Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    চিরস্থায়ী বন্দোবস্তে বাঙলাদেশের কৃষক – বদরুদ্দীন উমর

    October 29, 2025

    পূর্ব বাঙলার ভাষা আন্দোলন ও তৎকালীন রাজনীতি ২ – বদরুদ্দীন উমর

    October 29, 2025

    বাঙলাদেশে কমিউনিস্ট আন্দোলনের সমস্যা – বদরুদ্দীন উমর

    October 29, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    ট্রেজার – ক্লাইভ কাসলার

    ক্লাইভ কাসলার এক পাতা গল্প596 Mins Read0
    ⤶ ⤷

    ১৫. মিসরীয় শহর

    ১৫.

    মিসরীয় শহর আলেকজান্দ্রিয়া থেকে বিশ কিলোমিটার দক্ষিণে এটা একটা ব্যক্তি মালিকানাধীন এয়ারপোর্ট। ছোট্ট একটা বিচক্রাফট এক্সিকিউটিভ জেট ল্যান্ড করল। সবুজ একটা ভোলভো গাড়ির পাশে থামল প্লেন, গাড়ির দরজায় ইংরেজিতে ট্যাক্সি লেখা। ইঞ্জিনের শব্দ থেমে যাবার সাথে সাথে ওপর দিকে উঠে খুলে গেল প্যাসেঞ্জার ডোর।

    সাদা স্যুট পরা লোকটা নেমে এল নিচে। গাঢ় নীল শার্টের সাথে ম্যাচ করা টাই পরেছে সে। ছয় ফুটের সামান্য কম হবে লম্বায়, একহারা গড়ন, এক মুহূর্ত থেকে টাকা শুরু হওয়া চওড়া কপাল রুমাল দিয়ে মুছল, একটা আঙুল দিয়ে সিধে করে নিল লম্বা আর ঘন গোফ জোড়া। গাঢ় রঙের সানগ্লাসের আড়ালে রয়েছে চোখ দুটো, হাতে পরেছে সাদা লেদার গ্লাভস।

    লন্ডন থেকে একশো ছয় ফ্লাইটে যে পাইলট উঠেছিল, তার সাথে সুলেমান আজিজের চেহারার কোনো মিল নেই।

    শান্ত, দৃঢ় পদক্ষেপে গাড়ির পাশে এসে দাঁড়াল সে। হুইলের পেছন থেকে সদ্য নেমে আসা ড্রাইভারকে বলল, গুড মর্নিং, ইবনে। ফেরার পর কোনো সমস্যা হয়েছে?

    সব ঠিকঠাক আছে, সুলেমান আজিজ, উত্তর দিয়ে গাড়ির পেছনের দরজা খুলে ধরল সে, শোল্ডার হোলস্টারের পিস্তলাকৃতি শটগানটা গোপন করার কোনো চেষ্টা করল না।

    ইয়াজিদের কাছে নিয়ে চলো আমাকে। গাড়িতে উঠে নির্দেশ দিল সুলেমান আজিজ। নিঃশব্দে মাথা ঝাঁকাল ইবনে।

    গাঢ় টিনটেড গাড়ির কাঁচ আর বডি বুলেটপ্রুফ। আরামদায়ক নিচু একটা চেয়ার বসেছে সুলেমান আজিজ, তার সামনে একটা ডেস্ক কেবিনেট, তাতে একগাদা ইলেকট্রনিক ইকুইপমেন্ট, সেগুলোর মধ্যে রয়েছে একজোড়া টেলিফোন, একটা রেডিও ট্র্যান্সমিটার ও টিভি মনিটর, একটা কম্পিউটর। ভেতরে বার আর একজোড়া রাইফেলসহ র‍্যাকও রয়েছে।

    আলেকজান্দ্রিয়ার জনাকীর্ণ পথে এঁকে-বেঁকে চলে সমুদ্রতীরবর্তী রাস্তায় পড়ল গাড়ি, প্রতিটি মুহূর্তে টেলিফোন ব্যস্ত থাকল সুলেমান আজিজ। ডজনখানেকের ওপর ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে তার পুঁজি খাটছে। তার সম্পদের হিসাব একমাত্র সেই জানে। বুদ্ধিমত্তার চেয়ে নিষ্ঠুরতাই বরং তাকে ব্যবসায়িক সাফল্য এনে দিয়েছে। যদি কোনো সরকারি অফিসার বা প্রতিদ্বন্দ্বী তার সামনে বাধা হয়ে দাঁড়ায়, হঠাৎ করে একদিন নিখোঁজ হয়ে যায় লোকটা, তারপর তার আর কোনো সন্ধান পাওয়া যায় না।

    বিশ কিলোমিটার ছুটে এসে একটা গেটের সামনে থামল ভলভো গাড়ি। ভেতরে ছোটো একটা ভিলা, পাহাড়ের গায়ে। ভিলা থেকে বালুময় সৈকত দেখা যায়।

    কম্পিউটরের লাভের হিসাব করছিল সুলেমান আজিজ, বোতাম টিপে সেটা বন্ধ করল সে, দরজা খুলে নেমে দাঁড়াল। বালি রঙের ইউনিফর্ম পরা চারজন গার্ড ঘিরে ধরল তাকে, খুঁটিয়ে সার্চ করল। তারপর তাকে একটা এক্স-রে ডিটেকটর-এর সামনে দিয়ে হাঁটতে বলা হলো। এ ধনের ডিটেকটর শুধু এয়ারপোর্টগুলোতেই দেখা যায়।

    গেট দিয়ে ভেতরে ঢোকার সিঁড়ি বেয়ে ভিলায় উঠল সুলেমান আজিজ। ধাপ বেয়ে ওঠার সময় কংক্রিটের ছোট একটা উঠানকে পাশ কাটাল সে। উঠানে বসে রয়েছে ইয়াজিদের দেহরক্ষী বাহিনীর সদস্যরা। অলংকৃত খিলানটাকে পাশ কাটিয়ে এগোবার সময় আপনমনে হাসল সুলেমান আজিজ। খিলানের দরজা শুধুমাত্র সম্মানিত অতিথিদের জন্য খোলা হয়। পাশের ছোট্ট একটা দরজা দিয়ে ভেতরে ঢুকতে দেয়া হলো তাকে। অপমানবোধ করলেও মন থেকে তাড়াতাড়ি মুছে ফেলল অনুভূতিটা। সে জানে, কোনো কোনো ব্যাপার অত্যন্ত নীচ মানসিকতার পরিচয় দেয় আখমত ইয়াজিদ। যারা তার নোংরা কাজগুলো করে দেয়, তাদের প্রতি নির্লিপ্ত অবহেলাসূচক আচরণ করে সে, তাকে ঘিরে প্রিয় ফ্যানাটিকদের যে বৃত্তটা আছে সেখানে তাদের স্থান হয় না।

    পথ দেখিয়ে তাকে একটা নগ্ন নির্জন কামরায় পাঠানো হলো। ভেতরে একটাই মাত্র কাঠের টুল। বদ্ধ বাতাস অত্যন্ত গরম লাগল সুলেমান আজিজের। একদিকের দেয়ালজুড়ে কালো কার্পেট ঝুলছে। ঘরে কোনো জানালা নেই, আলো আসছে শুধু মাথার ওপর ভেন্টিলেটর থেকে বেরিয়ে গিয়ে বাইরে থেকে দরজা বন্ধ করে দিয়েছে গার্ড।

    হাই তুলল সুলেমান আজিজ, হাতঘড়িটা এমনভাবে তুলল যেন সময় দেখছে। এরপর সানগ্লাস খুলে চোখ দুটো রগড়াল সে। চোরা চোখে টিভি ক্যামেরার খুদে লেন্সটা দেখে ফেলল সে, ঝুলন্ত কার্পেটের সাথে ফিট করা রয়েছে।

    প্রায় এক ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হলো তাকে। এরপর কার্পেট সরিয়ে নিচ একটা খিলানের তলা দিয়ে ভেতরে ঢুকল আখমত ইয়াজিদ।

    মিসরীয় মুসলমানদের আধ্যাত্মিক নেতা ইয়াজিদের বয়স বেশি নয়, পঁয়ত্রিশের কাছাকাছি হবে। ছোটখাট আকৃতি, সুলেমান আজিজের দিকে তাকানোর জন্য ওপর দিকে মুখ তুলতে হলো তাকে। তার চেহারায় মিসরীয় বৈশিষ্ট্য নেই বললেই চলে। চিবুক আর চোয়ালের গঠনে কোমল ভাব রয়েছে, প্রায় গোল। সাদা সিঙ্কের পাগড়ি কপাল আর মাথাটাকে ঢেকে রেখেছে, আঁটার হাতলসদৃশ শরীর ঢেকেছে সাদা ঢোলা হাতা জামা। ছায়া থেকে আলোয় বেরিয়ে আসার সাথে সাথে তার চোকের রং কালো থেকে গাঢ় খয়েরিতে বদলে গেল।

    দাঁড়াল সুলেমান আজিজ। শ্রদ্ধা জানাবার ভঙ্গিতে মাথাটা মৃদু আঁকাল। তাকিয়ে আছে সরাসরি ইয়াজিদের চোখে।

    ভালো তো, দোস্ত? আবেগের সাথে বলল আখমত ইয়াজিদ। তোমাকে ফেরত পেয়ে আমি খুশি।

    যেখানেই যাই, যত দূরেই যাই, বলল সুলেমান আজিজ, সেও কম খেলুড়ে নয়, আপনার কাছে ফিরে আসার জন্য ব্যাকুল হয়ে থাকি, জনাব। আপনার পাশে থাকার সুযোগ হলে নিজেকে আমার ধন্য মনে হয়।

    প্লিজ, বসো! অনুরোধ নয়, আদেশের মতো শোনাল কথাটা।

    কাঠের টুলে বসল সুলেমান আজিজ, এবার ওপর থেকে তার দিকে তাকাতে পারবে আখমত ইয়াজিদ। সুলেমান আজিজের মনে হলো, এটাও তাকে অপমান করার জন্য। কোনো বিরতি ছাড়াই ভাষণ দেয়ার সুরে কথা বলতে শুরু করল আখমত ইয়াজিদ, টুলটাকে ঘিরে পায়চারি করছে সে, ফলে টুলে বসা অবস্থায় প্রতি মুহূর্তে তার দিকে ঘুরতে হলো সুলেমান আজিজকে।

    প্রতি সপ্তায় নতুন নতুন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হচ্ছে মেরুদণ্ডহীন প্রেসিডেন্ট হাসানকে। তার পতন ঠেকিয়ে রেখেছে সামরিক বাহিনীর বিশ্বস্ততা। সাড়ে তিন লক্ষ সৈনিকের ওপর এখনও তার কর্তত্ব আছে। তবে ডিফেন্স মিনিস্টার আবু হামিদের সাথে কথা হয়েছে আমার। সে আমাকে নিশ্চয়তা দিয়ে বলেছে, ইসলামিক রিপাবলিক গঠনে আমাদের আন্দোলনকে পুরোপুরি সমর্থন দেবে সে, যদি আমরা রক্তপাত না ঘটিয়ে জাতীয় রেফারেন্ডাম অর্জন করতে পারি।

    লক্ষণ খারাপ, নাকি ভালো? চেহারায় অজ্ঞতার ভাব ফুটিয়ে জানতে চাইল সুলেমান আজিজ।

    তার দিকে ঠাণ্ডা চোখে তাকাল আখমত ইয়াজিদ। লোকটার হাত পাতা অভ্যেস। যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে সাহায্য পেয়ে লোভী হয়ে উঠেছে। মহাকাপরুষ আমেরিকান এইড ছাড়া দেশ চালানো সম্ভব নয় বলে তার ধারণা। আরও জেট প্লেন, হেলিকপ্টার গানশিপ আর ট্যাংক দরকার তার। ভয় পাচ্ছে, মিসরের পরিণতি ইরানের মতো না হয় আবার। হাঁদাটা বোঝাতে চেষ্টা করছে, শান্তিপূর্ণ উপায়ে ক্ষমতা হস্তান্তর করা গেলে বিদেশি সাহায্য যেমন আসছে তেমনি আসতে থাকবে। তা না হলে বিশ্বব্যাংকের পোন আর মার্কিন অনুদান বন্ধ হয়ে যাবে।

    গাঢ় চোখ মেলে সুলেমান আজিজের দিকে তাকিয়ে থাকল আখমত ইয়াজিদ, যেন অপেক্ষা করছে প্রতিবাদের সুরে কিছু বলবে সুলেমান আজিজ।

    সুলেমান আজিজ কথা বলল না।

    আবু হামিদ আরও দাবি করছে, আমাকে কথা দিতে হবে হে’লা কামিলের ব্যাপারে আমি চোখ বন্ধ করে রাখব। জাতিসংঘের মহাসচিব থাকবে সে।

    কিন্তু তাহলে যে আপনি আমাকে অর্ডার করলেন তাকে খুন করার জন্য? সুলেমান আজিজের চোখে কৌতূহল।

    আখমত ইয়াজিদ হাসল। রক্তমাংসের মুখ নয়, যেন একটা মুখোশ হাসল।

    জালিম সরকারকে উৎখাত করে দেশে ইসলামিক শাসনব্যবস্থা চালু করতে হলে বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দিতে হবে, সুলেমান আজিজ। কথা তো দিয়েইছি। আবু হামিদ জানবে আমি আমার কথা রেখেছি। সেজন্যই তো দায়িত্বটা দেয়া হয়েছিল তোমার মতো যোগ্য লোককে, যাতে কাকপক্ষীও টের না পায় যে কাজটা আমার নির্দেশে ঘটেছে।

    কিন্তু কেন, জনাব? মৃদু কণ্ঠে জানতে চাইল সুলেমান আজিজ। হে’লা কামিলকে খুন করে কী লাভ হলো আমাদের?

    লাভ এই যে আমাদের বিরুদ্ধে প্রচারণায় জাতিসংঘের মহাসচিবের পদটা ব্যবহার করছে হে’লা কামিল। তার একার চেষ্টায় সারা দুনিয়ায় আমার বিরুদ্ধে জনমত গড়ে উঠেছে। খোলাখুলিভাবে ওকে মারলে আবু হামিদ খেপে যেত আমার ওপর। এই জন্যই তোমাকে দায়িত্ব দিয়েছিলাম, সুলেমান, আর তুমি কি না সে বাদে বাকি সবাইকে মারলে।

    বিস্ময়ে হতবাক হয়ে গেল সুলেমান আজিজ। কী বলছেন, জনাব? হে’লা কামিল বেঁচে আছে?

    রাগে থরথর করে কাঁপলেও, চোখ জোড়া শীতল হয়ে গেল ইয়াজিদের। এক ঘণ্টাও হয়নি খবরটা পৌঁছেছে ওয়াশিংটনে। প্লেনটা বিধ্বস্ত হয়েয়ে গ্রিনল্যান্ডে। দু’জন ক্রু আর হে’লা কামিল বাদে বাকি সবাই বিষক্রিয়ায় মারা গেছে।

    বিষক্রিয়ায়? হাঁ হয়ে গেল সুলেমান আজিজ।

    মার্কিন নিউজ মিডিয়ায় আমাদের বেতনভুক সোর্স আছে, রিপোর্টটা কনফার্ম করেছে তারা। কী ভাবছ, সুলেমান আজিজ? তুমি আমাকে কথা দিয়েছিলে, প্লেনটা সাগরে তলিয়ে যাবে।

    তারা কি জানিয়েছে কীভাবে প্লেনটা গ্রিনল্যান্ডে পৌঁছল?

    প্লেন গ্রিনল্যান্ডে নামার কিছুক্ষণ আগে থেকে যা যা ঘটেছিল, প্রতি ঘটনার প্রায়। নিখুঁত বর্ণনা দিল আখমত ইয়াজিদ।

    স্তম্ভিত বিস্ময়ে বোবা হয়ে গেল সুলেমান আজিজ। ব্যর্থতায় অভ্যস্ত নয় সে। এত পরিশ্রমের ফসল প্ল্যানটা বানচাল হয়ে গেছে ভাবতে গিয়ে মাথাটা ঘুরে উঠল তার।

    নিশ্চয় বুঝতে পারছ যে যা ঘটেছে তার জন্য আমাকে দায়ী করা হবে? কর্কশস্বরে জিজ্ঞেস করল আখমত ইয়াজিদ।

    ঘটনার সাথে আপনাকে বা আমাকে জড়ানো যায় এমন কোনো প্রমাণ আমি রেখে আসিনি, দৃঢ়তার সাথে জানাল সুলেমান আজিজ।

    হয়তো, কিন্তু মানুষের মুখে হাতচাপা দেবে কীভাবে? পশ্চিমা সংবাদমাধ্যম এককভাবে আমাকে দায়ী করবে। এ থেকে রক্ষা পাবার একটাই পথ খোলা আছে আমার সামনে। তোমাকে অভিযুক্ত করা। অর্থাৎ তোমাকে মৃত্যুদণ্ড দিয়ে তা কার্যকরী করলে আমার নির্দোষিত প্রমাণ হয়।

    নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে কাঁধ ঝাঁকাল সুলেমান আজিজ। অত্যন্ত দুঃখজনক একটা অপচয় হবে সেটা। গোটা মধ্যপ্রাচ্যে আমিই এখনও সেরা খুনি।

    মজুরিও পাও সবচেয়ে বেশি।

    অসমাপ্ত কাজের জন্য মজুরি নিতে অভ্যস্ত নই আমি, জনাব।

    অসমাপ্ত কাজের জন্য মজুরি দিতে আমিও কি অভ্যস্ত? উত্তরের অপেক্ষায় না থেকে ঝট করে ঘুরল আখমত ইয়াজিদ, দীর্ঘ পদক্ষেপে কালো কার্পেটের সামনে গিয়ে দাঁড়াল, এক ঝটকায় সেটা সরিয়ে ভেতরে ঢুকতে যাবে, কী মনে করে ঘাড় ফিরিয়ে তাকাল সুলেমান আজিজের দিকে। প্রার্থনার জন্য তৈরি হতে হবে আমাকে, সুলেমান আজিজ। তুমি যেতে পারো।

    কিন্তু হে’লা কামিল? কাজটা যে অসমাপ্ত রয়ে গেল!

    তাকে সরানোর দায়িত্ব আমি মোহাম্মদ ইসমাইলকে দিচ্ছি।

    ইসমাইল? ক্ষীণ আড়ষ্ট হাসি নিয়ে তাকাল সুলেমান আজিজ। মোহাম্মদ ইসমাইল তো একটা নির্বোধ।

    তাকে বিশ্বাস করা যায়?

    হ্যাঁ, সায় দেয়ার ভঙ্গিতে মাথা ঝাঁকাল সুলেমান আজিজ। নর্দমা পরিষ্কার করার কাজে।

    কঠিন চোখে গনগনে আগুন নিয়ে আখমত ইয়াজিদ কয়েক সেকেন্ড তাকিয়ে সুলেমান আজিজের দিকে, তারপর বলল, হে’লা কামিলের কথা ভুলে যাও। মিসরে, আমার পাশে থাকছ তুমি। আমাদের আন্দোলনকে এগিয়ে নেয়ার জন্য বিশ্বস্ত উপদেষ্টাদের সাথে আরেকটা অ্যাসাইনমেন্ট নিয়ে আমার কথা চলছে। পাপের প্রায়শ্চিত্ত করে আবার আল্লাহর প্রিয়পাত্র হওয়ার একটা সুযোগ তুমি পেতে যাচ্ছ।

    টুল ছেড়ে দাঁড়াল সুলেমান আজিজ। মেক্সিকান ডেলিগেট, প্লেন চালাতে কে সাহায্য করেছে যে লোকটা। সেও কি বিষক্রিয়ায় মারা গেছে?

    মাথা নাড়ল আখমত ইয়াজিদ। রিপোর্টে বলা হয়েছে, প্লেন বিধ্বস্ত হওয়ায় মারা গেছে সে। পর্দার ওদিকে অদৃশ্য হয়ে গেল সে। আগের জায়গায় ঝুলে পড়ল কালো পর্দা।

    ধীরে ধীরে টুলের ওপর আবার বসল সুলেমান আজিজ। একটু একটু করে ব্যাপারটা উপলব্ধি করল সে। তার রাগ হওয়ার কথা। কিন্তু রাগ নয়, তার বদলে ঠোঁট ক্ষীণ হাসির রেখা ফুটে উঠল। তাহলে জল্লাদ আমরা দু’জন ছিলাম, খালি ঘরে বিড়বিড় করে উঠল সে। দ্বিতীয় জল্লাদ খাবারে বিষ মিশিয়েছে। বিফ ওয়েলিংটনে। হে খোদা, তোমার মহিমা বোঝে কার সাধ্য!

    .

    ১৬.

    সোনার রেকর্ডিং পেপারে ছোট্ট একটা ঝাপসা দাগ, প্রথমে কেউ পাত্তাই দিল না।

    ছয় ঘণ্টা অনুসন্ধান চালিয়ে মানুষের তৈরি অনেক জিনিসই খড়ির তলায় দেখল ওরা। তিন বছর আগে ডুবে যাওয়া একটা প্লেনের ভগ্নাংশ চেনা গেল। চেনা গেল ডুবন্ত একটা ফিশিং ট্রলার। ঝড়ের মুখে অনেক জেলে নৌকা খাড়িতে আশ্রয় নিতে আসে, তাদের ফেলা হরেক রকম জিনিস রয়েছে তলায়। প্রতিটি জিনিস শনাক্ত করা সম্ভব হলো ভিডিও ক্যামেরার সাহায্য।

    ঝাপসা দাগটা, যেমন আশা করা যায়, খাড়ির মেঝেতে নয়। জিনিসটা রয়েছে ছোট একটা ইনলেট-এ, খাড়া পাহাড়প্রাচীর দিয়ে চারদিকে থেকে ঘেরা। জিনিসটার মাত্র একটা অংশ স্বচ্ছ পানিতে বেরিয়ে আছে, বাকি সব বরফ পাচিলের নিচে চাপা পড়েছে।

    তাৎপৰ্যটা প্রথমে ধরতে পারল পিট। রেকর্ডারের সামনে বসে আছে ও, ওকে ঘিরে রয়েছে অ্যাল জিওর্দিনো, কমান্ডার বায়রন নাইট ও আর্কিওলজিস্টরা। ট্রান্সমিটারে কথা বলল পিট। মাছটাকে ঘোরাও, বেয়ারিং ওয়ান-ফাইভ-জিরো ডিগ্রি।

    বরফ ঢাকা খাড়িতে এখনও স্থির হয়ে রয়েছে আইসব্রেকার পোলার এক্সপ্লোরার। লেফটেন্যান্ট কর্ক সিমোন্সের নেতৃত্বে একদল লোক আইসপ্যাকের ওপর, নেমে পড়েছে, পিটের নির্দেশ মতো পানির এখানে সেখানে ডোবাচ্ছে সেনসিং ইউনিট। মাছ, অর্থাৎ সেনসিং ইউনিট, অত্যন্ত ধীরগতিতে ঘোরানো হয়, যাতে তিনশো ষাট ডিগ্রি আওতার ভেতর যা কিছু আছে সব রেকর্ড করা যায়। আইসপ্যাকের ওপর দিয়ে ধীরে ধীরে এগিয়ে চলছে দলটা, জাহাজ থেকে কেবল ছাড়া হচ্ছে।

    পিটের নির্দেশ মতো কাজ করল কর্ক সিমোন। মাছের সোনার প্রোব দেড়শো ডিগ্রী ঘুরে গেল। হয়েছে?

    এক্কেবারে টার্গেটের ওপর, জাহাজ থেকে জবাব দিল পিট। রেকর্ডিং পেপার জিনিসটা এখন আগের চেয়ে স্পষ্ট। ফেল্ট পেন দিয়ে দাগটার চারদিকে একটা বৃত্ত আঁকল ও। আমার ধারণা, একটা কিছু পেয়েছি আমরা।

    ড. গ্রোনকুইস্ট পিটের কাঁধের ওপর হুমড়ি খেলেন। চেনার মতো স্পষ্ট নয় এখনও। আপনার কী মনে হচ্ছে?

    পাহাড়ের মাথা থেকে অনেক জিনিস পড়েছে নিচে, সবগুলো বরফে প্রায় ঢাকা, বলল পিট। এটারও তাই, তবে যে অংশটুকু বেরিয়ে আছে, আমার মনে হচ্ছে…ওটা একটা কাঠের তৈরি জাহাজ। ভালো করে দেখুন, চারকোণা একটা আকৃতি বেরিয়ে আছে, স্টার্নপোস্ট হতে পারে।

    পিটের আরেক কাঁধের ওপর হুমড়ি খেয়ে রয়েছে লিলি। চেঁচিয়ে উঠল সে, হ্যাঁ, ঠিক তাই! গড! ওহ্ গড! ওগুলো চতুর্থ শতাব্দীর বাণিজ্য জাহাজে দেখা যেত!

    উত্তেজিত হবেন না, সাবধান করে দিলেন কমান্ডার বায়রন নাইট। অত পুরনো আমলের নাও হতে পারে!

    ড. গ্রোনকুইস্ট পরামর্শ দিলেন, আমরা একটা ক্যামেরা নামিয়ে স্পষ্ট ছবি পাবার চেষ্টা করতে পারি।

    অ্যাল জিওর্দিনো সন্দেহ প্রকাশ করল, বরফের ভেতর লুকানো অংশটার ছবি আপনি ক্যামেরা থেকে পাবেন না।

    পুরুষ কর্মীর অভাব নেই আপনাদের, বলল লিলি। নিচের বরফ ভাঙা কোনো সমস্যা নয়।

    ব্রিজের ইলেকট্রনিক কমপার্টমেন্টে চলে গেলেন ড. গ্রোনকুইস্ট ফিরলেন আধ মিনিট পর। ধ্বংসাবশেষের ওপর জমাট বরফ তিন মিটার পুরু, বললেন তিনি। ভাঙতে কম করেও দুদিন লাগবে।

    আমাদের ছাড়াই আপনাদের খননকাজ চালাতে হবে, বললেন কমান্ডার নাইট, ঠিক ১৮০০ ঘণ্টার আগে আমাকে চলে যেতে বলা হয়েছে। এত দীর্ঘমেয়াদি কোনো কাজে লাগা সম্ভব হবে না।

    চমকে গেছেন গ্রোনকুইস্ট। সে তো মাত্র পাঁচ ঘণ্টা পর!

    কিছু করার নেই, অর্ডার, অসহায়ের মতো বললেন কমান্ডার।

    রেকর্ডিং পেপারে কালো ছায়াটা মনোযোগ দিয়ে পর্যবেক্ষণ করল পিট, এরপর বায়রন নাইটের দিকে ফিরে বলল, যদি আমি প্রমাণ করতে পারি, নিচে ওটা ফোর্থ সেঞ্চুরির রোমান জাহাজ, কর্তৃপক্ষের কাছে আরো দুই-এক দিন সময় চাইতে পারবেন আপনি?

    চোখ সরু করে তাকালেন নাইট, কী বলতে চাও?

    আগে বলুন, সময় চাইবেন কি না? পিট নাছোড়বান্দা।

    অবশ্যই। কিন্তু আগে নিঃসন্দেহভাবে প্রমাণ করো, ওটা হাজার বছর আগের জাহাজের ধ্বংসাবশেষ।

    ঠিক তো?

    কীভাবে কী করবে?

    খুব সহজ, আমুদে কন্ঠে পিট জানায়, বরফের নিচে ডুব দিয়ে দেখে আসব।

    .

    চেইন লাগানো করাত দিয়ে প্রথমে নিরেট আইসপ্যাকের বুকে এক মিটার গভীর একটা গর্ত করা হলো। তারপর ধীরে ধীরে বাড়ানো হলো গর্তের পরিধি। অবশেষে স্লেজহ্যামারের আঘাতে গর্তের নিচের বরফ ভাঙা হলো, টুকরোগুলো ভোলা হলো গ্যাপলিং হুকের সাহায্যে। এবার নিরাপদে ডুব দিতে পারবে পিট।

    কাজ শেষ করে ক্যানভাস ঢাকা একটা তাবুতে ঢুকল কর্ক সিমোন। ভেতরে হিটিং সিস্টেম কাজ করছে। একপাশে ডাইভিং ইকুইপমেন্ট দেখা গেল। সঙ্গী আর্কিওলজিস্টদের সাথে আলোচনা করছে লিলি। ফোল্ডিং চেয়ারে বসে আছে তারা। কাগজে ড্রইং আঁকছে পিট। আঁকার দায়িত্ব নিজে নিয়ে পিটকে ডাইভের জন্য তৈরি হবার তাগাদা দিল লিলি।

    ভেতরে ঢুকে সিমোন বলল, গর্ত আপনার জন্য তৈরি, মি. পিট।

    আর পাঁচ মিনিট, বলল অ্যাল জিওর্দিনো। মার্ক ওয়ান-এর নেভি ডাইভার মাস্কের ভালভ আর রেগুলেটর পরীক্ষা করছে সে।

    স্পেশাল ড্রাই স্যুটটা পরে নিল পিট। মাথায় পরল হুড, কোমরে জড়াল কুইক রিলিজ ওয়েট বেল্ট। সেই সাথে প্রাচীন জাহাজের কাঠামো সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত জ্ঞানার্জন করছে ড. গ্রোনকুইস্টের কাছ থেকে।

    খোল-এর জন্য সাধারণত তারা ওক ব্যবহার করত।

    কাঠ চিনি, কিন্তু কোনোটা কোনো গাছের বুঝি না।

    তাহলে খোলটা পরীক্ষা করবেন। প্রাচীন খোলের বৈশিষ্ট্য হলো…

    তাঁর কথার মাঝখানে কথা বলল জিওর্দিনো, রিজার্ভ এয়ার বটল লাগবে তোমার পিট?

    ড. গ্রোনকুইস্টের কথায় কান, উত্তরে শুধু মাথা নাড়ল পিট। ওর মাথায় মার্ক ওয়ান মাস্কটা পরিয়ে দিল জিওর্দিনো, ওটার সাথে কমিউনিকেশন লাইন আছে।

    নেভির একজন কর্মী এয়ার সাপ্লাই হোস ও কমিউনিকেশন লাইন ঢিলে করছে, পিটের কোমরে একটা ম্যানিলা লাইফলাইন বেঁধে দিল জিওর্দিনো, তারপর হেডসেট মাইক্রোফোনে পিটকে জিজ্ঞেস করল, পরিষ্কার শুনতে পাচ্ছ?

    পরিষ্কার, তবে আস্তে, বলল পিট। আওয়াজ বাড়াও একটু।

    অল সেট?

    ওকে সংকেত দিল পিট। সমস্ত জড়তা ঝেড়ে ফেলে এগিয়ে এসে পিটকে আলিঙ্গন করল লিলি শার্প, মাস্কের ভেতর পিটের চোখে চোখ রেখে বলল, গুড হান্টিং, অ্যান্ড বি কেয়ারফুল।

    উত্তরে চোখ মটকাল পিট। বেরিয়ে এল তাবু থেকে। পেছনে লাইনে নেভির দু’জন কর্মী।

    তাঁবু থেকে বেরোতে যাচ্ছে জিওর্দিনো, তার হাত চেপে ধরল লিলি। ওর গলা আমরা সবাই শুনতে পাব?

    পাবেন। স্পিকারের সাথে ওর যোগাযোগ ঘটিয়ে দিয়েছি, বলল জিওর্দিনো আপনি আর ড. গ্রোনকুইস্ট এখানেই থাকুন, কখন কী বলে পিট, শুনবেন। জরুরি কোনো মেসেজ থাকলে জানাবেন আমাকে, পিটকে পাঠিয়ে দেব আমি।

    দ্রুত বরফের গর্তের কাছে পৌঁছে গেল পিট। বাতাসের তাপমাত্রাই শূন্যের নীচে।

    কমান্ডার নাইট এসে কাঁধে একটা হাত রাখলো। এক ঘণ্টা তেইশ মিনিট বাকি। বুঝেছো?

    কোনো কথা বলে বুড়ো আঙুল উঁচিয়ে পানিতে তলিয়ে গেল পিট।

    পানির নিচে দৃষ্টিসীমা নাক বরাবর আশি মিটারের মতো। তিন মিটার লম্বা একটা দাড়িওয়ালা সিল চোখে কৌতূহল নিয়ে তাকিয়ে রয়েছে ওর দিকে। তার উদ্দেশ্য একটা হাত লম্বা করে দিয়ে নাড়ল পিট, পালিয়ে গেল সীল।

    খাড়ির তলায় পা ঠেকল পিটের। মুখ তুলে ওপর দিকে তাকাল। বরফের গর্ত স্নান আভার মতো লাগল। কম্পাস চেক করল ও। ঝামেলা হবে ভেবে ডেপথ গজ আনেনি সাথে। কথা বলো আমার সাথে, যান্ত্রিক গলা পেল।

    তলায় পৌঁছে গেছি, বরর পিট। সবগুলো সিস্টেম চমৎকার কাজ করছে। সবুজ পানির ভেতর দিয়ে তাকালও। জিনিসটা আমার উত্তরে দশ মিটার দূরে। যাচ্ছি ওদিকে। লাইন ঢিঠ দাও।

    ধ্বংসাবশেষের পেছনটা ধীরে ধীরে ওর চোখের সামনে উন্মোচিত হলো। পুরু শেওলায় ঢাকা পড়ে রয়েছে পাশগুলো। গ্লাভস পরা হাত দিয়ে খানিকটা শেওলা সরাল, সবুজ মেঘ তৈরি হলো সামনে। পানি আবার স্বচ্ছ না হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হলো ওকে। প্রায় এক মিনিট পর বলল, লিলি আর ড. গ্রোনকুইস্টকে জানাও, স্টার্ন রাডার ছাড়াই একটা ভোলা দেখতে পাচ্ছি আমি, তবে স্টিয়ারিং-এর জন্য কোনো দাঁড় নেই।

    জানাচ্ছি।

    একটা ছুরি বের করে খোলের নিচে, কিল-এর কাছে খোঁচা মারল পিট। বেরিয়ে পড়ল নরম ধাতু। খোলের তলাটা সিসা দিয়ে মোড়া, ঘোষণার সুরে বলল ও।

    লক্ষণ নাকি খুব ভালো, জবাবে বলল জিওর্দিনো। ড. গ্রোনকুইস্ট জানতে চাইছেন স্টার্নপোস্টে কোনো খোদাই করা লেখা আছে কি না।

    হোল্ড অন। খানিক পর আবার বলল পিট, স্টার্নপোস্টে ঢোকানো রয়েছে শক্ত কাঠের ফলকের মতো কী যেন একটা। অক্ষরগুলো পড়তে পারছি না। একটা মুখও দেখছি।

    মুখ?

    মাথায় কোঁকড়ানো চুল, প্রচুর দাঁড়ি।

    পড়ার চেষ্টা করো।

    কী আশ্চর্য, গ্রিক আমি পড়ব কীভাবে?

    গ্রিক, ল্যাটিন নয়? তীক্ষ্ণকণ্ঠে জিজ্ঞেস করল জিওর্দিনো।

    ল্যাটিন নয়, গ্রিক।

    ঠিক জানো?

    আরে ভাই, গ্রিক এক মেয়ের সাথে বেশ কিছুদিন সম্পর্ক ছিল আমার!

    রাগ কোরো না, রাগ কোরো না! আর্কিওলজিস্টদের মাথা খারাপ করে দিয়েছ তুমি! দুমিনিট পর আবার গলা শুনতে পেল পিট, ড. গ্রোনকুইস্ট বলছেন, তোমার মতিভ্রম ঘটেছে। তবে মাইক গ্রাহাম বলছেন, কলেজে তিনি ক্লাসিকাল গ্রিক পড়েছেন, জানতে চাইছেন তুমি অক্ষরগুলোর বর্ণনা দিতে পারবে কি না।

    প্রথম অক্ষরটা ইংরেজি এস-এর মতে, যেন আকাশের বিদ্যুৎ আঘাত হানতে যাচ্ছে। তারপর একটা এ, তবে সেটার ডান পা নেই। এরপর পি-সামান্য লেজ আছে। পি-র পর পঙ্গু আরেকটা এ, তারপর উল্টানো এল বা ফাঁসিকাঠ। এবার আই, এবং শেষ অক্ষর আরেকটা বিদ্যুৎ আকৃতি এস।

    তাঁবুতে বসে স্পিকারের মাধ্যমে পিটের গলা শুনছে মাইক গ্রাহাম, লিখে নিচ্ছে কাগজে। অক্ষরগুলো পাশাপাশি সাজানোর পর দাঁড়াল :

    লেখাটার দিকে কয়েক মুহূর্ত ভ্রু কুচকে তাকিয়ে থাকল মাইক। কী যেন একটা ঠিক মিলছে না। স্মৃতির পাতা ওল্টাতে শুরু করল সে। তারপর মনে পড়ল। অক্ষরগুলো ক্লাসিকাল, তবে ঈস্টার্ন গ্রিক। চিন্তিত ভাব বদলে গিয়ে তার চেহারায় অবিশ্বাস ফুটে উঠল। কাগজের ওপর খস খস করে কিছু লিখল সে, একটানে ছিঁড়ে লিলির দিকে সিধে করে ধরল। আধুনিক ইংরেজি অক্ষরে লেখা শব্দটা হলো : SARACIL

    চোখে প্রশ্ন নিয়ে তাকাল লিলি। এর কি বিশেষ কোনো অর্থ আছে?

    উত্তর দিলেন ড. গ্রোনকুইস্ট, আমার ধারণা, ওটা এক গ্রিক ঈজিপশিয়ান দেবতার নাম।

    ভূমধ্যসাগরের আশপাশে অত্যন্ত জনপ্রিয় দেবতা উনি, একমত হলো হসকিন্স। আধুনিক বানানো সাধারণত লেখা হয় এস-এর পর ই দিয়ে।

    তাহলে আমাদের জাহাজ সেরাপিস, বিড়বিড় করে উঠল লিলি।

    আমাদের বিদ্যালয় কুলোবে না, ড. গ্রোনকুইস্ট বললেন। একজন মেরিন আর্কিওলজিস্ট বলতে পারবেন, বিশেষ করে প্রাচীন ভূমধ্যসাগরীয় জাহাজ সম্পর্কে যদি তার জ্ঞান বা অভিজ্ঞতা থাকে।

    বরফের নিচে জাহাজটাকে ঘিরে সাঁতার কাটল পিট। এক জায়গায় বরফ ভেতর দিকে দেবে থাকতে দেখে পায়ের ফিন দিয়ে বারকয়েক আঘাত করল ও। বরফের আবরণ আরও ভেতর দিকে দেবে গেল। একটা হাত গলাল ও। কী যেন ঠেকল হাতে। সম্ভবত খোলের একটা তক্তা। সেটা ধরে নিজের দিকে টানতে শুরু করল ও।

    অনেক্ষণ চেষ্টার পর তক্তাটা বাঁকা হলো, কিন্তু ভাঙল না। হাল ছেড়ে দেবে কি না ভাবছে পিট, এই সময় তক্তাটাই পরাজয় স্বীকার করল, ভাঙা অংশটা নিয়ে পেছন দিকে আছাড় খেল ও আদর্শ একজন আর্কিওলজিস্ট উপস্থিত থাকলে পিটের চির শত্রুতে পরিণত হতেন। এ ধরনের প্রাচীন শিল্পকর্ম ভাঙা আর সাতটা খুন করা প্রায় একই কথা।

    পাথরে ধাক্কা খাওয়ায় কাঁধটা ব্যথা করছে পিটের। ঠাণ্ডাও অসহ্য মনে হচ্ছে। নিচে আর বেশিক্ষণ থাকা যাবে না। খোলের একটা জায়গা ভাঙতে পেরেছি, হাঁপাতে হাঁপাতে বলল ও। একটা ক্যামেরা পাঠাও।

    উঠে এসো, দেয়া যাবে, বলল জিওর্দিনো।

    গর্তের মুখে উঠে এল পিট। দেখল, ক্যামেরা নিয়ে গর্তের কিনারায় শুয়ে রয়েছে জিওর্দিনো। আন্ডারওয়াটার ভিডিও ক্যামেরা/রেকর্ডারটা ওর হাতে ধরিয়ে দিল সে। তাড়াতাড়ি কাজ সেরে ফিরে এসো। যথেষ্ট কৃতিত্ব দেখিয়েছ।

    কমান্ডার নাইট কী বলেন?

    একটু দাঁড়াও। ওকে দিচ্ছি লাইনে।

    ইয়ারফোনে ভেসে এল নাইটের গলা, ডার্ক?

    বলুন, বায়রন।

    তুমি কি নিশ্চিত, এক হাজার বছর পুরনো একটা জাহাজের ধ্বংসাবশেষ পেয়েছি আমরা?

    বেশ শক্ত প্রমাণ আছে তো।

    কিন্তু কর্তৃপক্ষকে সন্তুষ্ট করতে হলে বেশ অকাট্য প্রমাণ লাগবে। নিদেনপক্ষে একটা দুটো প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন।

    ঠিক আছে, দেখি কিছু আনতে পারি কি না।

    ঢেউ তুলে আবারো তলিয়ে যায় পিট।

    নিচে নেমে এসে সাথে সাথে কাটা দিয়ে জাহাজের ভেতর ঢুকল না ও। এক কী দুমিনিট ইতস্তত করল। কেন, তা নিজেও বলতে পারবে না। হতে পারে কঙ্কালের একটা হাত ওকে অভ্যর্থনা জানাবে, এই আশঙ্কায়। হতে পারে মনে ভয় রয়েছে ভেতরে তেমন কিছু হয়তো পাওয়া যাবে না, শেষ পর্যন্ত বোধ হয় প্রমাণিত হবে জাহাজটা অত পুরনো নয়।

    অবশেষে মাথা নোয়াল পিট। কাঁধ শক্ত করল। তারপর ধীরে ধীরে ফিন নেড়ে ঢুকে পড়ল জাহাজটার ভেতর।

    অচেনা অন্ধকার একটা জগৎ আলিঙ্গন করল ওকে।

    .

    ১৭.

    জাহাজের ভেতর ঢোকার পর থামল পিট, স্থির ঝুলে থাকল, তারপর ধীরে ধীরে ভাঁজ করা হাঁটু নামিয়ে তল পাবার চেষ্টা করল, বুকের ভেতর হৃৎপিণ্ডের ধুকধুক শুনতে পাচ্ছে, শুনতে পাচ্ছে এজগস্ট ভালভ থেকে বুদ্বুদ বেরোবার শব্দ। একটু একটু করে চারপাশের তরল জগৎ ঠাহর করতে পারল ক্ষীণ আভায়।

    জানে না কী পাবে বলে আশা করছে ও। বাল্কহেডের কয়েকটা শেলফে টেরাকোটা জার, বড় আকারের কলসি, কাপ আর পিরিচ সুন্দরভাবে সাজানো রয়েছে। ভাঙা তক্তার ভেতর দিয়ে ঢোকার সময় হাতে ঠেকেছিল তামার পাত্র। কালের আঁচড়ে খোলের দেয়ালগুলো সবুজ বর্ণ ধারণ করেছে।

    প্রথমে ভাবল, হাঁটু দুটো ডেকের শক্ত মেঝেতে রয়েছে। কিন্তু হাতড়াতে গিয়ে দেখল টালি বিছানো চুলোর মেঝেতে হাত বুলাচ্ছে। মুখ তুলে ওপরে তাকাল ও, বুদ্বুদগুলো উঠে গিয়ে এক জায়গায় গতি হারাচ্ছে, ছড়িয়ে পড়ছে চারদিকে। পা লম্বা করে দিয়ে সিধে হলো পিট, মাথা আর কাঁধ উঠে এল খাড়ির পানি ছেড়ে পরিষ্কার বাতাসে।

    জাহাজের ভেতর ঢুকছি আমি, বরফের ওপর রুদ্ধশ্বাসে অপেক্ষারত দলটাকে জানাল ও। ওপরের অর্ধেকটা শুকনো। ক্যামেরা সচল।

    ঠিক আছে, বলল জিওর্দিনো।

    পরের কমিনিট গ্যালির ভেতর, পানির ওপর আর নিচটা, ভিডিও-রেকর্ডারে বন্দি করার কাজে ব্যস্ত থাকল পিট, প্রতিটি নতুন আবিষ্কার সম্পর্কে অনর্গল বলে গেল জিওর্দিনোকে। খোলা একটা আলমিরা দেখল, ভেতরে দারুণ সুন্দর সব কাঁচের পাত্র। একটা হাতে নিয়ে ভেতরে উঁকি দিল-মুদ্রায় ভর্তি। দস্তানা পরা আঙুল দিয়ে ঘষে শ্যাওলা পরিষ্কার করল, একটা মুদ্রার। চকচক করে উঠল মুদ্রাটা। একটু লালচে সোনালি।

    রোমাঞ্চ আর বিস্ময়ে নেশা ধরে গেল পিটের। তাড়াতাড়ি চারদিকে তাকাল, যেন আশা করছে নাবিকদের আত্মা বা ভূত-টুত দেখতে পাবে। অন্তত এক-আধটা কঙ্কাল পানি ঠেলে এগিয়ে আসার বিচিত্র কিছু নয়, তাদের সংরক্ষিত গোপন জিনিসে হাত, দিয়ে ফেলেছে পিট। কিন্তু না, ক্রুদের কাউকে দেখা গেল না। ও একা। এই একই ডেকে একদিন যারা হাটাচলা করেছে, খাবার বেঁধে খেয়েছে এখানে, তারা আজ থেকে ষোলোশো বছর আগে মারা গেছে।

    আজ তারা কোথায়? কী ঘটে থাকতে পারে তাদের ভাগ্যে? এ রকম আরও অনেক প্রশ্ন জাগল পিটের মনে। এ-ধরনের অভিযান সম্পর্কে যাদের কোনো ধারণাই ছিল না, তারা এত উত্তর হিমাঞ্চলে এলই বা কেন? মৃত্যুর কারণ যদি ধরে নেয়া হয়। এক্সপোজার, তাহলে তাদের লাশগুলো গেল কোথায়?

    তুমি বরং এবার উঠে এসো, ওপর থেকে বলল জিওর্দিনো। নেমেছ তো আধঘণ্টা হয়ে এল।

    আর কিছুক্ষণ, জবাব দিল পিট। আধঘণ্টা, ভাবল ও। যদিও মনে হচ্ছে, পাঁচ মিনিট। আঙুল গলে বেরিয়ে যাচ্ছে সময়। ঠাণ্ডা এতক্ষণে ওর ব্রেনটাকে প্রভাবিত করছে। মুদ্রাটা কাঁচের পাত্রে রেখে আবার ঘুরে ফিরে দেখতে শুরু করল চারদিকে।

    মাথার ওপর মেইন ডেক, সেটাকে ছাড়িয়ে আধ মিটার উঠে গেছে গ্যালির সিলিং। ছোটো আকারের খিলান আকৃতির জানালা, সাধারণত রোদ আর বাতাস চলাচলের কাজ করে, ফরওয়ার্ড বাল্কহেডের মাথার দিকে থেকে তক্তা মেরে বন্ধ করা হয়েছে। খানিক চেষ্টা করে একটা তক্তা ভাঙতে পারল পিট, ওপারে নিরেট বরফের দেয়াল।

    মনে মনে একটা হিসাব করল। গ্যালির সামনের দিকটায় পানির গভীরতা বেশি হবে। তার মানে জাহাজের বা আর মাঝখানের অংশটা নিশ্চয়ই পানিতে ডোবা নয়।

    আর কিছু পেলে? অধৈর্য হয়ে জানতে চাইল জিওর্দিনো, কৌতূহলে মরে যাচ্ছে।

    যেমন?

    ক্রুদের অবশিষ্ট বা…?

    দুঃখিত, কোথাও কোনো হাড় দেখছি না, পানির নিচে ডুব দিল পিট, নিশ্চিত হবার জন্য ডেকের ওপর চোখ বুলালো। ডেক খালি, কোথাও কিছু পড়ে নেই।

    তারা সম্ভবত আতঙ্কিত হয়ে জাহাজ ত্যাগ করেছিল, আন্দাজ করল জিওর্দিনো।

    তারও কোনো প্রমাণ দেখছি না, জানাল পিট। গ্যালির সব কিছু গোছানো রয়েছে। ব্যস্ততার ছাপ নেই।

    জাহাজের বাকি অংশে যাওয়া যায়?

    ফরওয়ার্ড বাল্কহেড একটা হ্যাঁচ আছে। ওপারে কী আছে দেখব। কুঁকল পিট, সরু আর নিচু ফাঁকটা গলে ধীরে ধীরে সামনে বাড়ল, সতর্কতার সাথে লাইফ-লাইন আর এয়ার হোসটা সাথে রাখছে। ঘোর অন্ধকার, ভয় লাগারই কথা। ওয়েট বেল্ট থেকে ডাইভ লাইটের হুক খুলল ও, আলো ফেলে দেখল ছোট একটা কমপার্টমেন্টে রয়েছে। এটা বোধ হয় একটা স্টোররুম। পানির গভীরতা কম এখানে, শুধু হাঁটু জোড়া ডুবেছে। যন্ত্রপাতি দেখতে পাচ্ছি-হা-কাঠমিস্ত্রীর যন্ত্রপাতি, অতিরিক্ত নোঙর, বড়সড় একটা দাঁড়িপাল্লা…

    দাঁড়িপাল্লা!

    হ্যাঁ-হুক থেকে ঝুলছে একটা ব্যালেন্স স্কেল।

    বুঝেছি।

    আরও রয়েছে কয়েক ধরনের কুঠার, লিড ওয়েট, মাছ ধরার জাল। দাঁড়াও, আগে ফটো ভোলা হোক।

    কাঠের মইটা ওপর দিকে উঠে গেছে মেইন ডেকের ফোকর গলে ফটো ভোলা শেষ হতে মইটা পরীক্ষা করল পিট। কাঠে এখনও পচন ধরেনি দেখে অবাক হলো। ধাপ বেয়ে ধীরে ধীরে উঠল ও। ফোকরের ভেতর গলিয়ে দিল মাথাটা। একটা বিধ্বস্ত ডেক কেবিন দেখতে পেল। বরফের চাপে চ্যাপ্টা হয়ে গেছে।

    নিচে নেমে এসে আরেকটা মই ব্যবহার করল পিট। এটা উঠে গেছে কার্গো হোল্ডে। ওপরে উঠে এসে স্টারবোর্ড থেকে পোর্টের দিকে ডাইভ লাইটের আলো ফেলল ও। বিস্ময়ের ধাক্কায় পাথর হয়ে গেল সাথে সাথে।

    জায়গাটা শুধু কার্গে হোল্ড নয়।

    এটা একটা লুকানোর জায়গাও বটে।

    চরম ঠাণ্ডা শুকনো কার্গো হোল্ডটাকে ক্রাইয়াজিনিক চেম্বারে পরিণত করেছে। জাহাজের বো-র দিকে মাঝখানে একটা লোহার তৈরি স্টোভ নিয়ে গোল হয়ে বসে আছে ওরা। আটজন মানুষ, প্রায় সম্পূর্ণ সংরক্ষিত অবস্থায়। বরফের আবরণ প্রত্যেককে ঢেকে রেখেছে, দেখে পিটের মনে হলো, সবাই ওরা নিজেদেরকে প্লাস্টিক শিট দিয়ে মুড়ে রেখেছে।

    মুখের অবয়ব শান্ত, যেন শান্তিতে সময় কাটাছিল। চোখ খোলা সবার, খোলা অবস্থায় স্থির হয়ে গেছে, যেন কোনো দোকানের জানালায় সাজানো ম্যানিকিন। সবাই বসে আছে, তবে প্রত্যেকের ভঙ্গি আলাদা। চারজন একটা টেবিলে বসে খাচ্ছে, এক হাতে প্লেট, আরেক হাতে ধরা কাপ মুখের কাছে ভোলা। দু’জন খোলের গায়ে হেলান দিয়ে পাশাপাশি বসে আছে, গুটানো কাগজ বা পার্চমেন্ট খুলে কী যেন পড়ছে বলে মনে হলো। একজন একটা কাঠের তৈরি বাক্সের ওপর ঝুঁকে রয়েছে, শেষ ব্যক্তি নিচের দিকে ঝুঁকে কী যেন লিখছে।

    পিটের মনে হলো, যেন একটা টাইম মেশিনে ঢুকেছে ও। ভাবতে গিয়ে প্রচণ্ড বিস্ময়বোধ করল, চোখের সামনে যাদের দেখতে পাচ্ছে তারা একসময় রোম সাম্রাজ্যের নাগরিক ছিল। প্রাচীন নাবিক ওরা, যারা এমন সব বন্দরে জাহাজ ভিড়িয়েছিল, পরবর্তী সভ্যতার আবর্জনার নিচে সেসব বন্দর চাপা পড়ে গেছে, অতীত থেকে উঠে আসা ষাটটি প্রজন্ম আগেকার পূর্বপুরুষ।

    আর্কটিক আবহাওয়ার জন্য প্রস্তুতি ছিল না ওদের। কারও পরনে ভারী পোশাক নেই। কর্কশ কম্বল জড়িয়েছে সবাই গায়ে। পিটের তুলনায় ওদেরকে ছোটখাটো লাগল। ছোট্ট একটা মানুষের টাক রয়েছে, শুধু মাথার দুপাশে সাদা কিছু চুল। আরেকজনের মাথায় কঁকড়া লাল চুল, মুখে চাপ দাড়ি। দাড়ি প্রায় সবারই কামানো। বরফের আবরণ থাকলেও, বয়স আন্দাজ করতে পারল পিট। সবচেয়ে যে ছোট তার বয়স আঠারোর মতো হবে, সবচেয়ে বয়স্ক লোকটা চল্লিশের ঘরে।

    লিখতে বসে যে লোকটা মারা গেছে তার মাথায় চামড়ার একটা ক্যাপ রয়েছে, পায়ে লম্বা তুলো জড়ানো। একটা ফোল্ডিং টেবিলের ওপর ঝুঁকে রয়েছে সে, অমসৃণ টেবিলের ওপর পড়ে রয়েছে কয়েকটা মোম ট্যাবলেট। লোকটার ডান হাতে এখনও ধরা রয়েছে সূচিমুখ শলাকা অর্থাৎ কলম।

    নাবিকদের দেখে মনে হলো না খাদ্যের অভাবে বা ঠাণ্ডায় ধীরে ধীরে মারা গেছে। মৃত্যু আসে হঠাৎ করে, অপ্রত্যাশিতভাবে।

    কারণটা আন্দাজ করল পিট। ঠাণ্ডা ঠেকাবার জন্য সবগুলো হ্যাঁচ কভার নিশ্চিদ্রভাবে বন্ধ রাখা হয়েছিল। ভেন্টিলেশন-এর জন্য একমাত্র হ্যাঁচটা ভোলা ছিল সেটা বরফ জমে বন্ধ হয়ে যায়। শেষবার রান্না করা খাবারটা এখনও স্টোভের ওপর পাত্রে রয়েছে। উত্তাপ বা ধোয়ার বাইরে বেরিয়ে যাবার কোনো পথ ছিল না। মারাত্মক কার্বন মনোক্সাইড জমা হতে থাকে বদ্ধ কার্গো হোল্ডের ভেতর। কোনো পূর্বাভাস ছাড়াই অজ্ঞান হয়ে পড়ে ওরা। যে যেখানে বসেছিল সেখানে বসেই মারা গেছে।

    মোম ট্যাবলেটগুলো বরফের আবরণ ভেঙে টেবিল থেকে তুলল পিট। বরফ খুব। সাবধানে ভাঙল ও, যেন ভয় করছে লোকগুলো জেগে উঠবে। ড্রাই স্যুটের একটা পকেট খুলে ট্যাবলেটগুলো রেখে দিল। ও যে কাঁপছে, রোমকূপ দিয়ে বেরিয়ে আসছে ঘাম, এসব খেয়ালই করল না। করুণ দৃশ্যটা এমনভাবে টেনে রেখেছে ওকে, বারবার ডাকাডাকি করেও ওর কোনো সাড়া পেল না জিওর্দিনো।

    এখনও তুমি আমাদের সাথে আছ? পাঁচবারের বার জিজ্ঞেস করল সে। জবাব দাও, ধেত্তেরি ছাই!

    দুর্বোধ্য কয়েকটা শব্দ অস্পষ্টভাবে উচ্চারণ করল পিট।

    আবার বলো! তোমার বিপদ হয়েছে?

    উদ্বেগে ব্যাকুল গলা শুনে অবশেষে ধ্যান ভাঙল পিটের কমান্ডার নাইটকে জানাও, বলল ও। জাহাজের অ্যান্টিক মূল্য নিভেজাল। আর, তুমি একথাও বলতে পারো যে ওঁরা যদি সাক্ষী চান, নাবিকদের হাজির করতে রাজি আছি আমি।

    .

    ১৮.

    তোমার ফোন, কিচেনের জানালা দিয়ে বললেন জুলিয়াস শিলারের স্ত্রী।

    বাড়ির পেছনের আঙিনায় বার-বি-কিউ রত শিলার ঘুরে তাকালেন। নাম বলেছে?

    না। তবে মনে হলো, ডেইল নিকোলাস।

    দীর্ঘশ্বাস ফেলে, স্টাডিতে ঢুকে দরজা আটকে ফোন উঠালেন শিলার।

    কে?

    আমি ডেইল, জুলিয়াস।

    কী খবর?

    হে’লা কামিল। তাঁর একটা ডুপ্লিকেট পাওয়া গেছে।

    তার মানে ওয়াল্টার রীড হাসপাতালে তার মতো দেখেতে অন্য একটা মেয়ে?

    হ্যাঁ, কড়া পুলিশি প্রহরায়।

    কে মেয়েটা, মানে হেলা বলমিলের ভূমিকায়?

    অভিনেত্রী টেরি রুনি, আবার কে! তার নাকে নাক না ঠেকালে তুমি বুঝতেই পারবে না যে সে আসল হে’লা কামিল নয়, এতই চমৎকার হয়েছে তার মেকআপ। ব্যাপারটা বিশ্বাসযোগ্য করার জন্য ডাক্তারদের দিয়ে একটা প্রেস কনফারেন্সের আয়োজন করা হয়েছে, তারা হে’লা কামিলের আশঙ্কানক অবস্থা ব্যাখ্যা করবেন।

    আর হে’লা কামিল? তিনি কী করছেন? জানতে চাইলেন আন্ডার সেক্রেটারি।

    গ্রিনল্যান্ড থেকে এয়াফোর্সের যে প্লেনে ফিরে এসেছেন সেটা থেকে নামেননি তিনি, প্রেসিডেন্টের বিশেষ সহকারী বললেন। আবার ফুয়েল নিয়ে ডেনভারের কাছে বাকলি ফিল্ডে চলে গেছে প্লেনটা। ওখান থেকে হে’লা কামিলকে নিয়ে যাওয়া হবে ব্রেকেনরিজ-এ।

    কলোরাডোর স্কি রিসর্টে?

    হ্যাঁ, সিনেটর জর্জ পিটের বাড়িতে। হে’লা কামিল দুএক জায়গায় সামান্য চোট পেয়েছেন, এখন অবশ্য ভালোই আছেন।

    আমরা তাঁর দায়িত্ব নেয়ায় ভদ্রমহিলার প্রতিক্রিয়া?

    বলা হয়েছে, আমরা শুধু নিরাপদে তাঁকে জাতিসংঘে পৌঁছে দিতে চাই, অধিবেশনের উদ্বোধন উপলক্ষে সেখানে তিনি ভাষণ দেবেন। না, আমাদের সাহায্য প্রত্যাখ্যান করেননি। তাঁর ঘনিষ্ঠ মহল থেকে আভাস পাওয়া গেছে, ভাষণে ইয়াজিদের বিরুদ্ধে জোরাল বক্তব্য থাকবে। কিন্তু সমস্যা হলো, উদ্বোধনী অনুষ্ঠান পাঁচ দিন পর। হে’লা কামিলকে থামাবার জন্য পাঁচ দিন চেষ্টার কোনো ত্রুটি করবে না আখমত ইয়াজিদ।

    মঞ্চে পা রাখার আগের মুহূর্তে পর্যন্ত কোথায় আছেন তিনি তা যেন কাকপক্ষীও টের না পায়।

    মিসর সরকারের তরফ থেকে তোমার দপ্তর কিছু জানতে পারল? ডেইল নিকোলাস প্রশ্ন করলেন।

    হে’লা কামিলের ব্যাপারে প্রেসিডেন্ট হাসান আমাদেরকে পূর্ণ সমর্থন দিয়েছেন, জানালেন জুলিয়াস শিলার। দেশের অর্থনীতি নতুন করে ঢেলে সাজানোর কাজে অত্যন্ত ব্যস্ত তিনি, বলা যায় চব্বিশ ঘণ্টা মিটিংয়ের মধ্যে আছেন। ভদ্রলোক আন্তরিক, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। ভাষণ দেয়ার আগেই যদি ইয়াজিদের পাঠানো অ্যাসাসিনের হাতে হে’লা কামিল মারা যান, তাহলে ধরে নিতে পারো, এক মাসের মধ্যে আরেকটা ইরান পাবেন।

    শান্ত হও, আশ্বাস দিলেন ডেইল নিকোলাস। হে’লা কামিল কোথায় আছেন, আখমত ইয়াজিদ বা তার পাঠানো খুনিরা জানতেই পাববে না।

    প্রহরার ব্যবস্থা যথেষ্ট…

    সিক্রেট সার্ভিসের একদল এজেন্ট খোঁজখবর রাখছে।

    জুলিয়াস শিলার বললেন, আরও নিশ্চিন্ত হতে পারতাম কাজটায় যদি এফ. বি. আই, সাহায্য করত।

    হোয়াইট হাউসের সিকিউরিটি স্টাফেরা সব দিক ভেবেই এই ব্যবস্থা করেছে। তাছাড়া, প্রেসিডেন্ট চাইছেন না পাঁচমিশালি একটা আয়োজন করা হোক।

    দেখো, ডেইল, সাবধান-ব্যাপারটা লেজে গোবরে করে ফেলো না।

    আরে, চিন্তা কোরো না, তো! কথা দিলাম, হে’লা কামিল নির্দিষ্ট দিনে সম্পূর্ণ বহাল তবিয়তে জাতিসংঘ সদর দফতরে পৌঁছবেন।

    সত্যি যেন পৌঁছান।

    সূর্য যদি পশ্চিমে ওঠে, তবুও পৌঁছবেন।

    ফোনের রিসিভার নামিয়ে রাখলেন জুলিয়াস শিলার। কোনো কারণ নেই, তবু অস্বস্তিবোধ করছেন তিনি। মনে মনে ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করলেন, খারাপ কিছু যেন না ঘটে। তারপর ভাবলেন, হোয়াইট হাউস যা করছে নির্ঘাত সব দিক ভেবে-চিন্তেই করছে।

    .

    রাস্তার ওপারে একটা ফোর্ড কোম্পানির ভ্যানে তিনজন লোক বসে আছে। ভ্যানের গায়ে লেখা-ক্যাপিটাল প্লামবিং, টোয়েন্টি ফোর আওয়ার ইমার্জেন্সি সার্ভিস। ভেতরে অত্যাধুনিক আড়িপাতা যন্ত্র গিজগিজ করছে।

    তিনজনই ওরা সাবেক কাউন্টার এসপিওনাজ এজেন্ট, চাকরি থেকে ইস্তফা দিয়ে চুক্তিভিত্তিক স্বাধীন ব্যবসায় নেমেছে। এ ধরনের এজেন্টরা সাধারণত সরকারি ছাড়া অন্য কোনো কাজ গ্রহণ করে না। তবে এদের কথা আলাদা। এরা তিনজন অল্প দিনে কোনো কাজ গ্রহণ করে না। তবে এদের কথা আলাদা। এরা ইত্যাদি বিসর্জন দিয়েছে তারা। যে বেশি টাকা দেয় তার কাছেই এরা ক্লাসিফায়েড ইনফরমেশন বিক্রি করে।

    শিলারের জানালার রঙিন কাঁচের দিকে বাইনোকুলার তাক করে তাদের একজন বলল, লিভিং রুম থেকে বেরিয়ে যাচ্ছেন উনি।

    দ্বিতীয় লোকটা মোটাসোটা, কানে ইয়ারফোন লাগিয়ে ঝুঁকে রয়েছে রেকর্ডিং মেশিনের দিকে, বলল, কথাবার্তা সব থেমে গেছে।

    তৃতীয় লোকটার বিশাল গোফ, সে একটা লেয়ার প্যারাবোলিক অপারেট করছে। জিনিসটা স্পর্শকাতর মাইক্রোফোন, ঘরের ভেতরের কণ্ঠস্বর রিসিভ করে জানালার কাঁচে কম্পন থেকে, তারপর সেটাকে ফাইবার অপটিক্স-এর মাধ্যমে ম্যাগনিফাই করে সাউন্ড চ্যানেলে পাঠিয়ে দেয়।

    ইন্টারেস্টিং কিছু? প্রথমজন জানতে চাইল।

    মোটাসোটা দ্বিতীয়জন এয়ারফোন নামিয়ে কপালের ঘাম মুছল। একটা ফিশিং বোট কেনার টাকা বোধ হয় এবার পেয়ে গেলাম।

    গোঁফে তা দিয়ে তৃতীয় লোকটা জানতে চাইল, তথ্যটার সম্ভাব্য ক্রেতা কে হতে পারে?

    এক উন্মাদ ধনী আখমত ইয়াজিদকে সাহায্য করতে চায়।

    .

    ১৯.

    নিজের ডেস্কের পেছন থেকে উঠে দাঁড়িয়ে সিআইএ প্রধান, মার্টিন ব্রোগানের উদ্দেশে ইশারা করলেন প্রেসিডেন্ট।

    মাথার রুপালি চুলে হাত বুলিয়ে তিনি বললেন, আজ সকালে গুরুত্বপূর্ণ কী খবর আছে আমার জন্য?

    কাঁধ ঝাঁকিয়ে প্রেসিডেন্টের বসার অপেক্ষায় রইলেন ব্রোগান। এরপর লেদার মোড়া একটা ফাইল এগিয়ে দিলেন তার দিকে। মস্কোর সময় সকাল নয়টায় সোভিয়েত প্রেসিডেন্ট জর্জি অ্যান্টেনভ তার স্ত্রীর সাথে প্রেম করেছেন গাড়ির ব্যাক সিটে!

    তার দিন শুরুর কায়দা দেখে আমি ঈর্ষান্বিত, চওড়া হেসে বললেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।

    ওনার গাড়ির ফোন থেকে দুটো কল করেছেন তিনি; একটি রাশিয়ার মহাকাশবিষয়ক প্রোগ্রামের প্রধানকে, অপরটি নিজের ছেলেকে। মেক্সিকো সিটির বাণিজ্যিক অংশে দূতাবাসে কাজ করে সে। পেজার নম্বর চার আর পাঁচে তাদের আলাপচারিতার একটা বর্ণনা পাবেন।

    চোখে রিডিং গ্লাস এঁটে চার এবং পাঁচ নম্বর পাতায় চোখ বোলালেন প্রেসিডেন্ট।

    দিনের বাকি সময় কী করল জর্জি?

    বেশির ভাগ সময় ব্যয় করেছেন অভ্যন্তরীণ বিষয় নিয়ে। তার অবস্থা বেশ নাজুক। সোভিয়েত অর্থনীতির অবস্থা খারাপ থেকে খারাপতর হচ্ছে। সেনাবাহিনীতে তার সমর্থন কম। ওদিকে রাশিয়ার জনতা এখন অনেক বেশি সরব। শোনা যাচ্ছে, আগামী গ্রীষ্মের আগেই জর্জি অ্যান্টেনভের পদত্যাগ করতে হতে পারে।

    আমার নিজেরও ওই অবস্থা হতে পারে, যদি না নিজের পক্ষে জনমত জোরাল করতে পারি।

    এই কথায় স্বাভাবিকভাবেই নিশ্চুপ রইলেন ব্রোগান।

    মিসর থেকে সাম্প্রতিক কী খবর পাওয়া গেল? এবারে প্রসঙ্গ বদল করে জানতে চাইলেন প্রেসিডেন্ট।

    নাদাভ হাসান এখনও ক্ষমতায় টিকে আছেন শুধুমাত্র এয়ারফোর্সের সমর্থন নিয়ে ব্যাপক রদবদল সত্ত্বেও সেনাবাহিনীতে তার ক্ষমতা পুরোপুরি প্রতিষ্ঠিত হয়নি, সামরিক নেতৃবৃন্দ যেকোনো মুহূর্তে ইয়াজিদের পক্ষ অবলম্বন করতে পারেন। প্রতিরক্ষা মন্ত্রী আবু হামিদ, পোর্ট সাঈদ-এ গোপনে ইয়াজিদের সাথে বৈঠক করেছেন। সি.আই.এ এজেন্টরা জানতে পেরেছে, ক্ষমতাশালী একটা পদ না পেলে আখমত ইয়াজিদকে সমর্থন দিতে রাজি হননি আবু হামিদ। মৌলবাদী মোল্লাদের অধীনে থাকার কোনো ইচ্ছে তার নেই।

    কী মনে হয়, ইয়াজিদ হাল ছেড়ে দেবে?

    মাথা নাড়লেন ব্রোগান। কাউকে ক্ষমতার ভাগ দেয়ার কোনো ইচ্ছে ইয়াজিদের নেই। তাঁর নিষ্ঠুরতা সম্পর্কে ভুল ধারণা পোষণ করছেন আবু হামিদ। তিনি জানেন না, তবে সি.আই.এ, জানে যে আবু হামিদের প্রাইভেট প্লেনে বোমা ফিট করার একটা ষড়যন্ত্র হয়েছিল। ষড়যন্ত্রটা ব্যর্থ করে দেয়া হয়েছে। আবু হামিদকে ব্যাপারটা জানানোর জন্য প্রেসিডেন্টের অনুমতি প্রার্থনা করলেন সি.আই.এ. ডিরেক্টর।

    হে’লা কামিলকে বহনকারী জাতিসংঘ বিমানের দুর্ঘটনার সঙ্গে ইয়াজিদকে বাঁধা যায়?

    প্রেসিডেন্টের প্রশ্নের উত্তরে মারটিন ব্রোগান জানালেন, জাতিসংঘ প্লেন বিধ্বস্ত হওয়ার পেছনে ইয়াজিদের হাত থাকলেও তা প্রমাণ করা যাচ্ছে না। জানা গেছে, প্লেনটাকে গ্রিনল্যান্ডে নিয়ে যাওয়ার জন্য দায়ী হলো ভুয়া পাইলট, সুলেমান আজিজ। কিন্তু আরোহীদের খাবারে বিষ মেশানোর কাজটা তার কীর্তি নয়। এই কাজের জন্য এডুরাডো ইয়াবারা নামে একজন মেক্সিকান প্রতিনিধিকে সন্দেহ করা হচ্ছে, প্লেন বিধ্বস্ত হবার সময় মারা গেছে সে। হে’লা কামিল বাদে সে-ই একমাত্র আরোহী, যে, প্লেনে ওঠার পর কোনো খাদ্য গ্রহণ করেনি। ফ্লাইট অ্যাটেনড্যান্ট যে মেয়েটা বেঁচে গেছে তার ভাষ্য অনুসারে, এডুরাডো ইয়াবারাকে খাবার সাধা হয়েছিল, কিন্তু পেট ভালো নেই বলে এড়িয়ে যায় সে।

    এমন তো হতে পারে, সত্যি তার পেট খারাপ ছিল? বললেন প্রেসিডেন্ট।

    না, নিজের ব্রিফকেস থেকে তাকে একটা স্যান্ডউইচ খেতে দেখেছে বেঁচে যাওয়া ফ্লাইট অ্যাটেন্ডেন্ট।

    তাহলে তো সে জানত, খাবারে বিষ আছে।

    তাই তো মনে হয়।

    সে ছাড়া সবাই মরবে, এটা জানার পরেও বিমানে উঠল কেন ব্যাটা?

    ব্যাক আপ পরিকল্পনা হিসেবে। যদি তার টার্গেট বিষ বিশ্রিত খাবার নায় খায় তাই সে ছিল ওখানে।

    চেয়ারে হেলান দিয়ে সিলিংয়ে তাকালেন প্রেসিডেন্ট।

    তো, কামিল হলো ইয়াজিদের পথের কাটা। সুলেমান আজিজের মাধ্যমে তাঁকে নিকেশ করতে চেয়েছিল সে। কিন্তু পরিকল্পনা ভেস্তে গেল-গ্রিনল্যান্ড উপকূলে বিধ্বস্ত হলো, বিমান, আর্কটিকে তলিয়ে গেল না। বেশ রহস্যজনক। মিসরের যোগাযোগ না হয় বুঝলাম। কিন্তু মেক্সিকান প্রতিনিধির কামিলকে মেরে কী লাভ? এতগুলো লোক মেরে কী অর্জন করতে চায় তারা? এখন তো প্রমাণের অভাবে কিছুই করা সম্ভব নয়।

    ব্রোগান বললেন, মেক্সিকোতে কোনো রকম সন্ত্রাসী তৎপরতার রিপোর্ট নেই।

    টপিটজিনকে ভুলে গেলে?

    ভুলিনি। গাই রিভাসের পরিণতির কথাও মনে আছে। একটু সুযোগ পেলেই ওকে ধরব।

    দীর্ঘশ্বাস ফেললেন প্রেসিডেন্ট। লোকটা একটা রক্তপিপাসু উন্মাদ! মেক্সিকোর ক্ষমতা যদি পায় সে, খবর আছে আমাদের।

    রিভাসের মরণ-চিৎকারের টেপটা আপনি শুনেছেন? জানতে চাইলেন ব্রোগান, উত্তর তার ভালো করেই জানা।

    চারবার। দুঃস্বপ্ন দেখছি সেই থেকে।

    মারটিন ব্রোগান এৰারে গুরুত্বপূর্ণ কথাটা বললেন, কিন্তু যদি মেক্সিকোর বৈধ সরকারকে উৎখাত করে টপিটজিন ক্ষমতা দখল করে, তখন কী হবে? আমেরিকার দক্ষিণ-পশ্চিম এলাকা কজা করার হুমকি দিয়েছে সে। মেক্সিকানরা যদি মিছিল করে সীমান্ত পেরোতে শুরু করে?

    প্রেসিডেন্ট মৃদু গলায়, শান্তভাবে জানালেন, আমেরিকার মাটিতে কেউ অনুপ্রবেশ করলে তাকে গুলি করার নির্দেশ দেব আমি। বিদেশি আগ্রাসন আমি সহ্য করব না।

    .

    সিআইএ সদর দপ্তর, ল্যাংলিতে ফিরে এলেন মার্টিন ব্রোগান। নেভির অ্যাসিস্যান্ট সেক্রেটারি, এলমার শ অপেক্ষা করছিল তার জন্য।

    বিরক্ত করার জন্য দুঃখিত। কিন্তু ইন্টারেস্টিং খবর আছে আমার কাছে।

    বসো। কী ব্যাপার?

    আমাদের সার্ভে জাহাজ, পোলার এক্সপ্লোরার, আর্কটিকে হারিয়ে যাওয়া আলফা ক্লাস সোভিয়েত সাবমেরিন খুঁজছিল-

    হ্যাঁ, জানি, থামিয়ে দিয়ে বললেন সিআইএ প্রধান।

    ওটা খুঁজে পেয়েছে তারা।

    চোখ দুটো বড় বড় হলো মার্টিন ব্রোগানের, টেবিলে চাপড় দিয়ে উল্লাস প্রকাশ করলেন তিনি।

    চমৎকার! দারুণ কাজ দেখিয়েছে তোমাদের লোকজন।

    এখনো অবশ্য আমরা কোনো হাত দিইনি ওটায়, শ’ বললেন।

    রাশিয়ানরা? ওরা কি খোঁজ পেয়ে গেছে?

    সম্ভবত, না। আসলে, জাতিসংঘের বিমান দুর্ঘটনার কারণে ওটা উদ্ধার করতে যায় আমাদের দল। এতে করে ভালো একটা ডাইভারশন পেয়ে যাই আমরা। নিশ্চিদ্র গোপনীয়তা বজায় রাখা হয়েছে।

    এখন কী পরিকল্পনা?

    পানির তলায় একটা উদ্ধার অভিযানের প্রস্তুতি নিচ্ছি আমরা, দশ মাস সময় লাগবে ওতে। এদিকে আরো একটা ব্যাপার ঘটে গেছে। সোভিয়েতরা পুরো দ্বিধান্বিত হয়ে পড়বে এতে করে।

    মানে?

    বলা যায়, দৈবাৎ, একটা পুরনো রোমান জাহাজ আবিষ্কার করেছে নুমার কর্মীরা, বরফের তলায়।

    গ্রিনল্যান্ডে? ব্রাগানের চোখে অবিশ্বাস।

    বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কোনো সন্দেহ নেই। আমরা পোলার এক্সপ্লোরারকে ওখানে, রেখেই একটা উদ্ধার অপারেশন চালাবো, এতে করে রাশিয়ানরা ভাববে, হয়তো পুরনো জাহাজ নিয়েই আমাদের মাথাব্যথা। ওদের সাবমেরিন খুব কাছেই।

    রোমান জাহাজটা থেকে কি পাব বলে আশা করছি আমরা? প্রচুর স্বর্ণমুদ্রা? অমূল্য শিল্পকর্ম?

    অতি পুরনো কিছু থেকে সবাই তো আমরা গুপ্তধন আশা করি।

    দু’জনের কেউই জানেন না, বিষয়টা শুধু ইতিহাস আর গুপ্তধনের মধ্যে সীমাবদ্ধ। থাকবে না, আগামী আটচল্লিশ ঘণ্টার মধ্যে ওদের সবার ঘুম হারাম করে দেবে।

    ⤶ ⤷
    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleদ্য মহাভারত কোয়েস্ট : দ্য আলেকজান্ডার সিক্রেট – ক্রিস্টোফার সি ডয়েল
    Next Article ড্রাগন – ক্লাইভ কাসলার

    Related Articles

    ক্লাইভ কাসলার

    দ্য ফারাও’স সিক্রেট – ক্লাইভ কাসলার ও গ্রাহাম ব্রাউন

    August 5, 2025
    ক্লাইভ কাসলার

    পাইরেট – ক্লাইভ কাসলার / রবিন বারসেল

    August 5, 2025
    ক্লাইভ কাসলার

    দ্য সলোমন কার্স – ক্লাইভ কাসলার ও রাসেল ব্লেক

    August 5, 2025
    ক্লাইভ কাসলার

    ড্রাগন – ক্লাইভ কাসলার

    August 5, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Generic selectors
    Exact matches only
    Search in title
    Search in content
    Post Type Selectors
    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    চিরস্থায়ী বন্দোবস্তে বাঙলাদেশের কৃষক – বদরুদ্দীন উমর

    October 29, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    চিরস্থায়ী বন্দোবস্তে বাঙলাদেশের কৃষক – বদরুদ্দীন উমর

    October 29, 2025
    Our Picks

    চিরস্থায়ী বন্দোবস্তে বাঙলাদেশের কৃষক – বদরুদ্দীন উমর

    October 29, 2025

    পূর্ব বাঙলার ভাষা আন্দোলন ও তৎকালীন রাজনীতি ২ – বদরুদ্দীন উমর

    October 29, 2025

    বাঙলাদেশে কমিউনিস্ট আন্দোলনের সমস্যা – বদরুদ্দীন উমর

    October 29, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    • Sign Up
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }