Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    দ্য দা ভিঞ্চি কোড – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025

    এঞ্জেলস এন্ড ডেমনস – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • 🔖
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    Subscribe
    সাইন ইন
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    ডিসেপশন পয়েন্ট – ড্যান ব্রাউন

    ড্যান ব্রাউন এক পাতা গল্প497 Mins Read0

    ০৮০. লিসবার্গ হাইওয়ের হেডলাইট

    ৮০

    উইলিয়াম পিকারিং তার অফিসের জানালা দিয়ে দূরের লিসবার্গ হাইওয়ের হেডলাইটের দিকে তাকালো। এখানে দাঁড়িয়ে সে প্রায়শই তার মেয়ের কথা ভাবে।

    এসব শক্তি ক্ষমতা দিয়েও… আমি তাকে বাঁচাতে পারিনি।

    পিকারিংয়ের মেয়ে ডায়না রেড সি’তে নেভির এক জাহাজে মারা গিয়েছিলো। সে একজন নেভিগেটর হতে চেয়েছিলো। তার জাহাজটা একটা নিরাপদ বন্দরে নোঙর। করেছিলো। দু’জন আত্মঘাতি বোমারু জাহাজে উঠে বিস্ফোরণ ঘটিয়ে দিলে অন্য তেরো জন তরুশ আমেরিকান সৈনিকের সাথে ডায়না পিকারিংও নিহত হয় সেদিন।

    খবরটা কোনোর পর বিল পিকারিং একেবারে ভেঙে পড়েছিলো। কয়েক সপ্তাহ লেগেছিল ধাক্কাটা কাটিয়ে উঠতে। কিন্তু কয়েক বছর পরও যখন সিআইএ সেই পরিচিত সন্ত্রাসী দলটিকে পাকড়াও করতে ব্যর্থ হলো, পিকারিংয়ের দুঃখ ক্ষোভে পরিণত হলো। সে সিআইএর হেডকোয়ার্টারে গিয়ে জবাবদিহিতা দাবি করেছিলো।

    যে জবাব সে পেয়েছিলো সেটা হজম করা তার জন্যে কঠিন ছিলো।

    আসলে সিআইএ ঐ দলটিকে ঠিকই ট্রেস করতে পেরেছিলো। তারা অপেক্ষা করছিলো হাই-রেজ-স্যাটেলাইট ছবির জন্য যাতে করে তারা আফগানিস্তানের পাহাড়ের গুহায় থাকা সন্ত্রাসীদেরকে লক্ষ্য করে আঘাত হানতে পারে। কিন্তু তারা যে স্যাটেলাইট ব্যবহার কবে সেটা ছিলো এনআরও’র ১.২ বিলিয়ন ডলারের একটি প্রজেক্ট, যার ডাকনাম ছিলো ভোরটেক্স ২, কিন্তু উড্ডয়নের সময়ই নাসা সেটা বিধ্বস্ত করে ফেলে। যার জন্যে তাদের আর ছবি পাওয়া হয়ে ওঠেনি, আক্রমণও করা হয়নি।

    যদিও নাসা’কে তার মেয়ের ঘটনার জন্য সরাসরি দায়ী করা যায় না, কিন্তু নাসার এই ব্যর্থতাকে পিকারিং ক্ষমা করতে পারেনি।

    “স্যার?” ইন্টারকমে পিকারিংয়ের সেক্রেটারি বললো, “লাইন চালু আছে। মারজোরি টেঙ্ক।”

    পিকারিং অন্যমনস্কভাবটা ঝেড়ে ফেলে ফোনের দিকে তাকালো। আবারো। পিকারিং ভুরু কুচকে ফোনটা তুলে নিলো।

    পিকারিং বলছি।” টেঞ্চের কণ্ঠটা উন্মগ্রস্তের মতো কোনোলো। “আপনাকে সেক বলেছে?”

    “কী বললেন?”

    “রাচেল সেক্সটন আপনার সাথে যোগাযোগ করেছিলো। সে কি বলেছে আপনাকে? সে সাবমেরিনে আছে, ঈশ্বরের দোহাই! বলুন।

    “হ্যাঁ, মিস সেক্সটন আমাকে ফোন করেছিলো।” নির্বিকারভাবে পিকারিং বললো।

    “আপনি তাদের সাব থেকে তুলে আনার ব্যবস্থা করেছেন। আমাকে আপনি সেটা জানাননি কেন?”

    “আমি ব্যবস্থা করেছি, সেটা ঠিক।” রাচেলদের নিকটস্থ বোলিং বিমানঘাঁটিতে পৌঁছাতে এখনও দুঘন্টা বাকি আছে।

    “আর সেটা আমাকে না জানানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন?”

    “রাচেল সেক্সটন কিন্তু আশংকাজনক একটি অভিযোগ এনেছে।”

    “উল্কাখণ্ডের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে… এবং তার ওপরে এক ধরণের আক্রমণের কথা?”

    অন্য বিষয়ের মধ্যে এটাও ছিলো।”

    “এটা নিশ্চিত, সে মিথ্যা বলেছে।”

    “আপনি কী জানেন তার সাথে আরো দুজন আছে যারা তার বক্তব্যকে সমর্থন করছে?”

    টেঞ্চ থেমে গেলো। “হ্যাঁ। খুবই উদ্বেগজনক, হোয়াইট হাউজ তাদের দাবি নিয়ে খুবই চিন্তিন।”

    “হোয়াইট হাউজ? নাকি ব্যক্তিগতভাবে আপনি?”

    তার কণ্ঠ ছুরির মতো ধারালো হয়ে গেলো। আজকের রাতের জন্য এ দুয়ের মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই।”

    “প্রেসিডেন্ট কি জানেন আপনি আমাকে ফোন করেছেন?” পিকারিং বললো।

    “সত্যি বলতে কী, ডিরেক্টর, আমি আপনার উম্মাদগ্রস্ততা দেখে মর্মাহত।”

    আপনি আমার প্রশ্নের জবাব দিচ্ছেন না। এসব লোক কেন মিথ্যে বলবে তার তো কোনো যুক্তিসংগত কারণ দেখছি না। আমার ধারণা হয় তারা সত্যি বলছে, নয়তো না বুঝে ভুল করেছে।”

    “ভুল? আক্রমণের দাবিটা? উল্কার ডাটাতে ত্রুটি স্কুিতি? প্লিজ! এটা নিশ্চিত রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র।”

    “যদি তাই হয়ে থাকে, তাহলে সেটা আমি ধরতে পারিনি।”

    টেঞ্চ দীর্ঘশ্বাস ফেললো, নিচুস্বরে বললো, “ডিরেক্টর এসব ব্যাপার নিয়ে আমরা পরে কথা বলবো। আগে বলুন মিস সেক্সটন এবং বাকিরা আছে কোথায়। তারা কোনো ক্ষতি করার আগে আমি এই ঘটনার গভীরে যেতে চাই। তারা কোথায়?”

    “এই তথ্যটা আমি আপনাকে জানাতে স্বাচ্ছন্দ বোধ করছি না। তারা পৌঁছে গেলে আমি আপনাকে ফোন করো।”

    “ভুল। তারা পৌঁছালে, আমিই তাদেরকে সেখানে স্বাগতম জানাবো।”

    আপনি এবং না জানি কতোজন সিক্রেট এজেন্ট সহকারে? “আমি যদি তাদের পৌঁছানোর জায়গাটা আপনাকে জানিয়ে দেই, তবে কি আমরা বন্ধুভাবাপন্ন পরিবেশে কথা বলতে পারবো, নাকি আপনার প্রাইভেট আর্মি তাদেরকে গ্রেফতার করে কাস্টডিতে নিয়ে নেবে?”

    “এইসব লোক সরাসরি প্রেসিডেন্টের জন্য হুমকী হিসেবে দেখা দিয়েছে। সুতরাং হোয়াইট হাউজের অধিকার রয়েছে তাদেরকে আঁটকে জিজ্ঞাসাবাদ করার।”

    পিকারিং জানে সে ঠিকই বলছে। টাইটেল ১৮ আর সেকশন ০৫৬ মতে কোনো রকম ওয়ারেন্ট ছাড়াই নিরাপত্তা বাহিনী এমন লোককে গ্রেফতার করতে পারবে যে প্রেসিডেন্টের জন্য হুমকীস্বরপ হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে।

    “যা দরকার আমি তাই করবো,” টেঞ্চ জানালো। “প্রেসিডেন্টকে মিথ্যা অভিযোগ থেকে বাঁচানোর জন্যে।”

    “আর আমি যদি অনুরোধ করি, মিস সেক্সটনের কেস্টা অফিশিয়াল তদন্তের কাছে হাজির করার?”

    “তাহলে আপনি সরাসরি প্রেসিডেন্টের নির্দেশ লঙ্ঘন করবেন, আর রাচেলকে রাজনৈতিক হট্টগোল পাকানোর কাজে সাহায্য করাও হবে! আমি আপনাকে আরেকবার জিজ্ঞেস করছি ডিরেক্টর, তারা কোথায় এসে নামবে?”

    পিকারিং দীর্ঘ একটা নিঃশ্বাস নিলো। সে বলুক আর না-ই বলুক, মারজোরি টেঞ্চ ঠিকই খবরটা বের করে নিতে পারবে। প্রশ্নটা হলো সে এটা করবে নাকি করবে না। সে টেঞ্চের মরিয়া ভাব দেখে আঁচ করতে পারলো টেঞ্চ থামবে না। মারজোরি টেঞ্চ ভড়কে গেছে।

    “মারজোরি, পিকারিং বললো। “কেউ আমাকে মিথ্যে বলেছে, এ ব্যাপারে আমি নিশ্চিত। হয় রাচেল এবং দু’জন বিজ্ঞানী, নয়তো আপনি। আমার বিশ্বাস সেটা আপনিই।”

    টেঞ্চ ফুঁসে উঠল। “কতো বড় আস্পর্ধা–”

    “আপনার দেমাগ আমার কাছে পাত্তা পাবে না। সেটা অন্য কারো জন্য তুলে রাখুন। আপনি জেনে রাখুন, আমার কাছে নিশ্চিত প্রমাণ আছে যে, নাসা এক হোয়াইট হাউজ আজ ররাতে অসত্য কথা প্রচার করেছে।”

    টেঞ্চ আচমকা চুপ মেরে গেলো।

    “আমি রাজনীতি করতে চাই না। কিন্তু মিথ্যা বলা হয়েছে। এই মিথ্যা টিকবে না। আপনি যদি আমার সাহায্য চান তবে আপনাকে সততা দিয়েই শুরু করতে হবে।”

    টেঞ্চের কথা শুনে মনে হলো প্রলুব্ধ হলেও খুবই উদ্বিগ্ন। আপনি যদি জানেনই যে মিথ্যে বলা হয়েছে, তবে আগে সেটা বলেননি কেন?”

    “আমি রাজনীতির ব্যাপারে মাথা ঘামাই না।”

    টেঞ্চ বিরক্ত হয়ে গেলো। “ধ্যাত।”

    “মারজোরি, আপনি কি বলতে চাচ্ছেন, প্রেসিডেন্ট যা বলেছেন তা খুবই সত্য?”

    আবারো নিরবতা নেমে এলো।

    পিকারিং জানে তাকে বাগে পেয়ে গেছে। “শুনুন, আমরা উভয়েই জানি, একটা টাইম বোমা ফাটার জন্য অপেক্ষা করছে। কিন্তু এখনও খুব বেশি দেরি হয়নি। আমরা এখনও এটা আপোষ করে ফেলতে পারি।”

    কয়েক মুহূর্ত টেঞ্চ কিছুই বললো না।

    অবশেষে সে বললো, “আমাদের দেখা করতে হবে।”

    মাটিতে নেমে এসেছে, পিকারিং ভাবলো।

    “আপনাকে দেখাবার মতো আমার কাছে কিছু জিনিস রয়েছে।” টেঞ্চ বললো, “আমার বিশ্বাস সেটা এই ঘটনার উপর কিছুটা আলো ফেলতে সাহায্য করবে।”

    “আমি আপনার অফিসে আসছি।”

    “না,” সে তাড়াতাড়ি বললো। “আপনার উপস্থিতি এখানে প্রশ্নের জন্ম দেবে। আমি ব্যাপারটা আমাদের দু’জনের মধ্যেই রাখতে চাচ্ছি।”

    পিকারিং এই কথার অর্ন্তনিহিত অর্থটা বুঝতে পারলো। প্রেসিডেন্ট এসবের কিছুই জানেন না। “আমার এখানে আপনি আসতেই পারেন, সে বললো।

    টেঞ্চ মনে হলো সন্দেহ করলো।”চলুন, অন্য কোথাও দেখা করি।”

    পিকারিং সেটাই প্রত্যাশা করেছিলো।

    “এফডিআর মেমোরিয়াল-এ,” টেঞ্চ বললো। “এসময়ে জায়গাটা ফাঁকা থাকে।”

    পিকারিং একটু ভাবলো। এফডিআর মেমোরিয়ালটা জেফারসন আর লিঙ্কন মেমোরিয়ালের মাঝখানে অবস্থিত। এটা শহরের সবচাইতে নিরাপদ অংশ। পিকারিং রাজি হয়ে গেলো।

    “এক ঘণ্টা পরে,” টেঞ্চ বললো, “একা আসবেন।”

    .

    ফোনটা রাখার সঙ্গে সঙ্গে মারজারি টেঞ্চ নাসা প্রধান এক্সট্রমকে ফোন করলো। দুঃসংবাদটা দেবার সময় তার কণ্ঠটা খুবই শক্ত কোনো গেলো।

    “পিকারিং সমস্যা কতে পারে।”

    ৮১

    এবিসি প্রোডাকশন-রুমের ইয়োলান্ডার ডেস্কে দাঁড়িয়ে গ্যাব্রিয়েল নতুন আশার আলো দেখতে পেলো। সে ডিরেক্টরির সাহায্যের জন্য ডায়াল করলো।

    সেক্সটন,তাকে এইমাত্র যে অভিযোগের কথাটা বললেন, সেটা যদি নিশ্চিত করা যায় তবে দারুণ সম্ভাবনাময় হবে। নাসা পিওডিএস সম্পর্কে মিথ্যা বলেছে? কয়েক সপ্তাহ আগেও পিওডিএস কোনো ইসু ছিলো না। আর আজ, পিওডিএস একটা বড় ইসু হয়ে ওঠেছে।

    সেক্সটনের এখন দরকার ভেতরের খবর। আর এটা খুব জরুরিই দরকার। গ্যাব্রিয়েল তাকে আশ্বস্ত করেছে খবরটা সে জোগাড় করে দেবে। কিন্তু সমস্যা হলো, তার তথ্যদাতা ছিলো মারজোরি টে, সে তো এখন মোটেও সাহায্য করবে না। সুতরাং গ্যাব্রিয়েলকে সেটা অন্যভাবে যোগাড় করতে হবে।

    “ডিরেক্টরি এসিসটেন্স,” ফোনের অপর প্রান্ত থেকে বলা হলো।

    গ্যাব্রিয়েল তাদেরকে বললো সে কী চায়। অপারেটর ওয়াশিংটনের তিন জন ক্রিস হার্পারের তালিকা নিয়ে এলো। গ্যাব্রিয়েল তাদের সবার সাথেই যোগাযোগের চেষ্টা করলো।

    প্রথম নাম্বারটি একটি আইন প্রতিষ্ঠানের। দ্বিতীয়টি কেউ ধরছে না। তৃতীয় নাম্বারটির রিং হতে লাগলো।

    এক মহিলা ধরলো। “হার্পারের বাসা থেকে বলছি।”

    “ক্রিস হার্পার?” গ্যাব্রিয়েল খুব দ্রভাবে বললো। “আশা করি আপনাদের ঘুম ভাঙিনি আমি?”

    “আরে না? এসময়ে কি কেউ ঘুমায়।” তার কণ্ঠে উত্তেজনা। গ্যাব্রিয়েল শুনতে পেলো ঘরে টিভি চলছে। উল্কার খবর। “আপনি ক্রিসকে ফোন করেছেন, আমার ধারণা?”

    গ্যাব্রিয়েলের নাড়িস্পন্দন বেড়ে গেলো। হ্যাঁ, ম্যাম।”

    “ক্রিস তো এখানে নেই। সে প্রেসিডেন্টের ভাষণের পর পরই অফিসে চলে গেছে।” মহিলা বললো। “অবশ্য কোনো কাজে যায়নি, পার্টি করতে গেছে। ঘোষণাটাতে সে খুব অবাক হয়ে গেছে। সবাই হয়েছে। আমাদের ফোন বেজেই চলছে তারপর থেকে। আমি বাজি ধরে বলতে পারি নাসার সবাই ওখানে আছে।”

    ‘ই স্ট্রিট কক্সে?” গ্যাব্রিয়েল জিজ্ঞেস করলো।

    ঠিক তাই।”

    “ধন্যবাদ। আমি ওখানেই যাচ্ছি তাহলে।”

    গ্যাব্রিয়েল ফোনটা রেখে দিলো। সে প্রোডাকশন রুম থেকে বের হয়ে ইয়োলান্ডাডাকে পেয়ে গেলো। ইয়োলান্ডা তাকে দেখে মুচকি হাসলো।

    “তোমাকে এখন ভালো দেখাচ্ছে, সে বললো। “আশার আলো দেখতে পাচ্ছো কি?”

    “আমি সিনেটরের সঙ্গে কথা বলেছি। আজ রাতে তার মিটিং-এ আমি যা ভেবেছি সেরকম কিছু ছিলো না।”

    “আমি তো বলেছিলামই, টেঞ্চ তোমাকে নিয়ে খেলছিলো। সিনেটর উল্কার খবরটি কীভাবে নিয়েছেন?”

    “প্রত্যাশার চেয়েও অলো।”

    ইয়োলান্ডা অবাক হলো। আমার ধারণা ছিলো তিনি বাসের সামনে ঝাঁপ দেবেন।”

    “তিনি মনে করছেন নাসা’র ডাটাতে ক্রটি রয়েছে।”

    ইয়োলান্ডা সন্দেহের দৃষ্টিতে তাকালো। তিনি ঠিক একই প্রেস কনফারেন্সটি দেখেছেন, যেটা আমি দেখেছি? আর কত সাক্ষী প্রমাণের দরকার?”

    “আমি একটা ব্যাপারে খোঁজ নিতে নাসাতে যাচ্ছি।”

    ইয়োলান্ডার ভুরু কপালে উঠলো।

    “সিনেটর সেক্সটনের ডান হাত বলে খ্যাত নাসার ডেহকোয়ার্টারে যাচ্ছে? আজ রাতে? জনগণ কি পাথর মারবে না?”

    গ্যাব্রিয়েল ইয়োলান্ডাকে সেক্সটনের সন্দেহের কথাটা খুলে বললো।

    ইয়োলান্ডা তার কথাটা স্পষ্টতই মানতে নারাজ। “আমি সেই সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলাম, হার্পার ঠিক সুস্থ ছিলেন না ঐ দিন।”

    “সিনেটর সেক্সটনের স্থির বিশ্বাস তিনি মিথ্যে বলেছেন।”

    পিওডিএস-এর সফটওয়্যারটা যদি ঠিক না-ই করা হয়ে থাকবে, তবে সেটা কীভাবে উস্কাটি খুঁজে পেলো?”

    সেক্সটন ঠিক এই কথাটাই বলেছেন, গ্যাব্রিয়েল ভাবলো। “আমি জানি না। কিন্তু সিনেটর চাচ্ছেন আমি কিছু প্রশ্নের উত্তর তাকে যোগাড় করে দেই।”

    ইয়োন্ডা মাথা ঝাঁকালো। “সেক্সটন তোমাকে নিজের উর্বর স্বপ্নের কারণে মৌচাকের কাছে পাঠাচ্ছে। যেও না।”

    “আমি তার ক্যাম্পেইনটার বারোটা বাজিয়ে দিয়েছি।”

    “আরে, তার পচা ভাগ্যই সেটার বারোটা বাজিয়েছে।”

    “কিন্তু সিনেটরের কথা যদি সত্যি হয়ে থাকে এবং “

    “হানি, তোমার কি ধারণা পিওডিএস-এর ম্যানেজার ঘটনা সত্যি হলেও তোমার কাছে সেটা বলবে?”

    গ্যাব্রিয়েল কথাটা বিবেচনা করে সঙ্গে সঙ্গে একটা পরিকল্পনা আঁটলো। “আমি যদি ওখান থেকে কোনো কিছু পাই, তোমাকে ফোন করে জানাবো।”

    ইয়োলান্ডা সন্দেহের একটা হাসি দিলো। “যদি তুমি ওখানে কোনো কিছু পাও, আমি আমার টুপি খাবো।”

    ৮২

    এই পাথরের নমুনাটি সম্পর্কে যা জানো সব মাথা থেকে মুছে ফেলো।

    মাইকেল টোল্যান্ড এই উল্কাখণ্ড সম্পর্কে তথ্যগুলো ভুলতে একটু বেগই পাচ্ছে। রাচেল তাকে বলেছে, মনে করা যাক এটা সম্পর্কে তুমি কিছুই জানো না, তাহলে তুমি এটা দেখে কী ভাববে, কি বিশ্লেষণ হবে তোমার?

    রাচেলের প্রশ্নটা, টোল্যান্ড জানে খুবই কঠিন, তারপরও এটা বিশ্লেষণের একটি চর্চা। হ্যাবিস্ফেয়ারে আসার পর থেকে এই পাথর সম্পর্কে যেসব তথ্য দেয়া হয়েছিলো সেগুলোকে ভুলে গেলে, মানতেই হবে যে, তার ফসিল সংক্রান্ত বিশ্লেষণটা একটা বিশেষ জিনিসের দ্বারা পক্ষপাতদুষ্ট– সেটা হলো, যে পাথরটাতে ফসিল পাওয়া গেছে সেটা একটা উল্কাখণ্ড।

    আমাকে উল্কাখণ্ড সম্পর্কে কিছু বলা না হলে কী হতো? সে নিজেকে জিজ্ঞেস করলো। কোনো সিদ্ধান্তে আসতে না পারলেও টোল্যান্ড একটা হাইপোথিসিস করলো যে উল্কাখণ্ড পদবাচ্যটি বাদ দিয়ে এগোবে। সেটা যখন সে করলো ফলাফল হলো খুবই অমীমাংসিত। এবার টোল্যান্ড আর রাচেল কর্কির সাথে এ নিয়ে কথা বললো।

    “তো।” রাচেল বললো, “মাইক তুমি বলছো যে, কেউ যদি তোমাকে এ ফসিলযুক্ত পাথরটা দিয়ে কোনো কিছু না বলে, তবে কি তুমি এই সিদ্ধান্তে আসবে যে এটা এই পৃথিবীরই।”

    “অবশ্যই,” টোল্যান্ড জবাব দিলো। এছাড়া আর কীইবা ভাবতে পারতাম? বিজ্ঞানীরা প্রতি বছর এরকম নতুন জাতের প্রাণীর ফসিল ডজন ডজন আবিষ্কার করে থাকে।”

    “দুই ফুট দীর্ঘ উকুন?” কর্কি জানতে চাইলো, তাকে সন্দেহগ্রস্ত বলে মনে হলো। “এতো বড় উকুন এই পৃথিবীতে?”

    “এখানকার কথা বলছি না,” টোল্যান্ড বললো। “এই প্রাণীটা বর্তমান কালেই থাকতে হবে তা-না। এটা একটা ফসিল। আর এটা একশত সত্তর মিলিয়ন বছরের পুরনো। আমাদের জুরাসিক যুগের সমসাময়িক। সেই মেয়কার অনেক প্রাণীর আকারই বিশাল ছিলো –বিশাল ডানার উভচর প্রাণী, ডাইনোসর, পাখি।”

    “কিন্তু, কর্কি বললো। “তোমার যুক্তিতে মারাত্মক ত্রুটি রয়েছে। প্রায় ঐতিহাসিক যেসব প্রাণীর নাম তুমি বললে তাদের সবারই ছিলো ভেতরের দিকে কঙ্কাল। যা তাদেরকে পৃথিবীর মধ্যাকর্ষণ শক্তির বিরুদ্ধে বিশাল আকার গঠনে সাহায্য করতো। কিন্তু এই ফসিলটা ..” সে নমুনাটি হাতে নিয়ে তুলে ধরলো। “এগুলোর বাইরে কঙ্কাল রয়েছে। তারা অর্থোপড। ছারপোকার শ্ৰেণী। তুমিই বলেছে এধরণের বিশাল ছারপোকা কেবলমাত্র মৃদু মধ্যাকর্ষণ এলাকায়ই সম্ভব। তা না হলে এর বহিমুখী কঙ্কালটি তার নিচের ওজনে ভেঙে পড়তো।”

    “একদম ঠিক,” টোল্যান্ড বললো। “সেটা হোত যদি তারা পৃথিবীর ওপরে হেঁটে বেড়াতো।”

    কর্কি বিরক্ত হয়ে ভুরু তুললো। “তো, মাইক, যতোক্ষণ না কোনো গুহাবাসী পৃথিবীতে মধ্যাকর্ষণ বিরোধী উকুনের খামার পরিচালনা না করছে, ততোক্ষণ পর্যন্ত আমি বুঝতে পারছি না তুমি কীভাবে এই সিদ্ধান্তে আসবে যে, দুই ফুট লম্বা উকুন, তাও আবার এই পৃথিবীতে।”

    টোল্যান্ড এ ভেবে হাসলো যে একটা সহজ যুক্তি কর্কি খেয়াল করেনি। “আসলে আরেকটি সম্ভাবনাও রয়েছে। সে কর্কির খুব কাছে এসে বললো, “কর্কি, তুমি উপরের দিকেই বেশি তাকাতে অভ্যস্ত। নিচের দিকে তাকাও। এই পৃথিবীতেও অসংখ্য মধ্যাকর্ষণ বিরোধী স্থান রয়েছে। আর সেটা প্রাগৈতিহাসিক কাল থেকেই ছিলো।”

    কর্কি চেয়ে রইলো। “তুমি কি বলতে চাচ্ছো?”

    রাচেলকেও অবাক হতে দেখা গেলো।

    টোল্যান্ড জানালা দিয়ে চাঁদের আলোয় চৰ্চ করা সমুদ্রের দিকে নির্দেশ করলো। সমুদ্রে।”

    রাচেল আলতো করে শিষ বাজালো।

    “অবশ্যই।”

    “পানি হলো মৃদু মধ্যাকর্ষণের এলাকা।” টোল্যান্ড ব্যাখ্যা করলো। পানির নিচে সবকিছুর ওজনই কমে যায়। সমুদ্রে এমন সব নাজুক প্রাণী থাকে যা পৃথিবীর পৃষ্ঠে কখনও টিকে থাকতে পারে না– জেলি ফিশ, বিশাল আকারের স্কুইড, রিনেই।”

    কর্কি বললো, “চমৎকার, কিন্তু প্রাগৈতিহাসিক সমুদ্রে কখনও দৈত্যাকারের ছারপোকা ছিলো না।”

    “মাইক, ওখানে কে বিশাল আকারের ছারপোকা খাবে?”

    “এমন কিছু যারা গলদা চিংড়ি, কাঁকড়া, এবং বাগদা চিংড়ি খায়।”

    কর্কি চেয়ে রইলো।

    “ক্রুস্টাসিন হলো বিশাল আকারের সমুদ্র ছারপোকা, টোল্যান্ড বললো। “তারা ফিলাস অর্থোপড়ার শ্রেণীভুক্ত– উকুন, কাঁকড়া, মাকড়, পোকামাকড়, ঘাস ফড়িং, বিচ্ছু, গলদা চিংড়ি– তারা সবাই এই শ্রেণীভূক্ত।”

    কর্কিকে খুবই অসুস্থ দেখালো হঠাৎ।

    “শ্রেণী বিভাজনের দিক থেকে তারা ছারপোকা জাতীয়।” টোল্যান্ড ব্যাখ্যা করলো।

    কর্কির মুখ ফ্যাকাসে হয়ে গেলো। “ঠিক আছে, আমি আমার শেষ চিংড়ি রোলটা খেয়েছি।”

    রাচেলকে খুব উৎফুল্ল দেখাচ্ছে। “তো, যেসব অর্থোপড় পৃথিবীর বুকে ঘুড়ে বেড়ায় তারা মধ্যাকর্ষণের কারণে ছোটই থাকে। কিন্তু পানিতে, মধ্যাকর্ষণের ঘাটতি থাকার কারণে তাদের আকার বড় হয়ে থাকে।”

    রাচেলের সমস্ত উত্তেজনা মনে হলো দুঃশ্চিন্তায় ফিকে হয়ে গেলো। “মাইক, আমাকে বলো তুমি কি মনে করো মিলনের যে ফসিলটা আমরা দেখেছি সেটা এই পৃথিবীর সমুদ্রের হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।”

    টোল্যান্ড সরাসরি রাচেলের চোখের দিকে তাকালো। “হাইপোথেটিক্যালি, আমি বলবো, হা। সাগরের তলদেশে এমন জায়গাও রয়েছে যার বয়স একশ নব্বই মিলিয়ন বছর। আর তাত্ত্বিকভাবে এরকম প্রাণী ওখানে থাকতেই পারে।”

    “ওহ্, প্লিজ!” কর্কি আতকে উঠলো।

    “আমি বিশ্বাসই করতে পারছি না কী শুনছি এসব। উল্কাখণ্ডটির কথাটা ভাববা। সেটা তো আর সমুদ্রের নিচে পাওয়া যাবে না, তৈরি হওয়াও সম্ভব নয়। সমুদ্রের নিচে ফিউশন ক্রাস্ট সম্ভব না। নিকেলের অনুপাত এবং কন্ড্রুইল, সেটাও ওখানে অসম্ভব। তুমি ঘাস খাচ্ছে।”

    টোল্যান্ড জানে কৰ্কি ঠিকই বলেছে।

    মাইক,” রাচেল বললো, “নাসার কোনো বিজ্ঞানী কেন এই ফসিলকে সমুদ্রের প্রাণী হিসেবে বিবেচনা করেনি? এমনকি অন্যকোন গ্রহের সমুদ্রের হলেও?”

    “সত্যি বলতে কী, তার দুটো কারণ রয়েছে। সমুদ্রের ফসিলগুলোর প্রজাতিগুলো একত্রে মেশান থাকে। কারণ সমুদ্রের প্রাণী মারা গেলে তাদের ঠাই হয় সমুদ্রের তলদেশে। সমুদ্রের তলদেশ হলো ঐ সব প্রজাতিদের কবরস্থান। কিন্তু মিলনের নমুনাটি খুবই পরিস্কার– একটাই প্রজাতির। এটা মরুভূমিতে পাওয়া ফসিলের মতো মনে হয়।”

    রাচেল মাথা নেড়ে সায় দিলো। “আর দ্বিতীয় কারণটা?”

    টোল্যান্ড কাঁধ ঝাঁকালো। “স্বাভাবিক প্রবণতা। বিজ্ঞানীরা সবসময়ই বিশ্বাস করে যে, মহাশূন্যে যদি প্রাণী থাকে তবে সেটা হবে পোকামাকড়। আমরা যদি মহাশূন্যের দিকে তাকাই তবে তাহলে দেখবে সেখানে পানির চেয়ে পাথরই বেশি।”

    রাচেল চুপ হয়ে গেলো।

    যদিও …” টোল্যান্ড আরো বললো। রাচেল তাকে চিন্তা করতে পারছে। “আমি মানছি, সমুদ্রের তলদেশের গভীরে অনেক জায়গা আছে থাকে যাকে সমুদ্র বিজ্ঞানীরা বলে ডেড জোন। সেসব জায়গার আচরণ আমরা ঠিকমত বুঝিতে পারি না। কিন্তু সেসব জায়গার স্রোত আর খাদ্যের উৎস এমনই যে, কোনো কিছুই বেঁচে থাকার কথা নয়। হাতে গোনা কিছু প্রজাতিই কেবল সেখানে থাকে। এ থেকে বলা যেতে পারে, একটা প্রজাতির ফসিল একেবারে প্রশ্নের উর্ধ্বে নয়।”

    “হ্যালো?” কর্কি রেগে মেগে বললো। “ফিউশন ক্রাস্টটার কথা স্মরণে রেখো? নিকেলের অনুপাত?কভুইল? আমরা এসব নিয়ে কেন কথা বলছি না?”

    টোল্যান্ড কোনো জবাব দিলো না।

    “এই নিকেল উপাদানের বিষয়টা আমার কাছে আবার ব্যাখ্যা করুন।” রাচেল বললো। “পৃথিবীতে পাওয়া পাথরে নিকেলের উপাদান হয় বেশি হবে নয়তো কম হবে। কিন্তু উখিঞ্জে পাথরে নিকেলের উপাদান হবে মাঝারি স্তরের?”

    কর্কি তার মাথায় আঘাত করে বললো, “একদম ঠিক।”

    “তাহলে এই নমুনাতে নিকেলের উপাদান প্রত্যাশানুযায়ী ঠিক সীমার ভেতরেই রয়েছে?”

    “খুবই কাছাকাছি, হ্যাঁ।”

    রাচেলকে খুব অবাক দেখালো।”রাখেন, কাছাকাছি? এর মানে কী?”

    কর্কি একটু ইতস্তত করলো। যেমনটি আমি আগেই ব্যাখ্যা করেছি, সব উল্কা খয়ে খনিজ উপাদান স্নি-ভিন্ন। নতুন কোনো উল্কাখণ্ড পাওয়া গেলে আমরা বিজ্ঞানীরা হিসেব নিকেশ করে দেখি আগের পাওয়া উষ্কখণ্ডের সাথে কতটুকু মিল আছে। তারপর, একটা গ্রহণযোগ্যমাত্রার নিকেলের উপস্থিতি ঠিক করে নিই উল্কাখণ্ড শনাক্ত করার জন্য।”

    রাচেল নমুনাটি হাতে নিয়ে হতবাক হয়ে গেলো। “তাহলে এই উল্কাখণ্ডটি আপনাদেরকে বাধ্য করেছে পূর্বের পাওয়া নমুনাগুলোর নিকেলের গ্রহণযোগ্য মাত্রা নির্ধারণের ক্ষেত্রে? এটা কি মাঝারি স্তরের নিকেলের উপাদানের চেয়েও বেশি?”

    “খুবই অল্প, কর্কি বললো।

    “এই কথাটা কেউ আগে বলেনি কেন?”

    “এটা কোনো ইসুনা। অ্যাস্ট্রোফিজিক্সে এরকম আপডেট সচরাচরই করা হয়ে থাকে।”

    “এরকম একটি অবিশ্বাস্যরকমের বিশ্লেষণের বেলায়ও?”

    “দেখুন, কর্কি অস্থির হয়ে বললো, “আমি কেঋল আপনাকে এটা বলতে পারি যে, এই উল্কাখন্ত্রে নিকেলের উপাদানের হার পৃথিবীতে পাওয়া পাখরখন্ত্রে তুলনায় অন্য সব পাওয়া উল্কাখণ্ডের খুবই কাছাকাছি।”

    রাচেল টোল্যান্ডের দিকে ঘুরলো। “তুমি কি এ সম্পর্কে জানতে?”

    টোল্যান্ড দুর্বলভাবে মাথা নাড়লো। এটা এমন কোনো বড় ইসু ছিলো না সে সময়ে। “আমাকে বলা হয়েছিলো এই উল্কা খণ্ডটিতে অন্যান্য পাওয়া উষ্কখণ্ডের তুলনায় একটু বেশি মাত্রায় নিকেলের উপস্থিতি আছে। কিন্তু নাসার বিশেষজ্ঞরা মনে হয় এ ব্যাপারে সচেতন ছিলো না।”

    “আরে রাখো!” কর্কি মাঝ পথে বাধা দিয়ে বললো, “খনিজ উপাদানের প্রমাণই শেষ কথা নয়। বরং এটা নির্ভর করে অপার্থিব দেখতে মনে হচ্ছে কিনা তার ওপর।”

    রাচেল মাথা ঝাঁকালো। “দুঃখিত, কিন্তু আমার পেশায় এটা এমন কুযুক্তি যাতে মানুষ। খুন হয়ে যেতে পারে। একটা পাথরকে অপার্থিব দেখাচ্ছে বললেই সেটা উল্কাখণ্ড হয়ে যায়। এটা কেবল এই প্রমাণ করে যে পাথরটা পৃথিবীতে দেখতে পাওয়া পাথরের মতো নয়।”

    “পার্থক্যটা কি?”

    “কিছুই না, রাচেল বললো। “যদি আপনি পৃথিবীর সব পাথরই দেখে থাকেন।”

    কর্কি চুপ মেরে গেলো। “ঠিক আছে। অবশেষে সে বললো, “নিকেলের ব্যাপারটা ভুলে যান। আমাদের কাছে এখনও ফিউশন ক্রস্টি আর কন্ড্রুইল রয়েছে।”

    “নিশ্চয়,” রাচেল বললো, তার কথা শুনে মনে হলো সে খুশি হতে পারেনি। “তিনের মধ্যে দুই, খারাপ না।”

    ৮৩

    নাসার সেন্ট্রাল হেডকোয়ার্টারটা বিশাল চারকোণা কাঁচের একটি ভবন। ওয়াশিংটনের ৩০০ ই স্টটে সেটা অবস্থিত। এতে রয়েছে ২০০ মাইল ডাটা কেবল এবং হাজার টন কম্পিউটার প্রসেসর। ১১৩৪ জন কর্মচারী রয়েছে এখানে। যারা নাসা’র ১৫ বিলিয়ন ডলারের বাৎসরিক বাজেট তদারকি করে থাকে, সেই সাথে দেশব্যাপী ১২টি নাসা ঘটির কাজকর্মও।

    গভীর রাত হলেও, বনের ফয়ারের সামনে প্রচুর লোকজন দেখেও গ্যাব্রিয়েল অবাক হলো না।

    গ্যাব্রিয়েল জনসমাগমটি ভালো করে দেখলো। কিন্তু পিওডিএস-এর মিশন ডিরেক্টরের মতো কাউকে দেখা গেলো না সেখানে। লবিতে থাকা বেশিরভাগ লোকের গলায়ই সাংবাদিকের কার্ড না হয় নাসার আইডি কার্ড ঝোলানো। গ্যাব্রিয়েলের তার কোনোটাই নেই। সে এক তরুণী নাসা কর্মীকে দেখে এগিয়ে গেলো।

    “হাই। আমি ক্রিস হার্পারকে খুঁজছি?”

    মেয়েটা অদ্ভুতভাবে গ্যাব্রিয়েলের দিকে তাকালো। যেনো তাকে চেনা চেনা লাগছে, কিন্তু ঠিক ধরতে পারছে না। “আমি ডক্টর হার্পারকে কিছুক্ষণ আগে দেখেছি। আমার মনে হয় তিনি উপরের তলায় গেছেন। আমি কি আপনাকে চিনি?”

    “আমার তা মনে হয় না। গ্যাব্রিয়েল বললো। “উপর তলায় আমি কিভাবে যাবো?”

    “আপনি কি নাসাতে কাজ করেন?”

    “না।”

    “তাহলে উপরে যেতে পারবেন না।”

    “ওহ। এখানে কি ফোন আছে যেটা আমি ব্যবহার করতে পারি?”

    “এই,” মেয়েটা বললো, রেগে মেগে “আমি জানি আপনি কে। আমি টিভিতে আপনাকে সেক্সটনের সাথে দেখেছি। আমি বিশ্বাসই করতে পারছি না–”।

    গ্যাব্রিয়েল ততোক্ষণে ওখান থেকে চলে গেছে। সে টের পেলো পেছন থেকে মেয়েটি অন্যদেরকে গ্যাব্রিয়েলের আগমনের কথা জানিয়ে দিচ্ছে।

    ভালোই। দরজা থেকে বের হতে না হতেই আমি হয়ে গেলাম মোস্ট-ওয়ান্টেড ব্যক্তি।

    সে ভবনের ভেতরে ঢুকেই ডিরেক্টরদের তালিকাটা দেখতে পেলো। ওখানে কিছুই খুঁজে পেলো না। কোনো নাম নেই ওখানে। কেবল ডিপার্টমেন্টের নামই রয়েছে।

    পিওডিএস? সে ভাবলো। অবশেষে সে খুঁজে পেলো কাঙ্খিত ঠিকানাটি।

    আর্থ সায়েন্স এন্টারপ্রাইজ, ফেজ টু
    আর্থ অবজারভিং সিস্টেম (ইওএস)

    সে লিফটটা খুঁজে পেলেও দেখতে পেলো সেটা সিকিউরিটি কন্ট্রোল– কি কার্ড আইডি ব্যবহার করা হয়। কেবলমাত্র কর্মকর্তাদের প্রবেশই সম্ভব।

    একদল যুবক হাড়াহুড়ো করে লিফটের দিকে ছুটে এলো। তারা নাসা’র আইডি গলায় ঝুলিয়ে রেখেছে। গ্যাব্রিয়েল তার পেছনে তাকালো। মুখে ছোপ ছোপ দাগওয়ালা এক লোক একটা লিফটে আইডি কার্ড ঢোকাঁচ্ছে। লিফটের দরজাটা খুলে গেলো। সে হাসছে, আনন্দে মাথা দোলাচ্ছে, সবাই লিফটে উঠতে শুরু করলো। তারপর দরজাটা বন্ধ হতেই লোকটা উধাও হয়ে গেলো। গ্যাব্রিয়েল দাঁড়িয়ে রইলো। ভাবলো এখন কী করবে। সে ভাবলো একটা কি-কার্ড চুরি করবে কি না। কিন্তু তার এও মনে হলো সেটা হবে খুব অবিবেচকের মতো একটি কাজ। যাই করুক না কেন, তাকে তা খুব দ্রুত করতে হবে। সে এবার দেখতে পেলো। ঐ মেয়েটিকে, একটু আগে যার সাথে তার কথা হয়েছিলো। মেয়েটা নাসার এক নিরাপত্তাকর্মীকে নিয়ে ভীড় ঠেলে এগিয়ে আসছে।

    হাল্কা পাতলা টেকো এক লোক লিফটের সামনে এসে দাঁড়ালো। মনে হলো লোকটা গ্যাব্রিয়েলকে খেয়াল করেনি। লোকটা যখন কার্ড ঢোকাতে লাগলো গ্যাব্রিয়েল তখন নিরবে সব দেখতে লাগলো। দরজা খুলে গেলে লোকটা ভেতরে ঢুকে পড়লো।

    এক্ষুণি করো। গ্যাব্রিয়েল ভাবলো। মনস্থির করে ফেললো। হয় এখন, না হয় কখনই না।

    দরজাটা বন্ধ হতে থাকলে গ্যাব্রিয়েল দৌড়ে গিয়ে ফাঁক দিয়ে হাত ঢুকিয়ে দিলো। দরজাটা সঙ্গে সঙ্গে আবার খুলে গেলো। সে ভেতরে ঢুকে পড়লো। একটু হাসিখুশি ভাব করলো। “আপনি কখনও এরকমটি দেখেছেন?” সে ভড়কে যাওয়া টেকো লোকটাকে জিজ্ঞেস করলো। “হায় ঈশ্বর। এটাতো দারুণ!”

    লোকটা তার দিকে অদ্ভুতভাবে তাকিয়ে রইলো। “তো … হ্যাঁ, এটা একদম …” সে তার ঘাড়ের দিকে তাকালো, আইডি কার্ড না দেখতে পেয়ে শংকিত হলো মনে হচ্ছে। “আমি দুঃখিত, আপনি কি–”

    “চার তলা, প্লিজ। এতো তাড়াতাড়ি এসেছি যে আন্ডারওয়্যার পরেছি কিনা তাও মনে পড়ছে না।” সে হাসলো। চোরা চোখে লোকটার আইডিটা দেখে নিলো: জেমস থেইসিন, ফিনান্স প্রশাসক।

    “আপনি কি এখানে কাজ করেন?” লোকটা অস্বস্তি নিয়ে তাকিয়ে বললো। “মিস?”

    গ্যাব্রিয়েল তার মুখটা হা করে বললো। “জিম! আমি খুব কষ্ট পেলাম! মনে রাখার মতো মেয়ে কি আমি নই!”

    লোকটা একটু ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলো। “আমি দুঃখিত। এতে উত্তেজনা আজ, আপনি তো জানেনই। আমি মানছি, আপনাকে চেনা চেনাই লাগছে। আপনি কোনো প্রোগ্রামে কাজ করছেন?”

    গ্যাব্রিয়েল একটু হাসলো। “ইওএস।”

    “অবশ্যই, মানে বলছিলাম, কোনো প্রজেক্টে?”

    গ্যাব্রিয়েল টের পেলো তার নাড়ি স্পন্দন বেড়ে গেছে। সে কেবল একটা কথাই ভাবতে পারছিলো। পিওভিএস।”

    লোকটা অবাক হয়ে গেলো। “সত্যি? আমি ভেবেছিলাম ডক্টর হার্পারের টিমের সবার সাথেই আমার দেখা হয়েছে।”

    সে একটু বিব্রত হলো। “ক্রিস আমাকে আড়ালে রেখেছিলো। আমিই সেই ইডিয়ট প্রোগ্রামার যে সফটওয়্যারের ভক্সেল ইনডেক্সটার তালগোল পাকিয়ে ফেলেছিলাম।”

    “আপনিই সেই লোক?” লোকটা বললো।

    গ্যাব্রিয়েল ভুরু তুললো, “এক সপ্তাহ ধরে আমি ঘুমাইনি।”

    “কিন্তু এসবের জন্য ডক্টর হাপারই বেশি নাকানিচুবানি খেয়েছেন!”

    “আমি জানি। ক্রিস সেরকমই। যাহোক শেষ পর্যন্ত সব ম্যানেজ করতে পেরেছে সে। কী অদ্ভুত ঘোষণা আজ রাতে, তাই না? উকাবটি। আমি তো ভড়কে গেছি!”

    লিফটা চার তলায় থামলো। গ্যাব্রিয়েল সেখান থেকে বের হয়ে এলো। “আপনার সাথে দেখা হয়ে ভালোই হলো। জিম।”

    “নিশ্চয়,” লোকটাও বললো, “আপনার সাথে দেখা হয়ে আমারও ভালো লাগছে, আবার দেখা হবে।”

    .

    জাখ হার্নি অন্যসব প্রেসিডেন্টের মতোই রাতে মাত্র চার-পাঁচ ঘণ্ট ঘুমান। বিগত কয়েক সপ্তাহ ধরে তিনি তার চেয়েও কম সময় ঘুমিয়েছেন। সন্ধ্যার তুমুল উত্তেজনার কারণে তার অঙ্গ প্রত্যঙ্গগুলো যেনো শেষ রাতের মতো আচরণ করছে।

    তিনি এবং তার উচ্চ পদস্থ কয়েকজন অফিসার রুজভেল্ট রুমে বসে শ্যাম্পেইন পান করে আনন্দ উদযাপন করছিলেন আর টিভিতে প্রেস কনফারেন্সের বিরামহীন সম্প্রচার দেখছিলেন। পর্দায় এখন বিখ্যাত এক টিভির খ্যাতনামা রিপোর্টার হোয়াইট হাউজের সামনে দাঁড়িয়ে রিপোর্ট করছে।

    “এই আবিষ্কারটার বৈজ্ঞানিক গুরুত্ব নিশ্চয় রয়েছে, সেটা ছাড়াও এর প্রতিক্রিয়া রাজনৈতিক ক্ষেত্রে দারুণ প্রভাব ফেলবে। নির্বাচনের এই লড়াই চলাকালীন সময়ে এমন ঘটনা ঘটলো যে, তাতে প্রেসিডেন্ট বাড়তি সহায়তা পেয়ে গেলেন।” রিপোর্টারের কণ্ঠটা আরেকটু নাটকীয় হয়ে উঠলো, “আর সিনেটর সেক্সটনের জন্য এটা খুবই বাজে ব্যাপার হবে।” এই মুহূর্তে রিপোটিংটা শেষ হয়ে পর্দায় সিনএনএন-এর সেই বিতর্কটা-র কিছু অংশ দেখান হলো। সেক্সটন আর মারজোরি টেঞ্চের দ্বৈরথ।

    “পঁয়ত্রিশ বছর পরে, সেক্সটন বললেন, “আমার মনে হয় আমরা আর অপার্থিব জীব খুঁজে পাবো না!”

    “আর আপনার ধারণাটি যদি ভুল হয়?” টেঞ্চ বললো।

    সেক্সটন তার চোখ গোল গোল করে বললেন, “ওহ, ঈশ্বরের দোহাই। মিস্ টেঞ্চ, আমার ধারণা যদি ভুল প্রমাণিত হয় তবে আমি আমার টুপি খাবো?”

    রুজভেল্ট রুমের সবাই হেসে ফেললো। টেঞ্চ কীভাবে সেক্সটনকে কোণঠাসা করেছে দর্শক তখন বুঝতে পারেনি।

    প্রেসিডেন্ট ঘরের আশেপা তাকালেন টেঞ্চকে দেখার জন্য। প্রেস কনফারেন্সের পর থেকে তিনি তার দেখা পাননি। এখানেও সে নেই। অদ্ভুত। তিনি ভাবলেন। আমার মতো এটা তো তারও বিজয়।

    খবরে এখন সেক্সটনের ভরাডুবি নিয়ে বিশ্লেষণ করা হচ্ছে।

    একটা দিনে কত পার্থক্য তৈরি হয়ে যায়, প্রেসিডেন্ট ভাবলো। রাজনীতিতে, তোমার দুনিয়া এক মুহূর্তেই বদলে যেতে পারে।

    ভোরের মধ্যেই তিনি বুঝতে পারবেন এ কথাটা কতোটা সত্য।

    ৮৫

    পিকারিং সমস্যা করতে পারে, টেঙ্ক বলেছিলো।

    নাসা প্রধান এক্সট্রম নতুন খবরটি নিয়ে এতোই ব্যতিব্যস্ত যে, হ্যাবিস্ফেয়ারের বাইরের ঝড়টার কথা খেয়ালই করেনি। ঝড়ের কো এতো বেড়ে গেছে যে নাসা’র কর্মীরা ঘুমানর চিন্তা বাদ দিয়ে এ নিয়ে নার্ভাস হয়ে ফিসফাস কথা বলছে একে অন্যের সাথে। এক্সট্রমের চিন্তাভাবনা অন্য আরেকটা ঝড়ে হারিয়ে গেছে– ওয়াশিংটনে একটা ঝড় ধেয়ে আসছে। বিগত কয়েক ঘণ্টা ধরে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো মোকাবেলা করতে হবে। তারপরও একটি সমস্যা বেশি প্রকট হয়ে ধরা দিয়েছে।

    পিকারিং সমস্যা করতে পারে।

    পিকারিং এখন থেকে কয়েক বছর আগে থেকেই নাসা এবং এক্সট্রমের বিরুদ্ধে তেঁতে আছে। প্রাইভেসি পলিসি আর নাসার ব্যর্থতা নিয়ে সে সোচ্চার।

    এক্সট্রম তার অফিসে পৌঁছালো। নিজের ডেস্কে মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়লো। তাকে কিছু সিদ্ধান্ত নিতে হবে। যে দিনটি চমৎকারভাবে শুরু হয়েছিলো এখন সেটা একটা দুঃস্বপ্নে পরিণত হয়েছে। সে পিকারিংয়ের চিন্তাভাবনাসমূহ ধরার চেষ্টা করলো। লোকটা এরপর কী করবে? পিকারিংয়ের মতো বুদ্ধিমান একজন নাসা’র আবিষ্কারের গুরুত্ব ঠিকই বুঝতে পেরেছে।

    পিকারিংয়ের কাছে যে তথ্য রয়েছে সেটা দিয়ে সে কী করবে? সে কি এটা বাদ দেবে, নাকি ব্যবহার করবে?

    এক্সট্রম চিন্তিত হলো। কোনোটা সে করবে সে ব্যাপারে তার খুব কম সন্দেহই রয়েছে।

    হাজার হোক, পিকারিংয়ের রয়েছে নাসার সাথে গভর একটা ইসু একটি পুরনো। ব্যক্তিগত তিক্ততা যা রাজনীতির চেয়েও বেশি গভীরে প্রোথিত।

    ৮৬

    রাচেল এখন চুপচাপ, জি-৪ এর কেবিনে বসে উদাসভাবে চেয়ে আছে। কানাডার উপকূল সেন্ট লরেন্স উপসাগর দিয়ে তাদের প্লেনটা দক্ষিণ দিকে ছুটে চলছে। টোল্যান্ড কাছেই বসে কর্কির সাথে কথা বলছে। যদিও বেশির ভাগ প্রমাণই সাক্ষ্য দেয় যে উল্কাখণ্ডটি সত্যিকারের। কিন্তু করি যখন বললো যে নিকেলের উপাদান কোনো স্তরে হবে সেটার মান নির্ধারণীর ব্যাপারটা অস্পষ্ট, তখন রাচেলের সন্দেহটাই মাথা চাড়া দিয়ে ওঠে। গোপনে বরফের নিচে উল্কাখণ্ডটি স্থাপনটাই এই জালিয়াতি ঘটনার একমাত্র ব্যাখ্যা হতে পারে।

    তাসত্ত্বেও, বাকি বৈজ্ঞানিক প্রমাণগুলো উল্কাখণ্ডটির সত্যতাকেই নির্দেশ করে।

    রাচেল জানালা থেকে মুখ সরিয়ে ডিস্ক সদৃশ উল্কা খণ্ডটির দিকে তাকালো। ছোট ছোট কন্ড্রুইলগুলো চক্ করছে। টোল্যান্ড এবং কর্কি এইসব ধাতব কন্ড্রুইলগুলো নিয়ে একটু আগেই আলোচনা করেছে। শেষে তারা দুজনেই এই সিদ্ধান্তে এসেছে যে, কন্ড্রুইলগুলো উল্কা হবার ব্যাপারটি নির্ধারণ করে দেয়। ডাটার যথার্থতা নয়।

    রাচেল ডিস্কের যে জায়গাটাতে ফিউশন ক্রাস্ট আছে সেটাতে আঙুল বোলালো। দেখতে এটা খুবই টাকা মনে হচ্ছে– ৩০০ বছরের পুরনো নয়, এটা নিশ্চিত– যদিও কর্কি ব্যাখ্যা করেছে যে পতিত হবার পর থেকেই উল্কাখণ্ডটি বরফে আঁটকা পড়ে ছিলো, তাই জলবায়ুর সংস্পর্শে যে প্রাকৃতিক ক্ষয় হয় সেটা এখানে ঘটেনি। কথাটা যুক্তিসংগত বলেই মনে হচ্ছে।

    ফিউশন ক্রাস্টটা দেখার সময় তার মনে একটা অদ্ভুত ভাবনা খেলে গেলো– নিশ্চিত একটা ডাটা বাদ পড়ে গেছে। রাচেল ভাবলো, সেই তথ্যটা কি কারো চোখে পড়েনি নাকি কেউ ইচ্ছে করেই সেটা আড়াল করেছে।

    সে হুট করে কর্কির দিকে ঘুরলো “কেউ কি ফিউশন ক্রাস্টের সময় নির্ধারণ করেছে?”

    কর্কি তার দিকে তাকিয়ে দ্বিধাগ্রস্ত হলো।”কি?”

    “কেউ কি পোড়ার সময়টা নির্ধারণ করেছে। এতে করে আমরা জানতে পারবো, জ্যান্সারসল ফল এর সাথে সময়টা মিলছে কিনা?”

    “দুঃখিত, কর্কি বললো, “এটার সময় নির্ধারণ করাটা অসম্ভব। আমাদের যে প্রযুক্তি রয়েছে তাতে এরকম জিনিসের সময় নির্ধারণ করতে হলে সেটা পচ শত বছরের নিচে হতে হবে।”

    রাচেল এবার বুঝতে পারলো কেন এই থ্যটা তাকে দেয়া হয়নি। তাহলে তো আমরা। বলতে পারি এই পাথরটা মধ্যযুগে অথবা গত সপ্তাহেও পোড়ানো হোতে পারে, তাই না?”

    টোল্যান্ড ভুরু কুকালো। “কেউ বলছে না, যে বিজ্ঞানের কাছেই সব প্রশ্নের উত্তর রয়েছে।”

    রাচেলের ভাবনাগুলো চলতে শুরু করলো। মারাত্মকভাবে পোড়া হলেই তাকে ফিউশন ক্রাস্ট বলা যায়। টেকনিক্যালি দিক থেকে বলতে গেলে এই পাথরের পোড়াটি বিগত অর্ধ শতাব্দীর মধ্যে যেকোন সময়েই হতে পারে। বিন্নি ভাবেই।

    “ভুল, কর্কি বললো। বিভিন্নভাবে, একাধিকবার পোড়ানো? না। একভাবেই পোড়। বায়ুমণ্ডলে পতিত হবার মাধ্যমেই কেবল সেটা হয়েছে।”

    “আর কোনো সম্ভাবনা নেই? ফার্নেস চুলায় হলে?”

    “ফার্নেস?” কর্কি বললো, “এইসব নমুনা ইলেক্ট্রন মাইক্রোস্কোপে পরীক্ষা করা হয়েছে। পৃথিবীর সবচাইতে বিশুদ্ধ ফার্নেসও অবশেষ রেখে যায়। এটাতে তা হয়নি।”

    “অগ্নিগিরিতে হলে?” সে বললো। “অগ্ন্যুৎপাতের উদগীরণের ফলে সবেগে বেড়িয়ে আসলে?”

    কর্কি মাথা ঝাঁকালো।”পোড়াটি কিন্তু খুবই পরিষ্কার।”

    রাচেল টোল্যান্ডের দিকে তাকালো।

    সমুদ্র বিজ্ঞানী মাথা নাড়লো। “দুঃৰত, পানির নিচে এবং উপরে দু’ধরণের অগ্ন্যুৎপাতেরই অভিজ্ঞতা আমর রয়েছে। কর্ক ঠিকই বলেছে। অত্যুৎপাতের থেকে হলে কতোগুলো উপাদান থাকে– কার্বনড্রাই অক্সাইড, সালফারডাই অক্সাইড, হাইড্রোজেন সালফাইড, হাইড্রোকোলিক এসিড– এসবই আমাদের ইলেক্ট্রনিক স্ক্যানে ধরা পড়বে। এই ফিউশন ক্রাস্টটি, সেটা আমরা পছন্দ করি আর নাই করি, বায়ু মণ্ডলে প্রবেশের কারণেই হয়েছে।”

    রাচেল একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো। “একটা ইলেক্ট্রনিক মাইক্রোস্কোপের নিচে ফেলে কিছু উপাদান আছে নাকি নেই সেটা দেখেই সিদ্ধান্ত নেয়া হলো যে ওটা আকাশ থেকে পড়েছে, খুব ‘জ সরল ব্যাখ্যা হয়ে গেলো না।”

    “আমরা যা প্রত্যাশা করেছিলাম, কর্কি বললো, “তাই পেয়েছি। বিশুদ্ধ বায়ুমণ্ডলীয় উপাদান। নাইট্রোজেন, অক্সিজেন, হাইড্রোজেন। কোনো পেট্রোলিয়াম নয়। সালফারও না।

    অন্য কোনো কিছুই না। আকাশ থেকে পড়লে যেসব উপাদান পাওয়া যায় তাই পেয়েছি।”

    রাচেল নিজের চেয়ারে হেলান দিয়ে ভাবতে লাগলো। বায়ুমণ্ডলীয় উপাদানের যে হার আপনি দেখেছেন,” রাচেল কর্কিকে বললো, “সেটা কি অন্যসব উল্কার সাথে মিলে যায়?”

    মনে হলো কর্কি প্রশ্নটা শুনে একটু ভড়কে গেছে। “আপনি কেন এটা জিজ্ঞেস করছেন?”

    রাচেল তার দ্বিধাগ্রস্ততা দেখে আরো আগ্রহী হয়ে উঠলো, “উপাদানের হার এক নয়, তাই না?”

    “এটার বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা রয়েছে।”

    রাচেলের হৃদস্পন্দন আচমকা বেড়ে গেলো। “আপনি কি কোনো একটি উপাদানের উপস্থিতির হার বেশি দেখেছেন।”

    টোল্যান্ড এবং কর্কি একে অন্যের দিকে তাকালো। “হা, কর্কি বললো, “কিন্তু–”

    “সেটা কি আয়নাইজ হাইড্রোজেন ছিলো?”

    কর্কির চোখ দুটো গোল হয়ে গেলো। “আপনি সেটা কি করে জানতে পারলেন?”

    টেল্যিান্ডকে পুরোপুরি বিস্মিত বলে মনে হলো।

    রাচেল তাদের দুজনের দিকেই তাকালো। “একথাটা আমাকে কেউ জানায়নি কেন?”

    কারণ এটার বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা রয়েছে!” কৰ্কি ক্ষিপ্ত হয়ে বললো।

    “আমি শুনছি বলুন, রাচেল বললো।

    “ওটাকে আইয়োনাইজ হাইড্রোজেনের উদ্বৃত্ত ছিলো।” কর্কি বললো, “কারণ উল্কাটি বায়ুমণ্ডলে প্রবেশ করেছিলো উত্তর মেরুর আকাশের মধ্য দিয়ে। যেখানে পৃথিবীর চৌম্বক ক্ষেত্র অস্বাভাবিকভাবেই হাইড্রোজেন আয়নের ঘনত্ব তৈরি করে।”

    রাচেল ভুরু তুললো। “দুঃখজনক যে, আমার কাছে আরেকটা ব্যাখ্যাও রয়েছে।”

    ৮৭

    নাসার হেডকোয়ার্টারের চতুর্থ তলাটি লবির থেকেও কম জৌলুসপূর্ণ–লম্বা করিডোর, আর দুপাশে অফিসের দরজার সারি। করিডোরটা ফাঁকা। লেমিনেট করা সাইন দেয়া আছে।

    ßল্যান্ডস্যাট–৭

    টেরা à

    ß ক্রিমস্যাট

    ß জেসন ১

    আকোয়া à

    পিওডিএস à

    গ্যাব্রিয়েল পিডিএস সাইনটা অনুসরণ করলো। অনেক দূর এগোবার পরে সে একটা ভারি লোহার দরজার সামনে এসে দাঁড়ালো। সেটাতে লেখা আছে :

    পোলার অবিটিং, ডেনসিটি স্ক্যানার (পিওডিএস)
    সেশন ম্যানেজার, ক্রিস হার্পার

    দরজাটা বন্ধ আছে। কি কার্ড এক পিনপ্যাড দ্বারা সুরক্ষিত সেটা। গ্যাব্রিয়েল দরজায় কান পাতলো। তার মনে হলো সে কারো কথা শুনতে পারছে। তর্ক করছে। হয়তো তা’নয়। সে আরেকটা প্রবেশ পথের খোঁজ করলো, কিন্তু কিছুই দেখতে পেলো না।

    দরজায় আবারো সে কান পাতলো। এবার সে নিশ্চিতভাবেই কথা শুনতে পেলো। সেটা আরো জোরে হচ্ছে। আর পায়ের আওয়াজ।ভেতর থেকে কিছু খোলার শব্দ হলো।

    লোহার দরজাটা খুলে যেতেই গ্যাব্রিয়েল একপাশে সরে গেলো, দরজাটার পেছনে দেয়ালের সাথে সেটে থাকলো। ভেতর থেকে একদল লোক বের হয়ে এলো। তারা উচ্চ স্বরে কথা বলছে। খুব রেগে আছে তারা।

    “হার্পারের সমস্যাটি কি? আমার মনে হয়েছিলো সে আনন্দ করবে, খুশিতে নাচবে!”

    ‘আজকের রাতের মতো একটা রাতে, আরেকজন বললো, “সে কিনা একা থাকতে চায়? তার আনন্দ উচিত!

    দলটি গ্যাব্রিয়েলের কাছ থেকে দূরে সরে যেতেই ভারি দরজাটা বন্ধ হতে শুরু করলো। লোকগুলো চলে যাবার পর গ্যাব্রিয়েল দরজার কাছে এসে সেটার হাতলটা ধরে ফেললো। দরজাটা তখনও পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়নি। গ্যাব্রিয়েল ঘরের ভেতর ঢুকেই আস্তে করে দরজাটা বন্ধ করে দিলো।

    জায়গাটা বিশাল একটা ল্যাবরেটরির মতো কম্পিউটার, ইলেক্ট্রনিক যন্ত্রপাতিতে ঠাসা। অন্ধকারে চোখটা অভও হতেই ঘরটা তার কাছে পরিস্কার হয়ে উঠলো। ঘরে একটা ডিম লাইট জ্বলছে। ঘরটার শেষ মাথায় একটা দরজা, সেটার নিচ দিয়ে আলো দেখা যাচ্ছে। গ্যাব্রিয়েল সেখানে হেঁটে গেলো নিঃশব্দে। দরজাটা বন্ধ। কিন্তু জানালা দিয়ে সে দেখতে পেলো একটা লোক কম্পিউটারে সামনে বসে আছে। সে লোকটাকে দেখেই চিনতে পারলো। নাসার সংবাদ সম্মেলনে তাকে দেখেছে সে।

    গ্যাব্রিয়েল দরজায় নক করতে গিয়ে থেমে গেলো। ইয়োলান্ডার কণ্ঠটা তার মনে পড়ে গেলো। ক্রিস হার্পার যদি পিডিএস-এর ব্যাপারে মিথ্যে বলেও থাকে, তোমার কি করে ধারণা হলো সে তোমার কাছে সত্যটা বলবে?

    গ্যাব্রিয়েল মনে মনে একটা পরিকল্পনা আঁটলো। সেক্সটনের সঙ্গে থেকে এই কৌশলটা সে রপ্ত করেছে। সেক্সটন এই কৌশলটাকে বলেন ‘ওভারটিং’– একটি জিজ্ঞাসাবাদের কৌশল রোমান কর্তৃপক্ষ এটা উদ্ভাবন করেছিলো অপরাধীকে তার স্বীকারোক্তি দেবার জন্য। পদ্ধতিটা খুবই সহজসরুল :

    যে তথ্যটা জানতে চাও সেটা উল্লেখ করো। তারপর সেটার চেয়ে মারাত্মক ও খারাপ কিছু যোগ করে অভিযোগ করো।

    উদ্দেশ্যটা হলো প্রতিপক্ষকে অপেক্ষাকৃত কম শয়তানীটা স্বীকার করার সুযোগ করে দেয়া। এভাবে সত্য বের করে আনা। গভীর একটা দম নিয়ে, কী বলবে সেটা মনে মনে ঠিক করে সে খুব দৃঢ়ভাবেই দরজায় নক করলো।

    “আমি বলেছি তো ব্যস্ত আছি!” হার্পার বললো।

    সে আবারো নক্‌ করলো। আবারো জোরে।

    “আমি তো বলেছিই, নিচে যাবার কোনো আগ্রহ আমার নেই!”

    এবার গ্যাব্রিয়েল হাতের মুঠি দিয়ে দরজায় আঘাত করলো।

    ক্রিস হার্পার উঠে এসে দরজা খুলে দিলো। “আরে, তুমি–” সে থেমে গেলো, গ্যাব্রিয়েলকে দেখে অবাক হয়ে গেছে বোঝা যাচ্ছে।

    “ডক্টর হার্পার,” সে খুব কাটখোট্টাভাবে বললো।

    “তুমি এখানে এলে কীভাবে?”

    গ্যাব্রিয়েলের চেহারাটা কঠিন হয়ে গেলো। “আপনি জানেন আমি কে?”

    “অবশ্যই। তোমার বস্ আমার প্রজেক্টের বিরুদ্ধে কয়েক মাস ধরেই লেগে আছে। তুমি এলে কীভাবে?”।

    “সিনেটর সেক্সটন আমাকে পাঠিয়েছেন।”

    হার্পার ল্যাবরেটরিটার দিকে তাকালো। “তো বৃক্ষীর কোথায়?

    “সেটা আপনার না ভাবলেও চলবে। সিনেটরের অনেক প্রভাবশালী যোগাযোগ রয়েছে।”

    “এই ভবনে?” হার্পারকে সন্ধি বলে মনে হলো।

    “আপনি অঞ্চ কাজ করেছেন, ডক্টর হার। আর আমার সিনেটর আপনার মিথ্যে কলা নিয়ে সিনেটে একটি তদন্ত কমিটির আহ্বান করেছেন।”

    হার্পারের মুখটা ফ্যাকাশে হয়ে গেলো। “তুমি এসব বলছ?”

    “আপনার মত স্মার্ট লোকের বোকার মতো আচরণ করা মানায় না। আপনি সমস্যায় পড়েছেন, সিনেটর আপনার কাছে একটা প্রস্তাব পাঠিয়েছেন। আজ রাতে সিনেটরের ক্যাম্পেইন প্রচণ্ড একটা ধাক্কা খেয়েছে। তার আর কিছুই হারাবার নেই। আর তিনি চান আপনাকেও তার পতনের সঙ্গী করতে।”

    “কী দুঃসাহস তোমার, এসব আমাকে বলছ?”

    “আপনি পিওডিএস-এর সফটওয়্যারের মেরামতের ব্যাপারে মিথ্যে বলেছেন, সংবাদ সম্মেলনে। আমরা সেটা জানি। অনেকেই জানে।” হাপার কিছু বলার আগেই গ্যাব্রিয়েল আবারো বলতে শুরু করলো। “সিনেট, এক্ষুণি আপনার মিথ্যে কলার খবরটা জানিয়ে দিতে পারে, কিন্তু তিনি সে ব্যাপারে আগ্রহী নন। তিনি আরো বড় কিছু চান। আমার মনে হয় আপনি জানেন, আমি কি বলছি।”

    “না, আমি–”

    “সিনেটরের প্রস্তাবটা হলো। তিনি আপনার মিথ্যে বলাটা নিয়ে চুপ থাকবেন, যদি আপনি নাসার শীর্ষ পর্যায়ের ঐ ব্যক্তির নামটি আমাদের বলে দেন যার সাথে আপনি নাসার তহবিল তছরুপ করেছেন।”

    ক্রিস হার্পার হতবাক হয়ে গেলো। “কি? আমি কোনো টাকা আত্মসাৎকরিনি!”

    “আমি বলবো, আপনি যা বলবেন ভেবে চিন্তে বলবেন, স্যার। সিনেটরিয়াল কমিটি কয়েক মাস ধরেই প্রমাণাদি সংগ্রহ করে যাচ্ছে। আপনি কি মনে করেন, আপনারা দুজন পার পেয়ে যাবেন? মিথ্যে বলা এবং তহবিল তছরুপের জন্য আপনি জেলে যাবেন, ডক্টর হার্পার।”

    “আমি এরকম কিছু করিনি!”

    “আপনি বলতে চাচ্ছেন আপনি পিওডিএস সম্পর্কে মিথ্যে বলেননি?”

    “না, আমি বলছি আমি কোনো টাকা আত্মসাৎ করিনি!”

    “তাহলে আপনি বলছেন, আপনি পিওডিএস নিয়ে মিথ্যে বলেছেন।”

    হার্পার ফ্যাল ফ্যার করে চেয়ে রইলো।

    “ভুলে যান মিথ্যে বলাটার কথা।” গ্যাব্রিয়েল বললো, “সিনেটর অবশ্য আপনার প্রেস কনফারেন্সে বলা মিথ্যে নিয়ে আগ্রহী নন। আমরা সেটার সাথে অভ্যস্থ হয়ে গেছি। আপনারা একটা উচ্চাখও পেয়েছেন, কীভাবে পেয়েছেন সেটা নিয়ে কেউ মাখাও ঘামায় না। মূল ইসু হলো তহবিল আত্মসাং-এর ব্যাপারটা। সেক্সটনের দরকার নাসা’র শীর্ষ ব্যক্তিদের একজনের পতন ঘটানো। তাকে কেবল বলে দিন কে ছিল আপনার সাথে। এভাবে আপনি নিজে বেঁচে যাবেন। তা না হলে সিনেটর পুরো ব্যাপারটাকে নোংরা পর্যায়ে নিয়ে যাবেন।”

    “তুমি থোকা দিচ্ছে। কোনো তহবিল তছরুপ হয়নি।”

    “আপনি একজন দারুণ মিথ্যেবাদী। ডক্টর হার্পার। আমি ডকুমেন্টগুলো দেখেছি। আপনার নাম সেখানে কয়েকবারই আছে।”

    “কসম খেয়ে বলছি এরকম কোনো তহবিল তছরুপের কথা আমি কিছু জানি না!”

    গ্যাব্রিয়েল একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো। “ডক্টর, হয় আপনি মিথ্যে বলেছেন, নয়তো, নাসা’র উচ্চ পর্যায়ের কেউ আপনাকে বলির পাঠা বানাচ্ছে।”

    এই কথাটাতে হাপার একটু ভাবলো।

    গ্যাব্রিয়েল তার হাত ঘড়িটা দেখলো। “সিনেটরের প্রস্তাবটা এক ঘণ্টা ধরে টেবিলে পড়ে রয়েছে। আপনি নাসার শীর্ষ ব্যক্তির নামটা বলে নিজেকে বাঁচাতে পারেন। সেক্সটন আপনার ব্যাপারে মাথা ঘামাবেন না। তার দরকার রাঘব বোয়াল”

    হার্পার তার মাথা ঝাঁকালো। “তুমি মিথ্যে বলছে।”

    “এই কথাটা কি আপনি কোর্টে বলতে চান?”

    “অবশ্যই। আমি পুরো ব্যাপারটাই অস্বীকার করবো।”

    শপথ নেবার পরও? ধরুন আপনি পিওডিএস-এর ব্যাপারটাও অস্বীকার করলেন?” গ্যাব্রিয়েল বললো। “ডক্টর আপনার অপনশগুলো ভাবুন। আমেরিকার জেলখানাগুলো খুবই বাজে জায়গা।”

    হার্পার গ্যাব্রিয়েলের দিকে তাকালো। গ্যাব্রিয়েল তার চোখে আত্মসমর্পণের আভাস দেখতে পেলো। কিন্তু হার্পার যখন কথা বললো, তার কণ্ঠটা লোহার মতোই কোনো গেলো।

    “মিস অ্যাশ,” সে রাগতস্বরে বললো। “আপনি বাতাস ধরার চেষ্টা করছেন। আপনি এক আমি দুজনেই জানি কোনো রকম তহবিল তছরুপ হয়নি। এ ঘরে একজন মিথ্যেবাদীই আছে আর সেটা হলো আপনি।”

    গ্যাব্রিয়েলের মনে হলো তার পেশীগুলো আড়ষ্ট হয়ে গেছে। সে পালাতে চাইলো ওখান থেকে। তুমি একজন রকেট বিজ্ঞানীকে ধোকা দেবার চেষ্টা করেছে। তুমি কী আশা করেছিলে? সে জোর করে নিজেকে ঠিক রাখলো।

    “আমি যা জানি, সে বললো, “যেসব ডকুমেন্ট আমি দেখেছি– আপনি এবং আরেকজন নাসার তহবিল তছরুপ করেছেন সেটার শক্ত প্রমাণ তাতে রয়েছে। সিনেটর চাচ্ছেন আপনার পার্টনার একাই তদন্তের মুখোমুখি হোক। গ্যাব্রিয়েলের শত প্রচেষ্টা সত্ত্বেও হার্পার হার মানলো না। গ্যাব্রিয়েল মনে করলো ওখান থেকে চলে যাওয়াই ভালো। নয়তো হাপারের বদলে তাকেই জেলে যেতে হবে। সে লোহার দরজাটা খুলে চলে যেতে লাগলো। লিফটের সামনে আসতেই গ্যাব্রিয়েল তার পেছনে লোহার দরজাটা খোলার শব্দ পেলো।

    মিস অ্যাশ,” হার্পার তাকে ডাকলো। আমি কসম খেয়ে বলছি তহবিল তছরুপের ব্যাপারে আমি কিছুই জানি না। আমি একজন সৎ ব্যক্তি!”

    গ্যাব্রিয়েলের মনে হলো তার হৃদপিণ্ডটা লাফাচ্ছে। সে হাঁটতে লাগলো। সে নির্বিকার ভাবে হাঁটতে হাঁটতেই বললো, “তারপরও আপনি সংবাদ সম্মেলনে মিথ্যে বলেছেন।”

    নিরবতা। গ্যাব্রিয়েল হলেওয়ে দিয়ে এগোতেই লাগলো।

    “দাঁড়ান! হার্পার জোরে বললো। সে পেছন থেকে দৌড়ে এসে তার পাশে এসে দাঁড়াল। তার চেহারাটা ফ্যাকাশে হয়ে আছে। “তহবিল তছরুপের ব্যাপারটা,” সে বললো, “আমি জানি কে আমাকে ফাসাচ্ছে।”

    গ্যাব্রিয়েল থেমে গেলো। সে আবারো নির্বিকারভাবে বললো, “আপনি আশা করছেন আমি বিশ্বাস করব কেউ আপনাকে ফাসাচ্ছে?”

    হার্পার দীর্ঘশ্বাস ফেললো। “আমি কসম খেয়ে বলছি আমি তহবিল তছরুপের ব্যাপারে কিছুই জানি না। কিন্তু আমার বিরুদ্ধে যদি কোনো প্রমাণ থাকে…”

    “অনেক আছে।”

    হার্পার দীর্ঘশ্বাস ফেললো, “তাহলে এসব বানোয়াট। প্রয়োজন স্কুলে আমাকে শায়েস্তা করার জন্য করা হয়েছে। আর একজন লোকই আছে যে এ কাজ করবে।”

    “কে?”

    হার্পার তার চোখের দিকে তাকিয়ে বললো, “লগে এক্সট্ৰম আমাকে ঘৃণা করে।”

    গ্যাব্রিয়েল বিস্মিত হলো। “নাসা প্রধান?”

    হার্পার দুঃখভারাক্রান্ত হয়ে মাথা নাড়লো। “তিনিই আমাকে দিয়ে জোর করে সংবাদ সম্মেলনে মিথ্যে বলিয়েছেন।”

    ৮৮

    অরোরা এয়ারক্রাফটা মিথেইন প্রপালসন সিস্টেমে চলে। অর্ধেক ক্ষমতায় ছুটতে থাকলেও সেটা শব্দের চেয়ে তিনগুণ দ্রুত গতিতে ছুটে চলেছে– ঘণ্টায় দুই হাজার মাইলেরও বেশি। ডেল্টা ফোর্স ছুটে চলেছে তার গন্তব্যে। ইজিনের ঝাঁকুনিটা তাদের কাছে সম্মোহিত একটা ছন্দ বলে অনুভূত হলো। একশত ফিট নিচে উন্মত্ত সমুদ্রটাকে দেখা যাচ্ছে।

    অরোরা হলো সেই সব গোপন এয়ারক্রাফট যার অস্তিত্ব সম্পর্কে কেউই অবগত নয়। আবার সেটা সবাই চেনেও। এমনকি ডিসকভারি চ্যানেল নেভাদাতে অরোরার পরীক্ষামূলক উড্ডয়নের সচিত্র প্রতিবেদনও দেখিয়েছিলো। তবে এ সম্পর্কে যে খবর বেড়িয়েছিল সেটাতে বলা হয়েছিলো যে ইউএস মিলিটারির কাছে শব্দের চেয়ে ছয়গুন বেশি গতিসল্ট এয়ারক্রাফট রয়েছে, আর এটা মোটেও ড্রইং টেবিলে নেই। এটা এখন আকাশে উড়ছে।

    লকহিড-এর তৈরি অরোরা দেখতে চ্যাপ্টা আমেরিকান ফুটবলের মতো। ১১০ ফুট লম্বা আর ৬০ ফুট চওড়া। এর সারা শরীর মসৃন স্বচ্ছ থার্মাল টাইলস দিয়ে বাঁধানো। স্পেস শার্টল এ যেমনটি ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এতে ব্যবহার করা হয়েছে নতুন ধরণের প্রপালশন। সিস্টেম যা পাল্‌স ডিটোনেশন ওয়েভ ইজিন নামে পরিচিত। যাতে বিশুদ্ধ তরল হাইড্রোজেন পোঁড়ানো হয়, যার জন্য লেজের পেছন দিয়ে দীর্ঘ একটা ধোঁয়ার রেখা তৈরি হয়। এ কারণে এটা কেবলমাত্র রাতেই চালানো হয়।

    আজ রাতে, প্রচণ্ড গতিতে অরোরা ছুটে যাচ্ছে ইস্টার্ন সি-বোর্ডের দিকে। এভাবে ছুটতে থাকলে মাত্র আধ ঘণ্টায় এটা ওখানে পৌঁছে যাবে। তাদের শিকারদের চেয়েও দুঘন্টা আগে। তাদের শিকার যে প্লেনে করে যাচ্ছে, সেটাকে গুলি করে ভূপাতিত করার ব্যাপারটা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। কন্ট্রোলার মনে করে এতে করে ঘটনাটা রাডারে ধরা পড়ে যাবে অথবা ধ্বংষ্কৃপের কারণে একটা বড়সড় তদন্ত শুরু হয়ে যেতে পারে। কন্ট্রোলারের মতে, প্লেনটাকে ল্যান্ড করতে দেয়াই ভালো হবে। তাদের শিকাররা ওখান থেকে নামার পর পরই ডেল্টা ফোর্স সিদ্ধান্ত নেবে কী করা যেতে পারে।

    এখন, অরোরা ছুটে চলেছে ল্যাব্রাডর সমুদ্রের ওপর দিয়ে। ডেল্টা-ওয়ানের ওয়্যারলেসে একটা ইনকামিং কল এলে সে জবাব দিলো।

    “পরিস্থিতি বদলে গেছে, ইলেক্ট্রনিক কণ্ঠটা তাদের জানালো। “রাচেল সেক্সটন এবং অন্য বিজ্ঞানীদের আগে আরেকজনকে তোমাদের টার্গেট করতে হবে।”

    আরেকজন টার্গেট। ডেল্টা-ওয়ান যেনো সেটা আঁচ করতে পারলো। সবকিছু এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে। কন্ট্রোলারের জাহাজে আরেকটা ছিদ্র ধরা পড়েছে। আর কন্ট্রোলার সেটা খুব দ্রুতই মেরামত করতে চাচ্ছে। জাহাজটার কোনো ফুটোই হোতো না, ডেল্টা-ওয়ান নিজেকে স্মরণ করিয়ে দিলো, যদি আমরা মিলনেতেই সফলভাবে আঘাত হানতে পারতাম। ডেল্টা-ওয়ান জানে নিজের ভুল নিজেকেই শোধরাতে হবে।

    “চতুর্থ একজনের আবির্ভাব ঘটেছে,” কন্ট্রোলার বললো।

    “কে?”

    কন্ট্রোলার কিছুক্ষণ চুপ থাকলো। তারপর তাদেরকে সেই নামটা জানিয়ে দিলো।

    তিন জন লোক অবাক হয়ে একে অন্যের দিকে তাকালো। এটা এমন একটি নাম যা তারা সবাই ভালো করেই চেনে।

    অবাক হবার কিছু নেই যে কন্ট্রোলারের কথাটা খুবই ঘাবড়ে যাবার মতো! ডেল্টা-ওয়ান ভাবলো। যে অপারেশনে ‘জিরো ক্যাসুয়ালটি মানে কোনো খুন খারাবি থাকার কথা ছিলো না, সেখানে এখন হত্যার সংখ্যা লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। কন্ট্রোলার যখন বললো ঠিক কোথায় এবং কীভাবে ঐ ব্যক্তিতে আঘাত করতে হবে তখন তার গলা শুকিয়ে গেলো।

    “ভালো করে শোনো,” কন্ট্রোলার বললো। আমি এই নির্দেশনা কেবল একবারই দেবো।”

    ৮৯

    নর্দান মেইনের অনেক উপর দিয়ে একটা জি-ফোর জেট দ্রুত গতিতে ওয়াশিংটনের দিকে ছুটে চলছে। ভেতরে টোল্যান্ড আর কর্কি রাচেল সেক্সটনের কথা শুনছে। সে ব্যাখ্যা করছে। কেন উখিণ্ডের ফিউশন ক্রাস্টে অতিরিক্ত হাইড্রোজেন আয়ন পাওয়া গেছে।

    “নাসার প্রাক্ৰকে একটি প্রাইভেট টেস্ট ফ্যাসিলেটিজ রয়েছে।” রাচেল বললো। সে নিজেই বিশ্বাস করতে পারছে না এসব কথা সে বলছে। কারণ এরকম গোপন তথ্য নিয়ে কারো সাথে আলোচনা করাটা তাদের প্রোটোকলের বাইরে। কিন্তু এখন পরিস্থিতিটাই এমন যে টোল্যান্ড আর কর্কিকে সেটা বলতেই হচ্ছে।”

    পাক হলো নাসার নতুন ধরণের মৌলিক ইনজিন পরীক্ষা করার একটি চেম্বার। দুই বছর আগে আমি এরকম একটি নতুন ধরণের ইনজিনের ওপর সারসংক্ষেপ তৈরি করেছিলাম– সেটাকে বলা হয়েছিলো এক্সপানডেড সাইকেল ইজিন।”

    কর্কি তার দিকে সন্দেহের দৃষ্টিতে তাকালো। “এক্সপান্ডেড সাইকেল ইনজিন এখনও তাত্ত্বিক অবস্থাতে রয়েছে। কাগজে কলমে। কেউ ওটা পরীক্ষা করেনি। এটাতো ভবিষ্যতের ব্যাপার। আগামী দশকে হলেও হতে পারে।”

    রাচেল মাথা ঝাঁকালো। “দুঃখিত, কর্কি। নাসার কাছে এর প্রোটোটাইপ রয়েছে। তারা পরীক্ষা করেছে।”

    “কি?” কর্কিকে সন্দেগ্রস্তই মনে হলো। ইসিই তরল অক্সিজেন–হাইড্রোজেন-এ চলে, যা মহাশূন্যে জমে গিয়ে ইঞ্জিনটা অচল হয়ে পড়ে, তাই সেটা নাসার কোনো কাজেই লাগে না। এই সমস্যা না কাটাতে পারলে নাসা ইসিই ইজিন তৈরি করবে না বলে জানিয়েছিলো।”

    “তারা সেই সমস্যা কাটিয়ে উঠেছে এবং নাসা এই প্রযুক্তিটা মঙ্গলগ্রহের অভিযানে ব্যবহার করবে বলে ঠিক করেছে।”

    কর্কি বিস্ময়ে হতবাক হয়ে গেলো। “এটা সত্য হতে পারে না।”

    “এটা একেবারেই সত্য,” রাচেল বললো। “আমি প্রেসিডেন্টের জন্য এ সম্পর্কিত রিপোর্টটি তৈরি করেছিলাম। আমার বস্ এই খবরটা গোপন রাখতে চাচ্ছিলেন। অপরদিকে নাসা এটাকে তাদের একটি বড় অর্জন হিসেবে প্রচার করতে চেয়েছিলো। কিন্তু পিকরি প্রেসিডেন্টকে দিয়ে এই তথ্যটা গোপন রাখতে বাধ্য করে নাসা’কে।”

    “কেন?”

    “গুরুত্বপূর্ণ কিছু নয়,” রাচেল বললো। আর কোনো গুপ্ত তথ্য বলার কোনো ইচ্ছে তার নেই বোঝাই যাচ্ছে।

    “তাহলে,” টোল্যান্ড বললো, তাকে খুব অস্বস্তি বোধ করতে দেখা যাচ্ছে। “তুমি বলছো নাসার কাছে ক্লিন-বার্নিং প্রপালশন সিস্টেম রয়েছে যা বিশুদ্ধ হাইড্রোজেনে চলে?”

    রাচেল সায় দিলো। আমার কাছে একেবারে সঠিক হিসাবটি নেই কিন্তু এটা জানি এই ইনজিন যে তাপমাত্রার সৃষ্টি করে সেটা আমাদের জানা তাপমাত্রার চেয়ে কয়েকগুন বেশি। এজন্যেই নাসার দরকার হয় নতুন ধরণের নজেল।” সে একটু থামলো। “এই ইনজিনের পেছনে রাখা হয় বিশাল আকারের একটি পাথর। ইনজিনের জ্বালানী পোড়ানোর ফলে যে উত্তাপ নির্গত হয় সেটাকে মোকাবেলা করে এই পাথরটি। এতে করে আপনি খুব ভালো রকম ফিউশন ক্রস্টিই পাবেন।”

    “আরে কী বল।” কর্কি বললো। “আমরা কি আবারো ভূয়া উল্কাখণ্ডের তত্ত্বে ফিরে যাচ্ছি?”

    মনে হলো টোল্যান্ড হঠাৎ করেই একটু আগ্রহী হয়ে উঠলো। “সত্যি বলতে কী, আইডিয়াটা মন্দ নয়।”

    “হায় ইশ্বর বলে কী, কর্কি বিড়বিড় করে বললো। “আমি গদর্ভদের সাথে আকাশে উড়ে বেড়াচ্ছি।”

    “কর্কি,” টোল্যান্ড বললো। “হাইপেথোটিক্যালি বলতে গেলে, এরকম প্রচণ্ড তাপের মুখে একটা পাথর রাখলে যেরকম পুড়ে যাবে, সেটা বায়ুমণ্ডলে উল্কাখণ্ডের প্রবেশের সময় দাহ্য হওয়ার মতোই হবে। তাই না?”

    কর্কি কথাটা মানলো। “মনে হয়।”

    “আর রচেলের ক্লিন-বার্নিং হাইড্রোজেন জ্বালানীতে কোনো রাসায়নিক বর্জ্য তৈরি করে না। শুধু হাইড্রোজেন উৎপন্ন হয়।”

    কর্কি তার চোখ গোল গোল করে তাকালো। “দেখো, এরকম ইসিই ইজিন যদি সত্যি থাকে তবে এটা সম্ভব। কিন্তু সেটার অস্তিত্ব সম্পর্কে আমার সন্দেহ রয়েছে।”

    “কেন?” টোল্যান্ড জিজ্ঞেস করলো। “প্রক্রিয়াটা কিন্তু খুব সহজসরল বলেই মনে হচ্ছে।”

    রাচেলও সায় দিলো। “তোমার যা দরকার হবে তাহলো একশত নব্বই মিলিয়ন বছরের পুরনো একটি ফসিলযুক্ত পাথর। হাইড্রোজেন জ্বালানীর ইঞ্জিনের পেছনে রেখে পোড়াও এবং তারপর বরফের নিচে রেখে দাও। ইন্সট্যান্ট কফির মতো ইন্সট্যান্ট উল্কাখণ্ড।”

    “একজন পর্যটকের কাছে হয়তো, কর্কি বললো। “কিন্তু নাসার বিজ্ঞানীদের কাছে নয়। আপনি এখনও কন্ড্রুইলগুলোর ব্যাখ্যা দেননি!”

    রাচেল কর্কির দেয়া কীভাবে কভুইল তৈরি হয় সেই কথাটা স্মরণ করলো। “আপনি বলেছিলেন কন্ড্রুইল হয় বিরামহীন উত্তাপ এবং মহাশূন্যের ঠাণ্ডাতে, তাই না?”

    কর্কি দীর্ঘশ্বাস ফেললো। “কভুইল কেন হয় জানেন, প্রচণ্ড উত্তাপে কোনো পাথর গলে যাবার পর আচমকা মহাশূন্যের অতি শীতলতা বা ঠাণ্ডায় তাপ হারালেই সেটা হয়ে থাকে, ১৯৫০ সেলসিয়াস থেকে আচমকা জিরো ডিগ্রির নিচে নেমে গেলে।”

    টোল্যান্ড তার বন্ধুর দিকে ভালো করে তাকালো। এই প্রক্রিয়াটা কি পৃথিবীতে করা সব নয়?”

    “অসম্ভব,” কর্কি বললো। “এই গ্রহে এরকম তাপমাত্রার বিভিন্নতা নেই। তোমরা কথা বছে পারমাণবিক উত্তাপ থেকে একেবারে জিরো তাপমাত্রা নিয়ে। এই প্রমতার অস্তিত্ব পৃথিবীতে নেই।”

    রাচেল একটু ভাবলো কথাটা নিয়ে। “মানে প্রাকৃতিকভাবে নয়।”

    কর্কি ঘুরে রাচেলকে বললো, “এর মানে কি?”

    “এরকম উত্তাপ আর শীতল অবস্থা তো কৃত্রিমভাবে তৈরি করা যেতে পারে?” রাচেল জিজ্ঞেস করলো। “পাথরটা হাইড্রোজেন ইজিনের সাহায্যে উত্তপ্ত করার পর ক্রাইওজোনিক ফ্রিজারে ঠাণ্ডা করলে?”

    কর্কি তাকিয়ে রইলো। “কন্ড্রুইল প্রস্তুতকরণ?”

    “এটা একটা আইডিয়া।”

    “হাস্যকর আইডিয়া, কর্কি জবাব দিলো। নিজের হাতে ধরা উল্কাখণ্ডটি তুলে ধরলো সে। হয়তো আপনি ভুলে গেছেন, এইসব কইলের বয়স বের করা হয়েছে, একশত নব্বই মিলিয়ন বছর!” আমি যতোদূর জানি, মিস সেক্সটন, একশত নব্বই মিলিয়ন বছর আগে কেউ হাইড্রোজেন জ্বালানীর ইজিন এবং ক্রাইওজোনিক কুলার বানায়নি।”

    .

    রাচেল কয়েক মিনিট ধরেই চুপ হয়ে থাকলো। তার হাইপোথিসিসটা অনেকদূর এগোবার পর এভাবে মুখ থুবরে পড়ে গেলো যে সে আর কিছুই ভাবতে পারছে না। টোল্যান্ডও চুপচাপ বসে আছে তার পাশে।

    “তুমি চুপচাপ,” রাচেল বললো।

    টোল্যান্ড তার দিকে তাকালো। অল্পকয়েক মুহূর্তের জন্য সে রাচেলের হোখে এক ধরণের কোমলতা দেখতে পেয়ে সিলিয়ার কথা মনে পড়ে গেলো তার। স্মৃতিকে ঝেড়ে ফেলে সে ক্লান্তভাবে রাচেলের দিকে চেয়ে হাসলো।”ওহ, আমি ভাবছিলাম …”

    সে হাসলো। “উল্কা নিয়ে।”

    “আর কি তাহলে?”

    “সব প্রমাণ-পত্র ঘেটে দেখছো কি আর বাকি আছে?”

    “সে রকমই।”

    “কিছু পেলে?”

    “না, তেমন কিছু না।”

    “ক্রামোচ্চ শ্রেণী বিভাগের প্রমাণাদি হলো তাসের ঘরের মতো,” রাচেল বললো। “প্রাথমিক অনুমাণটি বের করে নিলেই সব কিছু ভেঙে পড়ে। উল্কাখণ্ডের খুঁজে পাওয়া জায়গাটা হলো প্রাথমিক অনুমান।”

    “যখন আমি মিনেতে এসে পৌঁছাই, নাসা প্রধান আমাকে বলেছিলেন যে উল্কাখণ্ডটি পাওয়া গেছে তিন শত বছরের পুরনো বরফের নিচে আর পাথরটা ঘনত্ব পৃথিবীতে পাওয়া পাথরের চেয়ে অনেক বেশি। যাতে করে আমি মনে করেছিলাম এটা মহাশূন্য থেকেই পড়েছে। সেটাই যৌক্তিক বলে মনে হয়েছিল আমার কাছে।”

    “আপনি এবং আমরাও।”

    “নিকেলের উপাদানের মাঝারি স্তরের যে হারের কথা বলা হচ্ছে সেটাই একমাত্র প্রমাণ হতে পারে না।”

    “এটা কাছাকাছি, কর্কি বললো।

    “কিন্তু একেবারে সঠিক পরিমাণে নয়।”

    কর্কি মাথা নেড়ে সায় দিলো।

    “আর,” টোল্যান্ড বললো, “মহাশূন্যের যে ছারপোকাটা দেখলাম, সেটার মতো প্রাণী গভীর সমুদ্রেও রয়েছে।”

    রাচেল একমত হলো। “আর ফিউশন ক্রাস্টটা …”

    “এটা বলতে আমি ঘৃণা করি যে,” টোল্যান্ড কর্কির দিকে তাকিয়ে বললো। “আমাদের কাছে ইতিবাচক প্রমাণের চেয়ে নেতিবাচক প্রমাণই বেশি রয়েছে।”

    বিজ্ঞান পুর্বাভাস নয়, কর্কি বললো। “এটা হলো প্রমাণের বিষয়। এই পাথরে থাকা কন্ড্রুইলগুলোই নির্ধারণ করে দিচ্ছে যে এটা একটা উল্কাখণ্ড। আমি তোমাদের দুজনের সাথে একমত যে, আমরা যা দেখেছি তা খুবই বিব্রতকর, কিন্তু আমরা এই কভুইলগুলো হেলাফেলা করতে পারি না।”

    রাচেল ভুরু তুলে বললো, “তাহলে আমরা কি বুঝলাম?”

    “কিছুই না,” কর্কি বললো। “কন্ড্রুইলগুলো প্রমাণ করে আমরা উল্কা নিয়ে কাজ করছি। একমাত্র প্রশ্ন হলো, কেন ওটাকে কেউ বরফের নিচে স্থাপন করলো।”

    টোল্যান্ড তার বন্ধুর কথাটাকে যৌক্তিক বলে বিশ্বাস করতে চাইলো, কিন্তু তার মনে হলো কিছু একটা গড়বড় আছে।

    “তুমি মনে হয় এখনও মেনে নিতে পারছ না, মাইক, কর্কি বললো।

    টোল্যান্ড তার বন্ধুর দিকে তাকিয়ে চিন্তিত হয়ে তাকালো। “আমি জানি না তিনের মধ্যে দুই খারাপ নয়, কর্কি। কিন্তু আমরা তিনের মধ্যে এক-এ নেমে এসেছি। আমার কেবল মনে হচ্ছে কিছু একটা ধরতে পারছি না।”

    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleডিজিটাল ফরট্রেস – ড্যান ব্রাউন
    Next Article ইনফার্নো – ড্যান ব্রাউন

    Related Articles

    ড্যান ব্রাউন

    দ্য দা ভিঞ্চি কোড – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025
    ড্যান ব্রাউন

    এঞ্জেলস এন্ড ডেমনস – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025
    ড্যান ব্রাউন

    দ্যা লস্ট সিম্বল – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025
    ড্যান ব্রাউন

    অরিজিন – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025
    ড্যান ব্রাউন

    ইনফার্নো – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025
    ড্যান ব্রাউন

    ডিজিটাল ফরট্রেস – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Demo
    Most Popular

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Our Picks

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    দ্য দা ভিঞ্চি কোড – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025

    এঞ্জেলস এন্ড ডেমনস – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    Sign In or Register

    Welcome Back!

    Login below or Register Now.

    Lost password?

    Register Now!

    Already registered? Login.

    A password will be e-mailed to you.