Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    কাঙাল মালসাট – নবারুণ ভট্টাচার্য

    September 1, 2025

    লুব্ধক – নবারুণ ভট্টাচার্য

    September 1, 2025

    হারবার্ট – নবারুণ ভট্টাচার্য

    September 1, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • 🔖
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    Subscribe
    সাইন ইন
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    ট্যাবু – তৌফির হাসান উর রাকিব

    তৌফির হাসান উর রাকিব এক পাতা গল্প226 Mins Read0

    মার্জার সমাচার

    আফতাব সাহেব বিড়াল পছন্দ করেন না। একদমই না। দানবীয় ট্রাকগুলোর পেছনে যেমন গাঢ় কালিতে লেখা থাকে, ‘একশো হাত দূরে থাকুন’, পৃথিবীর তাবৎ বিড়ালের শরীরেও অনেকটা ওরকম অদৃশ্য একটা লেখা দেখতে পান তিনি।

    শৈশবে, কোন এক ঘুঘু ডাকা দুপুরে, খেপাটে একটা মা বিড়াল তাঁর ডান হাতের কড়ে আঙুলে একখানা রাম কামড় বসিয়ে দিয়েছিল। বেচারা বুঝতেও পারেননি, বেখেয়ালে কখন তিনি একটা সদ্য জন্মানো বিড়াল ছানার আঁতুড় ঘরের হাতছোঁয়া দূরত্বে পৌঁছে গিয়েছিলেন! আর ঠিক সেকারণেই, অতর্কিতে সন্তানের নিরাপত্তার জন্যে হুমকি হয়ে ওঠা মানুষটাকে প্রাপ্য পাওনা বুঝিয়ে দিতে কোনরকম কসুর করেনি বিড়াল-মাতা।

    হাতের ব্যথাটা অবশ্য সেরে যেতে খুব একটা সময় লাগেনি, তবে বিড়ালের প্রতি বিদ্বেষটা চিরকালের জন্য গেঁথে গিয়েছিল আফতাব সাহেবের হৃদয়ে। কালে- কালে সেটা বেড়েছে বৈ কমেনি।

    বিড়াল দেখলে মাথায় রক্ত চড়ে যায় তাঁর। ওটাকে ঝেঁটিয়ে বিদেয় করার আগ পর্যন্ত শান্তি পান না কিছুতেই।

    কারও বাসায় পোষা বিড়াল থাকলে, ওই বাড়ির চৌহদ্দিতে আর ঘেঁষেন না তিনি, দূরে-দূরে থাকেন।

    বিড়ালওয়ালা বাড়ির বাসিন্দাদের কাছ থেকেও দূরত্ব বজায় রাখেন, উৎসব- পার্বণে এড়িয়ে চলেন। ওদের শরীর থেকেও কেমন একটা বিড়াল-বিড়াল গন্ধ পান তিনি! সারাক্ষণ বিড়ালদের আশপাশে ঘুর-ঘুর করলে এমনই তো হওয়ার কথা, তাই না?

    তাঁর এই অদ্ভুতুড়ে বাতিকটার ব্যাপারে সব আত্মীয়-স্বজনই ওয়াকিবহাল। বলা বাহুল্য, এটা নিয়ে খুশি নয় কেউই, ভীষণ বিরক্ত।

    বাড়াবাড়িরও তো একটা সীমা আছে, নাকি? সামান্য বিড়াল নিয়ে একজন মধ্যবয়স্ক পুরুষ মানুষ এহেন হাঙ্গামা করলে, কাঁহাতক সেটা সহ্য করা যায়? এ নিয়ে এযাবৎকালে কেলেঙ্কারিও তো কম হয়নি!

    কথাটা অক্ষরে-অক্ষরে সত্যি। বিড়াল নিয়ে বেশ কয়েকবারই বড়সড় ঝামেলা বাধিয়েছেন আফতাব সাহেব। তাঁর ভাতিজী মিলির বিয়েতে কী কাণ্ডটাই না হলো!

    মিলির বাবা নেই, বহুকাল আগেই মারা গেছেন। তারপর থেকে অভিভাবকত্বের গুরু দায়িত্বটা একমাত্র চাচা হিসেবে আফতাব সাহেবের কাঁধেই বর্তেছিল 1

    বুকে হাত রেখে বলা যায়, দায়িত্বটায় কোনরকম গাফিলতি করেননি তিনি নিজের ছেলেমেয়েদের মতই কোলেপিঠে করে মানুষ করেছেন মিলিকে। পোশাক- আশাক থেকে শুরু করে খাবার-দাবার, কোনকিছুতেই বিন্দুমাত্র বৈষম্য করেননি কখনও।

    সেদিনের সেই ছোট্ট মিলি বলতে গেলে একরকম তাঁর চোখের সামনেই ধীরে-ধীরে যুবতী হয়েছে। আফতাব সাহেবের কাছে মনে হয়, এই তো সেদিনও মেয়েটা হাফপ্যান্ট আর ফ্রক পরে আঙিনায় ছোটাছুটি করত। কেমন করে এত বড় হয়ে গেল মেয়েটা?

    মিলির বিয়ের আয়োজনটা গোটা তল্লাটে রীতিমত সাড়া ফেলে দিয়েছিল। সে এক এলাহি কারবার, রাজকীয় ব্যাপার-স্যাপার। এলাকার একটা পরিবারও বাদ যায়নি দাওয়াতের লিস্ট থেকে।

    দু’হাতে পয়সা খরচ করেছিলেন আফতাব সাহেব, কোনরকম খামতি রাখেননি। আপ্যায়নের চোটে বরযাত্রীর দল রীতিমত হাঁপিয়ে উঠেছিল। গর্বে আধ-হাত ফুলে উঠেছিল ঘটক তমিজুদ্দিনের বুক, সারাক্ষণ মুখে লেগে ছিল দাঁত কেলানো হাসি।

    সবকিছু ঠিকঠাকই চলছিল, তবে আচমকা গজব হিসেবে আবির্ভূত হলো একটা হোঁৎকা মোটা হুলো বিড়াল!

    বাড়ির পিছনের খড়ের গাদার আড়াল থেকে বেরিয়ে এল ওটা, পায়ে-পায়ে এগিয়ে গেল খাবারের প্যাণ্ডেলের দিকে।

    শামিয়ানার খোলা মুখটার কাছে গিয়ে থমকে দাঁড়াল বিড়ালটা। খাবারের সন্ধানে ইতিউতি তাকাল, বারকয়েক নাক কুঁচকে গন্ধ শুঁকল বাতাসের।

    কাছাকাছিই দাঁড়িয়ে ছিলেন আফতাব সাহেব, অতিথিদের খাওয়া-দাওয়ার তদারক করছিলেন। হাতে বিশাল একখানা দইয়ের হাঁড়ি; মুরুব্বী গোছের মেহমানদের পাতে নিজ হাতে দই তুলে দেবেন, এমনটাই ইচ্ছে ছিল তাঁর।

    বিড়ালটার ওপর চোখ পড়তেই জায়গায় জমে বরফ হয়ে গেলেন তিনি। এক লহমায় দাঁড়িয়ে গেল শরীরের সবক’টা লোম।

    পরক্ষণেই সবাইকে চমকে দিয়ে তারস্বরে চেঁচিয়ে উঠলেন আফতাব সাহেব! হাতে ধরা পাতিলটা সজোরে ছুঁড়ে মারলেন বিড়ালটার উদ্দেশে।

    উত্তেজনায় সর্বাঙ্গ ভীষণ কাঁপছিল তাঁর, তাছাড়া ছুঁড়ে মারার জন্যে দইয়ের হাঁড়ি জিনিসটাও খুব একটা সুবিধের নয়। ফলে যা হওয়ার, তা-ই হলো।

    চোখের পলকে উধাও হয়ে যাওয়া বিড়ালটার বদলে পাতিলটা গিয়ে পড়ল বরের বাবার মাথার ওপর!

    মুরগির রান চিবুনো শেষ করে সবেমাত্র খাসীর কালিয়ার বাটিটার দিকে হাত বাড়াচ্ছিলেন ভদ্রলোক, ঠিক তখনই তাঁর ওপর গজবটা নাযিল হলো।

    খুলির হাড়ের সাথে সরাসরি সংঘর্ষে সশব্দে ভেঙে গেল মাটির পাতিলটা; মিষ্টি দইয়ে ঢেকে গেল বেচারার গোটা অবয়ব!

    উপস্থিত দর্শকদের কাছে মনে হলো, কয়েক মুহূর্তের জন্য বুঝি থমকে গেছে পৃথিবী! যে যার জায়গায় ঠায় বসে রইল সবাই, কী করবে ঠিক বুঝে উঠতে পারছিল না কেউই।

    তবে আকস্মিক চমকের রেশটা কাটতেই সংবিৎ ফিরে পেল সবাই, একযোগে হল্লা করে উঠল। আফতাব সাহেব সহ বেশ কয়েকজন মানুষ দ্রুত ছুটে গেলেন ভিক্টিমের দিকে।

    ভদ্রলোক ততক্ষণে আহারে ইস্তফা দিয়ে উঠে দাঁড়িয়েছেন; রাগে গর্জাতে- গর্জাতে হাঁটা শুরু করেছেন বেসিনের উদ্দেশে। আপাদমস্তক লেপ্টে থাকা দইয়ের প্রলেপ থেকে যতটা সম্ভব মুক্তি পেতে চান।

    ঘটনাটা নিয়ে প্রচুর জল ঘোলা হলো। কীভাবে-কীভাবে যেন রটে গেল, দোষ আছে আফতাব সাহেবের মাথায়; তিনি মৌসুমি পাগল!

    বেঁকে বসলেন ছেলের বাবা, একটা উন্মাদের পরিবারের সাথে কিছুতেই তিনি আত্মীয়তা করতে রাজি নন! পাগলামো বংশগতও হয়; কনের মধ্যেও যে এর ছিটেফোঁটা রেশ নেই, এর কী নিশ্চয়তা আছে?

    বিস্তর বচসার পর শেষতক এলাকার মুরুব্বীদের হস্তক্ষেপে বরপক্ষকে শান্ত করা গেল। সন্ধ্যার ঠিক আগে-আগে বিয়ে হয়ে গেল মিলির। মেয়েটা ভীষণ কেঁদেছিল সেদিন, বাবার মত চাচার অপমান কিছুতেই সহ্য হচ্ছিল না তার।

    বরযাত্রী বিদায় নেয়ার আগ পর্যন্ত নিজেকে ঘরেই বন্দি করে রেখেছিলেন আফতাব সাহেব। সবার সামনে মুখ দেখানোর আর জো ছিল না তাঁর।

    বিড়াল নিয়ে তাঁর বাতিকটার কথা যে ক’জন মানুষের জানার বাকি ছিল, সেদিনের হাঙ্গামায় তাদেরও জানা হয়ে গিয়েছিল ব্যাপারটার আদ্যোপান্ত।

    তাঁকে দেখলে অনেকেই এখন উপহাস করে, মুখ টিপে হাসে। দুষ্টু ছেলের দল আড়াল থেকে ‘ম্যাও, ম্যাও’ বলে চিৎকার করে।

    এসব কিছু দেখেও না দেখার ভান করেন আফতাব সাহেব, নীরবে সহ্য করেন। এছাড়া আর কী-ই বা করার আছে তাঁর?

    এই ঘটনার পর থেকে বিড়ালদের প্রতি রাগটা আরও অনেকখানি বেড়ে গেল তাঁর। রীতিমত নৃশংস আচরণ করতে শুরু করলেন তিনি। একবার কোত্থেকে যেন শুনলেন, বিড়ালদের নাকি পিটিয়ে মারা যায় না; যেভাবেই হোক পালিয়ে যায় ওরা! সাধে তো আর বলে না, একটা বিড়ালের নয়টা জীবন!

    রোখ চেপে গেল আফতাব সাহেবের, যে কোন মূল্যে একটা বিড়ালকে পিটিয়ে মারবেন! নইলে নিজের কাছেই ছোট হয়ে যাবেন তিনি। বাসর রাতে বিড়াল মারার ব্যর্থতার কারণে আজও খেসারত দিতে হয় তাঁকে; একই ভুল দ্বিতীয়বার করতে চান না!

    তবে সহসাই কাজটা করার সুযোগ মিলল না তাঁর, বেশ কিছুদিন অপেক্ষা করতে হলো। কোন এক অগ্রহায়ণে দূরসম্পর্কের এক শালীর বিয়ে উপলক্ষে ঘরসুদ্ধ লোক গ্রামের বাড়িতে চলে গেল। অনেক পীড়াপীড়ি সত্ত্বেও কিছুতেই পরিবারের সঙ্গী হতে রাজি হলেন না তিনি। ব্যবসার কাজের চাপের দোহাই দিয়ে শহরেই রয়ে গেলেন। বিড়াল নিধনের এহেন সুবর্ণ সুযোগটা হেলায় হারানোর কোন মানে হয়?

    বাড়ি খালি হওয়ার সঙ্গে-সঙ্গেই কাজে নেমে পড়লেন তিনি। গোটা কয়েক বাটিতে বেশ যত্ন করেই খাবার সাজালেন। মাছ, মাংস, দুধ…মোদ্দাকথা বিড়ালরা পছন্দ করে এমন কোনকিছুরই কমতি ছিল না তাঁর আয়োজনে।

    বাড়ির সবক’টা দরজা-জানালা বন্ধ করে দিলেন আফতাব সাহেব, খোলা রইল কেবল সদর দরজাটা।

    দরজার পাশেই বিশাল একখানা কাঠের বাক্স রাখা। পুরনো, বেশ পোক্ত। শীতের পোশাক-আশাক আর কাঁথা-কম্বলে বোঝাই থাকে ওটা। দেয়াল থেকে খানিকটা সরানো বলে মাঝখানে একটা ফোকরমতন তৈরি হয়েছে।

    জায়গাটা অন্ধকার; ভাল করে না তাকালে কিংবা আগে থেকে জানা না থাকলে চট করে কারও চোখে পড়ার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে।

    ওখানটাতেই আত্মগোপন করলেন আফতাব সাহেব। শুরু হলো তাঁর প্রতীক্ষার পালা। ঘড়ির কাঁটায় সেকেণ্ড পেরিয়ে মিনিট হলো, মিনিট পেরিয়ে ঘণ্টা; কিন্তু শিকারের টিকিটিরও দেখা মিলল না। যেন দৈববলে এলাকার সমস্ত বিড়াল বেমালুম গায়েব হয়ে গেছে! অথচ আজ সকালেও বাজার থেকে ফেরার পথে অন্তত গোটা তিনেক বিড়ালের দেখা পেয়েছেন আফতাব সাহেব।

    অপেক্ষার প্রহর বরাবরই দীর্ঘ হয়, তাঁর কাছে সেটা রীতিমত অসহ্য ঠেকতে লাগল। উত্তেজনা থিতিয়ে এল, ধীরে-ধীরে অধৈর্য হয়ে উঠলেন তিনি।

    ইতোমধ্যেই ঝিঁঝি ধরে গেছে পায়ে, কায়দামত পেয়ে মশারাও সমানে কামড়ে চলেছে। শেষমেশ তিতিবিরক্ত হয়ে যেই না তিনি উঠে পড়তে যাবেন, ঠিক তখনই অভাগা বিড়ালটা চৌকাঠ ডিঙিয়ে ঘরে ঢুকল।

    গায়ের রঙ বাদামি, এখানে-ওখানে রোম উঠে গেছে; ভীষণ নোংরা।

    হাড়জিরজিরে বেহাল দশা দেখে বুঝতে কষ্ট হয় না, পেটে নিয়মিত দানা- পানি পড়ে না ওটার। কোনমতে ধুঁকে-ধুঁকে বেঁচে আছে।

    তবে অচিরেই ক্ষুৎপিপাসার নিগড় থেকে মুক্তি পেতে চলেছে বিড়ালটা! হয়তো একারণেই ওটাকে আজ এখানে টেনে এনেছে নিয়তি!

    বাঘের মত হুঙ্কার দিয়ে আড়াল থেকে বেরিয়ে এলেন আফতাব সাহেব, ঝড়ের বেগে বন্ধ করে দিলেন দরজাটা।

    সিনেমায় দেখা সামুরাইদের ভঙ্গিমায় হাতের লাঠিটা অনবরত ঘোরাচ্ছেন; চোখজোড়া রীতিমত জ্বল-জ্বল করছে তাঁর।

    কয়েক মুহূর্তের জন্য হতবিহ্বল হয়ে পড়ল বিড়ালটা, অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল আফতাব সাহেবের দিকে। যুগপৎ আতঙ্ক আর বিস্ময় খেলা করছে চোখের তারায়, কী করবে ঠিক ঠাহর করতে পারছে না।

    তবে সাময়িক ঘোরটা ভাঙতেই প্রাণভয়ে ভিতর বাড়ির দিকে ছুট লাগাল ওটা; পালাতে চাইছে। রণ নিনাদ ছেড়ে ওটার পিছন-পিছন তেড়ে গেলেন আফতাব সাহেব। আজ তাঁর হাত থেকে কে বাঁচাবে বিড়ালটাকে?

    প্রায় ঘণ্টাখানেক ধরে চলল এই বিড়ালে-মানুষে হুটোপুটি। ইতোমধ্যে আক্ষরিক অর্থেই গোটা বাড়িটা লণ্ডভণ্ড করে ফেললেন আফতাব সাহেব।

    এহেন আকস্মিক ছোটাছুটি করতে গিয়ে নিজেও বেজায় ক্লান্ত হয়ে পড়লেন। ঘন-ঘন শ্বাস নিতে লাগলেন, গোটা দেহ ঘেমে-নেয়ে একাকার।

    তবুও হাল না ছেড়ে ছায়ার মতন ওটার পিছনে সেঁটে রইলেন তিনি। একটা ব্যাপার কিছুতেই তাঁর মাথায় আসছে না, এতগুলো মারাত্মক আঘাত সহ্য করেও এখনও বহাল তবিয়তে ছুটছে কী করে ওটা? প্রথম কয়েকটা ঘা খাওয়ার পরপরই তো অক্কা পাওয়ার কথা!

    তাঁকে পুরোপুরি হতবাক করে দিয়ে আচমকা বাথরুমের ভেন্টিলেটর গলে পালিয়ে গেল বিড়ালটা! নিজের ছানাবড়া চোখজোড়াকেও বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছিল তাঁর। অতটুকু একটা ফুটো দিয়ে কেমন করে গোটা একটা বিড়াল সেঁধিয়ে গেল?!

    হতাশায় রীতিমত ভেঙে পড়লেন আফতাব সাহেব; শরীরটা এলিয়ে দিলেন বিছানায়। মাথার ওপর ফুলস্পিডে ফ্যান ঘুরছে, তবুও ভীষণ হাঁসফাঁস লাগছে তাঁর।

    আদতেই কি বিড়ালদের নয়টা জীবন? ওদেরকে পিটিয়ে মারা সত্যিই কি অসম্ভব?

    মারাত্মক জখম হওয়া মুমূর্ষু বিড়ালটা পরে ঠিকই মারা গিয়েছিল। একটা এঁদো ডোবার ধারে মানকচুর ঝোপের আড়ালে পড়ে ছিল ওটার মৃতদেহ। তবে সেটা আর কোনদিনও জানা হয়নি তাঁর।

    .

    সাধারণত একটু বেলা করেই বিছানা ছাড়েন আফতাব সাহেব। নিজের ঠিকাদারি ব্যবসা আছে, তাই সকাল-সকাল অফিস ধরার তাড়া নেই তাঁর.১ক

    নাস্তা বানানো শেষে স্ত্রী রোকেয়া বেগম ডেকে তোলার আগ পর্যন্ত চোখ মুদেই থাকেন তিনি, ভোরের ঘুমটা বেশ উপভোগ করেন।

    এক সকালে অন্যান্যদিনের তুলনায় খানিকটা আগেভাগেই ঘুমটা ভেঙে গেল তাঁর। চোখ খোলা মাত্রই খানিকটা ভড়কে গেলেন তিনি! ঘরটা এমন বড়-বড় লাগছে কেন?

    ঘরের সিলিঙটা মনে হচ্ছে যেন আকাশ ছুঁতে চাইছে, আসবাবগুলোকে তো রীতিমত দানবীয় লাগছে! খাটটাও যেন দৈর্ঘ্যে-প্রস্থে বেড়ে গেছে অনেকখানি!

    প্রথমটায় ভাবলেন, হয়তো স্বপ্ন দেখেছেন। তাই রেশটা কাটাতে বার কয়েক চোখ কচলালেন আফতাব সাহেব; এখনই নিশ্চয়ই সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু তাঁকে তাজ্জব করে দিয়ে অবিকল একই রইল দৃশ্যপট!

    খাটের পাশেই কাঠের একখানা বনেদী ড্রেসিং টেবিল শোভা পাচ্ছে। আয়নাটা বিশাল, ‘ফ্রেমে পিতলের কারুকাজ করা। উত্তরাধিকার সূত্রে ‘ওটার মালিক হয়েছেন আফতাব সাহেব। বিছানায় পাশ ফিরতেই আয়নাটার ওপর চোখ পড়ল তাঁর। পরক্ষণেই পুরোপুরি হকচকিয়ে গেলেন তিনি!

    আয়নাটায় দেখা যাচ্ছে, একটা সাদা রঙের বিড়াল শুয়ে আছে বিছানায়! নিষ্পলক তাঁর দিকেই এখন তাকিয়ে আছে ওটা!

    লাফিয়ে উঠে বসলেন আফতাব সাহেব, ইতিউতি তাকিয়ে খুঁজতে শুরু করলেন বিড়ালটাকে। কিন্তু কীসের কী! কোন বিড়াল নেই ঘরে।

    কিন্তু আয়নায় তাকাতেই ফের ওটাকে দেখতে পেলেন আফতাব সাহেব! শুয়ে নেই আর ওটা এখন, উঠে বসেছে বিছানায়! নির্নিমেষ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তাঁরই চোখের দিকে! নির্মম সত্যটা উপলব্ধি করতে মিনিট খানেক সময় লাগল তাঁর। পুরোটা সময় পাথরের মূর্তি হয়ে আয়নাটার দিকে তাকিয়ে রইলেন তিনি।

    প্রতিবিম্বটা আর কারও নয়, তাঁর নিজের! তিনি নিজেই পরিণত হয়েছেন একটা রোমশ বিড়ালে! তীব্র আতঙ্কে সজোরে চেঁচিয়ে উঠলেন আফতাব সাহের। ভয়ে সারা শরীর কাঁপছে। চিৎকারটা তাঁর গলা চিরে বেরোল ঠিকই, কিন্তু সেটা শোনাল হুবহু বিড়ালের আর্তনাদের মত, মানুষের সাথে যার কোন মিলই নেই!

    আরও ঘাবড়ে গেলেন আফতাব সাহেব। তাঁর দু’চোখ বেয়ে জল গড়াতে শুরু করল। রান্নাঘর থেকে তড়িঘড়ি ছুটে এলেন রোকেয়া বেগম, বিড়ালের ডাকটা ঠিকই শুনতে পেয়েছেন তিনি। হতচ্ছাড়াটা কোত্থেকে এসে জুটেছে, কে জানে! ওটাকে দেখতে পেলে নির্ঘাত এখন চেঁচিয়ে বাড়ি মাথায় করবে তাঁর স্বামী, তুলকালাম কাণ্ড বাধাতে সময় লাগবে না। যত জলদি সম্ভব আপদটাকে দূর করতে হবে।

    ঘরে ঢুকে বেশ অবাক হলেন রোকেয়া বেগম। বিছানা খালি; আফতাব সাহেবকে দেখা যাচ্ছে না কোথাও। মেঝের ওপর দাঁড়িয়ে আছে একটা মোটাসোটা সাদা বিড়াল।

    সাত-সকালে কোথায় গেল লোকটা?

    মর্নিং ওয়াকে? কখন গেল?

    স্বস্তির একটা নিঃশ্বাস ফেললেন রোকেয়া বেগম। আফতাব সাহেব বাড়িতে না থাকায় বিরাট একটা হাঙ্গামার হাত থেকে রক্ষা পাওয়া গেছে।

    একটা শলার ঝাড়ু তুলে নিয়ে বিড়ালটার দিকে তেড়ে গেলেন তিনি।

    স্ত্রীর সাথে কথা বলতে চাইলেন আফতাব সাহেব, কিন্তু মিউ মিউ ছাড়া আর কিছুই বেরোল না তাঁর মুখ দিয়ে।

    শেষটায় স্ত্রীর হাতে বেদম প্রহৃত হয়ে নিতান্ত প্রাণ বাঁচানোর তাগিদেই তাঁকে জানালা গলে বাইরে বেরোতে হলো।

    মনের দুঃখে বাড়ির আঙিনার আমতলায় বসে-বসে কাঁদলেন কিছুক্ষণ, তারপর ওখান থেকেও পালাতে হলো তাঁকে!

    রোকেয়া বেগমের নির্দেশে কাজের বুয়া আমেনা দাঁতমুখ খিঁচিয়ে তেড়ে এসেছিল ঝাঁটাপেটা করতে। কোন্ সাহসে আর ওখানে দাঁড়িয়ে থাকবেন আফতাব সাহেব?

    .

    পিছনের বারান্দায় একটা বিড়ালকে বসে থাকতে দেখে প্রচণ্ড উত্তেজিত হয়ে উঠল মনু গোয়ালা। রোজ-রোজ তার গরুর দোয়ানো দুধ খেয়ে যায় একটা বজ্জাত বিড়াল, কখনওই ওটার নাগাল পাওয়া যায় না।

    বহুদিন তক্কে তক্কে থাকার পর অবশেষে আজ ওটার দেখা পাওয়া গেল।

    পা টিপে-টিপে বিড়ালটার দিকে এগিয়ে যেতে শুরু করল সে, হাতে তুলে নিয়েছে মস্ত একটা রামদা।

    অন্য বিড়ালদের মত নয়টা জীবন থাকলে, এ যাত্রায় হয়তো প্রাণে বেঁচে যেতেন আফতাব সাহেব!

    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleবিফোর দ্য কফি গেটস কোল্ড – তোশিকাযু কাওয়াগুচি
    Next Article অন্ধকারের গল্প – তৌফির হাসান উর রাকিব সম্পাদিত

    Related Articles

    তৌফির হাসান উর রাকিব

    হাতকাটা তান্ত্রিক – তৌফির হাসান উর রাকিব সম্পাদিত

    August 25, 2025
    তৌফির হাসান উর রাকিব

    অন্ধকারের গল্প – তৌফির হাসান উর রাকিব সম্পাদিত

    August 25, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Demo
    Most Popular

    কাঙাল মালসাট – নবারুণ ভট্টাচার্য

    September 1, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    কাঙাল মালসাট – নবারুণ ভট্টাচার্য

    September 1, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Our Picks

    কাঙাল মালসাট – নবারুণ ভট্টাচার্য

    September 1, 2025

    লুব্ধক – নবারুণ ভট্টাচার্য

    September 1, 2025

    হারবার্ট – নবারুণ ভট্টাচার্য

    September 1, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    Sign In or Register

    Welcome Back!

    Login below or Register Now.

    Lost password?

    Register Now!

    Already registered? Login.

    A password will be e-mailed to you.