Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    সমগ্র কিশোর সাহিত্য – নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়

    September 2, 2025

    ছোটগল্প – নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়

    September 2, 2025

    টেনিদা সমগ্র – নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়

    September 2, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • 🔖
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    Subscribe
    সাইন ইন
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    টেনিদা সমগ্র – নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়

    নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায় এক পাতা গল্প790 Mins Read0

    মৎস্যপুরাণ

    মৎস্যপুরাণ

    তুমি যাও বঙ্গে, কপাল যায় সঙ্গে।

    বঙ্গে আর যাব কোথায়, বঙ্গেই তো আছি—একেবারে ভেজালহীন খাঁটি বঙ্গসন্তান। আসলে গিয়েছিলাম বঙ্গেশ্বরী মিষ্টান্ন ভাণ্ডারে।

    সবে দিন সাতেক ম্যালেরিয়ায় ভুগে উঠেছি। এমনিতেই বরাবর আমার খাইখাইটা একটু বেশি, তার ওপর ম্যালেরিয়া থেকে উঠে খাওয়ার জন্যে প্রাণটা একেবারে ত্রাহি ত্রাহি করে। দিনরাত্তির শুধু মনে হয় আকাশ খাই, পাতাল খাই, খিদেতে আমার পেটের বত্রিশটা নাড়ি একেবারে গোখরো সাপের মতো পাক খাচ্ছে। শুধু তো পেটের খিদে নয়, একটা ধামার মতো পিলেও জুটেছে সেখানে—আস্ত হিমালয় পাহাড়টাকে আহার করেও বোধহয় সেটার আশ মিটবে না।

    সুতরাং বঙ্গেশ্বরী মিষ্টান্ন ভাণ্ডারে বসে গোটা তিনেক ইয়া ইয়া রাজভোগকে কায়দা করবার চেষ্টায় আছি।

    কিন্তু তুমি যাও বঙ্গে—

    হঠাৎ কানের কাছে সিংহনাদ শোনা গেল : এই যে প্যালা, বেড়ে আছিস–অ্যাঁ?

    আমার পিলেটা ঘোঁৎ করে নেচে উঠেই কোঁৎ করে বসে পড়ল। রাজভোগটায় বেশ জুতসই একটা কামড় বসিয়েছিলাম, সেটা ঠিক তেমনি করে হাত আর দাঁতের মাঝখানে লেগে রইল ত্রিশঙ্কুর মতো। শুধু খানিকটা রস গড়িয়ে আদ্দির পাঞ্জাবিটাকে ভিজিয়ে দিলে।

    চেয়ে দেখি—আর কে? পৃথিবীর প্রচণ্ডতম বিভীষিকা—আমাদের পটলডাঙার টেনিদা। পুরো পাঁচ হাত লম্বা খটে জোয়ান। গড়ের মাঠে গোরা ঠেঙিয়ে এবং খেলায় মোহনবাগান হারলে রেফারি-পিটিয়ে স্বনামধন্য। আমার মুখে অমন সরস রাজভোগটা কুইনাইনের মতো তেতো লাগল।

    টেনিদা বললে, এই সেদিন জ্বর থেকে উঠলি নি? এর ভেতরেই আবার ওসব যা তা খাচ্ছিস? এবারে তুই নির্ঘাত মারা পড়বি।

    —মারা পড়ব?—আমি সভয়ে বললাম।

    —আলবাত! কোনও সন্দেহ নেই।—টেনিদা শব্দসাড়া করে আমার পাশের চেয়ারটায় বসে পড়ল : তবে আমি তোকে বাঁচাবার একটা চেষ্টা করে দেখতে পারি।

    এই বলে, বোধহয় আমাকে বাঁচাবার মহৎ উদ্দেশ্যেই নাকি দুটো রাজভোগ তুলে টেনিদা কপ কপ করে মুখে পুরে দিলে। তারপর তেমনি সিংহনাদ করে বললে, আরও চারটে রাজভোগ।

    আমার খাওয়া যা হওয়ার সে তো হল, আমারই পকেটের নগদ সাড়ে তিনটি টাকা খসিয়ে এ-যাত্ৰা আমার প্রাণটা বাঁচিয়ে দিলে টেনিদা। মনে মনে চোখের জল ফেলতে ফেলতে বেরুলাম দোকান থেকে। ভাবছি এবার হেদোর কোনা দিয়ে সই করে ডাফ স্ট্রিটের দিকে সটকে পড়ব, কিন্তু টেনিদা ক্যাঁক করে আমার কাঁধটা চেপে ধরল। সে তো ধরা নয়, যেন ধারণ। মনে হল কাঁধের ওপর কেউ একটা দেড়মনী বস্তা ধপাস করে ফেলে দিয়েছে। যন্ত্রণায় শরীরটা কুঁকড়ে গেল।

    —অ্যাই প্যালা, পালাচ্ছিস কোথায়? ভয়ে আমার ব্রহ্মতালু অবধি কাঠ। বললাম, না, না, পা-পা পালাচ্ছি না তো!

    —তবে যে মানিক দিব্যি কাঠবেড়ালির মতো গুটিগুটি পায়ে বেমালুম হাওয়া হয়ে যাচ্ছিলে? চালাকি না চলিষ্যতি। তোকে আমার সঙ্গে যেতে হবে এখন।

    -কোথায়?

    –দমদমায়।

    আমি অবাক হয়ে বললাম, দমদমায় কেন?

    টেনিদা চটে উঠল : তুই একটা গাধা।

    আমি বললাম, গাধা হবার মতো কী করলাম?

    টেনিদা বাঘা গলায় বললে, আর কী করবি? ধোপার মোট বইবি, ধাপার মাঠে কচি কচি ঘাস খাবি, না প্যাঁ-হোঁ প্যাঁ-হোঁ করে চিৎকার করবি? আজ রবিবার, দমদমায় মাছ ধরতে যাব—এটা কেন বুঝিস নে উজবুক কোথাকার?

    —মাছ ধরতে যাবে তো যাও—আমাকে নিয়ে টানাটানি করছ কেন?

    –তুই না গেলে আমার বঁড়শিতে টোপ গেঁথে দেবে কে, শুনি? কেঁচো-টেচো বাবা আমি হাত দিয়ে ঘাঁটতে পারব না—সে বলে দিচ্ছি।

    –বাঃ, তুমি মাছ মারবে আর কেঁচোর বেলায় আমি?

    –নে, রাস্তায় দাঁড়িয়ে এখন আর ফ্যাঁচক্যাঁচ করতে হবে না। চটপট চল শেয়ালদায়। পনেরো মিনিটের ভেতরেই একটা ট্রেন আছে।

    আমি দাঁড়িয়ে ইতস্তত করছি, টেনিদা একটা হ্যাঁচকা মারলে। টানের চোটে হাতটা আমার কাঁধ থেকে উপড়েই এল বোধ হল। গেছি গেছি বলে আমি আর্তনাদ করে উঠলাম।

    –যাবি কোথায়? আমার সঙ্গে দমদমায় না গেলে তোকে আর কোথাও যেতে দিচ্ছে কে! চল চল। রেডি—ওয়ান, টু–

    কিন্তু থ্রি বলবার আগেই আমি যেন হঠাৎ দুটো পাখনা মেলে হাওয়ায় উড়ে গেলাম। মাথা ঝিমঝিম করতে লাগল, কানে শব্দ বাজতে লাগল ভোঁ-ভোঁ। খেয়াল হতে দেখি, টেনিদা একটা সেকেন্ড ক্লাস ট্রামে আমাকে তুলে ফেলেছে।

    আমাকে বাজখাঁই গলায় আশ্বাস দিয়ে বললে, যদি মাছ পাই তবে ল্যাজ থেকে কেটে তোকে একটু ভাগ দেব।

    কী ছোটলোক! যেন মুড়ো-পেটি আমি আর খেতে জানি না। কিন্তু তর্ক করতে সাহস হল না। একটা চাঁটি হাঁকড়ালেই তো মাটি নিতে হবে, তারপরে খাটিয়া চড়ে খাঁটি নিমতলাযাত্রা! মুখ বুজে বসে রইলাম। মুখ বুজেই শিয়ালদা পৌঁছুলাম। তারপর সেখান থেকে তেমনি মুখ বুজে গিয়ে নামলাম দমদমায় গোরাবাজারে।

    রেললাইনের ধার দিয়ে বনগাঁর মুখে খানিকটা এগোতেই একটা পুরনো বাগানবাড়ি। টেনিদা বললে, চল, ওর ভেতরেই মাছ ধরবার বন্দোবস্ত আছে।

    আমি তিন পা পিছিয়ে গেলাম। বললাম, খেপেছ? এর ভেতরে মাছ ধরতে যাবে কী রকম। ওটা নির্ঘাত ভুতুড়ে বাড়ি।

    টেনিদা হনুমানের মতো দাঁত খিচিয়ে বললে, তোর মুণ্ড! ওটা আমাদের নিজেদের বাগানবাড়ি, ওর ভেতরে ভূত আসবে কোখেকে? আর যদি আসেই তো এক ঘুষিতে ভূতের বত্রিশটা দাঁত উড়িয়ে দোব–হুঁ হুঁ! আয়-আয়—

    মনে মনে রামনাম জপতে জপতে আমি টেনিদার পিছনে পিছনে পা বাড়ালাম।

    বাগানবাড়িটা বাইরে থেকে যতটা জংলা মনে হচ্ছিল, ভেতরে তা নয়। একটা মস্ত ফুলের বাগান। এখন অবশ্য ফুলটুল বিশেষ কিছু নেই, কিন্তু পাথরের কতকগুলো মূর্তি এদিকে ওদিকে ছড়ানো রয়েছে। কিছু কিছু ফলের গাছ—আম, লিচু, নারকেল—এইসব। মাঝখানে পুরনো ধরনের একখানা ছোট বাড়ি। দেওয়ালের চুন খসে গেছে, ইট ঝরে পড়েছে। এদিকে ওদিকে, তবু বেশ সুন্দর বাড়ি। মস্ত বারান্দা, তাতে খান কয়েক বেতের চেয়ার পাতা।

    বারান্দায় উঠেই টেনিদা একখানা বোম্বাই হাঁক ছাড়লে, ওরে জগা—

    দূর থেকে সাড়া এল, আসুচি।…তারপরেই দ্রুতবেগে এক উড়ে মালীর প্রবেশ। বললে, দাদাবাবু আসিলা?

    টেনিদা বললে, ই আসিলাম। এতক্ষণ কোথায় ছিলি ব্যাটা গোভূত? শিগগির যা, ভালো দেখে গোটা কয়েক ডাব নিয়ে আয়।

    —আনুচি—

    বলেই জগা বিদ্যুৎবেগে বানরের মতো সামনের নারকেল গাছটায় চড়ে বসল, তারপর মিনিটখানেকের মধ্যেই নেমে এল ডাব নিয়ে। পর পর চারটে ডাব খেয়ে টেনিদা বললে, সব ঠিক আছে জগা?

    জগা বললে, হুঁ।

    বঁড়শি, টোপ, চার—সব?

    জগা বললে, হুঁ।

    –চল প্যালা, তাহলে পুকুরঘাটে যাই।

    পুকুরঘাটে এলাম। সত্যিই খাসা পুকুরঘাট। শাদা পাথরে খাসা বাঁধানো। পুকুরে অল্প অল্প শ্যাওলা থাকলেও দিব্যি টলটলে জল। ঘাটটার ওপরে নারকেলপাতার ছায়া ঝিরঝিরে বাতাসে কাঁপছে। পাখি ডাকছে এদিকে ওদিকে। মাছ ধরবার পক্ষে চমৎকার জায়গা। ঘাটটার ওপরে দুটো বড় বড় হুইল বঁড়শিবঁড়শি দুটোর চেহারা দেখলে মনে হয় হাঙর কুমির ধরবার মতলব আছে।

    টেনিদা আবার বললে, চার করেছিস জগা?

    —হুঁ।

    —কেঁচো তুলেছিস?

    —হুঁ।

    —তবে যা তুই, আমাদের জন্যে খিচুড়ির ব্যবস্থা করগে। আয় প্যালা, এবার আমরা কাজে লেগে যাই। নে বঁড়শিতে কেঁচো গাঁথ।

    আমি কাঁদো কাঁদো মুখে বললাম, কেঁচো গাঁথব?

    টেনিদা হুঙ্কার ছাড়ল : নইলে কি তোর মুখ দেখতে এখানে এনেছি নাকি? ওই তো বাংলা পাঁচের মতো তোর মুখ, ও-মুখে দেখবার মতো কী আছে র‍্যা? মাইরি প্যালা, এখন বেশি বকাসনি আমাকে–মাথায় খুন চেপে যাবে। ধর, কেঁচো নে।

    কী কুক্ষণেই আজ বাড়ি থেকে বাইরে পা বাড়িয়েছিলাম রে। এখন প্রাণটা নিয়ে ঘরের ছেলে মানে মানে ঘরে ফিরতে পারলে হয়। আমার মুখের দিকে তাকিয়ে টেনিদার বোধহয় দয়া হল। বললে, নে নে, মন খারাপ করিসনি। আচ্ছা, আচ্ছা—মাছ পেলে আমি মুছোটা নেব আর সব তোর। ভদ্দর লোকের এক কথা। নে, এখন কেঁচো গাঁথ।

    মাছ টেনিদা যা পাবে সে তো জানাই আছে আমার। লাভের মধ্যে আমার খানিক কেঁচো-ঘাঁটাই সার। এরই নাম পোড়া কপাল।

    কিন্তু ভদ্দরলোকের এক কথা। সে যে কী সাংঘাতিক কথা সেটা টেনিদা টের পেল একটু পরে।

    ছিপ ফেলে দিব্যি বসে আছি।

    বসে আছি তো আছিই। জলের দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে চোখ ব্যথা করতে লাগল। কিন্তু কা কস্য। জলের ওপর ফাতনাটি একেবারে গড়ের মাঠের মনুমেন্টের মতো খাড়া হয়ে আছে। একেবারে নট নড়ন-চড়ন–কিচ্ছু না।

    আমি বললাম, টেনিদা, মাছ কই?

    টেনিদা বললে, চুপ, কথা বলিসনি। মাছে ভয় পাবে।

    আবার আধঘণ্টা কেটে গেল। বুড়ো আঙুলে কাঁচকলা দেখাবার মতো ফাতনাটি তেমনি মাথা তুলে দাঁড়িয়ে আছে। জলের অল্প অল্প ঢেউয়ে একটু একটু দুলছে, আর কিছু নেই।

    আমি বললাম, ও টেনিদা, মাছ কোথায়?

    টেনিদা বিরক্ত হয়ে বললে, থাম না। কেন বকরবকর করছিস র‍্যা? এসব বাবা দশ-বিশ সেরী কাতলার ব্যাপার—এ কী সহজে আসে? এ তো একেবারে পেল্লায় কাণ্ড। নে, এখন মুখে ইস্কুপ এঁটে বসে থাক।

    ফের চুপচাপ। খানিক পরে আমি আবার কী একটা বলতে যাচ্ছি, কিন্তু টেনিদার দিকে তাকিয়েই থমকে গেলাম। ছিপের ওপরে একেবারে হুমড়ি খেয়ে পড়েছে, চোখ দুটো যেন ঠিকরে বেরিয়ে আসছে তার।

    সত্যিই তো—এ যে দস্তুর মতন অঘটন। চোখকে আর বিশ্বাস করা যায় না; ফাতনা টিপটিপ করে নাচছে মাছের ঠোকরে।

    আমাদের দু জোড়া চোখ যেন গিলে খাচ্ছে ফাতনাটাকে। দুহাতে ছিপটাকে আঁকড়ে ধরেছে টেনিদা—আর একটু গেলেই হয়! টিপটিপ—আমাদের বুক ঢিপঢিপ করছে সঙ্গে সঙ্গে। আমি চাপা গলায় চেঁচিয়ে উঠলাম, টেনিদা—

    –জয় বাবা মেছো পেত্নী, হেঁইয়ো—

    ছিপে একটা জগঝম্প টান লাগাল টেনিদা। সপাংসাঁই করে একটা বেখাপ্পা আওয়াজে বঁড়শি আকাশে উড়ে গেল, মাথার ওপর থেকে ছিড়ে পড়ল নারকেলপাতার টুকরো। কিন্তু বঁড়শি! একদম ফাঁকা মাছ তো দূরে থাক, মাছের একটি আঁশ পর্যন্ত নেই।

    টেনিদা বললে, অ্যাঁ, ব্যাটা বেমালুম ফাঁকি দিলে! আচ্ছা, আচ্ছা যাবে কোথায়! আজ ওরই একদিন কি আমারই একদিন। নে প্যালা, আবার কেঁচো গাঁথ—

    টান দেখেই বুঝতে পারছি কী রকম মাছ উঠবে! মাছ তো উঠবে না, উঠবে জলহস্তী। কিন্তু বলে আর চাঁটি খেয়ে লাভ কী, কেঁচো গাঁথা কপালে আছে, তাই গেঁথে যাই।

    কিন্তু টেনিদার চারে আজ বোধ হয় গণ্ডা গণ্ডা রুই কাতলা কিলবিল করছে। তাই দু মিনিট না যেতেই এ কী! দু নম্বর ফাতনাতেও এবার টিপটিপ শুরু হয়েছে।

    বললাম, টেনিদা, এবারে সামাল।

    টেনিদা বললে, আর ফসকায়? বারে বারে ঘুঘু তুমি—হুঁ হুঁ! কিন্তু কথা বলিসনি প্যালা—চুপ। টিপটিপটিপ। টপ!

    সাঁ করে আবার বঁড়শি আকাশে উঠল, আবার ছিড়ে পড়ল নারকেলপাতা। কিন্তু মাছ? হায়, মাছই নেই।।

    টেনিদা বলেন, এবারেও পালাল? উঃ—জোর বরাত ব্যাটার। আচ্ছা, দেখে নিচ্ছি। কেঁচো গাঁথ প্যালা! আজ এসপার কি ওসপার।

    তাজ্জব লাগিয়ে দিল বটে। বঁড়শি ফেলবামাত্র ফাতনা ড়ুবিয়ে নিচ্ছে, অথচ টানলেই ফাঁকা। এ কী ব্যাপার! এমন তো হয় না হওয়ার কথাও নয়।

    টেনিদা মাথা চুলকোতে লাগল। পর পর গোটা আষ্টেক টানের চোটে মাথার ওপরে নারকেলগাছটাই ন্যাড়ামুড়ো হয়ে গেল, কিন্তু মাছের একটুকরো আঁশও দেখা গেল না।

    টেনিদা বললে, এ কীরে, ভুতুড়ে কাণ্ড নাকি?

    পিছনে কখন জগা এসে দাঁড়িয়েছে আমরা টেরও পাইনি। হঠাৎ পানে রাঙা একমুখ হেসে জগা বললে, আইজ্ঞা ভুতো নয়, কাঁকোড়া অছি।

    –কাঁকোড়া? মানে কাঁকড়া?

    জগা বললে, হুঁ।

    –তবে আজ কাঁকড়ার বাপের শ্রাদ্ধ করে আমার শান্তি!… আকাশ কাঁপিয়ে হুঙ্কার ছাড়লে টেনিদা : বসে বসে নিশ্চিন্তে আমার চার আর টোপ খাচ্ছে? খাওয়া বের করে দিচ্ছি। একটা বড় দেখে ডালা কিংবা ধামা নিয়ে আয় তো জগা!

    —ডালা! ধামা!—আমি অবাক হয়ে বললাম, তাতে কী হবে?

    —তুই চুপ কর প্যালাবকালেই চাঁটি লাগাব। দৌড়ে যা জগাধামা নিয়ে আয়।

    আমি সভয়ে ভাবলাম টেনিদার কি মাথা খারাপ হয়ে গেল নাকি? ধামা হাতে করে পুকুরে মাছ ধরতে নামবে এবারে?… কিন্তু–

    কিন্তু যা হল তা একটা দেখবার মতো ঘটনা। শাবাশ একখানা খেল, একেবারে ভানুমতীর খেল। এবার ফাতনা ড়ুবতেই আর হেঁইয়া শব্দে টান দিলে না টেনিদা। আস্তে আস্তে অতি সাবধানে বঁড়শিটাকে ঘাটের দিকে টানতে লাগল। তারপর বঁড়শিটা যখন একেবারে কাছে চলে এসেছে, তখন দেখা গেল মস্ত একটা লাল রঙের কাঁকড়া বঁড়শিটা প্রাণপণে আঁকড়ে আছে। টেনিদা বললে, বঁড়শি জলের ওপর তুললেই ও ব্যাটা ছেড়ে দেবে। বঁড়শি আমি তোলবার আগে ঠিক জলের তলায় ধামাটা পেতে ধরবি, বুঝলি জগা! তারপর দেখা যাবে কে বেশি চালাক—আমি, না ব্যাটাচ্ছেলে কাঁকড়া!

    তারপর আরম্ভ হল সত্যিকারের শিকারপর্ব। টেনিদার বুদ্ধির কাছে এবারে কাঁকড়ার দল ঘায়েল। আধঘণ্টার মধ্যে ধামা বোঝাই।

    দুটো প্রকাণ্ড প্রকাণ্ড হুইলের শিকার দু কুড়ি কাঁকড়া!

    টেনিদা বললে, মন্দ কী! কাঁকড়ার ঝোলও খেতে খারাপ নয়। তোর খিচুড়ি কতদূর জগা?

    কিন্তু ভদ্রলোকের এক কথা। আমি সেটা ভুলিনি।

    বললাম, টেনিদা, মুড়োটা তোমার—আর ল্যাজা-পেটি আমার মনে আছে তো?

    টেনিদা আঁতকে বললে, অ্যাাঁ।

    আমি বললাম, হ্যাঁ।

    টেনিদা এক মিনিটে কাঁচুমাচু হয়ে গেল, তা হলে?

    –তা হলে মুড়ো, অর্থাৎ কাঁকড়ার দাঁড়া দুটো তোমার, আর বাকি কাঁকড়া আমার।

    টেনিদা আর্তনাদ করে বললে, সে কী?

    আমি বললাম, ভদ্দরলোকের এক কথা।

    —তা হলে কাঁকড়ার কি মুড়ো নেই?

    মুড়ো না থাকলেও মুখ আছে, কিন্তু আমি সে চেপে গেলাম। বললাম, ওই দাঁড়াই হল ওদের মুড়ো।

    টেনিদা খানিকক্ষণ চুপ করে দাঁড়িয়ে রইল, তারপর আস্তে আস্তে বসে পড়ল। বললে, প্যালা, তোর মনে এই ছিল! ও হো-হো-হো-

    তা যা খুশি বলল। বঙ্গেশ্বরী মিষ্টান্ন ভাণ্ডারে সাড়ে তিন টাকার শোক কি আমি এর মধ্যেই ভুলেছি!

    আজ দুদিন বেশ আরামে কাঁকড়ার ঝোল খাচ্ছি। টেনিদা দাঁড়া কী রকম খাচ্ছে বলতে পারব না, কারণ রাস্তায় সেদিন আমাকে দেখেও ঘাড় গুঁজে গোঁ-গোঁ করে চলে গেল, যেন চিনতেই পারেনি।

    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27 28 29 30 31 32 33 34 35 36 37 38 39 40 41 42 43 44 45 46 47 48 49 50 51 52 53 54 55 56 57 58 59 60 61 62 63 64 65 66 67 68 69 70 71 72 73 74 75 76 77 78 79 80 81 82 83 84 85 86 87 88 89 90 91 92 93 94 95 96 97 98 99 100 101 102 103
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleফাউণ্ডেশন অ্যাণ্ড এম্পায়ার – আইজাক আসিমভ
    Next Article ছোটগল্প – নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়

    Related Articles

    নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়

    সমগ্র কিশোর সাহিত্য – নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়

    September 2, 2025
    নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়

    ছোটগল্প – নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়

    September 2, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Demo
    Most Popular

    সমগ্র কিশোর সাহিত্য – নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়

    September 2, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    সমগ্র কিশোর সাহিত্য – নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়

    September 2, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Our Picks

    সমগ্র কিশোর সাহিত্য – নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়

    September 2, 2025

    ছোটগল্প – নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়

    September 2, 2025

    টেনিদা সমগ্র – নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়

    September 2, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    Sign In or Register

    Welcome Back!

    Login below or Register Now.

    Lost password?

    Register Now!

    Already registered? Login.

    A password will be e-mailed to you.