Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    আসমানীরা তিন বোন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025

    ইস্টিশন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025

    উড়ালপঙ্খী – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • English Books
      • Jules Verne
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    দিঘির জলে কার ছায়া গো – হুমায়ূন আহমেদ

    হুমায়ূন আহমেদ এক পাতা গল্প99 Mins Read0
    ⤶ ⤷

    ৫. আবার পত্রিকার প্রথম পাতায়

    আলাউদ্দিন আবার পত্রিকার প্রথম পাতায় চলে এসেছেন। পুলিশ তাকে তিনদিনের রিমান্ডে নিয়েছিল। রিমান্ডে তিনি সব স্বীকার করেছেন। পত্রিকার খবরের শিরোনাম–

    ধর্ষক শিক্ষকের অপরাধ স্বীকার
    ঘটনার রগরগে বর্ণনা

    খবরের কাগজের প্রতিবেদক লিখছেন— ধর্ষক আলাউদ্দিন ছাত্রীকে নিজের খাসকামরায় ডেকে আনেন। ছাত্রীর লেখা রচনায় ইংরেজি বানানের ভুলগুলি ধরিয়ে দেবার জন্যে। এক পর্যায়ে তাকে বলেন— বাইরে হৈচৈ হচ্ছে, দরজাটা ভেজিয়ে দিয়ে এসো। সরল মনে ছাত্রী তাই করে। কিছুক্ষণের মধ্যে তিনি উঠে পড়েন এবং বলেন— দরজা পুরোপুরি না বন্ধ করলে শব্দ যাবে না। এই বলে নিজেই দরজার ছিটিকিনি লাগিয়ে দেন এবং ছাত্রীর সামনে এসে বসতে বসতে বলেন, তোমাকে আমার খুবই ভালো লাগে। কিন্তু আমার পক্ষে তোমাকে বিবাহ করা সম্ভব না। ঘরে আমার বড় বড় ছেলেমেয়ে আছে। এখন তোমার কাছে বৃদ্ধের একটা আবদার…

    এই পর্যন্ত পড়ে মুহিব কাগজ ভাঁজ করে একপাশে রাখল। সে বসেছে আমানুল্লাহ টি স্টলে। নিলি ম্যামের বাড়ির কাছে টি স্টল। প্রায়ই সে এখানে চা খেতে আসে। তার সঙ্গে বড় লাল রঙের ফ্লাস্ক। আজ সারাদিনে তার অনেক কর্মকাণ্ড আছে। একেকটা কাজ শেষ করবে আর এক কাপ করে চা খাবে। প্রথম যাবে আলাউদ্দিন কোচিং সেন্টারে। কোচিং সেন্টারের বর্তমান প্রধান আবু হিশাম তাকে ডেকে পাঠিয়েছেন। জরুরি কী কথা না-কি আছে।

    মুহিবের পাশে বসা কাস্টমার বলল, ব্রাদার, কাগজটা কি পড়া হয়েছে?

    হ্যাঁ।

    ইন্টারেস্টিং কিছু আছে?

    ধর্ষণ নিউজ আছে। পড়লে মজা পেতে পারেন। মুহিব কাগজ এগিয়ে দিল। তার দুকাপ চা খাওয়া হয়ে গেছে। এখন উঠে যাবার সময় হয়েছে। উঠতে ইচ্ছা করছে না। আবার বসে থাকতেও ভালো লাগছে না। গত পাঁচদিন তার বাবার সঙ্গে মুহিবের দেখা হয় নি। ওসি সাহেব বলেছেন আজ দেখা করা যাবে। আজকের পর দেখা করা সমস্যা হবে। তাকে থানা-হাজত থেকে জেল-হাজতে পাঠিয়ে দেয়া হবে।

    মুহিব আরেক কাপ চায়ের অর্ডার দিল। তার পাশে বসা লোক গভীর আগ্রহে আলাউদ্দিনের স্বীকারোক্তি পড়ছে। মুহিব তাকিয়ে আছে লোকটির দিকে এবং চিন্তা করছে বাবাকে নিয়ে তার নিজের আনন্দের কোনো স্মৃতি আছে কি-না। তেমন কিছু মনে পড়ছে না। কোনো না কোনো স্মৃতি নিশ্চয়ই আছে। মাথা Blank হয়ে গেছে। অশ্রুকে জিজ্ঞেস করতে হবে। মেয়েরা সুখের স্মৃতি দুঃখের স্মৃতি সবই মনে করে রাখে। কিছুই ভোলে না।

    ব্রাদার! বুভার কারবার পড়েছেন?

    হুঁ।

    আরে তোর এই অবস্থা—তুই বেশ্যাবাড়ি যা, চন্দ্রিমা উদ্যানে যা। দিনেদুপুরে ছাত্র-ছাত্রীর সামনে দরজা বন্ধ করে এইসব কী? এদের কী করা উচিত জানেন? স্টেডিয়ামে সবার সামনে গুলি করা উচিত। ফায়ারিং স্কোয়াড।

    মুহিব ফ্লাস্ক হাতে উঠে পড়ল। ফায়ারিং স্কোয়াড-বিষয়ক আলোচনায় অংশ

    নিল না।

     

    আবু হিশাম অফিসেই ছিলেন। মুহিবকে দেখে গম্ভীর গলায় বললেন, আজকের কাগজ পড়েছ?

    আজ বুধবার। মিথ্যাদিবস। কাজেই মুহিব বলল, না।

    না পড়ে ভালোই করেছ। তোমার বাবা অতি নোংরা কথাবার্তা নিজের মুখে স্বীকার করেছে। মানুষটা যে বিকারগ্রস্ত আগে বুঝতে পারি নাই। কঠিন বিকার ছাড়া এই ধরনের কথাবার্তা বলাও সম্ভব না। নিজের অপমান। তার ঘনিষ্ঠজনের অপমান। বন্ধুবান্ধবদের অপমান।

    যুহিব বলল, জরুরি কী কথা বলার জন্যে না-কি খবর দিয়েছেন?

    শুনলাম জমিটা বিক্রি করার চেষ্টা করছ। দালাল লাগিয়েছ?

    জি চাচা।

    জমি বেচলে তোমরা থাকবে কোথায়?

    মার এক ছোটভাই আছেন, বাড্ডায় থাকেন। মোটর মেকানিক। মাকে আর অশ্রুকে ঐ বাড়িতে পাঠিয়ে দিব।

    আর তুমি? তুমি কোথায় থাকবে?

    আমার ব্যাপারটা নিয়ে চিন্তা করি নাই চাচা। সব চিন্তা একটার পর একটা করতে হয়। একসঙ্গে তিন-চারটা চিন্তা করা যায় না।

    জমির দাম কত চাও?

    বাজারে যে দর আছে তাই চাই। সেটা পাব বলে মনে হয় না।

    খদ্দের পাওয়া গেছে?

    একজন পেয়েছি, সাত লাখ দিতে চায়। বলেছে রাজি হলে আগামীকাল বায়না করবে (এটা মিথ্যা। একজন পাওয়া গেছে ঠিকই, তবে সে চার লাখ দাম বলছে। বুধবার হবার কারণে অনায়াসে মিথ্যা বলতে পারছে।)

    মুহিব! এই জমিটা নিয়ে আমার কিছু কথা আছে।

    জি চাচা বলুন।

    তোমার বাবা এবং আমি দুজনে মিলে ঠিক করি জমিটা কিনব। বায়নার টাকা অর্ধেক আমার দেয়া। বিশ্বাস না হলে তোমার বাবাকে জিজ্ঞেস করে দেখতে পার। যাই হোক, তোমার পিতা ছিলেন অতি ধান্ধাবাজ লোক। জমি কিনলেন তার নামে। পুরনো প্রসঙ্গ তুলে লাভ নাই। জমিটা আমি কিনব। তবে পাঁচ লাখ টাকার বেশি একটা কানা পয়সাও পাবে না।

    মুহিব বলল, ইচ্ছা করলেও কানা পয়সা দিতে পারবেন না চাচা। কানা পয়সা বলে কিছু বাজারে নাই।

    তোমার সঙ্গে রসিকতা করার সময় আমার নাই। পাঁচ লাখে দিবে?

    জি দিব। যদি টাকাটা আজকালের মধ্যে পাই।

    টাকা আগামীকাল দিব। জানি তোমার টাকাটা ইমিডিয়েট দরকার। এখন বায়না বাবদ কিছু নিয়ে যাও।

    তিনি ড্রয়ার খুলে পঁচিশ টাকার একটা বান্ডেল বের করলেন। একটা স্ট্যাম্প পেপার বের করলেন, সেখানে আগেই টাইপ করে লেখা— বায়না বাবদ পঞ্চাশ হাজার টাকা বুঝিয়া পাইলাম। ইত্যাদি। মুহিবকে স্বীকার করতে হলো, হিশাম নামের মানুষটা কাজেকর্মে যথেষ্ট গোছানো।

    মুহিব বলল, চাচা, চা খাবেন?

    চা?

    জি চা। খুব ভালো চা, আফিং দেয়া। এককাপ খেলে আরেক কাপ খেতে ইচ্ছা করবে।

    হিশাম সাহেব চোখ সরু করে তাকিয়ে আছেন। মুহিব ফ্লাস্ক খুলে ফ্লাস্কের মুখে চা ঢালছে। হিশাম সাহেব না খেলে সে নিজেই খাবে।

    হিশাম বললেন, আমি চা পান করি না।

    মুহিব বলল, চাচা, অনুমতি দিলে আমি পান করে ফেলি? তারপর ফ্রাঙ্ক নিয়ে বাবার কাছে যাব। বাবাকে পান করাব।

     

    আলাউদ্দিন উবু হয়ে বসে চুক চুক করে চা খাচ্ছেন। তার গায়ে হাতাকাটা গেঞ্জি। পরনে লুঙ্গি। লুঙ্গি সামান্য উঁচু হয়ে আছে বলে কাঠি কাঠি পা দেখা যাচ্ছে। তাকে এখন মোটামুটি একজন ভিখেরির মতোই লাগছে। চোখের চশমাটা শুধু পোশাকের সঙ্গে যাচ্ছে না। চশমার বা-দিকের কাচটা ভেঙে তিন টুকরা হয়ে ফ্রেমের সঙ্গে ঝুলে রয়েছে।

    মুহিব বলল, চশমা ভাঙল কীভাবে?

    আলাউদ্দিন প্রশ্নের জবাব না দিয়ে বললেন, ভালো চা বানিয়েছে। তোর মা যে চা বানায় মুখে দেয়া যায় না। মনে হয় ঘোড়ার পিলাব। জীবন পার করে দিয়েছি ঘোড়ার পিসাব খেয়ে।

    মুহিব বলল, জায়গা বিক্রির ব্যবস্থা হয়েছে। হিশাম চাচা কিনবেন।

    কিনুক। বদের বাচ্চা।

    হিশাম চাচা বলছিল, তোমরা দুজন মিলে একসঙ্গে জমিটা কিনতে চেয়েছিলে। বায়নার টাকার অর্ধেক তুমি দিয়েছিলে, অর্ধেক উনি দিয়েছেন।

    বদটার কোনো কথা বিশ্বাস করবি না। বায়নার সময় কিছু টাকা ধার করেছিলাম, পরে শোধ দিয়েছি। বাদ দে এইসব কথা। জমি বিক্রির পর তোর মা-বোন কোথায় যাবে কিছু ভেবেছিস?

    বাড়ায় সালাম মামার কাছে পাঠিয়ে দেব। সালাম মামা মাকে পছন্দ করেন। প্রতি ঈদে শাড়ি পাঠান।

    বুদ্ধি খারাপ না। সালামটা বেকুব টাইপ। বোনকে রাস্তায় ফেলবে না। কিছুদিন অবশ্যই রাখবে। এর মধ্যে আমি বের হয়ে ব্যবস্থা করে ফেলব।

    কী ব্যবস্থা করবে?

    কোচিং সেন্টার দেব। আর কী করব? যে জুতা সেলাই করে সে সারাজীবন জুতা সেলাই করে, অন্যকিছু করতে পারে না। মেয়েটাকে পাঁচ লাখ টাকা কবে দিবি কিছু ঠিক করেছিস?

    মুহিব বলল, টাকা হাতে পেলেই দিব।

    তিন-চারের মধ্যে রক্ষা করা যায় কি-না দেখবি। টাকা দেয়ার সময় চোখের পানি ফেলে রিকোয়েস্ট করবি? পুরো বিষয়টাই যে সাজানো এটা তুই জানিস না এইরকম ভাব করবি।

    আচ্ছা।

    রিমান্ডে পুলিশের মার খেয়ে অনেক কিছু বলেছি। এটা আমি যেমন জানি ঐ মেয়েও জানে। কোনো একদিন মেয়েটা স্বীকার করবে।

    আলাউদিনের চোখ দিয়ে পানি পড়ছে। মুহিব বলল, আরেক কাপ চা খাও। একটা সিগারেট ধরাও চা দিব বাবা?

    দে।

    চশমাটা দিও, কাচ ঠিক করে ফেরত দিয়ে যাব।

    আলাউদ্দিন কিছু না বলে চশমা খুলে ছেলের হাতে দিলেন। মুহিব বলল, আমার সঙ্গে টাকা আছে। হিশাম চাচা দিয়েছেন। পঞ্চাশ হাজার। তোমার হাতে কিছু টাকা দিব?

    টাকা সঙ্গে সামান্য আছে। লাগবে না। হাজত জায়গা খারাপ। টাকা চুরি লেগেই আছে।

    রাতে ঘুম হয়?

    না। তবে অসুবিধা হয় না। দিনে ঘুমাই।

    কোনো গানটান এর মধ্যে মাথায় এসেছে? একটা নোটখাতা আর কলম কিনে দেই? মাথায় কিছু এলে লিখে ফেলবে। অনেকদিন গান লেখ না।

    আলাউদ্দিন হেসে ফেললেন। মুহিব বলল, বাবা, আমি উঠি? তোমার আর কিছু বলার থাকলে বলো।

    আলাউদ্দিন বললেন, একটা কথা বলার আছে। সারাজীবন তোকে গাধা বলেছি। অর্ধমানব বলেছি। হাজতে এসে বুঝতে পেরেছি, আমার জীবনের সবচেয়ে বড় পুণ্য তোর মতো গাধামানবের জন্ম দেয়া।

    আলাউদ্দিন আবার কাঁদতে শুরু করলেন। মুহিব বলল, বাবা, চায়ে চুমুক দাও।

    আলাউদ্দিন কাঁদতে কাঁদতেই চায়ে চুমুক দিয়ে বিষম খেলেন। মুহিব বাবার পিঠে হাত রাখল। আলাউদ্দিন নিজেকে সামলে নিয়ে বললেন, ছোট্ট ভুল কথা বললাম, হাজতে ঢুকে বুঝেছি এটা ঠিক না। তুই যে রাতে কোলে করে তোর মাকে ঘরে নিয়ে গেলি সেদিনই বুঝেছি।

    মুহিব উঠে দাঁড়াতে দাঁড়াতে বলল, বুঝলে বুঝেছ। বাবা, আমি এখন যাচ্ছি।

    বাসায় যাবি?

    কিছু কাজ আছে। কাজ সেরে বাসায় যাব।

    তোর বড় দুই বোন রেশমা, শিউলি, এরা কোনো খোঁজখবর করেছে?

    রেশমা আপু কুরিয়ারে একটা চিঠি পাঠিয়েছে।

    সঙ্গে আছে?

    আছে। তোমার না পড়াই ভালো।

    আলাউদ্দিন বিরক্ত গলায় বললেন, সিচুয়েশন বুঝতে হলে ভালো-মন্দ সব কিছুই জানা দরকার। একচক্ষু হরিণের মতো হলে চলবে না। শুধু ভালো দেখব, মন্দ দেখব না।

    মুহিব চিঠি রেখে চলে গেল।

    চিঠি মুহিবকে লেখা—

    প্রিয় খোকন (মুহিবকে রেশমা খোকন ডাকে),

    কুত্তা বাপের কারণে আজ আমি অকূলপাথারে। দিনরাত তোর দুলাভাইয়ের কথা শুনতে হচ্ছে! সেদিন গায়ে পর্যন্ত হাত তুলেছে। আগে এই সাহস ছিল না। লোক জানাজানির আগে তুই কুত্তা বাপটার গলা টিপে মেরে ফেলতে পারলি না?…

    আলাউদ্দিন দীর্ঘ চিঠি দুবার পড়ে বললেন, ভেরি স্যাড। দশটা বানান ভুল।

     

    আজ সকাল থেকেই লীলা ছাদে। আহসান ট্রাকভর্তি গাছপালা নিয়ে এসেছে। ছাদে বাগান হবে। একজন মালি এসেছে। রাজমিস্ত্রি এসেছে। সিঙ্গাপুর থেকে কিছু মূর্তিও আনা হয়েছে। পরীর মূর্তি। মূর্তিগুলি গাছপালার ফাকে ফাকে বসানো হবে। আহসান বলল, লীলা, তুমি তোমার ঘরে থাক। আমি ছাদটা গোছাই, তারপর ছাদে এসে দেখে চমকাবে।

    লীলা বলল, আমিও আপনার সঙ্গে গোছাব। সব রেডি হয়ে গেলে মুহিবকে আসতে বলব। সে চমকাবে।

    আহসান বলল, সব নদী যেমন সাগরে পড়ে, তোমার সব কথাবার্তা মুহিবে শেষ হয়।

    লীলা বলল, আমি নিজে চমকাতে পছন্দ করি না, তবে মুহিবকে চমকাতে পছন্দ করি।

    আহসান বলল, মুহিবের বাবা যে ধর্ষণ মামলায় জেলে আছেন এই খবর জানো?

    আপনাকে কে বলেছে? মুহিব?

    হ্যাঁ। মুহিবের এই গুণটি দেখলাম, তার মধ্যে লুকোছাপা নেই। সত্যি কথা বলে।

    লীলা বলল, বুধবারে সে সত্যি বলে না। বুধবার হচ্ছে তার মিথ্যাদিবস। ঐদিন সে মিথ্যা বলবে।

    তোমার কাছেও?

    হ্যাঁ, আমার কাছেও।

    এর কারণ কী জানো?

    লীলা বলল, জানি না। জানতে চাইও নি।

    আহসান বলল, আমার ধারণা আমি কারণটা জানি। নিম্নবিত্ত বা নিম্নমধ্যবিত্ত যুবকদের নিজেকে বিশেষভাবে প্রকাশ করার তেমন সুবিধা নেই। সে ব্র্যান্ডের শার্ট কিনতে পারবে না। নতুন মডেলের গাড়ি কিনতে পারবে না। ইচ্ছা করলেই বান্ধবীকে নিয়ে দামি কোনো রেস্টুরেন্টে খেতে যেতে পারবে না। তাকে খুঁজে বের করতে হয় তার আয়ত্ত আছে এমন কিছু। যেমন— মিথ্যাদিবস, কথা বন্ধ দিবস, এইসব। আমার ধারণা যদি সত্যি হয় তাহলে একদিন শুনবে, সে শনি বা রবিবারকে ডিক্লেয়ার করেছে কথা না-বলা দিবস। সেদিন সে তোমার সঙ্গে দেখা করতে আসবে। কিন্তু কথা বলবে না। তুমি প্রশ্ন করলে লিখে উত্তর দিবে।

    লীলা বলল, আপনার observation সত্যি হতেও পারে।

    আহসান বলল, তোমার মিথ্যাদিবস বান্ধব কিন্তু শুন্যে ভাসার ম্যাজিকটা অতি দ্রুত শিখেছে এবং ভালো শিখেছে। আমি নিজেই অবাক হয়েছি।

    সে যে কাজই করে খুব মন দিয়ে করে। একটা পর্যায় পর্যন্ত করে, তারপর থেমে যায়। পরিস্থিতি তাকে থামিয়ে দেয়।

    আহসান বলল, আমাকে একটা কথা বলো তো। মুহিবের বিষয়ে তোমার পরিকল্পনা কী? তাকে বিয়ে করবে? না সে হবে তোমার দুই ময়ূর মিত্রা এবং চিত্রার মতো পোষা বন্ধু। বাঁদরটার কথা বললাম না। বাঁদরের কথা বললে তুমি আহত হবে এই সম্ভাবনা আছে।

    লীলা বলল, মনে করুন আপনি আহসান না। আপনি লীলা। আপনি হলে কী করতেন? আপনার honest মতামত কী?

    আহসান বলল, তোমার মেন্টাল মেকাপের কাছাকাছি যাওয়া আমার পক্ষে সম্ভব না। মেয়েদের মেন্টাল মেকাপের কমপ্লেক্সিটি আমার জানাও নেই। কাজেই মতামত দিতে পারছি না। শুধু একটা জিনিস বলতে পারছি, মুহিবের প্রতি তোমার প্রেম নেই।

    প্রেম নেই?

    না। তুমি তার কর্মকাণ্ড দেখে খুশি হও, আবার তোমার পোষা জীবজন্তুর কর্মকাণ্ড দেখেও খুশি হও। তাকে তুমি আশেপাশে অবশ্যই রাখতে চাও। তার শূন্যে ভাসা দেখে মজা পাবার জন্যে বা অন্যান্য কাজকর্মে মজা পাবার জন্যে। এর বেশি কিছু না। সত্যি যদি তার প্রেমে পড়তে, তাহলে তার এতবড় দুঃসময়ে তুমি তার পাশে থাকতে। তুমি কিন্তু পাশে নেই।

    লীলা বলল, তার পাশে থাকা মানে তাকে লজ্জা দেয়া। এই লজ্জাটা তাকে দিতে চাচ্ছি না।

    আহসান বলল, শুধু লজ্জা দেয়া না। লজ্জা পাওয়াও। তুমি লজ্জাটাও পেতে চাচ্ছ না। আচ্ছা লীলা, তুমি কখনো তার বাসায় গিয়েছ? তার মা, বোন, এদের সঙ্গে তোমার দেখা হয়েছে?

    না।

    কোনো মেয়ে যদি সত্যি সত্যি কোনো ছেলের প্রেমে পড়ে, সে তখন এই ছেলের আশেপাশের সবকিছুর প্রেমে পড়ে।

    লীলা তাকিয়ে আছে। সে এইভাবে কখনো চিন্তা করে নি। আহসান বলল, তোমার চেহারা দেখে মনে হচ্ছে তুমি সামান্য মন খারাপ করেছ। দাড়াও, মন ভালো করে দেই। মুহিব ছেলেটা কিন্তু তোমাকে অসম্ভব ভালোবাসে! আমি কাল রাতে বিষয়টা টের পেয়েছি।

    কীভাবে টের পেয়েছেন?

    শূন্যে ভাসা ম্যাজিক শিখে আমার ঘর থেকে সে যখন বের হলো আমি তার পেছনে একজন লোক লাগিয়ে দিলাম। তার দায়িত্ব হচ্ছে মুহিবকে ফলো করা।

    এটা কেন করলেন?

    তোমার প্রতি দায়িত্ববোধ থেকে করলাম। তুমি মুহিবের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে মিশছ। মুহিব ছেলেটা কেমন জানা দরকার। মুহিব কী করল জানো?

    কী করল?

    অনেক কিছুই করল। হাঁটাহাঁটি। চায়ের দোকানে চা খাওয়ী। একটা পর্যায়ে সে এসে তোমাদের বাসার সামনে দাঁড়াল। তখন রাত বারোটা দশ। তোমার ঘরে বাতি জুলছিল। সে তাকিয়ে ছিল বাতির দিকে। যখন ৰাতি নিভল সে চলে গেল। প্রায় দুঘণ্টা ছিল।

    লীলা বলল, যে স্পাই লাগিয়ে ছিলেন সে এত Detail মনে রেখেছে?

    আহসান বলল, স্পাইটা আমি নিজে। একটা কালো চাদর গায়ে জড়িয়ে বের হয়েছিলাম। মুহিব লক্ষ করে নি। তার অবশ্য চারদিক লক্ষ করার মতো মানসিক অবস্থাও ছিল না।

    লীলা বলল, খেতে আস। আমার ক্ষিধে লেগেছে। আজ সকাল সকাল খেয়ে নেব।

    আহসান বলল, তুমি বলা শুরু করেছ?

    লীলা বলল, হ্যাঁ।

    সর্বনাশ! সামনের মাসে পনেরো দিনের জন্যে জাপান যাবার কথা। ফিরে এলে আবার আপনি?

    জাপান যেও না।

    আহসান বলল, আমাকে যেতেই হবে, উপায় নেই। একটা কাজ অবশ্য করা যায়। তোমাকে সঙ্গে নিয়ে যাওয়া যায়। যাবে?

    লীলা চুপ করে আছে। পরী মূর্তি ছাদে বসানো হচ্ছে। তার দৃষ্টি সেদিকে। কী সুন্দর দেখাচ্ছে মূর্তিটা! এত জীবন্ত!

    আহসান বলল, আজ আমার জন্মদিন। লীলা, শুভ জন্মদিন বলবে না?

    শুভ জন্মদিন।

    থ্যাংক য়্যু। আমি ঠিক করে রেখেছিলাম, ছাদটা পুরোপুরি গোছানো হলে তোমাকে ছাদে এনে আমার জন্মদিনের কথা তোমাকে বলব। সরি, আগেভাগে বলে ফেলেছি।

    চল খেতে যাই।

    আহসান বলল, খাওয়ার পর ভ্রমণে বের হলে কেমন হয়? দুজন কিছুক্ষণ হাঁটলাম। একসময় ধাক্কা দিয়ে তোমাকে বড় কোনো নর্দমায় ফেলে দিলাম, তারপর টেনে তুললাম। তখন আর আমি পিছিয়ে থাকব না। মুহিবের কাছাকাছি চলে আসব।

    লীলা হাসল।

    মুহিব বলল, তোমার মেয়েটা আজ কী বেঁধেছে?

    জানি না। অনেক আইটেম নিশ্চয়ই করেছে। সে অল্প আইটেম রাঁধতে পারে। না।

    তুমি কি জানো আসমা কুয়েতের ঐ শেখের কাছে ফিরে যাচ্ছে?

    তাই না-কি?

    হ্যাঁ, কুয়েতের বদ শেখটা আসমার সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। সে জানিয়েছে আসমার কথা তার খুব মনে পড়ে। প্রায়ই তাকে স্বপ্নে দেখে। আসমা এতেই খুশি। সে এখন ফিরে যাবার জন্যে তৈরি। মেয়েরা কত অল্পতে খুশি হয় দেখেছ?

    ⤶ ⤷
    1 2 3 4 5 6 7 8
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleঅদ্ভুত সব গল্প – হুমায়ূন আহমেদ
    Next Article দারুচিনি দ্বীপ – হুমায়ূন আহমেদ

    Related Articles

    হুমায়ূন আহমেদ

    আসমানীরা তিন বোন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    হুমায়ূন আহমেদ

    ইস্টিশন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    হুমায়ূন আহমেদ

    উড়ালপঙ্খী – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    হুমায়ূন আহমেদ

    এই বসন্তে – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    হুমায়ূন আহমেদ

    এই মেঘ, রৌদ্রছায়া – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    হুমায়ূন আহমেদ

    এইসব দিনরাত্রি – হুমায়ূন আহমেদ

    December 23, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Generic selectors
    Exact matches only
    Search in title
    Search in content
    Post Type Selectors
    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    আসমানীরা তিন বোন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    আসমানীরা তিন বোন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    Our Picks

    আসমানীরা তিন বোন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025

    ইস্টিশন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025

    উড়ালপঙ্খী – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }