Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    সমগ্র কিশোর সাহিত্য – নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়

    September 2, 2025

    ছোটগল্প – নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়

    September 2, 2025

    টেনিদা সমগ্র – নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়

    September 2, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • 🔖
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    Subscribe
    সাইন ইন
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    টেনিদা সমগ্র – নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়

    নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায় এক পাতা গল্প790 Mins Read0

    ব্রহ্মবিকাশের দন্তবিকাশ

    ব্রহ্মবিকাশের দন্তবিকাশ

    হাবলু আর ক্যাবলা কলকাতায় নেই। গরমের ছুটিতে একজন গেছে বহরমপুরে পিসিমার বাড়িতে আম খেতে, আর একজন মা বাবার সঙ্গে উধাও হয়েছে শিলঙে। এখন পটলডাঙা আলো করে আছি আমরা দুই মূর্তি আমি আর টেনিদা। টেনিদাকেও দিন তিনেক দেখা যাচ্ছে না–কোন তালে যে ঘুরছে কে জানে।

    ভাবছি বলটুদার কাছেই যাই, বেশ সময় কাটবে। বলটুদা আবার টেনিদার নাম শুনতে পারে না বলে, টেনিদা আবার মানুষ নাকি? এক নম্বরের চালিয়াত, কেবল উষ্টুম-ধুষ্টুম গল্প বানাতে পারে- আর সকলের সঙ্গে মারামারি করতে পারে– ছোঃ ছোঃ! আর টেনিদা বলে, বল্টে? ওটা একটা গোভূত। ফুটবল-মাঠে একবার পেলে এমন একখানা ল্যাং মেরে দেব না যে, একমাস চিতপটাং হয়ে থাকবে।

    বলটুদার কাছেই বেরুচ্ছি, হঠাৎ টেনিদার সঙ্গে দেখা।

    কী রে, মুখখানা যে ভারি খুশি-খুশি দেখছি- একেবারে ছানার পোলাওয়ের মতো! বলি, যাওয়া হচ্ছে কোথায়?

    প্রায় বলেই ফেলেছিলুম বলটুদার বাড়ি; কিন্তু সঙ্গে সঙ্গে সামলে নিলুম। তা হলেই আর দেখতে হত না– ফটাং করে একটা রামগাঁট্টা পড়ত মাথার ওপর। বললুম, এই ইয়ে–মানে–একটু হাওয়া খেতে যাচ্ছিলুম।

    দুদ্দুর–হাওয়া আবার খায় কে? হাওয়া খাওয়ার কোনও মানে হয় নাকি? হাওয়া খেয়ে পেট ভরে? চপ, কাটলেট, পুডিং–এইসব খাবি?

    শুনে, আমার রোমাঞ্চ হল।

    বললুম, কেন খাব না আলবাত খাব। পেলেই খেতে থাকব! কে খাওয়াবে–তুমি?

    টেনিদা আমার পিঠে ধাঁই করে চড় মারল একটা।

    বদনাম দিসনি প্যালা বলে দিচ্ছি সেকথা।

    বদনাম মানে?

    আমি– এই টেনিরাম শর্মা কাউকে, কক্ষনো খাওয়াই না–নিজেই খেয়ে থাকি বরাবর। এ হচ্ছে আমার নীতি–মানে প্রিনসিপল। তোকে খাওয়াতে গিয়ে প্রিনসিপল নষ্ট করব? তুই তো দেখছি একটা নিরেট কুরুবক।

    আমার বুকভরা আশা ধুক করে নিবে গেল। শুকনো মুখে বললুম, তবে কে খাওয়াবে? কার গরজ পড়ছে আমাকে চপ কাটলেট-পুডিং খাওয়াবে?

    আছে-আছে–লোক আছে। সব খাবার সাজিয়ে বসে আছে। কেবল খেতে পারলে হয়।

    অ–দোকানে।–আমি ব্যাজার হয়ে বললুম, খাওয়া-দাওয়ার কথা নিয়ে ঠাট্টা কোরো না টেনিদা, এসব খুব সিরিয়াস ব্যাপার। মনে ভীষণ ব্যথা লাগে।

    তোর মগজে কিচ্ছু নেই, স্রেফ ঝিঙে-চচ্চড়িতে ভরতি। দোকান-টোকান নয়- একদম ফ্রি। তুই গেলেই টেবিল সাজিয়ে খেতে দেবে। কিন্তু খেতে পারবি না।

    শুনে কেমন তালগোল পাকিয়ে গেল–টেবিল সাজিয়ে খেতে দেবে, অথচ খেতে পারব না? পচা-টচা বুঝি? নাকি কেষ্টনগরের মাটির তৈরি?

    উঁহু আসল–ওরিজিন্যাল। একদম ফ্রেশ। খেতে দেবে, অথচ খেতে পারবি না। উলটে, চোখ কপালে তুলে মরতে মরতে ফিরে আসবি।

    এ যে দেখছি রহস্যের খাসমহল তৈরি করছে। চপ কাটলেট-পুডিং নিয়ে এসব ধাষ্টামো আমার ভালো লাগে না। আমি রেগে বললুম, সব বানিয়ে বানিয়ে যা তা বলছ। আমি চললুম।

    আহা-হা-চটে যাচ্ছিস কেন?–টেনিদা বললে, আমি তো তোকে নেমন্তন্ন করতেই আসছিলুম। সেইসঙ্গে বলতে আসছিলুম, খেতে দেবে অথচ খেতে পারবি নে, মাঝখান থেকে প্রাণ নিয়ে টানাটানি।

    খেতে দিয়ে বুঝি লাঠিপেটা করে?

    দ্যুৎ! খুব মিষ্টি মিষ্টি হেসে হাসির গল্প করে। আর সেই গল্পই মারাত্মক।

    কিচ্ছু বুঝতে পারছি না।

    মিটমিট করে হেসে টেনিদা বললে, তা হলে সবটা খুলে বলি তোকে। আয় বসা যাক একটু।

    দুজনে মিলে বসে পড়লুম চাটুজ্যেদের বোয়াকে। টেনিদা বললে, ব্রহ্মবিকাশবাবুকে জানিস?

    বললুম, না। অমন বিটকেল নামের কাউকে আমি চিনি না। চিনতে চাই না।

    তিনিই খাওয়াতে চান।

    খাওয়াতে চান তো খেতে দেন না কেন? তার মানে কী?

    মানে–ওইটেই ওঁর রসিকতা।

    অ্যাঁ!

    বলছি, বলছি, বেশ মন দিয়ে শুনে যা। বুঝলি, ব্রহ্মবিকাশবাবুকে আমিও চিনতুম না। একদিন শ্ৰদ্ধানন্দ পার্কের সামনে নিজেই যেচে আলাপ করলেন আমার সঙ্গে। বললেন, তুমিই বুঝি পটলডাঙার টেনিরাম? বেশ বেশ! বড় আনন্দ হল। অনেক নাম শুনেছি তোমার তোমার বন্ধু প্যালারামের লেখা দু-একটা গল্পও পড়ে ফেলেছি। তা এসো না আজ বিকেলে অখিল মিস্তিরি লেনে আমার বাড়িতে। একসঙ্গে চা-টা খাওয়া যাবে।

    বুঝলি, সে হল গত বছর পুজোর সময়, তোরা কেউ কলকাতায় নেই তখন। থাকলে তো দলবলসুদ্ধই নিয়ে যেতুম। কিন্তু গিয়ে বুঝলুম তোদের নিয়ে গেলে একটা কেলেঙ্কারি হয়ে যেত।

    অখিল মিস্তিরি লেনে বেশ বড় বাড়ি পাট না ঝোলা গুড় কিসের যেন ব্যবসা করে অনেক টাকা জমিয়েছেন ব্রহ্মবিকাশবাবু। বিয়ে-থা করেননিঃ একা থাকেন, খুব ছিমছাম দারুণ পরিপাটি। বাড়িতে থাকবার মধ্যে একজন আধবুড়ো চাকর।

    দরজার বেল টিপতেই সে এসে খুব খাতির করে নিয়ে গেল। একেবারে ডাইনিং হলে। সে একেবারে এলাহি কাণ্ড- বুঝলি! পট ভরতি চপ কাটলেট-সিঙাড়া, প্লেটে বোমার তালের মতো ইয়া এক পুডিং। কী সব দামী দামী কাপ-প্লেট, সে আর কী বলব তোকে। একটা চেয়ারে জাঁকিয়েই বসেছিলেন ব্রহ্মবিকাশবাবু, আমাকে দেখেই চিনিমাখা হাসি হেসে বললেন, এসো হে, তোমার জন্যেই বসে আছি।

    খাবারের আয়োজন দেখেই তো আমার এক বচ্ছরের খিদে একসঙ্গে পেয়ে গেল। বললুম,হেঁ-হেঁ, কী সৌভাগ্য। বলেই, প্লেটে গোটা দুই কাটলেট একসঙ্গে তুলে নিলুম।

    ব্ৰহ্মবিকাশ আড়চোখে একবার চেয়ে দেখলেন। তারপর মুচকি হেসে বললেন, এসো হে টেনিরাম, একটু মজা করে খাওয়া যাক। শুনেছি তুমি খুব খেতে পারো; আমিও খাইয়ে লোক। কম্পিটিশন হোক, দেখা যাক কে কত তাড়াতাড়ি খেতে পারে।

    জানিস তো, এরকম কম্পিটিশনে আমি সর্বদাই রেডি। নিজের খাবার চক্ষের নিমেষে ফিনিশ করে কিভাবে তোদের প্লেটগুলি টেনে নিই–সে তো হাড়ে হাড়ে টের পাস তোরা।…বললুম, হেঁ-হেঁ, সে তো খুব আনন্দের কথা। মনেমনে ভাবলুম, দাঁড়ান মশাই, আজ ব্ৰহ্ম খাওয়া দেখিয়ে দেব আপনাকে।

    কিন্তু

    টেনিদা থামল। আমি আকুল হয়ে বললুম, কিন্তু কী?

    দাঁড়া না ঘোড়াড্ডিম।–

    মুখটাকে আলুভাজার মতো করে টেনিদা বললে, মনের দুঃখুটা একটু সামলে নিতে দে। বুঝলি, কিচ্ছু খেতে পারলুম না–একখানা মোশ্চম বিষম খাওয়া ছাড়া। আর আমি যখন কপালে চোখ তুলে ত্রিভুবন দেখছি, তখন সব খাবারগুলো ব্ৰহ্মবিকাশবাবু পরিপাটি করে খেয়ে ফেলেন।

    কী রকম?

    আরে সেইটেই তো প্যাঁচ। এক কামড়ে যেই আধখানা কাটলেট মুখে পুরেছি, ব্রহ্মবিকাশ বললেন, ওহে টেনিরাম, একটা মজার ব্যাপার শোনো। এক ভদ্দরলোক না– পকেটে একটা মস্ত ছুঁচো নিয়ে বাসে উঠেছেন। যেই পকেটমার সে-পকেটে হাত ঢুকিয়েছে, অমনি ছুঁচোটা ই-ক্রিচ বলে দিয়েছে তার আঙুলে কামড়ে

    বুঝলি, সেরেফ একটা বাজে মিথ্যে কথা। কেউ কি ছুঁচো পকেটে নিয়ে বাসে ওঠে? ছুঁচো কি মানিব্যাগ না রুমাল? কিংবা চাবির রিং? কিন্তু এমন বিটকেল ভঙ্গিতে কথাটা বললেন যে শুনে আমার বেদম হাসি পেয়ে গেল। সেই হাসির চোখে আধখানা কাটলেট গলায় গিয়ে আটকাল- দম আটকে যাই আর কি! চাকরটা বোধহয় জল হাতে রেডিই ছিল; মাথায় থাবড়ে-থাবড়ে জল দিতে যখন আমি খানিকটা সুস্থ হলুম–তখন বুঝলি, প্রায় সব ফিনিশ–কেবল আমার পাতের সেই আধখানা কাটলেট পড়ে আছে। গোটাটা উনিই তুলে মেরে দিয়েছেন।

    চুকচুক করে বললেন, আহা-হা টেনিরাম, বিষম খেয়ে কম্পিটিশনে হেরে গেলে? খাবার তো আর নেই– একটু চা খাবে নাকি?

    চা খেতে গিয়ে আবার একখানা বিষম খাই আর কি! আমি ঘোঁত ঘোঁত করে বেরিয়ে এলুম।

    টেনিদার কথা শুনে আমি বললুম, ওটা অ্যাকসিডেন্ট। হঠাৎ বিষম খেয়েই তুমি খেতে পেলে না।

    মোটেই না। ওই হচ্ছে ওঁর কায়দা। রাস্তায় বেরিয়ে চার-পাঁচটা ছেলের সঙ্গে দেখা। দুজন আমাকে চেনে। একজন ওই বিশু–সুরেন্দ্রনাথ কলেজে ব্যাক খেলে। বিশু বললে, ব্যাপার কী টেনিদা? ব্রহ্মবিকাশ চোংদারের বাড়ি বুঝি খেতে গিয়েছিলে? প্রাণ নিয়ে ফিরেছ তো?

    আমি তো থ।

    তাদের কাছেই শুনলাম। এ হল ব্ৰহ্মবিকাশবাবুর খুব মজার খেলা। লোককে খেতে বলেন, তারা খাওয়া শুরু করলেই বিচ্ছিরি ভঙ্গিতে একটা উদ্ভট কথা বলে দেন। সে তক্ষুনি বিষম খায় : প্রাণ নিয়ে টানাটানি পড়ে আর সেই ফাঁকে ব্রহ্মবিকাশ সব সাফ করে দেন। এই সেই কথামালার শেয়াল আর সারসের গপ্পোর মতো-বুঝেছিস?

    আমি শুনে বললাম, কেউ যদি না হাসে, রামগরুড় হয়?

    রামগরুড়কেও হাসিয়ে দেবেন : এমনি ওঁর বলার কায়দা। তুই আমি কী রে- একবার এক জাঁদরেল কাবুলিওয়ালাকে পর্যন্ত।

    কাবুলিওয়ালা! তাকে পেলেন কোথায়?

    কী করবেন! কেউ তো আর আসে না- সবাই চিনে ফেলেছে কিনা। শেষে রাস্তা থেকে এক কাবুলিওয়ালাকে অনেক ভুজুং ভাজুং দিয়ে ডেকে আনলেন। তারপর খেতে দিয়েই শুরু করলেন- সমঝা হ্যায় আগা সাহেব, এক আদমিকো বহুৎ লম্বে দাড়ি থা। ওহি দাড়িমে এক জিন তো ঘুস গিয়া। যব উয়ো আদমি কু খানেকো নিয়ে মুখে হাত লে যাতা, তব ওহি জিন সেই সব লাড্ডু-মণ্ডা ঝাঁ করে কেড়ে লেতা, আর দাড়িমে ছিপায়কে আপনি খা লেতা।

    মানে, বুঝলি না, একটা লোকের লম্বা দাড়ির ভেতরে জিন–মানে একটা দৈত্য ঢুকে গিয়েছিল। লোকটা লাড্ডু-মণ্ডা কিছু খাবার জন্যে মুখ তুললেই ঝাঁ করে কেড়ে নিয়ে দাড়িতে লুকোনো দৈত্যটা সেগুলো খেয়ে ফেলত।…যেই বলা–কাবুলিওয়ালা অ্যায়সা বিষম খেল যে তিন দিন হাসপাতালে। তারপর সেই-যে দেশে চলে গেল, আর তার পাত্তা নেই।

    আমি বললুম, কী ডেনজারাস!

    শুধু ডেনজারাস? যাকে বলে পুঁদিচ্চেরি। কিন্তু এখন হয়েছে কী, আজ সকালে ওঁর সঙ্গে আমার দেখা হয়েছিল। বললেন, টেনিরাম, অনেকদিন তো তোমার সঙ্গে চা খাওয়া হয়নি, এসো না আজ বিকেলে। বেশ মজার গপ্পো-টগ্লো করা যাবে। আমি বললাম, আমার বন্ধু প্যালাকেও সঙ্গে আনব নাকি? উনি বললেন, সে তো খুব ভালো কথা নিশ্চয় নিয়ে আসবে। কী রে যাবি?

    আঁতকে বললুম, উঁহু, নেভার। আমি চপ কাটলেট খেতে চাই, বিষম খেতে চাই না।

    খুব গম্ভীর হয়ে টেনিদা একটু ভাবল। তারপর বললে, লুক হিয়ার, প্যালা।

    ইয়েস স্যার।

    ইয়ার্কি দিসনি ব্যাপারটা খুব পুঁদিচ্চেরি–একেবারে মেফিস্টোফিলিস যাকে বলে। আমি একটা প্ল্যান ঠাউরেছি।

    কোনও প্ল্যানের ভেতরে আমি নেই। আমার আবার একটুতেই দারুণ হাসি পায়। মারা যাব নাকি শেষ পর্যন্ত?

    দাঁড়া না কাঁচকলা। শোন। যেই উনি বেয়াড়া একটা হাসির গল্প আরম্ভ করবেন না–তুই কটাস করে আমাকে একটা চিমটি লাগাবি; আমিও একটা লাগিয়ে দেব তোকে। ব্যস আর হাসাতেই পারবেন না। তারপর–ডিলা–গ্র্যান্ডি—হুঁ, মাথায় একটা মতলব এসেছে। দিচ্ছি আজকে ব্রহ্মবিকাশ চোংদারকে ম্যানেজ করে। এখন উঠে পড়ছটা বাজে, কুইক।

    আমি যাব না।

    তোকে যেতেই হবে। নইলে এক থাপ্পড়ে তোর কান

    কানপুরে পাঠিয়ে দেব।

    ইয়া! একদম কারেক্ট! ওঠ–কুইক-কুইক

    .

    কী করা যায়, যেতেই হল ব্রহ্মবিকাশের বাড়িতে। টেনিদা যা বলেছিল ঠিক তাই। সেই বাড়ি, সেই আধবুড়ো চাকর, সেই ডাইনিং হল। চেয়ারে ব্রহ্মবিকাশ চোংদার। আর টেবিলে–

    সে আর কী বলব। দেখলেই মনে হয় ঝাঁপিয়ে পড়ি। কিন্তু হাসি হাসি মুখে ব্রহ্মবিকাশ তাকিয়ে আছেন তিনি সবাইকে খেতে ডাকবেন, অথচ কাউকে খেতে দেবেন না। এরকম যাচ্ছেতাই লোক যে সংসারে থাকতে পারে আমি জানতুম না।

    ব্ৰহ্মবিকাশ মুচকে মুচকে হাসছিলেন আর রাগে আমার গা জ্বলে যাচ্ছিল। বললেন, তুমিই বুঝি প্যালারাম? শিঙিমাছ দিয়ে পটোলের ঝোল খেতে বুঝি খুব ভালোবাস?

    বললুম, সে আগে খেতুম–ছেলেবেলায়। এখন কালিয়া কাবাব কোর্মা খেয়ে থাকি।

    ভালো–ভালো। আরে মানুষ তো খাওয়ার জন্যেই বেঁচে থাকে। এসো, লেগে যাও। কম্পিটিশন হোক। দেখা যাক, কে আগে খেতে পারে।

    টেনিদা আমার গা টিপল।

    তারপর যা হল, সংক্ষেপে বলি।

    একটা গরম-গরম ফুলকপির সিঙাড়ায় সবে কামড় বসিয়েছি হঠাৎ ব্রহ্মবিকাশ বললেন, একটা কাণ্ড হয়েছে শোনো। এক লোকের খুব নাক ডাকত। তার ঘরে চোর ঢুকেছে। আর তক্ষুনি একটা গুবরে পোকা বোঁ করে উড়ে বসেছে লোকটার নাকে। তার নাক ডাকার ধাক্কায় গুবরে পোকাটা বুলেটের মতো ঠিকরে গিয়ে ঠাস করে চোরটার কপালে

    বলার কায়দাই এমনি যে তক্ষুনি স্রেফ আমার অপঘাত ঘটে যেত। কিন্তু সঙ্গে সঙ্গে আমার হাঁটুতে টেনিদার এক রামচিমটি আর আমিও টেনিদার পিঠে আর এক মোক্ষম চিমটি। দুজনেই এক সঙ্গে চ্যাঁ করে উঠলুম।

    ব্ৰহ্মবিকাশ কেমন বোকা বনে গেলেন; তক্ষুনি থেমে গেল গল্পটা।

    অ্যা–কী হল তোমাদের?

    আমার হাঁটু জ্বালা করছিল, টেনিদারও যে খুব আরাম লাগছিল তা নয়। উচ্ছে খাওয়া-মুখে টেনিদা বললে, আজ্ঞে–ইয়ে–হয়েছে কী, হাসির গল্প শুনলেই আমাদের কেমন কান্না পায়।

    কান্না পায়!

    পায় বইকি। শিব্রামের গপ্পো পড়তে গেলেই তো প্যালার দাঁতকপাটি লাগে। আমি তো সুকুমার রায়ের পাগলা দাশু পড়ে এত কেঁদেছিলুম যে বাড়িময় জল থইথই।

    অ্যাঁ!

    ব্ৰহ্মবিকাশ সামলে নিতে চেষ্টা করলেন, সেই ফাঁকে আমাদের হাত চলতে লাগল। তারপরেই এহে–ভারি দুঃখের কথা বলে, ভীষণ ব্যাজার হয়ে দুটো চিংড়ির কাটলেটে টান দিলেন, টেনিদা আবার একটা তাঁর হাত থেকে প্রায় কেড়ে আনল।

    ব্রহ্মবিকাশ বোধহয় আর-একটা কিছু ঠাওরাতে যাচ্ছিলেন, হঠাৎ টেনিদা বললে, ব্রহ্মবিকাশবাবু

    প্রাণপণে কাটলেট চিবুতে চিবুতে ব্রহ্মবিকাশ বললেন, অ্যাঁ?

    আপনি তো হাসির গপ্পো জানেন, আমি খুব ভালো ম্যাজিক জানি।

    অ্যাঁ!

    এই যে দুটো জলের গেলাস দেখছেন, দূর থেকে এই গেলাসের জল আমি বদলে দেব। কখনও লাল হয়ে যাবে, কখনও নীল, কখনও হলদে, কখনও বেগুনী, কখনও সবুজ। শুধু মন্তর পড়ে।

    শুনে ব্রহ্মবিকাশের চিবুনি থেমে গেল।

    অ্যাঁ! তাও কি হয় নাকি? পিসি সরকার হলে নাকি হে?

    পি-সি সরকার! তিনি তো আমার কাছে এটা শেখবার জন্যে ঝুলোঝুলি, আমিই শেখাইনি। দেখতে চান ম্যাজিকটা? নিন হাত পাতুন, নানা উলটো করে দুহাতের পাতা মেলে দিন টেবিলের ওপর। ইয়া–কারেক্ট।

    ব্রহ্মবিকাশ কিছু না বুঝেই হাতের পাতা উবুড় করে টেবিলে মেলে দিয়েছিলেন। তিনি জানলেন না যে কী হারাইতেছেন? এবং পত্রপাঠ টেনিদা দুটো জলভরতি গ্লাস তাঁর দুহাতের চেটোয় বসিয়ে দিলে।

    ধরে থাকুন– ধরে থাকুন। ধৈর্য ধরে বসে থাকুন; আস্তে আস্তে জল নীল হবে– লাল হবে হলদে হবে–বেগুনী হবে–প্যালা, কুইক কুইক।

    আর বলবার অপেক্ষা রাখে? আমি তখন কুইক নই–কুইকেস্ট! আর টেনিদা চালাচ্ছিল একেবারে জেট-প্লেনের স্পিডে।

    ব্ৰহ্মবিকাশ হাহাকার করে উঠলেন।

    আরে–আরে—

    আরে–আরে নয়, চুপ করে বসে থাকুন। এসব ম্যাজিকে একটু সময় লাগেই স্যার। অনেক হাসির গপ্পো শুনিয়েছেন; আজ একটু ম্যাজিক দেখুন। হাত নাড়তে চেষ্টা করলে আপনার দামী গেলাসেরই বারোটা বাজবে, আমার কী! হবে–হবে– নীল হবে, লাল হবে– সবুজ হবে–সব হবে! একটু ধৈর্য ধরুন; হাসি হাসি মুখে বসে থাকুন, ভাবতে চেষ্টা করুন হোকাস-পোকাস-গিলি-গিলি। প্যালা–কুইক–কুইক—

    গেলাসের মায়ার ব্রহ্মবিকাশ হাঁ করে বেকুবের মতো বসে রইলেন, চাকরটাকে ডাকবার কথা পর্যন্ত তাঁর মনে এল না। আর সেই ফাঁকে আমরা

    না–না, আমরা একেবারে ছোটলোক নই। উনি চিংড়ির যে কাটলেটটা আধখানা খেয়েছিলেন, সেটা ওঁর জন্যেই রেখে এসেছিলুম।

    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27 28 29 30 31 32 33 34 35 36 37 38 39 40 41 42 43 44 45 46 47 48 49 50 51 52 53 54 55 56 57 58 59 60 61 62 63 64 65 66 67 68 69 70 71 72 73 74 75 76 77 78 79 80 81 82 83 84 85 86 87 88 89 90 91 92 93 94 95 96 97 98 99 100 101 102 103
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleফাউণ্ডেশন অ্যাণ্ড এম্পায়ার – আইজাক আসিমভ
    Next Article ছোটগল্প – নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়

    Related Articles

    নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়

    সমগ্র কিশোর সাহিত্য – নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়

    September 2, 2025
    নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়

    ছোটগল্প – নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়

    September 2, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Demo
    Most Popular

    সমগ্র কিশোর সাহিত্য – নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়

    September 2, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    সমগ্র কিশোর সাহিত্য – নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়

    September 2, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Our Picks

    সমগ্র কিশোর সাহিত্য – নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়

    September 2, 2025

    ছোটগল্প – নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়

    September 2, 2025

    টেনিদা সমগ্র – নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়

    September 2, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    Sign In or Register

    Welcome Back!

    Login below or Register Now.

    Lost password?

    Register Now!

    Already registered? Login.

    A password will be e-mailed to you.