Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    সমগ্র কিশোর সাহিত্য – নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়

    September 2, 2025

    ছোটগল্প – নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়

    September 2, 2025

    টেনিদা সমগ্র – নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়

    September 2, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • 🔖
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    Subscribe
    সাইন ইন
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    টেনিদা সমগ্র – নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়

    নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায় এক পাতা গল্প790 Mins Read0

    পেশোয়ার কী আমীর

    পেশোয়ার কী আমীর

    চাটুজ্যেদের রকে বসে আমি একটা পাকা আমকে কায়দা করতে চেষ্টা করছিলাম। কিন্তু বেশিক্ষণ খেতে হল না। গোটা-চারেক কামড় দিয়েই ফেলে দিতে হল—অ্যায়সা টক। দাঁতগুলো শিরশির করতে লাগল—মেজাজটা বেজায় খিঁচড়ে গেল আমার। বাড়িতে মাংস এসেছে দেখেছি-রাত্তিরে জুত করে হাড় চিবুতে পারব কি না কে জানে!

    এই সময় কোত্থেকে পটলডাঙার টেনিদা এসে হাজির। গাঁক গাঁক করে বললে, এই প্যালা, আমটা ফেলে দিলি যে?

    –যাচ্ছেতাই টক। খাওয়া যায় নাকি?

    —টক? টেনিদা ধুপ করে আমার পাশে বসে পড়ে বললে, টক বলে বুঝি গেরাহ্যি হল না? সংসারে টক যদি না থাকত, তাহলে আচার পেতিস কোথায়? টক যদি না থাকত তাহলে কী করে দই জমত? টক যদি না থাকত তাহলে চালকুমড়োর সঙ্গে কামরাঙার তফাত

    কী থাকত? টক যদি না থাকত তাহলে পিঁপড়েরা কী করে টক-টক হত? টক না থাকলে

    টক না থাকলে পৃথিবীতে আরও অনেক অঘটন ঘটত–কিন্তু সে-সবের লম্বা লিস্টি শোনবার মতো উৎসাহ আমার ছিল না। আমি বাধা দিয়ে বললুম, তাই বলে অত টক আম কোনও ভদ্দরলোকে খেতে পারে নাকি?

    আমের গন্ধে কোত্থেকে একটা মস্ত নীল রঙের কাঁঠালে-মাছি এসেছে, সেটা শেষতক টেনিদার খাঁড়ার মতো মস্ত নাকটার ওপর বসবার চেষ্টা করছিল। আমার কথা শুনে টেনিদার সেই পেল্লায় নাকের ভেতর থেকে রণ-ডরুর মতো একটা বিদঘুটে আওয়াজ বেরুল। মাছিটা শূন্যে বার-দুই ঘুরপাক খেয়ে বোঁ করে মাটিতে পড়ে গেল ভিরমি খেল না হার্টফেলই করল কে জানে?

    টেনিদা বললে, ইস-স্‌-স্‌। খুব যে ভদ্দরলোক হয়ে গেছিস দেখছি। তবু যদি পালাজ্বরে ভুগে দু-বেলা পটোল দিয়ে শিঙিমাছের ঝোল না খেতিস! তুই কি আমার গাবলু মামার চাইতেও ভদ্দরলোক? জানিস, গাবলু মামা এখন চারশো টাকা মাইনে পায়?

    আমি ব্যাজার হয়ে বললুম, জেনে আমার লাভ কী? তোমার গাবলু মামা তো আমায় টাকা ধার দিতে যাচ্ছে না?

    —তোর মত অখাদ্যিকে টাকা ধার দিতে বয়ে গেছে গাবলু মামার? টেনিদার নাক দিয়ে আবার একটা আওয়াজ বেরুল : জানিস—তিনবার আই-এ ফেল করা গাবলু মামা অত বড় চাকরিটা পেল কী করে? স্রেফ টক আমের জন্যে।

    —টক আমের জন্যে? আমি হাঁ করে রইলুম : টক আম খেলে বুঝি ওই রকম চাকরি হয়?

    —খেলে নয় রে গাধা-খাওয়ালে। তবে, তাক বুঝে খাওয়াতে জানা চাই। বলছি তোকে ব্যাপারটা অনেক জ্ঞান লাভ করতে পারবি। তার আগে গলির মোড় থেকে দুআনার ডালমুট নিয়ে আয়।

    জ্ঞানলাভ করতে চাই আর না চাই, টেনিদা যখন ডালমুট খেতে চেয়েছে—তখন খাবেই। পকেটে পয়সা থাকলে ও ঠিক টের পায়। কী করি, আনতেই হল ডালমুট।

    —তুই পেটরোগা, এ সব তোর খেতে নেই বলে এ্যাচকা টানে টেনিদা ঠোঙাটা কেড়ে নিলে। আমি ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে রইলুম। খেতে যখন দেবে না, তখন বেশ করে নজর দিয়ে দিই। পরে টের পাবে।

    টেনিদা ভূক্ষেপ করলে না। বললে, তবে শোন। আমার মামার বাড়ি কোথায় জানিস তো? খঙ্গপুরে। সেই খঙ্গাপুর—যেখানে রেলের ইঞ্জিন-টিঞ্জিন আছে?

    সেবার গরমের ছুটিতে মামাবাড়ি বেড়াতে গেছি। ওই যে একটা ছড়া আছে না–মামাবাড়ি ভারি মজা—কিল চড় নাই? কথাটা একদম বোগাস-বুঝলি? কক্ষনো বিশ্বাস করিসনি।

    অবিশ্যি মামাবাড়িতে ভালো লোক একেবারে নেই তা নয়। দিদিমা, দাদু এরা বেশ খাসা লোক। বড় মামিরাও মন্দ নয়। কিন্তু ওই গাবলু মামা-টামা–বুঝলি, ওরা ভীষণ ডেঞ্জারাস হয়।

    বললে বিশ্বাস করবিনে, সাতদিনের মধ্যে গাবলু মামা দুবার আমার কান টেনে দিলে। এমন কিছু করিনি, কেবল একদিন ওর ঘড়িটায় একটু চাবি দিয়েছিলুম—তাতে নাকি স্পিংটা কেটে গিয়েছিল। আর একদিন ওর শাদা নাগরাটা কালো কালি দিয়ে একটু পালিশ করেছিলুম, আর নেটের মশারিতে কাঁচি দিয়ে একটা গ্র্যাণ্ড জানলা বানিয়ে দিয়েছিলুম। এর জন্যে দুদিন আমার কান ধরে পাক দিয়ে দিলে। কী ভীষণ ছোটলোক বল দিকি।

    তা করে করুক—গাবলু মামা-খড়গপুরে দিনগুলো আমার ভালোই কাটছিল। দিব্যি খাওয়া-দাওয়া—মজাসে ইস্টিশানে রেল দেখে বেড়ানো, হাঁটতে হাঁটতে একেবারে কাঁসাইয়ের পুল পর্যন্ত চলে যাওয়া, সেখানে বেশ চড়ইভাতি—আরও কত কী। বেশ ছিলুম।

    বেশ মনের মতো বন্ধুও জুটে গিয়েছিল একটি। তার ডাকনাম ঘটা—ভালো নাম ঘটকৰ্পর। ওর ছোট ভাইয়ের নাম ক্ষপণক, ওর দাদার নাম বরাহ। ওদের বাবা গোবর্ধনবাবুর ইচ্ছে ছিল,—ওদের ন-ভাইকে নিয়ে নবরত্ন সভা বসাবেন বাড়িতে।

    কিন্তু ক্ষপণকের পর আর ভাই জন্মাল না—খালি বোন আর বোন। রেগে গিয়ে গোবর্ধনবাবু তাদের নাম দিতে লাগলেন, জ্বালামুখী, মুণ্ডমালিনী এইসব। এমনকি খনা নাম পর্যন্ত রাখলেন না কারওর।

    তা এই তিন রত্নেই যথেষ্ট—একেবারে তিন তিরিখে নয়! এক-একটা বিচ্ছু অবতার। আর ঘটা তো একেবারে সাক্ষাৎ শয়তানির ঘট!

    আগে কি আর বুঝতে পেরেছিলুম? তা হলে ঘটার ত্রিসীমানায় কে যায়। ওর ঠাকুরমার ভাঁড়ার থেকে আচার-টাচার চুরি করে এনে আমায় খাওয়াত—আমি ভাবতুম অমন ভালো ছেলে বুঝি দুনিয়ায় আর হয় না!

    কিন্তু শেষকালে এই ঘটাই আমাকে এমন একখানা লেঙ্গি মেরে দিলে যে কী বলব।

    একদিন দুপুরবেলা গাবলু মামা বেশ প্রেসে নাক ডাকিয়ে ঘুমুচ্ছে, আর আমি দরজার ফাঁক দিয়ে উঁকিঝুঁকি মারছি। একটা ছিপ চাঁছব—গাবলু মামার দাড়ি কামানোর চকচকে ক্ষুরটা হাত-সাফাই করতে পারলে ভীষণ সুবিধে হয়।

    এমন সময় ফিসফিস করে ঘটা আমার কানে কানে বললে, এই টেনি, আম খাবি?

    কেন খাব না—খেতে আর ভয় কী! আর আমায় জানিস তো প্যালা-খাওয়ার ব্যাপারে কাপুরুষতা আমার একদম বরদাস্ত হয় না। সঙ্গে সঙ্গে দুহাত তুলে লাফিয়ে উঠে আমি বললুম, কোথায় রে?

    —আমাদের বাগানে।

    আমি বললুম, ওরে বাবা!

    বলবার কারণ ছিল। গোবর্ধনবাবুর খুব ভালো একটা আমের বাগান আছে বাছাই বাছাই কলমের আম। ল্যাংড়া, বোম্বাই, মিছরিভোগ—আরও কত কী! দেড় মাইল দূর থেকেও আমের গন্ধে জিভে জল আসে। কিন্তু কাছে যায় সাধ্যি কার। যমদূতের মতো একটা অ্যায়সা জোয়ান মালী রাতদিন খাড়া পাহারা দিচ্ছে সেখানে। একটু উঁকিঝুঁকি দিয়েছ কি সঙ্গে সঙ্গে বাজখাঁই গলায় হাঁক পাড়বে, ইখানে হৈচ্ছে কী? ওসব চলিবেনি! না পালাইছ তো পিট্টি খাইছ?

    ঘটা বললে, কিছু ঘাবড়াসনি-বুঝলি? আজ জামাইষষ্ঠী কিনা—মালী এ-বেলা শ্বশুরবাড়ি গেছে। ভালোমন্দ খেয়ে-দেয়ে সন্ধের পরে ফিরবে। আজকেই সুযোগ।

    অমন জাঁদরেল মালীরও শ্বশুরবাড়ি থাকে—আমার বিশ্বাসই হল না। ঘটা বললে, সত্যি বলছি টেনি। চল না বাগানে—গেলেই বুঝতে পারবি!

    গেলুম বাগানে। বেগতিক দেখলেই রামদৌড় লাগাব। লম্বা লম্বা ঠ্যাং দুটো তো আছেই!

    গিয়ে দেখি, সত্যিই তাই। মালীর ঘরে মস্ত একটা তালা ঝুলছে। আর বাগানে?

    গাছ ভর্তি আম আর আম! তাদের কী রঙ, আর ক্যায়সা খোশবু! মনে হল যেন স্বর্গের নন্দনবনে এসে ঢুকেছি আর চারদিকে অমৃত ফল ঝুলছে। কিন্তু হলে কী হবে! প্রায় সবগুলো গাছই বিচ্ছিরি রকমের জাল দিয়ে ঘেরাও করা। ঢিল মারলে পড়বে না—আঁকশিতে নামবে না।

    শুধু একদিকে বেঁটে চেহারার একটা গাছে কোনও জালই নেই! আর কী আম হয়েছে সে-গাছে! মাটির হাতখানেক কাছাকাছি পর্যন্ত আম ঝুলে পড়েছে। পেকে টুকটুক করছে আমগুলো–লালে আর হলদেতে কী আশ্চর্য তাদের রঙ! দেখেই আনন্দে আমার মূছা যাবার জো হল।

    ঘটা বললে, এ-আমের নাম হল পেশোয়ার কি আমীর। আমের সেরা। খেলে মনে হবে পেশোয়ারের আঙুর, ভীম নাগের সন্দেশ আর কাশীর চমচম একসঙ্গে খাচ্ছিস। লেগে য়া টেনি—

    বলবার আগেই লেগে গেছি আমি। চক্ষের নিমেষে টেনে নামিয়েছি গোটা পনেরো পেশোয়ার কি আমীর। তারপর বেশ টুসটুসে একটা আমে যেই কামড় বসিয়েছি—

    সঙ্গে সঙ্গে কী হল সে আমার মনে নেই প্যালা! আমি মাথা ঘুরে সেইখানেই বসে পড়লুম। ওরে বাকী টক! দশ মিনিট ধরে খালি মনে হতে লাগল, আমার দুপাটি দাঁতের ওপর কেউ দমাদম হাতুড়ি ঠুকছে আমার দু কানে তিরিশটা ঝিঝি পোকা কোরাস গাইছে, আমার নাকের ওপর তিন ডজন উচ্চিংড়ে লাফাচ্ছে, আমার মাথার ওপর সাতটা কাঠঠোকরা এক নাগাড়ে ঠুকে চলেছে।

    যখন জ্ঞান হল—তখন দেখি দুডজন পেশোয়ার কি আমীর সামনে নিয়ে আমি বসে আছি ধুলোর ওপর। ঘটার চিহ্নমাত্র নেই। ঘটকৰ্পর কপূরের মতোই উবে গেছে।

    কী শয়তান, কী বিশ্বাসঘাতক! একবার যদি ওকে সামনে পাই, তাহলে ওর নাক খিমচে দেব, কান কামড়ে দেব, পিঠে জলবিছুটি ঘষে দেব, ওর ছুটির টাস্কের সব অঙ্কগুলো এমন ভুল করে রেখে দেব যে ইস্কুলে গেলেই সপাসপ বেত। কিন্তু সে তো পরের কথা পরে। এখন কী করি!

    আমের লোভেই কি না কে জানে, পাটকিলে রঙের মস্ত দাড়িওলা একটা রামছাগল গুটি গুটি পায়ে আমার দিকে এগোচ্ছে। আমার সমস্ত রাগ ছাগলটার ওপরে গিয়ে পড়ল। বটে—আম খাবে। দ্যাখো একবার পেশোয়ার কি আমীরকে পরখ করে!

    ছাগলে সব খায়—জানিস তো প্যালা? ছাতা খায়, খাতা খায়, হকিস্টিক খায়, জুতো খায়জুতোবুরুশওয়ালাকেও যে বাগে পেলে খায় না একথা জোর করে বলা যায় না। আমার সেই কামড়ে-দেওয়া আমাকেই দিলুম ছুড়ে ওর দিকে।

    মাটিতেও পড়তে পেল না ক্রিকেটের বলের মতোই আকাশে লাফিয়ে উঠে ছাগলটা আমটাকে লুফে নিলে! তারপর?

    –ব্য-আ-আ-করে গগনভেদী আওয়াজ হল একটা। একটা নয়—যেন সমস্ত ছাগলজাতি একসঙ্গে আর্তনাদ করে উঠল। তারপরেই টেনে একখানা দৌড় মারল। সে কী দৌড় রে প্যালা! চক্ষের পলকে বাগান পেরুল, মাঠ পেরুল, লাফ মারতে মারতে খানা-খন্দল পেরুল। বোধহয় মেদিনীপুরে গিয়েই শেষতক সেটা থামল।

    আমি জ্বলন্ত চোখে আমগুলোর দিকে তাকিয়ে রইলুম। ঘটাকে একটা খাওয়াতে পারলে বুকের জ্বালা নিবত। কিন্তু সেটাকে আর পাই কোথায়? তিন দিনের মধ্যেও টিকির ডগাটি পর্যন্ত দেখতে পাব না এটা নিশ্চিন্ত।

    তা হলে কাকে খাওয়াই?

    নির্ঘাত গাবলু মামাকে। দুদিন আমার কান দুটো বেহালার কানের মতো আচ্ছা করে মুচড়ে দিয়েছে। এ আম গাবলু মামারই খাওয়া দরকার। গোটা আষ্টেক আম কোঁচড়ে লুকিয়ে ফিরে এলুম।

    ভগবান ভরসা থাকলে সবই সম্ভব হয় প্যালা বুঝলি? বাড়ি ফিরে দেখি ভীষণ হইচই। গাবলু মামা কোন্ সাহেবের সঙ্গে দেখা করতে যাচ্ছে চাকরির চেষ্টায়। দইয়ের ফোঁটা-টোটা পরানো হচ্ছে—দিদিমা–বড়মামি-দাদু—সবাই একসঙ্গে দুর্গা দুর্গা কালী কালী এই সব আওড়াচ্ছেন।

    গাবলু মামার ঘরে উঁকি দিয়ে দেখি—কেউ নেই। শুধু টেবিলের ওপর রঙচঙে একটা বেতের ঝুড়ি। তাতে বাছা বাছা সব বোম্বাই আম। ভগবান বুদ্ধি দিলেন রে পালা। কেউ দেখবার আগেই আমি ঘরে ঢুকে গোটাকয়েক বোম্বাই সরিয়ে ফেললুমতার ওপর সাজিয়ে দিলুম সাতটা পেশোয়ার কি আমীর—মানে, সাতটা অ্যাঁটম বম্।

    তারপরে গোয়ালঘরে লুকিয়ে বসে সেই বোম্বাই আমগুলো সাবাড় করছি—দেখি না, সেই ঝুড়িটা নিয়ে গাবলু মামা গটগটিয়ে বেরিয়ে গেলেন। আর দাদু দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে সমানে কালী কালী বলতে লাগলেন।

    এইবার আমার চটকা ভাঙল। অ্যাঁ—ওই আম সাহেবের কাছে ভেট যাচ্ছে। গাবলু মামার অবস্থা কী হবে ভেবে আমারই তো গায়ের রক্ত জমে গেল। চাকরি তো দুরে থাকহাড়গোড় নিয়ে গাবলু মামা ফিরতে পারলে হয়। বেশ খানিকটা অনুতাপই হল এবার। ইস—এ যে লঘু পাপে গুরুদণ্ড হয়ে গেল রে।

    বললে– বিশ্বাস করবিনি প্যালা—ওই আমের জোরেই শেষতক গাবলু মামার চাকরি হয়ে গেল। কী করে? সেইটেই আদত গল্প।

    যে সাহেবটার সঙ্গে মামা দেখা করতে গেল, তার নাম ডার্কডেভিল। যতটা না বুড়ো হয়েছে তার চাইতে বেশি ধরেছে বাতে। প্রায় নড়তে-চড়তে পারে না, একটা চেয়ারে বসে রাত-দিন কোঁ কোঁ করছে। তার হাতেই গাবলু মামার চাকরি।

    আমের ঝুড়ি নিয়ে গিয়ে গাবলু মামা সায়েবকে সেলাম দিলে। তারপর নাক-টাক কুঁচকে, মুখটাকে হালুয়ার মতো করে বললে, মাই গার্ডেনস্ ম্যাংগো স্যার। ভেরি গুড স্যার-ফর ইয়োর ইটিং স্যার

    একদম চালিয়াতি-বুঝলি প্যালা। আমার মামার বাড়ির ধারে কাছেও আমের গাছ। নেই। তবু ওসব বলতে হয়—গাবলু মামাও চালিয়ে দিলে।

    সায়েবটা বেজায় লোভী, তায় রাত-দিন রোগে ভুগে লোভ আরও বেড়ে গিয়েছিল। আমের ঝুড়ি দেখেই সায়েবের নোলা লকলকিয়ে উঠল। তার ওপরে আবার সেই পেশোয়র কি আমীর-তার যেমন গড়ন, তেমনি রঙ! তক্ষুনি সে ছুরি বের করলে টেবিলের টানা থেকে।

    –কাম বাবু, হ্যাভ সাম (একটুখানি খাও)–বলেই এক টুকরা সে গাবলু মামার দিকে এগিয়ে দিলে।

    —নো স্যার—আই ইট মেনি স্যার,—এইসব বলে গাবলু মামা হাত-টাত কচলাতে লাগল। কিন্তু সায়েবের গোঁজানিস তো? ধরেছে যখন-খাইয়ে ছাড়বেই।

    অগত্যা গাবলু মামাকে নিতেই হল টুকরোটা। আর মুখে দিয়েই–

    –দাদা গো! গেলুম–বলে গাবলু মামা চেয়ারসুদ্ধ উলটে পড়ে গেল। কষে একটা দাঁত নড়ছিল, সেটাও খসে গেল সঙ্গে সঙ্গেই।

    আর সায়েব?

    আমে কামড় দিয়েই বিটকেল আওয়াজ ছাড়লে : ও গশ্‌—ঘোঁয়াক। তারপরেই তোক করে এক লাফে টেবিলে উঠে পড়ল, দাঁড়িয়ে উঠে বললে, মাই গড—ঘ্যাচাৎ!

    এই বলে আর-এক লাফ। মাথার ওপর ফ্যান ঘুরছিল, সায়েব তার একটা ব্লেডকে চেপে ধরলে। তারপর ঘুরন্ত ফ্যানের সঙ্গে শূন্যে ঘুরতে লাগল বাঁই বাঁই করে।

    সে কী যাচ্ছেতাই কাণ্ড—তোকে কী বলব প্যালা। ঘরের ভেতর নানারকম আওয়াজ শুনে সায়েবের আদাঁলি ছুটে এসেছিল। সে সায়েবকে ফ্যানের সঙ্গে বনবনিয়ে ঘুরতে দেখে বললে, রামরাম—এ কেইসা কাম! বলে সে কাকের মতো হাঁ করে রইল।

    আর সেই সময়েই ঘুরন্ত আর উড়ন্ত সায়েবের হাত থেকে পেশোয়ার কি আমীর টুপ করে খসে পড়ল। আর পড়বি তো পড় একেবারে আদালির হাঁকরা মুখে।—এ দেশোয়ালী ভাই জান গইরে বলে আদালি পাঁই-পাঁই করে একেবারে ইস্টিশানের প্ল্যাটফর্মে এসে পড়ল। তখন মাদ্রাজ মেল ইস্টিশান ছেড়ে চলে যাচ্ছে—এক লাফে তাতেই উঠে পড়ল আদালি, তারপর পতন ও মূছ। ওয়ালটেয়ারে গিয়ে নাকি তার জ্ঞান হয়েছিল।

    ততক্ষণে গাবলু মামার চটকা ভেঙেছে। মাথার ওপরে সায়েবের বুটের ঠোক্কর কাঁধে এসে লাগতেই গাবলু মামা টেনে ছুট। একদৌড়ে বাড়িতে এসে আছাড় খেয়ে পড়ল—তারপরেই একশো চার জ্বর, আর তার সঙ্গে ভুল বকুনি : ওই—ওই আম আসছে। আমায় ধরলে!

    বাড়িতে তো কান্নাকাটি। আমার মনের অবস্থা তো বুঝতেই পারছিস! কিন্তু পরের দিন তাজ্জব কাণ্ড! সকালেই সায়েবের দু নম্বর চাপরাশি গাবলু মামার নামে এক চিঠি নিয়ে এসে হাজির।

    ব্যাপার কী?

    না–গাবলু মামার চাকরি হয়েছে। আড়াইশো টাকা মাইনের চাকরি।

    কেমন করে হল? রে, কেন হবে না? সায়েব তো ফ্যানের ব্লেড থেকে ছিটকে পড়ল। পড়তেই দেখে—আশ্চর্য ঘটনা। সায়েবের দশ বছরের বাত-হাত-পা ভালো করে নাড়তে পারত না-পেশোয়ার কি আমীরের এক ধাক্কাতেই সে-বাত বাপ-বাপ করে পালিয়েছে। কাল সারা বিকেল সায়েব মাঠে ফুটবল খেলেছে, আনন্দে সকলকে ভেংচি কেটেছে, বাড়ি ফিরে তার পেল্লায় মোটা মেমসায়েবের সঙ্গে মারামারি করেছে পর্যন্ত।

    আর গাবলু মামার জ্বর? তক্ষুনি রেমিশন! দশ বালতি জলে চান করে, ভাত খেয়ে, কোট-পেন্টলুন পরে গাবলু মামা তক্ষুনি সায়েবকে সেলাম দিতে ছুটল।

    বুঝলি প্যালা—তাই বলছিলুম, টক আমকে অচ্ছেদ্দা করতে নেই! জুতমতো কাউকে খাইয়ে দিতে পারলে বরাত খুলে যায়।

    ডালমুটের ঠোঙাটা শেষ করে টেনিদা থামল।

    —আহা, এমন বাতের ওষুধ! আমি বললুম, সে আমগাছটা—

    দীর্ঘশ্বাস ফেলে টেনিদা বললে, ও-সব ভগবানের দান রে—বেশিদিন কি সংসারে থাকে? পরদিনই কালবৈশাখী ঝড়ে গাছটা ভেঙে পড়ে গিয়েছিল।

    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27 28 29 30 31 32 33 34 35 36 37 38 39 40 41 42 43 44 45 46 47 48 49 50 51 52 53 54 55 56 57 58 59 60 61 62 63 64 65 66 67 68 69 70 71 72 73 74 75 76 77 78 79 80 81 82 83 84 85 86 87 88 89 90 91 92 93 94 95 96 97 98 99 100 101 102 103
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleফাউণ্ডেশন অ্যাণ্ড এম্পায়ার – আইজাক আসিমভ
    Next Article ছোটগল্প – নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়

    Related Articles

    নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়

    সমগ্র কিশোর সাহিত্য – নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়

    September 2, 2025
    নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়

    ছোটগল্প – নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়

    September 2, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Demo
    Most Popular

    সমগ্র কিশোর সাহিত্য – নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়

    September 2, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    সমগ্র কিশোর সাহিত্য – নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়

    September 2, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Our Picks

    সমগ্র কিশোর সাহিত্য – নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়

    September 2, 2025

    ছোটগল্প – নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়

    September 2, 2025

    টেনিদা সমগ্র – নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়

    September 2, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    Sign In or Register

    Welcome Back!

    Login below or Register Now.

    Lost password?

    Register Now!

    Already registered? Login.

    A password will be e-mailed to you.