Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • English Books
      • Jules Verne
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    থানা থেকে আসছি – অজিত গঙ্গোপাধ্যায়

    লেখক এক পাতা গল্প97 Mins Read0
    ⤶ ⤷

    থানা থেকে আসছি – তৃতীয় অঙ্ক

    তৃতীয় অঙ্ক

    (ঐ একই ঘর। দ্বিতীয় অঙ্কের যেখানে শেষ, তৃতীয় অঙ্কের সেখানে আরম্ভ। তাপসের দিকে সকলে তাকাইয়া আছেন)

    তাপস : আপনি বোধহয় এতক্ষণে সবই জানতে পেরেছেন—না?

    তিনকড়ি : শুধু আমি নয় তাপসবাবু—এঁরা সবাই—

    (তাপস দরজা বন্ধ করিয়া দিয়া অগ্রসর হইয়া আসিল।)

    রমা : তাপস, কি বলছিস তুই! এখানে কি কথা হয়েছে, তা তুই জানিস?

    শীলা : না জেনেছে, ভালই হয়েছে মা—

    তাপস : কেন?

    শীলা : এইমাত্র মা তিনকড়িবাবুকে বলছিল, মেয়েটির ঐ অবস্থার জন্যে যে দায়ী, তাকে সোজা নিয়ে গিয়ে আদালতে তুলতে—

    তাপস : মা!

    রমা : আমি কি করে জানব বল? আমি স্বপ্নেও ভাবিনি তুই এ-কাজ করতে পারিস তাপস। তাছাড়া শুনলাম—লোকটা মাতাল—

    শীলা : ছোড়াদও তো মদ খায় মা, আমি তো তোমায় একটু আগেই বললাম।

    তাপস : (ত্রুদ্ধস্বরে) কেন বললি তুই?

    শীলা : তুই মিথ্যে রাগ করছিস ছোড়দা। এতদিন কি কিছু বলেছি? আজ দেখলাম—আমি বলি আর না বলি, জানতে সকলে পারবেই! তাই মাকে আগে থাকতে জানিয়ে দিলাম! আর তুই কি ভাবছিস আমি পার পেয়েছি,—আমিও পার পাইনি।

    রমা : শীলা, তোর ভাবটা কি বলতো—

    চন্দ্রমাধব : কি জানি! আমি রইলাম, তোর মা রইল—তাপস তোর ছোড়দা—

    তিনকড়ি : (মিসেস সেনকে) দেখুন, আপনাদের এই ঘরোয়া ঝগড়াটা না হয় পরেই সারবেন! এখন দয়া করে একটু চুপ করুন। (তাপসকে দেখাইয়া দিয়া) ওঁর কি বলবার আছে শুনতে দিন। (পকেট হইতে সিগারেট কেস ও দেশলাই বাহির করিয়া তাপসের দিকে বাড়াইয়া দিলেন) নিন, ধরান—

    (তাপস হাত বাড়াইয়াছিল, কিন্তু পিতার মুখের দিতে তাকাইয়া ইতস্তত করিয়া হাত সরাইয়া লইল।)

    চন্দ্রমাধব : (ধমকের সুরে) তাপস, তেরা কি কোন কাণ্ডজ্ঞান নেই! আমি রয়েছি, তোর মা রয়েছেন—

    তিনকড়ি : (এইবার তাঁহার ধৈর্যচ্যুতি হইয়াছে) দেখুন মশাই—সিগারেট তো ছোট কথা, তাপসবাবু মদ খান—তিনি একটি পাকা মাতাল। আপনার সামনে একটা সিগারেট খেলে মহাভারতটা এমন কিছু অশুদ্ধ হয়ে যাবে না। দেখতে পাচ্ছেন, ওঁর কপালসুদ্ধ ঘেমে উঠেছে, সিগারেট এখন ওঁকে অনেক হেল্প করবে। (তাপস ইতস্তত করিতেছে দেখিয়া) নিন নিন—আমি বলছি, আপনি ধরান না—(জোরে ধমক দিয়া উঠিলেন) — আবার বসে থাকে! ধরান—

    (তাপস একবার তিনকড়িবাবুর মুখের দিকে তাকাইয়া সত্যিই কেস হইতে একটি সিগারেট লইয়া ধরাইল।)

    তাপস : (তিনকড়িবাবু সিগারেট কেস পকেটে পুরিলেন) আপনি?

    তিনকড়ি : আমি অন ডিউটি স্মোক করি না।

    তাপস : (ধোঁয়া ছাড়িয়া) দেখুন, একটু আগে আপনার অনেক কথা বুঝতে পারিনি, কিন্তু এখন বেশ পরিষ্কার মনে হচ্ছে—

    তিনকড়ি : (রূঢ়স্বরে) আগের কথা আগে হয়ে গেছে, তাপসবাবু, এখন আপনার কথা বলুন। মেয়েটির সঙ্গে আপনার প্রথম দেখা হয়েছিল কবে?

    তাপস : গেল বছর নভেম্বর মাসে—

    তিনকড়ি : কোথায়? (তাপস নিরুত্তর) শুনতে পাচ্ছেন না—কোথায় দেখা হয়েছিল?

    তাপস : (সিগারেটটা ফেলিয়া দিয়া, একবার চন্দ্রমাধব আর মিসেস সেনের মুখের দিকে তাকাইল। এরপর তিনকড়িবাবুর মুখের দিকে চাহিয়া মরিয়া হইয়া বলিয়া ফেলিল) চিৎপুরে একটা মদের দোকানের পাশে—

    তিনকড়ি : তারপর? থামলেন কেন? বলে যান—

    তাপস : দোকান থেকে বেরিয়ে ট্যাক্সিতে উঠেছি, এমন সময় দেখি একটি মেয়ে! নেমে গিয়ে কথাবার্তা কইলাম, বললাল ট্যাক্সিতে উঠে আসতে। রাজী হল না—

    তিনকড়ি : রাত তখন ক’টা?

    তাপস : ঠিক মনে নেই—তবে দশটা বেজে গিয়েছিল।

    তিনকড়ি : মেয়েটি কি বললে?

    তাপস : খুব ভাল মনে নেই। কি যেন বললে—তার থাকবার জায়গা নেই না কি—আগে যে ম্যাসাজ ক্লিনিকে কাজ করত, সেখানকার একটি মেয়ে নাকি তাকে ওখানে অপেক্ষা করতে বলেছে—

    তিনকড়ি : ও, তারপর সে বুঝি আপনার গাড়িতে উঠে এল?

    তাপস : প্রথমে রাজী হয়নি, তারপর পুলিশের ভয় দেখাতে উঠে এল—

    তিনকড়ি : তাহলে, মেয়েটি যে ও-রাস্তায় নতুন—তা বেশ বুঝতে পেরেছিলেন?

    তাপস : হ্যাঁ, কি জানি কেন দেখেই মনে হয়েছিল—একেবারে সাধারণ রাস্তায়-দাঁড়ানো মেয়ে এ নয়।

    তিনকড়ি : কোথায় নিয়ে তুললেন তাকে?

    তাপস : কাছাকাছি—আমারই এক চেনা বাড়িতে, দু’খানা ঘর খালি ছিল, তারই একটাতে—

    তিনকড়ি : তারপর, তখন বাড়ি ফিরে এলেন? (তাপসকে নিরুত্তর দেখিয়া উত্তর দিচ্ছেন না যে, বলুন তখনি কি বাড়ি ফিরে এলেন?

    তাপস : না।

    তিনকড়ি : তবে কখন?

    তাপস : (মুখ নীচু করিয়া) প্রায় ঘন্টা দুয়েক বাদে। (ব্যাকুল কণ্ঠস্বরে) তিনকড়িবাবু, মেয়েটির হয়ে আপনি আমাকে ক্ষমা করে যান—আমি অতি হতচ্ছাড়া!

    তিনকড়ি : (এতটুকু বিচলিত না হইয়া) কেন, আপনার মতো লোকেরা তো এই রকমই করে থাকে—

    তাপস : না না, আপনি বুঝতে পারছেন না—আমি লম্পট, আমি বদমায়েশ—কিন্তু সেদিনের মতো জঘন্য কাজ আমি কোনদিন করিনি! জানেন, সে রাতে তার ঘরে ঢুকে—কি করেছি না করেছি, কিচ্ছু আমার মনে ছিল না। তখন আমি কাণ্ডজ্ঞানহীন, চূড়ান্ত মাতাল—(দুই হাতে মুখ ঢাকিয়া) ওঃ how stupid it all is!

    রমা : (শিহরিয়া উঠিয়া) তাপস—এ তুই কি করেছিস—

    চন্দ্রমাধব : (শীলাকে দেখাইয়া দিয়া) শুনছ তোমরা একটু ভেতরে যাও তো—

    শীলা : কিন্তু বাবা—

    চন্দ্রমাধব (জোরে ধমক দিয়া উঠিলেন) শীলা, যা বলছি তাইশোন, — তোর মাকে নিয়ে ভেতরে যা—(চন্দ্রমাধব দরজা খুলিয়া ধরিলেন। শীলা মাকে লইয়া বাহির হইয়া গেল।)

    তিনকড়ি : তারপর, আবার কবে দেখা হল আপনাদের?

    তাপস : প্রায় দিন চোদ্দ বাদে—

    তিনকড়ি : আপনি কি ওঁর কাছেই যাবার জন্যে বেরিয়েছিলেন?

    তাপস : না, আমার ভাল মনেই ছিল না। ওখান দিয়ে যেতে যেতে হঠাৎ মনে পড়ে গেল। দেখলাম সেই ঘরটাতেই আছে—আমি যা টাকা দিয়ে এসেছিলাম, তাতেই চলছে—

    তিনকড়ি : সেদিনও বোধহয় খুব প্রকৃতিস্থ ছিলেন না?

    তাপস : সেদিন তখনও মদ খাইনি—

    তিনকড়ি : কি কথাবার্তা হল সেদিন?

    তাপস : প্রথমে সে আরম্ভ করল—তার নিজের কথা। তার বাপ-মা নেই—আগে চাকরি করত, তারপর চাকরি যায়। শেষে ম্যাসাজ ক্লিনিক, তারপর রাস্তায়—

    তিনকড়ি : কত রাত অবধি ছিলেন সেদিন?

    তাপস : ঠিক মনে নেই—তবে ফিরতে বারোটা পেরিয়ে গিয়েছিল—

    তিনকড়ি : আচ্ছা আপনি যে এত রাত করে বাড়ি ফেরেন, বাড়িতে কেউ কিছু সন্দেহ করে না?

    তাপস : না, বাড়িতে জানে আমি ক্লাবে থাকি —

    তিনকড়ি : (চন্দ্রমাধবের দিকে দেখিয়া) ও, তা বেশ!—(তাপসের দিকে ফিরিয়া) হ্যাঁ তারপর—সেদিন কি মনে হল, মেয়েটিকে আপনি ভালবেসে ফেলেছেন?

    তাপস : দেখুন—মানে—ভালো তাকে আমি সেদিনও বাসিনি—তার পরেও না।

    তিনকড়ি : তবে?

    তাপস : মানে — কি বলব —মানে — কি রকম একাট চোখে লেগে গিয়েছিল —

    তিনকড়ি : ও, যেই না চোখে লেগে যাওয়া, অমনি তার ঘরে রাত কাটাতে আরম্ভ করলেন, কেমন?

    তাপস : (ক্ষুব্ধ স্বরে) হ্যাঁ করলাম—দেখে বুঝতে পারছেন না আমারও বিয়ের বয়স হয়েছে—

    তিনকড়ি : ও, তাহলে আপনাদের বিয়ের বয়স হলেই একটি করে মেয়েকে কার্বলিক অ্যাসিড খেতে হবে—কেমন?

    তাপস : (লজ্জিত হইয়া) না—মানে—

    চন্দ্রমাধব : কিন্তু বিয়ে যদি করবার ইচ্ছেই হয়েছিল, তো আমাকে বলিসনি কেন হতভাগা?

    তাপস : (ক্ষুব্ধস্বরে) তোমাকে কি বলল বাবা, তুমি এমনিতেই তো গাধা-বাঁদর ছাড়া কথা বল না। বিয়ের কথা বললে তো বাড়ি থেকে তাড়িয়েই দিতে—

    চন্দ্রমাধব : (গর্জন করিয়া) তুই বলে দেখিসনি কেন?

    তিনকড়ি : (তাপস কি বলিতে যাইতেছিল, বাধা দিয়া চন্দ্রমাধবকে) থাক, ছেলের পাকা-দেখাটা না হয় আমি যাওয়ার পরই সেটল করে নেবেন। (তাপসকে) হ্যাঁ, তারপর থেকে রোজই যেতে আরম্ভ করলেন, কেমন?

    তাপস : হ্যাঁ।

    তিনকড়ি : তারপর, আসল খবরটা কবে জানতে পারলেন?

    তাপস : তখন বোধহয় মার্চের লাস্ট উইক। একদিন গিয়ে শুনলাম— মানে—(পিতার দিকে চাহিয়া থামিয়া গেল)

    তিনকড়ি : যে, you are going to be a father, এই তো?

    তাপস : (মুখ নীচু করিয়া) হ্যাঁ।

    তিনকড়ি : তার মনের অবস্থাটা কি রকম দেখলেন?

    তাপস : দেখলাম খুব ভাবনায় পড়েছে! আমার ভাবনাটাও অবিশ্যি কম হয়নি—

    তিনকড়ি : সে আপনাকে বিয়ের কথা কিছু বলেছিল?

    তাপস : না। তাকে বিয়ে করার ইচ্ছে আমার নিজেরও ছিল না— তবে বললে কি করতাম বলা যায় না। সে কিন্তু একবারও বলেনি।

    তিনকড়ি : আপনি একবারও বলেন নি?

    তাপস : না।

    তিনকড়ি : আচ্ছা, কেন সে বলেনি, বলতে পারেন?

    তাপস : না—ঠিক বলতে পারি না। তবে তার কথায়-বার্তায় মনে হত—সে যেন আমাকে কি রকম ছেলেমানুষ বলে মনে করে—

    তিনকড়ি : তারপর, আপনি কি করবেন বলে ঠিক করলেন?

    তাপস : আমি আর কি করতে পারি বলুন? তবে দেখলাম, তার চাকরি-বাকরি নেই, আর চেষ্টা করে বোধহয় কিছু পাবেও না— তাই মাঝে মাঝে কিছু টাকা দিয়ে আসতাম। শেষ পর্যন্ত তাও আর সে নিতে রাজী হল না।

    তিনকড়ি : সবশুদ্ধ কত টাকা দিয়েছিলেন তাকে?

    তাপস : একবার দেড়’শ, আর একবার দু’শ—সবশুদ্ধ সাড়ে-তিন’শ। এর পরেও একবার দু’শ টাকা নিয়ে গিয়েছিলাম, কিন্তু সে নিতে রাজী হয়নি।

    চন্দ্রমাধব : কিন্তু ওই এক-একবারে দেড়’শ-দু’শ করে টাকা পেতিস কোত্থেকে তুই?

    তিনকড়ি : (তাপসকে নিরুত্তর দেখিয়া) বলুন তাপসবাবু, কোত্থেকে পেতেন?

    তাপস : (মুখ নীচু করিয়া) অফিস থেকে…

    চন্দ্রমাধব : অফিস থেকে? মানে—আমার অফিস থেকে?

    তাপস : হ্যাঁ।

    চন্দ্রমাধব : তার মানে—টাকাটা তুই চুরি করতিস?

    তাপস : না, মানে ঠিক চুরি নয়—

    চন্দ্রমাধব : তার মানে? চুরি ছাড়া আর কি বলব ওকে?

    (শীলা ও মিসেস সেনের প্রবেশ)

    শীলা : আমার কিন্তু কোন দোষ নেই বাবা—

    রমা : (ব্যাকুল স্বরে) সত্যি, আমি আর থাকতে পারলাম না—তার পর কি হল গো!

    চন্দ্রমাধব : কি হয়েছে শুনবে? মেয়েটার ঐ অবস্থার জন্যে দায়ী তোমার ঐ গুণধর ছেলে! আবার এলেম কত? উনি আবার অফিস থেকে টাকা চুরি করে তার হাতে দিয়ে আসতেন!

    রমা : তাপস—তুই চুরি করতিস!

    তাপস : টাকা আমি পরে শোধ করে দিতাম—

    চন্দ্রমাধব : ও গল্প আমরা অনেক শুনেছি! কোত্থেকে শোধ করতে শুনি?

    তাপস : সে আমি যেখান থেকে হোক শোধ করে দিতাম।

    চন্দ্রমাধব : কিন্তু এই যে খেপে খেপে তুই টাকা নিতিস—কেউ জানতে পারেনি?

    তাপস : না। এগুলো ছোটখাট অ্যাকাউন্ট—আমি নিজেই কালেক্ট করে অফিসিয়াল রিসিট দিয়ে দিতাম।

    চন্দ্রমাধব : বেশ করতে! এখন দয়া করে ওগুলোর একটা লিস্ট আমাকে দিও, আমায় দেখতে হবে তো কোথায় কি করে বসেছ। ওঃ—এত কাণ্ড করার আগে তুই আমার কাছে আসিসনি কেন হতভাগা!

    তাপস : কি জানি বাবা—অনেকবার অনেক মুশকিলে পড়েছি, কিন্তু কখনো মনে হয়নি তোমার কাছে যাই!

    চন্দ্রমাধব : তা মনে হবে কেন? এখন যে রাস্তার লোক এসে দাঁড়িয়েছে তোমার জন্যে? তোমার আসল মুশকিলটা কোথায় জান? আদরে আদরে একটি বাঁদর তৈরি হয়েছ!

    তিনকড়ি : (রূঢ়স্বরে) দেখুন, আমিও বড়ো মুশকিলে পড়েছি—আমার হাতে আর সময় বেশি নেই। কে কতটা বাঁদর তৈরি হয়েছে সে হিসেবটা না হয় আমি চলে গেলেই করবেন! আমার আর একটাই প্রশ্ন আছে তাপসবাবু—মেয়েটি কি জানতে পেরেছিল, আপনি যে টাকাটা দিচ্ছেন, সেটা আপনার নিজের নয়—চুরির?

    তাপস : হ্যাঁ, কি জানি কেন, তার মনে হয়েছিল—টাকাটা আমার নিজের নয়। ওঃ—আজ আমার নিজেকে এত ছোট বলে মনে হচ্ছে! যেদিন জানতে পারল — টাকাটা তো নিলই না—উলটে আমাকে পর্যন্ত যেতে বারণ করে দিল—পরদিন গিয়ে আর তার কোন খোঁজই পেলাম না। কিন্তু আপনি—আপনি কি করে জানলেন? সে আপনাকে বলেছে?

    তিনকড়ি : না তাপসবাবু।—আমার সঙ্গে যখন তার দেখা হয়েছে তখন সে জ্যান্ত নয়, লাস।

    শীলা : মেয়েটি মার কাছে এসেছিল ছোড়দা—

    রমা : শীলা!

    শীলা : চেপে রাখার কথা ওটা নয় মা। ছোড়দারও জানা দরকার।

    তাপস : সে তোমার কাছে এসেছিল মা?— তোমার কাছে? এখানে? কিন্তু এখানকার ঠিকানা তো সে জানত না! (মিসেস সেনকে নিরুত্তর দেখিয়া) চুপ করে ওভাবে তাকিয়ে আছে কেন মা? বল—যাহোক কিছু বল—কী হয়েছিল কি—(চীৎকার করিয়া) মা!

    তিনকড়ি : আমি আপনাকে বলছি তাপসবাবু। মেয়েটি নারী-স,হায়ক সমিতির কাছে গিয়েছিল সাহায্য চাইতে। আপনার মা ঐ সমিতির প্রেসিডেন্ট। উনি কমিটিকে দিয়ে না-বলিয়ে দিয়েছিলেন।

    তাপস : (স্রোধে, ক্ষোভে, লজ্জায় ভাঙিয়া পড়িয়া) তাহলে তুমি—তুমিই তাকে মেরেছ মা! আমাকে আড়াল করবার জন্যে সে তোমাদের সমিতির কাছে গিয়েছিল—তুমি তাকে তাড়িয়ে দিলে মা! তুমি নিজে সন্তানের মা—একবার ভাবলে না—সেও সন্তানের মা হতে চলেছে, ছিঃ মা ছিঃ—

    রমা : (ব্যথিত স্বরে) আমি জানতাম না তাপস, সে তোর-মানে আমি বুঝতে পারিনি—ওরে, সত্যি আমি বুঝিনি!

    তাপস : কোন জিনিসটা কবে তুমি বুঝতে পেরেছ বলতে পার? কি করে বুঝবে? বুঝতে চেয়েছ কোনদিন? (সমস্ত ভুলিয়া গিয়া রমাদেবীর দিকে অগ্রসর হইয়া আসিতে আসিতে) কি বলব তোমাকে—

    শীলা : (ভীতস্বরে) ছোড়দা—ছোড়দা—

    চন্দ্রমাধব : (ত্রু�দ্ধস্বরে তাপসের সম্মুখে গিয়া) গাধার মত চেঁচাতে তোর লজ্জা করছে না হতচ্ছাড়া? আর একটা কথা তোর মুখ দিয়ে বার হোক! দেখ—তোকে আমি কি করি—

    তিনকড়ি : (সকলের কণ্ঠস্বরকে চাপা দিয়া) চুপ, চুপ সকলে। কারো মুখ থেকে আর একটাও কথা আমি শুনতে চাই না। (তিনকড়িবাবুর বলার ভঙ্গীতে সকলে চুপ করিয়া তাঁহার মুখের দিকে তাকাইল) হ্যাঁ, শুনুন—আমার এনকোয়ারি শেষ হয়ে গেছে, আমি এখন যাচ্ছি। আজ একটি মেয়ে কার্বলিক অ্যাসিড খেয়ে আত্মহত্যা করেছে। আপনারা কেউ তাকে সাক্ষাৎভাবে খুন করেন নি ঠিক কথা। কিন্তু আপনারা তাকে তিল তিল করে মৃত্যুর দিকে এগিয়ে দিয়েছেন। (প্রত্যেকের মুখের দিকে দেখিতে দেখিতে) আপনি মিসেস সেন—যখন তার সাহায্যের সবচেয়ে বেশি দরকার, তখন সে গিয়েছিল আপনাদের কমিটির কাছে। আপনি যে শুধু নিজে না বলেছিলেন তাই নয়, কমিটিও যাতে না বলে সে ব্যবস্থাও করেছিলেন। আর তাপসবাবু—যতদিন বাঁচবেন, ততদিন মনে রাখবেন—কাণ্ডজ্ঞানহীন মাতাল অবস্থায়, নেশার ঝোঁকে, আপনি একটি মেয়ের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে আরম্ভ করেছিলেন। নেশায় মজা পাবেন বলে তাকে ট্যাক্সিতে তুলেছিলেন। আপনার কাছে সে ছিল একটা ভালো-দেখতে মেয়েমানুষ—যাকে নেশার ঘোরে পাশে শোয়ানো যায়, কিন্তু বিয়ে করা যায় না। আর আপনি শীলা দেবী—

    শীলা : (তিক্তস্বরে) আমি জানি তিনকড়িবাবু—আমার থেকেই তো আরম্ভ—

    তিনকড়ি : না না, আপনি দায়ী, কিন্তু আরম্ভ আপনি করেননি। (হঠাৎ চন্দ্রমাধববাবুর দিকে ফিরিয়া, অত্যন্ত রূঢ়স্বরে) আরম্ভ করেছিলেন আপনি! মাসে মাত্র পাঁচটা টাকা বেশি চেয়েছিল, আপনি তার সমস্ত জীবনটা দাম হিসেবে ধরে নিলেন। কিন্তু, পার আপনিওপান নি—আপনার কাছ থেকে অনেক বেশি দাম সে আদায় করে নেবে!

    চন্দ্রমাধব : (কাতর স্বরে) তিনকড়িবাবু, টাকা আমি এক্ষুনি আপনাকে দিচ্ছি—বলুন কত টাকা লাগবে?

    তিনকড়ি : কিন্তু দেবার যখন দরকার ছিল মিস্টার সেন, তখন পাঁচটা টাকাও দিতে পারেননি! (নোট-বুক ইত্যাদি বন্ধ করিলেন। দেখিয়া মনে হইল, এনকোয়ারি তাঁহার শেষ হইয়াছে। নোটবুক, পেনসিল ইত্যাদি যথাস্থানে রাখিয়া, সকলের মুখের দিকে তাকাইলেন। তাঁহার মুখে ফুটিয়া উঠিয়াছে নিষ্ঠুর হৃদয়হীন এক হাসির আভাস। সকলের মুখের দিকে দেখিতে দেখিতে) না, সন্ধ্যাকে আপনারা কোনদিনই ভুলতে পারবেননা। আপনাদের ওই মিস্টার বোসও নয়! সন্ধ্যাকে—এক দেখলাম উনিই বা একুট ভালবেসেছিলেন—কিন্তু উঁহু, ওঁর পক্ষেও ভোলা সম্ভব নয়। ওয়েল মিস্টার সেন—আজ আর সন্ধ্যা চক্রবর্তী নেই—আপারা আজ আর তার কিছুই করতে পারবেন না—না ভাল —না মন্দ—

    শীলা : (অশ্রুরুদ্ধকণ্ঠে) সেটাই তো সবচেয়ে বড় দুঃখ তিনকড়িবাবু—

    তিনকড়ি : তার চেয়েও বড় দুঃখ আছে মিস সেন। একজন সন্ধ্যা নেই কিন্তু এখনও লাখে লাখে সন্ধ্যারা রয়েছে। তাদেরও আশা আছে, ভরসা আছে, ভাবনা আছে! আমার আপনার মত তাদেরও মন আছে, আঘাত সেখানে গিয়েও পৌঁছয়। একটু ভেবে দেখবেন, দেখবেন কাউকে আলাদা করতে পারছেন না, দেখবেন আপনার সুখ তাদের ওপর, তাদের সুখ আপনাদের ওপর। মনে রাখবেন—সবাই মিলে আমরা এক, কেউ আমরা আলাদা নই। যার যেকানে যা কিছু হচ্ছে সব দায় আমার, আপনার, সকলের—কেউ বাদ নেই এর থেকে! আজ হয়তো ভাবছেন, আমি একবার গেলে হয়! তবে সেদিন খুব বেশি দূর নয় যেদিন প্রত্যেকটা মানুষকে আমার এই কথাগুলো ভাবতে হবে। তখন কিন্তু হাজার মাথা খুঁড়েও আপনারা কোন পথ পাবেন না, আপনাদের চারপাশে তখন আগুন, চারধার আপনাদের রক্তে লাল! আচ্ছা—চলি আজ, গুড নাইট—(সাব ইন্সপেক্টর সোজা বাহির হইয়া গেলেন। সকলে তাঁহার গমনপথের দিকে হতচকিত ও বিস্মিত দৃষ্টিতে তাকাইয়া রহিলেন। দেখা গেল শীলা নিঃশব্দে কাঁদিতেছে। মিসেস সেনের আর দাঁড়াইয়া থাকিবার ক্ষমতা নাই—তিনি চেয়ারে বসিয়া পড়িয়াছেন। তাপস গালে হাত দিয়া আকাশ-পাতাল ভাবিতেছে। একমাত্র চন্দ্রমাধবেরই স্বাভাবিক অবস্থা, তিনকড়িবাবু বাহির হইয়া গেলে, ঘরের দরজার নিকট দাঁড়াইয়া তিনি সদর দরজা বন্ধ হওয়ার শব্দ শুনিলেন। তারপর সন্তর্পণে দরজা ভেজাইয়া দিয়া তাপসের দিকে অগ্রসর হইয়া আসিলেন।)

    চন্দ্রমাধব : (ত্রু�দ্ধস্বরে) তুই হলি যত নষ্টের গোড়া—

    তাপস : হ্যাঁ, এখন তো আমিই—

    চন্দ্রমাধব : (ত্রু�দ্ধস্বরে) না, তুমি নও, রাস্তার লোক! বুঝতে পারছিস, কি করেছিস? সমস্ত ব্যাপারটা কাগজে বেরুল বলে! চারধারে ঢি-ঢিক্কার, একটা পাবলিক স্ক্যান্ডাল, ছিঃ ছিঃ!

    তাপস : স্ক্যাণ্ডালে আমার আর কিছু এসে যায় না বাবা!

    চন্দ্রমাধব : (ত্রু�দ্ধস্বরে) তোমার যে কিছু এসে যায় না, তা আমিও জানি! কিন্তু আমার যে এসে যাচ্ছে। ইলেকশনটা যে পণ্ড হয়ে যাবে রে হতচ্ছাড়া—অপোন্টে পার্টি ছড়া বার করবে, ছড়া।

    তাপস : (চন্দ্রমাধবের দিকে আঙুল দেখাইয়া অপ্রকৃতিস্থের ন্যায় হো হো করিয়া হাসিতে হাসিতে) ইলেকশন! এখনো ইলেকশন বাবা! এখন তুমি ইলেকটেড হলে আর না হলে, কি এসে যায় তাতে?

    চন্দ্রমাধব : (ত্রু�দ্ধস্বরে) কি এসে যায় তাতে! তোর মত রাস্কেলের কিসে এসে যায় বলতে পারিস? মদ খেয়ে মেয়েছেলে নিয়ে বেলেল্লাপনা করতে তোর লজ্জা করে না? কাল থেকে তুই অফিসের বিনা মাইনের চাকর! আমি তোর অ্যালাওয়েন্স বন্ধ করে দিলাম। টু-দি-পাই—আমি এ টাকা আদায় করে নেব! তারপর আর একবার যদি শুনি এই সব কাণ্ড-কারখানা, তোমায় চাবকে যদি না বাড়ি থেকে বার করে দিই তো আমার নাম নেই!

    রমা : ছিঃ তাপস—ভাবতেও আমার লজ্জা করছে—

    তাপস : আমি তো লজ্জার কাজ করেইছি। কিন্তু তোমরা? তোমরা কি কিছুই করনি?

    চন্দ্রমাধব : আমরা যা করেছি তার যথেষ্ট গ্রাউণ্ড আছে রাস্কেল! ব্যাপারটা আনফরচুনেট টার্ন নিয়েছে তাই, নইলে—

    শীলা : বাঃ, চমৎকার বাবা—

    চন্দ্রমাধব : তার মানে?

    শীলা : মানে, আবার তোমরা সেই গোড়া থেকে আরম্ভ করেছ! — যেন কিছুই হয়নি—

    চন্দ্রমাধব : কে বলেছে কিচ্ছু হয়িন! এতেও যদি স্ক্যান্ডাল না হয়, তাহলে তো জানব খুব লাকি! ওঃ কেমন ছিলাম সন্ধ্যেবেলা— (তাপসকে দেখাইয়া) আর এই হতচ্ছাড়াটার জন্যে—

    তাপস : (উত্তেজনা ও ব্যঙ্গভরা স্বরে) সত্যি, সন্ধ্যেবেলা তুমি বেশ ছিলে বাবা! কি রকম সব অ্যাডভাইস দিচ্ছিলে! সেই যে, first you yoruself, second you yourself, and last you yourself, কারো দায়িত্ব আমাদের নেই, সবায়ের কথা যারা ভাবে তাদের মাথা খারাপ। আর ঠিক সেই সময় এলেন ঐ মাথা খারাপদেরই একজন (পাগলের ন্যায় হাসিতে হাসিতে) সাব-ইন্সপেক্টর তিনকড়ি হালদার! কই বাবা, তিনকড়িবাবুকে তো কিছু বললে না, তোমার থিয়োরি-টিয়োরির কথা?

    শীলা : আচ্ছা ছোড়দা, ঠিক ঐ সময় তিনকড়িবাবু এসেছিলেন, না?

    তাপস : হ্যাঁ, কেন—কি হয়েছে?

    শীলা : (ধীরে ধীরে) ব্যাপারটা কিন্তু বড় অদ্ভুত—

    রমা : (উত্তেজিত স্বরে) আমারও কিন্তু কি রকম যেন মনে হচ্ছে—

    শীলা : (চিন্তা করিতে করিতে) ভদ্রলোক সত্যিই সাব-ইন্সপেক্টর তো?

    চন্দ্রমাধব : (উত্তেজিত হইয়া) ঠিক বলেছিস, এটা তো মনে হয়নি!

    শীলা : কিন্তু তাতেও কিছু আর এসে যায় না বাবা—

    চন্দ্রমাধব : কি পাগলের মত বকছিস, একশবার এসে যায়!

    শীলা : কি জানি বাবা, তোমার হয়তো যায়, আমার যাচ্ছে না—

    রমা : কি ছেলেমানুষের মত কথা বলছিস শীলা—

    শীলা : (ত্রু�দ্ধস্বরে) ছেলেমানুষের মত আমি কথা বলছি, না তোমরা বলছ মা! যা সত্যি, তাকে কি ওভাবে আড়াল দেওয়া যায়? — যায় না।

    চন্দ্রমাধব : মুখের ওপর কথা বলিসনি শীলা! চুপ করে থাকতে পারিস থাক নইলে শুতে যা—

    শীলা : আমি এক্ষুনি যাচ্ছি বাবা! কিন্তু একটা কথা। ব্যাপারটা যদি সত্যি হয়, তাহলে এর জন্যে দায়ী আমরাই! আমি ধরলাম, ভদ্রলোক সত্যিই সাব-ইন্সপেক্টর নন—কিন্তু দায়িত্বটা আমরা অস্বীকার করি কি করে? আর ব্যাপারটা যে সত্যি তা তুমিও জান, আমিও জানি! প্রথম তাকে চাকরি থেকে তাড়াও তুমি, দ্বিতীয় চাকরিটা যায় আমার জন্যে। অমিয় নিজের খেয়াল-খুশি মত তাকে নিয়ে এল আর শখ যেই মিটে গেল অমনি দূর করে তাড়িয়ে দিলে। তারপর ছোড়দা আর শেষে মা! এরপর ভদ্রলোক সাব-ইন্সপেক্টর হলেন আর না হলেন।

    তাপস : কিন্তু ভদ্রলোক কি সত্যিই সাব-ইন্সপেক্টর—!

    শীলা : কিন্তু ছোড়দা, ভদ্রলোক যদি সাব-ইন্সপেক্টর নাই হন! সে তো আমারও মনে হচ্ছিল—ভদ্রলোকের ভাব-গতিটা ঠিক সাধারণ সাব-ইন্সপেক্টরের মত নয়—কিন্তু—

    চন্দ্রমাধব : (বাধা দিয়া) ঠিক কথা—আমরাও তাই মনে হচ্ছিল। (রমাকে) হ্যাঁগো, তোমার মনে হয়নি?

    রমা : কথাবার্তা তো মোটেই সাব-ইন্সপেক্টরের মত নয়, যেন লাটসাহেব।

    চন্দ্রমাধব : সত্যি সাব-ইন্সপেক্টর হলে কি আমাকে অমন করে ধমকাতে পারত! আমি কি একটা যা-তা লোক নাকি, ঘাড় ধরে বার করে দিতাম না! তার ওপর পদ্মপুকুর থানার তো হতেই পারে না, রমেশ সেখানে ও-সি, ব্যাটারা আপনি-আজ্ঞে ছাড়া কথাই বলে না—

    তাপস : কিন্তু বাবা, উনি সাব-ইন্সপেক্টর না হলেও কিছু এসে যাচ্ছে না।

    চন্দ্রমাধব : তোমার তো যথেষ্ট এসে যেত! রাস্কেল, জানিস তোকেও কোর্ট পর্যন্ত নিয়ে যেতে পারত, তখন?

    শীলা : (কি যেন চিন্তা করিতে করিতে) কিন্তু একটা মজা দেখেছ বাবা, আমরা তিনকড়িবাবুকে কতটুকুই বা বলেছি—প্রায় সব ব্যাপারটাই তাঁর আগে থাকতে জানা—

    চন্দ্রমাধব : সেটা কিছু আশ্চর্য নয়। এধার-ওধার থেকে দু-একটা খবরা-খবর পেয়েছে। তারপর বাকিটা আন্দাজ! আমি তো কিছুতেই ভেবে পেলাম না, কেন তোরা সব গড় গড় করে বলতে আরম্ভ করলি!

    শীলা : নিজে থেকে কেউই আমরা কিছু বলিনি বাবা, উনি আমাদের বলতে বাধ্য করেছিলেন।

    রমা : না, কক্ষনো না! আমি এমন খুব বেশি একটা কিছু বলিনি! আমি তো মুখের ওপর বলে দিলাম, যা উচিত বলে মন হয়েছে, তাই করেছি!

    চন্দ্রমাধব : তবে হ্যাঁ, ধাপ্পা খানিকটা দিয়েছিল—

    রমা : না—কক্ষণো না, তুমি বললেই শুনব আমি—

    চন্দ্রমাধব : না না, তোমাকে আমাকে নয়—এদের। আরো, সে তো গোড়া থেকেই খারাপ চোখে দেখেছে আমাদের। সাব-ইন্সপেক্টর না কচু! পুলিশের লোক হলে কখনো ওরকম কম্যুনিস্টিক কথাবার্তা হয়! আর এরা কি ভীতু দেখ, কোথায় চোখ পাকিয়ে দাঁড়াবি, তা নয় ‘আমি তো আমি তো’ করেই গেল।

    তাপস : সেটা তো তুমি কিছু কম করলে না বাবা?

    চন্দ্রমাধব : কি করি বল? তোমার মত গুণধর ছেলে—কি কাণ্ডটি করে বসেছিলে! ওখানে আমি চটাচটি করলে তো হিতে-বিপরীত হত! এখন তাই মনে হচ্ছে। লোকটাকে বাইরে থেকে বিদেয় করে দিলেই হত!

    শীলা : কিন্তু তা হত না বাবা, ভেতরে উনি আসতেনই।

    রমা : (তিক্তস্বরে) কি জানি শীলা, তোর কথাবার্তা শুনে তো মনে হচ্ছে তোর বাবাকে ধরে নিয়ে গেলে তুই খুশি হতিস! (চন্দ্রমাধবকে) যাকগে, এখন কি করবে ঠিক করলে?

    চন্দ্রমাধব : করতে একটা কিছু হবেই—আর খুব তাড়াতাড়িই করতে হবে, নইলে তো কেলেঙ্কারির শেষ থাকবে না!

    (সদর দরাজ দিয়া কে যেন বাড়িতে প্রবেশ করিল। সকলে সচকিত হইয়া উঠিলেন। অমিয়র প্রবেশ)

    রমা : এই যে বাবা অমিয়—আমরা তো ভেবেছিলাম, তুমি আজ আর এলে না!

    অমিয় : আপনাদের জন্যেই ফিরে এলাম কাকীমা। সাব ইন্সপেক্টরটা গেল কখন?

    শীলা : এই তো একটু আগে। কাউকে ছেড়ে কথা কন নি—সবাইকে শেষ করে তবে গেছেন।

    রমা : শীলা!

    শীলা : বাঃ, অমিয় ছিল না তাই বলছি—

    অমিয় : আচ্ছা, লোকটাকে কি রকম মনে হচ্ছিল আপনাদের?

    শীলা : আমার তো মাঝে মাঝে বেশ ভয় করছিল।

    চন্দ্রমাধব : লোকটার কথাবার্তা মোটেই সুবিধের নয়, আমার তো গোড়া থেকেই কি রকম একটা সন্দেহ হচ্ছিল—

    রমা : কথাবার্তা তো সুবিধের নয়ই! দেখলে না, তোমার আমার সঙ্গে কি রকম চড়াচড়া কথা বলছিল? লোকটা এক নম্বরের চোয়াড়!

    অমিয় : (ধীরে ধীরে) ও কিন্তু পুলিশের লোক নয়!

    চন্দ্রমাধব : (যেন নিজের কানকে বিশ্বাস করিতে পারেন নাই) সে-কি!

    রমা : বলছ কি অমিয়!

    অমিয় : আমি ঠিকই বলছি কাকীমা—এই খবরটা দেবার জন্যেই তো ফিরে এলাম।

    চন্দ্রমাধব : কি করে জানতে পারলে?

    অমিয় : আপনাদের এখান থেকে তো বেরোলাম একটু ঘুরে আসব বলে। এধার-ওধার একটু ঘুরে-ফিরে আসছি, হঠাৎ মনে হল — যাই না, থানাটা একটু ঘুরেই আসি! থানার ওখানে গিয়ে আর একজন সাব-ইন্সপেক্টরের সঙ্গে দেখা। সে ঐ পদ্মপুকুরেই রয়েছে প্রায় বছর পাঁচেকের ওপর! তাকে জিজ্ঞেস করতেই বললে — তিনকড়ি হালদার বলে কেউ নেই—কি রকম দেখতে তাও বলেছিলাম। বললে, না।

    চন্দ্রমাধব : এসব ব্যাপার কিছু বলনি তো?

    অমিয় : পাগল হয়েছেন আপনি? জিজ্ঞেস করতে বললাম — তিনকড়িকে আমি চিনতাম, শুনলাম সে এখানে সাব-ইন্সপেক্টর হয়ে এসেছে, তাই খোঁজ করতে এসেছিলাম।

    চন্দ্রমাধব : যাক—লোকটা তাহলে সত্যিই বাজে, কি বলো?

    রমা : আমি তো তখন থেকেই বলছি, পুলিশের বাপের সাধ্যি কি, আমাদের সঙ্গে ওভাবে কথা কয়।

    চন্দ্রমাধব : তবু একবার রমেশের ওখানে ফোন করি, কি বলো?

    রমা : খুব সাবধান কিন্তু—দেখো যেন আবোল-তাবোল কিছু বলে ফেলো না।

    চন্দ্রমাধব : আরে না না—(উঠিয়া গিয়া ফোন তুলিয়া নাম্বার বলিলেন। এদিকে মুখ ফিরাইয়া) আমি অবিশ্যি ফোন করতামই, আমার গোড়া থেকেই কেমন যেন সন্দেহ হচ্ছিল —(ফোনে) হ্যালো, কে—রমেশ? কোথায়? ওপরে আছে? একবার ডেকে দিন—হ্যাঁ, হ্যাঁ, বললেই আসবে – বলুন তার বড় মামা ডাকছে—(অল্পক্ষণ পরে) কে রমেশ? শুয়ে পড়েছিলি নাকি? ও! হ্যাঁরে, পদ্মপুকুরে তিনকড়ি হালদার বলে কোন সাব-ইন্সপেক্টর আছে?—নেই, ঠিক জানিস তো—রং ময়লা, মুখখানা ভারি, গোঁফ দাড়ি কামানো।—ও, নেই? না, এমনি জিজ্ঞেস করছিলাম, একজনের সঙ্গে তর্ক হচ্ছিল—আচ্ছা ফোন রাখছি।—কাল একবার আসিস না এখানে বৌমাকে নিয়ে—(ফোন রাখিয়া চন্দ্রমাধব ফিরিয়া আসিলেন) যা বলেছি তাই, পুলিশ নয়।

    রমা : আমি তো গোড়া থেকেই বলছি—পুলিশ ওর কোনোখানটাই নয়।

    চন্দ্রমাধব : আগাগোড়া ব্যাপারটা কিন্তু অন্য রকম দাঁড়িয়ে গেল, বুঝলে অমিয়।

    শীলা : (ব্যঙ্গের সুরে) হ্যাঁ, আমরা আবার ভদ্রলোক হয়ে গেলাম।

    চন্দ্রমাধব : আবার তুই বাজে বকছিস শীলা!

    তাপস : খুব বাজে কিন্তু শীলা বকছে না বাবা!

    চন্দ্রমাধব : তুই এখনও কথা বলছিস তাবস! — আজ যদি সত্যিই লোকটা সাব-ইন্সপেক্টর হত! তোর অবস্থাটা কি হত ভেবে দেখেছিস?

    রমা : আঃ—চুপ কর না—কি হচ্ছে কি?

    শীলা : বঝলে অমিয়, তোমার আর বাকি গল্পটা শোনা হল না।

    অমিয় : আর শোনবার দরকারই বা কি! (চন্দ্রমাধবকে) ব্যাপারটা তাহলে পুরো ধাপ্পা কি বলেন?

    চন্দ্রমাধব : ধাপ্পা বলে ধাপ্পা! নিশ্চয়ই কেউ বদমায়েসি করে ব্যাটাকে এখানে পাঠিয়েছিল। শত্রুর তো অভাব নেই। তার ওপর এখন ইলেকশনে দাঁড়িয়েছি—অপোনেন্ট পার্টিরও কেউ হতে পারে। খানিকটা আঁচ আমি গোড়াতেই পেয়েছিলাম। তবে কি জান? একটা লাইট মুডে ছিলাম, ফস করে এসে আরম্ভ করলে—তাই বেশি কিছু বলতে পারলাম না, নইলে—

    রমা : (বাধা দিয়া) তোমরা বলে তাই! গোড়া থেকে যদি আমি এখানে থাকতাম, তাহলে দেখতে। ও জিজ্ঞেস করবার সাহস পেত? তার আগে আমি ওকে জিজ্ঞেস করতাম না—দেখতে হতভাগা পালাবার পথ পেত না।

    শীলা : বলা খুব সোজা মা।

    রমা : তার মানে? তোদের মধ্যে এক আমাকেই সে বাগে আনতে পারেনি।

    চন্দ্রমাধব : আচ্ছা, তুমিও ওর সঙ্গে সঙ্গে ছেলেমানুষ হলে! এখন একটু মাথা ঠাণ্ডা করে ভাবা দরকার। ও তো ধাপ্পা মেরে চলে গেল—কিন্তু ধাপ্পাতেই যদি এর শেষ না হয় তখন?

    অমিয় : ঠিক কথা, ধাপ্পাই হোক, আর যা-ই হোক—লোকটা সমস্ত ব্যাপারটা জেনেই এখান থেকে গেছে।

    চন্দ্রমাধব : সেই জন্যেই তো বলছি। (তাপসকে দাঁড়াতেই দেখিয়া) দাঁড়ালি কেন, বস

    তাপস : আমি ঠিক আছি বাবা।

    চন্দ্রমাধব : না, তুমি ঠিক নেই, কথাটা শোনা তোমারই সবচেয়ে বেশি দরকার, বুঝলে রাস্কেল!

    তাপস : আমার কিন্তু খুব দরকার বলে মনে হচ্ছে না বাবা।

    শীলা : ছোড়দা ঠিক কথাই বলছে বাবা।

    চন্দ্রমাধব : (রমাকে) আচ্ছা, এরা কি বলতো? কোত্থাকার একটা জোচ্চোর—কি না কি বলে গেল—তাই নিয়ে মাথা গরম করে মরছে।

    রমা : শীলা! তাপস! ঠান্ডা মাথায় ভেবে দেখ, বাবা ঠিক কথাই বলছেন।

    তাপস : (হঠাৎ যেন ফাটিয়া পড়িল) আচ্ছা মা, তোমরা কি! এ ভান করে লাভটা কি? তোমরা না বললেই না হয়ে যাবে! একটা মেয়ে একটু আগে অ্যাসিড খেয়ে জ্বলতে জ্বলতে মারা গেছে—পার তোমরা তাকে বাঁচিয়ে ফিরিয়ে আনতে? পার না! লোকটা যদি পুলিশের লোক নাই হয়, গল্পটা কি মিথ্যে হয়ে যাবে? (চন্দ্রমাধবকে) একটু আগে তুমি বলেছিলে না, আমি তোমার অফিসের টাকা ভেঙেছি—ব্যাপারটা কোর্টে উঠবে—একটা কেলেঙ্কারি হবে — একবারও মনে হল না তোমার, কথাগুলো কত বাজে, কত ছোট। না বাবা, এখন আর তোমার কথা শোনার মতো মন আমার নেই—সে ইচ্ছেও নেই!

    চন্দ্রমাধব : আচ্ছা, এরা স্ক্যান্ডালটার কথা কেন বুঝছে না বলতো?

    তাপস : (চীৎকার করিয়া) বলছি তো—তোমার স্ক্যান্ডাল হল বা না হল তাতে কিছু এসে যায় না। একটা মেয়ে কার্বলিক অ্যাসিড খেয়ে মারা গেছে—এর চেয়ে বড় কথা আর কিছু নেই বুঝলে?

    চন্দ্রমাধব : (চীৎকার করিয়া) চুপ! কথা বলতে তোর লজ্জা করে না? অন্য বাপ হলে তোর মত ছেলেকে লাথি মেরে বিদায় করে দিত, জানিস?

    তাপস : (তিক্তস্বরে) এখন এ বাড়িতে থাকলাম আর না থাকলাম, বাবা।

    চন্দ্রমাধব : আগে চুরির টাকাটা শোধ দে, তারপর যাবার কথা ভাবিস!

    শীলা : কিন্তু তাতে সন্ধ্যা চক্রবর্তী কি ফিরে আসবে বাবা?

    তাপস : আর আমরা যে তাকে মেরেছি, সেটাও কিছু না-হয়ে যাবে না।

    অমিয় : কিন্তু আগে দেখ ব্যাপারটা সত্যি কিনা, তারপর চেঁচিও।

    তাপস : নিশ্চয়ই সত্যি। তুমি তো এখনো শেষটা শোনই নি।

    শীলা : ও, তুমি তাহলে সাব-ইন্সপেক্টরকে যা বলেছ, তা একটা ঘোরে বলে ফেলেছ—কি বলো অমিয়?

    অমিয় : না, মোটেই না। আম যা বলেছি তা আমি সত্যিই বলেছি, আর তার জন্যে আমি তোমার কাছে ক্ষমাও চাইছি।

    শীলা : আমাদের চেয়েও তোমার ওপর পুলিশ ভদ্রলোকের ধারণাটা কিন্তু ভাল, বুঝলে অমিয়?

    চন্দ্রমাধব : (ত্রু�দ্ধস্বরে)আবার বলে পুলিশ! লোকটার চোদ্দগুষ্টিতে কেউ পুলিশ নয়।

    শীলা : কিন্তু পুলিশি তিনি ঠিকই করে গেছেন বাবা। সন্ধ্যা চক্রবর্তী যে অ্যাসিডটা খেয়েছে সেটা তো আমাদেরই জন্যে।

    অমিয় : কিন্তু তার তো কোন প্রমাণ নেই।

    শীলা : তার মানে?

    অমিয় : মানে, লোকটা যে পুলিশের লোক, তারই যখন কোন প্রমাণ নেই তখন এটাই বা দাঁড়ায় কি করে?

    শীলা : কিন্তু এটা যে দাঁড়িয়ে গেছে, তা তুমি নিজেও বেশ বুঝতে পারছ অমিয়?

    অমিয় : মোটেই না। ব্যাপারটা ভাল করে ভেবে দেখ। একজন এসে স্রেফ ধাপ্পা দিয়ে বললে যে সে পুলিশের লোক, সাব-ইন্সপেক্টর! এধার-ওধার থেকে দু-একটা খবরও হয়ত পেয়েছিল— তাই দিয়ে দিব্যি এক গল্প ফেঁদে স্রেফ ব্লাফের ওপর আমাদের দিয়ে স্বীকার করিয়ে নিলে যে আমরা সবাই এ মেয়েটির ব্যাপারে জড়িয়ে আছি।

    তাপস : হ্যাঁ, জড়িয়ে তো আছিই!

    অমিয় : কিন্তু প্রত্যেক কেসে যে একই মেয়ে, তা তুমি কি করে বুঝছ—

    চন্দ্রমাধব : (উত্তেজিত হইয়া) দাঁড়াও-দাঁড়াও অমিয়, হয়েছে হয়েছে—উঁহু হল না—

    তাপস : কিন্তু তা কি করে হবে? আমরা নিজেরাই তো সব স্বীকার করে নিয়েছি—

    অমিয় : ঠিক কথা, তুমি একটি মেয়েকেই জানতে। কিন্তু কি করে জানলে আমার মেয়েটিই তোমার মেয়ে? (অমিয় সকলের মুখের দিকে তাকাইল। দেখিয়া মনে হইল যেন এইমাত্র একটা যুদ্ধ জয় করিয়া ফেলিয়াছে। আর সকলের তখন—হ্যাঁ, তাই তো, ভেবে দেখিনি—এই অবস্থা। কয়েক মুহূর্ত পরে চন্দ্রমাধবকে) আপনিই বলুন না কাকাবাবু, সন্ধ্যা চক্রবর্তী নামে একটি মেয়েকে আপনি বরখাস্ত করেছিলেন! মেয়েটিকে আপনার মনে ছিল না তাই লোকটা আপনাকে একটা ছবি দেখায়—তখন আপনারও মনে পড়ে, এই তো?

    চন্দ্রমাধব : হ্যাঁ, কিন্তু তারপর?

    অমিয় : তারপর শীলা ধর্মতলার চেন স্টোরের একটি মেয়ের চাকরি যাওয়ার ব্যাপারে জড়িয়ে পড়েছিল—দেখা গেল লোকটা সে ব্যাপারটা জানে। সে দিব্যি বলে বসল—চেন স্টোরের মেয়েটি আর সন্ধ্যা চক্রবর্তী আলাদা নয়! আর সেই সঙ্গে শীলাকে একটা ছবি দেখালে—

    শীলা : হ্যাঁ, সে একই ছবি—

    অমিয় : কি করে জানলে? তোমার বাবাকে যখন ছবিটা দেখিয়েছিল তখন তো আর তুমি দেখনি?

    শীলা : না।

    অমিয় : আর তোমাকে যখন ছবিটা দেখাচ্ছিল, তখন কাকাবাবুও তো দেখতে আসেননি—

    শীলা : না (ধীরে ধীরে) আমি বুঝেছি অমিয়, তুমি কি বলতে চাও।

    অমিয় : তাহলেই দেখতে পাচ্ছ—ছবি যে একটাই তার কোন প্রমাণ নেই। কাজেই বারবার যে একই মেয়ে, তারও কোন প্রমাম নেই! এই আমার কথাই ধর না—আমাকে তো সে কোন ছবিই দেখায়নি! ফস করে বললে—মেয়েটা নাম বদলে হয়েছিল ঝরনা রায়, আমিও ঘাবড়ে গিয়ে বলে ফেললাম, ঝরণা রায়কে আমি চিনি।

    চন্দ্রমাধব : কিন্তু ঝরনা রায়ই যে সন্ধ্যা চক্রবর্তী, তার তো এতটুকু প্রমাণ নেই! লোকটার মুখের কথাই আমরা সত্যি বলে মেনে নিয়েছিলাম। কিন্তু এখন দেখছি লোকটাই জাল। কাজেই কিচ্ছু বলা যায় না—হয়ত আগাগোড়াই মিথ্যে কথা বলেছে।

    অমিয় : হয়ত কেন, বোধহয় তাই বলেছে!—আচ্ছা তারপর আমি চলে যাওয়ার পরে কি হল?

    রমা : আমি কি রকম সব গণ্ডগোল করে ফেললাম।

    অমিয় : কেন?

    রমা : লোকটা যেই শুনলে তাপস বাড়ি থেকে বেরিয়েছে, অমনি বলে বসল, তাপসকে তার দরকার। যদি তাপস তাড়াতাড়ি না ফেরে, তাহলে সে নিজে গিয়ে ওকে ধরে নিয়ে আসবে। ওঃ, তখন যদি তার কথা বলার ধরণটা দেখতে—সে কড়া চাউনি কি! আমিও কি রকম যেন নার্ভাস হয়ে গেলাম! তাই ফস করে যখন বলে বসল — দু’হপ্তা আগে সন্ধ্যা চক্রবর্তীর সঙ্গে আমার দেখা হয়েছে—তখন আমিও বোকার মত বলে বসলাম—হ্যাঁ, হয়েছে।

    চন্দ্রমাধব : আচ্ছা, কেন বললে বলতো? মেয়েটা যে তোমাদের কমিটির কাছে হেলপের জন্যে অ্যাপলাই করেছিল—সন্ধ্যা চক্রবর্তী নাম দিয়ে তো করেনি?

    রমা : না। কিন্তু ঐ যে বললাম — একে তাপসটার জন্যে ভাবনা, তার ওপর ঐ রকম ফস করে জিজ্ঞেস করে বসল—আমিও সব গোলমাল করে হ্যাঁ বলে বসলাম।

    শীলা : কিন্তু মা, তুমি ছবি দেখে তো তাকে চিনতে পেরেছিলে?

    অমিয় : আর কেউ ঠিক ঐ সময় ছবিটা দেখেনি তো?

    রমা : না।

    অমিয় : তাহলেই বুঝতে পারছেন কাকীমা—এ যে একই মেয়ে তার কোন প্রমাণ নেই। আপনাদের কমিটিতে তো ওরকম কত মেয়েই অ্যাপলাই করে থাকে—তাদেরই একজনের ছবি হয়ত আপনাকে দেখিয়েছে—সে যে সন্ধ্যা কি ঝরনা, তা আমরা কি করে জানব বলুন!

    চন্দ্রমাধব : ঠিক—অমিয় ঠিক বলেছ! আমরা প্রত্যেকেই হয়ত আলাদা-আলাদা মেয়েরই ছবি দেখেছি।

    অমিয় : নিশ্চয়! হ্যাঁ তাপস, তোমাকেও কি ছবি দেখিয়েছিল নাকি?

    তাপস : আমার বেলায় আর ছবি দেখাবার দরকার ছিল না। মার আর আমার কেসের মেয়ে যে এক তাতে কোন সন্দেহই নেই।

    অমিয় : কেন?

    তাপস : বাঃ—কমিটিতে সে কি বলেছে দেখ, চুরির টাকা নেবে না বলেই সে কমিটিতে গিয়েছিল। আমাকেও সে ঐ বলেই আসতে বারণ করে দিয়েছিল।

    অমিয় : তা হোক, তবু হয়ত ব্যাপারটা আগাগোড়াই বাজে!

    তাপস : কি জানি ভাই! তোমরা হয়ত কেটে বেরিয়ে আসতে পারছ, — কিন্তু আমি তো পারছি না—আমিও না, মাও নয়।

    চন্দ্রমাধব : কেন নয়! তোদের মার সমিতিতে তো আকছার ফলস ইন্টারভিউ হচ্ছে। পুলিশের ব্যাপারটার মতো এটাও হয়ত আগাগোড়া সাজানো।

    তাপস : (ত্রু�দ্ধস্বরে) আশ্চর্য! একটা মেয়ে যে অ্যাসিড খেয়ে মারা গেছে, সেটাও কি সাজানো?

    অমিয় : কিন্তু কোন মেয়ে? মেয়ে তো দেখছি একটা নয়। ব্যাপার যা দাঁড়িয়েছে তাতে তো দেখছি বোধহয় জন-চার-পাঁচ হবে।

    তাপস : দশজন হলেই বা আমার কী? আমি যাকে জানতাম, সে তো মারা গেছে।

    চন্দ্রমাধব : তাই বা কি করে জানছি—

    অমিয় : ঠিক বলেছেন কাকাবাবু! আজ অটা-অল কোন মেয়ে সুইসাইড করেছে কিনা দেখ! তারও তো কোন প্রমাণ নেই।

    চন্দ্রমাধব : ঠিক, ঠিক অমিয়! (তাপসকে) কই—এবার উত্তর দে? আরে আমি তো গোড়া থেকেই বলছি, একটা লাইট মুডে ছিলাম, লোকটা ফস করে এসে একটা শকিং ব্যাপার বলতে আরম্ভ করলে! যেই না একটু-আধটু নার্ভাস হয়ে পড়া আর অমনি ব্লাফের পর ব্লাফ—একটা মেয়ে কার্বলিক অ্যাসিড—

    তাপস : থাক বাবা, বার বার আর নাই বললে!

    চন্দ্রমাধব : তবে? আরে ব্যাপারটাই তো এই রকম, একেবারের বেশি দু’বার বললেই কি রকম নার্ভাস মনে হয়! লোকটা করলেও তো তাই! গল্পটা শুনেই সব নার্ভাস—আর যায় কোথায়? লোকটাও একটার পর একটা জিজ্ঞেস করতে আরম্ভ করলে! ওঃ, খুব বোকা বানিয়ে দিয়ে গেল যা হোক!

    তাপস : ওঃ! ব্যাপারটা যদি সত্যিই মিথ্যে হত?

    চন্দ্রমাধব : মিথ্যে তো বটেই! কে বলেছে সত্যি! পুলিশের ব্যাপারটাও মিথ্যে আর মেয়েও একটা নয়, কাজেই নো স্ক্যান্ডাল!

    শীলা : কিন্তু বাবা, সুইসাইড—সেটাও কি মিথ্যে?

    অমিয় : সেটা তো এক্ষুনি জেনে নেওয়া যায়।

    শীলা : কী করে?

    অমিয় : কেন, হসপিটালে ফোন করে।

    চন্দ্রমাধব : (অস্বস্তির সহিত) কিন্তু কি রকম যেন শোনাবে না—এত রাতে?

    অমিয় : হোক রাত তবু ফোন করব, দেখি না ব্যাপারটা সত্যি কিনা? (টেলিফোনের নিকট গিয়া ফোন তুলিয়া নাম্বার বলিল) হ্যালো, পাণ্ডে হসপিটাল? দেখুন, খুব দরকারে পড়ে রাত্তিরে আপনাদের বিরক্ত করলাম, যদি একটু হেল্প করেন দয়া করে —মানে আজ দুপুর থেকে সন্ধ্যের মধ্যে সন্ধ্যা চক্রবর্তী—হ্যাঁ সন্ধ্যা চক্রবর্তী নামে কেউ ভর্তি হয়েছে? এমারজেন্সি, কার্বলিক অ্যাসিড কেস? আচ্ছা, আমি ধরে দাঁড়িয়ে আছি—(অল্পক্ষণ পরে) কি বললেন? আজ তিনদিন হল ওরকম কোন কেসই আসেনি? আচ্ছা, মেনি থ্যাঙ্কস কষ্ট দিলাম কিছু মনে করবেন না (ফোন নামাইয়া দিল। অমিয় যতক্ষণ ফোন করিতেছিল, ততক্ষণ সকলেরই ত্রস্ত অবস্থা। চন্দ্রমাধব কপাল মুছিতেছেন, শীলা তো মাঝে মাঝে আপনা-আপনি শিহরিয়া উঠিতেছে, ইত্যাদি। এদিকে আসিয়া) পাণ্ডেতে আজ তিনদিন হল কোন সুইসাইড কেসই আসেনি।

    চন্দ্রমাধব : (উল্লসিত হইয়া) কেমন, এবার হল তো — সুইসাইড কেসই আসেনি। ওঃ, কি ধাপ্পাই দিয়ে গেল লোকটা—(হাসিতে হাসিতে) ওঃ, আসল ব্যাপারটাই হয়নি, যাই বল—ও বোকা নয়, একেবারে গাধা বানিয়ে দিয়ে গেছে কিন্তু!

    রমা : ভাগ্যিস অমিয় কথাটা ঐভাবে তুললে। নাঃ তোমার বাহাদুরি আছে অমিয়।

    অমিয় : ঐ জন্যেই তো বাইরে চলে গেলাম কাকীমা—মনে হল, দেখি না একটু ঘুরে ফিরে আসি যদি কিছু মাথায় খেলে যায়।

    চন্দ্রমাধব : বুঝলে অমিয়, ভয় যে একটু আমারও হয়নি তা নয়, হয়েছিল—তবে ঐ স্ক্যাণ্ডালটার জন্যে, নইলে নয়। (শীলাকে উৎফুল্ল না দেখিয়ে) কিরে শেলী, আবার কি হল? সব তো মিটে গেছে।

    শীলা : কি করে তুমি বলছ বাবা? আমরা যে নিজের মুখে সব স্বীকার করেছি, কি করে তা না হয়ে যাবে! আমাদের বরাত খুব ভালো তাই শেষেরটা না হয় হয়নি, কিন্তু সেটা হলেও হতে পারত।

    চন্দ্রমাধব : কিন্তু সমস্ত ব্যাপারটাই যে এখন অন্য রকম দাঁড়িয়ে গেল। নে নে—আর মুখভার করে বসে থাকে না। (তিনকড়িবাবুর অনুকরণ করিয়া) ওঃ, সে আঙুল নেড়ে বলার ঘটা কি—(শীলার দিকে আঙুল দেখাইয়া হাসিতে হাসিতে) আপনারা কেউ তাকে সাক্ষৎভাবে খুন করেন নি ঠিক কথা—কিন্তু আপনারা প্রত্যেকেই তাকে তিল তিল করে মৃত্যুর দিকে এগিয়ে দিয়েছেন! ওঃ—তখন যদি দেখতে অমিয়, তার মুখ চোখের ভাবটা! (শীলাকে দরজার দিকে যাইতে দেখিয়া) কি রে, উঠছিস যে—

    শীলা : কি জানি বাবা—তোমরা কথা কইছ শুনে আমার কিন্তু কি রকম যেন ভয় করছে।

    চন্দ্রমাধব : দুর পাগলি, ওপরে গিয়ে ভালকরে ঘুমো দিকি—দেখবি সকালে সব পরিষ্কার হয়ে গেছে।

    শীলা : (ফিরিয়া উত্তেজিত কণ্ঠস্বরে) আচ্ছা বাবা—তুমি কি বলতে চাও, সব ঠিক আগের মত আছে?

    চন্দ্রমাধব : নিশ্চয়।

    শীলা : ও—তাহলে সত্যিই কিছু হয়নি? ভদ্রলোক যা বলে গেলেন তা থেকে তোমাদের তাহলে শেখবার কিছু নেই? তোমরা তাহলে ঠিক যেমন ছিলে, তেমনিই থাকলে?

    অমিয় : (ঠাট্টার সুরে) কেন? তুমি কিছু অন্য রকম হয়ে যাবে নাকি?

    শীলা : যাব নয় অমিয়, গেছি বলো। ভদ্রলোকের চেহারাটা আমার চোখের সামনে ভাসছে, তিনি আঙুল দেখিয়ে বলেছেন—সেদিন খুব বেশি দূর নয় যেদিন প্রত্যেকটা মানুষকে আমার এই কথাগুলো ভাবতে হবে! কিন্তু সেদিন হাজার মাথা খুঁড়েও আপনারা কোন পথ পাবেন না। তখন চারপাশে আপনাদের আগুন, আর চারধার আপনাদের রক্তে লাল!

    তাপস : তুই ঠিক বলেছিস শীলা। এদের কথাবার্তায় আমারও ভয় ভয় করছে। এরা কি!

    রমা : এই দেখ এরা আবার আরম্ভ করেছে।—এই! তোরা শুতে যা দেখি, যতসব মাথা খারাপের দল।

    চন্দ্রমাধব : আশ্চর্য, এমন একটা মজার ব্যাপার হল, অথচ এর মজাটা এরা কেউ বুঝলে না। আজকালকার ছেলে-মেয়েদের ব্যাপারই এই, একেবারে না জেনে সবজান্তা হয়ে বসে আছে! (হঠাৎ টেলিফোনের ঘন্টা বাজিয়া উঠিল। এক মুহূর্তের জন্য সকলে চুপ। চন্দ্রমাধব উঠিয়া গিয়া ফোন ধরিলেন। শঙ্কিত কণ্ঠস্বরে) হ্যালো, হ্যাঁ আমিই চন্দ্রমাধব সেন। কি? এখানে মানে আমার এখানে— (চন্দ্রমাধবের কণ্ঠস্বর ভয়ে কম্পিত হইতেছে বলিলে কিছুই বলা হইবে না। ততক্ষণে ওদিকের ব্যক্তি ফোন ছাড়িয়া দিয়াছেন। চন্দ্রমাধব ফোন নামাইয়া এদিকে আসিলেন। তাঁহার মুখে চোখে দারুণ ভীতির আভাস। ধীর ও ভীতিপূর্ণ কণ্ঠস্বর) পুলিশ থেকে ফোন করছিল। একটু আগে একটি মেয়ে কার্বলিক অ্যাসিড খেয়ে আত্মহত্যা করেছে—একজন সাব-ইন্সপেক্টর এখানে আসছেন এনকোয়ারিতে। (হতভম্ব ও ভীত অবস্থায় আর সকলে চন্দ্রমাধবের দিকে তাকাইয়া রহিলেন। পর্দাও এই সঙ্গে নামিয়া আসিল।)

    ⤶ ⤷
    1 2 3 4
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleভাটির দেশ – অমিতাভ ঘোষ
    Next Article থানা থেকে আসছি – অজিত গঙ্গোপাধ্যায়

    Related Articles

    হরিনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়

    ভয় সমগ্র – হরিনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়

    December 9, 2025
    হরিনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়

    কিশোর অ্যাডভেঞ্চার সমগ্র – হরিনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়

    December 9, 2025
    সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

    প্রকাশ্য দিবালোকে – সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

    November 18, 2025
    সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

    তারপর কী হল – সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

    November 17, 2025
    মাইকেল মধুসূদন দত্ত

    শর্ম্মিষ্ঠা নাটক – মাইকেল মধুসূদন দত্ত

    November 11, 2025
    সত্যজিৎ রায়

    মানপত্র সত্যজিৎ রায় | Maanpotro Satyajit Ray

    October 12, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Generic selectors
    Exact matches only
    Search in title
    Search in content
    Post Type Selectors
    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Our Picks

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }