Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    চিরস্থায়ী বন্দোবস্তে বাঙলাদেশের কৃষক – বদরুদ্দীন উমর

    October 29, 2025

    পূর্ব বাঙলার ভাষা আন্দোলন ও তৎকালীন রাজনীতি ২ – বদরুদ্দীন উমর

    October 29, 2025

    বাঙলাদেশে কমিউনিস্ট আন্দোলনের সমস্যা – বদরুদ্দীন উমর

    October 29, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    ট্রেজার – ক্লাইভ কাসলার

    ক্লাইভ কাসলার এক পাতা গল্প596 Mins Read0
    ⤶ ⤷

    ০৫. একটা সুইভেল চেয়ার

    ০৫.

    একটা সুইভেল চেয়ারে পেশি ঢিল করে দিয়ে বসে আছে ডার্ক পিট, পা দুটো টানটান লম্বা করে দেয়ায় ছয় ফুট তিন ইঞ্চির আকৃতিটা সমান্তরাল তলে রয়েছে এখন। মস্ত একটা হাই তুলল, কালো ঢেউ-খেলানো চুলে আঙুল চালাল বার কয়েক।

    একহারা গড়ন ওর, সুঠাম শক্ত পেশি। রোজ দশ মাইল দৌড়ে বা নিয়মিত মুগুর ভেজে যারা স্বাস্থ্য তৈরির জন্য গলদঘর্ম হয় তাদের দলে পড়ে না ও। বছরের বেশির ভাগই ঘরের বাইরে থাকে, ঘুরে বেড়ায় পাহাড়-পর্বত বন-জঙ্গল আর মরুভূমিতে, রোদে পুড়ে অনেককাল আগেই তামাটে হয়ে গেছে গায়ের চামড়া। গভীর সবুজ চোখ দুটোয় উষ্ণ এবং নিষ্ঠুর অনুভূতি খেলা করে একই সঙ্গে। কিন্তু ঠোঁটের কোণে সব সময় একটা হাসি।

    জীবনযাপনে আশ্চর্য একটা সাবলীল ভঙ্গি আছে পিটের, হীনম্মন্যতায় ভোগে না কখনও, যে কোনো পরিবেশে ব্যক্তিত্বের সান্নিধ্যে সপ্রতিভ ও সহজ হতে পারে। অভিজাত আর প্রভাবশালী মহলে অবাধ যাতায়াত ওর। যেকোনো বিষয়ে, সংশ্লিষ্ট পাত্র বা পাত্রী যদি কঠিন হয়, তার প্রতি আকর্ষণ বোধ করে ও।

    এয়ারফোর্স একাডেমি থেকে পাস করা সন্তান পিট, মেজর পদে উন্নীত হয়েছিল; প্রায় ছয় বছর হতে চলল ন্যাশনাল আন্ডারওয়াটার অ্যান্ড মেরিন এজেন্সি (নুমা)-তে বিশেষ প্রজেক্ট ডিরেক্টর হিসেবে ধারে কাজ করছে। বাল্যবন্ধু অ্যাল জিওর্দিনোর সঙ্গে পৃথিবীর সব কয়টি সাগর-মহাসাগর চষে বেরিয়েছে পিট, কী পানির উপরে কী নিচে; অনেক মানুষ যে অভিজ্ঞতা সারা জীবনেও অর্জন করতে পারে না, তার দশগুণ বেশি রোমাঞ্চ ও অর্জন করেছে গত অর্ধ দশকে। নিউ ইয়র্কের নিচে হারিয়ে যাওয়া একটা জায়গা থেকে ম্যানহাটন লিমিটেড এক্সপ্রেস ট্রেন খুঁজে বের করেছে সে, সেইন্ট লরেন্স নদীর তলদেশ থেকে জীবিত এক হাজার যাত্রীসহ জাহাজ এম্পায়ার অব দ্য আইল্যান্ড উদ্ধার করেছে। হারিয়ে যাওয়া নিউক্লিয়ার সাবমেরিন স্টারবাককে প্রশান্ত মহাসাগরের তলদেশ থেকে খুঁজে বের করেছে, পিট, ক্যারিবিয়ান সাগরের তলদেশে ভুতুড়ে জাহাজ। সাইক্লপ-এর সমাধি আবিষ্কার করেছে সে। ও হ্যাঁ, টাইটানিক জাহাজ উত্তোলনের পেছনেও তার অবদান ছিল।

    জিওর্দিনোর মতে, ও হলো অতীতকে খুঁড়ে আনা ব্যক্তি। মাঝেমধ্যেই ঠাট্টা করে কথাটা বলে সে।

    তুমি বোধ হয় এটা দেখতে চাইবে, কামরার আরেক প্রান্ত থেকে বলল অ্যাল জিওর্দিনো।

    কালার ভিডিও মনিটরের ওপর আরও কয়েক সেকেন্ড তাকিয়ে থাকল পিট। সার্ভে শিপ আইসব্রেকার পোলার এক্সপ্লোরার-এ রয়েছে ওরা। খোলের একশো মিটার নিচের দৃশ্য দেখতে পাচ্ছে ও। পোলার এক্সপ্লোরার ভোতা চেহারার বিশাল জাহাজ, বিশেষভাবে তৈরি করা হয়েছে বরফবহুল পানিতে চলার জন্য। বাক্স আকৃতির প্রকাণ্ড সুপারস্ট্রাকচার পাঁচতলা অফিস ভবনের মতো দেখতে। জাহাজটাকে চালায় আশি হাজার ঘোড়ার ইঞ্জিন। দেড় মিটার পুরু বরফ ভেঙে অনায়াসে এগোতে পারে।

    মনে হচ্ছে যেন একটা গর্ত এগিয়ে আসছে। সামনে একটা কনসোল নিয়ে বসে রয়েছে অ্যাল জিওর্দিনো, সোনার রেকর্ডার স্টাডি করছে। সব কিছু মিলিয়ে তার চেহারাটা বুলডোজারের কাছাকাছি। আদি নিবাস ইটালিতে। একটা কানে ইয়াররিং লটকানো। শুধু বন্ধু নয়, অনেকক্ষেত্রেই পিটের বীমা পলিসি হিসেবে কাজ করে সে।

    একটা কাউন্টারে পা ঠেকাল পিট, ভাঁজ করা হাঁটু সমান করল সজোরে, সুইভেল চেয়ারটা ঘুরল, সেই সাথে চাকাগুলো গড়াতে শুরু করে অ্যাল জিওর্দিনোর পাশে পৌঁছে দিল ওকে। কম্পিউটারের সাহায্য পাওয়া সোনোগ্রাফ-এর দিকে তাকিয়ে থাকল ও, উঁচু কিনারা নিয়ে সত্যি একাটা গর্ত ধীরে ধীরে পরিষ্কার হচ্ছে। একসময় অন্ধকার গভীর গর্তের ভেতরটারও আভাস পাওয়া গেল। পাশ থেকে অ্যাল জিওর্দিনো মন্তব্য করল, ঝপ করে নেমে গেছে খাদটা।

    চট করে একবার ইকো সাউন্ডারের ওপর চোখ বুলালো পিট। একশো চল্লিশ থেকে একবারেই একশো আশি মিটার।

    অথচ কিনারা থেকে বাইরের কোনো দিকে ঢাল নেই।

    দুশো মিটার, এখনও তল দেখা যাচ্ছে না।

    যদি আগ্নেয়গিরি হয়, স্বীকার করতে হবে আকৃতিটা অদ্ভুত। লাভা পাথরের কোনো চিহ্ন নেই।

    বায়রন নাইট, সার্ভে ভেসেলের কমান্ডার, দরজা খুলে ভেতরে উঁকি দিলেন। লালমুখো একটা গরিলাই বলা যায় তাকে। পি আর অ্যাল জিওর্দিনো বাদে গোটা জাহাজে তিনিই শুধু ইলেকট্রনিক্স কমপার্টমেন্টে ঢুকতে পারেন। রাত জাগা পাখিদের কিছু দরকার থাকলে বলতে পারে। হাসছেন তিনি।

    কফি। ধন্যবাদ, কমান্ডার, বলল পিট, মাথাটা টেনে নিয়ে বাইরে থেকে দরজা বন্ধ করে দিলেন বায়রন নাইট।

    সোনোগ্রাফে চোখ রেখে আকৃতিটাকে বড় হতে দেখল জিওর্দিনো। ডায়ামিটারে প্রায় দুকিলোমিটার। …

    তলাটা সমতল, বলল পিট।

    নিশ্চয়ই প্রকাণ্ড একটা আগ্নেয়গিরি ছিল একসময়…

    উহু, তা নয়।

    পিটের দিকে অদ্ভুতদৃষ্টিতে তাকাল জিওর্দিনো। তাহলে?

    উল্কার আঘাত হতে পারে না?

    চেহারায় সন্দেহ নিয়ে চিন্তা করল জিওর্দিনো। সাগরের এত গভীরে উল্কার আঘাতে এই প্রকাণ্ড গর্ত তৈরি হতে পারে?

    হয়তো কয়েক হাজার বা কয়েক মিলিয়ন বছর আগে পড়েছিল, যখন মি লেভেল অনেক নিচু ছিল।

    তোমার এ রকম ভাবার কারণ?

    কারণ তিনটে, বলল পিট। গর্তের মুখটা বড় বেশি নিখুঁত, উঁচু-নিচু নয়। বাইরের দিকে কোনো ঢাল নেই। আর, ম্যাগনেটোমিটারের দিকে তাকিয়ে দেখো কাঁটাটা কেমন লাফাচ্ছে, তার মানে নিচে যথেষ্ট লোহা রয়েছে।

    হঠাৎ আড়ষ্ট হয়ে গেল জিওর্দিনো। আমরা একটা টার্গেট পেয়েছি!

    কোন দিকে?

    স্টারবোর্ড সাইডে, দুশো মিটার দূরে। গর্তের ভেতর দিকের ঢালে খাড়াভাবে রয়েছে। রিডিং খুবই আবছা। জিনিসটাকে আংশিক আড়াল করে রেখেছে জিওলজি। কমান্ডারকে খবরটা দাও। ভিডিও ক্যামেরা কি বলে?

    মনিটরগুলোর দিকে তাকাল পিট। রেঞ্জের মধ্যে পাচ্ছে না। পরের বার পাশ কাটানোর সময় পাবে।

    দ্বিতীয়বার পাশ কাটালে রাশিয়ানরা সন্দেহ করবে না?

    রেকডিং পেপারে সোনার ইমেজ এল আবছা। নানা ধরনের পদার্থের আড়াল করা একটা দাগ মাত্র। তারপর এল কম্পিউটর ইমেজ, অনেকটা পরিষ্কার ও বিশদ বিবরণসহ। ইমেজটা ফোঁটানো হলো কালার ভিডিও মনিটরে। এতক্ষণে একটা প্রায় স্পষ্ট আকৃতি পাওয়া গেল। বোম টিপে আকৃতিটাকে আরও বড় করল পিট স্ক্রিন।

    টার্গেটের চারদিকে আপনাআপনি একটা চতুষ্কোণ তৈরি হলো, ফলে আরও পরিষ্কারভাবে ধরা পড়ল জিনিসটার ধাচ আর আকৃতি। একই সময়ে আরেকটা মেশিন থেকে বেরিয়ে এল রঙিন আকৃতি।

    হন্তদন্ত হয়ে ভেতরে ঢুকলেন কমান্ডার নাইট। দিনের পর দিন গোটা এলাকা চষে ফেলেছে পোলার এক্সপ্লারার, নিখোঁজ রাশিয়ান সাবমেরিনের কোনো সন্ধান না পাওয়া হতাশ হয়ে পড়েছিলেন ভদ্রলোক, পিটের আকস্মিক ডাক পেয়ে উত্তেজিত হয়ে উঠেছেন। পেয়েছো? টার্গেট পেয়েছো? রুদ্বশ্বাসে জানতে চাইলেন

    পিট বা জিওর্দিনো, দু’জনের কেউই জবাব দিল না, নিঃশব্দে হাসতে লাগল। হঠাৎ বুঝতে পারলেন কমান্ডার নাইট।

    গুড গড! সত্যি আমরা পেয়েছি ওটাকে? …।

    বিশাল এক গর্তের ভেতর লুকিয়ে আছে, কমান্ডারের হাতে একটা ফটো ধরিয়ে দিয়ে মনিটরের দিকে ইঙ্গিত করল পিট। আলফাক্লাস সোভিয়েত সাবমেরিনের নিখুঁত একটা ইমেজ।

    ফটো আর সোনার ইমেজের ওপর চোখ বুলিয়ে মুখ তুললেন বায়রন নাইট। সাগরের এদিকটা কোথাও খুঁজতে বাকি রাখেনি রাশিয়ানরা। পায়নি। কেন?

    না পাওয়ার কারণ আছে, বলল পিট। ওরা যখন খোঁজ করে তখন বরফের স্তর অনেক মোটা ছিল। পাশাপাশি সরল রেখা তৈরি করে আসা-যাওয়া করতে পারেনি ওদের জাহাজগুলো। ওদের সোনার বীম শুধু ছায়া দেখাতে পেরেছে। তাছাড়া গর্তের তলায় প্রচুর লোহা থাকায়…

    আমাদের ইন্টেলিজেন্স খবর পাওয়া মাত্র ধেই ধেই করে নাচবে।

    যদি লাল কমিউনিস্টরা চালাক হয়, তবে আর নাচতে হবে না, জিওর্দিনো বলে। .. আমাদেরকে এই জায়গায় ফিরে আসতে দেখে মনে করেছেন চুপ করে বসে থাকবে। ওদের জাহাজ গ্লোমার এক্সপ্লোরার?

    অর্থাৎ তুমি বলছে, সাগরের তলদেশের জিওলজিক্যাল সার্ভের ব্যাপারে আমাদের ঘোষণা তারা বিশ্বাস করেনি? কণ্ঠে কপট বিস্ময় নিয়ে জানতে চাইল পিট।

    তিক্ত একটা দৃষ্টি উপহার দিল জিওর্দিনো, পিটকে। ইন্টেলিজেন্স অদ্ভুত এক ব্যাপার, সে বলে চলে, এই দেয়ালের ওপাশে বসা ত্রুরা জানে না, তুমি আমি কী করতে যাচ্ছি; কিন্তু ওয়াশিংটনে সোভিয়েত চরেরা আমাদের মিশনের উদ্দেশ্য টের পেয়েছে বহু মাস আগে। বাধা দেয়নি, তার একটাই কারণ, আমাদের টেকনোলজি ওদের চেয়ে ঢের উন্নত। ওরা চাইছে, আমরা খুঁজে দেই ওদের জিনিস।

    ওদের ধোঁকা দেয়া সহজ হবে না, একমত হলেন নাইট। বন্দর ছাড়ার পর থেকেই ওদের দুটো ট্রলার আমাদের প্রতিটি মুভ অনুসরণ করছে।

    সার্ভেইল্যান্স স্যাটেলাইট তো অনুসরণ করছেই, যোগ করে জিওর্দিনো।

    এ জন্যই ব্রিজে ফোন করে আমি বলে দিয়েছি, যেই কোর্সে আছে ওটা শেষ করে আবার এই স্থানে ফিরে আসতে, পিট বলে।

    ভালো চেষ্টা। কিন্তু আবার এইখানে ফিরে এলে রাশিয়ানরা সন্দেহ করবে।

    তা করবে। কিন্তু আমরা একটা নিয়ম ধরে সার্চ করা থামাবো না। ওয়াশিংটনে রেডিওতে আমি জানাব, ইকুইপমেন্টে যান্ত্রিক গোলযোগ দেখা দিয়েছে, কী করা উচিত এই ব্যাপারে পরামর্শও চাইব। কয়েক মাইল পর পরই এলোমেলো ঘুরে ওদের ধাঁধায় ফেলে দেবো একদম।

    হ্যাঁ বিশ্বাসযোগ্য হবে ব্যাপারটা, টোপটা ওরা গিলতে পারে। ওয়াশিংটনে পাঠান আমাদের মেসেজ অবশ্যই শুনতে পাবে রাশিয়ানরা। বায়রন নাইটের উদ্দেশে বলল জিওর্দিনো।

    ঠিক আছে। মেনে নিলেন নাইট। আমরা এখানে থামব না। টার্গেটের ওপর দিয়ে চলে যাচ্ছি, ভাব করছি যেন এখনো সার্চ চলছে।

    ত্রিশ মাইল দূরে ভুয়া একটা আবিষ্কারের ব্যাপারে শোরগোল তুলে বিষয়টা আরো ঘোলাটে করা যাবে, পিট পরামর্শ দেয়।

    তবে তাই হোক, বায়রন নাইট মুচকি হাসেন।

    জাহাজ ঘুরে গেল। পানিতে ডুবে থাকা রোবট, নাম শারলক, একজোড়া মুভি ক্যামেরা আর একটা স্টিল ক্যামেরার সাহায্যে ছবি পাঠাতে শুরু করল। আবার গর্তের কিনারায় ফিরে এসেছে ওরা। গভীর তলদেশের ফটো দেখতে পাচ্ছে। ওই যে, আবার আসছে ওটা! ফিসফিস করে বলল জিওর্দিনো।

    সোনোগ্রাফের পোর্টসাইড প্রায় সবটুকু দখল করে রেখেছে রাশিয়ান সাবমেরিন। গর্তের মাঝামাঝি জায়গায় রয়েছে ওটা, প্রায় কাত অবস্থায়, গর্তের মুখের দিকে বো। তবে অক্ষত। ১৯৬০ সালে ডুবে যাওয়া মার্কিন সাবমেরিন প্রেসার কিংবা স্করপিয়নের মতো টুকরো টুকরো হয়ে যায়নি। নিখোঁজ হবার পর দশ মাস পেরিয়ে গেছে, কিন্তু এখনও ওটার গায়ে শ্যাওলা বা মরচে ধরেনি। আলফা-ক্লাস যে তাতে কোনো সন্দেহ নেই, বিড়বিড় করে বললেন বায়রন নাইট। পারমাণবিক শক্তিচালিত, খোলটা টাইটানিয়ামে তৈরি, লবণাক্ত পানিতে মরচে ধরে না, ননম্যাগনেটিক।

    সাথে লেটেস্ট সাইলেন্ট-প্রপেলার টেকনোলজিও আছে, বলল জিওর্দিনো। ওটার মতো দ্রুতগামী সাবমেরিন আর নেই কোথাও।

    সোনার রেকর্ড আর ভিডিও ফটো আগেপিছে আসছে। ঘন ঘন ঘাড় ফেরাচ্ছে ওরা, যেন টেনিস ম্যাচ দেখছে সবাই। ধীরে ধীরে ক্যামেরার আওতা থেকে পিছিয়ে যাচ্ছে রাশিয়ান সাবমেরিন। দেড়শো ক্রু নিয়ে ডুবে যাবার পর আজই প্রথম ওটার ওপর কোনো মানুষের চোখ পড়ল, ভাবতে গিয়ে স্তব্ধ হয়ে গেল ওরা।

    রেডিও অ্যাকটিভিটির অস্বাভাবিক কোনো লক্ষণ দেখতে পাচ্ছ? জিজ্ঞেস করল পিট।

    সামান্য একটু বেড়েছে, বলল জিওর্দিনো। সম্ভবত সাবমেরিনের রিয়্যাক্টর থেকে।

    সাবমেরিনের কিছু গলে যায়নি?

    রিডিং তা বলছে না।

    গলুইয়ের কিছুটা ক্ষতি হয়েছে বলে মনে হয়, বায়রন নাইট বললেন, মনিটরগুলোর দিকে তাকিয়ে আছে তিনি। পোর্ট ডাইভিং প্লেন ছিঁড়ে বেরিয়ে গেছে। পোর্ট বটমে গভীর দাগ, প্রায় বিশ মিটার লম্বা।

    বেশ গভীর, বলল পিট। ব্যালাস্ট ট্যাংক ভেদ করে ইনার প্রেশার-হাল-এ ছুঁয়েছে। গর্তের ভেতর নামার সময় মুখের কোথাও বাড়ি খেয়েছিল। ক্যামেরার রেঞ্জ থেকে হারিয়ে গেল সাবমেরিনটা।

    তার পরও মনিটরগুলোর দিকে তাকিয়ে থাকল ওরা, কারও মুখে কথা নেই, তাকিয়ে আছে সাগরতলের দিকে, ধীরে ধীরে পিছিয়ে যাচ্ছে স্ক্রিন। প্রায় আধ মিনিট চুপ করে থাকল ওরা। তারপর ঢিল পড়ল পেশিতে, যে যার চেয়ারে হেলান লি সবাই। পিট আর জিওর্দিনোর কাজ বলতে গেলে শেষ হয়েছে। খড়ের গাদার ভেতর একটা সূচ খুঁজে পেয়েছে ওরা।

    পিটকে নির্লিপ্ত চেহারা নিয়ে সিলিংয়ের দিকে তাকাতে দেখে জিওর্দিনো বুঝতে পারল, কী ভাবছে ও। চ্যালেঞ্জ নেই, কাজেই ভালো লাগাও নেই। এবার অন্য কোথাও, অন্য কোনোখানে যাবার তাড়না অনুভব করছে দুঃসাহসী লোকটা।

    দারুণ দেখালে, ডার্ক, আর তুমিও, অ্যাল, উচ্ছ্বাসের সুরে বললেন নাইট। তোমরা নুমার লোকেরা ভাই সেরা। নিজেদের কাজ বোঝে।

    আরে, এখনই খুশি হচ্ছেন কেন? পিট বলে। কঠিন কাজ পড়ে আছে। রাশিয়ানদের নাকের ডগা থেকে ওটা উত্তোলন করবেন কীভাবে? গ্লোমার এক্সপ্লোরারের সাহায্য তো আর পাচ্ছেন না। পানির তলে সমস্ত কাজ সারতে হবে

    মনিটরের দিকে ফিরল জিওর্দিনো, এক সেকেন্ড পরই চেঁচিয়ে উঠল সে, ওটা আবার কী! মোটাসোটা একটা জগের মনে হচ্ছে না?

    আরে তাই তো! বিস্ময় প্রকাশ করলেন কমান্ডার নাইট। কী হতে পারে?

    দীর্ঘক্ষণ মনিটরের দিকে তাকিয়ে থাকল পিট, চিন্তিত। হঠাৎ করে কুঁচকে উঠল জোড়া। জিনিসটা খাড়া হয়ে রয়েছে। সরু গলার দুইপাশে বেরিয়ে রয়েছে দুটো হাতল, ক্রমশ চওড়া হয়ে গোল আকৃতি পেয়েছে। মুখ খুলল ও, ওটা একটা টেরাকোটা জার। রোমান আর গ্রিকরা ওগুলোয় তেল রাখত।

    আমার ধারণা তুমি ঠিকই বলেছ, মন্তব্য করলেন বায়রন নাইট। মদ বা তেল নেয়ার জন্য গ্রিক আর রোমানরা ব্যবহার করত ওগুলো। ভূমধ্যসাগরের বহু জায়গায় এ ধরনের অনেক জার পাওয়া গেছে।

    ওটা এখানে, গ্রিনল্যান্ড সাগরে কি করছে? জিজ্ঞেস করল জিওর্দিনো। ওই যে, আরেকটা উঁকি দিচ্ছে, ছবির বাঁ দিকে।

    তারপর একসাথে আরও তিনটে জার বেরিয়ে গেল ক্যামেরার তলা দিয়ে। এরপর আরো পাঁচটি।

    পিটের দিকে ফিরলেন বায়রন নাইট। তুমি তো বেশ কয়েকটা পুরনো জাহাজ উদ্ধার করেছ, এ ব্যাপারটা কীভাবে ব্যাখ্যা করবে?

    উত্তর দেয়ার আগে ঝাড়া দশ সেকেন্ড চুপ করে থাকল পিট। যখন কথা বলল, মনে হলো দূর থেকে ভেসে আসছে ওর গলা।

    আমার ধারণা, প্রাচীন কোনো বিধ্বস্ত জাহাজ থেকে এসেছে ওগুলো। কিন্তু ইতিহাস বলছে, জাহাজটার এই এলাকায় আসার কোনো কারণ নেই।

    .

    ০৬.

    অসম্ভব কাজটা থেকে মুক্তি পাবার জন্য নিজের আত্মা বিক্রি করতেও রাজি আছে রুবিন। ঘামে ভেজা হাত স্টিয়ারিং হুইল থেকে তুলে নিতে চায় সে, ক্লান্ত চোখ বন্ধ করে মেনে নিতে চায় মৃত্যুকে, কিন্তু আরোহীদের প্রতি দায়িত্ববোধ তাকে হাল ছাড়তে দিল না।

    নেভিগেশন ইনস্ট্রমেন্টের কোনোটাই কাজ করছে না। প্রতিটি কমিউনিকেশন ইকুইপমেন্ট অচল। আরোহীদের কেউ জীবনে কখনও প্লেন চালায়নি। ফুয়েল গজের কাটা শূন্যের ঘরের কাছে কাঁপছে। দুঃস্বপ্নও বোধ হয় এমন ভয়ংকর হয় না। সামান্য ভুলের ফলে পঞ্চাশজন লোকের সলিল সমাধি ঘটবে অজানা এক সমুদ্রের তলদেশে। ঠিক হলো, নিজের মনেই বলল রুবিন, মোটেও ঠিক হলো না ব্যাপারটা।

    অনেক প্রশ্ন মাথা কুটছে রুবিনের মনে। পাইলট কোথায় গেলেন? ফ্লাইট অফিসারদের মৃত্যুর কারণ কী? এই সর্বনাশের পেছনে কার হাত আছে?

    একটাই সান্ত্বনা রুবিনের। সে একা নয়। ককপিটে আরেক লোক তাকে সাহায্য করছে। এডুরাডো ইয়াবারা, মেক্সিকো প্রতিনিধিদলের একজন সদস্য, একসময় তার দেশের এয়ারফোর্সে মেকানিক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছে। মান্ধাতা আমলের একটা প্লেনে কাজ করার পর পেরিয়ে গেছে ত্রিশটা বছর, তবে কো-পাইলটের সিটে বসার পর ভুলে যাওয়া কারিগরি জ্ঞান একটু একটু করে মনে পড়ল তার। ইনস্ট্রমেন্টের রিডিং জানাচ্ছে সে কে, থ্রটলের দায়িত্ব নিয়েছে।

    স্যুট পরিহিত এডুরাডো ছোট্টখাটো মানুষ, গায়ের রং তামাটে, মুখটা প্রায় গোল। ককপিটে তাকে একেবারেই বেমানান লাগছে। আশ্চর্য, একটুও ঘাবড়ায়নি সে, কপালে ঘাম ফোটেনি। কোট তো খোলেইনি, এমনকি টাইয়ের নটটা পর্যন্ত ঢিল করেনি। একটা হাত তুলে উইন্ডশিন্ডের বাইরে, আকাশ দেখল সে। তারা দেখে যতটুকু বুঝতে পারছি, উত্তর মেরুর দিকে যাচ্ছি আমরা।

    সম্ভবত পূর্বদিকে রাশিয়ার ওপর দিয়ে, থমথমে গলায় বলল। কোর্স বা দিক, কিছুই জানা নেই।

    কিন্তু পেছনে ওটা আমরা একটা দ্বীপ ফেলে এসেছি।

    গ্রিনল্যান্ড হতে পারে?

    মাথা নাড়ল এডুরাডো ইয়াবারা। গত কয়েক ঘণ্টা আমাদের নিচে পানি রয়েছে। দ্বীপটা গ্রিনল্যান্ড হলে এতক্ষণে আমরা আইসক্যাপের ওপর পৌঁছে যেতাম। আমার ধারণা, আইসল্যান্ডকে পেরিয়ে এসেছি।

    মাই গড, তাহলে কতক্ষণ ধরে আমরা উত্তর দিকে যাচ্ছি?

    লন্ডন-নিউ ইয়র্ক কোর্স থেকে ঠিক কখন সরে আসেন পাইলট কে জানে।

    তাৎক্ষণিক মৃত্যু থেকে আরোহীদের প্রায় অলৌকিকভাবে বাঁচানো সম্ভব হয়েছে। কিন্তু বিপদ কাটেনি। সামনে উত্তর মেরু-হিমশীতল মৃত্যুফাঁদ। বেপরোয়া মানুষ দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে পারে, ও তাই নিল। পোর্টের দিকে নব্বই ডিগ্রি বাঁক নেব আমি।

    শান্তভাবে সায় দিল ইয়াবারা। আর কোনো উপায় দেখছি না।

    প্লেন যদি বরফের ওপর আছড়ে পড়ে, দুএকজন বাঁচলেও বাঁচতে পারে। কিন্তু পানিতে পড়ে ডুবে গেলে কারও কোনো আশা নেই। আর যদি মিরাকল ঘটে, অক্ষত অবস্থায় নামাতে পারি প্লেনটাকে, আরোহীরা যে ধরনের কাপড় পরে আছে, কয়েক মিনিটের বেশি বাঁচবে না কেউ।

    বোধ হয় অনেক দেরি করে ফেলেছি, মেক্সিকো প্রতিনিধিদলের সদস্য বলল। ইনস্ট্রুমেন্ট প্যানেলের দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে রয়েছে সে। লাল ফুয়েল ওয়ার্কিং লাইট ঘন ঘন জ্বলছে আর নিভছে। আকাশে ভেসে থাকার সময় শেষ হয়েছে আমাদের।

    লাল আলোটার দিকে হাঁ করে তাকিয়ে থাকল। তার জানা নেই, দেড় হাজার মিটার ওপরে দুশো নট গতিবেগে বোয়িং প্লেন যে পরিমাণ ফুয়েল হজম করে, সাড়ে দশ হাজার মিটার ওপরে পাঁচশো নট গতিবেগেও সেই একই পরিমাণ ফুয়েল হজম করে। সে ভাবল, যা আছে কপালে। পশ্চিম দিকে যেতে থাকি, তারপর যেখানে খুশি পড়ক গে। ঈশ্বর ভরসা।

    হাতের তালু ট্রাউজারের পায়ায় মুছে নিয়ে শক্ত করে কন্ট্রোল কলাম ধরল সে। গ্লেসিয়ারের চূড়া টপকাবার পর এই প্রথম আবার প্লেনের নিয়ন্ত্রণ নিজের হাতে নিল। বড় করে একটা শ্বাস টেনে চাপ দিল অটোপাইলট রিলিজ বোতামে। ধীর ভঙ্গিতে ঘোরাতে শুরু করল প্লেন।

    প্লেনের নাক আবার সরল একটা কোর্স ধরতেই সে বুঝতে পারল, কোথাও কোনো গোলযোগ ঘটে গেছে। চার নম্বর ইঞ্জিনের আরপিএম নামছে, কেঁপে গেল ইয়াবারার গলা। ফুয়েলের অভাবে অচল হয়ে যাচ্ছে ওটা।

    ইঞ্জিনটা তাহলে বন্ধ করে দেয়া উচিত নয়?

    নিয়মটা আমার জানা নেই, শুকনো গলায় বলল ইয়াবারা।

    হায় ঈশ্বর, কপাল চাপড়াতে ইচ্ছে করল রুবিনের, এক অন্ধ আরেক অন্ধকে পথ দেখাচ্ছে। অলটিমিটারে দেখা গেল প্লেন আর সাগরের মাঝখানে দূরত্ব কমে আসছে দ্রুত। তারপর, হঠাৎ করে, কন্ট্রোল কলাম হাতের মুঠোর ভেতর নড়বড়ে হয়ে গেল, কাঁপতে লাগল থরথর করে।

    প্লেন স্টল করছে! চেঁচিয়ে উঠল ইয়াবারা, এই প্রথম ভয় পেল সে। নাকটা নিচে নামান!

    কন্ট্রোল কলাম সামনের দিকে ঠেলে দিল রুবিন, জানে অবধারিত মৃত্যুকে ত্বরান্বিত করছে সে। ফ্ল্যাপ নামাও, ইয়াবারাকে নির্দেশ দিল।

    ফ্ল্যাপস কামিং ডাউন, বলল ইয়াবারা।

    বিড়বিড় করল, দিস ইজ ইট।

    খোলা ককপিটের দরজায় একজন স্টুয়ার্ডের দাঁড়িয়ে রয়েছে, চোখ দুটো বিস্ফারিত চেহারা কাগজের মতো সাদা। জানতে চাইল, আমরা কি ক্র্যাশ করছি? কোনো রকমে শোনা গেল।

    ব্যস্ত, তাকানোর সময় নেই, কর্কশকণ্ঠে বলল, হ্যাঁ, সিটে বসে বেল্ট বাঁধো যাও!

    ঘুরে দাঁড়িয়ে ছুটল স্টুয়ার্ডেস, পর্দা সরিয়ে মেইন কেবিনে ঢোকার সময় হোঁচট খেল একবার। তার আতঙ্কিত চেহারা দেখে ফ্লাইট অ্যাটেনড্যান্ট আর প্যাসেঞ্জাররা বুঝল, উদ্ধার পাবার কোনো আশা নেই। আশ্চর্যই বলতে হবে, কেউ ফুঁপিয়ে বা চেঁচিয়ে উঠল না। লোকজন প্রার্থনাও করছে নিচু গলা।

    ককপিট থেকে ঘাড় ফিরিয়ে মেইন কেবিনের দিকে তাকাল এডুরাডো ইয়াবারা। বৃদ্ধ এক লোক নিঃশব্দে কাঁদছে, তার গায়ে-মাথায় হাত বুলিয়ে সান্ত্বনা দিচ্ছেন হে’লা কামিল। মহাসচিবের চেহারা সম্পূর্ণ শান্ত। সত্যি আশ্চর্য এক মহিলা, ভাবল ইয়াবারা। দুঃখজনকই বটে যে তার সমস্ত সৌন্দর্য খানিক পরই নিঃশেষে মুছে যাবে। একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে ইনস্ট্রুমেন্ট প্যানেলের দিকে ফিরল সে।

    দুশো মিটারের ঘর ছাড়িয়ে নেমে এসেছে অলটিমিটারের কাঁটা। বিরাট একটা ঝুঁকি নিয়ে অবশিষ্ট তিনটে ইঞ্জিনের ফুয়েল খরচ বাড়িয়ে দিল ইয়াবারা। বেপরোয়া একজন মানুষের অর্থহীন কাণ্ড। ইঞ্জিনগুলো এখন শেষ কয়েক গ্যালন ফুয়েল তাড়াতাড়ি পুড়িয়ে অচল হয়ে যাবে। আসলে ইয়াবারার চিন্তা-ভাবনায় এই মুহূর্তে যুক্তির কোনো অবদান নেই। কিছু না করে চুপচাপ বসে থাকতে পারছে না সে। একটা কিছু করার তাগাদা অনুভব করছিল সে, তাতে যদি তার নিজের মৃত্যু হয় তো হোক।

    বিভীষিকাময় পাঁচটা মিনিট পেরিয়ে গেল যেন এক পলকে। প্লেনটাকে খামচে ধরার জন্য বিদ্যুৎ বেগে ওপর দিকে ছুটে এল কালো সাগর। আ-আলো! অবিশ্বাস আর উত্তেজনায় তোতলালো রুবিন। আমি আ-আলো দেখতে পাচ্ছি! নাক বরাবর সামনে!

    উইন্ডশিন্ডের ভেতর থেকে হঠাৎ করেই ইয়াবারা দেখতে পেল সেই আলো। জাহাজ! চেঁচালো সে। একটা জাহাজ।

    আর ঠিক সেই মুহূর্তে, আইসব্রেকার পোলার এক্সপ্লোরার-এর ওপর দিয়ে উড়ে গেল বোয়িং, দশ মিটারের জন্য রাডার মাস্টের সাথে ধাক্কা খেল না।

    .

    ০৭.

    রাডার আগেই সাবধান করে দিয়েছিল ক্রুদের, একটা প্লেন আসছে। ব্রিজে দাঁড়ানো লোকজন বোয়িংয়ের গর্জন শুনে নিজেদের অজান্তেই মাথা নামিয়ে আড়াল খুঁজল। জাহাজের মাস্তুল প্রায় ছুঁয়ে গ্রিনল্যান্ডের পশ্চিম উপকূলের দিকে ছুটে গেল প্লেনটা।

    কমান্ডার বায়রন নাইটের সাথে ঝড়ের বেগে ব্রিজে ঢুকল পিট আর জিওর্দিনো। অপসয়মান প্লেনটার দিকে তাকিয়ে আছে সবাই। হোয়াট দ্য হেল ওয়াজ দ্যাট ডিউটিরত অফিসারকে জিজ্ঞেস করলেন কমান্ডার।

    অজ্ঞাতপরিচয় একটা প্লেন, ক্যাপটেন।

    সামরিক?

    না, স্যার। মাথার ওপর দিয়ে যাবার সময় ডানার তলাটা দেখেছি আমি। কোনো মার্কিং নেই।

    সম্ভবত একটা স্পাই প্লেন!

    মনে হয় না। সব কটা জানালায় আলো ছিল।

    অ্যাল জিওর্দিনো মন্তব্য করল, কমার্শিয়াল এয়ার লাইনার?

    বিস্মিত কমান্ডার বললেন, লোকটা পাইলট, নাকি গাড়োয়ান? আমার জাহাজকে বিপদে ফেলতে যাচ্ছিল! ব্যাটা এদিকে কী করছে, শুনি? কমার্শিয়াল ফ্লাইটের পথ থেকে কয়েকশো মাইল দূরে রয়েছি আমরা!

    প্লেনটা নিচে নামছে, বলল পিট, পুবদিকে তাকিয়ে ক্রমশ ছোটো হয়ে আসা নেভিগেশন লাইটগুলো দেখছে ও। আমর ধারণা, নামতে বাধ্য হচ্ছে ওরা।

    এই অন্ধকারে ল্যান্ড করতে যাচ্ছে? জিওর্দিনো ক্রস চিহ্ন আঁকল বুকে। ঈশ্বর ওদের সহায় হোন। কিন্তু তাহলে ল্যান্ডিং লাইট জ্বালেনি কেন?

    ডিউটি অফিসার বলল, বিপদে পড়লে পাইলট তো ডিসট্রেস সিগন্যাল পাঠাবে। কমিউনিকেশন রুম কিছুই শোনেনি।

    তুমি সাড়া পাবার চেষ্টা করেছ? জিজ্ঞেস করলেন বায়রন নাইট।

    হ্যাঁ, রাডারে ধরা পড়ার সাথে সাথে। কোনো রিপ্লাই পাইনি।

    জানালার সামনে সরে গিয়ে বাইরে উঁকি দিলেন কমান্ডার। জানালার কাছে চার সেকেন্ড আঙুল নাচালেন। তারপর ঘুরে দাঁড়িয়ে মুখোমুখি হলেন ডিউটি অফিসারের। যেখানে আছি সেখানেই থাকছি আমরা।

    কেউ কোনো কথা বলল না দেখে পিটই মুখ খুলল, সিদ্ধান্ত নেয়ার অধিকার নিঃসন্দেহে আপনারই, তবে সমর্থন বা প্রশংসা করতে পারছি না।

    তুমি একটা নেভি শিপে রয়েছে, পিট, অহেতুক কর্কশ স্বরে বললেন বায়রন নাইট। আমরা কোস্ট গার্ড নই। তুমি জানো, এখানে এই মুহূর্তে আমরা একটা দায়িত্ব পালন করছি।

    জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে মৃতুকণ্ঠে, অনেকটা যেন জনান্তিকে বলল পিট, প্লেনটায় বাচ্চা আর মহিলাও থাকতে পারে।

    দুর্ঘটনা ঘটতে যাচ্ছে, তা কে বলবে? এখনও প্লেনটা আকাশে রয়েছে। উদ্ধার করে বলে কোনো সাহায্যও তারা চাইছে না। তুমি তো একজন পাইলট, তুমিই বলো, বিপদেই যদি পড়ে থাকে, পোলার এক্সপ্লোরারকে ঘিরে চক্কর দেয়নি কেন ওরা?

    মাফ করবেন, ক্যাপটেন, ডিউটি অফিসার বলল, বলতে ভুলে গেছি, ল্যান্ডিং ফ্ল্যাপস নামানো ছিল।

    তাতেও প্রমাণ হয় না যে একটা দুর্ঘটনা ঘটতে যাচ্ছে, জেদের সুরে বললেন বায়রন নাইট।

    রাখেন আপনার যুক্তি-তর্ক, ফুল স্টিম অ্যাহেড! ঠাণ্ডা স্বরে বলে পিট। এখন যুদ্ধ চলছে না। মানবতার খাতিরে আমরা না গিয়ে পিরবো না। সময়মত তৎপর হইনি বলে যদি একশো মানুষ মারা পড়ে, কিছুতেই নিজেকে ক্ষমা করতে পারবো না আমি। ফুয়েল খরচ যতো হয়, হোক।

    খালি চার্ট রুমের দিকে ইঙ্গিত করলেন ক্যাপটেন, পিট আর জিওর্দিনো ঢোকার পর দরজাটা বন্ধ করে দিলেন। আমাদের নিজেদের একটা মিশন আছে, শান্তস্বরে নিজের মতামত জানালেন তিনি। অনুসন্ধান বন্ধ রাখা এক কথা, আর স্পট ছেড়ে চলে যাওয়া সম্পূর্ণ অন্য কথা-রাশিয়ানরা সন্দেহ করবে তাদের সাবমেরিন আমরা খুঁজে পেয়েছি। আমরা চলে যাবার সাথে সাথে এলাকাটা চষে ফেলবে ওরা।

    আপনার কথায় যুক্তি আছে, বলল পিট। সেক্ষেত্রে আমাদের দু’জনকে আপনি ছেড়ে দেন।

    বলল, আমি শুনছি।

    আফটার ডেক থেকে নুমার একটা কপ্টার নিয়ে আমি আর জিওর্দিনো রওনা হয়ে যাই, সাথে একটা মেডিকেল দল আর দু’জন ক্রু থাকুক। ঘুরে দেখে আসি প্লেনটা কোথায় পড়েছে। যদি সম্ভব হয় উদ্ধারকাজ চালানো হবে। পোলার এক্সপ্লোরার তার অনুসন্ধান চালু রাখুক।

    আর রাশিয়ান সার্ভেইল্যান্স? তারা কী ভাববে?

    প্রথমে ওরা মনে করবে কোনো কোইনসিডেন্স। ইতিমধ্যে নির্ঘাত ব্যাপারটা নিয়ে দ্বিধায় ভুগছে ওরাও। কিন্তু ঈশ্বর না করুন, ওটা যদি সত্যি বাণিজ্যিক এয়ারলাইনার হয়, সেক্ষেত্রে উদ্ধার তৎপরতা চালাতে যেতে হবে আপনাকে। উদ্ধার শেষে আবার নিজের কাজে ফিরে যাবে পোলার এক্সপ্লোরার।

    তোমাদের হেলিকপ্টারের গতিপথ ওরা পর্যবেক্ষণ করবে, জানো তো।

    আমি আর অ্যাল খোলা চ্যানেলে আমাদের কথাবার্তা চালাব, এতে করে ওরা বুঝবে আমরা আসলেই উদ্ধারকাজে চলেছি।

    এক মুহূর্ত শূন্য চোখে তাকিয়ে কিছু একটা চিন্তা করলেন বায়রন নাইট। এরপর মুখ খুললেন, তাহলে দেরি করছো কেন? ভ্রু কুঁচকালেন কমান্ডার। জলদি কপ্টারে গিয়ে ওঠো তোমরা, বাকি সবাইকে পাঠিয়ে দিচ্ছি।

    .

    পোলার এক্সপ্লোরারকে ঘিরে চক্কর না দেওয়ার পেছনে রুবিনের বেশ কয়টি কারণ আছে। প্রথমত, দ্রুত উচ্চতা হারাচ্ছিল বিমান, আর দ্বিতীয়ত, তার নিজের পাইলট জ্ঞান অত্যন্ত স্বল্প। নিমিষে বরফের রাজ্যে প্লেন ক্রাশ করে সব শেষ করে দেওয়াটা কেবল সময়ের ব্যাপার।

    জাহাজের আলো যেন আশার আলো জ্বাললো মনে। এখন অন্তত একটা উদ্ধারকারী দল পাওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।

    অকস্মাৎ দেখা গেল কালো সাগর নয়, ওদের নিচে জমাট বাঁধা নিরেট বরফ। তারার আলোয় কাছ থেকে নীলচে চকচকে দেখল আদিগন্ত বরফের রাজ্য। সংঘর্ষ, স্পর্শ বা পতন, যাই বলা হোক, আর মাত্র কয়েক মিনিটের ব্যাপার। এই সময় হঠাৎ রুবিনের মনে পড়ল ইয়াবারাকে ল্যান্ডিং আলো জ্বালার কথা বলা দরকার।

    আলো জ্বলে ওঠার সাথে সাথে হতচকিত একটা মেরু ভালুককে দেখতে পেল ওরা। এক পলকে প্লেনের পেছনে অদৃশ্য হয়ে গেল সেটা। যিশুর মায়ের দিব্যি, বিড়বিড় করে উঠল ইয়াবারা, ডান দিকে পাহাড় দেখতে পাচ্ছি আমি। সাগর পেরিয়ে জমির ওপর চলে এসেছি আমরা।

    অবশেষে ভাগ্যের দাঁড়িপাল্লা রুবিন আর আরোহীদের দিকে ঝুঁকে পড়েছে। পাহাড় একটা নয়, এক সারিতে পাশাপাশি অনেকগুলো, গ্রিনল্যান্ডের উপকূল বরাবর দুদিকে একশো মাইল পর্যন্ত ওগুলোর বিস্তৃতি। তবে সেদিকে প্লেনের নাক ঘোরাতে ব্যর্থ হলো রুবিন, নিজের অজান্তে আরডেনক্যাপল ফিরড-এর মাঝখানে নামিয়ে আনছে নিজেদের। লোয়ার দ্য ল্যান্ডিং গিয়ার! নির্দেশ দিল সে।

    নিঃশব্দে নির্দেশ পালন করল ইয়াবারা। সাধারণ ইমার্জেন্সি ল্যান্ডিংয়ের সময় এই পদ্ধতি সর্বনাশ ডেকে আনতে পারে, তবে অজ্ঞতাবশত হলেও সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে রুবিন। বরফে ল্যান্ড করার সময় দক্ষ একজন পাইলটও এই সিদ্ধান্ত নিত। ল্যান্ডিং গিয়ার নামানোর ফলে দ্রুত নিচে নামছে প্লেন। রুবিন বা ইয়াবারা, কারও কিছু করার নেই আর। দু’জনের কেউই জানে না যে নিচের বরফ মাত্র এক মিটার পুরু, একটা বোয়িং সাতশো বি-র ভার সহ্য করার জন্য যথেষ্ট নয়।

    ইনস্ট্রুমেন্ট প্যানেলের প্রায় সব আলো লাল সঙ্কেত দিচ্ছে। ওদের মনে হলো কালো একটা পর্দা ছিঁড়ে সাদা পাতালে প্রবেশ করল প্লেন। কন্ট্রোল কলাম ধরে টানল। বোয়িংয়ের গতি কমে গেল, সেই সাথে শেষবারের মতো উঁচু হলো নাকটা-আবার আকাশের উঠতে চাওয়ার দুর্বল প্রচেষ্টা।

    আতঙ্কে আড়ষ্ট হয়ে বসে আছে ইয়াবারা। তার মাথা ঠিকমত কাজ করছে না। থ্রটল টেনে কাছে আনার কথা মনে থাকল না, মনে থাকল না ফুয়েল সাপ্লাই বন্ধ করা দরকার, অফ করা দরকার ইলেকট্রিক সুইচগুলো।

    তারপর সংঘর্ষ ঘটল।

    চোখ বুজে হাত দিয়ে নিজেদের মুখ ঢাকল ওরা। চাকা বরফ স্পর্শ করল, পিছলে গেল, গভীর জোড়া দাগ তৈরি হলো বরফের গায়ে। পোর্ট সাইডের ইনবোর্ড ইঞ্জিন দুমড়েমুচড়ে মাউন্টি থেকে ছিঁড়ে বেরিয়ে গেল, ছিটকে পড়ে ডিগবাজি খেল বরফের ওপর। স্টারবোর্ডের দুটো ইঞ্জিনই গেঁথে গেল বরফের ভেতর, মোচড় খেয়ে বিচ্ছিন্ন হলো ডানাটা। পরমুহূর্তে সমস্ত পাওয়ার সাপ্লাই বন্ধ হয়ে গেল, নেমে এল ঘোর অন্ধকার।

    বরফ ঢাকা খাড়ির ওপর দিয়ে ধূমকেতুর মতো ছুটে চলেছে প্লেনটা, পেছনে ছড়িয়ে যাচ্ছে উত্তপ্ত ধাতব টুকরো। প্যাক আইস পরস্পরের সাথে সংঘর্ষের সময় একটা প্রেশার রিজ তৈরি হয়েছিল, সেটাকে ধুলোর মতো উড়িয়ে দিল বোয়িং। নাকের গিয়ার চ্যাপ্টা হয়ে ঢুকে গেল সামনের পেটের ভেতর, ছিঁড়ে ফেলল হেল হোল-এর আবরণ। নিচু হলো বো, বরফ খুঁড়তে খুঁড়তে এগোল, প্রতি মুহূর্তে ভেতর দিকে তুবড়ে মোটা অ্যালুমিনিয়াম শিট ককপিটে ঢুকে যাচ্ছে। অবশেষে নিজস্ব গতিবেগ হারিয়ে বিকলাঙ্গ বোয়িং স্থির হলো। বরফ ঢাকা তীর মাত্র ত্রিশ মিটার দূরে, ওখানে বড় আকারের পাথরের স্তূপ।

    কয়েক মুহূর্ত মৃত্যুপুরীর নিস্তব্ধতা অটুট থাকল। তারপর বরফ ফাটার জোরাল শব্দের সাথে শোনা গেল ধাতব গোঙানি। ধীরে ধীরে বরফের আবরণ ভেঙে খড়ির পানিতে নেমে যায় বোয়িংটা।

    .

    ০৮.

    খাড়ির দিকে প্লেনটার উড়ে যাওয়ার শব্দ আর্কিওলজিস্টরাও শুনতে পেল। আশ্রয় থেকে ছুটে বেরিয়ে এসে প্লেনটার ল্যান্ডিং লাইট দেখতে পেল তারা। আলোকিত কেবিনের জানালাগুলো ধরা পড়ল তাদের চোখে। তার পরই কানে এল পতনের শব্দ, সেই সাথে পায়ের তলায় অবিচ্ছিন্ন বরফের মেঝে কেঁপে উঠল। খানিক পর আবার সব নিস্তব্ধ হয়ে গেল। চারদিকে গাঢ় হয়ে নামল অন্ধকার। বাতাসের গোঙানি ছাড়া কিছু শোনা গেল না।

    গুড লর্ড! অবশেষে নিস্তব্ধতা ভাঙলেন, ড. গ্রোনকুইস্ট, খাড়িতে বিধ্বস্ত হয়েছে ওটা।

    ভয়াবহ! লিলির গলায় অবিশ্বাস আর বিস্ময়। একজনও বাঁচবে না!

    বোধহয় পানিতে ডুবে গেছে, সেজন্যই কোনো আগুন দেখা গেল না, মন্তব্য করল গ্রাহাম।

    হকিন্স জিজ্ঞেস করল, কী ধরনের প্লেন, কেউ দেখেছ?

    মাথা নাড়ল গ্রাহাম। চোখের পলকে বেরিয়ে গেল। তবে বেশ বড়সড়। সম্ভবত একাধিক ইঞ্জিন। বরফ জরিপের জন্য এসে থাকতে পারে।

    দূরত্ব আন্দাজ করে দেখি, আহ্বান জানালেন ড. গ্রোনকুইস্ট।

    স্নান চেহারা নিয়ে আড়ষ্ট ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে আছে লিলি। কথা বলে সময় নষ্ট করছি। আমরা। ওদের সাহায্যে দরকার।

    ঠিক, সায় দিলেন ড. গ্রোনকুইস্ট। এসো, আগে ঠাণ্ডা থেকে বাঁচি।

    আশ্রয়ে ফিরে এসে প্রস্তুতি নিতে শুরু করল ওরা, সেই সাথে প্ল্যানটাও তৈরি করল। লিলি বলল, কম্বল লাগবে, অতিরিক্ত সবগুলো গরম কাপড় সাথে নাও। আমি মেডিকেল সাপ্লাই নিচ্ছি।

    মাইক গ্রাহাম, ড. গ্রোনকুইস্ট নির্দেশ দিলেন, রেডিওতে ডেনবর্গ স্টেশনকে জানাও। থিউল-এর এয়ারফোর্স রেসকিউ ইউনিটকে খবর পাঠাবে ওরা।

    বরফ খুঁড়ে আরোহীদের বের করতে হতে পারে, সাথে কিছু টুলস থাকা দরকার, প্রস্তাব দিল হকিন্স।

    নিজের পারকা আর গ্লাভস চেক করে নিয়ে মাথা ঝাঁকালেন ড. গ্রোনকুইস্ট। আর কি দরকার হতে পারে ভেবে দেখো। একাটা সোমোবাইলের সাথে স্লেড বেঁধে নিচ্ছি আমি।

    ঘুম ভাঙার পর পাঁচ মিনিটও পেরোয়নি, বিবেকের আহ্বান সাড়া দিয়ে গভীর অন্ধকার রাতে হিম বরফের রাজ্যে বেরিয়ে পড়ল দলটা। একটা শেডের ভেতর রয়েছে স্নোমোবাইলগুলো, শেডের ভেতর তাপমাত্রা বাইরের চেয়ে বিশ ডিগ্রি বেশি রাখা হয়েছে হিটার জ্বেলে, তার পরও প্রথম স্নোমোবাইলটা পাঁচবারের চেষ্টায় স্টার্ট নিল, দ্বিতীয়টা নিল বত্রিশ বারের মাথায়। ইতোমধ্যে জিনিসপত্র নিয়ে আশ্রয় থেকে বেরিয়ে এসেছে অন্যান্যরা। ড. গ্রোনকুইস ছাড়া সবার পরনে পা পর্যন্ত লম্বা জাম্পস্যুট। সবাইকে একটা করে হেভি-ডিউটি ফ্ল্যাশ লাইট দিলেন তিনি। রওনা হয়ে গেল দলটা। লিলির কোমর ধরে স্নোমোবাইলে তুলে নিলেন ভদ্রলোক। দ্বিতীয়টায় উঠল মাইক গ্রাহাম আর জোসেফ হসকিন্স।

    খাড়ির ওপর বরফের আবরণ এবড়োখেবড়ো, ঝাঁকি খেতে খেতে এগোল স্নোমোবাইল, প্রতি মুহূর্তে বিপদের ভয়ে আড়ষ্ট হয়ে থাকল আরোহীরা। বরফের পাতলা আবরণ ভেঙে যেতে পারে। প্রেশার রিজগুলো আগে থেকে চেনা কঠিন, ঢাল বেয়ে ওঠার পর টের পাওয়া যায়। ড. গ্রোনকুইস্টের বিশালবপু এক হাতে বেড় দিয়ে আঁকড়ে ধরেছে লিলি শার্প, চোখ বন্ধ, মুখ গুঁজে দিয়েছে দলনেতার কাঁধে। মাঝেমধ্যে মুখ তুলে গতি কমাবার জন্য চিৎকার করছে সে, কিন্তু তার কথায় কান না দিয়ে ফুলম্পিডে স্লোমোবাইল চালাচ্ছেন ড. গ্রোনকুইস্ট। ঘাড় ফিরিয়ে একবার পেছন দিকে তাকাল লিলি। পিছু পিছু আসছে ওরা।

    দ্বিতীয় স্নোমোবাইল স্লেড টানছে না, কাজেই প্রথমটাকে পাশ কাটিয়ে গেল অনায়াসে, দেখতে দেখতে বরফের রাজ্যে হারিয়ে গেল মাইক আর হসকিন্স।

    বেশ খানিক পর স্নোমোবাইলের আলোর শেষ প্রান্তে বড়সড় একটা ধাতব আকৃতি মাথাচাড়া দিচ্ছে দেখে পেশিতে টান পড়ল ড. গ্রোনকুইস্টের। হঠাৎ করে হ্যান্ডগ্রিপটা বাঁ দিকে ঘুরিয়ে আটকে দিলেন তিনি। সামনের স্কি-গুলোর কিনারা বরফের ভেতর গেঁথে গেল, প্লেনের একটা বিচ্ছিন্ন ডানা এক মিটার দূরে থাকতে আরেক দিকে ঘুরে গেল স্নোমোবাইল। বাহনটাকে সিধে করার প্রাণান্ত চেষ্টা করলেন তিনি। কিন্তু একবার কাত হতে শুরু করায় স্লেডটাকে আর সিধে করা গেল না, জিনিসপত্র নিয়ে উল্টে পড়ল সেটা, হ্যাঁচকা টান খেয়ে আরও কাত হয়ে গেল স্লেমোবাইলেও। তারপর কী ঘটল দু’জনের কেউই বলতে পারবে না। কামানের গোলার মতো ছিটকে পড়লেন ড. গ্রোনকুইস্ট, তার আর্তনাদ শুনতে পেল লিলি। অন্ধকার শূন্যে সেও ছিটকে পড়েছে, কিন্তু কোথায় কোনো ধারণা নেই। স্লেডটা ধেয়ে এল তার দিকে, কয়েক ইঞ্চির জন্য ধাক্কা দিল না। কয়েক মিটার দূরে দাঁড়িয়ে পড়ল সেটা। স্নোমোবাইল ওল্টাতে গিয়েও ওল্টায়নি, ছুটে এসে লিলির পাশে থামল সেটা, এখনও কাত হয়ে রয়েছে। তারপর সেটা পড়ল। সরাসরি লিলির একটা পায়ের ওপর। ব্যথায় গুঙিয়ে উঠল সে।

    পেছনের দুর্ঘটনা সম্পর্কে সাথে সাথে কিছু টের পায়নি মাইক আর হসকিন্স। পেছনে ওদেরকে কতদূর ফেলে এসেছে জানার কৌতূহল নিয়ে ঘাড় ফিরিয়ে পেছন দিকে তাকাল মাইক। বহু পেছনে ওদের আলো নিচের দিকে মুখ করে স্থির হয়ে রয়েছে দেখে তাজ্জব বনে গেল সে। হসকিন্সের কাঁধে হাত দিয়ে চিৎকার করে বলল ওরা বোধহয় বিপদে পড়েছে!

    প্ল্যানটা ছিল, প্লেনের চাকার দাগ ধরে অকুস্থলে পৌঁছবে ওরা। সেই দাগ খোঁজার কাজে ব্যস্ত ছিল হসকিন্স। তাই নাকি! বলেই বিরাট একটা বৃত্ত রচনা করে স্লোমোবাইল ঘোরাতে শুরু করল সে। একদৃষ্টে অনেকক্ষণ তাকিয়ে থাকার ফলে চোখ ব্যথা করছে, তার, ফলে ভালো করে দেখতে পায়নি সামনেটা। প্লেনের চাকার রেখে যাওয়া গভীর গর্তটা যখন দেখতে পেল তখন অনেক দেরি হয়ে গেছে। দুমিটার ফাঁকাটার কিনারা থেকে শূন্যে উঠে গেল ওদের বাহন। দু’জন আরোহীর ভার থাকায় বাহনের নাকটা নুয়ে পড়ল নিচের দিকে, সংঘর্ষ ঘটল গর্তের অপর প্রান্তের দেয়ালের সাথে, শব্দ শুনে মনে হলো পিস্তলের গুলি ছোঁড়া হয়েছে। ভাগ্য ভালো বলতে হবে, গর্তের কিনারা টপকে বরফের ওপর আছাড় খেয়ে স্থির হয়ে গেল দু’জনেই, যেন অযত্নে ফেলে রাখা কাপড়ের তৈরি একজোড়া পুতুল।

    ত্রিশ সেকেন্ড পর অশীতিপর বৃদ্ধের মতো নড়ে উঠল হকিন্স। হাঁটু আর কনুইয়ের ওপর ভর দিয়ে উঁচু হলো সে। তারপর বসল, কিন্তু আচ্ছন্ন ভাবটা কাটল না। এখনও বুঝতে পারছে না এখানে কীভাবে এল সে। হিস হিস শব্দ শুনে ঘাড় ফেরাল।

    পিঠ বাঁকা করে বসে রয়েছে মাইক, দুহাতে পেট চেপে ধরে গোঙাচ্ছে।

    প্রথম দস্তানাটা খুলে নাকে আঙুল বুলালো হসকিন্স। না, ভাঙেনি। তবে ফুটো দিয়ে রক্ত বেরোচ্ছে, ফলে মুখ দিয়ে বাতাস টানতে হচ্ছে ওকে। অন্য কোনো হাড়ও ভাঙেনি, কারণ মোটা গরম কাপড়ে মোড়া ছিল শরীরটা। হামাগুড়ি দিয়ে উইনফিল্ডের কাছে চলে এল সে। কী ঘটেছে? প্রশ্ন করেই বুঝল বোকামি হয়ে গেল।

    প্লেনের চাকা বরফের গায়ে একটা গর্ত রেখে গেছে…

    লিলি আর ড. গ্লোনকুইস্ট…?

    দুশো মিটার পেছনে রয়েছে ওরা, বলল মাইক। গর্তটাকে ঘুরে যেতে হবে আমাদের, ওদের বোধহয় সাহায্য দরকার।

    ব্যথায় গোঙাতে গোঙাতে কোনোরকমে দাঁড়াল হসকিন্স। এক পা এক পা করে গর্তের কিনারায় এসে থামল সে। অদ্ভুত কাণ্ড, সোমোবাইলের হেডল্যাম্প এখনও জ্বলছে। ল্যাম্পের ম্লান আলোয় গর্তের ভেতর তলাটা দেখতে পাওয়া গেল। খাঁড়ির পানিতে অসংখ্য বুদ্বুদ, লাফ দিয়ে উঠে আসছে বরফের মেঝে ছাড়িয়ে ছফুট ওপরে। তার পাশে এসে দাঁড়াল মাইক। একযোগে পরস্পরের দিকে তাকাল ওরা।

    মানবতার সেবক! ঝঝের সাথে বলল হসকিন্স। মানুষের প্রাণ বাঁচাতে ব্যাকুল। যার যা কাজ তাই তার করা উচিত, বুঝলে! আমরা আর্কিওলজি বুঝি, তাই নিয়ে থাকা উচিত ছিল!

    চুপ! হঠাৎ তাগাদা দিল মাইক। শুনতে পাচ্ছ? একটা হেলিকপ্টার! ফিয়র্ডের দিক থেকে এদিকেই আসছে।

    একটা ঘোর আর বাস্তবতার মাঝখানে ভাসছে লিলি।

    সে বুঝতে পারছে না, সহজ-সরলভাবে চিন্তা করা ক্রমশ কঠিন হয়ে উঠছে কেন। মাথা তুলে ড. গ্রোনকুইস্টের খোঁজ করল সে। কয়েক মিটার দূরে অনড় পড়ে রয়েছেন তিনি। চিৎকার করে ডাকল লিলি, কিন্তু তিনি নড়লেন না, যেন মারা গেছেন। হাল ছেড়ে দিয়ে ফুঁপিয়ে উঠল সে, একটা পা সমস্ত অনুভূতি হারিয়ে ফেলার সাথে সাথে তার ইচ্ছে হলো ঘুমিয়ে পড়ে।

    লিলি জানে, মাইক আর হসকিন্স যেকোনো মুহূর্তে ফিরে আসবে। কিন্তু সময় ধীরগতিতে বয়ে চলল। কারও দেখা নেই। ঠাণ্ডায় কাঁপছে সে। ভীষণ ভয় লাগছে। তারপর তন্দ্রা মতে এল। এই সময় শব্দটা শুনতে পেল সে। হঠাৎ করে চোখ ধাঁধানো উজ্জ্বল আলোয় আলোকিত হয়ে উঠল কালো আকাশ। ঝুরঝুরে তুষার উড়ল তার চারপাশে। যান্ত্রিক শব্দটা থেমে গেল একসময়। আলো ঘেরা অস্পষ্ট একটা মূর্তি এগিয়ে এল তার দিকে।

    মূর্তিটা ধীরে ধীরে ভারী পারকায় মোড়া একটা মানুষের আকৃতি নিল। মানুষটা প্রথমে তাকে ঘিরে ঘুরল একবার, যেন পরিস্থিতিটা বোঝার চেষ্টা করল। তারপর একটানে তার পায়ের ওপর থেকে তুলে ফেলল স্নোমোবাইলটা। আবার তার চারদিকে ঘুরল মানুষটা, এবার তার মুখে আলো পড়ায় চেহারাটা পরিষ্কার দেখতে পেল লিলি। এই বিপদেও বুকের ভেতরটা শিরশির করে উঠল তার, এমন ঝকঝকে সবুজ চোখ জীবনে দেখেনি সে। কাঠিন্য, কোমলতা, আন্তরিক উদ্বেগ সব যেন খোলা বইয়ের মতো পড়া গেল মুখটায়। সে একটা মেয়ে দেখে আগন্তুকের চোখ একটু সরু হলো। লিলি ভাবল, এই লোক এল কোত্থেকে?

    কী বলবে ভেবে না পেয়ে শুধু বলল সে, তোমাকে দেখে কী যে খুশি লাগছে আমার!

    আমার নাম ডার্ক পিট, হাসিখুশি কষ্ঠ থেকে জবাব এল। খুব যদি ব্যস্ততা না থাকে, কাল রাতে আমার সাথে ডিনার খেতে আপত্তি আছে?

    .

    ০৯.

    পিটের মুখের দিকে তাকিয়ে থাকল লিলি, সন্দেহ হলো শুনতে ভুল করেছে। কোথাও যাবার অবস্থা আমার বোধ হয় নেই।

    পারকার হুড মাথার পেছনে সরিয়ে দিয়ে লিলির পাশে হাঁটু গেড়ে বসল পিট, তার গোড়ালিতে হাত দিয়ে টিপে টিপে দেখল। হাড় ভাঙেনি, কোথাও ফুলেও নেই, সহাস্যে বলল ও। ব্যথা?

    ঠাণ্ডায় অবশ হয়ে গেছি, ব্যথা লাগলেও টের পাব না।

    স্লেড থেকে ছিটকে পড়া একটা কম্বল তুলে নিয়ে লিলিকে ঢাকল পিট। তুমি প্লেনের প্যাসেঞ্জার নও। এখানে এলে কীভাবে?

    নিজেদের পরিচয় দিল লিলি, প্লেনের শব্দ শোনার পর থেকে যা যা ঘটেছে সব বলল। সবশেষে একটা হাত তুলে উল্টে পড়া স্লেডটা দেখল পিটকে

    হেলিকপ্টারের আলোয় দুর্ঘটনার ছবিটা চট করে দেখে নিল পিট। এই প্রথম নজরে পড়ল, দশ মিটার দূরে আরেকজন পড়ে রয়েছে। প্লেনের বিচ্ছিন্ন ডানাটাও দেখতে পেল। এক মিনিট।

    হেঁটে এসে ড. গ্রোনকুইস্টের পাশে হাঁটু গেড়ে বসল পিট। বিশালদেহী আর্কিওলজিস্ট নিয়মিত নিঃশ্বাস ফেলছেন। ব্যস্ত হাতে তাকে পরীক্ষা করল ও। তীক্ষ্ণ চোখে ওকে লক্ষ করছে লিলি, জিজ্ঞেস করল, উনি কি মারা গেছেন?

    আরে না! মাথায় চোট পেয়েছেন, তা-ও সামান্য।

    উইনফিল্ডের পিছু পিছু খোঁড়াতে খোঁড়াতে এল হকিন্স, ঠিক যেন একজোড়া তুষারদানব। নিঃশ্বাস বরফ হয়ে যাওয়ায় দু’জনের ফেস মাস্কই ঝাপসা হয়ে গেছে। নিজের মাস্কটা তুলল হসকিন্স, রক্তাক্ত মুখ নিয়ে তাকাল পিটের দিকে, আড়ষ্টভঙ্গিতে হাসল সে। স্বাগতম, আগন্তুক। এক্কেবারে যথাসময়ে পৌঁছেছেন।

    আপনারা…?

    ওদের কথাই বলছিলাম, লিলি জানাল। আমরা একই দলে। ওরা সামনে ছিল, তাই আমরা যে দুর্ঘটনার শিকার হয়েছি ওরা জানে না…

    তোমরাও জানো না যে আমরাও একই দুর্ভাগ্যের শিকার, হেসে উঠে বলল মাইক।

    আপনারা প্লেনটা দেখেছেন? হসকিন্সকে জিজ্ঞেস করল পিট।

    নামতে দেখেছি, তবে কাছে যাবার সুযোগ হয়নি। ড. গ্রোনকুইস্টের দিকে এগোল হকিন্স, তার পিছু নিল মাইক। কী রকম চোট পেয়েছেন উনি? সিরিয়াস? লিলির দিকে তাকাল সে। তুমি?

    জবাব দিল পিট, এক্স-রে করার পর নিশ্চিতভাবে জানা যাবে।

    ওদের সাহায্য দরকার। আশা করি…

    হেলিকপ্টারে মেডিকেল দল আছে, কিন্তু…

    পিটকে থামিয়ে দিয়ে প্রায় ধমকের সুরে চিৎকার করে হসকিন্স বলল, তাহলে ছাই আপনি অপেক্ষা করছেন কী মনে করে? ডাকুন ওদের! পিটকে পাশ কাটিয়ে নিজেই হেলিকপ্টারের দিকে এগোল সে, কিন্তু লোহার মতো শক্ত একটা মুঠো তার কব্জি চেপে ধরল।

    আপনার বন্ধুদের অপেক্ষা করতে হবে, দৃঢ়কণ্ঠে বলল পিট। প্লেনটা খাড়িতে ডুবে গেছে বলে সন্দেহ করছি আমরা। কেউ যদি বেঁচে থাকে, সবার আগে তার চিকিৎসা দরকার। আপনাদের ক্যাম্প এখান থেকে কত দূরে?

    দক্ষিণ দিকে এক কিলোমিটার, অভিযোগের সুরে জবাব দিল হকিন্স।

    স্নোমোবাইল এখনও চালানো যাবে। সঙ্গীকে সাথে নিয়ে স্লেডটা উদ্ধার করুন। আহতদের নিয়ে ফিরে যান ক্যাম্পে। সাবধানে যাবেন, কারণ ওদের শরীরের ভেতর কোথাও চোট লেগে থাকতে পারে। নিশ্চয়ই রেডিও আছে?

    গম্ভীর হসকিন্স মাথা ঝাঁকাল।

    থারটি-টু ফ্রিকোয়েন্সিতে কান রেখে তৈরি থাকবেন, বলল পিট। প্লেনটা যদি প্যাসেঞ্জার ভরা কমার্শিয়াল জেটলাইনার হয়, নরক সাফ করার দায়িত্ব চাপবে আমাদের ঘাড়ে।

    আমরা তৈরি থাকব, পিটকে আশ্বাস দিল মাইক।

    হেঁটে লিলির কাছে চলে এল পিট। মেয়েটার একটা হাত ধরে মৃদু চাপ দিল ও, বলল, দেখো, ডিনারের কথা আবার ভুলে যেয়ো না! পারকা হুড মাথায় পড়ে ঝট করে ঘুরল ও, দীর্ঘ পদক্ষেপে ফিরে চলল হেলিকপ্টারের দিকে।

    .

    জ্ঞান ফেরার পর ভাঙা পায়ের ব্যথায় অস্থির হয়ে উঠল রুবিন। শীতল বরফের প্রচণ্ড একটা চাপ অনুভব করল সে, তাকে পেছন দিকে ঠেলছে। চোখ মেলে চারদিকে অন্ধকার দেখল সে, তবে অন্ধকারটা ধীরে ধীরে সয়ে এল। ভাঙা উইন্ডশিল্ড দিয়ে তুষার আর বরফের ধস ঢুকছে ভেতরে, ধীরে ধীরে তার নিচে চাপ পড়ে যাচ্ছে সে। একটা পা ভেঙেছে, তুষারের নিচে কিসের সাথে যেন আটকে আছে সেটা। তার মনে 1 হলো, পা-টা পানিতে ডুবে আছে। পানি নয়, ভাবল সে, তার নিজের রক্ত।

    আসলে পানি। বরফের আবরণ ভেদ করে খড়ির পানিতে তিন মিটার ডুবে গেছে প্লেনটা, কেবিনের মেঝেতে থই থই করছে পানি, অনেকগুলো সিটও ডুবে গেছে।

    ইয়াবারার কথা মনে পড়ল চিফ স্টুয়ার্ডের। অন্ধকারের ভেতর ডান দিকে ঘাড় ফেরাল সে। প্লেনের বো, স্টারবোর্ডা সাইডে, ভেঙেচুরে ভেতর দিকে দেবে গেছে প্রায় ইঞ্জিনিয়ারের প্যানেল পর্যন্ত। বিধ্বস্ত টেলিস্কোপ আর তুষারের ভেতর থেকে ইয়াবারার শুধু একটা মোচড়ানো হাত বেরিয়ে থাকতে দেখল সে।

    অসুস্থ বোধ করায় চোখ ফিরিয়ে নিল। বিপদের সময় তার পাশে ছিল লোকটা, তার মৃত্যু বড় একটা আঘাত হয়ে বাজল বুকে। উপলব্ধি করল, কেউ যদি উদ্ধার না করে, ঠাণ্ডায় জমে সেও মারা যাবে খানিক পর।

    ফুঁপিয়ে কাঁদতে শুরু করল রুবিন।

    তোবড়ানো প্লেনটার মাথার ওপর চলে এল ওদের হেলিকপ্টার। একটা ডানা নেই, অপরটা মোচড় খেয়ে ফিউজিলাজের সাথে সেঁটে আছে। লেজের দিকটাও এমনভাবে তুবড়েছে যে চেনা যায় না। অবশিষ্ট অংশটাকে দেখে মনে হলো সাদা চাদরের ওপর স্থির হয়ে আছে পেটমোটা একটা ছারপোকা। ফিউজিলাজ বরফ ভেঙে পানিতে ডুবে রয়েছে, বলল পিট। আমি বলব, এক-তৃতীয়াংশ।

    আগুন ধরেনি, পিটের পাশ থেকে বলল অ্যাল জিওর্দিনো। প্লেনের ওপর পড়া, হেলিকপ্টারের উজ্জ্বল আলোর প্রতিফলনে চোখ ধাধিয়ে গেল তার। নেহাতই ভাগ্য। গা কেমন চকচক করছে দেখছ? যত্নের ছাপ। আমি বলব, ওটা একটা বোয়িং সাতশো বি। প্রাণের কোনো লক্ষণ, পিট?

    দেখছি না, বলল পিট। ভালো ঠেকছে না, অ্যাল।

    আইডেনটিফিকেশন মার্কিং?

    খোলের গয়ে তিনটে ফিতের মতো মোটা রেখা; হালকা নীল আর নীলচে বেগুনির মাঝখানে উজ্জ্বল সোনালি।

    পরিচিত এয়ার লাইনের সাথে রংগুলো মেলে না।

    আরও নিচে নেমে চক্কর দাও, বলল পিট। তুমি ল্যান্ডিঙের জন্য জায়গা খোঁজো, আমি লেখাগুলো পড়ার চেষ্টা করি।

    দুবার চক্কর দিতেই পিট বলল, নেবুলা। নেবুলা এয়ার।

    জীবনে কখনও শুনিনি, বলল জিওর্দিনো, বরফের ওপর স্থির হয়ে আছে দৃষ্টি।

    শুধু ভিআইপিদের বহন করে। চার্টার করতে হয়।

    কমার্শিয়াল ফ্লাইটের পথ ছেড়ে এখানে এটা এল কেন?

    বলার জন্য কেউ বেঁচে থাকলে একটু পরই জানতে পারব। পেছনে বসা আটজন লোকের দিকে ঘাড় ফিরিয়ে একবার তাকাল ও হেলিকপ্টারের গরম পেটে আরাম করে বসে আছে সবাই। আর্কটিক আবহাওয়ার উপযোগী নেভি-ব্লু পোশাক সবার পরনে। একজন সার্জেন, তিনজন মেডিকেল সহকারী। বাকি চারজন ড্যামেজ-কন্ট্রোল এক্সপার্ট। ওদের পায়ের কাছে পড়ে রয়েছে মেডিকেল সাপ্লাইয়ের বাক্স, কম্বল, স্ট্রেচার আর আগুন নেভানোর উপকরণ ও যন্ত্রপাতি।

    প্রধান দরজার উল্টোদিকে একটা হিটিং ইউনিট রয়েছে, মোটা কেবল-এর সাথে সংযুক্ত, কেবলের অপর প্রান্ত মাথার ওপর ঝুলে থাকা উইঞ্চের সাথে জড়ানো। ওটার পাশেই রয়েছে ঘেরা কেবিনসহ একটা স্নোমোবাইল।

    পিটের ঠিক পেছনে বসেছেন ডাক্তার জ্যাক গেইল। সদালাপী সদাহাস্যময় ভদ্রলোক মৃদু হেসে জানতে চাইলেন, নিজেদের বেতন হালাল করার সময় এল বলে!

    ডাক্তারের হাসিখুশি মনোভাব কখনোই পাল্টায় না।

    নামার পর বুঝতে পারব, বলল পিট। প্লেনের চারধারে কিছুই নড়ছে না। তবে আগুনে ধরেনি। ককপিট ডুবে আছে। ফিউজিলাজ তোবড়ালেও কোথাও ফুটো হয়নি বলে মনে হচ্ছে। মেইন কেবিনে প্রায় এক মিটার উঁচু পানি উঠেছে।

    আহত লোক যদি ভিজে গিয়ে থাকে, ঈশ্বর তার সহায় হোন। ডাক্তার গেইল গম্ভীর হলেন। ফ্রিজিং ওয়াটারে আট মিনিটের বেশি বাঁচার কথা নয়।

    ওরা যদি ইমার্জেন্সি একজিট খুলতে না পারে, প্লেনের গা কেটে ভেতরে ঢুকতে হবে।

    লেফটেন্যান্ট কর্ক সিমোন, ড্যামেজ-কন্ট্রোল টিমের নেতা, বলল, কাটিং ইকুইপমেন্ট থেকে আগুনের ফুলকি বেরিয়ে ছড়িয়ে পড়া তেলে আগুন ধরে যেতে পারে। ভালো হয় আমরা যদি মেইন কেবিনের দরজা দিয়ে ঢুকি। স্ট্রেচার ঢোকানোর জন্য চওড়া জায়গা লাগবে ডাক্তার গেইলের।

    আপনার কথায় যুক্তি আছে, বলল পিট। তবে মেইন কেবিনের দরজা খুলতে অনেক সময় লাগবে। আমাদের প্রথম কাজ যেকোনো একটা ফাঁক দিয়ে হিটারের ভেন্ট পাইপ ভেতরে ঢোকানো।

    হেলিকপ্টার ল্যান্ড করল সমতল বরফের ওপর, প্লেনের কাছ থেকে সামান্য দূরে। নামার জন্য তৈরি হলো সবাই। রোটর ব্লেডের বাতাসে চারদিকে তুলোর মতো উড়ছে তুষার। লোডিং ডোর এক ঝটকায় খুলে লাফ দিয়ে নিচে নামল পিট, নেমেই প্লেনের দিকে ছুটল। মেডিকেল সাপ্লাই নামানোর কাজে সহায়তা করলেন ডাক্তার গেইল। বাকি সবাই ধরাধরি করে স্নোমোবাইল আর হিটিং ইউনিট বের করছে।

    এক ছুটে প্লেনের ফিউজিলাজটাকে একবার চক্কর দিয়ে এল পিট। প্রতি মুহূর্তে সজাগ থাকতে হলো কোনো ফাটলে যেন পা গলে না যায়। জেট ফুয়েলের গন্ধে ভারী হয়ে আছে বাতাস। ককপিটের জানালা ছাড়িয়ে উঁচু হয়ে আছে তুষারের একটা স্তূপ, সেটার ওপর চড়ল ও। হাত দিয়ে তুষার সরিয়ে ককপিটের দিকে একটা সুড়ঙ্গ তৈরি করার চেষ্টা করল। একটু পরই সম্ভব নয় বুঝতে পেরে নিচে নেমে এল আবার। আলগা তুষার জমাট বেঁধে শক্ত বরফ হয়ে গেছে, হাত দিয়ে ভাঙতে কয়েক ঘন্টা লাগবে।

    হন হন করে অবশিষ্ট ডানার দিকে এগোল ও। মূল অংশটা মোচড় খেয়ে সাপোর্টিং মাউন্ট থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে, ডগাটা লেজের দিকে তাক করা। পানিতে ডুবে থাকা ফিউজিলজের পাশে লম্বা হয়ে রয়েছে গোটা ডানা, জানালাগুলোর এক হাত নিচে। আবরণহীন পারিন ওপর ডানাটাকে সেতু হিসেবে ব্যবহার করল পিট, একটা জানালার সামনে হাটুগেড়ে বসে ভেতরে উঁকি দিল। হেলিকপ্টারের আলো প্লেক্সিপ্লাসে প্রতিফলিত হয়ে চোখ ধাধিয়ে দিল ওর, দুই হাত দিয়ে চোখ দুটোকে আড়াল করতে হলো।–

    প্রথম কিছুই দেখল না পিট। শুধু অন্ধকার আর নিস্তব্ধতা। তারপর হঠাৎ, জানালার উল্টোদিকে কিম্ভুতকিমাকার একটা অবয়ব উদয় হলো, পিটের মুখ থেকে মাত্র দেড় ইঞ্চি দূরে। নিজের অজান্তেই পিছিয়ে এল ও।

    একটা নারীমুখ, একটা বন্ধ চোখের নিচে লালচে কাটা দাগ, রক্তে ভিজে গেছে শরীরের একটা দিক। প্রায় ভূত দেখার মতোই চমকে উঠল পিট।

    তারপর মুখের অক্ষত অংশটার ওপর চোখ পড়ল। উঁচু চোয়াল, লম্বা কালো চুল, ধারাল নাক, অলিভ বাদামি চোখ। সুন্দরী যে তাতে কোনো সন্দেহ নেই।

    জানালার কাছে নাক ঠেকিয়ে চেঁচিয়ে উঠল ও, ইমার্জেন্সি হ্যাঁচ খুলতে পারবেন?

    সুন্দর একটা ভ্রু সামান্য উঁচু হলো, কিন্তু অক্ষত চোখে কোনো ভাব ফুটল না।

    আমার কথা শুনতে পাচ্ছেন?

    ঠিক সেই মুহূর্তে লে. সিমোন্সের লোকজন অক্সিলিয়ারি পাওয়ার ইউনিট চালু করল, চারদিকে উজ্জ্বল আলোর বন্যা বইয়ে দিয়ে জ্বলে উঠল কয়েকটা ফ্লাডলাইট। হিটার ইউনিটে পাওয়ার সংযোগ দেয়া হলো, বরফের ওপর দিয়ে টেনে আনা হলো ফ্লেক্সিবল হোস।

    এদিকে, ডানার ওপর, হাত নেড়ে লোকগুলার দৃষ্টি আকর্ষণ করল পিট। জানালা ভাঙার জন্য কিছু একটা আনো।

    জানালার দিকে ফিরল ও, কিন্তু ভদ্রমহিলা ইতোমধ্যে অদৃশ্য হয়ে গেছেন।

    হিটারের হোস নিয়ে ডানায় উঠল লোকগুলো, চোখে-মুখে গরম বাতাস পেল পিট।

    আমাদের মনে হয় দরজা কেটে ঢুকতে হবে, বলল ও। ওকে একপাশে সরে দাঁড়াতে বলে কোটের পকেট থেকে ব্যাটারিচালিত একটা যন্ত্র বের করল কর্ক সিমোন। সুইচ অন করতেই শেষ প্রান্তে একটা চাকা ঘুরতে শুরু করল। আমেরিকান নেভির সৌজন্য। অ্যালুমিনিয়াম আর প্লেক্সিগ্নাস মাখনের মতো কাটতে পারে। শুধু কথায় নয়, আড়াই মিনিটের মধ্যে কাজটা করেও দেখল সে।

    কোমর বাঁকা করে ঝুঁকল পিট, সদ্য ভাঙা জানালার ভেতর হাত গলিয়ে দিয়ে টর্চ জ্বালল। প্লেনের ভেতর ভদ্রমহিলার ছায়া পর্যন্ত নেই কোথাও। খড়ির ঠাণ্ডা পানিতে টর্চের আলো চকচক করছে। ছোট ছোট লাফ দিয়ে কাছাকাছি খালি সীটগুলোয় ওঠার চেষ্টা করছে মন্থরগতি ঢেউ। পিটের আর সিমোন দু’জন মিলে জানালা দিয়ে হোসটা ঢোকাল, তারপর ছুটল প্লেনের সামনের দিকে। ইতোমধ্যে নেভির লোকজন পানির নিচে হাত ডুবিয়ে মেইন একজিট ভোর ভোলার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছে। যা ভয় করা হয়েছিল তাই, আটকে গেছে ওটা। ব্যস্ততার সথে দরজার গায়ে ড্রিল মেশিন দিয়ে ফুটো তৈরি করা হলো, ফুটোয় ঢোকানো হলো স্টেনলেস স্টিলের হুক, প্রতিটি হুক সোমোবাইলের সাথে কেবল দিয়ে যুক্ত। স্নোমোবাইল চালু করে খোলা হলো দরজাটা।

    প্লেনের ভেতর গাঢ় অন্ধকার। কেমন যেন একটা অশুভ পরিবেশ। চেহারায় ইতস্ত ত ভাব নিয়ে পেছন দিকে তাকাল পিট। ডাক্তার গেইল তার দলবল নিয়ে ওর ঠিক পেছনেই রয়েছেন। লে, সিমোন্সের লোজন পাওয়ার ইউনিটের কেবল খুলছে প্লেনের ভেতর আলোর ব্যবস্থা করার জন্য। চলুন, ঢোকা যাক, বলল ও।

    খোলা দরজা দিয়ে ভেতরে ঢুকল পিট। পানিতে পড়ল, ডুবে গেল হাঁটু পর্যন্ত। অনুভব করল যেন এক হাজার সুই হঠাৎ করে বিধে গেছে পায়ে। বাল্কহেড ঘুরে মাঝখানের আল ধরে এগোল ও, আলের দুপাশে প্যাসেঞ্জার কেবিনের সারি সারি সিট। ভৌতিক নিস্তব্ধতা ওর হৃৎপিণ্ডের গতি বাড়িয়ে দিল। ঠিক ধরতে পারছে না, কিন্তু অনুভব করছে, ভয়ংকর কী যেন একটা ঘটে গেছে এখানে। পানি ঠেলে এগোচ্ছে, শুধু তারই শব্দ পাচ্ছে, আর কোনো আওয়াজ নেই।

    তারপর থমকে দাঁড়িয়ে পড়ল পিট, সবচেয়ে বীভৎস ভয়টা বিষাক্ত ফুলের পাপড়ির মতো উন্মুক্ত হতে শুরু করল।

    পিটের দুপাশে ওগুলো যেন সব ভূতের মুখ, ফ্যাকাসে আর সাদা। কেউ নড়ছে না, কারও চোখে পলক নেই, কেউ কথা বলছে না। যার যার সিটে স্ট্র্যাপ দিয়ে নিজেকে আটকে রেখেছে, পিটের দিকে তাকিয়ে আছে সারি সারি লাশ।

    ⤶ ⤷
    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleদ্য মহাভারত কোয়েস্ট : দ্য আলেকজান্ডার সিক্রেট – ক্রিস্টোফার সি ডয়েল
    Next Article ড্রাগন – ক্লাইভ কাসলার

    Related Articles

    ক্লাইভ কাসলার

    দ্য ফারাও’স সিক্রেট – ক্লাইভ কাসলার ও গ্রাহাম ব্রাউন

    August 5, 2025
    ক্লাইভ কাসলার

    পাইরেট – ক্লাইভ কাসলার / রবিন বারসেল

    August 5, 2025
    ক্লাইভ কাসলার

    দ্য সলোমন কার্স – ক্লাইভ কাসলার ও রাসেল ব্লেক

    August 5, 2025
    ক্লাইভ কাসলার

    ড্রাগন – ক্লাইভ কাসলার

    August 5, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Generic selectors
    Exact matches only
    Search in title
    Search in content
    Post Type Selectors
    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    চিরস্থায়ী বন্দোবস্তে বাঙলাদেশের কৃষক – বদরুদ্দীন উমর

    October 29, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    চিরস্থায়ী বন্দোবস্তে বাঙলাদেশের কৃষক – বদরুদ্দীন উমর

    October 29, 2025
    Our Picks

    চিরস্থায়ী বন্দোবস্তে বাঙলাদেশের কৃষক – বদরুদ্দীন উমর

    October 29, 2025

    পূর্ব বাঙলার ভাষা আন্দোলন ও তৎকালীন রাজনীতি ২ – বদরুদ্দীন উমর

    October 29, 2025

    বাঙলাদেশে কমিউনিস্ট আন্দোলনের সমস্যা – বদরুদ্দীন উমর

    October 29, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    • Sign Up
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }