Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    কাঙাল মালসাট – নবারুণ ভট্টাচার্য

    September 1, 2025

    লুব্ধক – নবারুণ ভট্টাচার্য

    September 1, 2025

    হারবার্ট – নবারুণ ভট্টাচার্য

    September 1, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • 🔖
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    Subscribe
    সাইন ইন
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    ট্যাবু – তৌফির হাসান উর রাকিব

    তৌফির হাসান উর রাকিব এক পাতা গল্প226 Mins Read0

    সী-কুইন

    ঢেউয়ের তালে-তালে মৃদু দুলছে জাহাজ-সী-কুইন। এই মাঝ দরিয়ায় জাহাজটার নিঃসঙ্গতা ঘোচাতেই যেন ওটাকে সঙ্গ দিয়ে চলেছে কয়েকটা দলছুট গাঙচিল।

    জাহাজটা মাঝারি আকারের; মালবাহী। তবে যে কোন বিলাসবহুল যাত্রীবাহী জাহাজের মতই পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন, ঝকঝকে-তকতকে।

    ক্যাপ্টেন রবার্ট বায়রনের পরিচ্ছন্নতা বাতিক আর নাবিকদের নিখাদ আন্তরিকতার যুগপৎ মিশেলের কারণেই কেবল আপাতদৃষ্টিতে অসম্ভব এই ব্যাপারটাকে সম্ভব করা গেছে। বায়রনের যে কোন আদেশ বিনাবাক্যব্যয়ে মেনে নেয় তাঁর অধীন ক্রুরা; নিজেদের ক্যাপ্টেনের প্রতি অগাধ শ্রদ্ধা ওদের।

    এই মুহূর্তে ক্যাপ্টেনের কেবিনে বসে তাঁর সাথে তাস পেটাচ্ছে ফার্স্ট মেট, নেলসন।

    ভর সন্ধ্যার বিষণ্ণতা ভাসছে ঘরের বাতাসে। তাতে কীসের যেন একটা অশুভ গন্ধ মেশানো, যা নোনা জলের গন্ধ ছাপিয়ে আলাদা করে ধরা পড়ছে অবচেতন মনে।

    সজোরে এপাশ-ওপাশ মাথা নাড়লেন ক্যাপ্টেন রবার্ট, নিজের উপর বিরক্ত। ‘আজ একটাবারও ভাল কার্ড আসছে না আমার হাতে। ঘটনা কী, নেলসন? জাদুটোনা করোনি তো আবার? আমার সহায়-সম্পত্তি সমস্ত কিছু হাতিয়ে নিতে চাও বুঝি?’

    হাসার চেষ্টা করল ফার্স্ট মেট, কিন্তু হাসিটা ঠিকঠাক ফুটল না চেহারায়। ব্যাপারটা ক্যাপ্টেনের নজর এড়াল না।

    ‘কী হয়েছে তোমার? পর-পর তিনবার জিতেও খুশি হতে পারছ না নাকি? আরও বেশি চাও? লোভটা একটু কমাও, নেলসন। একা মানুষ তুমি; এত পয়সা দিয়ে করবেটা কী, শুনি?’

    ‘না…মানে…ইয়ে…আপনাকে একটা কথা বলার ছিল, ক্যাপ্টেন।’

    ‘তো সেটা বলে ফেললেই হয়। এত ভণিতা করছ কেন?’

    ‘ছেলেরা…ছেলেরা ভীষণ ভয় পাচ্ছে, স্যর।’

    ‘মানে? কারা?’ অবাক কণ্ঠে জানতে চাইলেন ক্যাপ্টেন রবার্ট। আর যা-ই হোক অন্তত এধরনের কোন কথা আশা করেননি তিনি I

    ‘নাবিকেরা, খালাসীরা, ইঞ্জিন মাস্টার…মোদ্দা কথা আপনি ছাড়া জাহাজের আর বাদবাকি সবাই,’ ঢোক গিলতে-গিলতে কোনরকমে বলল নেলসন। ‘এমনকী ‘আমি নিজেও।’

    ‘কীসের ভয়?’ হতভম্ব মনে হলো ক্যাপ্টেন বায়রনকে। নিজের অজান্তেই গলার স্বর খানিকটা চড়ে গেছে তাঁর।

    আমতা-আমতা শুরু করল ফার্স্ট মেট নেলসন। ‘আমাদের কার্গো হোল্ডে রাখা কষ্টি পাথরের মূর্তিটার জন্য, স্যর। ওটা…ওটা…রাসং উপজাতির অভিশাপের দেবতা তাখাপোং-এর মূর্তি!’

    ‘তো হয়েছেটা কী তাতে? সামান্য একটা মূর্তিই তো, তাই না? স্বয়ং দেবতা তো আর নয়। কী সমস্যা করছে ওটা তোমাদের? কেন ভয় পাচ্ছ ওটাকে?’ স্পষ্ট উষ্মা প্রকাশ পেল ক্যাপ্টেনের গলায়। ‘তোমাকে তো নাস্তিক বলেই জানতাম, নেলসন। কবে থেকে আবার এসব দেব-দেবতায় বিশ্বাস করা শুরু করলে?’

    চুপ করে রইল ফার্স্ট মেট। কী জবাব দেবে এই প্রশ্নের?

    কিন্তু ক্যাপ্টেন বায়রনের রাগ তখনও পড়েনি, বলে চললেন তিনি, ‘সাধারণ একটা মূর্তি তোমাদের সবাইকে ভয় পাইয়ে দিচ্ছে; বিষয়টা ভাবতেই বিরক্তি লাগছে আমার। তোমরা ভাল করেই জান যে, রানীর জন্য উপহার হিসেবে পাঠানো হয়েছে ওটা। পাঠিয়েছেন স্বয়ং আমাদের জাহাজের মালিক, মিস্টার হারলান। চাইলেই ওটা আমি রেখে আসতে পারতাম না; ফেলে আসার কোন যৌক্তিক কারণও নেই। তাছাড়া ওটা পড়ে আছে কার্গো হোল্ডের এক অন্ধকার কোনায়। ওটাকে নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার মত কী আছে, আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না!’

    খানিকক্ষণ চুপ থাকার পর ধীরে-সুস্থে বোমাটা ফাটাল নেলসন। ‘কারণ, স্যর, রোজ রাতেই ওটাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখছি আমরা! স্বপ্নটা ভীষণ বিদঘুটে, স্যর। আর আশ্চর্যজনক ব্যাপার হলো, সবার স্বপ্নই অবিকল এক!’

    পরবর্তী কয়েকটা মুহূর্ত বিস্ফারিত নেত্রে নেলসনের দিকে চেয়ে রইলেন ক্যাপ্টেন বায়রন। বলছে কী এই লোক? অবিকল একই স্বপ্ন! তা কী করে হয়? ‘গোটা ব্যাপারটা খুলে বলো তো, নেলসন। স্বপ্নে ঠিক কী দেখতে পাচ্ছ তোমরা?’

    বলার জন্য তৈরিই ছিল ফার্স্ট মেট। কালক্ষেপণ না করে তোতাপাখির মত ঠোঁট নাড়াতে শুরু করল সে।

    .

    স্বপ্নটা শুরু হয় খুব সাদামাঠাভাবে। লোকালয় থেকে অনেকটা দূরে, বিশাল এক ন্যাড়া পর্বতের অন্ধকারাচ্ছন্ন একটা গুহায়, দেবতা তাখাপোং-এর উপাসনালয়।

    মিশমিশে কালো কষ্টি পাথর কুঁদে বানানো দেবমূর্তির সামনে ছোট একখানা পোড়ামাটির বেদি। তাতে তাজা রক্তের পাশাপাশি, শুকিয়ে আসা ছোপ-ছোপ রক্তও অস্পষ্টভাবে চোখে পড়ে। নিজের শরীরের রক্ত ঢেলেই এই দেবতার আরাধনা করা হয়। বেদিটাকে ঘিরে থাকে এক দঙ্গল পুরোহিত। পরনে এক গাছি সুতোও নেই ওদের। পুরোপুরি দিগম্বর।

    সাধারণত অন্য উপজাতি সম্প্রদায়গুলোতে মহিলাদেরকে পুরোহিতদের কাজ করতে দেখা যায় না; তবে রাসংরা এক্ষেত্রে একেবারেই আলাদা। পুরুষদের পাশাপাশি বেশ ক’জন মহিলা পুরোহিতকেও নগ্ন হয়ে নাচতে দেখা যায় মূর্তিটার সামনে।

    পুরোহিতদের তৈরি করা মানব ব্যূহটা পুরোপুরি অভেদ্য নয়, মাঝখানটায় একটা ফোকরমতন রয়েছে। সাধারণ পূজারীরা এই পথেই একসারিতে পায়ে- পায়ে এগিয়ে চলে বেদি অভিমুখে। বেদির সামনে গিয়ে খানিকক্ষণ চোখ মুদে দাঁড়াতে হয়। এ সময়টায় দেবতার কাছে ক্ষমা ভিক্ষা চাওয়া হয়।

    তারপর চোখ খোলামাত্রই সামনে রাখা ধারাল ছোরাটা নিজের হাতের যে কোন একটা আঙুলে অবলীলায় চালিয়ে দেয় ওরা। ক্ষতটা থেকে কয়েক ফোঁটা তাজা রক্ত বেদিতে গড়িয়ে পড়ার পর নির্বিবাদে জায়গাটা থেকে সরে দাঁড়ায়, আরাধনার সুযোগ করে দেয় পাশের জনকে। শত-শত রাসং ওখানটায় উপস্থিত থাকলেও কোথাও একরত্তি বিশৃঙ্খলা চোখে পড়ে না। সম্পূর্ণ নিঃশব্দে এগিয়ে চলে রক্ত সমর্পণের এই আয়োজন।

    স্বপ্নের এ পর্যায়ে স্বপ্নদ্রষ্টা নিজেকে একেবারে সবার সামনে আবিষ্কার করে, যেন এবার তারই পুজো দেয়ার পালা! স্বভাবতই নিজের হাতে ছুরি চালাতে খানিকটা ইতস্তত করে সে। নিজেরা রাসং না হওয়ায় কাজটায় কেউই অভ্যস্ত নয়, কিছুটা জড়তা ভর করাটা মোটেও অস্বাভাবিক নয়।

    ঠিক এই সময় উপস্থিত সবার পিলে চমকে দিয়ে আচমকা খুলে যায় দেবতা তাখাপোং-এর রক্তলাল দুটো চোখ! বেশ কিছুক্ষণ নির্নিমেষে স্বপ্নদ্রষ্টার দিকে তাকিয়ে থাকে সে। ধীরে-ধীরে নিজের বাম বাহুটা উঁচু করে তাখাপোং, সরাসরি তাক করে আসামীর বুকের দিকে। ফ্যাসফ্যাসে গলায় বলে ওঠে, ‘এই লোকটা চুরি করে এখান থেকে অনেক দূরে নিয়ে যাচ্ছে আমাকে। পরিণামে ভয়ঙ্কর শাস্তি ভোগ করতে হবে তাকে। এই মহাপাপের কোন ক্ষমা নেই। ধ্বংস অনিবার্য।’

    কথাটা শেষ হওয়া মাত্রই চোখের পলকে আবারও নিষ্প্রাণ মূর্তি বনে যায় ওটা। যেন চিরকাল অমন নিষ্প্রাণই ছিল, প্রাণের কোন চিহ্নই আর খুঁজে পাওয়া যায় না মূর্তিটার মধ্যে! তবে স্বপ্নদ্রষ্টার জন্য তখন আরও ভয়াবহ এক পরিস্থিতি অপেক্ষা করছে। তাকে চারদিক থেকে ঘিরে ধরে অগণিত ক্রোধান্বিত রাসং; যারা দেবতা-চোরকে নিজের হাতে শাস্তি দিতে বদ্ধপরিকর!

    ধীরে-ধীরে মানব-বৃত্তটা ছোট হয়ে আসে, বুনো জানোয়ারের হিংস্রতা ভর করে সবার চোখে-মুখে।

    একেবারে অন্তিম মুহূর্তে যে-ই না ওরা আসামীর উপরে সদলবলে ঝাঁপিয়ে পড়তে উদ্যত হয়, ঠিক তখনই ঘুমটা ভেঙে যায়!

    তারপর আর চোখের পাতা এক করার সাহস হয় না কারও, জেগেই কাটাতে হয় পুরোটা রাত।

    .

    হাঁপাতে-হাঁপাতে নিজের বয়ান শেষ করল ফার্স্ট মেট নেলসন। ক্যাপ্টেনের কাছে স্বপ্নটা সবিস্তারে বলতে গিয়ে গায়ের সবক’টা লোম দাঁড়িয়ে গেছে তার।

    রাতের স্বপ্নের মতই সবকিছু যেন জীবন্ত হয়ে ভাসছিল তার মনের পর্দায়।

    কিন্তু ক্যাপ্টেন বায়রনকে দেখে মোটেও বিচলিত মনে হলো না। শিরদাঁড়া সোজা করে এমন একটা ভঙ্গিতে বসে আছেন, যেন এতক্ষণ ধরে মনোযোগ দিয়ে ঠাকুরমার ঝুলির কোন একটা সরেস গল্প শুনছিলেন তিনি!

    তাঁর কথাতেও সেটা পরিষ্কার ফুটে উঠল। আমুদে গলায় বললেন, ‘গল্পটা দারুণ। বেশ রোমাঞ্চকর। রোজ রাতে এহেন অ্যাডভেঞ্চার করার সৌভাগ্য কিন্তু সবার হয় না, নেলসন। তোমাদের উচিত খুশি হয়ে স্রষ্টাকে কৃতজ্ঞতা জানানো। আর তোমরা কিনা ভয় পাচ্ছ! স্বপ্ন তো স্বপ্নই, তাই না?’

    ক্যাপ্টেনের কথায় বেশ মর্মাহত হলো ফার্স্ট মেট। তিনি গোটা বিষয়টা এতটা হালকাভাবে নেবেন, এটা সে কস্মিনকালেও কল্পনা করেনি।

    ‘আমরা কিন্তু ভয়ই পাচ্ছি, স্যর। কারণ আমাদের কাছে ব্যাপারটাকে এখন আর নিছক স্বপ্ন বলে মনে হচ্ছে না। সত্যি-সত্যিই কোন একটা দুর্যোগ নেমে আসার আগেই মূর্তিটাকে ফিরিয়ে দেয়া উচিত, স্যর।’

    ‘কিন্তু সেটা তো আর চাইলেই এখন করা যাচ্ছে না, তাই না? আমরা বন্দর ছেড়েছি অন্তত সপ্তাহখানেক আগে। এই হতচ্ছাড়া মূর্তিটার জন্য পুরোটা পথ আবার ফিরে যেতে বলছ নাকি? উপরওয়ালার কাছে এই ঘটনার কী ব্যাখ্যা দেব আমি, শুনি?’

    ‘না, স্যর। ফিরে যেতে হবে না আমাদের।’ আচমকা চোখ-মুখ উজ্জ্বল হয়ে উঠল নেলসনের। ‘মূর্তিটাকে এখানে…এই মাঝ-সাগরেই ফেলে দিতে পারি আমরা। ওটা নিজেই নিজের আস্তানায় ফিরে যেতে পারবে, স্যর। আমরাও ওটার অভিশাপ থেকে বেঁচে যাব।’

    পরবর্তী কয়েকটা মুহূর্ত চোখভরা অবিশ্বাস নিয়ে নেলসনের দিকে তাকিয়ে রইলেন ক্যাপ্টেন রবার্ট বায়রন। তাঁর সামনে দাঁড়ানো লোকটাকে এতদিন একজন বুদ্ধিমান মানুষ হিসেবেই জেনে এসেছেন তিনি। অতীতে কখনওই সে এতটা নির্বোধের মত আচরণ করেনি

    গলা অনেকখানি চড়ে গেল ক্যাপ্টেন বায়রনের। ‘তোমার বুদ্ধিশুদ্ধি কি সব লোপ পেয়েছে, নেলসন? এত দামী একটা জিনিস এভাবে স্বেচ্ছায় জলে ফেলে দেব, এমনটা ভাবলে কী করে তুমি?’

    মূক পশুর মত ঠায় দাঁড়িয়ে রইল নেলসন, কী বলবে ঠিক বুঝে উঠতে পারছে না। বলে চললেন ক্যাপ্টেন বায়রন, ‘তাছাড়া এভাবে মূর্তিটাকে জলে ফেলে দিলেই সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে, এটাই বা তোমাকে কে বলল? হিতে বিপরীতও তো হতে পারে। হয়তো দেখা গেল পানিতে চুবানোর জন্য আরও বেশি রেগে উঠেছেন তাখাপোং, তখন?’

    এবার যেন হালে কিছুটা পানি পেল ফার্স্ট মেট। চটজলদি বলে উঠল, ‘না, না, স্যর। মোটেও রাগবেন না তিনি, উল্টো মুক্তি দিয়েছি বলে আমাদের উপর বেশ প্রসন্ন হবেন। বর্তমান পরিস্থিতিতে এটাই এখন একমাত্র পথ, স্যর।’

    ‘কী করে জানলে সেটা? এটাও কি স্বপ্নে দেখেছ নাকি?

    ক্যাপ্টেনের কণ্ঠের প্রচ্ছন্ন উপহাসের সুরটা ধরতে পারল না নেলসন। তড়িঘড়ি বলল, ‘তৈমুরের কাছ থেকে জেনেছি, স্যর। ও-ই আমাদেরকে সবকিছু খুলে বলেছে।’

    নিমিষেই পাল্টে গেল ক্যাপ্টেন বায়রনের চেহারা; প্রচণ্ড রেগে গেছেন তিনি। ‘এই তাহলে ব্যাপার? তৈমুরের অবাস্তব গল্পগুলোই তাহলে তোমাদের উদ্ভট স্বপ্নের রসদ জোগাচ্ছে!’ হতাশায় বার কয়েক মাথা দোলালেন ক্যাপ্টেন। ‘ছিঃ, নেলসন। লজ্জা পাওয়া উচিত তোমাদের। একটা মাতালের গল্প শুনে জাহাজসুদ্ধ এতগুলো বুদ্ধিমান লোক কেমন করে ভড়কে গেলে?’ মাথা নিচু করে রইল ফার্স্ট মেট। ভুল কিছু বলেননি ক্যাপ্টেন; তৈমুর সত্যিই নির্ভরযোগ্য কোন মানুষ নয়।

    .

    নতুন একজন খালাসীর নাম তৈমুর। লোকটা শ্রীলঙ্কার বাসিন্দা; এবারই প্রথম সী- কুইনে কাজ নিয়েছে সে। হাবভাবে বেশ শিক্ষিতই মনে হয় তাকে, যদিও মুখে কখনও সেটা স্বীকার করেনি লোকটা।

    গায়ের রঙ ঘোর কৃষ্ণবর্ণ; অন্ধকারে দাঁড়িয়ে থাকলে চট করে চোখে পড়ে না, সহজেই নজর এড়িয়ে যায়।

    এমনিতে লোকটা মন্দ নয়, নিজের কাজে বেশ পারদর্শী। বিনাবাক্যব্যয়ে যে কোন আদেশ মেনে নেয়, কোন রা করে না।

    তবে সমস্যা একটাই; তার ভয়াবহ মদ-প্রীতি!

    সন্ধ্যার পর আর তাকে দিয়ে কোন কাজ করানোর জো নেই, একেবারে বেহেড মাতাল হয়ে থাকে তখন লোকটা। কয়েক ঢোক পেটে পড়া মাত্রই হুঁশ- জ্ঞান লোপ পায়, চোখের পলকে সম্পূর্ণ অচেনা একজন মানুষে পরিণত হয় সে। ইনিয়ে-বিনিয়ে কাঁদে, প্রলাপ বকে। যেন গোটা জীবনের দুঃখগুলো ভাসিয়ে দিতে চায় দু’চোখের নোনা জলে।

    কান্নার পর্বটা শেষ হলে খানিকটা শান্ত হয় সে; গল্প বলতে শুরু করে। তার গল্পের ধরনটা বেশ অদ্ভুত, কাহিনিগুলো তারচেয়েও বেশি চমকপ্রদ।

    চারপাশে ছড়িয়ে থাকা বিশ্রামরত নাবিকেরা বেশ আগ্রহ নিয়েই শোনে তার বয়ান। সমুদ্রযাত্রার একঘেয়ে সন্ধ্যাগুলোয় এহেন বিচিত্র কেচ্ছা-কাহিনি, সবার কাছেই বেশ আকর্ষণীয় মনে হয়। গল্পকথকের বিশ্বাসটা শ্রোতাদের ভিতরে সঞ্চারিত হতে সময় লাগে না।

    এতটাই দৃঢ়তার সাথে কথাগুলো ব্যক্ত করে তৈমুর, যেন সে নিজেই সেগুলো চাক্ষুষ করেছে। শুনতে যত উদ্ভটই লাগুক না কেন, অনেকটা বাধ্য হয়েই শ্রোতারা ভাবতে বসে, গল্পগুলো তো সত্যি হতেও পারে, তাই না? এই বিপুলা পৃথিবীর কতটুকুই বা আর জানতে পেরেছে মানুষ?

    জরুরি পয়গাম পেয়ে হন্তদন্ত হয়ে ক্যাপ্টেনের কেবিনে ছুটে এল তৈমুর। চোখের তারায় বিরক্তি খেলা করছে। মাত্রই মদের বোতলটা খুলতে শুরু করেছিল সে; সুখযাত্রায় ব্যাঘাত ঘটলে কারই বা আর ভাল লাগে?

    তবে ক্যাপ্টেন রবার্টের দিকে চোখ পড়া মাত্রই চুপসে গেল সে, নিমিষেই বেমালুম গায়েব হয়ে গেল চেহারার সমস্ত বিরক্তি। স্পষ্ট বুঝতে পারছে, খোশগল্প করতে ডাকা হয়নি তাকে। অজ্ঞাত কারণে রেগে বোম হয়ে আছেন ক্যাপ্টেন বায়রন!

    রাগটা কি তার উপর? কী করেছে সে? কী শাস্তি অপেক্ষা করছে তার জন্য?

    এক লহমায় মনের কোণে অনেকগুলো প্রশ্ন এসে উঁকি দিতে শুরু করল, যার একটারও জবাব জানা নেই তার। ভয়ার্ত দৃষ্টিতে ক্যাপ্টেনের দিকে তাকিয়ে রইল সে; অপেক্ষা করছে। কয়েক মুহূর্ত নীরবতার পর মুখ খুললেন ক্যাপ্টেন বায়রন। ঝাঁঝাল গলায় বললেন, ‘সবাইকে দেবতা তাখাপোং-এর গাঁজাখুরি গল্পটা তাহলে তুমিই শুনিয়েছ, তাই না?’

    প্রশ্নটা শুনে তৈমুরের মনে হলো, এর চেয়ে বুঝি নীরবতাই ভাল ছিল। কালো মুখটা আরও অনেকখানি কালো হয়ে গেল তার। ভাল করেই জানে সে, বাস্তবতা বিবর্জিত গল্পগুজব একদমই পছন্দ করেন না ক্যাপ্টেন রবার্ট। একারণে আগেও বেশ কয়েকবার সতর্ক করা হয়েছে তাকে। সচেতনই ছিল সে, কিন্তু আর বুঝি শেষ রক্ষা হলো না।

    মদ…এই মদই শেষতক সর্বনাশ করল তাহলে। কয়েক ঢোক গিললেই কাণ্ডজ্ঞান লোপ পায় তার, তখনই হয়তো কোন এক ফাঁকে তাখাপোং-এর কাহিনিটা বলে ফেলেছিল সে নাবিকদের। আর এ-কান ও-কান করতে-করতে শেষটায় কথাটা পৌছে গেছে ক্যাপ্টেনের কান অবধি। এখন আর কিছুই করার নেই তার; বন্দুক থেকে বেরনো গুলি আর মুখ ফসকে বলে ফেলা কথা, কোনটাই আর ফেরানো যায় না।

    নিজের দোষ স্বীকার করল তৈমুর, নীরবে মাথা দোলাল উপর-নীচে

    ‘তোমাকে বার-বার মানা করার পরও কী কারণে আজগুবি গল্পটা ফাঁদলে, শুনি?’ ক্যাপ্টেনের কণ্ঠে ক্রোধাগ্নির উত্তাপ।

    ‘আমি…আমি মাতাল ছিলাম, স্যর,’ আত্মপক্ষ সমর্থনের চেষ্টা করল তৈমুর। মাথা নিচু করে রেখেছে; অপরাধবোধে ভুগছে।

    অগ্নিদৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে রইলেন ক্যাপ্টেন বায়রন, কিছু বলার মত ভাষা খুঁজে পাচ্ছেন না তিনি।

    আচমকা নিজের উপর জোর খাটিয়ে মুখটা তুলল তৈমুর। নিজের ভিতরকার সবটুকু সাহস জড় করে বলল, ‘কথাটা কিন্তু সত্যি, স্যর, নির্জলা সত্যি। নিছক কোন গল্প নয়, একবিন্দু মিথ্যে নেই ওতে।’

    ‘মানে?’ হতভম্ব গলায় জানতে চাইলেন ক্যাপ্টেন রবার্ট; তৈমুরের কণ্ঠের দৃঢ়তা বিস্মিত করেছে তাঁকে।

    ‘সত্যিই রাসংদের অভিশাপের দেবতা তাখাপোং-এর মূর্তি বয়ে চলেছি আমরা। প্রতি মুহূর্তে নিজের পূজারীদের সাথে দূরত্ব বাড়ছে তাঁর। যে কোন সময় ভয়ানক খেপে উঠতে পারেন তিনি, প্রাণঘাতী কোন অভিশাপ দিয়ে বসতে পারেন আমাদেরকে। এর ফল কোনমতেই শুভ হবে না, স্যর। আমাদের উচিত যত দ্রুত সম্ভব মূর্তিটাকে সমুদ্রের জলে নিক্ষেপ করা। তাহলেই কেবল তাখাপোং-এর করাল গ্রাস থেকে মুক্তির আশা করতে পারি আমরা।’

    ‘এতটা জোর গলায় বলছ কী করে? তুমি নিজেই কি একজন রাসং? নাহলে কী করে জানলে এতকিছু? তাছাড়া কেন একজন আদিবাসী দেবতা নিয়ে মাথা ঘামাতে যাব আমরা, শুনি? অতীতে কখনও তাখাপোং-এর উপাসনা করিনি আমরা, ভবিষ্যতেও করার কোন সম্ভাবনা দেখছি না। তাহলে?’

    ‘না, স্যর। আমি রাসং নই,’ নরম গলায় জবাব দিল তৈমুর। ‘তবে রাসং সম্প্রদায়ে অনেক বন্ধু আছে আমার। ওদের কাছ থেকেই সবকিছু জেনেছি আমি। আমার সবচেয়ে কাছের বন্ধুটিকে কিন্তু আপনিও দেখেছেন, স্যর। জাহাজ ছাড়ার সময় আমাকে বিদায় জানাতে বন্দরে এসেছিল সে। আমার প্রাণের বন্ধু, মিরাপ্পা। সৈকতে বসে সমস্ত দেবতার নামে হলফ করে নিজেদের নাম অদলবদল করেছি আমরা। কথা দিয়েছি, যতদিন বেঁচে থাকি, একে অন্যকে ভালবেসে যাব। য‍ত দূরেই থাকি, হৃদয়ের বন্ধন অটুট থাকবে চিরকাল।

    ‘ওর কাছেই তাখাপোং-এর ব্যাপারে বিস্তারিত শুনেছি আমি। জেনেছি, কতটা নিষ্ঠুর এই দেবতা। মূর্তিটাকে আমাদের জাহাজে তুলতে দেখে ভয়ে কেঁপে উঠেছিল ও, বার-বার সাবধান করছিল আমাকে।

    ‘কিন্তু কথাটা আপনাকে বলার সাহস হয়নি আমার, স্যর। মাতাল হয়ে মুখ ফসকে বলে না ফেললে হয়তো গোপনই থাকত ব্যাপারটা। আর আপনারাও ধীরে-ধীরে এগিয়ে যেতেন ভয়াবহ এক পরিণতির দিকে, কোনকিছু না জেনেই।’

    দম নেয়ার জন্য কয়েক মুহূর্ত বিরতি নিল তৈমুর। তারপর আবারও বলতে শুরু করল, ‘তাখাপোং একজন অপদেবতা, স্যর। অপদেবতারা এমনিতেই মানুষের কাছ থেকে খুব কম অর্চনা পায়। তাই যারা তাদের আরাধনা করে, তাদেরকে অনুগ্রহের সাগরে ভাসিয়ে দেয় ওরা; আর কেউ তাতে বাধা দিলে, তাদের জন্য বরাদ্দ থাকে সীমাহীন নিগ্রহ।

    ‘গোটা পৃথিবীতে একমাত্র রাসংরাই বোধহয় তাখাপোং-এর আরাধনা করে। তাই স্বভাবতই ওদের কাছ থেকে তাকে সরিয়ে নেয়াটা ভালভাবে নেবে না সে।’

    ‘রাসংরা কি শুধু তাখাপোং-এর পূজাই করে? নাকি আরও কোন দেবতা আছে ওদের?’ জানতে চাইল ফার্স্ট মেট নেলসন। এতক্ষণ চুপচাপ মনোযোগ দিয়ে তৈমুরের কথা শুনছিল সে। লোকটা যে আদতেই একজন শিক্ষিত মানুষ, এ নিয়ে আর কোন সন্দেহ নেই তার মনে।

    ‘না, না, তা হবে কেন? আরও অনেক দেবতা আছে রাসংদের,’ গম্ভীর গলায় জবাব দিল তৈমুর। ‘সালজং ওদের উর্বরতার দেবতা। সূর্য হলো সালজং-এর প্রতিনিধি। ফসলের ভাল-মন্দ এই দেবতার মর্জির উপরই নির্ভর করে বলে রাসংরা বিশ্বাস করে। প্রতিটি রাসং-মাসের শুরুর দিনে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত সালজং-এর পূজা করে ওরা। ফসলের মাঠে পানি ছিটায়, চিৎকার করে কাঁদে। তাদের প্রতি প্রীত হয়ে ন্যাড়া জমিনগুলো ফসলে ভরিয়ে দেন দেবতা সালজং।

    ‘রাসংদের ধন-দৌলতের দেবীর নাম, সুসাইম। এই দেবীর প্রতিনিধি হলো চন্দ্র। ভরা পূর্ণিমার রাতে দেবী সুসাইমের আরাধনা করে রাসংরা। উলঙ্গ হয়ে শুয়ে থাকে খোলা মাঠে, অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে আকাশের পূর্ণ চাঁদের দিকে। চাঁদটা অস্ত যাওয়ার আগ পর্যন্ত একটা শব্দও উচ্চারণ করে না ওরা। এই নির্বাক পূজার বিনিময়ে দেবী সুসাইম তাঁর ভক্তদের মাঝে সম্পদ বণ্টন করে দেন। রাসংদের ভিতরে শ্রেণিবিভাগ নেই, তাই প্রত্যেকেই তারা সমপরিমাণ সম্পদের মালিক হয়।

    ‘শক্তির দেবতার নাম, গোয়েরা। বজ্রকে ধরা হয় এই দেবতার প্রতিনিধি হিসেবে। প্রচণ্ড ঝড়-বাদলের সময় গোয়েরার উপাসনা করে রাসংরা। সবাই এক জায়গায় জড় হয়ে কোন একটা বিশাল বৃক্ষের নীচে বসে থাকে। খানিকক্ষণ পর- পর গোয়েরার নাম ধরে একযোগে চিৎকার করে। আশপাশের সমস্ত এলাকায় সর্বশক্তি নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েন গোয়েরা। কিন্তু পূজারীদের প্রতি সন্তুষ্ট থাকায় রাসংদের কোনরকম ক্ষতিই করেন না তিনি। বজ্রের অনিষ্ট থেকে নিরাপদ থাকে সবক’টা রাসং গ্রাম!

    ‘ওদের জীবন-মৃত্যুর দেবতার নাম, কালকেম। বাতাসকে বলা হয় এই দেবতার প্রতিনিধি। তিনিই নাকের সরু দুটো ফুটো দিয়ে বাতাস চলাচলের অনুমতি দেন, আর একারণেই বেঁচে থাকে মানুষ; এমনটাই বিশ্বাস করে রাসংরা কালকেমের উপাসনার ধরনটাও অন্যদের তুলনায় অনেকখানি আলাদা। একাকী করতে হয়, দলবদ্ধভাবে নয়। দিনের নির্দিষ্ট একটা সময় নির্ধারণ করে প্রত্যেক রাসংই আলাদাভাবে কালকেমের আরাধনা করে। চোখ মুদে, দম বন্ধ করে কালকেমের কাছে দীর্ঘায়ু কামনা করে পূজারীরা।

    ‘আর তাখাপোং-এর কথা তো আপনারা জানেনই। রাসংদের অভিশাপের দেবতা এই তাখাপোং। অন্ধকারকে বিবেচনা করা হয় এই দেবতার প্রতিনিধি হিসেবে। তাখাপোং-এর উপাসনার জন্য আলাদা মন্দির আছে। নিজের শরীরের কয়েক ফোঁটা রক্ত সঁপে দিতে হয় দেবতার চরণে। নাহয় তাখাপোং রুষ্ট হয়ে ভয়াবহ অভিশাপ দেবেন, আর তাতে যে কোন মানুষের ধ্বংস অনিবার্য। অন্য দেবতাদের চেয়ে তাখাপোংকেই বেশি ভয় পায় ওরা। তাখাপোং-এর অভিশাপ থেকে বেঁচে গেছে কেউ, এমন কোন নজির নেই রাসং-সমাজে।’

    ‘কথা শেষ হয়েছে তোমার?’ গম্ভীর গলায় বলে উঠলেন ক্যাপ্টেন রবার্ট। চেহারা নির্বিকার। হ্যাঁ-সূচক মাথা দোলাল তৈমুর; ক্যাপ্টেনের মনোভাব বোঝার চেষ্টা করছে।

    ‘গল্পটা চমৎকার। বুঝতে পারছি, কেন সবাই তোমার কথায় প্রভাবিত হয়েছে,’ শান্ত গলায় বললেন ক্যাপ্টেন। ‘তবে আমাকে টলানোর জন্য কেবল এটুকুই যথেষ্ট নয়। একটা উপকথার উপর ভিত্তি করে অত দামী একটা মূর্তিকে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া কিংবা জলে ফেলে দেয়া, কোনটাই আমার পক্ষে সম্ভব নয়। দুঃখিত।

    এক পলকের জন্য নেলসনের মুখের উপর দৃষ্টি বোলালেন তিনি, তারপর আবারও স্থির দৃষ্টিতে তাকালেন তৈমুরের দিকে।

    ‘প্রথমত, আমি নিজে রাসং সম্প্রদায়ের কেউ নই। তাই তাদের দেব-দেবী, উপদেবতা-অপদেবতা, কোনকিছু নিয়েই মাথাব্যথা নেই আমার। গল্প হিসেবে শোনা যায়, তবে এগুলো মনে-প্রাণে বিশ্বাস করার ব্যাপারে ঢের আপত্তি আছে আমার।

    ‘জগতের সমস্ত দেব-দেবীর তুষ্টির দিকে খেয়াল রাখতে গেলে মানুষের পক্ষে কাজকর্ম করাটাই অসম্ভব হয়ে পড়বে। সম্ভবত একারণেই নিজেদের সুবিধামত দেব-দেবী বেছে নিয়েছে নির্দিষ্ট অঞ্চলের মানুষজন।

    ‘একটা কথা ভুলে গেলে চলবে না যে, দেবতারা তাদের পূজারী বেছে নেন না, বরঞ্চ পূজারীরাই তাদের দেবতা বেছে নেয়।

    ‘এই কারণেই ওই কষ্টি পাথরের মূর্তিটা আমার কাছে অন্য দশটা মূর্তির মতই সাধারণ একটা মূর্তি, এর বেশি কিছু নয়।

    ‘দ্বিতীয়ত, আমি একজন কর্তব্যপরায়ণ মানুষ। আমি নিজের উপর অর্পিত দায়িত্বগুলো যথাযথভাবে পালনের চেষ্টা করি; তোমাদের নিজেদেরও ঠিক সেটাই করা উচিত। তোমাদেরকে মনে করিয়ে দিতে চাই, ওই মূর্তিটা এই জাহাজের মালিক স্বয়ং রানীকে উপহার হিসেবে পাঠিয়েছেন। প্রাপকের হাতে পৌঁছে দেয়ার আগপর্যন্ত ওটার দেখভাল করাটাই আমাদের কর্তব্য; ওটার কোনরকম ক্ষতিসাধন কিংবা গোটা মূর্তিটাকেই খুইয়ে ফেলা নয়।

    ‘এ সমস্ত অবাস্তব চিন্তা-ভাবনা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে নিজেদের কাজে মনোযোগী হও তোমরা, এতেই সবার মঙ্গল হবে। ফালতু দুশ্চিন্তায় মাথা খাটিয়ে মগজ ক্ষয় করার কোন মানে হয় না।

    ‘এ নিয়ে আর কোন কথা যেন না শুনি। দু’জনেই আপাতত বিদেয় হও, খানিকক্ষণ একা থাকতে চাই আমি।’

    ক্ষণিকের জন্য মিলিত হলো দু’জোড়া বিমর্ষ চোখের দৃষ্টি, পরক্ষণেই বিনাবাক্যব্যয়ে ঘর ছেড়ে বেরিয়ে গেল ওরা।

    কী-ই বা আর বলার আছে ওদের? অযৌক্তিক কিছু তো বলেননি ক্যাপ্টেন বায়রন।

    নিজের ঘরে গিয়ে বিছানায় শরীর এলিয়ে দিল নেলসন। মনটা ভার হয়ে আছে, দেখতে-দেখতে চোখের পাতাও ভারী হয়ে এল তার।

    তৈমুর ফিরে গেল তার মদের বোতলের কাছে; আকণ্ঠ সুরাপানের মধ্য দিয়েই তাখাপোংকে ভুলে থাকতে চায় সে।

    ব্যাপারটা শুরু হলো অতর্কিতে, সাবধান হওয়ার কোনরকম সুযোগই পাওয়া গেল না।

    এক সন্ধ্যায় আচমকা পাগলামি শুরু করল তৈমুর, চিৎকার করে ক্যাপ্টেন রবার্টকে গালাগাল করতে শুরু করল সে!

    তার অশ্রাব্য খিস্তির তোড়ে ভীষণ লজ্জিত বোধ করলেন ক্যাপ্টেন। নিজেকে কেবিনেই বন্দি করে রাখলেন তিনি, বাইরে আর বেরোলেন না। অধস্তন কেউ যদি অকারণে এভাবে গাল বকতে শুরু করে, অন্যদের কাছে কি আর মুখ দেখানোর জো থাকে?

    প্রথমটায় সবাই ভাবল, আজ বুঝি খানিকটা আগেভাগেই মদ গেলা শুরু করেছে তৈমুর। একারণেই এমন অপ্রকৃতিস্থের মত আচরণ করছে ব্যাটা।

    কিন্তু অল্পক্ষণের মধ্যেই আবিষ্কার হলো যে, সকাল থেকে মদের বোতলের ধারেকাছেও ঘেঁষেনি সে, মাতাল হওয়ার তো প্রশ্নই আসে না!

    বেশ অবাক হলো সবাই। শরাব না গিলে থাকলে আচমকা এমন উন্মাদ হয়ে ওঠার কারণটা কী? প্রশ্নটার জবাব পাওয়ার আগেই পরিস্থিতি ক্রমশ জটিল হয়ে উঠল!

    দেখতে-দেখতে পাগলামিটা ছড়িয়ে পড়তে শুরু করল, একেবারে মহামারীর মত! প্রথমে আক্রান্ত হলো তৈমুরের আশপাশে অবস্থান করা নাবিকেরা, পরের ধাপে জাহাজসুদ্ধ সব ক’জন মানুষ!

    প্রত্যেকেই স্পষ্ট টের পেল যে, তার পাশের জন উন্মাদের মত আচরণ করছে; কিন্তু নিজের করা পূর্ণমাত্রার উদ্ভট কর্মকাণ্ডগুলো সম্পর্কে বেখবরই রইল সবাই!

    প্রথমে হালকা গালিগালাজ দিয়ে শুরু হলেও, ক্রমেই ব্যাপারটা হাতাহাতিতে গড়াল। যে যাকে পারছে, মারছে। সেই সাথে অনবরত বর্ষিত হচ্ছে ছাপার অযোগ্য সব খিস্তি-খেউড়!

    এক দঙ্গল পাগলের ধুন্ধুমার কাণ্ডে অল্পক্ষণের মধ্যেই গোটা জাহাজ নরক গুলজার হয়ে উঠল। চেঁচামেচিতে অতিষ্ঠ হয়ে বাইরে বেরিয়ে এলেন ক্যাপ্টেন বায়রন। খোলা ডেকে পা রাখা মাত্রই রীতিমত হতভম্ব হয়ে পড়লেন তিনি। নিজের চোখকেও যেন বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে তাঁর! কী দেখছেন এসব?

    ইতোমধ্যেই শরীরের সমস্ত পোশাক-পরিচ্ছদ বর্জন করেছে নাবিকেরা, পুরোপুরি নগ্ন এখন সব ক’জন!

    হাতের কাছে যে যা পাচ্ছে, তুলে নিয়ে ছুঁড়ে মারছে অন্যদের দিকে; কোনরকম বাছবিচার করছে না।

    এদিক-ওদিক হাত-পা ছড়িয়ে পড়ে আছে বেশ কয়েকজন উলঙ্গ নাবিক। বেঁচে আছে নাকি মরে গেছে, খোদা মালুম!

    ক্যাপ্টেনের দিকে চোখ পড়া মাত্রই তারস্বরে চেঁচিয়ে উঠল একজন খালাসী। হাতের মাঝারি আকারের পিপেটা সজোরে ছুঁড়ে মারল সে ক্যাপ্টেনের দিকে।

    সরে যাওয়ার কোন সুযোগই পেলেন না তিনি। তাঁর ডান হাঁটুতে এসে আছড়ে পড়ল জলভরা ভারী পিপেটা।

    ককিয়ে উঠলেন তিনি, হুমড়ি খেয়ে পড়লেন মেঝেতে।

    তাঁর এই সশব্দ পতনটা অনেকেরই দৃষ্টি আকর্ষণ করল। দাঁত কেলিয়ে হাসতে-হাসতে নিজেদের হাতের জিনিসপত্র তাঁর দিকে ছুঁড়ে মারতে শুরু করল ওরা।

    রকমারি উডুক্কু সামগ্রীর আঘাত থেকে নিজেকে রক্ষা করতে গিয়ে রীতিমত যুঝতে হলো ক্যাপ্টেন বায়রনকে।

    তবুও শেষরক্ষা হলো না; ভারী এবং ধারাল জিনিসপত্রের আঘাতে শরীরের নানান জায়গায় মারাত্মক আহত হলেন তিনি। অচিরেই বুঝতে পারলেন, এভাবে খোলা জায়গায় পড়ে থাকলে প্রাণ বাঁচানো অসম্ভব হয়ে পড়বে।

    তাই পিঠের উপর মালামালের ভারী বর্ষণ সহ্য করেই হামাগুড়ি দিয়ে নিজের কেবিনের উদ্দেশে এগোতে শুরু করলেন তিনি। মাঝখানের স্বল্পদৈর্ঘ্যের জায়গাটা তাঁর কাছে এখন সাত সমুদ্র তেরো নদীর শামিল।

    অবশেষে বহুকষ্টে যখন নিজের কেবিনে পৌঁছলেন ক্যাপ্টেন বায়রন, একবিন্দু শক্তিও তখন অবশিষ্ট নেই তাঁর দেহে।

    শরীরের এখানে-ওখানে থেঁতলে গেছে মাংসপেশী; চামড়া ফেটে গিয়ে রক্ত ঝরছে কয়েক জায়গায়।

    কোনমতে দরজার খিলটা এঁটে দিয়েই মেঝেতে গড়িয়ে পড়লেন তিনি। প্রায় সঙ্গে-সঙ্গেই জ্ঞান হারালেন।

    .

    চেতনা ফিরে পেয়ে ধীরে-ধীরে চোখ মেললেন ক্যাপ্টেন রবার্ট। ঘরের অন্ধকারের সাথে মানিয়ে নিতে বার কয়েক চোখ পিট-পিট করলেন।

    ইতোমধ্যে কেটে গেছে অনেকটা সময়, মধ্যরাত পেরিয়ে ভোরের দিকে যাত্রা শুরু করেছে ঘড়ির কাঁটা।

    জাহাজটাকে এতটা শান্ত মনে হচ্ছে কেন? কোথাও কোন কোলাহল নেই! উন্মাদের দল গেল কোথায়? সবক’টা একযোগে সমুদ্রে ঝাঁপ দিল নাকি?

    হাঁচড়ে-পাঁচড়ে উঠে দাঁড়ালেন ক্যাপ্টেন, চোখ রাখলেন দরজার উপরের লুক- হোলে। কী কাণ্ড! কাউকে চোখে পড়ছে না কেন? হাওয়ায় মিলিয়ে গেল নাকি সবাই? এই মুহূর্তে পুরো জাহাজে উনি কি একাই রয়ে গেলেন নাকি?

    একটা অদ্ভুত আতঙ্ক ঘিরে ধরল তাঁকে। যদি সত্যিই জাহাজের বাকি সবাই কোন কারণে মরে গিয়ে থাকে, তাহলে এক অর্থে তিনি নিজেও মৃত!

    এই আহত শরীরে এতবড় একটা জাহাজকে ঠিকঠাক তীরে নিয়ে যাওয়ার কথা কল্পনাও করা যায় না।

    একমুঠো খাবারও নিশ্চয়ই অবশিষ্ট নেই জাহাজে। নিজের চোখে পাগলগুলোকে খাবারের বাক্সগুলো ছুঁড়ে ফেলতে দেখেছেন তিনি।

    নাহ্, কোন আশা নেই। আর যদি গোটা ডেকে ছেয়ে থাকে মৃত নাবিকদের লাশ…

    আর ভাবতে পারলেন না ক্যাপ্টেন রবার্ট, গা গুলিয়ে এল তাঁর। বমি ঠেকাতে রীতিমত কসরত করতে হলো তাঁকে।

    ওখানে যা-ই ঘটে থাকুক না কেন, এই অন্ধকারে সেটা নিরীখ করতে যাওয়ার কোন মানে হয় না। এগিয়ে গিয়ে বিছানায় পা তুলে বসলেন তিনি, হেলান দিলেন পিছনের দেয়ালে।

    মাথা ভার হয়ে আছে এলোমেলো সব ভাবনায়; অল্পক্ষণের মধ্যে ঘুমিয়েই পড়লেন।

    .

    ঘড়ির কাঁটায় খুব বেশি সময় পেরোয়নি, একটা চাপা হট্টগোলের শব্দে কাঁচা ঘুমটা ভেঙে গেল তাঁর।

    কোত্থেকে আসছে আওয়াজটা? কীসে করছে?

    প্রশ্নগুলোর জবাব পেতে লুক-হোলে চোখ রাখতেই অন্তরাত্মা কেঁপে উঠল তাঁর। যা দেখছেন, ঠিক দেখছেন তো?

    মরেনি উন্মাদগুলো; মনে হচ্ছে সব ক’জনই বেঁচেবর্তে আছে।

    কার্গো হোল্ড থেকে ডেকে তুলে আনা হয়েছে তাখাপোং-এর মূর্তিটাকে। দু’পাশে আগুনের কুণ্ডলী জ্বেলে আলোকিত করা হয়েছে জায়গাটা। কয়েকটা কাঠের পাটাতন জড় করে সামনে একটা বেদিমতন তৈরি করা হয়েছে। ওটাকে ঘিরেই গোল হয়ে দাঁড়িয়ে আছে দিগম্বরের দল, কী যেন এক দুরভিসন্ধি পাকাচ্ছে।

    ঘোলাটে কাচের ভিতর দিয়ে তাকিয়ে গোটা ব্যাপারটা আঁচ করতে কয়েক মুহূর্ত বেশি সময় লাগল ক্যাপ্টেন বায়রনের, তবে শেষতক ঠিকই তিনি আয়োজনটার উদ্দেশ্যটা ধরতে পারলেন। পুরোপুরি হতভম্ব হয়ে গেলেন তিনি, এ-ও কি সম্ভব?

    তাখাপোং-এর সামনে একটা নরবলি ঘটাতে চলেছে উন্মাদের দল, সেটাই চাক্ষুষ করছেন তিনি!

    এক কোনায় ধারাল একখানা ভোজালি হাতে দাঁড়িয়ে আছে এক ন্যাংটো নাবিক, তার সামনে উবু হয়ে আছে একজন অসহায় মানুষ।

    হাঁটু গেড়ে বসে আছে সে, হাতদুটো পিছমোড়া করে বাঁধা।

    মানুষটা আর কেউ নয়, স্বয়ং তৈমুর!

    উন্মাদের দল মানসিক ভারসাম্য হারানোর পরও বর্ণ বৈষম্যের দোষটা কাটিয়ে উঠতে ব্যর্থ হয়েছে।

    নিজেকে কিছুতেই আর নিবৃত্ত করতে পারলেন না ক্যাপ্টেন বায়রন; সাতপাঁচ না ভেবেই ছুটে গেলেন বাইরে। তাঁর সামনে একজন অসহায় মানুষকে খুন করা হবে, আর তিনি সেটা চেয়ে-চেয়ে দেখবেন, এটা একেবারেই অসম্ভব একটা ব্যাপার।

    গলা ফাটিয়ে চেঁচিয়ে উঠলেন তিনি, দুর্বৃত্তদেরকে থামতে বললেন।

    যে যার জায়গায় অনড় দাঁড়িয়ে রইল নগ্ন নাবিকের দল, শুধু ঘাড় ঘুরিয়ে ফিরে তাকাল ক্যাপ্টেন রবার্টের দিকে। চোখে অবিশ্বাসের দৃষ্টি, মুখে পিত্তি জ্বালানো হাসি। বৃত্তের পরিধি ভেদ করে একেবারে কেন্দ্রে পৌছে গেলেন ক্যাপ্টেন বায়রন, যত দ্রুত সম্ভব তৈমুরের বাঁধন খুলে দিতে চান।

    তিনি কাছাকাছি পৌঁছনো মাত্রই তাঁকে হতবাক করে দিয়ে ঝটকা মেরে উঠে দাঁড়াল তৈমুর। কীসের বাঁধন, সারাক্ষণ মুক্তই ছিল সে!

    বজ্রাহত মানুষের মত ঠায় দাঁড়িয়ে রইলেন ক্যাপ্টেন রবার্ট; কী হচ্ছে এসব?

    তাঁর প্রশ্নের জবাব দিতে স্বপ্রণোদিত হয়েই এগিয়ে এল ফার্স্ট মেট নেলসন। ‘তৈমুর আমাদেরই লোক, স্যর। আপনাকে বের করে আনার জন্য এটা একটা ফাঁদ ছিল। আপনাকে তো আর আমরা জোর করতে পারি না, তাই না? সেটা কি আমাদের পক্ষে শোভা পায়?

    ‘আমরা ঠিকই জানতাম যে, চোখের সামনে নরহত্যা ঘটতে দেখলে আপনি কিছুতেই আর আত্মগোপন করে থাকতে পারবেন না; নির্দ্বিধায় মানুষটাকে বাঁচাতে ছুটে আসবেন। এজন্যই এই ছোট্ট নাটকটা মঞ্চস্থ করতে হয়েছে আমাদেরকে।’

    ‘কেন? কী দরকার আমাকে?’ চিবিয়ে-চিবিয়ে বললেন ক্যাপ্টেন বায়রন, ঘৃণায় গা রি-রি করছে তাঁর।

    ‘এটা কি আপনাকে বুঝিয়ে বলতে হবে, স্যর?’ অবাক হওয়ার কাঁচা অভিনয় করল নেলসন। ‘দেবতা তাখাপোং-এর উদ্দেশে বলি দেয়া হবে আপনাকে। কারণ আপনিই সেই বেঈমান, যে সবকিছু জানার পরও দেবতাকে ফিরিয়ে দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিলেন।

    ‘আমাকে হত্যা করলেই তোমাদের অপদেবতা তুষ্ট হবেন তোমাদের উপর?’ নিস্পৃহ স্বরে জানতে চাইলেন ক্যাপ্টেন। নিজের সম্ভাব্য পরিণতিটা বিলক্ষণ বুঝতে পারছেন তিনি।

    ‘হয়তো হবেন, হয়তো হবেন না। এটাকে একটা জুয়া বলতে পারেন। কিন্তু এছাড়া অন্য কোন পথও তো খোলা নেই আমাদের সামনে।’

    তৈমুরের দিকে ফিরে তাকালেন ক্যাপ্টেন। শীতল গলায় বললেন, ‘এই আইডিয়াটাও নিশ্চয়ই তোমার মাথা থেকেই এসেছে?’

    দু’পাটি দাঁত বের করে হাসল তৈমুর, নিজেকে নিয়ে অহংকারের শেষ নেই তার। ‘একদম ঠিক ধরেছেন, স্যর। দেবতা তাখাপোং-এর ব্যাপারে আমার চেয়ে বেশি আর কে-ই বা জানে এখানে?’

    ঘৃণাভরে তার দিকে একদলা থুতু ছুঁড়লেন ক্যাপ্টেন বায়রন। তবে তৈরি ছিল তৈমুর, চট করে নিচু হয়ে ধাবমান আঠাল তরলটার পথ থেকে নিজেকে সরিয়ে নিল সে।

    দ্রুত বেঁধে ফেলা হলো ক্যাপ্টেনকে, তাখাপোং-এর মূর্তিটার সামনে মাথা নিচু করে বসতে বাধ্য করা হলো।

    ভোজালি হাতে এগিয়ে এল তৈমুর; দেবতার সামনে জল্লাদ হিসেবে নিজের শ্রেষ্ঠত্বের প্রমাণ দিতে চায়।

    শেষবারের মত মূর্তিটার দিকে ফিরে তাকালেন ক্যাপ্টেন বায়রন।

    ভোজালির ধারাল প্রান্তটা তাঁর ঘাড় স্পর্শ করার আগপর্যন্ত একবারের জন্যও মূর্তিটার উপর থেকে চোখ সরালেন না তিনি!

    খানিকক্ষণ পর একযোগেই ক্যাপ্টেন রবার্ট বায়রন এবং তাখাপোং-এর মূর্তিটাকে জলে ফেলা হলো। মূর্তিটা অক্ষত থাকলেও, ক্যাপ্টেনের শবটা ছিল মুণ্ডুহীন।

    আর কখনও বন্দরে ফেরেনি সী-কুইন। তবে ওই তল্লাটের জেলেরা দাবি করে, এখনও নাকি রাত-বিরেতে মাঝেমধ্যে সী-কুইনের দেখা মেলে!

    একদল গলাকাটা নগ্ন নাবিক পরিচালনা করে জাহাজটাকে। মাস্তুলের সাথে শিকল দিয়ে বাঁধা থাকে কালোমতন একজন মানুষ।

    আর একের পর এক আদেশ দিয়ে সবাইকে সর্বক্ষণ ব্যতিব্যস্ত করে রাখেন, স্বয়ং ক্যাপ্টেন রবার্ট বায়রন!

    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleবিফোর দ্য কফি গেটস কোল্ড – তোশিকাযু কাওয়াগুচি
    Next Article অন্ধকারের গল্প – তৌফির হাসান উর রাকিব সম্পাদিত

    Related Articles

    তৌফির হাসান উর রাকিব

    হাতকাটা তান্ত্রিক – তৌফির হাসান উর রাকিব সম্পাদিত

    August 25, 2025
    তৌফির হাসান উর রাকিব

    অন্ধকারের গল্প – তৌফির হাসান উর রাকিব সম্পাদিত

    August 25, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Demo
    Most Popular

    কাঙাল মালসাট – নবারুণ ভট্টাচার্য

    September 1, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    কাঙাল মালসাট – নবারুণ ভট্টাচার্য

    September 1, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Our Picks

    কাঙাল মালসাট – নবারুণ ভট্টাচার্য

    September 1, 2025

    লুব্ধক – নবারুণ ভট্টাচার্য

    September 1, 2025

    হারবার্ট – নবারুণ ভট্টাচার্য

    September 1, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    Sign In or Register

    Welcome Back!

    Login below or Register Now.

    Lost password?

    Register Now!

    Already registered? Login.

    A password will be e-mailed to you.