Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    দ্য দা ভিঞ্চি কোড – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025

    এঞ্জেলস এন্ড ডেমনস – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • 🔖
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    Subscribe
    সাইন ইন
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    ডিজিটাল ফরট্রেস – ড্যান ব্রাউন

    ড্যান ব্রাউন এক পাতা গল্প381 Mins Read0

    ০১০. এনসেই টানকাডো মারা গেছে

    অধ্যায় : ১০

    এনসেই টানকাডো মারা গেছে? সুসান বুঝে উঠতে পারল না যেন, মারা গেছে? আপনারা খুন করিয়েছেন? আপনি না বললেন…

    আমরা তাকে ছুঁয়েও দেখিনি। আশ্বস্ত করল স্ট্র্যাথমোর, হার্ট এ্যাটাকে মারা গেছে। কমনিট আজ সকাল সকাল ফোন করেছিল। টানকাডোর নামটা তাদের কাছে গেছে সেভিল পুলিশের হাত ধরে, ইন্টারপোলের মাধ্যমে।

    হার্ট এ্যাটাক? এখনো সুসানের চোখেমুখে সন্দেহ, তার বয়স মাত্র ত্রিশ বছর।

    বত্রিশ। শুধরে দিল স্ট্র্যাথমোর, হার্ট জন্মগতভাবে দুর্বল।

    আমি কখনো শুনিনি কথাটা।

    এন এস এ ফিজিক্যাল টেস্টে ধরা পড়েছিল। সে এসব নিয়ে মাথা ঘামাত না। বলে বেড়াত না কাউকে।

    এমন সময় মত তার হার্ট এ্যাটাক হল?

    সময় মত। ঠিকই। একেত স্পেনের গরম, তার উপর এন এস এ কে ব্ল্যাকমেইলিং করা নিয়ে ভয়…

    সুসান চুপ করে থাকল। এমনকি তার একটু একটু আফসোসও হচ্ছে। ভাবনায় চিড় ধরল স্ট্র্যাথমোরের কথায়।

    এত সব হতাশার মধ্যে একটা মাত্র আশার খবর আছে। টানকাডো একা একা ভ্রমণ করছিল। আশা একটাই। তার পার্টনার এখনো সম্ভবত জানে না। স্প্যানিশ পুলিশ কথাটা ধামাচাপা দিয়ে রাখবে যতক্ষণ সম্ভব। আমি তোমাকে ডেকেছি এ জন্যেই। তোমার সহায়তা দরকার।

    বিভ্রান্ত দেখাচ্ছে সুসানকে। কমান্ডার, যদি জানাই যায় টানকাডো মারা গেছে হার্ট এ্যাটাকে, তাহলে আমাদের আর সমস্যা কী? আমরা তো আর খুন করিনি। বেঁচে গেলাম দায় থেকে।

    বেঁচে গেলাম দায় থেকে? অবিশ্বাসে বিস্ফোরিত হল স্ট্র্যাথমোরের চোখমুখ। কেউ একজন এন এস এ কে জিম্মি করছে আর তার দু চারদিন পরই পাওয়া গেল তাকে। মৃত। আমরা দায় থেকে মুক্তি পাই কী করে? বাজি ধরতে রাজি আছি, টানকাভোর সেই বন্ধু ব্যাপারটাকে ভালভাবে নিবে না। এ কাজ যে কোনভাবে করা যায়। একটু পয়জন, একটু অটোপসি বা এ ধরনের কিছু একটা। টানকাভোর মারা যাবার কথা শোনার পর তোমার প্রথম কী মনে হল?

    মনে হল এন এস এ তাকে মেরে ফেলেছে।

    ঠিক তাই। এন এস এ যদি পাঁচটা রায়োলাইট স্যাটেলাইট পাঠাতে পারে জিওসিনক্রোনাস অর্বিটে, মধ্যপ্রাচ্যের উপর, তাহলে সবাই ধরেই নিতে পারে যে স্প্যানিশ কয়েকজন পুলিশকে হাত করার মত ক্ষমতা আমাদের আছে।

    সাথে সাথে মনে মনে হিসাব কষে ফেলল সুসান, এনসেই টানকাডো বেচে নেই। এখন ধরা হবে এন এস এ কে। আমরা কি সময় মত থার্ড পার্টিকে ধরে ফেলতে পারব?

    আমার মনে হয় পারব। আমাদের একটা প্লাস পয়েন্ট আছে। টানকাডো আগেই সবাইকে জানিয়ে দিয়েছে যে সে একজনকে সাথে নিয়ে কাজ করবে। তার কি চুরি করা থেকে বিরত রাখবে এ কথা সফটওয়্যার কোম্পানিগুলোকে। কোন ক্ষতি হবে না তার। যদি তার গায়ে একটু আচড় লাগে, তাহলেই কেল্লা ফতে। সফটওয়্যারটা ফ্রি দিয়ে দেয়া হবে আর সব কোম্পানি চোখ চড়কগাছ করে তাকিয়ে দেখবে যে তারা এখন একটা ফ্রি সফটওয়্যারের সাথে লড়ে নাস্তানাবুদ। হয়ে যাচ্ছে।

    ক্লেভার।

    বলে চলল স্ট্র্যাথমোর, কয়েকবার টানকাড়ো সবার সামনেই তার সেই পার্টনারের নাম নিয়েছে। ডেকেছে নর্থ ডাকোটা নামে।

    নর্থ ডাকোটা? ছদ্মনাম।

    হু। আমি তারপর একটা ইন্টারনেট ইনকোয়ারি করি। সার্চের বিষয় ছিল নর্থ ডাকোটা। আশা ছিল না, কিন্তু ভালই হল। থামল স্ট্র্যাথমোর, আমি আসলে নিশ্চিত হবার জন্য এ্যাকাউন্টটা সার্চ করি। আমার অবস্থাটা একবার চিন্তা কর যখন সেখানে টানকাডোর ই-মেইল পেলাম অনেকগুলো! সেখানে ডিজিটাল ফোর্ট্রেস আর এন এস এর কথা ছিল বারবার।

    সুসান ভেবে পায় না এত সহজে কী করে ভেবে নিল কমান্ডার যে সে ঠিক পথেই আছে! কমান্ডার, যুক্তি দিল সে, টানকাডো: ভালভাবেই জানে যে আমরা ই মেইলের বারোটা বাজাতে জানি। সব বের করে আনতে জানি। সে কী করে এ মাধ্যমটাই বেছে নিবে আরো অনেক পথ থাকতে? এ এক ফাঁদ। এনসেই টানকাডো আপনাকে তুলে দিয়েছে নর্থ ডাকোটাকে। এবার আমরা শান্ত হব। এর মধ্যে সে সময় পাবে।

    ভাল আন্দাজ, বলল স্ট্র্যাথমোর, দুটা ব্যাপার বাদে। আমি কিন্তু নর্থ ডাকোটায় পাইনি। পেয়েছি এন ডাকোটা। একটু ঘুরিয়ে। এতটা সে আশা নাও করতে পারে।

    দেখুন, সে জানে, কিছু না কিছু পাবার আগ পর্যন্ত আপনি ক্ষান্ত দিবেন না। তাই সেও কাছাকাছি একটা কিছু রাখল। এন ডাকোটা।

    কথা বলার আগে একবার একটা দেখে নাও।

    তাকাল সুসান একটা লেখার দিকে। বুঝতে পারল কেন কমান্ডার ___ নিশ্চিত হচ্ছেঃ

    ndakota@ara.anon.org

    এখানে এ আর এ টাই সুসানের নজর কেড়ে নিয়েছে। এ আর এ মানে আমেরিকান রিমেইলার্স এ্যানোনিমাস। খুবি বিখ্যাত এ্যানোনিমাস সার্ভার।

    এ্যানোনিমাস সার্ভারগুলো সেসব ইন্টারনেট ইউজারের কাছে প্রিয় যারা তাদের ই-মেইলের যাবতীয় তথ্য লুকিয়ে রাখতে চায়। একটা ফি এর বিনিময়ে এসব কোম্পানি মিডলম্যানের কাজ করে।

    ব্যাপারটা অনেকটা পোস্ট বক্সের মত। কে এর মালিক, কী তার ঠিকানা, কিছুই জানে না লোকে। জানে শুধু একটা পোস্ট বক্স নাম্বার। প্রথমে ই-মেইলটা পাঠানো হয় এলিয়াসদের কাছে। তারপর আসল ব্যবহারকারীর দিকে। এসব কোম্পানির মূলধন হল প্রতিজ্ঞা। তারা কিছুতেই ব্যবহারকারীর ঠিকানা কাউকে জানাবে না।

    এটাই প্রমাণ নয়, বলল স্ট্র্যাথমোর, কিন্তু এতে সন্দেহ জাগে, তাই না?

    তার মানে আপনি বলতে চান যে এনসেই টানকাড়ো কোন পরোয়া করে না কারণ তার এ্যাকাউন্ট একটা এ আর এ দিয়ে প্রতিরক্ষা পাচ্ছে?

    ঠিক তাই।

    এ আর এ সার্ভিসগুলো ব্যবহার করে মূলত আমেরিকানরা। আপনার কী মনে হয়? লোকটা এখানকার?

    হতে পারে। একজন আমেরিকান পার্টনারের মাধ্যমে টাকাতো দারুণ এক বাজি ধরল। দুনিয়ার দু প্রান্তে তার পাস কি দুজনের কাছে থাকবে। স্মার্ট মুভ।

    এনসেই টানকাডো তার এই গোপন ব্যাপারটা আর তার সাথে শেয়ার করবে না। আর টানকাডোর প্রিয়জন খুব কমই আছে আমেরিকায়।

    নর্থ ডাকোটা, বলল সুসান, এমন কিছু কি করছে যা দিয়ে তার লোকেশন পাওয়া সম্ভব?

    না। কমনিট শুধু তার এ্যাকাউন্ট থেকে ডাটা তুলে আনছে। এখনো ঠিকানাবিহীন এক মানুষ সে।

    এটা ফাঁকিবাজি নয়তো?

    কেন?

    একটা ব্লাফ দেয়ার চেষ্টা থাকতে পারে এনসেই টানকাডোর। সে হয়ত কোন ডেড এ্যাকাউন্টে চিঠি পাঠাচ্ছে। এদিকে কাজটা সারছে একাই।

    স্ট্র্যাথমোর মুখ বাঁকিয়ে হাসছে। মেয়েটার প্রতিভা আছে বলতে হবে! দারুণ আইডিয়া, কিন্তু একটা ব্যাপার আছে এখনো। সে কোন পরিচিত নাম্বার ব্যবহার করছে না। ব্যবহার করছে না তার হোম বা বিজনেস এ্যাড্রেস। ডোশিসা ইউনিভার্সিটিকে কাজে লাগাচ্ছে। কাজ করছে, বলা ভাল করছিল, তাদের মূল মেইনফ্রেম নিয়ে। বোঝা যায়, সেখানে একটা এ্যাকাউন্ট জুটিয়ে নিয়েছিল এবং সেটাকে গোপন রাখতে পেরেছিল। আমি একেবারে হঠাৎ করেই সেটা পেয়ে যাই। একটু থামল কমান্ডার স্ট্র্যাথমোর, তাহলে, টানকাডো যদি চায় তার এ্যাকাউন্ট পাওয়া যাক, তার চিঠিগুলো পড়া হোক, তাহলে এত বেশি গোপন কোন ঠিকানা থেকে পাঠাবে কেন?

    হয়ত সে এ কাজ করছে যেন আপনি মনে করেন এটা কোন ফাঁদ নয়। হয়ত সে এত বেশি গোপনে এবং সুরক্ষিত অবস্থায় রাখছে যেন আপনি মনে করেন একেবারে ভাগ্যগুণে পেয়ে গেছেন সেটা। এতে এনসেইর কাজের প্রশংসা করতে হয়।

    আবার হাসল স্ট্র্যাথমোর, তোমার আসলে একটা ফিল্ড এজেন্ট হওয়া দরকার ছিল। তাতে ভাল করতে পারতে। কিন্তু আফসোস। সেটা মিথ্যা কোন ফাঁদ নয়। প্রতিবার টানকাড়ো মেইল পাঠাচ্ছে, জবাব দিচ্ছে নর্থ ডাকোটা। নর্থ ডাকোটা পাঠাচ্ছে, জবাব দিচ্ছে টানকাডো।

    যথেষ্ট হয়েছে। তার মানে আপনি মনে করছেন যে নর্থ ডাকোটা মিথ্যা নয়, আসলটাকেই ধরতে পেরেছেন?

    আশা করি। এখন ব্যাটাকে ধরে আনতে হবে। এমনভাবে, যেন কাক-পক্ষীও টের না পায়। সে যদি একটুও বাতাস টের পায়, আমরা তার লেজে লেগেছি তা জানতে পারে, তাহলেই খেল খতম।

    এবার সুসান ঠিক ঠিক বুঝতে পারছে কী কারণে তাকে ডেকেছে স্ট্র্যাথমোর, আমাকে আন্দাজ করতে দিন, আপনি চাচ্ছেন আমি এ আর এ তে ঢুকি, তারপর নর্থ ডাকোটার ডাটাবেস বের করে আনি সেখান থেকে। তার ঠিকানাটা জেনে ফেলি?

    মিস ফ্লেচার, তুমি আমার মন পড়ে ফেলতে পারছ গড়গড় করে।

    এ ধরনের কাজে সুসান আগেও নেমেছে। এক বছর আগে হোয়াইট হাউসের এক কর্তাব্যক্তির কাছে উড়ো ই-মেইল আসে। তার এ্যাড্রেস এ্যানোনিমাস। এন এস এর উপর হুকুম জারি হল, তাকে ধরতে হবে। এন এস এ চেপে ধরতে পারত সে কোম্পানির ঘাড়, তাতে কাজের কাজ কতটা হত সন্দেহ। ফলে অন্য পথ নিল তারা। ট্রেসার।

    সুসান তখন কাজে লাগে। সে একটা ডিরেকশনাল বিকন তৈরি করে ই মেইলের রূপ ধরে। সেটা প্রথমে ঢুকে যাবে ইউজারের কাছে। তারপর ফিরে। আসবে তথ্য নিয়ে। কোথায় আছে সে, সে তথ্য নিয়ে। সেদিন থেকে এন এস এর কাছে এ্যানোনিমাস মেইলারদের সমস্যা নিতান্তই ছেলেখেলা।

    আমরা কি তাকে খুঁজে পাব? স্ট্র্যাথমোর প্রশ্ন তুলল।

    অবশ্যই। আপনি আমাকে কল করে এতোক্ষণ সময় নষ্ট করলেন কেন?

    আসলে আমি তোমাকে কলই করতাম না। এখানে আর কাউকে জড়ানোর কোন ইচ্ছাই ছিল না। তোমার মত করে একটা ট্রেসার পাঠানোর চেষ্টা করলাম। কিন্তু তুমি ঐ জিনিসটাকে নতুন হাইব্রিড ল্যাঙ্গুয়েজে লিখেছিলে। যতবার সেগুলো নিয়ে চেষ্টা করলাম, আজেবাজে ডাটা এসে ভরে গেল। তাই ডাকা ছাড়া আর কোন পথ খোলা ছিল না সামনে।

    মুখ ভেঙচে হাসল সুসান। স্ট্র্যাথমোর দারুণ প্রোগ্রামার হলেও তার জ্ঞান এ্যালগরিদমের দিক দিয়ে সীমিত। সুসান এ জিনিসটা একেবারে আনকোরা এক প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজে লিখেছে। নাম লিম্বো।

    আমিই এর দেখভাল করছি। আমার টার্মিনালে পাবেন।

    সময়ের ব্যাপারে কোন আইডিয়া আছে?

    সুসান থামল। আসলে… সেটা নির্ভর করে কত দ্রুত এ আর এ তাদের মেইলগুলো পাঠিয়ে দেয় তার উপর। সে যদি আমেরিকায় থাকে আর এ ও এল বা কম্পিউসার্ভ জাতীয় কিছু ব্যবহার করে তাহলে আমি তার ক্রেডিট কার্ডে ঢুকে গিয়ে বিলিং এ্যাড্রেসটা বের করে ফেলব এক ঘন্টার মধ্যে। কিন্তু সে যদি কোন ইউনিভার্সিটি বা কোন কর্পোরেশনের সাথে থাকে, একটু বেশি সময় তো লাগবেই, অপ্রস্তুত একটা হাসি দিল সে, এরপর বাকিটা আপনার উপর।

    সুসান জানে, বাকি হল এন এস এ স্ট্রাইক টিম। আগে তার বাসার পাওয়ার কেটে দিবে। তারপর জানালা দিয়ে তাক করবে অত্যাধুনিক অস্ত্র। টিম হয়ত জানবে ব্যাপারটা ড্রাগের সাথে জড়িত:এদিকে অন্য কোন পদক্ষেপও নিতে পারে। স্ট্র্যাথমোর। সে চাইবে চৌষট্টি বিটের পাস কি টা যেন হাতে চলে আসে। তারপর সে সেটাকে ধ্বংস করে দিবে। ডিজিটাল ফোর্ট্রেস অসীম সময় ধরে নেটে পড়ে থাকবে। সব সময়ের জন্য তার ভিতরেই থেকে যাবে তার গোপনীয়তা।

    ট্রেসারটাকে সাবধানে পাঠাও, বলল স্ট্র্যাথমোর, যদি নর্থ ডাকোটা জানতে পারে যে আমরা তার পিছনে লেগেছি তাহলেই সাবধান হয়ে যাবে সে। আতঙ্কে জায়গা ছেড়ে চলে যাবে কি টা সাথে নিয়ে। আমরা আর কিছু করতে পারব না। টিম গিয়ে দেখবে সব ভো ভো।

    হিট এ্যান্ড রান, বলল সুসান আশ্বস্ত করার ভঙ্গিতে, আমরা আগে তাকে আঘাত করব চিঠিটা দিয়ে। তারপর সেটা সেখানেই হাপিস হয়ে যাবে। সে জানতেও পারবে না একটা মেইল এসেছিল।

    থ্যাঙ্কস।

    সুসান একটা কোমল হাসি উপহার দিল কমান্ডারকে। সে ভেবে পায় না এত বড় একটা বিপদের মুখেও কী করে কমান্ডারের মুখে শান্ত সৌম্য ভাবটা বজায় আছে। সুসানের দৃঢ় বিশ্বাস এ শান্ত নিশ্চিত ভঙ্গিটাই তাকে ক্ষমতার সিঁড়ি বেয়ে এতটা উপরে তুলে এনেছে।

    দরজার দিকে যাবার পথে অনেকক্ষণ তাকিয়ে রইল সুসান ট্রান্সলেটারের দিকে। আনব্রেকেবল কোন কোডের অস্তিত্ব আছে, এ ভাবনাটাই এখনো মেনে নিতে পারছে না সে। আশা একটাই, যত দ্রুত নর্থ ডাকোটাকে পাওয়া যায়…।

    কাজটা একটু জলদি করো, আবার তাগাদা দিল স্ট্র্যাথমোর, আর তুমি স্মোকি মাউন্টেনে চলে যাবে রাতের মধ্যেই।

    পথেই জমে গেল সুসান। সে ভালভাবেই জানে, তার যাবার কথা জানানো হয়নি স্ট্র্যাথমোরকে। ঘুরে দাঁড়াল সে। এন এস এ কি আমার ফোন ট্যাপ করছে?

    দোষীর মত হাসল স্ট্র্যাথমোর, ডেভিড আজ সকালে তোমাদের ট্রিপের ব্যাপারে বলেছিল আমাকে। সে বলেছিল এ নিয়ে তোমাকে কিছু বলা হলে তুমি বেশ বিব্রত হবে।

    আপনারা আজ সকালে কথা বলেছেন?

    অবশ্যই! বলল স্ট্র্যাথমোর তার হাসিটাকে আরো চওড়া করে দিয়ে, তাকে ব্রিফ করতে হয়েছিল যে!

    ব্রিফ করতে হয়েছিল? ভেবে পায় না সুসান, কীসের জন্য?

    তার ট্রিপের জন্য। আমি ডেভিডকে স্পেনে পাঠিয়ে দিয়েছি।

    অধ্যায় : ১১

    স্পেন। আমি ডেভিডকে স্পেনে পাঠিয়ে দিয়েছি। এখনো কমান্ডারের কথাগুলো হুল ফোঁটাচ্ছে।

    ডেভিড স্পেনে? আপনি তাকে সেখানে পাঠিয়েছেন? রাগে পিত্তি জ্বলে যাচ্ছে সুসানের, চিৎকার করল সে, কেন?

    স্ট্র্যাথমোর যেন বোবা হয়ে গেছে। সে কখনো মুখের উপর চিৎকার সহ্য করে না। এমনকি তার উপরের লোকজনও এ কাজ করে না। এবার একটু আমতা আমতা করে কী যেন বলার চেষ্টা করল স্ট্র্যাথমোর, কিন্তু তার মুখের রা মুখেই। রয়ে গেল।

    সুসান যেন কোন বাঘিনী, তার বাচ্চাকে রক্ষা করার জন্য মরিয়া।

    সুসান, বলল সে অবশেষে, তুমি তার সাথে কথা বলেছ, তাই না? ডেভিড ব্যাখ্যা করেনি?

    এখন আর কথা যোগাচ্ছে না সুসানের মুখে। স্পেনে? এজন্যই স্টোন ম্যানোরে যাওয়া বন্ধ হল?

    আমি তার জন্য একটা গাড়ি পাঠালাম আজ সকালে। সে বলল, যাবার আগে তোমাকে একটা কল করবে। আই এ্যাম স্যরি। আমার মনে হয়েছিল

    আপনি কেন ডেভিডকে স্পেনে পাঠাবেন?

    স্ট্র্যাথমোর কথা বলে উঠল এবার, অন্য পাস কি টা বের করে আনার জন্য।

    অন্য পাস কি?

    টানকাডোর কপি।

    সুসানের মন এবার কিছুই খুঁজে পাচ্ছে না। কী আবোল তাবোল বকছেন?

    ছোট করে একটা শ্বাস ফেলল স্ট্র্যাথমোর, টানকাছে মারা যাবার সময় তার সাথে একটা পাস কি অবশ্যই ছিল। আমি নিশ্চই চাই না সেভিলের মর্গে সেটা ভেসে বেড়াক।

    আর সে কাজের জন্য আপনি ডেভিড বেকারকে পাঠালেন? শক পেয়েছে যেন সুসান, ডেভিড তো আপনার জন্য কাজও করে না!

    স্ট্র্যাথমোর যেন একটু আঘাত পেয়েছে। এন এস এর ডেপুটি ডিরেক্টরের সাথে কেউ কখনো এ সুরে কথা বলে না। সুসান, বলল সে, এখনো নিচু করে রেখেছে কণ্ঠ, এখনো নিজের মেজাজের উপর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ আছে তার। এটাইতো পয়েন্ট! আমি চাইনি–

    এবার বাঘিনী স্বরূপে আবির্ভূত হল, আপনার আওতায় বিশ হাজার কর্মচারী আছে! আর এ ক্ষমতার দাপটে আপনি আমার ফিয়াসেকে পাঠাচ্ছেন?

    আমি একজন সিভিলিয়ান কুরিয়ার চাচ্ছিলাম। এমন কেউ, যার সাথে সরকারের কোন সংশ্রব নেই। আমি যদি রেগুলার চ্যানেল ধরে যেতাম আর কেউ যদি হাওয়াটা একটু টের পেয়ে যেত তাহলেই-

    আর ডেভিড বেকার হল সেই একমাত্র সিভিলিয়ান যাকে আপনি চেনেন?

    না! ডেভিড বেকার, সেই একমাত্র সিভিলিয়ান নয় যাকে আমি চিনি! কিন্তু আজ সকাল ছটায় ব্যাপারগুলো ঘটছিল খুব দ্রুত! ডেভিড সে ভাষা জানে, সে খুবই স্মার্ট, আমি তাকে বিশ্বাস করি, আর ভাবলাম আমি হয়ত তার কোন উপকারে লাগতে পারব।

    উপকারে লাগতে পারবেন? তাকে স্পেনে পাঠানো কোন ধরনের উপকার?

    হ্যাঁ! আমি তাকে এক দিনের কাজের জন্য দশ হাজার দিচ্ছি। সে টানকাডোর জিনিসপাতি তুলে নিবে। তারপর চলে আসবে দেশে। এ তো আসলেই উপকার!

    সুসান একেবারে নিরব হয়ে গেল। ব্যাপারটা বুঝতে পারছে এখন। পুরোটাই টাকার সাথে সম্পৃক্ত।

    পাঁচ মাস আগের কথা মনে পড়ে যায়। ইউনিভার্সিটির প্রেসিডেন্ট ডেভিডকে ভাষা বিভাগের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব দেয়। প্রেসিডেন্ট তাকে জানিয়ে দেয়, তাতে করে ক্লাস কমে যাবে, পেপারওয়ার্ক বেড়ে যাবে, সেইসাথে বাড়বে বেতন। সুসান সে রাতে চিৎকার করে উঠতে চাচ্ছিল, ডেভিড, এ কাজ করোনা। আমাদের অনেক অনেক টাকা আছে। টাকার আর দরকার নেই। কিন্তু সে রাতে সে ঘুমাতে পারেনি। শুধু চেষ্টা করেছে ভাবার, ডেভিডকে নিয়ে সে সুখি। এখন বুঝতে পারছে, টাকার ব্যাপারটা কোথা থেকে আসবে।

    আপনি তাকে একদিনের জন্য দশ হাজার ডলার পে করছেন? ফুঁসে উঠল। সে, নোংরা চাল তো!

    এবার স্ট্র্যাথমোর আর শান্ত থাকতে পারল না, চাল? কোন চাল চালিনি আমি! এমনকি আমি তাকে টাকাটার কথাও বলিনি। আমি শুধু তার কাছে ব্যক্তিগত একটা সহায়তা চেয়েছিলাম, তোমার ফিয়াসে সে কথায় রাজি হয়েছে, ব্যস।

    অবশ্যই সে রাজি হবে! আপনি আমার বস! আপনি এন এস এর ডেপুটি ডিরেক্টর! সে আপনাকে হতাশ করে কী করে? কী করে সে না বলবে?

    তোমার কথাই ঠিক, এবার যেন চড় কষাল স্ট্র্যাথমোর, এ কারণেই আমি তাকে ডেকেছি। আমার এমন কোন বিলাসের উপায় ছিল না।

    ডিরেক্টর কি জানে আপনি একজন সিভিলিয়ানকে পাঠিয়েছেন?

    সুসান, স্ট্র্যাথমোর বলল, তার শান্ত ভাবটা আস্তে আস্তে কেটে যাচ্ছে, বোঝাই যায়, ডিরেক্টর এসবের সাথে যুক্ত নয়। সে এ ব্যাপারে কিছুই জানে না।

    স্ট্র্যাথমোরের দিকে অবিশ্বাসে তাকিয়ে থাকল সুসান। যেন সে লোকটাকে চিনতেই পারছে না এতদিন পর। এ লোকটা পাঠিয়েছে তার ফিয়াসেকে একজন শিক্ষককে- এন এস এর মিশনে, তারপর ডিরেক্টরকে জানায়নি এ প্রতিষ্ঠানের ইতিহাসে সবচে বড় ক্রাইসিসের কথা!

    লিল্যান্ড ফন্টেনে এসবের বিন্দু বিসর্গও জানে না?

    স্ট্র্যাথমোর তার ধৈর্যের শেষ সীমায় চলে গেছে। এবার বিস্ফোরিত হল। সুসান, এখন আমার কথা শোন! আমি তোমাকে এখানে ডেকে এনেছি কারণ আমার একজন বন্ধুর দরকার। প্রয়োজন একজন মিত্রের, এনকোয়ারির জন্য ডাকিনি। আমি একটা দুঃস্বপ্নের সকাল কাটিয়েছি এখানে। কাল রাতে ফাইলটাকে তুলে দিয়েছি ট্রান্সলেটারে, তারপর বসে বসে জপেছি, কখন ব্রেক করবে। সকালে আমার পরাজয় মানার পালা। সবটুকু হাল ছেড়ে দিয়ে কল করলাম ডিরেক্টরকে জেনে রাখ, তখন যে কথাবার্তা হল এমন কিছুই আশা করছিলাম আমি। গুড মর্নিং স্যার। আপনার ঘুম ভাঙানোর জন্য দুঃখিত। কেন আপনাকে জাগালাম? ট্রান্সলেটার এমন এক এ্যালগরিদমের মুখোমুখি হয়েছে যেটার কোন কূল-কিনারা করা যাচ্ছে না। আমাদের পুরো ক্রিপ্টো প্রোগ্রামাররা একত্রে মিলেও এমন কোন কাজ করতে পারবে না! হাত চাপড়াল কমান্ডার তার ডেস্কের উপর। উঠে দাঁড়াল।

    সুসান জমে গেছে। তার দশ বছরের ক্যারিয়ারে স্ট্র্যাথমোরকে রেগে যেতে দেখেছে খুব কম সময় এবং তার ক্ষেত্রে কখনো হয়নি এমনটা।

    পরের দশ, সেকেন্ড কেউ কোন কথা বলল না। অবশেষে স্ট্র্যাথমোর বসে পড়ল। আস্তে আস্তে তার শ্বাসের গভীরতা স্বাভাবিক হয়ে উঠছে। অবশেষে কথা বলে উঠল সে। তার কণ্ঠ এবার শান্ত। আগের মতই।

    দুর্ভাগ্য আমাদের, শান্ত স্বরে বলল স্ট্র্যাথমোর, দেয়া গেল ডিরেক্টর দক্ষিণ আমেরিকায়। কলাম্বিয়ার প্রেসিডেন্টের সাথে একটা জরুরি মিটিংয়ে আছে। যেহেতু সেখানে বসে সে কি করতে পারবে না তাই আমার দুটা কাজ করার উপায় ছিল। এক- তাকে বলা যেন মিটিংটা সংক্ষিপ্ত করে ফিরে আসে জলদি। অথবা দুই- পুরো ব্যাপারটা আমাকেই সামলাতে হবে।

    আরো কোমল হল তার কণ্ঠ, সুসান, আমি সত্যি দুঃখিত। একেবারে অথৈ সাগরে পড়েছি। এ যেন কোন দুঃস্বপ্ন সত্যি হয়ে দেখা দিল। আমি জানি তুমি ডেভিডের ব্যাপারে চিন্তিত। কিন্তু ভাবিনি এভাবে নিবে ব্যাপারটাকে। ভেবেছিলাম অন্যদৃষ্টিতে দেখবে।

    সাথে সাথে একটু দোষী মনে হল সুসানের নিজেকে, আমি খুব বেশি রিয়্যাক্ট করে ফেলেছিলাম। স্যরি। ডেভিডকে বেছে নিয়ে আপনি ভাল করেছেন।

    সে আজ রাতেই ফিরে আসছে।

    একবার ভাবল সুসান কমান্ডারের অবস্থার কথাটা। ট্রান্সলেটারের দেখভাল করে সে নিজেই। সারাক্ষণ পড়ে থাকে অফিসে। ত্রিশ বছর বয়সের স্ত্রী ছেড়ে যাচ্ছে তাকে। এর উপর যোগ হয়েছে এন এস এর নানা চাপ। যুক্ত হয়েছে। ডিজিটাল ফোর্ট্রেস। এন এস এর উপর এমন হামলা আর কখনো হয়নি। আর বেচারা একা একা সমস্ত ব্যাপার চালাচ্ছে। কোন সন্দেহ নেই, এ রাত জাগার পর, এভাবে ট্রান্সলেটারকে ব্যর্থ হতে দেখার পর, এনসেই টানকাডোর খুন হয়ে যাবার কথা শোনার পর যে কেউ ভেঙে পড়বে।

    পরিস্থিতির ব্যাপার দেখে, বলল সুসান, মনে হচ্ছে আপনার ডিরেক্টরকে কল করা উচিৎ।

    মাথা নাড়ল স্ট্র্যাথমোর, মাথা থেকে টপ করে এক ফোঁটা ঘাম পড়ল ডেস্কের উপর। আমি ডিরেক্টরের সাথে যোগাযোগ করে এমন কোন ক্রাইসিসের কথা বলতে পারি না যেটা নিয়ে সে কিছুই করতে পারবে না। এ যোগাযোগের কথা যে কোনভাবে লিক হয়ে যেতে পারে।

    সুসান জানে, তার কথাই ঠিক। এ মুহূর্তেও সে মাথা ঠান্ডা রাখতে পারছে। আপনি কি প্রেসিডেন্টকে কল করার কথা ভেবেছেন?

    নড করল স্ট্র্যাথমোর, হ্যাঁ। ভেবেছি এবং এর বিরুদ্ধে সিদ্ধান্ত নিয়েছি।

    সুসান এ কথাটাকেও ফেলে দিল। এন এস এর উপরদিকের অফিশিয়ালরা ছাদের সিদ্ধান্ত নিতে পারে যে কোন ক্রাইসিসের ক্ষেত্রেও, উপরের দিকে বা অন্য কোন প্রতিষ্ঠানে না জানিয়ে, হোক সেটা হোয়াইট হাউস। এন এস এ একমাত্র আমেরিকান প্রতিষ্ঠান যেটা আভ্যন্তরীন নজরদারি ছাড়াই যে কোন কাজ করতে পারে। স্ট্র্যাথমোর প্রায়ই এ সুযোগটা নেয় এবং দেখা যায় তার একার কাজই যাদুমন্ত্রের মত সফল হয়ে গেছে।

    কমান্ডার, এ ক্রাইসিসটা নিজে নিজে সলভ করার ক্ষেত্রে অনেক বেশি বড় হয়ে যায়। এ কাজে আরো কাউকে নিয়ে নেয়া উচিৎ।

    সুসান, ডিজিটাল ফোট্রেসের অস্তিত্ব এ প্রতিষ্ঠানের জন্য এম্নিতেই অনেক বড় আঘাত। আমি ডিরেক্টরকে ___ প্রেসিডেন্টের সাথে এ নিয়ে কথা বলতে চাই না। আমিই হ্যান্ডল করছি ব্যাপারটা। চোখে চোখ রাখল কমান্ডার, আমিই ডেপুটি ডিরেক্টর অব অপারেশন, একটা বিচিত্র হাসি তার সারা মুখে খেলে গেল, এবং, আসলে আমি একা নই। আমার দলে সুসান ফ্লেচার আছে।

    সাথে সাথে সুসান টের পেল কেন সে ট্রেভর স্ট্র্যাথমোরকে এত বেশি শ্রদ্ধা করে। দশ দশটা বছর ধরে আড়ালে আবডালে বা সোজাসুজি সে সব সময় সুসানকে পথ দেখিয়ে এসেছে। স্থির। অবিচল। সুসান দেখেছে, এ মানুষটা কী করে তার দেশের জন্য, তার আদর্শের জন্য, তার নীতির জন্য সব বাধা টপকায়। অসম্ভব সিদ্ধান্তের দুনিয়ায় কমান্ডার ট্রেভর স্ট্র্যাথমোর এক উন্নতশির বাতিঘর হয়ে পথ দেখায়।

    তুমি আমার দলে, তাই না?

    সুসান হাসল, ইয়েস, স্যার। আমি আছি। একশো ভাগ।

    ভাল। এবার আমরা কাজে ফিরে যেতে পারি?

    অধ্যায় : ১২

    ডেভিড বেকার এর আগে দুটা শেষকৃত্যানুষ্ঠানে যোগ দিয়েছে আর মৃতদেহের ব্যাপারে তার আগে থেকেই অভিজ্ঞতা আছে। দেখেছে সে। সিল্ক লাইন দেয়া কফিনে কোন সাজানো গোছানো লাশ নয় এটা। একটা এ্যালুমিনিয়াম টেবিলের উপর দেহটা পড়ে আছে নিথর হয়ে। অবহেলায়। একেবারে নগ্ন। চোখগুলো বোজা নয়, ভোলা অবস্থায় শান্ত ভঙ্গিতে তাকিয়েও নেই। উপরের দিকে সেগুলো উঠানো। বিকৃতি আছে সে দৃষ্টিভঙ্গিতে। আছে ভয় আর আফসোসের মিশ্রণ।

    ডোন্ডে এস্টান সুস এফেক্টোস? ক্যাস্টিলিয়ান স্প্যানিশে একেবারে গড়গড় করে বলে গেল ডেভিড বেকার, এর জিনিসপত্র কোথায়?

    এ্যালি, হলুদ দাঁতের লেফটেন্যান্ট বলল। একটা কোণার দিকে দেখিয়ে দিল সে। সেখানে স্তূপ করে ফেলে রাখা হয়েছে পোশাক আশাক।

    এস টোডো? এই কি সব?।

    সি।

    একটা কার্ডবোর্ড বক্স চাইল বেকার। সাথে সাথে লেফটেন্যান্ট খুজতে লাগল।

    শনিবার বিকাল তখন। টেকনিক্যালি সেভিল মর্গ বন্ধ হয়ে গেছে। সেভিল গার্ডিয়ার সরাসরি আদেশ পেয়ে লেফটেন্যান্ট তাকে নিয়ে এসেছে এখানে। বোঝাই যায়, এখানে আসা আমেরিকানের খুব ক্ষমতাবান বন্ধু আছে। কোন সন্দেহ নেই।

    পোশাকের স্তূপটার দিকে তাকায় বেকার। একটা পাসপোর্ট আছে সেখানে। . একটা ওয়ালেট। জুতার ভিতরে ঢুকে থাকা চশমা। হোটেল থেকে বাকি মাল সামানও এনে নেয়া হয়েছে। বেকারের কাছে স্পষ্ট আদেশ ছিল কিছু ছুঁয়ে দেখবে না। কিছু পরীক্ষা করবে না। শুধু যা আছে সব নিয়ে এস। কিছু যেন বাদ পড়ে না যায়।

    স্তূপটা ভালকরে দেখে একটু দম ছাড়ল বেকার। এ ময়লার ঘাটি থেকে এন এস এ কী বের করবে?

    একটা ছোট বাক্স নিয়ে এগিয়ে এল লেফটেন্যান্ট। সাথে সাথে বেকার কাপড়চোপড় ভরতে শুরু করল ভিতরে।

    পায়ের দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করল অফিসার, কোয়াইন এস? লোকটা কে?

    আমার বিন্দুমাত্র ধারণা নেই।

    দেখে মনে হচ্ছে চাইনিজ।

    জাপানিজ। মনে মনে বলল বেকার।

    বেচারা বেজন্মা। হার্ট এ্যাটাক, না?

    সাথে সাথে নড করল বেকার, আমাকে তাই বলা হয়েছে।

    একটু যেন আফসোস হচ্ছে লেফটেন্যান্টের, সেভিলের সূর্য প্রাণঘাতী। কাল বাইরে বেরুনোর সময় সাবধানে থাকবেন।

    থ্যাঙ্কস। আমি সোজা বাড়ি চলে যাচ্ছি।

    আপনি না মাত্র এলেন?

    জানি। কিন্তু যারা আমার এ কাজের জন্য বিমান ভাড়া দিচ্ছে তারা অপেক্ষা করছে সেখানে। বিমানটা আমার জন্যই বসে আছে।

    লেফটেন্যান্টের চোখ ছানাবড়া হয়ে গেল, আপনি সেভিল দেখবেন না?

    এখানে এসেছিলাম কয়েক বছর আগে। সুন্দর শহর। সন্দেহ নেই। থাকতে পারলে ভালই হত।

    তার মানে আপনি লা গিরাল্ডা দেখেছেন?

    নড করল বেকার। সে সেই পুরনো মুরিশ টাওয়ারটায় চড়েনি, কিন্তু দেখেছে।

    এ্যালকাজার দেখেছেন?

    আবার নড় করল বেকার। সে এটাও দেখেছে। পাসো দ্য লুসিয়ার গিটার শুনেছে। পঞ্চদশ শতকের সেই দুর্গের খোলা প্রান্তরে দেখেছে সে আকাশের সৌন্দর্য। আহা, সে যদি তখন সুসানকে চিনত!

    আর অবশ্যই ক্রিপ্টোফার কলম্বাসকেও দেখেছেন, বলল লেফটেন্যান্ট, তাকে আমাদের ক্যাথেড্রালে কবর দেয়া হয়েছে।

    এবার চোখ তুলে তাকাল বেকার, আসলেই? আমি মনে করেছিলাম ক্রিপ্টোফার কলম্বাসকে কবর দেয়া হয়েছে ডোমিনিকান রিপাবলিকে।

    ধ্যাৎ! নাহ! কে এ গুজবটা চালু করেছিল? কলম্বাসের লাশ:এ স্পেনের বুকেই দাফন করা হয়। আমি মনে করলাম আপনি কলেজে গিয়েছিলেন।

    শ্রাগ করল ডেভিড বেকার, আমি নিশ্চই সে দিনটা মিস করেছি।

    স্প্যানিশ চার্চ তার দেহাবশেষ রক্ষা করতে পেরে যার পর নাই গর্বিত।

    স্প্যানিশ চার্চ? ডেভিড জানে; স্পেনে একটা মাত্র গির্জা আছে। রোমান ক্যাথলিক চার্চ। ভ্যাটিকান সিটি থেকে এখানেই ক্যাথলিসিজম বেশি বাড় বেড়েছে।

    অবশ্য আমাদের হাতে তার পুরো মরদেহটা নেই, বলল লেফটেন্যান্ট আফসোসের সুরে, সোলো এল এক্কোটো।

    বেকার অবাক হল এবার। সোলো এল এস্ট্র্যোটো? শুধু তার পুরুষাঙ্গ আর তার সাথের অংশগুলো?

    গর্বিত ভঙ্গিতে মাথা নাড়ল অফিসার, প্রথমে চার্চ তার দেহের বিভিন্ন অংশ পেল। তারপর সেগুলোকে একেক গির্জায় পাঠিয়ে দিল যাতে যে কেউ যে কোন স্থান থেকে তার দেহাবশেষের কাছে যেতে পারে।

    আর আপনারা মেল রিপ্রোডকশন সিস্টেমটা পেলেন?

    অবশ্যই। এর একটা বিশেষ দিক রয়েছে। আমরা আর সব চার্চের মত সামান্য জিনিস পাইনি। আপনি থেকে যেতে পারেন। দেখে যেতে পারেন।

    বেকার ভদ্রভাবে নড করল, আমি বোধহয় ভদ্রভাবে এখান থেকে বেরিয়ে যাব।

    মালা সুয়ার্টে, বলল লেফটেন্যান্ট, আফসোসের কথা, ব্যাডলাক। ক্যাথেড্রাল সূর্যোদয় পর্যন্ত বন্ধ থাকে।

    তাহলে আর কী, অন্য কোন সময় দেখা যাবে। আমার বোধহয় ভালয় ভালয় চলে যাওয়া উচিৎ। বাক্সটা তুলে নিল সে, প্লেন অপেক্ষা করছে।

    ঘরের চারদিকে আরেকবার চোখ বুলিয়ে নিল সে।

    এয়ারপোর্টের পথে এগিয়ে দিব নাকি? আমার একটা মোটো গুজ্জি আছে।

    না, থ্যাঙ্কস। আমি বরং একটা ক্যাব ধরে নিব।

    বেকার একবার একটা মোটর সাইকেলে করে যাবার পথে আর একটু হলেই নিজেকে খুন করে বসেছিল। তারপর আর কখনো সেসব উটকো যানে চড়েনি। যেই চালাক, ঝুঁকি নিতে রাজি নয় সে।

    আপনি যা পছন্দ করেন, গোমড়ামুখে বলল লেফটেন্যান্ট, তারপর এগিয়ে গেল একদিকে, আমার আবার লাইট নিভাতে হবে।

    বেকার নিজের বগলের তলায় জিনিসপাতি চালান করে দিয়ে ভাবল, সব নিয়েছি তো? শেষবারের মত শরীর আর টেবিলটার দিকে তাকায় সে। দেহটা রুগ্ন। পড়ে আছে ফ্লুরোসেন্ট লাইটের নিচে। কোনকিছু লুকিয়ে রাখেনি। হাতের বিচিত্র আঙুলগুলোর দিকে শেষবারের মত তাকায় বেকার। তারপর আরো তীক্ষ্ণ হয় তার দৃষ্টি।

    আলো নিভিয়ে দিয়েছে অফিসার। অন্ধকারে ডুবে গেছে ঘরটা।

    হোন্ড অন, বলল বেকার, আবার জ্বালান বাতিগুলো।

    সাথে সাথে জ্বলে উঠল সেসব।

    বক্সটা মাটিতে নামিয়ে দিয়ে এগিয়ে গেল বেকার এবার লাশের দিকে। লোকটার বা হাতের আঙুলে তার নজর।

    অফিসারের কণ্ঠে বীতশ্রদ্ধ ভাব, বেশ বিচ্ছিরি, তাই না?

    কিন্তু বেকার ভাবছে অন্য কথা। আপনি নিশ্চিত, বক্সে সব আছে?

    নড করল অফিসার, হ্যাঁ। সব।

    কোমরে হাত রেখে এক মুহূর্ত দাঁড়িয়ে রইল বেকার। তারপর বাক্সটাকে নামিয়ে রেখে তন্ন তন্ন করে প্রতিটা জামা কাপড়, জুতা, প্রতিটা জিনিস দেখল। দেখল আবার। কপালে চিন্তার রেখা।

    কোন সমস্যা?

    হ্যাঁ। একটা জিনিস হারিয়ে গেছে… কিছু একটা পাচ্ছি না।

    অধ্যায় : ১৩

    টকোগেন নুমাটাকা তার পেন্টহাউস অফিসে বসে বসে টোকিওর আকাশ দেখছে। কর্মচারী আর প্রতিদ্বন্দ্বীরা তাকে জানে আকুটা সেম হিসাবে। মারণ-হাঙর। গত ত্রিশ বছর ধরে সে জাপানে তার প্রত্যেক রাইভালকে মরণ কামড় দিয়েছে। সবদিক দিয়ে হারিয়ে দিয়েছে সবাইকে। দখল করেছে সবকিছু। এখন তার দৃষ্টি আন্তর্জাতিক বাজারে। এর মধ্যে সেখানেও অনেকটা আধিপত্য বিস্তার করে বসেছে।

    সে আর একটু হলেই জীবনের সবচে বড় ডিলটা শেষ করে দিত। এমন এক পদক্ষেপ যেটা তার নুমাটেক কর্পোরেশনকে ভবিষ্যতের মাইক্রোসফট কর্পোরেশনে পরিণত করবে। তার রক্তে এ্যাড্রিনালিনের কোন অভাব নেই। ব্যবসা হল যুদ্ধ- আর যুদ্ধ হল মজার ব্যাপার।

    টকোগেন নুমাটাকা খুব বেশি আশা পায়নি তিন দিন আগে আসা কলটা পেয়েও। কিন্তু এখন সে সত্যিটা জানে। তার সাথে আছে মায়োরি- সৌভাগ্য। দেবতারা তাকে বেছে নিয়েছে।

    .

    আমার কাছে ডিজিটাল ফোট্রেসের একটা পাস কি আছে, বলেছিল আমেরিকান উচ্চারণের কণ্ঠটা, আপনি কি সেটা কিনতে চান?

    নুমাটাকা আর একটু হলেই উচ্চস্বরে হেসে উঠত। সে জানে, এ হল এক ধরনের চাল। নুমাটেক কৰ্প এর মধ্যেই এনসেই টানকাডোর কপির জন্য নিলামে * নেমে পড়েছে। আর এখন নুমাটেকের কোন না কোন প্রতিযোগি খেলায় মেতে : উঠেছে। নিলামের দরটা জানার চেষ্টা করছে।

    আপনার হাতে পাস কি টা আছে?

    আছে। আমার নাম নর্থ ডাকোটা।

    এবার নুমাটাকা একটু হেসে নিল। সবাই নর্থ ডাকোটাকে চেনে। টানকাডো সাংবাদিক সম্মেলন করে জানিয়ে দিয়েছে তার সাথির কথা। নর্থ ডাকোটা। কাজটা ভাল করেছে টানকাডো, কোন সন্দেহ নেই। এমনকি জাপানেও ব্যবসাটা এখন নোংরামির পর্যায়ে পড়ে। টানকাডো নিরাপদ নয়। কিন্তু তার উপর একটা  আঘাত এলেই কেল্লা ফতে। কেউ পাবে না ডিজিটাল ফোট্রেসের পাস কি। সেটা বাইরে প্রকাশ করে দেয়া হবে। বিশ্বের প্রতিটা সফটওয়্যার ফার্ম মাথা ঠুকে মরবে।

    উমামি সিগারে লম্বা করে একটা দম নিল নুমাটাকা। তারপর কথা বলে উঠল ক্রেডলের দিকে মুখ রেখে, তাহলে আপনি পাস কি টা সেল করছেন? ইন্টারেস্টিং। এনসেই টানকাডোর কাছে ব্যাপারটা কেমন লাগবে?

    মিস্টার টানকাভোর ব্যাপারে আমার কোন মাথাব্যথা নেই। আমাকে বিশ্বাস করে মিস্টার টানকাডো বোকামির পরিচয় দিয়েছেন। ডিজিটাল ফোট্রেসের এ পাস কির দাম তিনি আমাকে যা পে করছেন তারচে শতগুণ বেশি। দুঃখিত, বলল নুমাটাকা, আপনার পাস কি টার কোন মূল্য নেই আমার কাছে। যখন টানকান্ডো দেখতে পাবে আপনি আগেই কাজটা করে ফেলেছেন তখন সোজা সেটাকে নামিয়ে দেবেন মার্কেটে। ভরে যাবে সব জায়গা। মাঝখান দিয়ে আমার তলা খালি হয়ে যাবে আরকী!

    আপনি দুটা পাস কি-ই পাবেন। আমারটা, মিস্টার টানকাডোরটা।

    রিসিভার ঢেকে রেখে আবারো উচ্চস্বরে হেসে নিল নুমাটাকা। প্রশ্ন না করে পারল না, দুটা কি-র জন্য আপনি কত টাকা চাচ্ছেন?

    বিশ মিলিয়ন ইউ এস ডলার।

    ঠিক বিশ মিলিয়নই দর দিয়েছিল নুমাটাকা। বিশ মিলিয়ন? অনেক অনেক বেশি!

    আমি এ্যালগরিদমটা দেখেছি। এটা অসাধারণ। এরচে অনেক বেশি দাম আছে তার।

    না, শিট, ভাবছে নুমাটাকা, এটার দাম এরচে দশ গুণেরও বেশি। দুর্ভাগ্যজনকভাবে, বলল সে, খেলাতে আর তার মন নেই, আমরা দুজনেই জানি টানকাডো এর পিছু ছাড়বে না। একবার লিগ্যাল ব্যাপারগুলো নিয়ে ভাবুন।

    একটু চুপ করে থাকল কলার। যদি মিস্টার টানকাড়ো কোন ব্যাপার না হন, তাহলে?

    আবার হাসতে ইচ্ছা হচ্ছে নুমাটাকার, যদি টানকাড়ো কোন ব্যাপার না হয় তাহলে? ব্যাপারটার কথা একবার ভাবল নুমাটাকা, তাহলে আমি আর আপনি একটা সিদ্ধান্তে পৌঁছতে পারি।

    আমি যোগাযোগ রাখব, বলল কণ্ঠটা কেটে গেল লাইন।

    অধ্যায় : ১৪

    লাশটার দিকে তাকায় বেকার। মারা যাবার এত ঘন্টা পরও এশিয়ান লোকটার চোখমুখে লালচে একটা আভা দেখা যাচ্ছে। সূর্যের কীর্তি। বাকিটা মৃদু হলদে। হার্টের একেবারে উপরে রক্তিম চিহ্ন।

    সম্ভবত সি পি আরের কাছ থেকে, বলল সে আপনমনে, আফসোস, এটা কোন কাজে লাগল না।

    মরদেহটার হাত দেখার জন্য এগিয়ে গেল সে। এমন হাত আর আঙুল আগে কখনো দেখেনি বেকার। প্রতি হাতে তিনটা করে আঙুল আর সেগুলোও মোচড় খাওয়া। অবশ্য আঙুলগুলোর বীভৎসতার দিকে দৃষ্টি নেই।

    যাক, আমিই বলছি, বলল লেফটেন্যান্ট, সে আসলে জাপানি, চিনা নয়।

    তাকাল বেকার। মৃত লোকটার পাসপোর্টে আঙুল চালান করে দিয়েছে অফিসার। আমি আশা করি আপনি সেটা পড়বেন না। বলল সে যথাসম্ভব দ্র ভাবে।

    স্পর্শ করোনা কিছু, পড়োনা কিছু।

    এনসেই টানকাড়ো… জন্ম জানুয়ারির–

    প্লিজ, এখনো বেকারের কণ্ঠ ভদ্রোচিত, জিনিসটাকে নামিয়ে রাখুন।

    অফিসার পাসপোর্টের দিকে অবিশ্বাস্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। এ লোকের কাছে ক্লাস-থ্রি ভিসা আছে। চাইলে এখানে বছরের পর বছর কাটাতে পারত।

    বেকার লোকটার হাতে একটা কলম দিয়ে খোঁচা দিচ্ছে, হয়ত সে এখানেই থাকত।

    নাহ! এখানে আসার ডেট গত সপ্তাহের।

    হয়ত সে এখানে নড়াচড়া করছিল। বেকার জানাল।

    হ্যাঁ। হয়ত। প্রথম সপ্তাহ। সানস্ট্রোক তারপর হার্ট এ্যাটাক। বেচারা বেজন্মা।

    অফিসার যে হাতটা দেখছে সে ব্যাপারটা খেয়াল করল না বেকার। দেখেও না দেখার ভাণ করল। আপনি নিশ্চিত মারা যাবার সময় তার গায়ে কোন গহনা ছিল না?

    জুয়েলারি?

    হ্যাঁ। এখানে দেখুন।

    ঘরের অপর প্রান্ত থেকে চলে এল অফিসার।

    টানকাভোর বা হাতের উপর সূর্যের আলোয় পোড়া পোড়া একটা ভাব আছে। সবচে ছোট আঙুলের উপর একটু সাদাটে দাগ দেখা যায়।

    সেই ফ্যাকাশে মাংসের দিকে তাক করল বেকার তার আঙুল, দেখলেন, এখানে সানবার্নের কোন চিহ্ন নেই? সে একটা আঙটি পরত এখানে।

    এবার অবাক হবার পালা অফিসারের। একটা আঙটি? আঙুলের দিকে অদ্ভুত চোখে তাকিয়ে থাকে কিছুক্ষণ, তারপর আস্তে আস্তে, যেন নিজেকেই বলছে, এ সুরে বলে ওঠে, মাই গড! ঘটনা তাহলে সত্যি?

    একটু যেন ডুবে গেল বেকার, আই বেগ ইউর পারডন?

    অফিসারের চোখেমুখে অবিশ্বাসের ছাপ, আমি আগেই এ কথাটা বলতাম… কিন্তু ভাবলাম লোকটা বুজরুক।

    কোন লোক?

    যে লোকটা ইমার্জেন্সিতে ফোন করেছিল সে। এক ক্যানাডিয়ান ট্যুরিস্ট। একটা আঙটির ব্যাপারে কথা বলছিল। এমন খারাপ স্প্যানিশ এর আগে আমি কখনো শুনিনি।

    সে বলেছে যে মিস্টার টানকাডোর হাতে একটা রিঙ ছিল?

    নড করল অফিসার। একটা ডুকাডো সিগারেট বের করল সে। তাকাল নো, ফুমার সাইনের দিকে। তারপর জ্বেলে দিল সেটা। মনে হয় আমার কিছু বলা উচিৎ ছিল কিন্তু ঐ লোকের ভাষা একেবারে বিদঘুঁটে।

    মুখ ফিরিয়ে নিল বেকার। তার মনে পড়ে যাচ্ছে স্ট্র্যাথমোরের কথাগুলো।

    এনসেই টানকাডোর কাছে যা যা ছিল, তার সব চাই আমি। সব। কিছু বাকি রাখবেন না। এমনকি কাগজের একটা ছোট্ট টুকরাও ফেলে আসবেন না।

    এখন আঙটিটা কোথায়?

    অনেক লম্বা কাহিনী।

    কেন যেন মনে হল বেকারের ব্যাপারটা ঠিক পথে এগুচ্ছে না। বলুন তো দেখি!

    অধ্যায় : ১৫

    নড থ্রির ভিতরে সুসান ফ্লেচার তার কম্পিউটার টার্মিনালে বসে আছে। নড থ্রি হল ক্রিপ্টোগ্রাফারের প্রাইভেট সাউন্ডপ্রুফ চেম্বার। প্রথম ফ্লোরের বাইরে। দু ইঞ্চি পুরু বাঁকানো ওয়ান ওয়ে গ্লাসের কারণে ক্রিপ্টো ফ্লোরের একটা প্যানারোমা ছবি পাওয়া যায়। ভিতর থেকে দেখা যায় বাইরেটা। বাইরে থেকে ভিতর দেখার কোন উপায় নেই।

    দামি নড থ্রি চেম্বারের ভিতর দিকটায় বারোটা টার্মিনাল আছে। একেবারে নিখুঁত বৃত্তাকারে সাজানো। এ চেম্বারটায় যারা বসে তাদের এমন এক অনুভূতি হয় যে বিশাল কোন কাজের অংশ তারা। যেন কোড ব্রেকাররা নাইটস অব রাউন্ড টেবিল। আসলে, এ নড থ্রির ভিতরেই রহস্যেরা জন্ম নেয়, আবার এর ভিতর থেকেই সেগুলোর সুরাহা বের হয়।

    নড থ্রির ডাকনাম প্লেপেন। এখানে বাকি ক্রিপ্টোর মত একেবারে ধূলিবিহীন ভাবটা নেই। এটাকে ঘরের মত করে সাজানো হয়েছে। যেন ব্যবহারকারীরা একেবারে স্বচ্ছন্দ বোধ করে। পুস কার্পেট, হাইটেক সাউন্ড সিস্টেম, একেবারে ভর্তি ফ্রিজ, ছোট্ট কিচেন আর মিনিয়েচার বাস্কেটবল হুপ। ক্রিপ্টোর ব্যাপারে এন এস এর একটা দর্শন ছিলঃ এম্নিতেই বিলিয়ন ডলারের কোন কম্পিউটারের জন্য কাজ আদায়ের চেষ্টা করোনা যে পর্যন্ত না জায়গাটাকে একেবারে সব দিক দিয়ে আকর্ষণীয় করা না যাচ্ছে।

    ভাল বেতন পাওয়া কর্মচারীরা এখানে বেশ আরামে থাকে। আর সুসানের কোন কষ্ট নেই তার নিজের সাধারণ ডুপ্লেক্স বাসাটার ব্যাপারে। সাথে আছে একটা ভলভো সেডান আর একেবারে সাধারণ এক ওয়ার্ডরোর। কিন্তু জুতার ব্যাপার এখানে ভিন্ন। এমনকি সেই কলেজ জীবনেও সে জুতার পিছনে সবচে বেশি ব্যয় করত।

    পায়ে যদি আরাম না থাকে তাহলে কখনোই তারার দেশের জন্য লাফিয়ে উঠতে পারবে না। এককালে তার ফুফু কথাগুলো বলেছিল। আর তুমি যখন কোথাও যাচ্ছ, সেখানে সবাই আগে তাকাবে পায়ের দিকে।

    একটু আড়মোড়া ভেঙে নিয়ে কাজে নেমে গেল সুসান। ট্রেসারটা বের করে আনল সে। তারপর সাজানো শুরু করল। স্ট্র্যাথমোরের দেয়া ই-মেইল এ্যাড্রেসটার দিকে তাকাল আরেকবারঃ

    ndakota@ara.anon.org

    যে লোকটা নিজেকে নর্থ ডাকোটা নামে ডাকে তার হাতে এ্যানিনোমাস এ্যাকাউন্ট আছে। সুসান জানে, এটা বেশিক্ষণ এ্যানিনোমাস থাকবে না। ট্রেসারটা এ আর এর ভিতর দিয়ে চলে যাবে। চলে যাবে নর্থ ডাকোটার কাছে। তারপর পিছনে তথ্য পাঠিয়ে দিবে।

    সব যদি ঠিকমত চলে, তাহলে খুব দ্রুত নর্থ ডাকোটার পরিচয় ফাস হয়ে যাবে। বাকিটা স্ট্র্যাথমোরের হাতে। সে যেভাবেই হোক, পাস কি টা বের করে আনিবে!

    এরপর আসছে ডেভিডের ব্যাপার। দুটা পাস-কিই বের হয়ে গেলে সেগুলো ধ্বংস করে ফেলা হবে। টানকাডোর ছোট্ট বিস্ফোরকটার কাজ বন্ধ হয়ে যাবে। ডেটোনেটর ছাড়া বোমা কাজ করে কীভাবে?

    আবার চেক করে নিল সে ঠিকানাটা। আবার ডাটাও চেক করে নিল। স্ট্র্যাথমোর পারেনি কাজটা করতে, যে কোন ভুল তার কারণ হতে পারে, আবার তার সেই ভাষাটা না জানার কারণেও এমন হতে পারে। কে জানে?

    ডাটা ঢোকায় সে। তারপর খেয়াল রাখে মনিটরের দিকে। একটা বিপ করেই লেখা ওঠে সেখানেঃ

    ট্রেসার সেন্ট

    এবার অপেক্ষার পালা।

    সুসান অপেক্ষা করছে। মনে মনে একটু কষ্ট আছে তার। কমান্ডারকে কষ্ট দেয়ার কষ্ট। কেউ যদি এ সমস্যা থেকে উতরে যেতে পারে, সে এই স্ট্র্যাথমোর। তার কাজের সময় শান্ত থাকার ব্যাপারটা অসাধারণ।

    ছ মাস আগের কথা। ই এফ এফ একটা কথা তুলেছিল। এন এস এ সাবমেরিন নাকি আন্ডারওয়াটার টেলিফোন লাইনে কান পাতে। স্ট্র্যাথমোর সাথে সাথে কোন দিয়ে বের করে দিল একটা কথা না, সেই ডুবোজাহাজ কোন ফোন লাইনে কান পাতেনি। সেটা দূষিত বর্জ্য ফেলছে পানিতে। ব্যস। এ এফ এফ আর পরিবেশবাদীরা এ নিয়ে বিপরীত হল্লা বাধিয়ে দিল। প্রেসও আস্তে আস্তে ঝিমিয়ে আসে। ধামাচাপা পড়ে যায় আসল খবরটা।

    স্ট্র্যাথমোর যতটা পদক্ষেপ নিয়েছে তার প্রতিটাই দারুণ দক্ষতার পরিচয় দেয়। পরিকল্পনা তৈরি করা আর সেটা নিয়ে আরো বিবেচনার সময় তার একমাত্র সঙ্গি কম্পিউটারটা। এন এস এর আরো অনেক কর্মচারির মত স্ট্র্যাথমোরও এন. এস এর ডেভলপ করা কম্পিউটার সফটওয়্যার ব্যবহার করে। নাম তার ব্রেইনস্টর্ম। এটা দিয়ে খুব সহজেই হোয়াট-ইফ কাজ চালানো যায়।

    ব্রেইনস্টর্ম হল একেবারে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের পরিচায়ক। এটা পুরোপুরি কজ এ্যান্ড ইফেক্ট পদ্ধতিতে চলে। এ সফটওয়্যার তৈরি করা হয় রাজনৈতিক কারণে। চলমান রাজনৈতিক ব্যাপারগুলোকে একত্রে এর ভিতরে ঢোকাও, তারপর শুধু অপেক্ষা। এমন সলিউশন আসবে যা আশা করা যায় না। যা অন্য কেউ করতে পারবে না সহজে।

    প্রথমে এখানে অনেক অনেক ডাটা ঢোকানো হবে। আলাদা আলাদাভাবে। এরপর কম্পিউটার সেসব ডাটাকে একত্রিত করবে। ধরা যাক অনেক অনেক মানুষের কথা সেখানে দেয়া হল। দেয়া হল তাদের সমস্ত তথ্য, যোগাযোগ, সেক্স, মানি আর পাওয়ার। তখন যে কোন একটা দিক ধরে ব্যবহারকারী সেখানে কথাটা ঢুকিয়ে দিবে। ব্রেইনস্টর্ম সাথে সাথে পরিবেশের উপর তার প্রভাবের কথাটা জানিয়ে দেয়।

    কমান্ডার স্ট্র্যাথমোর একেবারে ধার্মিকের মত সেই সফটওয়্যারের উপর কাজ করেছিল, এবং এখনো করছে। তার উদ্দেশ্য রাজনৈতিক নয়, বরং একটা টি এফ এম ডিভাইস হিসাবে। টাইমলাইন, ফ্লোচার্ট আর ম্যাপিং সফটওয়্যার। এটা ব্যবহার করে খুবই জটিল সব অবস্থা পর্যবেক্ষণ করা যাবে, সেখানকার দুর্বলতা আর ভাল দিকগুলো তুলে আনা যাবে। এ প্রোগ্রামকে প্রতিনিয়ত আরো নূতন রূপ দেয়া স্ট্র্যাথমোরের একটা শখ। সুসানের সন্দেহ, কমান্ডারের কম্পিউটারে যে তথ্য আছে সেটা একদিন ঠিক ঠিক দুনিয়াটাকে বদলে দিবে।

    হ্যাঁ। ভাবে সুসান। কাজটা তার জন্য খুব বেশি কঠিন নয়।

    নড থ্রির দরজায় হিসহিস শব্দ ওঠায় তার চিন্তায় বাধা পড়ল।

    ভিতরে ছিটকে ঢুকছে স্ট্র্যাথমোর, সুসান, বলছে সে, এইমাত্র ডেভিড কল করেছে। সেখানে একটা ব্যাপার ধরা পড়ল…

    অধ্যায় : ১৬

    একটা আঙটি? সুসানের চোখেমুখে দ্বিধা, টানকাভোর একটা আঙটি পাওয়া যাচ্ছে না?

    হ্যাঁ। ভাগ্য ভাল ডেভিডের চোখে পড়ে গেছে ব্যাপারটা। খেলাটা ভালই তেতে উঠছে।

    কিন্তু আপনারা একটা পাস কির জন্য ছুটছেন। কোন জুয়েলারির পিছনে নয়।

    জানি, জানি। বলল স্ট্র্যাথমোর, হ্যাঁ, এতেও কোন না কোন সূত্র থাকতে পারে।

    সুসানের চোখমুখ বোবার মত হয়ে গেল।

    কাহিনীটা অনেক লম্বা।

    স্ক্রিনের ট্রেসারের দিকে মন দিয়েছে সে, আমি কোথাও যাচ্ছি না।

    দীর্ঘশ্বাস ফেলল স্ট্র্যাথমোর বড় করে, তারপর বলতে শুরু করল, আজ কথাটা ওঠে অন্য কারণে। যে লোক দেখেছে টানকাডোকে মারা যেতে সে বলেছে আঙটির কথা। মর্গের দায়িত্বে থাকা অফিসারকে। বলেছে পার্কে একজন জাপানি লোক মারা যাচ্ছে। অফিসার সেখানে যায়, মৃত অবস্থায় পায় টানকাডোকে তারপর ক্যানাডিয়ান লোকটাকেও পায় সেখানে। প্যারামেডিকদের ডাকে। প্যারামেডিকরা টানকাডোর লাশ নিয়ে যাচ্ছে এমন সময় অফিসার ক্যানাডিয়ান লোকটার কাছ থেকে জানতে চায় পুরো কাহিনী। তখন বুড়ো লোকটা দুর্বোধ্য ভাষায় যা বোঝাতে চায় তা হল টানকাডো মারা যাবার আগে একটা আঙটি সরিয়ে ফেলার চেষ্টা করছিল।

    টানকাডো একটা আঙটি সরিয়ে ফেলার চেষ্টা করছিল?

    হ্যাঁ। এমনভাবে বুড়ো লোকটার দিকে এগিয়ে দিচ্ছিল যেন সে নিয়ে যেতে বলছে জিনিসটা। বোঝা যায় ব্যাপারটা নাড়া দিয়েছে বুড়োর মনে। একটু থামল স্ট্র্যাথমোর, তারপর আবার বলতে লাগল সে বলল আঙটিটা খোদাই করা। সেখানে কিছু একটা লেখা ছিল।

    লেখা ছিল?

    ছিল। তার মতে, সেটা ইংরেজি নয়। স্ট্র্যাথমোর কথাটা বেশি বাড়িয়ে নিল না, একটু অপ্রস্তুত হয়ে থেমে গেল।

    জাপানি?

    মাথা নাড়ল কমান্ডার, আমিও প্রথমে তাই ভেবেছিলাম। কিন্তু ক্যানাডিয়ান লোকটা বলেছিল যে এতে কোন শব্দ বোঝা যায় না। জাপানি শব্দের সাথে আমাদের রোমান হরফের সংযোগ থাকার কথা নয়। সেখানের লেখাটা দেখে তার মনে হয়েছে একটা বিড়াল কোন কি বোর্ডের উপর ছেড়ে দেয়া হয়েছে।

    হাসল সুসান, কমান্ডার, আপনি নিশ্চই মনে করেন না যে–

    কথার মাঝখানেই বাধা দিল স্ট্র্যাথমোর, সুসান, ব্যাপারটা একেবারে পানির মত পরিষ্কার। টানকাডো তার ডিজিটাল ফোট্রেস পাস কি টা আঙটিতে খোদাই করে নিয়েছে। এরচে সহজ আর কী হতে পারে? সে ঘুমাচ্ছে, গোসল সেরে নিচ্ছে বা আর কিছু করছে- সব সময় এটা সাথে সাথে থাকবে। চাইলেই প্রকাশ করে দেয়া যায়।

    সুসানের দ্বিধা যায়নি, তাই বলে আঙুলে? একেবারে প্রকাশ্যে?

    কেন নয়? স্পেন তো আর পৃথিবীর এনক্রিপশন রাজধানী নয়! কারো কোন ধারণা থাকার কথা নয় অক্ষরগুলো মানে সম্পর্কে। আর সে লেখাটা যদি স্ট্যান্ডার্ড সিক্সটি ফোর বিটের হয় তবু কারো পক্ষে বোঝা সম্ভব নয় কী লেখা আছে

    সেখানে। যদি বোঝাও যায়, সবগুলো অক্ষর মনে রাখা কখনোই সম্ভব না।

    এবার একটু বুঝে উঠছে সুসান, আর টানকাড়ো সে জিনিসটা একেবারে অপরিচিত কোন মানুষের হাতে তুলে দিবে মারা যাবার আগের মুহূর্তটায়? কেন?

    আরো সরু হল স্ট্র্যাথমোরের চোখ, তোমার কী মনে হয়? কেন?

    একটা মুহূর্ত লাগল সুসানের ব্যাপারটা বুঝে উঠতে। চোখ এবার ছানাবড়া হয়ে গেল।

    নড করল স্ট্র্যাথমোর, টানকাডো এটার হাত থেকে উদ্ধার পেতে চাচ্ছিল। সে জানে আমরা তাকে মেরে ফেলতে পারি। বুঝতে পারছিল মারা যাচ্ছে। এখন সে কী করবে? টাইমিংটা একেবারে নিখুঁত। সে ভেবেছে আমরা তাকে মেরে ফেলছি। বিষ দিয়ে হোক বা আর যেভাবেই হোক। যে কোন স্লো এ্যাকটিং কার্ডিয়াক রিএ্যাক্টর দিয়ে এ কাজ করা যায়। আমরা ভাকে মেরে ফেলতে পারি শুধু তখনি যখন নর্থ ডাকোটাকে হাতের মুঠোয় পেয়ে যাব।

    শিতল একটা ধারা সুসানের গা বেয়ে উঠে এল, অবশ্যই, ফিসফিস করল সে, টানকাডো ভেবেছে তার ইনস্যুরেন্স বাতিল করা হয়েছে তাই তাকে ইচ্ছা করলেই আমরা এবার সরিয়ে দিতে পারি।

    আস্তে আস্তে সবটা পরিষ্কার হয়ে যাচ্ছে সুসানের কাছে। এখন, মরণ কামড় দেয়ার চেষ্টা করেছে টানকাডো আর সেই সোনার চাবিকাঠি আছে কোন এক ক্যানাডিয়ান ট্যুরিস্টের হাতে।

    তাহলে, এবার ক্যানাডিয়ান লোকটা কোথায়?

    এটাইতো সমস্যা।

    অফিসার জানে না সে কোথায়?

    না। ক্যানাডিয়ানের কাহিনী এতই নাটুকে যে অফিসার ধরে নিয়েছে শক পেয়েছে বেচারা। তাই লোকটাকে মোটরসাইকেলের পিছনে তুলে নিয়ে পৌঁছে। দিয়েছে তার হোটেলে। কিন্তু আসলেই লোকটা পুরোপুরি সুস্থ ছিল না। নামার সময় হঠাৎ পড়ে যায় সে। ভেঙে ফেলে কব্জি।

    কী!

    অফিসার তাকে হাসপাতালে পৌঁছে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু ট্যুরিস্টের এক কথা- এ মোটরসাইকেলে চড়ার আগে সে ক্যানাডায় পায়ে হেঁটে চলে যাবে। তাই অফিসারের একটা কাজই করার ছিল। সোজা সে পার্কের পাশের এক হাসপাতালের কথা জানিয়ে দেয় তাকে ঠিক হাসপাতাল নয়, ক্লিনিক। সেখানে রেখে যায় তাকে।

    ভ্রু কোঁচকায় সুসান, তাহলে আর আমার প্রশ্ন তুলতে হচ্ছে না কোথায় এখন ডেভিড, তাই না?

    অধ্যায় : ১৭

    ডেভিড বেকার প্লাজা এসপানার বাইরে পা রাখল। তার সামনে এল এউন্টামিন্টো- দ্য এনসিয়েন্ট সিটি কাউন্সিল বিল্ডিং- চারধারে সবুজ গাছের সমারোহ, মাঝখানে তিন একর জোড়া নীল-সবুজ টাইলের রাজ্য। এটার আরবিয় অবয়ব দেখে যে কারো মনে পড়ে যাবে রাজপ্রাসাদের কথা- কোন পাবলিক অফিসের কথা নয়। লরেন্স অব এ্যারাবিয়ার কথা মনে পড়ে যাবে সবার এটার দিকে তাকালেই।

    বেকার তার সেইকোকে লোকাল টাইমে সেট করল। নটা দশ। এখনো বিকাল। কোন স্প্যানিশ সন্ধ্যা মিলানোর আগে ডিনার সারে না। আন্দালুসিয়ান সূর্য সন্ধ্যা দশটার আগে পাটে নামে না।

    এ বিকালের তাপেও যেন পুড়ে যাচ্ছে গা। শুধু একটাই বাঁচার আশা- এখন সূর্যে সকালের মত তেজ নেই। স্ট্র্যাথমোরের কথা কানে বাজছে তার ক্যানাডিয়ানকে খুঁজে বের করুন। যে করেই হোক, আঙটিটা হাত করা চাই।

    বেকার ভেবে পায় না আঙটির উপর এত জোর দেয়ার কী হল। স্ট্র্যাথমোর বলেনি কেন এ জিনিসটা এত গুরুত্বপূর্ণ। এন এস এর একটা অর্থ বের করেছে বেকার। এন এস এ- নেভার সে এনিথিং।

    .

    এভনিডা ইসাবেলা ক্যাথলিকার অন্যপাশে সেই ক্লিনিকটা স্পষ্ট দেখা যায়। ছাদের কাছে সেই চিরাচরিত চিহ্ন দেখা যাচ্ছে। রেডক্রস। সাদা বৃত্তের ভিতরে রেডক্রস। গার্ডিয়া অফিসার অনেক আগেই ক্যানাডিয়ান লোকটাকে এখানে রেখে গেছে। হাতের আঘাত কোন সন্দেহ নেই, এর মধ্যেই তাকে চেক করে ছেড়ে দেয়া হয়েছে।

    আশা শুধু একটাই, ক্লিনিকে তার আগামি ঠিকানা দেয়া থাকবে। এখনো তাকে পেয়ে আঙটিটা হাত করার একটা সুযোগ আছে।

    স্ট্র্যাথমোর বলেছিল, দশ হাজার টাকার পুরোটাই ব্যবহার করুন আঙটিটা বার জন্য। যে কোন মূল্যে সেটা হাতকরা চাই।

    এর কোন দরকার নেই, বলল বেকার। সে টাকার জন্য স্পেনে আসেনি। এসেছে সুসানের সুবিধার জন্য একটা কাজ করে দিতে। কমান্ডার ট্রেভর স্ট্র্যাথমোর শুধু সুসানের গার্ডিয়ানই নয়, বরং আলোকবর্তিকা।

    কপাল খারাপ, আজকের সকাল থেকেই বেকারের ইচ্ছামত কিছু হচ্ছে না। সে প্লেন থেকে সুসানকে কল করে সব খুলে বলচে চেয়েছিল। স্ট্র্যাথমোরের সাথে। রেডিও যোগাযোগ থাকে বিমানের। কিন্তু তার রোমান্টিক সমস্যার সাথে কমান্ডারকে জড়াতে চায় না সে।

    তিনবার বেকার কল করতে চেয়েছিল সুসানকে। প্রথমে সেলুলার দিয়ে, প্লেন থেকে; পরের বার এয়ারপোর্ট থেকে, একটা পাবলিক বুদে ঢুকে; সবশেষে মর্গ থেকে। কোনবারই সুসানকে পাওয়া যায়নি। ভেবে পায় না কোথায় আছে সে। প্রতিবারই আনসারিং মেশিনের খোঁজ পেয়েছে কিন্তু সেখানে খবর রেখে দেয়ার কোন ইচ্ছা হয়নি। আনসারিং মেশিনে কোন খবর রাখার ইচ্ছা ছিল না তার।

    সামনে আরো একটা ফোনবুথ আছে। কলিং কার্ড দিয়ে সেটাতেও চেষ্টা করল সে। অনেকক্ষণ কোন শব্দ নেই। তারপর রিঙ হতে লাগল।

    কামঅন! ফোন তুলে নাও।

    পাঁচটা রিঙ হয়ে যাবার পর কল কানেক্টেড হল।

    হাই, সুসান ফ্লেচার বলছি। স্যরি, আমি বাসায় নেই। কিন্তু আপনি যদি কষ্ট করে আপনার নামটা জানিয়ে মেসেজ…

    মেসেজটা শুনল বেকার। কোথায় সে? এর মধ্যে সুসানের মনে আতঙ্ক ঢুকে যাবার কথা। এর মধ্যেই সে স্টোন ম্যানোরে চলে যায়নি তো তাকে ফেলে? একটা বিপ হল।

    হাই, ভেডিড বলছি, আর কী বলবে ভেবে পায় না বেকার। একটা ব্যাপার খারাপ লাগে তার, আনসারিং মেশিনে কোন জবাব না রেখে দিলে আপনাআপনি সেটা বন্ধ হয়ে যায়। স্যরি, আমি কল করিনি। আবার থামল সে। সবটা বলবে কিনা বুঝছে না। এরপর একটা কথা মনে চলে এল, কমান্ডার স্ট্র্যাথমোরকে কল কর। সেই সব ব্যাখ্যা করে বোঝাবে। হৃদপিন্ড লাফাচ্ছে বুকের ভিতরে, এসবের কোন মানে হয়! ভাবে সে, ভালবাসি তোমাকে। বলেই রেখে দিল ফোনটা।

    ডেভিড রাস্তা পেরুনোর সময় বাইরের দিকে তাকিয়ে থাকে নির্নিমেষ। কে জানে কী হবে! সুসান কখনো নিশ্চিন্ত থাকবে না। কারণ কল করার কথা বলে বেকার কল করেনি এমনটা কখনো হয়নি।

    চার লেনের বুলেভার্দের সামনে দাঁড়াল সে। আসা এবং যাওয়া নিজেকেই বলে চলে সে, আসা এবং যাওয়া।

    সে খেয়াল করেনি বাহারি সানগ্লাস পুরা লোকটা তাকে রাস্তার অপর পাড় থেকে দেখছে।

    অধ্যায় : ১৮

    টোকিওর আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে সে। নুমাটাকা। সিগারে একটা বড় করে টান দিয়ে হেসে ওঠে। ভাগ্য সব সময় তার বেলায় ভাল। এত ভাল- ভেবে পাওয়া যায় না। আমেরিকান লোকটা আবার ফোন করেছিল। সব যদি ঠিকমত চলে থাকে তাহলে এনসেই টানকাড়ো এর মধ্যেই পটল তুলেছে। পাস কি টা চলে আসবে তার কাছে।

    কী অবাক ব্যাপার, ভেবে পায় না সে। রূপকথার সোনার কাঠি রূপার কাঠি এখন তার হাতের মুঠোয়। এনসেই টানকাডোর অসাধারণ আবিষ্কার চলে আসবে। টানকাডোর সাথে অনেক আগে একবার দেখা হয়েছিল নুমাটাকার। তরুণ প্রোগ্রামার এসেছিল নুমাটেক কর্পে। মাত্র কলেজ থেকে বেরিয়েছে, খুঁজে ফিরছে কাজ।

    নুমাটাকা তাকে ফিরিয়ে দিয়েছিল। টানকাডো ব্রিলিয়ান্ট, কোন সন্দেহ নেই। সেইসাথে আরো কিছু ব্যাপার ভাবনার মধ্যে আনতে হবে। জাপান বদলে যাচ্ছে, কিন্তু নুমাটাকার শিক্ষা এসেছিল পুরনো ধাচের স্কুল থেকে। সে কোড অব মেনবোকো মেনে চলত- সম্মান এবং চেহারা। অপূর্ণতা কখনো মেনে নিতে হয় না। একজন শারীরিক প্রতিবন্ধিকে জায়গা দিলে তার কোম্পানির সম্মান ক্ষুণ্ণ হবে। একবার না দেখেই টানকাডোর রেজুমে ফিরিয়ে দিয়েছিল সেবার।

    আবার ঘড়ির দিকে তাকায় নুমাটাকা। সেই আমেরিকান, নর্থ ডাকোটা, তার এর মধ্যেই কল করার কথা। একটু যেন নার্ভাস লাগছে তার। একটাই আশা, কোন কিছু না আবার ভুল হয়ে যায়!

    জিনিসটা হাতে চলে এলে কম্পিউটার ইতিহাসের সবচে বড় একক সাফল্যের মুখ দেখবে সে। কোডটা পেলেই হল, নুমাটাকা সেটাকে একটা টেম্পার প্রুফ স্প্রে প্রফ ভি এস এ আই চিপে ভরে নিবে। তারপর সারা পৃথিবীর কম্পিউটার ম্যানুফ্যাকচারার, বিভিন্ন সরকার, বড় বড় ইন্ডাস্ট্রি এবং সম্ভব হলে একেবারে অন্ধকার রাজ্যের প্রতিষ্ঠানগুলোর হাতে হাতে পৌঁছে দিবে সে সেগুলো। চলে যাবে বিশ্বের তাবৎ বড় টেররিস্ট গ্রুপের হাতে।

    মুচকি হাসি নুমাটাকার মুখে। যেন শিকহিগোসানের আশীর্বাদ তার উপর সৌভাগ্যের সাত প্রকার প্রতীক যেন মুখ তুলে চেয়েছে তার প্রতি।

    নুমাটেক কৰ্প আর কিছুক্ষণের মধ্যেই সারা পৃথিবীর সবচে দামি এ্যালগরিদমের মালিক হতে যাচ্ছে। অনেক অনেক দিনের জন্য। বিশ মিলিয়ন ডলার ছেলেখেলা নয়, কিন্তু ডিজিটাল ফোট্রেসের কপি হাতে পাওয়া আর সবকিছু পাওয়া একই কথা।

    অধ্যায় : ১৯

    যদি আর কেউ সেই আঙটির খোঁজে থেকে থাকে? নার্ভাসভাবে জিজ্ঞেস করল সুসান, ডেভিডের কোন বিপদ হবে নাতো?

    মাথা নাড়ল স্ট্র্যাথমোর, আর কেউ আঙটির অস্তিত্বের কথা জানে না। এ কারণেই ডেভিডকে পাঠিয়েছি। ছারপোকা আর যার পিছনেই লাগুক, একজন স্প্যানিশ টিচারের পিছনে খোদ স্পেনে লাগতে যাবে না।

    সে কোন টিচার নয়, প্রফেসর। তেতে জবাব দিল সুসান। সে টের পেয়েছে, স্ট্র্যাথমোর মাঝে মধ্যেই ডেভিডকে টিচার হিসাবে উপস্থাপন করে। যেন মামুলি কোন স্কুল টিচার।

    কমান্ডার, বলছে সে, আপনি যদি আজ সকালে কার ফোন থেকে ডেভিডকে ব্রিফ করে থাকেন, অন্য যে কেউ কথাগুলো শুনে থাকতে পারে, আর—

    লাখবারে একবার, বলল স্ট্র্যাথমোর, সুসানের কথায় বাধা দিয়ে, কেউ কখনোই জানতে পারবে না কী শুনতে হবে যদি না সে জানে কার কথা শুনতে হবে। কখনোই ডেভিডকে পাঠাতাম না যদি মনে করতাম সেখানে বিন্দুমাত্র ঝুঁকি আছে। বিশ্বাস কর আমাকে। ঝুঁকির বিন্দুমাত্র আভাস এলেই আমি আসল লোক পাঠিয়ে দিব।

    নড থ্রি গ্লাসের বাইরে থেকে কেউ যেন তাকিয়ে দেখার চেষ্টা করছে ভিতরটা, এমনভাবে তাকাল স্ট্র্যাথমোর। চোখ ফিরিয়ে নিল সুসানও।

    সিস-সেকের ফিল চার্ট্রাকিয়ান মুখ লাগিয়ে রেখেছে কাঁচের গায়ে। ভিতরটা দেখার চেষ্টা করছে আসলেই। তার মুখের উদ্বেগ ধরা যাচ্ছে এপাশ থেকে তেমনভাবে। যেন ভূত দেখেছে সে।

    চার্ট্রাকিয়ান কী করছে এখানে। বিরক্ত হল স্ট্র্যাথমোর; আজ তো তার ডিউটি নেই!

    মনে হয় তার চোখ পড়েছে রান মনিটরগুলোর কোন একটায়।

    গডড্যাম ইট! হিসহিস করল স্ট্র্যাথমোর, আমি গত রাতের সিস-সেককে কল করে বলে দিয়েছিলাম আজ যেন না আসে।

    সুসানের চোখেমুখে কোন বিরক্তি নেই। সে জানে, সিস-সেককে ডিউটি থেকে সরানো কোন নিয়মিত কাজ নয়। কিন্তু স্ট্র্যাথমোর যে আজকের কাজে একটু প্রাইভেসি চাচ্ছিল তাতে সন্দেহ কী! এখন কোন পাগলাটে সিস-সেক যে ডিজিটাল ফোট্রেসের বারোটা বাজাবে তা জানা কথা।

    আমাদের বরং ট্রান্সলেটারকে এ্যাবোর্ট করে দেয়া উচিত, বলল সুসান, আমরা রান মনিটরগুলো রিসেট করে ফিলকে জানাতে পারি ভুল দেখছে সে।

    কথাটা একটু বিবেচনায় নিল স্ট্র্যাথমোর, তারপর ঝেড়ে ফেলল আইডিয়াটা। না। আমি ট্রান্সলেটারে মরার জিনিসটাকে আরো অনেক্ষণ চালাতে চাই। অন্তত চব্বিশ ঘন্টা চালিয়ে দেখতে চাই কী হয়।

    ডিজিটাল ফোর্ট্রেস যে প্রথম রোটেটিং ক্লিয়ারটেক্সট কোড তাতে আর কোন। সন্দেহ নেই সুসানের। কিন্তু এ আশাও সে ছাড়ছে না। এমনো হতে পারে, এ কোডটাতেই চিড় ধরাতে পারে ট্রান্সলেটার।

    না। চলবে ট্রান্সলেটার। আমি দেখতে চাই এ কোডটাকে শেষ পর্যন্ত ভাঙা যায় কিনা। বলল স্ট্র্যাথমোর।

    চার্ট্রাকিয়ান নক করা শুরু করল কাঁচের গায়ে। যতসব সমস্যা, বিরক্ত হল স্ট্র্যাথমোর, আমাকে ব্যাকআপ দাও।

    কমান্ডার একটা লম্বা শ্বাস নিয়ে দরজার কাছে গেল। পায়ের নিচের প্রেশার প্লেট এ্যাকটিভ হল। হিসহিসিয়ে খুলে গেল দরজা।

    চার্ট্রাকিয়ান পড়ে গেল রুমের ভিতরে, কমান্ডার, স্যার। আমি… আমি দুঃখিত। আপনাকে বিরক্ত করতে চাইনি। ঐ রান- রান কম্পিউটার মনিটরটা… একটা ভাইরাস প্রোব চালিয়েছি আর

    ফিল, ফিল, ফিল, চট্র্যাকিয়ানের কাঁধে আলতো করে আশ্বস্ত করার ভঙ্গিতে হাত রাখল স্ট্র্যাথমোর, ধীরে, ধীরে। সমস্যা কোথায়?

    স্ট্র্যাথমোরের এই শান্ত সুর শুনে কেউ বুঝতেও পারবে না তার চারপাশের দুনিয়া এ মুহূর্তে ভেঙে পড়ছে। একটু সরে দাঁড়িয়ে সে চার্ট্রাকিয়ানকে ভিতরে আসতে দিল। এখানে কারো আসার কথা নয়। বিশেষ করে এমন কেউ এখানে কখনো আসেনা।

    চার্ট্রাকিয়ানের চোখমুখের ভাব দেখে স্পষ্ট বোঝা যায় সেও কখনো আসেনি এ ঘরটায়। অবাক হয়ে চারপাশে তাকায় সে। তাকায় বিলাসের আয়োজন আর কম্পিউটারের টার্মিনালে। তাকায় ক্রিপ্টোর রাগির দিকে সুসান ফ্লেচার। সাথে সাথে চোখ সরিয়ে নেয়। কারণ এ জ্বলজ্বলে রূপের সামনে সব সময় তাকে মিইয়ে যেতে হয়। তোতলাতে শুরু করে সে সুসানের সাথে কথা বলার সময়।

    সমস্যা কোথায় ফিল? স্ট্রার্থমোর কথাটা জিজ্ঞেস করতে করতে ফ্রিজের দরজা খুলল, ড্রিঙ্ক?

    না- আহ্- না স্যার। এখনো সে ঠিক বুঝতে পারছে না হোমরা চোমড়াদের এ জায়গায় সে ঠিক স্বাগত কিনা। স্যার… আমার মনে হয় ট্রান্সলেটারে কোন সমস্যা চলছে।

    ফ্রিজের দরজা বন্ধ করে স্ট্র্যাথমোর সরাসরি তাকাল তার দিকে, তুমি রান মনিটরের কথা বলছ তো?

    আপনি দেখেছেন?

    অবশ্যই। এটা প্রায় ষোল ঘন্টা ধরে চলছে, আমার যদি ভুল হয়ে না থাকে।

    এবার পুরো ধাঁধায় পড়ে গেল সিস-সেক, ইয়েস স্যার। সিক্সটিন আওয়ার্স। কিন্তু এই সব নয়, আমি একটা ভাইরাস পোব চালিয়েছিলাম। অদ্ভুত ফল আসছে।

    তাই? কেমন ফল?

    সুসান বেশ অবাক হয়ে কমান্ডারের শান্ত অভিনয় দেখছে।

    ট্রান্সলেটার খুব এ্যাডভান্স কিছু নিয়ে কাজ করছে। ফিল্টারগুলো এমন কিছু দেখেনি এর আগে। আমার মনে হয় ট্রান্সলেটারে কোন বিশেষ ধরনের ভাইরাস ঘাটি গেড়েছে।

    ভাইরাস? ফিল, আমি তোমার উদ্বেগ দেখে খুশি হলাম। কিন্তু আমি আর মিস ফ্লেচার খুব এ্যাডভান্সড একটা ডায়াগোনস্টিক চালাচ্ছি। আমি তোমাকেও এ। কাজে লাগাতাম, কিন্তু জানা ছিল না তুমি আজকের ডিউটিতে আছ।

    নতুন লোকটার বদলে এসেছি আমি। উইকএন্ডে মাঝে মাঝে আমরা এ কাজটা করি।

    এবার সরু হয়ে গেল স্ট্র্যাথমোরের চোখ, দ্যাটস অড। আমিতো গত রাতে তার সাথে কথা বলেছিলাম। আসতে মানা করেছি তখন। সে তো শিফট বদলের ব্যাপারে কিছু বলেনি।

    গলায় কী যেন আটকে গেছে চার্ট্রাকিয়ানের। নিরবতা কঠোর হয়ে উঠছে আস্তে আস্তে।

    যাক, অবশেষে বলল স্ট্র্যাথমোর, একটা ছোট্ট শ্বাস ফেলতে ফেলতে, মনে হয় কোন একটা গোলমাল বেধে গেছে। সিস-সেকের কাঁধে হাত রেখে দরজার দিকে ফিরিয়ে দিল, তোমার আর কষ্ট করতে হবে না। আমি আর মিম্ন ফ্লেচার সারাদিন এখানে থাকছি। সমস্যা সব আমরাই দেখব। তুমি উইকএন্ডটা এনজয় করো।

    কমান্ডার, আমার আসলেই মনে হয় সবটা একটু চেক করে দেখা দরকার।

    ফিল, ট্রান্সলেটার ভাল আছে। তোমার প্রোব যদি কোন কিম্ভুত ব্যাপার দেখিয়ে থাকে তাতে ভয়ের কিছু নেই। আমিই সেটা সেখানে ঢুকিয়েছি। এখন, তুমি যদি কিছু মনে না কর-

    এগিয়ে দিল স্ট্র্যাথমোর সিস-সেককে দরজার দিকে। বুঝে নিল সে, সময় ফুরিয়ে গেছে।

    .

    একটা ডায়াগনস্টিক? মাই এ্যাস! বিড়বিড় করল চার্ট্রাকিয়ান। ছেলেখেলা

    পেয়েছে। একটা কিছু দিয়ে বুঝ দিয়ে দিলেই হল। কেমনধারা লুপ ত্রিশ লাখ প্রসেসরকে মোল ঘন্টা ব্যস্ত রাখে তা বোধহয় আমরা বুঝি না?

    এখনো হাল ছেড়ে দিবে না সে। সিস-সেক সুপারভাইজারকে ডাকবে কিনা ভেবে পায় না। গডড্যাম ক্রিপ্টোগ্রাফারের দল, মনে মনে গাল ঝাড়ল চার্ট্রাকিয়ান, তারা সিকিউরিটির ডিমটা বোঝে।

    তার মনে পড়ে গেল এখানে যোগ দেয়ার সময়টার কথা। সে ভালভাবেই প্রতিজ্ঞা করেছিল, এখানে কাজ শুরু করার সাথে সাথে তার সমস্ত ক্ষমতা আর মনোযোগ দিয়ে এন এস এর এ মাল্টি বিলিয়ন ডলারের প্রজেক্টের নিরাপত্তা বিধান করবে।

    আন্দাজ, বলল সে, বাকিটা বলল মনে মনে, যে কোন পাগলও বুঝতে পারবে কোন ডায়াগনস্টিক এত সময় ধরে চলবে না।

    টার্মিনালে চলে এল চার্ট্রাকিয়ান, তারপর সিস্টেম এ্যাসেসমেন্ট সফটওয়্যারের পুরো এ্যারে চালিয়ে দিল।

    আপনার বেবি সমস্যায় পড়েছে, কমান্ডার, মুখ ঝামটা দিল সে, আপনি আন্দাজে বিশ্বাস করেন না? আমি প্রমাণ দিচ্ছি!

    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleসুখীজীবন ও কাজের সন্ধানে – ডেল কার্নেগি
    Next Article ডিসেপশন পয়েন্ট – ড্যান ব্রাউন

    Related Articles

    ড্যান ব্রাউন

    দ্য দা ভিঞ্চি কোড – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025
    ড্যান ব্রাউন

    এঞ্জেলস এন্ড ডেমনস – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025
    ড্যান ব্রাউন

    দ্যা লস্ট সিম্বল – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025
    ড্যান ব্রাউন

    অরিজিন – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025
    ড্যান ব্রাউন

    ইনফার্নো – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025
    ড্যান ব্রাউন

    ডিসেপশন পয়েন্ট – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Demo
    Most Popular

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Our Picks

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    দ্য দা ভিঞ্চি কোড – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025

    এঞ্জেলস এন্ড ডেমনস – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    Sign In or Register

    Welcome Back!

    Login below or Register Now.

    Lost password?

    Register Now!

    Already registered? Login.

    A password will be e-mailed to you.