Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • English Books
      • Jules Verne
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    দশটি উপন্যাস – আশাপূর্ণা দেবী

    লেখক এক পাতা গল্প1079 Mins Read0
    ⤶ ⤷

    ৪. আঘাত পাওয়া দরকার

    নিশীথের দাদা বলেছিল, আঘাত পাওয়া ওর দরকার।

    নিশীথের দাদা ওর হিত চেয়েছিল, তাই বলেছিল।

    বোধ করি নিশীথের ভাগ্যদেবতাও তার হিত চেয়েছিল, তাই আঘাত হানতে শুরু করল।

    প্রথম আঘাত নিজের কাছ থেকেই।

    বিয়ের আগে দুজনের এক অলিখিত শপথ ছিল, তাদের এ বিবাহ শিল্পের সঙ্গে শিল্পের, ধ্যানের সঙ্গে ধ্যানের, ভাবের সঙ্গে ভাবের।

    অতএব এ বিবাহের সন্তান হবে মিলিত প্রতিভার নতুন অবদান! আর কিছু না! আর কেউ আসবে না।

    কিন্তু ঘটে গেল এক অঘটন!

    নতুন নাটক নীহারিকাপুঞ্জের জন্মকথার জোর মহলা চলছে তখন, হঠাৎ সূচনা দেখা দিল গৌতমের জন্ম-সম্ভাবনার!

    অতসী একদিন বলে বসল, অন্য নায়িকা খোঁজো, আমার দ্বারা আর হবে না।

    আমার দ্বারা হবে না। অন্য নায়িকা খোঁজো!

    এ কী অসম্ভব কথা।

    নিশীথ চিৎকার করে উঠল, তার মানে?

    তার মানে? মানেটা খুব সোজা? তার মানে সেদিনকার সাফল্যে তোমার অতি উৎসাহী আবেগের জের এখন তোমায় জেরবার করতে আসছে!

    আশ্চর্য! সেইতেই? সেই সামান্যতেই? ধন্য বটে।

    মাথায় হাত দিয়ে পড়ল নিশীথ।

    নিজের চুল ছিঁড়ল, নিজের হাত কামড়াল, তারপর হঠাৎ বলে উঠল, এবারটা অন্তত চালিয়ে দাও প্লিজ। এ আর কাউকে দিয়ে হবে না।

    অতসী মাথা নাড়ল।

    বলল, অসম্ভব! আমার শরীরের অবস্থা তুমি বুঝবে না।

    না, বুঝব না, বুঝতে চাইও না অতসী! যেমন করে হোক এটা তোমায় করতেই হবে। তারপর না হয় কিছুদিন–।

    অতসী কঠিন মুখে বলল, আচ্ছা।

    স্বামীকে সেদিন ভয়ংকর একটা নির্মম দস্যু বলে মনে হল হঠাৎ অতসীর।

    মনে হল অতসীকে কোনও দিনই ভালবাসেনি ও, ভালবেসেছে শুধু অতসীর ক্ষমতাটুকুকে!

    যখন বিয়ে হয়নি, ওই ক্ষমতার প্রতি ভালবাসাটাই পরম লাভ ছিল অতসীর কাছে, কিন্তু বিবাহিতা স্ত্রীর দাবি কি শুধু সপ্রশংস উৎসাহ-বাণীতেই মেটে?

    ভিতরটা যে ক্রমশই আলাদা হয়ে আসছে।

    নিশীথ আগেরই মতো আছে নিজের স্বপ্নে মশগুল। অতসী চাইতে শুরু করেছে সংসার, সচ্ছলতা, স্বাচ্ছন্দ্য, শৃঙ্খলা। এই অদ্ভুত জীবনে যেটা চাওয়া পাগলামি মাত্র।

    নীহারিকাপুঞ্জের জন্মকথা উদ্ধার করল অতসী। কঠিন কঠিন মুখ নিয়ে। অবশ্য বেশিদিন তো নয়!

    নিজস্ব কোনও মঞ্চ তো নেই যে, চালিয়ে যাবে নিয়মিত! হল কয়েকটা এখানে ওখানে আমন্ত্রণ পেয়ে। তারপর হল গৌতমের জন্ম।

    আঘাত এল দ্বিতীয় পর্যায়ের।

    অন্য নায়িকা নিয়ে যা হোক করে চালিয়ে ব্যবসার দিকটা বজায় রাখবে এমন ছেলে নিশীথ নয়। কাজে কাজেই বেশ কিছুদিন গেল নিষ্ক্রিয়তায়। আর তখনই সংসারে প্রয়োজন এসেছে অর্থের। অধিক অর্থের।

    খিটিমিটি বাধতে থাকে অতসীর সঙ্গে।

    অতসী চায় তার ছেলে রাজপুত্রের মতো মানুষ হোক। নিশীথ বলে, গরিবের ব্যাটা রাজপুত্রের স্টাইলে মানুষ হবে, এমন অন্যায় ইচ্ছে কেন?

    অতসী কথা কাটে, অভিমান করে, কাঁদে, রাগ করে।

    কিন্তু হঠাৎ একদিন বলে বসল একটা ভয়ংকর কঠিন কথা।

    বলল, গরিব হওয়া তো তোমার শখের কাজল পরা! আমায় যদি অন্য জায়গায় প্লে করতে দিতে, অনেক টাকা আসত। অফার তো কম আসেনি!

    কথাটা মিথ্যে নয়।

    অফার এসেছে অনেকবার।

    ওরা অবহেলায় কৌতুকের হাসি হেসে সে অফার উড়িয়ে দিয়েছে।

    কিন্তু আজ সেই নিয়ে অভিযোগ করে বসল অতসী। কারণ আজ অতসীর কোলের ফুলের মতো ছেলেটার উচিতমতো উপকরণ জুটছে না, উচিতমতো যত্ন হচ্ছে না। সংসারের জন্যে একটা চাকর, বাচ্চার জন্যে একটা ঝি, এ নইলে কী করে যত্ন করে সারিয়ে তুলবে অতসী নিজেকে, বাচ্চাকে! অথচ তার একটাও নেই। একা হাতে সব। অথচ ওই শরীরঅতসীর মায়ের অবস্থা আরও খারাপ, সেখানে কোনও প্রত্যাশা নেই। বরং সেখানেই রয়েছে এদের উপর প্রত্যাশা।

    আগে সংসার বলে ছিল না কিছু।

    দুজনের একই লীলা।

    আর সেই লীলা বাইরের।

    কাজেই ভোজনং যত্র তত্র। সংসারের আয়োজনটা ছিল হাস্যকর। হয়তো কোনও কোনওদিন স্টোভে দুটো আলু আর ডিম দিয়ে দুমুঠো চাল ফুটিয়ে নেওয়া, ব্যস! নয়তো দুধ আর পাঁউরুটি।

    প্রধান ভরসা হোটেল। কিন্তু এখন কেন তা চলবে? এখন অতসী মা হল। এখন অতসী গৃহিণী হতে চায়। তা ছাড়া অতসীর পিতৃগৃহের দারিদ্র? যা অতসীকে ঘর থেকে মঞ্চে টেনে এনেছিল! তারও তো কোনও সুরাহা হল না। অতসী তো সেখানে দানের হাত বাড়াতে পারছে না।

    অতসীর নাম হল, যশ হল, অর্থ হল না। অথচ হতে পারত।

    পাবলিক স্টেজ থেকে ডাক এসেছিল অতসীর, ভাল মাইনের প্রতিশ্রুতিতে। ছায়াচিত্রের জগৎ থেকেও আবেদন এসেছিল মোটা টাকার প্রলোভন নিয়ে। বহু বহু শৌখিন সংস্থা, আর ক্লাব, যাদের সঙ্গে যোগাযোগ ছিল অতসীর, তারা বারবার ডেকেছে দক্ষিণার ঔজ্জ্বল্য দেখিয়ে, অতসী যায়নি। যেতে পারেনি। যাওয়া যায়, ভাবেনি।

    এখন সেই লোকসানগুলো যেন অতসীকে জীর্ণ করে আনছে। সেই ক্ষতির খতিয়ান করতে বসে নিশীথকে আরও নিষ্ঠুর স্বার্থপর আর আত্মসর্বস্ব মনে হচ্ছে।

    কারণ?

    কারণ অতসী মা হয়েছে।

    অতসী তার সন্তানের অনুকূলে চিন্তা করতে শুরু করেছে। অতসীর সন্তান একটা সুন্দর জামা গায়ে দিতে পাচ্ছে না, একটা দামি ফুড খেতে পাচ্ছে না, ভেবে অতসীর বুক ফাটছে। আর সর্বদা গৃহকর্মে ব্যস্ত মাকেও তো সম্যক পাচ্ছে না বেচারা! তাই হঠাৎ মেজাজ হারিয়ে বসল অতসী।

    তাই বলে বসল, গরিব হওয়া তো তোমার শখের কাজল পরা! আমায় যদি অন্য জায়গায় প্লে করতে দিতে–

    বলেই স্তব্ধ হয়ে গেল।

    সাদা হয়ে গেল।

    কারণ অনুভব করতে পারছে, কত স্তব্ধ হয়ে গেছে নিশীথ এ কথায়।

    অতসী যেন নিশীথের মর্মমূলের সবচেয়ে সুকুমার জায়গাটা পা দিয়ে মাড়িয়ে গিয়েছে।

    অতসী হঠাৎ নিজেই কেঁদে ফেলল।

    সেদিনের অবস্থা অবশ্য ফিরেছিল।

    ফিরেছিল অতসীর কান্না আর ক্ষমা প্রার্থনার মধ্য দিয়ে। মনে হয়েছিল সব ঠিক হয়ে গেল। কিন্তু অতসীর সেই অভিযোগটা যেন ছায়ার মতো কোথায় রয়ে গেল, লেগে রইল।

    তবু গৌতম একটু বড় হয়ে উঠলেই আবার কীভাবে লেগে পড়বে দুজনে, তার তোড়জোড় জল্পনা কল্পনা চলতে লাগল।

    পলাশের কুঁড়িকে নিয়েই আবার নামবে, না নীহারিকাপুঞ্জ, না কি রবীন্দ্রনাথের কিছু অথবা বিদেশি কোনও নাটকের তর্জমা?

    নিজেদের একটা হল করার স্বপ্নও দেখল খেলাঘরের খেলার মনোভাব নিয়ে। যেন ভাবলেই বা!

    জল্পনা চলল অতসী কবে ফিট হয়ে উঠবে, তারই সময় নির্ণয়ে।

    এমনি একদিনে হঠাৎ শিশুর হয়ে পড়ল এক কঠিন রোগ! যায় কি থাকে!

    অতসী উদভ্রান্ত হয়ে বলল, সবচেয়ে বড় ডাক্তার ডেকে নিয়ে এসো আমার খোকার জন্যে। সবচেয়ে নামকরা চাইল্ড স্পেশালিস্ট।

    নিশীথের প্রাণ ফেটে যাচ্ছিল ছেলের অবস্থা দেখে, তবু হতাশ হয়ে বলল, কোথা থেকে আনব? হাতে একটাও টাকা নেই।

    টাকা নেই!

    টাকা নেই!

    এই কথা শুনে আসছে অতসী খোকা হয়ে পর্যন্ত। অতসীর হাত পা বাঁধা, অতসী পারছে না ঘরে টাকা আনতে। আর একটা অক্ষম পুরুষ বসে স্বপ্ন দেখছে, দেশের মোড় ফেরাবে। সংস্কৃতির সংজ্ঞা বদলে দেবে, নাটক কাকে বলে বুঝিয়ে দেবে।

    নির্লজ্জ কাপুরুষ নিষ্ঠুর ইতর!

    মনে মনে বলতে থাকে অতসী।

    বলতে বলতে ফুলে ওঠে।

    আর তারপর সহসা সেই কথাগুলো মুখ দিয়ে বেরিয়ে পড়ে।

    বেরিয়ে পড়ে শপথ বাক্য।

    খোকা যদি না বাঁচে, অতসীর সঙ্গে নিশীথের সম্পর্ক শেষ!

    আর খোকা যদি ঈশ্বরের ইচ্ছায় বেঁচে ওঠে, অতসী নিজের ক্ষমতাকে কাজে লাগাবে। লাগাবে, লাগাবে, লাগাবে!

    ওই এক বাস্তবজ্ঞানহীন মূর্খের মূর্খতার সঙ্গিনী হয়ে অপচয় হতে দেবে না নিজেকে!

    অর্থকে অবহেলা করলেই হল?

    অর্থহীন জীবনের অর্থ কোথায়? অর্থই পারে সব কিছুতে অর্থ আনতে।

    অর্থ অতসীর চাই! সে প্রিয়া! সে শিল্পী! কিন্তু সকলের বড় হচ্ছে সে মা!

    ঈশ্বর-ইচ্ছায় খোকা সেরে ওঠে। বড় ডাক্তার ব্যতীতই।

    নিশীথ উদাসীন গলায় বলে, রাখে কেষ্ট মারে কে, এ একটা প্রবাদ মাত্র নয়।বলে বড় ডাক্তার না এনেও রোগী বাঁচে।

    অতসী তীব্র স্বরে বলে, থামো, চুপ করো। অক্ষমের সম্বলই হচ্ছে বড় বড় বুলি।

    অতসী তার অপদার্থ স্বামীকে চিনে ফেলেছে। অতসীর আর ওর কাছে প্রত্যাশা নেই। অতসী তাই আর ভাঙা সম্পর্ক জোড়া দেবার জন্যে কাঁদতে বসে না, ক্ষমা চাইতে বসে না।

    অতসী, গৌতম একটু শক্ত হতেই লুকিয়ে অন্য পার্টির সঙ্গে যোগাযোগ করে। চুক্তিপত্রে স্বাক্ষর করে বসে।

    কিন্তু এ খবর কি লুকিয়ে রাখবার? সহসা একদিন একটি প্রতিষ্ঠিত মঞ্চের নতুন নাটকে নায়িকার নামে অতসীর নাম ঘোষিত হয়! অতসীর মঞ্চের নাম অবশ্য।

    যে নাম গ্রহণ করেছিল কুমারীকালে প্রথম ঘর থেকে বেরিয়ে মঞ্চে ওঠবার সময়। ডাক নাম।

    বিদ্যুৎলতা! বিদ্যুৎলতা চট্টোপাধ্যায়। পিতৃকুলের পদবি, কুমারীকালের নাম।

    নিশীথের সঙ্গে যার কোনও যোগ নেই। তবু সেই নামের আবরণের মধ্যেই তো নিশীথ গাঙ্গুলীর আত্মার বিকাশ হচ্ছিল, ভাবের বিকাশ ঘটছিল।

    কিন্তু আজ সেই নামের সঙ্গে নিশীথের কোনও যোগ নেই। রূপমহল রঙ্গমঞ্চে সাজাহান নাটকে জাহানারা সাজছে যে বিদ্যুৎলতা চট্টোপাধ্যায়, সে একটা অর্থপিপাসু ঝানু ব্যবসায়ী মেয়ে! নিজেকে নিয়ে সে দরাদরি করে!

    .

    বিয়ের আগেই বাড়ির মাঝখানে পাঁচিল তুলে নিয়েছিল দাদা। বিয়ের পর কথাই কয়নি একদিনও ভাইয়ের সঙ্গে। হঠাৎ সেদিন রাস্তায় ধরল। কথা বলল। বলল, বংশের কুলাঙ্গার তুমি, বলতে কিছু প্রবৃত্তি হয় না, তবুনা বলে তো পারছি না। নেহাত ঘরের বউ না হোক, তোমার বিবাহিতা স্ত্রী তো বটে! নিজে সঙ্গে করে নাচাচ্ছিলে বেশ করছিলে, এটা কী হচ্ছে? একেবারে পেটেন্ট থিয়েটারের অভিনেত্রী বানালে শেষ অবধি?

    নিশীথ কি তখন দাদার হাত ধরে কেঁদে ফেলবে? বলবে, দাদা, আমিই ওই সাপের দংশনে ছটফটাচ্ছি।

    তা হয় না।

    তা বলা যায় না, নিশীথ তাই তার অভিনয় ক্ষমতাকে কাজে লাগায়।

    নিশীথ গম্ভীর গলায় বলে, প্রতিভা জিনিসটাকে নিজের সিন্দুকে চাবি দিয়ে রেখে দেওয়া যায় না দাদা।

    দাদা আরও ক্রুদ্ধ গলায় বলে, জানতাম তোমার মুখে এই কথাই শুনতে হবে। তবে জেনো, আর ওকে তুমি ধরে রাখতে পারবে না, ঘরে রাখতে পারবে না। পাখি একবার উড়তে শিখলে–

    দাদা, তুমি ভুল করছ। পাখিটা আকাশেই ছিল। আমিই একে ধরে পায়ে শিকল দিতে চেষ্টা করেছিলাম।

    দাদা ব্যঙ্গের গলায় বলে, ওঃ! তা হলে তুমি এতে খুশি? বুঝেছি, এখন ওই স্ত্রীর গ্ল্যামার ভাঙিয়েই খেতে চাও! যাক আর কিছু বলবার নেই। তবে একটা বাচ্চা হয়েছে, সেটারই জীবন সংশয় হবে। দুর্ভাগা শিশু!

    চলে গেলেন দাদা।

    কিন্তু দাদাকে যে কথা বলল নিশীথ, সে সত্যিই তার নিজের কথা নয়।

    তবু বলল।

    প্রেস্টিজ রক্ষা করতে বলল। তার স্ত্রী তার হাতছাড়া হয়ে যাচ্ছে, এ কথা বলতে পৌরুষে বাধল, তাই বলল।

    কিন্তু বাড়িতে এসে অতসীকে বলল।

    ধিক্কার দিয়ে, ঘৃণা মিশিয়ে, রূঢ় ব্যঙ্গের গলায় বলল। বলল, দুর্ভাগা শিশু! এই হচ্ছে তোমার ছেলের পরিচয়!

    অতসীও ছাড়ল না।

    অতসী বলল, বেশ তো তুমি আমাকে কথা দাও, মানুষের মতো অবস্থায় তুমি রাখবে আমাকে, ওদের সঙ্গে কন্ট্রাক্ট ভেঙে দিচ্ছি।

    তোমার মতে যেটা মানুষের মতো, সেটা আমার জানা নেই।

    ওঃ তাই বুঝি? তবে শোনো, আমিই বলি, রোগে ওষুধ, ক্ষুধায় পথ্য, অস্বাস্থ্যে বিশ্রাম, গরমে পর্যাপ্ত পোশাক, শীতে গরম জামা, বর্ষায় ছাতা–

    থাক থাক্‌! বুঝেছি। ফিরিস্তি বাড়তেই থাকবে ক্রুদ্ধ নিশীথ হঠাৎ তীব্র গলায় বলে, বেশ, ঠিক আছে। দুটো বছর সময় দাও তুমি আমায় দেখিয়ে দেব, তোমার হিসেব অনুযায়ী মানুষের মতো হতে পারি কি না!

    দুটো বছর?

    খিলখিল করে হেসে ওঠে অতসী।

    যে হাসির গুণে আসর মাত করতে পারে বিদ্যুলতা।

    বলে, তোমার কথাটা কীরকম হল জানো? আগে না হয় ফাঁসিটা হয়ে যাক, তারপর আপিল করে দেখা যাবে! বললা–এই দুবছর কী দিয়ে চলবে?

    আগের মতো করে। যেমন করে তুমি আর আমি–।

    ভুল করছ! সেই দুজনের মাঝখানে আর একটা অসহায় প্রাণীর আবির্ভাব ঘটেছে! তাকে বাঁচাতে হবে। দুবছর কীভাবে বাঁচাব তাকে, বাতলে দাও।

    নিশীথ নিজের মাথার চুল টানে। লম্বা লম্বা চুল।

    আজ আর যার কোনও অস্তিত্বই নেই। এখন নিশীথের ছোট ছোট করে চুল ছাঁটা, বাঘা অফিসারদের স্টাইলে।

    তবু বলেছিল নিশীথ, ওই একটা পুঁচকে খোকার জন্যে তুমি আত্মঘাতী হতে যাচ্ছ অতসী? বুঝতে পারছ না কী করতে যাচ্ছ। এমন করে নিজেকে শেষ কোরো না, দোহাই তোমার! জানো না ওই রূপমহল কোম্পানি কত মাথামোটা! তা ছাড়া ওই মোটা রসের নাটক…

    তখন অতসী নরম হয়েছিল একটু। বলেছিল, না হয় দুদিন মোটা অভিনয়ই করলাম! ক্ষয়ে যাব না তো? মোটা কিছু ঘরে তুলে ছেড়ে দিলেই হবে। রাগই কর খালি, দেখছ তো কত কষ্ট করছি। মায়া হয় না তোমার? তোমার বিদ্যুলতা সংসার মঞ্চে বাসন ধুচ্ছে, সাবান কাঁচছে, মশলা পিষছে, রান্না করছে! দেখে দুঃখ হচ্ছে না?

    চুপ করে যায় নিশীথ।

    তারপর বলে, আচ্ছা! ঠিক আছে। কিন্তু যখন আমি আমার ক্ষমতায় তোমার এই কষ্টে সাহায্য জোগাতে পারব, তখন ছেড়ে দিতে হবে ওই সব।

    অতসী বলেছিল, একশো বার।

    কিন্তু জীবন কি অঙ্কশাস্ত্র? না জীবনটা মাটি পাথর?

    তাই তাকে ইচ্ছামতো গড়া যাবে, অথবা ঠিক নিয়মে চালিত করা যাবে?

    নিশীথ সময় চেয়েছিল।

    নিশীথ বলেছিল, দেখিয়ে দেব বড়লোক হতে পারি কিনা! নিশীথ তার প্রতিশ্রুতি পূরণ করেছিল।

    কিন্তু সেও কি আত্মহত্যার পথে নয়?

    থিয়েটার ছেড়ে দিয়ে এক সহপাঠী বন্ধুর সঙ্গে ব্যবসা শুরু করল নিশীথ অর্ডার সাপ্লাইয়ের।…বন্ধু ওতে কিছুটা অগ্রসর হয়েছিল, আর একজন বিশ্বাসী সহকর্মী খুঁজছিল।…বলল, তোর ঘাড় থেকে থিয়েটারের ভূত নেমেছে দেখে বাঁচলাম! যদিও গিন্নিকে ভাঙিয়ে খাচ্ছিস, আছিস ভাল! যাই হোক, চলে আয় এদিকে। বিনা মূলধনের ব্যবসা, অথচ টাকায় টাকা লাভ!

    নিশীথ মনে মনে বলল, থিয়েটারের ভূত আমার ঘাড় থেকে নামেনি বৎস, নেহাত নাচারে পড়েই! একটু গুছিয়ে নিয়ে নেমে পড়ব আবার।

    মুখে বলে না অবশ্য।

    গুছিয়ে নেবার ফন্দি-ফিকির শেখে বন্ধুর কাছে।

    শেখে, শিখতে থাকে। কিন্তু ততক্ষণে অতসী যাচ্ছে দুরে সরে!

    অতসীর ডাকের উপর ডাক আসছে, অতসী সেই ডাকের স্রোতে ভেসে যাচ্ছে। ভেসে যাচ্ছে মঞ্চ থেকে, মঞ্চ থেকে পরদায়!..

    আর পরদার অধিকর্তারাই জানে বেপরদা হতে পারলে, আর হওয়াতে পারলে, লাভের অঙ্ক কতটা ওঠে! অতএব তারা সেই অঙ্কটা ওঠাবার ফন্দি আবিষ্কার করতে বসে, আর আবিষ্কার করে ফেলে বিদ্যুৎলতার কতটা গ্ল্যামার! সেইটাই মূলধন করে তারা। শিল্পীর আত্মাকে আবিষ্কার করবার গরজ দেখায় না!

    .

    হয়তো বিদ্যুৎলতা বিদ্রোহ করত।

    হয়তো বলে উঠত, না না, এ আমার দ্বারা হবে না! কিন্তু রুপোর ছুঁচে সেলাই হয়ে যাচ্ছে মুখ, বলা হচ্ছে না!

    টাকা আসছে ছাপ্পর ফুঁড়ে!

    টাকা আসছে পাতাল ফুঁড়ে!

    আর সে টাকার চেহারা ঠিক পুণ্যময় টাকারই মতো! সে টাকা দিয়ে জগতের সব কিছু আহরণ করা যাচ্ছে ঠিকই। সেই টাকায় ভর করে গৌতমের জন্যে জিনিস আনতে পারা যাচ্ছে ভারে ভারে, গৌতমের আয়া আসছে সভ্য ভব্য, গৌতমের ডাক্তার আসছে অকারণ।

    .

    ভোল বদলে যাচ্ছে বাড়ির।

    মুহূর্তে মুহূর্তে সংসারের রং পালটাচ্ছে, মেজাজ পালটাচ্ছে। আসছে ফার্নিচার, আসছে চাকর, ঠাকুর, আর আসছে বাবুয়ানার হাওয়া। প্রয়োজনের অতিরিক্ত, আরও বেশি, অনেক বেশি! জলস্রোতের মতো অর্থ স্রোত!

    নিশীথ গাঙ্গুলী তবে বড়লোক হয়ে উঠে কোথায় কী মহিমা দেখাবে তার?

    স্ত্রীর জন্যে সাহায্যের হাত দেবার কথা ছিল তো তারই!

    কিন্তু তাকে যেন আর প্রয়োজন হবে মনে হচ্ছে না।

    অতসী গাঙ্গুলীই সব করে নেবে, বিদ্যুতার নৌকোয় চড়ে।

    .

    একদিন ধৈর্যচ্যুতি ঘটল।

    নিশীথ গাঙ্গুলী সেদিন ফেটে পড়ল।

    বলল, লজ্জা করে না? লজ্জা করে না তোমার? সভ্যতা ভব্যতা সব বিকিয়ে দিচ্ছ শুধু চারটি টাকার লোভে! ভেবে পাচ্ছি না এত বেহায়া তুমি হলে কী করে! অহংকার ছিল নিজের উপর, ভেবেছিলাম, প্রতিভাকে চিনতে পেরেছি, আবিষ্কার করতে পেরেছি তার ভিতরের শিল্পীসত্তাকে। সে অহংকার চুর্ণ হয়েছে। দেখছি তুমি আর কিছু নও, শুধু একটা দেহসর্বস্ব বাজে মেয়ে! বুঝলে, তুমি একটা বাজে মেয়ে! তোমাকে নিয়ে বাঁদর নাচানো যায়।

    অতসী গাঙ্গুলীর সেই অনুপম মুখটা লাল টকটকে হয়ে উঠল। অতসী গাঙ্গুলী মিনিটখানেক কথা বলতে পারল না। তারপর খুব ঠাণ্ডা গলায় বলল, কথাটা কার কাছে যেন শুনতে হচ্ছে আমায়? অর্ডার সাপ্লায়ার মিস্টার গাঙ্গুলীর কাছে, তাই না? কী সাপ্লাই দিচ্ছ এখন? পাট, তিসি, লোহা, চামড়া? না কি মেয়েমানুষ?

    .

    এমনি করেই চলতে থাকে কিছুদিন।

    পরস্পর পরস্পরকে তীক্ষ্ণ অস্ত্রে বিদীর্ণ করবার জন্যে উন্মুখ হয়ে থাকে। গৌতম থাকে দামি আয়া, দামি নার্স আর দামি ডাক্তারের হেফাজতে। তার মা বিদ্যুৎলতার সময় কোথায় তাকে দেখবার? দৈবাৎ এক আধবার এসে পড়ে বেদম আদর করে, এই পর্যন্ত।

    কিন্তু এই জীবনই কি চেয়েছিল অতসী?

    চায়নি। তবু এই জীবনকেই ডেকে আনল।

    আর নিশীথ?

    নিশীথও কোনওদিন কল্পনা করেনি, সে বড়বাজারের রাস্তা দিয়ে হাঁটছে, তার গলি খুঁজির মধ্যে গদিওয়ালার কাছে গিয়ে ধরনা দিচ্ছে।

    একটু গুছিয়ে নিয়ে আবার মঞ্চে নেমে পড়ার উজ্জ্বল মধুর ছবিটা ক্রমশ ঝাপসা হয়ে আসছে! ওই বড়বাজারটাই সত্য হয়ে উঠছে। নাটকের মন চলে যাচ্ছে। যে বাজারের সর্বাঙ্গে বিদ্যুতার বহু ভঙ্গিমার ছবি আঁটা, সে বাজারের দিক থেকে বিমুখ হয়ে আসছে মুখ, বিতৃষ্ণ হয়ে আসছে মন!

    আর ওই ছেলেটা?

    যে নাকি তার মাতৃপ্রবাদে এখন রাজপুত্রের মতো লালিত হচ্ছে?

    তার দিকে কি তাকায় না নিশীথ?

    তার জন্যে পিতৃহৃদয়ের ব্যাকুলতা অনুভব করে না?

    সেখানটাও যেন ঝাপসা।

    গোলগাল ছেলেটা টলে টলে হেঁটে বেড়ায়, হয়তো বাবা বলে কাছে আসে, সঙ্গে সঙ্গে এসে দাঁড়ায় ব্লাউজ চটি পরা নেপালি আয়া। যার মুখটা একেবারে বরদাস্ত করতে পারে না নিশীথ।

    বিমুখ মন নিয়ে ছেলের কাছ থেকে সরে আসে, গুম হয়ে থাকে।

    ওটাকে যখন নিয়োগ করা হয়েছিল, তখনও স্বামী স্ত্রীতে দু-চারটে সাধারণ কথার বিনিময় ছিল। তখন নিশীথ বলেছিল, ওটাকে কোথা থেকে আমদানি করলে? অসহ্য! ওই মুখশ্রী সর্বদা চোখের সামনে! উঃ! বিদেয় করো ওকে।

    অতসী বলেছিল, মুখশ্রী দেখবার জন্যে আয়া রাখা হয় না। যার জন্যে রাখা হয়, ওর তাতে নিপুণ পটুতা। ও থাকবে।

    অতসী যে নিজের উপার্জনেই সব করছে, এমন কথা প্রথম প্রথম জানতে দিতে চাইত না।

    কিন্তু নিশীথের বিরক্তি তাকে নিষ্ঠুর করেছে, নির্লজ্জ করে তুলেছে। এখন সর্বদা সেটা জানাতে চেষ্টা করছে নিরাবরণ রূঢ়তায়।

    .

    ক্রমশ আর কথাই নেই।

    সহজ, তীক্ষ্ণ, কোনও কথাই।

    এমনি একদিনে অতসী নিজে এসে কথা বলল, বম্বে থেকে একটা অফার পাচ্ছি।

    বম্বে থেকে অফার পাচ্ছি।

    নেহাতই অভাবিত কি এটা?

    নিতান্ত অপ্রত্যাশিত?

    গুঞ্জনধ্বনি শোনা যাচ্ছিল না কি?

    তাই চমকে উঠল না নিশীথ।

    শুধু তাকিয়ে থাকল।

    অতসী আবার বলল, দক্ষিণাটা অবিশ্বাস্য!

    নিশীথ এবার কথা বলল। বলল, অবিশ্বাস্য কীসের? স্বাভাবিক! বিদ্যুতা চট্টোপাধ্যায়ের দেহ-সৌন্দর্যটা কি কম? বম্বের আর্টিস্টদের হার মানিয়ে দেবার মতো যে!

    অতসী ক্রুদ্ধ মুখে বলল, হ্যাঁ সেটাই বুঝতে পারছি। নইলে অত দিতে চাইবে কেন? চলে গেল।

    অনেকদিন পরে নিজে যেচে কথা বলতে এসেছিল, হয়তো বলতে এসেছিল, একা যেতে একটু ভয় ভয় করছে, তুমিও চলো না! না হয় আলাদা ভাবে ভ্রমণকারী হিসেবে অন্য হোটেলে থাকবে।

    হ্যাঁ, এমনি একটা মনোভাব নিয়েই এসেছিল, ভেবেছিল নিজে নরম হবে। ভেবেছিল বলবে, এই টাকাটা পেলে অনেকদিন চলে যাবে, কিছুদিন বিশ্রাম নেব।

    কিছুই বলা হল না।

    ঠিকরে চলে গেল।

    চুক্তিপত্রে সই করল, দু-দুটো ছবির জন্যে। আর

    আর সেই চলে যাবার সঙ্গে সঙ্গেই একেবারে সরে গেল নিশীথের জীবন থেকে, সংসার থেকে, সমাজ থেকে!

    অবশ্য সেবারে ফিরে ফিরে এসেছে, তারিখ হিসেবে, আবার গিয়েছে, কিন্তু খিটিমিটি বেড়েই চলেছে। মাত্র ঘৃণা আর বিদ্বেষের সম্বল নিয়ে কদিন টিকে থাকতে পারে দাম্পত্য জীবন?

    ঝরাপাতা খসে যায়।

    শুধু কতকগুলো দিন কাটে তুমুল ঝড়ের মধ্যে। সমস্যার ঝড়।

    গৌতমকে নিয়ে সমস্যা!

    কার কাছে থাকবে গৌতম?

    আইনের আশ্রয় নিয়ে বিচ্ছিন্ন হতে যাচ্ছে না অথচ, অতএব আপসেই করতে হবে ঠিক।

    অতটুকু বাচ্চা মায়ের কাছে ছাড়া কোথায় থাকবে শুনি?

    বলল অতসী তীব্র স্বরে।

    নিশীথ শান্ত স্বরে বলল, থাকবে! খুব ন্যায্য কথা! তাই থাকাই উচিত। কিন্তু মায়ের সেই পরিবেশটা কি একটি ভদ্র মার্জিত সভ্য ছেলে গড়ে তোলবার পক্ষে অনুকুল?

    ওকে আমি কনভেন্টে রাখব! উত্তেজিত অতসী বলে, দু-তিন বছরের বাচ্চাকেও রাখে এমন জায়গার অভাব নেই।

    ওঃ কনভেন্টে! নিশীথ বলল, আমি ভাবছিলাম মাতৃবক্ষেই ঠাঁই পাবে ছেলেটা! আহা! তা বেচারার ভাগ্যে যদি কনভেন্টই থাকে, তা হলে তো ওর বাপই রাখতে পারবে।

    অসহ্য!

    অসহ্য ওই শান্ত অনুত্তেজিত গলার কথা!

    নিশীথ যখন উত্তেজিত হত, যখন রেগে আগুন হত, তখন বরং কোথাও ছিল শাস্তি সুখ! এখন শুধু জ্বালা!

    শেষ পর্যন্ত নিশীথেরই জয় হল।

    রফা হল, ছেলে নিশীথের ইচ্ছা অনুযায়ী মানুষ হবে। কিন্তু

    কিন্তু অতসীকে ভুলতে হবে ছেলের উপর তার কোনও দাবি আছে। ছেলেকে ভোলাতে হবে ওর মা আছে।

    ও জানবে ওর মা নেই।

    আশ্চর্য! এই ভয়ংকর প্রস্তাবের বিরুদ্ধে বিদ্রূপ আর বিদ্রোহের কশাঘাত করে ওঠেনি অতসী!

    শুধু নির্নিমেষ দৃষ্টিতে সেকেন্ড কয়েক তাকিয়ে দেখেছিল নিশীথের মুখের দিকে। তারপর অদ্ভুত একটু হেসে বলেছিল, আচ্ছা! ওকে জানিয়ে ওর মা মরে গেছে।

    মনে করিয়ে দিল না, ওর মা পথে নেমেছিল ওর জন্যেই। নিজেই কি ভুলে গেল?

    .

    বম্বে চলে গেল অতসী।

    সঙ্গে গেল ওর মা বোন আর দাদা। যে বোনটাও এখন ছায়াজগতে কায়া বিস্তার করেছে, আর অবোধ মূর্খ যে দাদাটি এখানে উঞ্ছবৃত্তি করে বেড়াত, সে ওখানে নাকি স্টুডিও তদারকির একটা কাজ করছে, যে কাজের নামও আছে একটা গালভরা।

    এতদিনে তাদের সুরাহা হয়েছে।

    অর্থাৎ বম্বেতেই বসবাস করছে তদবধি অতসী। তার সেই কুমারীকালের সংসারটা নিয়ে।

    আর নিশীথ?

    নিশীথ ক্রমশ ধুলো মুঠো ধরে সোনা মুঠো করছে। নিশীথ গাঙ্গুলী নামের একটা অবোধ মূর্খ স্বপ্ন দেখা তরুণকে দূরে থেকে দেখে সে এখন কৃপার হাসি হাসে।

    অতসী নিয়োজিত সমস্ত পুরনো লোককে বিদায় দিল নিশীথ সঙ্গে সঙ্গে, তারপর বাড়ি করল অন্য পাড়ায়, পুরনো বাড়ির অংশটা দাদার ছেলের নামে লিখে দিয়ে।

    নতুন পাড়া, নতুন বাড়ি, নতুন পরিজন! একটা অবোধ শিশুর স্মৃতির জগৎ ভুলিয়ে দেবার পক্ষে কি সম্পূর্ণ নয়?

    মা মা করলও না তো!

    করল আয়া আয়া!

    তারপর তাকে ভুলল নতুন খিদমদগার পেয়ে। চার বছর বয়েস সম্পূর্ণ হতেই ওই মিশন স্কুলে নির্বাসন! অস্ফুট চৈতন্যে জানত মার অসুখ করেছে, মা হাসপাতালে গেছে। জ্ঞান চৈতন্যে জানল মা মারা গেছে।

    নিশীথের ধারণায় এ পাড়ার পড়শিরা, চাকর-বাকররা সকলেই তাই-ই জানে।

    আত্মীয়দের বিশ্বাস করে না, তাই আত্মীয়দের সঙ্গে সম্পর্ক রাখেনি। রাখবেই বা কোন মুখে?

    হিন্দি ছবি দেখছে না কে?

    সিনেমা পত্রিকাগুলো পড়ছে না কে?

    খবরের কাগজের চিত্র সমালোচনার পৃষ্ঠা উলটোচ্ছে না কে?

    তার থেকে বড়বাজার ভাল।

    যারা জানে না বিদ্যুৎলতার সঙ্গে গাঙ্গুলী সাহেবের কোনও সম্পর্ক আছে, তাদের সঙ্গই ভাল।

    ছেলে রইল এমন পাণ্ডববর্জিত দেশে, যেখানে ওই সম্পর্কে রহস্য ভেদ হবার ভয় নেই।

    জমছে টাকার পাহাড়! হয়তো ওই ছেলের জন্যেই।

    বিদ্যুৎলতারও জমছে সে পাহাড়।

    যথেচ্ছাচারের স্রোত বইয়ে, বিলাসিতার সাগরে ভেসেও কমছে না, জমছে। কে জানে সে টাকা কার জন্যে।

    নিজের ভবিষ্যতের জন্যেই হয়তো।

    কারণ ওকে দেখে মনে পড়ে না কারুর ওর একটা ছেলে আছে। আর সেই ছেলের জন্যেই সে নিজেকে বিসর্জন দিয়েছিল। বিসর্জন দিয়েছিল প্রেম, শান্তি, সুখ, ঘর!

    কিন্তু কী ক্ষতি হত গৌতম নামের ওই ছেলেটা যদি খুব গরিবের মতো মানুষ হত?

    মানুষ হত একটি আদর্শবাদী শিল্পী দম্পতির প্রাণের পুতুল হয়ে!…

    কী লাভ হল এই অর্থহীন অর্থের কাছে আত্মাকে বিকিয়ে? দুদুটো আত্মা ধ্বংস হল।

    গৌতমের খুব একটা উপকার করল গৌতমের মা?

    যে নাকি ভেবেছিল, আমি প্রিয়া, আমি শিল্পী, তবু সকলের উপর আমি মা!

    তবু

    হয়তো ওই টাকার পাহাড়ে বসা অর্ধনগ্ন বেশভূষায় সজ্জিতা লাস্যময়ী নায়িকা আজও তার নিভৃত হৃদয়ের গভীরে উচ্চারণ করে সেই মন্ত্র। সকলের উপর আমি মা!

    তাই সে ছেলের কাছে মৃত হয়েই থাকে।

    তাই নিশীথের সঙ্গে দাবির লড়াইয়ে নামে না। আর সেই জন্যেই হয়তো এ কথা মেনে নিয়েছিল যে, নিশীথ তার ইচ্ছানুযায়ী মানুষ করবে ছেলেকে! নিজের যে আর তার ফেরবার উপায় নেই, ভাগ্যের স্রোতে যে ভেসে যেতে হবে তাকে, এটা মেনে নিয়েছিল! শৃঙ্খলের মতো আঁকড়ে ধরে তাকে একের পর এক কন্ট্রাক্ট।

    তবু!

    তবু এক একবার মনে হয় বইকী, যদি একবার দেখতে পেতাম! কিন্তু এমন উত্তাল ঢেউয়ের মাথায় চড়ে বসে আছে যে, নামবার শক্তি নেই। ঢেউ যেখানে আছড়ে আছড়ে পড়ে সেখানেই গতি। লুকিয়ে ছেলেকে একবার দেখবে সে পথ নেই। গতিবিধি ছকে বাঁধা। আর সে ছকে ঢাক ঢোলের সমারোহ।

    শুধু অদ্ভুত আশ্চর্য একটু করুণা করে নিশীথ।

    মাসে একটা করে সম্বোধন-স্বাক্ষরহীন টাইপ করা চিঠি দেয়। যার অর্থ খোকা ভাল আছে।

    কার খোকা বোঝা যাবে না সে চিঠি থেকে।

    কে লিখছে তাও না।

    অন্য পাড়ার পোস্টবক্সে পোস্ট করে। অতএব কোথা থেকে লিখছে তাও জানবার উপায় নেই।

    .

    আশ্চর্যের কথা, পরদিনই সুনন্দ এল বেড়াতে।

    এল তার বাবার সঙ্গে।

    বাবা বলল, এই দেখ নিয়ে এলাম তোমার বন্ধুকে। এবার তোমাকেও যেতে হবে।

    তারপর অবাক হয়ে তাকিয়ে তাকিয়ে দেখতে লাগল ঐশ্বর্যের ছাপ। এই বাড়ির ছেলে কিনা সেই কষ্টের মধ্যে মানুষ হচ্ছে? তার ছেলের কথা আলাদা। মোটা ভাত কাপড়েই মানুষ। কিন্তু এর কী?

    সুনন্দ অবশ্য শুধু বসবার ঘরেই বসে রইল না। সারা বাড়িটা ঘুরে ঘুরে দেখল। আর সব শেষে এক সময় মিটিমিটি হেসে বলল, এই গৌতম, বাড়িতে তোর মার কোনও ছবি নেই?

    মার ছবি!

    গৌতম থতমত খেয়ে বলল, কই না তো? কেন?

    নেই কেন? সুনন্দ যেন জেরা করে, সব বাড়িতেই তো মরে গেলে ফটো থাকে। ফুলের মালা ঝোলানো ফটো। তোর মার নেই মানে?

    বাঃ আমি কী করে জানব? আমি কি তখন দেখেছি?

    দেখিসনি তুই, তোর মাকে দেখিসই নি?

    খুব ছোটবেলায় দেখেছি, ক্লিষ্ট স্বরে বলে গৌতম, মনেই নেই। তারপর তো মারাই গেছেন।

    হঠাৎ হি হি করে হেসে ওঠে সুনন্দ। মারা গেছে না হাতি! তোর মা খুব বেঁচে আছে। কে তোর মা জানিস? সিনেমার বিদ্যুৎলতা। দেখবি ছবি?

    ফস্ করে পকেট থেকে টেনে বার করে একটা পত্রিকার কাটিং। বিশেষ একটি ভঙ্গিমাময় মুহূর্তে বিদ্যুৎলতা!

    সুনন্দ! আগুনের মতো মুখে বলে ওঠে গৌতম, এ রকম বিচ্ছিরি বিচ্ছিরি ঠাট্টা করছ তুমি? তোমার বাবাকে বলে দেব?

    বাবা? হি হি! বাবা মা আর দিদিতে মিলেই তো বলাবলি করছিল। তোদের বাড়ির ঠিকানা দেখেই বুঝেছিল। রাজ্যিসুদ্ধ লোক জানে ওই বিদ্যুৎলতা তোর বাবা নিশীথ গঙ্গোপাধ্যায়ের বউ। শুধু তুই জানিস না।

    মিথ্যে কথা! পাজি মিথ্যুক! গৌতম হঠাৎ আতিথ্যের মর্যাদা বিস্মৃত হয়ে ঠেলে ফেলে দেয় বন্ধুকে। বলে ওঠে, চলে যা, চলে যা আমাদের বাড়ি থেকে!

    সুনন্দ অবশ্য এরপর আর কৌতুকের হাসি হাসে না। যে হাসি এতক্ষণ হাসছিল। বাড়িতে ওর কাছ থেকে গৌতমের ঠিকানা পেয়ে বেশ আলোড়ন উঠেছিল। এবং নিশ্চিত হয়ে ওর দিদি এই কাগজের কাটিংটা ভাইয়ের পকেটে গুঁজে দিয়ে বলেছিল, দেখিস তো বাড়িতে যদি কোনও ফটো থাকে তার সঙ্গে মিলিয়ে? আগের পক্ষ দ্বিতীয় পক্ষও এসবও তো থাকে! তোর বন্ধুর মা যদি সত্যি মরে গিয়ে থাকে, নিশ্চয় ফুলের মালা ঝোলানো ফটো থাকবে।

    স্বামীজীদের শিক্ষাদীক্ষা ব্যর্থ হয়। একটা বুনোর মতো গা ঝেড়ে উঠে তীব্র স্বরে বলে সুনন্দ, ইস আবার রাগ দেখ বাবুর! ওর মা সিনেমা করতে পারে, আর লোকে বললেই দোষ! তোর মা সিনেমা করে সবাই জানে, শুধু তুইই জানিস না! হাঁদা বোকা বুদ্ধ! তোর বাবা তোকে ঠকিয়ে বলে রেখেছে মা মরে গেছে। ইচ্ছে করে ম্যাড্রাসের মিশনে চালান করে দিয়েছে। বুঝলি?

    না, মিশনের শিক্ষার মান গৌতমও রাখে না। উন্মত্তের মতো বলে, তা তোকেই বা কেন তোর বাবা চালান করে দিয়েছে সেখানে? তোর মাও বুঝি সিনেমা করে?

    .

    বজ্রপাত হয় কানের উপর।

    ছেলের জন্যে সকাল সকাল ফিরছিলেন গাঙ্গুলী সাহেব, উঠছিলেন সিঁড়িতে। সহসা পাথর হয়ে যান!

    এ কী!

    এ কোন সর্বনাশের ভাষা!

    নিশীথ কি আবার ফিরে দাঁড়িয়ে ছুটে পালিয়ে যাবে? যেখানে গেলে ছেলের মুখোমুখি দাঁড়াতে হবে না আর?

    কিন্তু কে ওই ছেলেটা?

    যার সঙ্গে কথান্তরে অমন খেপে উঠেছে গৌতম? দেখা দরকার।

    উঠেই আসে।

    আস্তে একটু থেমে।

    বলতে চায় এটি কে?

    কিন্তু বলা হয় না। গৌতম ছুটে এসে আছড়ে পড়ে, বাবা, এই সুনন্দ, আমাদের বোর্ডিঙের। পরমপ্রেম মহারাজ ওর মামা। পাজিটা গাধাটা বাঁদরটা বলছে কী, তোর মা মরে গেছে না হাতি! তোর মা সিনেমা করে! বিদ্যুৎ না কী কে যেন তোর মা! ওই যে ছবি এনেছে।

    সুনন্দ অবশ্য ততক্ষণে স্থাণু।

    নিশীথ গম্ভীর গলায় বলে, কার সঙ্গে এসেছ তুমি?

    সুনন্দ চুপ।

    বল, কথার জবাব দাও, কার সঙ্গে এসেছ?

    বাবার সঙ্গে।

    কোথায় তিনি?

    নীচের তলায়।

    যাও, নেমে যাও। বাড়ি যাও তাঁর সঙ্গে। আর শোনো– তাঁকে এইটুকু বলে দাও গে, ছেলেকে ভদ্রভাবে মানুষ না করে উঠতে পারলে ভদ্রলোকের বাড়িতে আনতে নেই!

    .

    ছেলেকে ভদ্রভাবে মানুষ করা বিধি!

    নিশীথ সে বিধি পালন করেছে।

    হৃদয় নামক বস্তুটাকে পিষে ছেচে করেছে পালন।

    কিন্তু ফলশ্রুতি?

    হয়েছে তার ছেলে ভদ্র?

    ভদ্র হলে বাবাকে মারতে পারে দুহাতে বছর দশের ছেলে?

    অথচ তাই মেরেছে গৌতম!

    কেন? কেন? কেন তুমি?

    আর কোনও কথা নয়, আর কোনও অভিযোগের বাণী নয়, শুধু কেন? কেন তুমি–

    বলতে বলতে মুখ দিয়ে ফেনা কেটে গেছে। কারণ নিশীথ গাঙ্গুলী বলতে পারেনি, দূর, ওই পাজি ছেলেটার কথা আবার কথা নাকি?

    নিশীথ গাঙ্গুলী ওই ছেলেটার গালে ঠাশ করে একটা চড় বসিয়ে দিয়ে বলতে পারেনি, হতভাগা মিথ্যুক ছেলে! যা ইচ্ছে বললেই হল?

    নিশীথ গাঙ্গুলী তাকে তাড়িয়ে দিয়েছে, কিন্তু ছেলের প্রশ্নের সদুত্তর দিতে পারেনি।

    ক্ষীণভাবে বলেছিল দুএকবার, বিশ্বাস করো, তোমার মা মারা গেছেন। কিন্তু সে স্বর ধোপে টেকেনি।

    গৌতম বলেছিল, তা হলে ও বিদ্যুতার কথা বলল কেন? কেন বলল তোমার বউ? বানিয়ে বানিয়ে বলবে কেন?

    কেন?

    কেন?

    সেই কেনর ধাক্কায় প্রায় হিস্টিরিয়ার মতো হয়ে গেল ছেলেটার! বাতাস দিতে হল মাথায়। জল দিতে হল মুখে।

    তারপর প্রতিশ্রুতি দিতে হল, আচ্ছা পরে বলব তোমায় সব! অর্থাৎ মেনেই নিল অভিযোগ।

    গৌতম পরের জন্যে অপেক্ষা করতে পারেনি। নির্বেদ করেছে, আগে বলল ও আমার মা কিনা?

    নিশীথ বলেছিল, হ্যাঁ! বলতে বাধ্য হয়েছিল। না, মা নয় বলবার শক্তি খুঁজে পায়নি।

    তখন ডুকরে কেঁদে উঠেছিল ছেলেটা। চেঁচিয়ে কেঁদে উঠেছিল। বলেছিল, আমি চলে যাব–আমি মরে যাব।

    সে রাতে খায়নি, চুপ করেনি।

    কিন্তু তবু! তবু নিশীথ কি ধারণা করতে পেরেছিল ছেলেটা সত্যিই পালিয়ে যাবে? আর মাত্র দশ বছরের ওই চির অবোধ ছেলেটা একা চলে যাবে বম্বে?

    ধারণার অতীত।

    চিন্তার অতীত।

    তবু সেই ঘটনা ঘটে।

    দশ বছরের একটা ছেলে একা বোম্বাইয়ের স্টেশন প্ল্যাটফর্মে নামে। আর একে ওকে জিজ্ঞেস করে বেড়ায়, সিনেমা করা বিদ্যুতার ঠিকানা কী?

    বলা বাহুল্য, এতটুকু ছেলের এই ইচড়ে পাকামি দেখে ব্যঙ্গ করেছে অনেকেই, সদুপদেশ দিয়েছে কেউ কেউ, এবং শেষ পর্যন্ত একটি ভদ্রমহিলা চেপে ধরেছেন, কোথা থেকে এসেছ তুমি?

    কলকাতা থেকে।

    কার সঙ্গে?

    একলা!

    একলা? একলা এসেছ তুমি কলকাতা থেকে? টাকা পেলে কোথায়?

    বাবার ড্রয়ার থেকে!

    ওঃ ধুরন্ধর ছেলে! উঃ ভাবা যায় না, কী অবস্থাই হয়েছে দেশের! তা তুমি ওঁর ঠিকানা নিয়ে কী করবে? সিনেমা করবে?

    না।

    তবে?

    উনি আমার নিজের লোক!

    মহিলাটি এবার ছেলেটার জলভরা চোখ দেখে একটু অবাক হন। বলেন, তোমার নিজের লোক! কে হন?

    আমার-আমার–অবোধ গৌতম শেষ কথাটা উচ্চারণ করে, আমার মাসিমা!

    আশ্চর্য!

    কোথা থেকে বোধ আসে ওর, সত্য পরিচয়টা অবিশ্বাস্য! সত্য পরিচয়টা বলবার অযোগ্য!

    মাসিমা! ওঃমহিলাটি এবার সবজান্তার ভঙ্গিতে বলেন, বুঝেছি! তোমার মা পাঠিয়েছেন বোধ হয় টাকা চাইতে?

    মাথা নিচু করে থাকে ছেলেটা, উত্তর দেয় না।

    মহিলাটা হাসেন।

    আপন মনে বলেন, মানুষটা অপাঙক্তেয়, টাকাটা নয়। এই আমাদের সমাজ! এই বাচ্চাটাকে লেলিয়ে দিয়েছে–

    তারপর বলেন, আচ্ছা এসো আমার গাড়িতে! ওই দিকেই যাচ্ছি আমি।

    সারাক্ষণ গাড়িতে বহু জিজ্ঞাসাবাদ করেন। শেষ অবধি স্থির করেন, কে জানে হয়তো বা ছেলেটা পাগল-ছাগল! ওই এক খেয়াল ঢুকেছে মাথায়, বিদ্যুতা আমার মাসি। কথাবার্তা তো সব উলটোপালটা!

    বিদ্যুলতার দরজার কাছাকাছি নামিয়ে দেন।

    ওই প্রকাণ্ড বাড়িটা দেখছ? ওর পাঁচতলায় থাকে। ছেষট্টি নম্বর ফ্ল্যাট।

    চলে যান গাড়ি হাঁকিয়ে।

    আর পাগল-ছাগল ছেলেটা দিশেহারার মতো দাঁড়িয়ে থাকে সেই বিরাট প্রাসাদটার দিকে তাকিয়ে। ওর মধ্যে ঢুকবে সে? ওর ভিতর থেকে আবিষ্কার করবে ছেষট্টি নম্বর? আর সেখানে গিয়ে বলবে, কেন? কেন বাবা বলবে তুমি মরে গেছ? বলবে, আমি তোমার কাছেই থাকব।

    অসম্ভব!

    কলকাতা থেকে একা বম্বে চলে আসা সম্ভব করতে পেরেছে গৌতম। সম্ভব করতে পারল না বাড়ির দরজার মধ্যে ঢুকে পড়তে।

    পথে আছে সাহস।

    পথে আছে শক্তি।

    দরজা বড় ভয়ানক জিনিস।

    ভানস। ওকে ডিঙনো বড় কঠিন।

    ও তাই পথেই দাঁড়িয়ে থাকে, সেই প্রাসাদের চুড়োর দিকে তাকিয়ে।

    কিন্তু পথের মাঝখানে একটা অবান্তর দৃশ্য বেশিক্ষণ সহ্য করে না কেউ। সভ্য জায়গাতে তো নয়ই।

    পুলিশের হাতে পড়তে হয় ছেলেটাকে।

    কে না জানে এই বয়েসের ছেলেগুলোই হয় পাকা পকেটমার! আর লাঞ্ছনা করবার পক্ষে এর থেকে উপাদেয়ই বা আর কী আছে?

    ক্ষুৎপিপাসাকাতর হতভাগ্য ছেলেটা টের পেতে থাকে পৃথিবী কী? দুঃসাহস মানে কী? লাঞ্ছনা কী বস্তু?

    কিন্তু বিদ্যুৎলতার তো সে কথা জানবার কথা নয়।

    নিজের রাজকীয় ফ্ল্যাটে কয়েকটা মুহূর্ত বিশ্রামে অঙ্গ ঢেলে বসে ছিল বিদ্যুতা, বেজে উঠল ফোন।

    ফোন আর ফোন। সারাক্ষণ এই ঝনঝনানি। বিশ্রামের মুহূর্ত বলে কিছু নেই।

    আঃ। রাবিশ! কোন শয়তান আবার এখন জ্বালাতে বসল!

    অলস হাতে তুলে নিল রিসিভারটা, তারপরই সহসা চকিত হয়ে উঠল।…কী? কী বলছেন? বছর দশেকের ছেলে? আমার সঙ্গে সম্পর্কের দাবি করছে? কীরকম দেখতে? নাম বলেছে কিন্তু? বলেছে? কী? কী বললেন গৌতম গাঙ্গুলী? কলকাতা থেকে? আচ্ছা, একটু রাখুন। এক্ষুনি যাচ্ছি।

    এক্ষুনি যাচ্ছি!

    এখনি আসছেন থানায়!

    স্বয়ং বিদ্যুৎলতা

    কারও মুখ গোল হয়ে যায়, কারও লম্বা। ছেলেটাকে আর বেশি ঘাঁটানো ঠিক নয় বাবা! কে জানে সত্যিই ওনার বোনপো কিনা। হতেও পারে দূর সম্পর্কের কোনও বোনের

    ছেলেটার চোটপাট কথা এবং নিতান্ত জেদেই এই টেলিফোন করা। কৌতুকও ছিল একটু। ওনাদের নাগাল তো পাওয়া যায় না, যদি এই সুযোগে একটু মজাদার কথাবার্তার আদান প্রদান হয়ে যায়।

    কিন্তু উনি বলে বসলেন কিনা, এক্ষুনি যাচ্ছি।

    তা হলে আছে ব্যাপার।

    নাম শুনে তো চমকে উঠলেন।

    সাহায্যের প্রত্যাশায় এসেছে বোধহয় ছোঁড়া, ওপরওলাদের প্ররোচনায়।

    হবে, আত্মীয়ই হবে।

    নাও, এখন তটস্থ হয়ে থাকো।

    উনি আসবেন, সোজা কথা তো নয়!

    আসেন উনি। উদভ্রান্তের মতো।

    বলেন, কই? কোথায়?

    এই যে ম্যাডাম, এই যে! বলছে আপনি নাকি ওর মাসিমা

    ভুল বলছে। এবার শান্ত গলায় বলে বিদ্যুলতা, বানিয়ে বানিয়ে মিছে কথা বলছে। আমি ওর মা।

    আমি ওর মা!

    আরে ব্যস! এ আবার কী? কোনও নতুন নাটক নাকি? এ সব কি তার রিহার্সাল? নাটক ছাড়া আর কী হতে পারে?

    লাস্যময়ী তন্বী তরুণী বিদ্যুৎলতা, রূপসীশ্রেষ্ঠা আর উন্নাসিকশ্রেষ্ঠা বিদ্যুতা, অতি আধুনিক পোশাকের চরমতম নমুনা বিদ্যুৎলতা, সে কিনা এই ধুলো মাখা হাফপ্যান্ট আর শার্ট পরা বুড়ো ধাড়ি ছেলেটার মাথায় হাত রেখে সোজা দাঁড়িয়ে সহজ গলায় উচ্চারণ করে, আমি ওর মা!

    বলে, নিয়ে যাচ্ছি আমি একে। বলুন কোথায় কী লিখে দিয়ে যেতে হবে।

    জগতে এত অসম্ভব ঘটনাও ঘটে!

    যার জন্যে পুরো পাগলের ভূমিকা অভিনয় করে চলে এসেছে ছেলেটা, যার প্রাসাদের চুডোর দিকে নিষ্পলকে তাকিয়ে থেকেছে ঘণ্টার পর ঘণ্টা, ভুলে গেছে বাবার টাকা না বলে চেয়ে নিয়ে বাড়ি থেকে পালিয়ে এসেছে…অসম সাহসিকের চরমতম নমুনা দেখিয়ে হাওড়া লেখা বাসে চড়ে স্টেশনে এসে বম্বে যাবার টিকিট কিনে ট্রেনে চড়ে বসেছে, আর ঘন্টায় ঘন্টায় গাড়ির অন্য আরোহীদের জিজ্ঞেস করেছে বম্বে এল কিনা, এবং সেই ভয়ংকর অলৌকিক জায়গাটায় নেমে পড়ে বহু লাঞ্ছনা আর বহু প্রশ্নের হাতুড়ি খেয়ে বুঝেছে পৃথিবী জায়গাটা কী, সেই তিনি হাত ধরেছেন গৌতমের!

    বলছেন, এসো, উঠে এসো গাড়িতে।

    গৌতম কি কেঁদে উঠবে?

    হাত ছাড়িয়ে নিয়ে ছুটে পালিয়ে যাবে? মাথা ঝাঁকিয়ে বলবে, না না না?

    চেঁচিয়ে বলে উঠবে, না না, যাব না আমি। আমি বাবার কাছে চলে যাব। আমার বোর্ডিংই ভাল, আমার সেই জানা জগৎই ভাল। এই অজানা জগৎকে দেখে ভয় পাচ্ছি আমি।

    হয়তো বলত।

    যদি কোনও কথা বলবার ক্ষমতা থাকত। নেই। স্বরযন্ত্রে কে যেন তালা লাগিয়ে দিয়েছে গৌতমের। অতএব গাড়িতে উঠতে হচ্ছে ওঁর আকর্ষণে।

    উনি বলছেন, কে বললে আমি তোমার মাসিমা? আমি মা। তোমার মা!

    মা!

    মা!

    কিন্তু এই কি মা?

    বিদ্যুলতা ছাড়া আর কিছু মনে হচ্ছে না তো কই?

    বিদ্যুৎলতার গায়ে কীসের এই সৌরভ? উগ্র তীক্ষ্ণ।

    বিদ্যুতার গা ঘেঁষে বসে থেকেও কেন বহু যোজনের দূরত্ব? বিদ্যুলতা যখন ওকে জড়িয়ে ধরেছিল, তখন শ্বাসরোধকারী যন্ত্রণা হচ্ছিল কেন?

    বিদ্যুৎলতা প্রশ্নে প্রশ্নে জর্জরিত করতে থাকে, গৌতম জড়সড় হয়ে সংক্ষিপ্ত উত্তর দেয়।

    এই ছেলেই যে শুধু মাকে আবিষ্কার করবে বলে একা হাজার মাইল পথ পাড়ি দিয়ে চলে এসেছে, ভাবতে অবাক লাগছে।

    গৌতম, আমাকে তোর মনে ছিল?

    না।

    না, ছিল না! পষ্ট বললি মুখের উপর? উঃ বাপের মতো নিষ্ঠুর! তবে এলি কেন?

    দেখতে।

    কেন, দেখতেই বা আসবি কেন? মনে যদি ছিল না

    গৌতম অবশ্য চুপ করে থাকে।

    তোর বাবা তোকে বলেনি তোর মা মরে গেছে?

    হ্যাঁ।

    তবে? তবে কী জন্যে

    একটা বন্ধু বলল–মরে গেছে না হাতি! তোর মা সিনেমা করে, বম্বেয় আছে। নাম বিদ্যুৎলতা।

    খুব তাড়াতাড়ি এক নিশ্বাসে বলে ফেলে গৌতম কথাটা।

    বিদ্যুৎলতা নিশ্বাস ফেলে।

    নিশ্বাস ফেলে বলে, সেই মিশনেই চলে যাবি আবার, না আমার কাছে থাকবি?

    গৌতম মুখ তোলে এবার।

    বলে, মিশনেই থাকব।

    কেন? কেন রে, আমার কাছে থাকতে ইচ্ছে হচ্ছে না? এখানেও তো স্কুল আছে। ভর্তি করে দেব।

    না।

    কেন? আমায় দেখে ঘেন্না হচ্ছে? হতাশ গলায় বলে বিদ্যুলতা।

    গৌতম আস্তে বলে, ঘেন্না হবে কেন?

    হচ্ছে না? হচ্ছে না ঘেন্না? তবে থাকবি না কেন?

    তোমায় মা বলে মনে হচ্ছে না।

    অনেকক্ষণ স্তব্ধতার পর আস্তে বলে বিদ্যুলতা, আর যদি আমি ঠিক মার মতো হয়ে যাই? যদি সব সাজগোজ ফেলে শুধু একটা লাল পাড় শাড়ি পরে থাকি?

    যাঃ, সে তো আর করবে না তুমি?

    যদি করি? হিস্টিরিয়াগ্রস্ত ছেলের মা হিস্টিরিয়া রোগীর মতো বলে ওঠে, যদি তোর সঙ্গে পালিয়ে যাই এখান থেকে?

    গিয়ে? উজ্জ্বলমুখ ছেলেটা বলে, থাকবে আমাদের বাড়িতে?

    থাকব। তোদের বাড়িতে? তোর বাবা থাকতে দিলে তো?

    দেবে না মানে? ওটা তো তোমারও বাড়ি।

    কে বললে রে ওটা আমারও বাড়ি।

    জানি। জানি আমি। সুনন্দর দেওয়া জ্ঞানের কথা আর উল্লেখ করে না।

    অনেকক্ষণ চুপ করে থাকে।

    তারপর আস্তে বলে, কী করে আর থাকবে বলো? তুমি তো সিনেমা করবে!

    যদি আর না করি।

    গৌতম মুখ তুলে তাকায়। একটু অবিশ্বাসের হাসি হাসে। য্যাঃ! তোমার কত নাম! বইতে তোমার ছবি ছাপা হয়। ছবি দেখেই তো সুনন্দ

    হ্যাঁ, সুনন্দর কথা হয়ে গেছে ইতিপূর্বে।

    জানানো হয়ে গেছে ইতিবৃত্ত।

    বিদ্যুৎলতা ছেলের গায়ে তার রঙিন লম্বা নখওয়ালা হাতটা রাখে। ধীরে ধীরে নিশ্বাস ফেলে বলে, ছাই নাম, ছাই ছবি! তুই যদি আমায় তোদের বাড়িতে একটু জায়গা জোগাড় করে দিস, যদি মা বলে ডাকিস–

    ডাকব না কেন?

    গৌতম লজ্জা লজ্জা গলায় বলে, মা হও, মা ডাকতে দোষ কী?

    তবে ডাক।

    য্যাঃ, শুধু শুধু কি ডাকা যায়?

    যায় না, তবে থাক।

    না, মানে বলছি কী, কিছু বলতে হবে তো? আচ্ছা বলছি, মা একটু জল দাও।

    .

    কিন্তু বিদ্যুৎলতারও মা আছেন।

    তিনি এতক্ষণ পরে এ ঘরে এসে উঁকি মারেন। মনে হচ্ছে যেন ছোট ছেলের গলা। অতএব উঁকি দেওয়া যায়। ছোট ছেলে এল কাদের? সেই মালতীর ছেলেটা বুঝি? কিন্তু কথাগুলো যেন বাংলা? উঁকি মারেন।

    আস্তে পরদার পাশ থেকে বলেন, ঘরে যাব অতসী?

    এসো না, এসো।

    মহিলা সন্তর্পণে ঘরে ঢোকেন।

    মেয়ের একেবারে কোলের কাছে আড়ষ্ট হয়ে বসে থাকা ছেলেটাকে দেখে সন্দিগ্ধ গলায় বলেন, ছেলেটি কে অতসী?

    চিনতে পারলে না তো? আমার ছেলে! আমার গৌতম। ও একা একা মা খুঁজতে বেরিয়েছিল। এইবার খুঁজে পেয়েছে মাকে।

    .

    তারপর অনেক গল্পের শেষে, অনেক প্রশ্নোত্তরের পালা সাঙ্গ করে অনেক রাত্রে যখন খেয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে গৌতম, তখন আলো জ্বালিয়ে চিঠি লিখতে বসে অতসী।

    লেখে, ছেলেকে নিজের কাছে আটকে রাখতে চেয়েছিলে, কিন্তু পারনি! কারণ তোমার আটকে রাখবার পদ্ধতিতে ছিল গলদ। যা তোমার আগাগোড়া জীবনে। নিষ্ঠুর হয়ে কি আটকে রাখা যায়? শেকল পরিয়ে কি বেঁধে রাখা যায়?

    লোকালয় থেকে বিচ্ছিন্ন করে রেখে ছেলেকে বড় করে তুলতে চেয়েছিলে, এর থেকে অবাস্তব কল্পনা আর কী আছে? সে কল্পনার গলদ ধরা পড়ল দেখতেই পাচ্ছ।…তুমি ওর মাকে মৃতের খাতায় রেখেছিলে, তবু ও ওর মাকে খুঁজতে বেরিয়েছিল রূপকথার দুঃখিনী দুয়োরানির ছেলে যেমন খুঁজতে বেরোয় তার নির্বাসিতা মাকে। ওর মাকে ও খুঁজে পেয়েছে, এখন ওর শুধু ভাবনা সেই দুঃখিনী মাকে ঠাঁই দেবে কোথায়!

    অথচ ওর রাজামশাই বাবার নাকি মস্তবড় প্রাসাদ আছে!

    দুঃখিনী দুয়োরানি মায়ের হাত ধরে ও যদি সেই প্রাসাদের দরজায় গিয়ে দাঁড়ায়, খুলবে না সে দরজা? ঠাঁই হবে না ওর মায়ের? সেই প্রশ্নটাই রাখছি!

    বিদ্যুৎলতার অনেক নাম আর অনেক যশের অন্তরালেও অতসী নামের মেয়েটা হয়তো আজও বেঁচে আছে। যে এখনও অতৃপ্ত পিপাসায় স্বপ্ন দেখে একটি সুখে ভরা সংসারের! যে সংসারে সে গৃহিণী, সে স্ত্রী, সে মা! সেখানেও সে শিল্পের সাধনাই করবে, জীবন-শিল্পের!

    ⤶ ⤷
    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27 28 29 30 31
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleপ্রথম প্রতিশ্রুতি – আশাপূর্ণা দেবী
    Next Article রাতের পাখি – আশাপূর্ণা দেবী

    Related Articles

    হরিনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়

    ভয় সমগ্র – হরিনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়

    December 9, 2025
    হরিনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়

    কিশোর অ্যাডভেঞ্চার সমগ্র – হরিনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়

    December 9, 2025
    সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

    প্রকাশ্য দিবালোকে – সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

    November 18, 2025
    সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

    তারপর কী হল – সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

    November 17, 2025
    মাইকেল মধুসূদন দত্ত

    শর্ম্মিষ্ঠা নাটক – মাইকেল মধুসূদন দত্ত

    November 11, 2025
    সত্যজিৎ রায়

    মানপত্র সত্যজিৎ রায় | Maanpotro Satyajit Ray

    October 12, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Generic selectors
    Exact matches only
    Search in title
    Search in content
    Post Type Selectors
    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Our Picks

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }