Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    চিরস্থায়ী বন্দোবস্তে বাঙলাদেশের কৃষক – বদরুদ্দীন উমর

    October 29, 2025

    পূর্ব বাঙলার ভাষা আন্দোলন ও তৎকালীন রাজনীতি ২ – বদরুদ্দীন উমর

    October 29, 2025

    বাঙলাদেশে কমিউনিস্ট আন্দোলনের সমস্যা – বদরুদ্দীন উমর

    October 29, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    ট্রেজার – ক্লাইভ কাসলার

    ক্লাইভ কাসলার এক পাতা গল্প596 Mins Read0
    ⤶ ⤷

    ৬৫. এয়ার স্টেশনে ল্যান্ড করার পর

    ৬৫.

    পরদিন দুপুরে, কর্পাস ক্রিস্টি ন্যাভার এয়ার স্টেশনে ল্যান্ড করার পর, নুমার ওশেন রিসার্চ সেন্টার থেকে পাঠানো একজন সিম্যান ফার্স্ট ক্লাস পিট, লিলি ও অ্যাডমিরাল স্যানডেকারকে গাড়িতে তুলে নিল। লম্বা একটা ডকের পাশে কংক্রিট প্যাডে অপেক্ষারত হেলিকপ্টারে কাছে থামার নির্দেশ দিলেন অ্যাডমিরাল। মাথার ওপর কোনো মেঘ নেই, গোটা আকাশে একাই রাজত্ব করছে সূর্য। তাপমাত্রা সামান্য, তবে আর্দ্রতা যথেষ্ট, গাড়ি থেকে নামার সাথে সাথে ঘামতে শুরু করল ওরা।

    হাত নেড়ে ওদের দিকে সাহায্যে এগিয়ে এল নুমার চিফ ভূ-তত্ত্ববিদ, হার্ব গার্জা। তেমন লম্বা নয় সে, মুখে দুএকটা বসন্তের দাগ, গায়ের রং তামাটে, মাথায় চকচকে কালো চুল। লাল আর উজ্জ্বল হলুদ সুতি কাপড়ের শার্ট পরে আছে সে। ড. হার্ব ভারী গলায় বললেন অ্যাডমিরাল। আবার তোমার সাথে দেখা হওয়ায় খুশি হ মি।

    আপনাদের আসার অপেক্ষায় ছিলাম, বাদাম চিবাতে চিবাতে বলল হার্ব গার্জা। এক্ষুনি আপনারা রওনা হতে পারেন। জো মিনি, পাইলটের সাথে পরিচয় করিয়ে দিল সে, লোকটা স্মাইলিং জ্যাক সানগ্লাস পরে আছে।

    ডক্টর হার্বের সাথে দক্ষিণ আফ্রিকায় কিছুদিন কাজ করেছে পিট, সময়টা ওদের ভালোই কেটেছিল।

    কদ্দিন হলো বলো তো, হার্ব? তিন, নাকি চার বছর? কে হিসাবে রাখে? করমর্দনের সময় চওড়া হাসি উপহার দিল হার্ব গার্জা। তোমার সাথে আবার জোট বাঁধতে রীতিমতো রোমাঞ্চ অনুভব করছি।

    ড. লিলি শার্পের সাথে পরিচয় করিয়ে দিতে পারি?

    সম্ভমের সাথে বাউ করল হার্ব গার্জা। সমুদ্রবিজ্ঞানী?

    মাথা নাল লিলি। ল্যান্ড আর্কিওলজি।

    চেহারায় কৌতূহল নিয়ে অ্যাডমিরালের দিকে তাকাল হার্ব গার্জা। এটা কি ফি প্রজেক্ট, অ্যাডমিরাল?

    না, হার্ব। সবটা তোমাকে জানানো হয়নি বলে দুঃখিত। কি জানো, আমাদের আসল উদ্দেশ্য কিছুদিন গোপন রাখতে হবে।

    নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে কাঁধ ঝাঁকাল হার্ব গার্জা। আপনি হলেন বস।

    আমাকে শুধু একটা দিক বলে দিন, বলল জো মিফিন।

    দক্ষিণ, জানাল পিট। দক্ষিণে রিয়ো গ্র্যান্ড নদী।

    .

    ইন্টারকোস্টাল ওয়াটারওয়ে বরাবর উড়ে চলল হেলিকপ্টার। সাউথ পাদ্রী দ্বীপের হোটেল আর বাড়িঘর ছাড়িয়ে এল ওরা, হেলিকপ্টারের নাক ঘুরে গেল পশ্চিম দিকে। নিচে এল এল পোর্ট ইসাবেল, ওখানে রিয়ো গ্র্যান্ড-এর পানি গালফ অভ মেক্সিকোতে গিয়ে মিশেছে।

    নিচের দ্বীপটায় ঝোঁপ-ঝাড় আর মরুভূমি পাশাপাশি জায়গা করে নিয়েছে। চাতালের মতো সমতল, বড় বড় গাছের পাশে ক্যাকটাস গজিয়েছে। একটু পরই সামনে দেখা গেল ব্রাউনসভিল শহর। ব্রিজের কাছে সরু হয়ে গেছে নদীটা। ব্রিজের ওপারে মাটামোরোস, মেক্সিকো।

    কী সার্ভে করতে হবে, আমাকে বলা যায়? জিজ্ঞেস করল হার্ব গার্জা।

    তুমি তো রিয়ো গ্র্যান্ড উপত্যকায় মানুষ হয়েছ, তাই না? জবাব না দিয়ে জিজ্ঞেস করলেন অ্যাডমিরাল।

    লরেডো নদীর উজানে জন্মেছি, বড় হয়েছি। লেখাপড়া শিখেছি ব্রাউনসভিল কলেজে। এইমাত্র ছাড়িয়ে এলাম ওটকে।

    রোমার চারপাশের জিওলজি সম্পর্কে তুমি তাহলে পরিচিত।

    এলাকাটায় কয়েকবারই সার্ভের কাজ করেছি, হ্যাঁ।

    আলোচনায় যোগ দিল পিট, আজকের তুলনায় যিশু খ্রিস্টের কয়েকশো বছর পর নদীটা কত দূরে ছিল?

    পানির প্রবাহে খুব একটা পরিবর্তন ঘটেনি, বলল হার্ব গার্জা। তবে, অবশ্যই, বন্যার কারণে পানির গতিপথ বদলেছে দু-মাইলের কিছু বেশি। কয়েকশো বছরে কয়েকবারই পুরনো গতিপথে ফিরে এসেছে নদী। তখনকার দিনে রিয়ো গ্র্যান্ড সম্ভবত অনেক উঁচু ছিল। মেক্সিকোর সাথে যুদ্ধের আগে নদীটা চওড়া ছিল দুশো থেকে চারশো মিটার। মেইন চ্যানেল ছিল খুবই গভীর।

    প্রথম একজন ইউরোপিয়ান কবে ওটাকে দেখে?

    পনেরোশো উনিশ সালে এই নদীতে জাহাজ নিয়ে এসেছেন আলোনজা ডি পিনেড়া।

    মিসিসিপির সাথে ওটার কী সম্পর্ক ছিল সেই আমলে?

    এক মুহূর্ত ভেবে নিল হার্ব। আসলে নীল নদের সাথে বেশি সম্পর্ক ছিল নদীটার।

    এঁকেবেঁকে এগিয়েছে নদী। ঢেউ খেলানো দুচারটে পাহাড় দেখা গেল। সীমান্তের ওপারে, মেক্সিকোয় দেখা গেল ছোট ছোট কয়েকটা শহর, ধুলোয় প্রায় ঢাকা পড়ে আছে। কিছু ঘরবাড়ি পাথরে তৈরি, কিছু ইট দিয়ে গাথা, মাথার ওপর লাল টালি। শহরের বাইরে কুঁড়েঘর। নদীটা কোথাও গভীর নয়, পানির রং গাঢ় সবুজ।

    রিয়ো গ্র্যান্ড সম্পর্কে ওদের আগ্রহ আছে বুঝতে পেরে অনেক কথাই বলে গেল হার্ব গার্জা। প্রাচীন যুগেও নদীটায় জাহাজ চলাচল করত। বসতি স্থাপনকারীরা নদীটার দুই তীর ধরে আসা-যাওয়া করেছে। একসময় ঘোষণা করল সে, রোমার ওপর চলে আসছি আমরা। নদীর ওপারে মিগুয়েল এলমান, রোমার সিস্টার সিটি বলা হয়। নামকাওয়াস্তে শহর, ট্যুরিস্টদের জন্য দুএকটা অ্যান্টিকস শপ ছাড়া তেমন কিছু নেই ওখানে। রাস্তার ওপর স্রেফ একটা বর্ডার ক্রসিং, রাস্তাটা চলে গেছে মন্টেরিরর দিকে।

    হেলিকপ্টার খানিকটা ওপরে তুলল পাইলট, ইন্টারন্যাশনাল ব্রিজ ছাড়িয়ে এসে আবার নদীর কাছাকাছি নেমে এল। মেক্সিকোর দিকে নারী-পুরুষ পাশাপাশি দাঁড়িয়ে গাড়ি ধুচ্ছে, বাগান পরিষ্কার করছে, মাছ ধরার জাল মেরামত করছে, হাঁটু পানিতে দাঁড়িয়ে গোসল করছে অনেকে। আমেরিকার দিকে নদীর পাড় থেকে খাড়া হয়েছে হলদেটে স্যান্ডস্টোন ব্লফ রোমা শহরের মাঝখান পর্যন্ত সেটার বিস্তার। ভবনগুলো বেশ পুরনো, তবে কোনোটাই ভেঙে পড়েনি, কয়েকটার মেরামত দরকার।

    ভবনগুলো সম্পর্কে কিছু শোনাবেন নাকি? হার্ব গার্জাকে জিজ্ঞেস করল লিলি।

    সামরিক ও বাণিজ্যিক বোট তৈরির যখন হিড়িক পড়ল, সে-সময় অত্যন্ত ব্যস্ত বন্দর ছিল রোমা, লেকচার দিল হার্ব গার্জা। বাড়ি ও ব্যবসাকেন্দ্র তৈরির জন্য সওদাগররা নামি-দামি আর্কিটেক্টদের ভাড়া করে আনে। ওগুলো কম দিন তো টিকল না।

    এক-আধটা বিখ্যাত হয়ে ওঠেনি?

    বিখ্যাত? হেসে উঠল হার্ব গার্জা। হ্যাঁ, তাও আছে। আঠারোশো সালে তৈরি ওটা। রোজিটাস ক্যানটিনা হিসেবে ব্যবহার করা হয়। ভিভা জাপাটা ছবিতে। মার্লোন ব্যান্ডো ছিল, রোমায় ভোলা, আপনারা জানেন।

    শহরের ওপর উঁচু হয়ে থাকা পাহাড়টাকে চক্কর দেয়ার জন্য পাইলটকে নির্দেশ দিলেন অ্যাডমিরাল। রোমার নাম রোমের অনুকরণে রাখা হয়েছে এই কারণে কী যে। এই শহরটাকেও সাতটা পাহাড় ঘিরে রেখেছে?

    নিশ্চয় করে বলা সম্ভব নয়, জবাব দিল হার্ব গার্জা। সাতটা পাহাড়কে আলাদাভাবে আপনি খুঁজেই পাবেন না। চোখে পড়ার মতো চূড়া আছে মাত্র দুটোর, বাকিগুলো পরস্পরের সাথে জোড়া লেগে আছে।

    জিওলজি কী বলে? প্রশ্ন করল পিট।

    বেশিরভাগ খড়িমাটি বা ওই ধরনের আবর্জনা। একসময় গোটা এলাকা সাগরের নিচে ছিল। মাটির নিচে ফসিল, ঝিনুকের খোল দেদার। কাছাকাছি একটা গ্র্যাভেল পিট আছে, বিভিন্ন জিওলজিক্যাল পিরিয়ডের নিদর্শন ওখানে পেতে পারো। ঠাণ্ডা হয়ে কোথাও বসার সুযোগ দিলে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানাতে পারি তোমাকে।

    এক্ষুনি নয়, বলল পিট। এলকায় কোথাও প্রাকৃতিক গুহা নেই?

    সারফেসে দেখা যায় না। তার মানে এই নয় যে নদীর নিচে নেই। প্রাচীন সাগর কত গুহা তৈরি করেছিল কে তার হিসাব রাখে, আপার লেয়ারের নিচে সব চাপা পড়ে আছে। ঠিক জায়গাটিতে যথেষ্ট গভীর করে খোঁড়া, প্রচুর সম্ভাবনা বড় আকৃতির একটা লাইমস্টোন ডিপোজিট পেয়ে যাবে তুমি। প্রাচীন ইন্ডিয়ান কিংবদন্তি হলো, মাটির তলায় আত্মারা বসবাস করে।

    আত্মা? কি ধরনের আত্মা?

    কাঁধ ঝাঁকালো হার্ব গার্জা। প্রাচীন আত্মা, যারা অপদেবতাদের সাথে যুদ্ধ করার সময় মারা গেছে।

    নিজের অজান্তেই পিটের বাহু আঁকড়ে ধরল লিলি। পুরনো কোনো শিল্পকর্ম রোমার আশপাশে পাওয়া গেছে?

    অল্প কিছু তীর আর বর্শার পাথুরে ডগা, পাথুরে ছুরি আর বোট-স্টোন।

    বোট-স্টোন কী জিনিস? প্রশ্ন করল পিট।

    ফাঁপা পাথর, আকৃতিতে ঠিক যেন একটা বোটের খোল, জবাব দিল লিলি, ক্রমশ উত্তেজিত হয়ে উঠছে সে। ওগুলোর আদি উৎস সম্পর্কে কারও স্পষ্ট কোনো ধারণা নেই। মনে করা হয়, শখের জিনিস। ইন্ডিয়ানরা ওগুলো ব্যবহার করত ভূত তাড়ানের কাজে। কাউকে ডাইনি বলে সন্দেহ করা হলে, ইন্ডিয়ানরা তার প্রতিমূর্তির সাথে একটা বোট-স্টোন বেঁধে নদীতে ফেলে দিত, তাতে নাকি সমস্ত অপশক্তি থেকে মুক্তি পেত ডাইনি।

    পিট আরও একটা প্রশ্ন করল হার্ব গার্জাকে, এমন কিছু পাওয়া গেছে, যেটাকে প্রাচীন বা ঐতিহাসিক বলা যায়?

    কিছু কিছু পাওয়া গেছে, তবে মনে করা হয় সেসব নকল।

    উত্তেজনা চেপে রেখে লিলি জানতে চাইল, কী ধরনের জিনিস?

    তলোয়ার, ক্রস, বর্ষের ভাড়া অংশ, বর্শা দণ্ড, বেশির ভাগই লোহার তৈরি। নদীর কিনারায়, ব্লাফ খুঁড়ে একটা পাথুরে নোঙর পাবার কথাও মনে পড়ছে আমার।

    সম্ভবত স্প্যানিশ, মন্তব্য কররেন অ্যাডমিরাল।

    মাথা নাড়ল হার্ব গার্জা। স্প্যানিশ নয়, রোমান। স্টেট মিউজিয়ামের অফিসাররা পাত্তা দেয়নি। তাদের ধারণা, ওগুলো ঊনবিংশ শতাব্দীর জালিয়াতি নকল।

    পিটের বাহু আরও জোরে চেপে ধরল লিলি। ওগুলো দেখার কোনো সুযোগ আমি পাব? ব্যাকুলকণ্ঠে জিজ্ঞেস করল সে। নাকি সব হারিয়ে গেছে?

    জানালার দিকে হাত বাড়িয়ে নিচের রাস্তাটা দেখিয়ে দিল হার্ব গার্জা, রোমা থেকে উত্তর দিকে চলে গেছে। ঘাবড়ানোর কোনো কারণ নেই, সবই আপনারা ওখানে পাবেন। একজন লোকের কাছে সব জমা আছে, বেশির ভাগ তারই খুঁজে পাওয়া। বুড়ো টেক্সান স্যাম ট্রিনিটিকে এখানকার লোকেরা পাগলা স্যাম হিসেবে চেনে। এদিকে পঞ্চাশ বছর ধরে খোঁড়াখুঁড়ির কাজ করছে সে। যিশুর কিরে খেয়ে দাবি, করে এখানে নাকি রোমান সেনাদের একটা বাহিনী তাবু ফেলেছিল। ঘোট একটা গ্যাস স্টেশন আর দোকান আছে তার, পেছনের ঘরটার নাম দিয়েছে রোমান মিউজিয়াম।

    বুড়ো স্যামকেই তো আমরা খুঁজছি, মৃদু হেসে বলল পিট। পাইলটের দিকে ফিরল ও। স্যামের বাড়ির কাছে নামতে পারবেন? ওর সাথে আমাদের কথা হওয়া দরকার।

    .

    ৬৬.

    বিশাল একটা সাইনবোর্ড, ক্ষতবিক্ষত একজোড়া কাঠের ওপর দাঁড়িয়ে আছে পেছন দিকে কাত হয়ে। রুপালি জমিতে বড়বড় লাল হরফে লেখা স্যামের রোমান সার্কাস অনেক কষ্টে পড়া গেল। সামনে একটা তিনকামড়ার দোতলা বাড়ি, সামনের ঘরটা দোকান। দোকানের গায়ে, এক পাশে, আরও একটা সাইনবোর্ড টাঙানো রয়েছে, তাতে লেখা, আটচল্লিশ সেন্টে এক লিটার মেথানল মেশানো ফুয়েল কিনুন। ঠাণ্ডা পানীয় থেকে শুরু করে চকোলেট, মনিহারি দ্রব্যাদি, সবই পাওয়া যায় এখানে।

    অনেক বয়স স্যামের, পঁচাত্তরের কম নয়, চামড়ায় প্রচুর ভাজ আর রেখা, কিন্তু তার পেশিতে সামান্যতম ঢিল পড়েনি। এমন চটপটে, এখনও যেন তরতাজা যুবক সে। গাঢ় সবুজ রঙের শার্ট পরে আছে, হলুদ স্ন্যাকস, পায়ে লিজার্ড গলফ শু, মাথায় সাদা ক্যাপ। হাতে একজোড়া গলফ ক্লাব নিয়ে দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে আছে।

    হেলিকপ্টার থেকে প্রথমে হার্ব গাঁজা নামল।

    এই যে, স্যাম কাকা, তোমার মাটি আঁচড়ানোর কাজ কেমন চলছে?

    আরে, এ যে দেখছি আমাদের মাটি মাপার ঠিকাদার হার্ব গার্জা। তা কেমন আছ হে? বুড়ো স্যাম ভাঙা দাঁত বের করে হাসল।

    স্যামের সাথে সবার পরিচয় করিয়ে দিল হার্ব গার্জা, তবে ভাব দেখে বোঝা গেল খেয়াল করে শুনছে না সে। বাতাসে হাত ঝাঁপটা নিয়ে হার্বকে থামিয়ে লি বুড়ো, বলল, আপনারা আসায় আমি খুশি হয়েছি। স্যামস রোমান সার্কাসে আপনাদেরকে স্বাগতম জানাই। হঠাৎ পিটের মুখের দিকে চেয়ে থমকে গেল সে। একি, ভাগ্নে, লরির তলায় পড়েছিলে নাকি?

    হেসে ফেলে পিট বলল, ঘাতক ট্রাক-হা, ঠিকই ধরেছেন।

    এখানে গলফ খেলেন কোথায়? জিজ্ঞেস করলেন অ্যাডমিরাল। দুপা ফাঁক করে দাঁড়িয়ে আছেন তিনি।

    রিয়ো গ্র্যান্ড সিটি গলফ কোর্সে, গর্বের সাথে জবাব দিল স্যাম। কয়েকজন বুড়ো আর্মি অফিসার আছে, আমার বন্ধুবান্ধব, তাদের সাথে খেলি। এই তো ফিরলাম।

    হার্ব গাঁজা বলল, স্যাম কাকা, আমরা তোমার মিউজিয়ামে একবার উঁকি দিতে চাই।

    ভারি মিশুক লোক, বিড়বিড় করে বললেন অ্যাডমিরাল।

    আপনি যদি ভালো হন, নিচু গলায় জবাব দিল হার্ব গার্জা। আর যদি ওর কমতি করার চেষ্টা করেন, আপনার লাইফ স্রেফ হেল করে ছেড়ে দেবে।

    দোকানের ভেতর দিয়ে ওদেরকে মিউজিয়ামে নিয়ে এল সে। ঘরটা বড়ই, পাশাপাশি দুটো গাড়ি রাখা যাবে। কাঁচমোড়া অনেক বাক্স দেখা গেল। অসংখ্য মামের তৈরি পুতুল রয়েছে, রোমান যুগের পোশাক পরা। শিল্পকর্ম রাখা হয়, তাই ধুলো ঠেকানোর জন্য জানালা আর দরজায় কাঁচ আছে। প্রতিটি শিল্পকর্ম চকচক করছে, একটাতেও মরচে ধরেনি।

    লিলির সাথে একটা অ্যাটাশে কেস রয়েছে। সেটা থেকে ছবি বহুল মোটা একটা বই বেরোলো। স্যামের শিল্পকর্মগুলো ছবির সাথে মেলাতে শুরু করল সে।

    লক্ষণ তো ভালোই মনে হচ্ছে, কয়েক মিনিট মিলিয়ে দেখার পর বলল সে। তলোয়ার আর বর্শার মাথাগুলোর সাথে চতুর্থ শতাব্দীর রোমান অস্ত্রের মিল আছে।

    উত্তেজিত হবেন না, সতর্ক করে দিল হার্ব গার্জা। স্যাম কাকা সম্ভবত নিজের হাতে তৈরি করেছে ওগুলো, রোদে ফেলে রেখে আর এসিড ঢেলে বয়স বাড়িয়েছে।

    উঁহু, উনি এগুলো তৈরি করেননি, স্পষ্ট করে বললেন অ্যাডমিরাল স্যানডেকার।

    চোখে কৌতূহল নিয়ে তার দিকে তাকাল হার্ব গার্জা। কীভাবে বলেন, অ্যাডমিরাল? গালকে প্রি-কলোম্বিয়ান কন্ট্যাক্টের কোনো রেকর্ড নেই।

    এখন আছে।

    আমার জন্য একটা বিস্ময়কর খবর, স্যার!

    ঘটনাটা ঘটেছিল তিনশো একানব্বই সালে, ব্যাখ্যা করল পিট। জাহাজের একটা বহর রিয়ো গ্র্যান্ড ধরে এসেছিল। আজ যেখানে রোমা, সেখানে। শহরের পেছনে কোনো একটা পাহাড়ে, রোমান মার্সেনারি, তাদের ক্রীতদাস ও মিসরীয় পণ্ডিতরা আলেকজান্দ্রিয়া লাইব্রেরির বিশাল সংগ্রহ লুকিয়ে রেখে গেছে।

    জানতাম! আমি জানতাম! খোলা দরজা থেকে উল্লাসে চিৎকার করে উঠল বুড়ো স্যাম। হাতের ট্রে একটুর জন্য পড়ল না। রোমানরা অবশ্যই টেক্সাসের মাটিতে পা রেখেছিল।

    আপনার বিশ্বাসই ঠিক, মি. ট্রিনিটি, অ্যাডমিরাল বললেন। বাকি সবাই ভুল করেছে।

    কয়েক যুগ ধরে চিৎকার করছি আমি, কেউ আমার কথা শোনেনি! গলা খাদে নামিয়ে বিড়বিড় করে বলল বুড়ো স্যাম। ছলছল করছে চোখ। জানেন, পাথরের লেখাগুলো যখন দেখালাম, বলে কিনা এগুলো আমি নিজে লিখেছি!

    পাথর? পাথরের ওপর লেখা? কোথায়? তীক্ষ্ণ কণ্ঠে জানতে চাইল লিলি।

    ওই কোণে, খাড়া করে রাখা আছে। অনেক কষ্টে লেখাটা আমি অনুবাদও করি। অফিসাররা দেখে হেসেই অস্থির, বলে তোমার ল্যাটিন তো চমৎকার, স্যাম, চালিয়ে যাও, বুড়ো বয়েসে দুপয়সা কামালে আমরা কেন বাধা দিতে যাই। ওদের ধারণা আমি নকল করেছি।

    অনুবাদ করা মেসেজের কোনো কপি আছে? জিজ্ঞেস করল লিলি।

    ওদিকে দেয়ালে পাবে। টাইপ করিয়ে, কাঁচ দিয়ে বাধিয়ে রেখেছি।

    বাঁধানো ফ্রেমটার সামনে দাঁড়িয়ে পড়তে শুরু করল লিলি, সবাই তার দুপাশে ভিড় করল।

    .

    আলেকজান্দ্রিয়া লাইব্রেরি আমি লুকিয়ে রেখেছি। এই পাথরে তার সূত্র থাকল।

    অসভ্যরা আমার জাহাজ বহরে আগুন ধরিয়ে দিল, আমি পানিতে নেমেও অবশিষ্ট একমাত্র জাহাজটাকে ধরতে পারলাম না। তবে, কোনো রকমে প্রাণে বেঁচে গেলাম, দক্ষিণ দিকে যাত্রা করে আশ্রয় পেলাম প্রাচীন পিরামিড গোষ্ঠীর কাছে, তারা আমাকে উদ্ধারকর্তা ও প্রেরিত পুরুষ হিসেবে গ্রহণ করল।

    নক্ষত্র এ বিজ্ঞান সম্পর্কে যা কিছু জানি, সব ওদেরকে শেখালাম আমি। কিন্তু আমার শিক্ষা কর্মক্ষেত্রে খুব কমই ব্যবহার করল ওরা। ওরা বরং মূর্তিপূজা বেশি পছন্দ করে, অজ্ঞ ওঝাদের পরামর্শমতো মানুষ বলি দেয়।

    এখানে আশ্রয় পাবার পর সাতটি বছর পেরিয়ে গেছে। ফিরে এসে দেখি আমার পুরনো বন্ধু-বান্ধবদের হাড়গোড় চারদিকে ছড়িয়ে রয়েছে। আমি সেগুলো মাটি চাপা দেয়ার ব্যবস্থা করলাম। আমার জাহাজ তৈরি হয়ে গেছে। শিগগিরই রোমের উদ্দেশে যাত্রা করব আমি।

    আজও যদি থিয়োডোসিয়াস বেঁচে থাকেন, আমার গর্দান নেয়া হবে। তবে শেষবার আমার পরিবারের সাথে মিলিত হবার জন্য খুশি মনে ঝুঁকিটা নেব আমি।

    আমার অস্তিত্ব বিলীন হবার পর, যারা এই লেখা পড়বে, তাদেরকে বলছি, শিল্পকর্ম ও বই সম্পদ পাহাড়ের ভেতর বিশাল একটা চেম্বারে রাখা হয়েছে। সুড়ঙ্গ পথ আছে। উত্তরে দাঁড়াও, সোজাসুজি দক্ষিণে তাকাও, নদীর পাড় লক্ষ্য করে।

    জুনিয়াস ভেনাটর।

    ১০ আগস্ট, তিনশো আটানব্বই খ্রিস্টাব্দ।

    .

    তার মানে ইন্ডিয়ানদের হামরা থেকে বেঁচে গিয়েছিলেন ভেনাটর, সাত বছর পর রোমে ফেরার পথে মারা যান, বলল পিট।

    কিংবা রোমে হয়তো ঠিকই তিনি পৌঁছেছিলেন, তাঁর মৃত্যুদণ্ড চুপচাপ সেরে ফেলা হয়, বললেন অ্যাডমিরাল।

    না, মাথা নেড়ে বলল লিলি। থিয়োডাসিয়াস মারা গেছেন তিনশো পঁচানব্বই সালে। ভেবে আশ্চর্য লাগছে, এত বছর, ধরে মেসেজটা পথে আছে এখানে, অথচ নকল বলে অগ্রাহ্য করা হয়েছে!

    ভ্রু কুঁচকে স্যাম জানতে চাইল, তোমরা এই ভেনাটর ভদ্রলোককে চেনো নাকি?

    আমরা তার খোঁজ করছিলাম, বলল পিট।

    চেম্বারটা কখনও খুঁজেছেন আপনি, মি. স্যাম? জিজ্ঞেস করলেন অ্যাডমিরাল।

    বুড়ো স্যাম গম্ভীর হলো। এদিকের সব কটা পাহাড় খোঁড়াখুঁড়ি করেছি। পাবার মধ্যে, এখানে যা কিছু দেখছেন।

    কতটা গভীর?

    বছর দশেক আগে ছমিটার গভীর একটা গর্ত করেছিলাম, ওই যে-শুধু একটা স্যান্ডেল পেয়েছি-কেসের ভেতর দেখতে পাচ্ছেন।

    পাথর আর শিল্পকর্মগুলো যেখানে পেয়েছেন, জায়গাটা আমাদেরকে দেখাতে পারবেন?

    প্রশ্নটা পিট করলেও, বুড়ো স্যাম ডক্টর হার্বের দিকে তাকাল। কোনো অসুবিধা নেই তো হার্ব?

    এদের তুমি বিশ্বাস করতে পারো, স্যাম কাকা। এরা তোমার শিল্পকর্ম চুরি করতে আসেনি।

    ঠিক আছে, ঠিক আছে, ঘন ঘন মাথা ঝাঁকালো স্যাম ট্রিনিটি। চলো তাহলে, এক্ষুনি রওনা দিই। বাইরে আমার জিপ আছে।

    .

    মেঠো পথ ধরে ছুটল স্যামের পুরনো জিপ। কয়েকটা আধুনিক বাড়িকে পাশ কাটিয়ে এল ওরা। সামনে পড়ল কাটাতারের দীর্ঘ রেড়া জিপ থেকে নেমে গিয়ে হুক খুলে বেড়ার একটা অংশ সরাল স্যাম, সামনের পথটা ঝোঁপ-ঝাড়ে প্রায় ঢাকা পড়ে আছে।

    খানিক পর একটা ঢাল বেয়ে উপরে উঠে এল জিপ, ইঞ্জিন বন্ধ করে স্যাম জানাল, এই জায়গা। গনগোরা হিল। অনেক দিন আগে কে যেন বলেছিল আমাকে, পাহাড়টার নাম রাখা হয়েছ সপ্তদশ শতাব্দীর এক স্প্যানিশ কবির নামে। আবর্জনার এক স্তূপ কেন একজন কবির নাম পেল, ঈশ্বরই বলতে পারবেন।

    উত্তর দিকে চারশো মিটার দূরে একটা পাহাড়ের দিকে ইঙ্গিত করল পিট। ওই রিজটাকে কী নামে ডাকা হয়?

    ওটার কোনো নাম আছে বলে আমার জানা নেই।

    পাথরটা আপনি কোথায় পান? লিলির প্রশ্ন।

    দাঁড়াও, আরেকটু সামনে। ইঞ্জিন স্টার্ট দিয়ে ঢাল বেয়ে ধীরে ধীরে নামতে শুরু করল স্যাম, ঘন ঝোঁপগুলোকে সাবধানে এগিয়ে যাচ্ছে। মিনিট দুয়েক ঝাঁকি খাবার পর অগভীর বড়সড় একটা গর্তের পাশে থাকল জিপ। নিচে নেমে কিনারায় গিয়ে দাঁড়াল সে, ঝুঁকে নিচে তাকাল। ঠিক এখানে পেয়েছি। একটা কোণ পার থেকে বেরিয়ে ছিল।

    গর্তের দিতে ইঙ্গিত করল পিট। এই শুকনো গর্ত, বলল ও, গনগোরা আর দূরের ওই পাহাড়ের মাঝখানে জোরাল বাতাস থাকায় তৈরি হয়েছে।

    মাথা ঝাঁকাল বুড়ো স্যাম। হ্যাঁ, কিন্তু ওখান থেকে গনগোরার নিচের ঢালে পাথর নেমে আসার কোনো উপায় নেই, যদি না কেউ টেনে আনে।

    এলাকাটা সমতল নয় যে বন্যা হতে পারে, বললেন অ্যাডমিরাল। অবশ্য। দীর্ঘদিন তুমুল বৃষ্টি হলে গণগোরার চূড়া থেকে পঞ্চাশ মিটার নেমে আসা বিচিত্র কিছু নয়, কিন্তু পরবর্তী চূড়ার আধ কিলোমিটারের মধ্যে এনে ফেলা সম্ভব নয়।

    আর সব শিল্পকর্ম? প্রশ্ন করল লিলি। ওগুলো কোথায় পেয়েছেন?

    নদীর দিকে হাত তুলল স্যাম। ঢালের আরও খানিক নিচ থেকে শহরের মাঝখান পর্যন্ত ছড়িয়ে-ছিটিয়ে ছিল ওগুলো।

    জায়গাগুলো চিহ্নিত করেছেন?

    দুঃখিত, মিস, আমি তো আর আর্কিওলজিস্ট নই।

    হতাশ বোধ করলেও চুপ করে থাকল লিলি।

    আপনি নিশ্চয়ই মেটাল ডিটেকটর ব্যবহার করেছেন?

    পিটের দিতে ফিরল স্যাম। নিজেই ওটা তৈরি করে নিই। আধ মিটার দূরে একটা পেনি পড়ে থাকলেও ধরা পড়ে।

    জায়গাটার মালিক কে?

    টেক্সাস রিপাবলিক হবার সময় থেকে বারোশো একর আমার, পারিবারিক সূত্রে।

    আইনগত ব্যাপারে ঝামেলা হবে না, স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললেন অ্যাডমিরাল।

    হাতঘড়ি দেখল পিট। পাহাড়ে ওদিকে ঢলে পড়েছে সূর্য। ইন্ডিয়ান আর রোমান ঈজিপশিয়ানদের তুমুল যুদ্ধটা নদী ও প্রাচীন জাহাজগুলোর দিকে সরে যাচ্ছে, মনের চোখ দিয়ে দেখার চেষ্টা করল ও। আহত মানুষদের কাতর চিৎকার, অস্ত্রের ঝনঝনানি, সবই যেন শুনতে পাচ্ছে। কত শত বছর আগের ঘটনা অথচ মনে হলো গতকাল ঘটেছে, ওর চোখের সামনে। লিলির প্রশ্ন শুনে বাস্তবে ফিরে এল পিট।

    আশ্চর্য, যুদ্ধক্ষেত্র থেকে আপনি কোনো হাড় খুঁজে পাননি?

    স্প্যানিশ নাবিকরা, স্যামের বদলে জবাব দিল হার্ব গার্জা, টেক্সাস গালফ কোস্টে যাদের জাহাজডুবি ঘটে, অল্প দুচারজন দেশে ফিরতে পেরেছিল, মেক্সিকো সিটিতে ফিরে গিয়ে নরখাদক ইন্ডিয়ানদের গল্প করেছে তারা।

    শিউরে উঠে লিলি বলল, নিহত লোকগুলোকে খেয়ে ফেলা হয়েছে, এ কথা আপনি জোর গলায় বলতে পারেন না।

    সম্ভবত কয়েকজনকে, বলল হার্ব গার্জা। কুকুর বা বন্য জন্তু যেগুলোকে টেনে নিয়ে যায়নি, পরে ফিরে এসে ভেনাটর সেসব মাটি চাপা দেন। আমরা ধরে নিতে পারি, সেগুলোও ধুলো হয়ে গেছে।

    হার্ব ঠিকই বলছে, সায় দিল পিট। সারফেস গ্রাউন্ডে থাকলে যেকোনো হাড় একসময় ভেঙে যাবে।

    স্থির পাথর হয়ে গেল লিলি। গনগোরা হিলের একটা চুড়ার দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে থাকল সে, যেন সম্মোহিত হয়ে পড়েছে। গুপ্তধনের কয়েক মিটার দূরে দাঁড়িয়ে রয়েছি, সত্যিই কি তাই? এখনও আমার বিশ্বাস হতে চাইছে না।

    ষোলোশো বছর আগে তখনকার জ্ঞানভাণ্ডার রক্ষার জন্য অনেক মানুষ প্রাণ দিয়েছেন, নিচু গলায় বলল পিট। তারা তাদের দায়িত্ব পালন করেছেন। এবার আমাদের পালা। মাটি খুঁড়ে ওগুলো উদ্ধার করা দরকার।

    .

    ৬৭.

    পরদিন সকালে লেক ওজাকস, মিসৌরীতে পৌঁছলেন অ্যাডমিরাল স্যানডেকার। লোহার প্রকাণ্ড গেট খুলে তাকে ভেতরে ঢুকতে দিল সিক্রেট সার্ভিস গার্ডরা। আঁকাবাঁকা পথ ধরে নিজেই গাড়ি চালিয়ে প্রেসিডেন্টের হান্টিং লজে চলে এলেন তিনি।

    শিপস্কিন জ্যাকেট পরে পোর্চ থেকে ধাপের ওপর নেমে এলেন প্রেসিডেন্ট। সময়মতো আসতে পেরেছেন, সেজন্য ধন্যবাদ, অ্যাডমিরাল।

    ওয়াশিংটনে ডাকলে আরও দেরি হতো।

    আপনাকে ব্যস্ততার মধ্যে ফেলে দেয়ায় সত্যি আমি দুঃখিত।

    বৈঠকের গুরুত্ব সম্পর্কে আমি সচেতন।

    অ্যাডমিরালের পিঠে একটা হাত রাখলেন প্রেসিডেন্ট, ধাপ বেয়ে উঠছেন। চলুন, আগে ব্রেকফাস্টটা সেরে নেবেন। ডেইল নিকোলাস, জুলিয়াস শিলার আর সিনেটর পিট অপেক্ষা করতে পারেননি, ডিম আর ভেড়ার মাংসের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েছেন।

    আপনার আবিষ্কারের প্রতিক্রিয়া নিয়ে অর্ধেক রাত আলোচনা করেছি আমরা।

    লোক মারফত যে রিপোর্ট পাঠিয়েছি, নতুন আর কিছু বলার নেই আমার, জানালেন অ্যাডমিরাল।

    কোথায় খুঁড়বেন তার কোনো ডায়াগ্রাম পাঠাননি।

    রিপোর্ট পাঠানোর পর স্থির করা হয়েছে, কোথায় খোঁড়া হবে।

    হালকা সুরে প্রেসিডেন্ট বললেন, ব্রেকফাস্টের সময় সবাই আমরা দেখব।

    কয়েকটা সুদৃশ্য কামরা পেরিয়ে লম্বা লিভিংরুমে চলে এলেন তারা। পাথুরে ফায়ারপ্লেসে ছোট্ট আগুন জ্বলছে, সেটাকে পাশ কাটিয়ে আরেক দরজা দিয়ে ডাইনিংহলে ঢুকলেন। ডেইল নিকোলাস আর জুলিয়াস শিলার জেলেদের পোশাক পরে আছেন, সিনেটর পিট পরেছেন সোয়েটসুট খাওয়ায় ছেড়ে তিনজনই ওরা মুখ তুলে তাকালেন। সিনেটরের গম্ভীর চেহারা দেখে মনে মনে সতর্ক হয়ে উঠলেন অ্যাডমিরাল।

    এক ভদ্রলোকের কথা প্রেসিডেন্ট উল্লেখ করেননি- হারল্ড উইজমার, প্রেসিডেন্টের একজন উপদেষ্টা, প্রশাসনে তাঁর বিরাট প্রভাব রয়েছে। ইনি কেন উপস্থিত রয়েছেন বুঝতে পারলেন না অ্যাডমিরাল।

    সাদা কোট পরা একজন স্টুয়ার্ড অ্যাডমিরালের অর্ডার নিয়ে চলে গেল।

    কুশলাদি বিনিময়ের পর প্রথম কথা বললেন হারল্ড উইজমার। কোনো ভণিতার মধ্যে গেলেন না ভদ্রলোক, সরাসরি বললেন, আবিষ্কারটা বিস্ময়কর, কাজেই আমরা সবাই আপনাকে অভিনন্দন জানাই। ঘন দাড়ি গোঁফ তার ঠোঁট দুটো প্রায় ঢেকে রেখেছে, টাক-মাথাটা ঠিক যেন একটা বাস্কেটবল। বাদামি চোখ। মাটি আপনারা কখন সরাবেন বলে ঠিক করেছেন?

    কাল। ব্রিফকেস থেকে একটা জিওলজিককাল সার্ভে ম্যাপ বের করলেন অ্যাডমিরাল, তাকে ঝোমার উপরকার টপোগ্রাফি দেখানো হয়েছে। কোথায় কোথায় খোঁড়া হবে তা দেখানোর জন্য ব্রিফকেস থেকে বের করলেন আরেকটা নকশা। চূড়া থেকে আট মিটার নিচে দুটো টানেল তৈরি করে এগোব আমরা।

    চড়াটা গনগোরা হিল-এর?

    হ্যাঁ। টানেলগুলো উল্টোদিকের ঢালে বেরোবে, নদীর সামনে, দুটো আলাদা লেভেলে। দুটোর একটা, আমরা আশা করছি, পাথরে লেখা জুনিয়াস ভেনাটরের স্মারক বা আদি এন্ট্রি শ্রাফট ছুঁয়ে যাবে।

    আপনি সম্পূর্ণ নিশ্চিত যে আলেকজান্দ্রিয়া লাইব্রেরির শিল্পকর্ম ওখানে আছে? তীক্ষ্ণকণ্ঠে জানতে চাইলেন হারল্ড উইজম্যান।

    কোনো সন্দেহ নেই, শান্তসুরে বললেন অ্যাডমিরাল। গ্রিনল্যান্ডের জাহাজ থেকে উদ্ধার করা ম্যাপ রোমায় স্যামের পাওয়া শিল্পকর্মের কাছে নিয়ে গেছে আমাদেরকে, ফলে খাপে খাপে মিলে গেছে সব।

    কিন্তু ওগুলো কী

    না, জিনিসগুলো খাঁটি রোমান, উইজম্যানকে মাঝপথে থামিয়ে দিলেন। অ্যাডমিরাল এর মধ্যে কোনো ফাঁকিবাজি বা জালিয়াতি নেই, কেউ ধোঁকা দেয়ার চেষ্টা করতে না কাউকে। জিনিসগুলো ওখানে আছে, আমরা জানি একমাত্র প্রশ্ন হলো ভাণ্ডারটা কত বড়।

    গুপ্তধন, সম্পদ, লাইব্রেরি বা শিল্পকর্ম যাই বলি না কেন, ওগুলোর অস্তিত্ব সম্পর্কে আমরা সন্দিহান নই, পরিবশে হালকা করার জন্য বললেন জুলিয়াস শিলার। আমরা যেটা নিয়ে আলোচনা করতে চাইছি, তা হলো, এ-ধরনের বিশাল একটা আবিষ্কারের ফলে আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া কী হবে। আমার ধারণা, প্রতিক্রিয়া আন্দাজ করা অত্যন্ত কঠিন। আরও কঠিন পরিস্থিতিটা সামাল দেয়া।

    নিস্পলক চোখে শিলারের দিকে তাকিয়ে থাকলেন অ্যাডমিরাল স্যানডেকার। প্রাচীন দুনিয়ার জ্ঞান প্রকাশ পেলে দাঙ্গা বেঁধে যাবে, এ রকম মনে করার কী কারণ আছে আমি বুঝতে পারছি না। তাছাড়া, বিষয়টা নিয়ে আলোচনা আরও আগে করা উচিত ছিল না কি? হে’লা কামিল তো তার ভাষণে ঘোষণা করেছেন…।

    তিনি সম্ভাবনার কথা বলেছেন, প্রেসিডেন্ট বললেন। আপনি বোধ হয় জানেন না, মি. স্যানডেকার, লাইব্রেরির নকশাগুলো দাবি করতে পারেন প্রেসিডেন্ট হাসান। তিনি যদি সমস্ত শিল্পকর্ম চেয়ে বসেন, আমি আশ্চর্য হব না। গ্রিস চাইতে পারে আলেকজান্ডারের সোনার কফিন। কে বলতে পারে, ইটালি কী দাবি করে বসে?

    মিসরের ব্যাপারে আমিতো কোনো সমস্যা দেখছি না, অ্যাডমিরাল বললেন। আমার জানা মতে, আমরাই মিসরকে জানিয়েছি, আকেজান্দ্রিয়া লাইব্রেরি গোটা দুনিয়ার, যাদের যা পাপ্য তাদেরকে তা দেয়া হবে। আমার ধারণা, এটা একটা রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত।

    হ্যাঁ, কিন্তু লোকেশনটা রিয়ো গ্র্যান্ড হওয়াতে পরিস্থিতি খানিকটা বদলে গেছে। এখন মেক্সিকোও একটা পক্ষ। টপিটজিন যদি দাবি করে বসে, রোমা এক কালে মেক্সিকোর অংশ ছিল, কাজেই আলেকজান্দ্রিয়া লাইব্রেরির মালিকানা তাদের?

    এ ধরনের দাবি তার মতো লোক করতেই পারে, অ্যাডমিরাল বললেন। কিন্তু দাবির পেছনে আইনগত ভিত্তি থাকতে হবে না? আইন বলে, যার জায়গায় পাওয়া যাবে সে-ই মালিক।

    স্যাম ট্রিনিটি তার জায়গায় উচিত মূল্য পাবেন, পাবেন সম্পদের অধিকার মূল্য। তাকে দেয় সব টাকা ট্যাক্স ফ্রি হবে।

    শিলারের দিকে চোখ কুঁচকে তাকালেন অ্যাডমিরাল সম্পদের মূল্য কয়েকশো মিলিয়ন ডলার হতে পারে। সরকার কি অত টাকা দিতে রজি আছে?

    অবশ্যই না।

    আর যদি মি. স্যাম আপনার প্রস্তাব গ্রহণ না করেন?

    চুক্তি করার আরও অনেক পদ্ধতি আছে, নির্লিপ্ত, ঠাণ্ডা স্বরে বললেন হারল্ড উইজমার।

    জানতে পারি, কবে থেকে শিল্প নিয়ে ব্যবসা শুরু করল সরকার?

    শিল্প, ভাস্কর্য আর আলেকজান্ডার দ্য গ্রেটের অবশিষ্ট শুধু ঐতিহাসিক মূল্য পেতে পারে, উইজম্যান বললেন। সত্যিকার মূল্য পাবে পার্চমেন্টের লেখাগুলো।

    সেটা নির্ভর করে যার হাতে থাকবে ওগুলো তার দৃষ্টিভঙ্গির ওপর।

    বৈজ্ঞানিক রিপোর্টে যেসব তথ্য আছে, বিশেষ করে জিওলজিকাল ডাটাগুলো, মধ্যপ্রাচ্যের সাথে আমাদের ভবিষ্যৎ সম্পর্ক নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে, জেদের সুরে বলে গেলেন উইজম্যান। ধর্মীয় দিকটাও আমাদেরকে বিবেচনা করতে হবে।

    বিবেচনা করার কী আছে? হিব্রুতে লেখা ওল্ড টেস্টামেন্টের গ্রিক অনুবাদ লাইব্রেরিতে বসে করা হয়েছিল। এই অনুবাদই সমস্ত বাইবেল বইয়ের ভিত্তি।

    কিন্তু নিউ টেস্টামেন্ট নয়, ভুল ধরার সুরে বললেন উইজম্যান। এমন ঐতিহাসিক সত্য ঘটনার কথা টেক্সাসের মাটির তলায় থাকতে পারে, যা প্রকাশ পেলে খ্রিস্টান ধর্মের প্রবর্তন সম্পর্কে বিতর্ক সৃষ্টি হবে। এমন সব ঘটনা, যা হয়তো গোপন থাকাই খ্রিস্টানদের জন্য ভালো।

    ঠাণ্ডা, শ্বাপদের দৃষ্টিতে উইজম্যানকে দেখলেন অ্যাডমিরাল, তারপর প্রেসিডেন্টের দিকে তাকালেন। আমি ষড়যন্ত্রের গন্ধ পাচ্ছি মি, প্রেসিডেন্ট। এখানে আমার উপস্থিতির পেছনে কারণটা কী জানতে পারলে কৃতজ্ঞবোধ করব।

    এখানে অন্যায় কিছু ঘটছে না, অ্যাডমিরাল, আমি আপনাকে নিশ্চয়তা দিচ্ছি। তবে, আমরা সবাই একমত যে ব্যাপারটা বিরাট প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে, কাজেই সময় থাকতে সাবধানে এগোনো উচিত আমাদের।

    অ্যাডমিরাল ভোঁতা নন, কী ঘটতে যাচ্ছে আগেই তিনি আন্দাজ করতে পেরেছেন।

    তার মানে তো এই যে নুমা-বিশেষত আপনার ছেলে, সিনেটর- যেই কঠিন কাজটা শেষ করেছে, অমনি তাদেরকে ঠেলে সরিয়ে দেয়া হবে, তাই কি?

    আপনাকে স্বীকার করতে হবে, অ্যাডমিরাল, হারল্ড উইজমার কর্তৃত্বের সুরে বললেন, পানির নিচে যারা দায়িত্ব পালন করে এমন একটা আধা-সরকারি সংস্থার কাজ এটা নয়।

    কাঁধ ঝাঁকিয়ে উইজম্যানের কথাটা ঝেড়ে ফেললেন তিনি, বললেন, কাজটা আমরাই এতদূর এগিয়ে নিয়ে এসেছি, বাকিটুকুও শেষ করতে না পারার আমি তো কোনো কারণ দেখছি না।

    আমি দুঃখিত, অ্যাডমিরাল, প্রেসিডেন্ট দৃঢ়তার সাথে বললেন। আমি ব্যক্তিগতভাবে দায়িত্বটা আপনার হাত থেকে নিয়ে পেন্টাগনকে দিতে চাই।

    স্তম্ভিত হয়ে গেলেন অ্যাডমিরাল। সেনাবাহিনী। প্রায় আর্তনাদ করে উঠলেন তিনি। আইডিয়াটা কার মাথা থেকে বেরিয়েছে?

    প্রেসিডেন্টের চোখে বিব্রত দৃষ্টি। পলকের জন্য শিলারের দিকে তাকালেন। নতুন প্ল্যানটা যারই হোক, সিদ্ধান্ত আমার।

    একজন বন্ধু হিসেবে বলছি, এই প্রথম মুখ খুললেন সিনেটর, ব্যাপারটা নিয়ে ঠাণ্ডা মাথায় ভাবতে হবে। জিম, তোমরা যা আবিষ্কার করেছ তা শুধুমাত্র আর্কিওলজি নয়। ওই পাহাড়টার ভেতর এমন সব তথ্য থাকা সম্ভব, যা আমাদের মধ্যপ্রাচ্য নীতি চিরকালের জন্য বদলে দিতে পারে।

    আমরা চাইছি তথ্য যাই উদ্ধার হোক, আগে পরীক্ষা ও বিচার-বিশ্লেষণ করা হবে। অর্থাৎ গোটা অপারেশনটা ক্লাসিফায়েড হওয়া দরকার।

    ভেবে দেখেছ, তাতে বিশ বা একশো বছর লেগে যেতে পারে? মোলোমশা বছর আগের প্যাপিরাস, কী অবস্থায় আছে আমরা জানি না। ওগুলোর সংখ্যা সম্পর্কেও আমাদের কোনো ধারণা নেই।

    তাই যদি হয়…, কাঁধ ঝাঁকিয়ে চুপ করে গেলেন প্রেসিডেন্ট।

    অ্যাডমিরালের ব্রেকফাস্ট নিয়ে ভেতরে ঢুকল স্টুয়ার্ড। খিদে নষ্ট হয়ে গেছে, হাত নেড়ে তাকে বিদায় করে দিলেন অ্যাডমিরাল।

    আসলে আমরা চাইছিটা কী? আলেকজান্ডারের হাড় গ্রিসের হাতে তুলে দিয়ে ওখানে আমাদের নৌ-ঘাটি রাখার মেয়াদ বাড়িয়ে নেব? আমার তো ধারণা, পাবলিককে ভয় পাওয়া উচিত আপনাদের।

    আপনি যা ভয় করছেন, সেই একই ভয় আমরাও করছি, অ্যাডমিরাল, প্রেসিডেন্ট বললেন। সেজন্যই ব্যাপারটা গোপনে সারা দরকার। জনগণকে জানানোর ব্যাপরটা, হ্যাঁ, আপনার সাথে আমরা সবাই একমত-তারাও জানবে, তবে আমাদের তৈরি হবার আগে নয়।

    পকেট থেকে ভাঁজ করা একটা খবরের কাগজ বের করলেন অ্যাডমিরাল। আসার পথে কিনেছি। তৃতীয় পৃষ্ঠায় দেখুন, খবরটা আমি লাইনটা কালিতে দাগিয়ে রেখেছি।

    হারল্ড উইজমার কাগজটার ভাঁজ খুলে খবরটা পড়তে শুরু করলেন, বাকি সবাই মন দিয়ে শুনলেন।

    .

    রোমানরা টেক্সাসে এসেছিল?

    ওয়াশিংটন থেকে রয়টার; উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তার বরাত দিয়ে জানানো হয়েছে যে প্রাচীন মিসরের আলেকজান্দ্রিয়া লাইব্রেরি নামে খ্যাত শিল্পকর্ম ও জ্ঞানভাণ্ডারের বিপুল সম্পদ টেক্সাসের রিয়ো গ্র্যান্ড নদীর উত্তরে রোমায় মাটির নিচে আবিস্কৃত হয়েছে।

    মি. স্যাম ট্রিনিটি নামে এক ভদ্রলোক গত কয়েক বছর ধরে যেসব শিল্পকর্ম উদ্ধার করেছেন, প্রমাণ হয়েছে সেগুলো রোমান যুগের নির্ভেজাল নিদর্শন।

    আলেকজান্দ্রিয়া লাইব্রেরির অনুসন্ধান শুরু হয়েছিল গ্রিনল্যান্ডে একটা বাণিজ্যিক জাহাজ আবিষ্কৃত হবার পর

    .

    পড়া শেষ করে চাপাকণ্ঠে গর্জে উঠলেন উইজম্যান। লিক হয়ে গেছে। ফঁস করে, দিয়েছে কেউ!

    কিন্তু কীভাবে,…কে? বিস্ময় প্রকাশ করলেন ডেইল নিকোলাস।

    উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তা, পুনরাবৃত্তি কররে, অ্যাডমিরাল। তার মানে হোয়াইট হাউসের কেউ, এমনকি তিনি একজন উপদেষ্টাও হতে পারেন।

    জুলিয়াস শিলার প্রেসিডেন্টের দিকে তাকালেন, তাঁর গলা থমথমে শোনাল, গোটা এলাকায় হাজার হাজার লোক ভিড় করবে। আমার পরামর্শ, এলাকাটা ঘিরে ফেরার জন্য সামরিক বাহিনীকে নির্দেশ দিন আপনি।

    ডেইল নিকোলাস মাথা ঝাঁকালেন। বাধা না দিলে ট্রেজার হান্টাররা, সব কটা পাহাড় মাটির সাথে সমান করে দেবে।

    ঠিক আছে, ডেইল। জয়েন্ট চিফস-এর জেনারেল মেটক্যাফকে লাইনে ডাকো।

    দ্রুত পায়ে ডাইনিং হল থেকে বেরিয়ে স্টাডিরুমে চলে গেলেন ডেইল নিকোলাস, ঘরটা পাহারা দিচ্ছে সিক্রেট সার্ভিসের লোকজন, ভেতরে রয়েছে হোয়াইট হাউসের কমিউনিকেশন টেকনিশিয়ানারা।

    আমরা প্রচার করব, হারল্ড উইজমার বললেন, আলেকজান্দ্রিয়া লাইব্রেরি না। ছাই, যা কিছু পাওয়া গেছে সব ভুয়া।

    অ্যাডমিরাল কিছু বলতে যাচ্ছিলেন, তাকে থামিয়ে দিয়ে জুলিয়াস শিলার বললেন, সেটা উচিত কাজ হবে না, মি. প্রেসিডেন্ট। আমেরিকান জনসাধারণকে মিথ্যে তথ্য দিলে তার পরিণতি ভালো হয় না। নিউজ মিডিয়া সন্দেহ করবেই, আপনার পেছনে উঠে পড়ে লাগবে তারা।

    অ্যাডমিরাল ক্লান্ত গলায় বললেন, জায়গাটা ঘিরে ফেলুন, তবে খোঁড়ার কাজ বন্ধ করবেন না বা পাবলিকের কাছে কিছু গোপন করবেন না।

    নিকলসনের দিকে ফিরে প্রেসিডেন্ট বললেন, দুঃখিত, হারল্ড। অ্যাডমিরালের কথায় যুক্তি আছে।

    বেশ ভালো, খবরের কাগজে নাক ডুবিয়ে থাকলেন উইজম্যান। উন্মাদ টপিটজিন, ব্যাপরটাকে যদি একটা ইস্যু বানাতে চায়, কী ঘটবে আমি ভাবতে চাই না।

    .

    ৬৮.

    জিপের পেছনে রাখা জোড়া ধাতব বাক্সের দিকে তাকিয়ে থাকল স্যাম ট্রিনিটি।

    কী যন্ত্র এটা? নাম কী?

    একটা বাক্সে স্ক্রিন রয়েছে, স্ক্রিনে ফুটে উঠেছে মাটির নিচ থেকে ফিরে আসা শব্দ তরঙ্গের ছবি। অপরটার সরু ফাটল থেকে বেরিয়ে আসছে চ্যাপ্টা জিভ আকৃতির কাগজ।

    কেতাবি নাম, ইলেকট্রোম্যাগনেটিক রিফ্লেকশন প্রোফাইলিং সিস্টেম ফর সাবসারফেস এক্সপ্লোরেশন, জবাব দিল পিট। সোজা ভাষায়, এটা একটা গ্রাউন অ্যান্ড প্রোবিং রাডার ইউনিট।

    রাডার পাথর আর মাটির ভেতরও কাজ করে? বুড়োর চোখে সন্দেহ।

    এটা করে। দশ মিটার গভীরে কী আছে জানিয়ে দিতে পারে।

    কী খুঁজছেন আপনি?

    মাটি ও পাথর চাপা একটা গর্ত বা টানেল।

    আসলটা বাদ দিয়ে, অন্য একটা পাহাড়ের পেছন দিকে কেন খুঁজছেন? কৌতূহলের সীমা নেই স্যামের।

    ইউনিটটা পরীক্ষা করারও হচ্ছে, বলল পিট, সেই সাথে ভেনাটর অন্য কোথাও কিছু রেখেছেন কি না তা-ও জানা যাবে।

    বিশ মিটার পর পর একটা করে মার্কার রেখে ফিরে এল লিলি। প্রোব ওয়াগন-এর হাতল ধরে মন্থরগতি জিপের পিছু পিছু চলল পিট। আকাশে হালকা মেঘ আছে, হলদেটে সূর্য, রোদের অত্যাচার সইতে হলো না। সকাল থেকে দুপুর, দুপুর থেকে বিকেল। লাঞ্চ খাবার, কথা মনে থাকল না কারও। মার্কার বসানো তিনটে পথের শেষেরটার মাঝখানে পৌঁছে থামল লিলি, রেকর্ডিং পরীক্ষা করে নোট নিচ্ছে।

    গুড রিডিং? জিজ্ঞেস করল পিট।

    কিছু একটার কিনারায় পৌঁছেছি, ইন্টারেস্টিং বলে মনে হচ্ছে, বলল লিলি, নিজের কাজে মশগুল।

    এই সুযোগে জিপ থেকে স্যান্ডউইচ নিয়ে নেমে এল স্যাম, বগলের নিচে বিয়ারের ক্যান। ক্ষণস্থায়ী বিরতির সময় পিট লক্ষ্য করল, গনগোরা হিলের নিচে দুটো-পাঁচটা করে গাড়ির সংখ্যা বাড়ছে। উপরের ঢালে ছড়িয়ে পড়েছে লোকজন, প্রত্যেকের হাতে মেটাল ডিটেকটর।

    স্যাম ওদেরকে আগেই লক্ষ করেছে। প্রবেশ নিষেধ সাইনবোর্ড ঝুলিয়েও কাজ হয়নি। দুএকজন হলে কথা ছিল, এত লোককে কী করে ঠেকানো সম্ভব!

    কোত্থেকে আসছে ওরা? জিজ্ঞেস করল লিলি। প্রজেক্টের কথাটা এত তাড়াতাড়ি জানলই বা কীভাবে?

    সানগ্লাসের ওপর দিয়ে তাকাল স্যাম। বেশির ভাগ স্থানীয় লোক! কেউ নিশ্চয়ই ফাঁস করেছে। কাল সকালের মধ্যে দেখবেন সবগুলো রাজ্য থেকে পিলপিল করে লোক আসতে শুরু করেছে।

    জিপ থেকে বেজে উঠল টেলিফোনটা। রিসিভার তুলল স্যাম। তারপর পিটের দিকে বাড়িয়ে ধরল। তোমার কাছে, অ্যাডমিরাল স্যানডেকার।

    রিসিভারে কথা বলল পিট, বলুন অ্যাডমিরাল।

    ছুরি মারা হয়েছে পিঠে। মাটি কাটার কাজ কেড়ে নিয়েছে ওরা। হোয়াইট হাউসের উপদেষ্টারা প্রেসিডেন্টকে রাজি করিয়েছেন, প্রেসিডেন্ট গোটা অপারেশন তুলে দিয়েছেন, পেন্টাগনের হাতে।

    ব্যাপারটা একেবারে অপ্রত্যাশিত নয়, শান্ত সুরে বলল পিট। কিন্তু পেন্টাগন কেন? দেশে আর্কিওলজিস্টদের অনেক সংগঠন আছে, এ ধরনের কাজে তাদের জ্ঞান ও দক্ষতা একান্ত দরকার।

    হোয়াইট হাউস প্যাপিরাসগুলো পরীক্ষা ও বিশ্লেষণ করতে চায়। অন্যান্য দেশ মালিকানা দাবি করতে পারে, এই ভয়ে সবাই অস্থির।

    জিপের ছাদে ঘুষি মারল পিট। সর্বনাশ। ওগুলো আজকের তৈরি কাগজ নাকি যে ট্রাক ভর্তি করে তুলে নিয়ে গিয়ে কোথাও গাদা করবে? ঠিকমতো যত্ন না নিলে বালির মতো ঝুরঝুরে হয়ে যাবে সব।

    কে কার কথা শোনে! ক্ষোভ প্রকাশ করলেন অ্যাডমিরাল। এদিকে আরেক কাণ্ড, হোয়াইট হাউস থেকে খবরটা ফাঁস হয়ে গেছে। মহামারির মতো ছড়িয়ে পড়েছে, টেক্সাসে পাওয়া গেছে আলেকজান্দ্রিয়া লাইব্রেরি।

    সাইটে এরই মধ্যে ভিড় করছে মানুষ।

    যা ভেবেছি।

    জমিটা স্যামের, আপনাদের সরকার এ ব্যাপারে কী ভাবছে?

    সংক্ষেপে, এমন একটা প্রস্তাব দেয়া হবে, স্যাম ট্রিনিটি প্রত্যাখ্যান করতে পারবেন না। দুঃখের কথা কি জানো, তোমার বাবাও উপদেষ্টাদের সুরে সুর মিলিয়েছেন!

    বাবা ওদরে সুরে সুর মিলিয়েছে?

    ফোর্ট হুড থেকে এক কোম্পানি আর্মি প্রকৌশলী। ইকুইপমেন্ট নিয়ে ট্রাকে করে পৌঁছাবে ওরা। হেলিকপ্টার নিয়ে পৌঁছাবে সিকিউরিটি ফোর্স, যেকোনো মুহূর্তে, গোটা এলাকা সিল করার জন্য।

    এক মুহূর্ত চিন্তা করল পিট। কাজ করতে না দিক, সাইটে আমদের থাকার কোনো ব্যবস্থা হয় না?

    উপযুক্ত কারণ দেখাতে পারো? হোক সেটা কাভার স্টোরি।

    হিরাম ইয়েজারকে বাদ দিলে, যারা খুঁড়তে আসবে তাদের চেয়ে আমি আর লিলি সার্চ পার্টি হিসেবে অনেকে বেশি অভিজ্ঞ। দাবি করুন, প্রজেক্টের কনসালট্যান্ট হিসেবে আমদের উপস্থিতি একান্ত দরকার। ব্যাকআপ হিসেবে ব্যবহার করুন লিলির অ্যাকাডেমিক কোয়ালিফিকেশন। ওদের বলুন, সারফেস আর্টিফ্যাক্টস-এর ওপর আমরা একটা আর্কিওজিক্যাল সার্ভে চালাচ্ছি যা খুশি বলুন, অ্যাডমিরাল, যেভাবে হোক হোয়াইট হাউসকে বোঝান সাইটে আমাদের থাকা দরকার।

    দেখি কি করতে পারি, বললেন অ্যাডমিরাল, আইডিয়াটা উৎসাহিত করে তুললেও, পিট আসলে কী করতে চাইছে সে সম্পর্কে তার কোনো ধারণা নেই। একমাত্র বাধা হয়ে দাঁড়াবে হারল্ড উইজমার। তবে, সিনেটর যদি আমাদেরকে সমর্থন করে, কাজ হতে পারে।

    বাবাকে তাহলে আমি কী চাইছি জানান।

    ঠিক আছে।

    রিসিভারটা স্যামের হাতে ধরিয়ে দিয়ে লিলির দিকে ফিরল পিট। শুনলে তো? আমাদেরকে বাদ দেয়া হয়েছে।

    সর্বনাশ হয়ে যাবে! হাঁপিয়ে উঠে বলল লিলি। মোলোশো বছর ধরে পার্চমেন্ট আর প্যাপিরাস পাণ্ডুলিপিগুলো আন্ডারগ্রাউন্ড ভল্টে রয়েছে, আঙুলের টোকা লাগলেও গুঁড়িয়ে যেতে পারে ওগুলো। আকস্মিক তাপমাত্রা পরিবর্তনেও ক্ষতি হতে পারে।

    জিপ থেকে বুড়ো স্যাম জানতে চাইল, কাজ তাহলে বন্ধ করে দেব? এক্ষুনি?

    আরে না! আগে আসুকই না ওরা! বলল পিট। দেখা যাক না কী হয়।

    .

    ৬৯.

    আলেকজান্দ্রিয়ার বন্দরের ইয়ট ক্লাব, ডকে এসে থামল মার্সিডিজটা। নিচে নেমে দরজা খুলে দিল শোফার, পেছনের সিট থেকে বেরিয়ে এল রবার্ট ক্যাপেসটার। সাদা লিনেনের স্যুট পরেছে সে, পাইডার ব্লু শার্ট আর টাই, এই মুহূর্তে টপিটজিনের সাথে কোনো মিলই খুঁজে পাওয়া যাবে না তার চেহারায়।

    পথ দেখানোর জন্য লোক আছে। পাথুরে সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামাল রবার্ট, অপেক্ষারত লঞ্চে চড়ল। নরম কুশনে হেলান দিয়ে বসল সে, রওনা হয়ে গেল লঞ্চ।

    বন্দরের প্রবেশমুখ ছাড়িয়ে এল লঞ্চ। প্রাচীন দুনিয়ার সপ্ত আশ্চর্যের একটা, বিখ্যাত লাটি হাউস, ফারোস অব আলেকজান্ডার, ঠিক এখানটাতেই দাঁড়িয়ে ছিল একশো পঁয়ত্রিশ মিটার উঁচু বিধ্বস্ত লাইট হাউসটাকে একটা দুর্গে রূপান্তরিত করা হয়, ধ্বংসাবশেষ হিসেবে রয়ে গেছে অল্প কয়েকটা পাথর।

    বন্দর ছাড়িয়ে, দীর্ঘ সৈকতে নোঙর করেছে একটা বড় ইয়ট, সেটার দিকে এগোল লঞ্চ। ওটার ডেকে আগেও কয়েকবার হাঁটাহাঁটি করেছে রবার্ট ক্যাপেসটার। সে জানে, পঁয়তাল্লিশ মিটার লম্বা ওটা। ত্রিশ নট গতিতে ছুটতে পারে।

    ইয়েটের পাশে থামল লঞ্চ। সিঁড়ি বেয় উঠে এল রবার্ট। খোলা সিল্ক শার্টম শর্টস আর স্যান্ডেল পরা এক লোকের সাথে দেখা হলো। পরস্পরকে আলিঙ্গন করল ওরা।

    ওয়েলকাম, ব্রাদার, পল ক্যাপেসটার বলল। অনেক দিন পর দেখা হলো।

    তোমাকে বেশ মোটাতাজা লাগছে, পল। তোমার আর ইয়াজিদের ওজন সম্ভত আট পাউন্ড বেড়েছে।

    বারো।

    মোল্লাদের ড্রেস না পরায়, বিশ্বাস করো, অদ্ভুত দেখাচ্ছে তোমাকে, হাসল রবার্ট।

    কাঁধ ঝাঁকাল পল। আখমত ইয়াজিদের অ্যারাবিয়ান ড্রেস আর পাগড়ি ক্লান্ত করে তুলেছে আমাকে। পিছিয়ে গিয়ে ভাইকে খুঁটিয়ে দেখল সে। তোমাকেও তো আমি আয়টেক দেবতার ড্রেসে দেখছি না।

    টপিটজিন সাময়িক ছুটিতে আছে, থেমে ডেকের দিকে ইঙ্গিত করল রবার্ট। তুমি দেখছি আঙ্কল থিওডোরের বোটটা ধার করেছ।

    ড্রাগ ব্যবসা বাদ দেয়ার পারিবারিক সিদ্ধান্তের পর এটা তিনি ব্যবহার করেন না বললেই চলে। ঘুরে দাঁড়াল পল ক্যাপেসটার, ভাইকে নিয়ে ডাইনিং সেলুনের দিকে এগোল। এসো, লাঞ্চ তৈরি হয়ে আছে। শ্যাম্পেনের স্বাদ নিতে শিখেছ জেনে আঙ্কেল থিওডোরের কাছ থেকে কয়েকটা বোতলও চেয়ে এনেছি।

    ডাইনিং সেলুনে ঢুকে ভাইয়ের হাত থেকে একটা গ্লাস নিল রবার্ট। আমি ভেবেছিলাম প্রেসিডেন্ট হাসান তোমাকে গৃহবন্দি করে রেখেছে।

    দেখতে হবে তো গৃহটা কার! হেসে উঠল পল। ওটা আমি কিনেছিলাম গোপন একটা টানেল আছে বলে। মাটির নিচ দিয়ে একশো মিটার গেছে ওটা, উঠেছে একটা মেকানিকের রিপেয়ার শপে।

    সেটার মালিকও তুমি।

    অবশ্যই।

    রবার্ট তার গ্লাসটা উঁচু করল। মা ও বাবার পুণ্য স্মৃতি এবং তাদের রাজকীয় পরিকল্পনা উদ্দেশ্যে।

    মাথা ঝাঁকাল পল। যদিও এই মুহূর্তে সাম্রাজ্য বিস্তারের পরিকল্পনাটা আমার দ্বারা মিসরে নয়, বরং তোমার দ্বারা মেক্সিকোয় বাস্তবায়িত হবার সম্ভাবনাই বেশি দেখা যাচ্ছে।

    লেডি ফ্ল্যামবোরো নাটকের জন্য তোমাকে দায়ী করা যায় না। পরিবারের তরফ থেকে পরিকল্পনাটা অনুমোদন করা হয়। আমেরিকানদের চালাকি সম্পর্কে আগে থেকে কিছু আন্দাজ করা সত্যি ভারি কঠিন।

    আমাকে আসলে ডুবিয়েছে সুলেমান আজিজ। অপারেশনটা সামলাতে পারেনি সে। দুঃখ এই যে আমি তাকে নিজের হাতে শান্তি দিতে পারলাম না।

    কেউ বাঁচেনি?

    পারিবারিক এজেন্টরা রিপোর্ট করেছে, বেশির ভাগই মারা গেছে, সুলেমান আজিজ ও ম্যাকাডোসহ। কয়েকজনকে বন্দি করা হয়েছে, তবে তারা কেউ আমাদের ভূমিকা সম্পর্কে কিছু জানেন না।

    সেক্ষেত্রে নিজেদেরকে আমরা ভাগ্যবান ধরে নিতে পার। ম্যাকাডো, সুলেমান আজিজ নিহত হওয়ায়, দুনিয়ার কোনো ইন্টেলিজেন্স এজেন্সি আমাদেরকে ছুঁতে পারবে না। ওরা দু’জনেই একমাত্র লিঙ্ক ছিল।

    প্রেসিডেন্ট হাসান দুয়ে দুয়ে চার মিলিয়ে নিয়েছে, তা না হলে আমাকে গৃহবন্দি করত না।

    তা ঠিক, একমত হলো রবার্ট। তবে নিরেট প্রমাণ ছাড়া তোমার বিরুদ্ধে কিছু করা তার পক্ষে সম্ভব নয়। সে চেষ্টা করলে তোমার ভক্ত আর অনুসারীরা দাঁড়িয়ে যাবে, ঠেকিয়ে দেবে যেকোনো ট্রায়াল। পরিবারের তরফ থেকে পরামর্শ হলো, ধৈর্য ধরে চুপচাপ থাকো, এই ফাঁকে তোমার শক্তির ভিতগুলো শক্ত করে নাও। অন্তত একটা বছর কোনো শব্দ কোরো না, দেখেই না কোনো দিকে তাকাস বয়।

    বাতাস এখন শুধু হাসান, হে’লা কামিল আর আবু হামিদের পিঠে লাগবে, তিক্তকণ্ঠে বলল পল।

    আরে, রসো! ধর্মীয় উন্মাদনা কী জিনিস, বোঝেই তো। মোল্লা-মৌলবীদের যদি ঠিকমতো উত্তেজিত করতে পারো, ওরাই তোমাকে মিসরের পার্লামেন্টে বসাবে। এই আফিম আজও বিক্রি হয়, বিপুল চাহিদা আছে, আর সেজন্যই তো আমাদের দুভাইকে জিনিসটা বিলি করতে পাঠানো হয়েছে।

    চোখ কুঁচকে রবার্টর দিকে তাকাল পল। আলেকজান্দ্রিয়া লাইব্রেরির গুপ্তধন আবিষ্কার হলে ঘটনার গতি সম্ভবত খানিকটা দ্রুত হতো।

    শেষ খবরটা পড়েছ তুমি? জিজ্ঞেস করল রবার্ট।

    হ্যাঁ, আমেরিকানরা দাবি করছে স্টোরেজ চেম্বারটা নাকি টেক্সাসে পেয়েছে তারা।

    প্রাচীন জিওলজিকাল চার্টগুলো হাতে পেলে তোমার খুব কাজে লাগবে। তেল ও সোনার খনি পাওয়া গেলে, মিসরের অর্থনীতি বদলে দেয়ার সমস্ত কৃতিত্ব নিজের বলে দাবি করতে পারবে তুমি।

    সম্ভাবনাটা নিয়ে ভেবেছি, বলল পল। আমেরিকানদের যতটুকু চিনি, আলেকজান্দ্রিয়া লাইব্রেরির সম্পদ নিয়ে দর কষাকষি করবে ওরা, আর মিসরের প্রাপ্য জিনিসগুলো থেকে সামান্য কিছু পাবার জন্য ওদের হাতে-পায়ে ধরবে হাসান। আমি জনগণকে সাথে নিয়ে দাবি তুলতে পারি, আলেকজান্দ্রিয়া লাইব্রেরির সমস্ত সম্পত্তি আমাদের পূর্বপুরুষদের, কাজেই আংশিক নয়, সবটুকু চাই আমাদের। বাঁকা হাসি ফুটল তার ঠোঁটে। ইসলামের ইতিহাস এক-আধটু রং চড়িয়ে আর পবিত্র কোরানের ব্যাখ্যায় সামান্য হেরফের ঘটিয়ে জেহাদের ডাক দিলেই সাধারণ ধর্মভীরুরাও হাসানের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে উঠবে বলে আশা করা যায়।

    হেসে উঠল রবার্ট। ভাষণ দেয়ার সময় সাবধান। তিনশো একানব্বই খ্রিস্টাব্দে খ্রিস্টানরা হয়তো বেশির ভাগ পার্চমেন্ট আর প্যাপরিরাস পুড়িয়ে ফেলেছিল, তবে লাইব্রেরিটাকে চিরতরে ধ্বংস করে দেয় মুসলমানরা ছয়শো ছেচল্লিশ সালে।

    ইরানের ক্যাভিয়ার আর স্কটল্যান্ডের স্মোকড় স্যামন পরিবেশন করল একজন ওয়েটার। খাওয়ার সময় কয়েক মিনিট চুপচাপ থাকলে দুই ভাই।

    তারপর পল বলল, লাইব্রেরির সম্পদ দখল করার গুরুদায়িত্ব তোমার কাঁধে পড়েছে, আশা করি ব্যাপারটা তুমি উপলব্ধি করতে পারছ?

    শ্যাম্পেন ভর্তি গ্লাসের কিনারা দিয়ে পলের দিকে তাকাল রবার্ট। তুমি আমার সাথে কথা বলছ, নাকি টপিটজিনের সাথে?

    হেসে উঠল পল। টপিটজিনের সাথে।

    গ্লাসটা টেবিলে নামিয়ে রাখল রবার্ট, তারপর ধীরে ধীরে হাত দুটো মাথার দুপাশে খাড়া করল, যেন সিলিংয়ের একটা পোকাকে ধরতে চায়। তার চোখে সম্মোহিত দৃষ্টি ফুটে উঠল, উদাত্ত কণ্ঠে শুরু করল সে, আমরা হাজারে হাজারে মাথাচাড়া দেব। আমরা মাথাচাড়া দেব লাখে লাখে। লক্ষ জনতা, কিন্তু এক দেহ এক প্রাণ। জনতা আমরা নদী পেরোব। নদী পেরিয়ে আমাদের ভূমি থেকে উদ্ধার করব প্রাচীন সম্পদ। ওই জমি আমাদের, কারণ আমেরিকানরা ওটা আমাদের কাছ থেকে চুরি করে নিয়েছিল। হয়তো বহুলোক প্রাণ হারাবে, কিন্তু সেটা হবে আত্মত্যাগ। দেবতারা চান, ন্যায্য অধিকার সূত্রে যা মেক্সিকানদের, তা প্রাণ বিসর্জন দিয়ে হলেও উদ্ধার করতে হবে। হাত নামিয়ে লাজুকে হাসি হাসল সে। তবে একটু মাজা-ঘষা করতে হবে।

    বুঝতে পারছি, আমার ভাষণের ভাবটুকু ধার করছো তুমি।

    ভাইয়ের কাছ থেকে ধার করার লজ্জা কী। মুখে চামচ ভর্তি ক্যাভিয়ার পুরুলো রবার্ট। ভারি মজার জিনিস। ট্রাক বোঝাই করে ক্যাভিয়ার দাও, আমার অরুচি হবে না। লাইব্রেরির গুপ্তধন দখল করলাম, তারপর কী?

    আমি শুধু ম্যাপগুলো চাই। বাকি যা কিছু সরিয়ে আনা যাবে, দুচারটে পারিবারিক মিউজিয়ামের জন্য রেখে, কালোবাজারে সব বিক্রি করে দেয়াই ভালো। তুমি কী বলো?

    এক মুহূর্ত চিন্তা করে রবার্ট বলল, তাই হবে।

    ট্রে হাতে ফিরে এল ওয়েটার। ট্রে-তে গ্লাস, ব্র্যান্ডির বোতল আর সিগারেট বাক্স রয়েছে।

    ধীরে সুস্থে একটা সিগারেট ধরাল পল। ধোঁয়া ছেড়ে চোখ কুঁচকাল, সে, ভাইয়ের দিকে প্রশ্নবোধক দৃষ্টিতে তাকাল। লাইব্রেরির সম্পদ কীভাবে তুমি দখল করবে ভেবেছ কিছু?

    আমার প্ল্যান ছিল, ক্ষমতায় আসার পর নিরস্ত্র জনতাকে সাথে নিয়ে সীমান্ত পথে। আমেরিকার দিকে মিছিল করে যাব। ক্ষমতায় যাবার আগে একটা রিহার্সেল হয়ে গেলে মন্দ কী। গ্লাসের ভেতর ব্র্যান্ডিটুক ঘন ঘন ঢালল রবার্ট। আমার রাজনৈতিক দলের কর্মীরা শহরের বস্তিবাসী আর গ্রামের বেকার চাষিদের উত্তেজিত করবে। সীমান্তের দিকে রওনা হবার জন্য প্রত্যেক লোককে পথ খরচা দেয়া হবে। অবশ্য, গরিব মানুষদের মনে একবার দেশপ্রেমের আগুন ধরিয়ে দিতে পারলে আর কিছু লাগে না। দূর-দূরান্ত থেকে হাজার হাজার, লাখ লাখ মানুষকে নিয়ে আসার জন্য ট্রাক আর বাসের ব্যবস্থা করা হবে। পাঁচ থেকে সাত লাখ লোক, রিয়ো গ্র্যান্ডে, আমাদের তীরে, অনায়াসে জড়ো করতে পারব আমি।

    আমেরিকানরা বাধা দেবে না?

    টেক্সাসের প্রতিটি সৈনিক, সীমান্তরক্ষী আর শেরিফ অসহায় দর্শকের মতো দাঁড়িয়ে থাকবে, মিছিল বা অনুপ্রবেশ ঠেকাতে পারবে না। প্রথম সারিতে মহিলা আর শিশুদের রাখব আমি, ওরাই সবার আগে ব্রিজ আর নদী পেরোবে। আমেরিকানরা আধ-মাতাল বা বলতে পারো ভাবপ্রবণ জাত। ভিয়েতনামে গ্রামবাসীদের খুব করতে পারলেও, নিজেদের দোরগোড়ায় নিরস্ত্র শিশু ও মহিলাদের পাইকারি হারে খুন করতে পারবে না। দুনিয়াজুড়ে অমানবিক বলে নিন্দা করা হবে, ওদের এই ভয়টারও সুযোগ নেব আমি। গুলি করার নির্দেশ দেয়ার সাহস করবে না প্রেসিডেন্ট। আর একবার সীমান্ত পেরোতে পারলে, লাখ লাখ মানুষ চারদিকে ছড়িয়ে পড়বে, কে ওদেরকে ঠেকায়! রোমায় পৌঁছানো পানির মতো সহজ। যে পাহাড়ে গুপ্তধন আছে সেটা তারা ঘিরে ফেলবে।

    আর টপিটজিন তাদেরকে নেতৃত্ব দেবে?

    আর আমি তাদেরকে নেতৃত্ব দেব।

    কিন্তু চেম্বারটা কতক্ষণ তুমি দখল করে রাখতে পারবে? প্রশ্ন করল পল।

    তাতে সময় যাই লাগুক, ওখানে আমরা টিকে থাকতে পারব।

    কয়েক সপ্তাহ লাগতে পারে, চিন্তিতভাবে বলল পল। অত সময় তুমি পাবে না, রবার্ট। আমেরিকান সৈন্যরা গুলি না করেও জনতাকে ছত্রভঙ্গ করে দিতে পারবে। কয়েক দিনের মধ্যে মেক্সিকানদের সীমান্তের দিকে ঠেলে দেবে তারা।

    হাসল রবার্ট। কিন্তু আমি যদি লাইব্রেরির সমস্ত সম্পদ পুড়িয়ে দেয়ার হুমকি দিই? একটা ন্যাপকিন তুলে নিয়ে আলতো ভাবে ঠোঁট মুছল সে। ইতিমধ্যে বোধ হয় আমার জেটে ফুয়েল ভরা হয়ে গেছে। মেক্সিকোয় ফিরে গিয়ে আমি বরং কর্মীদের নির্দেশ দিই।

    রবার্টের দিকে তাকিয়ে হাসতে লাগল পল। প্ল্যানটা সত্যি ভালো। দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেলে তোমার সাথে একটা চুক্তিতে আসতে বাধ্য হবে আমেরিকানরা। সত্যি খুব ভালো লাগছে।

    আমার আরও বেশি ভালো লাগছে, এই ব্রিটিশ অভ্যুত্থানের পর এত বড় জনগোষ্ঠী আর আমেরিকার মাটিতে অনুপ্রবেশ করেনি।

    ⤶ ⤷
    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleদ্য মহাভারত কোয়েস্ট : দ্য আলেকজান্ডার সিক্রেট – ক্রিস্টোফার সি ডয়েল
    Next Article ড্রাগন – ক্লাইভ কাসলার

    Related Articles

    ক্লাইভ কাসলার

    দ্য ফারাও’স সিক্রেট – ক্লাইভ কাসলার ও গ্রাহাম ব্রাউন

    August 5, 2025
    ক্লাইভ কাসলার

    পাইরেট – ক্লাইভ কাসলার / রবিন বারসেল

    August 5, 2025
    ক্লাইভ কাসলার

    দ্য সলোমন কার্স – ক্লাইভ কাসলার ও রাসেল ব্লেক

    August 5, 2025
    ক্লাইভ কাসলার

    ড্রাগন – ক্লাইভ কাসলার

    August 5, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Generic selectors
    Exact matches only
    Search in title
    Search in content
    Post Type Selectors
    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    চিরস্থায়ী বন্দোবস্তে বাঙলাদেশের কৃষক – বদরুদ্দীন উমর

    October 29, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    চিরস্থায়ী বন্দোবস্তে বাঙলাদেশের কৃষক – বদরুদ্দীন উমর

    October 29, 2025
    Our Picks

    চিরস্থায়ী বন্দোবস্তে বাঙলাদেশের কৃষক – বদরুদ্দীন উমর

    October 29, 2025

    পূর্ব বাঙলার ভাষা আন্দোলন ও তৎকালীন রাজনীতি ২ – বদরুদ্দীন উমর

    October 29, 2025

    বাঙলাদেশে কমিউনিস্ট আন্দোলনের সমস্যা – বদরুদ্দীন উমর

    October 29, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    • Sign Up
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }