Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    দ্য দা ভিঞ্চি কোড – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025

    এঞ্জেলস এন্ড ডেমনস – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • 🔖
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    Subscribe
    সাইন ইন
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    ডিজিটাল ফরট্রেস – ড্যান ব্রাউন

    ড্যান ব্রাউন এক পাতা গল্প381 Mins Read0

    ০৩০. আলফানসো তের

    অধ্যায় : ৩০

    আলফানসো তের হল ছোটখাট, ফোর স্টার হোটেল। মার্বেলের ঝকঝকে সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠে গেল ডেভিড। দরজার কাছে যাবার সাথে সাথে সেটা হাট হয়ে খুলে গেল। সেখানে লোকজন অপেক্ষা করছে তার জন্য। তার মত কারো জন্য।

    ব্যাগেজ, সিনর? আমি কি আপনাকে সহায়তা করতে পারি?

    না, থ্যাঙ্কস, আমি কনসার্জের সাথে কথা বলতে চাই।

    আহত হল যেন বেলবয়। দু সেকেন্ডের এ দেখা হওয়াটা যেন একেবারে বৃথা গেল। পোর একুই, সিনর। লবির দিকে দেখিয়ে দিল সে। কনসার্জ বা ডোরকিপারের দিকে নির্দেশ করেই চলে গেল ঝটপট।

    লবিটা ছোট, কিন্তু দারুণভাবে সাজানো। স্পেনের সোনালি দিন অতীত হয়ে গেছে অনেক আগেই। কিন্তু সপ্তদশ শতকের মাঝামাঝি কোন এক সময়ে এ জাতিটা পুরো পৃথিবীর উপর শাসন চালিয়েছিল। ঘরটায় সে সময়কার চিহ্ন প্রকট আমার স্যুট, মিলিটারি সাজপোশাক, সোনার একটা ডিসপ্লে সেট।

    কনসার্জে লেখা মার্কের পিছনে বত্রিশ দাঁত কেলিয়ে এভাবে একটা লোক তাকিয়ে আছে যেন সে সারাটা জীবন ধরে অপেক্ষা করছে ডেভিডের জন্য। এন কিউ পুয়েডো সার্ভির্লে, সিনর? আমি কীভাবে আপনার সেবা করতে পারি, জনাব? বেকারের সারা শরীরে চোখ বুলিয়ে নিতে নিতে তোষামোদী কথাটুকু বলল সে।

    স্প্যানিশে জবাব দিল বেকার, আমি ম্যানুয়েলের সাথে কথা বলতে চাই। লোকটার মুখচোখ আরো খুশি হয়ে উঠল যেন। কান থেকে কানে ছড়িয়ে গেল হাসির মেকি পরশ, সি, সি, সিনর। আমিই ম্যানুয়েল। আপনার কামনা কী?

    সিনর রোল্ডান আমাকে–

    নার্ভাসভাবে লবিতে চোখ বুলিয়ে নেয় লোকটা: আপনি আরো একটু এগিয়ে আসছেন না কেন? বেকারকে কাউন্টারের একেবারে শেষ কোথায় নিয়ে এল লোকটা, এবার, বলল সে, ফিসফিস করে কী করে আমি আপনাকে সহায়তা করতে পারি?

    কণ্ঠ নিচু করে বেকার কথা বলতে শুরু করল, আমি তার একজন এসকর্টের সাথে কথা বলতে চাই যে এখানে এখন ডিনার করছে বলে আমার বিশ্বাস। নাম তার রোসিও।

    এবার টেনে রাখা দম ছাড়ল কনসার্জে স্বস্তির সাথে, ও, রোসিও… এক অনিন্দ্যসুন্দর সৃষ্টি।

    আমার তার সাথে অবশ্যই দেখা করতে হবে।

    কিন্তু সিনর, সে তো এখন একজন ক্লায়েন্টের সাথে আছে।

    মাফ চাইবার ভঙ্গিতে নড করল বেকার, ইটস ইমপর্টেন্ট। এ ম্যাটার অব ন্যাশনাল সিকিউরিটি।

    মাথা নাড়ল কনসার্জে, অসম্ভব। আপনি যদি কোন চিরকুট—

    মাত্র এক মুহূর্ত লাগবে। সে কি ডাইনিঙে আছে?

    কনসার্জে আবারো মাথা নাড়ল, আরো আধঘন্টা আগে আমাদের ডাইনিং ক্লোজ হয়ে গেছে। আজ বিকালের মত রোসিও আর তার ক্লায়েন্ট মনে হয় বিদায় নিয়ে ফেলেছে। আপনি যদি কোন মেসেজ দেন তো সকালে তার হাতে পৌঁছে দিতে পারি। পিছনে নাম্বার দেয়া মেসেজ বক্স আছে।

    আমি যদি তার রুমে কল করে–

    স্যরি। কনসার্জে বলল। তার ভদ্রতা আস্তে আস্তে মিইয়ে যাচ্ছে। ক্লায়েন্টের প্রাইভেসির ব্যাপারে আলফানসো তের খুব স্ট্রিক্ট।

    ব্রেকফাস্টের জন্য একজন মোটাসোটা লোক আর তার সাথে এক পতিতা নেমে আসবে দশ ঘন্টা পর আর তাদের জন্য অপেক্ষা করবে বেকার, এমন ইচ্ছা নেই তার।

    আমি বুঝতে পারছি, বলল বেকার, আপনাকে বিরক্ত করার জন্য আন্ত রিকভাবে দুঃখিত।

    ঘুরে লবির দিকে এগিয়ে গেল সে। সামনে অনেক খাম আর কলম আছে। একটা তুলে নিয়ে খামের উপর লিখলঃ

    রোসিও।

    এগিয়ে গেল কনসার্জের দিকে।

    আবার আপনাকে বিরক্ত করার জন্য আমি দুঃখিত। ঘুম ঘুম ভাব নিয়ে এগিয়ে এসে বলল বেকার, আমি বোকার মত কাজ করেছি, মানি। আমি রোসিওকে বলতে চাচ্ছিলাম আর একদিন কেমন সময় কাটিয়েছি আমরা। কিন্তু আজই আমি টাউন ছেড়ে চলে যাচ্ছি। তার জন্য কোন নোট রেখে যেতে পারি কি? কাউন্টারে খামটা রাখল সে।

    খামের দিকে চোখ রেখে হাসল লোকটা। ম্লান হাসি। আরো এক হেঁটেরোসেক্সয়াল, যে কিনা ভালবাসার জন্য মরতে বসেছে! ভাবে সে। কী অপচয়! চোখ তুলে তাকায় সে। অবশ্যই, মিস্টার…?

    বুসিয়ান, বলল বেকার, মিগুয়েল বুসিয়ান।

    অফ কোর্স। রোসিও যেন সকালেই এটা পায় সেদিকে দৃষ্টি রাখব আমি।

    থ্যাঙ্ক ইউ। বলল বেকার। তারপর ঘুরে চলে গেল।

    বেকারের পিছনদিকটা ভাল করে লক্ষ করতে করতে কনসার্জে খামটা কাউন্টার থেকে নিয়ে একটা বাক্সে ভরে ফেলল।

    শেষবারের মত ঘুরে দাঁড়াল বেকার।

    কোথায় ট্যাক্সি পাব?

    কী জবাব দিল কনসার্জে সেসবের থোড়াই পরোয়া করে বেকার। তাকিয়ে আছে কনসার্জের হাতের দিকে। এক মুহূর্ত। যা দেখার দেখে নিয়েছে। বক্স নাম্বার তিনশো এক। স্যুট তিনশো এক।

    কনসার্জেকে শেষ ধন্যবাদ দিয়ে সে ঘুরে দাঁড়াল। এগিয়ে গেল এলিভেটরের দিকে।

    আসা এবং যাওয়া। সুর করে বলল সে।

    আসা এবং যাওয়া।

    অধ্যায় : ৩১

    নড থ্রি তে এসেছে সুসান। স্ট্র্যাথমোরের সাথে কথোপকথনে ডেভিডের নিরাপত্তার ব্যাপারে আরো বেশি উদ্বেগ উঠে আসে মনে। কল্পনার বন্ধুাছাড়া ঘোড়া বারবার বিপদের গন্ধ খোঁজে।

    তো, টার্মিনাল থেকে সে চোখ তোলে, স্ট্র্যাথমোর কী চায়? হেড ক্রিপ্টোগ্রাফারের সাথে একটা রোমান্টিক বিকাল?– মন্তব্যটাকে গায়ে না মেখে সুসান নিজের কাজে মন দেয়। প্রাইভেসি নাম্বার টাইপ করে সে অন করে টার্মিনালটা। ট্রেসার প্রোগ্রাম এখনো দেখা যাচ্ছে। নর্থ ডাকোটার কাছ থেকে কোন জবাব আসেনি।

    ড্যাম! ভাবে সুসান। কী কারণে এত দেরি হচ্ছে?

    তোমার বারোটা বেজে গেছে মনে হয়, একেবারে নিষ্পপের মত বলে ওঠে হেল, ডায়াগনোস্টিকের ব্যাপারে সমস্যা হচ্ছে নাকি? : সিরিয়াস কিছু নয়। জবাব দেয় সে। কিন্তু সুসান জানে না ব্যাপারটা সিরিয়াস কিনা। ট্রেসারে কোন কাজ হচ্ছে না কেন এখনো? লিখতে গিয়ে কোন ভুল করেনিতো? লিম্বোর লম্বা লাইনগুলো চেক করে দেখে আরেকবার। : তার অস্থিরতা টের পায় হেল। হেই, তোমাকে বলতেই তো ভুলে গেছি, এনসেই টানকাডো যে আনব্রেকেবল কোডের কথা বলে সেটার ব্যাপারে কী করলে?

    সুসানের পাকস্থলিতে পাক দিয়ে উঠল। চোখ তুলল সে, আনব্রেকেবল এ্যলগরিদম? নিজেকে ফিরে পেতে চায় সে, ও, হ্যাঁ, আমি এ নিয়ে কী যেন পড়েছিলাম…

    খুবই অবিশ্বাস্য দাবি।

    হ্যাঁ। জবাব দেয় সুসান। ভেবে পায় না কেন হেল হঠাৎ:এ কথা তুলল। আমি এর কোন দাম দেইনি। সবাই জানে, আনব্রেকেবল কোড হল গাণিতিকভাবে অসম্ভব একটা ব্যাপার।

    হাসল হেল, ও… তাইতো… বাগফস্কি প্রিন্সিপল।

    এবং কমনসেন্স।

    কে জানে… নাটকীয়ভাবে বলল সে, পৃথিবী আর স্বর্গগুলোয় এমন অনেক কিছু আছে যা আমরা কল্পনাতেও আনি না।

    আই বেগ ইউর পিরডন?

    শেক্সপিয়র। বলল হেল, যেন এ কোটেশনটা কোত্থেকে আসছে তা জানে না সুসান, হ্যামলেট।

    জেলে থাকার সময় অনেক পড়েছ, না?

    মুখ ভেঙচে হাসল সে, সিরিয়াসলি, সুসান, কখনো কি ভেবেছ যে ব্যাপারটা সত্যিও হতে পারে?

    সুসানের কাছে কথাবার্তা আরো বেশি অপ্রস্তুত ভাব এনে দিচ্ছে। আসলে, আমরা কেউ তা করতে পারিনি।

    হয়ত টানকাড়ো আমাদের আর সবারচে মেধাবী।

    হয়ত।

    আমরা কিছু সময়ের জন্য একত্রে কাজ করেছিলাম। আমি আর টানকাডো। জানা আছে তোমার?

    শকটা লুকানোর কোন চেষ্টা না করেই চোখ তোলে সুসান। সত্যি?

    হ্যাঁ। স্কিপজ্যাক এ্যালগরিদমের বারোটা বাজানোর পর পরই। টানকাডো আমার কাছে চিঠি লেখে। জানায়, আমরা দুজনে পৃথিবীর ডিজিটাল প্রাইভেসি রক্ষার কাজে ভাইয়ের মত।

    অবিশ্বাসটা ধামাচাপা দিতে পারছে না সুসান। হেল ব্যক্তিগতভাবে টানকাড়োকে চেনে! অনাগ্রহী একটা ভাব ধরে রাখার প্রাণান্ত চেষ্টা চালায় সে।

    বলে যাচ্ছে হেল, সে আমাকে অভিনন্দন জানিয়েছিল। অভিনন্দন জানিয়েছিল স্কিপজ্যাকের পিছনদিকের দরজাটা আবিষ্কারের জন্য। বেসামরিক মানুষের প্রাইভেসি রক্ষার আন্দোলনে এটাকে সে একটা অভ্যুত্থান হিসাবে বিবেচনা করে। তুমিতো ভাল করেই জান, সুসান, স্কিপজ্যাক ইল মানুষের কাছে ঠকানোর দরজা খুলে দেয়ার এক পথ। তোমরা, মানে আমরা এমন এক পথ রেখে দিয়েছি যাতে সব কিছুর ডাটা আমাদের হাতে চলে আসে। সবার ই-মেইল পড়তে পারি আমরা। তুমি যদি আমাকে প্রশ্ন কর তো আমি বলর, আসলেই স্ট্র্যাথমোর ধরা খাবার যোগ্য কাজ করেছে।

    গ্রেগ, রাগকে ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করতে করতে সুসান বাতাসে হাত চালায়, সেই ব্যাকডোরটা এজন্য রাখা হয়েছে যাতে এন এস এ গুরুত্বপূর্ণ চিঠিগুলো পড়ে এ দেশের নিরাপত্তা বিধান করতে পারে। আমরা কারো প্রেম কাহিনী পড়ে ফেলব না শখের বশে কারো নামে স্ক্যান্ডালও চড়াব না। শুধু দেশের নিরাপত্তার দিকটা দেখব।

    ও, তাই? দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে হেল, মেকি সুরে, সাধারণ মানুষের ই-মেইল পড়ে ফেলাটা–

    আগেই বলেছি, সাধারণ মানুষের দরকারি অদরকারি ই-মেইল আমরা পড়ে ফেলব না। সে সময় বা ইচ্ছা কোনটাই নেই এন এস এর। তুমি ভাল ভাবেই জান সেটা। এফ বি আই টেলিফোন টেপ করতে পারে, কিন্তু তার মানে এই না যে তারা সব কলই শুনে যায় একের পর এক।

    যদি তাদের সেরকম ম্যানপাওয়ার থাকত তাহলে তারা তাই করত।

    কথাটায় দাম দিল না সুসান, সরকারের কাছে এমন অধিকার থাকা প্রয়োজন যার মাধ্যমে তারা ডাটা যোগাড় করবে আর ভালর পথটাকে প্রশস্ত করবে।

    জিসাস ক্রাইস্ট! হেল আফসোসের সুরে বলে, তোমার সুর শুনে মনে হয় স্ট্র্যাথমোর মগজধোলাই করে বসে আছে। তুমি ভালভাবেই জান যে এফ বি আই। চাইলেই যে কোন ফোন শুনতে পায় না। আগে তাদের একটা ওয়ারেন্ট থাকতে হয়। একটা ছিদ্রসহ এনক্রিপশনের মানে এফ বি আইর ফোনে আড়িপাতা নয়, তারা সব পড়বে, সব সময়, সবখানে।

    তুমিই ঠিকই বলেছ- আমাদের এ ক্ষমতা থাকা দরকার! সুসানের গলার স্বর সাই সাই করে চড়ে যাচ্ছে, তুমি যদি স্কিপজ্যাকের পিছন দিকের দরজাটা না ধরিয়ে দিতে তাহলে যে কোডই ভাঙা প্রয়োজন পড়ত সেটাই ভেঙে ফেলতে পারতা। আমরা। তখন আর ট্রান্সলেটারের উপর এত চাপ দিতে হত না।

    আর আমি যদি ক্ষিপজ্যাকের পিছনদিকের দরজাটা না দেখিয়ে দিতাম তাহলে অন্য কেউ না কেউ কাজটা করতই। কারো না কারো তা করতে হত। আমি তোমাদের খরচ আর সময় বাঁচিয়ে দিয়েছি আগেভাগে কাজটা করে। স্কিপজ্যাক বাজারে নামার পর খবরটা প্রচার হয়ে গেলে তোমাদের নাম কোথায় যেত একবার ভেবে দেখ।

    আর এখন কী হল? পাগলাটে ই এফ এফ এখন ধরে বসে আছে যে আমরা যত কোড নামাই, যত এ্যালগরিদম নামাই তার সবার পিছনেই একটা করে ব্যাকডোর আছে। খুব ভাল হল, তাই না?

    তো? সবগুলোতে কি রাখিনি?

    ঠান্ডা চোখে তাকিয়ে থাকে সুসান।

    হেই! বলল হেল, সে কথার আর কোন দাম নেই এখন। তোমরা ট্রান্সলেটার বানিয়ে ফেলেছ। ইনফরমেশন সোর্স এখন হাতের মুঠোয়। তোমরা পড়তে পার যা চাও, যে সময় চাও সে সময়টাতেই- কোন প্রশ্ন নেই। তোমরাই জিতে গেলে।

    তুমি কি বলতে চাচ্ছ আমরা জিতে গেলাম? আমি সর্বশেষ যে কথাটা জানি সেটা অনুসরণ করলে বলা চলে তুমি এন এস এর পক্ষে কাজ কর।

    খুব বেশিক্ষণ নয়।

    কোন প্রতিজ্ঞা করোনা।

    আমি সিরিয়াস। কোন না কোন দিন আমি এখান থেকে ঠিক ঠিক বেরিয়ে যাব।

    তখন ভেঙে পড়ব আমি।

    ঠিক তখনি কেন যেন সুসান সব কাজের জন্য হেলকে দায়ী করতে শুরু করে। রাগে অন্ধ হয়ে গিয়ে সে ডিজিটাল ফোট্রেসের জন্য দায় দেয় তাকে, দায় দেয় ডেভিডের অনিশ্চয়তার জন্য, এ অস্থিরতার জন্য- যদিও সে জানে যে এসবের কোনটাই তার দোষ নয়।

    হেলের একমাত্র সমস্যা সে বেয়াড়া। সুসানের আরো বড় কেউ হওয়া প্রয়োজন যেন হেলের কাছ থেকে সম্মান পেতে হলে। সব ক্রিপ্টোগ্রাফারকে শান্তি তে রাখার দায়িত্ব যেন তার। সবাইকে সুশিক্ষিত করে রাখার দায়িত্বও। হেল তরুণ আর একরোখা। এই হল সমস্যা।

    তার দিকে আবার তাকায় সুসান। ব্যাপারটা আফসোসের। ক্রিপ্টোর সম্পদ হবার যোগ্যতা আছে তার। কিন্তু এখনো সে এন এস এর কাজের পিছনে কারণগুলো ধরতে পারছে না।

    গ্রেগ, আমি আজকে অনেক চাপে ভুগছি। তুমি যখন বল যে আমরা, এন এস এ কোন হাইটেক ছিদ্রান্বেষী সংস্থা, তখন আমার খুব লাগে। এ প্রতিষ্ঠানটা একটা মাত্র কারণে তৈরি করা হয়- এ জাতির নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য। এজন্য কয়েকটা গাছ ঝাঁকিয়ে নিয়ে রোগাক্রান্ত আপেলটা খুঁজে বের করতে হয়। আমার মনে হয় সব মানুষ তার প্রাইভেসির কিছু অংশ ছাড় দিতে রাজি হবে তাদের নিরাপত্তার খাতিরে।

    কোন জবাব দিল না হেল।

    আজ অথবা কাল, যুক্তি দিল সুসান, এ দেশের মানুষ কোন না কোন জায়গায় তাদের বিশ্বাস স্থাপন করবে। বাইরে ভাল সংস্থার কোন অভার নেই। সেইসাথে মিশে আছে অনেক খারাপ। কাউকে না কাউকে তো এসবের ভিতরে ঢুকে কোনটা ভাল আর কোনটা খারাপ সে ব্যাপারে প্রভেদ করতে হবে। এটাই আমাদের জুব। আমরা এটা পছন্দ করি আর না করি, এন এস এ দরজার প্রহরী।

    চিন্তান্বিতভাবে মাথা ঝাঁকায় হেল, কইস কাস্টোডেট ইপসোস কাস্টোডেট?

    সুসানের অভিব্যক্তি ফাঁকা।

    ল্যাটিন কথা। এর মানে হল, গার্ডদের কে গার্ড দিবে?

    আমিতো বুঝতে পারলাম না। গার্ডদের কে গার্ড দিবে?

    হ্যাঁ। আমরা যদি সোসাইটির প্রহরী হই, তাহলে কে আমাদের দেখবে? কে নিশ্চিত করবে যে আমরা ভয়ঙ্কর নই?

    নড় করল সুসান। জানে না কী বলবে।

    হাসল হেল, এভাবেই টানকাডো তার সব চিঠিতে আমার কাছে সাইন করে। এটাই তার প্রিয় কথা।

    অধ্যায় : ৩২

    ডেভিড বেকার একটা হলওয়েতে দাঁড়িয়ে আছে। সামনেই স্যুট নাম্বার তিনশো এক। সে জানে, এ দরজার ভিতরে কোথাও সেই বহুমূল্য আঙটি আছে। জাতীয় নিরাপত্তার ব্যাপার।

    বেকার ভিতরে নড়াচড়ার আভাস পাচ্ছে। মনে মনে শক্তি এক করে নক করে বসল সে।

    জা?

    চুপ করে থাকল বেকার।

    জা?

    খুলে গেল দরজা। একটা জার্মান চোখ দেখা দিল সেখানে দেখা দিল চেহারা।

    নরমভাবে হাসল বেকার। লোকটার নাম জানে না সে।

    ডিউসার, জা? প্রশ্ন তুলল সে, জার্মান, তাই না?

    নড করল লোকটা। অনিশ্চয়তায়।

    একেবারে নিখুঁত জার্মানে বেকার কথা বলে উঠল, আমি কি আপনার সাথে একটু কথা বলতে পারি?

    লোকটার হাবভাবে অস্থিরতা, কী চান আপনি?

    কোন লোকের ঘরে টোকা দেয়ার আগে তার ভাল করে ভেবে নেয়া উচিৎ ছিল, ভাবে বেকার। তারপর বলে, আপনার কাছে এমন কিছু আছে যা আমার প্রয়োজন।

    জার্মানের চোখ সরু হয়ে গেল।

    এইন রিঙ, বলল সে, আপনার কাছে একটা আঙটি আছে।

    চলে যান। বলল জার্মান। দরজা বন্ধ করে দিচ্ছে সে। কোন ভাবনা বাদ দিয়েই বেকার দরজার ফাঁকে পা ঢুকিয়ে দিল। সাথে সাথে ক্ষমার একটা ভাব করল।

    ছানাবড়া হয়ে গেছে জার্মানের চোখমুখ।

    কী করছেন আপনি?

    নার্ভাসভাবে হলওয়ের দিকে তাকায় সে। জানে, এর মধ্যেই তাকে ক্লিনিক থেকে বের করে দেয়া হয়েছে। আবারো বেরিয়ে যেতে চায় না সে।

    পা সরিয়ে নিন!

    হাতের দিকে তাকায় সে। সেখানে একটা আঙটি আছে ঠিকই।

    এইন রিঙ! বলে বেকার।

    বন্ধ হয়ে গেছে দরজা।

    .

    সুসজ্জিত হলওয়েতে অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকে ডেভিড বেকার। সালভাদর দালির একটা রেপ্লিকা আছে পাশেই। আমি কোন গ্যাড়াকলে যে ফেসে গেলাম! সে কি কোন জাদুর আঙটির জন্য অন্য কারো ঘরে ঢুকে রাতটা পার করে দিতে চায়?

    স্ট্র্যাথমোরের কণ্ঠ আবার মনের ভিতরে গমগম করে উঠল, আপনাকে আঙটিটা পেতেই হবে।

    বেকারের ক্লান্ত লাগছে এখন। সে বাড়ি ফিরে যেতে চায়। রুম নাম্বার তিনশো একের দিকে তাকায় সে হতাশায়। বাড়ি ফিরে যাবার টিকেটটা এর ভিতরে। তাকে সেটা পেতে হবে।

    উদ্দেশ্যমূলকভাবে একটু শব্দ করে ওঠে সে। আবার সরে দাঁড়ায়, নক করে আরো জোরে। এবার হার্ডবল খেলার সময় এসেছে।

    .

    জার্মান দরজা খুলেই প্রতিবাদ করতে যাবে এমন সময় বেকার তাকে চুপ করিয়ে দেয়। মেরিল্যান্ড স্কোয়াশ ক্লাবের আইডি চোখের সামনে তুলে ধরে নাটকীয়ভাবে। তারপর চাপা স্বরে অভিনয় করে, বলে ওঠে, পুলিশেই!

    ঠেলে ভিতরে চলে যায় সে। জ্বালিয়ে দেয় আলো।

    জার্মান লোকটা ঘুরে দাঁড়ায়, তারপর শক্ত ভাষায় প্রতিবাদ করার চেষ্টা করে, ওয়াজ মাচশট–

    সাইলেন্স! হঠাৎ জার্মানের কচকচি বাদ দিয়ে ইংরেজিতে চলে আসে সে। আপনার এ ঘরে কি একজন প্রস্টিটিউট আছে?

    ঘরের চারদিকে তাকায় বেকার। ঘর ভর্তি ফুল। শ্যাম্পেইন। বিশাল ক্যানোপি বেড। রোসিওকে কোথাও দেখা যাচ্ছে না। বাথরুমের দরজা বন্ধ।

    প্রস্টিটিউয়ের্ট বন্ধ হয়ে থাকা দরজার দিকে অগ্রস্তুতভাবে তাকায় জার্মান লোকটা। বেকার আশা করেছে যতটা লোকটা তারচেও বড়। লোকটার লোমশ বুক আর বেকারের চিবুক একই সমান্তরালে সাদা টেরিকটনের আলফানসো তের বাথরোব আশপাশে পেচানো।

    লোকটার দিকে কটমটে চোখে তাকায় বেকার, নাম কী আপনার?

    লোকটার মনে হয় মাথার ঘায়ে কুকুর পাগল দশা, কী চান আপনি?

    আমি স্প্যানিশ গার্ডিয়ার টেরোরিস্ট রিলেশন ব্রাঞ্চের সাথে আছি। সেভিলে। আপনার সাথে কি এখানে কোন যৌনকর্মী আছে?

    বাথরুমের দিকে তাকায় নোকটা। নার্ভাস। জা।

    আপনি কি জানেন স্পেনে এ কাজটা অবৈধ?

    নাইন। আমি জানতাম না। আমি তাকে এখনি বাসায় পাঠিয়ে দিব।

    আফসোস। অনেক দেরি করে ফেলেছেন। কর্তৃত্বের সুরে বলল বেকার ঘরের ভিতরে হাঁটাহাঁটি করছে সে। আমি আপনাকে একটা প্রস্তাব দিতে পারি।

    প্রস্তাব?

    আমি আপনাকে এখনি হেডকোয়ার্টার্সে নিয়ে যেতে পারি…

    অথবা কী?

    অথবা আমরা একটা রফায় আসব।

    কোন ধরনের রফা?

    স্প্যানিশ গার্ডিয়ার দুর্নীতির ব্যাপারটা জানে জার্মান লোকটা।

    আপনার কাছে এমন কিছু আছে যা আমার প্রয়োজন।

    হ্যাঁ, অবশ্যই। কত?

    রাগে বিকৃত হয়ে গেল বেকারের চোখমুখ। চিবিয়ে চিবিয়ে সে বলল, আপনি কি আইনের কোন মানুষকে কিনে নেয়ার চেষ্টা করছেন?

    না! অবশ্যই না! আমি মনে করলাম… দ্রুত ওয়ালেট নামিয়ে রাখল লোকটা। কোথায় লুকাবে সেটা ভেবে দিশা পেল না। আমি… আমি… পুরোপুরি যায় যায় দশা তার। আমি দুঃখিত।

    একটা ফুল তুলে নিল বেকার। তারপর শুঁকতে শুঁকতে ঘরের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে নাটকীয়ভাবে ঘুরতে ঘুরতে হাত থেকে হঠাৎ ছেড়ে দিল ফুলটা, তারপর আরো নাটকীয়ভাবে বলল, খুনের ব্যাপারে আপনি আমাকে কীভাবে সহায়তা করতে পারেন?

    সাদা হয়ে গেছে জার্মানের মুখচ্ছবি, খু-খু-খুন!

    হ্যাঁ। এশিয়ান লোকটার কথা বলছি। আজ সকালে। পার্কে। খুনের ব্যাপারটাই বর্তেছে আমাদের হাতে। সন্ত্রাসবাদী ব্যাপার কিনা খুন-আর্মারডাঙ। বেকার খুনের জার্মান প্রতিশব্দটা পছন্দ করে।

    আর্মারডাঙ? সে… সে তো…

    ইয়েস?

    কিন্তু.. ঢোক গিলল জার্মান, কিন্তু এতো অসম্ভব… সেখানে ছিলাম আমি। হার্ট এ্যাটাক হয়েছে। আমি দেখেছি। কোন রক্ত নেই। কোন বুলেট নেই।

    অস্থিরভাবে মাথা ঝাঁকাল বেকার। সব সময় সবকিছু যেমন মনে করা হয় তেমন হয় না।

    আরো ফ্যাকাশে হয়ে গেল এবার জার্মান।

    ভিতরে ভিতরে হাসছে বেকার। মিথ্যাটা জায়গামত লেগেছে। বেচারা জার্মানের কালঘাম ছুটে গেছে।

    কী-ক-কী চান আপনি? হাসফাস করছে সে, আমি কিছুই জানি না।

    বেকার গতি দ্রুত করল। মারা যাওয়া লোকটা, মানে খুন হয়ে যাওয়া লোকটার হাতে একটা সোনার আঙটি ছিল। সেটাই তদন্তের স্বার্থে প্রয়োজন।

    আ-আমার হাতে তো সেটা নেই।

    বেকার তাকাল দরজার দিকে, আর রোসিও? ডিউড্রপ?

    সাদা থেকে এবার লাল হয়ে গেল তার চোখমুখ, আপনি ডিউড্রপকে চিনেন?

    কথা বলত তারা আরো কিছু। দরজায় দেখা দিল রোসিও।

    রোসিও। আগুনঝরা সৌন্দর্য। লাল চুল। ধীঘল। রোসিও ইভা গ্রানাডা গোসল সেরে বেরিয়ে এসেছে। ইবেরিয়ান চামড়া। মোলায়েম। গহীন, বাদামি চোখ। সাদা টেরি ক্লথ রোব পরে আছে। মোটা হিপে জড়িয়ে আছে রোবটা। কনফিডেন্সের সাথে বেরিয়ে এল সে।

    মে আই হেল্প ইউ? গড়গড় করে ইংরেজিতে বলে গেল।

    ঘরের অন্য প্রান্তে দাঁড়ানো অনিন্দ্যসুন্দর মেয়েটার দিকে চোখ রেখে একবারও পলক না ফেলে সে ঠান্ডা সুরে বলল, আমি আঙটিটা চাই।

    কে আপনি?

    আন্দালুসিয়ান উচ্চারণে বলল সে, স্প্যানিশ গার্ডিয়া।

    হাসল মেয়েটা। অসম্ভব। বলল স্প্যানিশে।

    গলায় যেন কিছু দলা পাকিয়ে যাচ্ছে। অসম্ভব? আমি কি আপনাকে হাজির করব ডাউন টাউনে?

    আপনার অফার নিয়ে আপনাকে বিব্রত করব না। এখন, কে আপনি?

    আমি সেভিল গার্ডিয়ার সাথে আছি।

    স্প্যানিশ পুলিশের প্রত্যেক অফিসারকে আমি ভালভাবে চিনিঃ তারা আমার বেস্ট ক্লায়েন্ট।

    একটু পরই কথা খুঁজে পেল ডেভিড, আমি স্পেশাল ট্যুরিস্ট টাস্ক ফোর্সের সাথে আছি। আমার হাতে আঙটিটা দিয়ে দিন নয়ত আপনাদের নিয়ে যেতে হবে–

    আর? চোখের ভ্রু উপরদিকে তুলে দিল রোসিও। জবাব চায়।

    চুপ করে গেল বেকার। ব্যাপারটা কেচে যাচ্ছে। মেয়েটা ভয় পায় না কেন?

    আরো কাছে এল রোসিও। জানি না আপনি কে বা কী চান। কিন্তু আপনি যদি এখনি এ স্যুট থেকে বেরিয়ে না যান তো আমি হোটেল সিকিউরিটি ডাকতে বাধ্য হব। আর সত্যিকারের গার্ডিয়া আপনাকে এ্যারেস্ট করবে গার্ডিয়ার অভিনয় করার অপরাধে।

    বেকার জানে স্ট্র্যাথমোর তাকে জেলের বাইরে নিয়ে আসবে পাঁচ মিনিটেই। কিন্তু তাতে আর গোপনীয়তা থাকে না। তার জড়িত থাকার কথা বের হয়ে যায়। গ্রেপ্তার হওয়াটা পরিকল্পনার অংশ নয়।

    রোসিও এগিয়ে আসছে বেকারের দিকে। তার চোখ এখনো সরেনি।

    ওকে, দীর্ঘশ্বাস ফেলল বেকার। স্প্যানিশ উচ্চারণটা ঝেড়ে ফেলল কণ্ঠ থেকে। আমি স্প্যানিশ পুলিশের সাথে নেই। একটা আমেরিকান সরকারি সংস্থা আমাকে পাঠিয়েছে আঙটিটার খোঁজ নেয়ার জন্য। এরচে বেশি কিছু বলতে পারব আমি। আপনাদের এজন্য পে করতে পারি, এ ক্ষমতা দেয়া হয়েছে আমাকে।

    অনেকক্ষণ চুপ করে থাকল সবাই।

    রোসিও অনেকক্ষণ চুপ করে থেকে কথা বলে উঠল, তাহলে? কাজটা কি কঠিন? মোটেও কঠিন নয়। আপনি কতটা পে করতে পারেন?

    বেকার দম নিল। তারপর বলে উঠল, আমি পে করতে পারি সাড়ে সাত লাখ পেসেতা। পাঁচ হাজার আমেরিকান ডলার। তার হাতে যা আছে তার অর্ধেক দর বলেছে সে। কিন্তু এ আঙটির দাম নিঃসন্দেহে এরচে বেশি।

    ভ্রু তুলল রোসিও, অনেক টাকা।

    হ্যাঁ। অনেক। ডিল?

    মাথা নাড়ল রোসিও। আহা, যদি হ্যাঁ বলতে পারতাম!

    এক মিলিয়ন পেসেতা? এই আছে আমার কাছে।

    মাই, মাই! হাসল মেয়েটা, আপনারা, আমেরিকানরা, ভাল দর কষাকষি করতে পারেন না। আমাদের বাজারে একদিনও টিকতে পারবেন কিনা সন্দেহ।

    ক্যাশ। এখনি। চাপ দিল বেকার। হাত দিল পকেটে। সেখানে খামটা আছে। আমি শুধু বাড়ি যেতে চাই- ভাবে সে।

    রোসিও মাথা নাড়ল। আমি পারব না।

    বেকার রাগের মাথায় বলল, কেন?

    আমার হাতে এখন আর আঙটিটা নেই। মাফ চাওয়ার সুর তার কণ্ঠে, এর মধ্যেই বেচে দিয়েছি ওটাকে।

    অধ্যায় : ৩৩

    টকোগেন নুমাটাকা জানাল খুলে দিয়ে ঘরের ভিতরে পায়চারি করতে থাকে সেভাবেই যেভাবে খাঁচায় আটকানো চিড়িয়াখানার জন্তু ঘোরাফেরা করে। এখনো সে নর্থ ডাকোটা নামে দাবি করা লোকটার খবর নেই। না। ড্যাম আমেরিকান! এদের সময়জ্ঞান বলতে কিছু নেই।

    নিজেই নর্থ ডাকোটাকে কল করতে পারত, কিন্তু ফোন নাম্বার নিয়ে রাখেনি। এভাবে বিজনেস করাটা নুমাটাকার কাছে ঘৃণার ব্যাপার। যেখানে সে নয়, অন্য কেউ কন্ট্রোলে আছে।

    একবার এ কথাটাও মনে হয়েছে, নর্থ ডাকোটা কাজের কাজ কিছু করছে না। এটা শুধুই থোকা। জাপানি কোন কোম্পানির কারসাজি। পুরনো সেই সন্দেহটা আবার ফিরে আসছে। নুমাটাকা সিদ্ধান্ত নিল- আরো তথ্য পাওয়া লাগবে।

    নুমাটেকের মূল হলওয়ে ধরে নেমে গেল সে। যাবার সময় কর্মচারীরা পথে পথে কুর্ণিশ করল। জাপানি এ নীতিটা তার ভালই লাগে। বসের সামনে মাথা নত করা।

    কোম্পানির মূল সুইচবোর্ডে চলে গেল নুমাটাকা। করেন্সে টু থাউজ্যান্ড দিয়ে সব কল হ্যাঁন্ডেল করা হয়। বারো লাইনের সুইচ বোর্ড টার্মিনাল। মহিলা ব্যস্ত ছিল। তাকে ঢুকতে দেখে মাথা নত করল।

    বসুন। হাত নাড়ল সে।

    কথা মানল মহিলা।

    চারটা পঁয়তাল্লিশে একটা ফোনকল পেয়েছি। আমার পার্সোনাল লাইনে। কোত্থেকে এটা এসেছে বলতে পারবে আমাকে?

    আগেই কাজটা সারেনি দেখে নুমাটাকা নিজেকেই মনে মনে লাথি কষাল।

    নার্ভাসভাবে অপারেটর ঢোক গিলল। এ মেশিনে কলার আইডেন্টিফিকেশন নেই, স্যার। কিন্তু আমি ফোন কোম্পানির সাথে যোগাযোগ করতে পারি। আমি নিশ্চিত তারা সহায়তা করতে পারবে।

    নুমাটাকার কোন সন্দেহ নেই, ফোন কোম্পানি সহায়তা করতে পারবে। ডিজিটাল যুগে মানুষের প্রাইভেসি বলে আর কিছু বাকি নেই। এককালে সব কিছুর একটা না একটা রেকর্ড থাকত। ফোন কোম্পানি অবশ্য বলতে পারবে কে কল করেছে এবং কতক্ষণ কথা হয়েছে।

    করুন কাজটা। তাড়াতাড়ি জানান আমাকে।

    অধ্যায় : ৩৪

    ট্রেসারের জন্য নড থ্রিতে বসে আছে সুসান। একা। হেল একটু খোলা হাওয়া খেতে বাইরে গেছে। সুসান তার প্রতি কৃতজ্ঞ এ সিদ্ধান্তের জন্য। একাকীত্বটা কেমন যেন আঁকিয়ে বসেছে নড় থ্রি তে। টানকাডো আর হেলের মধ্যে কী সম্পর্ক আছে সেটা ভেবে ভেবে ঘেমে নেয়ে একাকার হয়ে যাচ্ছে সুসান।

    কে গার্ডদের গার্ড দিবে? নিজেকেই শোনায় সে। শব্দগুলো তার মাথায় বারবার চক্কর দিচ্ছে। মাথা থেকে জোর করে তাড়িয়ে দিল সুসান সেগুলোকে।

    ডেভিডের কথা ভাবছে সে। আশা করে ডেভিড ভালো আছে। এখনো তার বিশ্বাস হয় না ডেভিড এখন স্পেনে। যত দ্রুত চাবিকাঠি পাওয়া যাবে ততই ভাল।

    কতক্ষণ ধরে ট্রেসারের জন্য অপেক্ষা করছে সুসান এখানে? দু ঘন্টা? তিন ঘন্টা? বারবার সে বাইরে তাকায়। প্রতিবার আশা করে টার্মিনাল বিপ করে উঠবে। সেখানে শুধুই নিরবতা। গ্রীষ্মের ধীর সূর্য নেমে গেছে। অস্ত গেছে দিগন্তে। মাথার উপর ফ্লুরোসেন্টের অটোম্যাটিক আলো জ্বলে উঠল। সময় কেটে যাচ্ছে খুব দ্রুত। বুঝতে পারে সুসান।

    ট্রেসারের দিকে চোখ ফেলে ভ্রু কোচকায় সুসান, কাম অন! অনেক অনেক সময় দিয়েছি! কতক্ষণ ধরে চলছ তুমি?

    ট্রেসারের স্ট্যাটাস উইন্ডো খুলল সুসান। ট্রান্সলেটারের মত একটা ডিজিটাল ক্লক আছে এখানেও। কত মিনিট গেছে দেখা যাবে এখানে। ঘন্টা এবং মিনিট। অবাক হয়ে দেখল, সেখানে অন্য কিছু লেখা আছে। কী লেখা! রক্তের গতি বেড়ে গেল তারঃ

    ট্রেসার এ্যাবোর্টেড

    ট্রেসার এ্যাবোর্টেড! চিৎকার করে সে, কেন?

    হঠাৎ আতঙ্কে পুরো প্রোগ্রামিংটা চেক করে দেখে সুসান। এমন কোন কমান্ড দেয়া হয়েছে কি, যা দিয়ে ট্রেসার বন্ধ করে দেয়া যায়? কোন কমান্ড নেই। যেন আপনা আপনিই ট্রেসার বন্ধ হয়ে গেছে। সুসান জানে- এর একটাই মানে, ট্রেসারের ভিতরেই একটা বাগ গড়ে উঠেছে।

    কম্পিউটার প্রোগ্রামিংয়ে সবচে খারাপ দিক হল এই বাগ। এর ফলে কম্পিউটারে খারাপ প্রভাবও পড়তে পারে। সাধারণ সিনট্যাক্সিয়াল এ্যারর হতে পারে। যেন প্রোগ্রামার কোন কমার জায়গায় ফাঁকা জায়গা রেখে দিয়েছে। পুরো সিস্টেমকে একেবারে হাটুতে এনে ঠেকাতে পারে ব্যাপারটা। এই বাগের শুরুটার কথা মনে পড়ে যায় সুসানেরঃ

    ব্যাপারটার শুরু প্রথম কম্পিউটার থেকে–মার্ক ওয়ান- ঘরজোড়া ইলেক্ট্রিক তারটার আর সার্কিটের গোলকধাঁধা। উনিশো চৌচল্লিশে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ল্যাবে এটার জন্ম। একটা সমস্যা দেখা দেয় কম্পিউটারে। কেউ এর হদিস বের করতে পারে না। ঘন্টার পর ঘন্টা সার্চ চালানো হলে অবশেষে ল্যাব এসিস্ট্যান্ট কারণটা বের করে। কম্পিউটারের এক সার্কিট বোর্ডে একটা মথ জন্মেছে। সেই মুহূর্ত থেকেই কম্পিউটারের অপ্রত্যাশিত সমস্যার কারণগুলোকে বাগ বলা হয়।

    আমার হাতে এসবের জন্য সময় নেই একদম। কষে অভিশাপ দিল সে আপনমনে।

    কোন প্রোগ্রামে বাড় খুঁজে বের করা চাট্টিখানি কথা নয়। সপ্তাহের পর সপ্তাহ লেগে যেতে পারে। হাজার হাজার লাইনের প্রোগ্রামে নিখুঁতভাবে চোখ বুলাতে হবে একটা ছোট ভুলের জন্য। যেন কোন এনসাইক্লোপিডিয়া ঘেটে বের করতে হবে একটা মাত্র শব্দ।

    সুসান জানে, একটা মাত্র উপায় আছে- ট্রেসারটা আবার পাঠাতে হবে। আরো জানে, সেই একইভাবে ট্রেসার যাবে, একইভাবে এ্যাবোর্টেড হবে।

    সামনে তাকিয়ে থাকে সুসান। বুঝতে পারে, কিছু একটা মিলছে না। একই ট্রেসার পাঠায় সে গত মাসে, কই, সেটায় তো কোন গোলমাল বাধেনি। হঠাৎ কেন এখন এমন হবে? আপনাআপনি গ্লিচ জন্ম নেয়া সম্ভব নয়।

    স্ট্র্যাথমোরের কথা মনে পড়ে যায় তার। কমান্ডার পাঠিয়েছিল ট্রেসার। সেখান থেকে অর্থহীন কিছু তথ্য আসে।

    এ্যাবোর্ট হয়নি, তথ্য এসেছে।

    এলোমেলো তথ্য।

    নিশ্চই কমান্ডার সঠিক স্ট্রিং পাঠায়নি। কিন্তু ট্রেসার তো কাজ করেছে।

    শুধু ভিতরের প্রোগ্রামে গন্ডগোলের জন্যই সমস্যা হয় না। সার্কিটে ময়লা জমলে, পাওয়ার সার্জ হলেও একই কাজ হতে পারে। নড থ্রির হার্ডওয়্যার এত বেশি সুন্দরভাবে টিউন করা যে সে কথাও বিবেচনায় আনা যায় না।

    টার্মিনাল ছাড়িয়ে বড় বুকসেলফের কাছে গিয়ে সিস-অপ নামের স্পাইরাল বাইন্ড করা বইটা বের করে আনে সে। ম্যানুয়ালটা নিয়ে এসে কিছু শব্দ টাইপ করে তারপর। গত তিন ঘন্টার সব কমান্ডের উপর চোখ বুলাবে এবার প্রোগ্রামটা। কোন না কোন বাহ্যিক সমস্যা ধরা পড়বে, সে নিশ্চিত।

    কয়েক মুহূর্ত পর সুসানের টার্মিনাল বিপ করে উঠল। পালস থমকে গেল যেন। অবিশ্বাসের চোখে তাকিয়ে থাকে সে স্ক্রিনের দিকে।

    এরর কোড ২২

    আশার একটা রেখা দেখা যাচ্ছে। মানে, ট্রেসারে কোন ভুল নেই। বাইরের কোন এ্যানোম্যালি এর জন্য দায়ী।

    এরর কোড বাইশ! সুসান চেষ্টা করছে মনে করতে। কোড বাইশ দিয়ে কী বোঝায়? নড় থ্রি তে হার্ডওয়্যার এরর এত কম হয় যে সে মনেই করতে পারল না এর মানে।

    সিস-অপ ঘেটে ঘেটে বের করতে লাগল সে।

    ১৯: করা হার্ড পার্টিশন

    ২০: ডি সি স্পাইক

    ২১: মিডিয়া ফেইলুর

    কোড বাইশ আসার পর সে তাকিয়ে থাকে অনেকক্ষণ। আবার তাকায় মনিটরের দিকে। সেখানে সেই একই কথাঃ

    এরর কোড ২২

    আবার তাকায় সে সিস-অপ ম্যানুয়ালের দিকে। যা দেখল তাতে কোন অর্থ দাঁড়ায় না। ব্যাখ্যাটা একেবারে সরলঃ

    ২২: ম্যানুয়াল এবোর্ট

    অধ্যায় : ৩৫

    অবাক চোখে তাকিয়ে আছে বেকার, আপনি আঙটিটা বিক্রি করে দিয়েছেন?

    নড় করল মেয়েটা। সিল্কি চুল আছড়ে পড়ছে কাঁধে।

    কথাটা যেন সত্যি না হয়! পেরো… কিন্তু…

    শ্রাগ করে মেয়েটা বলল, পার্কের কাছে একটা মেয়ের হাতে…

    পা যেন দুর্বল হয়ে গেছে বেকারের। অসম্ভব!

    রোসিও বাঁকাভাবে হেসে জার্মানকে বলল, এল কোয়েরিয়া কিউ লো গার্ডারা। সে এটা রাখতে চেয়েছিল। বাধা দিই আমিই। আমরা গিটানা। এক ধরনের যাযাবর। আমরা জিপসি গিটানারা কখনো কোন মৃতপ্রায় মানুষের কাছ থেকে আঙটি নিই না। নিলেও সেটা সরিয়ে ফেলি। লক্ষণ খারাপ।

    আপনি কি মেয়েটাকে চেনেন?

    আচ্ছা! আপনার আসলেই আঙটিটা খুব দরকার, তাই না?

    কার কাছে বিক্রি করেছেন?

    জার্মান বিছানায় গা এলিয়ে দিল। তার রোমান্টিক বিকালটা একেবারে বৃথা গেল। হচ্ছেটা কী?

    তার দিকে নজরও দিল না বেকার।

    আমি আসলে সেটা বিক্রি করে দিইনি। বলল রোসিও, বিক্রির চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু বাচ্চা মেয়েটার কাছে কোন টাকা ছিল না। আপনার এই অফারের কথা জানলে অবশ্যই রেখে দিতাম।

    আপনারা কেন পার্কটা ছেড়ে এলেন? কোন এক মানুষ মারা গেল, পুলিশের জন্য অপেক্ষা করে আঙটিটা তাদের হাতে তুলে দিলেই কি স্বাভাবিক দেখাত না ব্যাপারটা?

    আমি আর সব ক্ষেত্রে নাক গলালেও ভ্যাজালের মধ্যে নেই। আর সেই বৃদ্ধ লোকটা সব দেখভাল করছিল।

    ক্যানাডিয়ান?

    ইয়েস। সে এ্যাম্বুলেন্স ডেকেছে। থেকেছে সেখানে। আমার বা আমার ডেটের সেখানে থাকার কোন যুক্তি ছিল না।

    আমি মরতে থাকা মানুষটাকে সাহায্য করতে চেয়েছিলাম, বলছে এখনো রোসিও, কিন্তু তার কোন সহায়তার দরকার নেই। শুধু বারবার আমাদের চেহারার দিকে আঙটিটা এগিয়ে দিচ্ছিল। চাচ্ছিল যেন আমরা সেটা নিয়ে নিই। ইচ্ছা ছিল

    আমার। কিন্তু বন্ধু চাইল জিনিসটা নিয়ে লোকটাকে শান্তি দিতে। আমি আর কী করতে পারি?

    আপনারা সি পি আর করার চেষ্টা করেছিলেন?

    না। আমরা তাকে ছুঁয়েও দেখিনি। আমার বন্ধু ভয়ে কেচো হয়ে গেল। তার গায়গতরে চর্বি থাকলেও মনটা একেবারে এতটুকু। মাদকতা ভরা চোখমুখে হাসল সে বেকারের দিকে তাকিয়ে, ভয় নেই, সে স্প্যানিশের বিন্দু বিসর্গও জানে না।

    প্যারামেডিকরা সি পি আর দেয়নি?

    আমার কোন ধারণা নেই। বললাম না, আগেই চলে গেছি আমরা?

    মানে, আঙটিটা চুরি করার পরই? খোঁচা দিচ্ছে বেকার।

    একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে রোসিও তার দিকে। আমরা আঙটিটা চুরি করিনি। লোকটা মারা যাচ্ছিল। তার শেষ ইচ্ছা পূর্ণ করেছি আমরা, ব্যস।

    আর তারপর আপনারা সেটা তুলে দিলেন একটা মেয়ের হাতে?

    বলেছি আগেই। ব্যাপারটা আমাকে নার্ভাস করে দিল। বাচ্চা মেয়েটার গায়ে অনেক গহনা ছিল। মনে হল সে আরো একটা পেলে আপত্তি করবে না।

    কিন্তু সে মোটেও অবাক হল না? অপরিচিত একজন একটা জুয়েলারি দিচ্ছে, সেও খুশিমনে নিয়ে নিচ্ছে?

    না। আমি বললাম, আঙটিটা পেয়েছি পার্কে। আশা করেছিলাম আমাকে কিছু অফার করবে। কিন্তু তার ধার দিয়েও গেল না। আমি কেয়ার করি না। শুধু এটার হাত থেকে মুক্তি পেতে চাচ্ছিলাম।

    কখন দিলেন?

    শ্রাগ করল রোসিও। দিস আফটারনুন। আঙটিটা পাবার ঘন্টাখানেক পরই।

    সাথে সাথে বেকার ঘড়ি চেক করল। এগারোটা আটচল্লিশ। প্রায় আট ঘন্টার পুরনো ট্রেইল। এখানে কোন জাহান্নামের কাজ করছি আমি? আমার তো স্মোকিতে থাকার কথা! মেয়েটা দেখতে কেমন?

    এরা আন পাঙ্কুই।

    আন পাই?

    সি।

    পাঙ্ক?

    ইয়েস। পাঙ্ক। রাফ ইংলিশে কথা বলেই সে আবার চলে গেল মাতৃভাষায়, অনেক অনেক জুয়েলারি। এক কানে একটা কিস্তুত ইয়ার রিঙ। সম্ভবত কোন মড়ার খুলির মত।

    সেভিলে পাঙ্ক রকার আছে?

    হাসল রোসিও, মৃদু হাসি। সূর্যের নিচে যা আছে তার সবই।

    নাম জানেন তার?

    না।

    কোথায় যাচ্ছে বলেছিল?

    না। স্প্যানিশ পারে না ঠিকমত।

    সে স্প্যানিশ নয়?

    না। ইংরেজ, আমার মনে হয়। চুলের বাহার দেখার মত। লাল, সাদা, নীল।

    আমেরিকান নয়তো?

    আমার মনে হয় না। টি শার্টটায় মনে হয় ব্রিটিশ ফ্ল্যাগ ছিল।

    নড় করল বেকার। ওকে। লাল-সাদা-নীল চুল। ব্রিটিশ পতাকার টি শার্ট। কানের মধ্যে খুলির দুল। এই সব?

    এই। একেবারে সাদামাটা পাঙ্ক।

    আর কিছুই কি মনে পড়ছে না?

    না। এই সব।

    এমন সময় নড়ে উঠল খাটটা। জার্মান সঙ্গি ডাকছে তাকে। তার দিকে ফিরল বেকার, জার্মানে জিজ্ঞাসা করল, আঙটি নেয়া পাঙ্কটার ব্যাপারে আমাকে সহায়তা করতে পারেন আপনি?

    অনেকক্ষণ নিরবতা।

    যেন কোন কথা বলতে চায় দানব লোকটা। বলা ঠিক কিনা ভেবে পায় না। জার্মান উচ্চারণে কোনক্রমে চারটা শব্দ উগলে দেয় সে, ইংরেজিতে, ফোক অফ উন্ড ডাই।

    আই বেক ইউর পারডন?

    কেঁপে গেল বেকারের গলা। ১২ ফোক অফ উন্ড ডাই! জার্মান লোকটা হাতের একটু ইশারা করল। ইতালিয় একটা ভঙ্গি করল হাত দিয়ে। স্পষ্ট বুঝতে পারল বেকার ফাক ইউ।

    বেকার এবার বুঝতে পারে কথাটা। ফাঁক অফ এ্যান্ড ডাই? কী হল লোকটার? মেয়েটার দিকে তাকিয়ে আপনমনে কথা বলে ওঠে, আমি মনে হয় একটু বেশি সময় থেকে গেছি, তাই না?

    তার ব্যাপারে মন খারাপ করোনা। সে একটু ধাক্কা খেয়েছে তো প্রথমে…

    আর কিছু? এমন কিছু যা আমাকে সহায়তা করতে পারে?

    মাথা নাড়ল রোসিও। এই সব। কিন্তু আপনি কখনোই তাকে বের করতে পারবেন না। সেভিল অনেক বড় শহর। এখানে খুঁজে বের করাটা…

    যতটা পারি ততটাই করব আমি।

    ইটস এ ম্যাটার অব ন্যাশনাল সিকিউরিটি…

    যদি তোমার কপাল মন্দ হয়, বেকারের পকেটের মোটা এনভেলপটার দিকে তাকায় মেয়েটা, ফিরে এস। আমার বন্ধু তখন ঘুমাবে। আমরা অন্য একটা ঘর বেছে নিতে পারব। স্পেনের এমন এক অংশ তুমি দেখতে পাবে যা কখনো ভোলা যায় না।

    কোনক্রমে একটা মোলায়েম হাসি দিল বেকার, আমার যেতে হবে।

    জার্মানের কাছ থেকে ক্ষমা চেয়ে নিল সে।

    হাসল দানবটা। কেইন উর্সাসে।

    দরজার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে বেকার।

    নো প্রব্লেম? সেই ফাক অফ এ্যান্ড ডাইর কী হল?

    অধ্যায় : ৩৬

    ম্যানুয়াল এ্যাবোর্ট? সুসান অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে মনিটরের দিকে।

    ভুলে কোন রঙ সিকোয়েন্স চেপে বসেনিতো?

    অসম্ভব! হিসাব দেখাচ্ছে বিশ মিনিট আগে এ্যাবোর্ট কমান্ড দেয়া হয়েছে। প্রাইভেসি কমান্ড দিয়ে সে স্ট্র্যাথমোরের সাথে কথা বলছিল তখন। প্রাইভেসি কোড ভেঙে কী করে এ্যাবোর্ট হল?

    আবার চেক করল সে, না, প্রাইভেসি কোড তো ঠিকভাবেই দেয়া হয়েছিল।

    তাহলে কীভাবে? প্রশ্ন তোলে সে, কীভাবে এ্যালবার্ট হল?

    এবার চেক করল সে স্ট্যাটাস। তার লক দেয়ার পর এক মিনিটের মধ্যে আনলক করা হয়েছে। কিন্তু সে তো এক মিনিটের অনেক বেশি সময় ধরে কমান্ডারের সাথে ছিল।

    পাতা ধরে স্ক্রল ডাউন করল এবার। তিন মিনিট পর আরো একবার লক আনলক করা হয়েছে।

    অসম্ভব!

    জানে সে, গ্রেগ হেল ছাড়া নড থ্রিতে আর কেউ ছিল না। আর গ্রেগকে তার প্রাইভেসি কোড দেয়ার কথা ভাবতেও পারে না সুসান। তার এ র‍্যান্ডম কোডটা কোথাও লিখে রাখেনি সে। কারো পড়ার প্রশ্নই ওঠে না। থার্টি সিক্স টু দ্য ফিফথ পাওয়ার। ষাট মিলিয়নে একবার মিলানো যাবে না এ কোড।

    গ্রেগ কোন না কোনভাবে সুসানের কোড জেনে গেছে এবং সে সময়টায় এ্যাবোর্ট দিয়েছে। কোন সন্দেহ নেই।

    গ্রেগ কেন এত কম সময়ের মধ্যে সুসানের টার্মিনালে চলে আসবে। এসেই নে না জেনেও এ্যালবার্ট দিবে ট্রেসারটায়, যখন লোকটার নাম নর্থ ডাকোটা। তাতে গ্রেগের কী এসে যায়?

    কথ্যগুলো মাথায় ঘুরছে। কিন্তু সে হাল ছেড়ে দিবে না। প্রথম কাজ প্রথমে। হেলকে পরে দেখে নেয়া যাবে, এখন আগে আবার ট্রেসারটা পাঠাতে হয়। এন্টার কি চাপ দিল সে।

    বিপ উঠল।

    ট্রেসার সেন্ট

    সুসান জানে, ট্রেসারটা ফিরে আসতে ঘন্টা কয়েক লেগে যাবে। গ্রেগকে অভিশাপ দিতে দিতে ভাবতে থাকে সে, কী করে প্রাইভেসি কোড পেল, কী কারণে ট্রেসারটাকে সরিয়ে দিল।

    সুসান এগিয়ে গেল হেলের টার্মিনালে। স্ক্রিন ব্ল্যাক হলেও দেখা যাচ্ছে লক করা নয়। ক্রিপ্টোগ্রাফাররা চলে যাবার আগে কখনো টার্মিনাল লক করে না। তার বদলে স্ক্রিনের ব্রাইটনেস কমিয়ে দিয়ে একেবারে কালো করে দেয়- এক ইউনিভার্সাল অনার কোড। যেন আর কেউ তাদের টার্মিনালে সমস্যা না করে।

    হেলের টার্মিনালের কাছে গিয়ে সে বলে ওঠে, নিকুচি করি অনার কোডের, কী করছ তুমি গ্রেগ?

    স্ক্রিনের আলো বাড়িয়ে দিল সুসান। সেখানটা একেবারে ব্ল্যাঙ্ক।

    একটা সার্চ দিল সে।

    সার্চ ফর: ট্রেসার

    আন্দাজ অনেক দূর দিয়ে যাবে। কিন্তু যদি সুসানের ট্রসারের ব্যাপারে তার কোন আগ্রহ থাকে তাহলে তা বের হয়ে যাবে। কেন যে ম্যানুয়ালি সুসানের প্রোগ্রাম এ্যাবোর্ট করল?

    নো ম্যাচ ফাউন্ড

    সুসান বসে থাকে। বুঝে উঠতে পারে না কী করবে এবার।

    সার্চ ফর: ক্রিনলক

    সুসানের প্রাইভেসি কোডটা আছে নাকি দেখতেই এ সার্চ দেয়া।

    আর আজ তুমি কোন প্রোগ্রাম চালিয়েছ সঁদু?হেলের রিসেন্ট এ্যাপ্লিকেশন্স মেনুতে গেল সে। সম্প্রতি ব্যবহার করা প্রোগ্রামের খোঁজে। ই-মেইল ফোল্ডারটাকে পেয়ে গেল সুসান আরেক ফোল্ডারের ভিতরে লুকানো অবস্থায়। সেখানে আরো অনেকগুলো ফোল্ডার দেখা দিল। বোঝা যায়, গ্রেগ হেলের অনেক ই-মেইল এ্যাকাউন্ট আছে। তার একটা এ্যানোনিমাস নাম্বার। পুরনো একটা ইনবাউন্ড নাম্বারে ক্লিক করল সুসান।

    শ্বাস বন্ধ হয়ে গেল তারঃ

    TO: NDAKOTA@ARA.ANON.ORG
    FROM: ET@DOSHISHA.EDU
    GREAT PROGRESS! DIGITAL FORTRESS IS ALMOST DONE. THIS THING WILL SET THE NSA BACK DECADES!

    যেন স্বপ্ন দেখছে সুসান। মেসেটা পড়ল সে। কাঁপতে কাঁপতে আরো একটা খুলল এবার।

    টু: এনডাকোটা@এ আর এ. এনোন, অর্গ
    ফ্রম: ইটি@দোশিসা.এডু
    রোটেটিং ক্লিয়ারটেক্সট কাজ করছে! মিউটেশন স্ট্রিস আর দ্য ট্রিক!

    অচিন্তনীয়! এনসেই টানকাভোর কাছ থেকে ই-মেইলগুলো আসছে। আসছে গ্রেগ হেলের কাছে। সত্যিটাকে মেনে নিতে পারছে না সুসান।

    গ্রেগ হেলই এনডাকোটা!

    স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে আছে সুসান। আরো ব্যাখ্যার জন্য তার চোখ খাবি খাচ্ছে।

    আচ্ছা! তাহলে মিউটেশন স্ট্রিঙ দিয়ে টানকাড়া কাজ চালাচ্ছিল। আর এন এস এ কে টেনে পথে নামানোর জন্য কাজ করছে গ্রেগ হেল!

    অ… সুসানের চোখ যেন ঠিকরে বেরুবে, অসম্ভব!

    হেলের কথাগুলো মনে পড়ে যায় তারঃ

    টানকাডো আমার কাছে লিখেছে বেশ কবার…

    আমাকে আঘাত করার পায়তাড়া কষছে স্ট্র্যাথমোর….

    এখান থেকে একদিন ঠিক ঠিক বেরিয়ে যাব…

    এখনো সুসান তার দৃষ্টিকে বিশ্বাস করতে পারছে না। গ্রেগ হেল আর তেমনই হোক, বিশ্বাস ঘাতক হবে না। কিন্তু, আর ভাবতে পারে না সে।

    স্কিপজ্যাকের কথা মনে পড়ে গেল তার। এন এস এ কে একেবারে পথে নামাতে নিয়েছিল হেল। এবারো সে চেষ্টা যে করবেন তার নিশ্চয়তা কী?

    কিন্তু টানকাড়ো… বিচ্ছিন্ন ভাবনা দেখা দিচ্ছে সুসানের মনে। টানকাডোর মতো পাগলাটে এক লোক কী করে গ্রেপ্ত:হেলের মত মানুষকে বিশ্বাস করল?

    এখন একটা কাজই করতে হবে, স্ট্র্যাথমোরকে জানাতে হবে পুরো ব্যাপারটা।

    তাড়াতাড়ি কম্পিউটারকে আগের মত করে দিল সে। ব্ল্যাঙ্ক মনিটর। এখনো ডিম করেনি। ভেবে পাচ্ছে না যে ডিজিটাল ফোট্রেসের কোডটা হয়ত এ

    কম্পিউটারের ভিতরেই লুকিয়ে আছে।

    নড থ্রির বাইরে একটা ছায়া খেলে গেল।

    এগিয়ে আসছে গ্রেগ হেল।

    তাকাল সুসান তার আসনের দিকে। বুঝতে পারল, আর সম্ভব নয়। চলে এসেছে হেল।

    সুসান অপশনের জন্য তাকাচ্ছে চারধারে। কী করবে ভেবে পাচ্ছে না।

    সরে গেল সে। তারপর এগিয়ে গেল একপাশে। পায়ের জুতা খুলে গেছে। সেটাকে সোজা করে নিতে গিয়ে আরো অনেকটা সময় পেরিয়ে গেল।

    হিসহিসিয়ে উঠছে নড থ্রির দরজা।

    তাকাল সুসান সেদিকে। চকিতে।

    এক লাফে হাজির হল রেফ্রিজারেটরের সামনে। খুলে ধরল দরজা।

    এদিকে ভিতরে চলে এসেছে হেল।

    ক্ষুধার্ত? এগিয়ে আসছে হেল সামনে। কিছুটা টফু শেয়ার করবে নাকি?

    সুসান কোনক্রমে শ্বাস থামিয়ে রেখে উচ্চারণ করল, নাথিং।

    কিন্তু টার্মিনালের অপর পাশে জ্বলছে একটা মনিটর।

    গ্রেগ হেলের মনিটর। সুসান সেটাকে কালো করে দিতে ভুলে গেছে।

    অধ্যায় : ৩৭

    আলফানসো তেরর সিঁড়ি ছাড়িয়ে বেকার বারের দিকে যাচ্ছে ক্লান্তভাবে। এক বামন বারের পিছন থেকে প্রশ্ন তুলল, কী পান করছেন?

    কিছু না, ধন্যবাদ। পাঙ্ক রকারদের জন্য কোন ক্লাব আছে নাকি এখানে?

    ক্লাব? পাঙ্কদের জন্য?

    হ্যাঁ। এ টাউনে এমন কোন জায়গা আছে নাকি যেখানে তারা একজোট হয়?

    না। সিনর। আমি জানি না। অবশ্যই এটা সে জায়গা নয়। একটা ড্রিঙ্ক চলবে নাকি?

    লোকটার কথার জবাব দিল না বেকার।

    বারটেন্ডার সমান তালে সেই একই কথা বলে যাচ্ছে।

    ক্লাসিক মিউজিক বাজছে দেখে অতীতে চলে গেল সে। সুসানের সাথে এমনি এক সন্ধ্যা উপভোগ করেছিল।

    ক্যানবেরি জুস।

    একা একা ক্যানবেরি জুস?

    স্পেনে ক্যানবেরি জুস জনপ্রিয়। কিন্তু একা একা কেউ তা পান করে না।

    সি। বলল বেকার, সোলো।

    সাথে ভদকার একটু ঝাঁঝ?

    না। গ্রাসিয়াস।

    অন দ্য হাউস?

    হঠাৎ মনে পড়ে গেল আরো অনেক কথা। আরো আরো ক্লান্ত মনে হল নিজেকে। সি, শামে আন পোসো ডি ভদকা।

    বারটেন্ডার যেন একটা ড্রিঙ্ক বানাতে পেরে বর্তে গেল।

    এখনো ভেবে পায় না বেকার, সে কোন স্বপ্নে নেই তো? আমি একজন ইউনিভার্সিটি টিচার, বলে নিজের মনেই, আর এখন কাজ করছি সিক্রেট এজেন্টের।

    এগিয়ে এল বারটেন্ডার। এ সু গস্টো, সিনর। ভদকার ছিটাফোঁটার সাথে ক্যানবেরি।

    চুমুক দিয়েই বিতৃষ্ণা জাগল বেকারের মনে।

    এর নাম ভদকার ছিটাফোঁটা?

    অধ্যায় : ৩৮

    সুসানের দিকে তাকিয়ে অবাক হল হেল, কী ব্যাপার, সু? তোমাকে সাঙ্তিক দেখাচ্ছে।

    সুসান আরো একবার তাকায়। দশ ফুট দূরে মনিটরটা জ্বলছে। আ… আমি ঠিকই আছি।

    ধ্বক ধ্বক করছে সুসানের বুক।

    চেহারার বিভ্রান্ত ভাব দেখে অফার করল সে, তোমার কি একটু পানি দরকার?

    সুসানের মনে তখন অন্য চিন্তা চলছে। আমি কী করে তার মনিটরটা ডিম করার কথা ভুলে গেলাম? সুসান জানে, যে মুহূর্তে গ্রেগ মনিটরের ব্যাপার দেখতে সে মুহূর্তেই নর্থ ডাকোটা পরিচয়টার কথাও জেনে যাবে।

    ব্যাপারটাকে নড থ্রির ভিতরে রাখার জন্য যে কোন কিছু করতে পারে সে।

    কী করবে ভেবে পাচ্ছে না সুসান এমন সময় আবার টোকা পড়ল নড থ্রির কাঁচে। দুজনেই অবাক হয়ে তাকাল সেদিকে। চার্ট্রাকিয়ান দাঁড়িয়ে আছে সেখানে। যেন সাক্ষাৎ যমদূতের সাথে দেখা হয়েছে তার।

    সিস-সেকের দিকে তাকায় হেল। তারপর সুসানকে বলে, আমি ফিরে আসছি। এর মধ্যেই একটা ড্রিঙ্ক নিয়ে নাও। তোমাকে ফ্যাকাশে দেখাচ্ছে খুব।

    হেল বাইরে চলে গেল।

    নিজেকে শান্ত করে সুসান দ্রুত হেলের টার্মিনালে চলে গেল। ব্রাইটনেস কন্ট্রোল এ্যাডজাস্ট করে নিয়ে মনিটরটাকে কালো করে দিল।

    মাথা দপদপ করছে। ক্রিপ্টো ফ্লোরের কথাবার্তার দিকে মন.দিল সে এবার। বোঝাই যাচ্ছে, চার্ট্রাকিয়ান বাসায় ফিরে যায়নি। তরুণ সিস-সেকের অবস্থা ভাল নয়। কিছু একটা বোঝানোর চেষ্টা করছে সে হেলকে। এতে কিছু এসে যায় না হেল সবই জানে যা জানা সম্ভব।

    আমাকে স্ট্র্যাথমোরের কাছে যেতে হরে ভাবে সুসান। দ্রুত।

    অধ্যায় : ৩৯

    রুম ৩০১। রোসিও ইভা গ্রানাডা বাথরুম মিররের সামনে নগ্ন হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। সারাদিন এ মুহূর্তের ভয়ই পাচ্ছিল সে। বিছানায় তার জন্য জার্মানটা অপেক্ষা করছে। এত বড় মানুষের সাথে সে আর কখনো থাকেনি।

    আস্তে আস্তে সে একটা আইস কিউব তুলে নেয়। তারপর বুকের নিপলের গায়ে বুলিয়ে নেয় সেটাকে। দ্রুত সেগুলো শক্ত হয়ে গেল। এটা তার গিফট। যে কোন পুরুষকে টানার একটা অস্র। শরীরটার দিকে তাকায় সে। তারপর একটা চিন্তাই ঘুরেফিরে আসে। আর মাত্র কয়েকটা বছর যেন টিকে থাকে এটা। অবসরের সময় চলে আসবে তখন। সিনর রোল্ডান তার বেশিরভাগ আয় গাপ করে নেয়। কিন্তু সে জানে, রোল্ডান ছাড়া সে একেবারে অসহায়। আর সব মেয়ের মত তাকেও তাহলে মাতালরা রাস্তা থেকে তুলে নিয়ে যাবে। শেষ পর্যন্ত সেটাই হয়ে যাবে তার পেশা।

    এই মানুষগুলোর আর যাই থাক না থাক, টাকা আছে। যাদের টাকা থাকে তাদের মধ্যে ভদ্রতার একটা খোলস থাকে। যাদের মধ্যে ভদ্রতার খোলস থাকে তাদের তুষ্ট করা যায় সহজেই। তারা কামড়াবে না।

    নিজের দিকে আরো একবার তাকায় সে। তারপর একটা দীর্ঘ শ্বাস নিয়ে বাথরুমের দরজায় এসে হাজির হয়।

    রোসিও দরজায় এসে দাঁড়ানোর সাথে সাথে ছানাবড়া হয়ে যায় জার্মানের চোখমুখ। মেয়েটার পরনে একটা কালো নেগলিজি। তার কাঠবাদামের মত চামড়ায় মৃদু আলো ঠিকরে বেরুচ্ছে। ল্যাসি ফ্যাব্রিকের নিচ থেকে পেলব শরীর দেখা যায়।

    কম ডক হিয়ারার। শুয়ে শুয়ে হাক ছাড়ল জার্মান। তার গা থেকে সরে গেছে। রোবটা।

    রোসিও কোনক্রমে একটা হাসি যোগাড় করল। বিশাল জার্মানের উপর পড়ে আছে তার দৃষ্টি। শান্তিতে একটু মুচকে হাসল মেয়েটা। শরীরের বিশেষ জায়গাটার : আয়তন নিতান্তই সামান্য।

    চলে এল মেয়েটা। স্বাভাবিক কিছু ব্যাপারের পর উপরে উঠে এল জার্মান। এবং তারও কিছুক্ষণ পর, একেবারে নিস্তেজ হয়ে পড়ে গেল উপরে। কোন ব্যাপার শুরু হবার আগেই।

    ডার্লিং! আমাকে উপরে উঠতে দাও। বলল রোসিও।

    কোন জবাব নেই।

    ডার্লিং, আমিতো শ্বাস নিতে পারছি না… আমি… ডেসপিয়েরাটেট! নেমে যাওয়া মাথাটাকে উপরদিকে নাড়া দেয় সে, ওঠ! জেগে ওঠ!

    ঠিক তখনি তরলটার উপস্থিতি পায় সে। জার্মানের মাথা তার মাথার উপর। সেখান থেকে তরল গড়িয়ে নামছে। নামছে গাল বেয়ে, নামছে মুখের ভিতরে। সাদটা নোতা।

    লোকটার নিচে হাসফাস করে নড়ার চেষ্টা করছে রোসিও।

    মাথার উপরের বুলেটের গর্তটা থেকে রক্ত গড়িয়ে পড়ছে সর্বত্র। ভিজিয়ে দিচ্ছে মেয়েটাকে।

    চিৎকার করার চেষ্টা করল সে। কিন্তু ফুসফুসে কোন বাতাস বাকি নেই।..

    লোকটা তাকে পিষে ফেলছে। দরজার আলোর উৎসের দিকে এগিয়ে যায় সে। একটা হাত দেখতে পায় রোসিও।

    হাতে একটা গান ধরা। গানটায় সাইলেন্সর লাগানো।

    আলোর একটা ঝলক, তারপর আর কিছুই নেই।

    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleসুখীজীবন ও কাজের সন্ধানে – ডেল কার্নেগি
    Next Article ডিসেপশন পয়েন্ট – ড্যান ব্রাউন

    Related Articles

    ড্যান ব্রাউন

    দ্য দা ভিঞ্চি কোড – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025
    ড্যান ব্রাউন

    এঞ্জেলস এন্ড ডেমনস – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025
    ড্যান ব্রাউন

    দ্যা লস্ট সিম্বল – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025
    ড্যান ব্রাউন

    অরিজিন – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025
    ড্যান ব্রাউন

    ইনফার্নো – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025
    ড্যান ব্রাউন

    ডিসেপশন পয়েন্ট – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Demo
    Most Popular

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Our Picks

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    দ্য দা ভিঞ্চি কোড – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025

    এঞ্জেলস এন্ড ডেমনস – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    Sign In or Register

    Welcome Back!

    Login below or Register Now.

    Lost password?

    Register Now!

    Already registered? Login.

    A password will be e-mailed to you.