Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • English Books
      • Jules Verne
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    তুমি আমায় ডেকেছিলে ছুটির নিমন্ত্রণে – হুমায়ূন আহমেদ

    হুমায়ূন আহমেদ এক পাতা গল্প90 Mins Read0
    ⤶ ⤷

    তুমি আমায় ডেকেছিলে ছুটির নিমন্ত্রণে – ৩

    ৩

    নবনীর ঘরটা ছেড়ে দেয়া হয়েছে শাহেদের জন্যে। ডাকবাংলোয় আরেকটা সুন্দর কামরা ছিল, অনেক বড়, এটাচড্ বাথ। কিন্তু সেই কামরায় জানালার একটা কাচ ভাঙা। ভাঙা জানালায় শীতের হাওয়া ঢুকছে। শাহেদকে এখানে থাকতে দেয়া যায় না। তা ছাড়া তার জ্বর আসছে বলে মনে হচ্ছে। অবেলায় কুয়ার পানিতে গোসলের ফল ফলতে শুরু করেছে। গা ম্যাজম্যাজ করছে। রাতে সে চিতল মাছের একহাত সাইজ পেটি খেতে পারে নি খানিকটা মুখে দিয়েই বলেছে, ‘খেতে খুব ভালো হয়েছে কিন্তু আমি খেতে পারছি না।’ থার্মোমিটারে এখনো জ্বর পাওয়া যাচ্ছে না। জামিল সাহেব বললেন, ‘ডাক্তার খবর দেব?’

    শাহেদ বলল, ‘এখানে ডাক্তার আছে?’

    ‘এখানে নেই। মাধবনগরে এক জন এমবিবিএস আছেন। লোক পাঠিয়ে নিয়ে আসি? বেশিক্ষণ লাগবে না। যাবে আর আসবে। পাঠাব?’

    ‘লাগবে না। ভালো ঘুম হলেই শরীর ঠিক হয়ে যাবে।’

    ‘তাহলে রাত করার কোনো দরকার নেই। তুমি শুয়ে পড়।’

    শাহেদ ঘুমাতে গেল। জাহানারা বার বার বলে দিলেন, ‘কোনো অসুবিধা হলেই আমাদের ডেকে তুলবে। তাছাড়া আমাকে ডেকে তুলতেও হবে না। আমি বলতে গেলে সারারাত জেগেই থাকি। আমার ঘুম হয় না।’

    ‘ঘুম হয় না কেন?’

    ‘নতুন জায়গায় আমার ঘুম হয় না। ঘুমের ওষুধ খেলেও হয় না। দশ-পনের দিন এখানে থাকলে জায়গাটা পুরোনো হবে, তারপর ঘুম হবে। এই জন্যে বাড়ি ছেড়ে কোথাও যেতে চাই না। তোমার চাচা জোর করে নিয়ে এসেছেন। আগে একবার এসেছিলেন—তখন নাকি জায়গাটা খুব মনে ধরেছিল—খুব সুন্দর, হেনতেন, কত কথা।

    ‘জায়গা তো সুন্দরই।’

    ‘সুন্দরের কী আছে? বাংলাদেশের সব জায়গাই তো এরকম। নদী, গাছপালা, মাঠ, আলাদা কিছু তো না। তাও যদি ডাকবাংলোটা সুন্দর হত। পাকা দালান করে রেখেছে। বাংলো হবে কাঠের। তার উপর দেখ—ইলেকট্রিসিটি আছে, কিন্তু অন্য কোনো সুযোগ- সুবিধা নেই। একটা ফ্রিজ নেই, ওয়াটার হিটার নেই। ইলেকট্রিসিটির যে অবস্থা! এই আছে, এই নেই। সারাক্ষণ হ্যাজাক জ্বালিয়ে রাখতে হয়। হিসহিস শব্দ আসে—আমার মনে হয় ঘরে সাপ ঢুকেছে। শাহেদ, শুতে যাবার আগে তোমার চা বা কফি খাবার অভ্যাস আছে?’

    ‘অভ্যাস নেই। কিন্তু আজ এক কাপ গরম চা খাব।’

    ‘তুমি তোমার ঘরে চলে যাও। আমি চা বানাচ্ছি।’

    ‘আপনাকে বানাতে হবে না, চাচি। কাউকে বলুন, বানিয়ে দেবে।’

    ‘কাউকে বলতে হবে না। চা আমিই বানাব। আমি নিজেও খাব। নিজের চা নিজে না বানালে আমি খেতে পারি না।’

    .

    চা নিয়ে এল নবনী। ট্রেতে করে এক কাপ চা, এক গ্লাস পানি। শাহেদ চা খাবার পর পর এক গ্লাস পানি খায়।

    শাহেদ চাদর মুড়ি দিয়ে বিছানায় বসে আছে। তার হাতে গত সপ্তাহের টাইম। এ সপ্তাহের টাইম বের হয়ে গেছে। আগের সপ্তাহেরটা পড়া হয় নি। কোথায় যেন পড়েছিল—ছুটি কাটাতে এসে আপটুডেট কিছু পড়তে নেই। পুরোনো জিনিস পড়তে হয়। খবরের কাগজও পড়া যাবে না। পড়লেও মাসখানিক আগের বাসি কাগজ পড়তে হবে।

    নবনী বলল, ‘জ্বর কি এসে গেছে?’

    ‘আমার মনে হচ্ছে এসেছে, থার্মোমিটার বলছে না। তোমাদের থার্মোমিটার নষ্ট না তো?’

    নবনী শাহেদের কপালে হাত রেখে হাসিমুখে বলল, ‘থার্মোমিটার নষ্ট, তোমার গা গরম। প্যারাসিটামল খাবে? প্যারাসিটামল আছে।’

    ‘না। তুমি বস তো খানিকক্ষণ।’

    নবনী বসল। শাহেদ বলল, ‘আমি এসেই তোমাকে ঘরছাড়া করছি—তুমি ঘুমাচ্ছ কোথায়?’

    ‘শ্রাবণীর সঙ্গে।’

    ‘কাল জানালার কাচটা লাগিয়ে ফেললে—আমি ঐ ঘরে চলে যেতে পারব। তুমি ফিরে আসবে তোমার জায়গায়।’

    ‘কেন, আমার ঘরে থাকতে কি তোমার ভালো লাগছে না?’

    ‘লাগছে। তবে আরো ভালো লাগত যদি তুমিও থাকতে।’

    নবনী অন্যদিকে মুখ ফিরিয়ে নিল। শাহেদ এত সহজ ভাবে এমন সব কথা বলে যে দারুণ অস্বস্তি লাগে। যদিও অস্বস্তি লাগার হয়তো কিছু নেই। এ ধরনের কথা বলার অধিকার শাহেদের আছে।

    ‘নবনী!’

    ‘কি?’

    ‘গম্ভীর হয়ে আছে কেন? একটু আগে যা বললাম তা শুনে মেজাজ খারাপ হয়ে গেল নাকি?’

    ‘না।’

    ‘মনে হচ্ছে মেজাজ কিছুটা খারাপ হয়েছে। আমি তোমার সঙ্গে খুব ভয়ে ভয়ে চলি। এমন সুপার সেনসেটিভ মেয়ে। তোমার উচিত ছিল ভিক্টোরিয়ান যুগে জন্মানো। তুমি ভুল সময়ে জন্মেছ।’

    ‘চা ঠাণ্ডা হচ্ছে—চা খাও।’

    ‘খাচ্ছি। চা খেতে খেতে কঠিন সুরে তোমাকে কিছু কথা বলব। রাগ কর আর যাই কর।’

    ‘রাগ করব না। বল কী বলবে।’

    ‘সত্যি রাগ করবে না?’

    ‘না।’

    ‘তোমার মধ্যে একধরনের অদ্ভুত শুচিবায়ু আছে। এই শুচিবায়ু থাকাটা কি উচিত?’

    ‘আমার এমন কিছু নেই।

    শাহেদ হাসতে হাসতে বলল, ‘আছে। খুব ভালোভাবেই আছে। তুমি নিজেও তা জান। এই কারণে তুমি নিজেও নিজের কাছে ছোট হয়ে থাক। সংকুচিত হয়ে থাক। গত বার আমার সঙ্গে যে ঝগড়াটা করলে—কেন করলে?’

    ‘আমি তো বলেছি আমি লজ্জিত, দুঃখিত।’

    ‘যত লজ্জিত বা যত দুঃখিতই হও এরকম পরিস্থিতি হলে তুমি আবারো ঝগড়া করবে, কান্নাকাটি করবে। অথচ কত সামান্য ব্যাপার।’

    ‘আমি স্বীকার করছি সামান্য ব্যাপার।’

    ‘তুমি মুখে বলছ স্বীকার করছি সামান্য ব্যাপার। আসলে স্বীকার করছ না। আমি কী করেছি—রিডার্স ডাইজেস্টের একটা মজার রসিকতা তোমাকে বলেছি।’

    নবনী কঠিন স্বরে বলল, ‘রসিকতাটা মোটেই মজার নয়।’

    ‘এটা তোমার অভিমত, কিন্তু রিডার্স ডাইজেস্ট মনে করে রসিকতাটা মজার। যে কারণে তারা এটা ছেপেছে—রসিকতাটা হল…।’

    ‘একবার তো বলেছ। আবার কেন?’

    ‘আবারো শোন এবং আমাকে বল এটা শুনে হৈচৈ করার এবং কান্নাকাটি করার মানেটা কি। আমি গল্পের প্রতিটি স্টেপ ভেঙে ভেঙে বলব—এক জন রূপবতী তরুণী মেয়ে পার্টিতে গিয়েছে। সেখানে তার হঠাৎ বাথরুম পেল। সে…’

    নবনী কঠিন মুখে বলল, ‘প্লিজ স্টপ ইট।’

    শাহেদ চুপ করে গেল। নিঃশব্দে চা শেষ করল। খানিকক্ষণ দুজনই চুপচাপ বসে থাকার পর আবার স্বাভাবিক ভঙ্গিতে কথাবার্তা শুরু হল। শাহেদ বলল, ‘তোমাদের ছুটি কেমন কাটছে?’

    ‘খুব ভালো কাটছে। একেক জন একেক জনের মতো ছুটি কাটাচ্ছে। শ্রাবণী এই দুদিন তার নিজের ঘর থেকে বের হয় নি। গল্পের বই পড়ে যাচ্ছে। মা এই দুদিন রান্নাঘরে কাটিয়েছেন। বাবা বারান্দায় বসে বিভিন্ন লোকজনের সঙ্গে আলাপ করছেন।’

    ‘আর তুমি? তুমি কী করছ?’

    ‘আমি একা একা ঘুরে বেড়াচ্ছি। একেক দিন, একেক জায়গায় যাচ্ছি।’

    ‘আজ কোথায় গিয়েছিলে?’

    ‘আজ একটা প্রাচীন বটগাছ দেখে এসেছি। তোমাকে নিয়ে একদিন যাব। ইন্টারেস্টিং বটগাছ।’

    ‘ইন্টারেস্টিং কোন অর্থে?’

    ‘বিশাল অর্থে। তাছাড়া বটগাছের গুঁড়ি বাঁধানো। ঝুরি নেমে অদ্ভুত দেখাচ্ছে।’

    ‘বটগাছ ছাড়া আর কী দেখলে?’

    ‘টিয়া পাখি দেখলাম। ঝাঁকে ঝাঁকে টিয়া পাখি।’

    ‘টিয়া পাখিগুলোকেও কি ইন্টারেস্টিং মনে হয়েছে?’

    ‘না। ওদের দেখে একটু ভয় ভয় লেগেছে।’

    ‘ভয়ের কী আছে?’

    ‘একসঙ্গে এত পাখি। তাছাড়া এরা খুব নিচু হয়ে উড়ছিল।’

    শাহেদ শার্টের পকেট থেকে সিগারেটের প্যাকেট বের করল। নবনী বিস্মিত হয়ে বলল, ‘তুমি সিগারেট ধরেছ নাকি?’

    ‘কয়েক দিন হল সিগারেট টানছি। মনে হচ্ছে নেশা ধরে গেছে।’

    ‘দিনে কটা খাও?’

    ‘দিনে বেশি খাই না। রাতে খাই।’

    ‘তুমি কি কোনো কিছু নিয়ে চিন্তিত?’

    ‘হুঁ।’

    ‘কী নিয়ে চিন্তিত?’

    ‘সেটাই তো বুঝতে পারছি না।’

    ‘তোমার কারখানায় কি কোনো সমস্যা আছে?’

    ‘সমস্যা তো আছেই। ভয়ংকর লস খেয়েছি।’

    ‘যত ভয়ংকর লস হোক, সেই লস সামলে নেবার ক্ষমতা তো তোমার আছে। আছে না?’

    ‘হ্যাঁ আছে।’

    ‘সিগারেট শেষ করে ঘুমাতে যাও। কাল কথা হবে।’

    ‘আচ্ছা।’

    নবনী উঠে দাঁড়াতে দাঁড়াতে বলল, ‘চা শেষ করে তুমি সব সময় পানি খাও। কই, আজ তো খেলে না।’

    শাহেদ পানির গ্লাস হাতে নিল।

    নবনী ইতস্তত করে বলল, ‘তুমি আমার উপর রাগ করে আছ, তাই না?’

    ‘না।’

    ‘মুখ দেখে বুঝতে পারছি রাগ করেছ।’

    ‘খানিকটা করেছি। তবে সব রাগ জলে ভেসে যাবে যদি তুমি যাবার আগে আমাকে জড়িয়ে ধরে একটা চুমু খাও।’

    নবনীর চোখ-মুখ শক্ত হয়ে গেল। সে অন্যদিকে তাকাল। শাহেদ বলল, ‘তুমি দেখি পাথরের মতো শক্ত হয়ে গেছ। আমি কি ভয়ংকর অন্যায় কিছু বলেছি?’

    নবনী কিছু বলল না। দরজা ধরে দাঁড়িয়ে রইল। শাহেদ বলল, ‘আচ্ছা যাও—গুড নাইট, নবনী।

    নবনী যন্ত্রের মতো বলল, ‘ গুড নাইট।’

    .

    বালিশ হাতে নবনী ছোট বোনের ঘরে ঘুমাতে গেল। দরজায় টোকা দিল। শ্রাবণী জেগে আছে। ঘরে বাতি জ্বলছে। তার নড়াচড়ার শব্দ শোনা যাচ্ছে। কিন্তু সে দরজা খুলছে না। নবনী দরজায় ধাক্কা দিয়ে বলল, ‘এই শ্রাবণী, দরজা খোল। কী হল তোর?’

    শ্রাবণী দরজা খুলল। তার চোখে-মুখে স্পষ্ট বিরক্তি। সে হতাশ গলায় বলল, ‘আপা, তুমি আমার সঙ্গে ঘুমাবে?’

    ‘হ্যাঁ। অসুবিধা আছে?’

    ‘আছে। আমি কারো সঙ্গে ঘুমাতে চাই না। একা ঘুমাতে চাই।’

    ‘যথেষ্ট পাগলামি করেছিস। দরজা থেকে সরে দাঁড়া।’

    শ্রাবণী দরজা ছেড়ে সরে দাঁড়াল। করুণ গলায় বলল, ‘তুমি কিন্তু দেয়ালের দিকে শোবে। আমি ঘুমাব বাইরের দিকে। এবং কাল থেকে তুমি অন্য কোথাও থাকার ব্যবস্থা করবে।’

    ‘তোর সমস্যাটা কি?’

    ‘সমস্যা আছে। তুমি বুঝবে না।’

    ‘বুঝিয়ে বললেও বুঝব না?’

    ‘না।’

    ‘বলে দেখ। বুঝতেও তো পারি।’

    শ্রাবণী হালকা গলায় বলল, ‘আমি তো রাতে একনাগাড়ে ঘুমাই না আপা। কিছুক্ষণ ঘুমাই। আবার জেগে উঠি। আবার খানিকক্ষণ বই পড়ি। গান শুনি। তুমি বিরক্ত হবে।’

    ‘অবশ্যই বিরক্ত হব। আমার তো শুনেই বিরক্তি লাগছে।’

    ‘এই জন্যেই আমি চাই না তুমি আমার সঙ্গে ঘুমাও। আমি একা থাকতে চাই।’

    নবনী বিছানায় উঠতে উঠতে বলল, ‘গল্পের বই পড়ে তোর মাথা এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে। গল্পের বই পড়া তোর বন্ধ করতে হবে। একা একা থাকার অভ্যাসটাও তোর বদলাতে হবে। দুদিন হল আমরা এখানে আছি—দুদিন তুই কি একবারের জন্যেও ডাকবাংলো কম্পাউন্ডের বাইরে গিয়েছিস?’

    শ্রাবণী জবাব দিল না। হাসল।

    নবনী বলল, ‘আয়, বাতি নিভিয়ে শুয়ে পড়ি। শুয়ে শুয়ে গল্প করি। শ্রাবণী বলল, ‘আমার শুতে ইচ্ছে করছে না। এত সকালে আমি কখনো ঘুমাতে যাই না।’

    ‘এক রাতে একটু ব্যতিক্রম হোক।’

    শ্রাবণী বাতি নিভিয়ে ঘুমাতে এল। দুজনের জন্যে একটাই লেপ। নবনী হাসতে হাসতে বলল, ‘তোর গায়ের সঙ্গে গা লেগে গেলে সমস্যা নেই তো আবার?’

    ‘না, কোনো সমস্যা নেই।’

    শ্রাবণী বোনকে জড়িয়ে ধরল। এখন মনে হচ্ছে বোনের সঙ্গে ঘুমাতে পেরে সে আনন্দিত। নবনী আদুরে গলায় বলল, ‘তুই দিন দিন এত অদ্ভুত হচ্ছিস কেন রে?’

    শ্রাবণী জবাব দিল না। লেপের ভেতর মাথা ঢুকিয়ে নিয়ে খিলখিল করে হাসল। নবনী বলল, ‘এত হাসছিস কেন?’

    ‘তুমি আমার সঙ্গে ঘুমাচ্ছ। আমার ভালো লাগছে, তাই হাসছি।’

    ‘একটু আগে তো উল্টো কথা বললি—আমাকে তোর ঘরে আসতেই দিতে চাস নি।’

    শ্রাবণী আরো ভালোভাবে বোনকে জড়িয়ে ধরল। নবনী বলল, ‘হাত ছাড়, দম বন্ধ হয়ে আসছে।’

    ‘হোক দম বন্ধ, হাত ছাড়ব না। তুমি গল্প বল। গল্প শুনব।’

    ‘রাতদিন গল্পের বই পড়িস তুই, আর গল্প বলব আমি—এটা কেমন কথা? বরং তুই তোর পড়া বই থেকে একটা কিছু বল, আমি শুনি।’

    ‘উঁহু। তুমি বলবে আমি শুনব।’

    ‘আমি কী বলব?’

    ‘যা ইচ্ছা বল। এখানে এসে তোমার কেমন লাগছে সেইটা না হয় বল। তুমি যে একা একা ঘুরে বেড়াও—কোথায় কোথায় গেলে, কী দেখলে?’

    নবনী হাই তুলতে তুলতে বলল, ‘গাছপালা ছাড়া এখানে আর কী আছে? গাছপালা দেখেছি। একটা বিশাল বটগাছ দেখলাম। ঝুরি নেমে একাকার। নিচটা বাঁধানো। তোকে নিয়ে একদিন না হয় যাব। ঐ বটগাছের বাঁধানো জায়গাটায় বসে জোছনা দেখব। খুব নাকি সুন্দর।

    ‘কে বলেছে খুব সুন্দর?’

    ‘এখানকার কলেজের এক অধ্যাপক। মবিনউদ্দিন না কি যেন নাম।’

    ‘তার সঙ্গে দেখা হল কোথায়?’

    নবনী গল্পটা বলল, বেশ গুছিয়েই বলল। বলতে গিয়ে লক্ষ করল গল্পটা বলতে তার ভালো লাগছে। শ্রাবণী শুনছেও খুব আগ্রহ করে। গল্প শেষ হবার পর শ্রাবণী বলল, ‘তুমি কি অধ্যাপক ভদ্রলোককে খুব কঠিন করে ধমক দিলে?’

    ‘মোটামুটি কঠিনভাবেই দিলাম

    ‘ভদ্রলোক কী বললেন?’

    ‘কিছু বলে নি। দাঁড়িয়ে ছিল চুপচাপ।’

    ‘ধমক দেবার পর তোমার কি মনে হয় নি

    আহা, কেন ধমক দিলাম।’

    ‘না, মনে হয় নি। ধমক তার প্রাপ্য ছিল। কী করে সে তার সঙ্গে জোছনা দেখার জন্যে এমন একটা নির্জন জায়গায় যেতে বলে?’

    ‘আমি কিন্তু ভদ্রলোকের কোনো দোষ দেখছি না।’

    ‘দোষ দেখছিস না কেন?’

    শ্রাবণী উঠে বসে হাত বাড়িয়ে টেবিল ল্যাম্প জ্বালাল। মুখ না দেখে কথা বলতে তার ভালো লাগছে না। নবনী বিরক্ত গলায় বলল, ‘বাতি জ্বালিয়েছিস কেন? বাতি নেভা।’

    ‘উঁহু। অন্ধকারে কথা বলতে ভালো লাগছে না। আপা, তুমি আমার যুক্তি শোন। যুক্তি শোনার পর তোমার মনে হবে ঐ অধ্যাপক ভদ্রলোক কোনো ভুল করেন নি। বরং তাঁকে ধমক দিয়ে তুমি ভুল করেছ। ত

    ‘যুক্তি সকালে শুনব। এখন শুনতে ইচ্ছা করছে না।

    ‘না, তোমাকে এখনই শুনতে হবে। এই যুক্তি আমার সকালে মনে থাকবে না। রাতের যুক্তি দিনে কাজ করে না। আপা শোন—ঐ অধ্যাপক ভদ্রলোকের কথা থেকেই মনে হচ্ছে তিনি বটগাছের কাছে প্রায়ই আসেন। এখানে বসে জোছনা দেখেন। নিশ্চয় জায়গাটা তাঁর অত্যন্ত প্ৰিয়—এবং জোছনাও খুব প্রিয়। তুমি কি accept করছ?’

    ‘করছি।’

    ‘ভদ্রলোক বসে ছিলেন একা একা। তিনি স্বপ্নেও ভাবেন নি—তুমি সেখানে উপস্থিত হবে। তিনি হঠাৎ তোমাকে দেখলেন। নির্জন জায়গা। অদ্ভুত পরিবেশ। সেখানে ঠিক স্বপ্নদৃশ্যের মতো অসম্ভব রূপবতী একজন তরুণী উপস্থিত হল। সাধারণ পরিবেশেই তোমাকে দেখলে লোকজন চমকে যায়। অস্বাভাবিক পরিবেশে তোমাকে দেখে ভদ্রলোক হতভম্ব হয়ে গেলেন। তাঁর মধ্যে এক ধরনের ঘোর সৃষ্টি হল। তাঁর কাছে এটা বাস্তব দৃশ্য না। এটা হয়ে গেল স্বপ্নদৃশ্য। তুমি হয়ে গেলে স্বপ্নের একটি মেয়ে। স্বপ্নে যা ইচ্ছা করে তাই বলা যায়। ভদ্রলোক তাই করলেন— তোমাকে নিমন্ত্রণ করলেন জোছনা দেখার জন্যে। ব্যাপারটা তোমার কাছে অস্বাভাবিক লাগলেও তাঁর কাছে মোটেই অস্বাভাবিক লাগল না। কারণ তুমি তো বাস্তবের মেয়ে না, তুমি ছিলে কল্পনার একটি মেয়ে।’

    ‘চুপ কর্ গাধা। আমি হলাম কল্পনার মেয়ে। সে খুব ভালো করেই জানে আমি কে। আমি ডাকবাংলোয় আছি। আমার নাম পর্যন্ত জানে।’

    ‘জানলেও তুমি তাঁর কাছে বাস্তবের কোনো চরিত্র না। বাস্তবের চরিত্ররা তোমার মতো সুন্দর হয় না। বাস্তবের চরিত্ররা এত সুন্দর করে সেজে একা একা বটগাছের কাছে যায় না। বটগাছের সঙ্গে গল্প করে না।

    ‘যথেষ্ট হয়েছে। বাতি নিভিয়ে ঘুমাতে আয়।’

    শ্রাবণী বাতি নিভিয়ে শুয়ে পড়ল। হালকা গলায় বলল, ‘তোমার জায়গায় আমি হলে কী করতাম জান আপা?’

    ‘জানি।’

    ‘বল তো কী করতাম?’

    ‘তুই বলতি—চলুন যাই। আপনার জোছনা দেখে আসি। তারপর বসে থাকতি  লোকটার সঙ্গে। আমরা পুলিশ নিয়ে তোকে খুঁজে বের করে আনতাম।’

    শ্রাবণী হাসতে হাসতে বলল, কিছুটা হয়েছে, পুরোপুরি হয় নি। আমি ঠিকই বলতাম, চলুন যাই। বটগাছের কাছে গিয়ে বলতাম—আপনি গিয়ে বসুন, আমি আসছি। ভদ্রলোক বসতেন আর আমি নিঃশব্দে পালিয়ে চলে আসতাম। ভদ্রলোক আর আমাকে খুঁজে পেতেন না।’

    ‘তাতে লাভ কী হত?’

    ‘ভদ্রলোকের স্বপ্নটা আরো জোরালো করে দিতাম। তাঁর কাছে সারাজীবন মনে হত—তিনি ঐ রাতে সুন্দর একটা স্বপ্ন দেখেছেন।’

    নবনী হাই তুলতে তুলতে বলল, ‘গল্পের বই পড়া তোর পুরোপুরি বন্ধ করা উচিত। তোর মাথা এলোমেলো হয়ে গেছে। এখন ঘুমা দেখি।

    ‘আচ্ছা ঘুমাচ্ছি।’

    নবনী অবাক হয়ে লক্ষ করল, শ্রাবণী সত্যি সত্যি ঘুমিয়ে পড়েছে। গাঢ়, গম্ভীর ঘুম। নবনীর ঘুম আসছে না। সে জেগে আছে। জানালা গলে জোছনার আলো ঢুকেছে। সুন্দর দেখাচ্ছে।

    শ্রাবণীর সঙ্গে গল্প করতে ভালো লাগছিল। এখন কেমন যেন একা একা লাগছে। শাহেদ কি এখনো জেগে আছে। ঢাকায় সে অনেক রাত জাগত। এখানে কি জাগবে? শরীর খারাপ। শুয়ে পড়েছে নিশ্চয়ই।

    নবনী খাট থেকে নামল। তার পানির পিপাসা পেয়েছে। সে বারান্দায় এসে দাঁড়াল। বারান্দায় খুব হাওয়া। শীত লাগছে। সে খানিকক্ষণ শীত গায়ে মাখল। খুব সাবধানে এগুল শাহেদের ঘরের দিকে। ঘরে বাতি জ্বলছে। সে এখনো জেগে আছে। নবনী দরজায় হাত রাখল। দরজার ভেতর থেকে বন্ধ। সে কি ডাকবে শাহেদকে? না থাক। নবনী খাবার ঘরের দিকে এগুল।

    খাবার ঘরে বাতি জ্বলছে। জাহানারা হাতলওয়ালা একটা চেয়ারে বসে উলের কি যেন বুনছেন। তাঁর পেছনে মিলু বুয়া দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে চুল বিনি করে দিচ্ছে। নবনী বলল, ‘মা ঘুমাও নি?’

    ‘না। ঘুম আসছে না।’

    ‘বসে বসে স্যুয়েটার বুনলে তো ঘুম আসবে না। বিছানায় শুয়ে ঘুমের চেষ্টা করতে হবে।’

    ‘চেষ্টা করে লাভ নেই।’

    ‘তুমি ঘুমাচ্ছ না ভালো কথা। মিলু বুয়াকে জাগিয়ে রেখেছ কেন? তাকে ঘুমাতে দাও।’

    জাহানারা কিছু বললেন না। উল বুনেই যেতে লাগলেন। মিলু নবনীর দিকে তাকিয়ে ইশারায় আর কিছু না বলার জন্যে অনুরোধ করল।

    ⤶ ⤷
    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleনেকড়ে খামার – হিমাদ্রিকিশোর দাশগুপ্ত
    Next Article নীল অপরাজিতা – হুমায়ূন আহমেদ

    Related Articles

    হুমায়ূন আহমেদ

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    হুমায়ূন আহমেদ

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025
    হুমায়ূন আহমেদ

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    হুমায়ূন আহমেদ

    হুমায়ূন আহমেদ রচনাবলী ১১

    December 12, 2025
    হুমায়ূন আহমেদ

    এই আমি – হুমায়ূন আহমেদ

    December 12, 2025
    হুমায়ূন আহমেদ

    মীরার গ্রামের বাড়ী – হুমায়ূন আহমেদ

    December 12, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Generic selectors
    Exact matches only
    Search in title
    Search in content
    Post Type Selectors
    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Our Picks

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }