Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    আসমানীরা তিন বোন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025

    ইস্টিশন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025

    উড়ালপঙ্খী – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • English Books
      • Jules Verne
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    দারুচিনি দ্বীপ – হুমায়ূন আহমেদ

    হুমায়ূন আহমেদ এক পাতা গল্প98 Mins Read0
    ⤶ ⤷

    ০৬. সঞ্জুর জিনিসপত্র গোছগাছ করা হচ্ছে

    সঞ্জুর জিনিসপত্র গোছগাছ করা হচ্ছে।

    গোছানোর কাজটা করছেন ফরিদা। সঞ্জু বলল, তুমি কষ্ট করছ, কেন মা? দাও আমাকে দাও।

    ফরিদা ধমক দিলেন, তুই চুপ করে বসতো। চা খাবি? ও মুনা যা ভাইয়ার জন্যে চা বানিয়ে আনা। আমাকেও একটু দিস। আর তোর বাবাকে জিজ্ঞেস করে আয় সে খাবে না-কি।

    সঞ্জু বলল, বাবা অফিসে যান নি?

    না।

    জ্বরতো কমেছে। জ্বর কমেনি?

    হ্যাঁ কমেছে। তুই আজ চলে যাচ্ছিস-তাই অফিসে গেল না।

    সে কি?

    সঞ্জুর সত্যি সত্যি লজ্জা করতে লাগল। বাবা অফিসে না গিয়ে ঘরে বসে থাকার সঙ্গে তার বেড়াতে যাবার সম্পর্কটা সে ঠিক ধরতে পারছে না।

    ফরিদা বললেন, যা তুই তোর বাবার সঙ্গে কথা বলে আয়।

    আমি কি কথা বলব? বাবাকে দেখলেই আমার হার্ট বিট স্লো হয়ে যায়।

    কি যে তুই বলিস। উনি কি জীবনে তোদের বকা দিয়েছেন না-কি উঁচু গলায় একটা কথা বলেছেন?

    তবু বাবাকে সাংঘাতিক ভয় লাগে মা। তুমি ঐ বদ-রঙ্গা শালটা দিচ্ছ কেন?

    তোর বাবা বলেছে সঙ্গে নিয়ে যেতে। নিয়ে যা। না নিলে উনি মনে কষ্ট পাবেন। আর শোন বাবা, যা উনার কাছে গিয়ে বস, একটু গল্প টল্প কর।

    কি গল্প করব বলতো?

    গল্প না করলে না করবি। সামনে গিয়ে বস।

    সঞ্জু দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে উঠে গেল।

     

    সোবাহান সাহেব খবরের কাগজ পড়ছিলেন।

    সঞ্জুকে ঢুকতে দেখেও খবরের কাগজ থেকে মুখ তুললেন না। মৃদু স্বরে বললেন, বস।

    সঞ্জু বসল।

    এমনভাবে বসিল যেন বাবার মুখোমুখি হতে না হয়। সোবাহান সাহেব বললেন, সাদামকে তোর কেমন মনে হয়?

    প্রশ্নটি এতই অপ্রত্যাশিত যে সঞ্জু পুরোপুরি হকচাকিয়ে গেল। সোবাহান সাহেব বললেন, স্কাড জিনিসটাতো দেখি খুবই মারাত্মক।

    কিছু না বললে ভালো দেখায় না বলেই সঞ্জু বলল, খুব মারাত্মক না। পেট্রিয়ট দিয়েতো শেষ করে দিচ্ছে।

    আরে না। এই সব ওয়েস্টার্ন প্রেসের কথা বার্তা। একটাও বিশ্বাস করবি না। সাদ্দাম সহজ পাত্র না। বুশের কাল ঘাম বের করে দিয়েছে। এই ঝামেলা হবে আগে জানলে সে মিডলইস্টের ত্রিসীমানায় আসত না।

    মিডল ইস্টের আলোচনায় যাবার কোনো রকম ইচ্ছা সঞ্জু অনুভব করছে না। অথচ সে বুঝতে পারছে আলোচনায় অংশ গ্রহণ করা খুবই উচিত। বাবা তাই চাচ্ছেন। কেমন বন্ধুর মতো গলায় কথা বলছেন। যিনি তাঁর ছেলে-মেয়েদের সঙ্গে কখনো কথা বলেন না। তিনি যদি হঠাৎ বন্ধুর মতো আচরণ করতে থাকেন তাহলে বিরাট সমস্যা হয়।

    মুনা চা নিয়ে আসায় পরিস্থিতির খানিকটা উন্নতি হলো। কিছু একটা করার সুযোগ পাওয়া গেছে। চা খাওয়া নিয়ে ব্যস্ত থাকা যাবে।

    চায়ে চিনি হয় নি। বিস্বাদ তিতকুট খানিকটা তরল পদার্থ, যার উপর খুব কম হলেও চারটা পিপড়া ভাসছে। মুনা যতই দিন যাচ্ছে ততই গাধা হচ্ছে। বাবা সামনে না থাকলে ধমক দিয়ে দেয়া যেত। এখন ধমক দেয়ার প্রশ্নই ওঠে না। হাসি হাসি মুখ করে চা খেয়ে যেতে হবে। মুড়ি ভিজিয়ে লোকজন যেমন চা খায় তেমনি পিপড়া ভিজিয়ে চা খাওয়া। সঞ্জু এক চুমুকে সব কটা পিপড়া খেয়ে ফেলল।

     

    সোবাহান সাহেব বললেন, তোমার মতো বয়সে আমি একবার ঘুরতে বের হয়েছিলাম। দাৰ্জিলিং গিয়েছিলাম। বেনাপোল হয়ে কলকাতায়। সেখান থেকে বাসে করে শিলিগুড়ি।

    সঞ্জু চুপ করে রইল। সোবাহান সাহেব কোলের উপর বালিস টেনে নিয়েছেন। এটা তাঁর দীর্ঘ আলাপের প্রস্তুতি কি-না তা সঞ্জু বুঝতে পারল না। বাবার সব কথা বার্তাই সংক্ষিপ্ত আজ কি তাঁকে কথা বলার ভূতে পেয়েছে? এত কথা বলছেন কেন?

    শিলিগুড়িতে একটা ধর্মশালায় এক রাত ছিলাম। ভাড়া কত জনিস? এক টাকা। ঐ ধর্মশালাতে থাকাই আমার কাল হলো। সকালে উঠে দেখি টাকা পয়সা সব চুরি হয়ে গেছে। পায়জামা পাঞ্জাবী গায়ে দিয়ে কম্বলের নিচে শুয়েছিলাম। পায়জামা পাঞ্জাবী ছাড়া আর কিছুই নেই। হা-হা-হা।

    তিনি যেভাবে হাসছেন তাতে মনে হচ্ছে ঐ সময়কার খারাপ অবস্থাটাও খুব মজার ছিল। যদিও মজার হবার কোনোই কারণ নেই। বিদেশে টাকা পয়সা চুরি হয়ে যাওয়া তো ভয়াবহ।

    তারপর কি হলো শোন—আমার বিছানার পাশের বিছানায় ঘুমুচ্ছিলেন এক সাধুবাবা। তিনি বললেন, ক্যা হুয়া লেড়কী? আমি বললাম, সব চুরি গেছে।

    বাংলায় বললেন? না বাংলায় বললে কি বুঝবে? আমি ভাঙ্গা চোরা হিন্দীতে বললাম। এক চোরানে সব লে কর ভাগ গিয়া।

    গল্পের এই পর্যায়ে মুনা ঘরে ঢুকে বলল, ভাইয়া বল্টু ভাই এসেছে। সঞ্জু হাঁপ ছেড়ে বাঁচল। এখন বাবার সামনে থেকে উঠে যাবার একটা অজুহাত পাওয়া গেল। সে বলল, বাবা আমি একটু আসছি।

     

    বল্ট চুল কাটিয়েছে।

    গায়ে মেরুন রঙের হাফ হাওয়াই সার্ট। সার্ট নতুন কেনা হয়েছে। সুয়েটারে একটা ফুটো আছে বলে স্যুয়েটার পরেছে সার্টের নিচে। সঞ্জুকে দেখেই বলল, বিরাট কেলেংকারীয়াস ব্যাপার হয়েছে। শুভ্ৰকে টেলিফোন করেছিলাম, ধরেছেন শুভ্রর বাবা। উনার গলা অবিকল শুভ্রর মতোন। আমি বললাম, কে কানী বাবা নাकि? তোর কাছে এক্সট্রা হ্যান্ডব্যাগ আছে? কি অবস্থা দেখতো।

    উনি কি বললেন?

    কি বললেন ভালো করে শুনতেই পারি নি। ভয়ে তখন আমার ব্রেইন ঠাণ্ডী মেরে গেছে। সঞ্জু তোর কাছে এক্সট্রা হ্যান্ডব্যাগ আছে?

    না।

    আমি একটা জোগাড় করেছি। সেটার আবার চেইন লাগে না।

    তুইতো আর হীরা-মুক্তা নিয়ে যাচ্ছিস না। চেইন না লাগলেও কিছু না।

    তা ঠিক।

    তোর যাওয়া কি হবে? তুই যে বলছিলি রাত আটটার আগে বলতে পারবি না।

    রাত আটটার সময় টাকা পাওয়ার কথা। যদি পাই তবেই যাওয়া হবে। না পেলে না আমি প্রাইভেট টিউশ্যানী করি না? আমার ছাত্রকে বলে রেখেছি। মানে ধার হিসেবে চেয়েছি। সে বলেছে জোগাড় করে রাখবে। তোর টাকা জোগাড় হয়েছে?

    মার কাছ থেকে নিচ্ছি।

    তুই সুখে আছিস। টাকা চাওয়ার লোক আছে। আমার অবস্থাটা দেখ ছাত্রের কাছে টাকা ধার চাইছি।

    সঞ্জু বলল, চা খাবি?

    না। ব্যাগের সন্ধানে বের হব। সব রেডি রাখি যদি টাকা পাওয়া যায়। তুই মুনাকে একটু ডাকতো। মুনা বলছিল নিউ মার্কেট যাবে। আমি ঝিকাতলা যাব, নিউ মার্কেটে ওকে নামিয়ে দেব।

    মুনার কথা বলতে গিয়ে বল্টুর বুক ধ্বক ধ্বক করছিল। সব সময় মনে হচ্ছিল সঞ্জু আবার কিছু বুঝে ফেলছে নাতো? সে অবশ্যি প্রাণপণ চেষ্টা করছে স্বাভাবিক থাকার। কিন্তু মনের ভাব কতদিন আর গোপন থাকবে? মুনার কথা মনে হলে শরীরে কেমন যেন এক ধরনের কাঁপুনি হয়। কথা বলতে গেলে কথা বেঁধে যায়। কি যে সমস্যা হয়েছে। সঞ্জু তাঁর প্রাণের বন্ধু। সে যদি তার মনের ভাব কোনোদিন জেনে ফেলে খুবই লজ্জার ব্যাপার হবে। অবশ্যি সঞ্জু এখনো কিছুই বুঝতে পারে নি। সে যে এই বাড়িতে একটু সেজে গুজে আসে তাও লক্ষ্য করে নি।

    তবে মুনার ব্যাপারটা সে এখনো কিছু বুঝতে পারছে না। বাচ্চা মেয়ে মাত্র সেকেন্ড ইয়ারে উঠেছে অথচ কথাবার্তার মার প্যাঁচ অসাধারণ। প্রতিটি কথার দুইটা তিনটা মানে হয়। কোন মানেটা রাখবে, কোনটা রাখবে না সেটাই সমস্যা।

     

    রিকশায় উঠেই বল্টু রিকশাওয়ালাকে বলল, হুড় তুলে দাওতো।

    মুনা বলল হুড় তুলতে হবে কেন?

    কে কি মনে করে।

    মুনা বলল, মনে করা করির কি আছে? ভাই-বোন রিকশা করে যাচ্ছি।

    বল্টর মনটাই খারাপ হয়ে গেল। ভাই বোন মানে? এসব কি বলছে মুনা। বল্টু মুখের মন খারাপ ভাব আড়াল করার জন্যে সিগারেট ধরাল। মুনা বলল, বল্টু ভাই, আজ আপনাকে আরো বাঁটু বলে মনে হচ্ছে। ব্যাপার কি বলুনতো? আপনি কি কোমরে টাইট করে বেল্ট পরেছেন?

    তোমাকে কতবার বলেছি আমাকে বল্টু ভাই ডাকবে না। আমার ক্লাসের বন্ধুরা ডাকে সেটা ভিন্ন কথা। তুমি ডাকবে কেন?

    মনের ভুলে ডেকে ফেলি। আর ভুল হবে না এখন থেকে অয়ন ভাই ডাকব। আচ্ছা অয়ন মানে কি?

    ঐ ইয়ে পৰ্বত।

    আপনার মতো বাঁটু লোকের নাম পর্বত? আশ্চর্য তো।

    অয়নের মন আরো খারাপ হয়ে গেল। মুনা বলল, আপনি সত্যি জানেন। অয়ন মানে পর্বত?

    জানব না কেন? নিজের নামের মানে জানব না?

    উঁহু, আপনি জানেন না। আমি চলন্তিকায় দেখেছি। অয়ন হচ্ছে পথ। সূর্যের গতি পথ। অয়নাংশ মানে সূর্যের গতিপথের অংশ।

    অয়নের মনটা ভালো হয়ে গেল। এই মেয়ের মনে তার প্রতি সিরিয়াস ধরনের ফিলিংস আছে। ফিলিংস না থাকলে চলন্তিকা থেকে নামের মানে বের করত না। অবশ্যিই ফিলিংস আছে। অবশ্যই।

    অয়ন ভাই।

    কি?

    আপনার নাম নয়ন হলে ভালো হত। আপনার চোখ সুন্দর।

    কি যে তুমি বল।

    তবে আলাদা আলাদা করে দেখলে সুন্দর। দুইটা চোখ একত্রে দেখলে মনে হয় একটা একটু ট্যােরা। আপনি লক্ষ্য করেছেন?

    অয়ন কিছু বলল না। পুরোপুরি নিশ্চিত হয়ে গেল মুনার তার প্রতি কোন রকম আকর্ষণ নেই। ফাজলামী করে বেড়াচ্ছে। এর বেশি কিছু না। মাঝে মাঝে আচমকা যে সব আবেগের কথা বলে তাও নিশ্চয়ই এক ধরনের রসিকতা। অল্পবয়েসী মেয়েরা ক্রুর রসিকতা পছন্দ করে। বিশেষ করে সেই মেয়ে যদি অসাধারণ রূপবতী হয় তাহলেতো কথাই নেই।

    মুনা, নিউ মার্কেট এসে গেছে তুমি এখানে নাম, আমি এই রিকশা নিয়েই চলে যাব।

    আমি একা একা নিউ মার্কেটে ঘুরব? আপনি একটু আসুন না।

    অয়ন নেমে পড়ল। মেয়েটা তাকে পছন্দ করে না তাতে কি। সেতো করে। আরো খানিকটা সময়তো পাওয়া যাচ্ছে মুনার সঙ্গে থাকার। এটাই বা কম কি। অয়ন গম্ভীর গলায় বলল, যা কেনার চট করে কেন, আমার কাজ আছে।

    আমার পাঁচ মিনিট লাগবে।

    পাঁচ মিনিটেই শেষ করতে হবে এমন কোনো কথা নেই আমার হাতে ঘণ্টা খানিক সময় আছে।

    পাঁচ মিনিটও আমার লাগবে না-তিন মিনিটে কেনা শেষ করে ফেলব।

    অয়ন দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলল। মনে মনে আশা করতে লাগল। তিন মিনিটে নিশ্চয়ই কেনা কাটা শেষ হবে না। মেয়েদের পক্ষে তা একেবারেই অসম্ভব। মুনা অসম্ভবই সম্ভব করল। দুই মিনিটের ভেতর একটা প্যাকেট হাতে দোকান থেকে বের হয়ে বলল, চলুন যাই।

    কেনা শেষ?

    হুঁ।

    এত তাড়াতাড়ি কি কিনলে?

    আগে থেকে পছন্দ করা ছিল, শুধু টাকাটা দিলাম। এখন আপনি যেখানে যেতে চান—চলে যান, আমি আজিমপুর রীতাদের বাসায় যাব।

    ইয়ে চা খাবে না-কি? এখানে একটা রেস্টুরেন্টে খুবই ভালো চা বানায়।

    ভালো চা আপনি খান। আমার চা খাওয়ার শখ নেই। যাই কেমন? ও আচ্ছা! ধরুন, আপনার জন্যে একটা চিঠি আছে।

    অয়ন বিস্মিত হয়ে বলল, চিঠি?

    হ্যাঁ চিঠি। আর এই প্যাকেটটা রাখুন। এ রকম ট্যারা চোখে আমার দিকে তাকিয়ে থাকবেন না। দেখতে বিশ্ৰী লাগছে।

    হতচকিত অয়নের হাতে প্যাকেট এবং চিঠি দিয়ে মুনা ভিড়ের মধ্যে মিশে

    গেল। সংক্ষিপ্ত চিঠি। গোটা গোটা অক্ষরে লেখা।

    অয়ন ভাই,
    আপনি পুরো শীতকালটা হাফ হাতা একটা স্যুয়েটার (তাও ফুটো হওয়া) পরে কাটালেন। এই একই স্যুয়েটার আপনি গত শীতেও পরেছেন। আমার খুব কষ্ট হয়। আপনাকে ভালো কটা স্যুয়েটার উপহার দিলাম। সেন্ট মার্টিনে যখন যাবেন তখন সেটা যেন গায়ে থাকে।
    মুনা।
    পুনশ্চ : যতই দিন যাচ্ছে আপনি ততই বাঁটু হচ্ছেন। ব্যাপার কি বলুনতো?

     

    প্যাকেটের ভেতর হালকা আকাশী রং এর একটা ফুল হাতা স্যুয়েটার। যেন দূর আকাশের ছোট্ট একটা অংশ সাদা রং এর পলিথিনের ব্যাগে ঢুকিয়ে রাখা হয়েছে। অয়নের কেমন যেন লাগছে। জ্বর জ্বর বোধ হচ্ছে। শরীরে এক ধরনের কম্পন। কেন জানি শুধু মার কথা মনে পড়ছে, পনেরো বছর আগে যিনি মারা গেছেন তাঁর কথা হঠাৎ মনে পড়ছে। কেন? যিনি খুব শখ করে তার নাম রেখেছিলেন অয়ন। সেই মধুর নামে আজ আর কেউ তাকে ডাকে না। খাওয়ার শেষে কেউ বলে না, অয়ন বাবা পেট ভরেছে? খেয়েছিস ভালো করে?

    অয়নের চোখে পানি এসে গেছে।

    সে সেই অশ্রুজল গোপন করার কোনো চেষ্টত্ব করল না। কিছু কিছু চোখের জলে অহংকার ও আনন্দ মেশা থাকে, সেই জল গোপন করার প্রয়োজন পড়ে না।

     

    মুনা বাড়িতে পা দেয়া মাত্র ফরিদা ভীত গলায় বললেন, পাউডারের কৌটায় এক হাজার টাকা ছিল। টাকাটা পাচ্ছি না-কি হয়েছে বলতো?

    মুনা ফ্যাকাসে হয়ে গেল। ক্ষীণ স্বরে বলল, সেকি।

    ফরিদা বললেন, আমারতো মা হাত পা কাঁপছে এখন কি করি?

    ভালো করে খুঁজে দেখেছ? চলতো দেখি আমিও খুঁজি।

    ফরিদা বললেন, একটা ঠিka ঝি রেখেছিলাম না? আমার মনে হয় ঐ নিয়ে গেছে।

    সেতো গেছে দশদিন আগে এর মধ্যে তুমি খুঁজে দেখনি?

    না।

    আজেবাজে জায়গায় তুমি টাকা রাখা কেন মা? পাউডারের কৌটায় কেউ টাকা রাখে? কোথায় ছিল কৌটা?

    কি হবে বলতো মুনা? সঞ্জুকে দেবী টাকাটা। সেতো এখনি চাইবে।

    মুনার মুখ ছাই বর্ণ হয়ে গেল। ভাইয়া, ভাইয়া যেতে পারবে না? সে টাকা চুরি করেছে বলে তার ভাইয়া যেতে পারবে না? সেতো টাকা চুরিও করে নি। ধার নিয়েছে। আগামী মাসের মাঝামাঝি স্কলারশীপের পনেরশ টাকা পাবে। সে ঠিক করে রেখেছিল টাকাটা পাওয়ামাত্র সে পনের শ টাকাই মার কোটায় রেখে দেবে। মা একদিন কোটা খুলে অবাক হয়ে বলবেন, ও মুনা দুইটা পাঁচশ টাকার নোট রেখেছিলাম। এখন দেখি পনের শ টাকা। ব্যাপারটা কি বলতো?

    সে বলবে, কি যে তুমি বল মা। টাকা কি আর ডিম দেয়। তুমি পনের শো রেখেছিলে।

    উঁহু। আমি রেখেছি। আমি জানি না?

    তাহলে নিশ্চয় ভৌতিক কাণ্ড। কোন পরোপকারী ভূত কিংবা পেত্নী হয়ত রেখে গেছে।

    তুই রাখিস নি তো?

    আমি? আমি রাখব কি ভাবে? আমি কি টাকা পাই? হেঁটে হেঁটে কলেজ করি। লোকজনদের ধাক্কা খেতে খেতে কলেজে যাওয়া ফিরে আসা। কি যে বিশ্ৰী তুমি তো জান না।

     

    ফরিদা বললেন, এখন কি করি মুনা বলতো?

    মুনা বলল, বাবার কাছে নেই?

    উনার কাছে থাকবে কোথেকে? উনিতো বেতন পেয়েই সব টাকা আমার কাছে এনে দেন।

    তাহলে কি বড় মামার অফিসে চলে যাব। বড় মামাকে বলব?

    ফরিদা অকুলে কুল পেলেন। আগ্রহ নিয়ে বললেন, তাই কর মা তাই কর।

    মুনা ঘর থেকে বেরুতেই সঞ্জু বলল, টাকাতো মা এখনো দিলে না।

    ফরিদা বললেন, তুই যাবি সেই রাত দশটায় এখন টাকা দিয়ে কি করব?

    সঞ্জু শংকিত গলায় বলল, সত্যি করে বল মা। টাকার জোগাড় হয়েছে?

    হয়েছে রে বাবা হয়েছে।

    সঞ্জুর মুখ থেকে শংকর ভাব পুরোপুরি দূর হলো না। সে মার দিকে তাকিয়ে রইল। ফরিদার মুখ শুকনো। তিনি হাসতে চেষ্টা করলেন। হাসতে পারলেন না। কোনো রকমে বললেন, চা খাবি বাবা? চা বানিয়ে দেই?

    ⤶ ⤷
    1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleদিঘির জলে কার ছায়া গো – হুমায়ূন আহমেদ
    Next Article তিথির নীল তোয়ালে – হুমায়ূন আহমেদ

    Related Articles

    হুমায়ূন আহমেদ

    আসমানীরা তিন বোন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    হুমায়ূন আহমেদ

    ইস্টিশন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    হুমায়ূন আহমেদ

    উড়ালপঙ্খী – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    হুমায়ূন আহমেদ

    এই বসন্তে – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    হুমায়ূন আহমেদ

    এই মেঘ, রৌদ্রছায়া – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    হুমায়ূন আহমেদ

    এইসব দিনরাত্রি – হুমায়ূন আহমেদ

    December 23, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Generic selectors
    Exact matches only
    Search in title
    Search in content
    Post Type Selectors
    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    আসমানীরা তিন বোন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    আসমানীরা তিন বোন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    Our Picks

    আসমানীরা তিন বোন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025

    ইস্টিশন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025

    উড়ালপঙ্খী – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }