Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    দ্য দা ভিঞ্চি কোড – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025

    এঞ্জেলস এন্ড ডেমনস – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • 🔖
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    Subscribe
    সাইন ইন
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    ডিসেপশন পয়েন্ট – ড্যান ব্রাউন

    ড্যান ব্রাউন এক পাতা গল্প497 Mins Read0

    ০৪০. হোয়াইট হাউজে অসংখ্যবার

    ৪০

    শৈশবে গ্যাব্রিয়েল অ্যাশ হোয়াইট হাউজে অসংখ্যবার গিয়েছে। সঙ্গোপনে প্রেসিডেন্টের হয়ে কাজ করার স্বপ্ন লালন করতো সে। এই মুহূর্তে, গ্যাব্রিয়েল এই জায়গাটি ছাড়া অন্য যেকোন জায়গা হলেই বেশি পছন্দ করতো।

    গোয়েন্দা লোকটি তাকে ভেতরে নিয়ে যাবার সময় গ্যাব্রিয়েল অবাক হয়ে ভাবতে লাগলো তার ছদ্মবেশী তথ্য-দাতা আসলে কী প্রমাণ করতে চাইছে। তাকে হোয়াইট হাউজে দাওয়াত দেয়াটা পাগলামী ছাড়া আর কী। আমাকে দেখে ফেললে কী হবে? মিডিয়াতে সিনেটর সেক্সটনের পাশে তাকে সবসময়ই দেখা যায়, তাই তার চেহারাটা সবার কাছেই পরিচিত। এটা নিশ্চিত কেউ না কেউ তাকে চিনে ফেলবেই।

    “মিস অ্যাশ?”

    গ্যাব্রিয়েল তাকালো। সেন্ট্রিদের একজন তার দিকে হাত নাড়ছে, “ওখানে একটু তাকান, প্লিজ।” সে ইশারা করলো।

    গ্যাব্রিয়েল সেখানে তাকাতেই ফ্লাশ লাইটের তীব্র আলোতে চোখ ঝলসে গেলো তার।

    ধন্যবাদ, ম্যাম।” সেন্ট্রি তাকে একটা ডেস্কের কাছে নিয়ে গিয়ে তার হাতে একটা কলম ধরিয়ে দিলো। “এন্ট্রি খাতায় সই করুন, প্লিজ।” সে একটা মোটা খাতা তার দিকে বাড়িয়ে দিলো।

    গ্যাব্রিয়েল খাতাটির দিকে তাকিয়ে দেখলো পৃষ্ঠাটা একেবারেই খালি। তার মনে পড়ে গেলো সব ভিজিটরকেই এরকম খালি পৃষ্ঠায় দেয়া হয়, যাতে হোয়াইট হাউজে আগত ব্যক্তির পরিচয় গোপন থাকে। সে তার নাম সই করলো।

    গোপন মিটিংয়ের জন্য একটু বেশিই হয়ে গেলো না।

    গ্যাব্রিয়েল একটা মেটাল ডিটেক্টর পার হলো।

    সেন্ট্রি লোকটা হাসলো। “আপনার ভ্রমণ উপভোগ করুন, মিস অ্যাশ।”

    গ্যাব্রিয়েল গোয়েন্দা লোকটাকে অনুসরণ করে যেতে লাগলো, একটু দূরে আরো একটা ডেস্ক। সেখানে আরেকটি সিকিউরিটি পাস দেয়া হলো তাকে। সেটা সে গলায় ঝুলিয়ে নিলো। পাসের ছবিটা একটু আগেই প্রধান ফটকের কাছে তোলা হয়েছে।

    গ্যাব্রিয়েল খুবই অভিভূত হলো। কে বলেছে সরকার অদক্ষ?

    তারা হোয়াইট হাউজের একেবারে ভেতরে চলে গেলো। প্রতিটি পদক্ষেপই গ্যাব্রিয়েল আরো বেশি অস্বস্তি অনুভব করলো। যে-ই তাকে এখানে আসতে বলুক না কেন, সে এই মিটিংটা গোপন রাখতে চাচ্ছে না।

    “এটা হলো চায়না রুম, একদল পর্যটককে একজন গাইড বলছে। “ন্যান্সি রিগ্যানের ঘর। ৯৫২ ডলার প্রতি বর্গফুটের জন্য ব্যয় করা হয়েছিলো, যেটা ১৯৮১ সালে খুবই সন্দেহ। আর বিতর্কের জন্ম দিয়েছিলো।”

    তারা আরো ভেতরে যেতেই, আরেকজন গাইড পর্যটকদের কলছে, “আপনারা এখন বত্রিশ বর্গফুটের ইস্ট-রুমে ঢুকতে যাচ্ছেন।” গাইড বর্ণনা দিতে শুরু করলো, “এখানে এবিগেইল এডম তার স্বামী জন এডামের কাপড় চোপড় ঝুলিয়ে শুকাতেন। এরপর আমরা লাল-ঘরের দিকে যাবো, যেখানে ডলি মেডিসন তার স্বামী জেমস মেডিসনের কাছে আসা অতিথিদেরকে পানীয় দিয়ে আপ্যায়ন করতেন।”

    পর্যটকেরা হেসে উঠলো।

    এরপর গ্যাব্রিয়েল যে ঘরটাতে ঢুকলো সেটা সে কেবল বই আর টিভিতেই দেখেছে। তার নিঃশ্বাস ছোট হয়ে এলো।

    হায় ঈশ্বর, এটা হলো ম্যাপকম!

    এই ঘরেই রুজভেল্ট দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের চাটার্ড ঘোষণা দিয়েছিলেন। এটাই সেই ঘর যেখানে বিল ক্লিনটন মনিকা লিউনিস্কির সাথে অবৈধ সম্পর্কের কথা স্বীকার করেছিলেন। এখান থেকে তারা পরের ঘরের উদ্দেশ্যে যেতেই গ্যাব্রিয়েল দারুণ অবাক হলো। আমি ওয়েস্ট উইং-এ যাচ্ছি…

    গোয়েন্দা লোকটি তাকে ঘরের শেষ মাথায় একটা নামফলকহীন দরজার সামনে নিয়ে গিয়ে থেমে দরজায় টোকা দিলো।

    “খোলাই আছে তেন্ত্র থেকে কেউ বললো।

    লোকটা দরজা খুলে তাকে ভেতরে যাবার ইঙ্গিত করলো।

    গ্যাব্রিয়েল ভেতরে ঢুকলো, ঘটার আলো খুবই কম। সে দেখতে পেলো অস্পষ্ট একটি অবয়ব ডেস্কে বসে আছে।

    “মিশ অ্যাশ?” কণ্ঠটা সিগারেটের ধোঁয়া ছেড়ে কললো, “স্বাগতম।

    গ্যাব্রিয়েল ভাল করে খেয়াল করতেই বুঝতে পারলো কে ওখানে। সে দারুশ অবাক হলো। এই আমাকে ই-মেইল করতো।

    ধন্যবাদ আসার জন্য, মরজোরি টেঞ্চ বললো, তার কণ্ঠ খুব শীতল।

    “মিস … টেঞ্চ?” গ্যাব্রিয়েল কোনোভাবে বললো। তার নিঃশ্বাস যেনো বন্ধ হয়ে এলো।

    “আমাকে মারজোরি বলেই ডেকো।” মহিলা এবার উঠে দাঁড়ালো। ড্রাগনের মতো নাক দিয়ে ধোঁয়া ছাড়লো। “তুমি আর আমি খুব ভালো বন্ধু হতে যাচ্ছি।”

    ৪১

    নোরা ম্যাঙ্গোর উল্কা উত্তোলনের গর্তের সামনে দাঁড়িয়ে আছে কর্কি, টোল্যান্ড আর রাচেলের পাশেই। মাইক,” সে বললো, “তুমি খুব কিউট, কিন্তু উন্মাদ। এখানে কোনো বায়োলুমিনিসেন্ট নেই।

    গর্তটা এখন কালো দেখাচ্ছে।

    টোল্যান্ডের এখন মনে হলো সেটার ভিডিও তুলে রাখলেই ভালো হোতো; কর্ক নোরাকে ডেকে আনতে আনতেই বায়োলুমিনিসেন্টগুলো উদ্ধাও হয়ে গেছে।

    টোল্যান্ড আরো কয়েক টুকরো বরফ সেই পানিতে ছুঁড়ে মারলো কিন্তু কিছুই হলো না।

    “গেলো কোথায় সেগুলো?” কর্ক জিজ্ঞেস অলো।

    টোল্যান্ডের এ সম্পর্কে বেশ স্পষ্ট ধারণাই রয়েছে। একটি প্লাটন বড় কোনো প্রাণীর টের পেলে জ্বলতে শুরু করে এই আশায় যে কোনো বড় শিকারীকে আকর্ষণ করে আসল আক্রমণকারীকে ভীত করে তুলবে। এই ক্ষেত্রে প্লংটনগুলো কোনো ফাটল দিয়ে ঢুকেছে, আচমকাই তারা বিশুদ্ধ পানিতে এসে পড়ায় তারা ঘাবড়ে গিয়েছিলো, বিশুদ্ধ পানি তাদেরকে মেরে ফেলতে শুরু করলো আস্তে আস্তে।

    “আমার মনে হয় তারা মরে গেছে।”

    “তাদেরকে মেরে ফেলা হয়েছে, নোরা স্বগতোক্তি করলো। “ইস্টার বানি এখানে এসে ওদের খেয়ে ফেলেছে।”

    কর্কি তার দিকে চেয়ে রইলো। “আমিও লুমিনিসেন্টগুলো দেখতে পেয়েছি, নোরা।

    “সেটা কি এলএসডি বোর আগে না পরে?”

    “এ নিয়ে আমরা মিথ্যে কেন কলবে?” কৰ্কি জানতে চাইলো।

    “পুরুষ মানুষেরা মিথ্যেই বলে।”

    “হ্যাঁ, অন্য মেয়ের সাথে ঘুমানোর ব্যাপারে, কিন্তু বায়োলুমিনিসেন্ট প্লাংকটনের ব্যাপারে কখনই না।”

    টোল্যান্ড দীর্ঘশ্বাস ফেললো। “নোর তুমি নিশ্চয় জানো প্লাংটনবকের নিচে সমুদ্রে বেঁচে থাকে।”

    “মাইক,” সে তার দিকে তাকিয়ে জবাব দিলো। “আমাকে দয়া করে জ্ঞান দিয়ো না। এই আর্কটিক শেলফের নিচে ডায়াটমদের দুশোরও বেশি প্রজাতি রয়েছে। অটেট্রফিক ম্যানোফ্লাগেলেট রয়েছে চৌদ্দ প্রজাতির, বিশ প্রজাতির হেটিরোট্রফিক ডিনোফ্ল্যাগেলেট এক কয়েক ধরণের মেটাজোয়ান। আর কোনো প্রশ্ন?”

    টোল্যান্ড ভুরু তুললো, “এটা পরিষ্কার যে তুমি আমার চেয়ে আর্কটিক ফউনা সম্পর্কে বেশিই জানো, আর তুমি একমত হবে যে, তাদের অনেকগুলোই এই বরফের নিচে থাকে। তো, তুমি এ ব্যাপারে কেন সন্দেহ করছে যে, আমরা বায়োলুমিনিসেন্ট প্লংটন দেখেছি?”

    “কারণ, এইখানে কোনো ফাঁটল নেই, একেবারেই সলিড এটা, মাইক। এটা আবদ্ধ, বিশুদ্ধ পানির আধার। সমুদ্রের কোনো প্লাটন এখানে আসতে পারে না।”

    “আমি পানিটা চেখে দেখেছি, সেটা লবনাক্ত,” টোল্যান্ড জোর দিয়ে কললো। “খুবই অল্প পরিমাণে, কিন্তু লবনের উপস্থিতি আছে। এখানে যেকোনভাবেই হোক না কেন, সমুদ্রেও পানি ঢুকে গেছে।”

    “ঠিক আছে,” নোরা বললো, “তুমি পরখ করে দেখেছো। তুমি তোমার পুরনো ঘামে ভেজা পার্ক সোয়েটার চেটে এই সিদ্ধান্তে এসেছে যে, পিওডিএস আর সব যন্ত্রপাতির হিসাব। নিকাশ ভুল।”

    টোল্যান্ড তার ভেজা পার্কটা তার দিকে বাড়িয়ে দিলো।

    “মাইক, আমি তোমার এই নোংরা জ্যাকেটটা চাটবো না। সে গর্তটার দিকে তাকালো। “আমি কি জিজ্ঞেস করতে পারি এইসব প্লংটন কেন ফাঁটল দিয়ে সাঁতার কেটে এখানে আসার সিদ্ধান্ত নিলো?”

    “উষ্ণতা?” টোল্যান্ড আন্দাজে বললো। “সমুদ্রের অনেক প্রাণীই উষ্ণতায় আকৃষ্ট হয়। আমরা উফাটা তোলার সময় সেটা গরম করেছিলাম। সেই উষ্ণতাকে অনুস করেই। প্লংটনগুলো এখানে এসে পড়েছে।”

    কর্কি মাথা নাড়লো, “যুক্তি আছে হাতে।”

    “যুক্তি?” নোরা তার চোখ বড় বড় করে বললো। “তোমরা কি এটা বুঝতে পারছে না, যদি এখানে কোনো ফাটল থেকেও থাকে, যদিও আমার ধারণা সেরকম ছুি নেই– তারপরও এটা ভৌত দিক থেকে অসম্ভব যে, সমুদ্রের পানি এই গর্তের ভেতরে চলে আসবে। সে ঘৃণাভরে তাকালো তাদের দিকে।

    “কিন্তু, নোরা …” কর্কি বলতে ওর করলো।

    “জেন্টেমেন! আমরা এখানে দাঁড়িয়ে আছি সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতার উপরে!” সে তার পা দিয়ে বরফে আঘাত করলো। “হ্যালো? এই বরফের স্তরটা সাগর থেকে একশ ফুট উঁচুতে রয়েছে। আমরা সমুদ্র থেকে অনেক উপরে আছি। যদি কোনো ফাটল দিয়ে এখানে পানি ঢুকেই থাকে, তবে সেটা সবেগে উপরের দিকে বনের মতো এখানে এসে পড়বে, এমনিভাবে শান্ত-নিথর ঢুকে পড়বে না। এটাকে বলে মধ্যাকর্ষণ শক্তি।”

    টোল্যান্ড আর কর্কি একে অন্যের দিকে তাকালো।

    “ধ্যাত্, কর্কি বললো। “আমি এটা অবিনি।”

    নোরা গর্তটার দিকে ইঙ্গিত করলো। “তুমি আরো দেখবে, পানির স্তরটা মোটেও বদলায়নি।”

    টোল্যান্ড নিজেকে ইডিয়ট ভাবলো। নোরা ঠিকই বলেছে। এখানে যদি কোনো ফাঁটল থাকতো তবে পানি সবেগে বেড়িয়ে আসততা।”

    “ঠিক আছে,” টোল্যান্ড বললো, “মনে হচ্ছে ফাঁটলের ব্যাপারটা বাদ দিতে হবে। কিন্তু আমরা পানিতে বায়োলুমিনিসেন্ট দেখেছি। একমাত্র সিদ্ধান্ত হলো, এটা মোটেও কোনো আবদ্ধ শেলফ নয়। আমি জানি, তোমার সব ডাটাতেই দেখা যাচ্ছে বরফটা সলিড এবং ফাটলমুক্ত, কিন্তু—”

    “মনে রেখো, নোরা বললো, “এটা কেবল আমার ডাটা-ই না, নাসাও ঠিক একই রকম ডাটা পেয়েছে। আমরা সবাই নিশ্চিত এই হিমবাহটা সলিড। কোনো ফাটল নেই।”

    টোল্যান্ড প্রেস এরিয়ার দিকে তাকিয়ে বললো, “যাইহোক না কেন, আমাদেরকে এই ব্যাপারটা নাসা প্রধাকে জানাতে হবে এবং–”

    “এর কোনো মানেই হয় না!” নোরা রেগে বললো, “আমার ডাটা খুবই নিখুঁত। যন্ত্রপাতি দিয়ে সেটা পরীক্ষিত। এই ডাটা লবন পানি চেটে কিংবা দৃষ্টি বিভ্রমের কারণে প্রশ্নের সম্মুখীন হতে পারে না।” সে তার কিছু যন্ত্রপাতি নিয়ে আসলো, “আমি আবারো পানির নমুনা নিচ্ছি। এবং দেখিয়ে দিচ্ছি যে এখানে কোনো লবন-পানি নেই, প্লাংটনও নেই –জীবিত অথবা মৃত!”

    .

    রাচেল এবং বাকিরা দেখলো নোরা একটা ছোট কাঁচের পাত্রে কিছুটা পানি তুলে নিয়ে সেটা থেকে কয়েক ফোঁটা পানি ছোট্ট একটা টেলিস্কোপের নিচে রেখে দিলো। তারপর সেটা চোখে লাগিয়ে দেখতে শুরু করলো। যন্ত্রটাকে প্রেস এরিয়ার উজ্জ্বল আলোর দিকে মুখ করে দিলো সে। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই সে অভিসম্পাত দিতে শুরু করলো।

    “হায় যিশু!” নোরা আবারো তাকালো। “আরে এটা কী! কিছু একটা ভুল হয়েছে!”

    লবণ-পানি?” কর্কি জিজ্ঞেস করলো।

    নোরা ভুরু তুললো। “কিছুটা। তিন শতাংশের মতো– এটাতো অসম্ভব। এই হিমবাহটা তুষাড় জমাট হয়ে তৈরি হয়েছে। বিশুদ্ধপানি। লবণ আসার কোনো সম্ভাবনা নেই।” নোরা পানি নমুনাটি আবারো মাইক্রোস্কোপের নিচে নিয়ে গেলো। আতৃকে উঠলো সে।

    “প্লংটন?” টোল্যান্ড জিজ্ঞেস করলো।

    “জি পলিহেডরা,” সে জবাব দিলো। বরফের নিচে যেমন প্লাংটন আমরা দেখে থাকি সেরকম কিছুই।” সে টোল্যান্ডের দিকে তাকালো। “তারা এখন মরে গেছে। অবশ্যই তিন শতাংশ লবণাক্ত পানিতে তাদের বেশিক্ষণ বাঁচার কথা নয়।”

    তারা চারজনই নিরবে গর্তটার পাশে দাঁড়িয়ে রইলো।

    রাচেল ভাবতে লাগলো এই প্যারাডক্সটা নাসা’র আবিষ্কারের উপরে কেমন প্রভাব ফেলতে পারে।

    “এখানে হচ্ছেটা কী?” একটা নিচু কণ্ঠ জিজ্ঞেস করলো।

    সবাই তাকালো। অন্ধকার থেকে নাসা প্রধান আবির্ভূত হলো।

    “গর্তের পানিতে স্বল্প পরিমানে লবণের সন্ধান পাওয়া গেছে, টোল্যান্ড বললো। “আমরা সেটা তদন্ত করছি।”

    কর্কি প্রায় অভিযোগের সুরেই বললো, “নোরার বরফ সংক্রান্ত ডাটাগুলোতে ভুল রয়েছে।”

    “আমাকে কামড়াও তবে,” নোরা নিচু স্বরে বললো। নাসা প্রধান ভুরু কুচকে এগিয়ে আসলো। বরফের ডাটাগুলোতে কী ভুল হয়েছে?”

    টোল্যান্ড একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো। “উল্কা উত্তোলনের জায়গার পানিতে তিন শতাংশ লবণ পাওয়া গেছে, যা আগের রেকর্ডকে ভুল প্রমাণ করে। উল্কাটা যে বিশুদ্ধ পানির হিমবাহে আটকা পড়ে আছে, সেটা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। এখানে প্লাংটনের উপস্থিতিও রয়েছে।”

    এক্সট্রমকে ক্ষুব্ধ দেখালো। “এটা তো অসম্ভব। হিমবাহে কোনো ফাঁটল নেই। পিওডিএস স্ক্যানে এটা নিশ্চিত হওয়া গেছে। উল্কাপিণ্ডটি কঠিন বরফে আবদ্ধ ছিলো।”

    রাচেল জানে এক্সট্রম ঠিকই বলেছে। নাসা’র রিপোর্টেও ফাঁটলের কথা নেই। তারপরও রাচেলের মনে সংশয় দেখা দিলো। কীভাবে স্ক্যানটা নেয়া হয়েছে…।

    “তাছাড়া,” এক্সট্রম বললো, “ডক্টর ম্যাঙ্গোরের পাথরের অভ্যন্তরের নুমনাটাও এ কথাই বলে।”

    “একদম ঠিক!” নোরা বললো, “দুটো রিপোর্টই এক রকম। বরফে কোনো ফাটল নেই। এতে করে লবন পানি আর প্লংটনের কোনো ব্যাখ্যা দেয়া যাচ্ছে না।”

    “আসলে, রাচেল খুব সাহস করেই বললো। “আরেকটা সম্ভাবনা রয়েছে।”

    সবাই তার দিকে তাকালো, তাদের সন্দেহটা নিশ্চিত।

    রাচেল হাসলো, “লবন এবং প্লংটনের উপস্থিতির আরেকটি যুক্তিযুক্ত কারণও রয়েছে।” সে টোল্যান্ডের দিকে তাকিয়ে মুখ টিপে হাসলো। “আর সত্যি বলতে কী, মাইক, এটা তোমার কাছে ধরা পড়েনি বলে আমি খুবই অবাক হয়েছি।”

    ৪২

    “প্লাংটন হিমবাহের মধ্যে জমে গিয়েছিলো?” কর্কির কথাটা শুনে মনে হলো না রাচেলের কথাটা সে মানতে পারছে। “সাধারণ কোনো জিনিস বরফে জমে গেলে সেটা মারা যায়। কিন্তু এই জিনিসগুলো জ্বলছিলো, মনে আছে?”

    “আসলে,” টোল্যান্ড বললো, রাচেলের দিকে অভিভূত হয়ে তাকালো সে। “তার কথায় যুক্তি আছে। অনেক প্রজাতিই আছে জমে গিয়ে আবার পরিস্থিতি অনুকূলে এলে জীবন্ত হয়ে ওঠে। এই ব্যাপারটা নিয়ে আমি আমার টিভি অনুষ্ঠানে একটা পর্ব করেছিলাম।”

    রাচেল মাথা নাড়লো। “তুমি দেখিয়েছিলে মর্দান পাইক বরফে জমে গিয়ে পরে বরফ পানি হলে সাঁতার কেটে চলে গিয়েছিলো। তুমি আরো দেখিয়েছিলে, এক ধরণের আনুবীক্ষণিক জীব, যাদের নাম জলজ-ভালুক’, তারা মরুভূমিতে পুরোপুরি ডিহাইড্রেট হয়ে এক দশক টিকে ছিলো। তারপর বৃষ্টির সময় তারা আবার সক্রিয় হয়ে ওঠে।”

    টোল্যান্ড সুর তুললো। “তাহলে তুমি আসলেই আমার অনুষ্ঠানটা দেখে থাকো?”

    রাচেল একটু বিব্রত হয়ে কাঁধ ঝাঁকালো।

    “তোমার পয়েন্টটা কী, মিস সেক্সটন?” নোরা জানতে চাইলো।

    “তার পয়েন্টটা হলো,” টোল্যান্ড বললো, “এক ধরণের প্লংটন প্রতি শীতেই জমে যায়, বরফের নিচে শীতন্দ্রিায় থাকে, তারপর প্রতি গ্রীষ্মে সাঁতার কেটে চলে যায়।” টোল্যান্ড একটু থামলো। “মানছি, সেই প্রজাতিটা বায়োলুমিনিসেন্ট নয়, যেটা আমরা এখানে দেখেছি, কিন্তু হতে পারে একই ঘটনা এখানে ঘটেছে।”

    “বরফে জমে যাওয়া প্লংটন,” রাচেল বলতে লাগলো, টোল্যান্ড তার আইডিয়ার সাথে একমত দেখে উত্তেজনা অনুভব করলো। “এখানে যা দেখেছি সেটাকে ব্যাখ্যা করতে পারে। অতীতের কোনো এক সময় এখানে ফাটল ছিল, সেখান দিয়ে লবন পানি আর পাংটন এসে জমে গিয়েছিলো। যদি এই হিমবাহের জমে যাওয়া পকেট থেকে থাকে তবে কি হবে? জমে যাওয়া লবন পানিতে জমে যাওয়া প্লংটন ছিলো? ভাবুন, উল্কাটা গরম করার সময় ঐ জমে যাওয়া পকেটটা গলে পানি হয়ে গিয়েছে, শীতন্দ্রিা থেকে প্লাংটনগুলো জেগে ওঠেছে।”

    “ওহ্, ঈশ্বরের দোহাই!” নোরা গর্জে উঠে বললো, “হঠাৎ করেই দেখছি সবাই হিমবাহবিদ হয়ে গেছে!”

    কর্কিকেও সন্দেহগ্রস্ত বলে মনে হলো। কিন্তু পিওডিএস স্ক্যানে তো এটা ধরা পড়েনি। লবন-পানি আর মিঠাপানির ঘনত্বের কিন্তু পার্থক্য রয়েছে। সেটাতো ধরা পড়ার কথা।”

    “খুব একটা পার্থক্য নেই,” রাচেল বললো।

    “চার শতাংশ খুবই ভালো পার্থক্য,” নোরা বললো।

    “হ্যাঁ, সেটা ল্যাবে,” রাচেল জবাব দিলো। “কিন্তু পিওডিএস মহাশূন্যের ১২০ মাইল দূর থেকে হিসাবটা নিয়েছে।” সে নাসা প্রধানের দিকে ঘুরল। পিওডিএস যখন মহাশূন্য থেকে ঘনত্ব মাপে, তখন এটা লবনাক্ত বরফ আর বিশুদ্ধ পানির বরফের মধ্যে পার্থক্য ধরতে পারে না, আমি কি ঠিক বলেছি?”

    নাসা প্রধান মাথা নাড়লো। “ঠিক। চার শতাংশ পার্থক্যটা পিওডিএস’র সর্বনিম্ন হিসাবের নিচে। স্যাটেলাইট লবন পানির বরফ আর বিশুদ্ধ পানির বরফকে এক বলেই চিহ্নিত করবে।”

    টোল্যান্ড কৌতূহলেী হয়ে উঠলো। “এতে করে গর্ভের পানির স্তরের পরিসংখ্যানটারও ব্যাখ্যা পাওয়া যায়। সে নোরার দিকে তাকালো। “গর্তে যে প্লংটন দেখা গেছে তুমি সেটার কী যেনো নাম বলেছিলে–

    “জি পলিহেড্রা,” নোরা বললো। “এখন তুমি ভাবছো জি পলিহেড্রার বরফের মধ্যে শীতন্দ্রিায় যাবার ক্ষমতা রয়েছে কিনা? তুমি শুনে খুশি হবে, উত্তরটা হলো, হ্যাঁ। অবশ্যই, আর কোনো প্রশ্ন?”

    সবাই একে অন্যের দিকে চাওয়া চাওয়ি করলো। সে এইমাত্র যা বললো তাতে রাচেলের তত্ত্বটির পক্ষেই যায়।

    “তো, তুমি বলছো, এটা সম্ভব, ঠিক? এই তত্ত্বটি গ্রহনযোগ্য?”

    “অবশ্যই,” নোরা বললো, “যদি তুমি পুরোপুরি সময়টা কমিয়ে আনতে পারো।”

    রাচেল তাকিয়ে রইলো। “কী বললেন, বুঝলাম না?”

    নোরা ম্যাঙ্গোর রাচেলের চোখের দিকে স্থির তাকিয়ে রইলো। “অল্পবিদ্যা ভয়ঙ্কর, তাই না? বিশ্বাস করো, আমি যখন বলবো, তখন এই সত্যটা আরো বেশি করে বুঝতে পারবে।”

    নোরা বাকি চার জন লোকের দিকে তাকালো। “আমাকে একটু পরিস্কার করে বলতে দাও। মিস সেক্সটন যেমনটি বলছে লবন-পানির জমে যাওয়া পকেট, এটা ঠিকই আছে। এগুলোকে হিমবাহবিদরা বলে থাকে আভ্যন্তরীণ ফাঁটল। কিন্তু এই ছিদ্রগুলো বা ফাঁটলগুলো মানুষের চুলের মতোই সরু।”

    এক্সট্রম ভুরু তুললো। “তাহলে এটা সম্ভব, নাকি অসম্ভব?”

    “আপনার জীবদ্দশায়,” নোরা সাদামাটা কণ্ঠে বললো। “একেবারেই অসম্ভব। যদি থাকতো আমার নমুনাতে সেটা আমি পেতাম।”

    “আপনার নমুনাগুলো বিক্ষিপ্তভাবে নেয়া হয়েছে, ঠিক?” রাচেল জিজ্ঞেস করলো। “এটা কি হতে পারে না যে, দুর্ভাগ্যের কারণে কোনো পকেটের নমুনা নেয়া হয়নি?”

    “আমি যেভাবে করেছি তাতে বাদ পড়ার কথা নয়।”

    “এমনি জিজ্ঞেস করলাম।”

    ‘ব্যাপারটা হলো,” নোরা বললো, “এইসব ভেতরের ফাটল ঘটে থাকে ঋতুর বরফে– প্রতি ঋতুতে যে বরফ পড়ে আর গলে। মিলনে আইস শেফ হলো দ্রুত বরফ– মানে যে বরফ পাহাড়ে জমে সাগরে গিয়ে পড়ে। তাই এইসব পকেট তত্ত্ব অসাড়। তাই ওখানে প্লাংটন থাকারও কোনো সম্ভাবনা নেই।”

    সবাই চুপ মেরে গেলো।

    বরফে জমে যাওয়া প্লংটনের তত্ত্বটি এভাবে বাতিল হলেও রাচেলের ডাটা বিশ্লেষণের সিস্টেম-এর কারণে বাতিল করে দেয়াটা মেনে নিতেই হলো। রাচেল জানে হিমবাহের নিচে প্লংটনের উপস্থিতির ধাঁধাটার সমাধান সহজই হবে। পারসিমনির নিয়ম, সে ভাবলো। তার এনআরও’র ইনস্ট্রাক্টর এই কথাটা তার মাথায় ঢুকিয়ে দিয়েছিলো। যখন একাধিক ব্যাখ্যার অস্তিত্ব থাকবে, তখন সবচাইতে সহজ-সরলটিই বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সঠিক হয়।

    “আমি যা জানি,” রাচেল বললো, “তা হলো, আমি হোয়াইট হাউজের সমস্ত কর্মচারীদেরকে বৃফ করে বলেছি যে, উল্কাখণ্ডটি পাওয়া গেছে সলিড বরফের মধ্যে, যার কোনো ফাঁটল বা ছিদ্র নেই। ১৭১৬ সার থেকে ওটা ওখানেই অক্ষত অবস্থায় চাপা পড়ে ছিলো, আর এটাই হলো জাঙ্গারসন ফল। সত্যটা এখন মনে হচ্ছে, প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়লো।”

    নাসা প্রধান নিশ্চুপ রইলো, তার চেহারায় যন্ত্রণার ছাপ।

    টোল্যান্ড গলাটা পরিস্কার করে নিলো। “আমি রাচেলের সাথে একমত। গর্তে লবন পানি আর প্লংটন রয়েছে। ব্যাখ্যা যা-ই হোক, এই গর্তটা মোটেই আবদ্ধ কোনো পরিবেশে ছিলো না।”

    কর্কিকেও অস্বস্তিতে ভুগতে দেখা গেলো, “হয়তো আপনাদের কাছে কথাটা মনঃপুত হবে না, কিন্তু আমার ক্ষেত্রে যখন আমরা ভুল করি, তখন সেটা সাধারণত বিলিয়ন বছরের তফাৎ হয়ে থাকে। এই প্লাংটন আর লবন-পানির ব্যাপারটা কি আসলে খুবই গুরুত্বপূর্ণ? আমি। বলতে চাচ্ছি, এতে করে উল্কাখণ্ডটিতে তো কোনো প্রভাব পড়বে না, ঠিক? আমাদের কাছে। তো এখনও ফসিলগুলো রয়েছে। সেটার বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে তো আর কেউ প্রশ্ন তুলছে না। যদি দেখা যায় আমাদের বরফের ডাটাতে ভুল রয়েছে, কেউ তো আর সেটা নিয়ে মাথা ঘামাবে না। তারা যা দেখবে সেটা হলো, আমাদের কাছে অন্য গ্রহের প্রাণের প্রমাণ রয়েছে কিনা।”

    “আমি দুঃখিত, ডক্টর মারলিনসন, রাচেল বললো, “অন্যগ্রহের প্রাণের ব্যাপারে দেয়া নাসা’র ডাটাগুলোতে সামান্যতম খুঁত থাকলেও সেটাতে সন্দেহের অবকাশ রয়েছে। তার মধ্যে ফসিলগুলোও পড়।”

    কর্কির মুখ হা হয়ে গেলো। “আপনি বলছেন কি? এইসব ফসিলও সন্দেহযুক্ত!”

    “আমি সেটা জানি, আপনি সেটা জানেন। কিন্তু জনগণ যদি কোনোমতে জানতে পারে যে নাসা’র বরফ নমুনাতে ক্রটি রয়েছে তবে তারা সঙ্গে সঙ্গে এমন সন্দেহও করবে যে, নাসা এ সম্পর্কে মিথ্যা বলেছে।”

    নোরা এগিয়ে এলো। “আমার বরফ সংক্রান্ত ডাটাতে সন্দেহের কিছু নেই।” সে নাসা প্রধানের দিকে ঘুরলো। “এটা আমি আপনাকে প্রমাণ দিতে পারবো যে, গর্তের মধ্যে কোনো লবনাক্ত পানি চুঁইয়ে ঢুকে পড়েনি!”।

    নাসা প্রধান তার চোখের দিকে দীর্ঘক্ষণ তাকিয়ে রইলো। “কীভাবে?”

    নোরা তার পরিকল্পনাটা জানালো। তার কথা শেষ হলে রাচেলকে মানতেই হলো, আইডিয়াটা যুক্তিপূর্ণ।

    নাসা প্রধানকে অবশ্য অতোটা নিশ্চিত মনে হলো না। “ফলাফলটা কি যথার্থ হবে?”

    “একশ ভাগ নিশ্চিত হবে,” নোরা তাকে আশ্বস্ত করলো। “উল্কাটি উত্তোলনের আশে পাশে যদি এক আউন্স লবন পানিও পাওয়া যায় তবে আপনি সেটা দেখতে পাবেন। এক ফোঁটা হলেও আমার যন্ত্রে সেটা ধরা পড়বে।”

    নাসা প্রধান ভুরু কুচকে বললো, “সময় কিন্তু বেশি নেই। কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই সংবাদ সম্মেলন হবে।”

    “আমি বিশ মিনিটের মধ্যেই ফিরে আসতে পারবো।”

    “হিমবাহের কতদূরে যেতে চান আপনি?”

    “বেশি দূরে নয়। দুশো গজ গেলেই হবে।”

    এক্সট্রম সায় দিলো। “আপনি নিশ্চিত এটা নিরাপদ হবে?”

    “আমি সঙ্গে ফ্রেয়ার নেবো,” নোরা জবাব দিলো। “আর মাইক আমার সঙ্গে যাবে।”

    টোল্যান্ডের মাথায় বজ্রাঘাত হলো। “আমি?”

    “হ্যাঁ, তুমিই মাইক! আমাকে যদি ঝড়ের বাতাস উড়িয়ে নিতে চায় তো আমার দরকার হবে শক্তিশালী দুটো বাহুর।”

    “কিন্তু-–”

    “সে ঠিকই বলেছে,” নাসা প্রধান টোল্যান্ডের দিকে ঘুরে বললো। “সে যদি যায়, একা যেতে পারবে না। আমি তার সঙ্গে আমার কয়েকজন লোককে দিতে পারি, কিন্তু আমি চাই এই সমস্যাটা সমাধান না হওয়া পর্যন্ত ব্যাপারটা আমাদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকুক।

    টোল্যান্ড সায় দিলো।

    “আমিও যেতে চাই,” রাচেল বললো।

    নোরা কোবরা সাপের মতো ফোঁস করে উঠলো। “আচ্ছা জালা তো দেখছি।”

    “আসলে,” নাসা প্রধান বললো, “আমার মনে হয় স্ট্যান্ডার্ড পদ্ধতিটা ব্যবহার করাই বেশি নিরাপদ হবে। আপনারা যদি দু’জনে যান, আর মাইক যদি পিছলে পড়ে যায়, আপনি একা তাকে তুলতে পারবেন না। দু’জনের চেয়ে চার জনই বেশি নিরাপদ হবে।” সে থেমে কর্কিন দিকে তাকালো। “তার মানে, হয় আপনি নয়তো ডক্টর মিং যাচ্ছেন।” এক্সট্রম হ্যাবিস্ফেয়ারের

    অন্যপাশটাতে তাকালো। “ডক্টর মিং কোথায়?”

    “আমি তাকে কিছুক্ষণ ধরেই দেখছি না,” টোল্যান্ড বললো। “সে হয়তো একটু ঘুমিয়ে নিচ্ছে।”

    এক্সট্রম কর্কির দিকে তাকালো আবার। “ডক্টর মারলিনসন, আমি চাই না আপনি বাইরে যান, তারপরও–”

    “কি?” কর্কি বললো। “সবাই যাই তাহলে,”

    “না!” নোরা বললো। “চার জন হলে আমরা খুব ধীর গতির হয়ে যাবো। মাইক এবং আমিই যাবো।”

    “আপনি একা যাচ্ছেন না।” নাসা’র প্রধান যেনো চূড়ান্ত কথাটা বললো। “চার জন যাওয়াই বেশি নিরাপদ। নাসা’র ইতিহাসে সবচাইতে বড় সাংবাদিক সম্মেলনের ঘণ্টা খানেক আগে একটা দুর্ঘটনা ঘটুক সেটা আমি চাই না।”

    ৪৩

    মারজোরি টেঞ্চের অফিসে ভারি বাতাসের মধ্যে বসে গ্যাব্রিয়েল এ্যাশের অদ্ভুত অস্বস্তি হতে লাগলো। এই মহিলা আমার কাছ থেকে আসলে চাচ্ছেটা কি? টেঞ্চ ডেস্কের ওপাশের চেয়ারে হেলান দিয়ে বসে আছে। গ্যাব্রিয়েলের অস্বস্তি তার কঠিন মুখে আনন্দ এনে দিয়েছে।

    “ধোঁয়ায় কি তোমার অসুবিধা হচ্ছে?” সিগারেটের ধোঁয়া ছেড়ে দিয়ে টেঞ্চ জিজ্ঞেস করলো।

    “না।” গ্যাব্রিয়েল মিথ্যা বললো।

    “তুমি এবং তোমার প্রার্থী নির্বাচনী প্রচারণায় নাসা’কে বেশ ভালোমতোই পেয়ে বসেছে।”

    “সত্য,” গ্যাব্রিয়েল তার রাগ না লুকিয়েই বললো। “উৎসাহ দেবার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। আমি একটা ব্যাখ্যা চাইছি।”

    টেঞ্চ একটা নির্দোষ হাসি দিলো। “তুমি জানতে চাও আমি নাসা’কে আক্রমণ করার জন্য তোমার কাছে ই-মেইল পাঠিয়েছি কেন?”

    “যে তথ্য আপনি আমার কাছে পাঠিয়েছেন সেটা আপনার প্রেসিডেন্টের ক্ষতি করেছে।”

    “আপাতত বলতে গেলে, হ্যাঁ।”

    টেঞ্চের কণ্ঠটা গ্যাব্রিয়েলকে আরো অস্বস্তিতে ফেলে দিলো। এর মানে কি?”

    “শান্ত হও, গ্যাব্রিয়েল। আমার ই-মেইল এ তেমন কিছু পরিবর্তন হবে না। আমার এখানে আসার আগেই সেক্সটন নাসা’র পেছনে লেগেছে। আমি কেবল তার মেসেজটা আরো পরিস্কার করতে সাহায্য করেছি। তার নিজের অবস্থা পোক্ত করার জন্য।”

    “তাঁর অবস্থা পোক্ত করার জন্য?”

    “একদম ঠিক।” টেঞ্চ হাসলো, “আমাকে বলতেই হচ্ছে, যা আজ সিএনএন এ সে বেশ ভালোভাবেই করতে পেরেছে।”

    গ্যাব্রিয়ল সিএনএন’র টক শোটার কথা স্মরণ করলো।

    টেঞ্চ আচমকা দাঁড়িয়ে পড়লো। সিগারেটের ধোঁয়া ছাড়তে ছাড়তে জানালার সামনে হেঁটে গেলো সে। একটা পাতলা এনভেলপ দেয়ালের শেলফ থেকে বের করে আনলো। তারপর ফিরে এসে আবার বসে পড়লো।

    গ্যাব্রিয়েল এনভেলোপটার দিকে তাকালো।

    টেঞ্চ হেসে এনভেলপটা সযত্নে কোলে রেখে দিলো। তার হলুদ রঙের সরু আঙুলগুলো সেটাতে টোকা মারছে।

    গ্যাব্রিয়েলের কেন জানি মনে হলো এই এনভেলপের ভেতরে তার সাথে সিনেটরের যৌন সম্পর্কের প্রমাণ রয়েছে। হাস্যকর, সে ভাবলো। তাদের সঙ্গমটা হয়েছিলো সেক্সটনের নিজস্ব অফিসে, বদ্ধ জায়গায়। আর হোয়াইট হাউজের কাছে যদি সত্যি কোনো প্রমাণ থাকতো, তবে তারা ইতিমধ্যেই সেটা জনসম্মুখে প্রকাশ করে দিতো।

    হতে পারে তারা সন্দেহ করছে, গ্যাব্রিয়েল ভাবলো, কিন্তু তাদের হাতে কোনো প্রমাণ নেই।

    টেঞ্চ সিগারেটে জোরে টান দিয়ে নিলো। “মিস, অ্যাশ, তুমি সচেতন আছে কিনা জানি না। তুমি এমন একটা যুদ্ধের মাঝখানে পাকড়াও হয়েছে যা ১৯৯৬ সালে পর্দার আড়ালে ওয়াশিংটনে শুরু হয়েছিলো।”

    “কী বললেন, বুঝতে পারলাম না?”

    টেঞ্চ আরেকটা সিগারেট ধরালো। “তুমি মহাশূন্য বাণিজ্যিকরণ বিল সম্পর্কে জানো কি?”

    গ্যাব্রিয়েল এরকম কোনো কিছুর কথা কখনও শোনেনি। সে কাঁধ ঝাঁকালো।

    “আসলেই?” টেঞ্চ বললো। “এটা আমাকে অবাক করছে। এই বিলটা ১৯৯৬ সালে সিনেটর ওয়াকার এনেছিলেন। বিলটার মূল বক্তব্য ছিলো, চাঁদে মানুষ পাঠাবার পর থেকে নাসা পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে। এতে বলা হয়েছিলো নাসা’কে প্রাইভেট সেক্টরে ছেড়ে দিতে। মুক্তবাজার অর্থনীতিতে যেমনটি খুবই স্বাভাবিক। এতে করে নাসা’কে বহন করার বোঝাটা লাঘব হবে, বাড়তি আয়ও হবে।”

    গ্যাব্রিয়েল এই ধরণের কথা এর আগে শুনেছে। কিন্তু সেটা যে বিল আকারে আনা। হয়েছিলো সেটা সে জানতো না।

    “এই বিলটা কংগ্রেসে চার বার আনা হয়েছিলো।” টেঞ্চ বললো, “কিন্তু হোয়াইট হাউজ প্রতিবারই এতে ভেটো দিয়েছে। জাখারি হার্নিও দুবার ভেটো দিয়েছেন।”

    “আপনি বলতে চাচ্ছেন কী?”

    “আমার কথা হলো, সিনেটর সেক্সটন যদি প্রেসিডেন্ট হন তবে এই বিলটা অনুমোদন করবেন তিনি।”

    “আমি যতোটুকু জানি, সিনেটর সেক্সটন কখনই জনসম্মুখে নাসা’কে বানিজ্যিকরণ করার কথা বলেননি।

    “সত্যি। আর তাঁর রাজনীতিটা যদি বুঝে থাকি, তবে তাঁকে এই বিলটার পক্ষে যেতে দেখলে তুমি অবাক হবে না।”

    “মুক্ত বাজার অর্থনীতিতে যেকোন সিস্টেম ভালভাবে কাজ করে।”

    “আমি এটাকে ‘হ্যাঁ’ বলেই নিচ্ছি।” টেঞ্চ বললো, “দুঃখজনক হলেও সত্য যে, নাসা’কে প্রাইষ্টে খাতে ছেড়ে দেয়াটা উদ্ভট ধারণা, তাই হোয়াইট হাউজের সব প্রশাসকই এই বিলটা বাতিল করে দিয়েছেন।”

    “আমি এ ব্যাপারে যুক্তি-তর্কগুলো শুনেছি,” গ্যাব্রিয়েল বললো। “আর আমি আপনার দুর্ভাবনার ব্যাপারটাও বুঝতে পারছি।”

    “তাই?” টেঞ্চ তার দিকে ঝুঁকে পড়লো। “কোনো বিতর্কটা তুমি শুনেছো?”

    গ্যাব্রিয়েল একটু নড়েচড়ে বসলো। “তো, বেশিরভাগই একাডেমিক– যাতে আলোচনা করা হয়েছিলো নাসা’কে প্রাইভেট খাতে ছেড়ে দিলে তারা কেবল লাভজনক প্রকল্পই গ্রহণ করবে, মহাশূন্য গবেষণার বৈজ্ঞানিক জ্ঞান আহরণ বন্ধ করে দেবে।”

    “সত্য। মহাশূন্যে বিজ্ঞান এক মুহূর্তেই থেমে যাবে। আমাদের মহাবিশ্বের গবেষণায় টাকা খরচ না করে তারা মহাশূন্যে হোটেল বানাবে, মহাশূন্য পর্যটক নিয়ে লাভজনক ব্যবসায়। মেতে উঠবে। বাণিজ্যিক স্যাটেলাইট উৎক্ষেপনের প্রস্তাব দেবে। ব্যক্তিগত খাত আমাদের মহাবিশ্বের উৎপত্তি নিয়ে গবেষণা করবে না। খালি খালি বিলিয়ন ডলার খরচ করে তো তারা আর্থিকভাবে লাভবান হবে না।”

    “তারা সেটা করবে না, গ্যাব্রিয়েল পাল্টা জবাব দিলো, “মহাশূন্য বিজ্ঞান নিয়ে গবেষণা কার জন্য নিশ্চিতভাবেই জাতীয় পর্যায়ের কোনো প্রতিষ্ঠান থাকবে।”

    “সেরকম প্রতিষ্ঠান তো ইতিমধ্যেই আমাদের কাছে রয়েছে। এটাকে বলে নাসা।”

    গ্যাব্রিয়েল চুপ মেরে গেলো।

    ‘লাভের কারণে বিজ্ঞানকে পরিত্যাগ করার ব্যাপারটা সাইড ইসু,” টেঞ্চ বললো। “আসল সমস্যা হবে অন্য বিষয় নিয়ে। চারপাশে আবার আমরা ওয়াইল্ড-ওয়েস্ট দেখতে পাবো। আমরা দেখতে পাবো, কেউ কেউ চাঁদে এবং এস্টরয়েড-এ পদার্পণের দাবিকরছে তারা এবং শক্তি দিয়ে বাধ্য করবে সেটা মেনে নিতে। আমি শুনেছি অনেক কোম্পানি আবেদন করেছে আকাশে নিয়ন বিলবোর্ড স্থাপনের জন্য, রাতের আকাশে সেটা জ্বালিয়ে প্রচার কাজ করবে। আমি দেখেছি মহাশূন্য হোটেল আর পর্যটনের জন্য আবেদন করা হয়েছে। সত্যি বলতে কী, গতকালকে আমি একটা প্রস্তাবের কথা শুনেছি, এক কোম্পানি মহাশূন্যকে একটি জমকালো সমাধি বানাতে চাচ্ছে। মৃতদেহ অধির কক্ষপথে ছেড়ে দিয়ে তারা এটা করবে। তুমি কি ভাবতে পার, আমাদের যোগাযোগ উপগ্রহগুলো মৃতদেহের সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত হচ্ছে? গত সপ্তাহে, আমার অফিসে একজন বিলিয়ন ডলার ব্যবসায়ী এসে প্রস্তাব দিয়েছে যে, পৃথিবীর কাছাকাছি কোনো এস্টরয়েডকে টেনে এনে সেটা থেকে খনিজ সম্পদ উত্তোলন করার। আমি লোকটাকে স্মরণ করিয়ে দিলাম যে, এভাবে কোনো এস্টরয়েডকে টেনে আনলে পৃথিবীর জন্য ভয়ঙ্কর বিপদের ঝুঁকি রয়েছে। মিস অ্যাশ, আমি আপনাকে নিশ্চিত করে বলতে পারি, এই বিলটা পাস হলে মহাশূন্য ব্যবসায়ীদের বিচরণক্ষেত্র হয়ে যাবে, কোনো রকেট বিজ্ঞানীর স্থান সেখানে হবে না।”

    “যুক্তিগুলো ভালোই,” গ্যাব্রিয়েল বললো, “আমি নিশ্চিত সিনেটর যদি ওরকম পদে আসীন হন তবে কোনোটা ভালো আর কীভাবে সেটা করতে হবে, তা তিনি ভালো করেই জানবেন। আমি কি আপনাকে জিজ্ঞেস করতে পারি এসবের সাথে আমার কী সম্পর্ক?”

    টেঞ্চ সিগারেটে একটা টান দিয়ে বলতে শুরু করলো। “এই বিলটা পাস হবার ব্যাপারে। এখন একমাত্র বাধা হলো প্রেসিডেন্টের ভেটো। আর এই বিলটা অনুমোদনের জন্য যেসব কোম্পানি উঠে পড়ে লেগেছে তারা বিলিয়ন ডলার মুনাফার জন্য মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার ব্যয় করতে ইচ্ছুক।”

    “তাহলে আমার আদেশ হলো জাখ হার্নি বিলটাতে ভেটো দিয়ে দিক।”

    “আমার ভয় হলো তোমার প্রার্থীকে নিয়ে। তিনি নির্বাচিত হলে অতোটা বিবেচনার পরিচয় নাও দিতে পারেন।”

    “আবারো বলছি, সিনেটর ক্ষমতা পেলে দায়িত্বপূর্ণ আচরণই করবেন। বিলটাও সেভাবেই বিচার করবেন।”

    টেঞ্চকে পুরোপুরি আশ্বস্ত বলে মনে হলো না। “তুমি কি জানো, সিনেটর সেক্সটন মিডিয়া বিজ্ঞাপনের জন্য কত টাকা ব্যয় করেছেন?”

    গ্যাব্রিয়েল অবাক হলো। “এই সংখ্যাটা জনগণ জানে।”

    “মাসে তিন মিলিয়ন ডলার।”

    গ্যাব্রিয়েল কাঁধ ঝাঁকালো। আপনি যেমন ইচ্ছে বলতে পারেন। সংখ্যাটা অবশ্য কাছাকাছিই।

    “এটাতো অনেক টাকা।”

    “তাঁর অনেক টাকাই তো আছে।”

    “হ্যাঁ, তার পরিকল্পনা ভালো ছিলো। অথবা বলা চলে, ভালো বিয়ে করেছেন।” টেঞ্চ মুখ থেকে ধোঁয়া ছাড়লো। “তাঁর স্ত্রী ক্যাথারিনের বিষয়টা খুবই দুঃখজনক। তার মৃত্যু সিনেটরকে প্রচণ্ড আঘাত করেছিলো। তাঁর মৃত্যুটা তো খুব বেশি আগের নয়, তাই না?”

    “আসল কথা বলুন, নয়তো আমি চলে যাচ্ছি।”

    টেঞ্চ ধোঁয়া ছেড়ে এনলেপটা হাতে নিলো আবার। সে ভেতর থেকে একগাদা কাগজ বের করে গ্যাব্রিয়েলের কাছে দিলো।”সেক্সটনের অর্থনৈতিক রেকর্ড।”

    গ্যাব্রিয়েল দলিলোটার দিকে বিস্ময়ে তাকালো। রেকর্ডগুলো কয়েক বছর আগে থেকেই শুরু হয়েছে। যদিও গ্যাব্রিয়েল সেক্সটনের এসব খবর রাখে না, তার পরও সে আঁচ করতে পারলো ডাটাগুলো বিশ্বস্ত।”এটাতো ব্যক্তিগত তথ্য। আপনি এগুলো কোথায় পেলেন?”

    “কোত্থেকে পেয়েছি সেটা নিয়ে তোমার মাথা ঘামানোর দরকার নেই। কিন্তু তুমি যদি ভালো করে ডাটাগুলো খতিয়ে দেখো তবে বুঝতে পারবে এতো টাকা সিনেটরের থাকার কথা নয়। ক্যাথারিনের মৃত্যুর পর, তাঁর বিশাল সহায় সম্পত্তি হস্তগত করে বিনিয়োগ করেছেন তিনি, ব্যক্তিগত কাজেও ব্যয় করেছেন, আর প্রাথমিকভাবে মনোনয়ন পাবার জন্য ব্যয় করেছেন প্রচুর। ছয় মাস আগে, আপনার প্রার্থী পুরোপুরি নিঃস্ব হয়ে গিয়েছিলো।”

    গ্যাব্রিয়েল বুঝতে পারলো এটা একটা ধোকা। সেক্সটন যদি নিঃস্ব হয়ে গিয়ে থাকেন তো তিনি এভাবে নির্বাচনে দাঁড়াতেন না। তিনি প্রতি সপ্তাহেই প্রচুর বিজ্ঞাপনী সময় কিনে নিচ্ছেন।

    “তোমার প্রার্থী,” টেঞ্চ বললো, “বর্তমানে প্রেসিডেন্টের চেয়ে চারগুণ বেশি খরচ করছেন। আর তার কোনো ব্যক্তিগত টাকাও নেই।”

    “আমরা অনেক অনুদান পাচ্ছি।”

    “হ্যাঁ, সেগুলোর কিছু কিছু বৈধও বটে।”

    গ্যাব্রিয়েল চমকে গেলো। “কী বললেন?”

    টেঞ্চ তার আরো কাছে এসে দাঁড়ালো। “গ্যাব্রিয়েল অ্যাশ, আমি তোমাকে একটা প্রশ্ন। করবো, খুব ভেবে উত্তর দেবে। এতে করে তুমি পরবর্তী পাঁচ বছর জেলে থাকবে কিনা সেটা নির্ভর করবে। তুমি কি এ ব্যাপারে সচেতন আছে যে, সিনেটর সেক্সটন এ্যারোস্পেস। কোম্পানির কাছ থেকে প্রচুর পরিমাণে অবৈধ টাকা নিয়েছেন, যারা নাসা’কে প্রাইভেট খাতে দিয়ে দিলে বিলিয়ন ডলার আয় করবে?”

    গ্যাব্রিয়েল চেয়ে রইলো।এটাতো উদ্ভট অভিযোগ!”

    “তুমি কি বলছে, এ ব্যাপারটা তোমার জানা নেই?”

    “আমার মনে হয়, এরকম কিছু হলে আমি অবশ্যই জানতাম।”

    টেঞ্চ শীতলভাবে হাসলো। “গ্যাব্রিয়েল, আমি বুঝি, তোমার সাথে সিনেটর অনেক বেশিই ঘনিষ্ঠ। কিন্তু আমি তোমাকে আশ্বস্ত করতে চাই তার অনেক কিছুই তোমার জানা নেই।”

    গ্যাব্রিয়েল উঠে দাঁড়ালো।”এই মিটিংটা শেষ।”

    “বরং বলা চলে, এনভেলপ থেকে কতগুলো জিনিস টেবিলে ছড়িয়ে দিয়ে টেঞ্চ বললো, “এই মিটিংটা সবে শুরু হলো।”

    ৪৪

    হ্যাবিস্ফেয়ারের ‘স্টেজিং-রুম’ এর ভেতরে ঢুকে রাচেল সেক্সটনের নিজেকে একজন নভোচারী বলে মনে হলো, কারণ সে নাসা’র মার্ক-১০ মাইক্রোক্লাইমেট সুট পড়েছে। এটার দুটো স্তর, একটা হলো মেমোরি ফোম ফেব্রিক, যার ভেতর দিয়ে এক ধরণের জেল পাম্প হয়ে থাকে। যাতে পোশাক পরা ব্যক্তির শরীরের তাপমাত্রা ঠাণ্ডা এবং গরম দুটোতেই ঠিক থাকে।

    এখন, রাচেল পোশাকটার শেষ বোতাম লাগাতেই দেখতে পেলো নাসার প্রধান দরজার সামনে চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে। এই ছোট্ট মিশনটার প্রয়োজনীয়তা নিয়ে সে খুশি নয় বোঝাই যাচ্ছে।

    সবার পোশাক পরা হলে নোরা ম্যাঙ্গোর গজগজ করতে লাগলো। “এখানে দেখি আরেকটা বাড়তি লিঙ্গ আছে, কর্কির পোশাকটাতে টোকা মেরে সে বললো।

    টোল্যান্ড ইতিমধ্যেই অর্ধেক পোশাক পরে ফেলেছে।

    রাচেল চেইনটা লাগিয়ে ফেললো, নোরা রাচেলের পাশে একটা টিউব নিয়ে পিঠে লাগানো। সিলভারের বাক্সে লাগিয়ে দিলো।

    “শ্বাস নাও,” মোরা বললো।

    রাচেল একটা হিস করে শব্দ শুনতে পেলো এবং টের পেলো সুটের ভেতরে সেটা ঢুকছে। মেমোরি ফোমটা বাড়তে লাগলো। তার চারপাশে সুটটা চাপ দিতে শুরু করলো। মাথার ওপর হুডটা ফেলে দিতেই সেটা তার দুকানে চাপ দিলো। আমি কোকুনের ভেতরে ঢুকে গেছি।

    “এই পোশাকের সবচাইতে ভালো দিকটা হলো,” নোরা বললো, “প্যাড দেয়াটী। তুমি আছাড় খেলেও টের পাবে না।”

    রাচেল সেটা বিশ্বাস করলো।

    নোরা রাচেলের হাতে কতগুলো যন্ত্রপাতি দিয়ে দিলো-বরফ কুড়াল একটি, ক্যারাবাইনার সেটা সে কোমরের বেল্টের সাথে লাগিয়ে নিলো এবং টিথার স্ন্যাপ।

    “এতো সব?” রাচেল জিজ্ঞেস করলো। “দুশ গজ দূরে যাবার জন্য?” নোরার চোখ কুচকে গেলো। “তুমি আসতে চাও নাকি?”

    রাচেলকে আশ্বস্ত করার ইশারা করলো টোল্যান্ড, “নোরা কেবল সতর্কতার জন্য এরকম করছে।”

    কর্কি পোশাকটা পরে বললো, “আমার মনে হচ্ছে আমি বিশাল একটা কনডম পরেছি।” নোরা তিক্তভাবে আর্তনাদ করলো, “যেনো তুমি জানো, সতী ছেলে।”

    টোলান্ড রাচেলের পাশে বসে বললো, “তুমি কি নিশ্চত আমাদের সাথে যাবে?” তার চোখে তার প্রতি যত্নবান হবার ইঙ্গিত দেখা গেলো।

    রাচেল অবাক হয়ে ভাবলো, দুশ গজ … খুব তো বেশি নয়! তোমার কি ধারণা কেবল সাগরেই বেশি উত্তেজনা থাকে।”

    টোল্যান্ড মিটিমিটি হাসলো। “আমি ঠিক করেছি, আমি এই জমে যাওয়া বরফের চেয়ে তরল পানিই বেশি পছন্দ করি।”

    “আমি কখনই এ দুটোর ভক্ত ছিলাম না, রাচেল বললো, “ছোট বেলায় আমি একবার বরফে পড়ে গিয়েছিলাম, আর পানি দেখলেই তখন থেকে আমার নার্ভাস লাগে।”

    টোল্যান্ডের চোখে সহানুভূতি “শুনে দুঃখিত হলাম। এখানের কাজ শেষ হলে, তুমি আমার গয়া’তে বেড়াতে আসবে। আমি পানি সম্পর্কে তোমার ধারণা বদলে দেব, কথা দিচ্ছি।”

    আমন্ত্রণটা তাকে অবাক করলো। গয়া হলো টোল্যান্ডের গবেষণার জাহাজ– বিস্ময়কর সমুদ্র নামের প্রামান্য চিত্রে এটা দেখা যায়। সবার কাছেই পরিচিত।

    “সেটা এখন নিউজার্সির উপকূল থেকে বারো মাইল দূরে নোঙর করা আছে।” টোল্যান্ড বললো।

    “মনে হচ্ছে অদ্ভুত জায়গায় সেটা রয়েছে।”

    “মোটেও না। আমরা সেখানে নতুন একটা প্রামান্যচিত্র তৈরি করার কাজে আছি। তখনই প্রেসিডেন্ট খবর পাঠালেন। রিনা মোকারান এবং মেগা গ্রামের উপরে।”

    রাচেল ভুরু তুললো, “জিজ্ঞেস করেছি বলে খুশি হলাম।”

    টোল্যান্ড তার দিকে চেয়ে বললো, “আসলেই, আমি সেখানে কয়েক সপ্তাহ থাকবো, আর ওয়াশিংটন তো সেখান থেকে খুব বেশি দূরে নয়। সময় পেলে এসো। সারা জীবন পানিকে তোমার ভয় পাবার তো কোনো কারণ দেখছি না। আমার ক্রুরা তোমার জন্য লাল গালিচা বিছিয়ে দেবে।”

    নোরা ম্যাঙ্গোরের কণ্ঠটা গর্জে উঠলো। “আমরা কি বাইরে যাচ্ছি, নাকি তোমাদের দু’জনের জন্য কিছু মোমবাতি আর শ্যাম্পেইন এনে দেব?”

    ৪৫

    গ্যাব্রিয়েল অ্যাশ বুঝতে পারলো না মারজোরি টেঞ্চের ডেস্কের ওপর ছড়িয়ে দেয়া কাগজগুলো দিয়ে সে কী করবে। কাগজগুলোর মধ্যে ফটোকপি, চিঠিপত্র, ফ্যাক্স, টেলিফোন সংলাপের লিখিত বিবরণ, সবগুলোই সিনেটর সেক্সটনের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের পক্ষেই রায় দিচ্ছে।

    টেঞ্চ কতগুলো সাদা-কালো ছবি গ্যাব্রিয়েলের দিকে বাড়িয়ে দিলো। “আমার ধারণা। এগুলো তোমার কাছে নতুন?”

    গ্যাব্রিয়েল ছবিলোর দিকে তাকালো। প্রথম ছবিটাতে দেখা যাচ্ছে সেক্সটন ভূ-গর্ভস্থ গ্যারাজে একটা ট্যাক্সি থেকে নামছেন। সেক্সটন কখনও ট্যাক্সি ব্যবহার করেন না। গ্যাব্রিয়েল দ্বিতীয় ছবিটার দিকে তাকালো– সেক্সটন একটা ছোট সাদা ভ্যানে ঢুকছেন। ভ্যানে একজন বৃদ্ধকে অপেক্ষা করতে দেখা যাচ্ছে।

    “এই লোকটা কে?” জিজ্ঞেস করলো গ্যাব্রিয়েল, তার সন্দেহ হলো ছবিগুলো ভূয়া।

    “এসএফএফ-এর একজন হোমরাচোমরা।”

    “স্পেস ফ্রন্টিয়ার ফাউন্ডেশন?” গ্যাব্রিয়েল জিজ্ঞেস করলো।

    এসএফএফ হলো প্রাইভেট স্পেস কোম্পানির একটি ইউনিয়ন। তারাই নাসা’কে প্রাইভেট খাতে দিয়ে দেবার জন্য উঠে পড়ে লেগেছে।

    “এসএফএফ, টেঞ্চ বললো, “বর্তমানে একশরও বেশি বড় বড় করপোরেশনকে প্রতিনিধিত্ব করে। যারা বিলটী পাস করার জন্য অপেক্ষা করছে।”

    গ্যাব্রিয়েল এটা বিবেচনা করলো। সঙ্গত কারণেই এসএফএফ সিনেটরের পক্ষ নিয়েছে। কিন্তু তাদের সাথে বেশি ঘনিষ্ঠ হলে তাঁর সমস্যা হবে।

    “এই ছবিতে উন্মোচিত হয়েছে,” টেঞ্চ বললো, “তোমার প্রার্থী এমন একটি সংগঠনের সঙ্গে গোপনে মিটিং করছেন যারা প্রাইভেট স্পেস উদ্যোক্ততাদের প্রতিনিধত্ব করে থাকে।” টেঙ্ক আরো কিছু কাগজপত্রের দিকে ইশারা করলো। আমাদের কাছে এসএফএফ-এর আভ্যন্তরীন মেমোও রয়েছে, যাতে দেখা যায় সংগঠনের কোম্পানিগুলো থেকে বিরাট অংকের টাকা তুলে সেটা সিনেটরের একাউন্টে স্থানান্তর করা হয়েছে, যাতে করে এইসব কোম্পানি সেক্সটনকে হোয়াইট হাউজে বসাতে পারে। তাই সেক্সটন নির্বাচিত হলে অবশ্যই বিলটা অনুমোদন করবেন, এটা বলা যায়।”

    গ্যাব্রিয়েল কাগজগুলোর দিকে তাকিয়ে সম্ভষ্ট হতে পারলো না। “আপনি কি এটা আমাকে বিশ্বাস করতে বলছেন যে, হোয়াইট হাউজের কাছে তার প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে নির্ভরযোগ্য অবৈধ অর্থ গ্রহণের প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও তারা কোনো কারণে সেটা গোপনই রেখেছে?”

    “তুমি কি বিশ্বাস করো?”

    গ্যাব্রিয়েল তাকালো। সত্যি বলতে কী, কুক্ষিগত করার ব্যাপারে আপনার দক্ষতার কথাটা বিবেচনা করলে, আমার মনে হচ্ছে যে, আপনি কিছু ভুয়া কাগজপত্র আর ডেস্কটপ পাবলিশিং কম্পিউটার ব্যবহার করে একটা নোংরা খেলাতে মেতেছেন।”

    “এটা সম্ভব, মানছি আমি। কিন্তু সেটা সত্য নয়।”

    “না? তাহলে এইসব দলিল দস্তাবেজ পেলেন কোত্থেকে?”

    “এসব তথ্য এসেছে একটি অসমর্থিত সূত্রের উপহার হিসেবে।”

    গ্যাব্রিয়েল কিছুই বুঝতে পারলো না।

    “ওহ্, হ্যাঁ,” টেঞ্চ বললো। “আমাদের কাছে এরকম অনেক আছে। প্রেসিডেন্টের বহু শক্তিশালী মিত্র আছে, যারা তাকে ক্ষমতায় দেখতে চায়।”

    গ্যাব্রিয়েল কথাটার মর্ম বুঝতে পারলো। এফবিআই এবং আইআরএস’র অনেক লোক আছে যারা এধরণের তথ্য যোগাড় করতে পারে। তারা প্রেসিডেন্টকে আবারো জিতে আসার। জন্য এসব তথ্য দিয়ে সাহায্য করতেই পারে। কিন্তু গ্যাব্রিয়েল বিশ্বাসই করতে পারলো না যে সিনেটর সেক্সটন অবৈধ টাকা গ্রহণ করবেন। “এইসব তথ্য উপাত্ত যদি সঠিক হয়ে থাকে, গ্যাব্রিয়েল বললো, “তবে আপনারা সেটা প্রকাশ করছেন না কেন?”

    “তোমার কি ধারণা?”

    “কারণ এগুলো অবৈধভাবে সংগৃহীত হয়েছে।”

    “কীভাবে আমরা পেয়েছি তাতে কিছু যায় আসে না।”

    “অবশ্যই তাতে যায় আসে।”

    “আমরা এটা সংবাদপত্রে দিয়ে দিতে পারি, আর তারা এটা নির্ভরযাগ্য সূত্রে প্রাপ্ত বলে চালিয়ে দিতে পারে। নির্দোষ প্রমাণিত হবার আগ পর্যন্ত সেক্সটন অপরাধী বলেই বিবেচিত হবেন। তাঁর নাসা-বিরোধী কথাবার্তা এই ঘুষ নেবার ব্যাপারটাকে প্রতিষ্ঠিত করবে।”

    গ্যাব্রিয়েল জানতে এটা সত্য। “চমৎকার, তো আপনারা তথ্যটা সংবাদপত্রে দিচ্ছেন না কেন?”

    “কারণ এটা নেতিবাচক। প্রেসিডেন্ট প্রতীজ্ঞা করেছেন নেতিবাচক কিছু করবেন না তাঁর নির্বাচনী প্রচারণায়।”

    হ্যাঁ, ঠিক তাই! “আপনি আমাকে এ কথা বিশ্বাস করতে বলছেন?”

    “এটা দেশের জন্যও নেতিবাচক হবে। এতে কয়েক ডজন কোম্পানি, যেখানে অনেক সৎ লোকও রয়েছে সেগুলোরও ক্ষতি হবে। এটা আমেরিকার সিনেটকেও অসম্মান করবে। অসৎ রাজনীতিকদের কারণে সবাই সন্দেহের তালিকায় পড়ে যাবে। আমেরিকা তার নেতৃত্বের কাছ থেকে সততা চায়। তাদের ওপর আস্থা রাখতে চায়। এটা প্রকাশ পেলে একটা তদন্ত হবে, তাতে করে একজন সিনেটরসহ অনেক বিখ্যাত এ্যারোস্পেস এক্সিকিউটিভকেও। জেলে যেতে হবে।”

    টেঞ্চের কথাতে যুক্তি থাকলেও গ্যাব্রিয়েল এই অভিযোগটাতে সন্দেহ করলো। এসবের সাথে আমার কি সম্পর্ক?”

    “শুধু জানুন, মিস অ্যাশ, আমরা এই তথ্য জানিয়ে দিলে আপনার প্রার্থীর জেলও হয়ে যাবে।” টেঞ্চ একটু থেমে আবার বললো, “যদিনা …”

    “যদিনা কি?” গ্যাব্রিয়েল বললো।

    টেঞ্চ সিগারেটে টান দিয়ে ধোঁয়া ছাড়লো। “যদিনা আমাদের এসব না করার জন্য সাহায্য করো।”

    ঘরে একটা নিরবতা নেমে এলো।

    টেঞ্চ একটু কাশলো। “গ্যাব্রিয়েল, শোনা, আমি এই তথ্যগুলো তোমাকে জানিয়েছি তিনটি কারণে। প্রথমত, এটা দেখানো যে, জাখ হার্নি একজন মার্জিত লোক, যিনি নিজের স্বার্থের চেয়ে সরকারের স্বার্থই বেশি দেখেন। দ্বিতীয়ত, তোমাকে এটা জানিয়ে দেয়া যে তোমার প্রার্থী মোটেই বিশ্বস্ত নয়। তৃতীয়ত, আমি এখন তোমাকে যে প্রস্তাবটা দেবো সেটা যেনো তুমি মেনে নাও।”

    “সেই প্রস্তাবটা হলো?”

    “আমি তোমাকে সঠিক কাজ করার একটা সুযোগ দিতে চাই। দেশপ্রেমের ব্যাপার। তুমি জানো কিনা জানি না, তুমি এই কেলেংকারিটা ধামাচাপা দেবার জন্য যোগ্য ব্যক্তি। যা আমি বলবো তুমি যদি সেটা কর, হয়তো প্রেসিডেন্টের টিমে তোমাকে ভালো একটা অবস্থানও দেয়া যাবে।”

    প্রেসিডেন্টের টিমে? গ্যাব্রিয়েল কথাটা বিশ্বাসই করতে পারলো না। “মিস টেঞ্চ, আপনি কী ভাবছেন জানি না, আমি কোনো ব্লাকমেইলে কাবু হবো না। আমি সিনেটরের হয়ে কাজ করি কারণ, আমি তার রাজনীতিতে বিশ্বাস করি। আপনি যে প্রস্তাব দেবেন সেটা যদি জাখ হার্নির রাজনীতিতে সুবিধা তৈরি করে দেয়, তবে তাতে আমার কোনো ভূমিকা থাকবে না! আপনারা যদি সেক্সটনের ব্যাপারে কিছু পেয়েই থাকেন তো আমি বলব সেটা প্রেসে চাউর করে দিতে। সত্যি বলতে কী, আমার মনে হয় পুরো ব্যাপারটাই ভূয়া।”

    টেঞ্চ একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো। “গ্যাবিয়েল তোমার প্রার্থীর অবৈধ ঘুষ নেয়ার ব্যাপারটা সত্য। আমি দুঃখিত। আমি জানি তুমি তাকে বিশ্বাস কর। দেখো, আমাদের দরকার হলে আমরা এ ব্যাপারটা অবশ্যই প্রকাশ করব, কিন্তু সেটা হবে খুবই কুসত একটি ব্যাপার। এতে করে অনেক কোম্পানি শেষ হয়ে যাবে, আর তাতে কর্মরত নির্দোষ হাজার হাজার মানুষকে চরম মূল্য দিতে হবে।” সে একটু থেমে আবার বললো, “আমরা আসলে, মানে প্রেসিডেন্ট এবং আমি আসলে অন্যভাবে সিনেটরকে পচাতে চাচ্ছি। যাতে করে কোনো নির্দোষ কেউ না ভোগে।” টেঙ্ক সিগারেটটা নামিয়ে হাত দুটো বুকের কাছে এনে বললো, ‘তুমি স্বীকার করো যে সিনেটরের সাথে তোমার যৌন সম্পর্ক রয়েছে।”

    গ্যাব্রিয়েলের সমস্ত শরীর কেঁপে উঠলো। অসম্ভব, গ্যাব্রিয়েল জানতো। এ ব্যাপারে কোনো প্রমাণ নেই। সঙ্গমটা মাত্র একবারই হয়েছিল। সেক্সটনের অফিসের দরজা বন্ধ অবস্থায়। টেরের কাছে কিছুই নেই। সে আন্দাজে ঢিল মারছে। গ্যাব্রিয়েল নিজের অবস্থান। ফিরে পাবার জন্য চেষ্টা করলো। “আপনি খুব বেশি আন্দাজ করেন মিস টেঞ্চ।”

    “কোনোটা? তোমার সাথে তার সম্পর্কন্টার কথা? অথবা তুমি তোমার প্রার্থীকে পরিত্যাগ করবে সেটা?”

    “দুটোই।”

    টেঞ্চ হেসে উঠে দাঁড়ালো। “তো, একটু প্রমাণ দেয়া যাক, এক্ষুণি। কী বলো?” সে আবার শেলফের দিকে গিয়ে একটা ফোল্ডার নিয়ে ফিরে এলো। তাতে হোয়াইট হাউজের ট্যাম্প লাগানো আছে। ওটা খুলে ভেতরের জিনিসগুলো গ্যাব্রিয়েলের ডেস্কের সামনে ছড়িয়ে দিলো।

    কয়েক ডজন রঙ্গীন ছবির দিকে তাকিয়েই গ্যাব্রিয়েল দেখতে পেলো তার পুরো ক্যারিয়ারটাই চোখের সামনে ধ্বসে পড়েছে যেনো।

    ৪৬

    হ্যাবিস্ফেয়ারের বাইরে কাটাবাটিক ঝড়টা এমনভাবে হিমবাহের ওপর বইছে যা মোটেও টোল্যান্ডের অতি চেনা সমুদ্রের ঝড়ের মতো নয়। সমুদ্রের ঝড় স্রোত আর চাপের সৃষ্টি করে। কাটাবাটিক সেদিক থেকে খুব সহজ– প্রচণ্ড ঠাণ্ডা বাতাস হিমবাহ থেকে ধেয়ে আসে যেনো স্রোত বয়ে চলছে। কাটাবাটিক যদি বিশ নটিক্যাল বেগে আসততা তবে তা একজন নাবিকের জন্য স্বপ্নের মত হত, কিন্তু এখন যেটা বইছে সেটা আশি নটিক্যাল বেগে, খুব সহজেই এটা দুঃস্বপ্নে পরিণত হতে পারে। এমনকি সমতল ভূমিতেও। টোল্যান্ড বুঝতে পারলো সে যদি থামে কিংবা একটু পেছনের দিকে হেলে যায় তবে বাতাস তাকে ফেলে দেবে।

    .

    টোল্যান্ড বরফের ঢালু দিয়ে চলছে। বরফের ঢালু খুব অল্পই, সাগরের দিকে গিয়ে মিশেছে। সাগরটা এখান থেকে দু’মাইল দূরে। তার বুটের ধারালো স্পাইক থাকা সত্ত্বেও টোল্যান্ডের মনে হচ্ছে একটু ভুল পদক্ষেপ হলেই বরফ ধ্বসে গড়িয়ে পড়বে সে। নোরা ম্যাঙ্গোরের দুই মিনিটের ‘হিমবাহ বিষয়ক নিরাপত্তা’ কোর্সটা এখন খুব বিপজ্জনকভাবেই অপ্রতুল বলে মনে। হচ্ছে।

    পিরানহা বরফ কুড়াল, স্টান্ডার্ড ব্রেড, বানা ব্রেড, হাতুড়ি এবং এজ নোরা বলেছিলো। তোমাদের মনে রাখতে হবে, কেউ যদি পিছু যায় তাতে এক হাতেম কুড়াল বরফে আঁটকে অন্য হাত দিয়ে ধরবে।

    এখন চারটা অবয়ব হিমবাহটার ওপর সোজা চলতে লাগলো, তাদেরকে একে অন্যের সাথে একটা দড়ি দিয়ে বেঁধে রাখা হয়েছে দশ ফুট দূরে দূরে। সবার আগে আছে নোর, তার পেছনে কর্কি। তারপর রাচেল আর টোল্যান্ড।

    যতোই তারা হ্যাবিস্ফেয়ার থেকে দূরে যাচ্ছিলো ততোই টোল্যান্ডের মনে হচ্ছিলো তারা কোনো সুদূরের গ্রহে হেঁটে চলেছে। ঘন মেঘ আর কুয়াশায় আকাশের চাঁদটা দেখা যাচ্ছে না। কাটাবাটিক ঝড়টা মনে হচ্ছে আরো বেড়ে গেছে। চারদিক গাঢ় অন্ধকার লাগছে। টোল্যান্ড চারপাশটা তাকিয়ে বুঝতে পারলো জায়গাটা খুবই বিপজ্জনক। নাসা প্রধান তাদের দু’জনের বদলে চার জনকে এমন বিপজ্জনক জায়গায় পাঠালো বলে টোল্যান্ড খুবই অবাক হলো। কারণ তাদের মধ্যে একজন আবার সিনেটরের কন্যা, অন্যজন এ্যাস্ট্রোফিজিস্ট। টোল্যান্ড রাচেল আর কর্কির ব্যাপারে বেশি সাবধানে আর দায়িত্বপূর্ণ হয়েছে কারণ সে জাহাজের

    ক্যাপ্টেন হিসেবে এ ধরণের দায়িত্ব পালন করে থাকে।

    “আমার পেছনেই থাকো,” নোরা চিৎকার করে বললো। তার কণ্ঠটা বাতাসের কারণে বোঝাই গেলো না। “ডেল্টাকে আগে যেতে দাও।”

    নোরা একটা এলুমুনিয়ামের ডে ব্যবহার করছে যাতে রয়েছে তার কিছু যন্ত্রপাতি। ভারি মালপত্র থাকা সত্ত্বেও ডেল্টা খুব ভালো মতোই সোজাসুজি চলছে।

    সামনের দলটার সাথে টোল্যান্ডের দূরত্ব বেড়ে যাওয়াতে সে একটু মাথা উঁচু করে সামনের দিকে তাকালো। মাত্র পঞ্চাশ গজ দূর।

    “ফিরে আসার ব্যাপারটা নিয়ে কি তুমি মোটেও চিন্তিত নও?” টোল্যান্ড চিৎকার করে বললো। “পেছনে তাকিয়ে হ্যাবিস্ফেয়ারটা একটুও দেখা-” তার কথাটা একটা হিস্ করে শব্দে বাঁধা পড়লো। নোরা একটা ফ্রেয়ার জ্বালিয়েছে। এতে করে দশ মিটার ব্যাসের জায়গা আলোকিত হয়ে উঠলো।

    “এইসব ফ্লেয়ার এক ঘণ্টার মতো টিকে থাকে-আমাদের ফিরে আসার জন্য যথেষ্ট সময়।” নোরা কিার করে বললো।

    এ কথা বলেই নোরা আবার সামনে দিকে এগোতে লাগলো। হিমবাহের ঢাল বেয়ে নিচের দিকে নেমে চললো সে-আবারো অন্ধকারের মধ্যে।

    ৪৭

    গ্যাব্রিয়েল অ্যাশ ঝড়ের বেগে মারজোরি টেঞ্চের অফিস থেকে বেড়িয়ে যাবার সময় একজন সেক্রেটারির সাথে প্রায় ধাক্কা লাগতে গিয়েছিলো। ঘোরের মধ্যে গ্যাব্রিয়েল কেবল ছবিগুলো দেখছিলো –দু’জন মানুষের ছবি– হাত-পা জড়াজড়ি করা। মুখে দু’জনেরই কামোচ্ছ্বাস আর উত্তেজনা।

    গ্যাব্রিয়েল ভেবেই পেলো না এই ছবিগুলো তোলা হলো কীভাবে, কিন্তু সে জানে এগুলো একেবারেই সত্যি। মনে হচ্ছে উপর থেকে কোনো গোপন ক্যামেরায় তোলা হয়েছে। ঈশ্বর আমাকে সাহায্য করে। একটা ছবিতে দেখা যাচ্ছে সিনেটরের ডেস্কেই তারা দু’জন সঙ্গম করছে, উপর থেকেই সেটা তোলা। তাদের দেহের চারপাশে অফিসিয়াল কাগজপত্র ছড়িয়ে আছে।

    মারজোরি টেঞ্চ ম্যাপরুমের সামনে গ্যাব্রিয়েলের সামনে এসে দাঁড়ালো। টেঞ্চের হাতে ছবির লাল এনভেলপটা ধরা। “তোমার প্রতিক্রিয়া দেখে আমার মনে হচ্ছে তুমি জানো। ছবিগুলো বিশ্বাসযোগ্য?” তার ভাবসাব দেখে মনে হচ্ছে খুব আমোদেই আছে। “আমি আশা করছি এগুলোর মতো অন্যান্য ডাটাগুলোও বিশ্বাসযোগ্য, এসব একই উৎস থেকে এসেছে।

    সিঁড়ি দিয়ে নামার সময় গ্যাব্রিয়েলের মনে হলো তার পুরো শরীরটা কাঁপছে। বের হবার পথটা গেলো কোথায়?

    টেঞ্চের চিকন পা দুটোও সমান তালে গ্যাব্রিয়েলের সাথে ছুটছে। “সিনেটর সেক্সটন বিশ্বের সামনে কসম খেয়ে বলেছেন যে তোমার সাথে তাঁর সম্পর্কটা একেবারেই নিখাদ। সহকারীর সম্পর্ক। টেলিভিশনে বলা তাঁর কথাটা পুরোপুরি বিশ্বাসযোগ্য বলেই মনে হয়েছিলো।” টেঞ্চ একটু পেছন দিকে ইঙ্গিত করে বললো, “আসলে, আমার অফিসে এটার ভিডিও টেপও রয়েছে। তুমি যদি চাও স্মৃতিটা ঝালাই করে নিতে পারো, কেমন?”

    গ্যাব্রিয়েলের স্মৃতি ঝালাই করার কোনো দরকার নেই। সংবাদ সম্মেলনটার কথা তার বেশ মনে আছে।

    “এটা খুবই দুর্ভাগ্যজনক,” টেঞ্চ বললো। তাকে খুব হতাশ মনে হলো না, “যে সিনেটর সেক্সটন আমেরিকানদের সামনে সুন্দর করেই মিথ্যা বলেছেন। জনগণের সত্য জানার অধিকার রয়েছে। তারা সেটা জানবে। আমি এটা ব্যক্তিগতভাবে দেখবো। একমাত্র প্রশ্ন হলো জনগণ কীভাবে এটা জানতে পারবে। আমরা বিশ্বাস করি এটা তোমার কাছ থেকে আসলেই ভালো হয়।”

    গ্যাব্রিয়েল হতভম্ব হয়ে গেলো। “আপনি কি সত্যি ভাবছেন আমি আমার নিজের প্রার্থীর বারোটা বাজাবো?”

    টেঞ্চের মুখ শক্ত হয়ে গেলো। “আমি তোমাকে একটা সুযোগ দিচ্ছি যাতে অনেকেই বিব্রত হওয়া থেকে বেঁচে যায়। আমার কেবল চাই এ সম্পর্ক নিয়ে স্বীকার করা একটি জবানবন্দীতে তোমার স্বাক্ষর।”

    গ্যাব্রিয়েল থেমে গেলো।”কি?”

    “অবশ্যই। স্বাক্ষর করা স্বীকারোক্তি পেলে আমরা এ ব্যাপারটা নিয়ে সিনেটরের সঙ্গে একান্তেই মিটমাট করে নেবো, কুসত এই ব্যাপারটা দেশবাসীকে দেখানোর কোনো প্রয়োজন পড়বে না। আমার প্রস্তাবটা খুব সহজ একটা স্বীকারোক্তিতে সই করো, এইসব ছবি তাহলে কোনোদিনই আর দিনের মুখ দেখবে না।”

    “আপনি একটা স্বীকারোক্তি চান?”

    “টেকনিক্যালি, আমার দরকার হবে একটি এফিডেভিটের, কিন্তু আমাদের এখানেই একজন নোটারি রয়েছে যে—”

    “আপনি পাগল হয়ে গেছেন।” গ্যাব্রিয়েল আবার হাঁটতে লাগলো।

    টেঞ্চ তার সঙ্গে সঙ্গে হাঁটতে লাগলো, তাকে এখন খুব বেশি ক্রুদ্ধ মনে হচ্ছে। “সিনেটর। সেক্সটন কোনো না কোনোভাবে নিচে নেমে যাবেনই, গ্যাব্রিয়েল, আর আমি তোমাকে সকালে ঘুম থেকে উঠে তোমার নিজের উলঙ্গ নিত সংবাদপত্রে দেখার হাত থেকে বাঁচার একটি সুযোগ দিচ্ছি মাত্র। প্রেসিডেন্ট একজন মার্জিত মানুষ, তিনি চান না এগুলো প্রকাশিত হোক। তুমি স্বাক্ষা দিলেই সব কিছু ভালোমতো হয়ে যাবে।”

    “আমাকে কেনা যাবে না।”

    “কিন্তু তোমার প্রার্থীকে কেনা যাবে। সে খুব বিপজ্জনক লোক, আর সে আইন ভঙ্গ করেছে।”

    “সে আইন ভঙ্গ করেছে? আরে, আপনারাই আরেকজনের অফিসে ঢুকে অবৈধভাবে লুকিয়ে থেকে ছবি তুলেছেন। ওয়াটারগেট কেলেঙ্কারীর নাম কখনও শুনেছেন?”

    আমরা এগুলো যোগাড় করিনি, অন্য কেউ এগুলো আমাদের সরবরাহ করেছে। তোমাদেরকে কেউ খুব কাছ থেকে দেখছে, মনে রেখো।

    গ্যাব্রিয়েল নিরাপত্তা ডেস্কের সামনে এসে কাগজটা খুলে ডেকের উপর রাখলো। টেঞ্চ তার পেছনে পেছনে এসে পড়েছে।

    “তোমাকে খুব দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে হবে, মিস অ্যাশ,” বের হবার দরজার সামনে আসতেই টেঞ্চ বললো, “হয় তুমি স্বীকার করবে যে সিনেটরের সঙ্গে শুয়েছে, নয়তো আজ রাত আটটার টিভি ভাষণে প্রেসিডেন্ট বলে দিতে বাধ্য হকে।”

    গ্যাব্রিয়েল দরজা দিয়ে বরে হয়ে গেলো।

    “আমার ডেকে, আজ রাত আটটার মধ্যে, গ্যাব্রিয়েল। স্মার্ট হও একটু।” টেঞ্চ তার হাতের ফোল্ডারটা গ্যাব্রিয়েলের দিকে ছুঁড়ে মারলো। “তোমার কাছে রেখে দাও সুইটি। আমাদের কাছে এরকম অনেক রয়েছে।”

    ৪৮

    ঢালু দিয়ে নামার সময় রাচেল সেক্সটনের ভেতরে একটা শীতল প্রবাহ বয়ে চললো। চারদিক গভীর অন্ধকার। বিজিবি তার মাথায় ঘুরছে– উল্কাখণ্ড, প্লাংটন এবং নোরা মাঙ্গোরের বরফ-উপাত্তে ভুল ত্রুটি পাওয়া।

    এই হিমবাহে প্লাংটন জমে ছিলো।

    দশ মিনিট এবং চারটা ফ্লেয়ার জ্বালাবার পরে, রাচেল এবং বাকিরা হ্যাবিস্ফেয়ার থেকে মাত্র ৫০ গজ দূরে যেতে পারলো। হুট করে নোরা থেমে গেল। এটাই হলো আমাদের জায়গা,” সে বললো।

    রাচেল ঘুরে পেছনে তাকিয়ে দেখে হ্যাবিফেয়ারটা অদৃশ্য হয়ে গেছে। পেছনের ফ্লেয়ারগুলো জ্বলছে, কিন্তু একেবারে পেছনেরটা দেখাও যাচ্ছে না। সেগুলো এক রেখায় সোজা বরাবর রাখা হয়েছে। যেনো কোনো রানওয়ের মত। নোরার দক্ষতা দেবে রাসেল বিমোহিত।

    “স্লেডটাকে আগে যেতে দেবার আরেকটা কারণ হলো, নোরা রকেলের দিকে তাকিয়ে বললো, “পথটা, মানে রানারটা একেবারে সোজা। আমরা এটাকে ছেড়ে দিলে মধ্যাকর্ষণ শক্তির কারণে সেটা সোজাই ছুটবে।”

    “ভালো চালাকি,” টোল্যান্ড কললল! “আশা করি সামনেই সমুদ্র দেখতে পাবো।”

    “এটাই সমুদ্র, রাচেল ভাবলো। তাদের নিচে যে সমুদ্রটা আছে সেটার কথা ভাবলো। এক পলকের জন্য সবচাইতে দূরের ফ্রেয়ারটা তার চোখে পড়লো। সেটা অদৃশ্য হয়ে গেছে। যেনো আলোটা কোনো কিছুর আড়ালে চলে গেছে। একটু বাদেই আলোটা আবার দেখা গেলো। রাচেলের হঠাৎ করেই অস্বস্তি লাগলো।”নোরা, এখানে কি মেরু ভালুক আছে?” সে বললো।

    নোরা আরেকটা ফ্রেয়ার জ্বালাচ্ছে, হয় সে কথাটা শোনেনি, নয়তো পাত্তা দিচ্ছে না।

    “মেরু ভালুক,” টোল্যান্ড বললো, “সিল মাছ খায়। তারা কেবল তখনই মানুষকে আক্রমণ করে যখন তারা তাদের আস্তানায় হামলা চালায়।”

    “কিন্তু এটা তো মেরু ভালুকের দেশ, ঠিক না?” রাচেল কললো।

    “হ্যাঁ,” টোল্যান্ড চিৎকার করে পেছন থেকে বললো, “মেরু ভালুকের নাম থেকেই আসলে আর্কটিক নামটি এসেছে। গৃক ভাষায় আর্কটাস মানে ভালুক।”

    দারুণ। রাচেল অন্ধকারে তাকিয়ে বললো।

    “এন্টার্টিকায় কোনো মেরু ভালুক নেই,” টোল্যান্ড বললো। “তাই তারা এটাকে এন্টি আর্কটোস বলে ডাকে।”

    “ধন্যবাদ, মাইক,” রাচেল বললো। “মেরু ভালুক নিয়ে অনেক হয়েছে।” সে হেসে ফেললো। “ঠিক বলেছো। সরি।”

    নোরা শেষ ফেয়ারটা বরফের মধ্যে গেঁথে রাখলো। ফ্লেয়ারের আলোর বৃত্তটার বাইরে পুরো জগৎটি যেনো ঘন-কালো অন্ধকারে ডুবে আছে।

    “ঠিক আছে, নোরা চিৎকার করে বললো। কাজের সময় হয়েছে।”

    নোরা ডেল্টার কাছে গিয়ে সেটার ওপর ঢেকে থাকা ত্রিপল-চাদরটা খুলতে লাগলো। রাচেল নোরাকে সাহায্য করার জন্য এগিয়ে গেলো।

    “যিশু, না!” নোরা চিৎকার করে বললো। “এটা কখনও করবে না!”

    রাচেল হতভম্ব হয়ে গেলো।

    “ওপরের অংশটা কখনও খুলবে না!” নোরা বললো।এতে করে উইন্ড-শ তৈরি হয়ে যাবে। এই ডেল্টা ছাতা খোলার মতো ফুলে যাবে বাতাসের চোটে!”

    রাচেল পিছু হটে গেলো। “আমি দুঃখিত। আমি …”

    নোরা কটমট করে তাকালো। “তুমি এবং মহাশূন্য বালকের এখানে আসা উচিত হয়নি।”

    আমাদের কারোরই আসা উচিত হয়নি, রাচেল ভাবলো।

    “শৌখিন মানুষ,” নোরা গজগজ করে বললো। কর্কি এবং রাচেলকে এখানে পাঠানোর জন্য অভিশাপ দিলো। এইসব জোকার এখানে কাউকে খুন না করে ছাড়বে না।

    ‘মাইক,” সে বললো। ”স্লেড থেকে জিপিআর নামাতে আমাকে সাহায্য করো তো।”

    টোল্যান্ড স্লেড থেকে গ্রাউন্ড পেনিট্রেটিং রাডারটা বরফের ওপর বসাতে সাহায্য করলো।

    “এটা রাডার?” কর্কি জিজ্ঞেস করলো।

    নোরা মাথা নেড়ে সায় দিলো। সে যন্ত্রটার পাওয়ার অন করলো। এই যন্ত্রটা হিমবাহের অভ্যন্তরের ছবি দিতে পারবে। সেটা প্রিন্টও করা যাবে। সমুদ্রের বরফকে এতে ছায়ার মতো দেখাবে।”

    নোরা অন্য আরেকটা যন্ত্রে একটা তার লাগালো। “প্রিন্ট করা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই। কম্পিউটার মনিটর অনেক বেশি ব্যাটারি খেয়ে ফেলে। তাছাড়া রঙটা খুব ভাল না। হলেও ছবিটা দেখার মতো লন সই।”

    নোরা কাজে লেগে গেলো। তারা দেখতে পাবে আমার হিসেবে কোনো ভুল ছিলো না। নোরা হ্যাবিস্কেয়ারের দিকে বিশ গজ চলে গেলো। সে পেছনে তাকিয়ে হিমবাহটা দেখলো। তার চোখ অন্ধকারে অভ্যস্ত হতেই কিছুটা ডান দিকে ফ্লেয়ারগুলো দেখতে পেলো। সে ওগুলো ঠিক সোজাসুজিভাবে এক রেখায় স্থাপন করেছে।

    টোল্যান্ড জিপিআর যন্ত্রটা ঠিকঠাক করে হাত নাড়লো তার দিকে। “সব সেট করা হয়েছে!”

    নোরা ফেয়ারের আলোর দিকে তাকাতেই একটা অদ্ভুত ঘটনা ঘটলো। কিছুক্ষণের জন্য সবচাইতে কাছের ফ্লেয়ারটা অদৃশ্য হয়ে গেলো। নোরা যেই ভাবতে শুরু করলো ফ্লেয়ারটা বুঝি নিভে গেছে, তখনই আবার সেটা আবির্ভূত হলো। নোরা যদি এ ব্যাপারে বেশি অবগত না থাকতো, তবে সে ধরে নিতে কেউ একজন ফ্রেয়ারের সামনে দিয়ে অতিক্রম করেছে। নিশ্চিতভাবেই এখানে আর কেউ নেই যদিনা নাসা প্রধান অপরাধবোধে ভুগে তাদের সাহায্যের জন্য কোনো দলকে পাঠিয়ে থাকে। যেভাবেই হোক, নোরার সন্দেহ হলো। হয়তো কিছুই না, সে ভাবলো। একটা দমকা বাতাস হয়তো ক্ষণিকের জন্য আলোর শিখাটা নিভিয়ে ফেলেছিলো।

    নোরা জিপিআরর দিকে তাকালো। “সব ঠিক করা হয়েছে?”

    টোল্যান্ড কাঁধ ঝাঁকালো। মনে হয়।

    নোরা সেখানে গিয়ে বোতাম চাপলো। একটা তীক্ষ্ণ শব্দ হয়েই থেমে গেলো। “ঠিক আছে,” সে বললো। “হয়ে গেছে।”

    “এই?” কর্কি বললো।

    “সেট-আপ করতেই যতো সময় লাগে, আসলে শটটা নিতে মাত্র এক সেকেন্ড সময় নেয়।”

    স্লেডের মধ্যে রাখা প্রিন্টারটা কাজ করতে শুরু করে দিয়েছে। আস্তে আস্তে একটা মোটা কাগজ বের হয়ে আসছে সেটা থেকে। নোরা প্রিন্ট শেষ হলে কাগজটা টেনে বের করে নিলো। কাগজটা নিয়ে কাছের একটা ক্লেয়ারের কাছে গেলো সে, যাতে সবাই সেটা দেখতে পায়।মেনে বন পানি থাকবেন।

    নোরার কাছে এসে সবাই দাঁড়ালো। সে গভীর একটা নিঃশ্বাস নিয়ে কাগজটার ভাঁজ খুললো। ভয়ে আতকে উঠলো নোর।

    “হায় ঈশ্বর।” কী দেখছে সেটা সে বিশ্বাসই করতে পারছে না। তার রক্ত জমে বরফ হয়ে গেলো। ছবিতে উল্কা উত্তোলনের গর্তটা পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে, কিন্তু তার পাশেই রয়েছে আরেকটা জিনিস। ওহ্ ঈর … গর্তটার কাছে একটা মৃতদেহ।” সবাই হতভম্ব হয়ে নিরবে দাঁড়িয়ে রইলো। সংকীর্ণ গর্তটাতে একটা মৃতদেহ ভাসছে। নোরা বুঝতে পারলো মৃতদেহটা কার জিপিআর মৃতব্যক্তিচারি কোটটা চিহ্নিত করতে পেরেছে। এটা খুবই পরিচিত। উটের লোমে তৈরি।

    “এটাতো…মিংয়ের,” চাপা কণ্ঠে বললো। মনে হচ্ছে, সে অবশ্যই পিছলে পড়ে গিয়েছে …”

    কিন্তু নোরা ছবিতে মৃতদেহ ছাড়াও আরেকটি জিনিসও গর্তটার নিচে দেখলো।

    উল্কা তোলার গর্তের বরফের নিচে…

    নোরা তাকিয়ে রইলো। তার প্রথমে মনে হয়েছিল স্ক্যানে হয়তো ভুলত্রুটি হয়েছে। কিন্তু ভালো করে দেখতেই তার ভেতরে একটা ঝড় বইয়ে গেলো।

    কিন্তু … এটাতো অসম্ভব।

    আচমকাই সত্যটা নেমে এলো যেনো।সে মিংয়ের কথা ভুলেই গেলো।

    নোরা এবার বুঝতে পারলো। গর্তের মধ্যে নোনা জল! সে বরফের মধ্যে হাটু গেঁড়ে বসে পড়লো। তার দম বন্ধ হবার উপক্রম হলো আর হাতটা কাঁপতে লাগলো।

    হায় ঈশ্বর… এটা এমনকি আমার মনেও আসেনি।

    তারপর, প্রচণ্ড রাগে সে নাসার হ্যাবিস্ফেয়ারের দিকে তাকালো। “বানচোত!” চিৎকার করে বললো সে। ”শালার বানচোত!”

    .

    অন্ধকারে, মাত্র পঞ্চাশ গজ দূরে, ডেল্টা-ওয়ান তার ওয়াকিটকিটা মুখের কাছে ধরে রেখেছে, সে কে তার কন্ট্রোলারকে দুটা কথা বললো। “তারা সব জেনে গেছে।”

    ৪৯

    মাইকেল টেল্যান্ড যখন নোরার কম্পিত হাত থেকে প্রিন্ট-আউটটা নিলো তখনও সে হাঁটু গেঁড়ে বরফের ওপর বসেছিলো। মিংয়ের মৃতদেহটা দেখে টোল্যান্ড কল্পনা করতে লাগলো ঘটনাটাভাবে ঘটেছিলো।

    উল্কা উত্তোলনের গর্তটা ২০০ ফুট গভীর। সেটার ভেতরে মিংয়ের শরীরটা ভাসছে। টোলান্ড আরো একটু নিচে তাকালো। ভিন্ন কিছু আঁচ করলো সে। উত্তোলনের গর্তটার ঠিক নিচে গভীর কালো সমুদ্র, বরফের একটা কলাম দেখা যাচ্ছে সেখানে, সেটা চলে গেছে নিচের সাগরের দিকে। খাড়াখাড়িলামটার আকৃতি গর্তটার ঠিক সমান। একই ব্যরে হবে।

    “হয় ঈশ্বর!” রাচেল ছবিটা দেখেই চিৎকার করে বললো। এর মানে উল্কাটা যে গর্তে ছিলো সেটা আসলে সাগরের নিচ পর্যন্ত গিয়েছে!

    টোল্যান্ড হতবিহ্বল, কর্কির অবস্থাও সেরকম।

    নোরা চিৎকার করে ডাক দিলো, “উকখণ্ডটির শ্যাফটার নিচে কেউ ভূল করেছে!” তার চোখে ক্রোধ। “কেউ উদ্দেশ্যপ্রনোদিতভাবে বরফের নিচে পাথরটা ঢুকিয়ে দিয়েছে!”

    টোল্যান্ডের মধ্যে যে আদর্শবাদীতা রয়েছে সেটা নোরার কথাটাকে মানতে না চাইলেও তার বিজ্ঞানী মন কিছু জানে, নোরাই ঠিক।মিলনে আইস শেলফটা সমুদ্রে ভাসমান। যেহেতু পানির নিচে সব কিছুর ওজনই দারুণভাবে কমে যায় তাই ছোট খাটো সাব বা ডুব যন্ত্র, যা দিয়ে সমুদ্র তলদেশের ছবি তোলা এবং নমুনা সহ প্রা যায়, সেটা দিয়েই বিশাল পখর খণ্ডটাকে বরফের নিচে স্থাপন করা যেতে পারে। এই ধরণের ডু যর থাকে রোবোটিক দুটো হাত। টোল্যান্ডের একজন মানুষবাহী ট্রাইটন নামের সেরকমই একটি যন্ত্র রয়েছে, যা দিয়ে উল্কাখণ্ডটি বরফের নিচে স্থাপন করা যাবে। ধু তাইনা, নিচ থেকে ফুটো করে পাথর খণ্ডটি উপরের দিকেও স্থাপন করা যাবে, যেমনটি এক্ষেত্রে করা হয়েছে। বড় যন্ত্রটি উধাও হয়ে গেলে বাকি সব চিহ্ন মুছে দেবে ধরণী মাতা। প্রকৃতি। বোঝাই যাবে না এটা কৃত্রিমভবে। স্থাপন করা হয়েছে।

    “কিন্তু কেন?” রাচেল জানতে চাইলো।”এরকম কাজ কে করতে যাবে? জিপিআর কি ঠিকভাবে কাজ করছে?”

    “অবশ্যই, আমি নিশ্চিত ওটা ঠিকভাবেই কাজ করছে। প্রিন্ট-আউটটাও ঠিকই আছে।”

    “এটা উনাদের কাজ।” কর্কি বললো। “নাসার কাছে একটা উষ্ণও আছে যাতে রয়েছে বহিজীবের ফসিল। তারা কেন এটা কোথায় পাওয়া গেছে এ নিয়ে মাথা ঘামাবে?তারা কেন এটাকে বরফের নিচে লুকিয়ে রেখে সমস্যা পাকাতে যাবে?”

    “আরে বাবা, সেটা কে জানে, নোরা পাল্টা জবাব দিলো। জিপিআর প্রিন্ট আউট মিথ্যে তো আর বলছে না। আমাদের সাথে চালাকি করা হয়েছে। উখিটি জাঙ্গাসল ফলের কোনো অংশ নয়। এটা সাম্প্রতিক সময়ে এখানে ঢুকিয়ে দেয়া হয়েছে। গত বছরের মধ্যেই তানা হলে প্লাংটনগুলো মরে যেতো!” সে যন্ত্রপাতি গুছিয়ে নিতে জ করলো। আমাদেরকে ফিরে গিয়ে কথাটা কাউকে বলতে হবে! প্রেসিডেন্ট ভুল ডাটার ওপর নির্জ করে নাসার জালিয়াত আবিষ্কারটি ঘোষণা দিতে যাচ্ছেন! নাসা তার সাথে চালাকি করেছে!”

    “আরে রাখেন তো!” রাচেল জোরে বললো। “নিশ্চিত হবার জন্য আমাদেরকে আরেকটি স্ক্যান করার দরকার। এসবে কিছুই বোঝা যাচ্ছে না।কে এটা বিশ্বাস করবে।”

    নোরা তার এই প্রস্তাবে সাড়া না দিয়ে হ্যাবিকেয়ারের দিকে রওনা হলো।

    “চলো যাই!” নোরা চিৎকার করে বললো।

    “আমি জানি না নাসা এখানে কী করেছে। কিন্তু আমরা তাদের ঘুটি হিসেবে ব্যবহৃত হতে চাই না।”

    আচমকা নোরা ম্যাঙ্গোরের ঘাড়টা এমনভাবে পেছনের দিকে ঝুঁকে পড়লো যেনো কোনো অদৃশ্য শক্তি তার কপালে সজোড়ে আঘাত করেছে। তীব্র যন্ত্রণায় সে কঁকিয়ে উঠলো। ধপাস করে বরফের ওপর পড়ে গেলো সে। প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই, কর্ক তীব্র কিার করে উঠে ঘুরে দাঁড়ালো, যেনো তার কাঁধটা ঝুঁকে পড়ছে। সেও তীব্র যন্ত্রণায় বরফের ওপর আছ্‌ড়ে পড়লো।

    .

    রাচেল সঙ্গে সঙ্গে সব কিছু ভুলে গেলো। তার কেবল মনে হলো ছোট্ট একটা মার্বেলের মতো কিছু তার কানের পাশ দিয়ে চলে গেছে, অল্পের জন্য তার মাথাটা লক্ষ্যভেদের শিকার হলো না। সঙ্গে সঙ্গে সেবসে গেলো। টোল্যান্ডকেও তার সাথে বসে যেতে বললো।

    “কী হচ্ছে এখানে?” টোল্যান্ড চিৎকার করে বললো।

    রাচেলের প্রথমে মনে হলো জিনিসটা কোনো ছুঁড়ে মারা পাথরের কণা। কিন্তু জিনিসটার কে কমপক্ষে ঘটায় একশ মাইল হবে। অদ্ভুত ব্যাপার হলো মার্বেল আকৃতির বস্তুটা এখন রাচেল এবং টোল্যান্ডকে টার্গেট করছে। তাদের চারপাশে বিদ্ধ হচ্ছে। রাচেল গড়িয়ে গেলো, কাছে কোনো লুকানোর জায়গার আশায়। ডেল্টা কাছেই আছে। টোল্যান্ডও তার সাথে সাথে স্লেডের আড়ালে চলে এলো।

    টোল্যান্ড দেখলো নোরা আর কর্কি বরফের উপরে অরক্ষিতভাবে পড়ে রয়েছে। “তাদের দঁড়ি ধরে টান দাও!” সে বললো। পঁড়ি ধরে সে ইতিমধ্যে টানতে শুরু করে দিয়েছে। কিন্তু সঁড়িটা স্লেডের সাথে আঁটকে আছে।

    মার্বেল সদৃশ বস্তুটা কৰ্কি আর নোরাকে বাদ দিয়ে স্লেডের কাছে এসে বিধলো, রাচেল আর টোল্যান্ডকে টার্গেট করার জন্য।

    রাচেল ভালো করে আড়াল থেকে বস্তুটা দেখে বুঝতে পারলো জিনিসটা আসলে মানুষের তৈরি। মার্বেলের মতো বস্তুটা একটা চেরি ফলের আকারের হবে। স্লেডের ওপর চামড়ার ত্রিপলটাতে তাদের একটা আঘাত করলো। বস্তুটির পৃষ্ঠটা মসৃণ এবং নিখুঁতভাবে আকার দেয়া। সন্দেহাতীতভাবেই এটা মানুষের তৈরি।

    মিলিটারি সংস্পর্শে থাকা রাচেল এই ধরণের নতুন প্রযুক্তির সাথে বেশ ভালভাবেই পরিচিত। ‘আইএ’ অস্ত্র– ইম্প্রোভাইজ এমুনিশন– তুষাড়ের রাইফেল যা তুষাড়কে শক্ত বরফে রূপান্তর করে বুলেট হিসেবে ব্যবহার করে, আবার মরু রাইফেল, বালুকে কাছে পরিণত করে বুলেট বানিয়ে থাকে। এমন কি জল কামানও রয়েছে। পানিকে প্রচণ্ড জোড়ে ছুরে মারা হয়, এতে করে পানি আর পানি থাকে না, অনেকটা বুলেটের মতো হয়ে যায়।

    ইন্টেলিজেন্স দুনিয়ার লোক হিসেবে রাচেল সবই বুঝতে পারলো; তারা ইউএস স্পেশাল অপারেশন ফোর্সের আক্রমণের শিকার হয়েছে। তাদেরকেই কেবল কিছুদিন আগে এ ধরনের। অন্ত্রের ব্যবহারের অনুমোদন দেয়া হয়েছে।

    এটি একটি মিলিটারি গোপন অপারেশন, রাচেল সেটাও বুঝতে পারলো। তার মনে হলো : এই আক্রমণ থেকে বেঁচে যাওয়ার সম্ভাবনা শূন্যের কাছাকাছি।

    এই চিন্তাভাবনাটা আরেকটা আঘাতের শব্দে ছেদ পড়লো। এবার বরফের বুলেটটা স্লেডের একটা অংশে আঘাত করলো। আরেকটা বুলেট এসে লাগলো রাচেলের পেটে। মার্ক-১০ সুটটা পরার কারণে বেঁচে গেলেও, তার মনে হলো সজোরে কেউ তার পেটে ঘুষি চালিয়েছে। তার চোখ অন্ধকার হয়ে গেলো। মাথা ঘুরতে লাগলো। সে গড়িয়ে পড়তে থাকলে স্লেডের একটা অংশ ধরে ভারসাম্য রক্ষা করতে চাইলো। টোল্যান্ড নোরাকে সঁড়ি ধরে টানা বাদ দিয়ে রাচেলকে সাহায্য করার জন্য এগিয়ে এলো। কিন্তু দেরি হয়ে গেছে। রাচেল যন্ত্রপাতি সমেত ডেল্টা নিয়ে ঢালু দিয়ে গড়িয়ে পড়লো। টোল্যান্ড আর রাচেল দুজনেই গড়িয়ে পড়ে গেলো। “এগুলো … বুলেট ..” সে অস্ফুট স্বরে বললো। তার বুকের বাতাস যেনো নিঃশ্বেষ হয়ে গেলো ক্ষণিকের জন্য। ”পালাও!”

    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleডিজিটাল ফরট্রেস – ড্যান ব্রাউন
    Next Article ইনফার্নো – ড্যান ব্রাউন

    Related Articles

    ড্যান ব্রাউন

    দ্য দা ভিঞ্চি কোড – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025
    ড্যান ব্রাউন

    এঞ্জেলস এন্ড ডেমনস – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025
    ড্যান ব্রাউন

    দ্যা লস্ট সিম্বল – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025
    ড্যান ব্রাউন

    অরিজিন – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025
    ড্যান ব্রাউন

    ইনফার্নো – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025
    ড্যান ব্রাউন

    ডিজিটাল ফরট্রেস – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Demo
    Most Popular

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Our Picks

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    দ্য দা ভিঞ্চি কোড – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025

    এঞ্জেলস এন্ড ডেমনস – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    Sign In or Register

    Welcome Back!

    Login below or Register Now.

    Lost password?

    Register Now!

    Already registered? Login.

    A password will be e-mailed to you.