Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    দ্য দা ভিঞ্চি কোড – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025

    এঞ্জেলস এন্ড ডেমনস – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • 🔖
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    Subscribe
    সাইন ইন
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    ডিসেপশন পয়েন্ট – ড্যান ব্রাউন

    ড্যান ব্রাউন এক পাতা গল্প497 Mins Read0

    ১১০. আক্রমণটা আচমকাই এলো

    ১১০

    আক্রমণটা আচমকাই এলো। দক্ষিণ পশ্চিম দিকে গয়ার আকাশের ওপরে, দৈত্যাকারের গানশিপ হেলিকপ্টারটা যেনো ধেয়ে এলো। সেটা কি অথবা কেন এটা এখানে সে সম্পর্কে রাচেলের কোনো সন্দেহই নেই।

    অন্ধকার চিড়ে ঝাঁকে ঝাকে গুলি এসে লাগলে গয়া’র ডেকের ফাইবার গ্লাস চুরমার হয়ে গেলো। রাচেল আত্মরক্ষার্থে বসে পড়লো কিন্তু খুব দেরি হয়ে গেছে, তার হাতে বুলেটের টুকরো এসে বিধলে সে আছড়ে পড়লো জমিনে। তারপর গড়িয়ে ট্রাইটন সাবমেরিনটার পেছনে চলে গেলো সে। বিশাল একটা বিস্ফোরণ হতেই মুহূর্তে একটা হিস করে শব্দ হলো। কপ্টারটার রকেট বিস্ফোরিত হলো সমুদ্রে। সঙ্গে সঙ্গে আরো বিস্ফোরণ।

    ডেকে শুয়েই রাচেল কাঁপতে কাঁপতে তার হাতটা একটু তুললো। সে টোল্যান্ড আর কর্কির দিকে তাকালো। তারা একটা স্টোরেজের আড়ালে লুকিয়েছে। তারা দুজনে এবার উঠে দাঁড়িয়ে আকাশের দিকে তাকালো ভয়ার্তভাবে। রাচেল হটুর উপর ভর দিয়ে উঠে বসলো। পুরো জগৎটই মনে হচ্ছে ধীর গতির হয়ে গেছে।

    ট্রাইটনের পেছনে থেকে রাচেল তীব্র আতংকে এদের একমাত্র পালনোর বাহনটার দিকে তাকালো– কোস্টগার্ড হেলিকপ্টার। জাভিয়া ইতিমধ্যেই কপ্টারে উঠে বসেছে। রাচেল দেখতে পেলো পাইলট ককপিটে বসে দ্রুত কপ্টারটা চালু করার চেষ্টা করছে। হেলিকপ্টারটা ব্রেড ঘুরতে শুরু করলো … আস্তে আস্তে।

    অনেক ধীরে।

    জলদি।

    রাচেল উঠে দাঁড়িয়ে দৌড়ানোর প্রস্তুতি নিলো। ভাবলো সে কি আক্রমণকারীদের আরেকটা আঘাতের আগে ডেকটা পেরিয়ে ওপাশে যেতে পারবে কিনা। তার পেছনে, সে। শুনতে পেলো টোল্যান্ড আর কর্কি তার দিকে এবং অপেক্ষারত হেলিকপ্টারের কাছে আসছে।

    হ্যাঁ! জলদি।

    একশ গজ দূরে, আকাশের ওপরে, ফাঁকা অন্ধকারে, পেন্সিলের মতো চিকন একটা লাল আলোর রেখা গয়ার ডেকে নিক্ষেপ করা হয়েছে। রেখাটা ডেকের মধ্যে কী যেনো খুঁজে বেড়াচ্ছে। নিশ্চিত, সেটা লক্ষ্যবস্তু খুঁজছে। আলোর রেখাটা হেলিকপ্টাপরটার পাশে এসে থামলো।

    রাচেল মূহুর্তেই বুঝতে পারলো, কিন্তু খুব বেশি দেরি হয়ে গেছে।

    জাভিয়া কপ্টারে বসে উদভ্রান্তের মতো তাকালো– লাল আলোর রেঢ়ি রাতের আকাশ চিড়ে ফেললো যেনো।

    রাচেল ঝট করে টোল্যান্ড আর কর্কির দিকে ঘুরে দাঁড়ালো, তারা হেলিকপ্টারের দিকেই ছুটছিলো। সে পেছন থেকে তাদেরকে ধরতেই তারা তিনজনই মুড় করে পায়ে পা লেগে ডেকের ওপর পড়ে গেলো। দূরে, একটা সাদা ফ্ল্যাশ লাইট দেখা গেলো। রাচেল ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে দেখতে পেলো লেজার লাইটটা অনুসরণ করে একটা রকেট ছুটে যাচ্ছে হেলিকপ্টারটার দিকে।

    যখন হেল-ফায়ার মিসাইলটা হেলিকপ্টারে আঘাত করলো, সেটা একটা খেলনার মতো টুকরো টুকরো হয়ে গেলো। বিস্ফোরণের উত্তাপ আর ধাক্কা তাদের গায়ে এসেও লাগলো। আগুনের ফুলকি আর লোহার ছোট ছোট টুকরোর বৃষ্টি নেমে এলো যেনো। হেলিকপ্টারটার কঙ্কাল দুমড়ে মুচড়ে আস্তে করে ডেক থেকে জাহাজের নিচে পড়ে গেলো। সমুদ্রে পড়তেই পানি বাষ্প হয়ে হিসহিস করে শব্দ করে নিমিষেই ওটা অতল গহ্বরে চলে গেলো।

    রাচেল তার চোখ বন্ধ করলো, শ্বাস নিতে পারছে না সে। সে শুনতে পেলো মাইকেল টোল্যান্ড চিৎকার করছে। রাচেলের মনে হলো টোল্যান্ড তার শক্ত হাত দিয়ে তাকে উঠে দাঁড়াতে চেষ্টা করছে। কিন্তু সে নড়তে পারছে না।

    কোস্টগার্ড পাইলট আর জাভিয়া মারা গেছে।

    এরপরই আমরা।

    ১১১

    মিলনের আইস শেলফের আবহাওয়াটা থিতু হলো। হ্যাবিস্কেয়ারটা এখন নিরব-নিথর। তারপরও নাসা প্রধান লরেন্স এক্সট্রম ঘুমাবার চেষ্টা করলো না। সে একা একা কয়েক ঘণ্টা কাটিয়েছে, ভোমের ভেতর পায়চারী করে। উল্কা উত্তোলনের গর্তটার দিকে তাকিয়ে রইলো সে। বিশাল পাথর খণ্ডটার অঙ্গারের উপর হাত বুলালো।

    অবশেষে, সে মন ঠিক করে ফেললো। এবার সে হ্যাবিস্কেয়ারের পিসি ট্যাঙ্কের ভিডিও ফোনের সামনে বসলো, প্রেসিডেন্টের উদ্বিগ্ন চোখের দিকে তাকালো। জাখ হার্নি রাতের পোশাক পরে আছেন, তাকে খুব একটা ভালো মেজাজে দেখাচ্ছে না।

    এক্সট্রম জানে, তিনি তার কাছ থেকে সব কোনোর পর তাঁর মেজাজ আরো খারাপ হয়ে যাবে।

    এক্সট্রম সব কিছু বলা শেষ করার পর হার্নির চেহারায় অস্বস্তি দেখা গেলো।

    “রাখো, রাখো,” হার্নি বললো। “তুমি কি এটা বলছে যে নাসা এই উল্কাখণ্ডটির অবস্থান জানতে পেরেছে একটা জরুরি রেডিও ট্রান্সমিশন ইন্টারসেপ্ট করে, তারপর ভান করেছে যে পিওডিএস সেটা খুঁজে পেয়েছে?”

    এক্সট্রম চুপ রইলো।

    “ঈশ্বরের দোহাই, ল্যারি, আমাকে বলল এটা সত্য নয়!”

    এক্সট্রমের মুখ শুকিয়ে গেলো। “উল্কাপিণ্ডটি পাওয়া গেছে, মি: প্রেসিডেন্ট। এটাই হলো আসল কথা।”

    “আমি বলছি, আমাকে বলল এটা সত্যি নয়!”

    তাঁকে আমার বলতেই হবে, এট্রম নিজেকে বললো। ভালোর চেয়েও খারাপই হবে দিনকে দিন। মি: প্রেসিডেন্ট, পিওডিএস-এর ব্যর্থতা আপনার নির্বাচনের বারোটা বাজাত, স্যার। আমরা যখন উল্কাখণ্ড সম্পর্কিত বার্তাটি ইন্টারসেপ্ট করতে পারলাম, দেখলাম লড়াইয়ে ফিরে যাওয়ার আমাদের একটা সুযোগ তৈরি হয়েছে।”

    হার্নি হতবাক হয়ে গেলেন। “ভূয়া পিওডিএস আবিষ্কারের মাধ্যমে?”

    “পিওডিএস খুব জলদিই সচল হয়ে যাবে। কিন্তু এতো জলদি নয় যে নির্বাচনের আগেই সেটা চালু হবে। নির্বাচনটা হাতছাড়া হয়ে যাচ্ছিলো, আর সেক্সটন নাসাকে আক্রমণ করে এগিয়ে যাচ্ছে ক্রমাগত, তাই–

    “তুমি কি পাগল? তুমি আমার সাথে মিথ্যে বলেছে, ল্যারি!”

    “সুযোগটা আমাদের কাছে এসে পড়েছিলো স্যার। আমি ঠিক করেছিলাম সেটা নিতে। যে কানাডিয়ানটা এই উল্কাপিও আবিষ্কার করেছিলো, তার রেডিও-বার্তা আমরা ইন্টারসেপ্ট করে ফেলেছিলাম। সে ঝড়ে পড়ে মারা গিয়েছে। কেউ জানতো না উল্কাখণ্ডটি এখানে আছে। পিওডিএস সেই এলাকাতে ঘুরপাক খাচ্ছে। নাসার একটা বিজয়ের দরকার ছিলো। আর আমরা অবস্থানটা জেনে গিয়েছিলাম।”

    “তুমি এসব এখন আমাকে কেন বলছো?”

    ভাবলাম, আপনার জানা উচিত।”

    “তুমি জানো, এসব কথা সেক্সটন জানতে পারলে কী করবে?”

    এক্সট্রম সেটা ভাবতেও পারলো না।

    “সে সারা দুনিয়াকে জানিয়ে দেবে যে, নাসা এবং হোয়াইট হাউজ আমেরিকান জনগণের কাছে মিথ্যে বলেছে! আর তুমি জানো, সে ঠিকই বলবে!”

    “আপনি মিথ্যে বলেননি, স্যার, আমি বলেছি। আমি পদত্যাগ করবো যদি—”

    “ল্যারি তুমি পাশ কাটিয়ে যাচ্ছে। আমি এই প্রেসিডেন্সিটা সততা আর তার সাথে চালিয়ে আসছি! আজ রাতটা ছিলো একদম মহিমান্বিত। এখন, আমি দেখতে পাচ্ছি আমি সারা পৃথিবীর কাছে মিথ্যে বলেছি?”

    “ছোট্ট একটা মিথ্যে, স্যার।”

    “সেরকম কোনো জিনিস নেই, ল্যারি, মিথ্যা মিথ্যাই,” হার্নি রেগে বললেন।

    এক্সট্রমের মনে হলো ছোট্ট ঘরটার চারপাশটা যেনো তাকে চেপে ধরছে। প্রেসিডেন্টকে আরো অনেক কিছুই বলার ছিলো। কিন্তু এক্সট্ৰম বুঝতে পারলো, সেটা সকালে বলাই ভালো। “আপনাকে ঘুম থেকে ওঠানোর জন্য দুঃখিত, স্যার। আমি ভাবলাম কথাটা আপনাকে জানানো উচিত।”

    .

    শহরের অন্য প্রান্তে, সেজউইক সেক্সটন ত্যক্ত বিরক্ত হয়ে আরেক দফা কঙ্গনাক খেয়ে নিজের এপার্টমেন্টে পায়চারী করতে লাগলেন।

    গ্যাব্রিয়েলা গেলো কোথায়?

    ১১২

    গ্যাব্রিয়েল অ্যাশ সিনেট সেক্সটনের অফিসের কম্পিউটারের সামনে বসে আছে।

    পাসওয়ার্ড ভুল হয়েছে।

    সে আরো অনেক পাসওয়ার্ড দিয়ে চেষ্টা করলো কিন্তু কম্পিউটারটা কাজ করলো না। অনেক চেষ্টার পর সে হাল ছেড়ে দিলো। সে চলে যাবার সময় সেক্সটনের ডেস্ক কেলেন্ডারের দিকে কিছু একটা দেখতে পেলো। কেউ নির্বাচনের তারিখটি দাগ দিয়ে রেখেছে, লাল, সাদা আর নীল রঙের গ্লিটার কলম দিয়ে। নিশ্চয় সিনেটর সেটা করেননি। গ্যাব্রিয়েল ক্যালেন্ডারটি কাছে নিয়ে ভালো করে দেখলো। তারিখটার পাশেই জ্বলজ্বল করছে একটা শব্দ :POTUS!

    POTUS শব্দের অর্থ গ্যাব্রিয়েল জানে। এই শব্দটা প্রেসিডেন্টের কোড নেম। প্রেসিডেন্ট অব দি ইউনাইটেড স্টেট। নির্বাচনের সময় পর্যন্ত যদি সব কিছু ঠিক থাকে তবে সেক্সটন নির্ঘাত নতুন POTUS হবে।

    গ্যাব্রিয়েল চলে যেতে উদ্যত হয়েছিলো, কিন্তু কী যেনো মনে করে সে থেমে গেলো, ফিরে গেলো কম্পিউটারের কাছে। সে পাসওয়ার্ডের জায়গায় লিখলো POTUS

    আচমকাই সে আশাবাদী হয়ে উঠলো। কেন জানি তার মনে হলো এটাই যথার্থ পাসওয়ার্ড।

    আবারো দেখা গেলো পাসওয়ার্ডটা ভুল।

    আশা ছেড়ে দিয়ে গ্যাব্রিয়েল বাথরুমে ফিরে গেলো। সে বের হতেই তার সেল ফোনটা বেজে উঠলো। শব্দটা শুনে সে চম্‌কে গেলো। ফোনটা পকেট থেকে বের করে এক পলক ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলো ৪টা বাজে। এই সময়ে ফোন মানে, গ্যাব্রিয়েল জানে, এটা সেক্সটনেরই। আমি কি ধরবো, না ধরবো না? সে যদি ফোনটা ধরে তবে তাকে মিথ্যে কথা বলতে হবে। আর যদি না ধরে সেক্সটন সন্দেহ করবে।

    সে ফোনটা ধরলো। “হ্যালো?”

    “গ্যাব্রিয়েল?” অধৈর্য কোননালো সেক্সটনকে। “কী হয়েছে?”

    “এফডিআর মেমোরিয়ালে,” গ্যাব্রিয়াল বললো। “ট্যাক্সিতে আটকা পড়ে গেছি, এখন অন্য পথে—”

    “তোমার কথা শুনে মনে হচ্ছেনা তুমি ট্যাক্সিতে আছে।”

    “না,” সে বললো, ভড়কে গেলো একটু “আমি ঠিক করেছি অফিসে নেমে নাসা সম্পর্কিত কিছু কাগজপত্র নিয়ে আসবো, যা পিওডিএস-এর সঙ্গে সম্পর্কিত। সেসব খুঁজে পেতে খুব ঝামেলা হচ্ছে।”

    “আচ্ছা, তো তাড়াতাড়ি করো। আমি সকালে একটা প্রেস কনফারেন্স করতে চাই, আমাদেরকে কিছু বিষয়ে কথা বলতে হবে।”

    “আমি জলদি আসছি,” সে বললো।

    লাইনে একটু নিরবতা নেমে এলো। “তুমি তোমার অফিসে আছো?” তার কথাটা শুনে মনে হলো তিনি একটু ন্ধিগ্রস্ত।

    “হ্যাঁ। আর দশ মিনিট, তারপরই আসছি।”

    আরেকটা নিরবতা। “ঠিক আছে। দেখা হবে তাহলে।”

    গ্যাব্রিয়েল ফোনটা রেখে দিলো। সে একটুও খেয়াল করেনি কয়েক ফিট দূরেই সেক্সটনের ট্রিপল টিক প্রাইজ জর্ডেনগ্র্যান্ডফাদার ঘড়িটা রয়েছে।

    ১১৩

    মাইকেল টোল্যান্ড রাচেলের রক্তাক্ত হাত ধরে টেনে ট্রাইটনের পেছনে লুকানোর জন্য টান দেবীর আগপর্যন্ত সে বুঝতেই পারেনি যে রাচেল আহত হয়েছে। সে এও বুঝতে পারলো রাচেল কোনো যন্ত্রণা পাচ্ছে না। তাকে আড়ালে রেখে টোল্যান্ড কর্কিকে খোঁজার জন্য ঘুরলো। এ্যাস্ট্রোফিজিস্ট ডেক দিয়ে হামাগুড়ি দিয়ে তাদের দিকেই আসছে। তার চোখে তীব্র ভয়।

    আমাদেরকে লুকানোর জায়গা খুঁজতে হবে, টোল্যান্ড ভাবলো। তার চোখ ডেকের উপরে, একটা সিঁড়ির দিকে। সেটা চলে গেছে উপরের বৃজের দিকে, যার চারপাশটা একেবারেই খোলা। বৃজটাও গ্লাস বক্সের– একেকবারেই স্বচ্ছ। উপরে যাওয়া মানে আত্মহত্যা। তার মানে, এখন কেবল একটা জায়গাতেই যাবার আছে।

    কয়েক মূহুর্তের জন্য টোল্যান্ড ট্রাইটন সাব-টা দেখে একটু আশার আলো দেখলো, যদি সে সবাইকে নিয়ে পানির নিচে চলে যেতে পারতো তবে বুলেটের হাত থেকে বাঁচা যেত।

    অবাস্তব। ট্রাইটন কেবল একজনই বসতে পারে। তাছাড়াও এটা পানিতে নামাতে দশ মিনিট লাগবে কমপক্ষে। তারচেয়েও বড় কথা, ভালোভাবে এটার ব্যাটারি চার্জ না করলে। পানিতে গিয়ে সেটা বন্ধ হয়ে যাবে।

    “তারা আসছে!” কৰ্কি চিৎকার করে বললো, ভয়ে ভয়ে সে আকাশের দিকে ইঙ্গিত করলো।

    টোল্যান্ড এমন কি তাকিয়ে দেখলো না। সে কাছেই একটা এলুমিনিয়ামের সিঁড়ির দিকে ইঙ্গিত কলো যেটা নিচের ডেকে নেমে গেছে। কর্কিকে মনে হলো না কিছু বলার দরকার রয়েছে। সে মাথাটা নিচু করে এক দৌড়ে সিঁড়ি দিয়ে নেমে গেলো। টোল্যান্ড তার একটা শক্ত হাত রাচেলের কোমর জড়িয়ে ধরে তাকে নিয়ে ছুটলো কর্কির পেছনে পেছনে। মাথার ওপরে হেলিকপ্টারটা এসে গুলি করার আগেই তারা দুজন উধাও হয়ে গেলো।

    টোল্যান্ড নিচের ডেকে ঝুলন্ত প্লাটফর্মে রাচেলকে দাঁড়াতে সাহায্য করলো। টোল্যান্ডের মনে হলো রীচেলের শরীরে বোধহয় কোনো বুলেটবিদ্ধ হয়েছে।

    তার মুখের দিকে যখন সে তাকালো তখন বুঝতে পারলো অন্য কিছু হবে। টোল্যান্ড তার চোখের দিকে তাকিয়ে সঙ্গে সঙ্গে বুঝতে পারলো।

    .

    রাচেল ঠাঁয় দাঁড়িয়ে আছে, তার পা-দুটো নড়তে চাইছে না। সে তার নিচের দিকে অদ্ভুত জাটির দিকে তাকিয়ে আছে।

    এটার SWATH ডিজাইনের কারণে গয়ার কাঠামো জাহাজের মতো নয়, বরং সেটা একটা বিশার ভেলার মতো। দুপাশে দুটো বিশাল ফাপা টিউবের মতো ভাসমান বস্তুর ওপর পুরো জাহাজটি দাঁড়িয়ে আছে। সেটা থেকে উপরের ডেকের দূরত্ব ত্রিশ ফুট। চারটা স্ট্রাট বা পিলারের মতো বস্তু দিয়ে ওপরের ডেকের সাথে এটা সংযুক্ত। দুটো টিউবের মাঝখানে ফাঁকা। জায়গা আছে, সেটাকে ডাইভ জোন বলে। সেটীর দু’পাশ দিয়ে একটা সংকীর্ণ পথ রয়েছে। সেটাকে বলে ক্যাটওয়াক। জাহাজের নিচে জ্বলতে থাকা স্পটলাইটটার দিকে রাচেল অকালো। সে নিচের দিকে তাকিয়ে আরো দেখতে পেলো ছয়-সাতটি হ্যামারহেড হাঙ্গর ঘোরাফেরা করছে।

    টোল্যান্ড রাচেলের কানের কাছে মুখ এনে বললো, “রাচেল, তুমি ঠিক আছো। চোখ সোজা সামনের দিকে রাখো। আমি তোমার পেছনেই আছি।” তার হাত পেছন থেকে তাকে আলতো করে ধরে আরেকটা হাত দিয়ে রেলিংটা শক্ত করে ধরেছে। তখনই রাচেল দেখতে পেলে তার হাত থেকে রক্তের ফোঁটা ঝড়ে পড়ছে ক্যাটওয়াকের নিচের জালি দিয়ে সমুদ্রের পানিতে। সে জানে রক্তের ফোঁটা পানিতে পড়তেই হ্যামার হেডগুলো একসাথে তেড়ে আসবে। দাঁত বের করে হা করবে।

    তারা একমাইল দূর থেকেও রক্তের গন্ধ পায়।

    “সোজা সামনে তাকাও,” টোল্যান্ড আবারো বললো, “তার কণ্ঠে আশ্বস্ত করার দৃঢ়তা আছে। “আমি তোমার পেছনেই আছি।”

    রাচেল তার কোমরে টোল্যান্ডের হাতটা টের পেলো। তাকে সামনের দিকে তাড়া দিচ্ছে। উপর থেকে হেলিকপ্টারের ব্লেডের শব্দ শোনা যাচ্ছে। কর্কি ইতিমধ্যেই তাদের সামনে দাঁড়িয়ে আছে।

    টোল্যান্ড তাকে ডাকলো। “ঐ দিকে যাও! কর্কি, সিঁড়ির নিচে!”

    রাচেল এবার দেখতে পেলো কোথায় তারা যাচ্ছে। সামনেই কয়েকটা সিঁড়ির সারি। আছে। পানির স্তরের দিকে, সংকীর্ণ শেফের মতো একটা ডেক পানির নিচে চলে গেছে। সেখানে একটা সাইনবোর্ড আছে :

    ডুব দেয়ার এরিয়া
    সতর্কতার সাথে নামবেন।

    রাচেল কেবল ভাবতে পারলো মাইকেল যেনো তাদেরকে সঁতরাতে না বলে। তার আশংকাটাই সত্য হলো। টোল্যান্ড একটা বাক্সের কাছে এসে থেমে সেটার ঢাকনা খুলে ফেললো। সেটার ভেতরে রয়েছে ওয়েটসুট, ফ্লিপার, লাইফ-জ্যাকেট এবং ক্লিয়ার গান। সে কিছু বলার আগেই একটা ফ্রেয়ার গান তুলে নিলো সে। চলো এবার।”

    তারা আবারো সামনের দিকে যেতে লাগলো।

    সামনে, কর্কি জাহাজের পেছন অংশে চলে এসেছে। আমি সেটা দেখেছি!” সে চিৎকার করে বললো। তার কণ্ঠে আনন্দ।

    কী দেখেছে? কর্কিকে সংকীর্ণ পথটা দিয়ে দৌড়ে যেতে দেখে রাচেল অবাক হয়ে ভাবলো। টোল্যান্ড তাকে পেছন থেকে তাড়া দিলে রাচেল দেখতে পেলো কর্কির দেখা। জিনিসটা। নিচের ডেকের শেষ মাথায়, একটা ছোট পাওয়ার বোট বাঁধা আছে। কর্কি সেটার দিকে দৌড়ে যাচ্ছে।

    রাচেল তাকিয়ে রইলো। একটা স্পিড বোট দিয়ে হেলিকপ্টারের কাছ থেকে পালানো?

    “এটাতে রেডিও আছে, টোল্যান্ড বললো। “আমরা যদি হেলিকপ্টার থেকে একটু দূরে যেতে পারি …”

    রাচেল তার আর কোনো কথা শুনতে পেলো না। সে একটু আঁচ করতে পারলো, কিছু এন্টা, এটা ভেবেই তার রক্ত ঠাণ্ডা হয়ে গেলো। “দেরি হয়ে গেছে,” সে বললো। কাঁপতে কাঁপতে আঙুল তুললো। আমরা শেষ…

    ***

    টোল্যান্ড দেখেই বুঝতে পারলো সব শেষ হয়ে গেছে।

    জাহাজের শেষ মাথায়, যেনো কোনো গুহার মুখে একটা ড্রাগন উঁকি মারছে, কালো হেলিকপ্টারটা নিচে নেমে এসে তাদের মুখোমুখি অবস্থান নিয়েছে। টোল্যান্ডের মনে হলো এটা বুঝি জাহাজের মাঝখানের ফাঁকা জায়গাটা দিয়ে ধেয়ে আসবে তাদের দিকে। কিন্তু হেলিকপ্টারটা একটু ঘুরে লক্ষ্য বস্তুতে আঘাত হানার জন্য প্রস্তুত হলো।

    বন্দুকের নলটার দিক লক্ষ্য করলো টোল্যান্ড। না?

    স্পিডবোটটার পাশেই নিচু হয়ে কর্কি যেইমাত্র তাকিয়েছে অমনি কপ্টারের নিচ থেকে মেশিন-গানটা গর্জে উঠলো বজ্রপাতের মতো। কর্কি এমনভাবে ঝট্রা খেলো যেনো তার গুলি লেগেছে। হুড়মুড় করে সে স্পিডবোটে লাফিয়ে উঠে পড়লো। বোটের ফ্লোরে শুয়ে পড়লো সে। গোলাগুলি থেমে গেলে টোল্যান্ড দেখতে পেলো কর্কি হামাগুড়ি দিয়ে স্পিডবোটের আরো ভেতরে চলে গেছে। তার ডান পায়ের নিচের দিকে রক্ত ঝরে পড়ছে। কর্কি প্রাণপন চেষ্টা করে গেলো কন্ট্রোল প্যানেল থেকে স্পিডবোটটা চালু করতে। বোটটার ২৫০এইচপি মার্কারি ইজিনটা গর্জে উঠলো।

    একটুবাদেই, কপ্টারটার নাক থেকে ছোঁড়া লাল আলোর লেজার রশ্মি স্পিডবোটটাকে নিশানা করলো।

    টোল্যান্ড স্বতঃস্ফূর্ত প্রতিক্রিয়ায় তার হাতে ধরা একমাত্র অস্ত্রটা তা করলো।

    ট্রিগার টিপতেই হিস করে শব্দ করে তীব্র আলোতে, জাহাজের নিচ দিয়ে সোজাসুজি আঘাত হানলো কপ্টারটার সামনের দিকে। উইন্ডশিল্ডে ওটা আঘাত করার সঙ্গে সঙ্গেই কপ্টারের নিচ থেকে একটা মিসাইল ছুটে এলো। কিন্তু ফ্রেয়ারের তীব্র আলোর কারণে কপ্টারটা একটু সরে গেছে।

    “বসে পড়ো।” টোল্যান্ড চিৎকার করে সংকীর্ণ পথটা মানে ক্যাটওয়াকে চুরি হয়ে গেলো।

    মিসাইলটা ছোঁড়া হলেও, সেটা কর্কির পাশ দিয়ে চলে গিয়ে সেটা গয়ার ফাপা টিউবের একটাতে গিয়ে আঘাত হানলো।

    বিস্ফোরণ, পানির উছলে পড়া সব মিলিয়ে শব্দটা হলো অদ্ভুত। লোহার টুকরো চার দিকে ছড়িয়ে পড়লো। রাচেল আর টোল্যান্ডের আশপাশেও এসে পড়লো সেগুলো। একটা টিউব ক্ষতিগ্রস্ত হওয়াতে জাহাজটা ভারসাম্য হারিয়ে একদিকে একটু কাত হয়ে গেলো।

    ধোঁয়া পরিস্কার হতেই টোল্যান্ড দেখতে পেলো গয়ার চারটা স্ট্রট-এর একটা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। শক্তিশালী স্রোত পন্টুনের ভাঙা অংশ দিয়ে ঢুকে পড়ছে। সেটা ভেঙে পড়ার উপক্রম হলো। উপর থেকে নিচের ডেকে নেমে আসা পাচানো সিঁড়িটা কোনোভাবে ঝুলে আছে।

    “আসো!” টোল্যান্ড চিৎকার করে রাচেলকে বললো। আমাদেরকে নিচে নেমে যেতে হবে।

    কিন্তু দেরি হয়ে গেছে। সিঁড়িটা খুলে স্ট্রুটটাসহ সমুদ্রের পানিতে পড়ে গেলো।

    .

    জাহাজের ওপরে, ডেল্টা-ওয়ান কোনোভাবে কিওয়া হেলিকপ্টারটা নিয়ন্ত্রণে নিতে পারলো। ফ্লেয়ারটার কারণে কিছুক্ষণের জন্য তার চোখ ঝলসে গেছে, তাই কপ্টারটা উপরে নিয়ে এসে পড়েছে। আর এজন্যেই মিসাইলটাও লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়েছে। গজগজ করতে করতে সে জাহাজের ওপরেই কপ্টারটা ল্যান্ড করে রেখে বাকি কাজ শেষ করাতে মনস্থির করলো।

    সবাইকে শেষ করতে হবে। কন্ট্রোলারের কথাটা খুবই স্পষ্ট ছিলো।

    “ধ্যাত! দেখুন!” ডেল্টা-টু ককপিট থেকেই চিৎকার করে বললো, জানালার বাইরে ইঙ্গিত করলো সে। “স্পিডবোট!”

    ডেল্টা-ওয়ান ঘুরে দেখলে বুলেটের মতোই একটা স্পিডবোট গয়া’র নিচ থেকে অন্ধকার সমুদ্রের দিকে ছুটে যাচ্ছে।

    তাকে একটা সিদ্ধান্ত নিতেই হবে।

    ১১৪

    কর্কির রক্তাক্ত হাতটা ক্রেস্টলাইনার ফ্যান্টম ২১০০ স্পিডবোটের হুইলটা ধরে আছে। সে সর্বোচ্চ গতিতে ছোটার চেষ্টা করছে। এই মুহূর্তের আগ পর্যন্ত সে তীব্র যন্ত্রণাটা টের পায়নি। সে চেয়ে দেখলো তার ডান পায়ে থেকে রক্ত ঝরছে। সঙ্গে সঙ্গে তার বিবমিষা বোধ হলো।

    সে পেছনে ফিরে গয়ার দিকে চেয়ে দেখলো যাতে হেলিকপ্টারটা তার পিছু নেয়। টোল্যান্ড আর রাচেল ক্যাটওয়াকে আঁটকা পড়ে যাওয়াতে কর্কি তাদেরকে বোটে তুলতে পারেনি। তাকে খুব দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে।

    বিভেদ করো এবং বিজয়ী হও।

    কর্কি জানে কপ্টারটা প্রলোভন দেখিয়ে কিছু দূর পর্যন্ত নিয়ে যেতে পারলে টোল্যান্ড আর রাচেল রেডিওতে সাহায্যের জন্য বার্তা পাঠাতে পারবে। দুর্ভাগ্যের বিষয় হলো, সে দেখতে পাচ্ছে, কপ্টারটা এখনও এক জায়গায় স্থির হয়ে ভাসছে, যেনো সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না।

    আমার দিকে আয়, শালার বানচোত! আমার পিছু নেয়।

    কিন্তু কপ্টারটা তাকে অনুসরণ করলো না। সেটা বরং গয়ার ওপরেই চক্কর দিতে দিতে দিকে ডেকের ওপর ল্যান্ড করলো। না! কর্কি ভয়ার্ত চোখে তাকিয়ে দেখলো, বুঝতে পারলো

    সে টোল্যান্ড আর রাচেলকে হত্যার মুখে রেখে এসেছে।

    বুঝতে পারলো, রেডিওতে সাহায্য চাইবার ব্যাপারটা এবার তার উপরই বর্তালো। কর্কি ড্যাশ বোর্ড থেকে রেডিওটা তুলে নিলো। সেটা অন করলেও কিছুই হলো না। কোনো বাতি জ্বললো না। ঘরঘর শব্দও নেই। সে ড্যাশবোর্ডের দিকে তাকিয়ে দেখলো এক ঝাক গুলি এসে লেগেছে, রেডিওর ডায়ালটার চূড়মার হয়ে গেল। ছেঁড়া তার তার সামনে ঝুলছে। অবিশ্বাসে সে চেয়ে রইলো।

    হায়রে কপাল …

    কৰ্কি আবার গয়ার দিকে তাকিয়ে দেখতে পেলো হেলিকপ্টার থেকে দুজন সশস্ত্র সৈনিক ডেকে নেমে যাচ্ছে। তারপরই চপারটা আবার উড়ে কর্কির দিকে ছুটে আসতে লাগলো দ্রুত বেগে।

    বিভেদ করো এবং বিজয়ী হও, মনে হচ্ছে এই আইডিয়াটার কথা কেবল কৰ্কিই জানে না। সে অভিসম্পাত দিলো।

    .

    ডেল্টা-থৃ ওপরের ডেক থেকে নিচের জালিওয়ালা সংকীর্ণ পথটার দিকে যাবার সময় শুনতে পেলো একটা নারী কন্ঠ নিচ থেকে চিৎকার করছে। সে ডেল্টা-টু’র দিকে তাকালো। সে নিচের ডেকে চলে গেলো সেটা দেখার জন্য। তার সঙ্গীরা তার ব্যাক-আপের জন্য ওপরের ডেকেই রইলো। তারা দু’জন ক্রিপটকে সারাক্ষণ যোগাযোগ করছে।

    ডেল্টা-থৃ তার সাবমেশিন গানটা উঁচিয়ে নিচের দিকে নিঃশব্দে চলে গেলো। সে এখন চিৎকারটা স্পষ্ট শুনতে পাচ্ছে। তারপরই সে তাকে দেখতে পেলো। ক্যাটওয়াকের মাঝখানে দাঁড়িয়ে পানির দিকে তাকিয়ে মাইকেল টোল্যান্ডকে প্রাণপণ ডেকে যাচ্ছে।

    টোল্যান্ড কি পড়ে গেছে? হয়তো বিস্ফোরণের চোটে?

    যদি তাই হয়, তবে ডেল্টা-থৃ’র কাজ খুব সহজ হয়ে গেলো। কেবল একটু এগিয়ে গিয়ে গুলি করলেই হবে। একমাত্র চিন্তার বিষয় হলো রাচেল একটা ঢাকনা খোলা যন্ত্রপাতির বাক্সের সামনে দাঁড়িয়ে আছে– একটা স্পিয়ারগান অথবা শার্ক রাইফেল– যদিও এসব তার মেশিনগানের কাছে কিছুই না। ডেল্টা-থৃ নিশ্চিতমনে মেশিনগানটা তাক্ করে আরো কয়েক পা এগিয়ে গেলো। রাচেল সেক্সটন একেবারে তার নাগালের মধ্যে এসে পড়েছে। সে তার অস্ত্রটা উঁচিয়ে ধরলো।

    আরেক পা সামনে।

    তার সিঁড়ির নিচে কী যেনো নড়ে উঠলো। সে ভয়ের চেয়েও বেশি দ্বিধাগ্রস্ত হয়ে নিচে চেয়ে দেখলো মাইকেল টোল্যান্ড তার পায়ের দিকে একটা এলুমিনিয়াম পোল তা করে রেখেছে। যদিও তাকে ফাঁদে ফেলার চেষ্টা করা হয়েছে কিন্তু এমন হাস্যকর প্রচেষ্টা দেখে তার হাসি পেলো।

    সে টের পেলো তার গোড়ালিতে একটা কিছু এসে লাগলো।

    নিচ থেকে তার ডান পা-টাতে একটা প্রচণ্ড জোরে আঘাত লাগলো। ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে ডেল্টা-থৃ সিঁড়ি থেকে পড়ে গেলে তার মেশিনগানটা হাত থেকে ছিটকে ক্যাটওয়াকে পড়ে গেলো। তীব্র যন্ত্রণায় তার পা-টা ধরতে গেলো কিন্তু সেটা আর ওখানে নেই।

    .

    টোল্যান্ড তার আক্রমণকারীর সামনে এসে দাঁড়ালো, তার হাতে হাঙ্গর মাছ ধরার একটা যন্ত্র। পাঁচ ফুট লম্বা রাইফেল সদৃশ্য বস্তু। এই জিনিসটাতে বারো গজের শটগানের কার্তুজ আছে। এটা হাঙ্গরের আক্রমণের বিরুদ্ধে ব্যবহার করা হয়। টোল্যান্ড আরেকটা শেল লোড করে নিলো। এবার অস্ত্রটার নল আক্রমণকারীর গলার দিকে তাক করলো। লোকটা তীব্র যন্ত্রণায় প্রায় অথর্ব হয়ে পড়ে আছে, সে টোল্যান্ডের দিকে বিস্ময়-ক্রোধ আর যন্ত্রণায় চেয়ে আছে।

    রাচেল দ্রুত তাদের দিকে ছুটে এলো। পরিকল্পনাটা ছিলো সাবমেশিন গানটা কেড়ে নেয়ার। কিন্তু ওটা ততোক্ষণে সমুদ্রে পড়ে গেছে।

    লোকটার যোগাযোগ যন্ত্রটা তার কোমরে, সেটাতে একটা কণ্ঠ বলে উঠলো “ডেল্টা-প্যা? আসছি। আমি একটা গুলির শব্দ শুনতে পেয়েছি।”

    লোকটা কোনো জবাব দিলো না।

    যন্ত্রটা আবার শব্দ করলো। “ডেল্টা-থৃ? তোমার কি ব্যাক-আপের দরকার রয়েছে?”

    সঙ্গে সঙ্গেই লাইনে একটা নতুন কণ্ঠ জবাব দিলো। সেটাও রোবোটিক কিন্তু সেটার ব্যাকগ্রাউন্ড থেকে হেলিকপ্টারের শব্দ আসছে। “ডেল্টা-ওয়ান বলছি,” পাইলট বললো। “ডেল্টা-থৃ। তুমি কি আছে, তোমার কি ব্যাক-আপের দরকার রয়েছে?”

    টোল্যান্ড তার হাতে থাকা অস্ত্রটা দিয়ে লোকটার গলায় একটু চাপ দিলো। “হেলিকপ্টারকে বলো স্পিডবোটটা ছেড়ে আসতে। তারা যদি আমার বন্ধুকে হত্যা করে, তবে তুমি মারা যাবে।”

    সৈনিকটি যন্ত্রণাকাতর হয়ে কথা বললো, “ডেল্টা-থৃ বলছি। আমি ঠিক আছি। স্পিডবোটটা ধ্বংস করে ফেলো।”

    ১১৫

    গ্যাব্রিয়েল অ্যাশ সেক্সটনের প্রাইভেট বাথরুম থেকে ফিরে এসে অফিস থেকে বের হবার প্রস্তুতি নিলো। সেক্সটনের ফোন কলটা তাকে উদ্বিগ্ন করে তুলেছে। সে যখন তাকে বলেছিলো সে তার অফিসেই আছে তখন সেক্সটনকে দ্বিধান্বিত বলে মনে হয়েছিলো যেনো তিনি বুঝে গেছেন সে মিথ্যে বলছে। সে সেক্সটনের কম্পিউটারে ঢুকতে ব্যর্থ হয়েছে আর এখন, এরপর কী করবে সেটাও ভাবতে পারছে না।

    সেক্সটন অপেক্ষা করছে।

    সে সিঙ্কেকর উপর উঠতে যেতেই ফ্লোরের টাইলে কিছু একটা পড়ার শব্দ শুনতে পেলো। নিচের দিকে তাকিয়ে বিরক্ত হয়ে দেখলো সেক্সটনের একজোড়া কাফ-লিংক প’ড়ে আছে, জিনিসটা মনে হয় সিঙ্কের পাশেই রাখা ছিলো।

    নেমে এসে গ্যাব্রিয়েল সেটা মাটি থেকে তুলে আবার সিঙ্কের পাশে রেখে দিলো। সে যখন আবার উঠতে যাবে তখন কাফ-লিংটার দিকে তাকিয়ে দেখলো। অন্য যেকোন সময়ে সে। এটা খেয়ালই করতো না। কিন্তু আজ সে ওটার মনোগ্রামটার দিকে তাকালো। সেক্সটনের অন্যসব জিনিসের মতো এটাতেও এসএস অক্ষর দুটো একটার সাথে আরেকটা লেগে আছে। গ্যাব্রিয়েল সেক্সটনের প্রথম দিককার পাসওয়ার্ডটার কথা মনে করলো– এসএসএস। সে। তার ক্যালেন্ডারের কথাটি ভাবলো .. POTUS…. আর কম্পিউটারের ক্রিন সেভারে লেখাটি।

    প্রেসিডেন্ট অব দি ইউনাইটেড স্টেট সেজউইক সেক্সটন….

    গ্যাব্রিয়েল অবাক হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো কিছুক্ষণ। সেকি এতোটা নিশ্চিন্ত হবে?

    খুঁজে পেতে খুব অল্প সময় লাগবে জেনে গ্যাব্রিয়েল আবার সেক্সটনের অফিসে ফিরে গেলো। তার কম্পিউটারে সাতটা অক্ষর টাইপ করলো।

    POTUSSS

    স্ক্রিন সেভারটা সরে গেলো।

    সে অবিশ্বাস্য তাকিয়ে রইলো।

    একজন রাজনীতিকের অহংকে কখনও খাটো করে দেখতে নেই।

    ১১৬

    কর্কি মারলিনসন ক্রেস্টলাইনার ফ্যান্টমের হুইলের সামনে আর নেই। বোটটা অন্ধকারে ছুটে চলছে। সে জানে হুইলে সে থাকুক আর না-ই থাকুক এটা একেবারে সোজাই চলবে। সে এখন ব্যস্ত আছে তার পা-টা নিয়ে। তার পায়ের ডিমে গুলিটা লেগেছে। কিন্তু সেটা বের হয়ে যায়নি সেটা ডিমের মধ্যেই আঁটকে আছে। রক্ত পড়া বন্ধ করার জন্য সে কোনো কিছুই খুঁজে পেলো না। কর্কি উপায়ম্ভর না দেখে একটা ড্রয়ার খুলে দেখলো তাতে কিছু যন্ত্রপাতি আর ডাক্ট টেপ আছে। তার পায়ের রক্ত পড়ার দিকে তাকালো। অবলো কীভাবে হাঙ্গরের কাছ থেকে দূরে থাকা যায়।

    .

    ডেল্টা-ওয়ান তার কিওয়া হেলিকপ্টারটা একটু নিচ দিয়ে চালাতে লাগলো যাতে অন্ধকার সমুদ্র দিয়ে ছুটে চলতে থাকা স্পিডবোটটাকে ভালভাবে দেখা যায়।

    সে বুঝতে পারলো বোটটা যতোদূর সম্ভব গয়া থেকে দূরে সরে যেতে চাইছে। তীরে পৌঁছানর চেষ্টা করছে সেটা। তাকে এখনই পাকড়াও করতে হবে।

    সাধারণত কিওয়া এরকম বোটকে পাকড়াও করার জন্য রাডার ব্যবহার করে থাকে, কিন্তু রাডার ফাঁকি দেবার ছাতা ব্যবহার করার সময় এটা কাজে আসে না। এখন ছাতাটি চালু রেখেছে যাতে গয়া থেকে কেউ কোনো ফোন কল করতে না পারে।

    উল্কাপিণ্ডের সিক্রেটটা মরে যাবে। এখানে। এখনই।

    সৌভাগ্যবশত, ডেল্টা-ওয়ানের কিাছে ট্রেসিং করার জন্য অন্য ব্যবস্থাও রয়েছে। কিওয়ার থার্মাল স্ক্যানারটা দিয়ে বোটটা নজরে রাখা যাবে। চারপাশের সাগরের উত্তাপ ৯৫ ডিগ্রির কাছাকাছি। আর ২৫০ অশ্বশক্তির স্পিডবোটের ইনজিনটা থেকে কমপক্ষে একশ ডিগ্রির উত্তাপ বের হয়ে থাকবে।

    .

    কর্কি মারলিনসনের পা-টা অসাড় হয়ে যেতে লাগলো।

    কী করবে ভেবে না পেয়ে সে ডাক্ট টেপ দিয়ে পায়ের ক্ষতটা পেচিয়ে নিলো। হাটু থেকে পায়ের গোড়ালী পর্যন্ত রূপার রঙের টেপ পেঁচানো। রক্ত পড়া বন্ধ হয়ে গেছে এখন। যদিও তার হাতে পায়ে আর জামা কাপড়ে রক্ত লেগে রয়েছে।

    স্পিডবোটটার পাটাতনে বসে কর্কি অবাক হয়ে ভাবতে লাগলো এখন পর্যন্ত কেন। কপ্টারটা তাকে খুঁজে পাচ্ছে না। সে আশপাশে তাকিয়ে গয়া এবং হেলিকপ্টারটা দেখার আশা করলো। অদ্ভুত ব্যাপার হলো, সে কিছুই দেখতে পেলো না। অনেক দূরে এসে পড়তে গয়াকে দেখারও কথা নয়।

    কর্কি আচমকা আশাবাদী হয়ে উঠলো যে, সে হয়তো পালাতে সক্ষম হবে। হয়তো, তারা অন্ধকারে তাকে হারিয়ে ফেলেছে। হয়তো, সে তীরে পৗছাতে পারবে।

    তখনই সে লক্ষ্য করলো যে তার বোটটা সোজা চলছে না, ওটা আসলে একটু বেঁকে চলার কারণে যেখান থেকে এসেছিলো সেদিকেই যাচ্ছে। কয়েক মুহূর্ত বাদেই সে ওটা দেখতে পেলো।

    গয়া তার সামনেই, আধ মাইল দূরে আছে। ভীত হয়ে কর্কি বুঝতে পারলো, খুব বেশি দেরি হয়ে গেছে। স্পিডবোটটা সোজাই চলার কথা কিন্তু শক্তিশালী স্রোত-মেগাপ্লামের কুণ্ডলীর চক্রাকারের স্রোতের টানে তার বোটটা একটা বিশাল চক্কর খেয়ে গয়ার দিকেই ফিরে আসছে। শালার বড় একষ্টা বৃত্তে আমি চলেছি!

    বুঝতে পারলো, এখনও হাঙ্গরের সীমানায় আছে সে। নিজের ক্ষতস্থানটি দেখে কর্কি আতৃকে উঠলো।

    কপ্টারটা তার কাছে জলদিই ফিরে আসবে।

    কর্কি তার রক্তাক্ত কাপড় চোপড় খুলে ফেলে নগ্ন হয়ে উঠে দাঁড়ালো, অন্ধকারে সম্পূর্ণ ন্যাংটা সে।

    কর্কি জানে মানুষের প্রস্রাবে রয়েছে ইউরিক এসিড। সেটা তার রক্তের ঠিক বিপরীত কাজ করবে এই সমুদ্রে। সে সঙ্গে সঙ্গে নিজের ডাক্ট টেপ পেঁচানো পায়ে প্রস্রাব করতে শুরু করলো। তার মনে হলো যদি আরো বেশি বিয়ার খেতে পারতো সে। কিছুক্ষণ ক্ষতস্থানে প্রস্রাব করে বাকি প্রশ্রাব হাতে নিয়ে শরীরে মেখে নিলো কর্কি। খুবই আনন্দদায়ক।

    মাথার ওপরে, অন্ধকার আকাশ থেকে একটা লাল লেজার রশ্মি এসে পড়লো। তার দিকে এমনভাবে তেড়ে আসল যেনো কোনো তলোয়াড় চৰ্চ করছে। পাইলট মনে হয় খুবই দ্বিধান্বিত হয়েছে কর্কিকে আবার গয়ার দিকে ফিরে আসতে দেখে। কর্কি বোটের কানায় এসে দাঁড়ালো। তার থেকে পাঁচ ফিট দূরে লাল বিন্দুটা দেখা যাচ্ছে, বোটের ফ্লোরে সেটা এসে পড়েছে।

    সময় এসে গেছে।

    .

    গয়া থেকে মাইকেল টোল্যান্ড দেখতে পায়নি তার ক্রেস্টলাইনার ফ্যান্টম ২১০০ বিকট শব্দে বিস্ফোরিত হলো।

    কিন্তু সে বিস্ফোরণের শব্দটা শুনতে পেয়েছিলো।

    ১১৭

    এ সময়টাতে ওয়েস্ট উইং নিরব-নিথরই থাকে। কিন্তু বাথরোব আর স্লিপার পরে প্রেসিডেন্ট অপ্রত্যাশিতভাবে বেড়িয়ে আসলে জায়গাটা আর নিরব রইলো না।

    “আমি টেঞ্চকে খুঁজে পাচ্ছি না, মি: প্রেসিডেন্ট, এক তরুণ সহকারী বললো। তার পেছন পেছন ওভাল অফিসে আসছে সে। সব জায়গাতেই খোঁজ নেয়া হয়েছে। “মিস টেঞ্চ তার পেজার কিংবা সেলফোনেও কোনো জবাব দিচ্ছে না।”

    প্রেসিডেন্টকে উদ্বিগ্ন দেখালো। “তুমি তাকে তার অফি-”

    “সে ওখান থেকে চলে গেছে, স্যার।”

    আরেকজন সহকারী হন্তদন্ত হয়ে ছুটে এসে বললো। “সে এক ঘন্টা আগে চলে গেছে, আমাদের মনে হচ্ছে তিনি এনআরও’-তে গেছেন। আমাদেরকে একজন অপারেটর বলেছে তিনি আর পিকারিং কথা বলেছেন আজ রাতে।”

    “পিকারিং?” প্রেসিডেন্ট ভ্যাবাচ্যাকা খেলেন। টেঞ্চ আর পিকারিং আর যাই হোক বন্ধুভাবাপন্ন নয়। তাকে কি ফোন করেছে?”

    “তিনিও ফোনে জবাব দিচ্ছেন না স্যার। এনআরওর সুইচ বোর্ড তাকে ধরতে পারছে না। তারা বলেছে পিকারিংয়ের সেলফোনটাতে নাকি রিং হচ্ছে না। যেনো তিনি উধাও হয়ে গেছেন।”

    হার্নি তার সহকারীর দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বারের দিকে চলে গেলেন। এক গেলাস বার্বোন পান করলেন। গেলাসে চুমুক দেবার সময়ই সিক্রেট সার্ভিসের এক লোক হন্ত দন্ত হয়ে ছুটে এলো। “মি: প্রেসিডেন্ট?” আমি আপনাকে জানাতে চাইনি, কিন্তু আপনার জানা। দরকার যে, এফডিআর মেমোরিয়ালে একটা গাড়ি বোমা বিস্ফোরিত হয়েছে। আজ রাতে।”

    “কী?” হার্নি তার হাতের পানীয়টা প্রায় ফেলেই দিচ্ছিলেন। “কখন?”

    “এক ঘণ্টা আগে।” তার চেহারাটা বিষণ্ণ হয়ে গেলো। “এফবিআই এইমাত্র নিহতের পরিচয় জানতে পেরেছে …”

    ১১৮

    ডেল্টা-থৃ পা-টাতে তীব্র যন্ত্রণা হতে লাগলো। তার মনে হলো সে এক রকম সচেতনতার মধ্যে ভাসছে। এটাই কি মৃত্যু? সে নড়াচড়ার চেষ্টা করলো কিন্তু পারলো না। সে কেবল ঘোলাটে অবয়ব দেখতে পাচ্ছে।

    নিশ্চিত টোল্যান্ড আমাকে মেরে ফেলেছে…

    কিন্তু ডেল্টা-থৃ’র ডান পায়ের তীব্র যন্ত্রণা তাকে বলে দিচ্ছে সে বেঁচেই আছে। দূর থেকে একটা বিস্ফোরণের শব্দ কোনো গেলো। টোল্যান্ড বুঝতে পেরে তার বন্ধুকে হারিয়ে আর্তনাদ করে উঠলো। তারপর কুদ্ধ চোখে তাকালো ডেল্টা-থৃ’র দিকে। অস্ত্রটা তার গলায় ঠেকিয়ে হত্যা করার জন্য উদ্যত হলো। কিন্তু সে পারলো না। তার নৈতিকতা এ কাজ করতে তাকে বাধা দিলো। টোল্যান্ড অস্ত্রটা সরিয়ে বুট দিয়ে ডেল্টা-থৃ’র অর্ধেক পায়ে আঘাত করলো।

    ডেল্টা-থৃ কেবল মনে রইলো, তীব্র যন্ত্রণায় বমি করে দিলো, আর সঙ্গে সঙ্গে সবকিছু অন্ধকার হয়ে গেলো। এখন সে জ্ঞান ফিরে বুঝতে পারলো না, কততক্ষণ ধরে অজ্ঞান হয়েছিলো সে। বুঝতে পারলো তার পেছন দিকে বাধা। তার পা-ও বাধা, দু’হাত পেছনে দিকে নিয়ে পায়ের সাথে বেঁধে রাখা হয়েছে তাকে। সে কাউকে ডাক দিতে চাইলো, কিন্তু তার মুখ কী দিয়ে যেনো আঁটকানো। সে দেখতে পেলো তার সামনে গয়ার সাবমার্সিবল ট্রাইনটনটা ঝুলছে। তার মানে সে গয়ার ডেকে সে। এবার তার মনে একটা নিশ্চিত প্রশ্ন উঠলো।

    আমি যদি ডেকে থেকে থাকি… তাহলে ডেল্টা-টু কোথায়?

    .

    ডেল্টা-টু’র অস্বস্তিটা বাড়তে লাগলো।

    যদিও তার বন্ধু ক্রিপটকে বলেছে যে সে ঠিকই আছে, কিন্তু সে গুলির শব্দটা সে শুনতে পেয়েছে, সেটা মেশিনগানের গুলির শব্দ নয়। অবশ্যই টোল্যান্ড এবং রাচেল গুলি করেছে। ডেল্টা-টু যে সিঁড়িটা দিয়ে তার সঙ্গী নেমে গিয়েছিলো সেটার সামনে এসে নিচের দিকে উঁকি মেরে দেখতে পেলো রক্ত।

    অস্ত্র উঁচিয়ে সে নিচের ডেকে নেমে গিয়ে দেখতে পেলো ক্যাটওয়াকে রক্তের দাগ, সেটা চলে গেছে জাহাজের সামনের দিকে। এখান থেকে রক্তের দাগটা আবার আরেকটা সিঁড়ি দিয়ে প্রধান ডেকের দিকে চলে গেছে। সেই জায়গাটা ফাঁকা। উদ্বিগ্ন হয়ে ডেল্টা-টু জাহাজের ডেকের ঠিক সামনে, রিয়ারের দিক চলে গেলো। সেখান থেকে আরেকটা সিঁড়ি নিচে নেমে গেছে।

    আরে হচ্ছেটা কী? রক্তের পোচটা মনে হচ্ছে একটা বৃত্তাকার তৈরি করেছে।

    ডেল্টা-টু অস্ত্র হাতে ল্যাবটা অতিক্রম করলো। রক্তের দাগ ডেকের সামনে চলে গেছে। সতর্কভাবে সে এক কোণে তাকালো। তার চোখ খুঁজে পেলো সেটা।

    সে এবার দেখতে পেলো।

    যিশু খৃস্ট!

    ডেল্টা-থৃ সেখানে পড়ে আছে হাত-পা-মুখ বাঁধা। গয়ার ছোট্ট সাব টাইট্রনের সামনে। দূর থেকেও ডেল্টা-টু দেখতে পেলো তার সঙ্গীর ডান পা-টার অনেকখানি নেই।

    ডেল্টা-টু অস্ত্র উঁচিয়ে সামনের দিকে এগোলো। ডেল্টা-টু তাকে দেখে শরীর বেঁকিয়ে ফেলছে, সে কিছু একটা বলতে চাচ্ছে।

    ডেল্টা-টু সতর্কভাবে তার অসহায় সঙ্গীর কাছে এসে পড়লো। সে তার চোখে সতর্ক করার ইঙ্গিতটা দেখতে পেলো, কিন্তু খুব বেশি দেরি হয়ে গেছে। একটা রূপালি ঝটকা আচমকা কোত্থেকে যেনো তেড়ে এলো।

    ট্রাইটনের রোবোটিক একটা হাত আচমকা ডেল্টা-টু’র বাম পায়ের উরুতে থাবা বসিয়ে দিলো। সে ছাড়াবার চেষ্টা করলো কিন্তু থাবাটা শক্ত করে পাকড়াও করেছে তাকে। তীব্র যন্ত্রণায় সে চিৎকার দিলো। তার মনে হলো হাড্ডিটা ভেঙে যাচ্ছে। তার চোখ গেলো ট্রাইটনের ককপিটের দিকে। চিনতে পারলো সে।

    মাইকেল টোল্যান্ড সাব-এর ভেতরে বসে আছে।

    ডেল্টা-টু যন্ত্রণা উপেক্ষা করে মেশিনগানটা টোল্যান্ডের বুক বরাবর নিশানা করলো, তার কাছ থেকে মাত্র তিন ফুট দূরে সাব-এর ভেতরে। সে গুলি চালালো। থোকা খেয়ে ক্রুদ্ধ হয়ে ডেল্টা-টু আবারো টুগার টিপলো। তার মেশিনগানের সব গুলি খালি করে ফেললো। নিঃশ্বাসহীন, সে অস্ত্রটা ফেলে দিয়ে সাব-এর ককপিটের সামনের কাঁচের দিকে চেয়ে রইলো।

    “মরেছে!” সে বলেই পা-টা ছাড়াতে চেষ্টা করলো। ধাতব থাবাটি তার পায়ের মাংস কেটেকুটে একাকার করে ফেলেছে। সে যন্ত্রণায় কাতর হয়ে ক্রিপটকটা বেল্ট থেকে হাতে নিলো। কিন্তু সে কথা বলতেই দ্বিতীয় রোবোটিক হাতটা ছুটে এসে তার ডান হাতটা ধরে ফেললো। ক্রিপ-টকটা তার হাত থেকে পড়ে গেলো।

    তখনই ডেল্টা-টু সেই ভূতুরে অবয়বটি দেখতে পেলো। সে বুঝতে পারলো তার ছেঁড়া গুলি মোটা কাঁচটি দে করতে পারেনি। কেবল ঘোলাটে কতোগুলো বৃত্তাকারের ছোপ তৈরি হয়েছে বুলেটের আঘাতে।

    সাব-টা থেকে মাইকেল টোল্যান্ড বেড়িয়ে আসলো। টোল্যান্ড ডেকে এসে সাব-এর ডোম উইন্ডোটা দেখলো। সেটা নষ্ট হয়ে গেছে।

    “প্রতি বর্গ ইঞ্চিতে দশ হাজার পাউন্ড,” টোল্যান্ড বললো। “মনে হচ্ছে তোমার আরো বড় বন্দুকের দরকার ছিলো।”

    .

    হাইড্রোল্যাবের ভেতরে রাচেল জানে, সময় দ্রুত ফুরিয়ে যাচ্ছে। সে বাইরের ডেকে গুলির শব্দ শুনেছে, আর প্রার্থনা করেছে সব কিছু যেনো টোল্যান্ডের পরিকল্পনা মতোই হয়। সে আর এটা। নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছে না। উল্কাপিক্সে থোকাবাজির পেছনে কারা জড়িত– নাসা প্রধান, মারজোরি টেঞ্চ, অথবা প্রেসিডেন্ট নিজে– তাতে কিছুই আর এখন আসে যায় না।

    তারা কেউই পার পাবে না। যেনো হোক না কেন, সত্যটা বলা হবেই।

    রাচেল একটা কলম আর কাগজ খুঁজে নিয়ে দুই লাইনের একটা মেসেজ লিখে ফেললো। শব্দগুলা খুবই সাদামাটা আর অদ্ভুত। কিন্তু এই মুহূর্তে অলংকারিক শব্দ তৈরি করার মতো শৌখিনতা দেখানর কোনো ইচ্ছে তার নেই। এই নোটটার সাথে সে তার হাতে থাকা কাগজপত্র-আর প্রিন্ট আউটটাও জুড়ে দিলো। উল্কাপিণ্ডটি ভূয়া, এই হলো তার প্রমাণ।

    রাচেল সবগুলো কাগজ হাইড্রোল্যাবের ফ্যাক্স মেশিনে ঢুকিয়ে দিলো। তার মুখস্তে থাকা হাতে গোনা কয়েকটি ফ্যাক্স নাম্বার থেকে একটাতে বেছে নিলো। সেতমধ্যেই ঠিক করে ফেলেছে কে এটা পাবে। একটা দম নিয়ে সে ফ্যাক্স নাম্বারটা টাইপ করলো।

    বোতাম টিপে সেন্ড করে দিলো সে। মনে মনে প্রার্থনা করলো, সঠিক গ্রাহককেই যেনো বেছে নিয়েছে সে।

    ফ্যাক্স মেশিনটা বিপ করলো।

    নো ডায়াল টোন

    রাচেল এটা আশা করেছিলো। গয়ার যোগাযোগ ব্যবস্থা এখনও জ্যাম হয়ে আছে। সে অপেক্ষা করতে লাগলো। আশা করলো মেশিনটা ঠিক হয়ে যাবে।

    পাঁচ সেকেন্ড

    বিপ করলো।

    রিডায়ালিং…

    হ্যাঁ! রাচেল মেশিনটার দিকে চেয়ে আছে।

    নো ডায়াল টোন

    রিডায়ালিং

    নো ডায়াল টোন

    রিডায়ালিং…

    ফ্যাক্স মেশিনটা একটা ডায়াল টোন সার্চ করতে দিয়ে রাচেল হাইড্রোল্যাব থেকে যেই বের হলো অমনি মাথার ওপর একটা হেলিকপ্টার এসে পড়লো।

    ১১৯

    গয়া থেকে একশ ষাট মাইল দূরে, গ্যাব্রিয়েল অ্যাশ সিনেটর সেক্সটনের কম্পিউটারের পর্দায় চেয়ে আছে নিরব বিস্ময়ে। তার সন্দেহই ঠিক।

    সে কখনও কল্পনাও করেনি কতোটা ঠিক।

    সে প্রাইভেট স্পেস-কোম্পানি থেকে সেক্সটনকে দেয়া কতোগুলো চেকের স্ক্যান করা ছবির দিকে তাকিয়ে রইলো। সবচাইতে ছোট এমাউন্টটা হলো, ১৫০০০ ডলার। কতোগুলো ৫০০,০০০ ডলারেরও বেশি।

    তুচ্ছ জিনিস, সেক্সটন তাকে বলেছিলেন। সব অনুদানই ২০০০ ডলারের নিচে।

    নিশ্চিতভাবেই সেক্সটন পুরোপুরি মিথ্যে বলেছেন। গ্যাব্রিয়েল দেখছে অবৈধ ক্যাম্পেইন অর্থ, বিশাল আকারের। তার হৃদয় বিশ্বাসঘাতকতা আর তীব্র বেদনায় আচ্ছন্ন হলো। সে মিথ্যে বলেছে। তার নিজেকে বোকা মনে হলো। তার খুবই জঘন্য লাগলো। কিন্তু তার চেয়েও বেশি নিজেকে পাগল মনে হলো।

    গ্যাব্রিয়েল অন্ধকারে একা বসে রইলো, বুঝতে পারলো না এরপর সে কী করবে।

    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleডিজিটাল ফরট্রেস – ড্যান ব্রাউন
    Next Article ইনফার্নো – ড্যান ব্রাউন

    Related Articles

    ড্যান ব্রাউন

    দ্য দা ভিঞ্চি কোড – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025
    ড্যান ব্রাউন

    এঞ্জেলস এন্ড ডেমনস – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025
    ড্যান ব্রাউন

    দ্যা লস্ট সিম্বল – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025
    ড্যান ব্রাউন

    অরিজিন – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025
    ড্যান ব্রাউন

    ইনফার্নো – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025
    ড্যান ব্রাউন

    ডিজিটাল ফরট্রেস – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Demo
    Most Popular

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Our Picks

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    দ্য দা ভিঞ্চি কোড – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025

    এঞ্জেলস এন্ড ডেমনস – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    Sign In or Register

    Welcome Back!

    Login below or Register Now.

    Lost password?

    Register Now!

    Already registered? Login.

    A password will be e-mailed to you.