Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    আসমানীরা তিন বোন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025

    ইস্টিশন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025

    উড়ালপঙ্খী – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • English Books
      • Jules Verne
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    দি একসরসিস্ট – হুমায়ূন আহমেদ

    হুমায়ূন আহমেদ এক পাতা গল্প135 Mins Read0
    ⤶ ⤷

    ৩. অতল গহ্বর

    us Lesson
    Next Lesson

    ৩. অতল গহ্বর

    দি একসরসিস্ট – হুমায়ূন আহমেদ  ৩. অতল গহ্বর

    অতল গহ্বর

    ৩.১

    ক্রিস একজনের জন্যে অপেক্ষা করছিল।

    অফিস ছুটির সময়। সবাই ঘরে ফিরছে, রাস্তাঘাটে প্রচণ্ড ভিড়। ক্রিস এমন ভাবভঙ্গি করছে যাতে কেউ বুঝতে না পারে যে সে কারো জন্যে অপেক্ষা করছে।

    একজনকে এগিয়ে আসতে দেখা গেল ওর দিকে। কিন্তু এ সে নয়। যে আসছে সে কিছুতেই ফাদার ডেমিয়েন কারাস হতে পারে না। লোকটার পরনে আধময়লা খাকি প্যান্ট। গায়ে নীল রঙের সোয়েটার। সে ক্রিসের দিকে বারবার তাকাচ্ছে।

    যে জায়গাটায় ক্রিস দাঁড়িয়ে আছে তা নদীর পারে, অপেক্ষাকৃত নির্জন। কিন্তু লোকটা এমনভাবে দ্রুত পা ফেলে আসছে যে ক্রিসের আশংকা হল, তার মতলব ভাল না-ও হতে পারে।

    আপনি মিসেস ম্যাকনীল? আমি ফাদার ডেমিয়েন কারাস।

    নিজেকে সামলাতে ক্রিসের একটু সময় লাগল। তাড়াতাড়ি সানগ্লাস খুলে ফেলল। প্রায় চিৎকার করে উঠতে যাচ্ছিল ভেবে এখন ওর দারুণ লজ্জা লাগছে।

    আমাকে এভাবে ছুটে আসতে দেখে ভয় পেয়েছিলেন নাকি?

    আমি ঠিক বুঝতে পারিনি আপনি ফাদার কারস।

    তাই? আমি অবশ্য ইচ্ছা করেই পাত্রীদের পোশাকটা পরে আসিনি। আপনি বলেছিলেন গোপনে কথা বলতে চান, সেজন্যেই …

    ফাদার কারাস, আপনাকে আগে একদিন আমি বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় দেখেছি। তবু আজ চিনতে পারিনি। আপনার কাছে সিগারেট আছে?

    আছে, ফিল্টার ছাড়া, চলবে?

    আজ আমি যে কোন সিগারেট খেতে পারি।

    মিসেস ম্যাকনীল, হঠাৎ কি দরকার পড়ল আমার–যা আবার খুব গোপনীয়? কারাস সিগারেট বের করলেন।

    শুনলাম আপনি একজন নামকরা সাইকিয়াট্রিস্ট।

    ঠিকই শুনেছেন। নামকরা কিনা জানি না তবে সাইকিয়াট্রিস্ট।

    আপনি কোথায় পড়াশোনা করেছেন?

    হারভার্ড আর জন হপকিন্দে, তারপর বেলেভ্যুতে।

    আশ্চর্য তো! আমি কিন্তু আপনাকে একজন সাধারণ পাদ্রীই মনে করেছিলাম।

    আমি আসলে তাই, মিসেস ম্যাকনীল।

    আপনি ফাদার ডায়ারকে চেনেন?

    হ্যাঁ, আমার ঘনিষ্ঠ বন্ধু।

    তিনি আমার বাড়িতে একদিন এসেছিলেন।

    ডেমিয়েন কারাস জিজ্ঞাসু চোখে তাকালেন। ক্রিস থেমে থেমে বলল, তিনি কি আমার বাড়ির পাটি সম্পর্কে কিছু বলেছেন আপনাকে?

    না তো।

    আমার মেয়ের সম্বন্ধে কিছু?

    না। আমি জানিই না আপনার কোন মেয়ে আছে।

    ফাদাররা তাহলে সত্যি সত্যি মুখ বন্ধ করে রাখতে পারেন!

    সবাই পারেন না, কেউ কেউ পারেন।

    ফাদার কারাস, কেউ যদি আপনার কাছে গোপন কিছু বলে আপনি কি তা গোপন রাখেন?

    তা রাখি।

    আচ্ছা ফাদার, ধরুন, একজন খুব খারাপ লোক, একজন খুনী–সে যদি আপনার কাছে সাহায্যের জন্যে আসে, তাহলে কি তাকে সাহায্য করবেন?

    কি ধরনের সাহায্য?

    ক্রিস আচমকা বলল, কারো ওপর যদি শয়তান বা পিশাচের ভর হয় তাহলে কি করে তাড়ানো যায় জানেন?

    আমি আপনার কথা ঠিক বুঝতে পারলাম না।

    ধরুন, কারো ওপর শয়তানের আছর হয়েছে।

    মিসেস ম্যাকনীল, এসব আজকাল হয় না।

    হয় না? কখন থেকে হয় না?

    যখন থেকে আমরা জানতে পারলাম যে মানসিক অসুখ বলে একটা জিনিস আছে।

    ক্রিসের মুখে চোখে হতাশার ভাব জাগতে দেখে ফাদার কারাস যেন অবাক হলেন। শান্ত স্বরে বললেন, আজকাল অনেক ফাদার শয়তানের অস্তিত্বে বিশ্বাস করেন না। শয়তানে বা পিশাচে পাওয়া বিশ্বাস করা তো অনেক দূরের ব্যাপার।

    আপনি কি সত্যি সত্যি একজন পাদ্রী? বাইবেলে তো মানুষের ওপর শয়তানের ভর হওয়ার অনেক অনেক কাহিনী আছে। প্রভু যিশু খ্রীস্ট সেসব শয়তান তাড়িয়েছেন।

    মিসেস ম্যাকনীল, আসলে ওদের স্কিজোফ্রেনিয়া ছিল। শয়তান বা পিশাচের কোন ব্যাপার নয়।

    ক্রিস অচমকা বলে ফেলল, ফাদার কারাস আমার একমাত্র মেয়ের ওপর পিশাচের ভর হয়েছে। আপনি কি কোনভাবে এই পিশাচকে তাড়াবার ব্যবস্থা করতে পারেন?

    আপনি একসরসিজমের কথা বলছেন?

    হ্যাঁ।

    কিন্তু আপনি হয়ত জানেন না একসরসিজমে ভালর চেয়ে মন্দ হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।

    কেন? মন্দ হবে কেন?

    একসরসিজমের পুরো ব্যাপারটাই দারুণ সাজেসটিভ। মনের ওপর খুব প্রভাব ফেলতে পারে। তাছাড়া গির্জার অনুমতি প্রয়োজন। সে অনুমতি সহজে পাওয়া যাবে না। প্রথমে ওরা নিশ্চিত হতে চাইবে যে সত্যি আপনার মেয়েকে পিশাচে পেয়েছে। সেটা অনেক সময়সাপেক্ষ ব্যাপার।

    আপনি কি একসরসিজম করতে পারেন?

    পারি। সব ফাদারই পারেন। তবে গির্জার অনুমতি লাগবে। তাছাড়া হবে না।

    আপনি কি একবার দেখবেন আমার মেয়েকে–প্লীজ?

    নিশ্চয়ই দেখব। একজন সাইকিয়াট্রিস্ট হিসেবে দেখব।

    ফাদার কারাস, আমি অনেক সাইকিয়াট্রিস্ট আর ডাক্তার দেখিয়েছি। এখন আমার একজন ফাদারের সাহায্য চাই। ফাদার, প্লীজ!

    ফাদার কারাসকে স্তম্ভিত করে দিয়ে ক্রিস হঠাৎ হাউমাউ করে কেঁদে উঠল। কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে শান্ত স্বরে কারাস বললেন, চলুন, আপনার মেয়েকে দেখে আসি।

    ডেমিয়েন কারাস নিঃশব্দে হাঁটতে লাগলেন। বাড়ির সামনে এসে হঠাৎ থমকে দাঁড়ালেন। একটা কিছু যেন অনুভব করলেন। সারা শরীর তাঁর ঝিমঝিম করে উঠল। কিছু একটা … কিছু একটা আছে!

    সিঁড়ি দিয়ে রেগানের ঘরের দিকে উঠতে উঠতে যেন অপার্থিব কোন কণ্ঠ শুনলেন কারাস। ভারী গম্ভীর গলা। ঘৃণা আর ক্রোধ মেশানো। ভ্রু কুঁচকে গেল তাঁর। কিন্তু তারপরই হাসির শব্দ। হা হা শব্দে হাসি। শ্লেষ্ম জড়ানো বৃদ্ধের ক্রুর হাসি।

    কার্ল দরজার সামনে দাঁড়িয়েছিল। একদৃষ্টে সে তাকিয়ে রইল ফাদার কারাসের দিকে। ঠাণ্ডা গলায় জিজ্ঞেস করল, আপনি কি একজন ফাদার?

    হ্যাঁ।

    যান, ভেতরে যান। দেখুন।

    কারাস ক্রিসকে জিজ্ঞেস করলেন, ভদ্রলোকটি কে? আপনার মেয়ের সঙ্গে যে কথা বলছে?

    ও ঘরে ভদ্রলোক-টদ্রলোক কেউ নেই। রেগান একাই আছে। আপনি যান, আমি যাচ্ছি না।

    ফাদার কারাস দরজার হাতল ধরতেই ভেতরের সমস্ত শব্দ থেমে গেল। সুমসাম নীরবতা। ঘরের ভেতর ঢুকে অনেকক্ষণ ফাদার কারাস কোন কথা বলতে পারলেন না।

    কংকালসার যে আকৃতিটা বিছানায় দড়ি দিয়ে বাঁধা সেই কি বার বছরের রেগান? এ তো এক বৃদ্ধার কুৎসিত অবয়ব। তবে চোখ দুটো চকচক করছে। তাকিয়ে আছে তীক্ষ্ণ তীব্র দৃষ্টিতে। সেই দৃষ্টিতে বুদ্ধির দীপ্তি খুব স্পষ্টভাবেই দেখা যায়, কিন্তু কি ভয়ংকর চাহনি!

    ফাদার কারাস বন্ধুর মত হাত বাড়িয়ে নরম সুরে বললেন, কেমন আছ, রেগান?

    কারাস চেয়ার টেনে রেগানের সামনে বসলেন। আগের মতই রেগান তীক্ষ্ণ চোখ দিয়ে তাঁকে দেখছে।

    আমি তোমার মায়ের একজন বন্ধু। তোমার মা বললেন, তুমি একটু অসুস্থ। তাই তোমাকে সাহায্য করতে এসেছি।

    রেগানের মুখে বিদ্রুপের হাসি দেখা গেল। যেন বহু কষ্টে সে নিজেকে হা হা অট্টহাসি থেকে বিরত রাখছে।

    রেগান বলল, শেষ পর্যন্ত তোমাকে ধরে এনেছে?

    হ্যাঁ, আমি তোমাকে সাহায্য করার জন্যে এসেছি।

    ভাল। আমার কিছু সাহায্য দরকার এই মুহূর্তে। দড়ির বাঁধনগুলো খুলে দাও তো দেখি।

    ওগুলো খুব কষ্ট দিচ্ছে বুঝি?

    কষ্ট-টষ্ট না, বিরক্তিকর ব্যাপার। মহা বিরক্তিকর।

    বাঁধন খুললে তুমি নিজেকে ব্যথা দিতে পার, রেগান।

    আমি রেগান নই।

    ও, তুমি রেগান নও? আমি বুঝতে পারিনি। আমাদের পরিচয় হয়নি। আমার নাম ডেমিয়েন কারাস। তোমার নাম?

    আমি পিশাচ। শয়তানও বলতে পার।

    ভাল, খুব ভাল। একজন পিশাচের সঙ্গে পরিচিত হয়ে খুশি হলাম। তাহলে কিছু কথাবার্তা বলা যাক।

    কথা বলতে চাও বুঝি?

    হ্যাঁ।

    ভাল। কথা বলব। কিন্তু এরকম বাঁধা অবস্থায় আমি কথা বলতে পারি না। কথা বলার সময় হাত-পা নাড়ানো আমার পছন্দ। পুরানো অভ্যেস। এখন দয়া করে বাঁধনগুলো খুলবে?

    ডেমিয়েন কারাস কথার বাঁধুনি দেখে অবাক হলেন। চেয়ার নিয়ে রেগানের কাছে খানিকটা এগিয়ে গেলেন। তাঁর কৌতূহল ক্রমেই তীব্র হচ্ছে।

    তুমি তাহলে শয়তান?

    হ্যাঁ, এ-বিষয়ে তুমি একশো ভাগ নিশ্চিত থাকতে পার।

    শয়তান হলে তা তুমি নিজেই দড়ির বাঁধন খুলে ফেলতে পার। শয়তানের ক্ষমতা তো কম নয়। ইচ্ছা করলেই দড়িগুলো তুমি শূন্যে মিলিয়ে দিতে পার।

    তা পারি। তবে ক্ষমতার নমুনা দেখাতে পছন্দ করি না। ব্যাপারটা তাহলে স্কুল হয়ে পড়ে। আমি সবকিছুতেই সূক্ষ্মতা পছন্দ করি। কারণ আমি একজন শিল্পী, বুঝলে?

    হ্যাঁ, তা বুঝতে পারছি।

    তাছাড়া আমি যদি তোমাকে বাঁধন খুলতে না দেই তাহলে একটা সকাজ করার সুযোগ থেকে তোমাকে বঞ্চিত করা হয়।

    শয়তানের কাজই হচ্ছে মানুষকে ভাল কাজ করা থেকে বিরত রাখা। কাজেই তোমার চেষ্টা করা উচিত যাতে আমি কোনভাবে ভাল কিছু করতে না পারি। তাই না?

    হা হা হা, ডেমিয়েন কারাস, তুমি দেখছি শেয়ালের মত ধূর্ত। তা শোন, যদি বাঁধনগুলো তুমি খুলে দাও, তাহলে তোমাকে আমি তোমার ভবিষ্যতের সবকিছু বলে দেব।

    ভবিষ্যৎ বলে দেবে? প্রমাণ কি যে তুমি ভবিষ্যৎ বলতে পার?

    আমি শয়তান। আমি পারি।

    একটা প্রমাণ দাও।

    প্রমাণ দিয়েও লাভ হবে না। তোমার মধ্যে বিশ্বাস খুব কম। তুমি তো ঈশ্বরেও বিশ্বাস কর না।

    কারাস চমকে উঠলেন। রেগানের ভুরু নাচছে। চোখ দুটো ঝলসে উঠছে বিদ্রুপে। মনের ভাব লুকিয়ে কারাস সহজভাবে কথা বলে যেতে চেষ্টা করলেন,

    একটা সহজ প্রমাণই না হয় দেখাও তুমি আমাকে। তুমি যদি শয়তান হও তাহলে তো তুমি সব কিছুই জান।

    উহুঁ, সবকিছু না, প্রায় সবকিছু। দেখলে তো, আমি আমার অক্ষমতাও স্বীকার করি।

    আমি ভাবছিলাম তোমার জ্ঞানের গভীরতাটা পরখ করব।

    তার দরকার নেই, আমি নিজে থেকেই বলছি। দক্ষিণ আমেরিকার সবচেয়ে বড়-হ্রদের নাম টিটিকাকা। সেটা পেরুতে। ঠিক আছে?

    না, আমি এমন একটা কিছু জিজ্ঞেস করব যার উত্তর শুধু শয়তানের পক্ষেই জানা সম্ভব। আচ্ছা বল তো রেগান এখন কোথায়?

    এখানেই আছে সে।

    তাকে দেখতে চাই আমি।

    কেন দেখতে চাও?

    তাহলে আমি বুঝতে পারব তুমি সত্যি কথা বলছ।

    ওহে, ডেমিয়েন কারাস, তুমি ওর সঙ্গে কিছু করতে টরতে চাও নাকি? তাহলে প্যান্ট খুলে চলে আস না। দড়িগুলো খুলে দাও, তারপর দেখ মজাসে কেমন ফুর্তি হয়। রেগানের সঙ্গে কথা বলে কি করবে? ও কথাবার্তা তেমন পারে না।

    তার মানে তুমি জান না বেগান এখন কোথায়। অর্থাৎ শয়তান তুমি নও।

    জানি হে, জানি।

    তাহলে দেখাচ্ছ না কেন?

    আচ্ছা, আরেকটা কাজ করলে হয় না? আমি বরং তোমার মনের কথা বলে দেই? সেটাও একটা প্রমাণ হবে। এক থেকে দশ পর্যন্ত একটা সংখ্যা ভাব তো মনে মনে, আমি বলে দিচ্ছি।

    না, ওতে কিছু প্রমাণ হবে না।

    তা অবশ্যি হবে না। শোন, বাপু কারাস, তোমাকে আমি তেমন কোন প্রমাণ দেব না। বিশ্বাস আর অবিশ্বাস–এই দুয়ের মধ্যে তোমাকে আটকে রাখব আমরা।

    আমরা বলছ কেন? আর কে আছে তোমার সঙ্গে?

    এই কুত্তী মাগীটার মধ্যে এখন আমরা অনেকেই আছি। হা হা হা। পরে তোমাকে বলব কে কে আছি, তার আগে আমার একটা হাত শুধু খুলে দাও। শরীরে বড় চুলকানি হয়েছে। চুলকাতে হবে।

    জায়গাটা দেখিয়ে দাও, আমিই চুলকে দিচ্ছি।

    হুঁ, বলেছি না, তুমি শেয়ালের মত ধূর্ত!

    বেশ রেগানকে একবার দেখাও, তারপর একটা বাঁধন না হয় খুলে দেব।

    মুহূর্তের মধ্যে কিছু একটা হল। কারাস দেখলেন, গাঢ় দুঃখ মাখা এক জোড়া সজল চোখ। ব্যখাকাতর এক বালিকার ম্লান মুখ। কিন্তু তা মুছে গেল সঙ্গে সঙ্গে, তারপরই শোনা গেল ক্রুদ্ধ গর্জন, এখন নিশ্চয়ই বাঁধনটা খুলবে?

    কারাসের আচ্ছন্নভাব তখনো কাটেনি। রেগানকে দেখা গিয়েছিল কি? ব্যথায় ক্লান্তিতে আচ্ছন্ন ওই মেয়েটাই তবে রেগান।

    ফাদার, ফাদার, দয়া করুন। এই পঙ্গুকে দয়া করুন।

    কারাস চমকে তাকিয়ে দেখেন, রেগানের ত্রুর চোখে বিদ্রুপ ঝিলিক দিচ্ছে। কথাটা কোথায় শুনেছেন যেন? হ্যাঁ, নিউইয়র্ক সাবওয়েতে। লোকটাকে একটা ডলার দিয়েছিলেন তিনি।

    ওহে কারাস, তোমার মা কিন্তু এখানেই আছেন। হা হা। কোন খবরাখবর থাকলে দিতে পার।

    কাবাসের সহজ চিন্তাশক্তিও লোপ পেল। থেমে থেমে কোনরকমে বললেন, আমার মা? উনি যদি এখানে থাকেন তাহলে তুমি তাঁর ডাক নাম নিশ্চয়ই জানবে। বল, তাঁর নাম কি? বল!

    কাছে আস, বলছি।

    কারাস খানিকটা এগিয়ে গেলেন।

    আরো কাছে। ফিসফিস করে বলব আমি।

    আরো খানিকটা এগুতেই রেগান মুখ ভর্তি করে তাঁর ওপর বমি করল। কারাস নড়লেন না। শান্ত স্বরে বললেন, বল, আমার মায়ের নাম বল।

    রেগান খিলখিল করে হাসতে লাগল। কারাস ঘর থেকে বেরিয়ে এসে সহজভাবেই বাথরুম কোনদিকে জানতে চাইলেন। ক্রিস মুখ কাল করে বলল, ফাদার, আমি খুব লজ্জিত।

    লজ্জিত হওয়ার কিছু নেই। আপনার মেয়েকে কি কোন ঘুমের ওষুধ দেয়া হচ্ছে?

    হ্যাঁ, লিব্রিয়াম।

    কতটুক করে দিচ্ছেন?

    দৈনিক চারশো মিলিগ্রাম।

    বলেন কি? মিসেস ম্যাকলীন, আমার মনে হয় ওকে কোন হাসপাতালে রাখা খুব খুব দরকার।

    তা সম্ভব নয় ফাদার। রেগান একটা মারাত্মক অপরাধ করেছে। বাইরে রাখলেই তা জানাজানি হয়ে যাবে। আমি কিছুতেই সেটা হতে দিতে পারি না।

    মিসেস ম্যাকনীল, আপনি নিচে গিয়ে বসুন। আমি হাতমুখ ধুয়ে আসছি।

    ফাদার কারাস খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে রেগানের অসুখের সমস্ত ইতিহাস শুনলেন। দুএকটি ঘটনা দ্বিতীয়বার শুনতে চাইলেন। ক্রিস বলল, ওর কি হয়েছে, ফাদার?

    একটু কঠিন ভাষায় বলতে হয়–মনের ওপর চেপে থাকা গ্লানি থেকে দ্বৈতসত্তার উদ্ভব ঘটেছে ওর মধ্যে। সেই সঙ্গে মানসিক অসুস্থতাজনিত হিস্টিরিয়া।

    এসব ফালতু কথা অনেক শুনেছি, ফাদার!

    আমাদের মানসিক হাসপাতালে যেসব রোগী আছে, তাদের তো আপনি দেখেননি, আমি দেখেছি। তারা রেগানের চেয়েও অনেক বিচিত্র সব কাণ্ডকারখানা করতে পারে।

    বেশ, তাহলে ফাদার আপনি বলুন, রেগানের ঘরে যেসব শব্দ হয় সেগুলো কেমন করে হয়?

    কই, আমি তো কোন শব্দ শুনিনি?

    আপনি না শুনলেও বেরিঞ্জার ক্লিনিকের ডাক্তাররা সবাই শুনেছেন।

    হয়ত শুনেছেন, কিন্তু তার বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যাও আছে। একে বলে। সাইকোকাইনেসিস।

    কি?

    বয়ঃসন্ধিকালের মেয়েদের মধ্যে যদি ঘোরতর মানসিক অস্থিরতা থাকে তাহলে এসব হতে দেখা যায়। কোন অজানা শক্তি এর মূলে আছে, তবে তা ভৌতিক কিছু নয়।

    রেগানের অবস্থা নিজের চোখে দেখেও এইসব বলছেন?

    মিসেস ম্যাকনীল, অনেক সময় খুব জটিল কোন জিনিসের ব্যাখ্যা খুব সহজ হয়ে থাকে।

    ফাদার কারাস, আমি এসব কিছু বুঝি না, আমি কোন থিওরি শুনতে চাই না। দ্বৈতসত্তা–দ্বৈতসত্তা? কি সেটা? বলুন আপনি? বোঝান আমাকে? আমি কি এতোই অজ্ঞ মূখ যে আপনাদের এইসব বুঝব না?

    মিসেস ম্যাকনীল, পৃথিবীর কেউই এসব বোঝে না। আমরা শুধু জানি এটা হয়। জিনিসটা এইভাবে দেখুন, আমাদের মাথায় প্রায় সতেরো বিলিয়ন কোষ আছে। তারা প্রতি সেকেণ্ডে একশো মিলিয়ন অনুভূতির আদান প্রদান করে। মাথার প্রতিটা কোষের একটা স্বাধীন সত্তা আছে, যার জন্যেই এটা সম্ভব। এখন মানুষের মাথাটাকে একটা সমুদ্রগামী জাহাজ মনে করুন। কল্পনা করুন, মাথার প্রতিটা কোষ একজন নাবিক। তাদের একজন ক্যাপ্টেন আছে। সে ঠিক জানে না অন্য নাবিকরা কখন কি করছে, কিন্তু জানে যে তারা তাদের দায়িত্ব পালন করছে। এখন যদি জাহাজে কোন বিদ্রোহ ঘটে আর অন্য এক নাবিক ক্যাপ্টেনের স্থান নেয় তখন সেই নাবিকটা হবে দ্বিতীয় সত্তা।

    ক্রিস একদৃষ্টিতে তাকিয়েছিল। কারাসের কথা শেষ হতেই বলল, আমি আমার মেয়েকে চিনি। তার যত পরিবর্তনই হোক তাকে আমি চিনব। অবিকল রেগানের মত লক্ষ কোটি মেয়েকে আমার সামনে এনে দাঁড় করালেও আমি আমার মেয়েকে চিনে বের করতে পারব। ফাদার, আমার কথা আপনি বিশ্বাস করুন, দোতালায় যে এখন শুয়ে আছে সে সত্যিই রেগান নয়।

    কারাস শান্ত স্বরে বললেন, চট করে কিছু ভেবে বসা ঠিক হবে না।

    চট করে আমি কিছু বলছি না। ওই জিনিসটার সঙ্গে তো আপনি নিজেও কথা বলেছেন। ওর অস্বাভাবিক বুদ্ধি লক্ষ্য করেন নি?

    দ্বিতীয় সত্তাটি প্রায় সব ক্ষেত্রেই বুদ্ধিমান হয়। প্রফেসর জাং, ফ্রয়েডের বিখ্যাত ছাত্র, একথা লিখে রেখে গেছেন।

    রাখুন আপনার জাং আর ফ্রয়েড। আমি এসব আর শুনতে চাই না। যথেষ্ট শুনেছি।

    কারাস হঠাৎ উঠে দাঁড়িয়ে বললেন, আমি আজ উঠব। আমার একটা লেকচার আছে। তবে আবার আসব। যতদিন না আপনার মেয়ে সুস্থ হয় আপনি আমাকে পাবেন।

    ক্রিস কিছু বলল না।

    আপনি আমাকে রেগানের মেডিকেল রেকর্ড দিতে পারেন?

    দেখুন ফাদার, আমি ওসব একদফা শেষ করে এসেছি।

    শেষ করলেও আমার লাগবে। ধর্মীয় পদ্ধতিতে শয়তান তাড়াবার ব্যবস্থা করতে হলেও ওর মেডিকেল রেকর্ড আমার লাগবে। গির্জার অনুমতির জন্যে আমার প্রমাণ করতে হবে রেগানের মধ্যে সত্যি কিছু একটা ভর করেছে। কবে নাগাদ আনাতে পারবেন সেসব?

    তাড়াতাড়ি আনাবার জন্যে যদি আমার একটা প্লেনও ভাড়া করতে হয় আমি তা করব, ফাদার।

    আর ওর কথাবার্তার টেপ দরকার। আগে ওর কথা কেমন ছিল আমি শুনতে চাই।

    আমি এনে দিচ্ছি। জন্মদিনে ওর বাবাকে পাঠাবার জন্যে ও একটা ক্যাসেট টেপ করেছিল।

    বিদায় নেয়ার আগে কারাস বললেন, আচ্ছা মিসেস ম্যাকনীল, আপনি কি জানেন যে কিছুদিন আগে আমার মা মারা গেছে?

    জানি। আমি খুব দুঃখিত, ফাদার।

    আপনার মেয়ে কি জানে?

    না তো। সে জানবে কোত্থেকে?

    কারাসের ভ্রু কুঁচকানো দেখে ক্রিস উদ্বিগ্ন হয়ে জানতে চাইল, এসব জিজ্ঞেস করছেন কেন?

    ঘর থেকে বেরিয়ে ঘাড় ফিরিয়ে কারাস রেগানের জানালার দিকে তাকালেন। তিনি অকারণেই কেমন অস্থিরতা অনুভব করলেন। তাঁর মনে হল পর্দা ঘেরা ওই বন্ধ জানালাটার ওপাশ থেকে কেউ যেন তাঁকে স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছে। অনেকক্ষণ অভিভূতের মতই দাঁড়িয়ে থাকলেন তিনি।

    কারাস সরাসরি নিজের ঘরে গেলেন না। প্রথমে গেলেন জর্জটাউন বিশ্ববিদ্যালয় লাইব্রেরিতে। গাদাখানেক বই আর পত্র-পত্রিকা ইস্যু করলেন। তারপর ঘরে ফিরে সিগারেট ধরিয়ে ভাবতে বসলেন।

    বেগনের যা হয়েছে তাকে কি সত্যি সত্যি হিস্টিরিয়া বলা চলে? সে কি করে তাঁর মায়ের কথা জানল? কি করে নিউইয়র্ক সাবওয়ের সেই বিকলাঙ্গ ভিখিরির গলায় কথা বলল? চিন্তিত মুখে কারাস লাইব্রেরি থেকে আনা বইগুলোর পাতা উল্টাতে লাগলেন। অন্যমনস্ক ভঙ্গিতে একসময় দ্য রোমান রিচুয়ালস বইটা খুলে শয়তান সম্পর্কিত অংশটিতে চোখ বুলাতে লাগলেন :

    কেউ যেন প্রথমে ভূতে পাওয়ায় বিশ্বাস না করেন। শয়তানের ভর সত্যি সত্যি হয়েছে কি না তা আগে সঠিকভাবে জানতে হবে। লক্ষণসমূহ বিশ্লেষণ করতে হবে। যখন কাউকে শয়তানে ধরে তখন সে সাধারণত বিচিত্র ভাষায় কথা বলতে পারে এবং ভবিষ্যতের ঘটনাসমূহ বলতে পারে। শয়তান অবশ্যই তার অস্বাভাবিক ক্ষমতার পরিচয় দেবে। সেই সঙ্গে তার ক্ষুরধার বুদ্ধির প্রমাণও পাওয়া যাবে…

    ভূতে পাওয়ার ওই লক্ষণগুলো রেগানের লক্ষণগুলোর সঙ্গে মিলে যায়। কিন্তু ক্রিস বলেছে–পরকাল বিষয়ক একটা বই পড়েছে রেগীন। সে বইটা কি রেগানের দুর্বল মনে কোন প্রভাব ফেলেনি? আচ্ছা, রেগানের অস্বাভাবিকতাগুলোকে একটা একটা করে বিশ্লেষণ করা যাক। কারাস কাগজ কলম নিয়ে বসলেন।

    ১। রেগানের চেহারার বিকৃতি : অসুখের জন্যে হতে পারে। শরীর মনের ছায়া। শারীরিক অসুস্থতা চেহারায় ধরা পড়বেই।

    ২। রেগানের গলার স্বরের পরিবর্তন : আগেরকার গলার স্বর শোনা হয়নি। কাজেই কতটুকু পরিবর্তন হয়েছে তা বলা সম্ভব নয়। তাছাড়াও দিনরাত বিকট স্বরে চিৎকার করলে স্বরতন্ত্র মোটা হবেই।

    ৩। রেগানের কথা বলার ধরন এবং সাধারণ জ্ঞানের নতুন বিস্তৃতি : ক্রিপটোমেনসিয়া।

    ৪। রেগান তাঁকে পাদ্রী হিসেবে চিনতে পেরেছে, যদিও তার গায়ে কোন পোশাক ছিল না : অনুমান করে বলেছে। সৌভাগ্যক্রমে এই ক্ষেত্রে অনুমান সত্যি হয়েছে।

    ৫। রেগান ধরতে পেয়েছে যে তার মা মারা গেছে : এটাও অনুমান। আমার বয়স চল্লিশ, আমার মা বেঁচে না থাকারই কথা।

    ৬। কথাবার্তায় রেগানের ক্ষুরধার বুদ্ধি : দ্বৈতসত্তার আবির্ভাব ঘটলে দ্বিতীয় সত্তাটি সচরাচর অত্যন্ত বুদ্ধিমান হয়। এ বিষয়ে জাং-এর অভিমত সঠিক। কারাস কাগজ কলম সরিয়ে রেখে একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেললেন। রেগানের কথার যে টেপটি এনেছেন সেটা রেকর্ডারে চালু করলেন। রেগানের গত জন্মদিনে টেপটা করা হয়েছিল তার বাবাকে পাঠাবার জন্যে। রিনরিনে মিষ্টি গলা :

    বাবা আমি কথা বলছি (হাসি)। কিছু মনে আসছে না। মা, কি বলব? (হাসি) (মায়ের গলা) বল, সারাদিন কি করলে। (হাসি) বাবা শোন, উমম, শোন আমার … কথা শুনতে পাচ্ছ? (হাসি) কোথায় গিয়েছিলাম জান তুমি? … আচ্ছা, প্রথম থেকে শুরু করি, উমম

     

    (হাসি)।

    টেপ বন্ধ করে কারাস নিজের মনেই বললেন, রেগানের ঘরে যে বসে আছে সে রেগান নয়, হতেই পারে না।

    রাত বারোটার দিকে কারাস সিগারেট ধরিয়ে বারান্দায় এসে বসলেন। তার মাথায় একটা পরিকল্পনা এসেছে। রেগানের গায়ে যদি হলি ওয়াটার নাম দিয়ে সাধারণ কিছু পানি ছিটিয়ে দেয়া হয় তাহলে কি হবে? যদি সত্যি সত্যি শয়তান হয়ে থাকে তাহলে সে জানবে ওটা কিছুই না, কাজেই হলি ওয়াটারের কোন প্রভাব পড়বে না। কিন্তু যদি এটা কোন মানসিক অসুখ হয়, যদি এই শয়তান হয়ে থাকে রেগানের মনের কল্পনা, তাহলে সে সাধারণ পানিকেই হলি ওয়াটার মনে করবে, আর যন্ত্রণায় চিৎকার শুরু করবে। কারাস খুশিমনে আরেকটা সিগারেট ধরালেন। নিখুঁত পরিকল্পনা।

    কারাস ভোরবেলায় ক্রিসের বাড়িতে গিয়ে উপস্থিত হলেন। তার পরনে পাদ্রীদের পোশাক। দরজা খুলে দিল উইলি।

    মিসেস ম্যাকনীল কোথায়?

    ওপরে আছেন।

    ক্রিস রেগানের ঘরের সামনে চেয়ারে মাথা নিচু করে বসেছিল। এত ভোরে কারাসকে আসতে দেখে সে খুবই অবাক হল।

    গুড মর্নিং, মিসেস ম্যাকনীল।

    গুড মর্নিং।

    রাতে বোধ হয় আপনার ভাল ঘুম হয়নি?

    না ফাদার, একেবারেই ঘুম হয়নি। সারারাত রেগান বড় বিরক্ত করেছে।

    আপনার কাছে কোন টেপ রেকর্ডার আছে, মিসেস ম্যাকনীল? আমি ওর কথা টেপ করতে চাই।

    কথাটা শুনেই ক্রিসের কেমন ভাবান্তর ঘটল। প্রথমে আপত্তি জানাল, কিন্তু কারাসের পীড়াপীড়িতে শেষ পর্যন্ত রাজি হল। দাঁড়ান, পাঠাচ্ছি, বলেই ক্রিস ছুটে বেরিয়ে গেল। কারাস অবাক হয়ে সেদিকে তাকিয়ে থাকলেন। ক্রিসের আচরণ খানিকটা অন্যরকম লাগছে। তিনি লক্ষ্য করলেন, রেগানের ঘর থেকে কোন সাড়াশব্দ আসছে না। অস্বাভাবিক নীরবতা। কারাস দরজা খুলে ভেতরে ঢুকলেন। পানির বোতলটা তার পকেটেই আছে।

    ঘরের ভেতর তীব্র কট্ট একটা গন্ধ। নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসে। ছুটে বেরিয়ে যেতে ইচ্ছা হয়। কারাসের অবশ্য কোন ভাবান্তর হল না। তিনি তাকালেন বিছানার দিকে। সেই ক্রুর হাসি শোনা গেল আবার। চাপা, ঘৃণা মাখানো হাসি।

    কেমন আছ, ডেমিয়েন কারাস?

    তুমি কেমন আছ?

    ভাল। বেশ আনন্দে আছি। তোমাকে দেখে আজ খুব আনন্দ হচ্ছে। তা পোশাক-টোশাক জড়িয়ে এসেছ দেখছি। ঘরে একটু দুর্গন্ধ আছে। তোমার অসুবিধা হচ্ছে না তো?

    না।

    তুমি মহা মিথ্যুক।

    তাতে কি তোমার খারাপ লাগছে?

    কিছুটা লাগছে।

    কিন্তু শয়তানরা তো মিথ্যাবাদীদেরই পছন্দ করে।

    করে। তবে আমি যে শয়তান সে-খবর তুমি পেলে কোত্থেকে?

    তুমি শয়তান নও?

    মোটেও না। এত বড় সৌভাগ্য কি আমার হতে পারে?

    তাহলে তুমি কে?

    আমাকে একটা ক্ষুদে শয়তান বলতে পার। হা-হা-হা। ভাল কথা, ভূত তাড়ানোর জন্যে আজকের দিনটা খুব চমৎকার, তাই না?

    কারাস অবাক হয়ে রেগানের ঝকঝকে চোখের দিকে তাকিয়ে রইলেন।

    তাড়াতাড়ি শুরু করা দরকার, ফাদার। যত তাড়াতাড়ি হয় ততই ভালো।

    কিন্তু তাতে তো তোমাকে চলে যেতে হবে, তা জান নিশ্চয়ই?

    হা-হা-হা। ভুল বললে। এতে তোমাকেও পবি আমাদের মধ্যে।

    কারাস এবার রীতিমত চমকে উঠলেন। তার মনে হল কেউ যেন তাকে পেছন থেকে বরফ শীতল হাতে স্পর্শ করেছে। রেগান ঘর ফাটিয়ে হেসে উঠল।

    তুমিও আমাদের সঙ্গে যোগ দেবে ফাদার, দিতেই হবে। অবিশ্বাসীদের এ ছাড়া পথ নেই। তোমার সঙ্গে কথা বললে বড় আনন্দ হয়, কারাস …

    রেগান হঠাৎ থেমে গেল। যেন শুনতে পেল কেউ একজন আসছে। সে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে দরজার দিকে তাকিয়ে আছে। কারাসও তাকালেন। একটা টেপরেকর্ডার হাতে কার্ল এসে ঢুকল। রেকর্ডারটি চলছে। মাইক্রোফোন স্ট্যাণ্ডটা টেবিলের ওপর রেখে কার্ল ঘর ছেড়ে চলে গেল।

    এসব কি হচ্ছে, কারাস? আমাদের ব্যক্তিগত কথাবার্তা রেকর্ড করে ফেলছ মনে হচ্ছে?

    কিছুমাত্র না। অভিনয় করতে আমার চমৎকার লাগে?

    নাম কি তোমার?

    নাম? নাম-টাম কিছু নেই।

    তুমি কি গ্রীক ভাষা জান?

    চমৎকার জানি।

    উৎসাহিত হয়ে কারাস ক্লাসিক গ্রীক ভাষায় জিজ্ঞেস করলেন,

    পম এগনোকাস হতি প্রেসবিটের এই নিই?

    আমার কথা বলার মুড নেই।

    তার মানে তুমি গ্রীক জান না?

    বললাম তো, আমার মুড নেই।

    এই সময় ড্রেসারের একটা ভারি ডুয়ার হঠাৎ শব্দ করে খানিকটা বেরিয়ে এল। কারাস চমকে উঠে বললেন, ড্রয়ারটা তুমি বের করলে?

    নিশ্চয়ই। ক্ষমতার সামান্য একটু নমুনা দেখালাম।

    আবার করতে পার?

    পারি, কিন্তু করব না। তোমাকে সব সময় খানিকটা সন্দেহের মধ্যে রাখা দরকার। হা-হা-হা।

    আবার কে যেন হিম শীতল হাতে কারাসের ঘাড় স্পর্শ করল। চমকে উঠলেন তিনি। এক সীমাহীন আতংক যেন তাকে ধীরে ধীরে গ্রা করে ফেলছে।

    ভয় পেলে নাকি, কারাস?

    কারাস চট করে নিজেকে সামলে নিলেন। সহজভাবে কথা বলতে চেষ্টা করলেন। জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কি বলতে পার এই মুহূর্তে আমি কি চিন্তা করছি?

    তোমার চিন্তায় আমার কোন আগ্রহ নেই।

    তার মানে তুমি আমার মনের কথা বলতে পারি না!

    তা ভাবতে তোমার যদি ভাল লাগে তাহলে তাই।

    তুমি যে-ই হও, তুমি অদ্ভুত।

    তা ঠিক। প্রিয় কারাস, খুব সত্যি কথাই বলেছ?

    তোমার নাম কি?

    নামে কি আসে যায়, বন্ধু?

    কারাস। পকেটে হাত দিয়ে পানির বোতলটা এখন বের করলেন। তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে রেগান বলল, ওটা কি?

    চিনতে পারছ না? হলি ওয়াটার।

    মুহূর্তের মধ্যে যেন একটা প্রলয় ঘটে গেল। বিকট স্বরে চিৎকার করতে লাগল। রেগান : বাঁচাও, আমাকে বাঁচাও পুড়িয়ে ফেলছে, পুড়িয়ে ফেলছে। উঃ পুড়িয়ে ফেলছে। চেঁচাতে চেঁচাতে সে নিথর হয়ে পড়ল। বিচিত্র আঞ্চলিক ভাষায় বিড়বিড় করতে লাগল।

    কারাস বললেন, তুমি কে?

    মিয়াউকেইন।

    এটা কি তোমার নাম?

    বিড়বিড় করে এর উত্তর দেয়া হল।

    আমার কথা কি বুঝতে পারছ?

    অস্পষ্ট উত্তর। সেই অচেনা ভাষা।

    কারাস আরো কিছুক্ষণ অপেক্ষা করলেন। বিড়বিড় করতে করতে রেগান এক সময় ঘুমিয়ে পড়ল।

    কারাস নিচে নেমে এসে দেখেন, সোফায় ক্লান্ত ভঙ্গিতে শুয়ে আছে ক্রিস। দুচোখ বোজা। পায়ের শব্দে জেগে উঠে বসল সঙ্গে সঙ্গে।

    ফাদার, আপনাকে কফি না চা দেব?

    না, ধন্যবাদ। মিসেস ম্যাকনীল, আপনাকে একটা কথা বলতে চাই।

    বলুন।

    আপনার মেয়ের অসুখটা সম্পূর্ণ মানসিক। শয়তান-টয়তান কিছু নয়। এক্সরসিজম করার পরিকল্পনা বাদ দিতে হবে।

    আজ হঠাৎ এই কথা বলছেন কেন?

    আমি ওর গায়ে হলি ওয়াটার ছিটিয়ে দিতেই ও বিকট চিৎকার শুরু করে দিল।

    তাতে হয়েছে কি?

    আসলে ওটা হলি ওয়াটার ছিল না। সত্যিকার শয়তান হলে প্রভেদটা বুঝতে পারত।

    হয়ত এই শয়তানটা দুয়ের মধ্যে প্রভেদ জানে না।

    মিসেস ম্যাকনীল, আপনি তাহলে পুরোপুরি বিশ্বাস করেন যে রেগানের মধ্যে সত্যি সত্যি শয়তান আছে?

    ফাদার, আপনি করেন না? সত্যি করে বলুন, করেন না?

    কারাস কোন জবাব দিলেন না। ক্রিস কাদতে শুরু করল। তখন ক্রিসের হাতের ওপর একটা হাত রেখে কারাস কোমল স্বরে বললেন, প্রগানের রিপোর্টগুলো আমার হাতে আসার পর আমি চার্চের কাছে পুরো বিষয়টা তুলে ধরব। মিসেস ম্যাকনীল, গোটা বাপারটাই বড় রহস্যময়। একবার আমার মনে হয়, এটা একটি ভয়ংকর মানসিক অসুখ; আবার মনে হয়, মেয়েটির মধ্যে শয়তান থাবা মেলে বসে আছে।

    ঘর থেকে বেরিয়েই কারসি এক অপ্রত্যাশিত দৃশ্য দেখলেন। রাস্তায় ল্যাম্পপোস্টের কাছে দাঁড়িয়ে কার্ল একদৃষ্টে রেগানের ঘরের বন্ধ জানালার দিকে তাকিয়ে আছে। কারাসকে দেখেই সে চমকে উঠল।

    কেমন আছ, কার্ল?

    ভাল। আমি ভাল আছি। বলেই দ্রুত পায়ে সে হাঁটতে শুরু করল যেন সামনে থেকে পালিয়ে যেতে পারলে বাচে। কারাস বেশ অবাক হলেন।

    কার্ল প্রথমে গেল বাসস্টাণ্ডে, সেখান থেকে বাসে উঠে, দুতিনবার বাস বদলে শহরের সর্বদক্ষিণ প্রান্তে এসে উপস্থিত হল। তারপর হাঁটতে হাঁটতে যেখানে গিয়ে শেষ পর্যন্ত থামল সে জায়গাটা শহরের দরিদ্রতম অঞ্চল। চারদিকে জীর্ণ কদাকার সব ফ্ল্যাট বাড়ি। রাস্তার দুপাশে আবর্জনার স্থূপ।

    একটা ভাঙাচোরা দোতলা বাড়ির লোহার সিঁড়ির নিচে খানিকক্ষণ অপেক্ষা করে সে ক্লান্ত পায়ে ওপরে উঠতে থাকল। তারপর একটা বন্ধ দরজার সামনে দাঁড়িয়ে মৃদু স্বরে ডাকল, এলভিরা, এলভিরা।

    দরজা খুলে আলুথালু পোশাকের বিশ—একুশ বছরের একটা মেয়ে মুখ বের করল। ঘরের ভেতর থেকে কর্কশ পুরুষ গলা শোনা গেল, বিদায় কর, মাগী। পয়সা দিয়ে এসেছি।

    এলভিরা কড়া ধমক লাগাল, চুপ কর। আমার বাবা এসেছে।

    কার্ল ধরা গলায় বলল, কেমন আছিস, মা?

    ভাল। ভেতরে এস না কিন্তু, হারামজাদাটা নেংটো হয়ে বসে আছে। তুমি টাকা এনেছ।

    কার্ল পকেট থেকে টাকা বের করল। এলভিরা ছোঁ মেরে টাকাগুলো নিয়ে নিল।

    ওইসব আজেবাজে ইনজেকশানগুলো নিস না। তোকে আমি নিউইয়র্কের একটা ক্লিনিকে নিয়ে যাব। ওরা সারিয়ে দেবে। তখন ভদ্রভাবে জীবন কাটাতে পারবি।

    আহ কি ফ্যাঁচ-ফ্যাঁচ শুরু করলে? এখন যাও তো, ঘরে আমার লোক আছে?

    মা, লক্ষ্মী মা আমার, কথা শোন … কার্ল মেয়ের হাত ধরে ফেলল।

    এলভিরা ঝটকা মেরে হাত সরিয়ে নিয়ে তীক্ষ্ণ স্বরে বলল, কি যে ঝামেলা কর প্রতিবার।

    ভেতর থেকে লোকটি চেঁচাল, ঘাড় ধরে বের করে দে না!

    এলভিরা সঙ্গে সঙ্গে কার্লের মুখের ওপর সশব্দে দরজা বন্ধ করে দিল।

    ক্লান্ত পায়ে সিড়ি দিয়ে নেমে এসে কার্ল দেখে, রাস্তার অন্য পারে কিণ্ডারম্যান দাঁড়িয়ে আছে। কার্লকে দেখে সে গম্ভীর স্বরে বলল, মিঃ কার্ল, এখন মনে হয় আপনি আমার সঙ্গে খোলাখুলি কথা বলতে পারেন, তাই না?

    কিণ্ডারম্যানের হাত দুটি পকেটের ভেতর। চোখের দৃষ্টি বিষণ্ণ।

     

    ৩.২

    কারাস দেখা করতে গেলেন ভাষা ইনস্টিটিউটের পরিচালক ম্যাকফ্রাঙ্কের সঙ্গে। রেগানের অদ্ভুত ভাষায় কথার টেপটা তিনি বাজিয়ে শোনালেন তাঁকে।

    ফ্রাঙ্ক, এটা কি কোন ভাষা, না প্রলাপ?

    টেপ শেষ না হওয়া পর্যন্ত ম্যাক ফ্রাঙ্ক চোখ বন্ধ করে শুনলেন। তার মুখের ভঙ্গিতে বিস্ময় ফুটে উঠল।

    এটা তুমি কোথায় পেয়েছ?

    পেয়েছি এক জায়গায়। এখন বল এটা কি? কোনও প্রাচীন ভাষা?

    হতে পারে। আমি কখনো শুনিনি। আরেকবার বাজাও তো শুনি।

    দ্বিতীয়বার বাজান হল টেপটা।

    খুবই অদ্ভুত। আমার কাছে রেখে যাও। আমি দেখব কিছু করা যায় কি না।

    ফ্রাঙ্ক, আমার আরেকটা ব্যাপার জানতে হবে।

    বল।

    আমি একই লোকের দুধরনের কথা তোমাকে শোনাব। তুমি কি কোনভাবে বলতে পারবে একই লোকের পক্ষে সম্পূর্ণ দুই ভঙ্গিতে কথা বলা সম্ভব কি না?

    হ্যাঁ, পারব। একই লোক হলে বলে দিতে পারব।

    কিভাবে?

    আমি টাইপ টোকেন অনুপাত বের করব। ধরো, এক হাজার শব্দের ভেতর কোন একটা বিশেষ শব্দ কতবার আসছে তা দেখা আর বাক্য গঠনরীতি পরীক্ষা করা।

    ফ্রাঙ্ক, তোমার কি মনে হয় এই পদ্ধতিটা নির্ভুল?

    অবশ্যই। তুমি টেপটা রেখে যাও। আমি ইন্সট্রাকটরকে বলব পরীক্ষা করতে।

    ফ্রাঙ্ক, তোমাকেই এ কাজটা করতে হবে, আর আজই করতে হবে। খুবই জরুরী। প্লীজ ফ্রাঙ্ক।

    ঠিক আছে।

    বাকি দিনটা কারাস কাটালেন জর্জটাউন লাইব্রেরিতে। সাইকোকাইনেটিক বিষয় সম্পর্কে যত বই পাওয়া গেল সব নামিয়ে এনে বসলেন। বিকাল চারটের দিকে তিনি নিশ্চিত হলেন যে সাইকোকাইনেটিক ব্যাপারটা কোন মনগড়া কিছু নয়। বহু দলিলপত্র, প্রমাণাদি আছে এর। বয়ঃসন্ধিকালে তীব্র মানসিক দুঃখবেদনা, রাগ-অভিমান সাইকোকাইনেটিক শক্তির (যার ধরন এখনো অজানা) জন্ম দিতে পারে। ফলস্বরূপ দেখা যায় রোগীর চারপাশে টেবিল-চেয়ার নড়ছে। কাগজপত্র, কলম, কলমদানী শূন্যে উড়ছে।

    কারাস সন্ধ্যাবেলায় ক্রিসের বাড়িতে গিয়ে উপস্থিত হলেন। ক্রিস তখন নিচতলায় ঘর অন্ধকার করে বসেছিল। কোন কিছুতেই তার মন নেই।

    মিসেস ম্যাকনীল, ক্লিনিকের সব কাগজপত্র আমাকে পাঠিয়েছে।

    পড়েছেন আপনি?

    হ্যাঁ। লাইব্রেরিতেও কিছু পড়লাম।

    এখন আপনি কি বলতে চাইছেন?

    রেগানের অসুস্থতার বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা দেয়া অসম্ভব নয়, মিসেস ম্যাকনীল।

    আপনি এখনো এসব বলছেন?

    হ্যাঁ। আমার মনে হয় রেগানকে বেশ কিছুদিন কোন ক্লিনিকে রাখা উচিত। আপাতত এক্সরসিজম করা ঠিক হবে না।

    অনেকক্ষণ চুপচাপ বসে রইল ক্রিস।

    আপনার কি শরীর খারাপ, মিসেস ম্যাকনীল?

    না, আমার শরীর ভালোই আছে। ফাদার, আপনাকে আজ একটা কথা বলি। রেগান একজন মানুষ খুন করেছে। তার নাম বার্ক ডেনিংস। সেই বার্ক ডেনিংস প্রায়ই হাজির হয় রেগানের মধ্যে। আমি যদি ওকে আজ ক্লিনিকে নিয়ে যাই তাহলে কালই সব প্রকাশ হয়ে যাবে। ওরা রেগানকে স্রেফ মেরে ফেলবে। কিংবা বাকি জীবনের জন্যে সেলে বন্ধ করে রাখবে।

    কারাস স্তব্ধ হয়ে গেলেন। ক্রিস উঁচু গলায় বলল, আপনি কি তাই চান, ফাদার? বলুন, আপনি তাই চান?

    মিসেস ম্যাকনীল, আপনি শান্ত হন।

    বলুন, কিভাবে? কিভাবে আমি শান্ত হব?

    ক্রিস এবার হু হু করে কেঁদে ফেলল। তারপর চোখে রুমাল চেপে বাথরুমে চলে গেল। প্রায় সঙ্গে সঙ্গে কাল এসে বলল, আপনার টেলিফোন, ফাদার।

    টেলিফোন এসেছে ম্যাক ফ্রাঙ্কের কাছ থেকে। মনের উত্তেজনা গোপন করে কারাস সহজ সুরে বললেন, ফ্রাঙ্ক, কিছু পেয়েছ?

    তা পেয়েছি। টাইপ টোকেন অনুপাত বের করা হয়েছে। আমরা বিশ্বাস দুরকম স্বরের কথা যা টেপে আছে তা একজনের নয়, দুজনের। একই লোকের হওয়ার সম্ভাবনা কম।

    ফ্রাঙ্ক, তুমি কি পুরোপুরি নিশ্চিত নও?

    না। পুরোপুরি নিশ্চিত হওয়ার জন্যে আমাদের অনেক বেশি ডাটা দিতে হবে। তুমি সামান্য কিছু দিয়েছ।

    ফ্রাঙ্ক হাসতে লাগলেন।

    হাসছ কেন? হাসির কি হল?

    ফাদার কারাস, আমার বিশ্বাস তুমি টেপগুলো মিশিয়ে-টিশিয়ে ফেলেছ।

    ফ্রাঙ্ক, আমাকে সোজাসুজি বল ওটা কি কোন ভাষা।

    হ্যাঁ, ভাষা তো বটেই।

    কোন ভাষা?

    আমাদের ভাষা যে ভাষায় আমার কথা বলি।

    ফ্রাঙ্ক, তুমি কি রসিকতা করছ?

    না, রসিকতা নয়। ভাষা ঠিকই আছে, শুধু উল্টো করে বল। তোমার টেপে যদি রিভার্স প্লে পজিশন থাকে তাহলে উল্টোদিক থেকে বাজালেই তুমি বুঝতে পারবে।

    বল কি?

    খুবই মজার ব্যাপার। এ ব্যাপারে পরে এক সময় তোমার সঙ্গে কথা বলব।

    কারাস লক্ষ্য করলেন, কার্ল তার পাশেই দাঁড়িয়ে আছে। টেলিফোনের কথাবার্তা সে গভীর মনোযোগ দিয়ে শুনেছে তা বলাই বাহুল্য। কারাস তার দিকে তাকাতেই সে বলল, ফাদার, ঈশ্বর আপনার মঙ্গল করবেন। মেয়েটির জন্যে আপনি যা করছেন তার ফলস্বরূপ ঈশ্বর অবশ্যই আপনার মঙ্গল করবেন।

    কারাস দেখলেন কার্লের চোখ দিয়ে পানি পড়ছে।

    কলি, সব ঠিক হয়ে যাবে।

    নিশ্চয়ই ফাদার, নিশ্চয়ই।

    হ্যাঁ, শোন, আমি রাতের দিকে একবার আসব।

    ম্যাডামকে ডেকে দেব?

    না থাক। তার বিশ্রাম দরকার।

    ঘর থেকে বেরিয়েই কারাসের বুকটা ছ্যাঁৎ করে উঠল।

    কিণ্ডারম্যান রাস্তার ওপাশে পায়চারি করছে। সে কি এ বাড়ির ওপর লক্ষ্য রাখতে শুরু করেছে?

    ফাদার কারাস না?

    হ্যাঁ। কেমন আছেন, মিঃ কিণ্ডারম্যান?

    ভাল। আমি আপনাকেই খুঁজছিলাম। ভাবছিলাম আপনার বাসায় যাব। যাক, দেখা হয়ে ভালই হল।

    কোন কাজ …

    না না, কোন কাজ নয়। ওই যে একদিন আপনাকে বলেছিলাম–আমার সঙ্গে সিনেমা দেখতে– এই ব্যাপারে।

    কি ছবি?

    খুব ভাল ছবি। ক্রেস্ট সিনেমা হলে নতুন চলছে।

    কবে দেখতে চান?

    আজ যাবেন, ফাদার?

    না, আজ আমার খানিক কাজ আছে।

    ফাদার, আপনি কি ইদানীং রাত জাগছেন?

    কেন বলুন তো?

    চোখের নিচে কালি পড়েছে, তাই বললাম। রাত জাগা ঠিক নয়। শরীর একবার নষ্ট হলে সব নষ্ট।

    মিঃ কিণ্ডারম্যান, আপনার কেসটার কোন কিনারা হল?

    কোন কেসের কথা বলছেন, ফাদার?

    বার্ক ডেনিংস।

    ও, আচ্ছ। সেইটা। আর জিজ্ঞেস করবেন না। ওটা নিয়ে আমি মোটেও ভাবছি না। আমার মনে হয় সমস্তটাই একটা ভয়াবহ অ্যাকসিডেন্ট। আপনি কি বলেন?

    এসব তো আপনাদেরই ভাল জানা উচিত। গুড নাইট, মিঃ কিণ্ডারম্যান।

    গুড নাইট, ফাদার। গুড নাইট।

    রাস্তার মোড় পর্যন্ত এসে কারাস মাথা ঘুরিয়ে দেখলেন কিণ্ডারম্যান তখনো দাঁড়িয়ে আছে। তার মনে হল, যে কোন সময় কিণ্ডারম্যান হয়ত ক্রিসকে বলবে, আমি রেগানের সঙ্গে কথা বলতে চাই। এখনো কেন যে বলছে না কে জানে। বলবে সে নিশ্চয়ই। শুধু সুযোগের অপেক্ষায় আছে।

    রেগান সম্পর্কিত সমস্ত কাগজপত্র ফাদার কারাস টেবিলে সাজিয়ে রাখলেন। বেরিঞ্জার ক্লিনিকের কাগজপত্র, ডাঃ ক্লীনের রিপোর্ট, সাইকিয়াট্রিস্টের রিপোর্ট, আর তার নিজের নোট। অনেক রাতে টেপ রেকর্ডার নিয়ে বসলেন। খুব ঠাণ্ডা মাথায় তিনি রেগানের বিচিত্র ভাষার মর্ম উদ্ধার করতে চান। টেপ রেকর্ডারের রিভার্স প্লের বোতাম টিপে তিনি কাগজ-কলম নিয়ে বসলেন–

    … ভয়। বিপদ। এখনো নয়। (অস্পষ্ট)। মারা যাব। এখন হচ্ছে (অস্পষ্ট)। চারদিকে শূন্যতা। আমার ভয় হয়। সময় চাই। (অস্পষ্ট)। (অস্পষ্ট)। এ সে নয়। এ অন্য (অস্পষ্ট)। সে অসুস্থ। আহ কি মিষ্টি,

    শরীরের রক্ত কি মিষ্টি। আমাকে (অস্পষ্ট) দাও।

    যে জায়গায় কারাস জিজ্ঞেস করলেন– কে তুমি? তার উত্তরে বলা হল–আমি কেউ নই, আমি কেউ নই। তারপর কারাস জিজ্ঞেস করলেন, এটা কি তোমার নাম? উত্তর হল, আমার কোন নাম নেই। আমি কেউ না। অনেকেই। শরীরের উষ্ণতায় থাক। শরীর থেকে মহাশূন্যতায় (অস্পষ্ট)। ছেড়ে দাও, ছেড়ে দাও। মেরিন, মেরিন। মেরিন (অস্পষ্ট)।

    কারাস অসংখ্যবার টেপটা বাজালেন। অস্পষ্ট শব্দগুলো ধরতে চেষ্টা করলেন। ধরা গেল না। সে-রাতে তার একটুও ঘুম হল না। রেগানের গলার স্বরে এমন কিছু ছিল যা তাকে পুরোপুরি অভিভূত করে ফেলল।

    পরদিন সকাল নটায় ফাদার কারাস জর্জটাউন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে দেখা করে একটি এক্সরসিজম করার অনুমতি প্রার্থনা করলেন। আশ্চর্যের ব্যাপার, তাকে অনুমতি দেয়া হল।

    সকাল দশটায় তিনি বিশপের কাছে গেলেন। বিশপ গভীর মনোযোগের সঙ্গে কারাসের বক্তব্য শুনলেন। এক সময় বললেন, আপনি কি নিশ্চিত? সত্যিই কি শয়তানের আছর হয়েছে মেয়েটার ওপর?

    সরাসরি কোন উত্তর দিলেন না কারাস। শান্তস্বরে শুধু বললেন, আমি অনেক চিন্তা-ভাবনা করে বুঝেছি, এক্সরসিজমই হচ্ছে এখন সবচেয়ে ভাল পথ।

    আপনি নিজেই তা করতে চান?

    হ্যাঁ।

    আপনার স্বাস্থ্য কেমন?

    ভাল।

    এ-ধরনের কিছু আগে কখনো করেছেন?

    না।

    ঠিক আছে, আপনি এখন যান। আমরা আপনাকে খবর দেব। তবে আমাদের মনে হয়, এমন কাউকে সঙ্গে নেয়া উচিত যার এ ব্যপারে পূর্ব, অভিজ্ঞতা আছে।

    আপনার পরিচিত এমন কেউ কি আছেন?

    হ্যাঁ, ফাদার মেরিন ল্যাংকাস্টারে আছেন।

    ফাদার মেরিন? তিনি ইরাকে আছেন বলে জানতাম।

    ছিলেন। এখন উডস্টকে আছেন।

    তাঁর তো অনেক বয়স?

    হ্যাঁ, অনেক। স্বাস্থ্যও দুর্বল। তবু তাকে বলতে হবে। এটাই নিয়ম।

     

    উডস্টক সেমিনারী। মেরীল্যাণ্ড।

    বৃদ্ধ ফাদার মেরিন মৃদু পায়ে হেঁটে বেড়াচ্ছিলেন। বড় বড় গাছে জায়গাটা ছায়াচ্ছন্ন। ফাদার মেরিন লক্ষ্য করলেন, সেমিনারীর একজন ছাত্র তার দিকে আসছে। ছাত্রটি টেলিগ্রামের লাল খাম ফাদার মেরিনের হাতে দিতেই তিনি মৃদু স্বরে তাকে ধন্যবাদ জানালেন।

    টেলিগ্রামটা তিনি পড়লেন না। পকেটে রেখে আগের মত হাঁটতে থাকলেন। তিনি জানেন টেলিগ্রামটাতে কি লেখা। অনেক দিন ধরেই এর জন্যে তিনি প্রতীক্ষা করে আছেন। দেখা হবে, আবার দেখা হবে।

    ছোট্ট একটা পাখি গলা কাপিয়ে গান করছে। ফাদার মেরিন গাঢ় ভালবাসা নিয়ে পাখিটির দিকে তাকিয়ে থাকলেন অনেকক্ষণ।

    ⤶ ⤷
    1 2 3 4 5
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleএকাত্তর এবং আমার বাবা – হুমায়ূন আহমেদ
    Next Article দেয়াল – হুমায়ূন আহমেদ

    Related Articles

    হুমায়ূন আহমেদ

    আসমানীরা তিন বোন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    হুমায়ূন আহমেদ

    ইস্টিশন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    হুমায়ূন আহমেদ

    উড়ালপঙ্খী – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    হুমায়ূন আহমেদ

    এই বসন্তে – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    হুমায়ূন আহমেদ

    এই মেঘ, রৌদ্রছায়া – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    হুমায়ূন আহমেদ

    এইসব দিনরাত্রি – হুমায়ূন আহমেদ

    December 23, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Generic selectors
    Exact matches only
    Search in title
    Search in content
    Post Type Selectors
    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    আসমানীরা তিন বোন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    আসমানীরা তিন বোন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    Our Picks

    আসমানীরা তিন বোন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025

    ইস্টিশন – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025

    উড়ালপঙ্খী – হুমায়ূন আহমেদ

    December 24, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }