Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    কাঙাল মালসাট – নবারুণ ভট্টাচার্য

    September 1, 2025

    লুব্ধক – নবারুণ ভট্টাচার্য

    September 1, 2025

    হারবার্ট – নবারুণ ভট্টাচার্য

    September 1, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • 🔖
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    Subscribe
    সাইন ইন
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    ট্যাবু – তৌফির হাসান উর রাকিব

    তৌফির হাসান উর রাকিব এক পাতা গল্প226 Mins Read0

    চিলেকোঠা

    এক

    অপেক্ষা ব্যাপারটা ঠিক উপভোগের বিষয় নয়, আর রবির কাছে সেটা রীতিমত অসহ্য। চিরকালই চঞ্চল স্বভাবের ছেলে সে, ধীরস্থির হয়ে কোন কাজ করাটা তার ধাতে নেই। এজন্য প্রায়ই তাকে দুর্ভোগ পোহাতে হয়। তবে এতে করে তার স্বভাব পরিবর্তন হয়নি এতটুকুও।

    এই যেমন এখন, নির্দিষ্ট সময়ের আধঘণ্টা আগে হাজির হওয়ার মাশুল গুনতে হচ্ছে তাকে। অপেক্ষা করতে হচ্ছে, কখন ডাক আসে ডা. নোরার চেম্বার থেকে।

    ডা. নোরা একজন সাইকিয়াট্রিস্ট। মনোবিজ্ঞানের উপর বেশ কয়েকটা বিলেতি ডিগ্রী আছে তাঁর। ওগুলোর নামগুলোও বেশ কঠিন, উচ্চারণ করতে রীতিমত দাঁত ভেঙে যাবার উপক্রম হয়। প্রতিদিন দশজনের বেশি রোগী দেখেন না নোরা। আর ভাগ্যের ফেরে সর্বশেষ নাম্বারটিই জুটেছে রবির কপালে।

    ডা. নোরার অ্যাসিস্টেন্ট তাকে একাধিকবার বলে দিয়েছিল, সন্ধ্যা ছয়টার আগে তার সিরিয়াল আসার কোন চান্সই নেই। বরং আরও দেরি হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। মানসিক সমস্যা নিয়ে আসা মানুষজনের কার কতক্ষণ সময় লাগবে, তা কি আর আগে থেকে ঠাওর করা যায়?

    তবুও স্বভাবসুলভ চপলতায় কাঁটায়-কাঁটায় ঠিক সাড়ে পাঁচটায় এসে হাজির হয়ে গেছে রবি। যদিও এখন হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে, কাজটা মোটেও ঠিক করেনি সে। ছয়টার পরে এলেই ভাল করত।

    ডাক্তারের চেম্বারের বাইরে একটা লম্বামতন বারান্দা আছে। তাতে দর্শনার্থীদের বসবার জন্য একসারি প্লাস্টিকের চেয়ার পাতা। দেয়ালের ধারে, একেবারে শেষমাথার চেয়ারটায় হাত-পা ছড়িয়ে বসে আছে রবি। চোখে-মুখে রাজ্যের হতাশা খেলা করছে তার।

    কিছুক্ষণ আগেও সে ভাবছিল, ভিতরের রোগীটাই হয়তো শেষ রোগী। সে বের হওয়া মাত্রই টুক করে ঢুকে পড়বে ও।

    কিন্তু বিধি বাম। মাত্র মিনিট পাঁচেক আগেই তিনজনার একটা পরিবার আচমকা এসে হাজির হয়েছে।

    অ্যাসিস্টেন্টের সঙ্গে তাদের আলাপচারিতা থেকে এটুকু ঠিকই বুঝতে পেরেছে রবি, তাদের সিরিয়াল তার আগে-নয় নাম্বার। আরও কতক্ষণের ধাক্কা কে জানে!

    কাছেপিঠে আর কেউ না থাকায় রবির পাশেই এসে বসল সম্প্রতি আসা মানুষগুলো। ভদ্রলোকের বয়স পঞ্চাশের কিছু বেশিই হবে, ভদ্রমহিলারও চল্লিশ ছুঁই-ছুঁই। আর তাঁদের সঙ্গে আসা মেয়েটির বয়স বিশ থেকে পঁচিশের মধ্যে।

    পানপাতার মত গোলগাল মুখ, খাড়া নাক, চ্যাপ্টা চিবুক, রীতিমত সুন্দরীই বলা চলে তাকে। প্রায় কোমর ছুঁই-ছুঁই দীঘল কালো চুল আরও বেশি আকর্ষণীয় করে তুলেছে তাকে।

    সাতাশ বছরের অবিবাহিত কুমার রবি, মেয়েটির দিকে আড়চোখে বার-বার তাকাবে, এটাই স্বাভাবিক। তাই না?

    কিছুক্ষণ নীরবেই কেটে গেল। চোখের কোণ দিয়ে তাকানোর বাইরে আর বিশেষ কিছু করেনি রবি। তার কাছে মনে হচ্ছে মেয়েটিও তার প্রতি যথেষ্টই আগ্রহী। নইলে তার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসবে কেন?

    সাহস করে একবার সরাসরি তাকাল সে। মেয়েটিও তখন তার দিকেই তাকিয়ে আছে! চোখেমুখে কৌতূহল, যেন বিশেষ কিছু জানতে চায় সে রবির ব্যাপারে। অদম্য আগ্রহে নিজের অজান্তেই গলাটা বকের মত লম্বা করে দিল রবি। আর ঠিক তখনই কথা বলে উঠল মেয়েটি।

    ‘তোর প্যান্টের চেইন খোলা ক্যান?’

    হতভম্ব হয়ে গেল রবি। এসব কী বলছে মেয়েটা?

    চট করে প্যান্টের দিকে চোখ চলে গেল তার। লাগানোই তো আছে চেইন!

    ‘মাইয়া দেখলেই বুঝি চউখ দিয়া চাটতে মন চায়? বেজন্মা কোনহানকার। কে রে তুই? মানুষ নাকি ভাদ্রমাসের পাগলা কুত্তা?’

    চোখেমুখে অন্ধকার দেখল রবি। কী করবে, বলবে, কিছুই মাথায় আসছে না তার। গা কাঁপছে, শ্বাসও ঠিকমত নিতে পারছে না সে। কী হচ্ছে এসব? বাস্তবেই ঘটছে তো? নাকি এটাও আরেকটা দুঃস্বপ্ন?

    ঠাস করে একটা চড়ের শব্দে ঘোর কাটল তার। মেয়েটির গালে পাঁচ আঙুলের ছাপ বসিয়ে দিয়েছে তার বাবা। কিছুক্ষণ আগের শান্ত-সৌম্য রূপ আর নেই ভদ্রলোকের, তিনি এখন পুরোপুরি অগ্নিশর্মা।

    রবির দিকে তাকিয়ে বললেন, ‘আই অ্যাম সরি, ইয়াং ম্যান। আমার মেয়ে মানসিকভাবে সুস্থ নয়। এজন্যই এখানে আসা। তুমি কিছু মনে কোরো না, প্লিজ।’

    ‘না, না। ইট’স ওকে। আমি বুঝতে পেরেছি,’ কোনমতে বলল রবি।

    হাত-পা গুটিয়ে নিজের চেয়ারে জড়সড় হয়ে বসল সে। মাথা নিচু করে রেখেছে, মেয়েটির দিকে তাকানোর সাহস আর নেই। তাকালে দেখতে পেত, তার দিকেই অপলক তাকিয়ে আছে মেয়েটি। ফিসফিস করে বলছে, ‘পলাইয়া যা। পলাইয়া যা…’

    দুই

    ‘আমি ভয় পাই,’ মৃদুস্বরে বলল রবি। ডা. নোরার মুখোমুখি চেয়ারে বসে আছে সে। তাকিয়ে আছে ডাক্তারের ভাবলেশহীন চেহারার দিকে |

    ‘কম আর বেশি, ভয় আমরা সবাই পাই। এটা অস্বাভাবিক কিছু নয়,’ নোরা বললেন। ‘তা আপনার ভয় পাওয়ার কারণটা কী?’

    কয়েক মুহূর্ত ইতস্তত করল রবি। ‘আমি জানি আমার ব্যাপারটা কোন মানসিক সমস্যা নয়। আমি পাগল নই। তবুও কেন যে আপনার এখানে এলাম, সেটা আমি নিজেও জানি না।’

    ‘মানসিক সমস্যা থাকা মানেই কিন্তু পাগল হয়ে যাওয়া নয়,’ শান্তস্বরে বললেন নোরা। ‘তাছাড়া কখনও-কখনও মন খুলে কারও সাথে কথা বলতে পারলে অস্থিরতা অনেকটুকু কমে যায়। কিংবা বিশেষ কারও সামান্য একটু কাউন্সিলিংই হয়তো মনের ভার লাঘব করে সঠিক পথনির্দেশনা দিতে পারে মানুষকে। তাই আমায় সবকিছু খুলে বলুন। শ্রোতা হিসেবে আমি কী ভাবছি না ভাবছি, কিংবা আমার পেশা কী, সেটা নিয়ে মাথা ঘামানোর প্রয়োজন নেই আপনার।’

    তাঁর কথায় খানিকটা আশ্বস্ত হলো রবি। তার চেহারার বিব্রতভাব অনেকটাই কেটে গেল। ‘ঘটনার সূত্রপাত সপ্তাহ দুয়েক আগে। হঠাৎ করেই দুঃস্বপ্ন দেখতে শুরু করি আমি। অথচ এর আগে ঘুমের কোন সমস্যাই ছিল না আমার। বিছানায় শোয়া মাত্রই ঘুমিয়ে পড়তাম, তারপর একঘুমে রাত কাবার। স্বপ্ন-টপ্ন বিশেষ একটা দেখতাম না। কিন্তু আচমকাই সবকিছু বদলে গেল। দুঃস্বপ্নগুলো মাঝরাতেই ঘুম ভেঙে দিতে শুরু করল। একবার ঘুম ভাঙার পর সারারাত আর একটুও চোখের পাতা এক করতে পারি না আমি, কিছুতেই আর ঘুম আসে না। বিছানায় গড়াগড়িই কেবল সার হয়। সেই সাথে প্রচণ্ড ভয় আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরে আমাকে। ভোরের আলো ফোটার আগপর্যন্ত আর ভয়টা থেকে মুক্তি মেলে না আমার। এখন আপনি নিশ্চয়ই জানতে চাচ্ছেন, কী নিয়ে দুঃস্বপ্ন দেখি আমি?’

    মুখে কিছু না বলে কেবল হ্যাঁ-সূচক মাথা দোলালেন নোরা।

    ‘আমি দেখি আমার ঘরের প্রতিটি আসবাবপত্রের প্রাণ আছে, ওরা নিথর কোন জড়বস্তু নয়! আঁধার ঘনালেই ওদের ভিতর প্রাণসঞ্চার ঘটে, আর একেকটা জিনিস পরিণত হয় একেকটা জীবন্ত বিভীষিকায়। তারা এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় চলাচল করতে পারে, কথা বলতে পারে, এমনকী চিৎকারও করতে পারে। তাদের প্রত্যেকের গলার স্বর আলাদা। তাদের চিন্তাচেতনা, কথা বলার ধরন, এমনকী আবেগের প্রকাশও স্বতন্ত্র। কেবল একটা ব্যাপারেই তারা একাট্টা, তাদের অভিপ্রায়। তারা কেউই চায় না, আমি তাদের সাথে একঘরে থাকি! তারা চায়, আমি যেন দূরে কোথাও চলে যাই, তবে ঘরের একটা জিনিসেও যেন হাত না দিই। ওরা যেমন আছে তেমনই থাকবে, শুধু আমিই যেন না থাকি! প্রথম- প্রথম ওরা এলোপাতাড়ি হুমকি দিত। তবে শেষমেশ আমাকে একটা নির্দিষ্ট সময় বেঁধে দেয়া হয়েছে ঘরটা ছাড়ার জন্য। আর আজই তার শেষ দিন। ওরা প্রত্যেকেই আমাকে পই-পই করে বলে দিয়েছে, আজকের পরও যদি আমি ঘর না ছাড়ি, আমাকে এর জন্য চরম মূল্য চুকাতে হবে। এখন আপনিই বলুন, দু’সপ্তাহ ধরে প্রতি রাতে এমন স্বপ্ন দেখলে কীভাবে একজন মানুষ ভাল থাকে? ভয় পাওয়াটা কি খুবই অস্বাভাবিক?’

    মাথা নাড়লেন নোরা। ‘মোটেও অস্বাভাবিক নয়, খুবই স্বাভাবিক। যে কেউ এমন পরিস্থিতিতে ভয় পাবে।’

    রবিকে স্বাভাবিক হতে খানিকটা সময় দিলেন তিনি। খেয়াল করেছেন, কথা শেষ হলেও এখনও অল্প-অল্প কাঁপছে সে।

    ‘আচ্ছা, দুঃস্বপ্নগুলো কি কেবল রাতেই দেখেন? নাকি দিনে ঘুমালেও হানা দেয় ওরা?’ হালকা স্বরে জিজ্ঞেস করলেন নোরা।

    জবাব দেয়ার আগে কয়েক মুহূর্ত ভেবে নিল রবি। ‘দিনে দেখিনি কখনও। আসলে দিনে ঘুমানোর সুযোগই হয় না আমার। সপ্তাহে ছয়দিন চাকরি নিয়ে ব্যস্ত থাকতে হয়। সাতসকালে বেরিয়ে, ফিরি সন্ধ্যার পর। আর ছুটির দিনটা বন্ধুদের সাথে কাটাই অথবা সপ্তাহের জমানো নিজস্ব টুকিটাকি কাজগুলো সেরে নিই। এই যেমন আজ আপনার এখানে এলাম।’

    ‘বেশ। বুঝলাম,’ মাথা দোলালেন নোরা। ‘অফিসে অথবা অফিসের বাইরে, কোন কিছু নিয়ে মানসিক চাপের মধ্যে নেই তো আপনি?’

    আবারও কিছুক্ষণের বিরতি নিল রবি। ‘উঁহু। এই মুহূর্তে আমার জীবন কোন ক্রিটিকাল ফেইজ অতিক্রম করছে না। চাকরিটা পরিশ্রমের হলেও, ওটা নিয়ে সন্তুষ্ট আমি। আমার যা যোগ্যতা, তাতে এরচেয়ে ভাল কিছু আশা করাটাও বোকামি। অফিসের সবার সাথে সম্পর্ক ভাল আমার। বসও আমাকে বেশ পছন্দ করেন বলেই জানি। অফিসের বাইরেও কোন কিছু নিয়ে ঝামেলা নেই আপাতত।’

    ‘বাসায় কে-কে থাকেন আপনার সাথে?’

    ‘আসলে একাই থাকি আমি এখানে। একটা দোতলা বাড়ির চিলেকোঠায় বাবা-মা গ্রামে থাকেন, শহরে আসতে চান না। তাই নিজের জন্য কোনমতে চলনসই একটা আশ্রয় খুঁজে নিয়েছি আরকী। তাছাড়া যে আয় করি, তা দিয়ে বিলাসবহুল জীবন কাটানোর কথা কল্পনাও করা যায় না। তবে তা নিয়ে কোন আফসোস নেই আমার, আমি মোটেও অসুখী নই।’

    ‘সুখ ব্যাপারটা আসলে নিজের কাছে। আপনার চাহিদাকে আপনি যত নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন, আপনার প্রাপ্তিকে যত বেশি উপভোগ করতে পারবেন, আপনি তত বেশি সুখী হবেন। আপনি বলছিলেন, আপনি একটা বাড়ির চিলেকোঠায় থাকেন। তো ওখানে, আলো-বাতাস ঠিকঠাক পান তো? মানে বলতে চাচ্ছি, পরিবেশটা স্বাস্থ্যকর তো? এমন অনেক ঘিঞ্জি এলাকা আমার চেনা, যেখানে দিনরাত চব্বিশ ঘণ্টাই বাতি জ্বেলে রাখতে হয় আলোর জন্য। আর খোলা হাওয়ার কথা তো ভাবাই বৃথা।’

    ‘না, না। আমার ঘরটা মোটেও তেমন নয়। আসলে নামে চিলেকোঠা হলেও, ঘরটার আকার বেশ বড়। অ্যাটাচ্‌ড় বাথরুম আছে। আশপাশে বড় কোন ইমারত না থাকায়, আলো-বাতাস বেশ ভালই পাওয়া যায়।’

    ‘সম্প্রতি বাসার কাছাকাছি এমন কোন কলকারখানা কি গড়ে উঠেছে, যেটা বাজে গ্যাস কিংবা দুর্গন্ধ ছড়ায়? আজকাল তো হরহামেশাই আবাসিক এলাকায় ফ্যাক্টরি দেখতে পাচ্ছি। নিয়ম না মানাটাই এখন এদেশের মানুষের জন্য নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে।’

    ‘উঁহুঁ। তেমন কোন কারখানা চোখে পড়েনি ইদানীং ওই এলাকায়। বাজে কোন গন্ধ কিংবা গ্যাসও নাকে এসেছে বলে মনে পড়ছে না। আসলে বাসাটা শহর থেকে খানিকটা দূরে কি না, তাই পুরোপুরি দূষিত হওয়ার সুযোগ পায়নি এখনও। শহরের চৌহদ্দিতে কে একজন ব্যাচেলরকে ঘর ভাড়া দেবে, বলুন? এই শহরে ব্যাচেলর হিসেবে ঘর ভাড়া পাওয়া আর চাঁদে যাবার টিকিট পাওয়া একই ব্যাপার। দুটোর কোনটাই আমার ভাগ্যে নেই। মেস করে একগাদা লোকের সাথে থাকতে ইচ্ছে করে না। প্রাইভেসির জলাঞ্জলি দিতে ঘোর আপত্তি আমার। সবকিছু মিলিয়েই শহর থেকে খানিকটা দূরে বাসা ভাড়া নিয়েছি।’

    ‘ভাল। নিজের স্বকীয়তা বজায় রাখতে, ঝাঁকের কই না হওয়ার কোন বিকল্প নেই। আচ্ছা, আপনার ঘরে এখন যেসব আসবাবপত্র আছে, সেগুলোর সাথে কি আপনার কোন বিশেষ স্মৃতি জড়িয়ে আছে? কোন দুঃখের স্মৃতি? অথবা এমন কিছু, যা আপনাকে বিশেষ কোন মুহূর্তের কথা মনে করিয়ে দেয়?’

    খানিকক্ষণ ইতস্তত করল রবি। কথাটা কীভাবে বলবে, ঠিক বুঝে উঠতে পারছে না সে। ‘সত্যি বলতে, ওগুলোর একটাও আমার নয়। তাই ওগুলোর সাথে জড়ানো কোনরকম স্মৃতি থাকার সুযোগই নেই আসলে। আমি যাবার আগে থেকেই ওগুলো ঘরটায় ছিল।’ –

    ‘ঠিক বুঝতে পারলাম না আপনার কথা। একটু ক্লিয়ার করুন, প্লিজ।’

    ‘আমার আগে যিনি ও ঘরটায় থাকতেন, জিনিসগুলো আসলে তাঁরই। চলে যাবার সময় ওগুলো সঙ্গে করে নিয়ে যাননি তিনি। আসলে নিজেও তিনি গায়েব হয়ে গেছেন কাউকে কিছু না বলেই।

    ‘একদিন সকালে নিয়মমাফিকই বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলেন, কিন্তু রাতে আর ঘরে ফেরেননি। সেই যে উধাও হলেন, তারপর থেকে তাঁর আর কোন খোঁজই পাননি বাড়ির মালিক।

    ‘চেষ্টার কোন ত্রুটি করেননি তিনি, কিন্তু শেষতক ভাড়াটে ভদ্রলোকের কোন হদিস বের করা সম্ভব হয়নি তাঁর পক্ষে। ভদ্রলোক যেন পুরোপুরি বাতাসে মিলিয়ে গেছেন!

    ‘একাকী জীবনযাপনে অভ্যস্ত ছিলেন, কারও সাথেই খুব একটা কথা বলতেন না। কাউকে কখনও তাঁর কাছে আসতেও দেখা যায়নি। দেশের বাড়ির যে ঠিকানা উনি দিয়েছিলেন, ওটাও ছিল ভুয়া। ওই নামের কাউকেই চিনতে পারেনি এলাকার লোকজন।

    ‘নিজে গায়েব হয়ে বাড়ির মালিককে অথৈ সাগরে ভাসিয়ে দিয়ে গিয়েছিলেন ভদ্রলোক। বাড়িভাড়া দিয়েই সংসারের জন্য অন্নের সংস্থান করতে হয় বেচারাকে। অনির্দিষ্টকাল ঘরটা ফাঁকা রাখার কোন উপায় নেই তাঁর। তবুও মাস তিনেক অপেক্ষা করেছেন তিনি। তারপরই কেবল টু-লেট নোটিশ ঝুলিয়েছিলেন সদর দরজায়। তবে ঘরের মালামালগুলো ফেলে দেননি কিংবা বিক্রি করে দেননি তিনি। যেন ওই হারিয়ে যাওয়া ভদ্রলোক কখনও ফিরে এলে তাঁর মালসামান কড়ায়-গণ্ডায় বুঝে নিতে পারেন।

    ‘আমাকে ঘরটা ভাড়া দেবার সময় এটাই ছিল একমাত্র শর্ত। নিজের মালামাল আনা চলবে না আমার, আপাতত ওগুলোই ব্যবহার করতে হবে।

    ‘জানেনই তো, এই শহরে ঘরভর্তি মালামাল সহ বাসা বদলানোটা কতটা ঝক্কির কাজ। তাই আমিও নির্বিবাদে শর্তটা মেনে নিয়েছিলাম। নিজের যা কিছু ভাঙাচোরা মালপত্র ছিল, পানির দরে বেচে দিয়ে একেবারে ঝাড়া হাত-পা নিয়ে উঠে পড়েছিলাম ওই চিলেকোঠায়। তাছাড়া আমার নিজের জিনিসপত্রের চেয়ে ওই ভদ্রলোকেরগুলো অনেক বেশি উন্নতমানের। শর্তটা মেনে নেয়ার এটাও একটা কারণ বটে,’ হাসতে হাসতে কথা শেষ করল রবি।

    রক্তা এবং শ্রোতা, হাসছে দু’জনেই। আলাপচারিতার এ পর্বটা বেশ উপভোগ্য হয়ে উঠেছে।

    ‘এতক্ষণে আপনার সমস্যাটার একটা সম্ভাব্য কারণ পাওয়া গেল, হেসে বললেন নোরা।

    ‘বলেন কী! জলদি খোলসা করুন, প্লিজ,’ কিছুটা সামনের দিকে ঝুঁকে এল রবি।

    ‘মানুষের অন্যতম দুর্বল একটি বৈশিষ্ট্যের নাম, মায়া। অদৃশ্য, কিন্তু অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি ফোর্স এটি। যা পিছুটান তৈরি করে, সামনে এগোতে বাধা দেয় মানুষকে। মায়ার বন্ধন ছিন্ন করতে নিজের উপর অনেকখানি জোর খাটাতে হয়, যা প্রায়শই বেদনাদায়ক হয়ে ওঠে। মানুষ এই মায়া কেবল অন্য মানুষদের প্রতিই অনুভব করে, ব্যাপারটা এমন নয়। যে কোন স্থান, যে কোন জড়বস্তুর উপরেও জন্মাতে পারে মায়া।

    ‘কোথাও বেশিদিন থাকলে, জায়গাটার প্রতি আমাদের মায়া পড়ে যায়। কোন জিনিস অনেকদিন ধরে ব্যবহার করলে, সেটার প্রতিও আমরা এক ধরনের মায়া অনুভব করি। তাই পুরনো জিনিসপত্র আমরা চট করে ফেলে দিতে পারি না, আমাদের কষ্ট হয়। নতুনকে আমরা স্বাগত জানাই ঠিকই, তবে পুরনোর প্রতি হৃদয়ের টানটাও আমরা অস্বীকার করতে পারি না। তাদের হারানোর ভয়টা আমাদের মর্মযাতনার কারণ হয়।

    ‘আপনার ক্ষেত্রেও ঠিক সেটাই ঘটছে এখন। বর্তমান ঘরের আসবাবপত্রগুলো আপনার অনেক বেশি পছন্দ হয়ে গেছে। আপনার অবচেতন মন নিজের অজান্তেই সেগুলোকে আপন করে নিয়েছে। তাই তাদের প্রতি মায়ার টানটাও বেশ জোরাল। কিন্তু সচেতন আপনি জানেন, ওগুলো আপনার নয়। ওগুলোর মালিক অন্য কেউ, যে কোন সময় হাতছাড়া হয়ে যেতে পারে জিনিসগুলো। তাই আপনার নিজের ভিতরে একধরনের দ্বন্দ্ব তৈরি হয়েছে।

    ‘ওদেরকে হারানোর ভয়টা আপনার অবচেতন মনে আগে থেকেই ছিল কিন্তু কোন কারণে আচমকা সেই ভয়টা বেড়ে গেছে বহুগুণে। আপাত দৃষ্টিতে কোন সাধারণ ঘটনা, কিংবা দৈনন্দিন আলাপচারিতার কোন নির্দোষ সংলাপই এক্ষেত্রে ট্রিগার হিসেবে কাজ করেছে বলে আমার ধারণা। আর এরপর থেকেই আপনার মধ্যে তৈরি হয়েছে এক ধরনের ঘোর। আর সেটাই দুঃস্বপ্ন হয়ে প্রতিনিয়ত আপনাকে তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে এখন।

    ‘আমার মনে হয়, শুধু রাতে নয়, দিনে ঘুমালেও স্বপ্নটা আপনি দেখতে পাবেন। কারণ কেবলমাত্র ঘুমের সময়ই আপনার অবচেতন মন সচেতন আপনার উপর আধিপত্য করার সুযোগ পায়। রাত কিংবা অন্ধকারের সাথে আদৌ এর কোন সম্পর্ক নেই।’

    নোরার কথা শেষ হলেও বেশ কিছুক্ষণ চুপ করে রইল রবি। বুঝতে পারছে, অযৌক্তিক কিছু বলেননি ভদ্রমহিলা। সমস্যাটা আসলেই তার মনে।

    তাকে আরও কিছু টুকটাক প্রশ্ন করলেন নোরা। শান্তভাবেই প্রশ্নগুলোর জবাব দিল রবি। তাকে যত দ্রুত সম্ভব বাসা পাল্টানোর পরামর্শ দিলেন ডাক্তার। সেই সঙ্গে বেশ কিছু ওষুধও লিখে দিলেন। গভীর ঘুম এবং দুশ্চিন্তামুক্ত থাকতে এগুলো কাজে দেবে।

    ওষুধ নিয়ে যখন বাসায় ফিরল সে, ঘড়ির কাঁটায় তখন রাত নয়টা বেজে দশ মিনিট। অন্যান্যদিনের তুলনায় সে রাতে বেশ খানিকটা জলদিই বিছানায় গেল ও। বহুদিন পর দুঃস্বপ্নমুক্ত একটা ফ্রেশ ঘুমের প্রত্যাশা করছে।

    তিন

    ঠিক কী কারণে অমন গভীর ঘুমটা চট করে ভেঙে গেল, সেটা রবি নিজেও জানে না। তবে আজ সত্যিই কোন দুঃস্বপ্ন দেখেনি সে। নিস্তব্ধ রাতে ঘড়ির কাঁটার একঘেয়ে শব্দটাও অনেক বেশি জোরাল শোনাচ্ছে।

    বালিশের পাশে রাখা মোবাইলে সময় দেখল রবি। রাত দুটো বাজে। সকাল হতে এখনও ঢের দেরি।

    এতটা সময় অযথা জেগে থাকার কোন মানে হয় না। তাই একগ্লাস পানি খেয়ে আবারও শুয়ে পড়বে বলেই মনস্থ করল সে।

    রাতে ঘুম ভাঙলে বড্ড পানি পিপাসা পায় তার। তাই পানির জগ আর গ্লাসটা সবসময় হাতের নাগালেই রাখে। খাটের পাশে ছোট্ট একটা টী-টেবিল। তার উপরেই রাখা থাকে ওগুলো।

    পাশ ফিরে গ্লাসে পানি ঢালতে গিয়েই রীতিমত আঁতকে উঠল রবি। ঘরের মাঝখানে খানিকটা উবু হয়ে ওটা কে বসে আছে? হাত-পাগুলো অমন অদ্ভুত ভঙ্গিমায় দোলাচ্ছে কেন লোকটা? ঘরেই বা ঢুকল কেমন করে?

    ‘তোকে এখান থেকে চলে যেতে বলেছিলাম,’ ফিসফিস করে বলে উঠল লোকটা। যেন বহুদূর থেকে ভেসে আসছে তার কণ্ঠস্বর।

    আতঙ্কে আত্মা খাঁচাছাড়া হবার উপক্রম হলো রবির। গায়ের সবকটা লোম দাঁড়িয়ে গেল মুহূর্তেই। প্রাণপণে চিৎকার করার জন্য মুখ খুলল সে। আর ঠিক তখনই আবিষ্কার করল, নড়ছে না আর লোকটা এখন, পুরোপুরি স্থির হয়ে আছে!

    মনে খানিকটা সাহস সঞ্চার করতে অনেকটা সময় লেগে গেল রবির। তবে শেষতক নিজের উপর নিয়ন্ত্রণ ফিরে পেল সে।

    প্রাণপ্রাচুর্যে ভরা তার বয়সী একজন তরুণ যদি রাত-দুপুরে ভূতের ভয়ে চেঁচিয়ে পাড়া মাথায় করে, সবার সামনে মুখ দেখাতে পারবে আর? লজ্জায় মাথা হেঁট হয়ে যাবে না?

    খানিকটা মনোবল ফিরে পেতেই এক দৌড়ে দেয়ালের সুইচবোর্ডের কাছে চলে গেল সে। উজ্জ্বল আলো নিমিষেই ঘরের সমস্ত অন্ধকার ঝেঁটিয়ে বিদায় করে দিল।

    কোথায় লোক, কোথায় কী! ঘরের মাঝখানে ওটা তো একটা কাঠের চেয়ার!

    কিন্তু লাখ টাকা বাজি রেখে বলতে পারে রবি, কিছুক্ষণ আগেও ওটা দেখতে ঠিক এরকম ছিল না। আর ফিসফিস করে দেয়া হুমকিটাও সে ভুল শোনেনি।

    চট করে ব্যাপারটা মাথায় এল তার। চেয়ারটা ঘরের মাঝখানে এল কী করে? ওটা তো সবসময় ঘরের কোনায় রিডিং টেবিলটার পাশে থাকে। আজ ঘুমানোর সময়ও ওখানেই ছিল ওটা। তাহলে?

    কাছে গিয়ে ভাল করে ওটাকে পরীক্ষা করে দেখতে লাগল রবি। উঁহুঁ, কোন পরিবর্তন নেই, যেমন ছিল তেমনই আছে ওটা। তবুও ভয়টা পুরোপুরি কাটল না তার।

    শেষমেশ দরজা খুলে ওটাকে ছাদের এক কোনায় রেখে এসে তবেই সে শান্ত হলো। সকালে ভেবে দেখবে কী করা যায় ওটাকে নিয়ে।

    আবার বিছানায় সে ফিরল ঠিকই, কিন্তু ঘরের বাতিটা জ্বালানোই রইল। অন্ধকারে ঘুমানোর সাহস নেই আর।

    বেশ কিছুক্ষণ কিছুই ঘটল না। তার চোখের পাতা দুটোও ভারী হয়ে এল। পাশ ফিরে আরও খানিকটা আরাম করে শুতে গেল সে। আর ঠিক তখনই দপ করে নিভে গেল বাতিটা!

    চমকে উঠল রবি। লোডশেডিং? কিন্তু ফ্যানটা তো দিব্যি ঘুরছে! বাইরের ল্যাম্পপোস্টের বাতি থেকে হালকা আলো আসছে জানালার ফাঁকফোকর গলে। লাইটটা কি তাহলে ফিউজ হয়ে গেল?

    ‘কেউ আজ তোকে বাঁচাতে পারবে না আমাদের হাত থেকে। খোদার দরবারে তোর মরণ লেখা হয়ে গেছে। আজ আর তোর কোন নিস্তার নেই, আচমকা শোনা গেল ভয়াল এক কণ্ঠস্বর। ঘরের বদ্ধ বাতাসে বার কয়েক প্রতিধ্বনি তুলল বাক্যটা।

    নিখাদ আতঙ্কে কেঁপে উঠল রবির সারা শরীর। ঘরের আবছা অন্ধকারে যা দেখছে সে, তার নিজের কাছেই সেটা অবিশ্বাস্য ঠেকছে এখন। স্বপ্ন কেমন করে সত্যি হয়?

    আলনাটা আর সাধারণ কোন আলনা নেই এখন! অসংখ্য ডানাবিশিষ্ট অতিকায় এক পাখি হয়ে গেছে ওটা। পরিপাটি করে সাজানো কাপড়গুলো যেন একেকটা দুর্বিনীত পাখা, পতপত শব্দে উড়ছে ওগুলো। মাটি থেকে ফুটখানেক উপরে ভাসছে এখন আলনাটা। নিঃসন্দেহে একটু আগে শোনা কথাটা ওটাই বলেছে।

    কম্পিত হাতেই মোবাইলের টর্চটা জ্বালল রবি, আলো ফেলল ওটার গায়ে। প্রত্যাশা ছিল, ভয়ানক কিছু একটা দেখতে পাবে। কিন্তু ভীষণ অবাক হতে হলো তাকে। আলনাটা যেমন ছিল ঠিক তেমনই আছে, এতটুকুও রদবদল হয়নি ওটার!

    আশ্চর্য! সবই কি হ্যালুসিনেশন?

    তবে কাছে গিয়ে ভালমত পরীক্ষা করতেই খুঁতটা ধরা পড়ল তার চোখে। আলনাটা নিজের জায়গা থেকে বেশ কিছুটা সামনে এগিয়ে এসেছে। মেঝেতে স্পষ্ট ফুটে আছে বালির দাগ।

    তবে এটা নিয়ে বেশিক্ষণ ভাবনা-চিন্তা করার অবকাশই পেল না রবি। খটখট শব্দে পিলে চমকে উঠল তার।

    প্রচণ্ড বেগে নড়ছে খাটটা! যেন ভয়াবহ কোন ভূমিকম্প সর্বশক্তি নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছে ওটার উপর। পরক্ষণেই শোনা গেল তীক্ষ্ণ একটা কণ্ঠস্বর, ‘মরবি তুই আজ। মরবি…’

    ঝট করে ওটার উপর টর্চের আলো ফেলল রবি। কাঁপুনির চোটে মোবাইলটা হাতে ধরে রাখতেই বেগ পেতে হচ্ছে তাকে।

    আলো পড়তেই নড়াচড়া থেমে গেল খাটটার। যেন চিরকাল এভাবেই স্থির পড়ে ছিল ওটা!

    ভয়ানক বিপদে পড়েছে, এটা বুঝতে বাকি রইল না রবির। সিদ্ধান্ত নিল, কাল সকালেই বাসাটা ছেড়ে দেবে। আজ রাতটা কোনরকমে পার করতে পারলেই হয় কেবল।

    অ্যাডভান্সের টাকা যদি ফেরত না-ও পাওয়া যায়, তাতেও কিছু যায় আসে না তার। জীবনের চেয়ে টাকা বড় নয়। কিন্তু রাতটা কাটাবে কীভাবে? সকাল অবধি এহেন অত্যাচার সহ্য করা রীতিমত অসম্ভব।

    পরক্ষণেই মাথায় একটা বুদ্ধি খেলে গেল তার। চেয়ারটার মত সবকিছু ঘরের বাইরে রেখে এলে কেমন হয়? ছাদে রেখে আসার পর থেকে ওটা আর কোনরকম ঝামেলা করেনি।

    সবগুলো মালপত্র সরাতে অনেক পরিশ্রম হবে, হয়তো মিনিট বিশেক সময়ও লেগে যাবে। তবে বাকি রাতটা আরামসে কাটিয়ে দেয়া যাবে। ভোর হতে এখনও অনেকটা সময় বাকি।

    কাজে নেমে পড়ল রবি। প্রথমেই ঘরের জানালাগুলো খুলে দিল। বাইরের সোডিয়াম বাতির হলদে আলোয় ঘরের অন্ধকার অনেকটাই কেটে গেল। মোবাইলের টর্চ জ্বেলে রাখার ঝামেলাটা আর পোহাতে হলো না তাকে। একে- একে ঘরের সবকিছু বাইরে রেখে আসতে শুরু করল সে। একাকী করার জন্য বেশ কষ্টসাধ্য কাজ, কিন্তু রবি নিরুপায়। পুরো ঘরটা ফাঁকা করতে তার হিসেবের চেয়ে মিনিট পাঁচেক সময় বেশিই লাগল। তবে তাতে কিছু যায়-আসে না তার। কাজটা শেষ করা গেছে, এটাই স্বস্তি।

    এখন অন্তত শান্তিতে কিছুক্ষণ ঘুমানো যাবে।

    মেঝেতে একখানা চাদর বিছিয়ে তাতেই শুয়ে পড়ল সে। ক্লান্ত শরীর, চোখের পাতা বুজে আসতে সময় লাগল না। সবে চোখদুটো বন্ধ করেছে কি করেনি, আবারও শোনা গেল কলজে কাঁপানো এক কণ্ঠস্বর, ‘সময় শেষ।’

    চমকে জেগে উঠল রবি। কে কথা বলছে? ঘরে তো একটা কিছুও অবশিষ্ট নেই আর!

    খিকখিক হাসির শব্দে উপরে তাকাতে বাধ্য হলো রবি। সঙ্গে-সঙ্গেই আতঙ্কে জমে বরফ হয়ে গেল তার পুরো শরীর। চোখদুটো কোটর ছেড়ে বেরিয়ে পড়বার প্রাণপণ চেষ্টা করছে।

    মাথার উপর সবেগে ঘুরছে সিলিঙ ফ্যানটা। আর ঠিক তার মাঝখানের জায়গাটায় ফুটে উঠেছে ভয়াল একখানা চেহারা! তার দিকে তাকিয়ে হাসছে সেটা।

    ফ্যানটার কথা মনেই ছিল না রবির। আগের ভাড়াটের এই একটা জিনিসই এখনও রয়ে গেছে ঘরে!

    ঝট করে উঠে দাঁড়াল রবি। দৌড়ে পালাতে চাইল ঘরের বাইরে। তবে তাকে সে সুযোগ দেয়া হলো না!

    আচমকা খুলে গেল ফ্যানের সবকটা পাখা। প্রচণ্ড বেগে সেগুলো ধেয়ে গেল রবির দিকে। ধারাল ব্লেডের উপর্যুপরি আঘাতে নিমিষেই চিরে ফালাফালা হয়ে গেল তার গোটা দেহ।

    কেবলমাত্র একবারই গলা ফাটিয়ে চেঁচানোর সুযোগ পেল রবি। নীরব রাতে সেই চিৎকারটা অনেক দূর থেকেও স্পষ্ট শোনা গেল। বহু মানুষের ঘুম ভাঙিয়ে চিরতরে ঘুমিয়ে পড়ল রবি!

    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleবিফোর দ্য কফি গেটস কোল্ড – তোশিকাযু কাওয়াগুচি
    Next Article অন্ধকারের গল্প – তৌফির হাসান উর রাকিব সম্পাদিত

    Related Articles

    তৌফির হাসান উর রাকিব

    হাতকাটা তান্ত্রিক – তৌফির হাসান উর রাকিব সম্পাদিত

    August 25, 2025
    তৌফির হাসান উর রাকিব

    অন্ধকারের গল্প – তৌফির হাসান উর রাকিব সম্পাদিত

    August 25, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Demo
    Most Popular

    কাঙাল মালসাট – নবারুণ ভট্টাচার্য

    September 1, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    কাঙাল মালসাট – নবারুণ ভট্টাচার্য

    September 1, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Our Picks

    কাঙাল মালসাট – নবারুণ ভট্টাচার্য

    September 1, 2025

    লুব্ধক – নবারুণ ভট্টাচার্য

    September 1, 2025

    হারবার্ট – নবারুণ ভট্টাচার্য

    September 1, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    Sign In or Register

    Welcome Back!

    Login below or Register Now.

    Lost password?

    Register Now!

    Already registered? Login.

    A password will be e-mailed to you.