Close Menu
এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    What's Hot

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)
    • 📙
    • লেখক
    • শ্রেণী
      • ছোটগল্প
      • ভৌতিক গল্প
      • প্রবন্ধ
      • উপন্যাস
      • রূপকথা
      • প্রেমকাহিনী
      • রহস্যগল্প
      • হাস্যকৌতুক
      • আত্মজীবনী
      • ঐতিহাসিক
      • নাটক
      • নারী বিষয়ক কাহিনী
      • ভ্রমণকাহিনী
      • শিশু সাহিত্য
      • সামাজিক গল্প
      • স্মৃতিকথা
    • কবিতা
    • লিখুন
    • চলিতভাষার
    • শীর্ষলেখক
      • রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
      • বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়
      • শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
      • বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
      • সত্যজিৎ রায়
      • সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
      • বুদ্ধদেব গুহ
      • জীবনানন্দ দাশ
      • আশাপূর্ণা দেবী
      • কাজী নজরুল ইসলাম
      • জসীম উদ্দীন
      • তসলিমা নাসরিন
      • মহাশ্বেতা দেবী
      • মাইকেল মধুসূদন দত্ত
      • মৈত্রেয়ী দেবী
      • লীলা মজুমদার
      • শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়
      • সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়
      • সমরেশ মজুমদার
      • হুমায়ুন আহমেদ
    • English Books
      • Jules Verne
    • 🔖
    • ➜]
    Subscribe
    এক পাতা গল্প বাংলা গল্প | Bangla Golpo | Read Best Bangla Stories @ Ekpatagolpo (Bangla)

    দীপু নাম্বার টু – মুহম্মদ জাফর ইকবাল।

    মুহম্মদ জাফর ইকবাল এক পাতা গল্প116 Mins Read0
    ⤶ ⤷

    ৫. দুপুরে ছুটি হয়ে গেছে সেদিন

    দুপুরে ছুটি হয়ে গেছে সেদিন। তারিক যেন এজন্যেই অপেক্ষা করছিল। দীপুকে বলল, চল আমার সাথে।

    কোথায়?

    কালাচিতা!

    কালাচিতা! সেটা আবার কি?

    মনে নেই তোর? সেই যে–

    ও। দীপুর সেই কালো চিতাবাঘের মূর্তির কথা মনে পড়ে গেল। লাফিয়ে উঠল সে, নিয়ে যাবি সেখানে?

    হুঁ। তারিক মুখ গম্ভীর করে বলল, ভয় পেলে থাক, গিয়ে কাজ নেই।

    অ্যাঁহ? আমি ভয় পাই? মারব এক ঘুষি।

    চল তা হলে।

    দু’জনে মিলে ওরা রওনা দেয়। তারিকের ধরন-ধারণ ভারি অদ্ভুত! বইপত্র রেখে দিল একটা গাছের ফুটোয়। সেখান থেকে বের করল একটা চাকু, একটা সিগারেটের প্যাকেট, একটা ম্যাচ, একটা ছোট মোমবাতি আর একটা তাবিজ। তাবিজটা ও বাঁ হাতে খুব সাবধানে বেঁধে নিল।

    তোরও একটা তাবিজ লাগবে। এ ছাড়া রাতে আসতে পারবিনে।

    কিসের তাজিব?

    সাপের।

    সাপ? সাপ কোথায়?

    যেখানে যাচ্ছি। দেখবি কিলবিল করছে সাপের বাচ্চা। ভয় পাস সাপকে?

    নাহ! ভয় না, ঘেন্না লাগে দেখলে। কেমন পিছলা পিছলা, ছিঃ।

    তারিক দাঁত বের করে হাসল। তাবিজটা দেখিয়ে বলল, এই যে তাবিজটা দেখছিস এটা কিনেছি কত দিয়ে বল দেখি?

    কে জানে?

    সোয়া দুই। দশ টাকা চাইছিল।

    কোত্থেকে কিনেছিস?

    লালু সর্দারের কাছ থেকে! দেখলে তুই ভয় পেয়ে যাবি—এই দাড়ি, এই চুল আর চোখ টকটকে লাল। সাপের খেলা দেখায়। এটা শঙ্খসোনা গাছের শেকড়, অমাবস্যার রাতে শ্মশান ঘাটে ডুব দিয়ে নতুন কাপড় পরে যেতে হয় জঙ্গলে, একটা জ্যান্ত বেড়াল এক কোপে কেটে সেই চাকু নিয়ে খুঁজতে হয়, গাছটা ভোররাতের আগে পেয়ে গেলে গাছের শেকড় কেটে আনতে হয়। এই তাবিজ সাথে থাকলে সাপের বাবাও কাছে আসে না।

    যা! গুল মারিস না।

    বিশ্বাস করলি না তুই? তারিক উত্তেজিত হয়ে ওঠে। আমি নিজের চোখে দেখেছি লালু সর্দার তাবিজটা সাপের মুখে ধরল, আর অমনি সাপ মাথা নিচু করে কি দৌড়টাই না দিল! কী তেজ তাবিজের, সাপ ধারে কাছে আসে না। আমি দুই বছর ধরে পরে আছি একটা সাপও কিছু করল না।

    দীপু চুপ করে রইল। ও তাবিজ-টাবিজ বিশ্বাস করে না, কিন্তু তারিক যেরকমভাবে বলল অবিশ্বাস করবে কেমন করে?

    হাঁটতে হাঁটতে ওরা গ্রামের রাস্তায় এসে পড়ে। কী চমৎকার উঁচু সড়ক। দু’পাশে জিওল গাছ। সড়কের দুধারে ধানখেত, কী সুন্দর সোনালি রং। বাতাসে নড়ছে তিরতির করে। বাতাসে কী সুন্দর একটা গন্ধ। অনেক দূরে রেললাইনের উপর দিয়ে ঝিকঝিক ঝিকঝিক করে একটা মালগাড়ি যাচ্ছে আস্তে আস্তে। দীপু আগে কখনও এ রাস্তায় আসেনি। ওর এত ভাল লাগছিল যে বলার নয়। তারিককে জিজ্ঞেস করল, তারিক, তোর কালাচিতা কতদূর?

    কেন? কাহিল হয়ে গেছিস?

    মোটেই না। খুব ভাল লাগছে হাঁটতে, দুপায়ে নরম ধুলা ওড়াতে ওড়াতে বলল, মনে হচ্ছে যত দূর তত ভাল।

    ভাল লাগলেই ভাল। এখনও অনেক দূর। আর শোন, লোকজন কই যাচ্ছি কিছু জিজ্ঞেস করলে তুই চুপ করে থাকবি।

    কেন?

    কালাচিতায় শুধু সাপের আড্ডা তো, লোকজন আমাদের মতো চ্যাংড়া পোলাদের যেতে দিতে চায় না। আমি গুল মারব।

    কীরকম জায়গা এটা দেখার খুব আগ্রহ হচ্ছিল দীপুর। তারিক বলল, দীপুকে ও প্রথম নিয়ে যাচ্ছে এই জায়গায়। খুব সাপের উপদ্রব বলে কেউ যায় না। যেখানে সাপ থাকে সেখানে সাপের মণি থাকতে পারে ভেবে তারিক প্রথম গিয়েছিল। একটা সাপের মণি হচ্ছে সাত রাজার ধন। একা কোনোভাবে পেয়ে গেলে একেবারে বড়লোক হয়ে যেত। খুঁজে খুঁজে ও সাপের মণি পায়নি ঠিকই, কিন্তু অনেক মজার মজার জিনিস পেয়েছে। এই কালাচিতার মূর্তিটি ওখানে পেয়েছিল বলে নাম দিয়েছে কালাচিতা।

    জায়গাটা টিলার মতো উঁচু, চারদিকে জঙ্গলে ভরা, আশেপাশে তিন চার মাইলের ভেতর কোনো বসতি নেই। এমন নির্জন যে ভয় লেগে যায়। মনে হয়। গাছে একটা পাখি পর্যন্ত নেই। তারিকের হাঁটার ধরন দেখে বোঝা যায় জায়গাটা ও হাতের তালুর মতো চেনে। ওরা একটু ফাঁকামত জায়গায় এসে হাজির হল। তারিক গম্ভীর হয়ে বলল, এই সে জায়গা।

    দীপু অবাক হয়ে চারদিকে তাকাল, বলল, কোথায়?

    হুঁ বাবা, সময় হলেই দেখবি। পকেট থেকে মোমবাতি বের করে দুপুর রোদের মাঝেই সে জ্বালিয়ে নিল। গম্ভীর হয়ে দীপুকে বলল, আমি আগে যাই—আমি নেমে গেলে তুই নামিস।

    দীপুকে অবাক করে দিয়ে সে সামনের ঝোঁপটা সরিয়ে সাবধানে নেমে যেতে লাগল। দীপু অবাক হয়ে দেখল ছোট একটা গর্তের মতন নিচে নেমে গেছে—নিচে ঘুটঘুঁটে অন্ধকার। ঝোঁপ দিয়ে ঢাকা বলে বোঝার উপায় নেই।

    নিচে নেমে গিয়ে তারিক দীপুকে ডাক দিল। দীপু জিজ্ঞেস করল, কীভাবে নামব?

    সাবধানে ইট ধরে ধরে–পা দিয়ে খুঁজে দেখিস ছোট ছোট গর্ত আছে!

    দীপুর দেয়াল বেয়ে উঠতে নামতে কখনও কোনো অসুবিধে হয় না, কিন্তু অন্ধকারে এভাবে নামতে একেবারে হিমশিম খেয়ে গেল। তারিক অবশ্যি ওকে বলে দিচ্ছিল কোথায় পা রাখতে হবে।

    অন্তত দশ বারো ফুট নিচে নেমে ও পায়ের নিচে মাটি পেল। অন্ধকার চোখ সয়ে যেতেই ও অবাক হয়ে যায়। ছোট একটা ঘরের মতো জায়গা। একপাশে থাক থাক সিঁড়ি নেমে গেছে নিচে। দীপু অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে।

    তারিক বলল, দেখলি?

    হুঁ কী কান্ড! তুই নিজে খুঁজে বের করেছিস এটা?

    হ্যাঁ। এটা হচ্ছে একটা ঘর—ঐ সিঁড়ি দিয়ে নিচে নেমে গেলে আরেকটা ঘর। তবে ওটা মাটি দিয়ে বুজে আছে।

    চল যাই।

    আয়-সাবধানে আসিস।

    ওরা দেয়াল ধরে ধরে এগিয়ে যায়। বেশি দূর যেতে পারে না, ভাঙা দেয়াল গাছের শেকড় ও মাটিতে রাস্তা বন্ধ হয়ে আছে।

    চারদিকে এরকম অনেক ঘর আছে, সব মাটিতে বুজে আছে।

    কীভাবে জানিস তুই?

    আমি উপরে দিয়ে ঘুরে ঘুরে একটা আন্দাজ করেছি। অনেক বড় দালান এটা। আমরা বোধ হয় তিনতলায় আছি। নিচে হয়তো আরও দুই তলা আছে।

    সত্যি?

    হুঁ। কোনো না কোনো ঘরে নিশ্চয়ই সোনা-রুপাভরা একটা বাক্স পেয়ে যাব। যদি পেয়ে যাই তা হলে তোর অর্ধেক আমার অর্ধেক!

    দীপু অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে। বোঝা যায় তারিক ঠিকই বলেছে, সত্যি এটা কোনো বড় দালানের একটা অংশ। পুরোটা ঘুরে বের করতে পারলে না জানি কত কী বের হয়ে আসবে।

    এই দেখ, তারিক ওকে টেনে একপাশে নিয়ে যায়, এগুলো পেয়েছি আমি এখানে।

    দীপু খুঁটে খুঁটে দেখে। নানারকম মূর্তি, ছোটবড় নানা আকারের সব কালো কুচকুচে পাথরের। আরও কী সব জিনিস, একটা পুঁতির মালা, মরচে ধরা লোহার টুকরো, মাটির বাসন, পোড়া কাঠ, কয়েক টুকরো হাড়, কে জানে হয়তো মানুষেরই, দীপুর একটু ভয় ভয় লাগে।

    তারিক বলল, একা একা এটা খুঁড়ে বের করা মুশকিল, তুই যদি থাকিস আমার সাথে খুব ভাল হবে। থাকবি?

    থাকব না মানে! কি দারুণ জিনিস এটা বুঝতে পারছিস না? কাল থেকেই শুরু করে দেব।

    তারিক চকচকে চোখে বলল, তোর কী মনে হয়, পাওয়া যাবে কোনো গুপ্তধন?

    কে জানে সেটা, এরকম একটা জায়গা, পাওয়া তো উচিত।

    আছেই এক আধটা, আমার কোনো সন্দেহ নেই।

    ওদের ফিরে আসতে আসতে সন্ধ্যা হয়ে গেল। দীপু তারিককে কথা দিল জান থাকতেও কাউকে কালাচিতার কথা বলবে না—আর একটা তাবিজ কেনার পর ওরা সময় করে করে কালাচিতা খুঁড়তে যাবে। তাবিজ ছাড়া যাওয়া ঠিক না।

    বাসায় ফিলে এসে দীপু দেখে, আব্বা খুব মনোযোগ দিয়ে ওর কালাচিতাটা দেখছেন। দীপুকে দেখে বললেন, দীপু এটা কোথায় পেয়েছিস?

    বলব না।

    বল না, দেখে মনে হচ্ছে ভাল জিনিস।

    ভাল মানে কী? দামি?

    দামি হতেও পারে, কিন্তু বানিয়েছে ভাল। কোথায় পেয়েছিস?

    আমার এক বন্ধু আমাকে দিয়েছে।

    সে কোথায় পেয়েছে?

    সেটা বলা যাবে না। টপ সিক্রেট। তুমি জিজ্ঞেস করো না।

    আব্বা হতাশ হয়ে হাত ওল্টালেন এবং বললেন, তোর আম্মার চিঠি এসেছে একটা। তোর টেবিলের ওপর আছে।

    সত্যি! কী লিখেছে?

    খুলিনি আমি, তোর চিঠি তুই খোল।

    দীপু চিঠিটা নিয়ে আব্বার কাছে আসে। জিজ্ঞেস করে, আচ্ছা আব্বা, কেউ যদি পাগল হয়ে যায় তা হলে কি চিকিৎসা করে তাকে ভাল করা যায়?

    যায় নিশ্চয়ই। তবে কখনও কখনও আর ভাল হবার মতো অবস্থা থাকে না।

    কেন?

    না, সেটাও বলা যাবে না। এটাও টপ সিক্রেট।

    কয়টা টপ সিক্রেট তোর?

    অনেকগুলো। আচ্ছা আব্বা, পাগলদের চিকিৎসা কোথায় হয়?

    মেন্টাল হসপিটালে। পাবনাতে আছে। যাবি চিকিৎসা করাতে?

    যাও! আমি কি পাগল নাকি?

    না, তুই আধপাগল। চিকিৎসা করালে পুরো পাগল হবি।

    দীপু চলে যেতে যেতে আবার ফিরে আসে।

    আচ্ছা আব্বা, তুমি তাবিজ বিশ্বাস কর?

    না।

    একেবারেই কর না?

    একেবারেই করি না।

    তাবিজ থাকলে সাপে কামড়ায় না এরকম তাবিজ দেখেছ কখনও?

    দেখিনি, শুনেছি।

    কি শুনেছ?

    সাপের মুখের কাছে ধরলে সাপ দৌড়ে পালায়।

    দীপুর মুখ উজ্জ্বল হয়ে ওঠে। চোখ বড় বড় করে বলল, তুমি দেখবে সেরকম তাবিজ?

    তুই দেখবি?

    দীপু বোকা বলে বলল, দেখাও।

    আব্বা আস্তে আস্তে একটা সিগারেট ধরালেন, তারপর ম্যাচের কাঠিটা নিভিয়ে ওর হাতে দিলেন, এই দেখ।

    কী?

    সাপের তাবিজ।

    কোথায়?

    এই যে ম্যাচের কাঠি।

    যাও! তুমি শুধু ঠাট্টা কর।

    ঠাট্টা না। তুই এটা সাথে রাখ। যখন দেখবি কোনো সাপুড়ে সাপের তাবিজ বিক্রি করছে এই কাঠিটা সাপুড়েকে দিয়ে বলিস সাপের মুখের কাছে ধরতে। সাপ যদি দৌড়ে না পালায় তা হলে আমার কাছে আসিস।

    কেন? ওরকম হবে কেন?

    সাপুড়েরা তাবিজ বিক্রি করার আগে লোহার শিক গরম করে সাপের মুখে ছ্যাকা দেয়। এরপরে যখন সাপের মুখের কাছে কিছু ধরে সাপ মনে করে এই বুঝি আবার হঁাকা দিল, ওমনি দৌড়ে পালায়।

    তাই? দীপু অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে, কী পাজি সাপুড়েরা।

    পাজি হবে কেন। তাবিজ বিক্রি করে সে বেচারারা তাদের ছেলেমেয়েদের খাওয়ায়। এটা তাদের ব্যবসায়। লোকজনকে বিশ্বাস না করালে তাবিজ বিক্রি করবে কেমন করে?

    আর কেউ যদি ওটা বিশ্বাস করে সাপের কামড় খায়?

    তা খাবে না। সাপ দেখলেই তাবিজ-টাবিজ ভুলে দৌড় দেবে।

    তা হলে সাপ থেকে বাঁচার কোন জিনিস নেই?

    থাকবে না কেন? কার্বলিক অ্যাসিড। আমি যখন আসামে থাকতাম সাপ কিলবিল করত। একটা বোতলে ভরে মুখ খুলে রাখতাম, সাপ ধারে কাছে আসত না।

    কী নাম বললে?

    কার্বলিক অ্যাসিড। খুব কড়া বিষ কিন্তু, একটু পেটে গেলে সোজা বেহেশত। তোর হঠাৎ দরকার পড়ল কেন? সাপের বিজনেস করবি নাকি?

    যাও। ছি!

    দীপু নিজের ঘরে গিয়ে কার্বলিক অ্যাসিড শব্দ লিখে রাখল ভুলে যাবার আগে। তারপর যত্ন করে আম্মার চিঠিটা খুলে পড়তে বসল।

    .

    কলাচিতায় কীভাবে খোঁড়াখুঁড়ি শুরু করবে দীপু আর তারিক এই নিয়ে অনেক চিন্তাভাবনা করল। তারিককে দীপু কিছুতেই বোঝাতে পারল না সাপের তাবিজটা আসলে একটা ভাওতাবাজি। তারিক ডাক্তারের দোকানে ঘুরে ঘুরে কার্বলিক অ্যাসিড কিনে আনল ঠিকই, কিন্তু তাবিজটা ছাড়তে রাজি হল না। খোঁড়াখুঁড়ি করার জন্যে শাবল কোদাল মাটির টুকরি জোগাড় করে সাবধানে কালাচিতায় নিয়ে যাওয়া হল। দুজনে মিলে পুরো কালাচিতাটা সাবধানে ঘুরে ঘুরে একটা ম্যাপ তৈরি করল। যত্ন করে খোঁজাখুঁজি করে ওরা আরও মজার মজার জায়গা খুঁজে পেল। ছোট ছোট কুঠুরি কিছু কিছু আবার সুড়ঙ্গ দিয়ে একটার সাথে আরেকটার যোগাযোগ। কোথাও কোথাও মাটি ধসে পড়ে সব বন্ধ হয়ে আছে। সব খুঁড়ে ফেলতে পারলে কত মজার জিনিস যে বের হবে কে জানে! উত্তেজনায় ওরা টগবগ করতে থাকে।

    মাটি খোঁড়াটা কিন্তু সেরকম হয়ে উঠছে না। রাতে দীপুর পক্ষে যাওয়াটা সম্ভব না। আব্বাকে সব খুলে বললে আব্বা হয়তো আপত্তি করবেন না কিন্তু এটা এখন। আব্বাকে বলা সম্ভব না। আর আব্বাকে না বলে যাওয়ার কোনো প্রশ্নই আসে না। এখন শুধু স্কুল ছুটির পরে যায়। বন্ধুবান্ধব সবাইকে ধোঁকা দিয়ে কালাচিতায় যাওয়া খুব কঠিন। কোনো কোনোদিন ওরা যেতে পর্যন্ত পারে না। সবার সাথে ফুটবল খেলতে হয়। কয়দিন পরে স্কুল ছুটি হয়ে যাবে, তখন সারাদিন কালাচিতায় থেকে কাজ করতে পারবে। সেই আশাতেই আছে।

    এর মাঝে হঠাৎ একদিন একটা ব্যাপার হল। কালাচিতায় কাজটাজ করে দীপু বাসায় ফিরে এসে দেখে ওর আব্বার এক বন্ধু অপেক্ষা করে বসে আছেন।

    হাতমুখ ধুয়ে আসার আগেই আব্বা তাকে ধরে নিয়ে গেলেন তার বন্ধুর কাছে। বললেন, জামশেদ, এই হচ্ছে আমার ছেলে দীপু। আর দীপু, এ হচ্ছে। তোর জামশেদ চাচা।

    জামশেদ নামের ভদ্রলোকটির বয়স ওর আব্বার থেকে বেশি হতে পারে। কানের পাশে চুল পেকে গেছে। মোটাসোটা ভদ্রলোক। দীপু অবাক হয়ে দেখল ভদ্রলোকের হাতে তার কালাচিতাটা। ভদ্রলোকের চোখ চকচক করছিল, দীপুকে জিজ্ঞেস করলেন, এটা তুমি কোথায় পেয়েছ?

    আমার একজন বন্ধু আমাকে দিয়েছে।

    সে এটা কোথায় পেয়েছে?

    দীপু একটু অস্বস্তি নিয়ে বলল, সেটা আমি বলতে পারব না।

    ভদ্রলোক ভারি অবাক হয়ে বললেন, কেন?

    আমার বন্ধুকে আমি কথা দিয়েছি, আমি কাউকে বলব না।

    ভদ্রলোকের বুঝতেই যেন খানিক সময় লাগল! খানিকক্ষণ চুপ করে থেকে আস্তে আস্তে বললেন, তুমি জান এটা কী জিনিস?

    চিতাবাঘ!

    এটার দাম জান?

    দীপু চমকে উঠে বলল, কত?

    টাকা দিয়ে এর দাম হয় না। এই এলাকায় মৌর্য সভ্যতার একটা চিহ্ন পাওয়া যাবার কথা। অনেকদিন ধরেই আমরা এটা খোঁজাখুঁজি করছি। তোমার এই চিতাবাঘটা হচ্ছে মৌর্য সাম্রাজ্যের সময়ে তৈরি একটা ভাস্কর্য। কাজেই এটা যদি এই এলাকায় পাওয়া গিয়ে থাকে, তা হলে বুঝতে হবে কাছাকাছি এই সভ্যতার চিহ্ন আছে।

    দীপুর দম বন্ধ হয়ে আসে উত্তেজনায়। তাদের কালাচিতাই তা হলে সেই জায়গা! কিন্তু সে তো কিছুতেই বলবে না জামশেদ সাহেবকে। তারিক খুঁজে বের করেছে জায়গাটা। তারিককে জিজ্ঞেস না করে সে কিছু বলতে পারবে না।

    ভদ্রলোক খানিকক্ষণ চুপ করে থেকে বললেন, এবার বুঝতে পেরেছ কেন এই চিতাবাঘ কোথায় পাওয়া গেছে এটা জানতে চাইছি?

    দীপু মাথা নাড়ল। তারপর বলল, কিন্তু আমি এখন সেটা বলতে পারব না।

    তুমি জায়গাটা চেন?

    হ্যাঁ, চিনি।

    তা হলে চলো আমার সাথে, নিয়ে চলো সেখানে।

    দীপু ওর আব্বার দিকে তাকাল। আব্বা অন্য দিকে তাকিয়ে আছেন, কাজেই আবার ঘুরে তাকাল জামশেদ সাহেবের দিকে। বলল, চাচা, আপনি কিছু মনে করবেন না, কিন্তু এখন আমি আপনাকে সেখানে নিয়ে যেতে পারব না।

    কেন? ভদ্রলোক এবারে যেন রেগে উঠলেন।

    আমি আমার বন্ধুকে কথা দিয়েছি ওটা কাউকে বলব না। ওকে জিজ্ঞেস না করে আমি আপনাকে সেখানে নিয়ে যেতে পারব না।

    দীপু বুঝতে পারল ভদ্রলোক রেগে উঠেছেন। এখানে রেগে ওঠার কি আছে সে বুঝতে পারছিল না। জামশেদ সাহেব খানিকক্ষণ চুপ করে থেকে খুব ঠান্ডা গলায় বললেন, তোমার বন্ধুর বাসা কোথায়? ওর বাসায় টেলিফোন আছে?

    না, ওদের টেলিফোন নেই। বাসা অনেক দূরে, ধোপীর খালের ওধারে সুতার পাড়ায়।

    ওর আব্বার নাম কী, কী করেন?

    আব্বার নামটা ভুলে গেছি। কাঠমিস্ত্রির কাজ করেন।

    হোয়াট? কাঠমিস্ত্রি?

    ভদ্রলোক খুব অবাক হয়ে গেলেন, তারপর ওর আব্বার মুখের দিকে তাকিয়ে ইংরেজিতে বললেন, হাসান তোমার ছেলে কীরকম মানুষের সাথে ঘুরোঘুরি করছে খবর রাখ না?

    ওর আব্বা বললেন, জামশেদ, আমি পরে এটা নিয়ে তোমার সাথে আলাপ করব।

    ভদ্রলোক খুব বিরক্ত হয়ে উঠে দাঁড়ালেন, দীপুকে প্রায় ধমকে উঠে বললেন, তোমার ঐ বন্ধুকে পরে বলে দিলেই হবে। এখন আমার সাথে চলো।

    দীপ খুব ঠান্ডা গলায় বলল, না।

    হোয়াট?

    আপনি আমার উপর রাগ করছেন কেন? আমি তো বলেছি আমি আমার বন্ধুকে জিজ্ঞেস না করে আপনাকে সেখানে নিয়ে যেতে পারব না।

    ভদ্রলোক ভীষণ রেগে দীপুর আব্বার দিকে তাকালেন, তারপর ইংরেজিতে বললেন, ছেলেটিকে তুমি ভদ্রতা শেখাওনি মনে হচ্ছে।

    দীপুর এবারে খুব রাগ হয়ে গেল। বড়দের সাথে ও কখনও অভদ্রতা করে না, কিন্তু তাই বলে সে এবারে চুপ করে থাকল না। আস্তে আস্তে বলল, চাচা, আমি অল্প অল্প ইংরেজি বুঝতে পারি। আমি যদি আপনার সাথে অভদ্রতা করে থাকি তা হলে তার জন্যে মাফ চাইছি। তারপর একটু থেমে যোগ করল, কিন্তু তবুও আমার বন্ধুকে জিজ্ঞেস না করে আমি আপনাকে সেখানে নিয়ে যেতে পারব না।

    ভদ্রলোক রাগে থমথম করতে লাগলেন। আব্বা দীপুকে বললেন, দীপু তুই যা এখন, হাতমুখ ধুয়ে মানুষ হ।

    দীপু বেরিয়ে যেতেই আব্বা বললেন, জামশেদ, আমার মনে হয় তুমি ঐ কথাটি না বললে ভাল করতে।

    কোন্ কথাটি?

    কার ছেলের সাথে ঘুরাঘুরি করছে খবর রাখি কিনা।

    কেন? আজেবাজে লোকের বদ ছেলের সাথে ঘুরাঘুরি করছে, আর তুমি—

    আস্তে জামশেদ, আমি চাই না দীপু এসব কথা শুনুক।

    কেন?

    তার ভাল লাগবে না। আমি ওকে আমার মনের মতো মানুষ করতে চাই।

    কোন্‌টা তোমার মনের মতো? বদ ছেলেপিলের–

    আস্তে জামশেদ। আমার ক্ষমতা ছিল দীপুকে ঢাকায় কিংবা বাইরে খুব ভাল ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে মানুষ করার। খুব স্মার্ট হয়ে বড় হতো তা হলে, ইংরেজিতে খাঁটি ব্রিটিশ টান থাকত, আর দশটা বড়লোকের ছেলের মতো কমিক পড়ে টিভি দেখে মানুষ হতো। হয়তো খুব ভদ্র হতেই পারত—রাস্তার একটা ছেলের সাথে হয়তো বেশ ফ্রেন্ডলি হতে পারত কিন্তু সব বাইরে থেকে। ভেতরে ভেতরে কোনোদিন ওদের নিজের মানুষ বলে মনে হতো না—ওর ক্লাসের যে ছেলেটা পয়সার অভাবে পড়াশোনা ছেড়ে দিয়ে আইসক্রীম বিক্রি করতে চলে গেছে, ওর জন্যে ভেউভেউ করে কাঁদতে পারত না! আমি চাই আমার ছেলে খুব সাধারণ একটা ছেলে হোক-কাঠমিস্ত্রির ছেলের সাথে ঘুরেঘুরে নিজেকে চিনুক। রাস্তায় মার খেয়ে ফিরে আসুক—আরেকদিন পাল্টা মার দিয়ে নিজের শক্তির উপরে বিশ্বাস হোক। দুধ মাখন খেয়ে খেয়ে শো-কেসের পুতুল যেন না হয়।

    জামশেদ সাহেব চুপ করে বসে থাকলেন। অনেকক্ষণ পর আস্তে আস্তে মাথা নেড়ে বললেন, ওসব বড় কথা ছেড়ে দাও হাসান। মা নেই বলে এরকম হয়েছে। কোথায় তুমি…

    আব্বা হাত নেড়ে বললেন, ওসব ছেড়ে দাও। আমার ছেলেকে আমি ঠিক আমার মনের মতো করে মানুষ করব। যেটা ভাল বোঝে সেটা করবে, তাতে দুনিয়া রসাতলে যাক–

    জামশেদ সাহেব একটু রেগে উঠলেন, যদি আমার ছেলে হতো আমি পিটিয়ে সিধে করে দিতাম। কোথায় পেয়েছে চিতাবাঘটা জানতে চেয়েছিলাম, বললই না। অথচ চিন্তা কর কত ইম্পর্ট্যান্ট।

    আব্বা হেসে বললেন, কালকের দিনটা থেকে যাও, দীপু তার বন্ধুর সাথে কথা বলে যদি দেখাতে চায় দেখিয়ে দেবে।

    হ্যাঁ, আমি প্লেনের টিকেট ক্যানসেল করে থেকে গেলাম, আর তোমার ছেলে বলল, দেখানো যাবে না। তখন?

    হুঁ–তা বটে। আব্বা একটু হেসে বললেন, তোমার এত বড় বড় সব আর্কিওলজিসই তোমরা কেন বাচ্চা ছেলেদের উৎপাত করে বেড়াচ্ছ? নিজেরা খুঁজে বের করে ফেল না।

    দীপু পাশের ঘর থেকে শুনল জামশেদ সাহেব রেগেমেগে ইংরেজিতে কী বলছেন আর দীপুর আব্বা হো হো করে হাসছেন।

    ⤶ ⤷
    1 2 3 4 5 6 7
    Share. Facebook Twitter Pinterest LinkedIn Tumblr Email Reddit VKontakte Telegram WhatsApp Copy Link
    Previous Articleনিতু আর তার বন্ধুরা – মুহম্মদ জাফর ইকবাল
    Next Article হাতকাটা রবিন – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    Related Articles

    মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    ছোটগল্প – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    November 19, 2025
    মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    সাদাসিধে কথা – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    November 19, 2025
    মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    মেকু কাহিনী – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    November 19, 2025
    মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    আমার বন্ধু রাশেদ – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    November 19, 2025
    মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    সায়েন্স ফিকশান সমগ্র ১ – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    November 19, 2025
    মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    টুনটুনি ও ছোটাচ্চু – মুহম্মদ জাফর ইকবাল

    November 19, 2025
    Add A Comment
    Leave A Reply Cancel Reply

    Generic selectors
    Exact matches only
    Search in title
    Search in content
    Post Type Selectors
    Demo

    Your Bookmarks


    Reading History

    Most Popular

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Demo
    Latest Reviews

    বাংলা গল্প শুনতে ভালোবাসেন? এক পাতার বাংলা গল্পের সাথে হারিয়ে যান গল্পের যাদুতে।  আপনার জন্য নিয়ে এসেছে সেরা কাহিনিগুলি, যা আপনার মন ছুঁয়ে যাবে। সহজ ভাষায় এবং চিত্তাকর্ষক উপস্থাপনায়, এই গল্পগুলি আপনাকে এক নতুন অভিজ্ঞতা দেবে। এখানে পাবেন নিত্যনতুন কাহিনির সম্ভার, যা আপনাকে বিনোদিত করবে এবং অনুপ্রাণিত করবে।  শেয়ার করুন এবং বন্ধুদের জানাতে ভুলবেন না।

    Top Posts

    হর্ষবর্ধনের বাঘ শিকার

    January 4, 2025

    দোকানির বউ

    January 5, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025
    Our Picks

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১১

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১২

    December 12, 2025

    হুমায়ূন আহমেদ উপন্যাস সমগ্র ১৩

    December 12, 2025
    Facebook X (Twitter) Instagram Pinterest
    • Home
    • Disclaimer
    • Privacy Policy
    • DMCA
    • Contact us
    © 2025 Ek Pata Golpo. Designed by Webliance Pvt Ltd.

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.

    • Login
    Forgot Password?
    Lost your password? Please enter your username or email address. You will receive a link to create a new password via email.
    body::-webkit-scrollbar { width: 7px; } body::-webkit-scrollbar-track { border-radius: 10px; background: #f0f0f0; } body::-webkit-scrollbar-thumb { border-radius: 50px; background: #dfdbdb }