Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • English Books
      • Jules Verne
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    দরিয়া-ই-নুর – মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন

    মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন এক পাতা গল্প81 Mins Read0
    ⤶ ⤷

    দরিয়া-ই-নুর – ৪

    অধ্যায় 8

    গোসলের আগে শেভ করার জন্য বাথরুমের আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে গালে শেভিং ক্রিম মাখতে শুরু করলো আশেক। মনে পড়ে গেল, একটা সময় দিনে কতো বার যে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে সিনেমার হিরো ভাবতো!

    কৈশোর পেরোতেই এমন ভাবনা তীব্র হয়ে ওঠে। দেখতে সুদর্শন ছিল, সব সময় নায়কদের মতো করে চুল কাটতো, হালফ্যাশনের পোশাক পরতো। তার এই শখ মেটাতে গিয়ে হিমশিম খেতেন আর্জুমান্দ বানু। আশেকও বুঝতে পারতো সেটা, টিউশনি করে আর্জুমান্দের কষ্ট কিছুটা লাঘব করার চেষ্টা করতো। এইচএসসি পাশ করার পরই হিরো হবার ভুতটা এমনভাবে চেপে বসলো যে, সময় পেলেই এফডিসি’র সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে শুরু করলো। দারোয়ানকে দশ-বিশ টাকা ঘুষ দিয়ে ঢুকে পড়তো ভেতরে, রূপালি পর্দার নায়ক-নায়িকাদের শুটিং দেখতো। কিন্তু কোনো পরিচালকের কাছে গিয়ে নিজের স্বপ্নের কথা বলার সাহস পেতো না। একদিন জানতে পারলো, তার কলেজের এক বন্ধুর প্রাইভেট টিউটর সিনেমায় গল্প লেখে, এফডিসিতে যাতায়াত আছে লোকটার। সেই প্রাইভেট টিউটরের সঙ্গে দেখা করলো আশেক। লোকটা বয়সে তার চেয়ে চার-পাঁচ বছরের বড়। সবাই তাকে দুদুমাস্টার বলে ডাকতো, সেই দুদু তাকে এক পরিচালকের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেয়। কিন্তু লোকটা তাকে যারপরনাই হতাশ করেছিল।

    আশেক তো অনেক বেশি শুকনো! আর গালদুটোও দাবানো। একটু বেশি হাল্কাপলকা। মোটেও নাদুস নুদুস নয়। এমন ছেলে আর যাই হোক, বাংলা সিনেমার হিরো হতে পারে না!

    কথাটা শুনে ভীষণ দমে গেছিল সে, কিন্তু দুদুর অনুপ্রেরণায় আবার নতুন উদ্যমে ঝাঁপিয়ে পড়ে। ততদিনে এইচএসসি পাশ করে বিএ ক্লাসে ভর্তি হলেও পড়ালেখায় মন উঠে গেছিল তার। দীর্ঘ এক বছর পর অবশেষে দুদুর সুপারিশেই এক পরিচালক তাকে সেকেন্ড-হিরোর একটা রোলে সুযোগ দেয়। কিন্তু ভাগ্য তার পক্ষে ছিল না, ছবিটা ফ্লপ করে। প্রথম সিনেমা ফ্লপ হওয়ায় তার জন্য সব কিছু কঠিন হয়ে যায়।

    এক সময় পাড়া-মহল্লার ছেলেপেলেদের মধ্যে ‘ব্রুস লি ম্যানিয়া’ বিরাজ করত। ঝোঁকের বশে সে-ও তখন মার্শাল আর্ট শিখেছিল। ছবি ফ্লপ করার পর হতাশ আশেককে এক সহকারী পরিচালক বুদ্ধি দেয়, মার্শাল আর্টের দক্ষতা কাজে লাগিয়ে ফাইটিং গ্রুপে যোগ দিতে। বোম্বের নায়ক অজয় দেবগান কি ফাইটিং গ্রুপেই কাজ করতো না? আমাদের দেশে নায়ক জসীম তো ফাইটিং গ্রুপে কাজ করতে করতেই হিরো হয়ে গেছিল!

     

     

    কথাগুলো তার মনে ধরেছিল, যোগ দিয়েছিল বুলবুল, লেকু আর টগর নামের তিন বন্ধুর দেয়া ‘বুলেট’ গ্রুপে। সিনেমার ফাইটিং দৃশ্যসহ ঝুঁকিপূর্ণ কাজগুলো করতো তারা। নকল হিরো সেজে আশেকও ওসব করতে শুরু করে দেয়, অচিরেই হয়ে ওঠে নায়কদেকর ডামি। এ কাজে পরিশ্রম আর ঝুঁকি থাকলেও, না ছিল পরিচিতি, না ছিল টাকা। তবু মাটি কামড়ে পড়ে ছিল, হয়তো এক সময় তাকেও কোনো পরিচালক হিরোর ‘ব্রেক’ দেবে।

    সেটা হলেও হতে পারতো, যদি না এক সন্ধ্যায় এফডিসি থেকে বের হবার সময় তিন নম্বর ফ্লোরের সামনে দিয়ে যেত; আর ফ্লোরের মেইন গেটে জব্বারকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে তার সন্দেহ না হতো। সন্দেহ হলেও সে যদি জব্বারকে কিছু জিজ্ঞেস না করে সোজা চলে আসতো, তাহলে হয়তো সব কিছুই অন্য রকম হতে পারতো। এমন কি ফ্লোরের ভেতর থেকে এক মেয়ের আর্তনাদ শোনার পরও ওটাকে নিছক শুটিং ভেবে চলেও যাচ্ছিল সে, কিন্তু কী মনে করে যেন আবার ফিরে আসে।

    জব্বার বিচ্ছিরি একটা হাসি দিয়ে তার সন্দেহ দূর করার চেষ্টা করেছিল : “নায়িকারে ভিলেন রেইপ করতাছে!” চোখ টিপে আরো বলেছিল, “একটু খুল্লাম খাল্লাম সিন হইতাছে…বুঝছো?”

     

     

    ওদিকে ফ্লোরের ভেতর থেকে মেয়েটা বিরাহীম আর্তনাদ করতে থাকলে আশেকের সন্দেহ হয়। এত দীর্ঘ সময় ধরে শুট হচ্ছে! ডিরেক্টর কাট বলছে না কেন?

    “আরে মিয়া, ভিলেন আর নায়িকা আপসে রেইপ সিন করতাছে…পুরা আনকাট! যাও, ফোটো তো এইহান থিকা, “ জব্বার তাকে ঝাড়ি মেরে বলেছিল।

    কিন্তু আশেক কণ্ঠ শুনে চিনতে পারে, এটা সূচনা নামের উঠতি এক নায়িকার। কয়েক দিন আগে এই মেয়ে তাকে সেটে খুব অপমান করেছিল। সাইড-নায়িকা হিসেবে একটা ছবিতে সুযোগ পেয়েছিল মেয়েটা, সেই ছবিতে আশেক ছিল হিরোর ডামি। তো, একটা দৃশ্যে সূচনাকে গুণ্ডাদের হাত থেকে উদ্ধার করে ছবির হিরো বাইকে করে ছুটে যাবে, তার পেছনে তাড়া করবে গুণ্ডার দল। হিরোর ডামি হিসেবে মেয়েটাকে বাইকের পেছনে বসিয়ে আশেক ছুটে যাবার আগে বলেছিল, “শক্ত কইরা ধরো আমারে, জোরে বাইক চালাইলে তো পইড়া যাইবা।”

    ‘তুমি’ করে সম্বোধন করায় ভীষণ রেগে গেছিল মেয়েটি। “অ্যাই ছেলে, আমাকে আপনি করে বল্!” সবার সামনে তাকে তুই-তোকারি করে বলে অপমান করেছিল। খুবই লজ্জা পেয়েছিল সে।

     

     

    কিন্তু যখন বুঝতে পারলো ঐ মেয়েটাই বিপদে পড়ে বাঁচার জন্য আর্তনাদ করছে, তখন দশাসই জব্বারকে ধাক্কা মেরে দরজা খুলে ফেলার চেষ্টা করে আশেক। পাণ্ডাটা বাধা দিলে এক ঘুষিতে নাক ফাটিয়ে কাবু করে ফেলে তাকে। দরজা খুলে ফ্লোরে ঢুকে দেখে, সাজু খান ধর্ষণ করার একেবারে দ্বারপ্রান্তে চলে গেছে তখন!

    সিনেমার পর্দায় দশজনকে ঢিসুম-ঢিসুম করে ধরাশায়ী করা সেই ‘হিরো’ আশেকের এক লাথিতেই কুপোকাত হয়ে গেছিল সেদিন। আর পর্দায় ব্যর্থ নায়ক মির্জা আশেক বাস্তবে ঠিকই সফল হতে পেরেছিল।

    কিন্তু সমস্যাটা হলো ভিলেইনের খপ্পর থেকে নয়, প্রতিষ্ঠিত এক নায়কের হাত থেকে রক্ষা করেছিল নায়িকাকে, ঘটনার পর সাজু খান প্রতিশোধ নিয়েছিল দারুণভাবেই। এফডিসিতে তার এবং উঠতি নায়িকা সূচনার কাজ পাওয়া বন্ধ হয়ে যায় বলতে গেলে। এক পর্যায়ে শৃঙ্খলাভঙ্গের অপবাদ দিয়ে তাদের দু-জনকে এফডিসি’তে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়। রাতারাতি অপাংক্তেয় হয়ে যায় তারা।

    হিরো হবার স্বপ্ন বাদ দিয়ে আশেক মন দেয় পরিবারের দিকে। পরিবার বলতে, বয়োবৃদ্ধ অসুস্থ আর্জুমান্দ আর চার্লি। মরার উপরে খাঁড়ার ঘা হিসেবে ক-দিন পরই আর্জুমান্দের স্তন ক্যান্সার ধরা পড়ে। ডাক্তার বলে দেয়, ঠিকমতো চিকিৎসা দিলে, অপারেশন করালে সুস্থ হয়ে যাবেন। তখন শাহবাগের একটি ওষুধের দোকানে চাকরি নিয়েছে আশেক, তার পক্ষে লাখ লাখ টাকা জোগাড় করা ছিল অসম্ভব। তাদের আশ্রিত চার্লি পরীবাগের এক মদের বারে কাজ জুটিয়ে নেয়। দু-জনের আয় দিয়ে সংসার চললেও আর্জুমান্দের চিকিৎসা করানো সম্ভব হচ্ছিল না।

     

     

    এমন সময় উঠতি নায়িকা সূচনা হুট করেই এক কাপড়ে ঘর ছেড়ে আশেকের কাছে চলে আসে। অনাথ একটি মেয়ে, মানুষ হয়েছে খালার কাছে। এসএসসির পর তার খালু তাকে আর পড়ালেখা করতে দেয়নি। দেখতে সুন্দর ছিল বলে নায়িকা হয়ে নিজের পায়ে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেছিল। সেই চেষ্টা ব্যর্থ হলে তার খালু লাখ টাকা নিয়ে কাতার প্রবাসী এক মাঝবয়সি লোকের সঙ্গে তার বিয়ে ঠিক করে ফেলে। বিয়েতে রাজি না হওয়ায় তাকে মারপিটও করে খালু। অসহায় খালার কিছুই করার ছিল না। বাধ্য হয়েই তখন বাড়ি ছাড়ে সে।

    সূচনার আসল নাম রোজি। ঐ ঘটনার পর সিনেমার মতোই আশেক আর রোজির মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। আর্জুমান্দও মেয়েটাকে খুব পছন্দ করতেন। দ্রুতই তাদের বিয়ে দেবেন বলেও ভেবে রেখেছিলেন। কিন্তু আশেক তখন আর্জুমান্দের ক্যান্সারের চিকিৎসা নিয়ে চিন্তিত, বিয়েথা পরে করবে বলে ঠিক করে। চারজন মানুষের খাওয়া-পরার খরচ জোগাতেই হিমশিম খাচ্ছিল সে।

    এদিকে ডাক্তার বলে দেয়, এক মাসের মধ্যে আর্জুমান্দের চিকিৎসা শুরু করতে না পারলে ক্যান্সার ছড়িয়ে পড়বে, খুব খারাপের দিকে যাবে সেটা।

     

     

    টাকার চিন্তায় যখন আশেক বেসামাল তখনই একদিন ডানহাতে স্লিঙ্গার নিয়ে দেখা করতে আসে দুদুমাস্টার। মাতাল হয়ে চলন্ত রিক্সা থেকে পড়ে হাতটা ভেঙে ফেলেছিল ক-দিন আগে। এফডিসিতে এই দুদুই ছিল আশেকের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠজন-বড়ভাই এবং বন্ধু। প্রচুর বই পড়তো দুদু। চলচ্চিত্রে স্ক্রিপ্ট লেখার পাশাপাশি টুকটাক গানও লিখেতো। কিন্তু এই পেশায়ও তেমন আয়রোজগার ছিল না। যে টাকা পেতো তা মদের পেছনেই খরচ করে ফেলতো সে।

    হালকা ছিপছিপে শরীর, মুখে চাপদাড়ি, চোখে মোটা ফ্রেমের চশমা, ঢোলা শার্ট-প্যান্ট আর পায়ে সব সময় পরতো চপ্পল। মাতাল হলেই সমাজতন্ত্রের বুলি কপচাতো সে : কেউ খাবে কেউ খাবে না, তা হবে না তা হবে না! পেটি বুর্জোয়া! শোষক! শাসিত! প্রলেতারিয়েত।

    দুদুমাস্টার এক সময় সর্বহারা পার্টি করতো। নতুন যারা রিক্রুট হতো তাদেরকে সমাজতন্ত্রে দীক্ষা দিতো সে। সেখান থেকেই তার নামের সাথে জুড়ে যায় ‘মাস্টার’ পদবীটা। সর্বহারাদের নৈরাজ্যে ত্যক্তবিরক্ত হয়ে সেখান থেকে বের হবার পথ খুঁজছিল। অবশেষে সুযোগটা আসে বিরানব্বইয়ের দিকে। সর্বহারারা তখন ঢাকায় এসে দক্ষিণবঙ্গের এক জাঁদরেল শ্রমিক নেতাকে গুলি করে হত্যা করার চেষ্টা করে। গুলিবিদ্ধ ঐ নেতা ছিল সেই সময়কার সরকারের ঘনিষ্ঠজন। লোকটা বেঁচে গেলে শুরু হয় সর্বহারাদের বিরুদ্ধে দ্বিমুখী আক্রমণ-একদিকে পুলিশী অভিযান, অন্যদিকে ঐ নেতা সর্বহারাদের যে গ্রুপটির কলকাঠি নাড়তো, তাদের হামলা। দুদুদের গ্রুপটা কোণঠাসা হয়ে পড়লে অনেকেই জীবন বাঁচাতে পালিয়ে যায়, দুদু চলে আসে ঢাকায়। তার এক বাল্যবন্ধু তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তো, সে-ই তাকে নিজের হলে থাকার ব্যবস্থা করে দিয়েছিল, সেই সঙ্গে জোগাড় করে দিয়েছিল দুয়েকটা টিউশনিও।

     

     

    দুদুর এক ছাত্রের বাবা ছিলেন চলচ্চিত্রের প্রযোজক। ভদ্রলোক যখন জানতে পারলেন বাংলায় সে খুব ভালো, তখন তাকে স্ক্রিপ্ট লেখার প্রস্তাব দেন। এভাবে দুদু ঢুকে পড়ে রূপালি পর্দার গ্ল্যামার জগতে। ঐ প্রযোজক তাকে মাস্টার নামে ডাকতেন-ঠিক যেভাবে ডাকতো সর্বহারা দলের লোকজন—ঘটনাচক্রে আবারো সে হয়ে যায় দুদুমাস্টার!

    আশেকের সাথে দেখা করে দুদু জানায়, সে আবার টিউশনি করছে, চলচ্চিত্রে আর কাজ করছে না। কোত্থেকে এক অর্বাচীন এসে হাজির হয়েছে এই অঙ্গনে, হিন্দি-তামিল-মালায়ালাম সিনেমার গল্প হুবহু টুকে দিচ্ছে সে। দুঃখের ব্যাপার, এইসব নকল গল্পের ছবি ব্যবসাও করছে। নকলবাজটার কদর এত বেড়ে গেছে যে, দুদুর মতো শিক্ষিত, সাহিত্যজানা লোকজন হালে পানি পাচ্ছে না আর।

    “বুঝেছো, গল্পটা…যে গল্পটা শুনিয়েছিলাম তোমাকে…দরিয়া-ই-নুর… সেটা নিয়ে কতো প্রযোজক- পরিচালকের কাছে গেলাম, কেউ পছন্দ করলো না। অনেকে আমাকে বলে, এত কষ্ট না করে আমি কেন হিন্দি-তামিল হিট সিনেমার গল্প মেরে স্ক্রিপ্ট করছি না!” তিক্তমুখে থুতু ফেলেছিল দুদু। “এই নকলের উপত্যকা আমার জন্য না, ব্রাদার।”

     

     

    এসব কথায় আশেকের মনোযোগ ছিল না। দুদুর চোখেও সেটা এড়ায়নি।

    “কী হয়েছে তোমার?”

    টাকার অভাবে আর্জুমান্দের ক্যান্সারের চিকিৎসা করাতে পারছে না, এমন কথা শুনে হতভম্ব হয়ে যায় দুদু। আর্জুমান্দকে সে খুবই শ্রদ্ধা করতো, প্রায়ই চলে আসতো পরীবাগের বাড়িতে, সঙ্গে সব সময় কিছু না কিছু থাকতোই—পুরি, সিঙ্গারা, মিষ্টি কিংবা ঘুমনি। ঘণ্টার পর ঘণ্টা গল্প করতো সে আর্জুমান্দের সঙ্গে।

    ঐ দিন মন খারাপ করে চলে যায় দুদুমাস্টার, কিন্তু দু-দিন পর এক বিকেলে আবারো আসে, সিগারেট ফুঁকতে ফুঁকতে তারা চলে যায় পাশের রমনা পার্কে। পড়ন্ত বিকেলের নিস্তেজ আলোয় লেকের পাশে একটা বেঞ্চে বসে দুজন।

    “বিনাচিকিৎসায় আর্জুমান্দকে মরতে দেয়া যায় না!” আবেগাক্রান্ত হয়ে বলেছিল দুদু। “চিন্তা কোরো না, টাকার জোগাড় হয়ে যাবে।”

     

     

    কথাটা শুনে অবাক হয়েছিল আশেক।

    সিগারেটে লম্বা টান দিয়ে দুদু জানায়, কয়েক মাস ধরে এক যুগ্মসচিবের মাথামোটা ছেলেকে পড়াচ্ছে সে, পড়াশোনার চেয়ে বক বক করতেই বেশি আগ্রহ ছেলেটার। কী বলে না বলে সেই হুঁশজ্ঞান থাকে না। তার বাবা টাকা পাহাড় বানিয়ে ফেলেছে, ঢাকা শহরে তাদের তিন-চারটা বাড়ি আছে, একমাত্র সন্তান হিসেবে তাকে কেন এত কষ্ট করে পড়াশোনা করতে হবে!

    এমন কি কয়েক দিন আগে গবেটটা নীচুস্বরে এ-ও বলেছে, তার ভীতু বাপ যে বাড়িতে এত টাকা রাখে, সেটা তার মায়ের পছন্দ না। মা চায়, টাকাগুলো ব্যাঙ্কে রাখা হোক।

    “ছেলেটার কথা শুনে মনে হয়েছে, কমসে কম ত্রিশ-চল্লিশ লাখ টাকা আছে বাড়িতে…এর চেয়ে কম টাকা হলে তো ব্যাঙ্কেই রাখতো।”

    কথাটা শুনে ভুরু কপালে উঠে গেছিল আশেকের।

     

     

    “জনগণের চাকর তারা, চাকরিতে ঢুকেছে পাবলিক সার্ভেন্ট হিসেবে অথচ কোটি কোটি টাকা লুটপাট করছে! গাড়ি-বাড়ি সব করে ফেলেছে!” সিগারেটে বিক্ষুব্ধ টান দেয় দুদু। “একটা মাত্র সন্তান, তিন-চারটা বাড়ি তার জন্য! আর তুমি আমি ঠিকমতো খেতেও পারি না! অনিশ্চিত ভবিষ্যত নিয়ে ঘুরে বেড়াই। মায়ের চিকিৎসা করার টাকাও থাকে না আমাদের কাছে!”

    একটানে কথা বলতে গিয়ে দম ফুরিয়ে গেছিল দুদুর। “নিঃস্ব আমরা। বিশুদ্ধ সর্বহারা! প্রলেতারিয়েত! ঐ টাকার উপরে আমাদের হক আছে, মির্জা! আলবৎ হক আছে!”

    আশেকের কাছেও দুদুমাস্টারের কথাগুলো বেশ যৌক্তিক শোনাচ্ছিল সেদিন।

    “অবৈধ টাকা!…বাড়িতেই রেখেছে…ওগুলো নিয়ে নিলে ঐ চোরটার কিস্স করার থাকবে না!”

    সপ্রশ্ন দৃষ্টিতে তাকিয়েছিল আশেক।

     

     

    “এমনি এমনি তো আর দেবে না, কেড়ে নিতে হবে!” বাঘের মতো থাবা দেখিয়ে চোখেমুখে প্রকট অভিব্যক্তি করে বলেছিল দুদু। “এটা ডাকাতি না, এটা হলো সম্পদের সুষম বণ্টন! হারামজাদা চুরি-চামারি আর লুণ্ঠন করে ফুলে ফেঁপে উঠেছে, বৈষম্য তৈরি করেছে। তার থেকে আমরা দুই সর্বহারা কিছুটা নিয়ে নেবো!”

    কথাগুলো শুনে একটা ঘোরের মধ্যে চলে গেছিল আশেক পার্কে তখন সন্ধ্যা নেমেছে, সেই আবছা অন্ধকারে আলো দেখতে পেয়েছিল সে।

    দুদু জানায়, তিনদিন পর কোরবানীর ঈদ, সচিবের স্ত্রী আর ছেলেটা চলে যাবে গ্রামের বাড়িতে। কিন্তু ধন আগলে রাখার জন্য থেকে যাবে যক্ষটা! সচিবের ছেলে নিজেই এটা বলেছে তাকে। এই সুযোগটা হাতছাড়া করা যাবে না। বাড়িতে থাকবে ঐ যুগ্ম সচিব আর কাজের ছেলেটা। একদম সহজ কাজ, কিন্তু বিরাট প্রাপ্তি হবে। আর্জুমান্দের চিকিৎসা করানো যাবে, ছোটোখাটো ব্যবসা করতে পারবে আশেক। আর দুদু দিতে পারবে একটি বইয়ের দোকান। এটাই তার আজন্ম স্বপ্ন।

     

     

    সিগারেটে জোরে টান দিয়ে দুদুমাস্টার বলেছিল, “ভালো করে ভাবো, মির্জা! আর্জুমান্দ বিনা চিকিৎসায় মরতে পারে না! সারাটা জীবন কতো কষ্টেই না কাটালো বেচারি!”

    আশেক টের পায় তার চোখ দিয়ে টপ টপ করে অশ্রু ঝরছে।

    নওয়াবসাব মারা গেলে নবাব এস্টেটের ম্যানেজার নিয়মিত মাসোহারা দিতো আর্জুমান্দকে। কোনোমতেই চলে যেতেন তিনি। কিন্তু একাত্তরের পরে সেটাও বন্ধ হয়ে যায়। এককালীন কিছু টাকা দিয়ে দেশ ছাড়েন ম্যানেজার। সেই টাকা শেষ হয়ে গেলে নিজের কাছে থাকা কিছু গহনা দিয়ে চলেন বেশ কয়েকটা বছর। এক সময় সেলাইয়ের কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করতেন।

    আর্জুমান্দের জন্য এখন পর্যন্ত কিছুই করতে পারেনি আশেক। সময় এসেছে তার জন্য কিছু করার।

    কিন্তু আশেক একা বাড়ির দারোয়ান আর দু’দু-জন মানুষকে জিম্মি করে অতোগুলো টাকা কীভাবে নেবে? তার কাছে তো সত্যিকারের অস্ত্রও নেই!

    “আমার হাতটা ভেঙে গেছে,” বলেছিল দুদু। “নইলে একটা মুখোশ পরে দুই ভাইয়ে মিলে কাজটা করে ফেলতাম!”

    “আরেকজন লোক লাগবো,” নিচের ঠোঁট কামড়ে বলেছিল আশেক।

    সায় দিয়েছিল দুদুমাস্টার। “খুবই বিশ্বস্ত হতে হবে।“

    এ রকম কে আছে? ভাবনাটা মাথায় আসতেই বাল্যবন্ধু পাভেলের কথাই প্রথমে মনে পড়ে যায় আশেকের। একসঙ্গে স্কুলে পড়েছে, একই মহল্লায় থাকে তারা। এখন রাজনীতি আর মাস্তানি করে বেড়ায়। সত্যিকারের একটা পিস্তলও আছে তার কাছে।

    পাভেলের কথা শুনে দুদু প্রথমে রাজী হয়নি। “ছিচকে মাস্তান…বুর্জোয়া রাজনীতি করে…পলিটক্যাল লুম্পেন…টাকা- পয়সার ব্যাপারে তাকে বিশ্বাস করা যায় না, মির্জা।”

    কিন্তু পাভেল ছাড়া বিশ্বাস করার মতো আর কেউ ছিলও না তখন। পাভেলকে বাল্যকাল থেকে চেনে আশেক। পাড়ার মাস্তানি আর রাজনীতি করলেও বন্ধু হিসেবে বিশ্বস্তই থাকবে—অনেক বোঝানোর পর অবশেষে রাজি হয় দুদুমাস্টার। সিদ্ধান্ত নেয়া হয়, কাজটা করবে ঈদের দিন রাতে।

    হাতে খুব বেশি সময় নেই, তাই ঐদিন রাতেই পাভেলের সঙ্গে দেখা করে তাকে সবটা খুলে বলে আশেক। ঐ বাড়ি থেকে যতো টাকাই তারা পাক না কেন, ভাগ হবে সমান সমান। পরিকল্পনাটা যে দুদুমাস্টারের, সেটাও জানায় বন্ধুকে। সব শুনে এক কথায় রাজি হয়ে যায় পাভেল।

    পর দিনই যুগ্মসচিবের বাড়িটা রেকি করতে চলে যায় আশেক আর পাভেল। বাংলামোটরে, বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রের গলির শেষ মাথায় একটা তিনতলা ভবনের দোতলায় থাকতো ঐ সচিব। গলিটা এমনিতেই নিরিবিলি, সঙ্গত কারনেই ঈদের দিন রাতে আরো নির্জন থাকবে।

    “ঐ শালাকে পিস্তল ঠেকিয়ে তুমি বলবে…” অপারেশনের আগের দিন চাঁদরাতে দুদু মদ খেতে খেতে বলেছিল। “শুয়োরের বাচ্চা, তোরা হলি সার্ভেন্ট! চাকর হয়ে আমাদের সম্পদ লুট করেছিস! জানে যে মারছি না এটাই বেশি! এটা কিন্তু বলবে! বলতেই হবে!”

    “আচ্ছা, কমুনে,” মুচকি হেসে মাতালকে আশ্বস্ত করেছিল আশেক। মাতালের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করার ঝক্কিটা তার জানা ছিল।

    তো, কোরবানীর ঈদের দিন রাত দশটার দিকে তারা তিনজন চলে যায় বাংলামোটরে। দুদু একটা বেবিট্যাক্সি নিয়ে অপেক্ষায় থাকে মেইনরোডে, আশেক আর পাভেল ঢুকে পড়ে যুগ্মসচিবের বাড়িতে। পাভেলের কাছে সত্যিকারের পিস্তল ছিল, আশেকের কাছে ছিল সিনেমায় ব্যবহার করা নকল অস্ত্র।

    কিন্তু তারা কেউই মুখোশ পরার দরকার মনে করেনি। একে তো লোকটা অবৈধ টাকা নিজের বাড়িতে রেখেছে, সেই টাকা ডাকাতি হলে কি পুলিশকে জানাবে? চুপচাপ হজম করে ফেলবে।

    ঝিমুতে থাকা দারোয়ানকে পিস্তলের মুখে বাধ্য করে উপরতলায় নিয়ে যায় তারা দুজন। আশেক দরজায় নক করলে ভেতর থেকে পরিচয় জানতে চায় কাজের ছেলেটা। অস্ত্রের মুখে দারোয়ান বলে, দরজা খুলে দিতে…একটা দরকারে এসেছে সে।

    দুদু আগেই জানিয়েছিল, ফ্ল্যাটের দরজায় কোনো পিপহোল নেই, ফলে কাজের ছেলেটা কিছু দেখতে পায়নি। সে দরজা খুলে দিতেই অস্ত্রের মুখে তাকেও জিম্মি করে দারোয়ানকে নিয়ে ঢুকে পড়ে আশেক আর পাভেল।

    মদ খেতে খেতে টিভিতে ঈদের প্রোগ্রাম দেখছিল সচিব, অস্ত্রধারী দু-জনকে দেখে একেবারে হতভম্ব হয়ে পড়ে সে। পাভেল পিস্তল তাক করে দারোয়ান আর কাজের ছেলেকে মেঝেতে উপুড় হয়ে শুয়ে থাকতে বাধ্য করে। আর আশেক সচিবের মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে জানতে চায়, টাকাগুলো কোথায় রেখেছে।

    প্রচণ্ড ভয়ে কয়েক মুহূর্ত কোনো কথাই বলতে পারেনি লোকটা। হুমকি-ধামকি দেবার পর অবশেষে জানায় টাকাগুলো কোথায় লুকিয়ে রেখেছে।

    ফ্ল্যাটের স্টোর রুমে অনেক কিছুর সাথে গ্রামের বাড়ি থেকে আনা নিজেদের ক্ষেতের চার-পাঁচটা চালের বস্তাও ছিল। একটা বস্তা খুলতেই বেরিয়ে আসে টাকার বান্ডিল! তিন বস্তাভর্তি টাকা দেখে বিস্ময়ে থ বনে যায় তারা।

    কাজটা নির্বিঘ্নে করতে পারলেও একটা সমস্যায় পড়ে গেছিল-বিপুল পরিমাণের টাকা নিয়ে যাবার মতো ব্যাগ নিয়ে যায়নি সঙ্গে করে। দুজনের কাছে ছিল দুটো ডাফেল ব্যাগ। তাই বাধ্য হয়েই দুটো চালের বস্তায় ভরে নেয় বাকি টাকাগুলো। সচিবসহ দারোয়ান আর কাজের ছেলেটার হাত-পা-মুখ বেঁধে ফেলে রাখে। বের হবার আগে সচিবের ভদকার বোতলটা নিয়ে নেয় আশেক।

    মেইনরোডে বেবিট্যাক্সি নিয়ে অপেক্ষায় থাকা দুদু যখন দেখতে পায় ডাফেল ব্যাগ ছাড়াও দুটো বস্তা আছে তাদের সঙ্গে, তখন বিস্ময়ে বলে উঠেছিল : “পুরো বাড়ি লুট করে ফেলেছো না কি!” টাকার পরিমাণের কথা শুনে থ বনে গেছিল সে। “শালাকে চোর-ডাকাত ভেবেছিলাম…এ দেখি আলী বাবা!”

    টাকাগুলো নিয়ে তারা তিনজন চলে যায় আজিমপুরে দুদুর ভাড়া বাসায়। এই বাসাটা যার সাথে শেয়ার করে থাকতো সে ঈদের ছুটিতে গ্রামের বাড়িতে গেছিল তখন। দুদুর ঘরে বসেই টাকাগুলো তিনজনে মিলে গুণে ফেলে : চারকোটি বিশ লক্ষ টাকা!

    একে অন্যকে জড়িয়ে ধরে তারা। এক জীবনের আয় করে ফেলেছে! খুশির চোটে ভদকার বোতল খুলতে আর দেরি করেনি দুদুমাস্টার।

    “দেখেছো, দেশটা কীভাবে লুট করছে শালারা!” মাতাল হয়ে বলেছিল। “কোটি কোটি টাকা রাখে বাড়িতে!”

    “সব ক্রেডিট তোমার, ওস্তাদ! তোমার ভাগে বেশি দেওয়া উচিত,” বলেছিল আশেক। পাভেলও সায় দিয়েছিল তাতে।

    “আরে না! যা পেয়েছি সেটাই বেশি। আমার অতো টাকার দরকারও নেই।”

    হেসে ফেলেছিল আশেক। “দরকারের কি শ্যাষ আছে, ওস্তাদ?”

    মাথা দুলিয়েছিল দুদুমাস্টার। “দরকারের শেষ নেই, কিন্তু লোভের লাগাম টানতে হয়। লোভ এমনই এক ঘোড়া, ছুটতে থাকবে, ছুটতেই থাকবে…একটুও থামবে না! পথের শেষ হয়ে গেলেও ছোটার শেষ হবে না, নতুন পথ তৈরি করে নেবে সেই পাগলা ঘোড়া!”

    মির্জা আশেক আর পাভেল চুপচাপ শুনে গেছিল তার কথা।

    “মাই ডিয়ার মির্জা, হাউ মেনি ল্যান্ড রিকয়্যাস অ্যা ম্যান, উম? তিন হাত মাটি ছাড়া কিস্তু লাগে না। এটা আমার কথা না কিন্তু…তলস্তয় বলেছেন।”

    এক পর্যায়ে এসব ভারিক্কি কথা শুনতে পাভেল আর আশেকের ভালো লাগছিল না।

    “ভাবছি, আমার ভাগের কিছু টাকা গরীব মানুষদের দিয়ে দেবো,” উদাস হয়ে বলেছিল দুদু।

    আহঁকে উঠেছিল আশেক। “কী কইতাছো, ওস্তাদ! তোমার নিজেরই কইলাম চালচুলা নাই…কথাটা মনে রাইখো,” মদের বোতল থেকে কিছুটা পান করে আশেক আরো বলেছিল, “আমি আর ঐ ওষুধের দোকানে যামু না! চাকরির খ্যাতা পুড়ি!”

    ভুরু কুঁচকে ফেলেছিল দুদু। ডান হাতের তর্জনি উঁচিয়ে দু পাশে নেড়েছিল। “উঁহু…এ কাজ ভুলেও করবে না, মির্জা 1 তোমার মায়ের ট্রিটমেন্ট আর হাত-খরচের কিছু টাকা রেখে বাকি টাকাগুলো একদম ছোঁবে না…যে চাকরিটা করছো সেটা করে যাবে আরো কয়েক মাস।

    খুব অবাক হয়েছিল মির্জা। “ক্যান?”

    পাভেলও বিস্মিত হয়েছিল। মদের প্রভাবে লোকটা এসব কী বলছে!

    “হুট করে বেশি টাকা খরচ করে ফেললে লোকজনের চোখে পড়ে যাবে। মনে রেখো, এভাবেই এ রকম ঘটনাগুলো ফাঁস হয়ে যায়। মানুষ টাকা পেলেই দেদারসে খরচ করতে শুরু করে। রাতারাতি এই পরিবর্তনটা আশেপাশের মানুষজনের চোখে পড়ে কিন্তু।”

    আশেক আর পাভেল চুপচাপ শুনে গেছিল তার কথা।

    “আজকের আগে যে রকম ছিলে সে রকমই থাকবে…কমপক্ষে পাঁচ-ছয় মাস।”

    “তাইলে টাকাগুলা কী করুম?” জানতে চেয়েছিল মির্জা আশেক।

    “লুকিয়ে রাখবো। ওগুলো যে আছে, সেটাই ভুলে যাবো…পাঁচ-ছয় মাসের জন্য।”

    পাভেল সন্দেহের চোখে তাকিয়েছিল দুদুর দিকে। মাতাল হয়ে বলছে এসব!

    “আমিও টিউশনি চালিয়ে যাবো আরো তিন-চার মাস, নইলে সন্দেহের মধ্যে পড়ে যাবো।” একটু থেমে আবার বলেছিল, “আমার উপর তোমার আস্থা আছে তো?”

    কথাটা শুনে মর্মাহত হয়েছিল আশেক। “কী যে কও না! মাল খাইলে তোমার মাথা ঠিক থাকলে মুখ ঠিক থাকে না। যা আসে তা-ই কও।”

    কথাটা শুনে মুচকি হেসে ঢেঁকুর তুলেছিল দুদু।

    “তুমি যা বলবা তা-ই হইবো।” তারপর বোতলের বাকিটুকু শেষ করে আশেক বলেছিল, “যা পাইছি তোমার লাইগাই পাইছি…এইটা আমি জীবনেও ভুলুম না।”

    দুদুমাস্টার তার পিঠে চাপড় মেরেছিল আলতো করে। কিন্তু পাভেল মেনে নেয়নি। “আমার ভাগের টাকা আমারে দিয়া দাও…আমি সাবধানে খরচ করুম।”

    কিছুটা রুষ্ট হয়েই তার দিকে তাকিয়েছিল আশেক। তাকে কিছু বলতে যাবে অমনি হাত তুলে থামিয়ে দিয়েছিল দুদু।

    “ও রাজনীতি করে…পেটি বুর্জোয়ার রাজনীতি! ওর কাছে হুটহাট টাকা আসাটা অস্বাভাবিক লাগবে না কারো কাছে।”

    কথাটা শুনে পাভেল খুশিই হয়েছিল। তাকে এক কোটি পঁয়ত্রিশ লাখ টাকা দিয়ে দেয়া হয়। সমান ভাগ করলে প্রত্যেকে এক কোটি চল্লিশ লাখ করে পাবার কথা, কিন্তু নিজেরা পাঁচ লাখ করে কম নিয়ে দুদুকে পুরো দেড়কোটি টাকা দিয়ে দেয় আশেক। পাভেলও তাতে আপত্তি করেনি।

    ওটা ছিল আশেকের জীবনের সেরা একটি ঈদ।

    “এই টাকাগুলান কি এইখানেই রাখবা, ওস্তাদ?” পাভেল চলে যাওয়ার পর জানতে চেয়েছিল সে।

    “না। আমার হাসনাহেনার কাছে রাখবো,” ততক্ষণে দুদুর মাতলামি শুরু হয়ে গেছে।

    “কী! একটা মাইয়ামানুষের কাছে রাখবা?”

    এ কথা শুনে দুদুমাস্টার রহস্যময় হাসি দিয়েছিল। “মাথা গেছেনি তোমার! ট্যাকাগুলা ব্যাঙ্কে রাখা দরকার।” মাথা দুলিয়েছিল দুদু। “না, না…ব্যাঙ্কে রাখা যাবে না। “তাইলে?”

    “এ নিয়ে একদম চিন্তা করবে না,” আশ্বস্ত করে বলেছিল তাকে। “টাকাগুলোর সদগতি করে ফেলবো আমি।”

    সদগতি শব্দটার মানে আশেক তখনও বুঝতে পারেনি, আজ পনেরো বছর পরও না!

    তিনদিন পরই হাসপাতালে ভর্তি করানো হয় আর্জুমান্দকে, দ্রুত শুরু হয়ে যায় চিকিৎসা। রোজি জানতে চেয়েছিল, এত টাকার জোগাড় কীভাবে হলো, আশেক তাকে বলেছিল, দুদুমাস্টার ধার দিয়েছে।

    অপারেশনের আগে আর্জুমান্দের মধ্যে মৃত্যুভয় জেঁকে বসে, তিনি আব্দার করে বসেন, রোজিকে দুয়েক দিনের মধ্যে বিয়ে করতে হবে। আশেক অনেক বোঝানোর চেষ্টা করে, আর্জুমান্দ আগে সুস্থ হয়ে উঠুক তারপর বিয়ে করা যাবে, কিন্তু কোনোভাবেই বোঝাতে পারেনি তাকে।

    আর্জুমান্দকে হাসপাতালে ভর্তি করার দু-দিন পর চিন্তিত মুখে দুদুমাস্টার এসেছিল দেখা করতে। সে জানতে চায়, যুগ্মসচিবের বাড়িতে ঐদিন তারা কাউকে হত্যা করেছিল কি না।

    কথাটা শুনে আকাশ থেকে পড়ে আশেক। হত্যা করা তো দূরের কথা, আদতে ঐ যুগ্মসচিব, দারোয়ান আর কাজের ছেলেটাকে চড়-থাপ্পড়ও মারেনি তারা। পিস্তল হাতে কড়া ধমকেই কাজ হয়ে গেছিল।

    দুদু তখন জানায়, আজকে একটু আগে পথে তার ঐ ছাত্রের সঙ্গে দেখা হয়েছিল, সে বলেছে, তাদের বাসায় ডাকাতির সময় ডাকাতরা কাজের ছেলেটাকে খুন করেছে।

    আশেক কিছুই বুঝতে পারেনি। এটা কী করে সম্ভব! দুদুও ঘটনার মাথামুণ্ডু বুঝতে পারছিল না।

    ঐদিন ডাকাতি করার সময় যদি কোনো খুন না হয়ে থাকে, তাহলে খুনটা হলো কিভাবে? কে করলো সেটা? তার চেয়েও বড় কথা, কেন করলো?

    দুদুর ছাত্র আরো বলেছে, তার বড়মামা একজন পুলিশ ইন্সপেক্টর, তাদের বাড়ির ডাকাতি আর হত্যার ঘটনা তদারকি করছে সে নিজে।

    “আমার ধারণা, ঐ পুলিশই কাজের ছেলেটাকে হত্যা করেছে,” দুদুমাস্টার বলেছিল অবশেষে।

    কথাটা বিশ্বাস করতেও কষ্ট হচ্ছিল আশেকের। এত পুরনো কাজের ছেলেকে কেন মারতে যাবে সচিব কিংবা তার শ্যালক? কাকে ফাঁসাতে এই নাটক?

    “বিপুল পরিমাণের টাকা যে ডাকাতি হয়েছে, সে কথা তো পুলিশকে বলতে পারবে না ঐ সচিব, বড়জোর লাখখানেক টাকার কথা বলতে পারে। “

    মাথা নেড়ে সায় দিয়েছিল আশেক। “কাজের পোলারে মাইরা ডাকাতির কেসটা ভারি করছে?”

    “হুম। কিন্তু কেস ভারি করবে কেন? তারা তো জানেই না কারা ডাকাতি করেছে!” একটু থেমে গাল চুলকে আবার বলেছিল দুদু, “আমার সিক্সথ সেন্স বলছে, ঘটনা আসলে অন্য কিছু।”

    “কী রকম?” উদগ্রীব হয়ে জানতে চেয়েছিল আশেক।

    “ওরা আমাকে সন্দেহ করছে না। সেটা করলে সোজা পুলিশ নিয়ে হাজির হতো আমার বাড়িতে। আমি অবশ্য প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছি—ঈদের ছুটিতে গ্রামের বাড়িতে গেছিলাম, ঢাকায়ই ছিল না।” দীর্ঘশ্বাস ফেলে দুদু। “ওরা কি তাহলে তোমাদের দু-জনের কাউকে চিনে ফেলেছে?”

    “এইটা কেমনে সম্ভব?” অবাক হয়ে বলেছিল মির্জা আশেক। মাথা দোলায় দুদু। “কিছুই বুঝতে পারছি না। যাই হোক, পাভেলকেও সাবধানে থাকতে বলে দিও।’

    “আচ্ছা।”

    এরপর দুদু জানায়, আগামিকাল সচিবের বাড়িতে যাবে তার ছেলেকে পড়াতে, ওখানে গিয়ে পরিস্থিতি বোঝার চেষ্টা করবে সে।

    “সাবধানে, ওস্তাদ,” আতঙ্কিত হয়ে বলেছিল আশেক।

    “চিন্তা কোরো না, ওরা আমাকে কিছুই করতে পারবে না। আমি চিন্তিত তোমাদের নিয়ে…তোমরা একটু সাবধানে থেকো।“

    মাথা নেড়ে সায় দেয় আশেক, তারপরই জানায়, আর্জুমান্দের আব্দার রাখার জন্য আগামিকাল সে কাজী অফিসে গিয়ে রোজিকে বিয়ে করবে। একটু ভেবে নেয় দুদু, তারপর জানায়, অনাড়ম্বরভাবে বিয়ে করলে ঠিক আছে। এটা কারো চোখে পড়বে না।

    পর দিন বিকেলে চানখাঁরপুলের কাজী অফিসে গিয়ে আশেক বিয়ে করে রোজিকে, তাদের বিয়েতে উকিল বাপ হয় দুদুমাস্টার, সাক্ষী হিসেবে থাকে চার্লি। বিয়ের পরই সবাই চলে যায় বিরিয়ানির দোকানে, খাওয়া-দাওয়া করে সেখান

    সেখান থেকে হাসপাতালে গিয়ে দেখা করে আসে আর্জুমান্দের সঙ্গে।

    পরীবাগের বাড়িতে আসার পর আশেককে ডেকে নিয়ে দুয়ারে বসে দুদুমাস্টার। নিচুস্বরে বলে, সচিবের বাড়িতে সে গিয়েছিল টিউশনি করাতে কিন্তু আশ্চর্যের ব্যাপার, তাকে সচিবের শ্যালক ঐ পুলিশ জেরা করেনি। সচিবের স্ত্রী নিজে তাকে বলেছে, ঈদের সময় তাদের বাড়িতে ডাকাতি এবং কাজের ছেলে খুন হবার কথা।

    আশেককে আবারো সাবধানে থাকার কথা বলে সে চলে যায়। আশেকের সাথে সেটাই দুদুমাস্টারের শেষ দেখা।

    স্বল্প সময়ের মধ্যেই চার্লি তাদের ছোট্ট ঘরটাকে ফুল দিয়ে সাজিয়ে ফেলেছিল ঐদিন। অদ্ভুত অনুভূতি হচ্ছিল আশেকের। সচিবের বাড়ির কাজের ছেলের হত্যাকাণ্ডের ব্যাপারটা ভুলেই গেছিল কয়েক মুহূর্তের জন্য।

    নববধূ সেজে পালঙ্কে বসে ছিল রোজি। একটু আধটু সাজগোজও করেছিল সে। যে বেনারসিটা পরে নওয়াবসাবের সাথে আর্জুমান্দের বিয়ে হয়েছিল, রোজি সেটাই পরেছিল। একদম অন্য রকম লাগছিল তাকে।

    রোজির মুখটা দু-হাতে ধরে অপলক চোখে চেয়ে ছিল আশেক।

    “কী দেখতাছোস?” কথাটা বলার সময় কেঁপে উঠেছিল নববধূরর ঠোঁটজোড়া।

    “তুই কি বাসরঘরেও আমারে তুই-তোকারি করবি?” হেসে বলেছিল আশেক।

    “এতদিন তুই-তোকারি নিয়া সমস্যা হইলো না, এখন হইতাছে ক্যান, মির্জার্সাব?” মুখ টিপে হেসে ফেলেছিল রোজি।

    “বাসর ঘরে বৌ তুই-তোকারি করতাছে…কিমুন জানি লাগতাছে আমার।“

    “এক কাজ করি তাইলে…আপনে কইয়া ডাকি?”

    চোখ কপালে উঠে গেছিল নতুন বরের। “থাক…তুই- তোকারিই ঠিক আছে। আপনে কইয়া ডাকলে মনে হইবো আমি একটা বেগানা পুরুষ।”

    মুখ টিপে হেসেছিল রোজি। “নওয়াবসাবরা নাকি বিবিগো আপনি কইরা ডাকতো?”

    “হ, ডাকতো তো…” বলেছিল আশেক। “মাগার আমি তো নওয়াব না, ফিল্মের হিরোগো ডামি!”

    হেসে ফেলেছিল রোজি।

    সাজু খানের হাত থেকে মেয়েটাকে রক্ষা করার পর আশেককে যখন আপনি করে সম্বোধন করেছিল, তখনও সে হেসে ফেলেছিল।

    “ম্যাডাম, আল্লাহর ওয়াস্তে তুই কইরাই ডাকেন…আমার কাতুকুতু লাগতাছে!”

    “ঠিক আছে, এক শর্তে,” সঙ্গে সঙ্গে বলেছিল রোজি। “আমারেও তুই কইতে হইবো। তুইয়ে তুইয়ে কাটাকাটি।”

    মুখ টিপে হেসে ফেলেছিল আশেক।

    “কী দেখতাছোস?”

    রোজির কথায় সম্বিত ফিরে পায় সে। “তরে দেখি!”

    “আমার হাতটা ধর, মির্জা,” কম্পিত কণ্ঠে বলেছিল রোজি।

    “কোনো দিন এই হাতটা ছাড়িস না।”

    রোজির হাতটা শক্ত করে ধরে বুকের কাছে চেপে রাখে মির্জা আশেক। আর তখনই বিকট শব্দে খান খান হয়ে যায় তাদের বাসর। তার ঘরের দরজায় কেউ জোরে জোরে আঘাত করতে থাকে। পরক্ষণেই শুনতে পায় চার্লির কণ্ঠটা :

    “ভাই, পুলিশ আইছে!”

    মুহূর্তে তছনছ হয়ে গেছিল তাদের বাসর। সেই সাথে তাদের দুজনের জীবনটাও!

    *

    স্মৃতি থেকে ফিরে গভীর করে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল মির্জা আশেক। এতক্ষণে তার মুখের শেভিং ক্রিম শুকিয়ে গেছে।

    ⤶ ⤷
    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleঅগোচরা – মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন
    Next Article দ্য গার্ল উইথ দি ড্রাগন ট্যাটু – স্টিগ লারসন

    Related Articles

    মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন

    দ্য দা ভিঞ্চি কোড – ড্যান ব্রাউন

    November 15, 2025
    মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন

    অরিজিন – ড্যান ব্রাউন

    November 15, 2025
    মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন

    রবীন্দ্রনাথ এখানে কখনও খেতে আসেননি – মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন

    November 15, 2025
    মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন

    নেমেসিস (বেগ-বাস্টার্ড – ১) – মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন

    November 15, 2025
    মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন

    কন্ট্রাক্ট (বেগ-বাস্টার্ড ২) – মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন

    November 15, 2025
    মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন

    নেক্সাস (বেগ-বাস্টার্ড ৩) – মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন

    November 15, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Generic selectors
    Exact matches only
    Search in title
    Search in content
    Post Type Selectors
    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Our Picks

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }