Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    ইলিয়াড – হোমার

    October 13, 2025

    ওডিসি – হোমার

    October 13, 2025

    প্রেমের প্রান্তে পরাশর – প্রেমেন্দ্র মিত্র

    October 13, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    তৃষ্ণা – জহির রায়হান

    জহির রায়হান এক পাতা গল্প77 Mins Read0

    ০৫. বাড়ি দেখে দুজনেই পছন্দ হলো

    বাড়ি দেখে দুজনেই পছন্দ হলো। হোক না কবুতরের খোঁপের মত ছোট-ছোট দুটো কামরা। তবু ভাড়া কম। মাসে পঁচাত্তর টাকা।

    দু-মাসের আগাম দিতে হবে, দেড়শ! সে টাকা দিয়ে বাড়ির ভেতরটা মেরামত আর চুনকাম করে দেবে বাড়িওয়ালা। এঘর ওঘর ঘুরে-ঘুরে দেখলে মার্থা। পেছনে ছোট একটুকরা উঠোন। সরু বারান্দা। রান্নাঘরে এসে ঢুকলো মার্থা। উপরের টিনগুলো ফুটো হয়ে গেছে। এক দিকে তাকাতে দেখে বাড়িওয়ালা বললো, এর জন্যে ঘাবড়াবেন না। আগাম পেলে সব মেরামত করে দেবো। আগে যারা ছিলো–এক নম্বরের পাজি লোক, ভাড়ার টাকা নিয়ে খিটিমিটি করতে। তাই আমিও আর মেরামতে হাত দেইনি। আপনাদের জন্যে সব দেবো আমি। একটু অসুবিধেও হাত দেবো না, দেখবেন।

    শওকতের দিকে তাকালো মার্থা।

    শওকত বললো, ভালোই তো লাগছে।

    বাড়িওয়ালা বললো, আপনারা দেখুন। দোকানটা খালি ফেলে এসেছি। চলি। যাবার দেখা করে যাবেন।

    শওকত ঘাড় নাড়লো। বাড়িওয়ালা চলে গেলে মার্থা বললো, লোকটা বেশ।

    শওকত বলে, হুঁ।

    মার্থা বললো, আমাদের আর দেখার কী আছে।

    শওকত বললো, চলো।

    আগে চোখে পড়েনি। সরু পথ দিয়ে বাইরে বেরিয়ে দেখলো বাসার সামনে একটা ছোট স্টেশনারি দোকান আছে বাড়িওয়ালার। দোকান ঘরটাও বাড়িরই একটা অংশ। মাঝখানে একটা দরজা আছে ভেতরে খাওয়ার। এখন সেটা বন্ধু। বাড়িওয়ালা বললো, কেমন দেখলেন?

    শওকত বললো, ভালো।

    মার্থা তখন খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দোকানঘরটাকে লক্ষ্য করছিলো। সহসা বললো, এটা আপনার নিজের বুঝি?

    বাড়িওয়ালা একগাল হাসলো। হ্যাঁ। তারপর বললো, ঠিকমতো দেখাশোনা করতে পারি না। নানা ঝামেলা। ভালো খদ্দের পেলে ভাবছি বিক্রি করে দেবো।

    মার্থা তাকালো শওকতের দিকে।

    শওকত বললো, চলো।

    বাড়িওয়ালা বললো, তাহলে বাড়ি আপনারা ভাড়া নিচ্ছেন। পাকা কথা, কী বলেন?

    মার্থা বললো, দোকানটা সত্যিসত্যি বিক্রি করবেন নাকি

    বাড়িওয়ালা একটু অবাক হয়ে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলো ওর দিকে। অস্পষ্ট স্বরে বললো, হ্যাঁ।

    মার্থা বললো, কত দিয়ে বেচবেন?

    শওকত ঠিক বুঝতে পারলো না কি চায় মার্থা।

    বাড়িওয়ালা বললো, তা, হাজার তিনেক তো বটে।

    টাকার অঙ্কুটা মনে-মনে একবার উচ্চারণ করালো মার্থা।

    ঠোঁট নাড়লো। কোনো শব্দ বেরুলো না।

    শওকত বললো, চলি।

    মার্থা বললো, কাল আবার আসবো।

    বাড়িওয়ালা একগাল হেসে বিদায় দিলো ওদের।

    আশ্চর্য! কী লাগামহীন স্বপ্ন দেখতে পারে মানুষ দু-মাসের আগাম ভাড়া দেড়শ টাকা হাতে নেই। তিনহাজার টাকা দিয়ে দোকান কেনার জন্যে উতলা হয়ে পড়েছে মার্থা।

    শওকত বললো, স্রেফ পাগলামো।

    মার্থা বললো, হোক পাগলামো। তন্তু সুন্দর। একবার চিন্তা করে দ্যাখো না। দোকানটা পেলে আর কোনো ঝামেলাই থাকবে না আমাদের। আমি কাউন্টারে বসে দোকান চালাবো। তুমি বাইরে থেকে জিনিসপত্র কিনে এনে দেবে। হিসেবটা দেখবে। কী চমৎকার হবে তাই না?

    যতসব বাজে চিন্তা। শওকত বিড়বিড় করলো। কিন্তু মার্থার প্রস্তাবটা একেবারে উড়িয়ে দিতে পারলো না। নিজের মনকে একটু যাচাই করতে গিয়ে দেখলো, মার্থা মন্দ বলেনি। দোকানটা যদি কিনতে পারে ওরা, তাহলে আর অন্যের মুখের দিকে চেয়ে দিন কাটাতে হবে না ওদের। কিন্তু, একসঙ্গে অতগুলো টাকা

    মার্থা বললো, আহ, টাকার কথাটা তুলে এ সুন্দর স্বপ্নটাকে মাটি করে দিয়ে নাতো। ধরে নাও, টাকাটা আমরা পেলাম। সে যেখান থেকেই পাই। চুরি করে হোক, ডাকাতি করে হোক। সে পরে দেখা যাবে’খন। ধরো না, দোকানটা আমরা কিনেছি। তুমি-আমি পেছনের ঘর দুটোতে থাকি। আর সারারাত বিছানায় শুয়ে শুয়ে ভাবি, কেমন করে কেমন করে দোকানটা আরো সাজানো, আরো বড়ো করে তুলবো। ওকে আমাদের কোলের ছেলের মতো, বলতে গিয়ে সহলা হেসে উঠলো মার্থা। হাসির গমকে সমস্ত দেহটা দুলে উঠলো ওর। চোখের কোণে জেগে উঠলো একজোড়া হল মুক্তো।

    শওকত অবাক হয়ে বললো, হঠাৎ কান্না।

    মার্থা ওর কথার মাঝখানে বললো, কুটো পড়েছে। তারপর দু-হাতের তালু দিয়ে চোখজোড়া ভীষণভাবে রগড়াতে লাগলো সে। রুমালে ফুঁ দিয়ে দু-চোখে গরম তাপ দিলো।

    শওকত বললো, অযথা চোখ দুটো লাল করছো কেন?

    মার্থা মৃদু হেসে রুমালটা সরিয়ে নিলো। সোজা ওর দিকে তাকিয়ে বিচিত্র ভঙ্গিতে বললো, দোকানটা কিন্তু কিনতেই হবে কী বলো?

    কেনার মতো টাকা নেই আমাদের। সংক্ষেপে জবাব দিলো শওকত।

    মার্থা আগের মতো হেসে বললো, দুনিয়াতে কেউ টাকা নিয়ে জন্মে না।

    শওকত প্রতিবাদের স্বরে বললো, জন্যে কী! বড়লোকের ঘরের ছেলেমেয়েরা।

    আর যাদের বাপ-মা বড়লোক ছিলো না। তারা? মার্থার দৃষ্টি শওকতের মুখের দিকে।

    ওরা নিজেরা খেটে রোজগার করে।

    কি দিয়ে?

    বিদ্যা বুদ্ধি আর শ্রম দিয়ে।

    আমরাও তাই করবো। চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে ঘরময় পায়চারি করতে লাগলো মার্থা। ওর চোখেমুখে আনন্দের দ্যুতি। যেন এ-মুহূর্তে তিনহাজার টাকা হাতের মুঠোর মধ্যে পেয়ে গেছে সে। হাতজোড়া বুকের কাছে আড়াআড়িভাবে রেখে জানালার কাছে গিয়ে দাঁড়ালো সে। জুতোর গোড়ালি-জোড়া-জোরে জোরে মাটিতে ঠুকলো। কী যেন ভাবলো। তিন হাজার টাকা। মাত্র তিনটে হাজার টাকা রোজগার করতে পারবো না আমরা ঘুরে দাঁড়িয়ে শওকতের দিকে এগিয়ে এলো মার্থা।

    আজ সকালে যারা দেড়শ টাকার চিন্তা করতে গিয়ে বিব্রতবোধ করছিলো, এখন-তারা তিনহাজার টাকা সমস্যার কথা ভেবে মনে-মনে হয়রান হচ্ছে।

    মার্থা পাগল। কিন্তু শওকত নিজেও জানে না, কোন্ অসতর্ক মুহূর্তে সে নিজেও সেই পাগলামোর জালে জড়িয়ে পড়েছে।

    সে ভাবছে বুড়ো আহমদ হোসেনের কথা।

    অন্ধকারে যে একটুকরো আলোর ছটা।

    কী হবে যদি ওর প্রস্তাবে রাজি হয়ে যায় শওকত। জীবনভর তো আর কোনো কাজ করবে না সে। যতদিন তিনহাজার টাকা যোগাড় না হয় ততদিন। তারপর সব ছেড়ে দিয়ে। মার্থাকে নিয়ে সংসার পাতবে সে।

    মার্থা তখনো অনর্গল বকে চলেছে। রাতকানা লোকটা সারাদিন খাটিয়ে মারে। তবু তার কতরকম ধমক শুনতে হয়। জাহান্নামে যাক সে। আর ওখানে কাজ করবো না আমি। নিজের দোকান, নিজের সব।

    শওকত সহসা বললো, ঘাবড়িয়ো না মার্থা, টাকা জোগাড় হয়ে যাবে।

    কেমন করে? আচমকা থমকে দাঁড়ালো মার্থা। চোখজোড়া বড় করে তাকালো ওর দিকে।

    শওকত বললো, আমরা দিনরাত খাটব।

    ওর মসৃণ চুলগুলোর মধ্যে হাত বুলিয়ে দিয়ে ম্লান হাসলো মার্থা। খেপেছো। একটু আগের মার্থাকে যেন এখন চেনাই যায় না। উতলা মনের নিচে এত গভীর একটা খাদ লুকোনো ছিলো তা কে জানতো। মার্থা ধীরে ধীরে বললো। ওসব পাগলামো থাক। শোনো, অনেক রাত হয়ে গেছে। যাও এবার ঘুমোও গিয়ে।

    শওকত অনেকক্ষণ ধরে তাকিয়ে রইলো মার্থার দিকে। তারপর বললো, কাল থেকে আমি একটা চাকরিতে জয়েন করছি মার্থা।

    তাই নাকি? আগে বলোনি তো। মার্থার চোখেমুখে আনন্দের আভা। শওকত সেটা লক্ষ্য করে বললো, বুড়ো আহমদ হোসেন জোগাড় করে দিয়েছে।

    কোথায়?

    সেটা এখনো জানি না। কাল রাতে জানবো।

    সত্যি বলছো। চোখের মণিজোড়া হাসিতে চিকচিক করছে মার্থার।

    শওকত ঢোক গিলে বললো, সত্যি।

    একটা পুরানো টিনের কৌটো থেকে অতি যত্ন করে রাখা কতকগুলো নোট বের করে আনলো মার্থা। শওকতের দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বললো, গুণে দ্যাখো তো কত।

    শওকত অবাক হয়ে বললো, এগুলো কোথায় পেয়েছে।

    কেউ নিশ্চয়ই দান করেনি, মার্থা শান্তগলায় বললো। এতদিন ধরে চাকরি করছি। দু চারটা টাকা জমাতে পারিনে বুঝি। মার্থার কণ্ঠে কৈফিয়তের সুর।

    নোটগুলো গুণতে গিয়ে শওকত বললো, দেখে তো পুরানো মনে হয় না। মনে হচ্ছে একেবারে কড়কড়ে নতুন।

    মার্থা সঙ্গে সঙ্গে বললো, কী যে বলল। দাও, তোমাকে দিয়ে গোনা হবে না। আমি গুনছি। ওর হাত থেকে ওগুলো কেড়ে নিয়ে গুনলো মার্থা, পঁচিশ টাকা।

    আর পঁচিশ টাকা হলে বাড়ি ভাড়ার আগামটা হয়ে যায়। শওকত বললো।

    মার্থা সঙ্গে সঙ্গে প্রতিবাদ করলো। না না, আগে দোকান, তারপর বাড়ি ভাড়া নেবো।

    শওকত কোনো উত্তর দেবার আগেই মার্থা আবার বললো, তিন হাজার টাকার আর কত বাকি থাকে?

    শওকত মনে-মনে হিসেব করে বললো, আটাশশ পঁচাত্তর টাকা। বলে হেসে উঠলো সে।

    নোটগুলো এর যথাস্থানে রেখে দিয়ে মার্থা বললো, বোসো, আমি হাতমুখ ধুয়েনি।

    আলনা থেকে ভোয়ালেটা তুলে নিয়ে মুখহাত ধুতে গেলে মার্থা। দুহাতে মুখ ঢেকে চুপচাপ কিছুক্ষণ বসে রইলো শওকত। রোজ যাবে যাবে করেও আজ পর্যন্ত বুড়ো আহমদ হোসেনের কাছে যাওয়া হয়ে উঠলো না। অথচ মার্থার কাছে মিথ্যে কথা বানিয়ে বলেছে সে। বলেছে ও চাকরি করছে। কাজ চলছে ওর।

    অফিস কোথায় তোমার? মার্থা প্রশ্ন করেছে। শওকত বিব্রতকর্তা বলেছে। এ চাকরিতে কোনো অফিস নেই। রাস্তায় রাস্তায় কাজ।

    কাজটা কী? মার্থা শুধিয়েছে আবার।

    শওকত বলেছেকাটা, শানে ওটা হচ্ছে তোমার, এ জায়গার জিনিসপত্র আরেক জায়গায় আনা-নেয়া করা। মানে ওই-যে কী বলে সুন্নাইং বিজনেন্স। ও-রকমরই অনেকটা।

    ও। মার্থা থামেনি। আরো প্রশ্ন করেছে। কেন কত দেবে কিছু ঠিক হয়নি?

    না। ভুবে আলেছে লিশের স্বধা জানাবে।

    আগাগোড়া সবটাই মিথ্যা। কেন এ মিথ্যের হাতে নিজেকে এভাবে সমর্পণ করলো ভেবে পায় না একজ। কোনো প্রয়োজন ছিল না। ও চাকরি করছে না, নিলে নিশ্চয় এর ওপর রাগ করতো না মার্থা। তবু আসলে বুড়ো আহমদ হোসেনের কাছে যেতে ভয় হয় শওকতের। একটা অজানা ভয়ে শিরদাঁড়া শিরশির করে ওঠে। ওর মনে হয় ওই আলেয়ার জালে নিজেকে একবার ডালে জীবনভর হয়তো তার ছাড়া পাবে না।

    মার্থা কাল বলেছিলো। ধরো তুমি যা ভাবছো তার অনেক বেশি টাকা বেতন পেয়ে গেলে তুমি। তখন কী করবে? না, হাসি নয়। ধরোই না ছাই। কী বাধা আছে চিন্তা করতে। ওরাতো এখনো টাকার অঙ্ক বলেনি। ধরো অনেক টাকা বেতন পেলে তুমি। কী করবে তখন।

    খুব কয় করে খরচ করবো আর বাকিটা জমাবো।

    গুনে মার্থার চোখজোড়া ঝলমল করে উঠেছে। জানো, আমিও তাই ভাবছিলাম।

    এ কদিন শওকত কম ভাবেনি। নানারকম উদ্ভট চিন্তায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা কাটিয়ে দিয়েছে। যদি এমন হতো হয়তো কোনো বড়লোক আত্মীয় মারা গেছে। আর সমস্ত স্থাবর অস্থাবর সম্পত্তির উত্তরাধিকারী করে গেছে তাকে। না। হিসেব করে দেখা গেলো তেমন কোনো আত্মীয়-অস্তিত্ব কল্পনায় ছাড়া বাস্তবে নেই। এমন তো হতে পারতো যে হঠাৎ একটা লটারী জিতে গেছে শওকত না। সে সম্ভাবনাও আপাতত নেই। মাত্র তিন হাজার টাকা। দুনিয়াতে এত টাকা অথচ পাবার কোনো উপায় নেই।

    না, কথাটা সত্য নয়। বুড়ো আহমদ বলেছিলো, তোমরা হলে সব এক একটা উল্লুক। নইলে টাকা রোজগারের জন্যে চিন্তে করতে হয়। টাকা তো সব কাদার নিয়ে গড়াগড়ি দিচ্ছে। কাদা ঘাঁটো। টাকা পাবে। কাদায় হাত দিবে না, টাকা রোজগার করবে, সে তো চুল না বাছা।

    না, এবার কাদায় নামবে শওকত। প্রয়োজন হলে সবটুকু নর্দমাই হাতড়ে বেড়াবে সে। তিনহাজার টাকা। তারপর।

    মার্থা ততক্ষণে হাতমুখ ধুয়ে এসে বাইরে বেরুবার জন্যে তৈরি হয়ে নিয়েছে। চেহারায় একটু পাউডারের প্রলেপ বুলিয়ে নিয়ে মার্থা বললো, চলো।

    চারপাশের দিকে আজকাল আর নজর পড়ে না শওকতের। কেউ জুয়ার আড্ডায় বসেছে কি বসেনি, কেউ গলা ছেড়ে ঝগড়া করছে কি করছে না, সেদিকে তাকায় না শওকত। ওসব যেন অর্থহীন হয়ে গেছে তার কাছে। হারুনের বিয়ে হয়ে যাওয়ার পর জাহানারার দিন কেমন করে কাটছে। সেই মাতাল কেরানিটা এখনও কি রোজ রাতে তার বউকে মারছে। সে সবের খোঁজ নেয় না সে। যতক্ষণ কিছু ভাবে, ভাবে তিনহাজার টাকার কথা। যতক্ষণ কথা বলে, বলে মার্থার সঙ্গে। পৃথিবী যেন হঠাৎ অনেক ছোট হয়ে গেছে। চিন্তার ধারাগুলো আর বিক্ষিপ্ত নয়, যেন একটা বিন্দুর চারপাশে সারাক্ষণ অস্থিরভাবে ঘুরে মরছে। একটা ঘর। একটা দোকান। একটা সংসার। আর তার জন্যে মাত্র তিনহাজার টাকা।

    হাতে একটা থলে নিয়ে বেরিয়ে এলো মার্থা।

    শওকত বললো, এটা দিয়ে কি হবে?

    মার্থা বললো, কাজ আছে। শোন, আজ রাতে ফিরতে দেরী হবে আমার।

    কেন? এত অবাক হয়ে তাকালো।

    মার্থা ইতস্তুত করে বললো, রাতকানা লোকটা বলেছে দোকান বন্ধ হবার পর কিছু হিসেপত্র করতে হবে। তাই। শওকত চুপ করে রইলো। কিছু বললো না।

    মার্থা মুখ ঘুরিয়ে তাকালো ওর দিকে। মৃদু হেসে বললো, তুমি কিন্তু ঘুমিয়ে পড়ো না যেন। আমি যত তাড়াতাড়ি পারি আসতে চেষ্টা করবো।

    শওকত বললো, আমারো অবশ্য আজ একটু রাত হবে। ওরা বলছিলো রাতেও কাজ করতে।

    রাতে কেন?

    তাহলে বাড়তি কিছু টাকা দেবে। টাকার কথা শুনে মার্থা আর কোনো প্রশ্ন করলো না।

    শুধু একবার হাতের থলেটার দিকে

    1 2 3 4 5 6
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleবরফ গলা নদী – জহির রায়হান
    Next Article কয়েকটি মৃত্যু – জহির রায়হান

    Related Articles

    জহির রায়হান

    শেষ বিকেলের মেয়ে – জহির রায়হান

    August 12, 2025
    জহির রায়হান

    আরেক ফাল্গুন – জহির রায়হান

    August 12, 2025
    জহির রায়হান

    হাজার বছর ধরে – জহির রায়হান

    August 12, 2025
    জহির রায়হান

    আর কত দিন – জহির রায়হান

    August 12, 2025
    জহির রায়হান

    একুশে ফেব্রুয়ারী – জহির রায়হান

    August 12, 2025
    জহির রায়হান

    কয়েকটি মৃত্যু – জহির রায়হান

    August 12, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    ইলিয়াড – হোমার

    October 13, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    ইলিয়াড – হোমার

    October 13, 2025
    Our Picks

    ইলিয়াড – হোমার

    October 13, 2025

    ওডিসি – হোমার

    October 13, 2025

    প্রেমের প্রান্তে পরাশর – প্রেমেন্দ্র মিত্র

    October 13, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    • Sign Up
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }