Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    দ্য দা ভিঞ্চি কোড – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025

    এঞ্জেলস এন্ড ডেমনস – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • 🔖
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    Subscribe
    সাইন ইন
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    টারজান রচনা সমগ্র – এডগার রাইস বারুজ

    এডগার রাইস বারুজ এক পাতা গল্প1300 Mins Read0

    টারজনের জঙ্গল জীবন (জাঙ্গল টেলস অফ টারজান)

    টারজনের জঙ্গল জীবন (জাঙ্গল টেলস অফ টারজান)

    সেদিন জঙ্গলের ঘন ছায়ার তলায় আরামে বিশ্রাম করছিল বাঁদর-গোরিলা টিকা। অদূরে একটা গাছের ডালের উপর বসে দোল খাচ্ছিল টারজান।

    টিকা ছিল তার ছেলেবেলাকার খেলার সাথী। কিন্তু বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তাদের বন্ধুত্বও বেড়ে যায়।

    কিন্তু আজ সহসা টারজান যখন গাছের উপর থেকে দেখল টগ টিকার গা ঘেঁষে দাঁড়িয়ে তার ঘাড়ের উপর একটা পা তুলে দিয়ে আদর করছে তাকে তখন মনটা বিগড়ে গেল টারজনের।

    টারজান দাঁতগুলো বার করে গর্জন করে উঠল। তার পানে তাকাল টগ। টিকা মুখ তুলে তাকাল টারজনের পানে। সে এর কারণ কিছু বুঝতে পারল না। এবার সে টগের আদরের বিনিময়ে তার পিঠটা। চুলকে দিচ্ছিল।

    এই দৃশ্যটা দেখার সঙ্গে সঙ্গে মাথাটা ঘুরে গেল টারজনের। তার মনে হলো এই মুহূর্তে টিকাকে সারা জগতের মধ্যে সবচেয়ে আশ্চর্যজনক বস্তু বলে মনে হচ্ছিল।

    টারজান এগিয়ে এসে টগকে বলল, টিকা আমার।

    টগ বলল, টিকা টগের, আর কারো নয়।

    দু’জনেই এবার লড়াই-এর জন্য প্রস্তুত হলো। দু’জনেই দাঁত বার করে তেড়ে এল দু’জনকে। কিন্তু হঠাৎ সেখানে একটা চিতাবাঘ এসে পড়ায় টগ পালিয়ে গিয়ে একটা গাছের উপর উঠে পড়ল। টিকা তখনো গাছের তলায় মাটির উপরেই ছিল। কিন্তু চিতাবাঘটা তাকে সামনে পেয়ে তাকেই তাড়া করল। অন্য সব বাঁদর গোরিলাগুলোও গাছের উপর উঠে এক নিরাপদ আশ্রয় থেকে ঘটনাটা দেখে মজা পাচ্ছিল।

    একা টারজান এগিয়ে গিয়ে চিতাবাঘটার সামনে দাঁড়াল। গর্জন করে চিতাবাঘটার দৃষ্টি টিকার উপর থেকে সরিয়ে তার নিজের উপরে নিবদ্ধ করার চেষ্টা করল। তার ঘাসের দড়ির ফাঁসটা চিতাবাঘটার গলায় ঠিক সেই মুহূর্তে আটকে না দিলে টিকাকে ধরে ফেলতো সে। চিতাবাঘটা গলার ফাঁসটা নিয়ে টানাটানি করতে থাকলে সেই অবসরে একটা গাছের উপর উঠে পড়ল টিকা।

    সুযোগ পেয়ে টারজানও কাছাকাছি একটা গাছের উপর উঠে পড়ল। বাঘটা এবার দাঁত আর নখ দিয়ে ঘাসের দড়িটা ছিঁড়ে বনের ভিতর পালিয়ে গেল। চিতাবাঘটা পালিয়ে যেতেই বাঁদর-গোরিলাগুলো সব একে একে নেমে এল গাছ থেকে। টিকা দেখল টগ নয় টারজানই তার উদ্ধারকর্তা। তাই সে ভালবাসা ও কৃতজ্ঞতার বশে টারজনের কাছে সরে এল।

    টারজান এরপর সোজা গাছে গাছে মবঙ্গাদের গায়ের কাছে চলে গেল। তখন সন্ধ্যে হয়ে গেছে। দেখল শিকারীরা বনপথের উপর পশু শিকারের জন্য একটা বড় খাঁচা পেতে রেখে সব গাঁয়ে ফিরে এসেছে।

    রাতটা মবঙ্গাদের গায়ের কাছে একটা গাছে কাটিয়ে সকাল হতেই সেখান থেকে ফিরে আসতে লাগল টারজান। ফেরার পথে দূর থেকে বাঁদর-গোরিলার ক্রুদ্ধ গর্জন শুনতে পেল সে।

    এদিকে সকাল হতেই মবঙ্গাদের গায়ের যেসব শিকারী খাঁচাটা পেতে রেখে গিয়েছিল তারা তাতে কোন জন্তু ধরা পড়েছে কি না তা দেখতে এল। এসে তারা দেখল একটা বিরাটকায় বাঁদর-গোরিলা ধরা পড়েছে তাতে। তাদের দেখে গোরিলাটা ছটফট করছে বার হবার জন্য। তা দেখে বেশ মজা পেল তারা। টারজান সেখানে এসে গাছের উপর থেকে সবকিছু দেখে তার দলের কাছে ফিরে এল।

    টিকা বলল, টগ কোথায়?

    টারজান বলল, তাকে গোমাঙ্গানীরা ধরেছে। তারা তাকে বধ করবে।

    একথা শুনে এক অব্যক্ত বিষাদ ফুটে উঠল টিকার চোখে মুখে।

    তা দেখে আর বসে থাকতে পারল না টারজান। লাফ দিয়ে গাছের উপর উঠে পড়ে মুহূর্তের মধ্যে অদৃশ্য হয়ে গেল কোথায়।

    সোজা মবঙ্গাদের গায়ের দিকে চলে গেল টারজান। গায়ের কাছাকাছি গিয়ে দেখল শিকারী যোদ্ধারা ক্লান্ত হয়ে সবাই ঘুমোচ্ছে। শুধু একজন পাহারাদার খাঁচাটার কাছে বসে পাহারা দিচ্ছে।

    টারজান তখন গাছ থেকে নেমে খাঁচাটার কাছে চলে গেল। তারপর পাহারাদারটার গলাটা দু’হাত দিয়ে টিপে ধরল। পাহারাদারটা মরে গেলে খাঁচার কাঠ খুলে টগকে মুক্ত করল টারজান। তারপর খাঁচার ভিতর পাহারাদারের মৃতদেহটা ফেলে রেখে টগকে নিয়ে গাছে উঠে পড়ল।

    টারজান এবার টগকে বলল, তুমি টিকার কাছে চলে যাও। সে তোমার। টারজান তাকে চায় না।

    টারজান গাছের উপর থেকে দেখল, একদল নিগ্রো যোদ্ধা একটা বড় রকমের গর্ত খুঁড়ছে। গর্তটা খোঁড়া শেষ হয়ে গেলে তার ফাঁকটায় কতকগুলো পাতা আর কিছু ঘাস চাপিয়ে দিল।

    যোদ্ধারা সেখান থেকে চলে যেতেই টারজান গাছ থেকে নেমে গর্তটার চারদিকে ঘুরে সেটা খুঁটিয়ে দেখতে লাগল। উপর থেকে দেখে সেটাকে গর্ত বলে চেনাই যায় না। তারপর গাছে গাছে তার দলের বাঁদর-গোরিলাদের কাছে চলে গেল।

    এইভাবে কিছুটা যাওয়ার পর টারজান তার নাকের মধ্যে এক বিরাটকায় জন্তুর গন্ধ পেল। কিছুক্ষণের মধ্যেই দেখল একটা হাতি এগিয়ে আসছে সেই দিকে। টারজান গাছের উপর একটা ডাল ভাঙ্গতে তার শব্দে হাতিটা শুড় তুলে উপর দিকে তাকাল।

    টারজান হাসতে লাগল। একটা নিচু ডালে নেমে এসে সে হাতিটাকে ‘ট্যান্টর, ট্যান্টর’ বলে ডাকতে লাগল।

    এরপর হাতিটা শুধু মুখে একটা শব্দ করল। টারজান এবার গাছের ডাল থেকে হাতিটার পিঠের উপর নেমে পড়ল। হাতিটা টারজনের অনেক দিনের চেনা। ছেলেবেলা থেকে খেলা করে আসছে তার সঙ্গে।

    টারজনের ক্ষিদে পাওয়ায় সে হাতিটার পিঠ থেকে আবার গাছের উপর উঠে পড়ল। তারপর শিকারের সন্ধানে চলে গেল।

    শিকারের সন্ধানে প্রায় এক ঘণ্টা ঘুরে বেড়াল টারজান। তারপর হঠাৎ তার একটা কথা মনে পড়ে গেল। কৃষ্ণাঙ্গ নিগ্রো যোদ্ধারা কি কারণে বনের মধ্যে পথের ধারে সেই বিরাট গর্তটা খুঁড়ে রেখেছে। সে বুঝল তার প্রিয় বন্ধু ট্যান্টরকে ফাঁদে ফেলার জন্য সে খালটা করেছে তারা। হাতিটা ঘুরতে ঘুরতে এতক্ষণে হয়ত সেই খালে এসে পড়েছে। সে জানে মূল্যবান দাঁত আর বেশি মাংসের লোভে হাতি শিকার করে নিগ্রোরা।

    গাছের ডালে ডালে তীর বেগে যেতে লাগল টারজান।

    কিছুটা এগিয়ে টারজান দেখল হাতিটা শিকারীদের তাড়া খেয়ে এই দিকেই ছুটে আসছে। টারজান তখন গাছ থেকে নেমে হাতিটার সামনে দাঁড়িয়ে হাত দেখিয়ে বলল, থাম।

    হাতিটা তাকে এবার চিনতে পেরে থামল। টারজান তখন চোরা গর্তটার উপরকার লতাপাতাগুলো তাড়াতাড়ি সরিয়ে হাতিটাকে গর্তটা দেখিয়ে দিয়ে তাকে সরে যেতে বলল। হাতিটা তখন ব্যাপারটা বুঝতে পেরে সরে গেল সেখান থেকে।

    টারজান তখন তাড়াতাড়ি সেখান থেকে সরে যেতে গিয়ে পড়ে গেল গর্তটার মধ্যে। হঠাৎ পড়ে গিয়ে মাথায় আঘাত লাগায় সে অচৈতন্য হয়ে পড়ল।

    এদিকে নিগ্রো শিকারীরা হাতিটার লোভে গর্তের মধ্যে উঁকি মেরে দেখে হাতিটাকে দেখতে পেল না। দু-তিনজন শিকারী গর্তের মধ্যে নেমে টারজানকে অচৈতন্য অবস্থায় দেখে বিস্ময়ে অবাক হয়ে গেল। তারা টারজানকে সেখান থেকে তুলে নিয়ে এসে তার হাত পা বেঁধে ফেলল। তারপর তাকে ওরা গাঁয়ের। দিকে নিয়ে যেতে লাগল।

    মবঙ্গার নির্দেশে কয়েকজন যোদ্ধা টারজানকে একটা কুঁড়ে ঘরের দিকে নিয়ে গেল। টারজনের দূরে জঙ্গল থেকে একটা শব্দ কানে এল। টারজান সে শব্দ শুনতে পেয়ে মুখ তুলে জোরে অদ্ভুতভাবে একটা চীৎকার করল। টারজান বুঝতে পারল তার প্রিয় হাতিটা তাকে ডাকছে।

    একটা কুঁড়ে ঘরের মধ্যে টারজানকে বন্দী করে রাখল ওরা।

    সারাটা বিকেল ধরে টারজান তার হাত পায়ের বাঁধনগুলো খোলার চেষ্টা করতে লাগল। বাঁধনগুলো ক্রমে আলগা হয়ে এল। সন্ধ্যে হতেই একজন যোদ্ধা এসে টারজানকে তুলে ওদের উৎসবের মাঝখানে নিয়ে গেল। কিন্তু টারজনের হাত পায়ের বাঁধনগুলো তখন খুলে যাওয়ায় টারজান একটা লাফ দিয়ে। যোদ্ধাদের সঙ্গে লড়াই করতে লাগল খালি হাতে। সে ঘুষি মেরে অনেক যোদ্ধাকে ঘায়েল করল। একজন যোদ্ধা একটা বর্শা উঁচিয়ে টারজনের বুকটা লক্ষ্য করে এগিয়ে যেতে থাকলে গাঁয়ের প্রান্তে বনের ধারে ডালপালা ভাঙ্গার শব্দ হলো। টারজান বুঝত পারল তার প্রিয় ট্যান্টর এতক্ষণে মুক্ত করতে আসছে তাকে।

    হাতিটা তীরবেগে এসে টারজনের চারপাশে ঘিরে থাকা যোদ্ধাদের একে একে গুঁড় দিয়ে জড়িয়ে। ধরে দূরে ফেলে দিতে লাগল। দুই-একজন হাতিটার পায়ের তলায় পড়ে মরল। অনেকে প্রাণভয়ে ছুটে পালাল। অবশেষে টারজানকে খুঁড় দিয়ে তার পিঠের উপর চাপিয়ে হাতিটা গাঁয়ের গেট পার হয়ে জঙ্গলের মধ্যে পালিয়ে গেল।

    কিছুদিন পর টারজান যখন ঘাস দিয়ে একটা দড়ি তৈরি করছিল, টিকার ছেলে গজন তখন তাকে প্রায়ই বিরক্ত করছিল।

    নতুন দড়িটা তৈরি হয়ে গেলে টারজান সেটা নিয়ে একা শিকারে বেরিয়ে যেতেই সেদিন কিন্তু অদ্ভুত এক খেয়াল চাপল তার মাথায়। সে মনে মনে ঠিক করল এবার থেকে সে এক মানব সন্তানকে কাছে রেখে তাকে পালন করবে, তাতে সে কৃষ্ণকায় হলেও চলবে। টিকার ছেরে তার মত মানুষ নয়, এক জন্তু। সে তার মনের কথা ঠিক বুঝতে পারে না। তাই এক কৃষ্ণাঙ্গ শিশুর খোঁজে মবঙ্গাদের গাঁয়ের পথে রওনা হলো সে।

    মবঙ্গাদের গাঁয়ের কাছে নদীর ঘাটে এক নিগ্রো যুবতী মাছ ধরছিল। তার বয়স তিরিশ। নদীর পারে তার বছর দশেকের একটা ছেলে দাঁড়িয়েছিল।

    গাছ থেকে নেমে পাশের একটা ঝোপ থেকে লক্ষ্য করল টারজান, ছেলেটা কালো হলেও দেখতে ভাল। টারজান তার দড়ির ফাসটা ছেলেটার গায়ের উপর ছুঁড়ে দিল। তারপর দড়িটা ধরে টান দিতেই ফাসটা ছেলেটার দুটো হাত সমেত গাটাতে আটকে গেল। এবার সে ছেলেটাকে টানতে টানতে গাছের দিকে নিয়ে যেতে লাগল। ছেলেটার জোর চীৎকারে তার মা মাছ ধরা ফেলে ছুটে এল।

    কিন্তু ততক্ষণে ছেলেটাকে কাঁধের উপর তুলে নিয়ে মুহূর্ত মধ্যে গাছের মধ্য দিয়ে অদৃশ্য হয়ে গেল টারজান।

    ছেলেটাকে নিয়ে অনেকটা দূরে গিয়ে টারজান তাকে বলল, শোন, কেঁদো না। আমার নাম টারজান। আমি তোমার ক্ষতি করব না। আমি একজন বড় শিকারী।

    কিন্তু টারজনের কোন কথা বুঝতে পারল না ছেলেটা। সে টারজানকে বনদেবতা মনে করে ভয় করছিল।

    টারজান কিন্তু ছেলেটাকে সোজা তার দলের বাঁদর-গোরিলাদের কাছে নিয়ে গেল। তারা নিগ্রো আদিবাসীদের শত্রু ভাবত বলে নিগ্রো ছেলেটাকে ‘গোমাঙ্গানী বলে দাঁত বার করে তেড়ে এল। তখন টারজান তাদের সাবধান করে দিয়ে বলল, এ হচ্ছে টারজনের ছেলে। এর কোন ক্ষতি করো না তোমরা। তাহলে তোমাদের মেরে ফেলব। এ টিকার ছেলে গজনের সঙ্গে খেলা করবে। এর নাম টিবো।

    টারজান টিকার ছেলে গজনকে এনে টিবোর সঙ্গে খেলা করতে দিল। কিন্তু টিবো কিছুতেই সহজ হতে পারছিল না।

    এদিকে টিবোর মা মোমায়া তার ছেলেকে টারজান নিয়ে যাওয়ার পর সে তাদের গায়ের যাদুকর পুরোহিতকে ডেকে তার ছেলেকে ফিরিয়ে আনার জন্য তুকতাক করতে বলে। তাকে তার জন্য দুটো ছাগল দেয়। কিন্তু কোন কাজ না হওয়ায় তার থেকে বড় যাদুকর বুকাবাইয়ের কাছে যাবার কথা ভাবে। কিন্তু গাঁয়ের সর্দার মবঙ্গা মোমায়াকে বুকাবাই-এর কাছে যেতে নিষেধ করল। বুকাবাই সেখান থেকে অনেক দূরে একটা পাহাড়ের গায়ে একটা গুহার মধ্যে থাকে। তার কাছে সব সময় দুটো হায়েনা থাকে। তাছাড়া সেখানে যেতে গেলে পথে বিপদ ঘটতে পারে।

    কিন্তু মোমায়া একদিন সন্ধ্যের সময় সকলের দৃষ্টি এড়িয়ে বুকাবাইয়ের গুহার সামনে এসে হাজির হলো। গুহার ভিতর থেকে হায়েনাদের অট্টহাসির শব্দ আসতে থাকায় ভিতরে ঢুকতে সাহস পাচ্ছিল না। সে। অবশেষে বুকাবাইয়ের নাম ধরে বারকতক ডাকতে বুকাবাই বেরিয়ে এল গুহা থেকে। বয়সে বৃদ্ধ হলেও বুকাবাইয়ের দেহে শক্তি ছিল প্রচণ্ড।

    মোমায়া বলল, বনদেবতা আমার ছেলেকে জোর করে ধরে নিয়ে গেছে।

    বুকাবাই বলল, এর জন্য পাঁচটা ছাগল, একটা শোবার মাদুর আর একটা তামার তার দিতে হবে আগে।

    মোমায়া বলল, এত কোথায় পাব আমি?

    শেষে ঠিক হলো তিনটে ছাগল আর একটা মাদুর দেবে মোমায়া। বুকাবাই বলল, আজ রাতেই ছাগল আর মাদুর নিয়ে আসবে।

    মোমায়া বলল, তুমি আগে আমার টিবোকে এনে দাও।

    কিন্তু তাতে কিছুতেই রাজী হলো না বুকাবাই। হতাশ হয়ে গুহা থেকে বেরিয়ে গায়ের পথে রওনা হলো মোমায়া।

    এদিকে তখন বুকাবাই যেখানে থাকত সেই পাহাড়টার কাছাকাছি জঙ্গলের এক জায়গায় টারজান ঘুরতে ঘুরতে শিকার করতে এসেছিল। এক সময় সে টিবোকে একটা ঝোপের ধারে রেখে কিছুটা দূরে চলে যায়। এমন সময় হঠাৎ ঝোপের ওধারে কার পায়ের শব্দ পেয়ে ভয় পেয়ে গেল টিবো। কাছে এসে মোমায়া তার ছেলেকে চিনতে পেরে ছুটে গিয়ে তাকে জড়িয়ে ধরল।

    এতক্ষণ একটা সিংহ ওদিকে একটা ঝোপের পাশ থেকে লক্ষ্য করছিল তাদের। এবার সিংহটা তাদের সামনে কিছুদূর এসে থমকে দাঁড়াতেই মোমায়া তার হাতের বর্শাটা সজোরে সিংহটাকে লক্ষ্য করে ছুঁড়ে দিল। বর্শাটা সিংহের গায়ের কিছুটা বিদ্ধ করে পড়ে গেল। তার গায়ের খানিকটা মাংস ছিঁড়ে গিয়ে রক্ত পড়তে লাগল। সিংহটা তাদের আক্রমণ করার জন্য সামনের পা তুলে উদ্যত হলো।

    টিবোদের আর্ত চীৎকার কানে যেতে ছুটে এল টারজান। এসেই সে পিছন থেকে তার ছুরিটা সিংহটার পাঁজরে বসিয়ে দিল। এবার টারজনের ছুরির আঘাতে সিংহটা লুটিয়ে পড়তেই টারজনের ভয়ে ভীত হয়ে উঠল মোমায়া। সে টিবোকে বুকের উপর জড়িয়ে ধরল। ভাবতে লাগল টারজান হয়ত আবার তার ছেলেকে ছিনিয়ে নেবে তার কাছ থেকে। কিন্তু টারজান সে ধরনের কোন ভাব দেখাল না।

    টিবো অনুনয় বিনয় করে বলতে লাগল, টারজান, তুমি আমাকে আমার মার সঙ্গে যেতে দাও। তোমার কথা আমরা কোনদিন ভুলব না। তুমি খুব ভাল লোক।

    টারজান বলল, যাও। তবে আমি তোমাদের দুজনকে তোমাদের গাঁ পর্যন্ত পৌঁছে দিয়ে আসব, কারণ পথে কোন বিপদ ঘটতে পারে।

    টারজনের কথাটা শুনে খুশি হলো মোমায়া। ওরা তিনজনে তখনি রওনা হয়ে পড়ল ওদের গায়ের পথে। এদিকে বুকাবাই তার গুহা থেকে বেরিয়ে মোমায়া কোন্ পথে যায় তা লক্ষ্য করতে গিয়ে দেখল বনদেবতা টারজান মোমায়ার ছেলেটাকে ফিরিয়ে দিয়েছে এবং তারা বাড়ি চলে যাচ্ছে। তবু সে মনে মনে প্রতিজ্ঞা করল, মোমায়াকে যে ছাগল আর মাদুরের কথা বলেছে তা সে আদায় করে ছাড়বেই।

    প্রায় দু’দিন পর মবঙ্গাদের গায়ে গিয়ে পৌঁছল ওরা। মোমায়া আর তার ছেলেকে গায়ে পৌঁছে দিয়ে সেখান থেকে চলে এল টারজান।

    কিন্তু বাঁদর-গোরিলাদলের মাঝে ফিরে গেল না। প্রায় তিন দিন তার নিঃসঙ্গ জীবনটা খুব একঘেঁয়ে লাগায় সে বিকালের দিকে মবঙ্গাদের গাঁয়ের পথে রওনা হলো। সে ঠিক করল সন্ধ্যের দিকে একটা কি দুটো নিগ্রো যোদ্ধাকে গলায় ফাঁস লাগিয়ে মারবে।

    গাঁয়ের প্রান্তে বনের ধারে একটা গাছের উপর বসে লক্ষ্য করতে লাগল। সহসা এক নারীকণ্ঠের কান্না শুনে চমকে উঠল টারজান। সে ভাল করে দেখল একটা গাঁয়ের ভিতর একটা কুঁড়েঘর থেকে কাঁদতে কাঁদতে বেরিয়ে আসছে মোমায়া।

    টারজান এই কান্না দেখে ব্যাপারটা জানার জন্য নির্ভীকভাবে গায়ের মধ্যে সেই কুঁড়েগুলোর সামনে গিয়ে দাঁড়াল। তাকে দেখে মোমায়া চিনতে পারল। কাঁদতে কাঁদতে সে বলল, কে তার ছেলে টিবোকে আবার চুরি করে নিয়ে গেছে। তুমি মানুষ নও, দেবতা, একমাত্র তুমিই তাকে খুঁজে আনতে পারবে।

    মোমায়ার ভাষা বুঝতে না পারলেও তার বক্তব্যটা মোটামুটি বুঝতে পারল টারজান। সে সেখানে আর না দাঁড়িয়ে গা থেকে বেরিয়ে বনে চলে গেল। টিবোকে সে সত্যিই ভালবাসত। তাকে সে তার মার কাছে এনে দেবেই।

    গাছে গাছে কিছু দুর যাবার পর টারজান দেখল পাহাড়ের দিকে যে মাটির পথটা চলে গেছে সে পথে একটা ছেলে আর একটা বয়স্ক লোকের পায়ের ছাপ রয়েছে।

    সেই ছাপ অনুসরণ করে সোজা বুকাবাই-এর গুহার সামনে যেতেই দুটো হায়েনা তাকে তেড়ে এল। টারজান গন্ধ শুঁকে বুঝল এই গুহার মধ্যেই টিবো আছে। টিবোকে দুটো হায়েনার পাহারায় রেখে বুকাবাই তার ছাগল আদায় করার জন্য মবঙ্গাদের গায়ে মোমায়ার কাছে গিয়েছিল।

    বুকাবাই-এর আগে আর একদিন ঐ গায়ে গিয়ে মোমায়াকে বলে, আমার তুকতাকের জোরেই তুমি তোমার ছেলেকে ফিরে পেয়েছ। আমার জন্যই বনদেবতা ফিরিয়ে দিয়েছে তোমার ছেলেকে। অতএব আমাকে পাঁচটা ছাগল দিয়ে দাও। আর একটা শোবার মাদুর আর তামার তার।

    মোমায়া বলে, তুমি ত আমার জন্য কিছুই করোনি। তুমি ত বললে ছাগল না দিলে কিছুই করবে না।

    বুকাবাই তবু শুনল না। কিন্তু মোমায়া কিছু দিতে না চাইলে সে রেগে চলে আসে। পরদিন সে গাঁয়ের বাইরে লুকিয়ে গিয়ে টিবোকে একলা পেয়ে জোর করে তুলে এনে তার গুহায় বন্দী করে রাখে।

    তারপর আবার পরদিন টিবোকে গুহার ভিতর হায়েনা দুটোর পাহারায় রেখে মবঙ্গাদের গায়ে চলে আসে বুকাবাই। সে মোমায়াকে বলে, আমি তোমার ছেলে যাতে ফিরে আসে তার ব্যবস্থা করব। আমাকে ছাগলগুলো দিয়ে দাও।

    মোমায়া বলে, তুমিই আমার ছেলেকে চুরি করে নিয়ে গেছ।

    বুকাবাই বলে, তোমার ছেলেকে আমি চুরি করে নিয়ে যাইনি। আমি জানি সে এক জায়গায় ভালই আছে। তবে দেরি হলে তার বিপদ ঘটতে পারে।

    মোমায়া তখন তার ঘরে তার স্বামীকে ডাকতে গেল। সেখানে মবঙ্গা আর গাঁয়ের যাদুকর পুরোহিত রাব্বা কেগাও ছিল।

    মবঙ্গা, মোমায়ার স্বামী ইবেতো আর যাদুকর কেগা ঘর থেকে বেরিয়ে এসে বুকাবাইকে বলল, তুমি যাদুর কি জান? কি ওষুধ তৈরি করবে? কোন যাদু এখনি দেখাতে পারবে?

    বুকাবাই বলল, হ্যাঁ পারব। আমাকে কিছুটা আগুন এনে দাও।

    মোমায়া একটা পাত্রে করে বেশ কিছুটা আগুন আনল। বুকাবাই সেই আগুন থেকে কিছুটা নিয়ে মাটিতে ফেলে তার কোমরে বাঁধা একটা থলে থেকে কিছু পাউডার জাতীয় একটা বস্তু আগুনটায় ছড়িয়ে দিল। তার থেকে প্রচুর ধোয়া বার হতে লাগল। তখন বুকাবাই চোখ বন্ধ করে কি বিড় বিড় করে বকতে বকতে মূৰ্ছিত হয়ে পড়ার ভান করল। মবঙ্গা ও উপস্থিত সকলে তা দেখে অবাক বিস্ময়ে মুগ্ধ হয়ে গেল।

    রাব্বা কেগা তা দেখে ঘাবড়ে গেল। সে তখন তার নিজের কৃতিত্ব দেখানোর জন্য ব্যস্ত হয়ে উঠল। যে পাত্রটাতে আগুন ছিল তার উপর গোটাকতক শুকনো পাতা ফেলে দিল সে। তার থেকে ধোঁয়া বার হতে লাগল। কেগা তখন চোখ বন্ধ করে মুখটা পাত্রের উপর নামিয়ে অপদেবতাদের সঙ্গে কথা বলতে লাগল।

    বুকাবাই এবার তার ভান করা মূৰ্ছা ভেঙ্গে উঠে একবার গর্জন করে উঠল। তারপর সে হাত দুটো শক্ত করে টান করে ছড়িয়ে বসে বলল, আমি তাকে দেখতে পাচ্ছি। তবে শয়তান বনদেবতা তাকে ধরতে পারেনি। আমাকে দশটা ছাগল দিলে এখনো উদ্ধার করা যাবে তাকে।

    এবার কেগা বলল, আমিও তাকে দেখতে পাচ্ছি। তবে সে এখন মৃত। সে এখন নদীর তলায় পড়ে রয়েছে।

    এদিকে টারজান বুকাবাই-এর গুহার মধ্যে ঢুকে দেখল টিবো কাঁদছে আর তার দুদিকে দুটো ক্ষুধিত হায়েনা তাকে ছিঁড়ে খাবার জন্য উদ্যত হয়েছে। টারজান ঢুকতেই হায়েনা দুটো টিবোকে ছেড়ে টারজানকে তেড়ে এল। টারজান একে একে হায়েনা দুটোর ঘাড় ধরে ছুঁড়ে দিতে লাগল। হায়েনা দুটো তখন ছুটে পালাল। টারজান তখন টিবোকে কাঁধে তুলে নিয়ে গুহা থেকে বেরিয়ে বনে চলে গেল। তারপর গাছে। গাছে তাদের গাঁয়ের দিকে উধ্বশ্বাসে এগিয়ে চলল।

    মবঙ্গাদের গাঁয়ে যখন দু’জন যাদুকর তাদের আপন আপন যাদুর খেলা দেখিয়ে গ্রামবাসীদের মন জয় করার চেষ্টা করছিল ঠিক তখনি টারজান টিবোকে নিয়ে তাদের সামনে গিয়ে হাজির হলো। টিবোর। কাছে তার মা মোমায়া ছুটে যেতেই টিবো তাকে সব কথা বলল। এবার মোমায়া বুকাবাই-এর শয়তানির কথা জানতে পেরে তাকে ধরবার জন্য ছুটে গেল। কিন্তু তার আগেই বুকাবাই সরে পড়েছে। মোমায়া তখন কেগাকে রেগে বলল, আমার ছেলে নদীর তলায় মরে আছে? এই তোমাদের যাদু? ভণ্ড কোথাকার!

    টারজান মবঙ্গাদের শত্রু হলেও টারজনের প্রতি কোন শত্রুতার ভাব দেখাল না মবঙ্গা। বরং তার উদারতা দেখে তারা সবাই খুশি হলো। কিন্তু টারজান টিবোকে তার মার হাতে তুলে দিয়েই সেখানে আর দাঁড়িয়ে চলে গেল।

    বুকাবাই দেখল এখন তার একমাত্র শত্রু হলো শয়তান বনদেবতা টারজান। তার জন্যই আজ তার এই অপমান। তার জন্যই সে কোন ছাগল পেল না। মনে মনে প্রতিজ্ঞা করল সে টারজনের উপর প্রতিশোধ নেবেই।

    সেদিন ঘুরতে ঘুরতে টারজান যখন আনমনে বুকাবাই-এর গুহার কাছে এসে পড়ল তখন সমস্ত আকাশটা মেঘে ঢেকে গিয়েছিল। একটু পরেই বৃষ্টি নামল।

    টারজান একটা গাছের তলায় আশ্রয় নিল। পরে ঝড় শুরু হলে আর বেশিক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতে পারল না টারজান। প্রচণ্ড ঝড়ের আঘাতে বিরাট একটা গাছ পড়ে গেল আর সঙ্গে সঙ্গে টারজানও ডাল পালাগুলোর তলায় চাপা পড়ে গেল। তার আঘাত তেমন গুরুতর না হলেও জ্ঞান হারিয়ে ফেলল সে।

    ঝড় বৃষ্টি থামলে বুকাবাই তার হায়েনা দুটো নিয়ে বেরিয়ে পড়ল। কিছুটা এগিয়ে যেতেই একটা ভেঙ্গে পড়া গাছের তলায় একটা লোককে মরার মত পড়ে থাকতে দেখে হায়েনা দুটো তাকে ছিঁড়ে খাবার জন্য ছুটে গেল। বুকাবাই তার হাতে হাড়ের যে একটা লাঠি ছিল তা দিয়ে হায়েনাগুলোকে মেরে তাড়িয়ে দিয়ে এগিয়ে গিয়ে দেখল যার উপর প্রতিশোধ নেবার কথা আজ সে দিনরাত ভাবছে এ সেই শয়তান বনদেবতা। সে টারজনের বুকের উপর কান পেতে দেখল এখনো জীবিত আছে টারজান। সে ভাঙ্গা গাছের ডালপালাগুলো সরিয়ে অচৈতন্য টারজানকে তুলে নিয়ে তার গুহার বাইরে নিয়ে গিয়ে নামিয়ে দিল।

    এরপর একটা পাহাড়ের ধারে একটা গাছের গুঁড়ির সঙ্গে মোটা দড়ি দিয়ে তাকে বেঁধে রাখল বুকাবাই। কিন্তু তার হাত দুটো বাধল না।

    এবার গুহার ভিতরে গিয়ে এক পাত্র জল নিয়ে এসে টারজনের চোখে মুখে ছিটিয়ে দিতেই চেতনা ফিরে পেয়ে চোখ মেলে তাকাল টারজান। বুকাবাই ঠিক করল সে হায়েনা দুটোকে এনে ছেড়ে দেবে টারজনের কাছে। তারা জীবন্তা টারজনের মাংস ছিঁড়ে খাবে। এইভাবে সে প্রতিশোধ নেবে টারজনের উপর।

    বুকাবাই টারজানকে বলল, আমি হচ্ছি এক বিরাট যাদুকর বৈদ্য। আমার ওষুধ খুবই জোরাল। তোমার ওষুধের কোন জোর নেই। তোমার ওষুধের যে কোন জোর নেই তার প্রমাণ হলো এই যে তুমি এখন এখানে বলির ছাগলের মত বাঁধা আছ।

    কিন্তু তার ভাষা টারজান বুঝতে না পারায় সে গুহায় চলে গেল হায়েনাগুলো আনার জন্য।

    এবার বুকাবাই তার গুহার ভিতরে গিয়ে হায়েনা দুটোকে তাড়িয়ে নিয়ে এল টারজনের কাছে। তারপর সে গিয়ে গুহার মুখে পাতা মাদুরের উপর শুয়ে ঘুমিয়ে পড়ল। ভাবল হায়েনাগুলোর খুব ক্ষিদে না পেলে তারা টারজনের মাংস ছিঁড়ে খাবে না। এই অবসরে সে তাই কিছুটা ঘুমিয়ে নেবে।

    হায়েনা দুটো টারজনের কাছে এসে তার পা দুটো শুঁকতে লাগল। টারজান তার ছাড়া হাত দিয়ে হায়েনা দুটোকে সরিয়ে দিল। টারজান এদিকে গাছের গুঁড়ির গায়ে বাধনের দড়িগুলো ঘষতে ঘষতে সেগুলো আলগা করে ফেলল।

    অবশেষে বিকালের দিকে হায়েনাগুলো ক্ষুধিত হয়ে উঠল। একটা হায়েনা টারজনের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ল। টারজান তার দেহের সমস্ত শক্তি দিয়ে টান দিতেই আলগা বাধনগুলো ছিঁড়ে গেল। সে তখন একটা হাত দিয়েই একটা হায়েনার গলা টিপে ধরল। আর একটা হাত বাড়িয়ে অন্য হায়েনাটাকে ধরতে গেল, এমন সময় বুকাবাই জোর চীৎকার শুনে ঘুম থেকে উঠে এল। টারজান তখন দুটো হায়েনাকে দু’হাতে ধরে একে একে বুকাবাই- এর মাথার উপর ছুঁড়ে দিল। একটা হায়েনা বুকাবাই-এর মুখটা কামড়ে দিল। আর একটা হায়েনা লাফ দিয়ে মাটিতে পড়ে পালিয়ে গেল।

    হায়েনার কামড় খেয়ে মাটিতে পড়ে গেল বুকাবাই। এবার উঠে টারজনের দিকে এগিয়ে গেল তাকে আক্রমণ করার জন্য। কিন্তু টারজান এক ধাক্কায় ফেলে দিল তাকে। তারপর তাকে তুলে নিয়ে যে গাছটায় তাকে বেঁধে রেখেছিল সেই গাছের সঙ্গে খুব শক্ত করে বেঁধে রাখল।

    টারজান আপন মনে বলল, এক সময় না এক সময় হায়েনাগুলো ফিরে আসবে।

    সে জানত, হায়েনাগুলো ক্ষিদের জ্বালা অনুভব করলেই বুকাবাইকে এইভাবে বাঁধা অবস্থায় দেখলেই তাকে জীবন্ত ছিঁড়ে খাবে। সত্যিই ফিরে এসেছিল তারা। এক সময় ক্ষুধার জ্বালায় তারা তাদের প্রভুর জীবন্ত বুকাবাই-এর দেহটা ছিঁড়ে খুড়ে খেতে লাগল।

    আজ প্রায় এক পক্ষকাল হলো টারজান মোটেই শিকার পাচ্ছে না। দিনকতক হলো সে এক রকম না খেয়ে আছে। সে তাই খাবার পাবার আশায় মবঙ্গাদের গায়ের কাছে গিয়ে দেখল মবঙ্গাদের গায়ের মধ্যে খাওয়া-দাওয়ার এক জোর উৎসব চলছে। একটা বিরাট হাতির মাংস তারা সব লোক মিলে আগুনে। ঝলসিয়ে খাচ্ছে। তাই দেখে ক্ষিদের জ্বালায় সেই মাংস খাবার খুব ইচ্ছে হচ্ছিল টারজনের। টারজান দেখল যে বিরাট পাত্রটাতে হাতির মাংস সিদ্ধ করা ছিল তার চারদিকে গাঁয়ের যোদ্ধারা ভিড় করে ছিল। তারা। সেই পাত্রটা থেকে মাংস নিয়ে খাচ্ছিল আর মাঝে মাঝে এক চুমুক করে তাদের দেশী মদ পান করছিল।

    ক্ষিদের জ্বালায় জর্জরিত হয়ে গাছের উপর নীরবে বসে রইল টারজান। সে দেখল একে একে যোদ্ধারা সব মাংস আর মদ প্রচুর খাওয়ার পর ঘুমে কাতর হয়ে চলে যাচ্ছে। সবাই চলে গেলে একটা বুড়ো তখনো সেখানে মাংসের পাত্রটার পাশে বসে মাংস খাচ্ছিল। টারজান তাই আর অপেক্ষা না করে গাছ থেকে নেমে সোজা সেখানে চলে গেল। বুড়োটার গলাটা দুহাত দিয়ে টিপে ধরে তাকে হত্যা করে। পাত্রটা থেকে বেশকিছু মাংস নিয়ে বনের মধ্যে চলে এল সে।

    বনের মধ্যে যেতে যেতে গাঁ থেকে মাইলখানেক দূরে এক জায়গায় থেমে কিছুটা মাংস খেল সে। এবার একটা গাছের উপর ঘুমোবার চেষ্টা করতে লাগল টারজান। ঘুম ভাঙ্গলে দেখল অনেক আগেই সকাল হয়ে গেছে, রোদ উঠেছে। গাছের তলায় একটা সিংহ দাঁড়িয়েছিল।

    সিংহটা টারজনের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকার পর গাছে উঠতে লাগল।

    টারজান ক্রমশই যত উঁচু ডালে উঠতে থাকে সিংহটাও তাকে ধরার জন্য তত উপরে উঠতে থাকে। অবশেষে গাছের মাথায় শেষ ডালটায় উঠে টারজান ভাবল, এবার তার মৃত্যু সুনিশ্চিত। কারণ আর কোন দিকে এগোন সম্ভব নয়।

    এমন সময় অদ্ভুত একটা কাণ্ড ঘটল। একটা বিরাটকায় পাখি কোথা থেকে উড়তে উড়তে এসে গাছটার মাথায় না বসেই টারজনের কাছে এসে ঠোঁট দিয়ে ঘাড়ে একটু ঠুকরে দিল আর টারজান সঙ্গে সঙ্গে সিংহের কবল থেকে বাঁচার জন্য পাখিটার পা দুটো দু’হাত দিয়ে ধরল শক্ত করে। পাখিটা টারজানকে নিয়েই উড়তে লাগল। এত বড় পাখি বইয়ে দেখলেও জীবনে কখনো চোখে দেখেনি সে।

    এইভাবে পাখিটা অনেকদূর উড়ে যাবার পর টারজান একটা গাছের মাথা লক্ষ্য করে পাখিটার পা দুটো ছেড়ে দিয়ে সেই গাছটার উপর পড়ল।

    টারজান দেখল আজ কয়েকদিন ধরে তার শরীরটা ভাল নেই। তাই বিশ্রামের আশায় সমুদ্রোপকূলে তার সেই কেবিনটায় চলে গেল। তারপর আপন মনে বই পড়তে লাগল।

    সহসা তার মনে হলো কে যেন ঘরে ঢুকল। টারজান দেখল একটা বিরাট বাঁদর-গোরিলা ঘরে ঢুকে এগিয়ে আসছে তার দিকে। টারজান তার ছুরিটা শক্ত করে ধরে তৈরি হতে না হতেই গোরিলাটা তাকে জোর করে ধরে নিয়ে বেরিয়ে গেল ঘর থেকে। কেবিন থেকে কিছুটা দূরে যেতেই নিজেকে ছিনিয়ে নিয়ে টারজান তার ছুরিটা অতর্কিতে গোরিলার পেট ও বুকের উপর বসিয়ে দিল। তখন টলতে টলতে ধড়াস করে পড়ে গেল গোরিলাটা।

    এরপর আবার কেবিনে ফিরে এল।

    সেদিন তাদের দল থেকে একটু দূরে জঙ্গলের এক জায়গায় টিকা একা একা আহার সংগ্রহের কাজে ব্যস্ত ছিল। তার ছেলে গজন তার কাছে খেলা করছিল। এমন সময় টুগ নামে অন্য এক দলের বাঁদর গোরিলা এসে হাজির হলো সেখানে।

    টিকা তাকে দেখেই দাঁত বার করে তেড়ে এল। টিকা গজনকে সাবধান করে দিয়ে বলল, তুমি গাছে উঠে পড়।

    টুগ টিকাকে ধরতে গেলে গজন গাছের উপর থেকে গালাগালি দিতে লাগল। টুগ তখন টিকাকে ছেড়ে দিয়ে গাছের উপর উঠে গজনকে ধরতে গেল। গজন উপর ডালে উঠে গেলে টুগ সেই ডালটা ধরে জোর নাড়া দিতে লাগল। তখন গজন গাছ থেকে মাটিতে টিকার পায়ের কাছে পড়ে গেল। সে জোর আঘাত পেয়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেলল। টুগ এবার টিকাকে জোর করে ধরে কাঁধের উপর তুলে নিয়ে পালিয়ে গেল।

    এদিকে টপ ঘুরতে ঘুরতে একটা গাছের উপর থেকে দেখতে পেল একটা হায়েনা একটা ঘুমন্ত ছেলের বুকের উপর মুখ লাগিয়ে শুঁকছে। সে এবার তার ছেলে গজনকে চিনতে পারল। সঙ্গে সঙ্গে গাছ থেকে লাফ দিয়ে মেনে ছুটে সেখানে চলে গেল। হায়েনাটাকে ধরে তার গলাটা টিপে তাকে বধ করে ছুঁড়ে ফেলে দিল তার প্রাণহীন দেহটাকে। তারপর চীৎকার করে তার দলের লোকদের ডাকতে লাগল।

    তাদের চীৎকার শুনতে পেয়ে কেবিন থেকে ছুটে এল টারজান। টারজান গজনের দেহটা পরীক্ষা করে দেখল তার দেহে তখনো প্রাণ আছে। সে বলল, এ কাজ কে করেছে? টিকা কোথায়?

    টগ বলল, আমি তার কিছুই জানি না।

    টারজান মাটিটা পরীক্ষা করে গন্ধ শুঁকে বলল, অন্য দলের একটা বাঁদর-গোরিলা এই কাজ করেছে।

    বাঁদর-গোরিলারা শত্রুর উপর প্রতিশোধ নেবার জন্য টিকার খোঁজে যেতে চাইল। কিন্তু টারজান বলল, আমি টগকে নিয়ে যাব। একটা মাত্র বাঁদর- গোরিলা এসে টিকাকে নিয়ে গেছে।

    এই বলে টারজান টগকে সঙ্গে করে ঝড়ের বেগে চলে গেল। বাতাসে টুগ আর টিকার গন্ধ পাচ্ছিল সে। তাই ঠিক পথ ধরে এগোতে লাগল সে।

    টুগ টিকাকে কাঁধে করে তার দলের কাছে যাচ্ছিল। পথে সে টিকাকে বশ করার অনেক চেষ্টা করে। কিন্তু টিকা প্রতিবারই তাকে কামড়াতে থাকে। টুগও তাকে আঘাত করে। এইভাবে যেতে যেতে পথে টুগ তার দলের দু’জন বাঁদর-গোরিলার সঙ্গে দেখা পেয়ে যায়।

    এমন সময় একটা ছোটা বাঁদর টারজানদের সেই দিকে এগিয়ে আসতে দেখে টুগদের সাবধান করে দেয়। টুগরা তখন একটা ঝোপের মধ্যে লুকিয়ে পড়ে। কিন্তু টারজান বাতাসে গন্ধ শুঁকে ঠিক জায়গাতেই এসে পড়ে। টিকা চীৎকার করে তাদের উপস্থিতির কথা জানিয়ে দেয়। টুগ তখন তাকে জোর একটা ঘুষি মেরে ফেলে দেয়।

    টারজান আর টগ এবার শত্রু গোরিলাদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ল। টগ একা টুগ আর অন্য একজন। গোরিলার সঙ্গে লড়াই করতে লাগল। টারজান শুধু সবচেয়ে বড় গোরিলাটার সঙ্গে লড়াই করতে লাগল। পরে এক সময় টারজান ছুরিটা বার করে গোরিলাটার বুকে আমূল বসিয়ে দিতেই সে পড়ে গেল। টারজান তখন টগের সাহায্যে এগিয়ে গেল।

    টারজনের হাতে একটা গোরিলা মারা যায়। এবার টুগ আর অন্য গোরিলাটা টারজনের জোর ঘুষি খেয়ে রক্তাক্ত দেহে অবসন্ন হয়ে হাঁপাতে লাগল। তারা আর লড়াই করতে পারছিল না।

    এবার টুগ তাদের ভাষায় চীৎকার করে তাদের দলের গোরিলাদের ডাকতে লাগল। কিছুক্ষণের মধ্যেই প্রায় কুড়িজন গোরিলা এসে টারজান আর টগকে আক্রমণ করল। টিকা একটা গাছের উপর উঠে পড়ল। কিন্তু সে যখন দেখল টারজান আর টগ দু’জনে এতগুলো গোরিলার সঙ্গে পেরে উঠবে না তখন গাছ থেকে নেমে সে টারজনের কাছে গিয়ে দাঁড়াল।

    হঠাৎ টিকার কি মনে হলো সে টারজনের কোমর থেকে বাজীর থলেটা নিয়ে নিল। থলেটার মধ্যে ছোট ছোট কতকগুলো বিস্ফোরক বোমার মত বস্তু ছিল।

    টিকা এবার থলে থেকে সেই ছোট ছোট বোমাগুলো একটা একটা করে বার করে শত্রু গোরিলাদের লক্ষ্য করে ছুঁড়তে লাগল। জোর আওয়াজ শুনে আর ধোয়া দেখে ভয়ে পালিয়ে গেল শত্রুরা। তারা এ জিনিস কখনো দেখেনি। তাই দারুণ ভয় পেয়ে গেল।

    একদিন টারজান যখন তার কেবিনের দিকে যাচ্ছিল তখন বাতাসে একদল নিগ্রো শিকারীর গন্ধ পেল।

    টারজান গাছের উপর দেখল মবঙ্গার গাঁয়ের একদল শিকারী একটা বড় বড় চাকাওয়ালা খাঁচা টেনে টেনে নিয়ে আসছে। টারজান বুঝল সিংহ শিকারের জন্য খাঁচাটা এক জায়গায় রেখে যাবে তারা। তারপর পরদিন সকালে শিকারসমেত খাঁচাটা নিয়ে যাবে তাদের গায়ে। খাঁচার ভিতরে একটা ছাগল ছিল। ছাগলটা প্রাণভয়ে ক্রমাগত চীৎকার করছিল।

    শিকারীরা চলে গেলে টারজান গাছ থেকে নেমে খাঁচার কাছে চলে গেল। সে তার ছুরি দিয়ে ছাগলটাকে মেরে কিছুটা মাংস খেল। তারপর সে শিকারীরা যে পথে গেছে সেই পথে গাছে গাছে এগিয়ে যেতে লাগল।

    এইভাবে মাইল দুয়েক যাবার পর টারজান দেখল শিকারীর দল তাদের গায়ের কাছে চলে গেছে। শুধু যাদুকর ডাক্তার রাব্বা কেগা দল থেকে পিছিয়ে পড়েছে। সে একটা গাছের তলায় বসে পঁড়িতে হেলান দিয়ে বিশ্রাম করছিল।

    ভণ্ড কেগাকে ঘৃণা করত টারজান। টারজান দেখল তাকে হত্যা করার এই হলো সুবর্ণ সুযোগ। তারপর কেগার গলা টিপে ধরে তাকে খামার কাছে নিয়ে গিয়ে খাঁচাতে ঢুকিয়ে তাকে বেঁধে রেখে খাঁচাটা বন্ধ করে দিল। কিন্তু এর ভয়ঙ্কর পরিণতি কি হবে তা বুঝতে পারল কেগা।

    এরপর দূরে একটা গাছের উপর উঠে রাতটা কাটাল টারজান। রাত্রিতে ঘুমের ঘোরে একবার একটা সিংহের গর্জন শুনেছিল সে। সকালে উঠে খাঁচার কাছে টারজান গিয়ে দেখল খাঁচার মধ্যে সত্যিই একটা সিংহ আটকে পড়েছে। সিংহটা কেগার দেহটাকে ক্ষতবিক্ষত ও বিকৃত করে তাকে বধ করে ফেলে রেখেছে। সিংহটা ছটফট করতে করতে গর্জন করছিল মাঝে মাঝে।

    টারজান দেখল শিকারীরা এসে দূর থেকে খাঁচার মধ্যে সিংহ আটকে পড়তে দেখে আনন্দে উল্লাস করছিল। কিন্তু কাছে এসে কেগার মৃতদেহ দেখে বিমর্ষ ও নীরব হয়ে গেল। যাই হোক, খাঁচাটা তারা টেনে নিয়ে গায়ের দিকে নিয়ে যেতে লাগল।

    খাঁচাটা গায়ে গেলে কি প্রতিক্রিয়া হয় তা দেখার জন্য টারজানও তাদের পিছু পিছু গাছের ডালে ডালে যেতে লাগল। তারপর গাঁয়ের কাছে একটা গাছ থেকে দেখল, গতকাল শিকারীরা গাঁয়ে গেলে তাদের সঙ্গে কেগা না ফেরায় মবঙ্গা বিচলিত হয়ে পড়ে। তারা খোঁজাখুঁজি করতে থাকে। কিন্তু কোথাও না পেয়ে চিন্তিত হয়ে পড়ে। আজ সকালে খাঁচাটা গায়ে গেলে তার মধ্যে একটা সিংহের সঙ্গে কেগার বিকৃত মৃত দেহটা দেখে আশ্চর্য হয়ে যায়। এবার তারা উৎসবের জন্য তৈরি হতে লাগল। খাঁচাটার কাছে থেকে দু’জন যোদ্ধা পাহারা দিতে লাগল।

    টারজান তখন মনে মনে সিংহটাকে খাঁচা থেকে মুক্ত করার এক ফন্দী আঁটতে লাগল। ও জানে সন্ধ্যে হলেই ওরা সিংহটাকে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে মারবে। ও ঠিক করল সন্ধ্যে হলেই ও সিংহের চামড়াটা গায়ে পরে সিংহ সেজে ওদের সামনে গিয়ে হাজির হয়ে খাঁচাটা খুলে দেবে।

    অন্ধকার হয়ে উঠতেই টারজান সিংহের চামড়া পরে সিংহ সেজে খাঁচাটার কাছে চলে গেল। সিংহের ছদ্মবেশে টারজান সিংহের মত গর্জন করতে করতে খাঁচার কাছে চলে গেল। অন্ধকারে একটা সিংহ দেখে উৎসব ছেড়ে সবাই ছোটাছুটি করতে লাগল। খাঁচার সামনে টারজান মানুষের মত দাঁড়িয়ে খাঁচার দরজাটা খুলে দিয়েই গাছে উঠে পড়ল।

    মেয়েরা লক্ষ্য করল বনদেবতা টারজানই সিংহের বেশ ধরে এসে খাঁচা খুলে দেয়। তারা সে কথা যোদ্ধাদের বলতেই তারা টারজনের খোঁজ করতে থাকে। কিন্তু ততক্ষণে খাঁচা থেকে আসল সিংহটা বেরিয়ে গায়ের মধ্যে ছোটাছুটি করে যাকে তাকে আক্রমণ করতে লাগল। যোদ্ধারা হঠাৎ আসল সিংহের গর্জন শুনে বিভ্রান্ত হয়ে পড়ল। ভয়ে তারা ঠিকমত বর্শা চালাতে পারল না। দশ-বারোজন লোককে মেরে ফেলল সিংহটা। এদিকে টারজান তখন গা থেকে অনেক দূরে জঙ্গলের মধ্যে চলে গেছে।

    সেদিন রাত্রিতে একটা গাছের উপর শুয়ে আকাশে চাঁদের পানে তাকিয়েছিল টারজান। হঠাৎ কাদের ভয়ার্ত চীৎকার শুনে উঠে বসল টারজান। দেখল অদূরে ছয়জন নিগ্রো আগুন জ্বালিয়ে বসে আছে আর একটা সিংহ তাদের কাছে গিয়ে আক্রমণ করার জন্য উদ্যত হয়ে উঠেছে। মাত্র একজন বাদে সব নিগ্রোগুলো ভয় পেয়ে কাছাকাছি গাছের উপর উঠে পড়ল। কিন্তু তাদের মধ্যে মাত্র একজন নিগ্রো জ্বলন্ত আগুন থেকে একটা কাঠ নিয়ে সিংহটার দিকে ছুঁড়ে মারতেই সিংহটা তার সাথীকে নিয়ে পালিয়ে গেল। কিছুক্ষণ পর আবার এল সিংহটা। কিন্তু এবার নিগ্রোটা জ্বলন্ত কাঠটা এমনভাবে সিংহের মুখে ছুঁড়ে দিল যে সিংহটা আর ফিরে এল না।

    গোটা ঘটনাটা প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত দেখল টারজান। তার কাছে আর একটা ডালে টগ শুয়েছিল। টারজান টগকে জাগিয়ে বলল, ঐ যে গোররা দেখছ না, তার মাঝে কালো দাগ রয়েছে। আসলে ঐ দাগগুলো নুমা বা সিংহের চোখ। নুমা গোয়রার দিকে তাকিয়ে আছে। গোরোর চারপাশে আগুন জ্বলছে, ঐ আগুনটা নিভে গেলেই নুমা গোররাকে খাবে।

    কথাটা পরে টগ তাদের দলের সবচেয়ে বুড়ো ও বুড়ি গান্টো আর মুমগাকে বলল। তারা দু’জনেই বলল, নুমা নয়, টারজানই একদিন গোরোকে খাবে। সে আমাদের মত বাঁদর নয়, মানুষ। সে সিংহ মেরে আমাদের খাওয়াবার জন্য নিয়ে আসে। সে তেমনি সিংহকে গোরোর কাছে এনেছে। ঐ সিংহই গোররাকে খাবে। টারজানকে বধ করা উচিত। আমরা ওকে বধ করব।

    টিকা আর টগ দু’জনেই ছিল টারজনের পক্ষে। টগ বলল, টারজান আমার সবচেয়ে বড় বন্ধু। প্রথম প্রথম আমি তাকে সন্দেহ করতাম। ভাবতাম সে টিকাকে কেড়ে নিতে চায় আমার কাছ থেকে। কিন্তু পরে দেখলাম আমার সন্দেহ ভুল। টারজনের মত এমন বন্ধু আমি পাব না।

    তবু অন্য সব বাঁদর-গোরিলারা টারজানকে হত্যা করার এক ষড়যন্ত্র করতে লাগল। গান্টো এই ষড়যন্ত্রকে জোরালো করে তুলতে চাইল। টারজান কিন্তু কিছুই জানত না এই ষড়যন্ত্রের।

    সেদিন টারজান তার পশু বন্ধু ট্যান্টরের চওড়া পিঠের উপর পা ছড়িয়ে শুয়েছিল। হঠাৎ তার কি মনে হলো সে শুয়ে শুয়েই হাতিটাকে বলল, ট্যান্টর, তুমি কার্চাকের সেই বাঁদর-গোরিলাদের কাছে আমাকে নিয়ে চল।

    দলের কাছাকাছি গিয়ে একটা গোলমালের শব্দ শুনতে পেল টারজান। সে হাতির পিঠ থেকে গাছে চড়ে ডালে ডালে চলে গেল ঘটনাস্থলে। গিয়ে দেখল, একটা নিগ্রো যোদ্ধাকে ঘিরে বাঁদর-গোরিলারা উত্তেজিতভাবে আক্রমণের জন্য প্রস্তুত হচ্ছে। টারজান ভিড় ঠেলে ভিতরে যেতেই একজন গোরিলা বলল, এ গোমাঙ্গানীটা আমাদের দলের মধ্যে এসে পড়েছে।

    টারজান বুঝল সেদিন রাতে এই নিগ্রোটাই একা জ্বলন্ত কাঠ দিয়ে সিংহগুলোকে তাড়ায়। এ অত্যন্ত সাহসী। সে দলের বাদর-গোরিলাদের বলল, একে ছেড়ে দাও। এ খুব সাহসী বীর। এ আমাদের কোন ক্ষতি করেনি।

    কিন্তু গান্টো ও দলের সবাই বলল, না, গোমাঙ্গানীরা আমাদের শত্রু। ওকে ছাড়া হবে না। ওর সঙ্গে টারমাঙ্গানী টারজানকেও মারা হবে।

    এই বলে ওরা টারজানকে আক্রমণ করার জন্য উদ্যত হলো। নিগ্রো যোদ্ধাটি মবঙ্গার দলের একজন যোদ্ধা। সে বনদেবতা টারজনের নামে অনেক কিছু শুনেছিল। আজ টারজানকে এত কাছ থেকে এই প্রথম দেখল। সে দেখল টারজান যেই হোক, সত্যিই খুব ভাল। সে তার ভাষা বুঝতে না পারলেও বুঝতে পারল সে তাকে বাঁচাবার জন্য লড়াই করতে যাচ্ছে তাই সেও বর্শা হাতে টারজনের সাহায্যে এগিয়ে গেল।

    একমাত্র টগ ছাড়া সব পুরুষ বাঁদর-গোরিলাগুলো টারজানকে মারার জন্য উদ্যত হলো। টারজান, টগ আর সেই নিগ্রো যোদ্ধাটি তাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াল। টারজান জোরে একটা শব্দ করল।

    এমন সময় গোলমাল শুনে টারজনের হাতিবন্ধু গাছপালা ভেঙ্গে ছুটে এল। হাতিটা ক্ষিপ্রগতিতে আসতেই সব বাঁদর-গোরিলারা ছুটে পালিয়ে গিয়ে আশ্রয় নিল। টারজান হাতিটাকে বলল, আমাকে তোমার পিঠের উপর চাপিয়ে সমুদ্রের ধারে আমার কেবিনটায় নিয়ে চল।

    হাতিটা শুঁড় দিয়ে টারজানকে তার পিঠে চাপালে টারজান বাঁদর-গোরিলাদের বলল, একমাত্র টগ আর টিকা ছাড়া তোমরা কেউ আমার কাছে যাবে না কখনো। আমি তোমাদের দল ছেড়ে চলে যাচ্ছি চিরদিনের মত।

    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleলাল মৃত্যুর মুখোশ – এডগার অ্যালান পো – (অনুবাদক : চিত্তরঞ্জন মাইতি)
    Next Article The Gringos – Edith Nesbit
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Demo
    Most Popular

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Our Picks

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    দ্য দা ভিঞ্চি কোড – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025

    এঞ্জেলস এন্ড ডেমনস – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    Sign In or Register

    Welcome Back!

    Login below or Register Now.

    Lost password?

    Register Now!

    Already registered? Login.

    A password will be e-mailed to you.