Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • English Books
      • Jules Verne
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    তিরোলের বালা

    বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় ভৌতিক গল্প এক পাতা গল্প21 Mins Read0

    তিরোলের বালা

    মার্টিন কোম্পানির ছোটো লাইন।

    গাড়ি ছাড়বার সময় উত্তীর্ণ হয়ে গিয়েছে, এখনও ছাড়বার ঘণ্টা পড়েনি। এ নিয়ে গাড়ির লোকজনের মধ্যে নানারকম মতামত চলেছে।

    —মশাই বড়গেছে নেমে যাবো, প্রায় পাঁচমাইল; চারটে বাজে— এখনও গাড়ি ছাড়বার নামটি নেই— কখন বাড়ি পৌঁছব ভাবুন তো?

    —এদের কাণ্ডই এইরকম, আসুন না সবাই মিলে একটু কাগজে লেখালেখি করি। সেদিন বড়গেছে ইস্টিশনে দুটো ট্রেনের লোক এক ট্রেনে পুরলে, দাঁড়াবার পর্যন্ত জায়গা নেই; তাও কদমতলায় এল এক ঘণ্টা লেট।

    —ওই আপিসের সময়টা একটু টাইম মতো যায়, তার পর সব গাড়িরই সমান দশা—

    —আঃ, কী ভুল যে করেছি মশাই এই লাইনে বাড়ি করে! রিটায়ার করলাম, কোথায় বাড়ি করি, কোথায় বাড়ি করি, আমার শ্বশুর বললেন, তাঁর গ্রামে বাড়ি করতে—

    —সে কোথায় মশাই।

    —এই প্রসাদপুর, যেখানে প্রসাদপুরের ঠাকুর আছেন, মেয়েদের ছেলেপুলে না হলে মাদুলি নিয়ে আসে, হাওড়া ময়দান থেকে পঁচিশ মাইল, বেশি না। ভাবলাম কলকাতার কাছে, সস্তাগণ্ডা হবে, পাড়াগাঁ জায়গা শ্বশুরবাড়ি সবাই রয়েছেন; তখন কি মশাই জানি? তিন-চার হাজার টাকা খরচ করে বাড়ি করলুম, দেখছি যেমনি ম্যালেরিয়া তেমনি যাতায়াতের কষ্ট, পঁচিশ মাইল আসতে পঁচিশ খেলা খেলছে। এই স্টুপিড গাড়িগুলো—

    —পঁচিশ কী স্যার, তিন পঁচিশং পঁচাত্তর খেলা বলুন। আমারও পৈতৃক বাড়ি ওই প্রসাদপুরের কাছে নরোত্তমপুর। ডেলি প্যাসেঞ্জারি করি, কান্না পায় এক-এক সময়—

    আমি যাচ্ছিলাম চাঁপাডাঙা। লাইনের শেষ স্টেশন। এদের কথাবার্তা শুনে ভয় হল। স্টেশন থেকে চার মাইল দূরে দামোদর নদীর এপারেই আমার এক মাসিমা থাকেন। মেসোমশাই নাকি মৃত্যুশয্যায়, তাই চিঠি পেয়ে মাসিমার সনির্বন্ধ অনুরোধে সেখানে চলেছি। যে-রকম এরা বলছে, তাতে কখন সেখানে পৌঁছব কে জানে?

    কামরার এক কোণের বেঞ্চিতে একটি যুবক ও তার সঙ্গে একটি সতেরো-আঠারো বছরের সুন্দরী মেয়ে বসেছিল। মেয়েটির পরনে সিল্কের ছাপা-শাড়ি, পায়ে মাদ্রাজি চটি, মাথার চুলগুলো যেন একটু হেলাগাছা ভাবে বাঁধা। সে জানালা দিয়ে বাইরের দিকে চেয়ে ছিল। যুবকটি মাঝে মাঝে সকলের কথাবার্তা শুনছে, মাঝে মাঝে বাইরের দিকে চেয়ে ধূমপান করছে।

    গাড়ি ছেড়ে তিন-চারটে স্টেশন এল। পান, পটল-আলু, মাছের পুঁটলি হাতে ডেলি প্যালেঞ্জারের দল ক্রমে নেমে যাচ্ছে। বাকি দল এখনও সামনাসামনি বেঞ্চিতে মুখোমুখি বসে কোঁচার কাপড় মেলে তাস খেলছে। মাঝে মাঝে ওদের হুংকার শোনা যাচ্ছে, ইঞ্জিনের ঝকঝক শব্দ ভেদ করে— টু হার্টস! নো ট্রাম্প! থ্রি স্পেডস!

    যখন জাঙ্গিপাড়া গাড়ি এসে দাঁড়িয়েছে, তখন বেলা যায় যায়। জাঙ্গিপাড়া স্টেশনের সামনে বড়ো দিঘিটার ধারের তালগাছগুলোর গায়ে রাঙা রোদ।

    শেষ ডেলি প্যাসেঞ্জারটি জাঙ্গিপাড়ায় নেমে যাওয়াতে গাড়ি খালি হয়ে গেল। একেবারে খালি নয়, কারণ রইলাম কেবল আমি। কোণের বেঞ্চির দিকে চেয়ে দেখি সেই যুবক ও তার সঙ্গিনী মেয়েটিও রয়েছে।

    এতক্ষণ ডেলি প্যাসেঞ্জারদের গল্পগুজব শুনতে শুনতে আসছিলাম বেশ, এখন তারা সবাই নেমে গিয়েছে, আমি প্রায়ই একাই। এখন স্বভাবতই যুবক ও মেয়েটির প্রতি মনোযোগ আকৃষ্ট হল। মেয়েটি বিবাহিতা নয়। সে তো বেশ দেখেই বুঝতে পারা যাচ্ছে! তবে ওদের সম্বন্ধ কি ভাই-বোন? কিংবা মামা-ভাগনি? মেয়েটি বেশ সুন্দরী। ছোকরা মেয়েটিকে ভুলিয়ে নিয়ে পালাচ্ছে না তো? আশ্চর্য নয়। আজকালকার ছেলে-ছোকরাদের কাণ্ড তো?

    যাকগে, আমার সে-সব ভাবনার দরকার কী? নিজের কী হবে তার নেই ঠিক! সন্ধ্যা তো হয়ে এল। মাসিমাদের গ্রাম স্টেশন থেকে দুই-তিন মাইল, পথও সুগম নয়। ট্রেন আঁটপুর এসে দাঁড়াল, জাঙ্গিপাড়ার পরের স্টেশন। তারপর ছাড়ল। বড়ো বড়ো ফাঁকা রাঢ়দেশের মাঠে সন্ধ্যা নেমে আসছে, লাইনের ধারে ক্বচিৎ ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র চাষা-গাঁ; লাউলতা চালে উঠেছে। একটা ছোট্ট গ্রাম্য হাট ভেঙে লোকজন ধামা, চেঙারি মাথায় ফিরছে; আবার মাঠ, জামগাছের মাথায় কালো বাদুড় উড়ে এসে বসেছে, খালের ধারে মশাল জ্বেলে জেলেরা মাছ ধরবার চেষ্টা করছে।

    আবার সহযাত্রীদের দিকে চাইলাম।

    দু-জনে পাশাপাশি বসে আছে, কিন্তু দু-জনেই জানালার বাইরে চেয়ে রয়েছে। একটা কথাও শুনলাম না ওদের মধ্যে।

    ছেলেটা মেয়েটাকে নিয়ে পালাতে পালাতে দু-জনের মধ্যে ঝগড়া হয়েছে! বেশ সুন্দর চেহারা দু-জনেরই। না, মামা-ভাগনি বা ভাই-বোন নয়। নিয়ে পালানোই ঠিক। কিন্তু এদিকে কোথায় যাবে ওরা? মার্টিন কোম্পানির ছোটো লাইন তো আর দুটো স্টেশন গিয়ে রাঢ়দেশের অজ পাড়াগাঁ আর দিগন্তব্যাপী মাঠের মধ্যে শেষ হয়েছে! এ দু-টি শৌখিন পোশাক পরা তরুণ-তরুণীর পক্ষে সে-অঞ্চল নিতান্ত খাপছাড়া ও অনুপযোগী।

    যাকগে, আমার কেন ও-সব ভাবনা?

    পিয়াসাড়া স্টেশনের সিগন্যালের সবুজ আলো দেখা দিয়েছে। সামনে ভয়ানক অন্ধকার রাত্রি। নিতান্ত দুর্ভাবনায় পড়ে গেলাম। রাঢ়দেশের মাঠের উপর দিয়ে রাস্তা, সঙ্গে ব্যাগে কিছু টাকাকড়ি আছে, শুনেছি হুগলি জেলার এদিকে চুরি-ডাকাতি নাকি অত্যন্ত বেশি। মেসোমশায়ের চিকিৎসার জন্যে মাসিমা কিছু টাকার দরকার বলে লিখেছিলেন। মা-ই টাকাটা দিয়েছে। ধনে-প্রাণে না-মারা পড়ি শেষকালে!

    হঠাৎ আমার সহযাত্রী যুবকটি আমার দিকে চেয়ে বললে— চাঁপাডাঙা ইস্টিশন থেকে নদীটা কত দূরে বলতে পারেন স্যার?

    —নদী প্রায় আধ মাইল।

    —নৌকা পাওয়া যায় খেয়ার?

    —এখন নদীতে জল কম। নৌকোও বোধ হয় আছে।

    যুবকটি আর কোনো কথা না-বলে, আবার বাইরের দিকে চেয়ে রইল। আমার অত্যন্ত কৌতূহল হল, একবার জিজ্ঞেস করে দেখি না ওরা কোথায় যাবে। কিন্তু ওদের দিক থেকে কথাবার্তার ভরসা না-পেয়ে চুপ করে রইলাম।

    পিয়াসাড়া স্টেশনে এসে গাড়ি দাঁড়াল। বিশেষ কেউ নামল উঠল না, ছোটো স্টেশন। যুবকটি আমায় জিজ্ঞেস করলে— আচ্ছা, স্যার, ওপারে গাড়ি পাওয়া যায়?

    আমি ওর দিকে চেয়ে বললাম— কী গাড়ির কথা বলছেন?

    —এই যেকোনো গাড়ি— মোটর-বাস কী ঘোড়ার গাড়ি।

    লোকটা বলে কী! এই অজ পাড়াগাঁয়ে ওদের জন্যে মোটরের বন্দোবস্ত করে রাখবে কে বুঝতে পারলাম না। বললাম— না মশায়, যতদূর জানি ও-সব পাবেন না সেখানে। পাড়াগাঁ জায়গা, রাস্তাঘাট তো নেই।

    এবার ওদের গন্তব্যস্থান সম্বন্ধে আমার কৌতূহল অতিকষ্টে চেপে গেলাম।

    কিন্তু যুবকটি পরমুহূর্তেই আমার সে কৌতূহল মেটাবার পথ পরিষ্কার করে দিলে। জিজ্ঞেস করলে— ওখান থেকে তিরোল কতদূর হবে জানেন স্যার?

    অত্যন্ত আশ্চর্য হয়ে ওর মুখের দিকে চাইলুম।

    —তিরোল যাবেন নাকি? সে তো অনেক দূর বলেই শুনেছি। আমিও এদেশে প্রায় নতুন, ঠিক বলতে পারব না— তবে পাঁচ-ছ ক্রোশের কম নয়।

    যুবকের মুখে উদবেগ ও চিন্তার রেখা ফুটে উঠল। আমার দিকে একটু এগিয়ে বসে বললে— যদি কিছু মনে না করেন স্যার, একটা কথা বলব?

    তবে ইলোপমেন্টই হবে। যা আন্দাজ করেছিলাম। কিন্তু তিরোলে কেন? সেখানে তো লোকে যায় অন্য উদ্দেশ্যে।

    বললুম— হ্যাঁ, বলুন না— বলুন!

    যুবকটি মেয়েটির দিকে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে গলার সুর নামিয়ে বললে— ওকেই নিয়ে যাচ্ছি তিরোলে। পাগলা কালীর বালা আনতে ওরই জন্যে— আমার বোন, কাল অমাবস্যা আছে, কাল বালা পরা নিয়ম—

    বাধা দিয়ে বললাম— মেয়েটি কি—

    —চুপ করে আছে এখন প্রায় দু-মাস, কিন্তু যখন খেপে ওঠে তখন ভীষণ হয়ে ওঠে; সামলে রাখা কঠিন। এত রাত যে হবে বুঝতে পারিনি, সবাই বলেছিল স্টেশন থেকে বেশি দূর নয়—

    —আপনারা আসছেন কোত্থেকে?

    —অনেক দূর থেকে স্যার, ধানবাদের কাছে সয়ালডি কোলিয়ারি— এ দিকের খবর কিছুই জানিনে। লোক যেমন বলেছে তেমনি শুনেছি— কী করি এখন? ওই মেয়ে সঙ্গে, বিদেশ বিভুঁই জায়গা, বড়ো বিপদে পড়ে গেলাম যে!

    চুপ করে ব্যাপারটা বুঝবার চেষ্টা করলাম।

    ছোকরা বিপদে পড়ে গিয়েছে বেশ। ওর কথা শোনার পর থেকে মেয়েটির দিকে চেয়ে দেখছি, চমৎকার দেখতে মেয়েটি। ধপধপে ফর্সা রং, বড়ো বড়ো চোখ, ঠোঁটের দু-টি প্রান্ত উপর দিকে কেমন একটু বাঁকানো, তাতে মুখশ্রী আরও কী সুন্দর যে দেখাচ্ছে! অমন সুন্দরী মেয়ে নিয়ে এই বিদেশে রাত্রিকালে মাঠের মধ্যদিয়ে পাঁচ-ছ ক্রোশ রাস্তা গাড়ি ভাড়া করে গেলেও বিপদ কাটল বলে মনে করবার কারণ নেই।

    এক চাঁপাডাঙাতে কোথাও থাকা। কিন্তু পাড়াগাঁয়ে অপরিচিত লোকদের, বিশেষ করে যখন শুনবে যে মেয়েটি পাগল, তখন ওদের রাত্রে আশ্রয় দেবার মতো উদারতা খুব কম মানুষেরই হবে।

    যুবকটিকে বললাম— চাঁপাডাঙাতে কোনো লোকের বাড়ি আশ্রয় নেবেন রাত্রে, তার চেষ্টা দেখব?

    —না স্যার, ওকে অপরিচিত লোকের মধ্যে রাখতে পারব না, তা হলেই ওর মেজাজ খারাপ হয়ে উঠবে। আমি ছাড়া আর কারও কাছে খাবে না পর্যন্ত। যেকোনো তুচ্ছ ব্যাপারে ও ভীষণ খেপে উঠতে পারে— সে ভরসা করিনে স্যার। ওর সে-মূর্তি দেখলে আমি ওর দাদা, আমি পর্যন্ত দস্তুরমতো ভয় পাই, সে না দেখাই ভালো। ও অন্য মানুষ হয়ে যায় একেবারে—

    চাঁপাডাঙা স্টেশনে গাড়ি এসে দাঁড়াল।

    রাত্রির অন্ধকার এখনও ঘন হয়ে নামেনি, তবে কৃষ্ণাচতুর্দশীর রাত্রি। অনুমান করা যায়, কী ধরনের হবে আর একটু পরে।

    চাঁপাডাঙা স্টেশনের কাছে লোকের বাড়িঘর বেশি নেই। খান কতক বিচুলি-ছাওয়া ঘর, অধিকাংশ পান-বিড়ি, মুড়ি-মুড়কি কিংবা মুদিখানা দোকান। একটা সাইকেল সারানোর দোকান। একটা হোমিয়োপ্যাথিক ডাক্তারখানা। ডাক্তারখানার এক পাশে স্থানীয় ডাকঘর। একটা পুকুর, পুকুরের ওপারে দু-একখানা চাষাভুষো লোকের ঘর।

    আমরা টিকিট দিয়ে সবাই স্টেশনের বাইরে এলাম। সামনেই দু-তিনখানা ছইওয়ালা গোরুর গাড়ি দেখে আমার দুর্ভাবনা অনেকটা কমে গেল, কিন্তু যখন তাদের জিজ্ঞাসা করে জানলাম নদী ধার পর্যন্ত তারা যায়, নদীর পার হবার উপায় নেই গোরুর গাড়ির; তখন আমি আমার সঙ্গীটিকে বললুম— কী করবেন, নয়তো স্টেশনেই থাকবেন রাতে।

    —না স্যার, কাল অমাবস্যা, আমায় তিরোল পৌঁছতেই হবে কাল। এখানে থাকলে কাজ হবে না। আপনি আর একটু কষ্ট করুন, আমার সঙ্গে চলুন। আপনাকে যখন পেয়েছি, ছাড়তে পারব না। আপনি না দেখলে কোথায় যাই বলুন!

    আমি বড়ো বিপদে পড়ে গেলাম।

    ওদিকে মেসোমশায়ের অসুখ, সেখানে পয়সাকড়ি নিয়ে যত শীগগির হয় পৌঁছনো দরকার। এদিকে এই বিপন্ন যুবক ও তার বিকৃতমস্তিষ্কা তরুণী ভগিনি। ছেড়েই বা এদের দিই কী করে এই অন্ধকার রাত্রে? তা হয় না। সঙ্গে যেতেই হবে, মেসোমশায়ের অদৃষ্টে যা-ই ঘটুক।

    গোরুর গাড়ির গাড়োয়ানেরা কিন্তু ভরসা দিল। তিরোলের বাঁধা-রাস্তা, নদী পেরিয়ে গাড়ি পাওয়া যায়, পালকি পাওয়া যায় একটু খোঁজ করলেই, হরদম লোক যাচ্ছে সেখানে, ভয়ভীতি কিছু নেই; নদীর খেয়া থেকে বড়ো জোর দু-ঘণ্টার রাস্তা।

    নদীর ধার পর্যন্ত একখানা ছইওয়ালা গোরুর গাড়িতে আমরা তিনজন এলাম। সারা ট্রেনে মেয়েটি কথা বলেনি, অন্তত আমি শুনিনি। ছইয়ের মধ্যে বসে সে প্রথম কথা কইল। যুবকটির দিকে চেয়ে বললে— দাদা, আমার শীত করছে, তোমার শীত করছে না?

    সুন্দর গলার স্বর— যেন সেতারে ঝংকার দিয়ে উঠল। আমি সহানুভূতির চোখে তরুণীর দিকে চাইলাম। আহা, এমন সুন্দরী মেয়েটি কী অদৃষ্ট নিয়েই জন্মেছে!

    বললাম— শীত করতে পারে, নদীর হাওয়া বইছে— সঙ্গে কিছু আছে গায়ে দেবার?

    যুবকটি বললে— না, গায়ে দেবার কিছু ধরুন এ-বোশেখ মাসে তো আনিনি, বিছানায় চাদরখানা পেতে গাড়িতে বসেছিলাম— ওখানা গায়ে দে—

    মেয়েটি আবার বললে— কী নদী দাদা?

    বেশ স্বাভাবিক সুরে সহজ ধরনের কথাবার্তা।

    আমিই বললাম— দামোদর।

    মেয়েটি এবার আমার দিকে মুখ ফিরিয়ে বললে— বল্লভপুরে যে দামোদর? আমি জানি খুব বড়ো নদী— না দাদা? ছেলেবেলায় দেখেছি—

    যুবকটি আমায় বললে— দামোদরের ধারে বল্লভপুর বলে গ্রাম, বর্ধমান জেলায়; সেখানে আমার মামার বাড়ি কিনা? পূর্ণিমা— মানে আমার এই বোন সেখানে দু-বার গিয়েছিল ছেলেবেলায়, তারপর—

    খেয়ায় নদী পার হবার সময় পূর্ণিমা ওর দাদাকে বললে— ভয় করছে দাদা— ডুবে যাবে না তো? ও দাদা— নৌকো দুলছে যে—

    —ডুবে যাবি কেন? চুপ করে বসে থাক— দুলছে তাই কী?

    ওপারে গিয়ে আমরা দেখি গাড়িঘোড়া তো দূরে কথা, একটা মানুষ পর্যন্ত নেই। খেয়ার মাঝি লোকটা ভালো, সে আমাদের অবস্থা দেখে বললে— দাঁড়ান বাবুমশাইরা, শামকুড়ের গোয়ালপাড়ায় গোরুর গাড়ি পাওয়া যায়, আমি ডেকে দিচ্ছি— আপনারা নৌকোতেই বসুন।

    পূর্ণিমা বললে— দাদা, কিছু খাবে না? খাবার রয়েছে তো—

    পরে আমার দিকে চেয়ে বললে— আপনিও খান, খাবার অনেক আছে—

    ওর দাদা বললে— হ্যাঁ, হ্যাঁ, দে না, ওঁকে দে— তুইও খা— কিছু তো খাসনি— পৌঁছতে কত রাত হয়ে যাবে।

    পূর্ণিমা একটা ছোট্ট পুঁটুলি খুলে আমাদের সবাইকে লুচি, পটলভাজা, আলুচচ্চড়ি ও মিহিদানা পরিবেশন করে দিলে।

    বললে— দেখ তো দাদা, মিহিদানা খারাপ হয়ে যায়নি তো?

    আমি বললাম— এ কোথাকার মিহিদানা?

    পূর্ণিমা বললে— বর্ধমান থেকে কেনা, আসবার সময়ে? খারাপ হয়নি? দেখুন তো মুখে দিয়ে—

    আজ যখন বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলাম, তখন ভাবিনি এমন একটি সন্ধ্যার কথা। ভাবিনি যে দামোদর নদীর উপর নৌকোতে বসে একটি অপরিচিত যুবক ও একটি অপরিচিতা তরুণীর সঙ্গে খাবার খাবো এভাবে। কেমন একটি শান্ত পরিবেশ, যেন বাড়িতে মা-বোনের মধ্যেই আছি; বড়ো ভালো লাগছিল।

    কিন্তু পরবর্তী মর্মন্তুদ অভিজ্ঞতার পটভূমিতে ফেলে আজ যখন আবার সেই সন্ধ্যাটির কথা ও আমার সেই তরুণ সঙ্গীদের কথা এখন ভাবি; তখন মনে হয়, সেদিন তাদের সঙ্গে না-দেখা হওয়াই উচিত ছিল। একটা দুঃখজনক করুণ স্মৃতির হাত থেকে বাঁচা যেত তাহলে।

    আমাদের খাওয়া শেষ হয়ে গিয়েছে, এমন সময় গোরুর গাড়ি নিয়ে খেয়ার মাঝি ঘাটের ধারে দামোদরের বিস্তৃত বালির চরে এসে হাজির হল। তিরোল যাবার ভাড়া ধার্য করে আমরা গাড়িতে উঠে পড়লাম, খেয়ার মাঝিকে তার পরিশ্রমের জন্যে কিছু বকশিশ দেওয়াও বাদ গেল না।

    গাড়োয়ান বললে— বাবু, ভুল হয়ে গিয়েছে, বাড়ি থেকে তামাকের টিনটা নেওয়া হয়নি; গাড়ি গাঁয়ের মধ্যে দিয়ে একটু ঘুরিয়ে নিয়ে যাই— বেশি দেরি হবে না বাবু—

    শামকুড় গ্রামের মধ্যে গাড়ি ঢুকল। আমবাগান, বাঁশবন, লোকের বাড়ি-ঘরের পেছন দিয়ে রাস্তা, ঘরের দাওয়ায় মেয়েরা রান্না করছে, তারপর আবার মাঠ, আখের খেত, পাটখেত, মাঠের মধ্যে দিয়ে চওড়া সাদা রাস্তা আমাদের সামনে বহুদূর চলে গিয়েছে। রাঢ়দেশের মাঠ, বনজঙ্গল খুব কম, এখানে-ওখানে মাঝে মাঝে দু-চারটে কলাগাছ ছাড়া।

    পূর্ণিমা আমায় বললে, আপনার মাসিমার বাড়ি এখান থেকে কত দূর হবে?

    —সে তো এদিকে নয়— দামোদরের ওপারে। স্টেশনের পূর্বদিকে প্রায় দু-ক্রোশ দূরে—

    —আপনাকে আমরা কষ্ট দিলাম তো!

    —কী আর কষ্ট? আপনার কাজ শেষ হয়ে গেলে কাল আপনাদের গাড়িতে তুলে দিয়ে মাসিমার বাড়ি গেলেই হবে—

    পূর্ণিমা মুখে আঁচল দিয়ে ছেলেমানুষি হাসির ফোয়ারা ছুটিলে দিলে হঠাৎ। বললে— কী আর কষ্ট? না? আমাদের কাজ শেষ হলে আমাদের গাড়িতে তুলে দিয়ে— হি হি হি—

    ওর হাসির অদ্ভুত ধরনের উচ্ছাস ও সৌন্দর্য আমাকে বড়ো মুগ্ধ করলে। এমন হাসি কোনো দিন আমি হাসতে দেখিনি। কিন্তু সঙ্গেসঙ্গে মনে হল এ অপ্রকৃতিস্থের হাসি। স্থিরমস্তিষ্ক মেয়ে হলে এ ধরনের হাসত না, অন্তত এ-জায়গায় ও এ-অবস্থায়।

    হঠাৎ ওর দাদা অন্ধকারের মধ্যে আমার গা টিপলে।

    ব্যাপার কী? আমার ভয় হল। মেয়েটি ভালো অবস্থায় আছে তো? আমি কোনো কথা না-বলে চুপ করে রইলাম। কী জানি মেয়েটির কেমন মেজাজ, কোন কথা তার মনে কীভাবে সাড়া জাগাবে যখন জানি না, তখন একদম কথা না-বলাই নিরাপদ।

    মনে মনে ভাবলাম, এমন সুন্দর মেয়ে কী খারাপ অদৃষ্ট নিয়েই এসেছিল পৃথিবীতে যে, তার অমন সুন্দর প্রাণভরা হাসি, তাতে মনে আনন্দ না-এনে আনে ভয়?

    গাড়িতে কিছুক্ষণ কেউ কথা বললে না, সবাই চুপচাপ। মাঠ ভেঙে গোরুর গাড়ি আপন মনে চলছে। বোধ হয় আমার একটু তন্দ্রাবেশ হয়ে থাকবে, হঠাৎ কেন যেন ঘুম ভেঙে গেল। গাড়ির ছইয়ের মধ্যে অন্ধকার, আমার মনে হল সেই অন্ধকারের মধ্যে তরুণী এবং তার দাদার মধ্যে যেন একটা হাতাহাতি ব্যাপার চলছে।

    তরুণীর মুখের কষ্টকর ‘আঃ’ শব্দ আমার কানে যেতেই আমি পেছন ফিরে চাইলাম ওদের দিকে, কারণ আমি বসেছি ছইয়ের সামনে, আর ওরা বসেছে গাড়ির পেছন দিকটায়, সেদিকে বেশি অন্ধকার, কারণ ছইয়ের ও-দিকটা চাঁচের পর্দা আঁটা।

    আমি কোনো কথা বলবার পূর্বেই যুবকটি চাপা উদবেগের সুরে বললে— ধরুন, ওকে ধরুন, ও গাড়ি থেকে নেমে পড়তে চাইছে—

    চাপা সুরে বলবার কারণ বোধ হয় গাড়ির গাড়োয়ানের কানে কথাটা না-যায়।

    আমি হতভম্ব হয়ে মেয়েটির গায়ে কী করে হাত দেব ভাবছি, এমন সময় যুবকটি বেদনার্ত কণ্ঠে ‘উহু-হু-হু’ বলে উঠল। পরক্ষণেই বললে— কামড়ে দিয়েছে হাত— ধরবেন না, ধরবেন না—

    ততক্ষণ গাড়োয়ান গাড়ি থামিয়ে ফেলেছে। আমাদের দিকে চেয়ে বললে— কী বাবু? কী হয়েছে?

    গাড়োয়ানের কথার উত্তর দেবার সময় বা সুযোগ তখন আমার নেই। কারণ, মেয়েটি আমায় ঠেলে বাইরের দিকে আসতে চাইছে অন্ধকারের মধ্যে।

    ওর দাদা বললে— ওর চুল ধরুন, গায়ে হাত দেবেন না, কামড়ে দেবে—

    কিন্তু আমি কোনো কিছু বাধা দেবার পূর্বেই মেয়েটি আমাকে ঠেলে গোরুর গাড়ির সামনের দিকে গিয়ে পৌঁছল এবং গাড়ি থেকে লাফ দিয়ে পড়ল।

    হতভম্ব গাড়োয়ান গোরুর কাঁধ থেকে জোয়াল নামাবার পূর্বেই আমি ও মেয়েটির দাদা দু-জনেই গাড়ি থেকে লাফিয়ে পড়লাম।

    মাঠের মধ্যে অন্ধকার তত নিবিড় নয়, কিন্তু মেয়েটির কোনো পাত্তা কোনো দিকে দেখা গেল না।

    আমার বুদ্ধিসুদ্ধি লোপ পেয়েছে এবং বোধ হয় মেয়েটির দাদাও—

    এইসময়ে কিন্তু আমাদের গাড়োয়ান যথেষ্ট সাহস ও উপস্থিত বুদ্ধির পরিচয় দিলে। সে ততক্ষণে ব্যাপারটা আন্দাজ করতে পেরেছে। তিরোল যারা যায়, তাদের মধ্যে কেউ-না-কেউ যে অপ্রকৃতিস্থ থাকবেই, এ তথ্য তাদের অজানা নয়, তবে আমাদের তিনজনের মধ্যে কে সেই লোক, এটাই বোধ হয় এতক্ষণে ঠাওর করতে পারেনি।

    গাড়োয়ান তাড়াতাড়ি বললে— বাবু শীগগির চলুন, কাছেই পাঁতিহালের খাল, সেদিকে উনি না যান, টিপকলের আলোটা জ্বালুন—

    এমন হতভম্ব হয়ে গিয়েছি আমরা, যে যুবকের পকেটে টর্চ রয়েছে, সে-কথা দু-জনের কারও মনে নেই।

    সবাই ছুটলাম গাড়োয়ানের পিছু পিছু। প্রায় দু-রসি আন্দাজ পথ ছুটে যাবার পরে একটা সরু খালের ধারে পৌঁছলাম, তার দু-পাড়ে নিবিড় কষার ঝাড়। তন্ন তন্ন করে ঝোপঝাড়ের আড়ালে খুঁজে, চিৎকার করে ডাকাডাকি করেও কোনো সাড়া পাওয়া গেল না।

    সব ব্যাপারটা এত অল্প সময়ের মধ্যে ঘটে গেল যে— এতক্ষণে ভেবে দেখবারও অবকাশ পাওয়া যায়নি জিনিসটার গুরুত্ব কতটা বা এ-থেকে কত কী ঘটতে পারে।

    পূর্ণিমার দাদা প্রায় কাঁদো কাঁদো সুরে বললে— আর কোনো দিকে কোনো জলা আছে— হ্যাঁ গাড়োয়ান?

    না, বাবু, কাছেপিঠে আর জলা নেই; তবে খালের ধারে আপনাদের মধ্যে একজন দাঁড়িয়ে থাকুন আমরা বাকি দু-জন অন্য দিকে যাই—

    আমিই খালের ধারে রইলাম, কারণ যুবকটি একলা অন্ধকারে, যতদূর বুঝলাম, দাঁড়িয়ে থাকতে রাজি নয়।

    ওরা তো চলে গেল অন্য দিকে। আমার মুশকিল এই যে সঙ্গে একটা দেশলাই পর্যন্ত নেই। এই কৃষ্ণাচতুর্দশীর রাত্রের অন্ধকারে একা মাঠের মধ্যে কতক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতে হয় কী জানি?

    সেখানে কতক্ষণ ছিলাম জানি না, ঘণ্টা খানেক বোধ হয় হবে, তার বেশি হয়তো। তারপর খালের ধার ছেড়ে মাঠের দিকে এগিয়ে গেলাম। এদের ব্যাপারটা কী বুঝতে পারছিনে।

    এমন সময় দূরে আলো দেখা গেল। গোরুর গাড়ির গাড়োয়ানের গলাটা শুনলাম— বাবু, বাবু—

    আমার সাড়া পেয়ে ওরা আমার কাছে এল। গাড়োয়ানের সঙ্গে কয়েকটি গ্রাম্য লোক— ওদের হাতে একটা হারিকেন লণ্ঠন।

    ব্যস্তভাবে বললাম— কী হল? পাওয়া গিয়েছে?

    যার হাতে লণ্ঠন ছিল, সে-লোকটা বললে চলেন বাবু। সব রয়েছেন তেনারা আমার বাড়িতে বসে। আমি বাবু গোয়ালঘরে গোরুদের জাব কেটে দিতে ঢুকেছি সন্দের একটু পরেই— দেখি গোয়ালঘরের একপাশে একটি পরমাসুন্দরী ইস্ত্রীলোক। তখন আমি তো চমকে উঠেছি বাবু, ইকী! তারপর বাড়ির লোক এসে পড়ল। তারপর এনারা গিয়ে পড়লেন। তাঁদের আমরা বাড়িতে বসিয়ে আপনার খোঁজে বেরুলাম। অন্ধকারের মধ্যে ভদ্দরলোকের ছেলের এ-কী কষ্ট! চলুন গরিবের বাড়ি। দুটো ডাল-ভাত রান্না করে খান। দিদিঠাকুরনের মাথাটা ভালো যদি হত একটু তো দিদিঠাকুরন একেবারে লক্ষ্মীর পিরতিম। আমাদের বাড়িতে তাঁর পায়ের ধুলো পড়েছে, আপনারা সবাই ব্রাহ্মণ শোনলাম— কতকালের ভাগ্যি আমাদের। দুটো ভাত সেবা করে আজ রাতে শুয়ে থাকুন, কাল ভোরে আমি আমার গাড়িতে তিরোল পৌঁছে দেবো আপনাদের। অমন হয়।

    গ্রামের মধ্যে লোকটার বাড়ি গিয়ে পৌঁছলাম।

    বাড়িটার কথা এখানে একটু ভালো করে বর্ণনা করা দরকার। কারণ, এর পরবর্তী ঘটনার সঙ্গে এই বাড়ির অতিঘনিষ্ঠ সম্বন্ধ। এক-একবার ভাবি সে-রাত্রে যদি সেখানে থাকবার প্রস্তাবে রাজি না-হয়ে ওদের নিয়ে সোজাসুজি তিরোল চলে যেতুম!

    আসলে নিয়তি। নিয়তি যাকে যেখানে টানে। তিরোল গেলেই কি নিয়তির হাত থেকে উদ্ধার পাওয়া যেত? ভুল।

    বাড়িটা ওদেশের চলন মতো মাটির দেওয়াল, বিচুলিতে ছাওয়া। বাইরে বেশ বড়ো একখানা বৈঠকখানা— তার দুই কামরা, মাটির দেওয়ালের ব্যবধান। সামনে খুব বড়ো মাটির দাওয়া, তার সামনে উঠান— উঠানের পশ্চিম ধারে ছোটো একটা ঘাট-বাঁধানো পুকুর। বৈঠকখানার দুটো কামরার মধ্যে যেটা ছোটো, সেটার পেছনের দোর খুলে কিন্তু বাইরের উঠানে আসা যায় না— সেটি অন্তঃপুরে যাতায়াতের পথ।

    গৃহস্বামীর নাম রসিকলাল ধারা, জাতিতে কৈবর্ত। সুতরাং তাদের রাঁধা ভাত আমাদের চলবে না। রসিকলালের একান্ত অনুরোধে আমরা রান্না করতে রাজি হলাম। জিনিসপত্র, দুধ, শাকসবজি ছ-জনের উপযোগী এসে পড়ল। আশ্চর্যের বিষয় এই যে, রান্না করলে পূর্ণিমা। পূর্ণিমা আবার সেই আগেকার শান্ত, স্বাভাবিক মূর্তি ধরেছে। তার কথাবার্তা, রান্নার কৌশল, সহজ ব্যবহার দেখে কেউ বলতেও পারবে না, কিছুক্ষণ আগে এ-গাড়ি থেকে লাফ দিয়ে পালিয়েছিল।

    খেতে বসবার কিছু আগে পূর্ণিমা যেখানে রাঁধছে, সেখানে উঁকি মেরে দেখি গ্রামের অনেক মেয়ে ওকে দেখতে এসেছে, নানারকম কথাবার্তা জিজ্ঞেস করছে— বুঝলাম পূর্ণিমার কাহিনি গ্রামময় রটে গিয়েছে।

    রাত এগারোটা প্রায় বাজে, পূর্ণিমা এসে আমাদের ডেকে নিয়ে গেল খেতে।

    আমি বললাম— সকলের সঙ্গে আলাপ হল, পূর্ণিমা?

    পূর্ণিমা সলজ্জে হেসে বললে— ওরা সব এসেছে কেন জানেন, আমায় না কি সবাই দেখতে এসেছে। আমি বললাম, আমি ভাই আপনাদের মতোই মেয়ে, দু-খানা হাত, দু-খানা পা, আমায় দেখবার কী আছে?

    ওর দাদা বললে— আর কী কথা হল?

    —আর কিছু না। আমাদের বাড়ি কোথায়, আমার বয়স কত— এই জিজ্ঞেস করছিল।

    তারপর বেশ দিব্যি সহজভাবেই বললে— আর বলছিল তোমার বিয়ে হয়নি? আমি বললাম, এ-বছর আমার বিয়ে দেবেন বলেছেন বাবা!

    বলেই সে আমাদের পাতে ডাল না কী পরিবেশন করতে আরম্ভ করলে।

    আমি তো অবাক, ওর দাদার দিকে চাইতে সে বেচারি আমায় চোখ টিপলে। পাগল হোক, উন্মাদ হোক, মেয়েদের স্বাভাবিক প্রবৃত্তি যাবে কোথায়? বড়ো কষ্ট হল ভেবে, অভাগির ও-সাধ এ-জীবনে পূর্ণ হবার নয়।

    কিন্তু এ-ধরনের দু-একটা বেফাঁস কথা ছাড়া পূর্ণিমার অন্য সব কথাবার্তা এমন স্বাভাবিক যে, কেউ তার মধ্যে এতটুকু খুঁত ধরতে পারবে না। ওর গলার সুরটা ভারি মিষ্টি। খুব কম মেয়ের গলায় এমন মিষ্টি সুর শুনেছি। এমন একটি সুন্দর চালচলন, নিজের দেহটা বহন করে নিয়ে বেড়ানোর সুশ্রী ধরন আছে যে, ওকে নিতান্ত সাধারণ শ্রেণির মেয়ে বলে কেউ ভাবতে পারবে না।

    আমায় বললে— আপনাকে আমরা তো বড়ো কষ্ট দিলুম। আমাদের সয়লাডিতে যাবেন কিন্তু একবার দাদা—

    —বেশ, যাব বইকী দিদি, নিশ্চয়ই যাব—

    —এই পূজার সময়েই যাবেন। আমাদের ওখানে দু-খানা পুজো হয়, একখানা কোলিয়ারির বাবুরা করে, আর একখানা বাজারে হয়। শখের থিয়েটার হয়—

    ওর দাদা এইসময় বললে— আর একটা জিনিস দেখবেন— সাঁওতালের নাচ; সে-একটা দেখবার জিনিস, আসুন পুজার সময়— ভারি খুশি হব আমরা আপনি এলে।

    পূর্ণিমা উৎসাহের সঙ্গে বললে— তাহলে কথা রইল কিন্তু দাদা। বোনের নেমন্তন্ন রাখতেই হবে আপনার।

    এইসময় গৃহস্বামীর মেয়ে দুধ নিয়ে এসে পূর্ণিমাকে বললে, আমাদের সকলকে দুধ দিতে।

    পূর্ণিমা বললে— তাহলে একখানা দুধের হাতা নিয়ে এসো খুকি, ডালের হাতায় তো দুধ দেওয়া যাবে না।

    পূর্ণিমার এই সমস্ত কথাবার্তার খুঁটিনাটি আমার খুব মনে আছে, কারণ পরে এই কথাগুলি মনে মনে আলোচনা করবার যথেষ্ট কারণ ঘটেছিল।

    আহারাদির প্রায় আধঘণ্টা পর আমরা সবাই শুয়ে পড়লুম। পূর্ণিমা তার দাদার সঙ্গে বাইরের ঘরের ছোটো কামরাটায় এবং আমি বড়ো কামরাটায়।

    এবার আমি নিজের কথা বলি। শরীর ও মন বড়ো ক্লান্ত ছিল, অল্পক্ষণের মধ্যে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম; কিন্তু কতক্ষণ পরে জানিনে এবং কেন তাও জানিনে হঠাৎ আমার ঘুম ভেঙে গেল। আমার বুকে যেন পাথরের ভারী বোঝা চাপিয়েছে, নিশ্বাস-প্রশ্বাস নিতে যেন কষ্ট হচ্ছে। ভাবলুম, নিশ্চয়ই নদীর হাওয়ায় ঠান্ডা লেগে গিয়েছে কিংবা ওই রকম কিছু। অমন হয়। আবার ঘুমোবার চেষ্টা করি। এমন সময় আমার মনে হল, পাশের কামরায় কীরকম একটা কৌতূহলজনক শব্দ হচ্ছে। হয়তো পূর্ণিমার দাদার নাক ডাকার শব্দ। অদ্ভুত রকমের নাক ডাকা বটে— যেন গোঙানি বা কাতরানির শব্দের মতো। একটু পরেই আর শব্দ শুনতে পেলুম না, আমিও পাশ ফিরে ঘুমিয়ে পড়লাম।

    আমার ঘুম ভাঙল খুব ভোরে।

    পাশের কামরার দোর তখনও বন্ধ। আমি উঠে হাতমুখ ধুয়ে মাঠের দিকে বেড়াতে গেলুম। আধ ঘণ্টা বেড়ানোর পরে ফিরে এসে দেখি তখনও ওরা কেউ ওঠেনি— এমনকী বাড়ির লোকও না! আরও আধঘণ্টা পরে গৃহস্বামী রসিক ধাড়া উঠে বাইরের ঘরের দাওয়ায় এসে বসল। আমায় বললে— ঘুমুলেন কেমন বাবু? মশা কামড়ায়নি? এঁরা এখনও ঘুমুচ্ছেন বুঝি?

    রসিকের সঙ্গে কিছুক্ষণ চাষবাসের গল্প করলাম। তারপরে সে উঠে কোথাও বেরিয়ে গেল।

    এদিকে প্রায় আটটা বাজল! তখনও পূর্ণিমা বা তার দাদার ঘুম ভাঙেনি। সাড়ে-আটটার সময় রসিক ফিরে এল। গ্রীষ্মকাল, সাড়ে আটটা দস্তুরমতো বেলা, খুব রোদ উঠে গিয়েছে চারিধারে। রসিক আবার জিজ্ঞেস করলে— এঁরা এখনও ওঠেননি? আমি বললাম— কই না, ওঠেনি তো। গরমে সারারাত ঘুম হয়নি বোধ হয়, ভোরের দিকে ঘুমিয়েছে আর কী।

    আমার কাহিনি শেষ হয়ে এসেছে। বেলা ন-টার সময়ও যখন ওদের সাড়াশব্দ শোনা গেল না, তখন আমি দরজায় ঘা দিলাম। ঘরের মধ্যে মানুষ আছে বলেই মনে হল না। তখন বাধ্য হয়ে আমি পশ্চিম দিকের ছোটো জানলাটা দিয়ে উঁকি মেরে দেখতে গেলাম— ঘরের মধ্যে একটি মেয়ে নিদ্রিতা, এ-অবস্থায় জানালা দিয়ে চেয়ে দেখতে দ্বিধাবোধ করছিলাম, কিন্তু একবার দেখাটা দরকার। ব্যাপার কী ওদের?

    জানালা দিয়ে যা দেখলাম তাতে আমি চিৎকার করে উঠেছিলাম বোধ হয়, ঠিক বলতে পারিনে। কারণ আমারও কিছুক্ষণের জন্যে বুদ্ধি লোপ পেয়েছিল, কী যে ঘটেছে, কী না-ঘটেছে আমার খেয়াল ছিল না।

    জানালা দিয়ে যা দেখলুম তা এই—

    প্রথমেই আমার চোখে পড়ল ঘরে এত রক্ত কেন? চোখে ভুল দেখলাম না কি? কিন্তু পরমুহূর্তেই আর সন্দেহের অবকাশ রইল না। ঘরে একখানা চৌকি পাতা, পূর্ণিমার দাদা চৌকির উপরকার বিছানায় উপুড় হয়ে কেমন এক অস্বাভাবিক ভঙ্গিতে শুয়ে, বিছানা রক্তে ভাসছে, মেজেতে রক্ত গড়িয়ে পড়ে মেজে ভাসছে— আর পূর্ণিমা দেওয়ালের ধারে মেজের ওপর পড়ে আছে, জীবিতা কী মৃতা বুঝতে পারলাম না। একটা পাশবালিশ চৌকির ওপর থেকে যেন ছিটকে পূর্ণিমার দেহের কাছে পড়ে, সেটাও রক্তমাখা।

    আমার চিৎকার অনেক দূর থেকে শোনা গিয়েছিল না কি। লোকজন চারিধারে থেকে এসে পড়ল। আমার জ্ঞান ছিল না, মাথায় জলটল দিয়ে আমায় সকলে চাঙ্গা করে দশ-পনেরো মিনিট পরে।

    এদিকে দরজা ভেঙে সকলে ঘরে ঢুকল। তারা দেখলে পূর্ণিমার দাদার গলায়, কাঁধে ও হাতে সাংঘাতিক কোপের দাগ। আগের রাত্রে কুটনো কোটার জন্যে একখানা বড়ো বঁটি গৃহস্থেরা দিয়েছিল— সে-খানা রক্তমাখা অবস্থায় বিছানার ওপাশে পড়ে, পূর্ণিমার শাড়ি ব্লাউজে কিন্তু খুব বেশি রক্ত নেই, কেবল শাড়ির সামনের দিকটাতে যেন ছিটকে-লাগা রক্ত খানিকটা। হতভাগিনী রাত্রে কোনো এক সময় এই বীভৎস কাণ্ড ঘটিয়েছে। নিজের হাতে ভাইকে খুন করে ঘরের মেঝেতে অঘোরে নিদ্রায় অভিভূতা। দিব্যি শান্ত, নিশ্চিন্তভাবে ঘুমুচ্ছে, আমার যখন জ্ঞান হয়ে ঘরে ঢুকেছি তখনও। ঘুমন্ত অবস্থায় ওকে দেখাচ্ছে কী সুন্দর, আরও ছেলেমানুষ, নিষ্পাপ সরলা বালিকার মতো।

    নারীর প্রলয়ংকরী ধ্বংসমূর্তি সেই ভয়ানক প্রভাতে এক মুহূর্তে আমার চোখের সামনে যেন ফুটে উঠল— পলকে যে প্রলয় ঘটায়, এক হাতে দেয় প্রেম, অন্য হাতে আনে মৃত্যু, এক হাতে তার খড়গ, অন্য হাতে বরাভয়।

    .

    অতঃপর যা ঘটবার তাই ঘটল। পাড়ার লোক, গ্রামের লোক ভেঙে পড়ল। পুলিশ এল— আমি মেয়েটির অবস্থা সম্বন্ধে যা জানি খুলে বললাম। তাদের জেরার প্রশ্নোত্তর দিতে দিতে আমার মনে হল, হয়তো-বা আমিই পূর্ণিমার দাদাকে খুন করে থাকব। ঘুমন্ত মেয়েটির পাশ থেকে ওর দাদার মৃতদেহ সরানোর ব্যবস্থা আমিই করে দিলাম— মৃতের সকল চিহ্ন, রক্তাক্ত বস্ত্র, বঁটি, বিছানা। উন্মত্ততায় ঘুম সহজে ভাঙেনি তাই রক্ষে; দুপুর পর্যন্ত পূর্ণিমা নিরুদবেগে ঘুমুল। পুলিশকেও কষ্ট করে ওর ঘুম ভাঙাতে হল।

    আমি ওর পাশে দাঁড়ালুম এই ঘোর অন্ধকার রাত্রে। অসহায় উন্মাদিনীর আর কে ছিল সেখানে? যদিও ওর অবস্থা দেখে চোখের জল ফেলেনি এমন লোক সে-অঞ্চলে ছিল না, কী মেয়ে কী পুরুষ— এমনকী থানার মুসলমান দারোগাবাবু পর্যন্ত।

    .

    সয়লাডি কোলিয়ারিতে টেলিগ্রাম করা হল! ওর বাবা এলেন, তাঁর সঙ্গে এলেন তাঁর তিনটি বন্ধু। ওঁদের মুখে প্রথম শুনলুম— পূর্ণিমা বিবাহিতা। পাগল বলে স্বামী নেয় না। সে কখনো জানে সে বিবাহিতা, কখনো আবার ভুলে যায়। পূর্ণিমার মা নেই— তাও এই প্রথম শুনলাম।

    ভদ্রবংশের ব্যাপার, এ নিয়ে খুব গোলমাল যাতে না-হয়, শুরু থেকেই তার ব্যবস্থা করা হল। খবরের কাগজে ঘটনাটি উঠেছিল; কিন্তু একটু অন্যভাবে। কয়েকটি প্রভাবশালী লোকের সহানুভূতি লাভ করার দরুন ব্যাপারের জটিলতার হাত থেকে আমরা অপেক্ষাকৃত সহজে রেহাই পেলাম।

    পূর্ণিমাকে রাঁচি উন্মাদ আশ্রমে দেওয়ার ব্যবস্থা হল। ওর বাবাও দেখলুম ওকে আর বাড়ি নিয়ে যেতে রাজি নয়। শ্রীরামপুর কোর্টের প্রাঙ্গণ থেকে ওকে মোটরে সোজা আনা হল হাওড়া। হাওড়া থেকে রাঁচি এক্সপ্রেসে যখন ওঠানো হচ্ছে, তখন একগাল হেসে ও আমার দিকে চেয়ে বলল— আমাদের সয়লাডিতে আসবেন কিন্তু একদিন? মনে থাকবে তো?

    ওর বাবাকে বললে— দাদা কোথায় বাবা? দাদাকে দেখছিনে। দাদার কাছে কানের দুল দুটো খোলা রয়েছে, কান বড্ড ন্যাড়া-ন্যাড়া দেখাচ্ছে—

    .

    এ-সব কয়েক বছর আগের কথা। অনেকেই বুঝতে পারবেন আমি কোন ঘটনার কথা বলছি। মানুষ চলে যায়, স্মৃতি থাকে। জীবনের উপর কত চিতার ছাই ছড়ানো, সেই ছাইয়ের সূক্ষ্ম স্তরে বহু প্রিয় পরিচিত জনের পদচিহ্ন আঁকা।

    এই শ্যামলা পৃথিবী, রৌদ্রালোক, পরিবর্তনশীল ঋতুচক্রের আনন্দ থেকে নির্বাসিতা সে হতভাগিনীর কথা মাঝে মাঝে যখন মনে পড়ে তখন ভাবি সে নেই, এত দিনে রাঁচির উন্মাদ আশ্রমে অভিশপ্ত জীবনের অবসান হয়ে গেছে— ভগবান আর ওঁকে কতকাল কষ্ট দেবেন?

    বলা বাহুল্য, এই কাহিনির মধ্যে আমি সব কাল্পনিক নাম-ধাম ব্যবহার করেছি, কারণ সহজেই অনুমেয়।

    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleতারানাথ তান্ত্রিকের দ্বিতীয় গল্প
    Next Article নুটি মন্তর

    Related Articles

    ছোটগল্প বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়

    কাদা kada

    August 11, 2025
    ছোটগল্প বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়

    অসাধারণ | Ashadharon

    April 3, 2025
    ধীরেন্দ্রলাল ধর ভৌতিক গল্প

    তান্ত্রিক

    March 13, 2025
    উপন্যাস বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়

    আরণ্যক – বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়

    February 27, 2025
    উপন্যাস বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়

    চাঁদের পাহাড় – বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়

    February 27, 2025
    উপন্যাস বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়

    পথের পাঁচালী – বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়

    February 27, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Generic selectors
    Exact matches only
    Search in title
    Search in content
    Post Type Selectors
    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Our Picks

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }