Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    নৌকাডুবি

    October 26, 2025

    আরণ্যক – বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়

    October 25, 2025

    থ্রি মাস্কেটিয়ার্স – আলেকজান্ডার দ্যুমা

    October 21, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    থ্রি মাস্কেটিয়ার্স – আলেকজান্ডার দ্যুমা

    ফারুক হোসেন এক পাতা গল্প60 Mins Read0
    ⤷

    ১. ফ্রান্সের ছোট্ট শহর মেয়ঙ্গ

    [ফরাসি সাহিত্যের অন্যতম লেখক আলেকজান্ডার দ্যুমা তাঁর জীবনদশায় যে কয়টি বই রচনা করেছেন তার মধ্যে অন্যতম হলো-দ্য থ্রি মাস্কেটিয়ার্স এবং টুয়েনটি ইয়ার্স আফটার। সপ্তদশ শতকের পটভূমি নিয়ে রচিত দ্য থ্রি মাস্কেটিয়ার্স অ্যাডভেঞ্চার কাহিনিটি দ্যুমা রচনা করেন ১৮৪৪ খ্রিস্টাব্দে। এ ক্ল্যাসিক সাহিত্যটির বিপুল জনপ্রিয়তার কারনে দ্যুমা পরবর্তীতে বইটির সিকুয়েল বা দ্বিতীয় খণ্ড রচনা করেন। ১৮৪৫ সালে দ্যুমা দ্য থ্রি মাস্কেটিয়ার্স-এর সিকুয়েল টুয়েনটি ইয়ার্স আফটার রচনা করেন। যথারীতি এ বইটিও পাঠকপ্রিয়তা পায়। উল্লেখ্য, বই দুইটি নিয়েই অসংখ্যবার মঞ্চ নাটক এবং সিনেমা তৈরি হয়েছে।]

     মাস্কেটিয়ার্স / কিশোর ক্লাসিক / আলেকজান্ডার দ্যুমা / অনুবাদ ও সম্পাদনা – ফারুক হোসেন

    ১৬২৫ খ্রিস্টাবদের এপ্রিল মাসের প্রথম সোমবার ফ্রান্সের ছোট্ট শহর ‘মেয়ঙ্গ’-এ একটা হৈচৈ দেখা দিল। সেই সময় ফ্রান্সে যুদ্ধ বিগ্রহ খুব সাধারণ বিষয় ছিল। রাজা যুদ্ধ করত পোপ ও মন্ত্রিসভার উচ্চাভিলাষি ‘রিচেলিউ’-এর সঙ্গে। এই ‘রিচেলিউ’ নিজেকে রাজার সমান ক্ষমতাসম্পন্ন বলে ভাবতেন। পোপ বা গীর্জার আয়ত্তে যেমন অনেক জমিজমা থাকত তেমনি অনেক সৈন্য সামন্তও থাকত। সার ‘স্পিন’ সে তো সব সময়ই যুদ্ধ করার প্রবৃত্তি নিয়ে থাকত। যুদ্ধের আতঙ্ক থাকলেও সেই সময় কয়েকটা দিন শহরে এবং আশে পাশে কোনো গোলমাল ছিল না।

    কিন্তু সেই নির্দিষ্ট দিনটায় অর্থাৎ এপ্রিল মাসের প্রথম সোমবার ‘মেয়ঙ্গ শহরের একটা সরাইখানার বাইরে উৎসুক জনতা ভিড় জমাতে লাগল। জনতার এই উত্তেজনা ও ভিড়ের কারণ ছিল একটি যুবককে কেন্দ্র করে। যুবকটির একটু বর্ণনা দেয়া যাক। যুবকটির পরনে ছিল একটা পশমের। জামা, লম্বা বাদামি রঙের মুখমণ্ডল, শক্ত সমর্থ চোয়াল, মাথায় ছিল চ্যাপ্টা। টুপি তাতে কয়েকটা পালক হাওয়ায় উড়ছে। তার চোখদুটো ছিল বড় বড় এবং বুদ্ধিমত্তার পরিপূর্ণ, নাকটা সামান্য বাঁকা হলেও শিল্পীর বাটালী দিয়ে কাটার মতো তীক্ষ্ণ। কোনো অভিজ্ঞ লোক হঠাৎ তাকে দেখলে একটা চাষির ছেলে বলেই ভুল করবে। কিন্তু যুবকটির কোমরের পাশে চামড়ার খাপে ঢাকা যে বিরাট তলোয়ারটা ঝুলছে সেটা দেখলে অবশ্য তাকে চাষির ছেলে বলে মনে হবে না।

    এবার যুবকটির ঘোড়াটার, ভুল হলো ওটা ঘোড়া নয় একটা টার্টু। সেটার বর্ণনা দেয়া যাক, কনেনা উৎসুক জনতার এই গোলমাল তার টাটুকে কেন্দ্র করেই। যে কোনো অভিজ্ঞ লোকই বলবেন টাটুটার বয়স কম করেও বারো থেকে চৌদ্দ বছর, গায়ের রঙ হলুদ, ল্যাজটা নেড়ি কুকুরের মতো। সেখানে একটাও চুল নেই, টাট্টুটা চলতে গিয়ে মাথাটা এতই সামনের দিকে ঝুঁকিয়ে দিয়েছে যে গাঁট বার করে হাঁটুকে ছাড়িয়ে গিয়েছে। আর টাট্টা দিনে আঠাশ মাইলের বেশি যেতে পারে না বা তার সাধ্যে কুলোয় না, সেটা বেশ ভালো ভাবেই বোঝা যায়।

    মঁসিয়ে দ্য অ্যাট্রাগঁন প্যারিসের দিকে যাত্রার উদ্দেশ্যই ফ্রান্সের এই ছোট শহরে এসে পৌঁছেছে, মঁসিয়ে দ্য অ্যাট্রগনের আন্তরিক ইচ্ছে যে সে রাজার রক্ষী বাহিনীর একজন বন্দুকধারী সৈনিক হিসেবে তার জীবন উৎসর্গ করবে।

    যাই হোক মেয়ঙ্গ শহরের দিকে আবার তাকানো যাক। মঁসিয়ে দ্য অ্যাট্রাগঁনের পোশাক, টাটু ও তার চালচলন সবটাই খুব হাস্যকর ছিল। শহরের লোকেরা এই দৃশ্য কখনও দেখেনি সেই কারণে সকলের মধ্যে একটা চাপা হাসি ফুটে উঠেছিল কিন্তু দ্য অ্যাট্রাগঁনের দীপ্ত চোখ ও লাম্বা তলোয়ারটা দেখে হাসিটা সকলে চেপেই রেখেছিল।

    মঁসিয়ে দ্য অ্যাট্রাগঁন তার টাট্টু থেকে সরাইখানার সামনে নামলো কিন্তু সরাইখানা থেকে কোনো ভূত্য বা আর কেউ বেড়িয়ে এসে টাটুর জিনটা ধরে সেটাকে আস্তাবলে নিয়ে গেল না।

    হঠাৎ মঁসিয়ে দ্য অ্যাট্রাগঁনের নজর পড়ল সরাইখানার একতলার একটা খোলা জানালার দিকে। সুন্দর পোশাক পরা প্রায় চল্লিশ-পঁয়তাল্লিশ বছর বয়সের এক সুপুরুষ লোক বসে আছে, উল্লেখ করার মতো একটা জিনিসই বারবার চোখে পড়ছিল সেটা একটা ক্ষত চিহ্ন। ক্ষত চিহ্নটা কপালের বাঁ-পাশে, বেশ গভীর।

    লোকটি যেখানে বসেছিল তার পাশে বসেছিল আরও দু-জন লোক। ক্ষতচিহ্ন লোকটা তার সাগরেদ দু-জনকে কিছু বলছিল আর লোক দুটো খুব মনোযোগ দিয়ে তার কথা শুনছিল।

    লোকটা এবার মঁসিয়ে দ্য অ্যাট্রাগঁনের দিকে দৃষ্টি ফেরাল–কিছুক্ষণ সে দিকে তাকিয়ে তার টাট্টু সম্বন্ধে এমন কিছু চোখা মন্তব্য করল যে তার। সাগরেদ দু-জন উচ্চস্বরে হেসে উঠল।

    ‘এই যে ভদ্র মহাশয়–আপনার হাসবার কারণটা কি জানতে পারি? জানতে পারলে আমরা সবাই একসাথে হাসিতে যোগ দিতে পারি।’

    মঁসিয়ে দ্য অ্যাট্রাগঁনের কথাটা লোকটার কানে যেতে টাটু থেকে চোখ তুলে অ্যাট্রাগঁনের দিকে তাকিয়ে বলল–‘মহাশয় আমি আপনার সাথে কোনো কথা বলছি না।’

    মৃদু হেসে কপাল কাটা সুপুরুষ লোকটা সরাইখানার জানলা থেকে সরে এসে ধীর পদক্ষেপে সরাইখানার প্রধান ফটক পেরিয়ে মঁসিয়ে দ্য অ্যাট্রাগঁনের সামনে দাঁড়াল।

    মঁসিয়ে দ্য অ্যাট্রগনের সাথে কোনো কথা না বলে দার টাটুটার দিকে তাকালো,–লোকটির আচরণ লক্ষ্য করে মঁসিয়ে দ্য অ্যাট্রাগঁন চামগার খাপে ঢাকা তলোয়ারটা বের করল।

    লোকটা মঁসিয়ে দ্য অ্যাট্রাগঁনের রাগী মুখ কিংবা কোষ মুক্ত তলোয়ারের দিকে বিন্দু মাত্র না তাকিয়ে, জানলার ধারে তখনো বসে থাকা তার সাগরেদদের উদ্দেশ্য করে বলল, আমার মনে হয় ঘোড়াটা তার যৌবনে সুন্দর হলুদ ফুলওলা লতা গাছের মতোই ছিল। আর বলতে কি উদ্ভিদ বিজ্ঞানে রঙটা সুপরিচিত হলেও বর্তমানে ঘোড়াদের মধ্যে বিরল।

    বিরক্ত হয়ে খুব রেগেমেগে চেঁচিয়ে মঁসিয়ে দ্য অ্যাট্রাগঁন বলল, ‘ঘোড়াটা নিয়ে হাসাহাসি করলেও কারো যেন সাহস না হয় ঘোড়ার মালিক নিয়ে হাসাহাসি করার।’

    ‘আমি সাধারণত হাসি না, কিন্তু হাসির কারণ হলে আমার নিশ্চয়ই হাসবার অধিকার আছে’ লোকটি জানাল।

    ‘তাই নাকি মহাশয়?’ আগের চাইতে আরো শান্তভাবে আরো ধীরে কথাগুলো বলল লোকটি।–আপনি বোধহয় ঠিকই বলেছেন লোকটি আর কথা বলে ধীর পদক্ষেপে সরাইখানার প্রধান দরজা দিয়ে ভেতরে ঢুকতে গেল।

    কিন্তু মঁসিয়ে দ্য অ্যাট্রাগঁন ঠিক সে ধরনের মানুষ নয়, যাকে নিয়ে যে কেউ (অপমান) মজা করে গেলেও সে চুপ করে সহ্য করে যাবে।

    ‘থামুন, থামুন–এই যে জোকার মহাশয়, আপনি যদি না থামেন তা হলে আমি বাধ্য হবো আপনাকে পিছন থেকে আঘাত করতে।’

    ‘আমায় আঘাত করবে? কেন বন্ধু? তুমি নিশ্চয়ই পাগর হয়ে যাওনি?’

    মঁসিয়ে দ্য অ্যাট্রাগঁন তার তলোয়ারটা এমন জোরে চালালো যে লোকটি লাফিয়ে পিছন দিকে সরে না গেলে তখনই তার ভাবলীলা অক্কা হয়ে যেত। বাস্তবিক লোকটি শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত ব্যাপারটাকে একটা মজার ঘটনা ছাড়া অন্য কোনোভাবেই নেয়নি। কিন্তু এবার লোকটি তার প্রতিদ্বন্দ্বি মঁসিয়ে দ্য অ্যাট্রাগঁনকে অভিবাদন জানিয়ে তার নিজের তলোয়ারটা কোষ মুক্ত করে আত্মরক্ষার জন্য তৈরি হলো। ঘটনাচক্রে সেই সময়েই তার দুই বন্ধু ও সরাইখানার মালিক একসাথে হয়ে মঁসিয়ে দ্য অ্যাট্রাগঁনের ওপর শাবল লাঠি এসব নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ল। এই আক্রমণে মঁসিয়ে দ্য অ্যাট্রাগঁন মাথা ফেটে সরাইখানার মালিক তার ভৃত্যদের সাহায্য মঁসিয়ে দ্য অ্যাট্রাগঁনের সুস্থ করে তোলার জন্য সরাইখানার রান্নাঘরে নিয়ে গেল।

    কপালে কাটা দাগঅলা ভদ্রলোকটা আবার তার জায়গায় সেই জানালার ধারে গিয়ে বসল। কিছুক্ষণ পর সরাইখানার মালিককে উদ্দেশ্য করে জিজ্ঞেস করল–ওহে পাগলটা কেমন আছে?

    ভেতর থেকে সরাইখানার মালিক বলল–এখন যথেষ্ট ভালো আছে। তবে অজ্ঞান হবার আগের মুহূর্ত পর্যন্ত তার সকল শক্তি দিয়ে তোমার উদ্দেশ্যেই চেঁচাচ্ছিল আর তখনও তোমায় তলোয়ার যুদ্ধে আহ্বান করেছিল।

    লোকটি বলল–‘তা বেশ, তবে ও কি যন্ত্রণার ঘোরে অন্য কারো নাম ধরে ডাকছিল?’ সরাইখানার মালিক বলল,–‘হ্যাঁ মঁসিয়ে, উনি ওনার পকেট হাতড়িয়ে একটা চিঠি দেখিয়ে বলছিলেন যে, এই অন্যায় আচরণের কথা যখন মঁসিয়ে দ্য ট্রেভিল জানতে পারবেন তখন সবাইকে তার উপযুক্ত শাস্তিই পেতে হবে।’

    ‘মঁসিয়ে দ্য ট্রেভিল!’ আপন মনেই বিড়বিড় করে বলে চলল লোকটা। এবার লোকটি খুবই সর্তক হয়ে বলল, ‘আমায় জানতেই হবে ঐ চিঠিতে কি আছে।’ মঁসিয়ে দ্য অ্যাট্রাগঁন তখনও অজ্ঞান অবস্থায়, লোকটি তার গাউনের পকেট থেকে চিঠিটা বার করে নিল।

    ‘মিলেডি নিশ্চয়ই এই আগন্তককে এখনো দেখেনি। আর আমি এটাও চাই না যে এই আগন্তক মিলেডিকে দেখে ফেলুক। তাছাড়া এমনিতেই মিলেডি যথেষ্ট দেরি করে ফেলেছে।’

    ঠিক সেসময় মঁসিয়ে দ্য অ্যাট্রাগঁনও জ্ঞান ফিরে পেল এবং যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সরাইখানা ছেড়ে চলে যেতে চাইল। মঁসিয়ে দ্য অ্যাট্রাগঁন তখনও যথেষ্ট দুর্বল, আস্তে সরাইখানার সদরে আসতেই যে জিনিসটার ওপর তার প্রথম চোখ পড়ল তা হচ্ছে একটা বড় ঘোড়ার গাড়ি। যেটার দুটো বলশালী নর্মাল ঘোড়া জোতা আছে, তারই পায়ের কাছে দাঁড়িয়ে একটি সুন্দরী মহিলার সাথে আস্তে আস্তে কথা বলছে কপালের দুদিকে ক্ষত চিহ্নওলা লোকটা। সুন্দরী মহিলাটি জিজ্ঞেস করল কার্ডিনাল-এর আদেশ কি?

    লোকটি বলল, ‘তুমি যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ইংল্যান্ড চলে যাও আর বাকিংহামের ডিউকের ওপর কড়া নজর রাখবে। ভালো কথা কার্ডিনালকে বলো ডিউক তাড়াতাড়ি লন্ডন ছেড়ে যাবেন।

    ‘আর কোনো নির্দেশ আছে?’ সুন্দরী মহিলাটি জানতে চাইল।

    ‘হ্যাঁ, শেষ নির্দেশটা এই বাক্সের মধ্যে আছে কিন্তু এটা তুমি কোনো মতেই চ্যানেলের অন্য প্রান্তে যাওয়া পর্যন্ত খুলবে না।‘

    ‘বেশ ভালো কথা। সব নির্দেশই যথাযথ পালন হবে। কিন্তু আমি জানতে চাইছি, তুমি এখন কি করবে?’

    ‘আমি? ও-হ্যাঁ আমি প্যারিসে ফিরে যাবো।‘

    মহিলাটি বলল,–‘সে কি ওই উদ্ধত যুবকটাকে শাস্তি না দিয়েই’ লোকটি এই কথার উত্তর দিতে যাবার সাথে সাথেই দেখল মঁসিয়ে দ্য অ্যাট্রাগঁন দ্রুত সামনের দিকে এগিয়ে আসছে।

    ‘এই যে মশাই দাঁড়াও, আর আমার সাথে যুদ্ধ করো; একজন মহিলার সামনে আমার কাছ থেকে পালিয়ে যাবার সাহস নিশ্চয়ই তোমার হবে না।’ চিৎকার করে ক্রুদ্ধ স্বরে মঁসিয়ে দ্য অ্যাট্রাগঁন বলল।

    কপালে কাটা দাগ লোকটা এতে খুব অপমানিত হয়ে কোমরে হাত দিল তালোয়ারটা কোষ মুক্ত করার জন্য, কিন্তু সেই সুন্দরী মহিলা যার নাম মিলেডি সে তার সঙ্গীকে বলল, ‘মনে রেখো সামান্য দেরিতেই আমাদের কাজের ক্ষতি হয়ে যাবে আর তাতে আমাদের সব কিছুই ধ্বংস হয়ে যাবে।’

    ‘ঠিক, তুমি ঠিকই বলেছ, বোকার মতো উত্তেজিত হওয়া ঠিক নয়; যতো তাড়াতাড়ি সম্ভব আমি এই জায়গা ছেড়ে চলে যাচ্ছি,’ এই কথা বলে সেই কপালে দাগওলা লোকটা লাফিয়ে তার ঘোড়ার পিঠে চেপে বসল এবং দ্রুত সেখান থেকে চলে গেল। অবশ্য তার আগে মহিলাকে অভিবাদন জানাতে ভুলল না।

    লোকটা চলে যাবার সাথে সাথেই মিলেডি কোচম্যান নরম্যান ঘোড়া দুটোকে চাবুক চালাতেই সে দু-টো ধূলো উড়িয়ে নিমেষেই অদৃশ্য হলো।

    ‘কাপুরুষ’ বলে সামনের দিকে খোলা তলোয়ার নিয়ে লাফিয়ে যেতেই মঁসিয়ে দ্য অ্যাট্রাগঁন বুঝতে পারল তার ক্ষতস্থান থেকে আবার রক্ত ঝরছে তাই শরীরটা দুর্বল লাগছে।

    সে দিনটা মঁসিয়ে দ্য অ্যাট্রাগঁন সরাইখানাটাতে থেকে যেতে বাধ্য হলো। পরের দিন সকালে ঘঁসিয়ে সুস্থ হতে প্যারিস যাবার জন্য তৈরি হতে লাগল। সরাইখানায় পয়সা মেটাতে গিয়ে দেখল যে তার পকেট ফাঁকা, সমস্ত কিছুই চুরি হয়ে গিয়েছে।

    সরাইখানার মালিকের উদ্দেশ্য হুংকার করে উঠে মঁসিয়ে দ্য অ্যাট্রাগঁন বলল ‘কোথায় গেল আমার চিঠিটা? আপনাকে সতর্ক করে দিয়ে বলছি যে ওটা মঁসিয়ে দ্য ট্রেভিলের উদ্দেশ্যে লেখা। ওটা খুঁজে আমায় পেতেই হবে।’

    মঁসিয়ে দ্য অ্যাট্রাগঁনের এই হুংকারে সরাইখানার মালিক ভয়ে ভয়ে জিজ্ঞেস করল, ‘চিঠিটা কি খুবই দরকারি?’

    ‘দরকারি মানে? এটার ওপর আমার ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে।’

    মঁসিয়ে দ্য অ্যাট্রগঁনের মুখে রাজা ও তাঁর রক্ষী বাহিনির প্রধান মঁসিয়ে দ্য ট্রেভিলের নাম শুনে সরাইখানার মালিক বিপদের আঁচ করে এবং নিজেকে বাঁচাবার জন্য বলল, ‘মঁসিয়ে আপনার চিঠিটা হারিয়ে যায়নি, ওটা চুরি হয়ে গিয়েছে।

    ‘চুরি হয়ে গিয়েছে?’

    ‘বলো কে চুরি করেছে?

    ‘সেই লোকটা যার কপালের দু-দিকে কাটা দাগ, …তাহলে খুলেই বলি, গতকাল অজ্ঞান হবার আগে যখন মঁসিয়ে দ্য ট্রেভিলের কাছে অভিযোগ জানাবার কথা বলছিলেন, তখনই সেটা শুনে সেই কাটা দাগওলা লোকটা সতর্ক হয়ে ওঠে এবং তারপরই দেখি যেখানে আপনার পশমের গাউনটা খোলা ছিল সেখানে অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে আছে আমার দৃঢ় বিশ্বাস ওই লোকটাই আপনার চিঠি চুরি করেছে।’

    ‘প্যারিসে গিয়েই মঁসিয়ে দ্য ট্রেভিলকে আমি এই কথা জানাবো। তিনি নিশ্চয়ই রাজার কানে কথাটা তুলবেন। তখন বুঝতেই পারছেন কি অবস্থা হবে কাটা দাগওলা লোকটার?’ এই বলে মঁসিয়ে দ্য অ্যাট্রাগঁন টাকা মিটিয়ে রাস্তায় নামলেন।

    না তার টাট্টু ঘোড়া পথে আর কোনো ঝামেলা করেনি। প্যারিসে ঢোকার মুখে তিন ক্রাউনে তার টাটুটা বেচে হেঁটেই সে প্যারিস শহরে ঢুকল। এখন আর টাটুকে নিয়ে কারো আর হাসার কারণ রইল না।

    মঁসিয়ে ট্রেভিল রাজা ত্রয়োদশ লুইসের খুব নিকট বন্ধু। সেই অরাজকতার দিনে ফ্রান্সের রাজাদের তাঁর পাশে সর্বক্ষণ থাকার জন্য সাহসী ও দক্ষ যোদ্ধার প্রয়োজন হতো। যারা সকল সময়ই তাদের প্রিয় রাজার পাশে থেকে রাজাকে শত্রুদের হাত থেকে রক্ষা করত, মঁসিয়ে দ্য ট্রেভিলও ছিলেন একজন অসীম সাহসী যোদ্ধা ও রাজার প্রিয় বন্ধু। মঁসিয়ে দ্য ট্রেভিলের নিয়ন্ত্রণে বেশ কিছু সংখ্যক সাহসী যোদ্ধা ছিল যারা নিজের জীবন তুচ্ছ করে রাজাকে রক্ষা করার জন্য প্রস্তুত থাকত।

    কার্ডিনাল রিচেলিউ ছিলেন দেশের একজন সর্বশক্তিমান পুরুষ এবং তিনি নিজেকে রাজার সম-ক্ষমতাসম্পন্ন ভাবতেন। ঠিক রাজারই মতো এই কার্ডিনাল রিচেলিউ–এরও নিয়ন্ত্রণে কিছু দক্ষ সৈন্য থ ত এবং তারাও কার্ডিনালকে সকল বিপদ থেকে রক্ষা করার জন্য সদা প্রস্তুত থাকত। বলাবাহুল্য এই সব সৈনিকেরা সাধারণ সৈনিকের মতো বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ছিল। রাজা এবং কার্ডিনাল দুজনেই তাদের এই সুশিক্ষিত দক্ষ যোদ্ধাদের নিয়ে একজন আর একজনকে টেক্কা দেবার চেষ্টা করত।

    মঁসিয়ে দ্য ট্রেভিলেরও এক সময় খুব খারাপ অবস্থা ছিল অনেকটা মঁসিয়ে দ্য অ্যাট্রাগঁনের মতোই। কপর্দক শূন্য অবস্থায় তিনিও প্যারিসে এভাবেই এসেছিলেন কিন্তু নিজের সাহসিকতায়, বুদ্ধিমত্তায় এবং চাতুর্যে তিনি এখন রাজার সৈন্যবাহিনী থেকে বাছাই করা যোদ্ধা নিয়ে গঠিত রাজার যে রক্ষী বাহিনী তার প্রধান।

    মঁসিয়ে দ্য ট্রেভিলের প্রধান কার্যালয়ে যখন সিয়ে দ্য অ্যাট্রাগঁন প্রবেশ করল, সেই বিরাট প্রসাদের আবহাওয়া দেখে মঁসিয়ে হকচকিয়ে গেল। চতুর্দিকেই যেন যুদ্ধের প্রস্তুতি। বিরাট দরজার ভেতর দিয়ে যখন আরো ভেতরে পৌঁছাল দেখল চারদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রাজার একান্ত বিশ্বাসী দক্ষ সৈনিকেরা নিজেদের মধ্যে অসি যুদ্ধের মহড়া দিচ্ছে, তলোয়ারের সেই শব্দে মঁসিয়ে দ্য অ্যাট্রাগঁনের বুকের রক্ত লাফিয়ে উঠল। একজন ভৃত্য এসে তার কাছে জানতে চাইল এখানে তার আসার উদ্দেশ্য কি? মঁসিয়ে দ্য অ্যাট্রাগঁনের নাম বলল এবং অনুরোধ জানাল যেমন মঁসিয়ে দ্য ট্রেভিল যেন তাকে অল্প। সময়ের জন্য হলেও অবশ্যই তার সাথে সাক্ষাৎ করার অনুমতি দেন।

    মঁসিয়ে দ্য অ্যাট্রাগঁনের প্রার্থনা মঞ্জুর হলো, ভৃত্যটি এসে তাকে সিয়ে দ্য ট্রেভিলের সাথে সাক্ষাৎ করার জন্য ভেতরের ঘরে নিয়ে গেল।

    মঁসিয়ে দ্য ট্রেভিলের ঘরে ঢুকে মঁসিয়ে দ্য অ্যাট্রাগঁন দেখতে পেল সেনা-নায়কের মেজাজ খুব চড়া, তবুও তিনি মঁসিয়ে দ্য অ্যাট্রাগঁনকে সৌজন্য দেখিয়ে বললেন, ‘মঁসিয়ে আপনি দয়া করে সামান্য সময় অপেক্ষা করুন আমি কয়েকজনের সাথে একটা জরুরি কথা সেরে নিই।’ এই বলে মঁসিয়ে দ্য ট্রেভিল চিৎকার করে তিনটি মাত্র শব্দ উচ্চারণ করলেন ‘এ্যাথোস, প্যাথোস, এ্যারামিস!’ সাথে সাথেই শেষের দু-জন উপস্থিত হয়ে অভিবাদন জানাল তাদের নেতা মঁসিয়ে দ্য ট্রেভিলকে।

    ‘তোমরা, তোমরা গত পরশু রি ফেরোয় এক ফ্যারাস অনুষ্ঠানে দাঙ্গা বাঁধিয়েছিলে? অস্বীকার করতে পারবে না, আমি জানতে পেরেছি, সেই সময় কার্ডিনাল-এর সৈন্যবাহিনী তোমাদের গ্রেফতার করে।’ রাগে উন্মত্ত হয়ে মঁসিয়ে দ্য ট্রেভিল তাদের দিকে তাকিয়ে গম্ভীর স্বরে বললেন, ‘অ্যাথোস, অ্যাথোস কোথায়? তাকে দেখা যাচ্ছে না কেন?’ প্যাথোস বলে উঠল, ‘মঁসিয়ে অ্যাথোসের শরীর অসুস্থ। সে খুবই অসুস্থ হয়ে পরেছে। সম্ভবত তার গুটি বসন্ত হয়েছে।’

    ‘বাঃ! চমৎকার খুব সুন্দর গল্প বলতে শিখেছ তো? অ্যাম্বোস নিশ্চয়ই ঐ দাঙ্গায় মারাত্মক জখম হয়েছে কিংবা মারাই গিয়ে থাকবে হয়তো।

    ‘মঁসিয়ে তাহলে সত্যি কথাই বলি, সে দিনের ওই দাঙ্গায় আমরা দাঙ্গা বাঁধাবার আগেই কার্ডিনাল-এর সৈন্যরা আচমকা আমাদের আক্রমণ করে। এর ফলে আমাদের দলের দু-জন মারা যায়। আর অ্যাম্বোস মারাত্মক জখম হয়। তবে ওদের মধ্যে একজনকে আমি তার তলোয়ার দিয়েই আঘাত করি এবং তাতে সে মারা যায়। আমার নিজের তলোয়ারটা দাঙ্গার প্রথমেই ভেঙে যায়।’ প্যাথোস এই বলে চোখ দুটো নামিয়ে দাঁড়িয়ে রইল।

    ঠিক সেই সময় ব্যান্ডেজ বাঁধা শ্লথ পায়ে অ্যাম্বোস এল। অ্যাথোস তুমি! সমস্বরে বলে উঠল প্যাথোস আর এ্যারামিস। এদের সাথে সাথে মঁসিয়ে দ্য ট্রেভিলকে অ্যাথোস বলে উঠলেন ‘মঁসিয়ে আপনি আমায় ডেকে পাঠিয়েছেন সেটা শোনা মাত্রই আমি আপনার কাছে এসেছি। সামান্য যদি বিলম্ব হয়ে থাকে সেটা আমার ক্লান্তি আর অসুস্থতার জন্য হয়েছে।

    মঁসিয়ে দ্য ট্রেভিল অ্যাথোসকে আপাদমস্তক দেখে তার দিকে কয়েক পা এগিয়ে গেলেন। খুব শান্ত ও আবেগপূর্ণ স্বরে তাদের উদ্দেশ্যে বললেন, ‘দেখো বন্ধুরা, তোমরা ভালোভাবেই জানো সৈন্যবাহিনী থেকে উপযুক্ত দক্ষ সৈন্য নিয়েই রাজার জন্য এই রক্ষী বাহিনী গঠন করতে হয়। এই সাহসী বীরেরা অনর্থক তাদের নিজেদের জীবনটা অপচয় করুক এটা আমাদের কাম্য নয়। এই বীরেরা সত্যি সত্যিই পৃথিবীতে বিরল।’

    কয়েক পা আরো এগিয়ে মঁসিয়ে ট্রেভিল খুব আন্তরিকতার সাথে অ্যাথোসের হাতটা নিজের হাতে টেনে নিয়ে করমর্দন করলেন। বেচারা। অ্যাথোস! মঁসিয়ে দ্য ট্রেভিলের আন্তরিকতার চোটে তার হাতের ব্যথা এতই বেড়ে গেল যে বিড় বিড় করে কিছু একটা বলে কোনো ক্রমে নিজের হাতটা ছাড়িয়ে নিল।

    সবাই চলে যেতে মঁসিয়ে দ্য ট্রেভিল নিজের চেয়ারের দিকে এগিয়ে এলে আসতে গিয়ে মঁসিয়ে দ্য অ্যাট্রাগঁনের দিকে চোখ পড়ল, আর সাথে সাথে মৃদু হেসে বললেন, ‘বন্ধু আমি তোমার কাছে মাপ চাইছি। বাস্তবিক আমি তোমার কথা ভুলে গিয়েছিলাম আর সেজন্য আর একবার মাপ চাইছি। হ্যাঁ তোমার বাবাকে আমি চিনি, তিনি আমার কাছে খুব সম্মানীয় ছিলেন। আমি তাঁর ছেলের জন্য কি করতে পারে?’

    যুবক মঁসিয়ে দ্য অ্যাট্রাগঁন তার ইচ্ছের কথা ব্যক্ত করল, বলল ‘আমি রাজার একজন বন্দুকধারী সৈন্য হিসেবে নিজেকে নিযুক্ত করতে চাই।’

    ‘কিন্তু রাজার বন্দুকধারী সৈন্য হিসেবে এ-রকম ভাবে সরাসরি কাউকে নিয়োগ করা হয় না। আগে সৈন্যবাহিনীতে কৃতিত্বের সাথে তাকে কয়েকটা যুদ্ধ করতে হয় আর তাছাড়া দু-বছর তাকে সৈন্যবাহিনীতে অবশ্য শিক্ষা নিতে হয়।’ মঁসিয়ে দ্য ট্রেভিল বললেন।

    এই কথা শুনে যুবক অ্যাট্রাগঁন পিতৃবন্ধু ও ক্যাপ্টনকে অভিবাদন করে চলে যাবার জন্য উঠলে, মঁসিয়ে দ্য ট্রেভিল তাকে ডাকলেন এবং স্মিত হেসে বললেন।

    ‘তুমি আমার বন্ধু ও পূর্বতন সহকর্মীর ছেলে সুতরাং আমার কর্তব্য তোমায় কিছু অর্থ সাহায্য করা। কেন না আমার মনে হয় তুমি যথেষ্ট অর্থ নিয়ে এত দূরে আসেনি।’

    যুবক অ্যাট্রাগঁন বলল,–‘ধন্যবাদ মঁসিয়ে আমি কারো কাছে অর্থ সাহায্য আশা করি না।’

    ‘বাঃ! এটা খুব ভালো। তুমি জেনে খুশি হবে যে আমি মাত্র চার ক্রাউন নিয়ে প্যারিস শহরে এসেছিলাম।’ মঁসিয়ে দ্য ট্রেভিল বললেন। ‘তবু আমি তোমার জন্য কিছু করতে চাই। আমি একটা চিঠি লিখে দিচ্ছি রয়েল একাডেমি-র অধ্যক্ষকে। আগামীকালই উনি তোমায় ওই প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার জন্য ভর্তি করে নেবেন এবং তার জন্য তোমার কোনো খরচ হবে না। ওহে যুবক আমার এই সামান্য সাহায্য তুমি প্রত্যাখান করো না। সেখানে তোমায় ঘোড়ায় চড়া, বিভিন্ন ভঙ্গিমায় অসি চালনা এবং তার সাথে নাচটাও শিখিয়ে দেবে আর তুমি মাঝে মাঝে আমায় জানিয়ে যাবে তোমার শিক্ষার অগ্রগতি কেমন হচ্ছে।’

    কথা প্রসঙ্গে অ্যাট্রাগঁন মঁসিয়ে দ্য ট্রেভিলকে জানাল কীভাবে তার বাবার দেয়া চিঠিটা চুরি হয়ে যায়। সব শুনে দ্য ট্রেভিলন বললেন,–‘দেখ, ওই কাটা দাগওলা লোকটা যে তোমার চিঠি চুরি করেছে এবং সেই ইংরেজ মহিলা যার নাম মেলেডি এরা হচ্ছে ভয়ঙ্কর। এদের সুন্দর রূপের ভেতর রয়েছে শয়তানের বাসা। আমি তোমায় সাবধান করে দিচ্ছি যদি দেখ ওই সুপুরুষ কপালের দুই দিকে কাটাদাগওলা তোমার সামনে দিয়ে আসছে তুমি সাথে সাথেই অন্য রাস্তায় সরে যাবে।’

    ‘ক্যাপটেন আমি ভীতু নই। আপনার এই সাবধান বাণী হয়তো আমি মানতে পারব না।’ এই বলে ক্যাপটেনের লেখা রয়েল একাডেমি-র চিঠিটা নিয়ে সে দ্রুত চলে গেল।

    কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত বের হবার পথে তার সাথে সেই তিনজন মাসকেটিয়ার্সের সাথে দেখা হয়ে গেল। তাদের চোখে মুখে তখনও তিরস্কৃত হওয়ার লজ্জা রয়েছে, প্রত্যক্ষদর্শীই সে ঘটানার একমাত্র এই দ্য অ্যাট্রাগঁন। এই তিরস্কারের কথা যদি বাইরে প্রচার হয়ে যায় সেটা তিন যোদ্ধার কাছে কখনই সুখপ্রদ হবে না। সুতরাং তারা মঁসিয়ে দ্য অ্যাট্রাগঁনকে বাঁধা দিল এবং জানাল তাকে দ্বন্দ্ব যুদ্ধ করতে হবে। দ্য অ্যাট্রাগঁনের সাথে এই তিনজনের দেখা হয় একই দিনে কিন্তু বিভিন্ন সময়ে। যখন দ্য অ্যাট্রাগঁন নির্দিষ্ট সময়ে অ্যাথোসের সাথে দ্বন্দ্ব যুদ্ধ করার জন্য উপস্থিত হলো, তখন অ্যাথোস, প্যাথোস ও এ্যারমিস দেখে আশ্চর্য হয়ে গেল যে একই ব্যক্তি তিনজনের সাথে একই দিকে এক ঘণ্টার তফাতে দ্বন্দ্ব যুদ্ধ করার জন্য উপস্থিত। কিন্তু দমে যাবার চরিত্র ছিল না মঁসিয়ে দ্য অ্যাট্রাগঁনের। দ্য অ্যাট্রাগঁন বলল—’ভদ্র মহাশয় আমায় ক্ষমা করতে হবে।’

    এই ক্ষমা শুনে তিন বীর যোদ্ধা ভাবলো তাদের প্রতিদ্বন্দ্বির ভয় পেয়ে গিয়েছে। তারা অবজ্ঞার দৃষ্টিতে মঁসিয়ে দ্য অ্যাট্রাগঁনের দিকে তাকাতে তার পেশী দৃঢ় হয়ে রক্ত চঞ্চল হয়ে উঠল।

    রেগে গিয়ে তলোয়ার খুলে দৃঢ় মুষ্টিতে ঘরে মঁসিয়ে দ্য অ্যাট্রাগঁন বলল, ‘ক্ষমা শব্দটার আপনারা ভুল অর্থ করেছেন। আমি বলতে চাইছি আপনাদের সাথে চুক্তি ছিল দ্বন্দ্ব যুদ্ধের আর ভদ্র মহোদয়রা নিশ্চয়ই জানেন সেটা দু জনের সাথে হয়। এছাড়াও আপনাদের সাথে চুক্তি ছিল এক ঘণ্টার তফাতে আমি তিনজনের সাথেই যুদ্ধ করব। আমি আমার চুক্তির খেলাপ করিনি কিন্তু আপনারা তিনজনে একসাথে আমার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করলে সেটা কোনো মতেই দ্বন্দ্ব যুদ্ধের পর্যায়ে পড়ে না এবং আপনাদের চুক্তির মধ্যে পড়ে না।’

    এই কথা বলে মঁসিয়ে দ্য অ্যাট্রাগঁন অ্যাথোসের দিকে তাকাল এবং বলল—’সিয়ে অ্যাম্বোস আপনার সাথেই আমার প্রথম যুদ্ধের কথা। আপনি প্রস্তুত হন।’

    অ্যাট্রাগঁন তার তরোয়াল খুলে প্রস্তুত হলো মঁসিয়ে অ্যাম্বোস এক ঝটকায় যখন নিজের তরোয়াল খুলে প্রতিদ্বন্দ্বির মুখোমুখি হবে ঠিক সেই সময় প্যাথোস চিৎকার করে বলল–‘তোমরা তোমাদের তরোয়াল খাপে ভরো। ওই দেখো কার্ডিনাল-এর একদল রক্ষীবাহিনী আমাদের এই দিকেই আসছে।’

    কিন্তু অনেক দেরি হয়ে গিয়েছে, তরোয়াল কেউই খাপে ভরার সময় পেল না তার আগেই মঁসিয়ে দ্য জুসাকের নেতৃত্বে কার্ডিনাল-এর রক্ষীবাহিনী তাদের সামনে এসে দাঁড়াল।

    ‘ভদ্র মহোদয়গণ’–জুসাস বলল, আপনাদের তরোয়াল যে যার খাপে ভরুণ এবং আমায় অনুসরণ করুন, আপনাদের আমি গ্রেপ্তার করলাম। আপনাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আপনারা দ্বন্দ্ব যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়েছেন এবং এটা আইন লঙ্ঘন অপরাধ কেননা দ্বন্দ্ব যুদ্ধ নিষিদ্ধ।

    ‘মঁসিয়ে’ এ্যারামিস বলল, ‘আপনি আপনার পথ দেখুন আর আমার মনে হয় সেটাই আপনার পক্ষে মঙ্গলজনক।’

    জুসাস বলল—’আপনার কথার ভঙ্গি শোধরাণ, আর আপনাকে সতর্ক করে বলছি, আমার কথার অবাধ্য হলে আপনার বিরুদ্ধে অভিযোগ আনব।’

    ‘ওরা সংখ্যায় পাঁচজন’ এ্যাথোস চাপা স্বরে বলল,–‘কিন্তু আমরা মাত্র তিনজন। আমরা আবার মার খাবো এবং এখানেই এদের হাতে মরবো। আমি আমার তরফ থেকে বলছি পরাজিত হয়ে ক্যাপটেনের কাছে আমি দ্বিতীয়বার দাঁড়াতে পারব না।’

    অ্যাথোস, প্যাথোস এবং এ্যারামিস সংঘবদ্ধ হয়ে দাঁড়াতেই জুসাস তার সৈন্যদেরও সংঘবদ্ধ করল।

    ‘ভদ্রমহোদয়গণ’ দ্য অ্যাট্রাগঁন বলল ‘আমায় অনুমতি তির আপনাদের কথাটা কিছু সংশোধন করে দিতে। আমার গণনায় আমরা চারজন। তিনজই নই।

    ‘কিন্তু তুমি নিশ্চয়ই আমাদের দলে নও’ প্যাথোস জিজ্ঞেস করল।

    ‘অবশ্যই আপনাদের দলের’ দ্য অ্যাট্রাগঁন বলল,–‘কেন না আমরা পরণে যোদ্ধার পোশাক নেই বটে আমি অন্তর থেকে স্বীকার করি আমি আপনদের একজন।’

    ‘বাঃ! বাঃ সুন্দর!’ চিৎকার করে বলে উঠল অ্যাথোস, ‘আমরা চারজন অ্যাম্বোস, প্যাথোস, এ্যারামিস এবং অ্যাট্রাগঁন। চল ঝাঁপিয়ে পড়ো আমাদের শত্রুদের ওপর।’

    অ্যাথোস আর প্যাথোস এক একজন শত্রুর সাথে এ্যারমিস একা দুজন শত্রুর সাথে আর অ্যাট্রাগঁন শত্রুনেতা জুসাসের সাথে তরোয়াল নিয়ে লড়াই চালাতে লাগল। অভিজ্ঞ জুসাস যাকে বালক হিসেবে মনে মনে তুচ্ছ করেছিল, তার ক্ষিপ্রতা, তরোয়াল চালানোর ভঙ্গি দেখে অবাক হয়ে গেল। সত্যিই দ্য অ্যাট্রাগঁনের তরোয়াল সাপের মতো কখনো এদিক কখনো ওদিক চলতে লাগল। জুসাস তার সমস্ত শিক্ষা উজার করেও পারল না। সবার আগে তাকেই মরতে হলো দ্য অ্যাট্রাগঁনের তরোয়ালে। এরপর দ্য অ্যাট্রাগঁন বন্ধুদের সাহায্য করতে এগিয়ে গেল আর ক্লান্ত অ্যাথোসের প্রতিদ্বন্দ্বিকে খানিকের মধ্যেই হারিয়ে ফেলল। একে এক কার্ডিনাল-এর পাঁচ সৈন্যই শেষ হয়ে গেল। সেদিন হাত ধরাধরি করে চার বন্ধু যখন মঁসিয়ে দ্য ট্রেভিলের প্রাসাদে ফিরে এলো তখন তাদের আনন্দ আর গর্ব ঝরে পরছিল। তবে এদের মধ্যে দ্য অ্যাট্রাগঁনের আনন্দই সবচেয়ে বেশি হচ্ছিল।

    এই ঘটনার সমস্ত বিবরণ যখন মঁসিয়ে দ্য ট্রেভিলের কানে পৌঁছাল তিনি তখন চারজনকে সকলের সামনে তিরস্কার করলেন কিন্তু আড়ালে আন্তরিকতার সাথে প্রশংসা করলেন। কার্ডিনাল-এর সৈন্যদের পরাজয়ের সংবাদ রাজার কাছে পৌঁছাল। রাজা ত্রয়োদশ লুই এই খবরে খুব সন্তুষ্ট হলেন।

    ‘আপনি বলছিলেন এই জয় এনেছে আমাদের চারজন যোদ্ধা? যাদের একজন আহত আর একজনের বয়স নিতান্তই কম?’ রাজা লুই গর্বিত স্বরে প্রশ্নটা করলেন ক্যাপটেন দ্য ট্রেভিলকে।

    ‘হ্যাঁ মহাশয়’–মঁসিয়ে দ্য ট্রেভিল বললেন,–‘আর ওই ছেলেটির সাথে আজ সকালেই আমার পরিচয়। ওরা বাবা আমার পুরনো বন্ধু আর তার বাবা আপনার বাবার রাজত্বে পার্শিয়ানদের সঙ্গে সেই গৌরবময় যুদ্ধে সম্মানীয় পদে অংশ গ্রহণ করেছিলেন।’

    রাজা লুই বললেন–‘আমি সেই সাহসী বীর যুবকের সাথে দেখা করতে চাই মঁসিয়ে ট্রেভিল। আমাদের উচিত যুবকটির জন্য কিছু করা।’

    ‘মহামন্য রাজা, আপনি তার সাথে কখন দেখা করতে চান? তাকে কি আমি একাই আপনার সামনে আনবো?’ মঁসিয়ে দ্য ট্রেভিল জানতে চাইলেন।

    ‘আগামীকাল’ রাজা এয়োদশ লুই বললেন,–‘আগামীকালই দুপুরে সাক্ষাতের ব্যবস্থা করুন, আর, হ্যাঁ চারজনকে এক সাথেই আনবেন, চার বীরকে আমি একসাথেই সম্মান জানাবো। মঁসিয়ে ট্রেভিল, কর্তব্যপরায়ণ, উৎসর্গক্রীত প্রাণ জগতে দুর্লভ, যে কজন এই আদর্শের মানুষ আছে, আমাদের উচিৎ তাঁদের যথাযথ সম্মান প্রদর্শন করা।’

    পরদিন বেলা ১২টায় পেছনের সিঁড়ি দিয়ে চারজনকে রাজা ত্রয়োদশ লুইয়ের কাছে নিয়ে আসা হলো। রাজার নির্দেশ ছিল পেছনের সিঁড়ি দিয়ে নিয়ে আসার কারণ কার্ডিনাল-এর চরেরা জানতে পারবে।

    ‘এসো এসো’ রাজা বলে চললেন–‘এসো আমার বীর যোদ্ধারা’ চার যোদ্ধা রাজাকে অভিবাদন করে চুপ করে দাঁড়িয়ে রইলো, সবার পেছনে ছিল দ্য অ্যাট্রাগঁন।

    সেদিকে দৃষ্টি পড়তে রাজা বললেন,–‘আরে একে আপনি যুবক বলেছিলেন? মঁসিয়ে ট্রেভিল এ-যে দেখছি নিতান্তই বালক? আর এই ছোট্ট বালক জুসাসের মতো দক্ষ তরোয়ালবাজকে পরাজিত করেছে?’

    ‘হ্যাঁ মহাশয় ঘটনার মধ্যে কোনো মিথ্যে নেই।’ মঁসিয়ে দ্য ট্রেভিল বললেন। রাজা লুই আবেগরুদ্ধ স্বরে বললেন—’এই নিতান্ত বালক শত্রুদের তরোয়াল ভেঙে টুকরো টুকরো করে, নিজের শত্রুকে অল্প সময়ে ঘায়েল করে বন্ধুর শত্রুকেও ঘায়েল করেছে? এসো বীর বালক আমার কাছে এসো আর এই নাও উপহার স্বরূপ চল্লিশটা স্বর্ণ মুদ্রা।’

    তখনকার দিনে রাজার সামনে আসা কিংবা তাঁর দর্শন পাওয়া, তাঁর সাথে করমর্দন করা খুব সহজ বিষয় ছিল না। এর ওপর রাজার কাছ থেকে কোনো কিছু উপহার পাওয়া পৃথিবীর যে কোনো আকাঙ্ক্ষিত বস্তুর থেকে অনেকাংশে বেশি পাওয়ার সামিল।

    চার যোদ্ধা চলে যাবার পর রাজা মঁসিয়ে দ্য ট্রেভিলকে বললেন ‘মঁসিয়ে ট্রেভিল ওই যুবক অ্যাট্রাগঁনকে খুব তাড়াতাড়ি আপনার শ্যালক মঁসিয়ে দ্য এ্যাসার্টার শিক্ষানিবাসে পাঠিয়ে দিন।’

    একদিন সকালে রাজা ত্রয়োদশ লুইয়ের নির্দেশ মতো মঁসিয়ে দ্য এ্যাসার্টার তাঁর শিক্ষানিবাসে মঁসিয়ে দ্য অ্যাট্রাগঁনকে ভর্তি করে নিল। তাকে যখন যোদ্ধার পোশক দেয়া হলো মঁসিয়ে দ্য অ্যাট্রাগঁন একটা গভীর শ্বাস ফেলল কেন না সে জানে এখন থেকে আগামী দশ বছরের আগে সে নিজেকে রাজার প্রধান রক্ষীবাহিনীতে যোগ দেবার কোনো সুযোগ পাবে না আর এর মধ্যে কোনো বড় রকম কাজের দায়িত্বও সে পাবে না। যদিও মঁসিয়ে দ্য ট্রেভিল তাকে বলেছে আগামী দু-বছরের মধ্যেই তাকে মূল বাহিনীতে নিয়ে নেয়া হবে কিন্তু সেটাও তো দীর্ঘ সময়ের ব্যাপার।

    একদিন মঁসিয়ে দ্য অ্যাট্রাগঁন তার ঘরে বিশ্রাম নিচ্ছিল সেই সময় একজন আগন্তুক এসে জানাল যে তার সাথে কিছু গোপন কথা আছে।

    ‘আসুন মহাশয়’–মঁসিয়ে দ্য অ্যাট্রাগঁন অভ্যর্থনা জানাল,–‘আপনার পরিচয়টা কি জানতে পারি?’

    ‘মহাশয় আমিই আপনার বাড়িওলা, আমার নাম মঁসিয়ে বোনাসিক্স!’

    ‘ওঃ তাই বলুন, সেই জন্যই আপনাকে খুব চেনা চেনা লাগছিল,’ মঁসিয়ে দ্য অ্যাট্রাগঁন বলল।

    ‘হ্যাঁ মহাশয়, আপনি আমায় আগেই দেখে থাকবেন, যাইহোক আমার আসার উদ্দেশ্যটা কিন্তু খুব গোপনীয়,’ আস্তে আস্তে কথাগুলো বলল সিয়ে দ্য বোনাসিক্স।

    ‘আপনি নিশ্চিন্ত থাকতে পারেন, আপনার সব কিছুই গোপন থাকবে। নির্ভয়ে আপনি আপনার বক্তব্য জানাতে পারেন।’

    ‘ধন্যবাদ মঁসিয়ে দ্য অ্যাট্রাগঁন’ বলল মঁসিয়ে বোনাসিক্স। একটা চেয়ার টেনে বসে পুনরায় শুরু করল মঁসিয়ে বোনাসিক্স। ‘মহাশয় আমার স্ত্রী হচ্ছেন আমাদের রানীর মেয়ের দর্জি। অবশ্য তার শুধু সেটাই পরিচয় নয়, সে রানীর একান্ত বিশ্বাসভাজনও বটে। মহাশয় খুবই দুর্ভাগ্যর কথা যে আমার স্ত্রী গতকাল সন্ধ্যায় অপহৃত হয়েছেন।’

    ‘অপহরণ?’ মঁসিয়ে দ্য অ্যাট্রাগঁন আশ্চর্য হয়ে আবার বললেন ‘অপহরণ? আপনি বলছেন কি?’

    একটু থেমে মঁসিয়ে দ্য বোনাসিক্স বললেন–‘হ্যাঁ মহাশয় গতকাল যখন সে তার কাজ সেরে ফিরছিল তখন তাকে অপহরণ করা হয়, আর আপনাকে আগেই বলেছি যে আমাদের রানী যে কয়েকজনকে গভীরভাবে। বিশ্বাস করেন আমার স্ত্রী তাদের মধ্যে একজন। আপনাকে আমার জানানো উচিত যে এই অপহরণের পেছনে গভীর চক্রান্ত রয়েছে।’

    ‘কিন্তু কে বা কারা আপনার স্ত্রীকে অপহরণ করল? আপনি কি আমায় ব্যাপারটা পরিষ্কার করে বলবেন?’ জানতে চাইল র্মসিয়ে অ্যাট্রাগঁন।

    ‘গতকাল আমার স্ত্রী যখন রানীর কাছ থেকে ফিরছিল তখন একজন অপরিচিত লোক তাকে দীর্ঘক্ষণ ধরে অনুসরণ করছিল।’

    ‘কে সেই শয়তান? আমি তাকে উপযুক্ত শিক্ষা দেব।’ ক্রুদ্ধ মঁসিয়ে দ্য অ্যাট্রাগঁন টেবিলে ঘুসি মেরে বলে উঠল। খানিকক্ষণ চুপ করে থেকে বাড়িওলা মঁসিয়ে দ্য বোনাসিক্স বলল–‘মঁসিয়ে আপনি একজন যথার্থই সৎ ও সাহসী লোক, সেই কারণে আপনাকে আমি এমন কিছু গোপন সংবাদ বলতে পারি যাতে আমার বিশ্বাস কোনো ক্ষতি হবে না।’

    এ কথার কোনো উত্তর না দিয়ে মঁসিয়ে দ্য অ্যাট্রাগঁন কৌতূহল নিয়ে মঁসিয়ে দ্য বোনাসিক্সের দিকে তাকিয়ে রইল, সেই দৃষ্টি যেন বলছিল ‘হ্যাঁ মঁসিয়ে আপনি আমায় বিশ্বাস করতে পারেন।’

    মঁসিয়ে দ্য বোনাসিক্স আশপাশে একবার চোখ বুলিয়ে একটু নিচুস্বরে বলে চললেন–‘গুপ্ত প্রেম মঁসিয়ে গুপ্ত প্রেম। আমার স্ত্রীর চাইতে অনেক। অনেক সম্মানীয়া এক স্ত্রী লোকের গুপ্ত প্রেম।’ গুপ্ত প্রেম! মঁসিয়ে দ্য। অ্যাট্রাগঁন এবার সত্যিই আশ্চর্য হয়ে গেল।

    ‘ভাবুন তো ঘঁসিয়ে কে এই গুপ্ত প্রেমের নায়িকা?’ খুব রহস্য করে প্রশ্নটা করলেন মঁসিয়ে দ্য বোনাসিক্স।

    ‘নিশ্চয়ই মাদমোযাজেল অ্যাগুইলিন।’–অ্যাট্রাগঁন বলল।

    ‘হয়নি মঁসিয়ে আরো সম্ভ্রান্ত মহিলা তিনি।’

    ‘তাহলে কি মাদমোয়ালে চেভরিউস?’

    ‘না মঁসিয়ে তিনি আরো সান্তা মহিলা।’–বোনাসিক্স বলল। হতাশ কণ্ঠে মঁসিয়ে দ্য অ্যাট্রাগঁন বলল, তাহলে কি তিনি মাদমোয়াজেল আমাদের রাজার…’

    ‘হ্যাঁ মঁসিয়ে এবার আপনার কোনো ভুল হয়নি। এই গুপ্ত প্রেমের নায়িকা মাদমোয়াজেল রানী এ্যান।’ ভালো ছাত্রের সঠিক উত্তরের পর গর্বিত শিক্ষকের মতো ভাব দেখালেন মঁসিয়ে দ্য বোনাসিক্স।

    ‘কিন্তু আমি বুঝতে পারছি না মঁসিয়ে কার সাথে রানীর এই গুপ্ত প্রণয়?’

    ‘মঁসিয়ে তিনি হচ্ছে মহামান্য বাকিংহামের ডিউক।’

    ‘আপনি এই গোপন সংবাদ কোথায় পেলেন মঁসিয়ে বোনাসিক্স?’

    ‘মঁসিয়ে আমি খবরটা পেয়েছি আমার স্ত্রীর কাছ থেকে।’

    ‘আপনি ঠিকই বলেছেন, সিয়ে, ঘটনা অনেক দূর গড়িয়েছে’ বললেন বোনাসিক্স।

    ‘আমার স্ত্রী আমায় বলছিল যে রানী এ্যান বর্তমানে খুব ভয়ে আর উৎকণ্ঠায় দিন কাটাচ্ছেন।’

    ‘তাই নাকি?’–মঁসিয়ে দ্য অ্যাট্রাগঁন বললেন–‘আপনি আমায় বলুন। রানী এ্যানের ভয়ের কারণটা কি?

    ‘রানী এ্যান ভীত এই কারণেই যে তিনি আশঙ্কা করছেন কেউ তার নাম ব্যবহার করে বাকিংহামের ডিউককে চিঠি লিখেছেন। চিঠিতে ডিউককে প্যারিসে আসার কথা বলা হয়েছে এবং সম্ভবত ডিউক এই ফাঁদে পা। দেবেন।’ চাপা স্বরে কথাগুলো বললেন মঁসিয়ে দ্য বোনাসিক্স।

    অ্যাট্রাগঁন জিজ্ঞেস করল–‘যে আপনার স্ত্রীকে অপহরণ করেছে আপনি কি সেই ব্যক্তিকে চেনেন?’

    প্রায় লাফিয়ে উঠে মঁসিয়ে দ্য বোনাসিক্স বললেন–‘হ্যাঁ খুব চিনি। এক সুদর্শন পুরুষ, সুঠাম দেহ, কালো চুল, উজ্জ্বল চোখ, সাদা দাঁত আর হ্যাঁ, তার কপালের দুপাশে ক্ষত চিহ্ন।’

    ‘কপালের দুপাশে ক্ষত চিহ্ন! কালোচুল, সাদা দাঁত, উজ্জ্বল চোখ আর গায়ের রঙ অনুজ্জ্বল! ওঃ আমি নিশ্চিত এসেই ব্যক্তি যার সাথে আমার যেয়ঙ্গ-এ দেখা হয়েছিল। সেই শয়তান যে আমার পকেট হাতড়ে চিঠি চুরি করেছিল।’ উত্তেজিত অ্যাট্রাগঁন হাত দুটো পেছনে রেখে মুঠি পকিয়ে ঘরময় পায়চারি করতে লাগল। ক্রোধে উত্তেজিত হয়ে মঁসিয়ে দ্য অ্যাট্রাগঁন বলল,–‘আপনি ঠিক বলছেন তো মঁসিয়ে ঐ সেই ব্যক্তি যে আপনার স্ত্রীকে অপহরণ করেছে?’

    ‘হ্যাঁ মঁসিয়ে আপনি নিশ্চিত থাকতে পারেন।’ বললেন মঁসিয়ে বোনাসিক্স।

    ‘কিন্তু মঁসিয়ে আপনি কি জানেন সে কোথায় থাকে?’

    না আমি জানি না। এক দিন আমার স্ত্রী শুধু তাকে চিনিয়ে দিয়েছিল। মঁসিয়ে দ্য বোনাসিক্স হঠাৎ পকেট থেকে একটা চিঠি বের করে সেটা অ্যাট্রাগঁনের হাতে দিয়ে বললেন–‘মঁসিয়ে এই চিঠিটা আমি আজ সকালে পেয়েছি।’

    চিঠিটা হাত বাড়িয়ে নিলেন দ্য অ্যাট্রাগঁন। তাতে এই কথাগুলো লেখা ছিল—’তোমার স্ত্রীকে আমরা অপহরণ করেছি। আমাদের প্রয়োজন শেষ হলেই তোমার স্ত্রীকে তুমি ফিরে পাবে। তার আগে নয়। তোমায় সতর্ক করে দিচ্ছি তাকে খোঁজার যদি মিথ্যে চেষ্টা করো তাহলে তুমি তাকে হারাবে।’

    চিঠিটা পড়ার পর চোয়াল শক্ত হয়ে গেল, চোখ দুটো ক্রোধে ধকধক করে জ্বলে উঠল মঁসিয়ে দ্য অ্যাট্রাগঁনের।

    ‘আপনি কি আমায় সাহায্য করবেন মঁসিয়ে?’

    সম্বিত ফিরে পেয়ে অ্যাট্রাগঁন বলল–‘হ্যাঁ নিশ্চিত থাকতে পারেন আপনি মঁসিয়ে। শুধু আমিই নই আমার তিন বন্ধু যারা রাজার রক্ষীবাহিনীর সেরা যোদ্ধা অ্যাথোস, প্যাথোস আর অ্যারামিসেরও সাহায্য পাবেন। আপনি নিশ্চিন্ত মনে ঘরে গিয়ে বিশ্রাম করুন।’

    চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে দরজার দিকে এগিয়ে আবার থমকে দাঁড়ালেন দ্য বোনাসিক্স, বললেন—’আপনাকে বলা হয়নি সিয়ে, আমাদের দুঃখী রানী এ্যানকে রাজার চোখে হেয় করাই কার্ডিনাল-এর আসল উদ্দেশ্যটা। হ্যাঁ মঁসিয়ে, এই কার্ডিনাল আমাদের সুন্দরী রাণীর পাণি প্রার্থী ছিল কিন্তু রানী ঘৃণার সাথে তার প্রণয় প্রত্যাখান করেন। আর সেই আক্রোশেই কার্ডিনাল-এর এই ষড়যন্ত্র। রাজা ত্রয়োদশ লুই যদি বাকিংহামের ডিউকের সাথে রানীকে দেখে তাহলে কি অবস্থা হতে পারে?’

    মঁসিয়ে দ্য বোনাসিক্সের বাড়িটা বর্তমানে কার্ডিনাল-এর লোকের একটা ফাঁদ হিসেবে ব্যবহার করতে শুরু করেছে। যে কেউ বাড়িতে এলে তাকে কার্ডিনাল-এর লোকেরা জোর করে জানতে চাইছে তারা রানীর গোপন প্রেমের বিষয়ে কতটুকু জানে? মঁসিয়ে দ্য অ্যাট্রাগঁন সেই বাড়িরই ওপর তলায় থাকে, তার কাজ বাড়িটাকে ভালোভাবে নজরে রাখা, এই জন্যে সে একটা জানালার সামনে নিজেকে গোপন রেখে লক্ষ্য করে কি ঘটনা ঘটে চলেছে সেখানে।

    যে দিন বাড়িওলা মঁসিয়ে দ্য বোনাসিক্সকে গ্রেফতার করে বাস্তিল দুর্গে নিয়ে যাওয়া হলো সেই দিনই সন্ধ্যায় মঁসিয়ে দ্য অ্যাট্রাগঁন নীচ থেকে একটা গোলমালের শব্দ শুনতে পেলো, শব্দটা কখনও বাড়ছে কখনও কমছে। মঁসিয়ে দ্য অ্যাট্রাগঁন দ্রুত জানালার কাছে গিয়ে ভালো করে শুনল—’এটা কোনো মহিলার গলার শব্দ’ অ্যাট্রাগঁন নিজের মনেই বিড় বিড় করে বলল।

    এবার অ্যাট্রাগঁন স্পষ্ট শুনতে পেলো একজন মহিলাকে কেউ তাল্লাশ করছে। মহিলার কণ্ঠস্বর যেন থেমে গেল, মনে হলো কেউ তার গলা চেপে ধরেছে।

    ‘আমি তোমাদের বারবার বলছি এ-বাড়ির কর্ত্রী আমি, আমি মাদাম বোনাসিক্স, শোনো তোমরা, আমি রানীর খুব কাছের জন।’ আক্রান্তা মহিলা আক্রমণকারীদের উদ্দেশ্যে বলে চলল।

    ‘মাদাম বোনাসিক্স?’ মঁসিয়ে অ্যাট্রাগঁন আপন মনেই বলল, ‘আমার বাড়িওলার স্ত্রী, যাকে খুঁজে বার করার দায়িত্ব আমি নিয়েছি?’

    মুহূর্ত মাত্র দেরি না করে অ্যাট্রাগঁন তার তরোয়ালটা নিয়ে সেই আক্রান্তা মহিলার ঘরের উদ্দেশ্যে রওনা হলো। যেতে যেতেই তার ভৃত্যকে উদ্দেশ্য করে চেঁচিয়ে বলল–‘প্ল্যানচেট, তুমি এখনই অ্যাম্বোস, প্যায়োস আর অ্যারামিসকে খবর দাও, তারা যেন দ্রুত তাদের অস্ত্র নিয়ে এখানে চলে আসে।’

    প্ল্যানচেট বলল–‘মঁসিয়ে আপনি একা যাবেন না। ওরা কার্ডিনাল-এর রক্ষী।’

    কিন্তু সে কথায় কান দেবার মতো সময় তখন অ্যাট্রাগঁনের ছিল না। উন্মুক্ত তরোয়াল হাতে অ্যাট্রাগঁন জাপিয়ে পড়ল কার্ডিনাল যোদ্ধাদের ওপর, তারা সংখ্যায় তিন-চার জন ছিল। হঠাৎ এই আক্রমণে তারা দিশেহারা হয়ে পড়ায় খুব বেশি সময় লাগল না শত্রুকে পরাজিত করতে, আবার একটা যুদ্ধে মঁসিয়ে দ্য অ্যাট্রাগঁন নায়ক হলো। ঘরের মধ্যে ঢুকে অ্যাট্রাগঁন দেখল আক্রান্ত মহিলা প্রায় অজ্ঞান অবস্থায় মেঝেয় পড়ে আছেন।

    মহিলার বয়স প্রায় পঁচিশ। সুন্দরী, কালো চুল, নীল চোখ, নাকটা একটু বাঁকা, চমৎকার দাঁত আর গায়ের রং গোলাপের মতো।

    মহিলা দ্য অ্যাট্রাগঁনকে দেখেই বুঝতে পারল ইনি রাজার দলের যোদ্ধা এবং সাহসী যুবক। তার ওপর তলার ভাড়াটে মঁসিয়ে দ্য অ্যাট্রাগঁন।

    ‘আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ মঁসিয়ে, আপনি আমার জীবন রক্ষা করেছেন।’ মহিলাটি আস্তে আস্তে কথাগুলো বললেন।

    ‘না, আমায় ধন্যবাদ দেবেন না মাদাম, যে কোনো পুরুষই এখানে থাকলে আমারই মতো আপনাকে রক্ষা করত।’

    ‘হ্যাঁ মঁসিয়ে আপনি ঠিকই বলেছেন। কিন্তু মঁসিয়ে আমি বুঝতে পারছি ওই ডাকাতেরা আমার ওপর এভাবে চড়াও হলো কেন? তারা আমার কাছ থেকে কি চাইছিল? আর আমি এটাও বুঝতে পারছি না আমার স্বামী মঁসিয়ে বোনাসিক্স কোথায় গেলেন?’ উত্তেজনার সাথে প্রশ্নগুলো করলেন মাদাম বোনাসিক্স।

    খুব শান্ত অথচ গম্ভীর স্বরে মঁসিয়ে দ্য অ্যাট্রাগঁন বললেন–‘মাদাম আপনার প্রথম প্রশ্নের উত্তরটা হচ্ছে যাদের আপনি ডাকাত ভাবছেন তারা। আদৌ ডাকাত নয় বরং তার চেয়েও কিছু ভয়ঙ্কর, ওরা কার্ডিনাল এর রক্ষী বাহিনীর স্বশস্ত্র যোদ্ধা। আর আপনার দ্বিতীয় প্রশ্নের উত্তর আপনার স্বামী এখন বাস্তিল দুর্গে বন্দি।’

    ‘আমার স্বামী বাস্তিল দুর্গে বন্দি! হায় ঈশ্বর ওই নিরাপধ লোকটাকে বাস্তিল দুর্গে বন্দি করা হলো কেন? আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না।’ আতঙ্কিত শোনালো মাদাম বোনাসিক্সের গলা।

    ‘দুর্ভাগ্য-ও বটে আর সৌভাগ্যও বটে যেহেতু আপনার স্বামী।’

    ‘তাহলে মঁসিয়ে আপনি নিশ্চয়ই জানেন…’ মাদামের কথা শেষ হবার আগেই মঁসিয়ে দ্য অ্যাট্রাগঁন বলল।

    ‘হ্যাঁ মাদাম, আমি জানি আপনাকে অপহরণ করা হয়েছিল।’ অ্যাট্রাগঁন থেমে জানতে চাইল

    ‘মাদাম আপনাকে অপহরণ করেছিল? আর আপনি সেখান থেকে মুক্তিই বা পেলেন কেমন করে?’

    ‘হ্যাঁ মঁসিয়ে আমি এখন মুক্ত বটে। আমি ওদের চোখে ধূলো দিয়ে পালিয়ে এসেছি, ওরা ভাবতে পারেনি ওই খোলা জানলাটা দিয়ে আমি একজন মহিলা হয়ে পালাতে পারি! আর আমাকে কে অপহরণ করেছিল? মঁসিয়ে আমি তো তার নাম জানি না! কিন্তু শয়তানটাকে আমি দেখলেই চিনতে পারবো, গায়ের রঙটা কারোর ওপর, বয়স আন্দাজ চল্লিশ-পঁয়তাল্লিশ, কালো চুল আর সবচেয়ে মনে রাখার মতো ওর কপালের বাঁ দিকে একটা ক্ষত চিহ্ন।’

    ‘ওঃ সেই শয়তান? আমিও ওকে চিনি,’ অ্যাট্রাগঁন দাঁতে দাঁত চেপে বলল।

    ‘মঁসিয়ে দ্য অ্যাট্রাগঁন মাদাম বোনাসিক্সকে ঐ বাড়ি থেকে নিরাপদ স্থানে নিয়ে গেল, কেননা সিয়ের বিশ্বাস কিছুক্ষণের মধ্যেই কার্ডিনাল-এর রক্ষী বাহিনীর সৈন্য বেশি সংখ্যায় এসে এই পরাজয়ের শোধ তুলবে এবং মাদাম। বোনাসিক্সকে ক্ষার অপহরণ করে নিয়ে যাবে। এবার দেখা গেল মঁসিয়ে দ্য অ্যাট্রাগঁন খুব দ্রুত পায়ে ঘঁসিয়ে দ্য ট্রেভিলের বাড়ির দিকে চলেছে।

    একটি ভৃত্য এসে জানতে চাইল–‘মঁসিয়ে এত রাত্রে আপনি কিসের জন্য এখানে এসেছেন?’

    অ্যাট্রাগঁন বলল–‘মঁসিয়ে দ্য ট্রেভিলকে খবর দাও অ্যাট্রাগঁন তাঁকে এত রাত্রে বিরক্ত করতে এসেছে বিশেষ জরুরি দরকারে এবং তাঁকে আরও বলো আমার এই সাক্ষাতটা খুবই গোপনীয়।’

    ভৃত্যটি চলে যাবার কিছু পরেই মঁসিয়ে দ্য অ্যাট্রাগঁনের ডাক পড়ল। মঁসিয়ে দ্য ট্রেভিল তাঁর খাস কামরায় অপেক্ষা করছিলেন। অ্যাট্রাগঁন অভিবাদন করে ট্রেভিলের সামনে দাঁড়াতে মঁসিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, ‘এই অসময়ে তার কি দরকার পড়ল?’

    .

    ⤷
    1 2
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleটুয়েনটি ইয়ার্স আফটার – আলেকজান্ডার দ্যুমা
    Next Article আরণ্যক – বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়

    Related Articles

    ফারুক হোসেন

    টুয়েনটি ইয়ার্স আফটার – আলেকজান্ডার দ্যুমা

    October 21, 2025
    ফারুক হোসেন

    দ্য কর্সিকান ব্রাদার্স – আলেকজান্ডার দ্যুমা

    October 21, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    নৌকাডুবি

    October 26, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    নৌকাডুবি

    October 26, 2025
    Our Picks

    নৌকাডুবি

    October 26, 2025

    আরণ্যক – বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়

    October 25, 2025

    থ্রি মাস্কেটিয়ার্স – আলেকজান্ডার দ্যুমা

    October 21, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    • Sign Up
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }