Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    দ্য দা ভিঞ্চি কোড – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025

    এঞ্জেলস এন্ড ডেমনস – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • 🔖
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    Subscribe
    সাইন ইন
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    ডেভিড কপারফিল্ড – চার্লস ডিকেন্স

    এ. টি. এম. শামসুদ্দিন এক পাতা গল্প96 Mins Read0

    ডেভিড কপারফিল্ড – ২

    ০২. পরিবর্তন এল আমার জীবনে

    পরিবর্তন এল আমার জীবনে

    আমার বয়স তখন আট বছর। এক রাতে পেগোটি আর আমি বসে ছিলাম। আগুনের পাশে। আর কেউ ছিল না বসার ঘরে। আমি ওকে কুমিরের গল্প পড়ে শোনাচ্ছিলাম। পড়াটা বোধহয় খুব ভাল হচ্ছিল না। কারণ, পড়া শেষ হতে দেখা গেল, পেয়গাটির ধারণা হয়েছে যে ক্রকডাইল (ওর ভাষায় ক্রর্কিনডিল) এক রকমের সজি।

    পড়া চলল আরও কিছুক্ষণ। তারপর মা এলেন এক ভদ্রলোককে সঙ্গে নিয়ে। লোকটি রোববার গির্জা থেকে ফেরার সময়ও এসেছিলেন আমাদের বাড়িতে।

    এখন জানি তার নাম মি, মার্ডস্টোন। প্রায়ই আসছেন আমাদের বাড়িতে। তাকে আমার ভাল লাগেনি। তার গলার আওয়াজও পছন্দ হয়নি আমার। মনে পড়ে, নোকটা এলেই পেগোটির মুখে-চোখে একটা অদ্ভুত ভাব ফুটে উঠত।

    পেগোটির মুখের ভাব ওরকম হচ্ছে কেন বুঝলাম না। একদিন শুনলাম মা-র সঙ্গে ওর কথা কাটাকাটি হচ্ছে চাপা স্বরে। পেগোটি ওই অচেনা লোকটির সঙ্গে মা-র মেলামেশা পছন্দ করছে না। লোকটিকেও পছন্দ হচ্ছে না ওর। মা বকছেন পেগোটিকে। বলছেন পেগোটি তার সুখ চায় না।

    ঝাপসা হয়ে আসছে স্মৃতি। মনে হয় পরের দিন। আসলে সেদিনের মাস দেড়েক পরে। পেগোটি হঠাৎ তোষামোদের সুরে আমাকে বলল, ডেভি সোনা, যাবে আমার সঙ্গে ইয়ারমাউথে? চলো না, আমার ভায়ের বাড়ি থেকে সপ্তা দুয়েক বেড়িয়ে আসি? ওখানে সাগর আছে, নৌকা আর জেলেরা আছে। আমার ভাইপো হ্যাম আছে।

    সে তো খুব মজার ব্যাপার হবে, তবে মাকে একা ফেলে আমি যেতে চাই, বললাম ওকে।

    পেগোটি বলল, তোমার মা বেড়াতে যাবেন আরেক জায়গায়। আবারও লক্ষ করলাম কথাগুলো বলতে বলতে ওর মুখে সেই অদ্ভুত ভাবটা ফুটে উঠল।

    আমাদের দুচাকার ঘোড়ার গাড়িটা বাড়ির সামনে থেকে চলল ইয়ারমাউথের পথে। দেখলাম মা যেখান থেকে হাত নেড়ে বিদায় জানাচ্ছেন আমাদেরকে, সেখানে এসে দাঁড়িয়েছেন মি. মার্ডস্টোন। তিনি কেন ওখানে, বুঝলাম না।

    গাড়ির চালক মি. বার্কিস। বন্ধু লোক। দীর্ঘ যাত্রাপথে তিনি আর পেগোটি অনেক হাসিঠাট্টা করলেন।

    ইয়ারমাউথে পৌঁছতেই নাকে লাগল মাছ, পিচ, আলকাতরা আর লবণের গন্ধ। দেখলাম নাবিকেরা ঘুরে বেড়াচ্ছে চারদিকে, পাথরে ছাওয়া রাস্তায় ঝুনঝুন শব্দ তুলে চলছে গাড়ি-ঘোড়া।

    শহরেই দেখা হলো হ্যামের সঙ্গে। বিশালদেহী বলিষ্ঠ লোক। ছফুট লম্বা। কিন্তু মুখটা ছেলে মানুষের মত। আমাকে পিঠে তুলে নিয়ে এবং আমাদের ছোট বাক্সটি বগলদাবা করে চলল হ্যাম। পেপগাটি তুলে নিল আরেকটি বাক্স। গ্যাসকারখানা, নৌকার ঘাট, কামারশালা, দড়ির কারখানা পেছনে ফেলে আমরা পৌঁছলাম সাগরের তীর বরাবর একটি সমতল জায়গায়।

    মাস্টার ডেভি, ওই যে আমাদের বাড়ি! বলল হ্যাম।

    চারদিকে তাকিয়ে দেখলাম। সাগরতীরে এবং সাগরে যতদূর দৃষ্টি যায়। নদীর দিকেও দেখলাম। কিন্তু বাড়ি-টাড়ি কিছুই নজরে পড়ল না।

    একমাত্র যে জিনিসটি নজরে এল সেটি হচ্ছে একটি কালো মালবাহী বড় নৌকা, কিংবা কোন সেকেলে জাহাজ। শুকনো ডাঙায়, অনেক ওপরে। ওটার গা কেটে দরজা-জানালা বানানো হয়েছে। একটা লোহার চোঙা চিমনির মত উঁচু হয়ে রয়েছে ওটার ওপর। সেই চিমনি দিয়ে ধোঁয়া উঠছে কুণ্ডলী পাকিয়ে। এ ছাড়া বাড়ির মত আর কিছুই দেখলাম না।

    জাহাজের মত দেখতে ওই জিনিসটা নাকি? জিজ্ঞেস করলাম।

    হ্যাঁ, ওটাই, মাস্টার ডেভি, জবাব দিল হ্যাম।

    ওখানে থাকার কথা ভেবে আনন্দে উদ্বেল হয়ে উঠলাম। এতটা মাতোয়ারা বোধহয় আলাদীনের মহলে থাকার জন্যও হতাম না!

    পেগোটি বার্জের পেছন দিককার একটা ছোট্ট দুয়ার খুলে আমার শোবার ঘরটা দেখিয়ে দিল। ঘরে একটা ছোট্ট জানালাও আছে। আয়না আছে। একজন শুতে পারার মত বিছানা আছে একটা। আর আছে টেবিলের ওপর নীল মগ-এ সাগরগুল্মের তৈরি একটি ছোট ফুলের তোড়া।

    সাদা অ্যাপ্রন পরা একটি অতি ভদ্রমহিলা এবং একটি ফুটফুটে সুন্দর ছোট্ট মেয়ে অভ্যর্থনা জানাল আমাদেরকে। মেয়েটির চোখ নীল। মাথায় লম্বা কোঁকড়ানো হলদে চুল।

    পেগোটি আমাকে বলল, ইনি হচ্ছেন মিসেস গামিজ। বিধবা মহিলা। আমার ভাইয়ের সংসার দেখেন।

    আমি মিষ্টি করে হাসলাম মহিলার দিকে চেয়ে।

    আর ওই ছোট্ট মেয়েটি হলো, বলে গেল পেগোটি, এমিলি। আমার ভাইয়ের পালিত মেয়ে। ও হলো এতিম, বুঝলে ডেভি সোনা, ঠিক হ্যামের মত। আমার ভাইটি খুব ভাল। একেবারে সোনার মানুষ। হ্যাম আর এমিলি দুজনকেই তিনি পুষ্যি নিয়েছেন।

    কিছুক্ষণ পরেই মি. পেগোটি এলেন। দেখলাম যে পেগোটির কথাই ঠিক। লোকটা সত্যিই ভাল।

    পরদিন ভোরের আলো আমার ঝিনুকের খোলের ফ্রেমে বাঁধানো আয়নাটায় পড়তেই লাফিয়ে উঠলাম বিছানা ছেড়ে। ছোট্ট এমিলিকে নিয়ে চলে গেলাম বাইরে। নুড়ি পাথর কুড়াতে লাগলাম দুজনে মিলে।

    এমিলিকে বললাম আমার মায়ের কথা। বললাম আমার আর কেউ নেই মা ছাড়া। বললাম বড় হলেই মা-কে দেখাশোনা করব আমি।

    এমিলি বলল, বড় হলে সে হয়ে উঠবে একজন চমৎকার ভদ্রমহিলা। আরও বলল, মা-কে সে হারিয়েছে এবং ওর বাপ মরেছে সাগরে ডুবে।

    দুই সপ্তাহ আমরা দুজনে একত্রে কাটালাম। সাগর তীরে খেলা করলাম। হ্যামের নৌকায় চড়ে ফুর্তি করলাম, অনর্গল বকবক করে কত কথা বললাম। আমাদের বেড়ানোর মেয়াদ ফুরোবার আগেই প্রেমে পড়ে গেলাম ছোট্ট এমিলির।

    ওখানে থাকার পুরো সময়টায় বাড়ির কথা আমার খুব কমই মনে পড়ল। কিন্তু সময় কেটে গেল যেন হাওয়ার ডানায় ভর করে। এল বিদায়ের লগ্ন। চোখের জলে বিদায়ের পালা সাঙ্গ করে আমরা চললাম ইয়ারমাউথ ছেড়ে। যতই এগোতে লাগলাম বাড়ির কাছে ততই উত্তেজনা বাড়তে লাগল আমার মনে। কিন্তু ফিরতি পথে দেখা গেল যে পেগোটির মনটা খারাপ। ওর মুখে আবারও সেই অদ্ভুত ভাবটি ফুটে উঠেছে।

    মা দরজায় ছিলেন না আমাদেরকে অভ্যর্থনার জন্য। পেপগাটি আমার হাত ধরে টেনে নিয়ে চলল রান্নাঘরে। এতে ঘাবড়ে গেলাম আমি।

    মা কোথায়? চেঁচিয়ে উঠলাম আমি। বাবার মত মরে যাননি তো?

    না, না, মাস্টার ডেভি, বলল পেগোটি। তোমার মা মারা যাননি। তোমার একজন নতুন বাবা হয়েছে। এসো, তার সঙ্গে দেখা করো।

    দেখা করতে আমি চাই না, বললাম চিৎকার করে।

    কিন্তু পেগোটি জোর করতে লাগল। মা-কে দেখতে চাই বলে ওর পিছু পিছু। গিয়ে ঢুকলাম বসার ঘরে। দেখলাম মা বসে আছেন আগুনের ধারে এবং তার পাশে বসে আছেন মি. মার্ডস্টোন। তিনি মাকে হুঁশিয়ার করে দিলেন নিজেকে সংযত রাখার জন্য। তাই মা ধীরে, ভীরু পায়ে এগিয়ে এলেন এবং আমাকে চুমু দিলেন। আমি হ্যাণ্ডশেক করলাম মি. মার্ডস্টোনের সঙ্গে, কিন্তু সুযোগ পাওয়া মাত্রই চলে গেলাম দোতলায়।

    দেখলাম, আমার শোবার ঘর বদলে গেছে। আমাকে এখন শুতে হবে মায়ের কাছ থেকে অনেক দূরে।

    মনটা আমার ভরে গেল বিষাদে। রুমটা একেবারে ছোট। সিলিং-এ ফাটল। জানালার কাচে ময়লা। আজেবাজে জিনিসে ভর্তি ঘরটা। আমি কাদতে লাগলাম। ছোট্ট এমিলিকে ভালবাসি গভীরভাবে। কিন্তু আমাকে নিয়ে আসা হয়েছে ওর কাছ থেকে। মা-কে ভালবাসি। মা-র কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে আমাকে। কেউ যেন আমাকে চায় না। বালিশে মুখ গুঁজে কাঁদতে কাঁদতে ঘুমিয়ে পড়লাম।

    পরদিন সকালে মা আর পেগোটি এসে আমাকে জাগালেন। আমার মুখচোখে অশ্রুর দাগ দেখে মা জিজ্ঞেস করলেন, কি হয়েছে, ডেভি?।

    কি হয়েছে যেন জানেন না তিনি। অভিমানে মুখ ফিরিয়ে জবাব দিলাম, জানি না।

    মা পেগোটিকে দোষ দিলেন, এসব তোমার কাজ, পেগোটি। তুমি ডেভির মন বিষিয়ে তুলেছ আমার আর আমার প্রিয়জনের বিরুদ্ধে। কেমন করে, কেন এমন করলে?

    পেগোটি বলল, মিসেস কপারফিল্ড, আপনি এ মুহূর্তে যা বললেন এর জন্য খোদা আপনাকে মাফ করুক।

    এ সময় আমার কাঁধে একটি হাত পড়ল। মি. মার্ডস্টোনের হাত। আমি নেমে দাঁড়ালাম বিছানার পাশে।

    এসব কি হচ্ছে, ক্লারা? তুমি কি ভুলে গেলে যে তোমাকে দৃঢ় হতে হবে? বললেন তিনি।

    মা বললেন, খুবই দুঃখিত, এডওয়ার্ড। কিন্তু কি করব? মন নরম হয়ে যায়। চেষ্টা করি শক্ত হতে, কিন্তু…পারি না…

    তাই নাকি? শুনতে ভাল লাগল না, বলে তিনি কাছে টেনে নিলেন মা-কে। কানে কানে কি বললেন। চুমু দিলেন। মা-র মাথাটা এলিয়ে পড়ল তার কাঁধের ওপর। বুঝলাম, মা এখন তার হাতে একতাল কাদার মত। তিনি ওই কাদাকে ইচ্ছামত রূপ ও আকার দিতে পারেন। এবং দিলেনও।

    তুমি এখন নিচে যাও। ডেভিড আর আমি এক সঙ্গে আসব।

    মা বেরিয়ে যাবার পর মুখ কালো করে পেগোটির দিকে ফিরে তিনি বললেন, তোমার মনিবের নাম জানো?

    অনেক দিন ধরে তিনি আমার মনিব। আমার তো জানা উচিত, স্যার, বলল পেগোটি।

    কিন্তু ওপরে আসার সময় শুনলাম তুমি ওকে অন্য নামে ডাকছ। ওটা ওর নাম নয়। ওর নাম এখন মিসেস মার্ডস্টোন। মনে থাকবে তো?

    মাথা নুইয়ে নীরবে বেরিয়ে গেল পেপগাটি।

    এবার আমার দিকে ফিরে তিনি বললেন, ডেভিড, আমার ঘোড়া বা কুকুরটা অবাধ্য হলে আমি কি করি বলো তো?

    জানি না।

    পিটিয়ে শায়েস্তা করি। তুমি চালাক ছেলে। আশা করি, আমার কথাটার মানে বুঝতে পেরেছ।

    ওই সময় থেকে আমি ভয় ও ঘৃণা করতে লাগলাম মি. মার্ডস্টোনকে। মা আমাকে তাড়াহুড়ো করে বুকে টেনে নেন। একমাত্র তখনি-যখন লোকটি কাছে থাকে না। এ পরিবর্তন ঘটে যাবার ফলে বাড়ি আর আমার কাছে বাড়ি বলে মনে হত না। মি. মার্ডস্টোন উঠে পড়ে লাগলেন আমাদের জীবনযাত্রাকে শোধরাবার জন্য। কিন্তু আমি না পারলাম তাকে শ্রদ্ধা করতে, বা পছন্দ করতে। আমার একমাত্র আরামের স্থল হয়ে দাঁড়াল রান্নাঘর, একমাত্র প্রিয় হয়ে দাঁড়াল পেগোটির সঙ্গ।

    এর পরে গোদের ওপর বিষফোঁড়ার মত এসে উদয় হলেন মি. মার্ডস্টোনের বড় বোন মিস জেন মার্ডস্টোন। তিনি থাকবেন আমাদের সঙ্গে। আসামাত্রই তিনি পরিষ্কার বুঝিয়ে দিলেন যে আমাকে তার পছন্দ হচ্ছে না। ফলে আমি প্রায় বন্দী হয়ে পড়লাম আমার ছোট্ট শোবার ঘরটায়। সেখানেই কাটতে লাগল আমার দিনগুলো মৃত বাবার কিছু পুরানো বই পড়ে।

    মিস মার্ডস্টোন মা-কে বললেন যে তিনি এসেছেন সাহায্য করতে। মা-র। কাঁধ থেকে সংসারের বোঝা নামিয়ে নিজের কাঁধে নিতে। এসব বলে মা-র চাবির গোছাটা তিনি তুলে নিলেন। ওটা আর মা ফেরত পাননি। মহিলা এখানকার জিনিস ওখানে, ওখানকার জিনিস এখানে করে বদলে দিলেন সবকিছু।

    ক্রমে আমাদের সংসারের সব কর্তৃত্ব চলে গেল মার্ডস্টোনদের হাতে। মা। একবার ক্ষীণ প্রতিবাদ করতে গিয়েও শেষ পর্যন্ত পিছিয়ে গেলেন।

    মি. মার্ডস্টোন আর তাঁর বোন আমাকে বোর্ডিং স্কুলে পাঠিয়ে দেয়ার কথা বলাবলি করতে লাগলেন। এ বিষয়ে তারা সিদ্ধান্তে পৌছানো পর্যন্ত আমার পড়াশোনা চলতে লাগল বাড়িতে, মায়ের কাছে। সেখানে একটা পরিবর্তন হলো। আগে পড়া মুখস্থ হলে বলে শোনাতাম মাকে। কিন্তু এখন ওই লোকটা এবং তাঁর। বোন আমার পড়ার সময় হাজির থাকেন চৌকিদারের মত। ফলে যা শিখি সব ডেভিড কপারফিল্ড উধাও হয়ে যায় আমার মগজ থেকে। আমি তোতলাতে থাকি, থমকে যাই।

    ভুলব না সেসব দিনের কথা। মা-র কাছে পড়াশোনা কি সহজই না ছিল। এখন সব গোলমাল হয়ে গেল। একদিনের কথা বলি: সকাল বেলায় বই-খাতা আর স্লেট নিয়ে ভীরু পায়ে চলে গেলাম মা-র কাছে। তার একপাশে ইজিচেয়ারে বসে বই পড়ার ভান করছেন মি. মার্ডস্টোন। অন্য পাশে হাতে ইস্পাতের জপমালা নিয়ে বসে আছেন মিস মার্ডস্টোন। ওই দুজনকে দেখামাত্রই আমার মাথায় ঝিম ধরল। মগজ অবশ হয়ে গেল। মনে হলো, যা শিখেছি সবই মগজ থেকে পানির মত গড়িয়ে বেরিয়ে যাচ্ছে। একটা শব্দও বেরুল না আমার মুখ দিয়ে। শব্দগুলো যেন এক এক করে উড়ে গেছে ডানা মেলে। একটা বইয়ের পড়াও পারলাম না। মা-র চেহারা বিবর্ণ হয়ে গেল। তিনি তাকিয়ে রইলেন আমার দিকে, আমি তার দিকে। আমার ঠোঁট দুটো নড়ছে নিঃশব্দে।

    চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ালেন মি. মার্ডস্টোন। কেড়ে নিলেন বইগুলো। ছুঁড়ে মারলেন আমার গায়ে। ঘাড় ধরে কান মলে বের করে দিলেন বারান্দা থেকে।

    এইভাবে চলতে লাগল আমার লেখাপড়া দিনের পর দিন। বকেয়া পড়ার পাহাড় জমতে লাগল। এর ওপর মুখে মুখে কঠিন-কঠিন অঙ্ক দিতেন মি. মার্ডস্টোন। আমার ঘাম বেরিয়ে যেত অঙ্কগুলো নিয়ে ধস্তাধস্তি করতে গিয়ে। সারাদিন ছুটি মিলত না। এমনি করে আমি একেবারে নিরেট বোকা হয়ে গেলাম। ছয় মাস ধরে চলল এরকম।

    একদিন সকালে দেখলাম মা-র মুখটা ভীষণ উদ্বিগ্ন। মি. মার্ডস্টোনের মুখটা কঠোর। তার হাতে একটি বেত। মিস মার্ডস্টোন তার ভাইকে চোখের ইশারা। করলেন। মি. মার্ডস্টোন বললেন আমাকে বেত মারা দরকার। মা-র ক্ষীণ আপত্তি তিনি গ্রাহ্য করলেন না। হাত ধরে আমাকে নিয়ে গেলেন আমার শোবার ঘরে। ওখানে যেতেই তিনি হঠাৎ আমাকে উপুড় করে ফেললেন তার হাঁটুর ওপর।

    মি. মার্ডস্টোন! মি. মার্ডস্টোন! স্যার! বলে চেঁচাতে লাগলাম আমি। মারবেন না, আমাকে মারবেন না, স্যার! পড়া শিখতে আমি চেষ্টা করেছি। কিন্তু আপনি আর মিস মার্ডস্টোন চেয়ে থাকলে আমার কিছুই মনে থাকে না!

    মনে থাকে না, না? আচ্ছা দেখা যাবে কেমন মনে থাকে না, বলে তিনি বেত দিয়ে শপাং শপাং পিটাতে লাগলেন আমাকে।

    যন্ত্রণায় চিৎকার করলাম। কত মিনতি করলাম আমাকে না মারার জন্য। কিন্তু বেত পড়তে লাগল অবিরাম। তখন আমি হঠাৎ তাঁর হাত কামড়ে দিলাম।

    তিনি এমনভাবে আমাকে পিটাতে লাগলেন যেন মেরেই ফেলতে চান। দরজার বাইরে থেকে মা আর পেপগাটির কান্না শুনলাম। তারপর তিনি চলে গেলেন। বাইরে থেকে তালা পড়ল আমার দরজায়।

    পাঁচদিন বন্দী রইলাম আমার ঘরে। মা-কে দেখারও সুযোগ দেয়া হলো না আমাকে। শেষের রাতে বিছানায় বসে দেখছিলাম, আমার ঘর আর গির্জার মাঝখানের জায়গাটিতে বৃষ্টির ধারা নামছে প্রবল বেগে। এমন সময় পেগোটি এল আমার দরজায়। চাবির ছিদ্রে মুখ লাগিয়ে ফিসফিস করে বলল, মাস্টার ডেভি, তোমাকে লণ্ডনের কাছে এক স্কুলে পাঠিয়ে দেয়া হচ্ছে। কিন্তু চিন্তা কোরো না। আমি তোমার মায়ের দেখাশোনা করব। ও আমাকে চুমু দিতে পারছিল না, তাই চাবির ছিদ্রে চুমু দিয়ে চলে গেল।

    সকালে আমাকে রূম থেকে বের করা হলে মা-কে দেখলাম। ফ্যাকাসে বিবর্ণ হয়ে গেছেন মা। লাল হয়ে গেছে তার চোখ দুটো। বিদায়কালে আমাকে বুকে নিতেও মাকে দিলেন না মি. মার্ডস্টোন।

    মি. বার্কিস আমার জিনিসপত্র তুলে নিলেন গাড়িতে। আমরা রওনা হলাম। মাত্র আধ মাইল গিয়েছি এমন সময় রাস্তার পাশের ঝোপের আড়াল থেকে বেরিয়ে এল পেগোটি। উঠে পড়ল গাড়িতে। কিছু না বলে আমাকে জড়িয়ে ধরল বুকে। কয়েকটা কেক, তিনটি শিলিং, দুটি আধা-ক্রাউন এবং মায়ের একটি চিঠি দিল। তারপর নেমে গেল গাড়ি থেকে।

    যেতে যেতে পেগোটি সম্পর্কে আমাকে অনেক প্রশ্ন করলেন মি. বার্কিস। আমি বললাম পেগোটির বিয়ে হয়নি। এতে তিনি যেন খুবই আগ্রহী হয়ে উঠলেন পেগোটির প্রতি। বললেন ওর কাছে চিঠি লিখলে আমি যেন বলি যে বার্কিস ইচ্ছুক। বার্তাটি ওই সময় বিভ্রান্ত করেছিল আমাকে। পরে আমি জানতে পারি যে বার্কিস আমাদের লক্ষ্মী পেগোটিকে বিয়ে করতে চান, কিন্তু বেশি লাজুক হওয়ায় ওকে বলতে পারছেন না।

    বার্কিসের জন্য লণ্ডন অনেক দূরের জায়গা। অত দূর তিনি যাবেন না। তাই আমাকে আরেকটি কোচে, নাইট কোচে উঠতে হলো। কিন্তু কোচ-স্টেশনে নেমে দেখলাম কপারফিল্ড বা মার্ডস্টোন নামের কোন বাচ্চাকে নেয়ার জন্য সেখানে কেউ নেই। দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ভাবতে লাগলাম হেঁটে বাড়ি ফিরে যেতে কতক্ষণ লাগতে পারে। এ সময় একজন রোগাটে তরুণ এসে প্রশ্ন করল, নতুন ছেলে কি তুমি?

    ইনি হচ্ছেন মি. মেল, আমি যে স্কুলে যাচ্ছি সেই সালেম হাউসের মাস্টারদের একজন।

    একটা উঁচু ইটের দেয়ালেঘেরা বাড়ি। গেট-এ একটা বোর্ডে লেখা রয়েছেসালেম হাউস। বেল টিপতেই ষাঁড়ের মত মোটা ঘাড়, কাঠের পা, আর খাটো চুল-অলা একটা লোক গেট খুলে দিল।

    নতুন ছেলে, বললেন মাস্টারটি।

    তিনি আমাকে একটা ঘরে নিয়ে গেলেন। সেখানে দেখলাম পেস্টবোর্ড প্ল্যাকার্ডের ওপর সুন্দর করে লিখে রাখা হয়েছে: হুঁশিয়ার, ও কামড়ায়। বোর্ডটা পড়ে আছে একটা টেবিলের ওপর।

    দেখামাত্রই আশঙ্কা করলাম যে নিচে কোথাও কুকুর আছে। লাফিয়ে উঠলাম একটা চেয়ারে। মি. মেল জিজ্ঞেস করলেন চেয়ারে উঠলাম কেন?

    বললাম, মাফ করবেন, স্যার, কুকুরটা কোথায় দেখছি।

    কুকুর? কোন্ কুকুর?

    ওটা কি কুকুর নয়?

    কোনটা?

    যেটা থেকে হুঁশিয়ার থাকতে হবে? যেটা কামড়ায়?

    না, কপারফিল্ড, বললেন তিনি গম্ভীরভাবে। ওটা কুকুর নয়, একটি ছেলে। আমার ওপর নির্দেশ, এই প্ল্যাকার্ডটা তোমার পিঠে ঝুলিয়ে দিতে হবে। শুরুতেই এরকম করতে হচ্ছে বলে আমি দুঃখিত। কিন্তু আমাকে এটা করতেই হবে।

    মি. মেল সত্যি প্ল্যাকার্ডটা ঝুলিয়ে দিলেন আমার পিঠে একটা ন্যাপস্যাকের মত।

    সে যে কী যন্ত্রণা কেউ তা কল্পনাও করতে পারবে না। যেদিকে যাই, যেদিকে ফিরি, মনে হয় কেউ যেন পেছন থেকে ওটা পড়ছে, আর হাসছে দাঁত বের করে।

    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleউত্তরণ : শ্রেষ্ঠত্বের পথে সকলে – এ পি জে আবদুল কালাম
    Next Article ভাবীকালের একটি গল্প – এইচ জি ওয়েলস
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Demo
    Most Popular

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Our Picks

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    দ্য দা ভিঞ্চি কোড – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025

    এঞ্জেলস এন্ড ডেমনস – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    Sign In or Register

    Welcome Back!

    Login below or Register Now.

    Lost password?

    Register Now!

    Already registered? Login.

    A password will be e-mailed to you.