে বলে উঠল, র‍্যান্ড তুমি! আমি ত ভেবেছিলাম দু’বছর আগেই তুমি মারা গেছ।

    র‍্যান্ড হতবুদ্ধি হয়ে বলল, তুমি হয়ত ভুল করছ। আমি তোমাকে কখনো দেখিনি।

    বোল্টন হতাশ হয়ে বলল, তুমি আমাকে চিনতে পারছ না? আমি ফ্রান্সিস বোল্টন শিল্টন।

    সান্দ্রা আগ্রহের সঙ্গে বোল্টনকে বলল, আপনি একে চেনেন?

    বোল্টন বলল, আমি অবশ্যই ওকে চিনি। ও আমাকে চিনতে পারছে না কেন বুঝতে পারছি না।

    সান্দ্রা বলল, কিছু একটা হয়েছে। ও মাত্র দু’বছরের ঘটনা ছাড়া তার আগের কোন কিছু মনে করতে পারছে না।

    বোল্টন বলল, আমেরিকার পশ্চিম ভার্জিনিয়ায় ওর বাড়ি। ওর নাম কলিন র‍্যান্ডম্ফ।

    সান্দ্রা র‍্যান্ডকে বলল, দেখলে আমি তোমায় বলেছিলাম তুমি একজন আমেরিকান।

    র‍্যান্ড বলল, তবু ভাল একজন আমাকে চেনে। হয়ত আমার স্মৃতিশক্তি অচিরেই ফিরে আসবে।

    সান্দ্রা বোল্টনকে বলল, আপনি তাহলে ওর বিষয়ে সব জানেন? ও কি বিবাহিত?

    বোল্টন বলল, না বিবাহিত নয়। আমি ওর সবকিছু জানি। স্পেনে আমরা একসঙ্গে বছরখানেক ছিলাম আফ্রিকায় আসার আগে।

    টারজান সবকিছু শুনে ভাবল সে লোকটাকে খুন না করেই ভালই করেছে। এখন যেমন করে হোক এখান থেকে তাদের নিরাপদে ফিরে যাওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। সে তাই বলল, এখন চল। এখান থেকে বেরিয়ে যাবার সহজ পথ একটা খুঁজছি।

    টারজান পা চালিয়ে পথ চলতে লাগল। কেউ কোন কথা বলার সুযোগ পেল না। সন্ধ্যার আগে ওরা একটা জায়গায় রাতটা কাটাবার জন্য বিশ্রাম করতে লাগল। খুব ঠাণ্ডা কথায় ওরা আগুন জ্বালাল।

    সান্দ্রা বোল্টন আর র‍্যান্ডের কাছে বসল। সে র‍্যান্ডকে বলল, অবশেষে তোমার একটা নাম পেলাম। এতদিন তোমায় নাম ধরে ডাকতে পাইনি।

    বোল্টন বলল, ও খুব কথায় কথায় বাজী ধরত। এই বাজী ধরাই হলো ওর আফ্রিকা আসার কারণ।

    সান্দ্রা বলল, কিন্তু আফ্রিকায় এসে আমাকে অপহরণ করার জন্য নিশ্চয় বাজী রাখেনি। ও ত আমার নামই জানত না।

    বোল্টন বলল, তাহলে তার আগের কথা সব খুলে বলতে হবে। র‍্যান্ড টারজনের খুব ভক্ত ছিল। টারজনের বই পড়ে ও টারজনের মত হবার চেষ্টা করে। ওর দেহটা বলিষ্ঠ হয়ে ওঠে। ও ধনুর্বিদ্যা শিখতে শিখতে পারদর্শী হয়ে ওঠে তাতে। ও আফ্রিকায় এসে টারজনের মত একা একা বন্য জীবন যাপন করার কথা বলে। স্পেন থেকে আমরা ইংলন্ডে এলাম। সেখানে একদিন একটা ক্লাবে বসে থাকতে থাকতে একটা কাগজে পড়লাম দক্ষিণ আফ্রিকায় একটা আদিবাসী ছেলে একদল বেবুন বা বনমানুষ জাতীয় জন্তুর হাতে ধরা পড়ে। তারপর ছেলেটা মানুষ হয়েও ঐ বেবুনদের দলে থাকত। ছেলেটা আদিবাসী জংলী বলেই পেরেছিল। র‍্যান্ড তখন এক হাজার পাউন্ড বাজী রাখল।

    আমিও তাতে রাজী হয়ে গেলাম। এক ঘণ্টা ধরে আলোচনার পর ঠিক হলো র‍্যান্ড আর আমি দু’জনে তার ছোট বিমানটায় করে মধ্য আফ্রিকায় গিয়ে ভাল শিকার পাওয়া যায় এমন একটা জায়গায় নামব। তারপর আমি বিমানে করে অন্য জায়গায় চলে যাব। এক মাস পরে আমি তাকে তুলে নিয়ে যাব সেখান থেকে। আরো ঠিক হলো, ধোয়ার কুন্ডলির মাধ্যমে সে আমাকে তার অবস্থার কথা জানাবে। যদি উপর থেকে একটা ধোঁয়ার কুন্ডলি দেখতে পাই তাহলে বুঝতে হবে সে ভালই আছে আর যদি দুটো কুন্ডলি দেখা যায় তাহলে বুঝব সে বিপদে পড়েছে। এবং সাহায্য চায়। সে যদি টারজনের মত বেশভূষা করে এক মাস সেখানে টিকে থাকতে পারে তাহলে সে বাজীতে জিতে যাবে এবং আমি তাকে এক হাজার পাউন্ড দেব আর না পারলে সে আমাকে এক হাজার পাউন্ড দেবে।

    আমরা মধ্য আফ্রিকায় গিয়ে নামবার মত একটা ভাল জায়গার খোঁজ করতে লাগলাম। কিন্তু ক্রমেই কুয়াশায় ঢাকা এক পার্বত্য এলাকায় গিয়ে পড়লাম। বিমানটা কোথায় নামাব তা ঠিক করতে পারলাম না। তার আগেই র‍্যান্ড টারজনের মত বেশভূষা পরে ও অস্ত্র নিয়ে তৈরি হয়েছিল। এক সময় ব্যান্ড আমাকে ঝাঁপ দিতে বলল। বলল, পাহাড়ের উপর দিয়ে আমরা যাচ্ছি। তখনই ঝাঁপ দিলাম আমি। তারপর দু’বছর ধরে আর র‍্যান্ডের দেখা পাইনি।

    সেখানে আমি র‍্যান্ডের জন্য অপেক্ষা করলাম অনেকক্ষণ ধরে। কিন্তু সে না আসায় আমি একটা গাঁয়ের দিকে এগিয়ে গেলাম। পরে বুঝলাম সেটা নিগ্রো মুসলমানদের গাঁ। সুলতান আলি আমাকে বন্দী করে রাখল। ক্রীতদাস হিসেবে আমি সোনার খনিতে কাজ করতাম। তারপর আলেমতেজোর যোদ্ধারা। আমায় বন্দী করে। সেখান থেকে যুদ্ধের সময় পালিয়ে এলে টারজনের সঙ্গে দেখা হয়ে যায়।

    সান্দ্রা র‍্যান্ডের কাছে গিয়ে বলল, তারপর তোমার কি হলো র‍্যান্ড? তোমার কি সে কথা কিছুই মনে নেই?

    র‍্যান্ড বলল, আমি ঝাঁপ দিয়ে আলেমতেজোর রাজপ্রাসাদের কাছে গিয়ে পড়ি। ওখানকার লোকেরা বলতে থাকে আমি আকাশ থেকে পড়ি; আমি মানুষ নই, দেবতা। এরপর আর কিছু মনে নেই আমার। বিমান চালানোর কথাও মনে নেই আমার।

    সান্দ্রা বলল, কিন্তু বিমানটা পড়ল কোথায়? এও এক রহস্য।

    সে রাতটা সেখানে কাটিয়ে পরদিন সকাল হতেই উপত্যকার দিকে এগিয়ে যেতে লাগল ওরা।

    ওরা কিন্তু সহজ পথটা খুঁজে পেল না। তার থেকে অনেক দূরে গিয়ে পড়ল। মালভূমি থেকে অনেকটা নিচে এক মাইল বিস্তৃত গাছপালাহীন একটা জায়গায় ওরা যেতেই টারজান ওদের দেখাল, ঐ দেখ বিমানটা।

    বোল্টন লাফিয়ে উঠল আবেগের সঙ্গে। বলল, এটাই ত র‍্যান্ডের বিমান।

    সান্দ্রা বলল, তা কি করে হবে? এটা ত ভেঙ্গে-চুরে যায়নি।

    বোল্টন বলল, বিমানটা যদি কোনরকমে আবার চালাতে পারতাম।

    এক ঘণ্টা ধরে চেষ্টা করার পর বিমানটার দরজা খুলে ভিতরে ঢুকতে পারল বোল্টন। দরজাটায় জং ধরেছিল। পরে দেখল বিমানটার যন্ত্রপাতি সব ঠিকই আছে। শুধু চাকার টায়ারগুলো বসে গেছে।

    বোল্টন বলল, আমি বইতে পড়েছি বিমানবাহিনীর অনেক বিমান আপনা থেকে নেমে পড়ে।

    কি মনে হতেই র‍্যান্ড বিমানটার মধ্যে ঢুকে কেবিনে গিয়ে পাইলটের সীটে বসে পড়ল। সে যন্ত্রপাতি সব পরীক্ষা করে দেখল। কেবিনের ভিতরে নানারকম যন্ত্রপাতি পরীক্ষা করতে গিয়ে হঠাৎ পূর্ব জীবনের কথা সব মনে পড়ে গেল র‍্যান্ডর। সে চীৎকার করে বলতে লাগল, ও সান্দ্রা! আমার সব কথা মনে পড়েছে।

    বোল্টন বলল, আমি জানতাম মনে পড়বে। এই কেবিনটাতে তুমি জীবনের অনকগুলো দিন কাটিয়েছ। তুমি সত্যিই বিমানটাকে ভালবাসতে।

    র‍্যান্ড বলল, একে একে এবার সব মনে পড়ছে আমার। বোল্টন ঝাঁপ দেবার পর মিনিট পাঁচেক আমি বিমানে ছিলাম। তারপর আমি ঝাঁপ দিয়ে আলেমতেজোর প্রাসাদের উঠোনে গিয়ে পড়ি। আমার মাথায় আঘাত লাগে। আর তার জন্যই আমার স্মৃতিশক্তি লোপ পায়।

    সান্দ্রা, র‍্যান্ডকে বলল, তোমার কি মনে হয় বিমানটা আবার উড়তে পারবে?

    র‍্যান্ড বলল, ও না চাইলেও আমি ওকে ওড়াব।

    দু’ঘণ্টা কেটে গেল। র‍্যান্ড প্রথমে কার্বুরেটারের মধ্যে যে জট পাকিয়ে গিয়েছিল তা ঠিক করল। তারপর তেল কতটা আছে তা দেখে নিল। তারপর ইঞ্জিনটা স্টার্ট দিল। সঙ্গে সঙ্গে প্রপেলারের ঘর্ঘর আওয়াজ শোনা গেল। টায়ারে পাম্প দেয়া হল।

    র‍্যান্ড বলল, তোমরা কেউ সোনার পুঁটলিগুলো নিতে চাও ত নিতে পার।

    বোল্টন বলল, আমার কোন দরকার নেই। র‍্যান্ড বা টিমথি পিকারেলের মেয়ে সান্দ্রারও কোন সোনার দরকার হবে না। টারজান মনে করলে নিতে পারে।

    টারজান হেসে বলল, আমি সোনা নিয়ে কি করব?

    টায়ারগুলো ঠিক হয়ে যেতেই বিমান ছেড়ে দিল। র‍্যান্ড বিমানটা মাটি ছেড়ে উপরে উঠলে সান্দ্রা বলল, ঈশ্বরকে সবকিছুর জন্যই ধন্যবাদ।

    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleলাল মৃত্যুর মুখোশ – এডগার অ্যালান পো – (অনুবাদক : চিত্তরঞ্জন মাইতি)
    Next Article The Gringos – Edith Nesbit
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Demo
    Most Popular

    রাজমালা বা ত্রিপুরার ইতিহাস – শ্রী কৈলাসচন্দ্ৰ সিংহ প্রণীত

    August 20, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    রাজমালা বা ত্রিপুরার ইতিহাস – শ্রী কৈলাসচন্দ্ৰ সিংহ প্রণীত

    August 20, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Our Picks

    রাজমালা বা ত্রিপুরার ইতিহাস – শ্রী কৈলাসচন্দ্ৰ সিংহ প্রণীত

    August 20, 2025

    আলো হাতে সেই মেয়েটি – তপন বন্দ্যোপাধ্যায়

    August 20, 2025

    গোয়েন্দা গার্গী সমগ্র – তপন বন্দ্যোপাধ্যায়

    August 20, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    Sign In or Register

    Welcome Back!

    Login below or Register Now.

    Lost password?

    Register Now!

    Already registered? Login.

    A password will be e-mailed to you.