Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    আসমানীরা তিন বোন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025

    ইস্টিশন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025

    উড়ালপঙ্খী – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • English Books
      • Jules Verne
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    দারুচিনি দ্বীপ – হুমায়ূন আহমেদ

    হুমায়ূন আহমেদ এক পাতা গল্প98 Mins Read0
    ⤶ ⤷

    ০৩. রানার বড় ভাই

    রানার বড় ভাই-এর বাড়ি আন্দাবরে।

    পাঁচতলা হুলুস্থল ধরনের বাড়ি। যার একতলার দুটি ইউনিটে রানারা থাকে। বাকি চারতলা ভাড়া দেয়া হয়েছে। রানা মূলত এই বাড়ির এক জন কেয়ারটেকার। পরপর তিনবার ইন্টারমিডিয়েট ফেল করবার পর রানার বড় ভাই—সাদেক আলি রানাকে একদিন ডেকে পাঠান এবং খুব আন্তরিক ভঙ্গিতে বলেন পড়াশোনা তোকে দিয়ে হবে না—তুই বরং ব্যবসা পাতি কর।

    রানা সঙ্গে সঙ্গে হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়ে এবং খুব নিশ্চিন্ত বোধ করে।

    আজকাল পয়সা হচ্ছে কনস্ট্রাকসনে, ব্রিক ফিল্ড একটা ভালোমতে চালাতে পারলে লাল হয়ে যাবি। পারবি না?

    রানা আবার হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়ে।

    আচ্ছা তাহলে তাই করব। পড়াশোনা তোর লাইন না। না-কি আরেকবার পরীক্ষা দিতে চাস? ভেবে বল। লাস্ট চান্স একটা নিবি?

    না।

    তিনে যার হয় না চারেও তার হবে না। আচ্ছা যা ব্রিক ফিল্ড একটা করে দেব-ইনশাআল্লাহ।

    এইসব কথা-বার্তা আজ থেকে ন’মাস আগের। রানা মোটামুটি নিশ্চিত যে ব্রিক ফিল্ডের রমরমা দিন তার আসছে। শুধু সময়ের ব্যাপার। গত নমাসে বাড়ির কেয়ার টেকারের দায়িত্ব তার ঘাড়ে চেপেছে। সে এই কাজ বেশ মন দিয়ে করছে। তিন তলার ভাড়াটের ইলেকট্রিক ফিউজ জ্বলে গিয়ে ফ্ল্যাট অন্ধকার— রানাকে দেখা যাবে টর্চ লাইট জ্বালিয়ে ফিউজ ঠিক করছে। দুই তলার ভাড়াটে দেয়ালে পেইনটিং বসাবে। মিস্ত্রী ডেকে দেয়ালে ফুটো করার কাজের পুরো দায়িত্বই তার। এইসব ছাড়াও সামাজিক কর্মকাণ্ডেও তার ডাক পড়ছে। চারতলার ভাড়াটের ছেলের আকিকা। দুটা খাসি আমিন বাজার থেকে কিনে আনা, মৌলানার ব্যবস্থা করা, আওলাদ হোসেন লেন থেকে কিসমত বাবুর্চিকে নিয়ে আসার জটিল সব কাজ সে আনন্দ এবং আগ্রহের সঙ্গে করে।

    রানার স্বভাব খুব মধুর। না হেসে কোনো কথা বলতে পারে না। যে যাই বলে তাই সে সমর্থন করে। কোনো ঝগড়া-ঝাটি শুরু হলে মধ্যস্ততার জন্যে অসম্ভব ব্যস্ত হয়ে পড়ে। স্কুল এবং কলেজ জীবনের বন্ধুদের জন্যে তার মমতার কোনো সীমা নেই। সে নিজে পড়াশোনা ছেড়ে দিয়েছে, কিন্তু অন্যদের পড়াশোনা ঠিকমতো হচ্ছে কি না তা নিয়ে তার চিন্তার শেষ নেই। অনার্স ফাইনাল পরীক্ষার সময় সে তার প্রতিটি বন্ধুর পরীক্ষা কেমন হয়েছে তার খোজ প্রতিদিন নিয়েছে। মোতালেবের ফোর্থ পেপার খুব খারাপ হয়েছে। পেপার ক্র্যাশ করতে পারে শুনে সে দুঃশ্চিন্তায় রাতে ভালো ঘুমুতেও পারে নি।

    রিং রোডের মাঝামাঝি একটা চায়ের রেস্টুরেন্টে রানা বাকির খাতা খুলে রেখেছে। সেই বাকির খাতায় তার চার বন্ধুর নাম লেখা। দোকানদারকে বলা আছে—এই চার জন এবং এই চার জনের সাথে কোন বন্ধু বান্ধব থাকলে তারাও বাকি খেতে পারবে। যা খেতে চায় তাই।

    রানার বন্ধুরা এই চায়ের দোকানেই রানার সঙ্গে আড্ডা দেয়। সপ্তাহে অন্তত একদিন বিকাল তিনটা থেকে রাত দশটা-এগারটা পর্যন্ত আড্ডা চলে। রাত বেশি হয়ে গেলে দোকানেই পাটির উপর ঘুমিয়ে পড়ার ব্যবস্থা আছে। বালিশ এবং এক্সট্রা মশারী রানা বাড়ি থেকে নিয়ে আসে তবে বন্ধুদের কখনো বাড়িতে নিতে পারে না। রানার বড় ভাই পছন্দ করেন না।

    আজ চায়ের দোকানে সঞ্জ, তারেক এবং মোতালেব বিকেল পাঁচটা থেকে বসে আছে। রানার খোঁজ নেই। একটা কাজের ছেলে বলে গেছে—এক্ষণ আইব, আপনাগো চা-পানি খাইতে বলছে।

    রানার বন্ধুরা ইতিমধ্যে সবাই চার কাপ করে চা খেয়েছে। দশ টাকার পিয়াজু খেয়েছে। ডিমের অমলেট খেয়েছে। প্রজেক্ট দারুচিনি দ্বীপ নিয়ে তুমুল আলোচনাও চলছে। তবে পুরোপুরি ফাইনাল করা যাচ্ছে না। সবাই একত্র হয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে অথচ দুই জন এখনো অনুপস্থিত। ৱানা এবং বল্টু। বল্ট থাকে বাসবোতে। সে আসবে একটা টিউশানী শেষ করে। আসতে আসতে নাটা বাজবো। রানা কেন আসছে না কে জানে। কোন একটা সমস্যা নিশ্চয়ই হয়েছে।

    রানার সমস্যা বেশ গুরুতর, তাদের টয়লেটের কমোডে কি যেন হয়েছে, হুড় হুড় করে পানি বের হয়ে চারদিক ভাসিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। প্লাম্বার এক জনকে আনা হয়েছে। সে খানিকক্ষণ পর পর বিরস মুখে বলছে- কিছুই তো বুঝি না, পানে আহে কোন হান থুন?

    সাদেক আলি একতলার বারান্দায় হাঁটাহাটি করছেন এবং গজরাচ্ছেন, গাধাটা করে কি। সামান্য জিনিসও পারে না। পানির মিস্ত্ৰি আনতে বললাম, রাস্তা থেকে কাকে ধরে নিয়ে এসেছে। কিছুই জানে না।

    পানির মিস্ত্রি এই কথায় অপমানিত বোধ করে কি বলেছিল, রানার ভাই তাকে চুপ শুওরের বাচ্চা বলে ধাঁতানি দিয়েছেন।

    মিস্ত্রীর শরীর বন্য মহিষের মতো। ঘাড় গর্দানে এক হয়ে আছে। তাকে শুওরের বাচ্চা বলতে হলে যথেষ্ট সাহস লাগে। সাদেক আলির সাহস সীমাহীন। মাঝখানে ঘাবড়ে গেছে রানা।

    মিস্ত্রি থমথমে গলায় বলল, আপনে যে আমারে শুওরের বাচ্চা কইলেন। সাদেক আলি বললেন, চুপ। আবার মুখে মুখে কথা। রানা দে তো এই হারামজাদার গালে একটা চড়। আমাকে কোশ্চেন করে। সাহস কত।

    এমন পরিস্থিতিতে বাড়ি ছেড়ে চায়ের দোকানে আসা সম্ভব না। রানা একবার সাদেক আলির দিকে একবার পানির মিস্ত্রির দিকে তাকাচ্ছে।

    সাদেক আলি আরেকবার হুংকার দিলেন, দাঁড়িয়ে দেখছিস কি, চড় দে। রানা সত্যি-সত্যি চড়ি বসিয়ে দিল।

     

    প্রজেক্ট দারুচিনি দ্বীপের ব্ল প্রিন্ট তৈরী প্রায় শেষ।

    দায়িত্ব ভাগ করে দেয়া হয়েছে, মোতালেব টাকা পয়সার ব্যাপারগুলো দেখবে তাকে অর্থ মন্ত্রী বলা চলে। জেনারেল ফান্ড থাকবে তার কাছে। জেনারেল ফান্ড থেকে টাকা-পয়সা সেই খরচ করবে। খাওয়া-দাওয়া, নাশতা এইসব বিষয়ে কারো আলাদা কিছু করতে হবে না। সবাই একই ধরনের খাবার খাবে। একই নাশতা।

    কল্যাণ মন্ত্রীর পোর্ট ফলিও সর্বসম্মতিক্রমে রানাকে তার অনুপস্থিতিতেই দেয়া হয়েছে। দলের সুখ-সুবিধা সে দেখবে। হোটেল খুঁজে বের করা, এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় কিভাবে যাওয়া হবে এই সব ব্যবস্থা তার। ট্রেনের টিকিটও সেই কাটবে। সেন্ট মার্টিনে কিভাবে যেতে হবে তাও সেই খুঁজে বের করবে।

    মোতালেব বলল, এন্টারটেইনমেন্টটা আমার হাতে ছেড়ে দে। গান-বাজনা দিয়ে হুলুস্থুলু করে দেব।

    তারেক বিরক্ত গলায় বলল, তুই গান জানিস না-কি?

    ক্যাসেট প্লেয়ার নিচ্ছি। রবীন্দ্র সংগীতের ছটা ক্যাসেট নিচ্ছি।

    তারেক আরো বিরক্ত হয়ে বলল, যাচ্ছি এক ধরনের এক্সপিডিসনে—সেখানে রবীন্দ্র সংগীত? কুঁ কুঁ করে–সখী গো–ধর ধর।

    টেগোরকে নিয়ে এই রকম ইনসালটিং কথা বললে কিন্তু ফাটাফাটি হয়ে যাবে। নাক বরাবর ফ্ৰী স্টাইল ঘুসি খাবি।

    মোতালেব ক্রমাগত সিগারেট খেয়ে যাচ্ছে। সেন্ট মার্টিন আইল্যান্ডে গিয়ে সে সিগারেট ছেড়ে দেবে—কাজেই যতটা পারা যায় খেয়ে নেয়া। সে দশ মিনিটের মাথায় তৃতীয় সিগারেটটা ধরাতে ধরাতে বলল, এতবড় একটা আন্দোলনের মাথায় আমাদের কি যাওয়া উচিত? আরেকবার ভেবে দেখ সবাই।

    তারেক খুবই বিরক্ত হলো। রাগী গলায় বলল, আন্দোলন নিয়ে তুই বড় বড় বাত ছাড়বি না। গোটা আন্দোলনের সময় তুই ঘরে বসে ফিডার দিয়ে দুধ খেয়েছিস। আন্দোলন করেছি আমরা। পুলিশের বাড়ি খেয়ে মাথা ফাটিয়েছি। চার খান স্টীচ লেগেছে। এরশাদকে গেট আউট করেছি—এখন খানিকটা আমোদফুর্তি করা যায়।

    আন্দোলন তো এখনো শেষ হয় নি।

    ফিরে এসে করব। উইথ নিউ এনার্জি। এরশাদকে জেলখানায় নেয়ার জন্যে লাঠি মিছিল হবে। আমরা সবাই থাকব একেবারে ফ্রন্টে।

    সঞ্জু উঁচু গলায় বলল, চুপ করতো— ইম্পৰ্টেন্ট কাজ বাকি আছে। দুটা ডিসিসান নিতে হবে। এক নাম্বার–শুভ্ৰ না-কি আমাদের সঙ্গে যেতে চাচ্ছে—ওকে নেয়া যাবে না।

    মোতালেব বলল, মাথা খারাপ ওকে কি জন্যে নেব? আন্ধাকে নিয়ে গেলে শেষ পর্যন্ত কোলে নিয়ে ঘুরতে হবে। পিসু করতেও তার কমোড লাগে।

    সঞ্জু বলল, গোড়াতেই ওকে না করার দরকার ছিল। তখন তো কেউ কিছু বললি না।

    তখন ভেবেছিলাম নিজ থেকেই পিছিয়ে পড়বে। এইসব পুতু পুতু জাপানি ডল শুরুতে খুব উৎসাহ দেখায় শেষ পর্যন্ত যায় না।

    মোতালেব বলল, ওরটা আমার উপর ছেড়ে দে। আমি সামলাব।

    সঞ্জু বলল, তুই কি ভাবে সামলাবি?

    আমাদের আলটিমেট পরিকল্পনার কথা বললেই সে চোখ বড় বড় করে বলবে—আমি যাব না।

    মোতালেবের আলটিমেট পরিকল্পনা অবশ্যি এখনো দলের অনুমোদন পায় নি। তবে সরাসরি কেউ এখন পর্যন্ত না বলে নি। মেয়েরা যদি শেষ পর্যন্ত সঙ্গে যায় তাহলে এই পরিকল্পনার প্রশ্নই উঠে না। মেয়েরা সম্ভবত যাবে না। মেয়েরা সব ব্যাপারে শুরুতে খুব উৎসাহ দেখায়, তারপর যেই বাড়ি থেকে একটা ধমক খায় ওম্নি সব ঠাণ্ডা।

    মোতালেবের পরিকল্পনা হলো। জোছনা রাতে—ঠিক বারটা এক মিনিটে প্রকৃতির সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করার জন্যে সভ্যতার সমস্ত সংশ্ৰব বিসর্জন দিতে হবে; অর্থাৎ জামা-কাপড় সব খুলে আদি মানব হতে হবে। তারপর সমুদ্রের জলে নেমে যাওয়া। প্রকৃতির পরিপূর্ণ অংশ হয়ে যাওয়া। মাঝে-মাঝে জল থেকে উঠে সমুদ্রের ধার ঘেঁষে ছুটে যাওয়া হবে। বালিতে গড়াগড়ি করা হবে। আবার পানিতে নেমে যাওয়া। এ রকম চলবে সারা রাত। ঠিক সূর্য উঠার পর পর সভ্য জগতে ফিরে আসা হবে। জামাকাপড় গায়ে দেয়া হবে।

    মোতালেবের পরিকল্পনাটা যেমন বর্ণনার ভঙ্গি তারচে অনেক বেশি সুন্দর। সে হাত-পা নেড়ে গলার স্বর উঠা-নামা করে পুরো ব্যাপারটা এমন ভাবে বলল যে কেউ তাৎক্ষণিকভাবে কিছু বলতে পারল না, শুধু রানা ক্ষীণ স্বরে বলল, আমরা নেংটো হয়ে দৌড়াদৌড়ি করব তখন যদি স্থানীয় লোকজন পিটিয়ে দেয়।

    মোতালেব ক্রুদ্ধ। গলায় বলল, স্থানীয় লোক? স্থানীয় লোক কোথায় পেলি সেন্ট মার্টিন হলো একটা প্রবাল দ্বীপ। জনমানব নেই। ধু ধু করছে বালি, নারিকেল গাছ, পাম গাছের সারি। আধো অন্ধকার আধো আলো।

    ঠাণ্ডা লাগবে না, শীতের সময়?

    ঠাণ্ডাতো লাগবেই। আদিম মানবের ঠাণ্ডা লাগে নি? তাছাড়া স্যূয়েটার গায়ে দিয়ে পানিতে নামলে কি তোর ঠাণ্ডা কম লাগবে? যাই হোক আমি আমার পরিকল্পনার কথা বললাম, তোরা যদি রাজি নাও হোস আমি একাই এগিয়ে যাব। যাকে বলে—একলা চল একলা চল রে।

     

    রানা এবং বল্টু দুই জন প্রায় এক সঙ্গেই চায়ের দোকানে ঢুকল। রানার ভাবভঙ্গি বলে দিচ্ছে সে ভয়াবহ দুর্যোগ অতিক্রম করে এসেছে। এখনো নিজেকে পুরোপুরি সামলে উঠতে পারে নি। বল্টুকেও কেমন যেন বিপর্যন্ত লাগছে। বল্টু ছোটখাট মানুষ, কোন সমস্যা হলেই সে আরো ছোট হয়ে যায় বলে মনে হয়।

    সে সঞ্জুর পাশে বসতে বসতে বলল, অবস্থা কেরোসিন। আনুশকা আমার বাসায় এসেছিল, বলেছে সব মিলিয়ে পাঁচ জন মেয়ে আমাদের সঙ্গে যাচ্ছে।

    মোতালেব বলল, মাথা খারাপ না-কি। মেয়েদের আমরা সাথে নিচ্ছি না। নট এ সিংগোল ওয়ান।

    বল্টু চিবিয়ে চিবিয়ে বলল, সেই কথা এখন বলে লাভ কি? তোরা আগে কোথায় ছিলি? তখন গদগদ গলায় কেন বললি—তোমরা মেয়েরা যদি যেতে চাও, যেতে পার। নো প্রবলেম।

    আমি কোনদিন এই কথা বলি নি। মেয়েদের না নেয়ার পেছনে আমার একশ একটা যুক্তি আছে।

    সেই একশ একটা যুক্তি তুই আনুশকাকে বুঝিয়ে বল। আমি তার বাসায় গিয়ে যুক্তি বুঝিয়ে আসব? আমার এত দায় পড়ে নি। বাসায় গিয়ে যুক্তি বুঝাতে হবে না। আনুশকা এখানে আসছে। আমি ঠিকানা দিয়ে দিয়েছি—দশ মিনিটের মধ্যে চলে আসবে। তার আসার আগে আগে একটা কথা আমি পরিষ্কার বলতে চাই—মেয়েদের সঙ্গে নেয়ার আমি ডেড এগেইনস্টে। যদি তাদেরকে নিতে চাও, নাও আমার নামটা কেটে বাদ দিয়ে দাও। আমার স্ট্রেইট কথা।

    সঞ্জু বলল, তোর এত আপত্তি কেন? যেতে চাচ্ছে যাক না। দল যত বড় হয়। ততই তো ভালো।

    বলুন্টু কঠিন গলায় বলল, পাঁচটা মেয়ে সঙ্গে গেলে আমাদের ভেড়া বানিয়ে রাখবে। সারাক্ষণ ফরমাস, এটা কর, ওটা করা। জংলা জায়গায় যাচ্ছি।-কোথায় বাথরুম কোথায় কি। তারপর সুন্দর সুন্দর মেয়ে—ধর গুণ্ডা বা ডাকাত এ্যাটাক করে একটাকে ধরে নিয়ে গেল—তখন অবস্থা কি হবে? কিংবা ধর সমুদ্রে নেমেছে হঠাৎ ঢেউ এসে একটাকে ভাসিয়ে নিয়ে গেল। চোরাবালিতে আটকে গেল এক জন। তখন তোরা কি করবি আমাকে বল।

    কেউ কোন কথা বলল না।

    রানা আরেক দফা চ্যায়ের কথা বলে এসে ক্ষীণ স্বরে বলল, আমারো মনে হয়। মেয়েদের নেয়া ঠিক হবে না। তবু যদি নিতেই হয় তাহলে একটা লিখিত আন্ডারটেকিং দিয়ে নিতে হবে। লেখা থাকবে আমার মৃত্যুর জন্যে কেউ দায়ী নয়।

    মোতালেব কড়া গলায় বলল, চুপ কর গাধা। যত দিন যাচ্ছে তুই ততই গাধা হচ্ছিস। ভদ্রসমাজে কথা বলার কোন যোগ্যতা তোর নেই। আমাদের ডিসিসান মেকিং এর সময় তুই দয়া করে একটা কথা বলবি না। নট এ সিংগেল ওয়ার্ড।

    আনুশকাদের কালো বিশাল গাড়ি চায়ের দোকানের সামনে এসে থেমেছে। আনুশকা যখন সন্ধ্যার পর চলাফেরা করে তখন ড্রাইভার ছাড়াও ড্রাইভারের পাশে এক জন থাকে। তার নাম মফিজ। আনুশকার দিকে নজর রাখাই যার একমাত্র কাজ। আনুশকা হাসিমুখে গাড়ি থেকে নামল। চায়ের দোকানের সবাই ঘুরে তাকাল। অনেকক্ষণ কারো চোখে পলক পড়ল না। পলক না পড়ারই কথা। আনুশকার মতো রূপবতী সচরাচর চোখে পড়ে না।

    চায়ের দোকানের মালিক উঠে দাঁড়িয়েছে—এমন কাস্টমার তার দোকানে আসে না। ইনি নিশ্চয়ই কাস্টমার না, অন্য কোন ব্যাপার। আনুশকা দোকানের মালিকের দিকে তাকিয়ে মিষ্টি গলায় বলল, চিনি এবং দুধ ছাড়া এক কাপ চা দিতে পারেন? বলেই অপেক্ষা করল না—এগিয়ে গেল দলটির দিকে।

    রানা অস্বস্তির সঙ্গে বলল, এখানে রাতের বেলা আসার কি দরকার ছিল?

    আনুশকা বসতে বসতে বলল, কোনই দরকার ছিল না, তবু আসলাম। যাবার ব্যাপারটা চূড়ান্ত করতে চাই। সব মিলিয়ে আমরা পাঁচ জন মেয়ে যাচ্ছি। তাদের প্রতিনিধি হিসেবে আমি এসেছি।

    বল্ট অন্য দিকে তাকিয়ে বলল, আমরা তোমাদের নিচ্ছি না।

    আমিও তাই আন্দাজ করছিলাম। কেন জানতে পারি?

    অনেক ঝামেলা।

    কি কি ঝামেলা তা কি বলা যাবে?

    একশ একটা ঝামেলা। তার মধ্যে একটা বললেই তোমরা পিছিয়ে যাবে।

    বল শুনি।

    সেন্ট মার্টিন আইল্যান্ডে কোন বাথরুম নেই।

    বাথরুম নেই?

    না।

    যদি না থাকে তোমরা একটা বাথরুম বানিয়ে দেবে।

    মোতালেব ক্রুদ্ধ। গলায় বলল, সেন্টমার্টিন আইল্যান্ডে আমরা বাথরুম বানানোর জন্যে যাচ্ছি?

    কি জন্যে যাচ্ছ শুনি?

    সেটা এখন তোমাকে এক্সপ্লেইন করতে পারব না। আমাদের অনেক পরিকল্পনা আছে। মেয়েছেলে থাকলে সেখানে সমস্যা।

    মেয়েছেলে-পুরুষছেলের মধ্যে তফাতটা কি শুনি? পুরুষ হয়েছ বলে তোমাদের কি একটা লেজ গজিয়েছে?

    তর্কাতর্কির কোন ব্যাপার না—আসল কথা এবং ফাইন্যাল কথা তোমাদের আমরা নিচ্ছি না। আমরা স্বাধীন ভাবে ঘুরব।

    আমরা সঙ্গে থাকলে পরাধীন হয়ে যাবে? এইসব শিখেছ কোথেকে?

    রানা বলল, তর্ক করার জন্যে তর্ক করলে তো লাভ হবে না। ঠাণ্ডা মাথায় পুরো ব্যাপারটা দেখ—এটা যদি পিকনিক হত, ধর জয়দেবপুরে যাচ্ছি—সকালে যাব সন্ধ্যায় ফিরে আসব, তাহলে একটা কথা ছিল। ব্যাপারটা মোটেই পিকনিক না। এক সপ্তাহের জন্যে যাচ্ছি।

    চা দিয়ে গেছে। চিনি-দুধ ছাড়া গাঢ় কাল রঙের খানিকটা তরল পদার্থ। যা দেখলেই গায়ে কাটা দেয়ার কথা। আনুশকা নির্বিকার ভঙ্গিতে তাতে চুমুক দিচ্ছে। তাকে দেখে মনে হচ্ছে চা খেয়ে সে বেশ তৃপ্তি পাচ্ছে।

    মোতালেব বলল, ঠাণ্ডা মাথায় চিন্তা কর আনুশকা, তুমি সাতদিনের জন্যে আমাদের সঙ্গে যেতে চাও। অচেনা অজানা জায়গায় রাতে বিরাতে ঘুরবে। অথচ এই ঢাকা শহরেও তুমি সন্ধ্যার পর একা চলাফেরা করতে পার না। তোমার সঙ্গে একটা বিশাল গাড়ি থাকে। গাড়িতে ড্রাইভার ছাড়াও এক জন বডিগার্ড থাকে। থাকে না?

    আনুশকা চায়ের কাপ নামিয়ে উঠে দাঁড়াল এবং শীতল গলায় বলল, গাড়ি বিদায় করে আবার আসছি। তোমাদের সঙ্গে রাত বারটা পর্যন্ত গল্প করব। তারপর একা একা বাসায় ফিরব।

    দলের সবাই মুখ চাওয়া-চাওয়ি করল। সবাই দেখল আনুশকা ড্রাইভারকে কি বলতেই হুস করে গাড়ি বেরিয়ে গেছে। আনুশকা শান্ত মুখে ফিরে আসছে। যেন কিছুই হয় নি।

    সে বসতে বসতে বলল, তোমরা কবে যাচ্ছ শুনি?

    মঙ্গলবার।

    এই মঙ্গলবার??

    হুঁ।

    রাতের ট্রেনে যাব। চিটাগাং পৌঁছব ভোরবেলা। সকালে নাশতা খেয়ে বাসে করে যাব। কক্সবাজার। এক রাত সেখানে থেকে পরদিন ভোরে রওনা হব টেকনাফ। অর্থাৎ টেকনাফ পৌঁছাচ্ছি বৃহস্পতিবার দুপুরে। সেখানে কোনো একটা হোটেলে লাঞ্চ করে নৌকা নিয়ে যাব সেন্টমার্টিন। সন্ধ্যায় সন্ধ্যায় পৌঁছব। সন্ধ্যার পর আকাশে উঠবে পূর্ণ চন্দ্ৰ।

    আনুশকা বলল, শেষবারের মত জিজ্ঞেস করছি। তোমরা আমাদের নিচ্ছ কি নিচ্ছ না?

    সঞ্জু বলল, নিচ্ছি না।

    ভেরি গুড। আমরা নিজেরা নিজেরা যাব। একই সময়ে রওনা হব। একই ট্রেনে যাব। টেকনাফও একই ভাবে পৌঁছব। এখন কি ব্যাপারটা বুঝতে পারছ?

    এই পাগলামীর কোনো মানে হয়?

    মানে না হলে কিছু করার নেই। আমার সিদ্ধান্ত আমি জানিয়ে গেলাম। এখন বাসায় যাচ্ছি। আমার বাসায় সবাই বসে আছে। ওদের খবর দিতে হবে।

    রানা বলল, গাড়িতে ফেরত পাঠিয়ে দিয়েছ, চল তোমাকে বাসায় দিয়ে আসি৷

    আনুশকা রাগী গলায় বলল, কাউকে বাসায় পৌছে দিতে হবে না। I can take care of myself.

    কি মুশকিল তুমি একা যাবে না-কি?

    অফকোর্স আমি একা একা যাব। আমাকে তোমরা ভেবেছ কি?

    রিকশা বা বেবীটেক্সীতে তুলে দেই?

    না তাও তুলতে হবে না। আমি একা যাব।

    সবাইকে মোটামুটি হতচকিত করে আনুশকা বেরিয়ে গেল। যাবার আগে ম্যানেজারকে চায়ের দাম দিয়ে গেল। ম্যানেজার কিছুতেই দাম নেবে না। আনুশকা বলল, আবার যখন আসব, আপনার গেস্ট হিসেবে তিনি কাপ চা খাব। আজকের দামটা রাখুন। আজতো আমি আপনার গেস্ট না। আজ প্রথম পরিচয় হলো। ভাই আপনার নাম কি?

    ম্যানেজার বিস্ময়ে অভিভূত হয়ে বলল, মোহাম্মদ ইসলাম মিয়া।

    মোহাম্মদ ইসমাইল মিয়া, যাই। খোদা হাফেজ। আনুশকাকে রিক্সা বা বেবীটেক্সির জন্যে বেশিদূর হাঁটতে হলো না। কারণ সে গাড়ি বিদেয় করে নি। ড্রাইভারকে বলেছে গাড়ি শ্যামলী সিনেমা হলের কাছে নিয়ে রাখতে। ড্রাইভার তাই রেখেছে।

    ⤶ ⤷
    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleদিঘির জলে কার ছায়া গো – হুমায়ূন আহমেদ
    Next Article তিথির নীল তোয়ালে – হুমায়ূন আহমেদ

    Related Articles

    হুমায়ূন আহমেদ

    আসমানীরা তিন বোন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    হুমায়ূন আহমেদ

    ইস্টিশন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    হুমায়ূন আহমেদ

    উড়ালপঙ্খী – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    হুমায়ূন আহমেদ

    এই বসন্তে – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    হুমায়ূন আহমেদ

    এই মেঘ, রৌদ্রছায়া – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    হুমায়ূন আহমেদ

    এইসব দিনরাত্রি – হুমায়ূন আহমেদ

    December 23, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Generic selectors
    Exact matches only
    Search in title
    Search in content
    Post Type Selectors
    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    আসমানীরা তিন বোন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    আসমানীরা তিন বোন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    Our Picks

    আসমানীরা তিন বোন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025

    ইস্টিশন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025

    উড়ালপঙ্খী – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }