Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    দ্য দা ভিঞ্চি কোড – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025

    এঞ্জেলস এন্ড ডেমনস – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • 🔖
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    Subscribe
    সাইন ইন
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    ডিসেপশন পয়েন্ট – ড্যান ব্রাউন

    ড্যান ব্রাউন এক পাতা গল্প497 Mins Read0

    ০৩০. নাসা প্রধান উদ্বিগ্ন

    ৩০

    নাসা প্রধান এখন একটু কম উদ্বিগ্ন বোধ করছে, উল্কাপিণ্ডটি সফলভাবে তোলা হয়েছে বলে। সব কিছুই ঠিকঠাক মত হচ্ছে, সে নিজেকে বললো। কর্মরত মাইকেল টোল্যান্ডের কাছে গেলো সে। এখন কোনো কিছুই আর আমাদেরকে থামাতে পারবে না।

    ‘কী খবর বলেন?” এক্সট্রম জিজ্ঞেস করলো, টেলিভিশন তারকা বিজ্ঞানীর পেছনে এসে দাঁড়ালো।

    টোল্যান্ড তার কম্পিউটারের দিকে তাকালো। তাকে ক্লান্ত মনে হলেও উৎসাহী দেখাচ্ছে। “এডিটিং করা প্রায় শেষ। আপনার কর্মীদের পাথরটা তোলার ফুটেজ যোগ করছি এখন। এক্ষুণি এটা তৈরি হয়ে যাবে।”

    “ভাল।” প্রেসিডেন্ট এমকে বলেছিলেন টোল্যান্ডের প্রামান্যচিত্রটি যতো তাড়াতাড়ি সম্ভব আপলোড করে হোয়াইট হাউজে পাঠিয়ে দিতে।

    যদিও মাইকেল টোল্যান্ডকে এক্ষেত্রে প্রেসিডেন্টের ব্যবহার করাটা এক্সট্রম ভালো চোখে দেখেনি, তারপরও টোল্যান্ডের প্রামান্যচিত্রের খসড়া দেখে সে তার মত পাল্টিয়ে ফেলেছে। টিভি তারকাটি বর্ণনা দিয়ে, বিশেষজ্ঞদের সাক্ষাতকার নিয়ে, অসাধারণভাবেই এই বিষয়টাকে প্রাঞ্জলভাবে তুলে ধরতে পেরেছে। মাত্র পনেরো মিনিটেই করতে সক্ষম হয়েছে সে। টোল্যান্ড যা করতে পেরেছে, সেটা নাসাও প্রায়ই করতে ব্যর্থ হয়– একটি বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারকে আমেরিকার সাধারণ মানুষের কাছে বোধগম্য আর সহজ ভাষায় তুলে ধরা, তাদেরকে পরিষ্কার ধারণা দেয়া।

    “এডিটিং শেষ হলে,” এক্সট্রম বললো, “এটা নিয়ে প্রেস এরিয়াতে চলে আসুন। সেটার একটি ডিজিটাল কপি আপলোড করে হোয়াইট হাউজে পাঠাতে হবে।”

    “জি স্যার।” টোল্যান্ড কাজে লেগে গেলো।

    এক্সট্রম হ্যাবিস্ফেয়ারের উত্তর দিকে অবস্থিত প্রেস এরিয়ার সামনে এসে খুশি হলো। বিশাল একটা নীল রঙের কার্পেট বরফের উপর বিছানো হয়েছে। মাঝখানে একটা সিম্পোজিয়াম টেবিল পাতা, সেখানে কতগুলো মাইক্রোফোন রাখা হয়েছে। নাসার একটি প্রতীক, আমেরিকার বিশাল একটি পতাকা পেছনের পর্দা হিসেবে টাঙানো রয়েছে। উল্কাপিণ্ডটি একটা স্লেডে করে এখানে নিয়ে আসা হবে। এই টেবিলের সামনে।

    প্রেস এরিয়াতে উৎসবমুখর পরিবেশ দেখে এক্সট্রম খুশি হলো। তার কর্মীরা পাথরটার চারপাশ ঘিরে গোল হয়ে দেখছে, আর একে অন্যের সাথে কথা বলছে।

    এক্সট্রম ঠিক করলো এটাই সে মুহূর্ত। সে কতগুলো কার্ডবোর্ডের বাক্সের সামনে গিয়ে বসলো। বাক্সগুলো আজ সকালে গৃনল্যান্ড থেকে আনা হয়েছে।

    “এসো পান করি!” সে চিৎকার করে বললো। নিজের কর্মীদের দিকে বিয়ারের ক্যান ছুঁড়ে মারলো।

    “হেই, বস্!” কেউ তাকে বললো। ধন্যবাদ! এই ঠাণ্ডার মধ্যেও!”

    এক্সট্রম বিরল একটা হাসি দিলো, “এগুলো আমি বরফের মধ্যেই রেখে দিয়েছিলাম।”

    সবাই হেসে উঠলো।

    “একটু দাঁড়ান!” বিয়ারের ক্যানের দিকে ইঙ্গিত করে আরেকজন বললো, “এটাতো কানাডার! আপনার দেশপ্রেম গেলো কোথায়?”

    “আমরা বাজেট সংকটে ভুগছি, হে। সস্তাটাই খুঁজে নিতে হয়েছে।”

    আরো হাসি কোনো গেলো।

    “আরে রাখা, রাখো,” নাসার এক টিভি ক্রু বললো একটা মেগাফোন দিয়ে।

    “আমরা মিডিয়া লাইটিং-এর সুইচ টিপতে যাচ্ছি। সবাইকে একটু অন্ধকারে থাকতে হবে, এই কয়েক সেকেন্ড।

    “অন্ধকারে কেউ যেনো চুমু না খায়, কেউ একজন বললো। “এটা একটি পারিবারিক অনুষ্ঠান!”

    এক্সট্রম তার কর্মীদের উফুল্লভাব দেখে তৃপ্ত হলো।

    “মিডিয়া লাইট জ্বলতে যাচ্ছে, পাঁচ, চার, তিন, দুই …

    ভেতরের হ্যালোজেন বাতিগুলো নিভে গেলে পুরো ঘরটা অন্ধকার হয়ে গেলো।

    কেউ একজন ঠাট্টাচ্ছলে আর্তচিৎকার দিলো।

    “আমার পাছায় কে খোঁচা মারলো রে?” কেউ হেসে বললো,

    অন্ধকারটা অল্পকিছুক্ষণই ছিলো। তারপরই সুতীব্র মিডিয়া স্পট লাইটটা জ্বলে উঠলে সবাই চোখ কুচকে ফেললো। উত্তর মেরুর নাসা’র হ্যাবিস্কেয়ারটা টেলিভিশন স্টুডিওতে রূপান্তরিত হয়ে গেলো। ডোমের বাকি অংশ ঘন অন্ধকারে ঢেকে গেলো।

    এক্সট্রম তৃপ্তি নিয়ে উল্কাপিণ্ডটির দিকে তাকালো। আলোকিত পাথরটার চারদিকে তার লোকজন এখনও ঘিরে রয়েছে।

    ঈশ্বর জানে তারা এটা প্রত্যাশা করেছিলো, এক্সট্রম ভাবলো, কখনও আশংকা করে নি সামনে কোনো বিপর্যয় অপেক্ষা করছে।

    ৩১

    আবহাওয়াটা বদলে যাচ্ছে।

    সামনের দ্বন্দ্বটির শোকাবহ পরিবেশের মতো কাটাবাটিক ঝড়টি গর্জন করতে করতে ডেল্টা ফোর্সের তাঁবুতে আঘাত হানলো। ডেল্টা-ওয়ান ঝড়ের হাত থেকে নিজেকে বাঁচাতে শুয়ে পড়েছিলো, এবার সে উঠে দাঁড়িয়ে ভেতরে দু’জন সঙ্গীর কাছে চলে এলো। এরকম ঘটনা তারা আগেও সামলেছে। জলদিই এটা কেটে যাবে।

    ডেল্টা-টু মাইক্রোবোট থেকে যে লাইভ ভিডিও আসছে সেটার দিকে তাকালো। “এটা একটু দেখুন,” সে বললো।

    ডেল্টা-ওয়ান এগিয়ে এলো। হাবিস্ফেয়ারের ভেতরটা একেবারে অন্ধকার হয়ে গেছে, কেবলমাত্র উত্তর প্রান্তে উজ্জ্বল আলোটা বাদে। সেটা মঞ্চটার পাশেই “এটা কিছু না, সে বললো, “তারা টেলিভিশন লাইট টেস্ট করছে, আজ রাতে সেটা সম্প্রচার করা হবে।”

    “লাইটিংটা সমস্যা নয়।” ডেল্টা-টু বরফের মাঝখানে গভীর একটা গর্তের দিকে ইঙ্গিত করলো– “উল্কাটি যেখান থেকে তোলা হয়েছে সেই জায়গাটি পানিতে ভরে গেছে। এটাই হলো সমস্যা।”

    ডেল্টা-ওয়ান গর্তটার দিকে তাকালো। সেটার চারপাশে ছোট ছোট পিলারগুলো পোতা আছে। আর গর্তটার পানি শান্তই রয়েছে। “আমি তো কিছু দেখছি না।”

    “আবার দেখুন!” সে জয়-স্টিকটা নাড়ালো। মাইক্রোবোটটা গর্তটার আরেকটু কাছে উড়ে গেলো।

    ডেল্টা-ওয়ান গর্তের গলিত পানির দিকে ভালো করে তাকাতেই সে এমন কিছু দেখতে পেলো যে আশংকায় আতকে উঠলো। “আরে এটা কি?”

    ডেল্টা-থৃ কাছে এসে দেখলো।

    সেও দেখে অবাক হয়ে গেলো। “হায় ঈশ্বর। এখান থেকেই কি ওটা তোলা হয়েছে?” পানির জন্যই কি এমনটি হচ্ছে?”

    “না,” ডেল্টা-ওয়ান বললো। “একেরে নির্ঘাৎ এটা।”

    ৩২

    যদিও রাচেল সেক্সটন ওয়াশিংটন ডিসি থেকে ৩০০০ মাইল দূরে একটা লোহার বাক্সের ভেতরে বসে আছে, তারপরও সে ঠিক সেই রকম চাপ অনুভব করলো, যে রকমটি হোয়াইট হাউজে ডেকে পাঠালে তার হয়ে থাকে। তার সামনে ভিডিও ফোনের মনিটরে পরিস্কার দেখা যাচ্ছে প্রেসিডেন্ট জাখ হার্নি হোয়াইট হাউজের কমিউনিকেশন রুমে বসে আছেন, প্রেসিডেন্সিয়াল সিলের সামনে। ডিজিটাল অডিও সংযোগটি একেবারে নিখুঁত, একেবারেই বোঝা যাবে না, এতো কম ‘ডিলে’ হচ্ছে যে, মনে হবে তিনি ঠিক পাশের ঘরেই রয়েছেন।

    তাদের কথাবার্তা সরাসরি হচ্ছে। প্রেসিডেন্টকে মনে হচ্ছে খুব আনন্দিত, যা মোটেও অবাক হবার মত নয়। প্রেসিডেন্ট বেশ খোশ মেজাজেই রয়েছেন।

    “আমি নিশ্চিত আপনি একমত হবেন যে,” হার্নি বললেন, “তার কণ্ঠটা এবার খুব গুরু গম্ভীর শোনালো, “এই আবিষ্কারটা একেবারেই বৈজ্ঞানিক একটি ব্যাপার!” তিনি থেমে একটু সামনের দিকে ঝুঁকলেন। “দুর্ভাগ্যবশত, আমরা কোনো নিখুঁত পৃথিবীতে বাস করি না। আর নাসার এই বিজয়টা আমি ঘোষণা করা মাত্রই একটি রাজনৈতিক খেলায় পরিণত হয়ে যাবে।”

    “এ পর্যন্ত প্রাপ্ত প্রমাণ আর আপনাদের বক্তব্য বিবেচনায় নিলে, আমি কল্পনাও করতে পারি না জনগণ অথবা আপনাদের কোনো প্রতিপক্ষ এটাকে অস্বীকার করবে। তারা নিশ্চিতভাবে অকাট্য প্রমাণটাকে মেনে নেবে।”

    হার্নি একটু দুঃখ করেই যেনো বললেন, “আমার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ যা তারা দেখবে সেটাই বিশ্বাস করবে, রাচেল। আমার ভাবনার বিষয়টা হলো, তারা যা দেখতে পাবে সেটা পছন্দ করবে না।”

    রাচেল খেয়াল করলো কতো সতর্কভাবেই না প্রেসিডেন্ট তার বাবার নামটা উল্লেখ করলেন না। তিনি কেবল প্রতিপক্ষ বা রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ’ শব্দটি ব্যবহার করেছেন। “আপনি কি মনে করছেন, আপনার প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক কারণে ষড়যন্ত্র বলে শোরগোল করবেন?” রাচেল জিজ্ঞেস করলো।

    “এটাই হলো এই খেলার ধরণ। কেউ হয়তো মৃদুস্বরে বলতে পারে এটা নাসা এবং হোয়াইট হাউজের জালিয়াতি। এটা হলে আমি সঙ্গে সঙ্গে একটা তদন্তের মুখোমুখি হব। পত্রিকাগুলো ভুলে যাবে যে, নাসা অপার্থিবজীব আবিষ্কারের প্রমাণ পেয়েছে, মিডিয়া একটা ষড়যন্ত্র খোঁজার চেষ্টা করবে। দুঃখজনক হলেও সত্য, এতে করে বিজ্ঞানেরই বেশি ক্ষতি হবে। ক্ষতি হবে হোয়াইট হাউজ আর নাসারও এবং ঠিক করে বলতে গেলে এই দেশের।”

    “যার জন্যে আপনি পুরোপুরি নিশ্চিত না হয়ে ঘোষণা দিতে চাচ্ছেন না।”

    “আমার উদ্দেশ্য হলো এমন সব তথ্য-উপাত্ত নিয়ে হাজিরা হওয়া যাতে কোনো বাতিকগ্রস্ত লোক কিংবা উন্নাসিক কেউ বিন্দুমাত্র এই আবিষ্কারের উপর সন্দেহের ছায়া ফেলতে না পারে। আর নাসা যাতে পুরোপুরি সম্মানের সাথে এই মূহুর্তটা উদযাপন করতে পারে।”

    রাচেলের স্বজ্ঞা এবার হোঁচট খেলো। তাহলে তিনি আমার কাছে চাচ্ছেটা কি?

    “অবশ্যই,” তিনি আবার বলতে শুরু করলেন, “আপনি আমাকে সাহায্য করার জন্য অনন্য একটি অবস্থানে আছেন। আপনার ডাটা বিশ্লেষণের অভিজ্ঞতা এবং আমার প্রতিপক্ষের সাথে আপনার সম্পর্ক এই আবিষ্কারটাকে অভাবিত বিশ্বাসযোগ্যতা এনে দিতে পারবে।”

    রাচেলের এবার মোহগ্রস্ততা কাটলো। তিনি আমাকে ব্যবহার করতে চাচ্ছেন… ঠিক যেমনটি পিকারিং বলেছিলেন।

    “তো আমি চাই,” হার্নি বললেন, “আপনি এই আবিষ্কারটা হোয়াইট হাউজের ইন্টেলিজেন্স লিয়াজো…এবং আমার প্রতিপক্ষের কন্যা হিসেবে সমর্থন করেন।”

    এটাই তাহলে আল কথা।

    হার্নি চাচ্ছেন আমি এটা সমর্থন কর।

    রাচেল আসলে ভেবেছিল জাখ হার্নি এ ধরণের খেলা খেলবার মানুষ নন। জনসম্মুখে উল্কাপিণ্ডটিকে সমর্থন করলে তার বাবার জন্য তা হবে একটি বাজে ব্যাপার। সিনেটর আর নাসা’র বাজেট নিয়ে ইসু তৈরি করতে পারবেন না। কারণ নিজের মেয়ের বিশ্বাস যোগ্যতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করার মানে হবে পরিবারই সবার আগে এই বুলি আওড়ানো প্রার্থীর জন্য মৃত্যুদণ্ডের শামিল।

    “সত্রি বলতে কী, স্যার?” রাচেল মনিটরের দিকে তাকিয়ে বললো, “আপনি আমাকে এটা করতে বলছেন দেখে আমি খুবই বিস্মিত হয়েছি।”

    প্রেসিডেন্ট ভুরু কুকালেন, “আমার ধারণা ছিল আপনি আমাকে সাহায্য করার জন্য খুবই রোমাঞ্চিত হয়ে থাকবেন।”

    “রোমাঞ্চিত? স্যার, এই অনুরোধটা আমাকে একটা অসম্ভব অবস্থানে নিয়ে যাবে। আমার বাবার সাথে আমার অনেক সমস্যা রয়েছে, নুতন করে এটা বাড়ানোর কোনো ইচ্ছে আমার নেই। এই লোকটাকে আমি অপছন্দ করলেও, মানতেই হবে তিনি আমার বাবা হন। জনসম্মুখে তার বিরুদ্ধে যাওয়া, আপনার পক্ষ হয়ে, এটা ঠিক হবে না।”

    “রাখেন, রাখেন!” হার্নি দু’হাত তুলে আত্মসমর্পণের ভঙ্গী করে বললেন, “কে বলেছে আপনাকে জনসম্মুখে এটা করতে হবে?”

    রাচেল একটু চুপ রইলো। “আমার ধারণা আপনি চাচ্ছেন আজ রাত আটটা বাজে যে প্রেস কনফারেন্স হবে সেখানে নাসা প্রধানের সাথে এক মঞ্চে উপস্থিত থাকি।”

    হানি মাথা দোলালেন, তাঁর আক্ষেপের শব্দটা কোনো গেলো। “রাচেল, আপনি আমাকে কী ধরণের মানুষ ভাবেন? আপনি আসলেই ভেবেছেন আমি কাউকে বলবো তার নিজের বাবাকে জাতীয় প্রচার মাধ্যমের সামনে পিঠে ছুরি মারার জন্য?”

    “কিন্তু আপনি বলেছিলেন– “

    “আর আপনি কি মনে করেন, আমি নাসার প্রধানকে তাদের সবচাইতে বড় শত্রুর মেয়ের সঙ্গে এক মঞ্চে দাঁড়িয়ে অংশ নিতে বলবো? আপনাকে বলে রাখছি, রাচেল, এই সাংবাদিক সম্মেলনটা বিশুদ্ধ বৈজ্ঞানিক উপস্থাপনা হিসেবেই অনুষ্ঠি হবে। আমি নিশ্চিত নই, উল্কা, ফসিল আর বরফ সম্পর্কে আপনার যে জ্ঞান রয়েছে, সেটা দিয়ে এই ঘটনাটার বিশ্বাসযোগ্যতা বাড়ানো যাবে কিনা।”

    রাচেলের একটু বিব্রত বোধ হলো। “তাহলে আমার কাছ থেকে … কী ধরণের সমর্থন আপনি চাচ্ছেন?”

    “আপনার ঠিক যে অবস্থান রয়েছে সেটাই আরেকবার চাই।”

    “স্যার?”

    “আপনি হলেন আমার হোয়াইট হাউজ ইন্টেলিজেন্স লিয়াজো। আপনি আমার স্টাফদের কাছে এটার জাতীয় গুরুত্বটা তুলে ধরবেন।”

    “আপনি আপনার স্টাফদের জন্য চাচ্ছেন?”

    রাচেলের ভুল বোঝাবুঝির জন্য হার্নি এখনও মজা পাচ্ছে। হ্যাঁ, আমি তাই চাচ্ছি। হোয়াইট হাউজের বাইরে যে অবিশ্বাসের শিকার আমি হচ্ছি, তার সাথে ভেতরের অবিশ্বাসের কোনো তুলনাই হয় না। আমরা এখানে প্রায় বিদ্রোহের মুখোমুখি। এখানে আমার বিশ্বাসযোগ্যতা প্রশ্নবিদ্ধ। আমার স্টাফরাও আমার কাছে নাসার বাজেট কমানোর অনুরোধ জানিয়েছে। আমি তাদের কথাটা আমলেই নেইনি। আর এটা আমার জন্য রাজনৈতিক আত্মহত্যা হিসেবেই দেখা দিয়েছে।”

    “আজকের দিনের আগ পর্যন্ত।”

    “একদম ঠিক। যেমনটি আমরা আজ সকালে আলোচনা করেছি, আমার রাজনৈতিক বাতিকগ্রস্তরা, আর মনে রাখবেন আমার স্টাফদের চেয়ে বেশি বাতিগ্রস্ত আর কেউ না, তারা এটাকে সন্দেহের চোখে দেখবে। এজন্যেই, আমি চাই, তারা এটা প্রথমে শুনুক- “

    “আপনি আপনার স্টাফদেরকে এখনও এটার ব্যাপারে কিছু বলেননি?”

    “কেবলমাত্র হাতে গোনা শীর্ষ উপদেষ্টাদের কয়েকজনই জানে। এই আবিষ্কারটা গোপন রাখাই সবচাইতে বেশি প্রাধান্য দেয়া হয়েছে।”

    রাচেল বিস্মিত হলো। তিনি যে বিদ্রোহের মুখোমুখি তাতে অবাক হবার কিছু নেই।

    “কিন্তু এটাতো আমার কাজ নয়।উল্কা সম্পর্কিত বিষয়টা তো ইন্টেলিজেন্সের মধ্যে পড়ে না।”

    প্রচলিত নিয়মে তাই, কিন্তু নিয়মিত যে কাজ আপনি করেন, তার মধ্যে নিশ্চয় পড়ে শত সহস্র উপাত্ত থেকে মূল বিষয়টা বের করে আনা।”

    “আমি কোনো উল্কা বিশেষজ্ঞ নই, স্যার। আপনার স্টাফদের বৃফ করার দায়িত্বটা কি নাসার প্রধানের নয়?”

    “আপনি কি ঠাট্টা করছেন? এখানকার সবাই তাকে ঘৃনা করে। আমার স্টাফদের কাছে সে হলো সাপের তেল বিক্রিকারী, যে একের পর এক আমাকে বাজে বিষয়ে প্রলুব্ধ করে যাচ্ছে।”

    রাচেল উপায় না দেখে বললো, “কর্কি মারলিনসন হলে কেমন হয়? এ্যাসট্রোফিজিক্সে জাতীয়পদক পাওয়া? আমার চেয়ে তার বিশ্বাসযোগ্যতা অনেক বেশি হবে।”

    “আমার স্টাফরা রাজনীতিকদের সৃষ্টি, বৈজ্ঞানিকদের নয়। আপনি ডক্টর মারলিনসনের সাথে পরিচিত হয়েছেন। তাকে আমার স্টাফদের বোঝানোর দায়িত্ব দেয়া যায় না। আমার দরকার এমন কাউকে যার মুখটা স্টাফদের কাছে পরিচিত। আপনি হলেন তেমন একজন রাচেল। আমার স্টাফরা আপনার কাজের সাথে পরিচিত। আর আপনার পারিবারিক নামের কারণে বুঝতে পারবে আপনি অবশ্যই পক্ষপাতহীন। আমার স্টাফরা এরকম একজনের কাছ থেকেই কথাটা শুনতে পছন্দ করবে, মানে পক্ষপাতহীন একজনের কাছ থেকে।”

    “নিদেনপক্ষে, আপনি তবে মানছেন যে, আপনার প্রতিপক্ষের মেয়ে আপনার অনুরোধে কিছু করবে।”

    রাচেল, আপনার বৃফ করার যোগ্যতা রয়েছে, এক্ষেত্রে আপনি বেশ মোগ্যই বলা চলে, আবার আপনি একই সাথে বর্তমান হোয়াইট হাউজের প্রতিপক্ষের মেয়ে, যে পরের টার্মের জন্য আমাদেরকে উৎখাত করতে উঠে পড়ে লেগেছে। তাই তাঁর কন্যার তরফ থেকে বৃফটা আসলে বেশি বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জন করবে। এদিক থেকে আপনার দুটো দিকেই বিশ্বাসযোগ্যতা রয়েছে।”

    “আপনার আসলে বেচা-বিক্রির ধান্দায় যাওয়া উচিত ছিলো।”

    “সত্যি বলতে কী, আমি তা-ই করি। যেমনটি আপনার বাবাও করেন। প্রেসিডেন্ট চশমাটা খুলে ফেলে রাচেলের দিকে তাকালেন। তার মনে হলো তার মধ্যে তার বাবার শক্তি রয়েছে। “আমি আপনার সহযোগিতা চাচ্ছি, রাচেল, আর সেটার আরেকটা কারণ, আমি বিশ্বাস করি এটা আপনার দায়িত্বের মধ্যেই পড়ে। তো বলুন, হ্যাঁ অথবা না? এই বিষয়ে আপনি কি আমার স্টাফদের বৃফ করবেন?”

    রাচেলের মনে হলো সে বাক্সটার মধ্যে ফাঁদে আটকা পড়ে গেছে। এমন কি ৩০০০ মাইল দূরে হলেও রাচেল প্রেসিডেন্টের শক্তিটা আঁচ করতে পারলো ভিডিও পর্দায়। সে আরো জানে এটা খুবই যুক্তিসংগত একটি অনুরোধ। সে এটা পছন্দ করুক বা নাই করুক।

    “আমার একটা শর্ত থাকবে,” রাচেল বললো।

    হার্নি ভুরু তুললেন। “বলুন?”

    “আমি আপনার স্টাফদের সাথে একান্তে কথা বলবো। কোনো রিপোর্টার থাকবে না। এটা একান্ত বৃফিহবে, জনসম্মুখে নয়।”

    “আমি আপনাকে কথা দিচ্ছি। আপনার মিটিংটা ইতিমধ্যেই খুব একান্তে হয়েছে, গোপন স্থানে।”

    রাচেল দীর্ঘশ্বাস ফেললো। “তাহলে ঠিক আছে।”

    প্রেসিডেন্ট স্থির চোখে তাকিয়ে রইলেন। “চমৎকার।”

    রাচেল তার ঘড়িটা দেখলো। অবাক হয়ে গেলো চারটা বেজে গেছে ইতিমধ্যে। “দাঁড়ান।” সে হতভম্ব হয়ে বললো। “আপনি যদি আটটা বাজে লাইভ করেন, তবে তো আমাদের হাতে সময় নেই। এখান থেকে আপনি কোনোভাবেই আমাকে এতো দ্রুত হোয়াইট হাউজে নিয়ে যেতে পারবেন না। আমাকে কিছু প্রস্তুতি নিতে হবে বৃফের–”।

    প্রেসিডেন্ট মাথা নাড়লেন। “আমার মনে হয়, আমি আপনাকে ঠিকমত বোঝাতে পারিনি। আপনি এখান থেকেই ভিডিও ফোনের মাধ্যমে বৃফ করবেন।”

    “ওহ্।” রাচেল ইতস্তত করলো। কয়টা বাজে, সর?”।

    “আসলে, দাঁত বের করে হাসি দিয়ে হানি বললেন, ঠিক এখন হলে কেমন হয়? সবাই ইতিমধ্যেই জড়ো হয়েছে, তারা বিশাল টিভি পর্দার দিকে তাকিয়ে আছে। তারা আপনার জন্য অপেক্ষা করছে রাচেল।

    রাচেলের শরীর আড়ষ্ট হয়ে গেলো। “স্যার আমি একেবারে অপ্রস্তুত। আমি কিভাবে—”

    “শুধু তাদেরকে সত্যিটা বলে দিন। সেটা কি কঠিন হবে?”

    “কিন্তু–”

    “রাচেল, পর্দার সামনে ঝুঁকে প্রেসিডেন্ট বললেন। “মনে রাখবেন, আপনি লাইভ করছেন। শুধু বলে দিন, আপনার ওখানে কী হয়েছে। তিনি একটা সুইচ দিতে গিয়ে থেমে গেলেন। “আর আমার মনে হয়, আপনি একটি ক্ষমতার অবস্থানে নিজেকে দেখতে পেয়ে খুশিই হবেন।”

    রাচেল বুঝতেই পারলো না তিনি কি বলতে চাচ্ছেন। কিন্তু সেটা জিজ্ঞেস করার জন্য দেরিই হয়ে গেছে। প্রেসিডেন্ট সুইচ টিপে দিয়েছেন।

    রাচেলের সামনের পর্দাটা কালো হয়ে গেলো কিছুক্ষণের জন্য। যখন ছবিটা ভেসে উঠল রাচেল তাকিয়ে দেখলো, এরকম দৃশ্য সে জীবনে কখনও দেখেনি। তার সামনে হোয়াইট হাউজের ওভাল অফিসটা। সেটা লোকে লোকারণ্য। সবাই দাঁড়িয়ে আছে। হোয়াইট হাউজের সমস্ত স্টাফই সেখানে রয়েছে। সবাই রাচেলের দিকে তাকিয়ে আছে। রাচেল বুঝতে পারলো তার ভিউটা প্রেসিডেন্টের ডেস্কের ঠিক ওপরে।

    রাচেল ঘামতে শুরু করলো।

    “মিস সেক্সটন?” ফ্যাসফ্যাসে কণ্ঠে বললো কেউ।

    রাচেল খুঁজতে লাগলো জনসমুদ্রের মধ্যে, কে তাকে ডাকছে। সামনের দিকে একটা চেয়ারে বসে আছে একজন শুকনো মহিলা। মারজোরি টেঞ্চ। মহিলার উপস্থিতি এড়িয়ে যাওয়া যায় না এমন ভীড়ের মধ্যেও।

    “ধন্যবাদ, আমাদের সাথে থাকার জন্য, মিস সেক্সটন,” মারজোরি টেঞ্চ বললেন। তার কণ্ঠটা শুনে মনে হলো মজা পাচ্ছে। “প্রেসিডেন্ট আমাদেরকে বলেছেন যে, আপনার কাছে একটা খবর রয়েছে?”

    ৩৩

    নীরবতা উপভোগ করার জন্য পেলিওন্টোলজিস্ট ওয়েলি মিং তার নিজের কাজের এলাকায় চুপচাপ বসে আছে। খুব জলদি আমি হবো এ পৃথিবীর সবচাইতে বিখ্যাত পেলিওন্টোলজিস্ট। সে আশা করলো মাইকেল টোল্যান্ড প্রামান্যচিত্রে তার মন্তব্যটি রাখবে।

    মিং যখন তার আসন্ন খ্যাতির কথা ভাবছিল তখন তার পায়ের নিচের বরফ একটু কেঁপে উঠলো যেনো। সে লাফ দিয়ে দাঁড়িয়ে গেলো। লস এ্যাঞ্জেলেস-এ থাকার সময় ভূমিকম্পের ব্যাপারে তার ইন্দ্রিয় খুব বেশি সতর্ক হয়ে গেছে। একটু মাটি কেঁপে উঠলেই সে টের পেয়ে যায়। এই মুহূর্তে মিং ভাবলো এরকম ভাবার কোনো দরকার নেই, কারণ এটা স্বাভাবিক। বরফ ধসছে বা গলে পড়ছে। সে হাফ ছাড়লো। সে এসবে এখনও অভ্যস্ত হয়ে ওঠেনি। কয়েক ঘণ্টা পরপরই, কোথাও না কোথাও হিমবাহের বিরাট বিরাট অংশ ধসে পড়ে যায়। সমুদ্রে, আর সেটার কম্পন অনুভূত হয়। নোরা ম্যাঙ্গোর এটাকে খুব সুন্দরভাবে বলে থাকে। নতুন হিমশৈলের জন্ম হচ্ছে…

    এবার দাঁড়িয়ে সে হ্যাবিস্কেয়ারের অন্য প্রান্তে স্পট লাইটটা দেখতে পেলো, সেখানে উৎসবের আমেজ লেগে আছে। মিং পার্টি-ফার্টি খুব একটা পছন্দ করে না, তাই অন্য প্রান্তে চলে এসেছে।

    কাজের এলাকাটা, গোলকধাঁধার মতো, এখন এটাকে ভূতুরে শহরের মতো মনে হচ্ছে। মিং এর একটু ঠাণ্ডা অনুভূত হলে সে তার লম্বা উটের লোমে তৈরি কোটটার বোতাম লাগিয়ে নিলো।

    সামনে উল্কা উত্তোলনের গর্তটির দিকে তাকালো– এখান থেকেই মানবেতিহাসের সবচাইতে অভূতপূর্ব ফসিল তোলা হয়েছে। বিরাট তিন পা-ওয়ালা স্থাপনাটি ওখান থেকে সরিয়ে ফেলা হয়েছে। জায়গাটা এখন ফাঁকা। ছোট ছোট পিলারগুলোই কেবল চারপাশে পোঁতা রয়েছে। মিং গর্তটার দিকে গেলো। নিরাপদ দূরত্বে দাঁড়াল সেটা থেকে। ২০০ ফুট গভীর গর্তটার দিকে তাকালো সে। খুব শীঘ্রই এটা বরফে জমে যাবে, আর বোঝাই যাবে না যে, এখানে কোনো গর্ত ছিলো।

    গর্তের পানিটা দেখতে খুব সুন্দর। মিংয়ের মনে হলো। এমনকি এই অন্ধকারেও।

    বিশেষ করে অন্ধকারে।

    মিং যখন ভাবছিলো তখনই এটা তার নজরে এলো।

    ডাল মে কুচ কালা হয়।

    মিং খুব কাছে গিয়ে গর্তটার দিকে তাকিয়ে ধন্দে পড়ে গেলো। সে চোখ ঘষে আবার। দেখলো। তারপর দ্রুত হ্যাবিস্কেয়ারের অন্য প্রান্তে তাকালো পঞ্চাশ ফুট দূরে একদল লোক প্রেস এরিয়াতে জড়ো হয়েছে উৎসবের আমেজে। সে জানে ওখান থেকে তারা এই অন্ধকারে মিংকে দেখতে পারবে না।

    কাউকে এ ব্যাপারে বলতেই হবে, তাই নয় কি?

    মিং আবারো পানির দিকে তাকালো, অবাক হয়ে ভাবলো কী বলবে সে। তার কি দৃষ্টি বিভ্রম হয়েছে? এক ধরণের অদ্ভুত প্রতিফলন?

    অনিশ্চয়তায়, মিং গর্তটার খুব কাছে চলে গিয়ে ভালো করে খেয়াল করলো। বরফের স্তর থেকে পানির স্তরটা চার ফুট নিচুতে। হাটু গেড়ে সে আরো ভালো করে দেখতে চাইলো। হ্যাঁ, খুব অদ্ভুত কিছুই দেখতে পেলো সে। এটা ধরতে না পারাটা অসম্ভব। তারপরও, হ্যাবিস্ফেয়ারের সব বাতি বন্ধ হবার আগ পর্যন্ত এটা চোখেই পড়েনি।

    মিং উঠে দাঁড়ালো। কাউকে অবশ্যই এটা বলা দরকার। সে প্রেস এরিয়ার দিকে কয়েক পা এগোতেই থেমে গেলো। হায় ইশ্বর! সে আবার গর্তটার কাছে ফিরে গেলো। তার চোখ দুটো কিছু বুঝতে পেরে বড় হয়ে গেলো। এইমাত্র তার মনে এটা উদয় হয়েছে।

    “অসম্ভব।” সে প্রায় জোড়েই বললো।

    তারপরও, মিং জানে এটাই এই ঘটনার একমাত্র ব্যাখ্যা। সাবধানে ভাবো, সে সতর্ক হয়ে উঠলো। আরো যুক্তিপূর্ণ কারণও এখানে আছে! সে বিশ্বাসই করতে পারছে না, নাসা। এবং কর্কি মারলিনসের চোখে এটা ধরা পড়েনি, অবিশ্বাস্য ব্যাপার। মিং অবশ্য অভিযোগ করছে না।

    এটা এখন ওয়েলি মিংয়ের আবিষ্কার।

    উত্তেজনায় কাঁপতে কাঁপতে মিং আশপাশ থেকে একটা চোঙা নিয়ে আসলো। তার দরকার পানির নমুনা সংগ্রহ করার। কেউ এটা বিশ্বাসই করবে না!

    ৩৪

    “হোয়াইট হাউজের ইন্টেলিজেন্স লিয়াজো হিসেবে,” তার সামনে পর্দায় দেখা লোকদের উদ্দেশ্যে রাচেল সেক্সটন বললো। বলার সময় তার কণ্ঠটা যাতে না কাপে সেই চেষ্টা করলো সে। “আমার দায়িত্ব হলো বিশ্বের রাজনৈতিক হট-স্পটগুলো ভ্রমন করে, বিদ্যমান পরিস্থিতির ডাটা বিশ্লেষণ করে প্রেসিডেন্টকে এবং হোয়াইট হাউজের স্টাফদেরকে জানিয়ে দেয়া।”

    তার কপালে হাল্কা ঘাম দেখা দিলে রাচেল হাত দিয়ে সেটা মুছে নিলো। আর মনে মনে প্রেসিডেন্টকে শূন্য ডিগ্রি তাপমাত্রায় একটা প্রেস বৃফিং চাপিয়ে দেবার জন্য অভিসম্পাত দিলো।

    “আমি এর আগে এরকম অভূতপূর্ব ভ্রমণ করিনি, এরকম অভূতপূর্ব জায়গাতে।” রাচেল তার চার পাশটা একটু তাকিয়ে দেখলো। “বিশ্বাস করুন অথবা নাই করুন, আমি আমাদের সাথে কথা বলছি আর্কটিক সার্কেল থেকে, এক বিশাল বরফের টুকরোর উপর থেকে, যার পুরুত্ব তিন শত ফুটেরও বেশি।

    রাচেল টের পেলো তার সামনে বসে থাকা মুখগুলোতে বিস্ময় জ্ঞ করেছে। তারা অবশ্যই জানে ওভাল অফিসে তাদেরকে এনে জড়ো করার একটা কারণ রয়েছে। কিন্তু তাদের কেউই কল্পনা করতে পারেনি সেটা এই আর্কটিক সার্কেলের কোনো খবর হবে।

    তার ঘামটা আবারো দেখা দিলো। সব কিছু গুছিয়ে নাও রাচেল। এটাই তোমাকে করতে হবে। “আজ রাতে আমি আপনাদের সামনে বসেছি অসামান্য একটা বিষয় নিয়ে, গর্ব এবং … তারচেয়ে ও বড় কথা, উত্তেজনায়।”

    অপলকদৃষ্টি সবার।

    রাচেল একটু বিরক্ত হয়ে ঘামটা আবারো মুছে নিলো। রাচেল জানে তার মা এখানে থাকলে কী বলতেন: সন্দেহ হলে, সেটা থুথুর সাথে ফেলে দাও! পুরনে ইয়াংকি প্রবাদটি ছিলো তার মা’র মৌলিক বিশ্বাসেরই একটি অংশ– সব চ্যালেঞ্জই সত্য বলার মধ্য দিয়ে মোকাবেলা করা, সেটা যেভাবেই আসুক না কেন।

    গভীর একটা দম নিয়ে, রাচেল সোজা হয়ে বসলো, সরাসরি ক্যামেরার দিকে তাকালো। “দুঃখিত, আপনারা হয়তো অবাক হচ্ছেন, আমি এই আর্কটিকে বসে কী করে ঘামছি … সত্যি বলতে কী, আমি আসলে নার্ভাস।”

    তার সামনের চেহারাগুলো নড়েচড়ে বসলো। কেউ কেউ অস্বস্তির হাসি হাসলো।

    “আরেকটা কথা, রাচেল বললো, “আপনাদের বস্ আমাকে মাত্র দশ সেকেন্ড সময় দিয়েছেন এটা বলার আগে যে, আমাকে তার পুরো স্টাফদের মুখোমুখি কথাটা বলতে হবে। ওভাল অফিসে যেদিন আমি প্রথম এসেছিলাম সেদিন এরকম কিছু ভাবিনি, জানলে আমি এখানে কাজই করতাম না।”

    এবার অনেকেই হেসে ফেললো।

    “আর আমি,” সে একটু নিচের দিকে তাকিয়ে বললো, “কল্পনাও করতে পারিনি প্রেসিডেন্টের ডেস্কে বসেই এটা বলবো …”

    এই কথাটাতে অনেকেই প্রাণখুলে হাসলো। রাচেলের মনে হলো তার আড়ষ্টতা কাটতে শুরু করেছে। সরাসরি এবার তাদের কাছে বলে ফেলে।

    “এখন আসল কথায় আসা যাক, রাচেলের কণ্ঠটা এবার খুব পরিষ্কার আর জড়তামুক্ত বলে মনে হলো। “প্রেসিডেন্ট হার্নি কয়েক সপ্তাহ ধরেই পর্দার অন্তরালে চলে গিয়েছিলেন এজন্যে নয় যে, তার নির্বাচনী প্রচারণা কাজে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছেন, তার আসল কারণ, তিনি অন্য একটি ব্যাপারে ব্যস্ত হয়ে পড়েছিলেন, যেটাকে তিনি অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেছেন।

    রাচেল একটু থামলো শ্রোতা-দর্শকদের প্রতিক্রিয়া খেয়াল করার জন্য।

    “এই আর্কটিকের উপরে, মিলনে আইস শেলফ নামক জায়গায় একটি বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার হয়েছে। প্রেসিডেন্ট সেটা আজ রাত আটটার সাংবাদিক সম্মেলনে ঘোষণা দেবেন। এই আবিষ্কারটা করেছে একদল পরিশ্রমী আমেরিকান, যাদের জন্য কিছুদিন ধরেই খুব খারাপ যাচ্ছিলো। আমি নাসার কথা বলছি। আপনারা এটা জেনে গর্বিত বোধ করবেন যে, আপনাদের প্রেসিডেন্ট এম বিপদেও নাসার পাশে ছিলেন। এখন, মনে হচ্ছে, তার এই কাজের পুরস্কারও তিনি পেতে যাচ্ছেন।

    রাচেল যে কতবড় ঐতিহাসিক মুহূর্তের কথা বলছে সেটা টের পেতেই তার গলা আঁটকে এলো।

    “ডাটা বিশ্লেষণকারী একজন ইন্টেলিজেন্স অফিসার হিসেবে প্রেসিডেন্ট যে কয়জন সিভিলিয়ানকে এখানে পাঠিয়েছেন তার মধ্যে আমিও রয়েছি। আমাকে নাসার তথ্য উপাত্ত খতিয়ে দেখার জন্যে এখানে পাঠানো হয়েছে। আমি ব্যক্তিগতভাবে এটা পরীক্ষা করে দেখেছি, আমার সাথে কয়েকজন বিশেষজ্ঞও সেটা নিশ্চিত করেছেসরকারী এবং বেসরকারী দু’তরফেই– এমন সব লোকজন যাদের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে কোনো সন্দেহ করা যায় না। যাদের কোনো রাজনৈতিক প্রভাবও নেই। এটা আমার ব্যক্তিগত মতামত যে, আমি যে কথাটা। আপনাদেরকে বলব সেটা একেবারে সত্য আর উৎসের দিক থেকে পক্ষপাতহীন।”

    রাচেল চেয়ে দেখলো তার সামনের লোকজন হতভ হয়ে নিজেদের মধ্যে মুখ চাওয়া চাওয়ি করছে।

    “লেডিস এ্যান্ড জেটেলমেন, আপনারা এখন যা নবেন, আমি নিশ্চিত এটা হবে সবচাইতে রোমাঞ্চকর তথ্য যা আপনারা এই অফিসে বসে এর আগে কখনই শোনেননি।”

    ৩৫

    হ্যাবিকেয়ারের মধ্যে শূন্যে ভেসে বেড়ানো মাইক্রোবোটটা যে ভিডিও সম্প্রচার করছে সেটা দেখলে মনে হবে আজ গার্দে ছবি প্রতিযোগীতায় সেটা জয়লাভ করেছে– মৃদু আলো, পাথর উত্তোলনের আলোকিত গর্তটা এবং পরিপাটি পোশাক পরা এক এশিয়ান বরফের ওপর শুয়ে আছে, তার লোমশ কেটিটা ডানার মতো ছড়িয়ে রয়েছে। সে গর্তটা থেকে পানির নমুনা নেবার চেষ্টা করছে।

    “তাকে এক্ষুণি থামাতে হবে,” ডেল্টা-থৃ বললো।

    ডেল্টা-ওয়ান একমত হলো। মিলনে আইস শেলফের ওখানে একটা সিক্রেষ্ট আছে তার দলকে সেটা রক্ষা করার জন্য ক্ষমতা দেয়া হয়েছে।

    “তাকে থামাবো কিভাবে?” ডেল্টা-টু বললো। তার হাতে জয়-স্টিকটা ধরা আছে।

    “এইসব মাইক্রোবোট কোনো অস্ত্রসজ্জিত করা নেই।”

    ডেল্টা ওয়ান চিন্তিত হলো। যে মাইক্রোবোটটা বর্তমানে কাজ করছে সেটা কেবলমাত্র দীর্ঘ সময় ধরে ওড়া এবং অডিও-ভিডিও সম্প্রচারের জন্যই তৈরি করা হয়েছে। এটা বাড়ি ঘরের মশা মাছিদের মতই সাংঘাতিক কিছু এর বেশি না।

    “কন্ট্রোলারকে আমাদের জানানো উচিত, ডেল্টা-থৃ মত দিলো।

    ডেল্টা-ওয়ান ভিডিওটার দিকে তাকিয়ে রইলো। ওয়েলি মিং গর্তটার দিকে তাকিয়ে আছে। তার ধারে কাছে কেউ নেই আর ঠাণ্ডা বরফের পানিতে পড়ে গেলে চিৎকার করার মতো অবস্থাও থাকে না।গল আঁটকে যায়।

    “আমাকে নিয়ন্ত্রণ করতে দাও।”

    “আপনি করবেনটা কি?” জয়-স্টিক ধরা সৈনিকটি জানতে চাইলো।

    “যা করার জন্য আমাদেরকে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে, ডেল্টা-ওয়ান ঝটপট বলে নিয়ন্ত্রণটা নিয়ে নিলো। “উপস্থিত বুদ্ধি খাটাতে হবে।”

    ৩৬

    ওয়েলিং মিং গর্তটার ঠিক পাশেই শুয়ে পড়েছে, ডান হাত দিয়ে সে চেষ্টা করে যাচ্ছে পানির নমুনটা নিতে। তার চোখে এখন আর কোনো অস্পষ্টতা নেই। তার মুখটা পানি থেকে মাত্র। এক গজ দূরে। সবকিছুই নিখুঁতভাবে দেখতে পারছে সে।

    এটা অবিশ্বাস্য!

    মিং পাত্রটা নিয়ে চেষ্টা করে যাচ্ছে পানির নাগাল পেতে। আর কয়েক ইঞ্চি হলেই নাগাল পাবে।

    নাগাল না পেয়ে মিং তার শরীরটা গর্তের আরো কাছে নিয়ে গেলো। যতদূর সম্ভব হাতটা গর্তের ভেতরে ঢোকানোর চেষ্টা করলো। প্রায় পৌঁছেই গেলো সে। আরেকটু এগিয়ে গেলে চোঙাটাতে পানি নিতে পারলো। চোঙাটাতে পানি ভরার পর মিং সেটার দিকে অবিশ্বাসের দৃষ্টিতে তাকালো।

    তারপর, কোনো ধরণের পূর্ব সতর্কতা ছাড়াই, অবিশ্বাস্য একটি ঘটনা ঘটে গেলো। অন্ধকারের মধ্যেই যেনো একটা বন্দুক থেকে বুলেটের মতো ক্ষুদ্র ধাতব অংশ ছুটে এলো। মিং কেবল সেটাকে এক পলকই দেখতে পেলো, তারপরই সেটা তার ডান চোখে আঘাত হানলো।

    মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত প্রতিক্রিয়া, বিশেষ করে নিজের চোখকে রক্ষা করার ব্যাপারে, এতোটাই তীব্র যে, একটু নড়লেই সে পড়ে যাবে, মিংয়ের মস্তিষ্ক এটা বলা সত্ত্বেও সে তার একটা হাত দিয়ে ডান চোখটা ঢাকতেই শরীরের ভারসাম্য হারিয়ে গর্তের পানিতে পড়ে গেলো। গভীর অন্ধকার, দু’শো ফিট গভীর পানিতে।

    গর্তের মাত্র চার ফুট নিচ থেকে পানির স্তর শুরু হলেও, প্রচণ্ড ঠাণ্ডা পানিতে মিংয়ের মুখটা পড়তেই তার মনে হলো সেটা বুঝি কোনো জমিনের ওপর ঘন্টায় পঞ্চাশ মাইল বেগে আছড়ে পড়লো। পানিটা এমন ঠাণ্ডা যে সেটা তার কাছে জ্বলন্ত এসিডের মতই মনে হলো। তীব্র যন্ত্রণায় আক্রান্ত হয়ে ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে উঠলো সে।

    অন্ধকারে উল্টে পড়ে যাওয়াতে গিয়ে মিং বুঝতে পারলো না কোনো দিকটা উপরিভাগ। তার ভারি লোমশ কোটটা বরফ পানিতে ভিজে আরো বেশি ভারি হয়ে গেছে। মিং অবশেষে, নিঃশ্বাস নিতে চাইলো। মুখটা কোনোভাবে একটু পানির উপরে তুলে সে নিঃশ্বাস নিলো।

    “বাঁচা…ও,” আপ্রাণ চেষ্টা করে বললো, কিন্তু সজোরে চিৎকার দেবার মতো বুক ভ’রে বাতাস মিং নিতে পারেনি। তার মনে হলো বাতাস উধাও হয়ে গেছে।

    “বাঁ…চাও!” তার চিৎকারটা তার নিজের কাছেও খুব একটা কোনো গেলো না। মিং গর্তটার চারপাশের দেয়াল আঁকড়ে ধরে উঠতে চেষ্টা করলো। তার চারপাশের দেয়ালগুলো খাড়া এবং শক্ত বরফের। ধরার মতো কিছুই নেই, একেবারে মসৃন। পানির নিচেই সে বুট দিয়ে দেয়ালে লাথি মারলো, একটা কিছুতে পা’টা আঁটকাতে চাইলো সে। কিছুই হলো না। সে

    উপরের দিকে একটু উঠে পড়লো, কিন্তু এক ফুটের জন্য সেটা ধরা গেলো না।

    মিংয়ের পেশীগুলো আড়ষ্ট হতে শুরু করেছে। সে আরো জোরে জোরে লাথি মেরে নিজেকে উপরের দিকে তোলার চেষ্টা করলো। তার শরীর সীসার মতো ভারি হয়ে গেছে, আর তার ফুসফুস বিষাক্ত হয়ে গেছে যেনো, কোনো পাইথন তাকে পেঁচিয়ে ধরেছে। তার ভারি কোটটা আরো ভারি হয়ে যাওয়াতে তাকে নিচের দিকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে। মিং নিজেকে উপরের দিকে টেনে তোলার চেষ্টা করলেও ভারি কাপড়ের জন্য পারলো না।

    “বাঁ…চা…ও।” ভীতিটা এখন সুতীব্র হয়ে উঠলো।

    পানিতে ডুবে যাওয়া, মিং একবার পড়েছিলো, সবচাইতে ভয়ঙ্কর মৃত্যু। সে কখনও ভাবেনি এরকম অভিজ্ঞতা তার একদিন হবে। তার পেশীগুলো তার মস্তিষ্কের কথা শুনছে না। সে কেবল নিজের মাথাটা পানির উপরে তুলতে চাইছে এখন। কিন্তু ভেজা ভারি পোশকটা তাকে নিচের দিকে টেনে নিয়ে যেতে থাকলে অসাড় আঙুলগুলো চারপাশের বরফের দেয়াল খামচাতে শুরু করলো।

    তার চিৎকারটা এখন কেবল তার মাথাতেই কোনো যাচ্ছে।

    তারপরই সেটা ঘটলো।

    মিং দ্রুত নিচের দিকে ডুবে গেলো। ২০০ ফুট গভীর পানির নিচে তলিয়ে যাচ্ছে সে। অনেকগুলো ভাবনা তার চোখের সামনে ভেসে এলো। তার শৈশবের মুহূর্তগুলো। তার পেশাগত জীবন। সে ভাবলো এই নিচে কেউ তাকে খুঁজে পাবে কিনা। অথবা সে এর নিচে জমে মরে পড়ে থাকবে … হিমবাহের মধ্যে তার সমাধি হবে।

    মিংয়ের ফুসফুস বাতাস নেবার জন্য চিৎকার করলো যেনো। সে তার দম বন্ধ করে রেখেছে। কিন্তু কতক্ষণ আর এভাবে মুখ বন্ধ করে রাখা যায়। যুক্তি বুদ্ধির বাইরে গিয়েই সে বাতাস নেবার জন্য মুখ খুলে ফেললো।

    ওয়েইলি মিং নিশ্বাস নিলো।

    মিংয়ের ফুসফুসে ঠাণ্ডা পানিটা তীব্র দহন করলো যেনো। তার মনে হলো ভেতরটা আগুনে জ্বলে পুড়ে যাচ্ছে। মিং সাত সেকেন্ড ধরে ঠাণ্ডা পানি গিলে চললো। প্রতিটি নিঃশ্বাসই আগেরটার চেয়ে বেশি যন্ত্রনাদায়ক বলে মনে হলো তার কাছে।

    অবশেষে, নিচে যেতে শুরু করতেই সে জ্ঞান হারালো। এই পালানোটাকে মিং স্বাগতই জানালো। তার চার পাশে কেবল পানি দেখতে পেলো সে, তার মধ্যেই একটা ছোট্ট আলোর টুকরো দেখলো। এটা তার জীবনে দেখা সবচাইতে সুন্দর জিনিস।

    .

    ইস্ট এপয়েন্টমেন্ট গেট, বোয়াইজ হাউজের ট্রেজারি ডিপার্টমেন্ট এবং ইস্টশনের মাঝখানে ইস্ট এক্সিকিউটিভ এভিনুতে অবস্থিত। বৈরুতে মেরিনদের উপর আক্রমণের ঘটনাকে স্মরণ করে একটি স্মৃতিসৌধ রয়েছে প্রবেশ পথের সামনে। এজন্য এই জায়গাটিকে আর যাইহোক উষ্ণ আতিথেয়তার জায়গা হিসেবে মনে হয় না।

    গেটের বাইরে এসে গ্যাব্রিয়েল অ্যাশ তার হাত ঘড়িটা দেখলো। তার খুব নার্ভাস লাগছে। এখন সময় পৌনে পাঁচটা, তারপরও কাউকে দেখা যাচ্ছে না।

    ইস্ট এপয়েন্টমেন্ট গেট, ৪টা ৩০ মিনিটে, একা আসবেন।

    এইতো এসেছি আমি, সে ভাবলো। আপনি কোথায়?

    গ্যাব্রিয়েল এখন ঘোরাঘুরি করা পর্যটকদের দিকে তাকালো, কেউ কেউ তার মনোযোগ আকর্ষণ করতে চাচ্ছে। গ্যাব্রিয়েল এই ভাবতে শুরু করলো যে, এখানে আসাটা ভালো হয়েছে কিনা। সে টের পেলো সেন্ট্রিবক্সের সামনে দাঁড়ান গোয়েন্দা বিভাগের এক লোক তার উপর নজর রাখছে। গ্যাব্রিয়েলের মনে হলো তাকে আসতে বলা ব্যক্তিটি হয়তো আর আসবে না। শেষবারের মত হোয়াইট হাউজের দিকে তাকিয়ে সে ঘুরে চলে যেতে উদ্যত হলো।

    “গ্যাব্রিয়েল অ্যাশ?” পেছন থেকে গোয়েন্দা লোকটি তাকে ডাক দিলো।

    গ্যাব্রিয়েল ঘুরে দাঁড়ালো।

    লোকটা তার দিকে হাত নাড়লো। তার মুখ কঠিন। “আপনার সাথে দেখা করার জন্য একজন অপেক্ষা করছে।” সে প্রধান ফটকটা খুলে তাকে ভেতরে ঢুকতে দিলো।

    গ্যাব্রিয়েলের পা দুটো জমে গেলো।”ভেতরে আসবো?”

    গার্ড মাথা নেড়ে সায় দিলো। “আপনাকে অপেক্ষায় রাখার জন্য আমাকে ক্ষমা চাইতে বলা হয়েছে।”

    গ্যাব্রিয়েল দরজার দিকে তাকিয়ে রইল। হচ্ছেটা কী? এটা সে মোটেই আশা করেনি।

    “আপনি গ্যাব্রিয়েল অ্যাশ, তাই না?” গার্ড জানতে চাইলো, তাকে অধৈর্য দেখালো।

    “হ্যাঁ, স্যার, কিন্তু–”

    “তাহলে আপনাকে আমি বলবো আমার সাথে আসতে।”

    গ্যাব্রিয়েল এগিয়ে গেলো। ভেতরে ঢুকতেই বিশাল দরজাটা বন্ধ করে দেয়া হলো।

    ৩৮

    সূর্যের আলো থেকে দু’দিন বঞ্চিত হয়ে মাইকেল টোল্যান্ড তার দেহঘড়িটা নতুন করে ঠিক করে নিলো। যদিও তার হাতঘড়ি বলছে এখন পড়ন্ত বিকেল কিন্তু টোল্যান্ডের শরীর বলছে মাঝরাত। পুরো প্রামাণ্যচিত্রটা শেষ করে সেটাকে অন্ধকার কক্ষে বসে ডিজিটাল ডিস্কে লোড করে নিচ্ছে সে। এই ডিস্কটা নাসা’কে দেয়া হবে সম্প্রচারের জন্য।

    “ধন্যবাদ, মাইক, টেকনিশিয়ান বললো, “টিভিতে অবশ্যই দেখবো এটা, ভালো হয়েছে নিশ্চয়?”

    টোল্যান্ড ক্লান্ত ভঙ্গীতে বললো, “আশা করি প্রেসিডেন্টের এটা ভালো লাগবে।”

    “কোনো সন্দেহ নেই। যাইহোক, আপনার কাজতো শেষ। বসে বসে এখন শোটা। উপভোগ করুন।

    ধন্যবাদ।” টোল্যান্ড বলেই প্রেস এরিয়ার দিকে তাকিয়ে দেখলো সবাই বিয়ার বেয়ে উৎসব পালন করছে। তারও ইচ্ছে করছে তাদের সাথে যোগ দিতে, কিন্তু সে খুব ক্লান্ত। রাচেল সেক্সটনের দিকে তাকালো। এখনও প্রেসিডেন্টের সাথে কথা বলে যাচ্ছে সে।

    তিনি রাচেলকে অন-এয়ারে দিতে চাচ্ছেন, টোল্যান্ড অবলো। এজন্যে অবশ্য সে তাকে দোষও দিচ্ছে না; একাজের জন্য রাচেল একেবারেই যথার্থ। রাচেল দেখতে যেমন তার। ব্যক্তিত্বও তেমন প্রখর। টোল্যান্ড যত মেয়েকে টেলিভিশনে দেখেছে– হয় তারা নিষ্ঠুর ক্ষমতাবান নারী অথবা টিভি পর্দায় গ্ল্যামারস, ব্যক্তিত্ব’ জিনিসটা তাদের খুব কমই থাকে।

    এখন, টোল্যান্ড নাসার লোকদের জড় ঠেলে অন্যপ্রান্তে যেতে লাগলো, ভাবলো বাকি সিভিলিয়ান বিজ্ঞানীরা কোথায়,সব হাওয়া হয়ে গেলো নাকি। তারাও যদি তার মত ক্লান্ত হয়ে থাকে তবে হয়তো শ্রিাম নিয়ে নিচ্ছে। একটু এগোতেই সামনে টোল্যান্ড গর্তটা দেখতে পেলো।

    টোল্যান্ডের স্মৃতির পাতা আচমকাই খুলে গেলো। সিলিয়া বার্চ তার কলেজ জীবনের অন্ত রঙ্গ বান্ধবী ছিলো। এক ভ্যালেন্টাইন ডে’তে তাকে টোল্যান্ড তার প্রিয় এক রেস্তোরাঁতে নিয়ে গেলো। ওয়েটার যখন সিলিয়ার খাবারটা নিয়ে এলো, সেটা ছিলো একটা গোলাপ আর হীরের আঙটি। সিলিয়া সঙ্গে সঙ্গেই বুঝে গেলো। অশ্রুসজল চোখে সে কেবল একটা শব্দই বলেছিলো, আর তাতেই টোল্যান্ড দারুন সুখী হয়ে গিয়েছিলো।

    “হ্যাঁ।”

    তারা প্যাসাডেনার কাছেই একটা ছোট্ট বাড়ি কিনলো। সেখানে সিলিয়া বিজ্ঞানের শিক্ষক হিসেবে কাজ পেয়ে গিয়েছিলো। আর তার কাছেই ছিলো সান দিয়াগোর ওশানোগ্রাফি ইনস্টিটিউট, যেখানে টোল্যান্ড তার স্বপ্নের কাজটা শুরু করতে পেরেছিলো, জাহাজের মধ্যে একটা গবেষণাগারে। টোল্যান্ডের কাজের জন্য তাকে বাড়ি থেকে প্রতি সপ্তাহে তিন চার দিনের জন্য বাইরে থাকতে হোতো। কিন্তু তারপর সিলিয়ার সাথে দেখা হওয়াটা ছিলো তুমুল উত্তেজনার আর তীব্র আকার একটি ব্যাপার।

    সাগরে থাকার সময়েই টোল্যান্ড সিলিয়ার জন্য তার সাগর-অভিমানগুলোর কিছু অংশ ভিডিওতে তুলে আনতো। সেটা একটা স্বল্পদৈর্যের প্রামান্যচিত্র হয়ে যেতো। একটা ভ্রমণ শেষে বাড়ি ফিরে সে একটা বিরল প্রজাতির কাটল ফিশ-এর ভিডিও তুলে এনেছিলো, যার অস্তিত্ব সম্পর্কে কেউই জানতো না। এটা নিয়ে টোল্যান্ড দারুণ উচ্ছ্বসিত ছিলো।

    আক্ষরিক অর্থে কয়েক হাজার অনাবিষ্কৃত প্রজাতি, সে মনে মনে ভেবেছিলো, খুব গভীরে বাস করে। আমরা কেবল উপরেই খুঁজে থাকি, পানির খুব গভীরে এতো রহস্যময়তা রয়েছে, কেউ তা কল্পনাও করতে পারে না!

    সিলিয়া তার স্বামীর এমন অর্জনে দারুণ খুশি হয়েছিলো। এক সুযোগে সে তার বিজ্ঞান ক্লাসে ভিডিওটা দেখাল, সঙ্গে সঙ্গে সেটা সাড়া ফেলে দিলো। অন্য শিক্ষকরা সেটা ধার নিতে চাইলো। বাবা-মা’রা সেটা কপি করতে চাইলো। সবাই মাইকেলের পরবর্তী কাজ দেখার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করলো। সিলিয়ার মাথায় একটা বুদ্ধি খেলে গেলো, সে তার এক বন্ধুকে, যে এনবিসিতে কাজ করতো, ভিডিওটা তাকে দিয়ে দিলো।

    দু’মাস পরে, মাইকেল টোল্যান্ড সিলিয়াকে কিংম্যান সাগর তীরে একটু হাটার জন্য আমন্ত্রণ জানালো, সেটা তাদের বিশেষ এক জায়গা ছিলো।

    “তোমাকে আমার কিছু বলার আছে,” টোল্যান্ড বলেছিলো।

    সিলিয়া তার স্বামীর হাত ধরে বললো, “কি বলো?”

    টোল্যান্ড উচ্ছ্বাসের সাথে বলতে শুরু করেছিলো। “গত সপ্তাহে, এনবিসি টেলিভিশন থেকে আমি একটা ফোন পেয়েছি। তারা ভাবছে আমি সমুদ্রের ওপর একটা প্রামান্যচিত্রের অনুষ্ঠানের উপস্থাপনা করি, ধারাবাহিক হবে সেটা। আগামী বছরই তারা সেটা শুরু করতে চায়! তুমি কি বিশ্বাস করতে পারো?”

    সিলিয়া তাকে চুমু খেয়ে বলেছিল, “আমি বিশ্বাস করছি। দারুণ হবে সেটা।”

    ছয় মাস পরে, সিলিয়া আর টোল্যান্ড কাটালিনা’তে পাড়ি দিলো। সেই সময়েই সিলিয়া তার শরীরে তীব্র যন্ত্রণা অনুভব করতে শুরু করেছিলো। প্রথমে তারা পাত্তা না দিলেও পরে সেটা তীব্র হয়ে উঠেছিলো। অবশেষে সিলিয়া ডাক্তার দেখালো।

    মুহূর্তেই টোল্যান্ডের জীবনটা তছনছ হয়ে গেলো। সিলিয়ার কঠিন অসুখ করেছে। খুবই কঠিন।

    “লিম্ফোমা রোগের চূড়ান্ত অবস্থায় রয়েছে,” ডাক্তার বলেছিলো। বিরল একটি রোগ।

    সিলিয়া আর টোল্যান্ড অনেক ডাক্তারের কাছে গেলো, সব জায়গাতে একটা উত্তরই পেল, এটা নিরাময়যোগ্য নয়।

    টোল্যান্ড প্রামান্যচিত্রের কাজ ভুলে সিলিয়াকে নিরাময় করার জন্য উঠে পড়ে লাগলো। কিন্তু, মাত্র সাত সপ্তাহ পরেই, সিলিয়া মারা গেলো। শেষ মুহূর্তগুলো খুবই কঠিন ছিলো।

    “মাইকেল,” সে বলেছিলো, ভাঙা ভাঙা কণ্ঠে, “যাবার সময় হলো।”

    “আমি যেতে দেব না।” টোল্যান্ড বলেছিলো।

    “তুমি আমার কাছে প্রতীজ্ঞা করো, আরেকজন মনের মানুষকে খুঁজে নেবে।”

    “আমি কখনই সেটা চাই না।” টোল্যান্ড বলেছিলো।

    “তোমাকে তা করতেই হবে।”

    .

    সিলিয়া এক রোববারে মারা গেলে মাইকেল মনের দুঃখে জাহাজ নিয়ে সাগরে বেড়িয়ে পড়লো। অবশেষে সে ঠিক করলো তাকে একটা সিদ্ধান্তে আসতেই হবে।

    তোমাকে একস্টা জিনিস বেছে নিতেই হবে। কাজ অথবা মৃত্যু।

    সে আবার পুরোদমে বিস্ময়কর সমুদ্র অনুষ্ঠানে ডুবে গেলো। অনুষ্ঠানটা বলতে গেলে তাকে বাঁচিয়েই দিয়েছিলো। তার অনুষ্ঠানটা দারুণ বাজিমাত করলো। তার বন্ধুরা কতগুলো মেয়ে জুটিয়ে দিলেও তাদের সাথে তার ভাব জমে ওঠেনি। এসবের জন্য সে মোটেও প্রস্তুত ছিলো না।

    তার সামনের উল্কাখণ্ডটি তোলার গর্তটা তাকে অতীত থেকে ফিরিয়ে নিয়ে এলো। গর্তের পানিটা পরাবাস্তব আর জাদুর মতো দেখাচ্ছে। পানিটা চাঁদের আলোয় যেনো ঝরমল করছে। পানির ঠিক উপরে ছোট ছোট আলোর স্ফুলিঙ্গ টোল্যান্ডের চোখে পড়লো। সে দীর্ঘক্ষণ ধরে সেটার দিকে চেয়ে রইলো।

    খুবই অবাক আর অদ্ভুত কিছু। প্রথমে তার মনে হয়েছিলো স্পট লাইটের প্রতিফলন হয়তো পড়েছে এখানে। কিন্তু একটু পরেই তার মনে হলো তা নয়। জ্বলজ্বল করতে থাকা আলোতে সবুজ রঙের আভা আছে। আর সেটা যেনো স্পন্দিত হচ্ছে একটা ছন্দে, ভেতর থেকে জ্বলছে সেটা।

    টোল্যান্ড সামনের দিকে এগিয়ে গেলো ভালো করে দেখার জন্য।

    .

    হ্যাবিস্ফেয়ারের অন্ধকার প্রেস-বক্সে বসে রাচেল সেক্সটন ভাবলো তার বৃফিটা ভালোই হয়েছে। তার কথা শুনে হোয়াইট হাউজের কর্মচারীরা প্রথমে ভড়কে গেলেও শেষে তারা মেনে নিয়েছে তথ্যটা।

    “বর্হিজীব?” কেউ একজনকে সে বিস্ময়ে বলতে শুনেছে। “জানো, এটার মানে কি?”

    “হ্যাঁ, আরেকজন জবাব দিয়েছিলো। এর মানে হলো আমরা নির্বাচনে জিততে যাচ্ছি।”

    রাচেল তার মার কথা ভেবে শান্তি পেলো।

    হ্যাঁ, সে মনে মনে বললো, সিনেটর সেক্সটন এটাই আশা করতে পারেন।

    সে ভীড় ঠেলে মাইকেল টোল্যান্ডকে খুঁজতে লাগলো। কোথাও তাকে পাচ্ছে না। কর্কি মারলিনসন তার পাশে এসে দাঁড়ালো। “মাইককে খোঁজা হচ্ছে?”

    রাচেল চম্‌কে গেলো। “না … মানে… সেরকমই।”

    কর্কি মাথা ঝাঁকালো। “আমি জানতাম। মাইক চলে গেছে। আমার মনে হয় আরো কিছু ফুটেজ তোলার জন্য গেছে।” কর্কি অন্য দিকে তাকালো। “যদিও মনে হচ্ছে, আপনি তাকে পাবেন।” সে আঙুল তুলে দেখালো। “পানিটা মাইক যতোই দেখছে ততোই সম্মোহিত হচ্ছে।”

    রাচেল তাকিয়ে দেখলো, গর্তটার দিকে টোল্যান্ড অধীর আগ্রহে তাকিয়ে রয়েছে।

    “সে কী করছে?” জিজ্ঞেস করলো। “ওখানে এভাবে ঘোরাঘুরি করাটা তো বিপজ্জনক।”

    কর্কি দাঁত বের করে হাসলো। “হয়তো কোনো ছিদ্র খুঁজছে। চলুন দেখি কী করছে সে।”

    রাচেল আর কর্কি টোল্যান্ডের কাছে চলে এলো। কর্কি টোল্যান্ডকে ডাকলো।

    “হেই, জলমানব! তোমার সাঁতার পোশাকটা নিতে ভুলে গিয়েছে?”

    টোল্যান্ড ঘুরে তাকালো। এমনকি আধো আলোতেও রাচেল তার চোখে বিস্ময় দেখতে পেলো। তার চেহারাটা অদ্ভুতভাবেই আলোকিত হয়ে আছে, যেনো নিচ থেকে আলো ঠিকরে তার মুখে আসছে।

    “সব ঠিক আছে তো, মাইক?” সে জিজ্ঞেস করলো।

    “না, ঠিক নয়।“ টোল্যান্ড পানির দিকে ইঙ্গিত করলো।

    কর্কি গর্তটার কাছে এগিয়ে গিয়ে পানির দিকে তাকাতেই অবাক হয়ে গেলো। রাচেলও তার সাথে যোগ দিলো। পানির উপর নিলোচে-সবুজ রঙের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র আলো কণা ছড়িয়ে রয়েছে। যেনো নিয়নের ধূলো পানির উপর ছড়িয়ে দেয়া হয়েছে। দৃশ্যটা খুবই সুন্দর।

    টোল্যান্ড জমিন থেকে এক মুঠো বরফ তুলে নিয়ে পানিতে ছুঁড়ে মারলো। সঙ্গে সঙ্গে আঘাতের জায়গাটি দীপ্ত হয়ে উঠলো। আচমকা সবুজ আভা ছড়িয়ে পড়লো সেখানে।

    ‘মাইক, কর্কি বললো, তাকে খুব অস্বস্তি বোধ করতে দেখা গেলে, দয়া করে আমাকে বলো, এটা কি?”

    টোল্যান্ড ক্র তুললো। “আমি জানি এটা আসলে কি। আমার প্রশ্ন হলো, এগুলো এখানে কী করছে।”

    ৩৯

    “এটা ফ্ল্যাগেলেট, টোল্যান্ড বললো, জ্বলতে থাকা পানির দিকে চেয়ে।

    “ফাঁপা?” কর্কি প্রশ্ন করলো। বলো?”

    রাচেল টের পেলো মাইকেল টোল্যান্ড ঠাট্টার মেজাজে নেই।

    “আমি জানি না এটা কীভাবে ঘটলো, টোল্যান্ড বললো। “কিন্তু যেভাবেই হোক, এই পানিতে বায়োলুমিনিসেন্ট ডিনোফ্লাগেলেট রয়েছে।”

    “বায়োলুমিনিসেন্টটা আবার কি?” রাচেল বললো। ইংরেজিতে বলো।

    মনোসেল বা এককোষী প্রাংটন, এক ধরণের অক্সিডাইজিং, লুমিনিসেন্ট ক্যাটলিস্ট রয়েছে, যাকে বলে লুসিফারেন।”

    এটা কি ইংরেজিতে হলো?

    টোল্যান্ড দীর্ঘশ্বাস ফেলে তার বন্ধুর দিকে তাকালো, “কর্কি, এই গর্তটা থেকে উল্কাখণ্ড তোলা হয়েছে, এখানে কি জীবিত প্রাণী থাকতে পারে?”

    কর্কি হাসিতে ফেটে পড়লো। মাইক, আরেকটু সিরিয়াস হও!”

    “আমি সিরিয়াসই আছি।”

    “কোনো সুযোগ নেই, মাইক! বিশ্বাস করো।

    টোল্যান্ড একটু স্বস্তি পেলো মনে হলো, তার এই মনোভাবটা খুবই স্বল্প স্থায়ী হলো, গভীর একটা সন্দেহের কারণে। “মাইক্রোস্কোপ ছাড়া আমি নিশ্চিত হতে পারবো না, টোল্যান্ড বললো। “কিন্তু এ ধরণের বায়োলুমিনিসেন্ট প্লাংকটন, যার নামের অর্থ হলো অগ্নি উদি, আর্কটিক সাগর এগুলোতে পরিপূর্ণ।”

    কর্কি কাঁধ ঝাঁকালো।”তো, তারা যদি মহাশূন্যে থেকেই এসে থাকে, তবে তুমি জিজ্ঞেস করছে কেন?”

    “কারণ, টোল্যান্ড বললো, “উল্কাখণ্ডটি হিমবাহের বরফের নিচে চাপা পড়েছিলো– তুষারপাত থেকে বিশুদ্ধ পানির বরফ। এই গর্তের পানি তিন শত বছর ধরে বরফ হয়ে আছে। তাই যদি হয়, সমুদ্রের জীৰ এখানে এলো কি করে?”

    টোল্যান্ডের কথাটা দীর্ঘ একটা নিরবতার জন্ম দিলো।

    রাচেল পানিটার দিকে তাকালো। এই গর্ত থেকে বায়োলুমিনিসেট প্লটন। এর মানে কি?

    “নিচে কোনো ফাটল থেকে থাকবে হয়তো,” টোল্যান্ড বললো।”এটাই একমাত্র ব্যাখ্যা। সেই ফাটল দিয়েই সমুদ্রের পানি এখানে ঢুকেছে, সেই সঙ্গে প্রাংটনগুলো।”

    রাচেল কথাটা বুঝতে পারলো না। পানি ঢুকেছে? কোত্থেকে সমুদ্র তীর তো এখান থেকে দুই মাইল দূরে।”

    কর্কি এবং টোল্যান্ড রাচেলের দিকে অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকালো। “আসলে, কর্কি বললো। “সাগরটা ঠিক আমাদের নিচেই রয়েছে। বরফেওরটা পানির ওপরে ভাসছে।”

    রাচেল হতভম্ব হয়ে গেলো। “ভাসছে।কিন্তু … আমরা তো হিমবাহের ওপরে।

    “হ্যাঁ, আমরা হিমবাহের ওপরেই আছি,” টোল্যান্ড বললো, কিন্তু সেটা মাটির ওপরে নেই। হিমবাহ অনেক সময়ই ভূমি থেকে পিছুলে পানিতে পড়ে ভাসতে থাকে। কারণ বরফ পানির চেয়ে হাল্কা। হিমবাহ তাই ভাসতেই থাকে। সমুদ্রের উপর বিশাল বরফখণ্ডের মতো ভাসতে থাকে। এটাই হলো আইস শেলফ-এর সংজ্ঞা … হিমবাহের সমান অংশ।” সে একটু থামলো। “আমরা আসলে সাগরের একমাইল ভেতরে রয়েছি।”

    কথাটা শুনে রাচেল একটু জত হয়ে গেলো।

    টোল্যান্ড তার অস্বস্তিটা আঁচ করতে পারলো মনে হয়। সে বরফের উপর তার পা-টা সজোরে আঘাত করে দেখালো। “ভয় পেয়ো না। এই বরফটা তিনশত ফুট পুরু। এর দুশো ফুট পানির নিচে ভাসছে। এটা খুবই নিরাপদ। এর ওপর তুমি আকাশ ছোঁয়া অট্টালিকা বানাতে পারবে।”

    রাচেল তার কথাটা শুনে পুরোপুরি আশ্বস্ত হতে পারলো না। কিন্তু টোল্যান্ডের প্লাংকটন তত্ত্বটির উৎস সম্পর্কে বলা কথাটা বুঝতে পারলো। তার ধারণা নিচে একটা ফাঁটল রয়েছে, সেটা দিয়ে পাংকটন এসেছে এই গর্তে।

    এটাই বোধগম্য মনে হচ্ছে, রাচেল ভাবলো। তারপরও এটা একটা প্যারাডক্সেরও জন্ম দিচ্ছে আর সেটা তাকে বিব্রত করছে। নোরা ম্যাঙ্গোর হিমবাহের ব্যাপারে খুবই নিখুঁত ধারণা পোষণ করে। একাধিক জায়গা ছিদ্র করে সে নিশ্চিত হয়েছে এই জায়গাটা নিখাদ।

    রাচেল টোল্যান্ডের দিকে তাকালো। “আমার মনে হয় প্রাপ্ত ডাটা’তে হিমবাহের ফাঁটলের কোনো তথ্য নেই। ডক্টর ম্যাঙ্গোর কি বলেনি যে, হিমবাহের কোনো ফাঁটল নেই?”

    কর্কি ভুরু তুললো, “মনে হচ্ছে বরফ-রাণী তালগোল পাকিয়ে ফেলেছে।”

    এতো জোরে বলবেন না, রাচেল ভাবলো, তা না হলে আপনার পাছায় বরফের কাঠি ঢুকিয়ে দেবে।

    টোল্যান্ড গাল চুলকালো। “আক্ষরিক অর্থেই আর কোনো ব্যাখ্যা নেই। অবশ্যই কোনো ফাঁটল আছে।”

    শালার একটা ফাটল, রাচেল ভাবলো। বরফটা যদি ৩০০ ফুট পুরু হয়, আর দুশো ফুট পানির নিচে থাকে, তবে এই অনুমাননির্ভর ফাঁটলটা কঠিন বরফের ১০০ ফিট ভেদ করেছে।

    নোরা ম্যাঙ্গোরের পরীক্ষার কোনো ফাটল ধরা পড়েনি।

    “একটা কাজ করো, টোল্যান্ড বললো কর্কিকে।”নোরাকে খুঁজে বের করো। দেখা যাক সে এ ব্যাপারে কী বলে। মিংকেও খুঁজে দেখো। হয়তো সে এই জীবগুলো কী সেটা বলতে পারবে।”

    কর্কি খুঁজতে চলে গেলো।

    “জলদি করো,” টোল্যান্ড পেছন থেকে তাকে তাড়া দিলো। “আমি কসম খেয়ে বলছি, এই বায়োলুমিনিসেন্টগুলো কিছুক্ষণের মধ্যেই মিলিয়ে যাবে।”

    রাচেল গর্তটার দিকে তাকালো। নিশ্চিত হলো সবুজটা আর আগের মতো তীব্রভাবে নেই।

    টোল্যান্ডতার পার্ক সোয়েটারটা খুলে গর্তের পাশে বরফের ওপরে শুয়ে পড়লো।

    রাচেল দ্বিধান্বিত হয়ে তাকালো। “মাইক?”

    “আমি দেখতে চাই এর ভেতরে লবনাক্ত পানি আছে কিনা।”

    “কোট খুলে বরফের ওপর শুয়ে পড়ে?”

    “হ্যাঁ।” টোল্যান্ড গর্তটার কাছে চলে গেলো গড়িয়ে গড়িয়ে। সে কোটের একটা হাতা পানিতে চুবিয়ে দিলো। “এটা বিশ্বমানের ওশানোগ্রাফারের খুবই নিখুঁত লবণাক্ততা পরীক্ষা নিরীক্ষা। এটাকে বলা হয় ভেজা জ্যাকেট চাটা’।”

    .

    ডেল্টা-ওয়ান নিয়ন্ত্রণ করতে বেগ পাচ্ছে। ক্ষতবিক্ষত মাইক্রোবোটটাকে গর্তটার কাছে জড়ো হওয়া লোকগুলোর উপরে ওড়াতে চাচ্ছে সে। লোকগুলোর কথাবার্তা শুনে সে বুঝতে পারলো, ঘটনা খুব দ্রুতই অন্য দিকে মোড় নিচ্ছে।

    “কন্ট্রোলারকে ফোন করো,” সে বললো। “আমরা কঠিন এক সমস্যায় পড়ে গেছি।”

    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleডিজিটাল ফরট্রেস – ড্যান ব্রাউন
    Next Article ইনফার্নো – ড্যান ব্রাউন

    Related Articles

    ড্যান ব্রাউন

    দ্য দা ভিঞ্চি কোড – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025
    ড্যান ব্রাউন

    এঞ্জেলস এন্ড ডেমনস – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025
    ড্যান ব্রাউন

    দ্যা লস্ট সিম্বল – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025
    ড্যান ব্রাউন

    অরিজিন – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025
    ড্যান ব্রাউন

    ইনফার্নো – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025
    ড্যান ব্রাউন

    ডিজিটাল ফরট্রেস – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Demo
    Most Popular

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Our Picks

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    দ্য দা ভিঞ্চি কোড – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025

    এঞ্জেলস এন্ড ডেমনস – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    Sign In or Register

    Welcome Back!

    Login below or Register Now.

    Lost password?

    Register Now!

    Already registered? Login.

    A password will be e-mailed to you.