Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    আরব জাতির ইতিহাস – ফিলিপ কে. হিট্টি (অনুবাদ : প্রিন্সিপাল ইবরাহীম খাঁ)

    September 22, 2025

    নিউ মুন – স্টেফিন মেয়ার

    September 22, 2025

    ব্রাইডা – পাওলো কোয়েলহো

    September 22, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • 🔖
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    Subscribe
    সাইন ইন
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    ডুগডুগির আসর – প্রশান্ত মৃধা

    প্রশান্ত মৃধা এক পাতা গল্প240 Mins Read0

    ০৬. শেষ বিকেলে ঝিলিক

    শেষ বিকেলে ঝিলিক এসে হাজির। সুকুমার জানে আসতই,কিন্তু তা আরও দিন দুয়েক বাদে। আজই কেন? সুকুমার একই সঙ্গে অবাক ও বিরক্ত। গত তিন দিনে একবারও খেলা দেখাতে পারেনি। পরশু দিন গেছে আজগরের সঙ্গে রাগারাগিতে গতকাল কোর্টে তেমন কোনও লোকই ছিল না। লোক ছিল, ওই যে ইব্রাহিম মোসলেম উদ্দিনকে বলেছে একেবারে খাঁটি কথা। কোর্টে মানুষ আছে, পাবলিক নেই। সেই পাবলিক না-থাকা দশায়, ইব্রাহিম শেখের মতন ক্যানভাসারের আসরেই মানুষ হয় না, সেখানে সুকুমার খেলা দেখালে কে দেখে। খেলা তো দেখতে হয়, পাবলিক খেলা দেখে, পয়সা ফেকে। ইব্রাহিমের ওষুধ কিনে কল্পনা করতে করতে মনের সুখে বাড়ি যায়। এই ওষুধে কাজ হবে। এবার আর কোনও সমস্যা থাকবে না। গায়ে হাজার ঘোড়ার শক্তি কি ওই জিনিসটা এবার ঘোড়ার জিনিসের মতন বড়োসড়ো আর কার্যকর হবে। সেই ইব্রাহিমই ক্যানভাস থেকে ফিরে মুখোনা আমচুর করে রাখল। বলেছিল, এই ট্রেনের তুলে নেয়ার সমস্যাটা না গেলে কোর্টের পরিস্থিতি কোনওভাবেই ঠিক হবে। এমনকি দিলদারকে তার যন্ত্রটা নিয়ে বারিক কাকার দোকানের পাশে বসতে দেখেনি। এই কোনার দাঁত তোলার ডাক্তার সোলায়মান খান তার টেবিল নিয়ে শুধু বসেই ছিল। আজগর তার সামনে থেকে ঘুরে যেতে যেতে বলেছিল, কী দাঁতের ডাক্তার! সরকার টাউনের বড়ো বড়ো কুতুবগুলোর মাড়ির দাঁত যেভাবে ধইরগা টানতেচে, তোমার আর কষ্ট কইরগা দাঁত ফেলান লাগবে না। কে বলে আজগরের কথায় রস নেই। রস আছে ঠিকই, কিন্তু আজগর রসের কথাটাও এমন কাটখোট্টাভাবে বলে যে, সেই রসে আর কিছুই ভেজে না। এমনকি এসময় কান পরিষ্কার করা গোলাপ মিয়াকে তার ওই বাক্সটা সমেতও তেমন ঘুরতে দেখা যায়নি।

    ফলে, এই পরিস্থিতিতে ঝিলিককে দেখে সুকুমারের চোখ একটু আকাশে উঠতেই পারে। কিন্তু ঝিলিক কি সে জন্যে দায়ী? সে কি এত কিছু জানে? যদিও ঝিলিকের আসার কথা ছিল আরও দুদিন বাদে, কিন্তু যে কাজে গেছে সেই কাজ যদি না হয়, তাহলে খালি খালি সেখানে আরও দিন দুয়েক থাকার দরকার কী? এই সবই হোগলাবুনিয়া থেকে লঞ্চে উঠতে উঠতে ঝিলিক যে ভাবেনি তা তো না। অত অবিবেচক মানুষ যেন তাকে সুকুমার না মনে করে। যদিও মনে করলেই-বা কী? সুকুমার মানুষটাও তো নিরুপায়। এই তিনদিন গেছে, তারও আগে যে আয় রোজগার তাও তো কম। এই শুকনার সময়ে যদি আয় রোজগার নাহয় তাহলে সামনে চলবে কেমনে। যদিও বর্ষাকালে রথের মেলার সময় দিন কয়েক তার যাবে ভালো। কিন্তু অমন ভরা বর্ষায়, পিচ্ছিল মাঠে তার খেলা দেখাতে কী কষ্ট হয়, তা যারা খেলে দেখে তাদের জানার কথা না। মানুষ খেলা দেখে আনন্দ পায়, কিন্তু খেলাঅলার কষ্ট কেউ দেখে না। আর সে সালাউদ্দিন না সালাম না আসলাম–বড়ো খেলোয়াড়, তাদের খেলা দেখতে হাজির লাখ লাখ মানুষ। টিকিট কাটো খেলা দেখে। আর সে কোন জায়গার কোনও দড়াবাজা, বাজিকর, তিন ফলকের খেলা দেখানো সুকুমার। যদি জয়দেব ছেলেটা থাকত, তা হলে হয়তো ঝকার তলে চাকু মারার খেলাটা দেখাতে পারত। ওই খেলাটা দেখলেই না পাবলিক কিছু পয়সা দেয়।

    সুকুমার এসব ভাবত না, যদি তেঁকে কিছু থাকত। ঝিলিক কাল গেছে পরই ভেবেছিল, আজ চলে যাবে দড়টানা ঘাটের দিকে কোনও ছাপড়া হোটেলে। হোগলার বেড়া, গোলপাতার চাল, ভাড়া কম। খেলা দেখানোর ওই কিছু মালামাল মাথার কাছে রেখে রাত্তিরটা কাটিয়ে দিত। সকালে নদীতে স্নান করে পোটলা-পুটলি বোচকা-বুচকি নিয়ে রওনা দিত কোর্টের দিকে। শরীরের জুত থাকলে, ভেবে রেখেছিল সকালে রেল স্টেশনে কিছুক্ষণ খেলা দেখিয়ে, একটু বেলা উঠলেই চলে আসবে কোর্ট চত্বরে। কিন্তু সে সবই ভেস্তে গেল। ঝিলিককে নিয়ে তো ওই দড়াটানা ঘাটের দিকে যাওয়া যাবে না। ওদিকে বেশির ভাগই থাকে মাছের আড়তের খালাসিরা। সেখানে সুকুমারের সঙ্গে একটা মেয়ে। মেয়েমানুষ নিয়ে এই এক ঝামেলা, যে জায়গায় রাত সে জায়গায় কাতের কোনও উপায় নেই।

    এদিকে ঝিলিকের ভাগ্যটাও ভালো। সুকুমার তখন লঞ্চঘাটের কাছেই ছিল, তাকে খুঁজতে হয়নি তার। আজগরের শরীরটা খারাপ। গায়ে গতকাল রাত থেকেই জ্বর জ্বর। আজ একবারই কোর্টের কাছে গিয়েছিল, বাঁদর দুটোকে নেয়নি। সে দুটো তার ঝুপড়ির উলটো পাশে যেখানে বাঁধা থাকে সেখানেই বাঁধা ছিল সারা দিন। দুপুরে রোদ চড়লে জরিনা ছায়ায় নিয়ে বেঁধেছে। বার দুয়েক খেতে দিয়েছে। পয়সা নেই, কলা মুড়ি আর একখানা দুই খানা আধ পোড়া রুটির বেশি কিছু দেয়ার উপায় জরিনার নেই। তাছাড়া জরিনা আজগরকে নিয়েই পারে না। কোত্থেকে একটা বালতি জোগাড় করে নদী থেকে পানি এনে আজগরের গা মাথা ধুইয়ে দিয়েছে। এক উড়ে মালিকে বলেছে, যদি পারে জেলখানার পুকুর থেকে যেন এক ভাড় পানি এনে দেয়। নদীর পানি নোনা। এই নোনা পানিতে জ্বরের রুগিরে থোয়ালে গায়ে সাদা খড়ি ওঠে। যদিও সে বলেছিল, নদীর পানিই ভালো। জরিনা যেন ভরা জোয়ারের পানি দিয়ে আজগরকে কাল নাইয়ে দেয়। কিন্তু প্রায় রাস্তার মেয়ে এই জরিনা, ঠিক ভরা জোয়ারের সময় কার বালতি কাল খালি পাবে, একটা বালতি জোটাতে পারবে কি না, তা সে নিজেই জানে না। তাছাড়া এই জায়গায় বাসাবাড়িও তেমন নেই। থাকলে আজগরের জন্যে এট্টু গরম ফেন আনতে পারত। ওই গরম গরম ফেন লবণ দিয়ে খাইয়ে দিলে আজগর একবেলায় চাঙা। তবে আলতাফকে বলে রেখেছে, আলতাফ দেবে। কিন্তু আলতাফ শালা আচ্ছা হারামি। ফেন আনার সময়ও সুযোগ পেলে দুটো খবিশ কথা বলবে।

    এই সব প্রায় বিড়বিড়িয়ে সুকুমারকে জানিয়েছে জরিনা। দিন তিনে আগে এই লোকটার সঙ্গে আজগরের তর্কাতর্কি হয়েছে। তা নিয়ে কিছুক্ষণ দুজন দুই দিক, কিন্তু ঝিলিকের সঙ্গে সুকুমারকে দেখার পর জরিনার মনে হয়েছে, এই মানুষ খারাপ হতে পারে না।

    ঝুপড়ির বাইরের দিকে মাথা দিয়ে আজগর তক্তপোশে শোয়া। সেখান থেকে বড়োজোর হাত আষ্টেক তফাতে নদীর পাড়ে বসেছিল জরিনা আর সুকুমার। কিছু আগে এসেছে সন্ন্যাসীর লঞ্চ, তারপর এসেছে ভাসার ওদিকের লঞ্চখানা। সকালে মোড়েলগঞ্জের লঞ্চে হোগলাবুনিয়া গিয়েছিল ঝিলিক। সে লঞ্চখানা তখনও ফিরে আসেনি। এমনকি সেই লঞ্চখানার জন্যে সুকুমার আর জরিনা এখানে বসেও নেই। সুকুমারের অবশ্যি একবার মনে হয়েছিল, ওই লঞ্চখানা তো এখনও ফিরল না। ফিরতি লঞ্চটা দেখলে সে মনে মনে ভেবে নিতে পারত, ঝিলিক ঠিকঠাক পৌঁছেছে।

    আজগরের কপালের জলপট্টি বদলে দিয়ে এসে জরিনা সুকুমারকে বলে, জ্বর নামতিচে না, সুকুমার ভাই!

    ঝিলিক আসার পর থেকে জরিনা সুকুমারকে সুকুমার ভাই ডাকে, এর আগে ডাকত সুকুমারদা। ঝিলিক জরিনার চেয়ে বয়েসে ছোটো, সুকুমারও ছোটো, তবে সুকুমার ঝিলিকের চেয়ে বয়েসে খুব ছোটো হবে না। সম্পর্কে সুকুমার ঝিলিকের দেবর, কিন্তু তারা সমবয়েসি। তাই, জরিনা সুকুমারকে এইভাবে ডাকে। কিন্তু সুকুমার জরিনাকে সাধারণত কিছুই ডাকে না। তবে কখনও কখনও ডাকে। জরিনাদি। আর ঝিলিক আসার পরে, এই দুইদিনে জরিনা খেয়াল করেছে, সুকুমার ঝিলিককে প্রায় কখনওই কিছুই ডাকে না। বউদি তো নাই, নাম ধরেও ডাকে না। কখনও কখনও ডাকে মেজো বউ, এর বেশি কিছু ডাকতে শোনেনি।

    সুকুমার বলল, রাতটা দেখা যাক। নাকি সকালে একবার পুরনো হাসপাতালে নিয়ে গেলি হবেনে।

    হয়। তয় মোসলেম কাকা সামনের ফার্মেসির দে ওষুধ কিনে দিচে।

    খাইচে সে ওষুধ?

    হু, ওই ওষুধ খালি এট্টু সমায়ের জন্যি জ্বর নামে, তারপর আবার ওঠে।

    এই গরম দিয়ে ঠান্ডা লাগা জ্বর। তাছাড়া আজগর ভাইর গায়ে আছে কিছু নিয়ম কানুন কোনোতা কোনওদিনও মানিছে বলে মনে হয় না।

    আরে নিয়ম মানলি কোনও মানষির শরীরের এই দশা হয়!

    এ নিয়ে কথা এক সময় থামে। বিকেল সন্ধ্যার দিকে এগোয়। আজও তার কোনও ব্যতিক্রম নেই কোথাও। শুধু গাছের পাতায় বাতাসের দোলা একটু বেশি। নারকেল গাছের পাতায় বাতাস খেলছে শব্দ করে। সেই বাতাসে হঠাৎ একটু দূরে কোথাও একটা নারকেল পড়ে। কিন্তু এই বাতাস এমন নয় যে, কোনও গাছের ডাল তাতে ভাঙবে। কিন্তু এইটুকু বাতাসেও এখন জরিনার বুক কাঁপে। যদি বাতাস আসে জোরে, যদি তার সঙ্গে বৃষ্টি হয়, তাহলে মানুষটার জ্বর ছাড়বে না। হাতে টাকা নেই একটাও। আজ নয় মোসলেম কাকা ওষুধ কিনে দিয়ে গেছে, কিন্তু কাল সকালে যদি আজগরকে ডাক্তারের কাছে নিতে হয়, তাহলে রিকশা ভাড়া লাগবে, হাসপাতালে স্লিপ কাটতে হবে আর ডাক্তার সাহেব যে ওষুধপত্তর লিখবে, তাই কিনতে হবে। জরিনা জানে না, সে পয়সা পাবে কোথায়? এখন মানুষটার এই অবস্থা, সে তাকে ছেড়ে চলে যাবে? যাবে কোথায়? গেলে মানুষ কবে কী? এই কয়মাসে তো তারে এই লোকটাই টানছে। ভালো পাড়ক মন্দ পাডুক খাওয়াছে। আজ এই অবস্থা!

    সুকুমারের সঙ্গে কথা শেষ হলে এইসমস্ত কথা জরিনাকে ঘিরে ধরে। ওদিকে সুকুমারের ঘটনাটা তার উলটো। ঝিলিক খুঁজে খুঁজে তার কাছে এসেছে। তাই যেন স্বাভাবিক। যাবে কোথায়? কিন্তু কেন এসেছে, কোত্থেকে এসেছে, সেকথা সুকুমারই-বা জনে জনে বলে বেড়ায় কী করে? ঝিলিক কি জানত, এই জায়গায় একদিন পথে দেখা হওয়া জরিনার সঙ্গে দেখা হয়ে যাবে। যদি জরিনার সঙ্গে দেখা না হত, তাহলে কীভাবে কেউ জানত সে সুকুমারের মামাতো ভাইয়ের বউ।

    ভিতরে এত ঘটনা আছে, পরশু তার কিছু কিছু জরিনা ঝিলিকের কাছে শুনেছে, হয়তো। কিন্তু সে কথার কিছু আজ সারাদিনে একবারও জরিনা সুকুমারের কাছে জানতে চায়নি। মেয়েদের আলাদা কোনও হিসেব থাকে। অনুমানে তারা অনেক কিছুই বুঝতে পারে। তবে সুকুমার লক্ষ করেছে, ঝিলিকের সঙ্গে এবার দেখা হওয়ার পরে, আলাপের পরে জরিনার তার প্রতি আচরণ বদলে গেছে।

    যেন, এইমাত্র সে কথাই বলল, দেখলা, সব লঞ্চ আসল, এহোনও মোড়েলগঞ্জের লঞ্চখান আসল না?

    কী যে কও?

    না, সেই লঞ্চখান আসলি বুঝদি পারতা সে ভালোমতো পৌঁছইছে নাকি, ও সুকুমার ভাই! সুকুমার হাসল, তোমার কতায় ভালোই রস আছে।

    রস না রস, কথা এহেবারে রসগোল্লা। আর ফাও কতা কইয়ে না। কতায় রস থাকলি আর এই জায়গায় থাকতাম না।

    আর ওইয়ে কইয়ে লাভ নেই। আইজ মরলি কাইল দুই দিন। আইজ এই জায়গায়, কাইল কোন জায়গায়, তার কোনও ঠিক আছে? এই যে টাউনের ছলপলরা কয় না, কী আছে জীবনে, আধসের আটার দাম নেই। ঠিকই কয়।

    তা তো ঠিকই। দেখো, তুমি যার জন্যি লঞ্চের জন্যি বইসে আছে। দুই তিনদিন বাদে আবার আসপে, তার জীবনডা, গিরস্ত ঘরের বউ আইজকে তোমার সাথে পথে পথে!

    এ সময় আজগর যেন ডাকল অথবা ডাকেনি। জরিনার মনে হল। হয়তো জরিনা ঝিলিকের হঠাৎ আসা নিয়ে এমন আরও কিছু বলত। উঠে গেল। হয়তো, এখনই আসবে। তবে ঝিলিকের হঠাৎ এখানে এইভাবে আসা সুকুমারের কাছেও বিস্ময়।

    সুকুমার বলল, তা তো ঠিকই, জরিনাদি—

    জীবন এইরাম, এই দেহো আইজ আমি কোতায়? কাইল কোতায় থাকপো জানে কেডা?

    জরিনা আজগরের কাছে যেতে লাগলে সুকুমারও একটু যেন বিড়বিড় করে, ঠিকই কইচো–

    সুকুমারের ঝিলিকের স্বামী ভক্তর মুখোনা চোখে ভাসে। বড়ো গোঁয়ার ভক্তদা। এই কাজ করতে পারল। ও মানুষ না। কিন্তু সুকুমার কেন, তার আত্মীয়স্বজন জ্ঞাতিগুষ্টির কেউ কি কোনওভাবে ভাবতে পেরেছে ভক্ত এই কাজ করবে? নিরীহ কিন্তু গোঁয়ার মানুষের পেটে তলায় তলায় কতপদের ধান্দা থাকে, তা যদি মানুষ বুঝত? কিন্তু মানুষ যে বুঝতে সেই সাধ্য কার? কবে কোন দিন কোন কাজে মোল্লারহাট থেকে ভক্ত গিয়েছিল মোড়েলগঞ্জের হোগলাবুনিয়ায়। সম্ভবত গোপালগঞ্জের পরবাসীদের সঙ্গে ধান কাটতে। আজ আর ভালো মনে নেই সুকুমারের। তখন সে এ জায়গায় ও জায়গায় ফুটবল খেলে বেড়ায়। কালেভদ্রে বাড়ি আসে। ফরিহাটের এক বাড়িতে থেকে এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছেন প্রাইভেট। ফুটবলই তার জীবনটা শেষ করবে, বলত সবাই। কিন্তু তার ফাঁকে যে একদিন সুকুমার মেট্রিকটা পাশ করতে পারবে তাও কেউ ভাবেনি। সুকুমারের চোখে তখন অন্য স্বপ্ন। এসব লেখাপড়া দিয়ে তার হবেটা কী? যদি খুলনায় এ-ডিবিশনে খেলতে পারে, তারপর সামনে ঢাকা লিগ। খুলনায় না-হলে ঢাকায় বি-ডিবিশনে এক দুই বছর খেলে তারপর নয় এ-ডিবিশনে কোনও ছোটো ক্লাবে খেলবে। ধীরে ধীরে বড়ো ক্লাবে। যদি সুযোগ হয়, তার ভাগ্য ফেরে।

    যদিও তার ভাগ্য উলটো দিকে গেল। যা কোনওদিনও ভাবেনি সে, তাই ঘটল। প্র্যাকটিস ম্যাচে হাঁটুতে দারুণ চোট পেল। সুকুমার আজও বুঝে পায় না, বল নিয়ে ডিবলিং করতে করতে ওই ঘটনা কী করে ঘটল! একা একাই তো। পায়ে তার চমৎকার জাদু। সবাই বলত, বল সুকুমারের কথা শোনে। এক পায়ে একবার বল তুলতে পারলেই হত, আর তা কোনওভাবে নীচে পড়ত। ডান পা থেকে বাঁ পা, আবার ডান-বাম। সেখান থেকে হাঁটু ও ঊরু। এক উরু থেকে অন্য উরু। আবার পা। পা থেকে সোজা মাথায়। মাথার ওপর কিছুক্ষণ বল নাচানো। সেখান থেকে কখনও কখনও ঘাড়েও নিতে পারত, তবে ঘাড়ে নিলেই বল পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকায় বেশিক্ষণ ঘাড়ে রাখত না। এমনকি কখনও কখনও ঘাড়ে নিতই না। মাথা থেকে আবার উরুতে। উরু থেকে পায়ে।

    সেদিন মাঠে এ খেলা দেখাচ্ছিল না সুকুমার। এটা কখনও কখনও করে। তখন বল ডান পায়ের নীচে নিয়ে বুটের একটু চাপ দিয়ে বলটার নীচে বাম পায়ের একটা খোঁচা দিতে চেয়েছিল মাত্র। তাতেই জীবনে এত বড়ো সর্বনাশ! সুকুমার টান সামলাতে না পেরে ডান দিকে হাঁটু মুড়ে পড়ে যায়। পড়ে থাকে। আশেপাশের সবাই মনে করেছে পড়ে আছে। কোনও ব্যথাও পায়নি সে। হাঁটুর ভিতরে কোথাও কোনও জ্বালাও করে ওঠেনি। কিন্তু ওই পড়া থেকে তখন সুকুমার আর কোনওভাবেই উঠে দাঁড়াতে পারে না। সহখেলোয়াড়রা তোলে তাকে। তাদের ধরে দাঁড়ায়। ডান পায়ে কোনও জোর পায় না। পা-টা মাটিতে দিতে পারে না। এভাবে মাঠের কিনারায় আসে। সবাই ভাবে, এমন তো কতই হয়। রেস্ট নিলে ঠিক হবে। ব্যথা না কমলে ডাক্তার ওষুধ দেবে। কিন্তুসেই রেস্ট নেয়া যেন হয়ে গেল একেবারে সারাটা জীবনের জন্যে। বল পায়ে সুকুমার আর মাঠে দৌড়ায়নি। ডাক্তার দেখিয়ে কিছু পরীক্ষা এক্সরে এসবও করেছে, ডাক্তাররা বলেছিল, কোনও একটা জয়েন্টে একটা সমস্যা। এটা নাকি তার অনেক দিনের, এতদিন বোঝা যায়নি, এদেশে এসবের কোনও অপারেশন নেই, বিদেশে আছে। তবে তাতেও যে সে খেলতে পারবে এমন কোনও নিশ্চয়তা নেই।

    নিশ্চয়তা থাকলেই-বা কী হত? সুকুমারের মতন প্লেয়ারকে বিদেশে পাঠাবে কে? তখন সুকুমার বাড়ি ফেরে। কিন্তু সেখানে বসে কে খাওয়ায়। বাপ নেই। ভাইয়েরা যার যার সংসারে। এক ভাই ভাগের ভিটার জমি বেচে ইন্ডিয়ায় চলে গেছে। বাকি দুজন কষ্টে থাকে। ভিটার ওইটুকু জমি ছাড়া বাপ আর কিছু রেখে যায়নি। স্থানীয় স্কুলের মাঠে ছেলেরা ফুটবল খেলে, সুকুমার দেখে। একদিন পায়ের কাছে বল আসলে, সে লুঙ্গিটা গুটিয়ে এক জায়গায় দাঁড়িয়ে বলটা পায়ে নিয়ে আবার আগের মতই নাচায়। বাঁ-পায়েই রাখে বেশি ভর। তখন সবাই তাকে খেলতে ডাকে। সুকুমার তাদের জানায়, মাঠে দৌড়ানোর মতো শক্তি তার ডান পায়ে নেই। ডান পায়ে এদিকে ওদিকে বল ডিবলিং করতে পারবে না। সেদিন গেছে। তবে সুকুমার এই ঘটনায় বুঝতে পারে, এক জায়গায় দাঁড়িয়ে তার পা এখনও আগেরই সেই করসত দেখাতে পারে। ও কৌশল সে ভোলেনি।

    একদিন তার মামাতো ভাই ভক্ত বউ নিয়ে এসে হাজির। এখন বউ নিয়ে নিজেদের বাড়ি যেতে পারেনি। সে সাহস নেই। গিয়েছিল মোড়েলগঞ্জের হোগলাবুনিয়ার ধান কাটার কাজে, সেখান থেকে নিয়ে এসেছে এই বউ, নাম ঝিলিক। সুকুমারের বড়ো ভাইরা ভক্তকে তাড়িয়ে দিল না, কিছুই বলল না বলতে গেলে। শত হলেও মামাতো ভাই, কোন দূর দেশ থেকে পছন্দ করে কনে বিয়ে করে নিয়ে এসেছে। ওদিকে ভক্তর হাত একেবারে খালি। এখানে ভক্তর হাতে কোনও কাজ নেই। ফলে, সুকুমার বুঝতে পারল কেন তারা দাদারা ভক্তদার এখানে আসা নিয়ে কোনও উচ্ছাস প্রকাশ করছে না। সুকুমারের মামা বাড়ির গ্রামও এ জায়গা থেকে কাছে, কিন্তু ভক্ত এখনই সেখানে যাবে না। প্রায় দিনই সুকুমারের দাদাদের বলে, তারা কেউ একজন যেন গিয়ে ভক্তর বাড়িতে বলে। কিন্তু প্রত্যেকেই তার মামাকে চেনে, তাদের ধারণা মামা ভক্তর এই বিয়ে মেনে নেবে না।

    ঝিলিক দেখতে শুনতে ভালো। লক্ষ্মীপনা আছে মুখোনায়। এমন বউকে তাদের মামা কেন মেনে নেবে না, সুকুমার তাও বুঝে পায় না। সে তার বড়ো বউদিকে জিজ্ঞাসা করে, তারা তাকেই এ নিয়ে কিছুই বলে না। বরং বলে, দিন কয়েক থাক, তারপর মামা এক সময় মেনে নেবে। কিন্তু এই দিন কয়েক থাকাটাও তো সমস্যা। দুই ভাইয়ের মাথার ওপর সুকুমার, তারপর আরও এই দুইজন মানুষ। সুকুমার বুঝতে পারে ভাইদের কষ্ট হচ্ছে। কিন্তু সুকুমার অসহায়।

    তখন ঝিলিককে রেখে ভক্ত খুলনা শহরে চলে যায়। সেখানে তাদের এ দিকের পরিচিত একজন আছে, তার কাছে থেকে যদি কোনও কাজ জোটাতে পারে। কিন্তু কী কাজ জোটাবে তাও তো তার জানা নেই। এর ওপর গোয়ার্তুমি আছে ষোলো আনা। খুলনা যাওয়ার আগেও ঝিলিককে শুনিয়ে বলেছিল, তার জীবনটা এই ঝিলিকই বরবাদ করে দিয়েছে। কতবার নাকি বলেছে, ভালোমতো একটা কাজ জুটিয়ে একদিন তাকে নিয়ে আসবে। তা না। ঝিলিকের তখন খালি এক কথা, এই ফাল্গুনেই তার বাপ তাকে বিয়ে দিয়ে দেবে। তখন ফিরে এসে আর তাকে পাবে না। অগত্যা, ঝিলিকের পিড়েপিড়েতেই নাকি এই দশা, এভাবে প্রায় এক কাপড়ে তাকে নিয়ে আসতে হয়েছে।

    একদিন সন্ধ্যায় সুকুমারের বউদিরা ঝিলিককে স্থানীয় কালীখোলায় নিয়ে যায়। সঙ্গে ভক্ত আর সুকুমার। মা কালীর সামনে ঝিলিকের সিঁথিতে ভক্ত সিঁদুর পরিয়ে দেয়। বউদিরা ঝিলিকের হাতে পরায় শাখা। ব্যস, সুকুমারের ভক্তদার বউ ঝিলিক। এর দিন কয়েক বাদে ভক্ত খুলনায় যায়। ঝিলিক তাদের বাড়িতে। সুকুমারের বউদের সঙ্গে গৃহস্থালি কাজ করে। কাজে গুরুপনা আছে। একটু মোটা গলায় বরিশালের মানুষের মতন কথা কয় বলে তারা মাঝেমধ্যে হাসাহাসি করে। সুকুমার দেওর হিসেবে এই নিয়ে খেপায়। আর কখনও কখনও দুই জা বাদে ঝিলিকের মনের কথা বলার একমাত্র লোকই হয় এই সুকুমার। কখনও হয়তো ঝিলিক বলত, বোঝলা, তোমার দাদা এট্টা গোঁয়ার!

    সুকুমার সেকথা শুনে মজা করত, গোঁয়ার না-হলি এইরম সুন্দরী নিয়ে ভাগা যায়!

    হয়, হইচে, তুই যে আমারে কোতায় সুন্দরী দেহে! বউদি কী সুন্দর!

    সুকুমারের বড়দার বউ দেখতে বেশ। সুকুমার তা জানে। কিন্তু ঝিলিকের রূপে কোথায় যেন একটা চটক আছে, সেকথা জানাতে ভোলে না সে, বড়ো বউদি হল শাবানা, তুমি সুচরিতা

    হইছে। থাকতা শুনচি সারাদিন ফুটবল লইয়া, এয়ার মদ্যে এত বই দেকলা কহোন আর নায়িকাগো চেনো কী কইরে? আমি তো বই-ই দেখি নাই জীবনে। এক বাড়ি পোস্টার দেকচি।

    যহোন খুলনায় খেলতি যাতাম, তখন কত বই দেহিচি–তারপর ঝিলিকের কাছে জানতে চায়, দেহোনি বউদি, তুমি কোনওদিন বই? তালি মেজদার সাতে এরপর খুলনা যাইয়ে দেইহো।

    সে আসুক। খুলনায় কোনও কাজ জোটাতি পারে না পারে সেইয়া জানে কোড? তুই আছো বই দেহারা তালে।

    এসব বলতে বলতে ঝিলিক কখনও দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে, এইরম বইসে থাইছে মাইনষের ঘাড়ের উপর আর কতদিন। আমারে সাথে কইরগা লইয়া গেলে আমি নয় এডা ওডা কাজ করতে পারতাম।

    আমারও তো একই অবস্থা। দাদাগো ঘাড়ে বইসে খাই। আগে ফুটবল খেইলে, খেপে খোপে দুই পয়সা পাতাম, সেয়াও গেইচে–

    চলো তয়, আমি আর তুমি খুলনা চইলগা যাই তোমার দাদার ধারে।

    গেলিই কাজ দেবে কেডা?

    তুমি না মেট্রিক পাস। ছোটো ছোটো ছেলেপেলেরে পড়াতা।

    ওইয়ে মনে আছে নিকি? আমি হলাম যা পড়ি সেইয়ে একদিন মনে থাহে, পরদিন ভুইলে যাই। সব গোল গোল দেখি। ফুটবল ছাড়া জীবনে আর কিছু দেখিছি নিকি? পায়ে আমার একদিন কী হইয়ে গেল আর ফুটবলই খেলতি পারলাম না। ওই পড়ালেহা করিছি সেয়াও তো কত বছর। তার কোনও কিছু মনে নেই।

    তবু কয়দিন দেকলি আবার পারবা। আমি তো প্রাইমারি ইস্কুলে কয়দিন গেচি, আমাগো যারা পড়াত সবাই মেট্রিক পাসও না, এলাকার দাদারা। ওইরম খুলনা যাইয়ে নয় তুমি কিছু বাচ্চাকাচ্চারে প্রাইভেট পড়াইলা। কী যাবা?

    একদিন ভক্ত আসলে ঝিলিক তার কাছে কথাটা পাড়ে। তারপর সিদ্ধান্ত হয়, যদি আর মাস দুই মাসে সে ভালো কোনও কাজ জোটাতে না পারে তাহলে ঝিলিকের সঙ্গে সুকুমারও যাবে। এখনও মাথা গোঁজার কোনও ঠাই হয়নি। ধান কাটা মানুষ ভক্ত, এখন রূপসার কূলে এক গোলায় কাঠ ফাড়ার কাজ করে। সেখানেই রাতে ঘুমায়।

    তারপর একদিন সুকুমারকে নিয়ে ঝিলিক খুলনা যায়। রূপসা ঘাটের কাছে এক ছাপড়ায় থাকে। ছাপড়াটা ছোটো। বাইরে একটা এক চালায় ঘুমায় সুকুমার। ভিতরে ভক্ত আর ঝিলিক। রাতে তাদের শরীর বিনিময়ের শব্দ সুকুমারের কানে যায়। সুকুমার তখন এপাশ ওপাশ করে। কোনও কোনও সকালে সেকথা ঝিলিককে একলা পেয়ে মনেও করিয়ে দেয় সুকুমার। ঝিলিক। হাসতে হাসতে বলে, গরানের চলা পিঠে ভাঙব!

    হয়তো সুকুমার তাতে আরও একটু উসকায়, পিঠের কোন জায়গায়? এই বলে রোদে তার উদোম পিঠটা মেলে ধরে। নিজেই পিঠে হাত দিয়ে ঝিলিককে দেখায়, কও ও মাইজে বউ, কোন জায়গায়?

    ঝিলিক সুকুমারের পিঠে আঙুল দিয়ে টিপেটিপে দেখায় এই জায়গায় এই জায়গায় এই জায়গায়। কিছুদিন আগেও দেড় ঘণ্টা ফুটবল মাঠে দৌড়ানো সুকুমারের পিঠের মাংস পেশিগুলো তাতে অদ্ভুত আসকারা পায়। সে ঘুরে ঝিলিককে দেখে। কিন্তু এর ভিতরেও সুকুমারের মনে থাকে এভাবে বসে খেলে, এই হাতও পিঠে কর্কশ হয়ে উঠবে। সুকুমার বলে, বইসে থাকতি থাকতি গায়ে একেবারে জড়ো হইয়ে গেলাম। কই এই কয়দিনেও একজনও ছাত্র পাইলাম না। জানো না তো, আমার ধারে পড়বে কেডা?

    হবে। আসপে। এই জায়গায় মানুষজনরে তুমি কইচো, তোমার দাদা কইচে, আমি কইচি। আর নয় নাইট ইস্কুলে যাইয়ে পড়াবা। দেহা যাক।

    যদিও ঝিলিকের এই কথার তুলনায় সুকুমার চালু। চোখ কান তুলনায় ভালোই খোলা। খুলনা শহরে বি-ডিবিশনে আগেও ফুটবল খেলে গেছে। রূপসা ঘাটের কাছে এই জায়গায় বসে বসে হাওয়া খাওয়ার মানুষ সে না। শহর পশ্চিম দিকে আরও কত কত দূর। সেখানে কোর্ট-কাছারি বড়ো বাজার স্টেডিয়াম, ভৈরব নদীর কূল, বড়ো মাঠ, কত কিছু। গায়ে জামা দিয়ে সেই দিকে ঘুরতে যায় নদীর কূলের বাঁধের রাস্তা ধরে হাঁটতে হাঁটতে। কাস্টমসঘাট হয়ে চলে যায় বড়ো মাঠ। পাশেই খুলনা স্টেডিয়াম। এই মাঠেও একসময় খেলেছে সে। এখন অকেজো। মাঠের দিকে তাকিয়ে সুকুমারের শ্বাস গভীর থেকে গম্ভীর হয়।

    একদিন রেল স্টেশনের কাছে সার্কাসের প্যান্ডেল দেখে সুকুমারের মনে হয়, যদি সার্কাসের দলে কিছুক্ষণের জন্যে ফুটবলের ওই খেলাটা দেখাতে পারত সে। দৌড়তে হবে না। কেউ তার দিকে বলটা ছুঁড়ে দেবে অথবা গড়িয়ে দেবে তার পায়ের দিকে। তারপর সেই বল সে এক পা থেকে অন্য পা, তারপর হাঁটুতে, উরুতে উরুতে ঘাড়ে কি মাথায় নিয়ে খেলা দেখাত। এই একটা খেলাই পারে সে। এইটুকু দেখাত। যদি সুযোগ হয়।

    ঘরে ফিরে এই কথা সে ঝিলিককে বলে। ঝিলিক অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে। বলে, নেবে তোমারে?”

    কী জানি। ওই এক খেলা দেখানোর জন্যি কেউরে দলে নে?

    আর কোথাও খেলা জানো না?” বলেই ঝিলিক হাসে। অদ্ভুত রহস্যপূর্ণ হাসি! সুকুমার তাকিয়ে থাকে। আজকাল হঠাৎ হঠাৎ এই হাসিটা ঝিলিক তার দিকে চেয়ে হাসে।

    আমি তোমার মতো খেলোয়াড় নাকি? ছাপড়ার ভিতরে ঢুকে সুকুমার গামছা খুঁজতে খুঁজতে বলে।

    আমি আবার কবে খেলোয়াড় হইলাম, শুনচি তুমি খেলা দেখাও বল দিয়ে।

    সুকুমার হাসে। ঝিলিক হাসতে হাসতে ছাপড়ায় ঢুকে একই হাসি মুখে সুকুমারের দিকে তাকায়। সুকুমার বলে, তুমি খেলা দেখাও ভক্তদারে। আমি মানুষেরে দেখাই এক বল দিয়ে তুমি দেখাও দুই বল দিয়ে!

    আইজ পিঠে সত্যি সত্যি গরানের চলা ভাঙব, দেওরা!

    সুকুমারের পিঠ উদলা। সে স্নান করতে যাবে। নীচু দরজার দিকের আলোতে সে পিঠখানা এগিয়ে দিয়ে বলে, কোন জায়গায় কোন জায়গায় ভাঙবা দেখাও?

    ঝিলিক এবার আর পিছনে আসে না। তবে সুকুমারের কাছে আসে। সুকুমার হঠাৎ ঝিলিকের দিকে পিঠ দেয় বলে, দেখাও? আরও বলে, তুমি হইলা দুই বলের খেলোয়াড়, যা বল তোমার!

    ঝিলিক আর গরানের চেলা কাঠ পিঠে ভাঙার কথা বলে না। একটু থমকে দাঁড়ায়। অপেক্ষা করে। সুকুমার তা বুঝতে পারে। তারপর ঘুরে ঝিলিককে পিছন থেকে আঁকড়ে ব্লাউজহীন স্তনে হাত দেয়। একসঙ্গে দুটো, দুই হাতে ধরে বলে, এই যে দুই বল, তুমি দুই বলের খেলোয়াড়।

    ঝিলিক শুধু একবারই ফিসফিসায়, দরজা খোলা। দরজা খোলা, দেওরা।

    সুকুমার আরও অস্ফুট বলে, কেউ আসপে না। এই সময় কেউ আসে না।

    ঝিলিক সুকুমারের শরীরে লেপ্টে যায়। অথবা সুকুমার তাকে লেপ্টে ফেলে, এমনকি এই স্মৃতি আরও বহু বহুদিন মনে থাকে ঝিলিকের। অমন নিঃস্ব তাকে কোনওদিনও করেনি ভক্ত।

    এর কিছুই এখন সুকুমারের মনে পড়েনি। পড়ার কোনও কারণ নেই। ঝিলিক যে সমস্ত দুর্বিপাক কাটিয়ে এসেছে, তাতে তার কোনওভাবে ও কথা মনে পড়ার কথাও না। তবে, কিছুক্ষণ আগে জরিনা যখন ঝিলিকের ফিরতি লঞ্চটা ফিরে এসেছে কি না, তখন ভিতরে চোরা টান সে টের পেয়েছে। অজ্ঞাত সেই টান। কোনওদিন সেভাবে ভাবেওনি। আজ ভাবল।

    জরিনা আজগরের কাছে থেকে ফিরে আবার সুকুমারের কাছে বসে। আবার ওই একই কথা আবার বলে, সব কয়খান লঞ্চ চইলে আসল, খালি মোড়েলগঞ্জের খান এখনও আসল না।

    আসপে।

    দক্ষিণে কিছু হইচে নিকি? বাতাস আছে আইজকে।

    হলি তো এহোন হইচে। সে তো গেল সকালে, সকালে তো আর কিছু হইনি।

    সুকুমার ভাই, তোমার যা কতা। তোমার কতা কী? তোমাগো পুরুষ মানুষের আসলে অন্তরে কোনও দরদ নেই। এটা মানুষ কোন পথে ঘাটে কোথায় কোথায় টাক খাতি খাতি আবার তোমারে খুইজে, তোমার ধারে আইচে। নালি যাতে কোতায়, জানো না জাতো কোডায়? ওই মাগি বাড়ি। বিটি মানষির তো শেষমেশ যাওয়ার জায়গা ওই এট্টা

    হঠাৎ এসব বলছে কেন জরিনা? সন্ধ্যা প্রায় হয়ে আসছে। এই সময়ে চোখের ভাষা ঠিক ঠাক পড়া যায় তো? সে জরিনাকে বুঝতে পারছে? থাকে ওই আজগর বান্দরঅলার সাথে, সেও দেখো কি বুঝমানের মতন কথা কয়! নাকি ঝিলিক এই এক দেড় দিনে তার জীবনের সব কথা বলে দিয়েছে? কী বলেছে, এই খেলাঅলা দেওরারে তার ভালো লাগে, তাই এসেছে তার কাছে?

    কিন্তু জরিনা যাই বলুক, মিথ্যা কিছু বলেনি। মেয়েমানুষের জীবন যেন তাই। অমন একটা ছাপড়ায় রেখে, স-মিলে কাজ করা ভক্তদার সঙ্গে ঝিলিক তো খারাপ ছিল না। কয় বাসায় কাজ করত। একটা ছেলে হল, নাম ভরত। ছেলেটার নাম যে ভরত, তাও আজও মনে আছে জরিনার। কবে কোন একদিন নাকি ঝিলিকের সঙ্গে তার মূলঘর স্টেশনে দেখা হয়েছিল, তারা যাবে যাত্রাপুর লাউফলা রথের মেলায়। সেই সংসার সেই সব কিছু ভক্তদা ওইভাবে ভেঙে দিতে পারল।

    সুকুমার ঘটনাটা আগেই জেনেছিল, যতই পথে পথে ঘুরুক, বাড়িঘরের খবর কিছু কিছু তো পায়। এমনিতে মামার গুষ্টির মানুষজন কেমন তা তাদের তিন ভাই আর বোন দুটোর ভালোই জানা ছিল। সুকুমার সবার ছোটো বলে দাদাদের বউদিদের আর দিদিদের কতাবার্তায় কখনও কখনও জানতে পারত। তাই বলে ভক্তদা এই কাজ করবে। হায়রে খুলনা শহর। সুকুমারের মনে হয়, ও জায়গায় না গেলে কোনওভাবেই ওই কাণ্ড ঘটত না। আবার কত মানুষই তো যায়, তারা সবাই অমন কাণ্ড ঘটায় নাকি? সুকুমার ভাবে, জরিনা কি এসব কথা জানে, তাকে বলেছে মেজো বউ?

    সুকুমার তখন যশোর, বাড়ির কাছের একজনের কাছে শুনেছিল, তার ছোটদা বলেছে, ভক্তদা এক মহিলাকে নিয়ে নিরুদ্দেশ। সঙ্গে ছেলেটাকেও নিয়ে গেছে। কোথায় গেছে কেউ জানে না। ঝিলিক তাদের বাড়ি গিয়ে বলে চলে গেছে। সে এখন কোথায় থাকে ওই বাড়ির লোকজন জানে না। তবে সবার ধারণা ঝিলিক বাপ-ভাইর কাছে মোড়েলগঞ্জ চলে গেছে। সুকুমার যদি কোনওভাবে জানতে পারে তাহলে যেন বাড়িতে জানায়।

    সত্যি, আজও জানা যায়নি ভক্ত কোথায়? তবে সবার ধারণা সেই মহিলাকে নিয়ে ইন্ডিয়ায় চলে গেছে। গোপালগঞ্জের একজন বলেছিল, তাদের কিছু আত্মীয়স্বজন আছে ঠাকুরপুকুর, সেখানে। দেখেছে ভক্তকে। যে মহিলাকে নিয়ে গিয়েছিল সে নাকি উড়ে। তাই ভক্ত হয়তো উড়িষ্যাও চলে যেতে পারে। সবই শোনা কথা। সুকুমার এইসব ঘটনার কোনও নিশানা পায়নি। তাছাড়া সে বাড়িঘরে যেতই-বা কত, যদি কোনও খবর আসত তাহলে কিছু হয়তো জানতে পারত।

    তারপরে সুকুমারের সঙ্গে এই নিয়ে আর কারও কোনওদিন কথা হয়নি। গুছাইত বাড়ির মেজদা ভক্ত, আর তার বউ ঝিলিকের কথা সে যে ভুলে যাবে তাই স্বাভাবিক। কিন্তু জীবনে একদিন তাদের আশ্রয়ে ছিল, সেখান থেকে এক সার্কাসের দলে। সেই যে খুলনা শহরে রূপসা নদীর কূলের কিছুদিন, সেই সময়ে সেই যে ঝিলিকের সঙ্গে তার দিনমান, ঝিলিকই বলতে গেলে তাকে শিখিয়েছে শরীর কাকে বলে–এসব ঘুরে ফিরে কখনও কখনও মনে পড়ত সুকুমারের। আর ঝিলিকের আন্তরিকতা। মানুষটার মন বড়ো ভালো। সেই যে সুকুমার প্রায় বসে বসে ভাত গিলত, এই নিয়ে কোনওদিন কোনও কথা কয়নি। হয়তো ভক্ত, ভিতরে ভিতরে কিছু বলে থাকতে পারে, ঝিলিক কিছু বলেনি। শুধু খুলনা ছেড়ে ফরিদপুরের দিকে দলের সঙ্গে যাওয়ার আগে ঝিলিককে

    একখানা শাড়ি আর ভক্তকে একখানা লুঙ্গি কিনে দিয়েছিল। তারপর আর দেখা নেই।

    সেই ঝিলিক পরশু এসে হাজির। কোত্থেকে কীভাবে, কার কাছে শুনে, কত দরজায় ঘুরে কে জানে। যেন সেকথা এইমাত্র আবার জরিনা মনে করিয়ে দিল, দেহ, সেই মানুষ তোমারে খুঁজদি খুঁজদি কোথাদে আইসে হাজির, সুকুমার ভাই!

    সুকুমার শুধু  করল। যেন একথা জরিনাকেও জানানো যায়, এহেন তো গেল নিজের বাড়ির দিক, ভাইগো পালি হয়।

    পাইয়ে যাবে। সব উপরঅলার ইচ্ছা। তোমারে যহোন পাইচে, সে জায়গায়ও পাইয়ে যাবে মনে কয়।

    পালিই তো হবে না জরিনাদি, ভাইরা ঘরে উঠতি দিলি হয়। এট্টা মানুষ বসাইয়ে বসাইয়ে টানা। আর যে মাইয়ে একদিন বাড়িদে বাইরোইয়ে গেইচে।

    হয়। তাও খারাপ কও নি।

    সুকুমার কেন এই আশঙ্কা করে, সে জানে না। তার মনে হয়েছে তাই বলেছে। কিন্তু এমন হওয়া অস্বাভাবিক নয়।

    একটু দক্ষিণে, প্রায় নাগের বাজারের কাছে নদীতে মোড়েলগঞ্জের লঞ্চখানা দেখা যায়। সুকুমার উলটো মুখো, সে দেখেনি, জরিনা দেখেছে। অন্য লঞ্চগুলোর তুলনায় মোড়েলগঞ্জগামী লঞ্চখানা আয়তনে কিছুটা বড়ো। অথবা, এটাই লঞ্চ, বাকিগুলো ট্রলার। আর ঢাকায় যেখানা যায়, তা প্রায় জাহাজ। জরিনা কিছুটা উচ্ছাসের সঙ্গে বলে, ওই যে দক্ষিণে লঞ্চখান আসতিচে। সুকুমার ভাই একেবারে চিন্তেয় বাঁচে না, লঞ্চখান গেল তো গেল আর ফেরল না, ঠিকঠিক জায়গা মতন গেইচে কি না?

    সুকুমার হাসে, কোতায় চিন্তা? দক্ষিণে এট্টা কিছু হলি এতক্ষণ টাউনে খবর হইয়ে যাত। আর মাইজে বউর কিছু হবে না। তার জীবনের উপরদে এত কিছু গেইচে, তাও যখন কিছু হইনি, এইতে আর কী হবে। আমি চিন্তে করিচি, সের বাড়িঘরে উটতি পারিচে কি না। সে সমস্ত ঠিক। আছে কি না–সেইয়ে।

    অথচ, তাদের অথবা শুধু সুকুমারের সকল উদ্বেগ কাটিয়ে সেই লঞ্চ থেকেই নামল কি না ঝিলিক!

    লঞ্চঘাটের পন্টুন থেকে রাস্তায় উঠেই, একটু দক্ষিণে এগোলে আজগরের ঝুপড়ি। ঝিলিক আর যাবে কোথায়? সে সেখানেই আসবে। সেখানেই জরিনাকে পাওয়া যাবে। জরিনাকে পাওয়া গেলে অবশ্যই আজগরের কাছে খোঁজ মিলবে সুকুমারের।

    এখন জরিনার কাছেই বসে আছে সুকুমার। আজগর নেই। জরিনার মুখোনা উদ্বেগ-মাখানো। আর, ঝিলিককে দেখে জরিনা আর সুকুমার দুজনই অবাক।

    জরিনা বিস্ময়ে জানতে চায়, এ কেডা?

    ঝিলিক বলে, আমি, আর কেডা।

    সুকুমার এই প্রায় সন্ধ্যার আধা অন্ধকারে ঝিলিকের মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে। কিছুই জানতে চায় না। পথক্লান্তি তার চোখজুড়ে। একদিনেই প্রায় বিধ্বস্ত। কোথায় যেন যে মানুষটা গেছে, সেই মানুষটা ফিরে আসেনি। চুল আলুথালু না, খোঁপা বাঁধা, মুখে ঘাম নেই; কিন্তু চোখে রাজ্যের উদ্বেগ। চোখ বসে গেছে যেন একটু, সেখানে দুনিয়াদারির সমস্ত দুঃখ ভর করে আছে! ওদিকে ঝিলিকও জরিনার মুখের দিকে তাকিয়ে বোঝে, কিছু একটা ঘটে গেছে। নয়তো এই সন্ধ্যায় এভাবে, এখানে। এমন অসহায়ভাবে জরিনাদি বসে আছে কেন?

    জরিনা জানতে চাইল, চলে আসলা যে? সে মেলা কথা।

    সুকুমার আর কিছু জানতে চাইল না। বুঝল এই মেলা কথার পিছনে কত কথা আছে। বরং, অন্য কথা বলল, সারাদিন পেটে কিছু পড়িছে তোমার?

    হয়। গুড়মুড়ি আর গাঙের জল, এইসব তো দক্ষিণ দেশেও পাওয়া যায়!

    সুকুমার মরে উদ্বেগে, আর তার ভিতরেও এমন ঠ্যাস মারা কথা। এর দিকে অবাক হয়ে তাকানো ছাড়া আর কী করার আছে? কোনও ভাবনা আছে? হাতে পয়সাপাতি নেই। আসল এই, এখন তো থাকতে হবে আলতাফের হোটেলের দোতলায়। সেখানে কোনার দিকে তক্তাঘেরা রুমে, আর নয় সে চলে যেত দড়াটানা ঘাটের দিকে। অথবা, আলতাফের হোটেলের দোতলায় ঢালাই চাচের উপর শুয়ে শুয়ে গরমের রাত্তির কাবার।

    ঝিলিকের যেন সেসব কোনও চিন্তা নেই। তার দিকে সুকুমার তাকিয়ে থাকতে থাকতে, ঝিলিক জরিনার কাছে জানতে চাইল, আজগর ভাইরে দেকতিচি না। শরীর ভালো হইছে?

    নারে। জ্বর আরও বাড়িচে। কতবার জলপট্টি পালটাইয়ে দিচি। ওই মোসলেম কাকা এক ফার্মেসির দে ওষুধ কিনে দিয়ে গেইচে, তাও কুমিনি।

    ও ভগবান, এইরাম জ্বর! ডাক্তারের ধারে নেওনি? ডাক্তারের বিষয়টা ঝিলিক সুকুমারের দিকে জানতে চাইল?

    হাতে মন্টু থাহা লাগে মন্টু! সুকুমার ডান হাতের আঙুলে টাকা গোনার ভঙ্গি করল, আমাগো কেউর ধারে পয়সা কড়ি নেই। আইজকেও ট্রেন আন্দোলনে কোর্টে মানুষ আইচে, পাবলিক আসিনি—

    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleউইংস অব ফায়ার – এ পি জে আবদুল কালাম
    Next Article রবিজীবনী (১ম খণ্ড) – প্রশান্তকুমার পাল
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Demo
    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    আরব জাতির ইতিহাস – ফিলিপ কে. হিট্টি (অনুবাদ : প্রিন্সিপাল ইবরাহীম খাঁ)

    September 22, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    আরব জাতির ইতিহাস – ফিলিপ কে. হিট্টি (অনুবাদ : প্রিন্সিপাল ইবরাহীম খাঁ)

    September 22, 2025
    Our Picks

    আরব জাতির ইতিহাস – ফিলিপ কে. হিট্টি (অনুবাদ : প্রিন্সিপাল ইবরাহীম খাঁ)

    September 22, 2025

    নিউ মুন – স্টেফিন মেয়ার

    September 22, 2025

    ব্রাইডা – পাওলো কোয়েলহো

    September 22, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    Sign In or Register

    Welcome Back!

    Login below or Register Now.

    Lost password?

    Register Now!

    Already registered? Login.

    A password will be e-mailed to you.