Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    দ্য দা ভিঞ্চি কোড – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025

    এঞ্জেলস এন্ড ডেমনস – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • 🔖
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    Subscribe
    সাইন ইন
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    দামেস্কের কারাগারে – এনায়েতুল্লাহ্ আলতামাশ

    জহীর ইবনে মুসলিম এক পাতা গল্প406 Mins Read0

    ১. সাতানব্বই হিজরী

    দামেস্কের কারাগারে / মূল : এনায়েতুল্লাহ্ আলতামাশ / ভাষান্তর: জহীর ইবনে মুসলিম

    অনুবাদকের কথা

    আমাদের দেশে গল্প-উপন্যাসের পাঠক একেবারে কম নয়। গল্প উপন্যাসও বাজারে অনেক রয়েছে। তবে দুঃখের বিষয় হলেও সত্য যে, সেসব উপন্যাস-গল্পের অধিকাংশই আপত্তিজনক ও চরিত্র বিধ্বংসী। যেহেতু মার্জিত ও আদর্শ মণ্ডিত গল্প-উপন্যাস একেবারেই অপর্যাপ্ত তাই পাঠক সচরাচর যাচ্ছে তা-ই হাতে তুলে নিচ্ছে, এতে করে যুব সমাজের একটা বৃহৎ অংশ বিপদগামী হচ্ছে। এদিক থেকে মার্জিত ঐতিহাসিক গল্প-উপন্যাসের প্রয়োজনীয়তা একেবারে এড়িয়ে যাওয়া যায় না। এদিকে লক্ষ্য রেখেই আমাদের এ ক্ষুদ্র প্রয়াস।

    বর্তমানে ইসলামী ঐতিহাসিক উপন্যাস জগতে ‘এনায়েতুল্লাহ আল তামাশ’ এক আলোচিত নাম। তার পরিচয় নতুনভাবে পেশ করার দরকার আছে বলে আমরা মনে করি না। তিনি ইসলামী ইতিহাসকে গল্পোচ্ছলে অত্যন্ত সাবলীল ও প্রাঞ্জলভাবে হৃদয়াহগ্রী করে তুলতে চেষ্টা করেছেন। এতে তিনি পূর্ণ মাত্রায় সফল। বর্ণনার ক্ষেত্রে মূল : ইতিহাসকেও ধরে রাখতে যথেষ্ট সচেষ্ট হয়েছেন। এ নন্দিত লেখকের আলোচিত উপন্যাস ‘দামেস্ককে কয়েদ খানেমে’ নামক গ্রন্থ দামেস্কের কারাগারে অনুবাদের মাধ্যমে বাংলা ভাষাভাষী পাঠকের সামনে পেশ করতে পেরে আমরা সত্যিই আনন্দিত। মানুষ মাত্রই ভুল-ত্রুটি হওয়া স্বাভাবিক। দামেস্কের কারাগারের ক্ষেত্রেও হয়তো এর ব্যতিক্রম ঘটেনি। তাই ভুল-ত্রুটিগুলো ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখার জন্যে পাঠক মহলের প্রতি রইল আন্তরিক নিবেদন।

    আল-এছহাক প্রকাশনীর স্বত্বাধিকারী জনাব তারিক আজাদ চৌধুরী ভাই বইটি প্রকাশের পথ সুগম করে কৃতজ্ঞতাবেশে আবদ্ধ করেছেন। তাই তাকে মুবারকবাদ না জানালে অকৃতজ্ঞ হতে হয়। অনুবাদের সময় বন্ধুমহলের অনেকে এবং আমার কিছু স্নেহভাজন ছাত্র সাহস ও প্রেরণা, যুগিয়েছে, তাদের সকলকেই জানাই আন্তরিক মুবারকবাদ। লেখকের বাকী বইগুলোও আমরা অনুবাদের মাধ্যমে পাঠকের হাতে তুলে দেয়ার আশাবাদী। আল্লাহ আমাদেরকে তৌফিক দিন।

    –জহীর ইবনে মুসলিম
    ৫/১/২০০৩

    .

    দামেস্কের কারাগারে

    সাতানব্বই হিজরী। সাত শ পনের খৃষ্টাব্দ। মক্কা নগরীতে মানুষের ভিড় উপচে পড়ছে, কোথাও তিল ধারনের ঠাই নেই। শহর-বন্দর, হাট-বাজার সর্বত্র মানুষ আর মানুষ। এ উদ্বেলিত ভিড়ের একটা বৈশিষ্ট্য রয়েছে। তাদের সকলের পোষাক-পরিচ্ছদ এক। কাঁধ হতে টাখনু পর্যন্ত সাদা চাদরে আবৃত। এক স্কন্ধ, মাথা ও পদযুগল উন্মুক্ত। তাদের চিন্তা-ফিকির, লক্ষ্য-উদ্দেশ্য, অন্তর ও মনের মারকাজ এক, তাহলে খানায়ে কাবা।

    যেমনিভাবে তাদের পোশাক-আষাক এক, তেমনিভাবে তাদের চিন্তা-চেতনা, ধর্ম বিশ্বাসও এক। লা-ইলাহা ইল্লাল্ লাহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ্। তারা সবাই মুসলিম। তারা হারাম শরীফ আবাদকারী। তারা হাজী, হজ্জের ফরজ আদায় করতে সমবেত হয়েছে।

    মক্কা নগরীর অদূরে গড়ে উঠেছে, ভাবুর এক ঘন পল্লী। সে পল্লীতে রয়েছে। নারী-পুরুষ এমন কি শিশু-কিশোররাও।

    তাদের সকলের পরিচ্ছদ এক কিন্তু গায়ের রং ভিন্ন। কেউ ফর্সা, কেউ নিকষ কালো। কেউ গোরা আবার কেউ ধলা। তাদের মাঝে যেমন রয়েছে প্রভাব। প্রতিপত্তিশালী তেমনি রয়েছে দুর্বল-হীন। যেমনি রয়েছে সিপাহসালার তেমনি আছে মামুলী সৈনিক। আছে মুনিব, আছে গোলাম। এ ভেদাভেদ থাকার পরেও মনে, হচ্ছিল তারা সকলে এক অভিন্ন, একই রংগে রঞ্জিত। তাদের সকলের চলা-ফেরা, কথা-ঝর্তার ধরন এক।

    তারা কোন এক দেশের বাসিন্দা নয়। বিভিন্ন দেশ থেকে আগত। তাদের মাঝে রয়েছে আফ্রিকী, চীনী, হিন্দুস্তানী, ইরানী মোটকথা যেখানে ইসলামের জ্যোতি পৌঁছেছে, সেথা হতে মুসলিম উম্মাহ্ একত্রিত হয়েছে পবিত্র মক্কা নগরীতে।

    তারা একে অপরের মুখের ভাষা অনুধাবন করতে পারছিল না কিন্তু অন্তরের কথা ভাল করেই অনুভব করতেছিল। হাজার হাজার ক্রোশ দূরে বসবাসকারীদের হৃদয় মন ছিল একই সূতিকায় গ্রোথিত। কারো অন্তরে ছিলনা বিন্দুপরিমাণ বিভেদ। সকলের মাঝে ছিল সুনিবীড় সম্পর্ক। কেউ নিজেকে একাকী মনে করছিল না। ইহরামের সাদা কাপড় পরিহিত প্রতিটি ব্যক্তিই মনে করছিল যেন সে এখানেই জন্মেছে এবং জীবন তরীর সফর এ মঞ্জিলেই শেষ হবে।

    অগাধ ভক্তি ও শ্রদ্ধা সকলের মাঝে এক অপার্থিব অবস্থা সৃষ্টি করেছিল। পূণ্যভূমি মক্কা নগরীতে সৃষ্টি হয়েছিল অবিরাম গুঞ্জন। সবার মুখে অনুরিত হচ্ছিল ‘তালবিয়া”,

    লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক, লা-শারীকালাকা লাব্বাইক, ইন্নাল হামদা ওয়ান্ নি’মাতা লাকাওয়াল মুলক, লা-শারীকালাক। অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে বাদশাহ আমীর, ধনী-গরীব সকলের শির হচ্ছিল নত। মুখের অনুরিত ধ্বনিতে অন্তরের অবস্থা পরিবর্তন হচ্ছিল। বংশ গৌরব ও শরীরের রং-এর পার্থক্য না করে সকলে হচ্ছিল আল্লাহর রঙ্গে রঞ্জিত।

    হজ্জের এখনও বেশ কিছুদিন বাকী। দূর-দূরান্ত থেকে এখনো কাফেলা আসছে। তাবুর সংখ্যা বাড়ছে। উট ও দুম্বার আওয়াজ ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে।

    এ ভিড়ের মাঝে কিছু লোক এখানে-সেখানে হাত পেতে বসেআছে। কারো কারো সামনে রয়েছে কাপড় বিছান, আবার অনেকের হাতে রয়েছে ঝুলি। এরা ভিখারী। তাদের কিছু সংখ্যক শারীরিকভাবে প্রতিবন্ধি, তবে বেশীর ভাগই মরুভূমিতে বসবাসকারী গ্রম্য। হজ্জের মৌসুমে তারা মক্কায় এসে ভিক্ষা করে বেশ টাকা-পয়সা উপার্জন করে নিয়ে যায়।

    হাজীরা তাদেরকে দান করেন। তাদের মাঝে কে ভিক্ষার উপযুক্ত আর কে উপযুক্ত না সেদিকে তারা লক্ষ্য করেন না। তারাতো আল্লাহর রাস্তায় দান করেন। এ ভিখারীদেরকে দান করা হজ্জের অবশ্যপালনীয় কাজের একটা অংশ হিসেবে তারা জ্ঞান করেন।

    ঐসব ভিখারীদের মাঝে আরো একজন ভিখারী এসে শামিল হয়েছিল যা কোন হাজী লক্ষ্য করেননি। লক্ষ্য করারই বা কি প্রয়োজন, অন্যান্য ভিক্ষুকদের মত সেও একজন ভিক্ষুক। এ নতুন ভিক্ষুকের মাঝে বিশেষ কোন বৈশিষ্ট্য নেই। জীর্ণ-শীর্ণ বস্ত্র, হাতে-পায়ে ময়লা, দাড়িতে জমে রয়েছে ধূলাবালু, তার মাঝে যদি বিশেষ কোন বৈশিষ্ট্য থেকে থাকে তাহলে তা হলো সে অতিবৃদ্ধ ও ভীষণ দূর্বল, বেশীক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতে সক্ষম নয়।

    তার মাঝে আরেকটা বিশেষ বৈশিষ্ট্য ছিল; যদ্বরুন মানুষ গভীরভাবে তাকে লক্ষ্য করছিল- তাহলো তার পায়ে শিকল, বুঝা যাচ্ছিল সে কয়েদী, বিশেষ অনুগ্রহ করে তাকে ভিক্ষার অনুমতি দেয়া হয়েছে।

    তুমি কি কয়েদী? প্রথম দিনই একহাজী তাকে জিজ্ঞেস করল।

    “হ্যাঁ, সে মাথা নেড়ে জবাব দিয়েছিল। তার চোখ দুটো ছিল-অশ্রুসজল।

    “চুরি করেছ?”

    “যদি চুরি করতাম তাহলে হাত কাটা থাকত। সে তার কম্পমান হাত দুটো সামনে বাড়িয়ে জবাব দিল।

    “কোন মহিলার সাথে জিনায় লিপ্ত হয়েছিলে?”

    “এমন হলে তো আমি জীবিতই থাকতাম না, আমাকে প্রস্তারাঘাতে হত্যা করা হত।” সে কাঁপা কাঁপা গলায় জবাব দিল।

    “তাহলে তুমি কি অপরাধ করেছ?”

    “ভাগ্যের নির্মম পরিহাস” বৃদ্ধ ভিক্ষুক উত্তর দিল।

    “অপরাধীদের ভাগ্য তাড়াতাড়ি বিপর্যয় ডেকে আনে, বুঝলে বুড়া!” পাশে দাঁড়ান অন্য আরেক হাজী বলল,

    বুড়ো ভিখারীর চেহারায় বেদনার ছাপ ফুটে উঠল। তার আশে-পাশে দাঁড়ান লোকদেরকে অসহায় দৃষ্টিতে লক্ষ্য করতে লাগল।

    অন্য আরেক হাজী বলল, “অপরাধী তার অপরাধের কথা স্বীকার করে না। জবাবে বুড়ো ভিক্ষুক বলল, “খলিফা ওয়ালীদ ইবনে আব্দুল মালেক ইন্তেকাল করেছেন। আর তার জায়গায় তার ভাই সুলায়মান ইবনে আব্দুল মালেক মসনদে বসেছেন। দামেস্কের বন্দী শালায় গিয়ে দেখ, আমার মত কয়েকজন বন্দী, নিরাপরাধী হয়েও অপরাধের শাস্তি ভোগ করছে।

    এক হাজী জিজ্ঞেস করলো, তুমি কে? তোমার নাম কি? তুমি কোন গোত্রের

    প্রতি উত্তরে বুড়ো ভিখারী বলল, “এক সময় আমার নাম ছিল। এখনই নেই। নাম তো কেবল আল্লাহরই থাকবে, সে আকাশের দিকে ইশারা করে বলল, কেবলমাত্র আল্লাহর নামই বাকী থাকবে, কিছু দিলে তা আল্লাহকে দেবে। আল্লাহ তোমাদের হজ্জ কবুল করুন,আমি আমার অপরাধের কথা বলতে পারব না, অপরাধের কথা বলাটাও আমার অপরাধ হবে, তিনি যাকে ইচ্ছে সম্মান দান করেন, যাকে ইচ্ছে অপমানিত করেন।”

    হাজীরা তাকে কিছু পয়সা দিয়ে চলে গেল। বুড়ো ভিখারী তার পায়ের শিকল কাপড় দ্বারা ঢেকে দিল। এ শিকলের কারণেই নানা প্রশ্নের সৃষ্টি হচ্ছে। তার জবাব তার কাছেই আছে, কিন্তু জবাব দেয়ার সাহস নেই। সে খলীফা সুলায়মান ইবনে আব্দুল মালেকের সাথে দামেস্ক থেকে এসেছে। মক্কাতে ভিক্ষা করানোর জন্যে তাকে বাদশাহর কাফেলার সাথে আনা হয়েছে। এটা তার শাস্তির একটি অংশ। সে সামনে হাত বাড়িয়ে চুপচাপ বসে থাকত। হাজীরা তাকে বৃদ্ধ মনে করে কিছু পয়সা-কড়ি বেশি দিত। কিন্তু সে তাতে খুশী হত না। এশার নামাজের পর হাজীরা যখন নিজ নিজ তাবুতে চলে যেত তখন সে যৎসামান্য পয়সা দিয়ে কিছু কিনে খেয়ে সারা দিনের ভিক্ষার পয়সা গণনা করতে বসত। গণনা শেষে দুঃখ-কষ্টে তার অন্তর ব্যথিত হয়ে উঠত। দু’লক্ষ্য দিনার পূর্ণ করা তার জন্যে বড় প্রয়োজন। হজ্জের এ স্বল্প সময়ে এত পরিমাণ টাকা জমা করা তার পক্ষে সম্ভব না।

    সে বুঝতে পারল, যেহেতু সে চুপচাপ বসে থাকে তাই পয়সা কম পায়। সে কথা বলা শুরু করল, কিন্তু অন্য ভিক্ষুকদের মত হৃদয় বিদারক সুরে চিৎকার করত না। আবার ছোট ছেলে-মেয়ের অনাহারের দোহায় দিয়ে ক্রন্দনও করতো না। সে শুধু একটা কথাই বলতো, “তিনি যাকে ইচ্ছে ইজ্জত দান করেন আর যাকে ইচ্ছে বেইজ্জতি করেন।

    ***

    সে ভিক্ষা চাচ্ছিল, এক ব্যক্তি পিছন দিক থেকে এসে পা দিয়ে গুতো মারল, ভিখারী পিছন ফিরে দেখলো,

    “পালাবার চিন্তে-ভাবনা করছ না তো বুড়ো?” গুতো দানকারী জিজ্ঞেস করল।

    বুড়ো ভিখারী বললো, স্পেনের যুদ্ধের ময়দান থেকে কেউ পলায়ন করেছেন এমন কথা শুনেছ কি? আমি যদি পলায়নকারী হতাম তাহলে তো…।

    “এখনো তোমার মাথা থেকে স্পেনের কথা বের হয়নি” আগত ব্যক্তি তাকে আরো একটা গুতো মেরে বলল।

    বৃদ্ধ ভিক্ষুক বলল, তোমার খলীফাকে বলে দিও, তার রাজত্ব তাড়াতাড়ি শেষ হয়ে যাবে, মুহাম্মদ বিন কাসেমের হত্যাকারীকে আমার এ পয়গাম পৌঁছে দেবে। আর তোমার এ দুগুতোর জবাব কিয়ামতের দিন দিব।

    গুতোদানকারী ভিক্ষুককে গভীরভাবে কড়া দৃষ্টিতে লক্ষ্য করে, তিরস্কার করে চলে গেল।

    একদিন দক্ষিণ আফ্রিকার দু’জন হাজী চলতে চলতে ভিখারীর কাছে আসলে ভিখারী তার নির্ধারিত শব্দে আওয়াজ করলে এক আফ্রিকী বলল, এ কোন জ্ঞানী ভিখারী বলে মনে হচ্ছে। অন্য জন বলল,

    “হ্যাঁ, তাইতো মনে হচ্ছে, অন্য ভিখারীদের মত সে নিজের অভাবের কথা কেঁদে কেটে প্রকাশ করছে না।”

    দু’জন আফ্রিকী থলী হতে পয়সা বের করছিল। ভিখারী মাটিতে বসে উপরের দিকে চেয়ে তাদেরকে দেখছিল। এক আফ্রিকী তাকে পয়সা দিতে গিয়ে থমকে গেল, সে ভিখারীর সামনে বসে চিবুকের নিচে হাত দিয়ে চেহারা দেখে, ভিখারীকে জিজ্ঞেস করল, “তোমার নাম কি?” ভিখারী বলল, “আমার কোন নাম নেই।” আল্লাহ তায়ালার এ ফরমান “তিনি যাকে ইচ্ছে সম্মান দান করেন আৰু যাকে ইচ্ছে লাঞ্ছিত করেন, এর বাস্তম নমুনা আমি।”

    আফ্রিকী বলল, “খোদার কসম! তুমি মূসা… মূসা ইবনে নুসাইর!”

    আমীরে আফ্রিকা স্পেন বিজেতা? অপর আফ্রিকী আশ্চর্য হয়ে জিজ্ঞেস করল।

    বুড়ো ভিখারীর চোখ দিয়ে দরদর করে অশ্রু গড়িয়ে পড়ল।

    এক আফ্রিকী জিজ্ঞেস করল, “কোন্ অপরাধের শাস্তি তুমি ভোগ করছ?”

    বৃদ্ধ ভিখারী আকাশের দিকে ইশারা করে বলল, কোন অপরাধেরই নয়।

    অন্য আফ্রিকী বলল, “আমরা শুনেছি তুমি খলীফার রোষানলে পড়েছ, কিন্তু আমরা এটা তো কখনো কল্পনাও করিনি যে তুমি ভিক্ষুক হয়েছ।”

    “ভিক্ষুক বানানো হয়েছে, মুসা ইবনে নুসাইর বললেন, পায়ের ওপর হতে। কাপড় সরিয়ে আরো বললেন, আমি বাদশাহর কয়েদী, দামেস্কের ঐ কয়েদ খানায় বন্দি হয়েছি যেখানে এ বাদশাহ্ সিন্ধু বিজেতা মুহাম্মদ বিন কাসেমকে হাজ্জাজ বিন ইউসুফের দুশমনদের হাতে নানা ধরনের শাস্তি দিয়ে হত্যা করেছে। বাদশাহ হজ্জ্ব করতে এসেছে আর আমার প্রতি এ হুকুম জারি করে এখানে এনেছে যে, আমি ভিক্ষা করে দু’লাখ দেরহাম তাকে পরিশোধ করব তানাহলে এভাবে পায়ে শিকল পরিহিত অবস্থায় সারা জীবন ভিক্ষা করব। এক আফ্রিকী আশ্চর্য হয়ে বলল, “দু’লাখ দেরহাম। এটা কি স্পেন বিজয়ের জরিমানা?”

    এ প্রশ্নের জবাব বেশ কিছুটা লম্বা ছিল। এত বেশী কথা বলার শক্তি হয়তো মুসার ছিল না বা তিনি জবাব দিতে চাচ্ছিলেন না। তাই তিনি প্রশ্নের জবাবে প্রশ্নকারীর দিকে একবার মাথা উঁচু করে তাকালেন তারপর মাথা এমনভাবে নিচু করে ফেললেন যেন তন্দ্রা এসেছে। তার বয়স আশির দোর গোড়ে পৌঁছেছিল। জীবনের কম-বেশী ষাট বছর তিনি যুদ্ধের ময়দানে যুদ্ধ করে, সফর করে ও তাবুতে অতিবাহিত করেছেন। তিনি কয়েকটা যুদ্ধে গুরুতর আহত হয়েছিলেন। তার শরীরে এমন কোন অংশ ছিল না যেখানে ক্ষত চিহ্ন ছিল না।

    তার ক্ষত-বিক্ষত অস্তিত্ব ও ব্যক্তিত্ব এক জীবন্ত উজ্জ্বল ইতিহাস, ইসলামী মুজাহিদ বাহিনীর ইতিবৃত্ত। তিনি একজন বিজ্ঞ আলেম ও পণ্ডিত ছিলেন। বুদ্ধিমত্তার ক্ষেত্রে তার অসাধারণ খ্যাতি ছিল।

    যে দুজন আফ্রিকী তার সম্মুখে দাঁড়িয়ে ছিল, তারা দু’জনই দক্ষিণ আফ্রিকার অধিবাসী বর্বর ছিল এবং দুজনই ছিল নিজ নিজ গোত্রের সর্দার। বর্বর দক্ষিণ আফ্রিকায় দাঙ্গাবাজ ও হিংস্র একটা জাতি ছিল। বর্তমানে জুলুম ও নির্যাতনের ব্যাপকতা ও কঠোরতা বুঝানোর জন্যে যে বর্বরতা শব্দব্যবহার করা হয় তা ঐ বর্বর জাতির থেকেই উদ্ভূত ও প্রচলিত।

    বর্বররা মারামারি, হানাহানি, রাহাজানী, হত্যা, লুণ্ঠনের জন্যে প্রসিদ্ধ ছিল। কিন্তু যুদ্ধ বিদ্যায় তারা পুরোপুরি পারদর্শী ছিল না। তাদের বীরত্ব, হত্যাযজ্ঞের দরুন তাদের শক্তিশালী প্রতিপক্ষও ভীতু হয়ে পড়ত। তারা বেশ কয়েকবার পরাজিত হয়েছে কিন্তু কোন বিজেতাই তাদের ওপর বেশি দিন প্রভাব খাটাতে পারেনি। পরিশেষে আররের মুসলমানরা তাদের প্রতি মনোনিবেশ করে। মুজাহিদ বাহিনীর সিপাহ্ সালার উকবা ইবনে নাফে ফাহুরী গুরুতর রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পরে বর্বরদের উপর বিজয় অর্জন করেন।

    বর্বররা বেশ কিছু কাল বিদ্রোহ করেছিল, কিন্তু আরবের সিপাহসালাররা রন শক্তিতে সে বিদ্রোহের আগুন না নিভিয়ে বরং ইসলামী নিয়ম-কানুন ও নীতির ভিত্তিতে চিরতরে খুতুম করেন। বর্বরদের একটা ধর্ম ছিল কিন্তু তাদের কৃষ্টি কালচারের কোন ভিত্তি ছিল না। বিজয়ী মুসলমানরা যখন তাদের সম্মুখে ইসলামের মর্মবাণী তুলে ধরেন তখন তারা অতিদ্রুত ইসলাম গ্রহণ করেছিল। মুসলমানরা তাদেরকে সৈন্যবাহিনী ও ব্যবস্থাপনার বড় বড় পদে অধিষ্ঠিত করেছিল। তাদের দ্বারা পুরোপুরি যুদ্ধ করান হয়েছিল। এভাবে তাদের মাঝে শৃংখলা ফিরে আসে আর বর্বররা ইসলামের এক বড় যুদ্ধ শক্তিতে পরিণত হয়।

    ***

    তখন মুসা ইবনে নুসাইর আফ্রিকার আমীর ছিলেন। তিনি তার দূরদর্শিতা বলে বর্বরদের বিদ্রোহের সর্বশেষ আগুনকেও নিভিয়ে দিয়ে ছিলেন। যে মুসা যুদ্ধের ময়দানে চরম কঠোর ও গোস্বায় অগ্নিশর্মা হয়ে পড়তেন তিনি বিদ্রোহী বর্বরদের জন্যে রেশমের চেয়েও বেশী নরম আর মধুর চেয়ে বেশী মিষ্টি হয়ে ছিলেন। তার এ সুন্দর কর্ম পন্থা বর্বরদেরকে বিশেষ করে তাদের সর্দারদেরকে ইসলামের পাগল ও মন জয়ী মুজাহিদ বানিয়ে দিয়েছিল।

    ***

    যে দু’জন বর্বর সর্দার মক্কাতে মুসা ইবনে নুসাইয়ের সামনে বসেছিল তারা উভয়ই তার হাতে গড়া এবং তার থেকে প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত। তাদের একজন ছিলেন ইউসুফ ইবনে হারেছ অপর জন ছিলেন খিজির ইবনে গিয়াস। ইসলাম গ্রহণ করার পর আরবরা তাদের এ নাম রেখেছিল। মুসা আফ্রিকার আমীর থাকা অবস্থায় তার প্রতি তাদের যে সম্মান ছিল তাকে ভিখারী অবস্থায় দেখেও তারা সে সম্মান প্রদর্শন করছিলেন।

    ইউসুফ ইবনে হারেছ বললেন, আমীরে আফ্রিকা আপনি আমাদেরকে বলুন, আমরা আপনার জন্যে কি করতে পারি?

    মুসা বললেন, তোমাদের কিছুই করার নেই, আল্লাহ হয়তো আমাকে কোন গুনাহের শাস্তি দিচ্ছেন।

    খিজির ইবনে গিয়াস বললেন, কিছুতো আপনি বলেন, আমরা তার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করব।

    ইউসুফ ইবনে হারেছ মুসার কানেকানে বললেন, আমরা সুলায়মান ইবনে আব্দুল মালেককে হত্যা করতে পারি। সে হজ্জ পালন করতে এসেছে আর লাশ হয়ে ফিরে যাবে দামেস্কে।

    তারপরে কি হবে? মুসা জিজ্ঞেস করলেন,

    ‘নতুন খলীফা আপনাকে মাফ করে দেবেন’ ইউসুফ বললেন, আমরা শুনেছি আপনি সুলায়মান ইবনে আব্দুল মালেকের ব্যক্তিগত ক্রোধ ও হিংসার পাত্রে পরিণত হয়েছেন।

    মুসা বললেন, আমি যদি তাকে হত্যা করাই তাহলে আমিও আল্লাহর দরবারে ব্যক্তিগত আক্রোশের অপরাধে অপরাধী হব। আমি নিজেও তার খিলাফতের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করাতে পারতাম কিন্তু বন্ধুরা! আমার কাছে আমার নিজের জীবনের চেয়ে ইসলামের মান-মর্যাদা অনেক বেশি। আমি এবং আমার পূর্বের আমীররা তোমাদের গোত্রের বিদ্রোহকে কেন খতম করেছিলেন? তোমাদেরকে নিজেদের গোলাম বানানোর জন্যে নয় বরং মুসলমানদের মাঝে একতা সৃষ্টি করা এবং কুফরের বিরুদ্ধে ইসলামকে একক শক্তি হিসেবে আত্ম প্রকাশ করানোর জন্যে। আমি আর কতদিনই বা জীবিত থাকব? আর কয়েকদিন সূর্য উদিত হতে দেখব। সুলায়মানইবা কত দিন জীবিত থাকবে? তাকেও তো মরতে হবে। ইসলামই কেবল জীবিত থাকবে। একবার যদি খিলাফতের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ হয় তাহলে এ বিদ্রোহের আগুন প্রত্যেকটি মুসলিম রাজ্যে ছড়িয়ে পড়বে। আমি নিজেকে নয় ইসলামকে বাঁচাতে চাই।

    যে সময় বর্বর ইউসুফ ইবনে হারেছ এবং খিজির ইবনে গিয়াস মুসা ইবনে নুসাইরের সাথে খলীফা সুলায়মান ইবনে আব্দুল মালেককে হত্যা এবং তার খিলাফতের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের কথা আলোচনা করছিলেন, সে সময় একজন হাজী এসে কাছে দাঁড়িয়ে তাদের কথা-বার্তা শুনছিল। ইউসুফ তার দিকে তাকিয়ে বললেন, “তুমি কি এ দুর্বল ভিক্ষুকের তামাশা দেখছ? যদি কিছু দিতে চাও তাহলে দিয়ে চলে যাও।

    সে ব্যক্তি বলল, ভিখারী ও তোমাদের কথা-বার্তা শুনছি ভাই! এর দুঃখে আমার অন্তর জ্বলে যাচ্ছে। আল্লাহর কসম! এ মহৎ ব্যক্তি যদি আমাকে অনুমতি দেন তাহলে আমি আমার জীবন বাজী রেখে খলীফাকে হত্যা করব… এ মহৎ, ব্যক্তিকে যেই চিনবে সেই তার ব্যাপারে একথা বলবে যা আমরা পরস্পরে আলোচনা করলাম।

    খিজির বললেন, তুমি কে? চাল-চলনে, কথা-বার্তায় তো মনে হচ্ছে শামী। সে ব্যক্তি বলল, তুমি ঠিকই বলেছ ভাই, ঠিকই বলেছ, আমি শামী।

    সে থলী হতে দু’টো স্বর্ণ মুদ্রা বের করে মুসার কোলের উপর ফেলে দিয়ে বলল, আমি অচিরেই তোমার সাথে সাক্ষাৎ করব এবং সম্ভব কোন ভাল খবরই নিয়ে আসব।

    সে চলে গেল।

    ***

    খিজির মুসাকে বললেন, দেখলেন ইবনে নুসাইর? যে আপনাকে চিনে সেই আপনার মুক্তির জন্যে নিজের জীবন উৎসর্গ করতেও প্রস্তুত।

    মুসা বললেন, কিন্তু আমি নিজের জীবনের জন্যে অন্য কারো জীবনকে বিপদের সম্মুখীন করতে চাইনা। আমি মুক্তি কামনা একমাত্র আল্লাহর কাছেই করি।

    ইউসুফ বললেন, আপনার দু’লাখ জরিমানা আমরা ফিরে গিয়ে আদায় করে দেব। এখন তো আমরা কেবল রাস্তার খরচ নিয়ে এসেছি।…

    খিজির বললেন, আমার গোত্রের লোকেরা আপনার জন্যে দান করে দেরহাম দিনারের স্তূপ বানিয়ে দেবে।

    তারা দু’জন মুসার সামনে থেকে উঠার কোন চিন্তেই করছিলেন না। মুসার প্রতি তাদের এ পরিমাণ ভক্তি শ্রদ্ধা যে, তারা তাকে এখান থেকে উঠিয়ে নিয়ে যেতে চাচ্ছে। মুসা তাদেরকে বললেন, তোমরা চলে যাও, আমি খলীফার বন্দি, সে আমাকে এখানে বসিয়ে আমার কথা ভুলে যায়নি। তার সৈন্য বাহিনীর মাধ্যমে আমার প্রতি লক্ষ্য রাখছে। সে জানে আমি যাদের আমীর ছিলাম তারা আমার মান মর্যাদার কথা ভুলে যায়নি, ফলে আমাকে এ লাঞ্ছনা-গুঞ্জনার মাঝে দেখে কেউ প্রতিশোধ নেয়ার চিন্তা করতে পারে।

    তারা দু’জন সেখান থেকে কেবলি উঠতে যাচ্ছিল এরি মাঝে হঠাৎ করে চারজন ব্যক্তি খোলা তলোয়ার হাতে তাদের দুজনের চারপাশে দাঁড়িয়ে গেল। তাদের মাঝ থেকে একজন ইউসুফ-খিজিরকে লক্ষ্য করে বলল, তোমাদের দু’জনকে খলীফা তলব করেছেন।

    খলীফা আমাদেরকে কি উদ্দেশ্যে ডেকেছেন? ইউসুফ জিজ্ঞেস করলেন, সে ব্যক্তি বলল, এর জবাব কেবল খলীফা দিতে পারবেন, আমরা তো হুকুমের দাস, তোমরা তাড়াতাড়ি চল।

    খিজির বললেন, “যদি আমরা না যাই?”

    সে ব্যক্তি বলল, তাহলে তোমাদেরকে এখান থেকে টেনে-হেঁছড়ে নেয়া হবে এ ব্যাপারেও খলীফার নির্দেশ রয়েছে। তোমাদেরকে ঘোড়ার পিছে বেঁধে নিয়ে যাওয়ার পূর্বেই তোমরা দ্রুত রওনা হও।

    মুসা বললেন, বন্ধুরা আমার! তোমরা খলীফার হুকুম অমান্য করোনা, তাদের সাথে রওয়ানা হয়ে যাও, লাঞ্ছনার হাত থেকে বাঁচ, আল্লাহ তোমাদের হিফাজতকারী।

    আগত চারজন দু’জন বর্বরকে নিয়ে চলে গেল। মুসা ইবনে নুসাইরের নয়ন যুগল অশ্রুতে ভরে উঠল।

    ***

    হাজীদের তাবুর অদূরে আরেকটি তাবুর বসতি স্থাপিত হয়েছিল। এ তাবুগুলোর মাঝে একটা তাবু বেশ বড় ছিল। এটা নামে ছিল তাবু, মূলত: ছিল রঙিন ঝালর বিশিষ্ট শামিয়ানার সুসজ্জিত কামরা। তার মাঝে রেশমী পর্দা ঝুলছিল। একটা বড় পালং তার উপর রেশমের মশারী ঝুলান ছিল। নিচে অত্যন্ত দামী গালিচা বিছান। পালং এর অদূরেই সোফার মত একটা চেয়ার রাখা ছিল। চেয়ারের সামনে ছোট একটা খাটে মখমলের গিলাফে ঢাকা গদি বিছান। চেয়ারে উপবেসনকারী ঐ গতিদে পা রাখেন।

    ঐ নরম আরাম চেয়ারে আরবী পোশাক পরিহিত এক ব্যক্তি বসে ছিল। তার পোশাক এমন ছিল, যে কেউ দূর থেকে দেখেই বলতে পারত সে কোন দেশের বাদশাহ। এক ব্যক্তি কপালে হাত রেখে মাথানত করে তাকে সম্মান জানিয়ে বলল, খলীফাতুল মুসলিমীন! দু’জনকেই নিয়ে এসেছি। খলীফা জিজ্ঞেস করলেন, তাদের কাছে কি অস্ত্র আছে?

    সে ব্যক্তি জবাব দিল না, খলীফাতুল মুসলিমীন! তদের কাছে কোন অস্ত্র নেই। তারা ইহরাম বাঁধা অবস্থায় আছে, তাদের ব্যাপারে খোঁজ-খবর নিয়েছি।

    খলীফাতুল মুসলিমীন সুলায়মান বিন আব্দুল মালেক শাহী ভঙ্গিতে হালকা মাথা নাড়লেন, তার সম্মুখে দাঁড়ান ব্যক্তি চলে গেল।

    বর্বর ইউসুফ ইবনে হারেছ ও খিজির ইবনে গিয়াস ভিতরে প্রবেশ করলেন, আসলামু আলাইকুম আমীরুল মু’মিনীন! দু’জন এক সাথে বলে উঠলেন। খলীফা বললেন, বর্বরদের ব্যাপারে যা শুনেছি তা দেখা যায় ভুল শুনেনি।

    খিজির জিজ্ঞেস করলেন, খলীফা বর্বরদের ব্যাপারে কি শুনেছেন?

    খলীফা বললেন, তারা সভ্যতার ব্যাপারে একেবারে অজ্ঞ, জংলী। তোমাদের চেয়ে আমাদের গ্রাম্যরা যারা সভ্যতা-সংস্কৃতি কিছু বুঝে না তারাও অনেক ভাল।

    ইউসুফ-খিজিরের চেহারায় পেরেশানির ছাপ ফুটে উঠছিল। তারা একে অপরের দিকে তাকাচ্ছিলেন।

    খলীফা শাহী প্রতাপে বললেন, একে অপরের দিকে কি দেখছ? আমার দিকে লক্ষ্য কর। তোমরা একেবারে নিষ্পাপ, তোমাদেরকে খলীফার দরবারের আদব শিক্ষা দেয়া হয়নি। তোমাদেরকে বলা হয়নি যে খলীফার সামনে ঝুঁকে সালাম করতে হয়?

    ইউসুফ বললেন, আমীরুল মু’মিনীন! আমরা তো কেবল সে দরবারে ফুঁকতে চাই, এত দূর হতে যার দরবারে হাজিরা দেয়ার জন্যে এসেছি। আল্লাহর দরবারে আমরা শুধু কেবল ঝুঁকেই পড়ি না বরং সেজদাও করি। এ আদব ইসলাম আমাদেরকে শিক্ষা দিয়েছে।

    এখন তোমরা খলীফাতুল মুসলিমীনের দরবারে আছে। খলীফা ক্রোধান্বিত স্বরে বললেন, “এখানেও নত হওয়া জরুরী।”

    ইউসুফ বললেন, খলীফাতুল মুসলিমীন! ইসলামের নিয়মনীতি আমাদের ভাল লেগেছিল তাই আমরা গ্রহণ করেছি। ইসলামের এটাও একটা বিধান- মানুষ মানুষের সামনে মাথা নত করে না, ইসলাম কেবল আল্লাহ্ তা’য়ালার সামনে মাথা নত করার নির্দেশ প্রদান করে। আপনি যদি আমাদেরকে আপনার সামনে মাথা নত করার নির্দেশ দেন তাহলে আমরা আমাদের ধর্মে ফিরে যাই।

    “আমি ইসলামেরই খলীফা” সুলায়মান বললেন, ইসলামের কি বিধি-বিধান তা আমাকে বলতে হবে না, বন-বাদাড়ে বসবাসকারি, সভ্যতা-সংস্কৃতি সম্পর্কে অজ্ঞ বর্বর কেউ আমাকে ইসলামের বিধান শিক্ষা দেবে তার অনুমতি আমি আদৌ দিতে পারি না।

    “বর্বরদের তাহযীব, আখলাক যদি দেখতে চান তাহলে স্পেনে গিয়ে দেখুন খলীফা। খিজির উত্তেজিত হয়ে বললেন,আপনি কি জানেন না স্পেন বিজয়ের অগ্রনায়ক বর্বররা। ইউসুফ বললেন, তারেক ইবনে যিয়াদও বর্বর, যে বর্বরদেরকে আপনি অশিক্ষিত ও জংলী বলেছেন, তারা স্পেনের কাফেরদের অন্তর জয় করে তাদেরকে ইসলামের শীতল ছায়া তলে এনেছে।”

    খিজির বললেন, খলীফাতুল মুসলিমীন! বর্বর সিপাহ্ সালারের অধীনে আরব সৈন্যবাহিনী সম্মুখে অগ্রসর হচ্ছিল এমন সময় আপনি স্পেন বিজয়ীদেকে ফিরিয়ে এনেছেন, তারেক ইবনে যিয়াদ স্পেন সাগর পাড়ে পৌঁছে তাবৎ নৌকা জ্বালিয়ে দিয়েছিল যাতে ফিরে আসার কোন রাস্তাই না থাকে। কিন্তু যখন সে অর্ধেক স্পেন বিজয় করে ফেলেছে তখন আপনি তাকে দামেস্কে ডেকে এনে তার চলার রাস্তা চির তরে বন্ধ করে দিলেন যাতে তার নাম ইতিহাসের পাতা হতে মুছে যায়। আর বিজয়ী, আমীরে আফ্রিকা মুসা ইবনে নুসাইরকে শিকল পরিয়ে ভিখারী বানিয়েছেন। স্পেনে গিয়ে দেখুন, ঐ বর্বররাই স্পেনের কেন্দ্রস্থলে ইসলামের পতাকা উড্ডীন। করেছে।

    খলীফা বললেন, শুনতে পেলাম তোমরা নাকি মুসার লাঞ্ছনা-গঞ্জনার প্রতিশোধ আমার থেকে নিবে? আমাকে হত্যা করার ক্ষমতা কি তোমাদের রয়েছে? তোমরা নাকি বিদ্রোহ করে আমার খিলাফতের মসনদ তছনছ করে দিতে চাচ্ছ?

    ইউসুফ বললেন, মুসা ইবনে নুসাইর যদি সামান্যতম ইঙ্গিতও প্রদান করেন তাহলে আমরা বিদ্রোহ করে দেখিয়ে দিতে পারি। আমরা মুসার সাথে সে আলোচনা করেছি। তা যদি আপনার চররা আপনার কাছে পৌঁছিয়ে থাকে তাহলে আমরা তা অস্বীকার করব না। আপনার কানে কি এ কথা পৌঁছেনি, যে তিনি বলেছেন, বিদ্রোহের নামও মুখে আনবেনা তাহলে ইসলামী হুকুমত দূর্বল হয়ে পড়বে? কিন্তু আপনি তো এদিকে ইসলামের মুলোৎপাটন করছেন।

    খলীফা গর্জে উঠে বললেন, নিয়ে যাও এ দু’তর্কবাজকে, তাদেরকে দামেস্কের বন্দিশালায় পাঠিয়ে দাও। ঐখানেই তাদের আখিরী ঠিকানা হবে। সাথে সাথে খলীফার ছয়-সাতজন ফৌজ দৌড়ে ভেতরে প্রবেশ করল, তাদের তলোয়ারের খোঁচা দুই বর্বরের শরীরে লাগতে লাগল। সৈন্যরা তাদেরকে জোরপূর্বক টেনে হেঁচড়ে তাবু থেকে বের করে নিয়ে গেল।

    ইউসুফ ও খিজিরের আওয়াজ খলীফা শুনতে ছিলেন, “আমাদেরকে হজ্জ্ব পালনে বাধা প্রদানকারী। তোমার বাদশাহীর দিন বেশি দিন নেই। তাদের আওয়াজ আস্তে আস্তে ক্ষীণ হয়ে আসল এবং এক সময় হাজীদের সম্মিলিত ধ্বনি “আল্লাহুম্মা লাব্বাইকের নিচে চাপা পড়ে গেল। তারপর আর সে দু’ বর্বরকে কোথাও খুঁজে পাওয়া গেল না।

    ***

    খলীফা সুলায়মান ইবনে আব্দুল মালেক ওয়ালীদ ইবনে আব্দুল মালেকের ভাই ছিলেন। তার পূর্বে খলীফা ছিলেন ওয়ালীদ। তিনি তার ছেলেকে নিজের স্থলাভিষিক্ত বানাতে চাচ্ছিলেন। কিন্তু হঠাৎ করে তিনি এমন গুরুতর অসুস্থহয়ে পড়লেন যে কিছু দিনের মাঝেই তার ইন্তেকাল হয়ে গেল। ফলে খলীফা হিসেবে নিজের ছেলের নামটাও ঘোষণার অবকাশ পেলেন না। তার মৃত্যুরপরে খেলাফতের মসনদে সুলায়মান অধিষ্ঠিত হন।

    দুই ভাইয়ের মাঝে পার্থক্য এই ছিল যে, ওয়ালীদ মুহাম্মদ ইবনে কাসেমকে হিন্দুস্থানে যুদ্ধের জন্যে প্রেরণ করে সৈন্য বাহিনীসহ যত ধরনের সাহায্য অব্যাহত রেখেছিলেন। অপর দিকে দক্ষিণ আফ্রিকার আমীর মুসা ইবনে নুসাইর যে আবেদন করেছিলেন, স্পেনের উপর হামলা করার এবং তার নেতৃত্ব বর্বর সিপাহসালার তারেক ইবনে যিয়াদকে দেয়ার জন্যে, ওয়ালীদ তার এ আবেদন কেবল মঞ্জুরই করেননি বরং স্পেন আক্রমণের অনুমতির সাথে সাথে সর্বোপরি সাহায্য প্রেরণ করেছেন।

    ওয়ালীদের ভাই সুলায়মান খলীফা হয়ে মুহাম্মদ ইবনে কাসেমকে হিন্দুস্থান হতে সে সময় অপরাধী হিসেবে তলব করে বন্দীকরে হত্যা করেন। যখন সিন্দুকে ইসলামের পতাকাতলে এনে বিজয়ের পর বিজয় অর্জন করে সম্মুখে অগ্রসর হচ্ছিলেন। অপর দিকে মুসা ইবনে নুসাইরকে দামেস্কে ডেকে বন্দী করেছিলেন যখন মুসা তারেক ইবনে যিয়াদ এর পরে স্পেনে পৌঁছে ঐসব এলাকা বিজয় করছিলেন যে এলাকায় তারেক পৌঁছেন নি, সুলায়মান তারেককেও ফিরিয়ে এনেছিলেন।

    যদি খলীফা ওয়ালীদের পুত্র খলীফা হত এবং তিনি যদি তার পিতার পদাংক অনুসরণ করতেন তাহলে ইউরোপ ও হিন্দুস্থানের ইতিহাস অন্য রকম হতো। সুলায়মান কুতায়বা বিন মুসলিমকেও বাধ্যবাধকতার শিকল পরিয়ে দেন। ঐতিহাসিকরা লেখেন, হিন্দুস্থান ও ইউরোপে মুসলিম সৈন্য বাহিনী প্রেরণ ও এ দু’দেশে ইসলামের বাণী পৌঁছানোর পিছনে কুতায়বা বিন মুসলিমের অবদান ও বড় ভূমিকা ছিল। কুতায়বা যখন চীনে ছিলেন তখন সুলায়মান তাকে দামেস্কে ফিরিয়ে আনেন।

    ***

    মুসা ইবনে নুসাইর হজ্জের সময় মক্কায় ভিক্ষা করতে থাকেন। ভিক্ষা করে সারা দিনে তিনি যা পেতেন তা খলীফা সুলায়মানকে দিয়ে দিতেন।

    পূর্ণ খোলা আকাশের নিচে মুসাকে বসিয়ে দেয়া হতো। একজন পাহারাদার তার কাছে উপস্থিত থাকত। তাকে কোন প্রকার খাবার দেয়া হত না। তিনি নিজের ভিক্ষার পয়সা হতে খাবার কিনে খেতেন। তিনি এক বছর ধরে দুর্বিসহ কষ্ঠভোগ করছিলেন। খলীফা সুলায়মান তার সারা গৌরব গাঁথা বিজয়ের কথা ভুলে তো গিয়ে ছিলেনই অধিকন্তু তার জীবনের প্রতি বিন্দুমাত্রও পক্ষেপ করেননি। তিনি তো তার জীবনের আখিরী মঞ্জিলে পৌঁছে গিয়ে ছিলেন। খলীফা সুলায়মান কেবল মাত্র তার প্রতি ব্যক্তিগত আক্রোশের কারণে তাকে কেবল বন্দীশালাতেই নিক্ষেপ করেননি বরং তাকে মানষিক নির্যাতন করে তার বৃদ্ধ শরীরকে চূর্ণ-বিচূর্ণ করে ফেলেছিলেন। প্রচণ্ড রোদ্রের মাঝে তপ্তবালুর উপর মুসাকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড় করিয়ে রাখা হত। যখন তিনি বেহুশ হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়তেন তখন তার মুখে কয়েকফোঁটা পানি দেয়া হতো যাতে তিনি জীবিত থাকেন। জীবিত রাখার জন্যেই কেবল মাত্র তাকে যৎ সামান্য খাবার দেয়া হতো।

    মুসা ইবনে নুসাইরকে প্রথমে খলীফা ওয়ালীদ ইবনে আব্দুল মালেক বিশেষ– কোন উদ্দেশ্যে স্পেন হতে ডেকে এনেছিলেন। কিন্তু তার দুর্ভাগ্য যখন তিনি দামেস্কে ফিরে এসেছিলেন তখন ওয়ালীদ শেষ নিঃশেষ ত্যাগ করেছিলেন। পরে তিনি সুলায়মানের হাতে বন্দী হন। সুলায়মান তার ওপর বিভিন্ন অভিযোগ আরোপ করে অত্যন্ত লোমহর্ষকভাবে তার ওপর নির্যাতনের স্টীমরোলার চালিয়ে দু’লক্ষ দিনার জরিমানা চালিয়ে তাকে একথা বলে মক্কাতে নেয়া হয়ে ছিল যে ভিক্ষা করে টাকা পরিশোধ কর।

    ***

    খলীফার ইঙ্গিতে যখন খিজির ও ইউসুফকে টেনে-হেঁছড়ে বের করে নিয়ে যাওয়া হল তখন খলীফার তাবুর সাথে ঝুলান যে পর্দা ছিল তা সরিয়ে এক অপরূপ সুন্দরী রমণী সম্মুখে আসল। সে সিরিয়া অঞ্চলের সৌন্দর্যের রাণী ছিল। রমণী এসে সুলায়মানের পিছনে দাঁড়াল। সে তার হাত সুলায়মানের কাঁধে রেখে তার ঘাড়ে আঙ্গুল দিয়ে সুড়সুড়ি দিচ্ছিল। সুলায়মান তার হাতের মাঝে রমণীর হাত নিয়ে নিলেন।

    সুলায়মান মৃদু সুরে আহ্বান করলেন, “কুলসুম!”

    কুলসুম তখনও ছিল পূর্ণ যৌবনা যুবতী, সে সুলায়মানের সামনে এসে তার উরুর ওপর বসে পড়ল।

    তুমি কি শুনেছ আমি কি করেছি?

    কুলসুম সুলায়মানের গোঁফের ওপর আঙ্গুল বুলাতে বুলাতে বলল, হ্যাঁ আমিরুল মু’মিনীন! আমি পর্দার আড়ালে দাঁড়িয়ে সব শুনেছি।

    সুলায়মান কুলসুমের কমর ধরে ব্যাঙাত্মক মুচকি হাসি দিয়ে বললেন, হতভাগা বর্বর। আফ্রিকা হতে এত দূর আমার হুকুমে মরার জন্যে এসেছে। কত বড় দুঃসাহস! মুসাকে বাঁচানোর জন্যে বিদ্রোহের কথা বলছিল।

    আপনি কি নিশ্চিত যে এখন আর কেউ আপনার রাজ্যে বিদ্রোহের কথা বলবে না? কুলসুম জিজ্ঞেস করল।

    সুলায়মান বললেন, যে বলবে তার পরিণাম এ বর্বরদের মত হবে। মানুষ আমাকে জালিম বলবে, ঐতিহাসিকরা ইতিহাস লেখার সময় আমাকে নির্দয়, অত্যাচারী হিসেবে অবহিত করবে। কিন্তু আগত প্রজন্ম একথা শ্রবণ করবে না যে, আমার খেলাফতকালে কোথাও বিদ্রোহ হয়েছে।

    কুলসুম বলল, এরূপ ধারণা করা কি ভুল নয় আমিরুল মু’মিনীন! কেবল দু’জন বর্বরকে হত্যা করে পুরো রাজ্যের বিদ্রোহের আশংকা খতম করা যায় না। কুলসুম সুলায়মানের সাথে রোমান্টিক ও প্রেমপূর্ণ আচরণের মাঝে বলল, মুসাকে বন্দী করে আপনি বিপদের বড় আশংকা জন্ম দিয়েছেন।

    সুলায়মান রোমান্টিক অবস্থায় লোলুপ দৃষ্টে কুলসুমের চেহারার প্রতি অপলক নয়নে চেয়ে ছিলেন। যেন তাকে যাদু গ্রাস করেছে।

    কুলসুম বলল, আপনি কি ভেবে দেখেছেন, মুসা যে তার ছেলে আব্দুল আজীজকে স্পেনের আমীর নিযুক্ত করে এসেছে? আব্দুল আজীজের কাছে হয়তো এ খবর পৌঁছে গেছে যে, তার বাবার ওপর নিপীড়ন চালিয়ে তাকে আস্তে আস্তে মৃত্যুমুখে পতিত করা হচ্ছে। তারেক ইবনে যিয়াদ যাতে দামেস্কের বাহিরে না যেতে পারে সে ব্যাপারে আপনি হুকুমজারী করেছেন। তারেক ও আব্দুল আজীজ দু’জন। এক। স্পেনে আমাদের সৈন্যরা মুসা, তারেক ও আব্দুল আজীজকে মর্যাদাবান ও সম্মানের অধিকারী জ্ঞান করে।

    “তুমি কি এটা বলতে চাচ্ছে যে, আব্দুল আজীজ আমার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করবে?

    কুলসুম জবাব দিল, কেন করব না? সে তার বাবার বেইজ্জতির প্রতিশোধ অবশ্যই নিবে। তামাম ফৌজ তার সাথে রয়েছে, ফলে সে স্বাধীন রাজ্যের ঘোষণা দিতে পারে। আপনি হয়তো এটাও ভুলে গেছেন যে, অর্ধেকের চেয়ে বেশী ফৌজ বর্বর। বর্বররা এ দাবী অবশ্যই করতে পারে যে তারাই স্পেন বিজেতা। আজ আপনি দু’জন বর্বরকে শাস্তি দিয়েছেন, যে বর্বররা হজ্জ করতে এসেছে তারা তাদের সর্দারকে খোঁজ করতে করতে যে কোন ভাবে এক সময় জেনে যাবে আপনি তাদেরকে কোথায় পাঠিয়েছেন।

    সুলায়মান ইবনে আব্দুল মালেক বললেন, থামো, আমি তো আব্দুল আজীজ বিন মুসার কথা চিন্তাই করিনি, আমাকে তার ব্যাপারে ভাবতে দাও।

    ***

    খলীফা সুলায়মান ইবনে আব্দুল মালেকের চিন্তা-চেতনায় ছিল আত্মম্ভরিতা। তিনি ছিলেন ব্যক্তি কেন্দ্রিক। কুলসুমের সৌন্দর্য-মাধুর্য ও প্রেমপূর্ণ সম্পর্ক সুলায়মানের সে আত্মম্ভরিতাকে আরো বাড়িয়ে ছিল। খেলাফতের মসনদে বসার কয়েক দিন পূর্বে কুলসুম তার বালাখানায় এসেছিল। কুলসুমকে সুলায়মানের একবন্ধু হাদিয়া হিসেবে পেশ করেছিল। কুলসুম পূর্ব হতেই পুরুষকে আয়ত্ত করার যাদুকরী কৌশল সম্পর্কে পূর্ণ অভিজ্ঞ ছিল, এ কারণে সে এসেই সুলায়মানকে নিজের করতলগত ও অন্যান্য নারীদেরকে নিজের দাসীতে পরিণত করেছিল।

    কুলসুমের সৌন্দর্যের মাঝে যাদু ছিল বা সে যাদু কারিণী ছিল তা নয়, বস্তুত: কমজরী ছিল সুলায়মান ইবনে আব্দুল মালেকের। তিনি মদ ও নারীর প্রতি আসক্ত ছিলেন। উম্মতে মুহাম্মদীর দুর্ভাগ্য যে, তিনি খেলাফতের মসনদে আসীন হয়েছিলেন। তিনি তার যোগ্যতানুসারে খেলাফতকে বাদশাহী রংগে রঞ্জিত করে অন্যান্য বাদশাহদের মত হুকুমজারী করেছিলেন।

    ইতিহাস ও বাস্তবতা এ কথার সাক্ষী দেয়, যে ব্যক্তি তার ব্যক্তিত্ব ও বংশ গৌরবকে পিছে ফেলে নারীর ওপর সোয়ার হয়েছে সে কেবল নিজে ধ্বংস হয়নি বরং সে যদি তার গোত্রের সর্দার হয় তাহলে পুরো গোত্রকে ধ্বংস করে। আর সে যদি কোন দেশের প্রধান হয়, তাহলে গোটা দেশকে, পুরো মিল্লাতকে ধ্বংস করে দেয়।

    কুলসুম সুলায়মানের বিবি ছিল, না তার মহলে সেবিকা ছিল এ ব্যাপারে ইতিহাস একেবারে নিশ্চুপ। তবে ইতিহাস এ ব্যাপারে অনেক ঘটনা বর্ণনা করে, যে ঘটনা সুলায়মানকে এক স্বৈরশাসক এবং জালেম বাদশাহ হিসেবে প্রমাণ করে। তার খেলাফত প্রকৃত অর্থে বাদশাহী ছিল। তিনি বাহ্যত হজ্জ পালনের জন্যে গিয়েছিলেন তবে বাদশাহী শান-শওকত সাথে নিয়ে গিয়েছিলেন। খলীফার দেহরক্ষী দল, গোয়েন্দা বাহিনীও সাথে ছিল। তিনি আল্লাহর ঘরে গিয়েও নিজের দরবার বসিয়েছিলেন।

    সুলায়মান যে দিন বিকেলে দু’জন বর্বর সর্দারকে শাস্তি দিলেন সেদিন রাত্রে তিনি তার তাবু হতে বেরিয়ে দু’জন দেহ রক্ষি ও দু’জন মশালধারীকে সাথে নিয়ে মুসার শয়ন স্থলে গেলেন। মুসা শায়িত অবস্থায় ছিলেন।

    সুলায়মান, মুসাকে লাথি মেরে বললেন, উঠ।

    বৃদ্ধ-দুর্বল মুসা ইবনে নুসাইর অতি কণ্ঠে উঠে বসে উপরের দিকে লক্ষ্য করলেন।

    সুলায়মান বললেন, “তোর বিবেক ঠিক হয়ে গেছে নাকি? ঐ দুই বর্বর বিদ্রোহের কথা বলছিল আর তুই নিষেধ করছিলি।”

    তোমার ভয়ে নয় ইবনে আব্দুল মালেক। মুসা আসমানের দিকে ইশারা করে বললেন, আল্লাহর ভয়ে, এখনও আমার তোমার ও তোমার খেলাফতের কোন ভয় নেই।

    সুলায়মান বিদ্রুপাত্তক অট্টহাসি হাসলেন। সুলায়মান বললেন, হতভাগা! তুই কি মনে করিস আমার কোন খোদাভীতি নেই।

    মুসা বললেন, না। তুমি তো আল্লাহর বিধি-বিধান সম্পর্কেও জ্ঞাত নও। কুরআন খুলে দ্বিতীয় পারা পড়, আল্লাহর ফরমান “হজ্জের সময় সহবাস হতে দূরে থাক, মন্দ কাজ করিও না, কারো সাথে ঝগড়া-বিবাদে লিপ্ত হয়োনা, তোমরা যে সৎ কাজ করে তা আল্লাহ্ জ্ঞাত। হজ্জের সফরে পাথেয় সাথে নিয়ে যাও আর উত্তম। পাথেয় হলো আল্লাহভীতি। সুতরাং হে জ্ঞানী সম্প্রদায় আমার নাফরমানী করবে না।” তুমি কি এ বিধানের উপর আমল করছ? খলিফা সুলায়মান!

    খলীফা সুলায়মান তাকে বাঁকা চোখে দেখে ফিরে গেলেন।

    ***

    হজ্জ শেষ হলো। হাজীদের কাফেলা ফিরে চলেছে। খলীফা সুলায়মানের কাফেলাও দামেস্কের দিকে রওনা হয়ে গেল। মুসাকে প্রতিদিন সামান্য কিছু পথ .উটে চড়িয়ে নেয়া হতো বাকী সারা দিন পায়ে হেঁটে চলতে হতো।

    দেড় দু’মাসে এ কাফেলা দামেস্কে পৌঁছল। মুসাকে কয়েদ খানায় পাঠিয়ে দেয়া হলো।

    দামেস্কে প্রথম রাতেই কুলসুম সুলায়মানকে স্মরণ করিয়ে দিল, স্পেনে মুসার ছেলে আমীর, সেখানে তার বাপের শাস্তির প্রতিশোধ নেয়ার জন্যে যে কোন সময় বিদ্রোহ করে নিজেকে স্বাধীন শাসক দাবী করে বসতে পারে।

    সুলায়মান বললেন, কুলসুম! মুসলমানদের খলীফা। মুসলমানরা একটা নতুন দেশ স্বাধীন করেছে। সে নতুন নতুন নিয়ম-নীতি চালু করা হচ্ছে, কিছু অঞ্চলে এখনো যুদ্ধ চলছে। খলীফা হিসেবে সেখানে যাওয়াটা আমার জন্যে কি জরুরী নয়? .. এ দ্বারা আমার গুরুত্ব ও গ্রহণীয়তা আরো বৃদ্ধি পাবে।

    কুলসুম বলল, না খলীফাতুল মুসলিমীন! আপনি যাবেন না। আমি আপনার জীবনের আশংকা বোধ করছি। সম্ভবতঃ এমন হতে পারে, আপনার সাথে যারা যাচ্ছে তাদের কেউ সেখানে বলেদিল যে মুসা ইবনে নুসাইর জেল খানায় আর তার অবস্থা খুবই শোচনীয়, তাহলে সে অবস্থায় সেখান থেকে জীবিত ফিরে আসা আপনার জন্যে খুবই দুস্কর।

    সুলায়মান বললেন, সেখানের অবস্থা আমার পর্যবেক্ষণ করা খুবই জরুরী। যদি বিদ্রোহ ও স্বাধীনতার সামান্যতমও ইঙ্গিত পাই তাহলে আব্দুল আজীজের ওপর পাবন্দী লাগিয়ে দেব।

    পরের দিন খলিফা প্রথম কাজ এটাই করলেন যে, একজন দ্রুত গামী ঘোড় সোয়ারীকে এ নির্দেশ দিয়ে প্রেরণ করলেন, সে যেন সেখানের অবস্থা জেনে আসে। খলীফা তাকে কোন্ কোন্ বিষয় অবগত হতে হবে তা বিস্তারিত বলে দিলেন আর তাগিদ দিলেন যেন সে দ্রুত ফিরে আসে।

    সুলায়মান শেষ কথা কাসেদকে এটাই বললেন, কেউ যেন জানতে না পারে তুমি আমার প্রেরিত কাসেদ। তুমি নিজের ব্যাপারে বলবে, এ দেশে যদি বসবাস করি তাহলে ভাল হবে কিনা এটা দেখার জন্যে এসেছি।

    ***

    অত্যন্ত দ্রুত যাতায়াত করার পরও কাসেদের ফিরে আসতে দেড় মাস সময় লেগে গেল। এরি মাঝে মুসাকে হুকুম দেয়া হয়েছিল সে অতি সকালে কয়েদ খানা থেকে বের হয়ে শহরে ভিক্ষা করবে আর সারা দিনের ভিক্ষের পয়সা সন্ধ্যেবেলা কয়েদখানা প্রধানের কাছে জমা দেবে।

    কাসেদ স্পেনের হালাবস্থা বর্ণনা করতে গিয়ে বললেন, খলীফাতুল মুসলিমীন! এর চেয়ে সুন্দর ও এরূপ সবুজ শ্যামলে ঘেরা আর অন্য কোন দেশ মনে হয় নেই। সুলায়মান বললেন, আমি দেশের প্রাকৃতিক ও ভৌগলিক অবস্থা সম্পর্কে শুনতে চাইনা তুমি শুধু আমাকে বল, আমীর আব্দুল আজীজ ইবনে সুলায়মান কি করছে এবং তার সৈন্য বাহিনী ও সাধারণ লোকদের মাঝে তার ব্যাপারে কি ধরনের মন্তব্য চলছে। কাসেদ বলল, ফৌজ ও সাধারণ জনগণের কাছে যদি কোন গ্রহণীয় ও নির্ভরযোগ্য লোক থেকে থাকে তাহলে সে শুধু স্পেনের আমীর আব্দুল আজীজই আছে। সে আলেম, মুত্তাকী, পরহেজগার, আরব ও বর্বররা তো তাকে সম্মানের দৃষ্টিতে দেখেই অধিকন্তু খৃষ্টানদের মাঝেও সে গ্রহণীয় ব্যক্তিত্ব ও তার সুনাম রয়েছে।

    আব্দুল আজীজ স্পেন অধিবাসীদের জন্যে কি কি কল্যাণকর কাজ করেছে এবং করছে তার বিস্তারিত বর্ণনা পেশ করল কাসেদ।

    কাসেদ বলল, স্পেনের আমীর সেখানের মানুষের অবস্থা পালটে দিয়েছেন, সেখানে গরীব খ্রীষ্টানের ওপর ধনী খ্রীষ্টানরা রাজত্ব চালাত, সেখানে ইনসাফ-ন্যায় বিচার সেই পেত যার কাছে টাকা ছিল, তাদের জীবনেই তাবৎ সর্বোপরি সুখ-শান্তি ছিল। আমীর আব্দুল আজীজ দরিদ্রদেরকে এমন জীবনদান করেছেন, তারা কেবল পেট ভরে ভাতই খেতে পায় না বরং তারা মান-মর্যাদা, ইজ্জত-সম্মান ফিরে পেয়েছে।

    আব্দুল আজীজ ইবনে মুসা স্পেন বিজয়ের পর পরই সেখানের লোকদেরকে কি কল্যাণ কর কাজ করেছেন তার বিস্তারিত বর্ণনা এ পুস্তিকার শেষভাবে পেশ করা হবে এখানে বলার বিষয় হলো খলীফা সুলায়মান বিন আব্দুল মালেক আব্দুল আজীজের ব্যাপারে অন্য কিছু শোনার আশা করছিলেন।

    বর্বরা আব্দুল আজীজের ব্যাপারে কি বলে? সুলায়মান কাসেদকে জিজ্ঞেস করলেন। প্রতি উত্তরে কাসেদ বলল, খলীফাতুল মুসলিমীনের হয়তো জানা থেকে থাকবে, সেনাপতি তারেক ইবনে যিয়াদের সাথে যে সকল সৈন্য স্পেন সাগর পাড়ে পৌঁছে ছিল তারা সকলেই বর্বর ছিল। বর্বর সৈন্যরা যে মালে গণিমত পেয়েছিল তা তারা কোন দিন স্বপ্নেও দেখেনি। আমীর আব্দুল আজীজ তাদেরকে যথেষ্ট পরিমাণ সম্মান দান করেছে। মুসা ইবনে নুসাইর দীর্ঘদিন আফ্রিকার আমীর ছিলেন, তিনি বর্বর জাতির প্রতি এ অনুগ্রহ করেছেন যে, তারা মুসাকে মুর্শিদ মনে করে। এজন্যেই বর্বররা আমীর আব্দুল আজীজের জন্যে জান-মাল সর্বোপরি কুরবানী করতে প্রস্তুত রয়েছে।

    খলীফা জিজ্ঞেস করলেন, তাদের মাঝে কেউ আমাকেও কি স্মরণ করে?

    কাসেদ বলল, খলীফাতুল মুসলিমীন যদি বেয়াদবী মাফ করেন তাহলে বলি, খলিফার সাথেই কুলসুম বসা ছিল, খলীফার পরিবর্তে কুলসুম বলল, অনুমতি আছে, তুমি নির্ভয়ে সবকিছু খুলে বল।

    কাসেদ বলল, খলীফাতুল মুসলিমীন! আমি অনেক শহর-বন্দর, পল্লীতে গিয়েছি। মুসলমান, খ্রীষ্টান, বর্বর মুসলমান সকলের সাথে কথা হয়েছে। কেউ দামেস্কের খিলাফতের নাম নেয়নি। সেখানে যে নতুন মসজিদ তৈরি হয়েছে তাতে গিয়েছি সেখানেও কেউ খলীফার নাম স্মরণ করেনি। তারা যদি কাউকে স্মরণ করে তাহলে আব্দুল আজীজকেই স্মরণ করে।

    খলীফা জিজ্ঞেস করলেন, মুসা ইবনে নুসাইর ও তারেক ইবনে যিয়াদের আলোচনাও কি হয়?

    কাসেদ বলল, তাদের ব্যাপারে বেশ কিছু মানুষকে আলোচনা করতে দেখেছি। তারা একে অপরকে মুসা ইবনে নুসাইর ও তারেক ইবনে যিয়াদ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করছিল আর বলছিল তারা যে কোথায় চলে গেল…। খলীফাতুল মুসলিমীন! যে ব্যক্তিই জেনেছে যে আমি দামেস্ক থেকে এসেছি সেই জিজ্ঞেস করেছে, মুসা এবং তারেক দামেস্কে আছে কিনা। তারা এটাও জিজ্ঞেস করেছে তারা কবে ফিরে আসবে। আমি গভীর ভাবে লক্ষ্য করলাম কেন্দ্রের খেলাফতের সাথে স্পেনের কোন সম্পর্কই নেই। খলীফাতুল মুসলিমীন! আপনার সেখানে যাওয়া দরকার।

    খলীফা বললেন, হ্যাঁ, আমার সেখানে অবশ্যই যাওয়া উচিৎ। তানাহলে একদিন খুৎবা হতেই আমার নাম বাদ পড়ে যাবে।

    “তুমি যেতে পারো, কুলসুম কাসেদকে বলল, কাসেদ চলে গেলে কুলসুম সুলায়মানকে লক্ষ্য করে বলল, আপনি স্পেনে যাবেন না। আপনি কি কাসেদের এত খোলামেলা কথা ও আলোচলার দ্বারা বুঝতে পারেননি যে, স্পেন একদিন কেন্দ্র থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে স্বাধীন রাষ্ট্রে পরিণত হবে। আপনি বনু উমাইয়্যার খেলাফতকে খতম করতে চান? মুসা ইবনে নুসাইরের বংশধরকে কি আপনি কেলাফতের। মসনদে বসাতে চান?

    সুলায়মান বললেন, না! আমি মুসার বংশ নিপাত করে মরব।

    কুলসুম বলল, মুসাকে এ অধিকার কে দিয়েছিল যে, সে এক নব বিজিত দেশের আমীর তার ছেলেকে বানিয়ে এসেছে? মুসাকে খতম করার দ্বারা তো আর তার বংশ শেষ হবে না তার পুরো বংশ শেষ হওয়া দরকার।

    আবু হানিফ কে ডাক, সুলায়মান বললেন,

    কুলসুম যাবার জন্যে উদ্যত হলো, সুলায়মান তাকে বাধা দিয়ে বললেন, তুমি কোথায় যাচ্ছ, দারোয়ানকে পাঠাও।

    কুলসুম বলল, আবু হানিফকে আপনার দরবারে আনার জন্যে আমার যাওয়া প্রয়োজন, সে আপনার হকুমের অপেক্ষায় কাছেই বসে আছে।

    কুলসুম কামরা হতে বেরিয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর কামরাসহ আরো দুটো কামরা অতিক্রম করে তৃতীয় একটা কামরার দরজা খুলল। এ কামরাটা অত্যন্ত সুন্দর ও সাজানো গোছানো ছিল। তাতে মাঝ বয়সী এক সুদর্শন লোক বসেছিল। সে কুলসুমকে দেখে দাঁড়িয়ে দু’হাত প্রসারিত করে দিল, কুলসুম সোজা তার বুকে চলে গেল, এ ব্যক্তিই আবু হানিফ।

    বস, কুলসুম তাকে বসতে বলে নিজে তার কাছে বসে বলল, স্পেনে যাবার প্রস্তুতি নিচ্ছো তো? তুমি খলীফার পরামর্শ দাতা… পরামর্শ দাতা আরো আছে, কিন্তু আমি তোমাকে একেবারে তার হৃদয়ের গভীরে পৌঁছে দিয়েছি।

    আবু হানিফ বলল, এটাতো পুরাতন কথা, নতুন কিছু বল, দূত কি খবর নিয়ে এসেছে? সুলায়মান কি বলেছেন?

    কুলসুম তাকে দূতের তাবৎ কথা শুনাল এবং সে খলিফাঁকে যে পরামর্শ দিয়েছে তাও বর্ণনা করল। আবু হানিফ বলল, এ পরামর্শ আমিও দেব। যদি সুলায়মানের খেলাফত কায়েম থাকে তাহলে আমাদের উদ্দেশ্য হাসিল হবে…। একথাও স্মরণ রাখবে কুলসুম! স্পেনের যে সকল দাসীকে মুসা ইবনে নুসাইর সুলায়মানকে উপহার হিসেবে দিয়েছে তারা সকলেই অপরূপ সুন্দরী। কেউ কারো চেয়ে কম নয়। তাদের বুদ্ধিমত্তাও অনেক বেশী। এসব রমণীরা সেখানে দাসী-বাদী ছিল না বরং তারা প্রত্যেকেই শাহী মহল ও আমীর ওমরাদের পরিবারের মেয়ে। তাই তাদের মাঝে কেউ যেন তোমাকে পিছনে ফেলে নিজে বেশী বাদশাহর নিকটবর্তী না হয়ে যায়। কুলসুম বলল,এ ব্যাপারে পরে আলাপ হবে, এখন খলীফা তোমাকে তলব করেছেন, তিনি তোমার কাছে স্পেনের আমীর আব্দুল আজীজের ব্যাপারে পরামর্শ চাবেন। কি পরামর্শ দেবে?

    কুলসুব বলল, তাড়াতাড়ি যাও, তিনি তোমার প্রতিক্ষা করছেন, তাকে স্পেন যাবার পরামর্শ দেবে না।

    আবু হানিফ দ্রুতপদে খলীফার কামরায় পৌঁছে গেল এবং দু’জনে গোপনে পরামর্শ করতে লাগল।

    ***

    ঐ দিনই শেষ প্রহরে দামেস্ক হতে একজন দূত স্পেনের দিকে রওনা হয়ে গেল। সে একটা লিখিত পত্র নিয়ে যাচ্ছিল। পত্র একটা চামড়ার থলীর মাঝে ছিল। থলীর মুখে আবু হানিফ নিজ হাতে খলীফার সম্মুখে মহর লাগিয়ে ছিল। পত্র খলীফার নির্দেশে আবু হানিফ লেখেছিল। এ পত্র বাহকের নাম ইতিহাসে আবুন নছর পাওয়া যায়। এ পত্র বাহককেই সুলায়মানের পূর্বে খলীফা ওয়ালীদ ইবনে আব্দুল মালেক মুসাকে স্পেন হতে ডেকে আনার জন্যে পাঠিয়ে ছিলেন। আবুন নছর শাহী মহলে খুবই বিশ্বস্ত ও নির্ভরযোগ্য ছিল।

    সুলায়মান তার পয়গাম স্পেনে পাঠাবার জন্যে আবুন নছরকে ডেকে বলেছিলেন, আবুন নছর তুমি তো জান, আমার বড় ভাই ওয়ালীদ তোমাকে কি পরিমাণ বিশ্বাস করতেন। তোমার সে বিশ্বাস ও নির্ভরযোগ্যতা এখনও বহাল– রয়েছে। এ পয়গাম পথিমধ্যে খুলবেনা। যদি নষ্ট হয়ে যাবার আশংকা থাকে তাহলে থলির মহর খুলে পত্র জ্বালিয়ে দেবে বা চিবিয়ে খেয়ে ফেলবে যাতে অন্য কারো হাতে না পড়ে।

    আবু নছর বলল, এমনটি হবে আমীরুর মু’মিনীন!

    খলীফা সুলায়মান বললেন, আরেকবার ভাল করে শুনে নাও। এ পয়গাম হাবীব ইবনে উবায়দার হাতে পৌঁছুবে। অন্য কেউ যেন না জানতে পারে যে তুমি কোন পয়গাম নিয়ে এসেছ…। বাকী সবকিছু তো তোমাকে বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে।

    ***

    সে সময় স্পেনের রাজধানী টলেডো ছিল। আব্দুল আজীজ সেখানেই অবস্থান করছিলেন। আবুন নছর রাত্রে রাজধানীর কাছে পৌঁছেছিলেন। কেল্লার দরজা বন্ধ থাকার দরুণ রাত্র তাকে শহরের বাইরেই কাটাতে হয়।

    সকালে দরজা খুললে সে শহরে প্রবেশ করে তার চাল-চলন ও পোশাক আষাক বদলে ফেলেছিল ফলে তাকে আরবী মনে হচ্ছিল না। পূর্বেও সে এখানে কয়েকবার এসেছিল তাই বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ জায়গা সম্পর্কে তার জানাছিল। হাবীব ইবনে উবায়দাহ কোথায় থাকে তাও সে জানত।

    ঐতিহাসিকদের বর্ণনা মতে হাবীব ইবনে উবায়দাহ সৈন্য বাহিনীর কোন গুরুত্ত্বপূর্ণ পদে এবং কিছুদিনের জন্যে ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে ছিল এ কারণে ইতিহাসে তার নামে আমীর শব্দ যোগ করে আমীর হাবীব ইবনে উবায়দাহ্ লেখা হয়।

    আবু নছর হাবীবের ঘরে পৌঁছুলে সে সময় হাবীবের এক সহকারী বন্ধু তার সাথে আলাপ করছিল। চাকর খবর দিল এক ব্যক্তি তার সাথে সাক্ষাৎ করতে চায়। হাবীব বাহিরে আসল। কে? হাবীব গভীরভাবে আবু নছর কে দেখে বলল, তুমি আবু নছর না? কারো জন্যে খলীফার পয়গাম নিয়ে এসেছে?

    আবু নছর উত্তর দিল, তোমার জন্যে খলীফার কোন বিশেষ ও গোপন পয়গাম রয়েছে। নির্দেশ রয়েছে আমি যে পয়গাম নিয়ে এসেছি তা যেন, কেউ জানতে না পারে। পয়গাম নিয়ে নাও এবং আমাকে গোপনীয়ভাবে থাকার ব্যবস্থা কর। আমি জবাব নিয়ে ফিরে যাব।

    হাবীব থলে নিয়ে নিল, আর খাদেমকে নির্দেশ দিল, এ মুসাফিরকে পৃথক কামরাতে থাকার ব্যবস্থা করে দেবে এবং তার খানা-পিনার প্রতি বিশেষভাবে লক্ষ্য রাখবে। হাবীব নিজ কামরাতে ফিরে বন্ধু যায়েদ ইবনে নাবার সম্মুখে থলে খুলে পত্র বের করে পড়তে লাগল। পত্র পড়ার সময় তার হাত কাঁপছিল। পয়গাম বেশী লম্বা ছিল না। ঐতিহাসিক দুজী এবং স্কট লেখেন, পত্র হাবীরের হাত থেকে পড়ে যায় আর তার চোখ অশ্রুতে ভরে ওঠে। পয়গাম যায়েদ উঠিয়ে নিয়ে পড়তে থাকে

    “স্পেনের আমীর আব্দুল আজীজকে হত্যা করে তার মাথা দামেস্কে পাঠিয়ে দাও। আর এ বিষয়টা যেন কেউ জানতে না পারে।”

    হাবীব বলল, ইবনে নাবা! তুমি জান, মুসা ইবনে নুসাইরের সাথে আমার বন্ধুত্বের সম্পর্ক কত গভীর। আমি তার ছেলেকে কিভাবে হত্যা করব? না… একাজ আমার পক্ষে সম্ভব না।

    যায়েদ ইবনে নাবা বলল, তাহলে নিজের মৃত্যুর জন্যে প্রস্তুত হও। খলীফার হুকুম যদি না মান তাহলে তিনি তোমাকে এবং তোমার বংশের ছোট বড় সকলকে হত্যা করবেন। হত্যার পূর্বে তোমাকে বন্দী করে এমন কষ্ট দেবেন যে রাতে দিনে কয়েকবার মৃত্যু বরণ করবে আবার জীবিত হবে।

    হাবীব বলল, তুমি কি আমাকে সাহায্য করবে?

    তুমি যদি বল তাহলে অবশ্যই তোমাকে সাহায্য করব। ইবনে উবায়দাহ! খলীফার এ হুকুম তোমাকে অবশ্যই মানতে হবে।

    ***

    তাদের দুজনের মাঝে আরো অনেক বিষয়ে আলোচনা হলো। প্রায় সকল ইউরোপীয়ান ও মুসলমান ঐতিহাসিকরা লেখেন, হাবীব ইবনে উবায়দার বন্ধুত্ব মুসার সাথে তো অবশ্যই ছিল কিন্তু খলীফা ওয়ালীদ ও তার ভাই সুলায়মান ইবনে আব্দুল মালেকের অনুগ্রহ হাবীব ও তার পরিবারের প্রতি এত বেশী ছিল যে তা হাবীরের জন্যে ভুলে যাওয়া সম্ভব ছিল না। তাছাড়া সুলায়মানের শাস্তির ভয়েও হাবীবের জন্যে তার হুকুম অমান্য করার সাহস ছিল না। হাবীব পাঁচজন ফৌজি অফিসারকে কাছে ডেকে তাদেরকে বিশ্বস্ত বানিয়ে ফেলল, তারা পাঁচজনই বনী উমাইয়্যা গোত্রের ছিল। তারা আমীর আব্দুল আজীজকে হত্যার জন্যে প্রস্তুত হয়ে গেল। কিন্তু সমস্যা হলো, আব্দুল আজীজ উন্নয়ন কাজে এত ব্যস্ত ছিলেন যে কোন এক জায়গায় স্থিরভাবে অবস্থান করতে পারছিলেন না। স্পেনের অনেক এলাকায় তখনও যুদ্ধ চলছিল। খ্রীস্টানরা মুসলমানদেরকে বিতাড়িত করতে তো অক্ষম হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু তারা বাকী স্পেনকে রক্ষা করার জন্যে জানপ্রাণ দিয়ে লড়াই করছিল। আমীর আব্দুল আজীজ হঠাৎ করে কোন কোন যুদ্ধ ক্ষেত্রে গিয়ে উপস্থিত হতেন।

    তাকে হত্যার জন্যে কয়েকবার আক্রমণ চালান হয়েছে কিন্তু তা এমনভাবে ব্যর্থ হয়েছে যে তিনি বুঝতেও পারে নি তাকে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। পরিশেষে হাবীব এমন এক ব্যক্তিকে খুঁজে বের করল যে ছিল খুব জেদী, বুদ্ধিমান ও শারীরিকভাবে অত্যন্ত শক্তিশালী। সে ব্যক্তি আব্দুল আজীজকে ছায়ারমত অনুসরণ করতে লাগল, আব্দুল আজীজ সব সময় নিরাপত্তা বাহিনীর বেষ্টনীতে থাকতেন। তাই তাকে লক্ষ্য করে তীর নিক্ষেপ করাও সম্ভব ছিল না।

    ঐ হত্যাকারী যার নাম কোন ঐতিহাসিকই উল্লেখ করেন নি। একদা সুযোগ পেয়ে গেল। সে সময় সৈন্য বাহিনীতে সিপাহসালার ইমামতির দায়িত্ব পালন করতেন আর রাজধানীর জামে মসজিদে স্বয়ং আমীর ইমামতি করতেন। একদিন আমীর আব্দুল আজীজ ফজরের নামাজের ইমামতি করছিলেন। তিনি সবে মাত্র সুরা ফাতিহা শেষ করে সূরা ওয়াকিয়া শুরু করেছিলেন এরি মাঝে হঠাৎ সামনের কাতার হতে এক ব্যক্তি সামনে অগ্রসর হয়ে তলোয়ার বের করে চোখের পলকে আমীর আব্দুল আজীজের মাথা শরীর থেকে পৃথক করে ফেলল। ঘটনা কি হলো মুসল্লীরা তা জানার পূর্বেই সে ব্যক্তি কর্তিত মাথা নিয়ে মসজিদ থেকে বের হয়ে উধাও হয়ে গেল।

    সে ব্যক্তি কর্তিত মাথা কাপড়ে ঢেকে নিয়ে হাবীবের বাড়ীতে পৌঁছুল। হাবীব তার অপেক্ষাতেই ছিল। হাবীব পূর্বেই একটা থলে বানিয়ে রেখেছিল। মাথা থলিতে ভরে তার মুখ সেলাই করে এ থলিকে মখমলের আরেকটা থলের মাঝে ভরে দূত আবু নছরকে দিয়ে দিল।

    হাবীব বলল, এটা খলীফা সুলায়মান ইবনে আব্দুল মালেককে দেবে।

    আবু নছর জিজ্ঞেস করল, এর মাঝে কি?

    প্রতি উত্তরে হাবীব বলল, খলীফার পয়গামের জবাব। তুমি দ্রুত রওনা হয়ে যাও, দেরী করবে না।

    আবু নছর সে সময়ই রওনা হয়ে গেল এবং প্রায় বিশ দিন পর দামেস্কে এসে পৌঁছুল। থলে খলীফার কাছে অর্পণ করল।

    সুলায়মান আব্দুল আজীজের মাথা দেখে অট্ট হাসিতে ফেটে পড়লেন।

    খলীফা হুকুম দিলেন, স্পেনের আমীরের মাথা কয়েদ খানাতে নিয়ে গিয়ে তার বাপ মুসার সম্মুখে রেখে দাও।

    হুকুম তামীল করা হলো, আব্দুল আজীজের মাথা মুসার সম্মুখে রেখে দেয়া হলো। মুসা পূর্ব হতেই অনেক কষ্ঠ, নির্যাতন, নিপীড়নের কারণে অত্যন্ত কাতর ও দুর্বল হয়ে পড়েছিলেন। ছেলের মাথা দেখার সাথে সাথে বেঁহুশ হয়ে পড়লেন। তিনি যখন চেতনা ফিরে পেলেন তখন মাথা সেখানে ছিল না।

    ঐ কয়েদ খানাতেই মুহাম্মদ ইবনে কাসেমকে অকথ্য নির্যাতন-নিপীড়ন চালিয়ে ঐ খলীফার নির্দেশেই হত্যা করা হয়েছিল। মুহাম্মদ ইবনে কাসেম মৃত্যুর একদিন পূর্বে বলে ছিলেন, তারা এক যুবককে ধ্বংস করল আর কেমন যুবকেইনা ধ্বংস করল? মুসা তার ছেলের মাথা দেখে বললেন, তারা এমন একজন ব্যক্তিকে হত্যা করেছে, যে দিনে আদল ও ইনসাফ ও উন্নয়নমূলক কাজ করত আর রাতে করতো আল্লাহর ইবাদত। আমার ছেলে সারাদিন রোযা রাখত, আর সারা রাত নামাজ পড়ত।

    সমরকন্দ বিজেতা কুতায়বা বিন মুসলিমকেও বাদশাহ হত্যা করেছিলেন। কয়েদ হওয়ার পূর্বে ইবনে মুসলিম বলেছিলেন, হে উম্মতে রাসূলে আরাবী! আমি তো তোমার উত্থানের জন্যে প্রচেষ্টাকারী ছিলাম এখন তোমাকে পতন থেকে কে বাঁচাবে?

    স্পেনের আমীর আব্দুল আজীজের হত্যার পর মুসা ইবনে নুসাইর বেশি দিন জীবিত থাকতে পারেননি। তার এক দেড় বছর পরে সুলায়মান ইবনে আব্দুল মালেকও ইন্তেকাল করেন।

    এটা কাহিনী নয়। এটা একটা রোমাঞ্চকর ও ঈমান উদ্দীপক উপাখ্যানের পরিণাম। এ উপাখ্যানের সূচনা হয়েছিল ৫ রজব ৯২ হিজরী মুতাবেক ৯ জুলাই ৭১১ খৃষ্টাব্দে। যখন এক খ্রীষ্টান গভর্নর আফ্রিকা ও মিসরের আমীর মুসা ইবনে নুসাইরের দরবারে এ ফরিয়াদ নিয়ে এসেছিল যে, স্পেনের বাদশাহ্ রডারিক তার কুমারী কন্যার ইজ্জত হরণ করেছে আর সে এ অপমানের প্রতিশোধ নিতে চায় যা মুসলমানদের সহযোগিতা ছাড়া আদৌ সম্ভব নয়। মুসা ইবনে নুসাইর তারেক ইবনে যিয়াদকে আহ্বান করলেন।

    1 2 3 4 5 6 7
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleশেষ বিকেলের মেয়ে – জহির রায়হান
    Next Article গোল্ডেন লায়ন – উইলবার স্মিথ / জাইলস ক্রিস্টিয়ান
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Demo
    Most Popular

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    অনুরাধা

    January 4, 2025

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025
    Our Picks

    রবিনসন ক্রুসো – ড্যানিয়েল ডিফো

    August 19, 2025

    দ্য দা ভিঞ্চি কোড – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025

    এঞ্জেলস এন্ড ডেমনস – ড্যান ব্রাউন

    August 19, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    Sign In or Register

    Welcome Back!

    Login below or Register Now.

    Lost password?

    Register Now!

    Already registered? Login.

    A password will be e-mailed to you.