Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    সমগ্র কিশোর সাহিত্য – নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়

    September 2, 2025

    ছোটগল্প – নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়

    September 2, 2025

    টেনিদা সমগ্র – নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়

    September 2, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • 🔖
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    Subscribe
    সাইন ইন
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    টেনিদা সমগ্র – নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়

    নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায় এক পাতা গল্প790 Mins Read0

    কুট্টিমামার দন্ত-কাহিনী

    কুট্টিমামার দন্ত–কাহিনী

    আমি সগর্বে ঘোষণা করলাম, জানিস, আমার ছোট কাকা দাঁত বাঁধিয়েছে।

    ক্যাবলা একটা গুলতি নিয়ে অনেকক্ষণ ধরে একটা নেড়ী কুকুরের ল্যাজকে তাক করছিল। কুকুরটা বেশ বসে ছিল, হঠাৎ কী মনে করে ঘোঁক শব্দে পিঠের একটা এঁটুলিকে কামড়ে দিলে তারপর পাঁই-পাঁই করে ছুট লাগাল। ক্যাবলা ব্যাজার হয়ে বললে, দ্যুৎ। কতক্ষণ ধরে টার্গেট করছি ব্যাটা পালিয়ে গেল। আমার দিকে ফিরে বললে, তোর ছোট কাকা দাঁত বাঁধিয়েছে–এ আর বেশি কথা কী। আমার বড় কাকা, মেজ কাকা, রাঙা কাকা সবাই দাঁত বাঁধিয়েছে। আচ্ছা, কাকারা সকলে দাঁত বাঁধায় কেন বল তো? এর মানে কী?

    হাবুল সেন বললে, হঃ! এইটা বোঝেস নাই। কাকাগো কামই হইল দাঁত খিচানি। অত দাঁত খিচালে দাঁত খারাপ হইব না তো কী?

    টেনিদা বসে বসে এক মনে একটা দেশলাইয়ের কাঠি চিবুচ্ছিল। টেনিদার ওই একটা অভ্যেস কিছুতেই মুখ বন্ধ রাখতে পারে না। একটা কিছু-না-কিছু তার চিবোনো চাই-ই চাই। রসগোল্লা, কাটলেট, ডালমুট, পকৌড়ি, কাজু বাদাম–কোনওটায় অরুচি নেই। যখন কিছু জোটে না, তখন চুয়িংগাম থেকে শুকনো কাঠি–যা পায় তাই চিবোয়। একবার ট্রেনে যেতে যেতে মনের ভুলে পাশের ভদ্রলোকের লম্বা দাড়ির ডগাটা খানিক চিবিয়ে দিয়েছিল–সে একটা যাচ্ছেতাই কাণ্ড! ভদ্রলোক রেগে গিয়ে টেনিদাকে ছাগল-টাগল কী সব যেন বলেছিলেন।

    হঠাৎ কাঠি চিবুনো বন্ধ করে টেনিদা বললে, দাঁতের কথা কী হচ্ছিল র‍্যা? কী বলছিলি দাঁত নিয়ে?

    আমি বললাম, আমার ছোট কাকা দাঁত বাঁধিয়েছে।

    ক্যাবলা বললে, ইস–ভারি একটা খবর শোনাচ্ছেন ঢাকঢোল বাজিয়ে! আমার বড় কাকা, মেজ কাকা, ফুলু মাসি

    টেনিদা বাধা দিয়ে বললে, থাম থাম্ বেশি ফ্যাচফ্যাচ করিসনি। দাঁত বাঁধানোর কী জানিস তোরা? হুঁ! জানে বটে আমার কুট্টিমামা গজগোবিন্দ হালদার। সায়েবরা তাকে আদর করে ডাকে মিস্টার গাঁজা-গাবিন্ডে। সে-ও দাঁত বাঁধিয়েছিল। কিন্তু সে-দাঁত এখন আর তার মুখে নেই–আছে ডুয়ার্সের জঙ্গলে!

    –পড়ে গেছে বুঝি?

    পড়েই গেছে বটে!–টেনিদা তার খাঁড়ার মতো নাকটাকে খাড়া করে একটা উঁচুদরের হাসি হাসল–যাকে বাংলায় বলে হাই ক্লাস! তারপর বললে, সে-দাঁত কেড়ে নিয়ে গেছে।

    দাঁত কেড়ে নিয়েছে? সে আবার কী? আমি আশ্চর্য হয়ে বললাম, এত জিনিস থাকতে দাঁত কাড়তে যাবে কেন?

    –কেন? টেনিদা আবার হাসল : দরকার থাকলেই কাড়ে। কে নিয়েছে বল দেখি? ক্যাবলা অনেক ভেবে-চিন্তে বললে, যার দাঁত নেই।

    ইঃ, কী পণ্ডিত! টেনিদা ভেংচি কেটে বললে, দিলে বলে! অত সোজা নয়, বুঝলি? আমার কুট্টিমামার দাঁত যে-সে নয়–সে এক একটা মুলোর মতো। সেবাঘা দাঁতকে বাগানো যার-তার কাজ নয়।

    –তবে বাগাইল কেডা? বাঘে? হাবুলের জিজ্ঞাসা।

    –এঃ, বাঘে! বলছি দাঁড়া। ক্যাবলা, তার আগে দু আনার ডালমুট নিয়ে আয়

    হাঁড়ির মতো মুখ করে ক্যাবলা ডালমুট আনতে গেল। মানে, যেতেই হল তাকে।

    আমাদের জুলজুলে চোখের সামনে একাই ডালমুটের ঠোঙা সাবাড় করে টেনিদা বললে, আমার কুট্টিমামার কথা মনে আছে তো? সেই যে চা বাগানে চাকরি করে আর একাই দশজনের মতো খেয়ে সাবাড় করে? আরে, সেই লোকটা–যে ভালুকের নাক পুড়িয়ে দিয়েছিল?

    আমরা সমস্বরে বললাম, বিলক্ষণ! কুট্টিমামার হাতের কাজ কি এত সহজেই ভোলবার?

    টেনিদা বললে, সেই কুট্টিমামারই গল্প। জানিস তো–সায়েবরা ডেকে নিয়ে মামাকে চা বাগানে চাকরি দিয়েছিল? মামা খাসা আছে সেখানে। খায়-দায় কাঁসি বাজায়। কিন্তু বেশি সুখ কি আর কপালে সয় রে? একদিন জুত করে একটা বন-মুরগির রোস্টে যেই কামড় বসিয়েছে–অমনি ঝনঝনাৎ! কুট্টিমামার একটা দাঁত পড়ল প্লেটের ওপর খসে আর তিনটে গেল নড়ে।

    হয়েছিল কী, জানিস? শিকার করে আনা হয়েছিল তো বন-মুরগি? মাংসের মধ্যে ছিল গোটাচারেক ছররা। বেকায়দায় কামড় পড়তেই অ্যাকসিডেন্ট, দাঁতের বারোটা বেজে গেল।

    মাংস রইল মাথায় ঝাড়া তিন ঘন্টা নাচানাচি করলে কুট্টিমামা। কখনও কেঁদে বললে, পিসিমা গো তুমি কোথায় গেলে? কখনও ককিয়ে ককিয়ে বললে, ই-হি-হি-আমি গেলুম। আবার কখনও দাপিয়ে দাপিয়ে বললে, ওরে বনমুরগি রে–তোর মনে এই ছিল রে। শেষকালে তুই আমায় এমন করে পথে বসিয়ে গেলি রে!

    পাকা তিন দিন কুট্টিমামা কিচ্ছুটি চিবুতে পারল না। শুধু রোজ সের-পাঁচেক করে খাঁটি দুধ আর ডজন-চারেক কমলালেবুর রস খেয়ে কোনওমতে পিত্তি রক্ষা করতে লাগল।

    দাঁতের ব্যথা-ট্যথা একটু কমলে সায়েবরা কুট্টিমামাকে বললে, তোমাকে ডেনটিস্টের ওখানে যেতে হবে।

    –অ্যা।

    সায়েবরা বললে, দাঁত বাঁধিয়ে আসতে হবে।

    ডেনটিস্টের নাম শুনেই তো কুট্টিমামার চোখ তালগাছে চড়ে গেল। কুট্টিমামার দাদু নাকি একবার দাঁত তুলতে গিয়েছিলেন। যে-ডাক্তার দাঁত তুলেছিলেন, তিনি চোখে কম দেখতেন। ডাক্তার করলেন কী–দাঁত ভেবে কুট্টিমামার দাদুর নাকে সাঁড়াশি আটকে দিয়ে সেটাকেই টানতে লাগলেন। আর বলতে লাগলেন : ইসকী প্রকাণ্ড গজদন্ত আর কী ভীষণ শক্ত! কিছুতেই নাড়াতে পারছি না।

    কুট্টিমামার দাদু তো হাঁই-মাই করে বলতে লাগলেন, ওঁটা–ওঁটা আমার আঁক! আঁকা-টানের চোটে নাক বেরুচ্ছিল না–আঁক।

    ডাক্তার রেগে বললেন, আর হাঁক-ডাক করতে হবে না–খুব হয়েছে। আরও গোটাকয়েক টানফান দিয়ে নাকটাকে যখন কিছুতেই কায়দা করতে পারলেন না–তখন বিরক্ত হয়ে বললেন : নাঃ, হল না। এমন বিচ্ছিরি শক্ত দাঁত আমি কখনও দেখিনি! এরকম দাঁত কোনও ভদ্রলোক তুলতে পারে না।

    কুট্টিমামার দাদু বাড়ি ফিরে এসে বারো দিন নাকের ব্যথায় বিছানায় শুয়ে রইলেন। তেরো দিনের দিন উকিল ডাকিয়ে উইল করলেন : আমার পুত্র বা উত্তরাধিকারীদের মধ্যে যে-কেহ দাঁত বাঁধাইতে যাইবে, তাহাকে আমার সমস্ত সম্পত্তি হইতে চিরতরে বঞ্চিত করিব।

    অবশ্যি কুট্টিমামার দাদুর সম্পত্তিতে কুট্টিমামার কোনও রাইট নেই–তবু দাদুর আদেশ তো! কুট্টিমামা গাঁইগুই করতে লাগলেন। ভাঙা ভাঙা ইংরেজীতে মাই নোজ-টোজও বলবার চেষ্টা করলেন। কিন্তু সায়েবের গোঁজানিস তো? ঝড়াং করে বলে দিলে, নো ফোকলা দাঁত উইল ডু! দাঁত বাঁধাতেই হবে।

    কুট্টিমামা তো মনে মনে তনয়ে তারো তারিণী বলে রামপ্রসাদী গান গাইতে গাইতে, বলির পাঁঠার মতো কাঁপতে কাঁপতে গিয়ে ডেনটিস্টের কাছে হাজির। ডেনটিস্ট প্রথমেই তাঁকে একটা চেয়ারে বসালে। তারপর দাঁতের ওপরে খুর খুর করে একটা ইলেকট্রিক বুরুশ বসিয়ে সেগুলোকে অর্ধেক ক্ষয় করে দিলে। একটা ছোট হাতুড়ি দিয়ে ঠুকে ঠুকে বাকি সবকটা দাঁতকে নড়িয়ে ফেললে। শেষে বেজায় খুশি হয়ে বললে, এর দু-পাটি দাঁতই খারাপ। সব তুলে ফেলতে হবে।

    শুনেই কুট্টিমামা প্রায় অজ্ঞান। গোটা-তিনেক খাবি খেয়ে বললেন, নাকটাও?

    ডাক্তার ধমক দিয়ে বললেন, চোপরাও!

    তারপর আর কী? একটা পেল্লায় সাঁড়াশি নিয়ে ডাক্তার কুরুৎ-কুরুৎ করে কুট্টিমামার সবকটা দাঁত তুলে দিলে। কুট্টিমামা আয়নায় নিজের মূর্তি দেখে কেঁদে ফেললেন। কিচ্ছুটি নেই মুখের ভেতর–একদম গাঁয়ের পেছল রাস্তার মতো মাঝে মাঝে গর্ত। ওঁকে ঠিক বাড়ির বুড়ি ধাই রামধনিয়ার মতো দেখাচ্ছিল।

    কুট্টিমামা কেঁদে ফ্যাক ফ্যাক করে বললেন, ওগো আমার কী হল গো—

    ডাক্তার আবার ধমক দিয়ে বললে, চোপরাও! সাত দিন পরে এসো বাঁধানো দাঁত পাবে।

    বাঁধানো দাঁত নিয়ে কুট্টিমামা ফিরলেন। দেখতে শুনতে দাঁতগুলো নেহাত খারাপ নয়। খাওয়াও যায় একরকম। খালি একটা অসুবিধে হত। খাওয়ার অর্ধেক জিনিস জমে থাকত দাঁতের গোড়ায়। পরে আবার সেগুলোকে জাবর কাটতে হত।

    তবু ওই দাঁত নিয়েই দুঃখে সুখে কুট্টিমামার দিন কাটছিল। কিন্তু সায়েবদের কাণ্ড জানিস তো? ওদের সুখে থাকতে ভূতে কিলোয় কিছুতেই তিনটে দিন বসে থাকতে পারে না। একদিন বললে, মিস্টার গাঁজা-গাবিণ্ডে, আমরা বাঘ শিকার করতে যাব। তোমাকেও যেতে হবে আমাদের সঙ্গে।

    বাঘ-টাঘের ব্যাপার কুট্টিমামার তেমন পছন্দ হয় না। কারণ বাঘ হরিণ নয়–তাকে খাওয়া যায় না, বরং সে উলটে খেতে আসে। কুট্টিমামা খেতে ভালোবাসে, কিন্তু কুট্টিমামাকেই কেউ খেতে ভালোবাসে–একথা ভাবলে তাঁর মন ব্যাজার হয়ে যায়। বাঘগুলো যেন কী! গায়ে যেমন বিটকেল গন্ধ, স্বভাব-চরিত্তিরও তেমনি যাচ্ছেতাই।

    কুট্টিমামা কান চুলকে বললে, বাঘ স্যার-ভেরি ব্যাড স্যা–আই নট লাইক স্যার

    কিন্তু সায়েবরা সেকথা শুনলে তো! গোঁ যখন ধরেছে তখন গেলই। আর কুট্টিমামাকে চ্যাংদোলা করে নিয়ে চলে গেল।

    গিয়ে ডুয়ার্সের জঙ্গলে এক ফরেস্ট বাংলোয় উঠল।

    চারদিকে ধুন্ধুমার বন। দেখলেই পিত্তি ঠাণ্ডা হয়ে আসে। রাত্তিরে হাতির ডাক শোনা যায়বাঘ হুম হাম করতে থাকে। গাছের ওপর থেকে টুপ টুপ করে জোঁক পড়ে গায়ে। বানর এসে খামস ভেংচি কাটে। সকালে কুট্টিমামা দাড়ি কামাচ্ছিলেন। একটা বানর এসে ইলিক চিলিক এইসব বলে তাঁর বুরুশটা নিয়ে গেল। আর সে কী মশা। দিন নেই-রাত্তির নেই–সমানে কামড়াচ্ছে। কামড়ানোও যাকে বলে! দু-তিন ঘন্টার মধ্যেই হাতে পায়ে মুখে যেন চাষ করে ফেললে।

    তার মধ্যে আবার সায়েবগুলো মোটর গাড়ি নিয়ে জঙ্গলের ভেতর ঢুকল বাঘ মারতে।

    মিস্টার গাঁজা-গাবিন্ডে, তুমিও চলো।

    কুট্টিমামা তক্ষুনি বিছানায় শুয়ে হাত পা ছুঁড়তে আরম্ভ করে দিলে। চোখ দুটোকে আলুর মতো বড় বড় করে, মুখে গাজলা তুলে বলতে লাগল : বেলি পেইন স্যার-পেটে ব্যথা স্যার–অবস্থা সিরিয়াস স্যার

    দেখে সায়েবরা ঘোঁয়া-ঘোঁয়া–ঘ্যাঁয়োৎ-ঘ্যাঁয়োৎ করে বেশ খানিকটা হাসল।-ইউ গাঁজা-গাবিন্ডে, ভেরি নটি বলে একজন কুট্টিমামার পেটে একটা চিমটি কাটলে–তারপর বন্দুক কাঁধে ফেলে শিকারে চলে গেল।

    আর যেই সায়েবরা চলে যাওয়া অমনি তড়াক করে উঠে বসলেন কুট্টিমামা। তক্ষুনি এক ডজন কলা, দুটো পাঁউরুটি আর এক শিশি পেয়ারার জেলি খেয়ে, শরীরটরির ভালো করে ফেললেন।

    বাংলোর পাশেই একটা ছোট পাহাড়ি ঝরনা। সেখানে একটা শিমুল গাছ। কুট্টিমামা একখানা পেল্লায় কালীসিঙ্গির মহাভারত নিয়ে সেখানে এসে বসলেন।

    চারদিকে পাখি-টাখি ডাকছিল। পেটটা ভরা ছিল, মিঠে মিঠে হাওয়া দিচ্ছিল–কুট্টিমামা খুশি হয়ে মহাভারতের সেই জায়গাটা পড়তে আরম্ভ করলেন–যেখানে ভীম বরাক্ষসের খাবার-দাবারগুলো সব খেয়ে নিচ্ছে।

    পড়তে পড়তে ভাবের আবেগে কুট্টিমামার চোখে জল এসেছে, এমন সময় গ–গ

    কুট্টিমামা চোখ তুলে তাকাতেই :

    কী সর্বনাশ! ঝরনার ওপারে বাঘ!

    কী রূপ বাহার! দেখলেই পিলে-টিলে উলটে যায়। হাঁড়ির মতো প্রকাণ্ড মাথা, আগুনের ভাঁটার মতো চোখ, হলদের ওপরে কালো কালো ডোরা, অজগরের মতো বিশাল ল্যাজ। মস্ত হাঁ করে, মুলোর মতো দাঁত বের করে আবার বললে, গর—র–র ৷

    একেই বলে বরাত! যেবাঘের ভয়ে কুট্টিমামা শিকারে গেল না, সে বাঘ নিজে থেকেই দোরগোড়ায় হাজির। আর কেউ হলে তক্ষুনি অজ্ঞান হয়ে যেত, আর বাঘ তাকে সারিডন ট্যাবলেটের মতো টপাং করে গিলে ফেলত। কিন্তু আমারই মামা তো–ভাঙে তবু মচকায় না। তক্ষুনি মহাভারত বগলদাবা করে এক লাফে একেবারে শিমুল গাছের মগডালে।

    বাঘ এসে গাছের নীচে থাবা পেতে বসল। দু-চারবার থাবা দিয়ে গাছের গুঁড়ি আঁচড়ায়, আর ওপর দিকে তাকিয়ে ডাকে : ঘঁর-র ঘুঁ–ঘু। বোধহয় বলতে চায় তুমি তো দেখছি পয়লা নম্বরের ঘুঘু!

    কিন্তু বাঘটা তখনও ঘুঘুই দেখেছে-ফাঁদ দেখেনি। দেখল একটু পরেই। কিছুক্ষণ পরে বাঘটা রেগে যেই ঝাঁক করে একটা হাঁক দিয়েছে–অমনি দারুণ চমকে উঠেছে কুট্টিমামা, আর বগল থেকে কালীসিঙ্গির সেই জগঝম্প মহাভারত ধপাস করে নীচে পড়েছে। আর পড়বি তো পড় সোজা বাঘের মুখে। সেই মহাভারতের ওজন কমসে কম পাকা বারো সের–তার ঘায়ে মানুষ খুন হয় বাঘও তার ঘা খেয়ে উলটে পড়ে গেল। তারপর গোঁ-গোঁ-ঘেয়াং ঘেয়াং বলে বারকয়েক ডেকেই–এক লাফে ঝরনা পার হয়ে জঙ্গলের মধ্যে হাওয়া!

    কুট্টিমামা আরও আধ ঘন্টা গাছের ডালের বসে ঠকঠক করে কাঁপল। তারপর নীচে নেমে দেখল মহাভারত ঠিক তেমনি পড়ে আছে তার গায়ে আঁচড়টিও লাগেনি। আর তার চারপাশে ছড়ানো আছে কেবল দাঁত বাঘের দাঁত। একেবারে গোনা-গুনতি বত্রিশটা দাঁত-মহাভারতের ঘায়ে একটি দাঁতও আর বাঘের থাকেনি। দাঁতগুলো কুড়িয়ে নিয়ে, মহাভারতকে মাথায় ঠেকিয়ে, কুট্টিমামা এক দৌড়ে বাংলোতে। তারপর সায়েবরা ফিরে আসতেই কুট্টিমামা সেগুলো তাদের দেখিয়ে বললে, টাইগার টুথ।

    ব্যাপার দেখে সায়েবরা তো থ!

    তাই তো–বাঘের দাঁতই বটে? পেলে কোথায়?

    কুট্টিমামা ডাঁট দেখিয়ে বুক চিতিয়ে বললে, আই গো টু ঝরনা। টাইগার কাম। আই ডু বকসিং–মানে ঘুষি মারলাম। অল টুথ ব্রেক। টাইগার কাট ডাউন–মানে বাঘ কেটে পড়ল।

    সায়েবরা বিশ্বাস করল কি না কে জানে, কিন্তু কুট্টিমামার ভীষণ খাতির বেড়ে গেল। রিয়্যালি গাঁজা-গাবিন্ডে ইজ এ হিরো! দেখতে কাকঁলাসের মতো হলে কী হয় হি ইজ এ গ্রেট হিরো! সেদিন খাওয়ার টেবিলে একখানা আস্ত হরিণের ঠ্যাং মেরে দিলেন কুট্টিমামা।

    পরদিন আবার সায়েবরা শিকারে যাওয়ার সময় ওকে ধরে টানাটানিঃ আজ তোমাকে যেতেই হবে আমাদের সঙ্গে। ইউ আর এ বিগ পালোয়ান।

    মহা ফ্যাসাদ। শেষকালে কুট্টিমামা অনেক করে বোঝালেন, বাঘের সঙ্গে বকসিং করে ওঁর গায়ে খুব ব্যথা হয়েছে। আজকের দিনটাও থাক।

    সায়েবরা শুনে ভেবেচিন্তে বললে, অল রাইট অল রাইট।

    আজকে কুট্টিমামা হুঁশিয়ার হয়ে গেছেন বাংলোর বাইরে আর বেরুলেনই না। বাংলোর বারান্দায় একটা ইজি চেয়ারে আবার সেই কালীসিঙ্গির মহাভারত নিয়ে বসলেন।

    –ঘেঁয়াও–ঘুঁঙ

    কুট্টিমামা আঁতকে উঠলেন। বাংলোর সামনে তারের বেড়া–তার ওপারে সেই বাঘ। কেমন যেন জোড়হাত করে বসেছে। কুট্টিমামার মুখের দিকে তাকিয়ে করুণ স্বরে বললে, ঘেঁয়াং কুঁই!

    আর হাঁ করে মুখটা দেখাল!

    ঠিক সেই রকম। দাঁতগুলো তোলবার পরে কুট্টিমামার মুখের যে-চেহারা হয়েছিল, অবিকল তা-ই! একেবারে পরিষ্কার–একটা দাঁত নাই! নির্ঘাত রামধনিয়ার মুখ।

    বাঘটা হুবহু কান্নার সুরে বললে—ঘ্যাঁ–ঘ্যাঁ–ভ্যাঁও! ভাবটা এই, দাঁতগুলো তো সব গেল দাদা! আমার খাওয়া-দাওয়া সব বন্ধ! এখন কী করি?

    কিন্তু তার আগেই এক লাফে কুট্টিমামা ঘরে ঢুকে দরজা বন্ধ করেছেন। বাঘটা আরও কিছুক্ষণ ঘাং-এ্যাং—ভ্যা–ভ্যা করে কেঁদে বনের মধ্যে চলে গেল।

    পরদিন সকালে কুট্টিমামা জানালার পাশে দাঁড়িয়ে, বাঁধানো দাঁতের পাটি দুটো খুলে নিয়ে, বেশ করে মাজছিলেন। দিব্যি সকালের রোদ উঠেছে সায়েবগুলো ভোঁস ভোঁস করে ঘুমুচ্ছে তখনও, আর কুট্টিমামা দাঁড়িয়ে দাঁত মাজতে মাজতে ফ্যাকফ্যাক গলায় গান গাইছিলেন :এমন চাঁদের আলো, মরি যদি সে-ও ভালো

    সকাল বেলায় চাঁদের আলোয় গান গাইতে গাইতে কুট্টিমামার বোধহয় আর কোনও দিকে খেয়ালই ছিল না। ওদিকে সেই ফোকলা বাঘ এসে জানলার বাইরে বসে রয়েছে ঝোপের ভেতরে। কুট্টিমামার দাঁত খোলা বুরুশ দিয়ে মাজাসব দেখছে এক মনে। মাজা-টাজা শেষ করে যেই কুট্টিমামা দাঁত দুপাটি মুখে পুরতে যাবেন–অমনিঃ ঘোঁয়াৎ ঘালুম।

    অর্থাৎ তোফা–এই তো পেলুম।

    জানলা দিয়ে এক লাফে বাঘ ঘরের মধ্যে।

    টা-টাইগার–পর্যন্ত বলেই কুট্টিমামা ফ্ল্যাট।

    বাঘ কিন্তু কিছুই করল না। টপাৎ করে কুট্টিমামার দাঁত দু-পাটি নিজের মুখে পুরে নিল কুট্টিমামা তখনও অজ্ঞান হননি–জ্বলজ্বল করে দেখতে লাগলেন, সেই দাঁত বাঘের মুখে বেশ ফিট করেছে। দাঁত পরে বাঘা আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে বেশ খানিকক্ষণ নিঃশব্দে বাঘা হাসি হাসল, তারপর টপ করে টেবিল থেকে টুথব্রাশ আর টুথপেস্টের টিউব মুখে তুলে নিয়ে জানলা গলিয়ে আবার

    কুট্টিমামার ভাষায়–একেবারে উইন্ড! মানে হাওয়া হয়ে গেল।

    টেনিদা থামল। আমাদের দিকে তাকিয়ে গর্বিতভাবে বললে, তাই বলছিলুম, দাঁত বাঁধানোর গল্প আমার কাছে করিসনি! হুঃ!

    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27 28 29 30 31 32 33 34 35 36 37 38 39 40 41 42 43 44 45 46 47 48 49 50 51 52 53 54 55 56 57 58 59 60 61 62 63 64 65 66 67 68 69 70 71 72 73 74 75 76 77 78 79 80 81 82 83 84 85 86 87 88 89 90 91 92 93 94 95 96 97 98 99 100 101 102 103
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleফাউণ্ডেশন অ্যাণ্ড এম্পায়ার – আইজাক আসিমভ
    Next Article ছোটগল্প – নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়

    Related Articles

    নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়

    সমগ্র কিশোর সাহিত্য – নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়

    September 2, 2025
    নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়

    ছোটগল্প – নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়

    September 2, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Demo
    Most Popular

    সমগ্র কিশোর সাহিত্য – নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়

    September 2, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    সমগ্র কিশোর সাহিত্য – নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়

    September 2, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Our Picks

    সমগ্র কিশোর সাহিত্য – নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়

    September 2, 2025

    ছোটগল্প – নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়

    September 2, 2025

    টেনিদা সমগ্র – নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়

    September 2, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    Sign In or Register

    Welcome Back!

    Login below or Register Now.

    Lost password?

    Register Now!

    Already registered? Login.

    A password will be e-mailed to you.