Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    দ্য দা ভিঞ্চি কোড – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025

    এঞ্জেলস এন্ড ডেমনস – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • 🔖
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    Subscribe
    সাইন ইন
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    তেইল্যা চোরা – ওবায়েদ হক

    ওবায়েদ হক এক পাতা গল্প132 Mins Read0

    তেইল্যা চোরা – ৪

    ৪

    হাজতে গিয়ে ফজরের মনে হলো, কদম যদি তার চোখ গেলে দিতো, সবাই মেরে যদি তার হাত পা ভেঙ্গে দিতো, তার মাথা ফাটিয়ে দিতো তবুও তা এই হাজতে রাত কাটানোর চেয়ে ভালো হতো। লোহার গারদে আটকানো ছোটো একটি জায়গা। চারজন যে ঘরে থাকলে পায়ের সাথে পা ঠেকবে সেখানে এই ঘরে প্রায় বিশজন মানুষ আছে। তাদের সবার নিঃশ্বাসে ঘরের বাতাস আর্দ্র এবং ভারী হয়ে আছে। ঘরের এককোণা সবাই প্রাকৃতিক কাজ করার জন্য ব্যবহার করছে, সেখান থেকে উৎকট গন্ধ ভেসে আসছে, নিঃশ্বাস নেয়া দায়। কেউ কেউ সেই গন্ধ সহ্য করতে না পেরে বমি করে দিয়েছে এবং উৎকট গন্ধটা তাতে নতুন মাত্রা পেয়েছে। তার উপর দুই একজন নির্বিঘ্নে বিড়ি টেনে হাজতটাকে নিঃশ্বাস নেয়ার অনুপযোগী করে তুলেছে। ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন মৃদু আলোর সেই স্থানকে পৃথিবীর নরক বলা যায়। ফজর তার আশেপাশের নরকবাসীদের দিকে চোখ বুলালো। অধিকাংশই পুলিশের আতিথেয়তায় অথবা বিড়ি গাজার নেশায় অর্ধমৃত। তাদের মধ্যে একজন মোটা চশমা পরা ভদ্রগোছের ছেলেকেও দেখা গেল। সে বমি করেছে, তাই একজন হাবিলদার তাকে লাঠি দিয়ে পেটে খোঁচা দিয়ে গেছে। খোঁচা শব্দটা ব্যবহার করলে সেই আঘাতের প্রচণ্ডতা বুঝা যায় না। পুলিশ বলে ‘গুতা’। গুতা খেয়ে ছেলেটা বোধহয় জ্ঞান হারিয়ে পড়ে ছিল কিছুক্ষণ। ফজর ভাবতে লাগলো, এমন ভদ্র ছেলে কী এমন করলো যে তাকে এই নরকে আসতে হলো। ফজর ভাবলো ছেলেটাকে একটু শুশ্রুষা করবে কিন্তু সে নিজেই নড়তে পারছে না। মায়া দেখানোর জন্য পৃথিবীর সবচেয়ে অনুপযোগী স্থান এটা।

    পা দুটো ছড়িয়ে একটু শোয়ার চেষ্টা করলো ফজর। পা সোজা করতে গিয়েই পা ঠেকলো একজনের বুকে। সেই লোকটি উঠে বসলো, চেহারাটা দেখলেই ভয় ধরে যায়। লোকটির চেহারা খারাপ নয় কিন্তু কোনো কারণে যে ভয়াল একটা ব্যাপার তার চেহারায় আছে তা বোঝা যায় না। লোকটি সিগারেট টানছিল, ফজরের দিকে তাকিয়ে তুই করে সম্বোধন করে বলল, ‘কী করছস?’

    ‘মাপ করে দেন ভাই, আমি আপনেরে দেখি নাই, পা বেদনা করতাছিল, একটু ছড়াইয়া দিতে চাইছিলাম।’

    ‘এইটা তোর শ্বশুরবাড়ি পাইছোছ? পা চ্যাগাইয়া আরাম করবি। শ্বশুরবাড়ি যাইবি পরশু, তখন আরাম করিছ। আমি জিগাইলাম, কী কইরা আইছস? রেইপ কেইস?’

    ‘আমি কিছু করি নাই।’

    লোকটা হঠাৎ হো হো করে হেসে উঠলো। তারপর বলল, ‘তাইলে তোর শ্বশুর বাড়ি যাওয়া নিশ্চিত। আমি তিনডা খুন করছি, ঢাকায় যেই কোনো চিপায় গিয়াও আমার নাম কইলে চিনবো, নাদির গুন্ডা। এদিকের পুলিশ আমারে চিনে না, এই জন্যই ভিতরে বইসা আছি, একটু পরেই আমি গারদের ঐ পাশে থাকমু। এইখানে যারা কিছু করে না, তারাই ফাইসা যায়।’

    একটু থেমে তারপর আবার বলল, ‘দেইখা তো মনে হয় টাকা- পইসাও নাই, বাড়িতে জমিজমা আছে?’

    ‘ভিটাবাড়ি আছে।’

    ‘তুই শেষ। কী কাম করছ?’

    ফজর মাথা নোয়ালো, কিন্তু কিছু বলল না। নাদির গুন্ডা আবারো হো হো করে হেসে উঠলো। এই লোকটা হাসতে পারে, মন খুলে হাসে। তারপর বলল, ‘তোর নজর দেইখাই বুঝছি, তোর মতো ভ্যান্দা তো ডাকাতি করতে পারবি না, সিঁদ কাইটা চুরি করস?’

    ফজর মাথাটা নুইয়েই রাখলো। ভদ্র মানুষের ভিড়ে নিজের পরিচয় নিয়ে কখনো লজ্জিত হয়নি সে, অথচ চোরডাকাত খুনিদের মাঝে বসে সে নিজের পরিচয়ের জন্য লজ্জা পাচ্ছে। কারণ যেদিন রাতে সে মজিদের গায়ে হাত দিয়ে কসম কেটেছে, সেদিন থেকে সে নিজেকে আর চোর মনে করে না। নাদির গুন্ডা চুপ থাকতে দেখে ফজরকে জিজ্ঞাসা করলো, ‘বাইত কে কে আছে?’

    ‘বউ আর পোলা আছে।’

    নাদির গুন্ডা হিংস্র মানুষ কিন্তু শুধু তার শত্রুদের জন্য। আপনজনদের জন্য তার ভালোবাসা অপরিসীম। কিন্তু সমস্যা হলো তার আপনজন বলতে কেউ নেই, পরিবার নেই তার। মা-বাবার নাম পর্যন্ত মনে নেই তার। বিয়ে করতে চেয়েছিল একবার কিন্তু পাত্রী শেষ মুহূর্তে পালিয়ে যায়। তারপর আর বিয়ে শাদির পথ মাড়ায়নি সে। কিন্তু কারো পরিবারের কথা শুনলেই মন নরম হয়ে যায় তার। নাদির গুন্ডা সিগারেটের একটা প্যাকেট ফজরের দিকে ছুড়ে মারলো। ফজর প্যাকেট হাতে নিয়ে বলল, ‘আমি তো তামুক বিড়ি খাই না।’

    নাদির শুয়ে চোখ বন্ধ করে বলল, ‘তোরে খাওয়ার লাইগা দেই নাই। কাইলকা তোরে জেলহাজতে পাঠাইবো। ঐখানে কামে লাগবো। লুঙ্গির কোঁচায় লুকাইয়া রাখিস। অহন ঠ্যাং সরা, আমি গেলে ঠ্যাং ছড়াইয়া ঘুমাইস।’

    ফজর ভেবে পেলো না, এই লোকটা কীভাবে যাওয়ার কথা বলে, তেমন কোনো লক্ষণই দেখা যাচ্ছে না। আর সিগারেটের প্যাকেটই বা কী কাজে লাগবে?

    একটু পরে তালা খুলে একজন হাবিলদার বলল, ‘আসেন।’

    ‘নাদির কে?’

    নাদির বের হওয়ার সময় ফজরের দিকে একটা মুচকি হাসি দিয়ে চলে গেল। লোকটাকে প্রথম যেমন হিংস্র দেখাচ্ছিলো এখন তেমন লাগছে না।

    রাত গভীর হওয়ার আগেই অনেক নরকবাসী মুক্তি পেলো। ডাকাত-খুনি সব চলে গেল, পড়ে রইলো নিরীহ ফজর আলী, চশমা পরা ছেলেটি আর গাজার নেশায় অচেতন কিছু মানুষ। চশমা পরা ছেলেটির জ্ঞান ফিরেছে, সে চোখমুখ শক্ত করে এক কোণায় বসে আছে। ফজর তার কাছে গিয়ে বলল, ‘এখন কেমন লাগতাছে?’

    ছেলেটি খুব বিরক্তি নিয়ে তাকালো কিন্তু কিছু বলল না, তার চশমার ডান দিকের কাঁচটি হাবিলদারের রুলারের আঘাতে ফেঁটে গিয়েছে। ফজর আলী একটু বিব্রত হলো কিন্তু হাল ছাড়লো না, পকেট থেকে সিগারেট বের করে সামনে এগিয়ে দিয়ে বলল, ‘বিড়ি খাইবেন?’

    ছেলেটির কপালে বেশ কয়েকটি ভাঁজ পড়ল, বিরক্তির মাত্রা বুঝালো যেন। ফজর আলী আরো কিছু বলার আগেই, একটা লোক এলো গারদের সামনে। লোকটা পুলিশ নয়, মধ্যবয়স্ক একজন লোক। গায়ের পোশাকে বেশ সম্ভ্রান্ত মনে হয়। লোকটিকে দেখেই ছেলেটি ধড়ফড় করে উঠলো। সামনে এগিয়ে গিয়ে বলল, ‘চাচা আমারে বের করেন, দোহাই চাচা এইখানে থাকলে বাঁচবো না চাচা। আপনি যা বলবেন আমি মাথা পাইতা নিবো।’

    লোকটি হুঙ্কার দিয়ে উঠলো, ‘শুয়োরের বাচ্চা, শরম করে না আবার আমারে চাচা ডাকতে। তুই লজিং মাস্টার হইয়া কোন সাহসে আমার মাইয়ারে লইয়া ভাগছস? আমার মাইয়াডার বয়স কম, বুঝে না, তুই হারামজাদা কোন সাহসে গেছস? তোরে আমি জেলের ভাত খাওয়ামু কুত্তার বাচ্চা।’

    লোকটি চলে গেল, ছেলেটি হাত পা এলিয়ে বসে পড়ল, তার সব আশার সলিল সমাধি ঘটলো। সে ফজরের হাতের প্যাকেট থেকে একটা সিগারেট নিয়ে ঠোঁটে দিলো, কিন্তু ধরানোর জন্য কোনো আগুন পেলো না। সিগারেটটি ঠোঁট থেকে ছুড়ে ফেলে হাঁটুতে মুখ গুঁজে কাঁদতে লাগলো।

    ফজর হাত-পা ছড়িয়ে শুয়ে পড়ল। ছাদের দেয়ালে পলেস্তারা ঝুলে আছে, যেকোনো সময় পড়বে। ছেলেটি এখনো কাঁদছে, মেয়েটির জন্য নিশ্চয়ই কাঁদছে না। জেলে হাজতে নিজের চিন্তা ছাড়া অন্য কারো চিন্তা মাথায় আসে না। কিন্তু ফজরের আমেনা আর মজিদের কথা মনে হলো। কী করছে তারা? মজিদ কি তার মাকে জিজ্ঞাসা করছে না বাজানের কথা? আমেনা কি বলবে ছেলেকে? ঘরে চাল ছিল না, তারা কি খেয়েছে, কী খাবে? অজান্তেই ফজরের চোখ বেয়ে জল নেমে এলো। এই হাজতের নরক পুষ্পতুল্য, আসল নরক তো তার বুকে।

    দারোগাসাহেব খুবই কৃতজ্ঞ মানুষ, জোয়ার্দারসাহেবকে রুই মাছের মাথা আর খাসির গোশতের প্রতিদান ঠিকই দিলো। ফজরের নামে স্বদ্যোগে কল্পিত চার-পাঁচটা মামলা তৈরি করে ফেলল। দারোগার খাতায় ফজরের পদোন্নতি হলো, চোর থেকে ডাকাত হলো।

    জোয়ার্দারসাহেব ভুলোমনা মানুষ। ছোটো গিন্নীর আহ্লাদে তার থানায় গিয়ে মামলা তুলে ফেলার কথা ভুলেই গেলেন। আয়েশে পান চাবাতে চাবাতে গিন্নীকে বললেন, ‘তোমার পানে এত মধু কেন? সব ভুইলা যাই, কী জানি একটা কাম আছিল মনে পড়তাছে না।’

    গিন্নী হেসে বলল, ‘মনে না পড়লে, জরুলী কিছু না। আরেক খিলি পান দেই?’

    আদালতেও একটা হাজত আছে, সেটা প্রয়োজনের তুলনায় অতিরিক্ত ছোটো। যারা বানিয়েছে তারা হয়তো ধারণা করেনি প্রতিদিন এত অতিথির আনাগোনা হবে। যথারীতি গাজা-বিড়ির গন্ধে নিঃশ্বাস নেয়া দায়। এখানে দাঁড়িয়ে থেকেও গায়ে গা লেগে যাচ্ছে। একজনের ঘামে আরেকজনের শরীর লেপ্টে যাচ্ছে। ফজর নাকটা উঁচিয়ে কোনোরকমে শ্বাস নিচ্ছিলো। কথাবার্তা, চিৎকার চেঁচামেচি, কান্না আর্তনাদের মাঝেও ফজর নিজের নামটা শুনতে পেলো। ‘ফজর আলী, বাপকা নাম কসর আলী, ইধার আও। তোমহারা নম্বর আয়া হায়।’

    আদালতের মধ্যেও কোলাহলটা কম ছিল না। একজন ছোটো- খাটো মানুষ একটা বড়োসড় চেয়ারে বসে আছেন, তার পেছনে একজন পেয়াদা, উপরে একটা ছবি। ছবির লোকটি আইয়ুব নয়তো ইয়াহিয়া হবে। ফজরের কাছে আইয়ুব, ইয়াহিয়া একই বস্তু। তাদের কাউকেই সে চিনে না। তারাও ফজর আলীদের চিনে না। ফজর আলী দাঁড়িয়ে সবার মুখ দেখছিল, কালো আলখেল্লা পরা লোকগুলো বেশি চেঁচামেচি করে। কে কী বলল কিছুই বুঝলো না ফজর। চেয়ারে বসা ছোটোখাটো লোকটি কি কিছু বুঝছে? তাকে কেউ কিছু জিজ্ঞাসাও করলো না, যদি কিছু না বলবে তো ডেকে আনলো কেন? ফজর আলী ভিড়ের মধ্যে আমেনা আর মজিদকে খুঁজতে লাগলো। ঘোমটা পরা কোনো মহিলা দেখলেই তার বুকটা ধক করে উঠে, বাচ্চাদের কান্না শুনলে শুধু মনে হয় মজিদ কাঁদছে। চোখগুলো ক্লান্ত হয়ে গেল, মানুষগুলো মুখস্ত হয়ে গেল কিন্তু মজিদ আর আমেনাকে খুঁজে পেল না।

    অনেকক্ষণ পরে চেয়ারে বসা লোকটি বিড়বিড় করে কী যেন বলল, যা বোঝার সাধ্য ফজরের নেই। দুইজন পুলিশ এসে ফজরকে নামিয়ে নিয়ে গেল। ফজর কিছু বুঝতে না পেরে একজনকে বলল, ‘কী কইছে?” ‘তোর নামে ডাকাতির মামলা চলবো। সাজা না হওয়া পর্যন্ত জেলে থাকবি।’

    ‘আমি তো ডাকাতি করি নাই।’

    পুলিশ দুটি হেসে উঠলো, একজন বলল, ‘সবাই তাই কয়। ট্যাকা পইশা আছে কিছু? থাকলে ক, আমার পরিচিত ভালা উকিল আছে। জামিন কইরা ফেলবো।’

    ফজর আলী ফ্যাল ফ্যাল করে চেয়ে থাকলো তাদের মুখের দিকে। সময়ের প্রবাহে এবং আদালতের কাঠগড়া মাড়াতে মাড়াতে ফজর

    বেশ অভ্যস্ত হয়ে গেল। কারাগার থেকে আদালতে যাওয়ার সময় রাস্তায় মিছিল দেখতো। ছেলেগুলোর গলার রগ ফুলে উঠতো, তাদের মুখে কী অদ্ভুত এক তেজ দেখা যেত। ফজর গাড়ির ফাঁক দিয়ে যতক্ষণ দেখা যায় দেখতো। একটা নাম সে প্রায় শুনতো, সেটা হচ্ছে, শেখ মুজিব। পুলিশদের জিজ্ঞাসা করতো, ‘ভাই কীসের মিছিল?’

    পুলিশরা প্রায় সময়ই কিছু বলতো না, অগ্রাহ্য করে অতি মনোযোগ সহকারে দাঁত খিলাল করতো। মাঝেমধ্যে কিছু পুলিশ উত্তর দিতো, ‘ছাত্রদের মিছিল, সামনে নির্বাচন। শেখসাহেব ক্ষমতায় আসলে নাকি গরীবের উন্নতি হইবে। পুবের টাকা পশ্চিমে যাইবে না। পুবের মানুষ চাকরি পাইবে, জোয়াতদারী, জমিদারী বন্ধ হইবে, চাষীরা জমি পাইবে।’

    মজিদের মুখ অকারণেই উজ্জ্বল হয়ে উঠতো। তার ভবিষ্যত কাটবে জেলে, কিন্তু মজিদ, মজিদকে চুরি করে খেতে হবে না। ভাবতে না ভাবতেই পাশের আরেকজন পুলিশ বলে উঠে, ‘কচু হবে, সব ক্ষমতার ধান্ধা। বেয়াদ্দপ পোলাপাইন ইসলাম ধ্বংস করার জন্য নামছে, ভারত করাইতাছে এইসব। শুক্রবারেও মসজিদে গিয়া মাথা ঠেকায় না, আছে শুধু মিছিল লইয়া।’

    ফজর এতকিছু বুঝে না, তার স্বপ্ন দেখতে ভালো লাগে, ভালো লাগার মতো আর কিছু নেইও তার। মানুষ যখন হতাশার চূড়ান্ত স্থানে পৌঁছে যায় তখন তার মনে আবার নতুন করে আশা জাগে। তখন সে স্বপ্ন দেখে, মনকে প্রবোধ দেয়। ফজরও ভাবছে তার মজিদ ভালোই আছে, আমেনা শক্ত মেয়ে, সে কোনো না কোনোভাবে ঠিকই সামলে নিয়েছে। কীভাবে নিয়েছে তা মজিদ ভেবে কূল পায় না কিন্তু তবুও মনে মনে সে বিশ্বাস করা শুরু করলো, মজিদ আর আমেনা ভালো আছে। মজিদ এখনো পাখির পেছনে দৌড়ে বেড়ায়, পেয়ারা গাছের ডালে এখনো ঝুলে থাকে, পুকুরে গোসল করতে করতে দুপুর পেরিয়ে যায়, তার মা তাকে ডাকে, ‘ও মজিদ মুরগী জবাই দিছি, আলু দিয়া সালুন রানছি। আয় বাপ ভাত খাইয়া যা।’ সন্ধ্যাবেলা মজিদ বসে থাকে দাওয়ায়, তার মাকে বলে, ‘মা বাজান কবে আইবো।’ ফজর এখানে ভাবনার লাগাম টেনে ধরে। সে কবে যেতে পারবে? নিজের মনে প্রশ্ন করে যায়, কিন্তু কোনো উত্তর পায় না।

    আজকে ফজরের মামলার রায়। জজসাহেব রায় দিলেন, কী দিলেন তা ফজর ছাড়া সবাই বুঝতে পারলো, কিন্তু কারো কোনো বিকার নেই। ফজর দাঁড়িয়ে থাকা এক পুলিশকে জিজ্ঞাসা করলো, ‘কয় বছর?’

    পুলিশটি নির্বিকারভাবে বলল, ‘পাঁচ বছর, সাথে এক হাজার টাকা জরিমানা। দিতে না পারলে আরো ছয়মাস।’

    ফজর একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো, সাড়ে পাঁচ বছর। ততদিনে মজিদ অনেক বড়ো হয়ে যাবে, তাকে কি তখন চিনবে? আমেনা কি অপেক্ষা করবে? কত প্রশ্ন আসে মনে। জেলখানার কথা মনে হতেই কেন যেন নিঃশ্বাস আটকে গেল ফজরের। সাড়ে পাঁচ বছর কীভাবে থাকবে সে।

    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleনীল পাহাড় – ওবায়েদ হক
    Next Article রুবাইয়্যাৎ – ওমর খৈয়াম

    Related Articles

    ওবায়েদ হক

    নীল পাহাড় – ওবায়েদ হক

    July 17, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Demo
    Most Popular

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Our Picks

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    দ্য দা ভিঞ্চি কোড – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025

    এঞ্জেলস এন্ড ডেমনস – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    Sign In or Register

    Welcome Back!

    Login below or Register Now.

    Lost password?

    Register Now!

    Already registered? Login.

    A password will be e-mailed to you.